নির্গমন পুস্তক ২৮-৩১ অনুচ্ছেদ

নির্গমন পুস্তক : ২৮

ইমামদের পোশাক
1“তুমি বনি-ইসরাইলদের মধ্য থেকে তোমার ভাই হারুন ও তার ছেলে নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর এবং ঈথামরকে তোমার কাছে ডেকে পাঠাও। তারা ইমাম হয়ে আমার এবাদত-কাজ করবে। 2সম্মান এবং সাজের উদ্দেশ্যে তোমার ভাই হারুনের জন্য তুমি পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। 3আমি যে সব ওস্তাদ কারিগরকে জ্ঞানদানকারী পাক-রূহ্‌কে দিয়ে পূর্ণ করে রেখেছি, তুমি তাদের বলে দাও যেন তারা হারুনের জন্য এমন পোশাক তৈরী করে যা তাকে ইমাম হিসাবে আমার এবাদত-কাজ করবার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রাখবে। 4তার এই পোশাকের মধ্যে থাকবে বুক-ঢাকন, এফোদ, বাইরের কোর্তা, চেক্‌ কাপড়ের ভিতরের লম্বা কোর্তা, পাগড়ি ও কোমর-বাঁধনি। তোমার ভাই হারুন ও তাঁর ছেলেরা যাতে আমার ইমাম হতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের জন্য পবিত্র পোশাক তৈরী করাবে। 5পোশাক তৈরী করবার কাজে তারা সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা ও মসীনা সুতা ব্যবহার করবে।
মহা-ইমামের এফোদ
6“এফোদটা তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। 7এফোদের কাঁধের অংশটা বেঁধে রাখবার জন্য দু‘টা ফিতা তৈরী করে এফোদের দুই কোণায় জুড়ে দিতে হবে। 8এফোদের সংগে জোড়া লাগানো কোমরের পটিটাও এফোদের মতই সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে তৈরী করাতে হবে। 9তুমি দু’টা বৈদুর্যমণি নিয়ে তার উপর ইসরাইলের ছেলেদের নাম খোদাই করাবে। 10তাদের জন্ম অনুসারে পর পর ছয়টা নাম একটা পাথরে আর বাকী ছয়টা নাম অন্য পাথরে খোদাই করাতে হবে। 11-12কারিগরেরা যেমন দামী পাথর খোদাই করে সীলমোহর তৈরী করে ঠিক তেমনি করেই সেই দু’টা পাথরের উপর ইসরাইলের ছেলেদের নাম খোদাই করাতে হবে। পাথর দু’টা সোনার জালির উপর বসিয়ে এফোদের কাঁধের ফিতার সংগে বেঁধে দিতে হবে। এই দু’টি পাথর মাবুদের সামনে বনি-ইসরাইলদের তুলে ধরবে। মাবুদ যাতে তাদের প্রতি নজর রাখেন সেইজন্য হারুন এই নামগুলো মাবুদের সামনে তার দুই কাঁধের উপর বহন করবে। 13-14সোনার তৈরী সেই জালি দু’টার সংগে দু’টা শিকল জুড়ে দেবে। খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে সেই শিকল দু’টা তৈরী করাতে হবে।
মহা-ইমামের বুক-ঢাকন
15“আমার নির্দেশ জানবার জন্য বুক-ঢাকন তৈরী করাতে হবে। এটা হবে একটা ওস্তাদী হাতের কাজ। এফোদের মত এটাও তৈরী করাতে হবে সোনা আর নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা এবং পাকানো মসীনা সুতা দিয়ে। 16এটা হবে লম্বায় আধ হাত ও চওড়ায় আধ হাত একটা চারকোনা বিশিষ্ট দুই ভাঁজ করা কাপড়। 17এর উপর চার সারি দামী পাথর বসাতে হবে। প্রথম সারিতে থাকবে সার্দীয়মণি, পীতমণি ও পান্না; 18দ্বিতীয় সারিতে চুনি, নীলকান্তমণি ও হীরা; 19তৃতীয় সারিতে গোমেদ, অকীকমণি ও পদ্মরাগ; 20চতুর্থ সারিতে পোখরাজ, বৈদূর্যমণি ও সূর্যকান্তমণি। পাথরগুলো সোনার জালির উপর বসাতে হবে। 21ইসরাইলের বারোটি ছেলের জন্য মোট বারোটা পাথর থাকবে। তার প্রত্যেকটিতে বারোটি গোষ্ঠীর একটি করে নাম খোদাই করানো থাকবে, যেমন করে সীলমোহর খোদাই করা হয়।
