আকীকার গোস্ত বন্টনের নিয়ম

 আকিকার জন্য কেমন পশু...

কোরবানির মতো আকিকার পশু হতে হবে ত্রুটিমুক্ত, সুস্থ, সবল। কোরবানির পশু কেনার সময় বা পশু বাছাই করার সময় শরিয়তসম্মতভাবে যে সমস্ত বিষয়গুলো দেখার প্রয়োজন সেই বিষয়গুলো ও আকিকার পশুর ক্ষেত্রে দেখতে হবে। যে পশু দিয়ে কোরবানি দেয়া যায় না, সেই পশু দিয়ে আকিকাও দেয়া যাবেনা। আকিকার ক্ষেত্রে জন্তুর বয়স ও ধরনের দিক থেকে কোরবানির জন্তুর গুণ পাওয়া যায়, এমন জন্তুই নির্বাচন করতে হবে। (তিরমিযি)

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যার কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে, সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল দ্বারা আকিকা করে।’ (আলমুজামুল আওসাত: ৩৭১)

ছেলেদের জন্য দুটি ছাগল এবং মেয়েদের জন্য একটি ছাগল যথেষ্ট। ছেলেদের দুটি ছাগল দেয়ার ক্ষেত্রে ছাগলদ্বয় সম পর্যায়ের হতে হবে, অর্থাৎ দেখতে একই অথবা একই বয়সের হওয়া দরকার। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.) এর পক্ষ হতে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকিকা করেছিলেন।( সুনানে আবু দাউদ)

কোরবানির পশুর সঙ্গে কি আকিকা করা যাবে?

হ্যা, কোরবানির পশুর সঙ্গে আকিকা করা যাবে।

আকিকার গোশত বিতরণ করা...

আকিকার গোশত কোরবানির গোশতের মতোই সবাই খেতে পারবে। গরীব দুঃখীকে এবং আত্নীয় স্বজনকে আকিকার গোশত দিতে হবে। গোশত রান্না বা কাঁচা যেকোনো ভাবেই দেয়া যাবে। সর্বস্তরের লোক এ গোশত খেতে পারবে। কারো খাওয়াতে কোনো নিষেধ নেই।

আকিকা যদি ইচ্ছে হয় রান্না করে আত্নীয় স্বজনকে নিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানের মতো করে খাবেন, তা খাওয়া যাবে।


পিতা-মাতা কি আকিকার গোশত খেতে পারবে?

হ্যা, পিতা-মাতা অবশ্যই আকিকার গোশত খেতে পারবে। আমাদের সমাজে অনেকে মনে করেন, আকিকার গোশত মাতা-পিতা খেতে পারবে না, এ ধারণা ভুল। অনেকে আবার মা খেতে পারবে না মনে করেন। ইসলামে এ ধরনের কোনো নিষেধ নেই। এটি ভ্রান্ত ধারণা। মা-বাবা, নানা-নানী, দাদা-দাদীসহ যেকোনো আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশি সকলেই এ গোশত খেতে পারবেন। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, (আকীকার গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের খাওয়াবে এবং সদকা করবে।

নিজের আকিকা নিজে দেয়া যাবে...

কোনো কারণে আকিকা দেয়া না হলে, সন্তান বড় হওয়ার পর এবং সামর্থ্যবান হলে আকিকা দিতে পারবে। কোনো না কোনো কারণে পরিবারের পক্ষ হতে আকিকা ছুটে যেতে পারে। নিজে আকিকা দিলে সেই আকিকার গোশত নিজে খেতে পারবে, এতেও কোনো মানা নেই। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বড় হওয়ার পর এবং সামর্থ্য হওয়ার পর নিজের আকিকা নিজে করেছিলেন।

আকিকাও মহান আল্লাহর উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি যা অন্যতম আমল এবং ইবাদত। আকিকার সঙ্গে 'নুসুক' একটি শব্দ এসেছে, সেই নুসুক শব্দের অর্থ কোরবানি। তাই আকিকা আদায় করার যথাযথ নিয়মসমূহ মেনে চলা উচিত।


=============


কুরবানীর গোস্ত যেমন তিন ভাগ করে এক ভাগ, নিজের জন্য রাখা, এক ভাগ গরীবকে দেয়া, একভাগ আত্মীয়দের মাঝে বন্টন করা উত্তম। আবার ইচ্ছে করলে পুরোটাই নিজের জন্য রাখা জায়েজ আছে। তেমনি আকীকার গোস্তেরও একই বিধান।

তিন ভাগ করে নিজের, আত্মীয় ও গরীবদের দেয়া। বা নিজেই পুরোটা রেখে দেয়া। সবই জায়েজ।

আকীকার গোস্ত বন্টন নিয়ে আলাদা চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এক সাথেই রাখা যাবে।(সংগৃহীত) 

يصنع بالعقيقة ما يصنع بالأضحية (الى قوله) وفى قوله يأكل أهل العقيقة ويهدونها دليل على بطلان ما اشتهر على الألسن، أن أصول المولود لا يأكلون منها فإن أهل العقيقة هم الأبوان او لا ثم سائر أهل البيت (اعلاء السنن، فصل افضلية ذبح الشاة فى العقيقة-17/126-127)

قال الموفق فى المغنى: وسبيلها فى الاكل والهدية والصدقة سبيل الاضحية (اعلاء السنن -17/127)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
কোরবানির গোস্তের মত আকিকার গোস্তকে নিজে খেতে পারবেন,ফকির মিসকিনকে খাওয়াতে পারবেন আবার হাদিয়াও দিতে পারবেন।তবে পারিশ্রমিক স্বরূপ কাউকে কিছু দিতে পারবেন না।যদি পারিশ্রমিক স্বরূপ কাউকে কিছু দেয়া হয়,তাহলে আকিকাই আদায় হবে না।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...