প্রশ্ন: ১২৫ : সুরা ইখলাস নাযিল হওয়া সংক্রান্ত।

নামকরণ :

ইখলাস শুধু এ সূরাটির নামই নয় ,এখানে আলোচ্য বিষয়বস্তুর শিরোনামও । কারণ , এখানে খালেস তথা নির্ভেজাল তাওহীদের আলোচনা করা হয়েছে। কুরআন মজীদের অন্যান্য সূরার ক্ষেত্রে সাধারণত সেখানে ব্যবহৃত কোন শব্দের মাধ্যমে তার নামকরণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু এ সূরাটিতে ইখলাস শব্দ কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। কাজেই এর এ নামকরণ করা হয়েছে এর অর্থের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি এ সূরাটির বক্তব্য অনুধাবন করে এর শিক্ষার প্রতি ঈমান আনবে , সে শিরক থেকে মুক্তি লাভ করে খালেস তাওহীদের আলোকে নিজেকে উদ্ভাসিত করবে।

নাযিলের সময়- কাল

এর মক্কী ও মাদানী হবার ব্যাপারে মতভেদ আছে। এ সূরাটি নাযিল হবার কারণ হিসেবে যেসব হাদীস উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতেই এ মতভেদ দেখা দিয়েছে। নীচে পর্যায়ক্রমে সেগুলো উল্লেখ করছি :
(১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশ পরিচয় * আমাদের জানান। একথায় এ সূরাটি নাযিল হয়। ( তাবারানী) ।
(২) আবুল আলীয়াহ হযরত উবাই ইবনে কাবের (রা) বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন , মুশরিকরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশ পরিচয় আমাদের জানান। এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন । ( মুসনাদে আহমাদ , ইবনে আবী হাতেম , ইবনে জারীর , তিরমিযী , বুখারী ফিত তারীখ , ইবনুল মুনযির , হাকেম ও বায়হাকী ) এ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস আবুল আলীয়ার মাধ্যমে ইমাম তিরমিযী উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে হযরত উবাই ইবনে কা'বের বরাত নেই। ইমাম তিরমিযী একে অপেক্ষকৃত বেশী নির্ভুল বলেছেন।
* আরববাসীদের নিয়ম ছিল , কোন অপরিচিত ব্যক্তির পরিচয় লাভ করতে হলে তারা বলতো , ( আরবী -------) ( এর বংশধারা আমাদের জানাও ) কারণ তাদের কাছে পরিচিতির জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হতো বংশধারার। সে কোন বংশের লোক ? কোন গোত্রের সাথে সম্পর্কিত ? একথা জানার প্রয়োজন হতো । কাজেই তারা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাঁর রব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলো তিনি কে এবং কেমন , তখন তারা তাঁকে একই প্রশ্ন করলো। তারা প্রশ্ন করলো , ( আরবী ------------) অর্থাৎ আপনার রবের নসবনামা ( বংশধারা ) আমাদের জানান।
(৩) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন , এক গ্রামীণ আরব ( কোন কোন হাদীস অনুযায়ী লোকেরা ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশধারা আমাদের জানান। এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন ( আবু ইয়ালা , ইবনে জারীর , ইবনুল মুনযির , তাবারানী ফিল আওসাত , বায়হাকী ও আবু নু’আইম ফিল হিলইয়া )
(৪) ইকরামা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে রেওয়ায়াত করেন , ইহুদীদের একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হয়। তাদের মধ্যে ছিল কা’ব ইবনে আশরাফ ও হুই ইবনে আখতাব প্রমুখ লোকেরা । তারা বলে , “ হে মুহাম্মাদ ! ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আপনার যে রব আপনাকে পাঠিয়েছেন তিনি কেমন সে সম্পর্কে আমাদের জানান। ” এর জবাবে মহান আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন। ( ইবনে আবী হতেম , ইবনে আদী , বায়হাকী ফিল আসমায়ে ওয়াস সিফাত )
এ ছাড়াও ইমাম ইবনে তাইমিয়া কয়েকটি হাদীস তাঁর সূরা ইখলাসের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হচ্ছে :
(৫) হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন , খয়বারের কয়েকজন ইহুদী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলে , “ হে আবুল কাসেম ! আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূরের পরদা থেকে , আদমকে পচাগলা মাটির পিণ্ড থেকে , ইবলিসকে আগুনের শিখা থেকে , আসমানকে ধোঁয়া থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে তৈরি করেছেন । এখন আপনার রব সম্বন্ধে আমাদের জানান ( অর্থাৎ তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট ? ) ” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথার কোন জবাব দেননি। তারপর জিব্রীল ( আ) আসেন। তিনি বলেন , হে মুহাম্মাদ ! ওদেরকে বলে দাও , “ হুওয়াল্লাহু আহাদ ” ( তিনি আল্লাহ এক ও একক ) --------------------