22“এই বুক-ঢাকনের জন্য খাঁটি সোনা দড়ির মত পাকিয়ে দু’টা শিকল তৈরী করাবে। 23সোনার দু’টা কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের উপরের দুই কোণায় লাগিয়ে দেবে, 24আর শিকল দু’টা সেই কড়া দু’টার সংগে আট্‌কে দেবে। 25এফোদের সামনের দিকে কাঁধের ফিতার উপরে সোনার যে জালি থাকবে সেই জালির সংগে শিকলের অন্য দিকটা আট্‌কে দেবে। 26তা ছাড়া আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে বুক-ঢাকনের অন্য দুই কোণায় লাগাবে। এই দু’টা থাকবে এফোদের কাছে বুক-ঢাকনের তলায়। 27তা ছাড়াও আরও দু’টা সোনার কড়া তৈরী করিয়ে এফোদের কাঁধের ফিতার সোজাসুজি নীচের দিকে এফোদের কোমরের পটির ঠিক উপরে যে সেলাই থাকবে তার কাছে লাগিয়ে দেবে। 28তারপর বুক-ঢাকনের তলায় যে কড়া থাকবে তার সংগে কোমরের পটির কড়াটা নীল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেবে। তাতে বুক-ঢাকনটা এফোদের উপর থেকে সরে যাবে না।
29“পবিত্র স্থানে ঢুকবার সময় হারুন আমার নির্দেশ জানবার জন্য এই বুক-ঢাকনখানার উপর লেখা ইসরাইলের ছেলেদের নাম বুকে বয়ে নিয়ে যাবে। এই বুক-ঢাকনখানা সব সময় মাবুদের সামনে তাদের তুলে ধরবে। 30বুক-ঢাকনের ভাঁজের ভিতরে রাখবে ঊরীম ও তুম্মীম। তাতে হারুন যখন মাবুদের সামনে উপস্থিত হবে তখন সেগুলো তার বুকে থাকবে। এতে হারুন মাবুদের সামনে সব সময়েই বনি-ইসরাইলদের জন্য আমার নির্দেশ জানবার উপায় তার বুকে বইবে।
ইমামের অন্যান্য কাপড়
31“এফোদের নীচে যে লম্বা কোর্তাটা থাকবে তার পুরোটাই নীল সুতা দিয়ে তৈরী করাবে। 32মাথা ঢুকাবার জন্য তার মাঝখানটা খোলা থাকবে। এই খোলা জায়গাটা যাতে ছিঁড়ে না যায় সেইজন্য তার চারদিকের কিনারা বুনে শক্ত করে দিতে হবে। 33নীল, বেগুনে ও লাল রংয়ের সুতা দিয়ে ডালিম ফল তৈরী করে এই কোর্তাটার নীচের মুড়ির চারপাশে ঝুলিয়ে দেবে। সেগুলোর ফাঁকে ফাঁকে দেবে সোনার ঘণ্টা। 34নীচের সমস্ত মুড়িটা ধরে থাকবে একটা করে ডালিম আর একটা করে ঘণ্টা। 35ইমাম-কাজ করবার সময়ে হারুন এই পোশাক পরবে। সে যখন পবিত্র স্থানে মাবুদের সামনে যাবে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসবে তখন এই ঘণ্টাগুলোর আওয়াজ শোনা যাবে আর তাতে তার জীবন রক্ষা পাবে।
36“একটা খাঁটি সোনার পাত তৈরী করিয়ে তার উপর সীলমোহর খোদাই করবার মত করে এই কথাগুলো খোদাই করিয়ে নেবে: ‘মাবুদের উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র।’ 37সেই পাতটা পাগড়ির সামনের দিকে থাকবে এবং নীল দড়ি দিয়ে তা বাঁধা থাকবে। 38এটা থাকবে হারুনের কপালের উপর। যে সব পাক-পবিত্র জিনিস বনি-ইসরাইলরা কোরবানী করবার জন্য নিয়ে আসবে তার সমস্ত দোষ-ত্রুটির বোঝা হারুনই বইবে। মাবুদ যাতে তাদের কবুল করেন সেইজন্য হারুনের কপালের উপর এই সোনার পাতটা সব সময় থাকবে।
