বনি-ইসরাইলদের জন্য বেহেশতী খাবার
1বনি-ইসরাইলদের
দলটা এলীম থেকে আবার যাত্রা শুরু করল। মিসর দেশ থেকে বের হয়ে আসবার পর
দ্বিতীয় মাসের পনের দিনের দিন তারা সিন মরুভূমিতে গিয়ে পৌঁছাল। এই জায়গাটা
ছিল এলীম ও তুর পাহাড়ের মাঝখানে। 2সিন মরুভূমিতে বনি-ইসরাইলদের গোটা দলটা মূসা ও হারুনের বিরুদ্ধে নানা কথা বলতে লাগল। 3তারা
তাঁদের বলল, “মিসর দেশে মাবুদের হাতে আমরা কেন মরলাম না। সেখানে আমরা
গোশ্তের হাঁড়ি সামনে নিয়ে পেট ভরে রুটি-গোশ্ত খেতাম। আমাদের এই গোটা
দলটাকে না খাইয়ে মেরে ফেলবার জন্যই আপনারা আমাদের এই মরুভূমির মধ্যে
এনেছেন।”
4তখন
মাবুদ মূসাকে বললেন, “আমি এমন করব যাতে তোমাদের জন্য বেহেশত থেকে বৃষ্টির
মত করে খাবার ঝরে পড়ে। লোকেরা প্রতিদিন বাইরে গিয়ে সেখান থেকে মাত্র সেই
দিনের খাবার কুড়িয়ে নেবে। তারা আমার নির্দেশ মত চলবে কি না সেই বিষয়ে আমি
তাদের পরীক্ষা নেব। 5সপ্তার ষষ্ঠ দিনে তারা যেন অন্য দিনের চেয়ে দুই গুণ কুড়িয়ে এনে খাবার তৈরী করে।”
6-7তখন
মূসা ও হারুন সমস্ত বনি-ইসরাইলদের বললেন, “মাবুদের বিরুদ্ধে তোমরা যে সব
কথা বলেছ তা তিনি শুনেছেন বলেই আজ সন্ধ্যাবেলাতেই তোমরা জানতে পারবে যে,
সেই মাবুদই মিসর দেশ থেকে তোমাদের বের করে এনেছেন, আর তাঁরই মহিমা তোমরা
কাল সকালে দেখতে পাবে। আমরা কে যে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে এত কথা বলছ?” 8মূসা
আরও বললেন, “সন্ধ্যাবেলায় যখন মাবুদ তোমাদের গোশ্ত দেবেন আর সকালবেলায়
দেবেন প্রচুর রুটি তখনই তোমরা বুঝবে যে, মাবুদই তোমাদের মিসর থেকে বের করে
এনেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তোমরা যত কথা বলেছ তা সব তিনি শুনেছেন। আমরা কে? এই
সব কথা তোমরা আসলে আমাদের বিরুদ্ধে বলছ না, বলছ মাবুদেরই বিরুদ্ধে।”
9তারপর
মূসা হারুনকে সমস্ত বনি-ইসরাইলদের এই কথা বলতে বললেন, “মাবুদ তাঁর
বিরুদ্ধে তোমাদের অনেক কথা বলতে শুনেছেন, কাজেই তোমরা তাঁর সামনে এগিয়ে
যাও।”
10হারুন
যখন বনি-ইসরাইলদের কাছে কথা বলছিলেন তখন তারা মরুভূমির দিকে তাকিয়ে দেখল;
আর আশ্চর্য এই যে, সেখানে মেঘের মধ্যে তারা মাবুদের মহিমা দেখতে পেল। 11তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, 12“বনি-ইসরাইলরা
আমার বিরুদ্ধে যে সব কথা বলেছে তা আমি শুনেছি। তাদের এই কথা বল যে, তারা
সন্ধ্যাবেলায় গোশ্ত খাবে আর সকালবেলায় খাবে পেট ভরে রুটি। এতে তারা জানতে
পারবে যে, আমি আল্লাহ্ই তাদের মাবুদ।”
13সন্ধ্যাবেলায় অনেক ভারুই পাখী এসে তাদের ছাউনি-এলাকাটা ছেয়ে ফেলল। সকালবেলায় দেখা গেল শিবিরের চারপাশটা শিশিরে ঢাকা পড়ে গেছে। 14যখন সেই শিশির মিলিয়ে গেল তখন মাটিতে মাছের আঁশের মত পাতলা এক রকম জিনিস দেখা গেল। সেগুলো দেখতে ছিল পড়ে থাকা তুষারের মত। 15তা দেখে বনি-ইসরাইলরা একজন অন্যজনকে বলল, “ওগুলো কি?” ওগুলো যে কি, তা তারা জানত না।
