নির্গমন পুস্তক ২৮-৩১ অনুচ্ছেদ

নির্গমন পুস্তক : ২৮

ইমামদের পোশাক
1“তুমি বনি-ইসরাইলদের মধ্য থেকে তোমার ভাই হারুন ও তার ছেলে নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর এবং ঈথামরকে তোমার কাছে ডেকে পাঠাও। তারা ইমাম হয়ে আমার এবাদত-কাজ করবে। 2সম্মান এবং সাজের উদ্দেশ্যে তোমার ভাই হারুনের জন্য তুমি পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। 3আমি যে সব ওস্তাদ কারিগরকে জ্ঞানদানকারী পাক-রূহ্‌কে দিয়ে পূর্ণ করে রেখেছি, তুমি তাদের বলে দাও যেন তারা হারুনের জন্য এমন পোশাক তৈরী করে যা তাকে ইমাম হিসাবে আমার এবাদত-কাজ করবার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। 4তার এই পোশাকের মধ্যে থাকবে বুক-ঢাকন, এফোদ, বাইরের কোর্তা, চেক্‌ কাপড়ের ভিতরের লম্বা কোর্তা, পাগড়ি ও কোমর-বাঁধনি। তোমার ভাই হারুন ও তাঁর ছেলেরা যাতে আমার ইমাম হতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের জন্য পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। 5পোশাক তৈরী করবার কাজে তারা সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা ও মসীনা সুতা ব্যবহার করবে।
মহা-ইমামের এফোদ
6“এফোদটা তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। 7এফোদের কাঁধের অংশটা বেঁধে রাখবার জন্য দু‘টা ফিতা তৈরী করে এফোদের দুই কোণায় জুড়ে দিতে হবে। 8এফোদের সংগে জোড়া লাগানো কোমরের পটিটাও এফোদের মতই সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। 9তুমি দু’টা বৈদুর্যমণি নিয়ে তার উপর ইসরাইলের ছেলেদের নাম খোদাই করাবে। 10তাদের জন্ম অনুসারে পর পর ছয়টা নাম একটা পাথরে আর বাকী ছয়টা নাম অন্য পাথরে খোদাই করাতে হবে। 11-12কারিগরেরা যেমন দামী পাথর খোদাই করে সীলমোহর তৈরী করে ঠিক তেমনি করেই সেই দু’টা পাথরের উপর ইসরাইলের ছেলেদের নাম খোদাই করাতে হবে। পাথর দু’টা সোনার জালির উপর বসিয়ে এফোদের কাঁধের ফিতার সংগে বেঁধে দিতে হবে। এই দু’টি পাথর মাবুদের সামনে বনি-ইসরাইলদের তুলে ধরবে। মাবুদ যাতে তাদের প্রতি নজর রাখেন সেইজন্য হারুন এই নামগুলো মাবুদের সামনে তার দুই কাঁধের উপর বহন করবে। 13-14সোনার তৈরী সেই জালি দু’টার সংগে দু’টা শিকল জুড়ে দেবে। খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে সেই শিকল দু’টা তৈরী করাতে হবে।
মহা-ইমামের বুক-ঢাকন
15“আমার নির্দেশ জানবার জন্য বুক-ঢাকন তৈরী করাতে হবে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের মত এটাও তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। 16এটা হবে লম্বায় আধ হাত ও চওড়ায় আধ হাত একটা চারকোনা বিশিষ্ট দুই ভাঁজ করা কাপড়। 17এর উপর চার সারি দামী পাথর বসাতে হবে। প্রথম সারিতে থাকবে সার্দীয়মণি, পীতমণি ও পান্না; 18দ্বিতীয় সারিতে চুনি, নীলকান্তমণি ও হীরা; 19তৃতীয় সারিতে গোমেদ, অকীকমণি ও পদ্মরাগ; 20চতুর্থ সারিতে পোখরাজ, বৈদূর্যমণি ও সূর্যকান্তমণি। পাথরগুলো সোনার জালির উপর বসাতে হবে। 21ইসরাইলের বারোটি ছেলের জন্য মোট বারোটা পাথর থাকবে। তার প্রত্যেকটিতে বারোটি গোষ্ঠীর একটি করে নাম খোদাই করানো থাকবে, যেমন করে সীলমোহর খোদাই করা হয়।
22“এই বুক-ঢাকনের জন্য খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে দু’টা শিকল তৈরী করাবে। 23সোনার দু’টা কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের উপরের দুই কোণায় লাগিয়ে দেবে, 24আর শিকল দু’টা সেই কড়া দু’টার সংগে আট্‌কে দেবে। 25এফোদের সামনের দিকে কাঁধের ফিতার উপরে সোনার যে জালি থাকবে সেই জালির সংগে শিকলের অন্য দিকটা আট্‌কে দেবে। 26তা ছাড়া আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের অন্য দুই কোণায় লাগাবে। এই দু’টা থাকবে এফোদের কাছে বুক-ঢাকনের তলায়। 27তা ছাড়াও আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে এফোদের কাঁধের ফিতার সোজাসুজি নীচের দিকে এফোদের কোমরের পটির ঠিক উপরে যে সেলাই থাকবে তার কাছে লাগিয়ে দেবে। 28তারপর বুক-ঢাকনের তলায় যে কড়া থাকবে তার সংগে কোমরের পটির কড়াটা নীল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেবে। তাতে বুক-ঢাকনটা এফোদের উপর থেকে সরে যাবে না।
29“পবিত্র স্থানে ঢুকবার সময় হারুন আমার নির্দেশ জানবার জন্য এই বুক-ঢাকনখানার উপর লেখা ইসরাইলের ছেলেদের নাম বুকে বয়ে নিয়ে যাবে। এই বুক-ঢাকনখানা সব সময় মাবুদের সামনে তাদের তুলে ধরবে। 30বুক-ঢাকনের ভাঁজের ভিতরে রাখবে ঊরীম ও তুম্মীম। তাতে হারুন যখন মাবুদের সামনে উপস্থিত হবে তখন সেগুলো তার বুকে থাকবে। এতে হারুন মাবুদের সামনে সব সময়েই বনি-ইসরাইলদের জন্য আমার নির্দেশ জানবার উপায় তার বুকে বইবে।
ইমামের অন্যান্য কাপড়
31“এফোদের নীচে যে লম্বা কোর্তাটা থাকবে তার পুরোটাই নীল সুতা দিয়ে তৈরী করাবে। 32মাথা ঢুকাবার জন্য তার মাঝখানটা খোলা থাকবে। এই খোলা জায়গাটা যাতে ছিঁড়ে না যায় সেইজন্য তার চারদিকের কিনারা বুনে শক্ত করে দিতে হবে। 33নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে ডালিম ফল তৈরী করে এই কোর্তাটার নীচের মুড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে দেবে। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেবে সোনার ঘণ্টা। 34নীচের সমস্ত মুড়িটা ধরে থাকবে একটা করে ডালিম আর একটা করে ঘণ্টা। 35ইমাম-কাজ করবার সময়ে হারুন এই পোশাক পরবে। সে যখন পবিত্র স্থানে মাবুদের সামনে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসবে তখন এই ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ শোনা যাবে আর তাতে তার জীবন রক্ষা পাবে।
36“একটা খাঁটি সোনার পাত তৈরী করিয়ে তার উপর সীলমোহর খোদাই করবার মত করে এই কথাগুলো খোদাই করিয়ে নেবে: ‘মাবুদের উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র।’ 37সেই পাতটা পাগড়ির সামনের দিকে থাকবে এবং নীল দড়ি দিয়ে তা বাঁধা থাকবে। 38এটা থাকবে হারুনের কপালের উপর। যে সব পাক-পবিত্র জিনিস বনি-ইসরাইলরা কোরবানী করবার জন্য নিয়ে আসবে তার সমস্ত দোষ-ত্রুটির বোঝা হারুনই বইবে। মাবুদ যাতে তাদের কবুল করেন সেইজন্য হারুনের কপালের উপর এই সোনার পাতটা সব সময় থাকবে।
39“ইমামের ভিতরের কোর্তাটা তৈরী করাবে মসীনা সুতার চেক্‌ কাপড় দিয়ে আর পাগড়িটা তৈরী করাবে সেই একই সুতা দিয়ে। কোমর-বাঁধনিটা হবে একটা নক্‌শা করা জিনিস।
40“সম্মান ও সাজের উদ্দেশ্যে তুমি হারুনের ছেলেদের জন্যও কোর্তা, কোমর-বাঁধনি ও মাথার টুপি তৈরী করাবে। 41তোমার ভাই হারুন ও তার ছেলেদের এই সব পোশাক পরিয়ে নিয়ে তুমি তাদের মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করে ইমামের পদে বহাল করবে। তুমি তাদের পাক-পবিত্র করবে যাতে তারা আমার ইমাম হতে পারে। 42কোমর থেকে রান পর্যন্ত ঢাকবার জন্য মসীনার কাপড়ের জাংগিয়া তৈরী করাবে। 43হারুন ও তার ছেলেরা যখন মিলন-তাম্বুতে ঢুকবে কিংবা পবিত্র স্থানের ধূপগাহে এবাদত-কাজ করবার জন্য এগিয়ে যাবে তখন তারা এই জাংগিয়া পরবে। এতে তারা দোষমুক্ত থাকবে এবং মারা পড়বে না। হারুন এবং তার বংশধরদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম।
 