39“ইমামের ভিতরের কোর্তাটা তৈরী করাবে মসীনা সুতার চেক্‌ কাপড় দিয়ে আর পাগড়িটা তৈরী করাবে সেই একই সুতা দিয়ে। কোমর-বাঁধনিটা হবে একটা নক্‌শা করা জিনিস।
40“সম্মান ও সাজের উদ্দেশ্যে তুমি হারুনের ছেলেদের জন্যও কোর্তা, কোমর-বাঁধনি ও মাথার টুপি তৈরী করাবে। 41তোমার ভাই হারুন ও তার ছেলেদের এই সব পোশাক পরিয়ে নিয়ে তুমি তাদের মাথায় তেল দিয়ে অভিষেক করে ইমামের পদে বহাল করবে। তুমি তাদের পাক-পবিত্র করবে যাতে তারা আমার ইমাম হতে পারে। 42কোমর থেকে রান পর্যন্ত ঢাকবার জন্য মসীনার কাপড়ের জাংগিয়া তৈরী করাবে। 43হারুন ও তার ছেলেরা যখন মিলন-তাম্বুতে ঢুকবে কিংবা পবিত্র স্থানের ধূপগাহে এবাদত-কাজ করবার জন্য এগিয়ে যাবে তখন তারা এই জাংগিয়া পরবে। এতে তারা দোষমুক্ত থাকবে এবং মারা পড়বে না। হারুন এবং তার বংশধরদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম।
 
নির্গমন পুস্তক : ২৯ 
 
ইমামদের পাক-পবিত্র করবার নিয়ম
1“ইমাম হয়ে যাতে তারা আমার এবাদত-কাজ করতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের এইভাবে পাক-পবিত্র করে নেবে। তুমি একটা ষাঁড় ও দু‘টা ভেড়া নেবে। সেগুলোর গায়ে যেন কোন খুঁত না থাকে। 2তারপর মিহি ময়দা দিয়ে রুটি, তেলের ময়ান দেওয়া পিঠা আর তেল লাগানো চাপাটি তৈরী করবে। এর কোনটাতেই খামি দেবে না। 3সেগুলো একটা টুকরির মধ্যে রাখবে এবং সেই ষাঁড় ও ভেড়া দু’টার সংগে টুকরিটা আমার সামনে রাখবে। 4তারপর হারুন ও তার ছেলেদের মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে নিয়ে যাবে এবং পানি দিয়ে তাদের শরীর ধুয়ে দেবে। 5পরে সেই বিশেষ পোশাকগুলো নিয়ে হারুনকে ভিতরের কোর্তা, এফোদের নীচে পরবার লম্বা কোর্তা, এফোদ এবং বুক-ঢাকনটা পরিয়ে দেবে। পাকা হাতে বোনা কোমরের পটির সংগে এফোদটা বেঁধে দেবে। 6তারপর তার মাথার উপর পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে তার উপর সেই সোনার পাতের পবিত্র তাজটা লাগিয়ে দেবে। 7এর পর অভিষেকের তেল নিয়ে তার মাথায় ঢেলে দিয়ে তাকে অভিষেক করবে। 8-9তার ছেলেদের এনে তাদেরও কোর্তা পরাবে এবং হারুন ও তার ছেলেদের কোমর-বাঁধনি পরিয়ে দেবে। তারপর ছেলেদের মাথায় টুপি দেবে। এই ভাবে তুমি হারুন ও তার ছেলেদের ইমামের পদে বহাল করবে। একটা স্থায়ী নিয়ম হিসাবে এই ইমাম-পদ তাদের বংশেই থাকবে।