তখন মূসা তাদের বললেন, “ওগুলোই সেই রুটি যা মাবুদ তোমাদের খেতে দিয়েছেন। 16মাবুদ তোমাদের এই হুকুম দিয়েছেন, প্রত্যেকে যেন তার পরিবারের দরকার মত কুড়ায়। তাম্বুর প্রত্যেকের জন্য যেন এক ওমর করে কুড়ানো হয়।” 17বনি-ইসরাইলরা তা-ই করল। কেউ কুড়ালো বেশী, কেউ কুড়ালো কম। 18কিন্তু
ওমরের মাপে দেখা গেল, যারা অনেক কুড়ালো তাদের বেশী হল না আর যারা অল্প
কুড়ালো তাদের কম পড়ল না। প্রত্যেকেই পরিবারের দরকার মত তা কুড়িয়েছিল।
19তারপর মূসা তাদের বললেন, “সকালের জন্য তোমরা এর কিছুই রেখে দিয়ো না।” 20কিন্তু
কেউ কেউ মূসার কথা না শুনে সকালের জন্য কিছু রেখে দিল। তাতে সেগুলোতে পোকা
ধরল আর দুর্গন্ধ হয়ে গেল। এই অবস্থা দেখে মূসা তাদের উপর রাগে জ্বলে
উঠলেন। 21লোকেরা প্রত্যেক দিন সকালে যার পরিবারে যতটুকু দরকার ততটুকুই কুড়িয়ে আনত। কিন্তু রোদ কড়া হলে সেগুলো গলে যেত।
22সপ্তার
ছয় দিনের দিন তারা দুই গুণ করে, অর্থাৎ দুই ওমর করে প্রত্যেকের জন্য
কুড়াল, আর বনি-ইসরাইলদের নেতারা এসে সেই কথা মূসাকে জানালেন। 23তখন
মূসা তাঁদের বললেন, “এটা মাবুদেরই কথা। আগামী কাল বিশ্রামবার, মাবুদেরই
পবিত্র বিশ্রামবার। কাজেই যতটা সেঁকে নেবার নাও আর যতটুকু সিদ্ধ করবার
সিদ্ধ করে নাও; বাকীটা পরের দিন সকালের জন্য রেখে দিয়ো।” 24মূসার হুকুম মতই তারা সকালের জন্য বাকী অংশটা রেখে দিল। সেই দিন ওগুলোতে গন্ধও হল না, পোকাও ধরল না।
25মূসা তখন বললেন, “আজ তোমরা ওগুলোই খাও কারণ আজকে মাবুদের নির্দিষ্ট করা বিশ্রাম দিন। আজকে তোমরা মাঠের মধ্যে ওগুলো দেখতে পাবে না। 26তোমরা সপ্তার ছয় দিন তা কুড়াবে কিন্তু সাত দিনের দিন তা পাবে না, কারণ সেই দিন হল বিশ্রামবার।”
27তবুও সপ্তম দিনে কিছু লোক ওগুলো কুড়াবার জন্য বাইরে গেল, কিন্তু কিছুই পেল না। 28তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, “আর কতদিন তোমরা আমার হুকুম ও নির্দেশ অমান্য করে চলবে? 29দেখ,
তোমাদের জন্য বিশ্রামবারের এই ব্যবস্থা তোমাদের মাবুদই করেছেন। সেইজন্য ছয়
দিনের দিন তিনি দু’দিনের খাবার তোমাদের যোগান দিচ্ছেন। তাই সপ্তম দিনে
তোমরা কেউ ঘরের বাইরে যাবে না, ভিতরেই থাকবে।” 30কাজেই লোকেরা সপ্তম দিনে বিশ্রাম নিল।
31বনি-ইসরাইলরা
সেই খাবারকে বলত মান্না (যার মানে “ওগুলো কি?”)। এগুলোর আকার ছিল ধনে
বীজের মত আর তা দেখতে সাদাটে; তার স্বাদ ছিল মধু দেওয়া পিঠার মত। 32পরে
মূসা বললেন, “মাবুদ হুকুম করেছেন যেন তোমরা তোমাদের বংশধরদের জন্য এক ওমর
পরিমাণ মান্না তুলে রাখ, যাতে তারা দেখতে পায় মাবুদ মিসর দেশ থেকে তোমাদের
বের করে আনবার পরে মরুভূমিতে কি খাবার তোমাদের খেতে দিয়েছিলেন।”
33মূসা হারুনকে বললেন, “তুমি একটা পাত্রে করে এক ওমর মান্না নিয়ে মাবুদের সামনে রাখ যেন বংশের পর বংশ ধরে তা থাকে।” 34সেই
মান্না যাতে বংশের পর বংশ ধরে তোলা থাকে সেইজন্য হারুন পরে মূসাকে দেওয়া
মাবুদের হুকুম অনুসারে সাক্ষ্য-ফলকের সামনে তা নিয়ে রেখেছিলেন। 35লোকে বাস করে এমন একটা জায়গায়, অর্থাৎ কেনান দেশের সীমানায় না আসা পর্যন্ত বনি-ইসরাইলরা চল্লিশ বছর ধরে এই মান্না খেয়েছিল।
36এক ওমরের মাপ হল এক কেজি আটশো গ্রামের সমান।