(৬) আমের ইবনুত তোফায়েল রসূলুল্লাহকে (সা) বলেন : হে মুহাম্মাদ ! আপনি আমাদের কোন জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছেন ? তিনি জবাব দেন , “ আল্লাহর দিকে ।” আমের বলে : “ ভালো , তাহলে তার অবস্থা আমাকে জানান। তিনি সোনার তৈরি , না রূপার অথবা লোহার? ” একথার জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়।
(৭) যাহহাক , কাতাদাহ ও মুকাতেল বলেন , ইহুদীদের কিছু আলেম রসূলুল্লাহ (সা) কাছে আসে। তারা বলে : “ হে মুহাম্মাদ ! আপনার রবের অবস্থা আমাদের জানান। হয়তো আমরা আপনার ওপর ঈমান আনতে পারবো। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী তাওরাতে নাযিল করেছেন। আপনি বলুন , তিনি কোন বস্তু দিয়ে তৈরি ? কোন গোত্রভুক্ত ? সোনা , তামা পিতল , লোহা , রূপা , কিসের তৈরি ? তিনি পানাহর করেন কি না ? তিনি উত্তরাধিকারী সূত্রে কার কাছ থেকে পৃথিবীর মালিকানা লাভ করেছেন ? এবং তারপর কে এর উত্তরাধিকারী হবে ? এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন ।
(৮) ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন , নাজরানের খৃষ্টানদের সাতজন পাদরী সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রদিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করে ।তারা তাঁকে বলে : “ আমাদের বলুন , আপনার রব কেমন ? তিনি কিসের তৈরি ? ” তিনি বলেন , “ আমার রব কোন জিনিসের তৈরি নন। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা ।” এ ব্যাপারে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন।
এ সমস্ত হাদীস থেকে জানা যায় , রসূলুল্লাহ (সা) যে মাবুদের ইবাদাত ও বন্দেগী করার প্রতি লোকদের আহবান জানাচ্ছিলেন তার মৌলিক সত্তা ও অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক প্রশ্ন করেছিল। এ ধরনের প্রশ্ন যখনই এসেছে তখনই তিনিই জবাবে আল্লাহর হুকুমে লোকদেরকে এ সূরাটিই পড়ে শুনিয়েছেন। সর্বপ্রথম মক্কায় কুরাইশ বংশীয় মুশরিকরা তাঁকে এ প্রশ্ন করে । তাদের এ প্রশ্নের জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়। এরপর মদীনা তাইয়েবায় কখনো ইহুদী , কখনো খৃষ্টান আবার কখনো আরবের অন্যান্য লোকেরাও রসূলুল্লাহকে (সা) এই ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। প্রত্যেকবারই আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা হয় জবাবে এ সূরাটি তাদের শুনিয়ে দেবার । ওপরে উল্লেখিত হাদীসগুলোর প্রত্যেকটিতে একথা বলা হয় যে , এর জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়। এর থেকে এ হাদীসগুলো পরস্পর বিরোধী একথা মনে করার কোন সংগত কারণ নেই । আসলে হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবতীর্ণ কোন আয়াত বা সূরা থাকতো তাহলে পরে রসূলুল্লাহ (সা) সামনে যখনই সেই বিষয় আবার উত্থাপিত হতো তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত আসতো , এর জবাব উমুক আয়াত বা সূরায় রয়েছে অথবা এর জবাবে লোকদেরকে উমুক আয়াত বা সূরা পড়ে শুনিয়ে দাও। হাদীসসমূহের রাবীগণ এ জিনিসটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন , যখন উমুক সমস্যা দেখা দেয় বা উমুক প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তখন এ আয়াত বা সূরাটি নাযিল হয়। একে বারংবার অবতীর্ণ হওয়া অর্থাৎ একটি আয়াত বা সূরার বারবার নাযিল হওয়াও বলা হয়।
কাজেই সঠিক কথা হচ্ছে , এ সূরাটি আসলে মক্কী । বরং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে একে মক্কায় একেবারে প্রথম যুগে অবতীর্ণ সূলাগুলোর অন্তরভুক্ত করা যায়। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনের কোন বিস্তারিত আয়াত তখনো পর্যন্ত নাযিল হয়নি। তখনো লোকেরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর দিকে দাওয়াতের বার্তা শুনে জানতে চাইতো : তাঁর এ রব কেমন , যাঁর ইবাদাত - বন্দেগী কারার দিকে তাদেরকে আহবান জানানো হচ্ছে। এর একেবারে প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত হবার আর একটি প্রমাণ হচ্ছে , মক্কায় হযরত বেলালকে (রা) তার প্রভু উমাইয়া ইবনে খালাফ যখন মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকার ওপর চিৎ করে শুইয়ে তার বুকের ওপর একটা বড় পাথর চাপিয়ে দিতো তখন তিনি “ আহাদ ” “ আহাদ ” বলে চিৎকার করতেন। এ আহাদ শব্দটি এ সূরা ইখলাস থেকেই গৃহীত হয়েছিল।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