10“পরে সেই ষাঁড়টাকে তুমি মিলন-তাম্বুর সামনে আনবে, আর হারুন ও তার ছেলেরা ওটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। 11তারপর মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে মাবুদের সামনে তুমি ষাঁড়টা জবাই করবে। 12পরে কিছুটা রক্ত নিয়ে তুমি আংগুল দিয়ে কোরবানগাহের শিংগুলোতে লাগিয়ে দেবে আর বাকী রক্ত কোরবানগাহের গোড়ায় ঢেলে দেবে। 13তারপর পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, কলিজার উপরের অংশ এবং চর্বিসুদ্ধকিড্‌নি দু’টা নিয়ে কোরবানগাহের উপর পুড়িয়ে ফেলবে। 14ষাঁড়টার গোশ্‌ত, চামড়া এবং গোবর সুদ্ধ নাড়ীভুঁড়ি বনি-ইসরাইলদের ছাউনি থেকে দূরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা একটা গুনাহের জন্য কোরবানী।
15“তারপর সেই ভেড়া দু’টার একটা নিয়ে আসবে। হারুন ও তার ছেলেরা সেই ভেড়াটার মাথার উপর তাদের হাত রাখবে। 16এর পর ভেড়াটা জবাই করে তার রক্ত নিয়ে কোরবানগাহের চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। 17পরে ভেড়াটা কেটে টুকরা টুকরা করে তার পা এবং পেটের ভিতরকার অংশগুলো ধুয়ে নিয়ে মাথা ও অন্যান্য টুকরাগুলোর সংগে রাখবে। 18তারপর তার সবটাই কোরবানগাহের উপর পুড়িয়ে ফেলবে। এটা মাবুদের উদ্দেশে পোড়ানো-কোরবানী, অর্থাৎ মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী, যার গন্ধে তিনি খুশী হন।
19“তারপর অন্য ভেড়াটাও নেবে এবং হারুন ও তার ছেলেরা তার মাথার উপরে তাদের হাত রাখবে। 20পরে ভেড়াটা জবাই করে তার কিছু রক্ত নিয়ে হারুন ও তার ছেলেদের ডান কানের লতিতে এবং ডান হাত ও পায়ের বুড়ো আংগুলে লাগিয়ে দেবে। এছাড়া আরও কিছু রক্ত নিয়ে কোরবানগাহের চারপাশের গায়ে ছিটিয়ে দেবে। 21তারপর কিছু অভিষেকের তেল এবং কোরবানগাহ্‌ থেকে কিছু রক্ত নিয়ে হারুন ও তার ছেলেদের শরীরে এবং পোশাকের উপর ছিটিয়ে দেবে। এতে পোশাকসুদ্ধ তাকে ও তার ছেলেদের পাক-পবিত্র করা হবে।
22“তারপর তুমি সেই ভেড়াটার চর্বি, চর্বিভরা লেজ, পেটের ভিতরের অংশগুলোর উপরকার চর্বি, কলিজার উপরের অংশ, চর্বি-জড়ানো কিড্‌নি দু’টা এবং ডান দিকের রানটা নেবে। এটা হল পদে বহাল করবার কাজের ভেড়া। 23তারপর মাবুদের সামনে রাখা খামিহীন রুটির টুকরি থেকে একটা রুটি, একটা তেলে ময়ান দেওয়া পিঠা ও চাপাটি নেবে। 24এগুলো সব হারুন ও তার ছেলেদের হাতে দিয়ে দোলন-কোরবানী হিসাবে মাবুদের সামনে তা দোলাবে। 25তারপর সেগুলো তাদের হাত থেকে নিয়ে কোরবানগাহের উপর পোড়ানো-কোরবানীর সংগে পুড়িয়ে ফেলবে। এটা মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী যার গন্ধে তিনি খুশী হন। 26হারুনের ইমাম-পদে বহাল করবার কাজের এই ভেড়াটার বুকের অংশ নিয়ে দোলন-কোরবানী হিসাবে মাবুদের সামনে তা দোলাবে। এটা তোমার ভাগে পড়বে।
27“হারুন ও তার ছেলেদের ইমাম-পদে বহাল করবার ভেড়াটা থেকে নেওয়া দোলন-কোরবানীর গোশ্‌ত এবং কোরবানী দেওয়া রানের গোশ্‌ত পাক-পবিত্র করবে। 28এইভাবে বনি-ইসরাইলদের দেওয়া সব যোগাযোগ-কোরবানীর এই অংশগুলো সব সময় হারুন ও তার ছেলেদের দেওয়া হবে। এই অংশগুলোই হবে মাবুদের উদ্দেশে বনি-ইসরাইলদের দান।
29“হারুনের পবিত্র পোশাকগুলো তার বংশধরেরা পাবে। এগুলো পরিয়েই তাদের অভিষেক ও ইমামের পদে বহাল করতে হবে। 30হারুনের পরে তার যে ছেলে ইমাম হয়ে মিলন-তাম্বুর পবিত্র স্থানে এবাদত-কাজ করতে যাবে তাকে সাত দিন পর্যন্ত এই পোশাক গায়ে রাখতে হবে।