নির্গমন পুস্তক : ২৯ 
 
ইমামদের পাক-পবিত্র করবার নিয়ম
1“ইমাম হয়ে যাতে তারা আমার এবাদত-কাজ করতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের এইভাবে পাক-পবিত্র করে নেবে। তুমি একটা ষাঁড় ও দু‘টা ভেড়া নেবে। সেগুলোর গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। 2তারপর মিহি ময়দা দিয়ে রুটি, তেলের ময়ান দেওয়া পিঠা আর তেল লাগানো চাপাটি তৈরী করবে। এর কোনটাতেই খামি দেবে না। 3সেগুলো একটা টুকরির মধ্যে রাখবে এবং সেই ষাঁড় ও ভেড়া দু’টার সংগে টুকরিটা আমার সামনে রাখবে। 4তারপর হারুন ও তার ছেলেদের মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে নিয়ে যাবে এবং পানি দিয়ে তাদের শরীর ধুয়ে দেবে। 5পরে সেই বিশেষ পোশাকগুলো নিয়ে হারুনকে ভিতরের কোর্তা, এফোদের নীচে পরবার লম্বা কোর্তা, এফোদ এবং বুক-ঢাকনটা পরিয়ে দেবে। পাকা হাতে বোনা কোমরের পটির সংগে এফোদটা বেঁধে দেবে। 6তারপর তার মাথার উপর পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে তার উপর সেই সোনার পাতের পবিত্র তাজটা লাগিয়ে দেবে। 7এর পর অভিষেকের তেল নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দিয়ে তাকে অভিষেক করবে। 8-9তার ছেলেদের এনে তাদেরও কোর্তা পরাবে এবং হারুন ও তার ছেলেদের কোমর-বাঁধনি পরিয়ে দেবে। তারপর ছেলেদের মাথায় টুপি দেবে। এই ভাবে তুমি হারুন ও তার ছেলেদের ইমামের পদে বহাল করবে। একটা স্থায়ী নিয়ম হিসাবে এই ইমাম-পদ তাদের বংশেই থাকবে।
10“পরে সেই ষাঁড়টাকে তুমি মিলন-তাম্বুর সামনে আনবে, আর হারুন ও তার ছেলেরা ওটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। 11তারপর মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে মাবুদের সামনে তুমি ষাঁড়টা জবাই করবে। 12পরে কিছুটা রক্ত নিয়ে তুমি আংগুল দিয়ে কোরবানগাহের শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে আর বাকী রক্ত কোরবানগাহের গোড়ায় ঢেলে দেবে। 13তারপর পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, কলিজার উপরের অংশ এবং চর্বিসুদ্ধকিড্‌নি দু’টা নিয়ে কোরবানগাহের উপর পুড়িয়ে ফেলবে। 14ষাঁড়টার গোশ্‌ত, চামড়া এবং গোবর সুদ্ধ নাড়ীভুঁড়ি বনি-ইসরাইলদের ছাউনি থেকে দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা একটা গুনাহের জন্য কোরবানী।
15“তারপর সেই ভেড়া দু’টার একটা নিয়ে আসবে। হারুন ও তার ছেলেরা সেই ভেড়াটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। 16এর পর ভেড়াটা জবাই করে তার রক্ত নিয়ে কোরবানগাহের চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। 17পরে ভেড়াটা কেটে টুকরা টুকরা করে তার পা এবং পেটের ভিতরকার অংশগুলো ধুয়ে নিয়ে মাথা ও অন্যান্য টুকরাগুলোর সংগে রাখবে। 18তারপর তার সবটাই কোরবানগাহের উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা মাবুদের উদ্দেশে পোড়ানো-কোরবানী, অর্থাৎ মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী, যার গন্ধে তিনি খুশী হন।
19“তারপর অন্য ভেড়াটাও নেবে এবং হারুন ও তার ছেলেরা তার মাথার উপরে তাদের হাত রাখবে। 20পরে ভেড়াটা জবাই করে তার কিছু রক্ত নিয়ে হারুন ও তার ছেলেদের ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দেবে। এছাড়া আরও কিছু রক্ত নিয়ে কোরবানগাহের চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। 21তারপর কিছু অভিষেকের তেল এবং কোরবানগাহ্‌ থেকে কিছু রক্ত নিয়ে হারুন ও তার ছেলেদের শরীরে এবং পোশাকের উপর ছিটিয়ে দেবে। এতে পোশাকসুদ্ধ তাকে ও তার ছেলেদের পাক-পবিত্র করা হবে।
22“তারপর তুমি সেই ভেড়াটার চর্বি, চর্বিভরা লেজ, পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, কলিজার উপরের অংশ, চর্বি-জড়ানো কিড্‌নি দু’টা এবং ডান দিকের রানটা নেবে। এটা হল পদে বহাল করবার কাজের ভেড়া। 23তারপর মাবুদের সামনে রাখা খামিহীন রুটির টুকরি থেকে একটা রুটি, একটা তেলে ময়ান দেওয়া পিঠা ও চাপাটি নেবে। 24এগুলো সব হারুন ও তার ছেলেদের হাতে দিয়ে দোলন-কোরবানী হিসাবে মাবুদের সামনে তা দোলাবে। 25তারপর সেগুলো তাদের হাত থেকে নিয়ে কোরবানগাহের উপর পোড়ানো-কোরবানীর সংগে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী যার গন্ধে তিনি খুশী হন। 26হারুনের ইমাম-পদে বহাল করবার কাজের এই ভেড়াটার বুকের অংশ নিয়ে দোলন-কোরবানী হিসাবে মাবুদের সামনে তা দোলাবে। এটা তোমার ভাগে পড়বে।
27“হারুন ও তার ছেলেদের ইমাম-পদে বহাল করবার ভেড়াটা থেকে নেওয়া দোলন-কোরবানীর গোশ্‌ত এবং কোরবানী দেওয়া রানের গোশ্‌ত পাক-পবিত্র করবে। 28এইভাবে বনি-ইসরাইলদের দেওয়া সব যোগাযোগ-কোরবানীর এই অংশগুলো সব সময় হারুন ও তার ছেলেদের দেওয়া হবে। এই অংশগুলোই হবে মাবুদের উদ্দেশে বনি-ইসরাইলদের দান।
29“হারুনের পবিত্র পোশাকগুলো তার বংশধরেরা পাবে। এগুলো পরিয়েই তাদের অভিষেক ও ইমামের পদে বহাল করতে হবে। 30হারুনের পরে তার যে ছেলে ইমাম হয়ে মিলন-তাম্বুর পবিত্র স্থানে এবাদত-কাজ করতে যাবে তাকে সাত দিন পর্যন্ত এই পোশাক গায়ে রাখতে হবে।
31“বহাল করবার কাজের এই ভেড়াটার গোশ্‌ত নিয়ে একটা পবিত্র জায়গায় সিদ্ধ করতে হবে। 32মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে হারুন ও তার ছেলেরা টুকরিতে রাখা রুটির সংগে এই গোশ্‌ত খাবে। 33তাদের ইমামের কাজে বহাল করবার জন্য এবং পাক-পবিত্র করবার জন্য যে সব কোরবানী দেওয়া খাবার গুনাহ্‌ ঢাকবার কাজে ব্যবহার করা হবে তা হারুন ও তার ছেলেদের খেতে হবে। অন্য কেউ তা খেতে পারবে না, কারণ তা পবিত্র খাবার। 34এই বহাল করবার কাজের ভেড়ার কোন গোশ্‌ত বা রুটি যদি সকাল পর্যন্ত থেকে যায় তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তা যেন কেউ না খায়, কারণ সেটা পবিত্র খাবার।
35“হারুন ও তার ছেলেদের প্রতি আমি যা যা তোমাকে করতে বললাম তা সবই তুমি করবে। এই বহাল করবার কাজটা তুমি সাত দিন ধরে করবে। 36গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার জন্য গুনাহের কোরবানী হিসাবে তুমি সেই সাত দিনের প্রত্যেক দিন একটা করে ষাঁড় কোরবানী দেবে। গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার কোরবানী দ্বারা কোরবানগাহ্‌টা পাক-সাফ করবে এবং তেল ঢেলে সেটা পাক-পবিত্র করে নেবে। 37কোরবানগাহ্‌টা পাক-সাফ করে নেবার জন্য সাত দিন পর্যন্ত প্রতিদিন গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার কোরবানী দ্বারা সেটা পাক-পবিত্র করে নিতে হবে। তাতে সেই কোরবানগাহ্‌টা একটা মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা কিছু আসবে তা পাক-পবিত্র হতে হবে।
38“এর পর থেকে সেই কোরবানগাহের উপর প্রত্যেক দিন নিয়মিত ভাবে দু’টা করে ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী দিতে হবে; তার প্রত্যেকটার বয়স হবে এক বছর। 39একটা কোরবানী দিতে হবে সকালবেলায় আর অন্যটি সন্ধ্যাবেলায়। 40প্রথম ভেড়াটার সংগে এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা প্রায় এক লিটার ছেঁচা জলপাইয়ের তেলের সংগে মিশিয়ে কোরবানী করতে হবে। এছাড়া ঢালন-কোরবানী হিসাবে প্রায় এক লিটার আংগুর-রসও কোরবানী করতে হবে। 41সন্ধ্যাবেলায় যে ভেড়াটা কোরবানী দেওয়া হবে তার সংগে সকালবেলার মত সেই একই রকমের শস্য-কোরবানী এবং ঢালন-কোরবানী করতে হবে। এটা হবে মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী যার গন্ধে তিনি খুশী হন।
42“বংশের পর বংশ ধরে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে মাবুদের, অর্থাৎ আমার সামনে নিয়মিত ভাবে এই পোড়ানো-কোরবানী দিতে হবে। সেখানেই আমি তোমাদের সংগে দেখা করব এবং তোমার সংগে কথা বলব। 43বনি-ইসরাইলদের সংগে আমি সেখানে দেখা করব এবং আমার মহিমা সেই জায়গাটাকে পবিত্র করবে।
44“আমি মিলন-তাম্বু ও কোরবানগাহ্‌ পাক-পবিত্র করব এবং আমার ইমাম হবার জন্য হারুন ও তার ছেলেদেরও পাক-পবিত্র করব। 45আমি বনি-ইসরাইলদের মাবুদ হয়ে তাদের মধ্যে বাস করব। 46তখন তারা জানতে পারবে যে, আমি আল্লাহ্‌ই তাদের মাবুদ। আমি তাদের মধ্যে বাস করব বলেই মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে এনেছি। আমি আল্লাহ্‌ই তাদের মাবুদ।
 
নির্গমন পুস্তক: ৩০ 
 
ধূপগাহ্‌
1“ধূপ জ্বালাবার জন্য তুমি বাব্‌লা কাঠ দিয়ে একটা ধূপগাহ্‌ তৈরী করাবে। 2ধূপগাহ্‌টি হবে চারকোনা বিশিষ্ট- এক হাত লম্বা, এক হাত চওড়া আর দু’হাত উঁচু। শিংসুদ্ধ গোটা ধূপগাহ্‌টি মাত্র একটা জিনিসই হবে। 3ধূপগাহের উপরটা, তার চারপাশ এবং শিংগুলো খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে আর তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। 4ধূপগাহের দু’পাশে নক্‌শার নীচে দু’টা করে সোনার কড়া লাগাতে হবে যাতে তার ভিতর দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকিয়ে সেটা বয়ে নেওয়া যায়। 5সেই ডাণ্ডাগুলো বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। 6সাক্ষ্য-সিন্দুকের কাছে, অর্থাৎ সাক্ষ্য-ফলকের উপরকার ঢাকনাটার কাছে যে পর্দা থাকবে এই ধূপগাহ্‌টা তার সামনে রাখবে; সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব।
7“প্রত্যেক দিন সকালে বাতিগুলো ঠিক করে রাখবার সময় হারুন ঐ ধূপগাহের উপর খোশবু ধূপ জ্বালাবে। 8বেলা শেষে বাতি ধরাবার সময়েও আবার সে ধূপ জ্বালাবে। এতে তোমাদের বংশের পর বংশ ধরে মাবুদের সামনে নিয়মিত ভাবে ধূপ জ্বলবে। 9এই ধূপগাহের উপর অন্য কোন ধূপ জ্বালাবে না কিংবা কোন পোড়ানো-কোরবানী বা শস্য-কোরবানী বা ঢালন-কোরবানী করবে না। 10গুনাহ্‌ ঢাকবার জন্য গুনাহের কোরবানীর রক্ত ধূপগাহের শিংগুলোর উপরে লাগিয়ে দিয়ে হারুন বছরে একবার করে ধূপগাহ্‌টি পাক-সাফ করে নেবে। এইভাবে বছরে একবার করে বংশের পর বংশ ধরে মহা-ইমামকে এই কাজ করে যেতে হবে। এটা মাবুদের উদ্দেশ্যে মহাপবিত্র ধূপগাহ্‌।”
জীবন-মূল্যের রূপা
11তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 12“বনি-ইসরাইলদের লোকসংখ্যা জানবার জন্য যখন আদমশুমারী করা হবে সেই সময় প্রত্যেককেই মাবুদকে রূপা দিয়ে তার জীবন-মূল্য দিতে হবে। এতে আদমশুমারীর দরুন যে বিপদ আসবার কথা তা তাদের উপর আসবে না। 13গুণে রাখা লোকদের দলে যাবার আগে প্রত্যেককে দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের আধা শেখেল করে দিতে হবে। এই আধা শেখেল হবে মাবুদের। 14যারা গুণে রাখা দলে যাবে, অর্থাৎ যাদের বয়স বিশ বছর কিংবা তার বেশী, মাবুদকে তাদের এটা দিতেই হবে। 15জীবন-মূল্য হিসাবে মাবুদকে এটা দেবার সময় ধনীরও আধা শেখেলের বেশী দিতে হবে না, আবার গরীবেরও এর কম দেওয়া চলবে না। 16বনি-ইসরাইলদের কাছ থেকে এই সব জীবন-মূল্যের রূপা নিয়ে মিলন-তাম্বুর কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই সব জীবন-মূল্য যা তোমাদের জীবনের বদলে দেওয়া হবে তা মাবুদের সামনে বনি-ইসরাইলদের তুলে ধরবে।”
হাত-পা ধোয়ার গামলা
17তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 18“হাত-পা ধোয়ার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা গামলা আর তা বসাবার জন্য ব্রোঞ্জেরই একটা আসন তৈরী করাতে হবে। মিলন-তাম্বু ও কোরবানগাহের মাঝামাঝি জায়গায় সেটা বসিয়ে তার মধ্যে পানি রাখবে। 19ঐ পানি দিয়ে হারুন ও তাঁর ছেলেরা হাত-পা ধোবে। 20-21যাতে তারা মারা না পড়ে সেইজন্য মিলন-তাম্বুতে ঢুকবার আগে প্রত্যেকবারই তাদের ঐ পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে। মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী দিয়ে তাঁর এবাদত-কাজ করবার জন্য কোরবানগাহের কাছে যাবার সময়েও তাদের হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে যাতে তারা মারা না পড়ে। বংশের পর বংশ ধরে হারুন ও তার বংশধরদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম।”
অভিষেক-তেল
22তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 23“তুমি কতগুলো ভাল জাতের মসলা, অর্থাৎ পাঁচ কেজি গন্ধরস, আড়াই কেজি খোশবু দারচিনি, আড়াই কেজি বচ, 24আর পাঁচ কেজি দারচিনি ফুলের কুঁড়ি নেবে। এছাড়া সাড়ে তিন লিটার জলপাইয়ের তেলও নেবে। 25খোশবু জিনিস তৈরী করবার মত করে তুমি এই সব খোশবু মসলা একসংগে মিশিয়ে নিয়ে অভিষেকের জন্য তেল তৈরী করাবে। এটাই হবে পবিত্র অভিষেক-তেল। 26এই অভিষেক-তেল দিয়ে তুমি মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, 27টেবিল ও তার উপরকার জিনিসপত্র, বাতিদান ও তার সাজ-সরঞ্জাম, ধূপগাহ্‌, 28কোরবানগাহ্‌ ও তার সব পাত্র এবং আসনসুদ্ধ গামলাটা পাক-পবিত্র করবে। 29তাতে সেগুলো মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা আসবে তা পাক-পবিত্র হতে হবে।
30“হারুন ও তার ছেলেরা যাতে আমার ইমাম হতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের অভিষেক করে পাক-পবিত্র করে নেবে। 31তুমি বনি-ইসরাইলদের জানাবে যে, বংশের পর বংশ ধরে এটাই হবে তাদের পবিত্র অভিষেক-তেল। 32সাধারণ লোকদের গায়ে তারা যেন তা না দেয় এবং ঐ সব মসলা দিয়ে তারা যেন এই নিয়মে কোন তেলও তৈরী না করে। এই তেল পবিত্র; সেইজন্য তাদেরও সেটা সেইভাবেই দেখতে হবে। 33যদি কেউ এই রকম খোশবু জিনিস তৈরী করে কিংবা ইমাম ছাড়া আর কারও গায়ে তা দেয় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।”
খোশবু ধূপ
34-35তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি কতগুলো খোশবু মসলা, অর্থাৎ গুগ্‌গুলু, নখী, কুন্দুরু আর খাঁটি লোবান নেবে। এগুলো সমান সমান পরিমাণে মিশিয়ে খোশবু ধূপ তৈরী করাবে। যারা খোশবু জিনিস তৈরী করে তাদের দিয়ে কাজটা করিয়ে নেবে। এর মধ্যে লবণও দিতে হবে; এতে কোন ভেজাল থাকবে না আর তা হবে পবিত্র। 36এর কিছুটা নিয়ে গুঁড়া করে মিলন-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে রাখবে। সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব। এই ধূপ তোমরা মহাপবিত্র জিনিস বলে মনে করবে। 37কেউ যেন এই নিয়মে এই সব খোশবু জিনিস দিয়ে নিজের ব্যবহারের জন্য কোন ধূপ তৈরী না করে। এটা যে মাবুদের উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র তা তোমরা মনে রাখবে। 38খোশবু জিনিস হিসাবে ব্যবহারের জন্য যদি কেউ তা তৈরী করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।”
 