নাযিল হওয়ার উপলক্ষ সম্পর্কিত যেসব হাদীস ওপরে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর ওপর এক নজর বুলালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন তখন দুনিয়ার মানুষের ধর্মীয় চিন্তা - ভাবনা ও ধ্যান - ধারণা কি ছিল তা জানা যায়। মূর্তি পূজারী মুশরিকরা কাঠ , পাথর সোনা, রূপা ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের তৈরি খোদার কাল্পনিক মূর্তিসমূহের পূজা করতো । সেই মূর্তিগুলোর আকার , আকৃতি ও দেহাবয়ব ছিল। এ দেবদেবীদের রীতিমত বংশধারাও ছিল। কোন দেবী এমন ছিল না যার স্বামী ছিল না। আবার কোন দেবতা এমন ছিল না যার স্ত্রী ছিল না। তাদের খাবার দাবারেরও প্রয়োজন দেখা দিতো । তাদের পূজারীরা তাদের জন্য এসবের ব্যবস্থা করতো। মুশরিকদের একটি বিরাট দল খোদার মানুষের রূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করায় বিশ্বাস করতো এবং তারা মনে করতো কিছু মানুষ খোদার অবতার হয়ে থাকে । খৃষ্টানরা এক খোদায় বিশ্বাসী হলেও তাদের খোদার কমপক্ষে একটি পুত্র তো ছিলই এবং পিতা পুত্রের সাথে খোদায়ী সাম্রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে রুহুল কুদুসও ( জিব্রীল) অংশীদার ছিলেন । এমন কি খোদার মাও ছিল এবং শাশুড়ীও । ইহুদীরাও এক খোদাকে মেনে চলার দাবীদার ছিল কিন্তু তাদের খোদাও বস্তুসত্তা ও মরদেহ এবং অন্যান্য মানবিক গুণাবলীর উর্ধে ছিল না। তাদের এ খোদা টহল দিতো , মানুষের আকার ধারণ করে আত্ম প্রকাশ করতো। নিজের কোন বান্দার সাথে কুশতিও লড়তো । তার একটি পুত্রও ( উযাইর ) ছিল। এ ধর্মীয় দলগুলো ছাড়া আরো ছিল মাজূসী - অগ্নি উপাসক ও সাবী -তারকা পূজারী দল। এ অবস্থায় যখন লোকদেরকে এক ও লা- শারীক আল্লাহর আনুগত্য করার দাওয়াত দেয়া হয় তখন তাদের মনে এ প্রশ্ন জাগা নিতান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে , সেই রবটি কেমন , সমস্ত রব ও মাবুদদেরকে বাদ দিয়ে যাকে একমাত্র রব ও মাবুদ হিসেবে মেনে নেবার দাওয়াত দেয়া হচ্ছে ? এটা কুরআনের অলৌকিক প্রকাশভংগীরই কৃতিত্ব। এ সমস্ত প্রশ্নের জবাব মাত্র কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে কুরআন মূলত আল্লাহ অস্তিত্বের এমন সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা পেশ করে দিয়েছে , যা সব ধরনের মুশরিকী চিন্তা ও ধ্যান -ধারণার মূলোৎপাটন করে এবং আল্লাহর সত্তার সাথে সৃষ্টির গুণাবলীর মধ্য থেকে কোন একটি গুণকেও সংযুক্ত করার কোন অবকাশই রাখেনি।