31“বহাল করবার কাজের এই ভেড়াটার গোশ্‌ত নিয়ে একটা পবিত্র জায়গায় সিদ্ধ করতে হবে। 32মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে হারুন ও তার ছেলেরা টুকরিতে রাখা রুটির সংগে এই গোশ্‌ত খাবে। 33তাদের ইমামের কাজে বহাল করবার জন্য এবং পাক-পবিত্র করবার জন্য যে সব কোরবানী দেওয়া খাবার গুনাহ্‌ ঢাকবার কাজে ব্যবহার করা হবে তা হারুন ও তার ছেলেদের খেতে হবে। অন্য কেউ তা খেতে পারবে না, কারণ তা পবিত্র খাবার। 34এই বহাল করবার কাজের ভেড়ার কোন গোশ্‌ত বা রুটি যদি সকাল পর্যন্ত থেকে যায় তবে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। তা যেন কেউ না খায়, কারণ সেটা পবিত্র খাবার।
35“হারুন ও তার ছেলেদের প্রতি আমি যা যা তোমাকে করতে বললাম তা সবই তুমি করবে। এই বহাল করবার কাজটা তুমি সাত দিন ধরে করবে। 36গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার জন্য গুনাহের কোরবানী হিসাবে তুমি সেই সাত দিনের প্রত্যেক দিন একটা করে ষাঁড় কোরবানী দেবে। গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার কোরবানী দ্বারা কোরবানগাহ্‌টা পাক-সাফ করবে এবং তেল ঢেলে সেটা পাক-পবিত্র করে নেবে। 37কোরবানগাহ্‌টা পাক-সাফ করে নেবার জন্য সাত দিন পর্যন্ত প্রতিদিন গুনাহ্‌ ঢাকা দেবার কোরবানী দ্বারা সেটা পাক-পবিত্র করে নিতে হবে। তাতে সেই কোরবানগাহ্‌টা একটা মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা কিছু আসবে তা পাক-পবিত্র হতে হবে।
38“এর পর থেকে সেই কোরবানগাহের উপর প্রত্যেক দিন নিয়মিত ভাবে দু’টা করে ভেড়ার বাচ্চা কোরবানী দিতে হবে; তার প্রত্যেকটার বয়স হবে এক বছর। 39একটা কোরবানী দিতে হবে সকালবেলায় আর অন্যটি সন্ধ্যাবেলায়। 40প্রথম ভেড়াটার সংগে এক কেজি আটশো গ্রাম মিহি ময়দা প্রায় এক লিটার ছেঁচা জলপাইয়ের তেলের সংগে মিশিয়ে কোরবানী করতে হবে। এছাড়া ঢালন-কোরবানী হিসাবে প্রায় এক লিটার আংগুর-রসও কোরবানী করতে হবে। 41সন্ধ্যাবেলায় যে ভেড়াটা কোরবানী দেওয়া হবে তার সংগে সকালবেলার মত সেই একই রকমের শস্য-কোরবানী এবং ঢালন-কোরবানী করতে হবে। এটা হবে মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী যার গন্ধে তিনি খুশী হন।
42“বংশের পর বংশ ধরে মিলন-তাম্বুর দরজার কাছে মাবুদের, অর্থাৎ আমার সামনে নিয়মিত ভাবে এই পোড়ানো-কোরবানী দিতে হবে। সেখানেই আমি তোমাদের সংগে দেখা করব এবং তোমার সংগে কথা বলব। 43বনি-ইসরাইলদের সংগে আমি সেখানে দেখা করব এবং আমার মহিমা সেই জায়গাটাকে পবিত্র করবে।
44“আমি মিলন-তাম্বু ও কোরবানগাহ্‌ পাক-পবিত্র করব এবং আমার ইমাম হবার জন্য হারুন ও তার ছেলেদেরও পাক-পবিত্র করব। 45আমি বনি-ইসরাইলদের মাবুদ হয়ে তাদের মধ্যে বাস করব। 46তখন তারা জানতে পারবে যে, আমি আল্লাহ্‌ই তাদের মাবুদ। আমি তাদের মধ্যে বাস করব বলেই মিসর দেশ থেকে তাদের বের করে এনেছি। আমি আল্লাহ্‌ই তাদের মাবুদ।
 