নির্গমন পুস্তক : ৩১ 
 
বাছাই-করা দু’জন কারিগর
1তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 2“দেখ, আমি এহুদা-গোষ্ঠীর ঊরির ছেলে বৎসলেলকে বেছে নিয়েছি। ঊরি হল হূরের ছেলে। 3আমি এই বৎসলেলকে আল্লাহ্‌র রূহ্‌ দিয়ে পূর্ণ করেছি। আমি তাকে জ্ঞান, বিবেচনাশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং সব রকম কারিগরী কাজের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছি। 4তাতে সে নিজের মন থেকে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের উপর সুন্দর সুন্দর নক্‌শা তৈরী করতে পারবে, 5দামী দামী পাথর কাটতে ও বসাতে পারবে আর কাঠের এবং অন্য সব রকম হাতের কাজও করতে পারবে। 6এছাড়া তাকে সাহায্য করবার জন্য আমি দান-গোষ্ঠীর অহীষামকের ছেলে অহলীয়াবকেও বেছে নিয়েছি। যে সব ওস্তাদ কারিগর এই কাজ করবে তাদেরও আমি এমন জ্ঞান দিয়ে রেখেছি যাতে তোমাকে দেওয়া আমার হুকুম মতই তারা সব জিনিস তৈরী করতে পারে। এই সব জিনিস এই: 7মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক ও তার উপরকার ঢাকনা, তাম্বুর আসবাবপত্র, 8টেবিল ও তার সংগের জিনিসপত্র, খাঁটি সোনার বাতিদান ও তার জিনিসপত্র, ধূপগাহ্‌, 9-10কোরবানগাহ্‌ ও তার বাসন-কোসন, গামলা আর তা বসাবার আসন এবং ইমামের কাজের জন্য ইমাম হারুনের জন্য বুনানো পবিত্র পোশাক ও তার ছেলেদের পোশাক। 11অভিষেকের তেল আর পবিত্র স্থানের জন্য খোশবু ধূপও এই সব জিনিসের মধ্যে রয়েছে। তোমাকে দেওয়া আমার হুকুম অনুসারেই যেন তারা সেগুলো তৈরী করে।”
বিশ্রামবার
12-13তারপর মাবুদ মূসাকে বনি-ইসরাইলদের এই কথা বলতে বললেন: “তোমরা আমার প্রত্যেকটি বিশ্রামবার পালন করবে। এই বিশ্রামবার বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের ও আমার মধ্যে এমন একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে যার দ্বারা তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমিই মাবুদ এবং আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।
14“তোমরা বিশ্রামবার পালন করবে, কারণ এই দিনটা তোমাদের জন্য পবিত্র করা হয়েছে। যদি কেউ এই দিনটা পালন না করে তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে; যদি কেউ এই দিনে কোন কাজ করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। 15তোমরা সপ্তার ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটা হবে বিশ্রামের দিন, আর মাবুদের উদ্দেশ্যে সেটা একটা পবিত্র দিন। যদি কেউ এই দিনে কাজ করে তবে তাকে হত্যা করতে হবে। 16একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে এই বিশ্রামবার বনি-ইসরাইলদের বংশের পর বংশ ধরে পালন করতে হবে। 17এই দিনটা আমার ও বনি-ইসরাইলদের মধ্যে চিরকালের জন্য একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, কারণ আমি ছয় দিনের মধ্যে আসমান ও জমীন সৃষ্টি করেছি এবং সপ্তম দিনে আমি কোন কাজ করি নি।”
18তুর পাহাড়ের উপর মূসার কাছে এই সব কথা বলা শেষ করে মাবুদ তাঁকে দু’খানা সাক্ষ্য-ফলক দিলেন। এই দু’টা পাথরের ফলকের উপর আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর হুকুম লিখেছিলেন।