1জর্ডান
নদীর পশ্চিম দিকের আমোরীয়দের সমস্ত বাদশাহ্রা এবং সাগর পারের সমস্ত
কেনানীয় বাদশাহ্রা যখন শুনলেন যে, আমরা পার হয়ে আসবার সময় মাবুদ কিভাবে
জর্ডানের পানি আমাদের, অর্থাৎ বনি-ইসরাইলদের সামনে থেকে শুকিয়ে দিয়েছিলেন
তখন তাদের আশা-ভরসা সব ফুরিয়ে গেল; বনি-ইসরাইলদের সামনে দাঁড়াবার সাহস আর
তাঁদের রইল না।
2সেই সময় মাবুদ ইউসাকে বললেন, “তুমি চক্মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করিয়ে নাও এবং তা দিয়ে আগের মত এই বনি-ইসরাইলদের খৎনা করাও।” 3এই
কথা শুনে ইউসা চক্মকি পাথরের কতগুলো ছুরি তৈরী করালেন এবং তা দিয়ে
গিবিয়োৎ হারালোতে (যার মানে “খৎনা করবার পাহাড়”) বনি-ইসরাইলদের খৎনা
করালেন।
4যে
জন্য তিনি এই কাজ করলেন তা এই: যুদ্ধে যাবার বয়স হয়েছে এমন যে সব পুরুষ
লোক মিসর দেশ থেকে বের হয়ে এসেছিল তারা মিসর ছেড়ে আসবার পর পথে মরুভূমিতে
মারা গিয়েছিল। 5যারা
মিসর ছেড়ে বের হয়ে এসেছিল তাদের খৎনা করানো হয়েছিল; কিন্তু মিসর থেকে বের
হয়ে আসবার পর যাত্রাপথে মরুভূমিতে যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের কারও খৎনা করানো
হয় নি। 6মিসর
থেকে বেরিয়ে আসবার সময় যাদের যুদ্ধ করবার মত বয়স হয়েছিল তারা সবাই মারা না
যাওয়া পর্যন্ত চল্লিশ বছর ধরে বনি-ইসরাইলদের মরুভূমিতে ঘুরে বেড়াতে
হয়েছিল, কারণ তারা মাবুদের কথা মেনে চলে নি। মাবুদ তাদের কসম খেয়ে বলেছিলেন
যে, তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে দুধ আর মধুতে ভরা যে দেশটা আমাদের দেবেন বলে
তিনি ওয়াদা করেছিলেন তা তারা দেখতে পাবে না। 7তাই
তাদের জায়গায় তাদের ছেলেদের তিনি দাঁড় করালেন আর ইউসা এদেরই খৎনা করালেন।
যাত্রাপথে তাদের খৎনা করানো হয় নি বলে তারা তখনও খৎনা-না-করানো অবস্থায়
ছিল। 8সব লোকদের খৎনা করানো হল আর তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সেই জায়গাতে ছাউনির মধ্যেই রইল।
9এর
পর মাবুদ ইউসাকে বললেন, “মিসরে তোমাদের যে অসম্মান ছিল তা আমি আজ তোমাদের
কাছ থেকে দূর করে দিলাম।” সেইজন্য আজও ঐ জায়গাটাকে গিল্গল বলা হয়ে থাকে।
10সেই মাসের চৌদ্দ দিনের দিন সন্ধ্যাবেলায় জেরিকোর সমভূমির গিল্গলে ছাউনি ফেলে থাকবার সময় বনি-ইসরাইলরা উদ্ধার-ঈদ পালন করল। 11তার পরের দিনই তারা সেই দেশের ফসল থেকে তৈরী খামিহীন রুটি আর ভাজা শস্য খেল। 12যেদিন
তারা ঐ দেশের খাবার খেল তার পরের দিন থেকে মান্না পড়া বন্ধ হয়ে গেল। এর পর
বনি-ইসরাইলরা আর মান্না পায় নি। সেই বছর থেকে তারা কেনান দেশের ফসল খেতে
লাগল।
ঈমানের পথে অবিচল থেকে আমাদের মরণ যেন হয়.........
ReplyDeleteঈমানের পথে অবিচল থেকে আমাদের মরণ যেন হয়.........
ReplyDeleteআল্লাহু আকবার,আল্লাহ কতই মহান
ReplyDeleteআলহামদুলিল্লাহ
ReplyDeleteরববুল আলামীন এখনো কোন জাতি তার দ্বীন সঠিক ভাবে মানতে চায় আর এরকম কোন অবস্তায় পড়ে তবে মহান রব অবস্যই খাদ্য দিয়ে সাহায্য করবেন।
ReplyDeleteমহান আল্লাহ্ মহান
ReplyDeleteAllah mohan
ReplyDelete