নির্গমন পুস্তক: ৩০ 
 
ধূপগাহ্‌
1“ধূপ জ্বালাবার জন্য তুমি বাব্‌লা কাঠ দিয়ে একটা ধূপগাহ্‌ তৈরী করাবে। 2ধূপগাহ্‌টি হবে চারকোনা বিশিষ্ট- এক হাত লম্বা, এক হাত চওড়া আর দু’হাত উঁচু। শিংসুদ্ধ গোটা ধূপগাহ্‌টি মাত্র একটা জিনিসই হবে। 3ধূপগাহের উপরটা, তার চারপাশ এবং শিংগুলো খাঁটি সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে আর তার চার কিনারা ধরে থাকবে সোনার নক্‌শা। 4ধূপগাহের দু’পাশে নক্‌শার নীচে দু’টা করে সোনার কড়া লাগাতে হবে যাতে তার ভিতর দিয়ে ডাণ্ডা ঢুকিয়ে সেটা বয়ে নেওয়া যায়। 5সেই ডাণ্ডাগুলো বাব্‌লা কাঠ দিয়ে তৈরী করে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে নিতে হবে। 6সাক্ষ্য-সিন্দুকের কাছে, অর্থাৎ সাক্ষ্য-ফলকের উপরকার ঢাকনাটার কাছে যে পর্দা থাকবে এই ধূপগাহ্‌টা তার সামনে রাখবে; সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব।
7“প্রত্যেক দিন সকালে বাতিগুলো ঠিক করে রাখবার সময় হারুন ঐ ধূপগাহের উপর খোশবু ধূপ জ্বালাবে। 8বেলা শেষে বাতি ধরাবার সময়েও আবার সে ধূপ জ্বালাবে। এতে তোমাদের বংশের পর বংশ ধরে মাবুদের সামনে নিয়মিত ভাবে ধূপ জ্বলবে। 9এই ধূপগাহের উপর অন্য কোন ধূপ জ্বালাবে না কিংবা কোন পোড়ানো-কোরবানী বা শস্য-কোরবানী বা ঢালন-কোরবানী করবে না। 10গুনাহ্‌ ঢাকবার জন্য গুনাহের কোরবানীর রক্ত ধূপগাহের শিংগুলোর উপরে লাগিয়ে দিয়ে হারুন বছরে একবার করে ধূপগাহ্‌টি পাক-সাফ করে নেবে। এইভাবে বছরে একবার করে বংশের পর বংশ ধরে মহা-ইমামকে এই কাজ করে যেতে হবে। এটা মাবুদের উদ্দেশ্যে মহাপবিত্র ধূপগাহ্‌।”
জীবন-মূল্যের রূপা
11তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 12“বনি-ইসরাইলদের লোকসংখ্যা জানবার জন্য যখন আদমশুমারী করা হবে সেই সময় প্রত্যেককেই মাবুদকে রূপা দিয়ে তার জীবন-মূল্য দিতে হবে। এতে আদমশুমারীর দরুন যে বিপদ আসবার কথা তা তাদের উপর আসবে না। 13গুণে রাখা লোকদের দলে যাবার আগে প্রত্যেককে দশ গ্রাম ওজনের ধর্মীয় শেখেলের আধা শেখেল করে দিতে হবে। এই আধা শেখেল হবে মাবুদের। 14যারা গুণে রাখা দলে যাবে, অর্থাৎ যাদের বয়স বিশ বছর কিংবা তার বেশী, মাবুদকে তাদের এটা দিতেই হবে। 15জীবন-মূল্য হিসাবে মাবুদকে এটা দেবার সময় ধনীরও আধা শেখেলের বেশী দিতে হবে না, আবার গরীবেরও এর কম দেওয়া চলবে না। 16বনি-ইসরাইলদের কাছ থেকে এই সব জীবন-মূল্যের রূপা নিয়ে মিলন-তাম্বুর কাজে ব্যবহার করতে হবে। এই সব জীবন-মূল্য যা তোমাদের জীবনের বদলে দেওয়া হবে তা মাবুদের সামনে বনি-ইসরাইলদের তুলে ধরবে।”
হাত-পা ধোয়ার গামলা
17তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 18“হাত-পা ধোয়ার জন্য ব্রোঞ্জ দিয়ে একটা গামলা আর তা বসাবার জন্য ব্রোঞ্জেরই একটা আসন তৈরী করাতে হবে। মিলন-তাম্বু ও কোরবানগাহের মাঝামাঝি জায়গায় সেটা বসিয়ে তার মধ্যে পানি রাখবে। 19ঐ পানি দিয়ে হারুন ও তাঁর ছেলেরা হাত-পা ধোবে। 20-21যাতে তারা মারা না পড়ে সেইজন্য মিলন-তাম্বুতে ঢুকবার আগে প্রত্যেকবারই তাদের ঐ পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে। মাবুদের উদ্দেশে আগুনে করা কোরবানী দিয়ে তাঁর এবাদত-কাজ করবার জন্য কোরবানগাহের কাছে যাবার সময়েও তাদের হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে যাতে তারা মারা না পড়ে। বংশের পর বংশ ধরে হারুন ও তার বংশধরদের জন্য এটা হবে একটা স্থায়ী নিয়ম।”
অভিষেক-তেল
22তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 23“তুমি কতগুলো ভাল জাতের মসলা, অর্থাৎ পাঁচ কেজি গন্ধরস, আড়াই কেজি খোশবু দারচিনি, আড়াই কেজি বচ, 24আর পাঁচ কেজি দারচিনি ফুলের কুঁড়ি নেবে। এছাড়া সাড়ে তিন লিটার জলপাইয়ের তেলও নেবে। 25খোশবু জিনিস তৈরী করবার মত করে তুমি এই সব খোশবু মসলা একসংগে মিশিয়ে নিয়ে অভিষেকের জন্য তেল তৈরী করাবে। এটাই হবে পবিত্র অভিষেক-তেল। 26এই অভিষেক-তেল দিয়ে তুমি মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, 27টেবিল ও তার উপরকার জিনিসপত্র, বাতিদান ও তার সাজ-সরঞ্জাম, ধূপগাহ্‌, 28কোরবানগাহ্‌ ও তার সব পাত্র এবং আসনসুদ্ধ গামলাটা পাক-পবিত্র করবে। 29তাতে সেগুলো মহাপবিত্র জিনিস হবে। তার ছোঁয়ায় যা আসবে তা পাক-পবিত্র হতে হবে।
30“হারুন ও তার ছেলেরা যাতে আমার ইমাম হতে পারে সেইজন্য তুমি তাদের অভিষেক করে পাক-পবিত্র করে নেবে। 31তুমি বনি-ইসরাইলদের জানাবে যে, বংশের পর বংশ ধরে এটাই হবে তাদের পবিত্র অভিষেক-তেল। 32সাধারণ লোকদের গায়ে তারা যেন তা না দেয় এবং ঐ সব মসলা দিয়ে তারা যেন এই নিয়মে কোন তেলও তৈরী না করে। এই তেল পবিত্র; সেইজন্য তাদেরও সেটা সেইভাবেই দেখতে হবে। 33যদি কেউ এই রকম খোশবু জিনিস তৈরী করে কিংবা ইমাম ছাড়া আর কারও গায়ে তা দেয় তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।”
খোশবু ধূপ
34-35তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি কতগুলো খোশবু মসলা, অর্থাৎ গুগ্‌গুলু, নখী, কুন্দুরু আর খাঁটি লোবান নেবে। এগুলো সমান সমান পরিমাণে মিশিয়ে খোশবু ধূপ তৈরী করাবে। যারা খোশবু জিনিস তৈরী করে তাদের দিয়ে কাজটা করিয়ে নেবে। এর মধ্যে লবণও দিতে হবে; এতে কোন ভেজাল থাকবে না আর তা হবে পবিত্র। 36এর কিছুটা নিয়ে গুঁড়া করে মিলন-তাম্বুর মধ্যে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে রাখবে। সেখানেই আমি তোমার সংগে দেখা করব। এই ধূপ তোমরা মহাপবিত্র জিনিস বলে মনে করবে। 37কেউ যেন এই নিয়মে এই সব খোশবু জিনিস দিয়ে নিজের ব্যবহারের জন্য কোন ধূপ তৈরী না করে। এটা যে মাবুদের উদ্দেশ্যে পাক-পবিত্র তা তোমরা মনে রাখবে। 38খোশবু জিনিস হিসাবে ব্যবহারের জন্য যদি কেউ তা তৈরী করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে।”
 