শ্রেষ্টত্ব ও গুরুত্ব

এ কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টিতে এ সূরাটি ছিল বিপুল মহত্বের অধিকারী । বিভিন্নভাবে তিনি মুসলমানদেরকে এ গুরুত্ব অনুভব করাতেন । তারা যাতে এ সূরাটি বেশী করে পড়ে এবং জনগণের মধ্যে একে বেশী করে ছড়িয়ে দেয় এ জন্য ছিল তাঁর এ প্রচেষ্টা। কারণ এখানে ইসলামের প্রাথমিক ও মৌলিক আকীদাকে ( তাওহীদ ) এমন ছোট ছোট চারটি বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে , যা শুনার সাথে সাথেই মানুষের মনে গেঁথে যায় এবং তারা সহজেই মুখে মুখে সেগুলো আওড়াতে পারে। রসূলুল্লাহ (সা) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে লোকদের বলেছেন , এ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান --- এ মর্মে হাদীসের কিতাবগুলোতে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বুখারী , তিরমিযী , মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনে মাজাহ , মুসনাদে আহামাদ , তাবারানী ইত্যাদি কিতাবগুলোতে বহু হাদীস আবু সাঈদ , খুদরী , আবু হুরাইরা , আবু আইয়ুব আনসারী , কুলসুম বিনতে উকবাহ ইবনে আবী মু’আইত , ইবনে উমর , ইবনে মাস্থউদ , কাতাদাহ ইবনুন নূ’মান , আনাস ইবনে মালেক ও আবু মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত হয়েছে। মুফাসসিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তির বহু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তবে আমাদের মতে সহজ , সরল , ও পরিস্কার কথা হচ্ছে , কুরআন মজীদ যে দীন ও জীবন ব্যবস্থা পেশ করে তার ভিত্তি রাখা হয়েছে তিনটি বুনিয়াদী আকীদার ওপর। এক, তাওহীদ। দুই , রিসালাত । তিন , আখেরাত । এ সূরাটি যেহেতু নির্ভেজাল তাওহীদ তত্ব বর্ণনা করেছেন তাই রসূলুল্লাহ ( সা) একে কুরআনের এক - তৃতীয়াংশের সমান গণ্য করেছেন।
হযরত আয়েশার (রা) একটি রেওয়ায়াত বুখারী ও মুসলিম এবং হাদীসের অন্যান্য কিতাবগুলোতে উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক অভিযানে এক সাহাবীকে সরদারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তিনি সমগ্র সফলকালে প্রত্যেক নামাযে “ কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ ” পড়ে কিরআত শেস করতেন। এটা যেন তার স্থায়ী রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল ফিরে আসার পর তার সাথীরা রসূলুল্লাহ (সা) কাছে একথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন , তাকে জিজ্ঞেস করো , সে কেন এমনটি করেছিল? তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন : এতে রহমানের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এর পাঠ আমার অত্যন্ত প্রিয়। রসূলুল্লাহ (সা) একথা শুনে লোকদের বলেন : আরবী -------------------------------------------------- “তাকে জানিয়ে দাও , আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন ।”
প্রায় এ একই ঘটনা বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বললেন , জনৈক আনসারী কুবার মসজিদে নামায পড়াতেন। তাঁর নিয়ম ছিল , তিনি প্রত্যেক রাকাআতে ( আরবী --------------) পড়তেন। তারপর অন্য কোন সূরা পড়তেন। লোকেরা এ ব্যাপারে আপত্তি উঠায় । তারা বলেন , তুমি এ কেমন কাজ করছো , প্রথমে ( আরবী ------------) পড়ো তারপর তাকে যথেষ্ট মনে না করে আবার তার সাথে আর একটি সূরা পড়ো ? এটা ঠিক নয়। শুধূমাত্র “ কুল হুওয়াল্লাহ” পড়ো অথবা একে বাদ দিয়ে অন্য একটি সূরা পড়ো। তিনি জবাব দেন , আমি এটা ছড়াতে পারবো না। তোমরা চাইলে আমি তোমাদের নামায পড়াবো অথবা ইমামতি ছেড়ে দেবো। কিন্তু লোকেরা তাঁর জায়গায় আর কাউকে ইমাম বানানোও পছন্দ করতো না। অবশেষে ব্যাপারটি রসূলুল্লাহর (সা) সামনে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন , তোমার সাথীরা যা চায় তা করতে তোমার বাধা কোথায় ? কোন জিনিসটি তোমাকে প্রত্যেক রাকআতে এ সূরাটি পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে ? তিনি বলেন : এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি । রসূলুল্লাহ (সা) জবাবে বলেন : আরবী ---------------------------------- অর্থাৎ “ এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। ”