নির্গমন পুস্তক, ২৪-২৭ পরিচ্ছেদ

নির্গমন পুস্তক: ২৪

হযরত মূসা (আঃ)-এর মধ্য দিয়ে আল্লাহ্‌র ব্যবস্থা স্থাপন
1পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, “হারুন, নাদব, অবীহূ আর বনি-ইসরাইলদের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা এবং তুমি আমার কাছে উঠে এস। আসবার সময়ে তোমরা দূরে থেকে আমাকে সেজদা করবে। 2কিন্তু তুমি একাই আমার কাছে এগিয়ে আসবে, অন্যেরা আসবে না। এরা ছাড়া অন্য বনি-ইসরাইলরা যেন তোমার সংগে উঠে না আসে।”
3মূসা যখন ফিরে গিয়ে লোকদের কাছে মাবুদের সমস্ত কথা বললেন এবং তাঁর সব আইন ঘোষণা করলেন তখন লোকেরা একসংগে বলল, “মাবুদ যা যা বলেছেন আমরা তা সবই করব।” 4মাবুদ যে সব কথা বলেছিলেন মূসা তা লিখে রাখলেন।
পরের দিন মূসা খুব সকালে উঠে পাহাড়ের নীচে একটা কোরবানগাহ্‌ তৈরী করলেন এবং ইসরাইলীয় বারো গোষ্ঠীর কথা মনে করে বারোটা পাথরের থাম তৈরী করলেন। 5তারপর তিনি কয়েকজন ইসরাইলীয় যুবককে পাঠিয়ে দিলেন আর তারা গিয়ে মাবুদের উদ্দেশে অনেকগুলো পোড়ানো-কোরবানী দিল এবং যোগাযোগ-কোরবানী হিসাবে অনেক ষাঁড়ও কোরবানী দিল। 6মূসা কোরবানীর রক্তের অর্ধেকটা নিয়ে কয়েকটা পাত্রে রাখলেন এবং বাকী অর্ধেক তিনি কোরবানগাহের উপরে ছিটিয়ে দিলেন। 7তারপর তিনি ব্যবস্থা-লেখা কিতাবটা নিয়ে লোকদের তেলাওয়াত করে শোনালেন।
এর জবাবে লোকেরা বলল, “আমরা বাধ্য থাকব এবং মাবুদ যা যা বলেছেন তা সবই পালন করব।”
8এই কথা শুনে মূসা রক্ত নিয়ে লোকদের উপর ছিটিয়ে দিয়ে বললেন, “এই সেই ব্যবস্থার রক্ত, যে ব্যবস্থা মাবুদ তোমাদের জন্য এই সব কথা অনুসারে স্থির করেছেন।”
9-10এর পর মূসা, হারুন, নাদব, অবীহূ এবং বনি-ইসরাইলদের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা পাহাড়ের উপর উঠে গিয়ে বনি-ইসরাইলদের আল্লাহ্‌কে দেখলেন। তাঁর পায়ের তলায় ছিল পরিষ্কার আকাশের মত নীলকান্তমণি দিয়ে তৈরী মেঝের মত একটা কিছু। 11বনি-ইসরাইলদের এই সব নেতারা যদিও আল্লাহ্‌কে দেখলেন তবু তিনি তাঁদের মেরে ফেললেন না। তাঁরা তাঁকে দেখলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করলেন।
তুর পাহাড়ের উপর হযরত মূসা (আঃ)
12তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি পাহাড়ের উপরে আমার কাছে উঠে এসে কিছুকাল এখানেই থাক। লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য পাথরের যে ফলকের উপর আমি শরীয়ত ও হুকুম লিখে রেখেছি তা আমি তোমাকে দেব।”
13এই কথা শুনে মূসা তাঁর সাহায্যকারী ইউসাকে নিয়ে রওনা হলেন। তারপর তিনি আল্লাহ্‌র পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন। 14তিনি বৃদ্ধ নেতাদের বলে গেলেন, “আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। হারুন আর হূর আপনাদের সংগে রইলেন। ঝগড়া-বিবাদ হলে লোকেরা যেন তাঁদের কাছে যায়।”
15মূসা পাহাড়ে উঠবার সময় পাহাড়টা মেঘে ঢেকে গেল, 16আর তুর পাহাড়ের উপর মাবুদের মহিমা স্থির হয়ে রইল। ছয় দিন পর্যন্ত পাহাড়টা মেঘে ঢাকা রইল। তারপর সপ্তম দিনে সেই মেঘের মধ্য থেকে মাবুদ মূসাকে ডাকলেন। 17বনি-ইসরাইলদের চোখে মাবুদের মহিমা জ্বলন্ত আগুনের মত হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দেখা দিল। 18পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে মূসা সেই মেঘের ভিতরে ঢুকে গেলেন। তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সেই পাহাড়ে রইলেন।
নির্গমন পুস্তক - ২৫ 
মাবুদের আবাস-তাম্বুর জন্য দান
1মাবুদ মূসাকে বললেন, 2“বনি-ইসরাইলদের বল যেন তারা আমার জন্য দান নিয়ে আসে। নিজের ইচ্ছায় যারা তা আনবে তুমি তাদের কাছ থেকে তা বুঝে নেবে। 3তারা যেন এই সব দান আনে: সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জ; 4নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং মসীনা সুতা; ছাগলের লোম; 5লাল রং-করা ভেড়ার চামড়া এবং শুশুকের চামড়া; বাব্‌লা কাঠ; 6আলো জ্বালাবার জন্য জলপাইয়ের তেল; অভিষেক-তেল ও খোশবু ধূপের জন্য মসলা; 7এফোদ ও বুক-ঢাকনের উপরে বসাবার জন্য বৈদূর্যমণি এবং অন্যান্য দামী পাথর। 8বনি-ইসরাইলদের দিয়ে তুমি আমার থাকবার জন্য একটা পবিত্র জায়গা তৈরী করিয়ে নেবে। তাতে আমি তাদের মধ্যে বাস করব। 9যে নমুনা আমি তোমাকে দেখাতে যাচ্ছি ঠিক সেই রকম করেই তুমি আমার এই আবাস-তাম্বু ও সব আসবাবপত্র তৈরী করাবে।
সাক্ষ্য-সিন্দুক
10“বাব্‌লা-কাঠ দিয়ে তারা একটা সিন্দুক তৈরী করবে। সেটা লম্বায় হবে আড়াই হাত, চওড়ায় ও উচ্চতায় দেড় হাত। 11তার ভিতর ও বাইর খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে এবং তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। 12ছাঁচে ফেলে চারটা সোনার কড়া তৈরী করে তার চারটা পায়ায় লাগাতে হবে- এপাশে দু’টা, ওপাশে দু’টা। 13তারপর বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করে তা সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। 14সিন্দুকটা বয়ে নেবার জন্য তার দুই পাশের কড়ার মধ্য দিয়ে সেই ডাণ্ডা দু’টা ঢুকিয়ে দেবে। 15ডাণ্ডা দু’টা সেই সিন্দুকের কড়ার মধ্যে ঢুকানোই থাকবে; সেগুলো খুলে নেওয়া চলবে না। 16যে সাক্ষ্য-ফলক আমি তোমাকে দেব তা তুমি এই সিন্দুকের মধ্যে রাখবে।
17“খাঁটি সোনা দিয়ে সেই সিন্দুকের জন্য একটা ঢাকনা তৈরী করাবে, যার উপর গুনাহ্‌ ঢাকা দেওয়া হবে। এই ঢাকনাটা লম্বায় হবে আড়াই হাত এবং চওড়ায় দেড় হাত। 18সেই ঢাকনার কিনারায় সোনা পিটিয়ে দু’টি কারুবী তৈরী করাতে হবে। 19কারুবী দু’টি সিন্দুকের দুই কিনারায় থাকবে। সেই কারুবী দু’টি এমনভাবে ঢাকনা থেকে তৈরী করাতে হবে যাতে সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হয়। 20তাদের ডানাগুলো উপর দিকে মেলে দেওয়া থাকবে এবং তার ছায়ার নীচে থাকবে সিন্দুকের ঢাকনাটা। কারুবীরা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে থাকবে এবং তাদের চোখ থাকবে ঢাকনাটার দিকে। 21এই ঢাকনাটা সিন্দুকের উপর রাখতে হবে এবং যে সাক্ষ্য-ফলক আমি তোমাকে দেব সেটা তুমি সেই সিন্দুকের মধ্যে রাখবে। 22এই সাক্ষ্য-সিন্দুকের ঢাকনার উপরে কারুবী দু’টির মাঝখানে আমি তোমার সংগে দেখা করে বনি-ইসরাইলদের জন্য আমার সমস্ত হুকুম তোমাকে দেব।
আবাস-তাম্বুর টেবিল
23“বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দুই হাত লম্বা, এক হাত চওড়া ও দেড় হাত উঁচু করে একটা টেবিল তৈরী করাতে হবে। 24খাঁটি সোনা দিয়ে সেটা মুড়িয়ে দেবে এবং তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। 25টেবিলটার চারপাশের কিনারায় চার আংগুল উঁচু করে একটা বেড় তৈরী করাতে হবে, আর তার উপরেও সোনা দিয়ে নক্‌শার কাজ করাতে হবে। 26টেবিলের চার কোণাতে চার পায়ার উপরে চারটা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। 27সেই কড়াগুলো টেবিলের কিনারায় ঐ উঁচু বেড়ের কাছাকাছি থাকবে যাতে টেবিলটা বয়ে নেবার জন্য সেগুলোর মধ্য দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকানো যায়। 28ডাণ্ডা দু’টা বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়াতে হবে এবং তা দিয়ে টেবিলটা বয়ে নিতে হবে। 29টেবিলের বড় এবং ছোট থালাগুলো আর যে সব কলসী ও পেয়ালা থেকে ঢালন-কোরবানীর জিনিস ঢালতে হবে তা সবই খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। 30সেই টেবিলের উপরে আমার সামনে পবিত্র-রুটি রাখতে হবে, আর তা যেন সব সময় সেখানে থাকে।
সোনার বাতিদান
31“খাঁটি সোনা দিয়ে একটা বাতিদান তৈরী করাতে হবে। তার নীচের অংশ এবং তা থেকে উঠে যাওয়া ডাঁটিটা সোনা পিটিয়ে তৈরী করাবে। তার ফুলের মত পেয়ালাগুলো, কুঁড়ি ও ফুল বাতিদান থেকে বের হয়ে আসবে এবং সমস্তটা মিলে মাত্র একটা জিনিসই হবে। 32বাতিদানের দু’পাশ দিয়ে তিনটা তিনটা করে মোট ছয়টা ডাল থাকবে। 33ফুল ও কুঁড়িসুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে তিনটা পেয়ালা প্রথম ডালের মাঝে মাঝে থাকবে। তার পরের ডালেও ঐ রকম তিনটা পেয়ালা থাকবে। বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা ছয়টা ডাল একই রকম হবে। 34বাতিদানের ডাঁটিটার মাঝে মাঝেও ফুল ও কুঁড়িসুদ্ধ বাদাম ফুলের মত দেখতে চারটা পেয়ালা থাকবে। 35বাতিদান থেকে বের হয়ে আসা মোট ছয়টা ডালের মধ্যে প্রথম দু’টা যেখানে মিশবে তার নীচে থাকবে একটা কুঁড়ি, দ্বিতীয় দু’টার নীচে আর একটা কুঁড়ি এবং তৃতীয় দু’টার নীচে আর একটা কুঁড়ি। 36কুঁড়ি এবং ডাল সবই বাতিদান থেকে বের হয়ে আসবে এবং সমস্তটা মিলে একটা জিনিসই হবে। সবটাই খাঁটি সোনা পিটিয়ে তৈরী করাতে হবে। 37তারপর খাঁটি সোনা দিয়ে সাতটা বাতি তৈরী করিয়ে ঐ বাতিদানের উপর এমনভাবে বসাতে হবে যাতে বাতিগুলো জ্বালালে পর বাতিদানের সামনের জায়গাটায় আলো পড়ে। 38সল্‌তে পরিষ্কার করবার চিম্‌টা এবং সল্‌তের পোড়া অংশ রাখবার জন্য কয়েকটা পাত্রও খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। 39সব কিছু সুদ্ধ বাতিদানটা তৈরী করবার জন্য ত্রিশ কেজি খাঁটি সোনা দরকার হবে। 40এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে যে নমুনা দেখানো হল ঠিক সেইমতই যেন সব কিছু তৈরী করা হয় তা দেখো।
নির্গমন পুস্তক : ২৬ 
আবাস-তাম্বু