নির্গমন পুস্তক : ৩১ 
 
বাছাই-করা দু’জন কারিগর
1তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, 2“দেখ, আমি এহুদা-গোষ্ঠীর ঊরির ছেলে বৎসলেলকে বেছে নিয়েছি। ঊরি হল হূরের ছেলে। 3আমি এই বৎসলেলকে আল্লাহ্‌র রূহ্‌ দিয়ে পূর্ণ করেছি। আমি তাকে জ্ঞান, বিবেচনাশক্তি, অভিজ্ঞতা এবং সব রকম কারিগরী কাজের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছি। 4তাতে সে নিজের মন থেকে সোনা, রূপা ও ব্রোঞ্জের উপর সুন্দর সুন্দর নক্‌শা তৈরী করতে পারবে, 5দামী দামী পাথর কাটতে ও বসাতে পারবে আর কাঠের এবং অন্য সব রকম হাতের কাজও করতে পারবে। 6এছাড়া তাকে সাহায্য করবার জন্য আমি দান-গোষ্ঠীর অহীষামকের ছেলে অহলীয়াবকেও বেছে নিয়েছি। যে সব ওস্তাদ কারিগর এই কাজ করবে তাদেরও আমি এমন জ্ঞান দিয়ে রেখেছি যাতে তোমাকে দেওয়া আমার হুকুম মতই তারা সব জিনিস তৈরী করতে পারে। এই সব জিনিস এই: 7মিলন-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক ও তার উপরকার ঢাকনা, তাম্বুর আসবাবপত্র, 8টেবিল ও তার সংগের জিনিসপত্র, খাঁটি সোনার বাতিদান ও তার জিনিসপত্র, ধূপগাহ্‌, 9-10কোরবানগাহ্‌ ও তার বাসন-কোসন, গামলা আর তা বসাবার আসন এবং ইমামের কাজের জন্য ইমাম হারুনের জন্য বুনানো পবিত্র পোশাক ও তার ছেলেদের পোশাক। 11অভিষেকের তেল আর পবিত্র স্থানের জন্য খোশবু ধূপও এই সব জিনিসের মধ্যে রয়েছে। তোমাকে দেওয়া আমার হুকুম অনুসারেই যেন তারা সেগুলো তৈরী করে।”
বিশ্রামবার
12-13তারপর মাবুদ মূসাকে বনি-ইসরাইলদের এই কথা বলতে বললেন: “তোমরা আমার প্রত্যেকটি বিশ্রামবার পালন করবে। এই বিশ্রামবার বংশের পর বংশ ধরে তোমাদের ও আমার মধ্যে এমন একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে যার দ্বারা তোমরা বুঝতে পারবে যে, আমিই মাবুদ এবং আমিই তোমাদের আমার উদ্দেশ্যে আলাদা করে রেখেছি।
14“তোমরা বিশ্রামবার পালন করবে, কারণ এই দিনটা তোমাদের জন্য পবিত্র করা হয়েছে। যদি কেউ এই দিনটা পালন না করে তবে তাকে মেরে ফেলতে হবে; যদি কেউ এই দিনে কোন কাজ করে তবে তাকে তার জাতির মধ্য থেকে মুছে ফেলতে হবে। 15তোমরা সপ্তার ছয় দিন কাজ করবে কিন্তু সপ্তম দিনটা হবে বিশ্রামের দিন, আর মাবুদের উদ্দেশ্যে সেটা একটা পবিত্র দিন। যদি কেউ এই দিনে কাজ করে তবে তাকে হত্যা করতে হবে। 16একটা স্থায়ী ব্যবস্থা হিসাবে এই বিশ্রামবার বনি-ইসরাইলদের বংশের পর বংশ ধরে পালন করতে হবে। 17এই দিনটা আমার ও বনি-ইসরাইলদের মধ্যে চিরকালের জন্য একটা চিহ্ন হয়ে থাকবে, কারণ আমি ছয় দিনের মধ্যে আসমান ও জমীন সৃষ্টি করেছি এবং সপ্তম দিনে আমি কোন কাজ করি নি।”
18তুর পাহাড়ের উপর মূসার কাছে এই সব কথা বলা শেষ করে মাবুদ তাঁকে দু’খানা সাক্ষ্য-ফলক দিলেন। এই দু’টা পাথরের ফলকের উপর আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁর হুকুম লিখেছিলেন।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...