1“আমার আবাস-তাম্বু দশ টুকরা কাপড় দিয়ে তৈরী করাতে হবে। টুকরাগুলো পাকানো মসীনা সুতা এবং নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার মধ্যে কারুবীদের ছবি বুনিয়ে নেবে। 2টুকরাগুলো সব একই মাপের হবে- লম্বায় আটাশ হাত এবং চওড়ায় চার হাত। 3টুকরাগুলো পাঁচটা পাঁচটা করে একসংগে জুড়ে দু’টা বড় টুকরা করতে হবে। 4প্রথম বড় টুকরাটার একপাশের চওড়ার দিকের কিনারা ধরে নীল সুতা দিয়ে কতগুলো ফাঁস তৈরী করাবে। দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করাতে হবে। 5এইভাবে পঞ্চাশটা ফাঁস প্রথম বড় টুকরার কিনারায় এবং আরও পঞ্চাশটা ফাঁস দ্বিতীয় বড় টুকরার কিনারায় থাকবে। দুই বড় টুকরার এই ফাঁসগুলো একটা আর একটার ঠিক উল্টা দিকে থাকবে। 6তারপর পঞ্চাশটা সোনার আংটা তৈরী করে সেগুলো ফাঁসের মধ্যে ঢুকিয়ে সেই বড় টুকরা দু’টা আট্‌কে দিতে হবে। তাতে দু’টা বড় টুকরা দিয়ে একটা আবাস-তাম্বু হবে।
7“আবাস-তাম্বুর উপরের অংশ ঢেকে দেবার জন্য ছাগলের লোম দিয়ে চাদরের মত করে এগারটা টুকরা বুনিয়ে নিতে হবে। 8টুকরাগুলো একই মাপের হবে- ত্রিশ হাত লম্বা ও চার হাত চওড়া। 9তা থেকে পাঁচটা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে একটা বড় টুকরা করতে হবে। বাকী ছয়টা টুকরা একসংগে জুড়ে নিয়ে আর একটা বড় টুকরা করতে হবে। এই বড় টুকরার মধ্যে যে টুকরাটা বেশী থাকবে সেটা তাম্বুর সামনের দিকে দু’ভাঁজ করে দিতে হবে। 10প্রথম বড় টুকরাটা একপাশের চওড়ার দিকের কিনারা ধরে পঞ্চাশটা ফাঁস তৈরী করাতে হবে; দ্বিতীয় বড় টুকরাতেও ঠিক তা-ই করাতে হবে। 11তারপর ব্রোঞ্জ দিয়ে পঞ্চাশটা আংটা তৈরী করিয়ে তা ফাঁসের মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে সেই বড় টুকরা দু’টা একসংগে আট্‌কে দিতে হবে। তাতে বড় টুকরা দু’টা মিলে একটা তাম্বু-ঢাকন হবে। 12প্রথম বড় টুকরাটার যে অর্ধেকটা পিছন দিকে ঝুলে পড়বে সেটা সেইভাবেই থাকবে। 13ছাগলের লোমের টুকরাখানা তলার কাপড় থেকে দু’পাশে এক হাত করে বড় হবার দরুন তা দু’পাশে ঝুলে পড়ে গোটা আবাস-তাম্বুটা ঢেকে ফেলবে। 14তার উপরটা ঢেকে দেবার জন্য লাল রং করা ভেড়ার চামড়া দিয়ে একটা ঢাকনি তৈরী করাতে হবে, আর তার উপরটা ঢেকে দিতে হবে শুশুকের চামড়ার ঢাকনি দিয়ে।
15“আবাস-তাম্বুর জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে কতগুলো খাড়া ফ্রেম তৈরী করাতে হবে। 16প্রত্যেকটা ফ্রেম দশ হাত লম্বা আর দেড় হাত চওড়া হবে। 17প্রত্যেক ফ্রেমের দু’টা করে পায়া থাকবে। আবাস-তাম্বুর সব ফ্রেমগুলো একই রকম করে তৈরী করাতে হবে। 18দক্ষিণ দিকের জন্য বিশটা ফ্রেম তৈরী করাতে হবে। 19ঐ ফ্রেমগুলোর প্রত্যেকটা পায়ার নীচে বসাবার জন্য চল্লিশটা রূপার পা-দানি তৈরী করাবে- প্রত্যেকটা ফ্রেমের জন্য দু’টা করে, অর্থাৎ প্রত্যেকটা পায়ার জন্য একটা করে। 20-21আবাস-তাম্বুর অন্য দিকের জন্যও, অর্থাৎ উত্তর দিকের জন্যও বিশটা ফ্রেম এবং প্রত্যেকটা ফ্রেমের জন্য দু’টা করে মোট চল্লিশটা রূপার পা-দানি তৈরী করাবে। 22তাম্বুর পশ্চিম দিকের জন্য, অর্থাৎ পিছন দিকের জন্য ছয়টা ফ্রেম, 23আর পিছন দিকের দুই কোণার জন্যও আরও দু’টা ফ্রেম তৈরী করাবে। 24এই ফ্রেম দু’টার প্রত্যেকটা দুই কোণার দু’টা ফ্রেমের সংগে একত্র করে নীচ থেকে উপর পর্যন্ত জোড়া দিতে হবে। প্রত্যেকটি কোণার দুই ফ্রেম ও পাশের ফ্রেমটা আংটা দিয়ে একসংগে জুড়ে দিতে হবে। দুই কোণা একই রকম হবে। 25এতে পিছন দিকে আটটা ফ্রেম হবে এবং প্রত্যেকটা ফ্রেমের নীচে দেবার জন্য দু’টা করে মোট ষোলটা রূপার পা-দানি থাকবে।
26-27“আবাস-তাম্বুর ফ্রেমগুলোর জন্য বাব্‌লা কাঠের হুড়কা তৈরী করাতে হবে। এর মধ্যে পাঁচটা হুড়কা হবে একদিকের ফ্রেমের জন্য এবং পাঁচটা অন্য দিকের ফ্রেমের জন্য আর পাঁচটা পিছনের, অর্থাৎ পশ্চিম দিকের ফ্রেমের জন্য। 28উপর এবং নীচের হুড়কাগুলোর মধ্যেকার লম্বা হুড়কাটা ফ্রেমের মাঝখান দিয়ে এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত চলে যাবে। 29ফ্রেমগুলো সোনা দিয়ে মুড়াতে হবে এবং হুড়কাগুলো ঢুকাবার জন্য সোনার কড়া তৈরী করে ফ্রেমে লাগাতে হবে। সেই হুড়কাগুলোও সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নেবে।
30“এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে আবাস-তাম্বুর যে নমুনা দেখানো হল তুমি ঠিক সেইমত করেই সেটা তৈরী করাবে।
31“নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে একটা পর্দা তৈরী করাবে। ওস্তাদ কারিগর দিয়ে তার উপরে কারুবীদের ছবি বুনিয়ে নেবে। 32সেই পর্দাটা বাব্‌লা কাঠের চারটা খুঁটির সংগে লাগানো সোনার হুক থেকে ঝুলিয়ে দিতে হবে। খুঁটিগুলো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে এবং সেগুলো রূপার পা-দানির উপর দাঁড়িয়ে থাকবে। 33পর্দাটা উপরের মসীনার কাপড়ে লাগানো আংটার নীচে ঝুলানো থাকবে। এই পর্দার পিছনে সাক্ষ্য-সিন্দুকটি রাখবে। পর্দাটা মহাপবিত্র স্থান ও পবিত্র স্থানের মাঝখানে থেকে দু’টি স্থানকে আলাদা করে রাখবে। 34এই মহাপবিত্র স্থানের ভিতরে সাক্ষ্য-সিন্দুকের উপরে তার ঢাকনাটা রাখবে। 35এই পর্দাটার বাইরে পবিত্র স্থানের মধ্যে উত্তর পাশে টেবিলটা রাখতে হবে আর তার উল্টাদিকে দক্ষিণ পাশে থাকবে বাতিদানটা।
36“তাম্বুর দরজার জন্যও একটা পর্দা তৈরী করাতে হবে। সেটা হবে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে সেলাই করে নক্‌শা করা জিনিস। 37এই পর্দার জন্য সোনার হুক এবং বাব্‌লা কাঠের পাঁচটা খুঁটি তৈরী করাবে। খুঁটিগুলো সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। সেই খুঁটিগুলো বসাবার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে পাঁচটা পা-দানি তৈরী করাবে।
নির্গমন পুস্তক : ২৭ 
পোড়ানো-কোরবানগাহ্‌
1“বাব্‌লা কাঠ দিয়ে পাঁচ হাত লম্বা, পাঁচ হাত চওড়া ও তিন হাত উঁচু করে একটা চারকোনা বিশিষ্ট কোরবানগাহ্‌ তৈরী করাবে। 2কোরবানগাহ্‌টি তৈরী করবার সময় তার চার কোণার কাঠ এমনভাবে চেঁছে ফেলতে হবে যাতে চারটা শিং তৈরী হয়। তাতে শিংসুদ্ধ কোরবানগাহ্‌টি একটা গোটা জিনিস হবে। ব্রোঞ্জ দিয়ে সমস্ত কোরবানগাহ্‌টি মুড়ে দেবে। 3কোরবানগাহের ছাই ফেলবার পাত্র ও হাতা, কোরবানীর রক্ত রাখবার পেয়ালা, গোশ্‌ত তুলবার কাঁটা এবং আগুন রাখবার পাত্র সবই ব্রোঞ্জের তৈরী হবে। 4ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা ঝাঁঝরি, অর্থাৎ জাল্‌তি তৈরী করাবে। তার চার কোণায় চারটা ব্রোঞ্জের কড়া লাগাবে। 5কোরবানগাহের চারপাশ থেকে বের হয়ে আসা তাকের নীচে এই ঝাঁঝরি রাখবে। সেটা কোরবানগাহের নীচ থেকে উপরের দিকে মাঝামাঝি জায়গায় থাকবে। 6কোরবানগাহের জন্য বাব্‌লা কাঠ দিয়ে দু’টা ডাণ্ডা তৈরী করাতে হবে এবং সেই ডাণ্ডা দু’টা ব্রোঞ্জ দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। 7এই ডাণ্ডাগুলো কড়ার মধ্য দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তাতে কোরবানগাহ্‌টি বয়ে নেবার সময় ডাণ্ডাগুলো কোরবানগাহের দু’পাশে থাকবে। 8কোরবানগাহ্‌টি তক্তা দিয়ে তৈরী হবে এবং তার ভিতরটা ফাঁকা থাকবে। এই পাহাড়ের উপরে তোমাকে যেমন দেখানো হল ঠিক তেমনি করেই তুমি সেটা তৈরী করাবে।
আবাস-তাম্বুর উঠান
9“আবাস-তাম্বুর চারদিকে একটা উঠান থাকবে। এর দক্ষিণ দিকটা হবে একশো হাত। সেই দিকে থাকবে পাকানো মসীনা সুতার পর্দা। 10সেই পর্দাগুলো খাটাবার জন্য বিশটা খুঁটি থাকবে। খুঁটির নীচে থাকবে একটা করে ব্রোঞ্জের পা-দানি, আর খুঁটির সংগে লাগানো থাকবে রূপার হুক আর বাঁধন-পাত। 11উঠানের উত্তর দিকটাও হবে একশো হাত। সেখানেও থাকবে পর্দা, বিশটা খুঁটি, বিশটা ব্রোঞ্জের পা-দানি এবং খুঁটির সংগে থাকবে রূপার হুক আর বাঁধন-পাত।
12“উঠানের পশ্চিম দিকটা হবে পঞ্চাশ হাত। সেখানেও কতগুলো পর্দা ও দশটা খুঁটি থাকবে আর খুঁটির নীচে থাকবে একটা করে পা-দানি। 13উঠানের পূর্ব দিকটাও হবে পঞ্চাশ হাত। 14-15সেখানকার দরজার দু’পাশে থাকবে পনের হাত করে কতগুলো লম্বা পর্দা এবং তিনটা করে খুঁটি ও পা-দানি।
16“উঠানের দরজার জন্য চারটা খুঁটি, চারটা পা-দানি এবং বিশ হাত লম্বা একটা পর্দা থাকবে। পর্দাটা হবে নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতার একটা নক্‌শা করা জিনিস। 17উঠানের চারদিকের সব খুঁটিতে রূপার হুক ও বাঁধন-পাত এবং ব্রোঞ্জের পা-দানি থাকবে। 18উঠানটা লম্বায় হবে একশো হাত এবং পাশে পঞ্চাশ হাত। তার চারদিকের পর্দাগুলো পাঁচ হাত করে উঁচু হবে এবং সেগুলো তৈরী হবে পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে, আর খুঁটিগুলোতে থাকবে ব্রোঞ্জের পা-দানি। 19আবাস-তাম্বুতে যে সব জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে, সেগুলো যে কাজেই ব্যবহার করা হোক না কেন সবই ব্রোঞ্জ দিয়ে তৈরী করাতে হবে। এমন কি, তাম্বুর এবং উঠানের পর্দার গোঁজগুলোও হবে ব্রোঞ্জের।
বাতিদানের তেল
20“বাতিদানে যাতে আলো জ্বালিয়ে রাখা যায় সেইজন্য তুমি বনি-ইসরাইলদের হুকুম দাও যেন তারা ছেঁচা জলপাইয়ের খাঁটি তেল তোমার কাছে নিয়ে আসে। 21এই মিলন-তাম্বুর সাক্ষ্য-সিন্দুকের সামনে যে পর্দা থাকবে সেই পর্দার বাইরে হারুন ও তার ছেলেরা সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত মাবুদের সামনে বাতিগুলোর দেখাশোনা করবে। বনি-ইসরাইলরা যেন বংশের পর বংশ ধরে স্থায়ী নিয়ম হিসাবে এটা পালন করে।

নির্গমন পুস্তকের ৩২ অনুচ্ছেদ

 
1পাহাড় থেকে নেমে আসতে মূসার দেরি হচ্ছে দেখে লোকেরা হারুনের চারপাশে জড়ো হয়ে বলল, “পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনি আমাদের দেব-দেবী তৈরী করে দিন কারণ ঐ মূসা, যে আমাদের মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছে, তার কি হয়েছে আমরা জানি না।”
2জবাবে হারুন তাদের বললেন, “তোমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কানের সোনার গহনা খুলে এনে আমাকে দাও।” 3তাতে সকলে তাদের কানের গহনা খুলে এনে হারুনকে দিল। 4লোকেরা হারুনকে যা দিল তা গলিয়ে ছাঁচে ফেলে যন্ত্রপাতির সাহায্যে তিনি বাছুরের আকারে একটা মূর্তি তৈরী করলেন।
সেটা দেখে বনি-ইসরাইলরা বলল, “ভাইয়েরা, এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের দেব-দেবী। মিসর দেশ থেকে এই দেব-দেবীই তোমাদের বের করে এনেছেন।”
5এই ব্যাপার দেখে হারুন সেই বাছুরের সামনে একটা কোরবানগাহ্‌ তৈরী করে এই কথা ঘোষণা করলেন, “আগামী কাল মাবুদের উদ্দেশে ঈদ হবে।”
6পরের দিন লোকেরা খুব সকালে উঠে পোড়ানো-কোরবানী এবং যোগাযোগ-কোরবানী দিল। তার পরে তারা খাওয়া-দাওয়া করতে বসল এবং পরে হৈ-হল্লা করে আমোদ-প্রমোদ করবার জন্য উঠে দাঁড়াল। 7এতে মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি নীচে নেমে যাও। তোমার ঐ সব লোক যাদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তারা জঘন্য হয়ে গেছে। 8এর মধ্যেই তারা আমার হুকুম থেকে দূরে সরে গেছে। তারা নিজেদের জন্য বাছুরের আকারে একটা মূর্তি তৈরী করে নিয়েছে। তারা মাটিতে পড়ে তাকে সেজদা করেছে এবং তার উদ্দেশে পশু-কোরবানী করে বলেছে, ‘ভাইয়েরা, এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের দেব-দেবী। এই দেব-দেবীই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন।’ ”
9মাবুদ মূসাকে আরও বললেন, “এই সব লোকদের আমি জানি। এরা একটা একগুঁয়ে জাতি। 10তুমি আমাকে বাধা দিয়ো না। তাদের বিরুদ্ধে আমার রাগ আগুনের মত জ্বলতে থাকুক। আমি তাদের ধ্বংস করে ফেলব। তারপর তোমার মধ্য দিয়ে আমি একটা মহাজাতি র সৃষ্টি করব।”
11মূসা তখন তাঁর মাবুদ আল্লাহ্‌কে কাকুতি-মিনতি করে বললেন, “মাবুদ, তোমার শক্তিশালী হাত বাড়িয়ে মহা শক্তিতে যাদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তোমার সেই বান্দাদের উপর কেন তোমার এত রাগ? 12কেন মিসরীয়রা এই কথা বলবার সুযোগ পাবে যে, পাহাড়ী এলাকার মাঝখানে এনে তাদের হত্যা করে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলবার খারাপ ইচ্ছা নিয়েই তুমি তাদের বের করে এনেছ? তোমার এই ভীষণ রাগ তুমি থামাও। দয়া কর, তোমার বান্দাদের উপর তুমি এই বিপদ এনো না। 13তোমার গোলাম ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইসরাইলের কথা মনে কর। তুমি নিজের নামেই কসম খেয়ে তাঁদের বলেছিলে, তাঁদের বংশধরদের আসমানের তারার মতই অসংখ্য করে তুলবে আর তোমার ওয়াদা করা দেশের গোটাটাই চিরকালের অধিকার হিসাবে তাঁদের বংশধরদের দেবে।” 14এই কথা শুনে মাবুদের মনে দয়া হল। তাঁর বান্দাদের উপর যে বিপদ আনবার কথা তিনি বলেছিলেন তা আর আনলেন না।
15এর পর মূসা সাক্ষ্য-ফলক দু’টি হাতে করে পাহাড় থেকে নীচে নেমে গেলেন। ফলক দু’টার সামনে এবং পিছনে দু’দিকেই লেখা ছিল। 16সেই দু’টা ছিল আল্লাহ্‌র নিজের হাতের কাজ, আর তার উপর খোদাই করা লেখাটিও ছিল তাঁর।
17ইউসা লোকদের চেঁচামেচি শুনে মূসাকে বললেন, “ছাউনি থেকে যুদ্ধের আওয়াজ আসছে।”
18জবাবে মূসা বললেন, “সেটা যুদ্ধে জয়লাভের আওয়াজও নয়, যুদ্ধে হেরে যাবার আওয়াজও নয়। আমি যা শুনতে পাচ্ছি তা গানের আওয়াজ।”
19তারপর মূসা ছাউনির কাছাকাছি গিয়ে ঐ বাছুরটা আর লোকদের নাচানাচি দেখতে পেলেন। তা দেখে তিনি রাগে জ্বলে উঠলেন এবং হাতের পাথর-ফলক দু’টা ছুঁড়ে ফেললেন। তাতে সেই দু’টা পাহাড়ের নীচে পড়ে টুকরা টুকরা হয়ে ভেংগে গেল। 20মূসা তাদের তৈরী সেই বাছুরের মূর্তিটা আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। তারপর সেটা গুঁড়া করে পানির উপর ছড়িয়ে দিয়ে বনি-ইসরাইলদের খাওয়ালেন। 21তিনি হারুনকে বললেন, “ঐ লোকেরা তোমার কি করেছিল যে, তুমি তাদের এই রকম ভীষণ গুনাহের মধ্যে টেনে আনলে?”
22জবাবে হারুন বললেন, “তুমি রাগ কোরো না, তোমার তো জানা আছে খারাপীর দিকেই এই সব লোকের ঝোঁক। 23তারা এসে আমাকে বলল, ‘পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আপনি আমাদের দেব-দেবী তৈরী করে দিন, কারণ ঐ মূসা, যে মিসর দেশ থেকে আমাদের বের করে এনেছে, তার কি হয়েছে আমরা জানি না।’ 24এই কথা শুনে আমি তাদের বললাম, যাদের সোনার গহনা আছে তারা যেন তা খুলে আমার কাছে নিয়ে আসে। তারা আমাকে সোনা এনে দেবার পর আমি তা আগুনে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম আর এই বাছুরটা বের হয়ে আসল।”
25মূসা দেখলেন লোকগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তিনি বুঝতে পারলেন হারুন তাদের হাতের বাইরে যেতে দিয়েছে আর তাতেই শত্রুর কাছে তারা হাসির পাত্র হয়ে উঠেছে। 26মূসা ছাউনিতে ঢুকবার পথে দাঁড়িয়ে বললেন, “তোমরা যারা মাবুদের পক্ষে আছ তারা আমার কাছে এস।” তাতে লেবি-গোষ্ঠীর সবাই তাঁর কাছে জমায়েত হল।
27তখন তিনি তাদের বললেন, “ইসরাইলীয়দের মাবুদ আল্লাহ্‌ বলছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের কোমরে তলোয়ার বেঁধে নাও, আর ছাউনির সমস্ত জায়গায় গিয়ে যাকে সামনে পাও তাকেই হত্যা কর- সে ভাই হোক, বন্ধু হোক বা প্রতিবেশী হোক।’ ” 28লেবীয়রা মূসার হুকুম মতই কাজ করল। তাতে সেই দিন প্রায় তিন হাজার লোক মারা পড়ল। 29তারপর মূসা বললেন, “তোমরা আজই মাবুদের উদ্দেশ্যে নিজেদের পাক-পবিত্র করে নাও, কারণ তোমরা নিজের নিজের ছেলে ও ভাইদের বিরুদ্ধেও দাঁড়াতে পিছপা হও নি। সেইজন্য আজ তোমরা মাবুদের দোয়া পেলে।”
30পরের দিন মূসা লোকদের বললেন, “তোমরা ভীষণ গুনাহ্‌ করেছ। কিন্তু আমি এখন মাবুদের কাছে উঠে যাচ্ছি। হয়তো তোমাদের গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার একটা ব্যবস্থা আমি করতে পারব।”
31মূসা মাবুদের কাছে ফিরে গিয়ে বললেন, “হায় মাবুদ! এই লোকেরা ভীষণ গুনাহ্‌ করে ফেলেছে। তারা নিজেদের জন্য সোনার দেব-দেবী তৈরী করে নিয়েছে। 32কিন্তু তুমি এখন দয়া করে তাদের গুনাহ্‌ মাফ করে দাও, আর যদি তা না কর তবে তোমার লেখা কিতাব থেকে আমার নামটাও মুছে দাও।”
33জবাবে মাবুদ মূসাকে বললেন, “যারা আমার বিরুদ্ধে গুনাহ্‌ করেছে কেবল তাদের নামই আমি আমার কিতাব থেকে মুছে ফেলব। 34শোন, যে জায়গার কথা আমি বলেছি তুমি এখন গিয়ে লোকদের সেখানে নিয়ে যাও। আমার ফেরেশতা তোমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। যখন শাস্তি দেবার সময় আসবে তখন আমি তাদের গুনাহের শাস্তি দেব।”
35হারুনের তৈরী বাছুরটা নিয়ে লোকেরা যা করেছিল তার জন্য মাবুদ তাদের উপর মহা বিপদ পাঠিয়ে দিলেন।

নির্গমন পুস্তকঃ ১৬ অনুচ্ছেদ, গণনাঃ ১১ অনুচ্ছেদ, ৭-৯ ও ৩১-৩৬ শ্লোক এবং ঈশুঃ ৫ অনুচ্ছেদ, ১২ শ্লোক

বনি-ইসরাইলদের জন্য বেহেশতী খাবার
 
1বনি-ইসরাইলদের দলটা এলীম থেকে আবার যাত্রা শুরু করল। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর দ্বিতীয় মাসের পনের দিনের দিন তারা সিন মরুভূমিতে গিয়ে পৌঁছাল। এই জায়গাটা ছিল এলীম ও তুর পাহাড়ের মাঝখানে। 2সিন মরুভূমিতে বনি-ইসরাইলদের গোটা দলটা মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে লাগল। 3তারা তাঁদের বলল, “মিসর দেশে মাবুদের হাতে আমরা কেন মরলাম না। সেখানে আমরা গোশ্‌তের হাঁড়ি সামনে নিয়ে পেট ভরে রুটি-গোশ্‌ত খেতাম। আমাদের এই গোটা দলটাকে না খাইয়ে মেরে ফেলবার জন্যই আপনারা আমাদের এই মরুভূমির মধ্যে এনেছেন।”
4তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, “আমি এমন করব যাতে তোমাদের জন্য বেহেশত থেকে বৃষ্টির মত করে খাবার ঝরে পড়ে। লোকেরা প্রতিদিন বাইরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র সেই দিনের খাবার কুড়িয়ে নেবে। তারা আমার নির্দেশ মত চলবে কি না সেই বিষয়ে আমি তাদের পরীক্ষা নেব। 5সপ্তার ষষ্ঠ দিনে তারা যেন অন্য দিনের চেয়ে দুই গুণ কুড়িয়ে এনে খাবার তৈরী করে।”
6-7তখন মূসা ও হারুন সমস্ত বনি-ইসরাইলদের বললেন, “মাবুদের বিরুদ্ধে তোমরা যে সব কথা বলেছ তা তিনি শুনেছেন বলেই আজ সন্ধ্যাবেলাতেই তোমরা জানতে পারবে যে, সেই মাবুদই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন, আর তাঁরই মহিমা তোমরা কাল সকালে দেখতে পাবে। আমরা কে যে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলছ?” 8মূসা আরও বললেন, “সন্ধ্যাবেলায় যখন মাবুদ তোমাদের গোশ্‌ত দেবেন আর সকালবেলায় দেবেন প্রচুর রুটি তখনই তোমরা বুঝবে যে, মাবুদই তোমাদের মিসর থেকে বের করে এনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যত কথা বলেছ তা সব তিনি শুনেছেন। আমরা কে? এই সব কথা তোমরা আসলে আমাদের বিরুদ্ধে বলছ না, বলছ মাবুদেরই বিরুদ্ধে।”
9তারপর মূসা হারুনকে সমস্ত বনি-ইসরাইলদের এই কথা বলতে বললেন, “মাবুদ তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের অনেক কথা বলতে শুনেছেন, কাজেই তোমরা তাঁর সামনে এগিয়ে যাও।”
10হারুন যখন বনি-ইসরাইলদের কাছে কথা বলছিলেন তখন তারা মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখল; আর আশ্চর্য এই যে, সেখানে মেঘের মধ্যে তারা মাবুদের মহিমা দেখতে পেল। 11তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, 12“বনি-ইসরাইলরা আমার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলেছে তা আমি শুনেছি। তাদের এই কথা বল যে, তারা সন্ধ্যাবেলায় গোশ্‌ত খাবে আর সকালবেলায় খাবে পেট ভরে রুটি। এতে তারা জানতে পারবে যে, আমি আল্লাহ্‌ই তাদের মাবুদ।”
13সন্ধ্যাবেলায় অনেক ভারুই পাখী এসে তাদের ছাউনি-এলাকাটা ছেয়ে ফেলল। সকালবেলায় দেখা গেল শিবিরের চারপাশটা শিশিরে ঢাকা পড়ে গেছে। 14যখন সেই শিশির মিলিয়ে গেল তখন মাটিতে মাছের আঁশের মত পাতলা এক রকম জিনিস দেখা গেল। সেগুলো দেখতে ছিল পড়ে থাকা তুষারের মত। 15তা দেখে বনি-ইসরাইলরা একজন অন্যজনকে বলল, “ওগুলো কি?” ওগুলো যে কি, তা তারা জানত না।
তখন মূসা তাদের বললেন, “ওগুলোই সেই রুটি যা মাবুদ তোমাদের খেতে দিয়েছেন। 16মাবুদ তোমাদের এই হুকুম দিয়েছেন, প্রত্যেকে যেন তার পরিবারের দরকার মত কুড়ায়। তাম্বুর প্রত্যেকের জন্য যেন এক ওমর করে কুড়ানো হয়।” 17বনি-ইসরাইলরা তা-ই করল। কেউ কুড়ালো বেশী, কেউ কুড়ালো কম। 18কিন্তু ওমরের মাপে দেখা গেল, যারা অনেক কুড়ালো তাদের বেশী হল না আর যারা অল্প কুড়ালো তাদের কম পড়ল না। প্রত্যেকেই পরিবারের দরকার মত তা কুড়িয়েছিল।
19তারপর মূসা তাদের বললেন, “সকালের জন্য তোমরা এর কিছুই রেখে দিয়ো না।” 20কিন্তু কেউ কেউ মূসার কথা না শুনে সকালের জন্য কিছু রেখে দিল। তাতে সেগুলোতে পোকা ধরল আর দুর্গন্ধ হয়ে গেল। এই অবস্থা দেখে মূসা তাদের উপর রাগে জ্বলে উঠলেন। 21লোকেরা প্রত্যেক দিন সকালে যার পরিবারে যতটুকু দরকার ততটুকুই কুড়িয়ে আনত। কিন্তু রোদ কড়া হলে সেগুলো গলে যেত।
22সপ্তার ছয় দিনের দিন তারা দুই গুণ করে, অর্থাৎ দুই ওমর করে প্রত্যেকের জন্য কুড়াল, আর বনি-ইসরাইলদের নেতারা এসে সেই কথা মূসাকে জানালেন। 23তখন মূসা তাঁদের বললেন, “এটা মাবুদেরই কথা। আগামী কাল বিশ্রামবার, মাবুদেরই পবিত্র বিশ্রামবার। কাজেই যতটা সেঁকে নেবার নাও আর যতটুকু সিদ্ধ করবার সিদ্ধ করে নাও; বাকীটা পরের দিন সকালের জন্য রেখে দিয়ো।” 24মূসার হুকুম মতই তারা সকালের জন্য বাকী অংশটা রেখে দিল। সেই দিন ওগুলোতে গন্ধও হল না, পোকাও ধরল না।
25মূসা তখন বললেন, “আজ তোমরা ওগুলোই খাও কারণ আজকে মাবুদের নির্দিষ্ট করা বিশ্রাম দিন। আজকে তোমরা মাঠের মধ্যে ওগুলো দেখতে পাবে না। 26তোমরা সপ্তার ছয় দিন তা কুড়াবে কিন্তু সাত দিনের দিন তা পাবে না, কারণ সেই দিন হল বিশ্রামবার।”
27তবুও সপ্তম দিনে কিছু লোক ওগুলো কুড়াবার জন্য বাইরে গেল, কিন্তু কিছুই পেল না। 28তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, “আর কতদিন তোমরা আমার হুকুম ও নির্দেশ অমান্য করে চলবে? 29দেখ, তোমাদের জন্য বিশ্রামবারের এই ব্যবস্থা তোমাদের মাবুদই করেছেন। সেইজন্য ছয় দিনের দিন তিনি দু’দিনের খাবার তোমাদের যোগান দিচ্ছেন। তাই সপ্তম দিনে তোমরা কেউ ঘরের বাইরে যাবে না, ভিতরেই থাকবে।” 30কাজেই লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিল।
31বনি-ইসরাইলরা সেই খাবারকে বলত মান্না (যার মানে “ওগুলো কি?”)। এগুলোর আকার ছিল ধনে বীজের মত আর তা দেখতে সাদাটে; তার স্বাদ ছিল মধু দেওয়া পিঠার মত। 32পরে মূসা বললেন, “মাবুদ হুকুম করেছেন যেন তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য এক ওমর পরিমাণ মান্না তুলে রাখ, যাতে তারা দেখতে পায় মাবুদ মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে আনবার পরে মরুভূমিতে কি খাবার তোমাদের খেতে দিয়েছিলেন।”
33মূসা হারুনকে বললেন, “তুমি একটা পাত্রে করে এক ওমর মান্না নিয়ে মাবুদের সামনে রাখ যেন বংশের পর বংশ ধরে তা থাকে।” 34সেই মান্না যাতে বংশের পর বংশ ধরে তোলা থাকে সেইজন্য হারুন পরে মূসাকে দেওয়া মাবুদের হুকুম অনুসারে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে তা নিয়ে রেখেছিলেন। 35লোকে বাস করে এমন একটা জায়গায়, অর্থাৎ কেনান দেশের সীমানায় না আসা পর্যন্ত বনি-ইসরাইলরা চল্লিশ বছর ধরে এই মান্না খেয়েছিল।
36এক ওমরের মাপ হল এক কেজি আটশো গ্রামের সমান।
 
 
 
1জর্ডান নদীর পশ্চিম দিকের আমোরীয়দের সমস্ত বাদশাহ্‌রা এবং সাগর পারের সমস্ত কেনানীয় বাদশাহ্‌রা যখন শুনলেন যে, আমরা পার হয়ে আসবার সময় মাবুদ কিভাবে জর্ডানের পানি আমাদের, অর্থাৎ বনি-ইসরাইলদের সামনে থেকে শুকিয়ে দিয়েছিলেন তখন তাদের আশা-ভরসা সব ফুরিয়ে গেল; বনি-ইসরাইলদের সামনে দাঁড়াবার সাহস আর তাঁদের রইল না।
2সেই সময় মাবুদ ইউসাকে বললেন, “তুমি চক্‌মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করিয়ে নাও এবং তা দিয়ে আগের মত এই বনি-ইসরাইলদের খৎনা করাও।” 3এই কথা শুনে ইউসা চক্‌মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করালেন এবং তা দিয়ে গিবিয়োৎ হারালোতে (যার মানে “খৎনা করবার পাহাড়”) বনি-ইসরাইলদের খৎনা করালেন।
4যে জন্য তিনি এই কাজ করলেন তা এই: যুদ্ধে যাবার বয়স হয়েছে এমন যে সব পুরুষ লোক মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিল তারা মিসর ছেড়ে আসবার পর পথে মরুভূমিতে মারা গিয়েছিল। 5যারা মিসর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল তাদের খৎনা করানো হয়েছিল; কিন্তু মিসর থেকে বের হয়ে আসবার পর যাত্রাপথে মরুভূমিতে যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের কারও খৎনা করানো হয় নি। 6মিসর থেকে বেরিয়ে আসবার সময় যাদের যুদ্ধ করবার মত বয়স হয়েছিল তারা সবাই মারা না যাওয়া পর্যন্ত চল্লিশ বছর ধরে বনি-ইসরাইলদের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল, কারণ তারা মাবুদের কথা মেনে চলে নি। মাবুদ তাদের কসম খেয়ে বলেছিলেন যে, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দুধ আর মধুতে ভরা যে দেশটা আমাদের দেবেন বলে তিনি ওয়াদা করেছিলেন তা তারা দেখতে পাবে না। 7তাই তাদের জায়গায় তাদের ছেলেদের তিনি দাঁড় করালেন আর ইউসা এদেরই খৎনা করালেন। যাত্রাপথে তাদের খৎনা করানো হয় নি বলে তারা তখনও খৎনা-না-করানো অবস্থায় ছিল। 8সব লোকদের খৎনা করানো হল আর তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সেই জায়গাতে ছাউনির মধ্যেই রইল।
9এর পর মাবুদ ইউসাকে বললেন, “মিসরে তোমাদের যে অসম্মান ছিল তা আমি আজ তোমাদের কাছ থেকে দূর করে দিলাম।” সেইজন্য আজও ঐ জায়গাটাকে গিল্‌গল বলা হয়ে থাকে।
10সেই মাসের চৌদ্দ দিনের দিন সন্ধ্যাবেলায় জেরিকোর সমভূমির গিল্‌গলে ছাউনি ফেলে থাকবার সময় বনি-ইসরাইলরা উদ্ধার-ঈদ পালন করল। 11তার পরের দিনই তারা সেই দেশের ফসল থেকে তৈরী খামিহীন রুটি আর ভাজা শস্য খেল। 12যেদিন তারা ঐ দেশের খাবার খেল তার পরের দিন থেকে মান্না পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এর পর বনি-ইসরাইলরা আর মান্না পায় নি। সেই বছর থেকে তারা কেনান দেশের ফসল খেতে লাগল।

গণনা, ২৫ অনুচ্ছেদ, ১-৮ শ্লোক

 
1শিটীম শহরের কাছে থাকবার সময় বনি-ইসরাইলরা মোয়াবীয় স্ত্রীলোকদের সংগে জেনা শুরু করেছিল। 2এই সব স্ত্রীলোকেরা তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশে কোরবানীর উৎসবে বনি-ইসরাইলদের দাওয়াত করেছিল, আর বনি-ইসরাইলরাও তাদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করে সেই সমস্ত দেবতাদের পূজা করেছিল। 3এইভাবে বনি-ইসরাইলরা পিয়োর পাহাড়ের বাল-দেবতার পূজায় যোগ দিতে লাগল। তাতে তাদের উপর মাবুদের গজবের আগুন জ্বলে উঠল। 4মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি সমস্ত ইসরাইলীয় নেতাদের ধরে হত্যা কর এবং দিনের আলোতে আমার সামনে তাদের লাশগুলো ফেলে রাখ। এতে বনি-ইসরাইলদের উপর থেকে আমার সেই ভীষণ গজব দূর হবে।”
5তখন মূসা ইসরাইলীয় বিচারকর্তাদের বললেন, “তোমাদের অধীন যে সব লোকেরা পিয়োরের বাল-দেবতার পূজায় যোগ দিয়েছে তাদের প্রত্যেককেই তোমাদের হত্যা করতে হবে।”
6এতে মূসা ও বনি-ইসরাইলরা সবাই যখন মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে কান্নাকাটি করছিল সেই সময় একজন ইসরাইলীয় তাদের চোখের সামনে দিয়েই একজন মাদিয়ানীয় স্ত্রীলোককে তার পরিবারের লোকদের মধ্যে নিয়ে গেল। 7-8ইমাম হারুনের নাতি ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস এই ব্যাপার দেখে দল ছেড়ে হাতে বর্শা নিয়ে সেই ইসরাইলীয় লোকটির পিছনে পিছনে তার তাম্বুর ভিতরে গিয়ে ঢুকলেন এবং বর্শাটা তিনি সেই ইসরাইলীয় ও মাদিয়ানীয় স্ত্রীলোকটির পেটের ভিতর দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন। এর পর বনি-ইসরাইলদের মধ্য থেকে মহামারী দূর হল। 9কিন্তু যারা ঐ মহামারীতে মারা গেল তাদের সংখ্যা ছিল চব্বিশ হাজার।
10তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, 11“ইমাম হারুনের নাতি, অর্থাৎ ইলিয়াসরের ছেলে পীনহস বনি-ইসরাইলদের উপর থেকে আমার গজব দূর করেছে। বনি-ইসরাইলদের মধ্যে সে আমার পাওনা সম্মান সম্বন্ধে আমারই মত আগ্রহী। তাই আমার পাওনা সম্মান সম্বন্ধে আমার গভীর আগ্রহ থাকলেও আমি তাদের শেষ করে দিই নি। 12সেইজন্য তুমি তাকে বল যে, আমি তার জন্য একটা সহিসালমতী-ব্যবস্থা স্থাপন করছি। 13সে তার আল্লাহ্‌র পাওনা সম্মান সম্বন্ধে আগ্রহী হয়ে বনি-ইসরাইলদের গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার কাজ করেছে বলে আমি তার জন্য এমন ব্যবস্থা স্থাপন করছি যাতে ইমামের পদ তার ও তার বংশধরদের মধ্যে চিরকাল ধরে থাকে।”
14যে ইসরাইলীয় লোকটিকে সেই মাদিয়ানীয় স্ত্রীলোকের সংগে হত্যা করা হয়েছিল তার নাম ছিল সিম্রি। সে ছিল শালূর ছেলে এবং শিমিয়োন-গোষ্ঠীর একটি বংশের নেতা। 15যে মাদিয়ানীয় স্ত্রীলোকটিকে হত্যা করা হয়েছিল তার নাম ছিল কস্‌বী। সে ছিল মাদিয়ান দেশের সূর নামে একটি বংশের নেতার মেয়ে।
16পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, 17“মাদিয়ানীয়দের তোমরা শত্রু হিসাবে দেখবে এবং তাদের হত্যা করবে, 18কারণ পিয়োরের দেবতার পূজা এবং কস্‌বীর ব্যাপার নিয়ে কৌশল খাটিয়ে তোমাদের ভুল পথে নিয়ে গিয়ে তারা তোমাদের শত্রু হয়েছে। তুমি তো জান যে, এই কস্‌বী ছিল তাদের আত্মীয়া এবং একজন মাদিয়ানীয় সর্দারের মেয়ে। পিয়োরের বাল-দেবতার পূজার ফলে যখন তোমাদের মধ্যে মহামারী দেখা দিয়েছিল তখন ঐ স্ত্রীলোকটিকে হত্যা করা হয়েছিল।”

গণনা পুস্তক ১১ অনুচ্ছেদ, ৪-৯ শ্লোক

গোশ্‌তের ব্যবস্থা
 
4বনি-ইসরাইলদের সংগে অন্যান্য জাতির যে লোকেরা ছিল তারা অন্য রকম খাবারের লোভে পাগল হয়ে উঠল। তাদের দেখাদেখি বনি-ইসরাইলরা আবার কান্নাকাটি করে বলতে লাগল, “হায়, যদি আমরা গোশ্‌ত খেতে পেতাম! 5মিসর দেশে বিনা পয়সায় মাছ খাবার কথা আমাদের মনে পড়ছে। এছাড়া শসা, তরমুজ, পিঁয়াজ, সবজী পিঁয়াজ এবং রসুনের কথাও আমাদের মনে পড়ছে। 6কিন্তু এখন আমাদের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে। মান্না ছাড়া আমাদের চোখে আর কিছুই পড়ছে না।”
 
7মান্নার আকার ছিল ধনে বীজের মত, আর তা দেখতে ছিল গুগ্‌গুলুর মত। 8লোকেরা ঘুরে ঘুরে সেগুলো কুড়িয়ে আনত আর জাঁতায় কিংবা হামানদিস্তায় গুঁড়া করে নিত। সেগুলো তারা হাঁড়ির মধ্যে সিদ্ধ করত কিংবা তা দিয়ে রুটি বানাত। তার স্বাদ ছিল জলপাইয়ের তেল দিয়ে বানানো পিঠার মত। 9রাতে ছাউনি-এলাকায় শিশির পড়ত আর তার উপর পড়ত মান্না।
 
10মূসা শুনতে পেলেন প্রত্যেক পরিবারের লোকেরা তাদের নিজের নিজের তাম্বুর দরজার কাছে কাঁদছে। এতে মাবুদ রাগে জ্বলে উঠলেন আর মূসাও বিরক্ত হলেন। 11তিনি মাবুদকে বললেন, “তুমি তোমার গোলামকে কেন এই বিপদে ফেলেছ? তোমাকে নারাজ করবার মত আমি এমন কি করেছি যে, তুমি এই সমস্ত লোকদের বোঝা আমার উপর চাপিয়েছ? 12আমি কি এই সব লোকদের পেটে ধরেছি? আমি কি এদের প্রসব করেছি? তুমি এদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার কসম খেয়েছিলে সেখানে কেন তুমি আমাকে পালক-পিতার মত করে তাদের কোলে করে নিয়ে যেতে বলছ? 13এই সমস্ত লোকদের জন্য আমি কোথায় গোশ্‌ত পাব? তারা আমার কাছে কেবলই ‘গোশ্‌ত খেতে দাও’ বলে কান্নাকাটি করছে। 14তাদের বোঝা খুব ভারী, আমার একার পক্ষে তা বয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। 15তুমি যদি আমার অবস্থা এই রকমই কর তবে এখনই তুমি আমাকে মেরে ফেল। যদি আমি তোমার রহমত পেয়েই থাকি তবে নিজের চোখে আমার নিজের সর্বনাশ আমাকে দেখতে দিয়ো না।”
 

গণনা পুস্তক, ১৯ অধ্যায়, ১-১০ শ্লোক

লাল রংয়ের বক্‌না বাছুর
 
1এর পর মাবুদ মূসা ও হারুনকে বললেন, 2“এ হল আমার দেওয়া শরীয়তের একটা ধারা: তোমরা বনি-ইসরাইলদের এমন একটা লাল রংয়ের বক্‌না গরু তোমাদের কাছে আনতে বলবে যার গায়ে কোন দোষ বা খুঁত নেই এবং যার কাঁধে কখনও জোয়াল চাপানো হয় নি। 3সেটা তোমরা ইমাম ইলীয়াসরকে দেবে। ছাউনির বাইরে নিয়ে তার সামনে এটা জবাই করতে হবে। 4তারপর ইমাম ইলীয়াসর তার আংগুলে করে কিছু রক্ত নিয়ে মিলন-তাম্বুর সামনের দিকে সাত বার ছিটিয়ে দেবে। 5তার সামনেই গরুটার চামড়া, গোশ্‌ত, রক্ত ও নাড়িভুঁড়ি সুদ্ধ গোবর পুড়িয়ে দিতে হবে। 6গরুটা যখন পুড়তে থাকবে তখন ইমামকে কিছু এরস কাঠ, এসোব ও লাল রংয়ের সুতা তার উপর ছুঁড়ে দিতে হবে। 7এর পর ইমামকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে নিয়ে পানিতে গোসল করে ফেলতে হবে। তারপর সে ছাউনির মধ্যে যেতে পারবে, তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে নাপাক অবস্থায় থাকতে হবে। 8যে সেই গরুটা পোড়াবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে পানিতে গোসল করে ফেলতে হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত সে নাপাক অবস্থায় থাকবে। 9পাক-সাফ অবস্থায় আছে এমন কোন লোক সেই গরুটার ছাই তুলে নিয়ে ছাউনির বাইরে কোন পাক-সাফ জায়গায় রাখবে। সেই ছাই বনি-ইসরাইলরা পাক-সাফ করবার পানি তৈরী করবার জন্য রেখে দেবে। এটা নাপাকী থেকে পাক-সাফ হওয়ার জন্য ব্যবহার করতে হবে। 10যে লোকটি সেই গরুর ছাই তুলে নেবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে এবং সে-ও সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে। এটা হবে ইসরাইলীয় এবং তাদের মধ্যে বাস করা অন্য জাতির লোকদের জন্য একটা স্থায়ী নিয়ম।
 
মৃতদেহ ছোয়ার নিয়ম
 
11“যদি কেউ কারো মৃতদেহ ছোঁয় তবে সে সাত দিন পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে। 12তৃতীয় ও সপ্তম দিনে তাকে পাক-সাফ করবার পানি দিয়ে নিজেকে পাক-সাফ করিয়ে নিতে হবে আর তারপর সে পাক-সাফ হবে। কিন্তু যদি সে তৃতীয় ও সপ্তম দিনে এইভাবে নিজেকে পাক-সাফ করিয়ে না নেয় তবে সে নাপাকই থেকে যাবে। 13যদি কেউ কারও মৃতদেহ ছোঁবার পর নিজেকে পাক-সাফ করিয়ে না নেয় তবে সে মাবুদের আবাস-তাম্বু নাপাক করে। সেই লোককে বনি-ইসরাইলদের মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। তার গায়ে পাক-সাফ করবার পানি ছিটানো হয় নি বলে সে নাপাকই থাকবে এবং তার নাপাকী তার উপরে থেকে যাবে।
14“কোন লোক তাম্বুর ভিতরে মারা গেলে এই আইন মানতে হবে- যারা সেই তাম্বুর ভিতরে ঢুকবে আর যারা ঐ তাম্বুতেই ছিল তারা সাত দিন পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে। 15সেখানকার যে সমস্ত পাত্র ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করা হয় নি বলে খোলা অবস্থায় ছিল সেগুলোও নাপাক হয়ে গেছে।
16“যুদ্ধে কিংবা স্বাভাবিক ভাবে মারা গিয়ে খোলা মাঠে পড়ে আছে এমন কাউকে যদি কেউ ছোঁয় তবে সে সাত দিন পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে। কেউ যদি মানুষের হাড় কিংবা কবর ছোঁয় তবে সে-ও সাত দিন পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে।
17“এই সব নাপাক লোকদের নাপাকী থেকে পাক-সাফ করবার উদ্দেশ্যে যে পশু পোড়ানো হয়েছে তার কিছু ছাই একটা পাত্রের মধ্যে রেখে তার উপর স্রোতের পানি ঢেলে দিতে হবে। 18তারপর পাক-সাফ অবস্থায় আছে এমন একজন লোক এসোবের কয়েকটা ডাল সেই পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে সেই তাম্বু, তার ভিতরকার জিনিসপত্র ও লোকদের উপর তা ছিটিয়ে দেবে। মানুষের হাড় কিংবা কবর কিংবা মেরে ফেলা বা মরে যাওয়া লোককে ছুঁয়েছে এমন লোকের উপরেও সেই পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। 19পাক-সাফ অবস্থায় থাকা লোকটি নাপাক অবস্থায় পড়া লোকের উপর তৃতীয় ও সপ্তম দিনে সেই পানি ছিটিয়ে দেবে এবং সপ্তম দিনে সে তাকে পাক-সাফ করবে। যাকে পাক-সাফ করা হচ্ছে তাকে তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলে পানিতে গোসল করে ফেলতে হবে এবং সেই দিন সন্ধ্যা থেকে সে পাক-সাফ হবে। 20নাপাক হওয়ার পর যদি কেউ নিজেকে পাক-সাফ করিয়ে না নেয় তবে তাকে তার সমাজের মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে, কারণ নিজেকে পাক-সাফ না করে সে মাবুদের পবিত্র তাম্বু নাপাক করেছে। পাক-সাফ করবার পানি তার উপর ছিটানো হয় নি বলে সে নাপাক। 21বনি-ইসরাইলদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম।
“যে লোক এই পাক-সাফ করবার পানি ছিটাবে তাকেও তার কাপড়-চোপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। যদি কেউ এই পাক-সাফ করবার পানি ছোঁয় তবে সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে। 22নাপাক অবস্থায় থাকা লোকটি যা কিছু ছোঁবে তা নাপাক হয়ে যাবে এবং তার ছোঁয়া জিনিস যে ছোঁবে সে-ও সন্ধ্যা পর্যন্ত নাপাক অবস্থায় থাকবে।”

ইসলামী প্রশ্নোত্তর বিভাগ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম 

ইসলামী জীবন বিধান, কুরআন, হাদীস, ইতিহাস, ফিকাহ, আধুনিক ইসলামী যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি সংক্রান্ত আপনার যে কোন প্রশ্ন নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে পাবলিশ বাটনে ক্লিক করুন। এরপর দেখুন রিপ্লাই অপশন এনাবল হয়েছে। এবার রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে আপনার প্রশ্নের উত্তরটি দিন। এভাবে অন্য কোন প্রশ্নের কমেন্টেও আপনার জানা থাকলে উত্তর রিপ্লাই করুন। কমেন্টে প্রশ্ন লিখুন এবং রিপ্লাইতে উত্তর লিখুন। যে প্রশ্নের উত্তর জানা নেই, অথচ আপনার উত্তর জানা প্রয়োজন, সেই প্রশ্নটি শুধু কমেন্ট করে রেখে দিন । হয়ত অন্য কোন ভাইয়ের সেই প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহে আছে, তিনি রিপ্লাই করে উত্তর দিবেন ইনশাআল্লাহ।
.
মহান আল্লাহর নিকট প্রার্থনা,  জীবন সমস্যার সমাধানে ইসলামী জ্ঞানের এক বিশাল এবং পরিপূর্ণ ভান্ডার যেন এখানে গড়ে উঠে  ইনশাআল্লাহ, এবং আল্লাহ আমাদের সবাইকে যেন এতে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেন ইনশাআল্লাহ । লোকজন যেন ইসলামী প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার জন্য এবং ইসলামী প্রশ্নোত্তর তালাশ করার জন্য - সর্বপ্রথম এই  পেজটিকে একটি নির্ভরযোগ্য  পেইজ হিসেবে গ্রহণ করে ইনশাআল্লাহ, এবং মহান আল্লাহর নিকট আকুল প্রার্থনা,  যেন কিয়ামত পর্যন্ত মানুষের জীবন সমস্যার সমাধানে এই সাইটটিকে মহান আল্লাহ কবুল করে নেন। আমীন।

পূর্ববর্তী প্রশ্ন সমূহের উত্তর জানতে ক্লিক করুন :   প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ  


১। প্রশ্নোত্তর পর্ব - ১


২। প্রশ্নোত্তর পর্ব - ২ 


৩। প্রশ্নোত্তর পর্ব - ৩ 





১-ফাতিহা


<< সূরা তালিকা
সুরা আল ফাতিহা
ভূমিকা (নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তুর জন্য ক্লিক করুন)

﴿الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾
১) প্রশংসা   একমাত্র আল্লাহর জন্য   যিনি নিখল বিশ্ব –জাহানের রব,

﴿الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ﴾
২) যিনি পরম দয়ালু ও করুণাময়

﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ﴾
৩) প্রতিদান দিবসের মালিক ৷

﴿إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ﴾
৪) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদাত করি এবং   একমাত্র তোমারই কাছে সাহায্য চাই

﴿اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ﴾
৫) তুমি আমাদের সোজা পথ দেখাও,

﴿صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ﴾
৬) তাদের পথ যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছ,

﴿غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ﴾
৭) যাদের ওপর গযব পড়েনি এবং ১০   যারা পথভ্রষ্ট হয়নি ৷

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...