প্রশ্ন: ১২৪ : যাকাত ।

যাকাতের নিসাব ও বন্টনের খাত

যাকাতের নিসাব:
যাকাতযোগ্য সম্পত্তির বিবরণ, তার নিসাব বা সর্বনিমণ পরিমাণ ও যাকাত আদায়ের হার সংক্রান্ত চার্ট নিম্নরূপঃ
ক্রম
যাকাতযোগ্য সম্পত্তির বিবরণ
যাকাতের নিসাব
(ন্যূনতম যে পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করা ফরজ)
যাকাত পরিশোধের হার
১.
হাতে রক্ষিত অথবা ব্যাংকে নগদ গচ্ছিত অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবন্ড ও সার্টিফিকেট সমূহ।
৫২.৫ তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ বাজার মূল্য।
মোট অর্থের শতকরা ২.৫%।
২.
স্বর্ণ/রৌপ্য, মূল্যবান ধাতু ও স্বর্ণ বা রৌপ্যের অলংকার।
৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা সমপরিমাণ অর্থ।
আদায়কালীন বাজার মূল্য অনুযায়ী মোট অর্থের শতকরা ২.৫%।
৩.
বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশের ভিত্তিতে প্রদত্ত অর্থ।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
আদায়কালীন বাজার মূল্যের শতকরা ২.৫%।
৪.
উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল।
-
বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের উশর  ১/১০ অংশ,  সেচে উৎপাদিত জমিরফসলের  ১/২০  অংশ  অথবা শস্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ প্রতি মৌসুমে আদায়যোগ্য।
৫.
পশু সম্পদ
(ক) ভেড়া বা ছাগল প্রভৃতি।
১ থেকে ৩৯টি পর্যমত্ম
যাকাত প্রযোজ্য নয়।
৪০থেকে ১২০টি
১টি ভেড়া/ছাগল


১২১ থেকে ২০০টি
২টি ভেড়া/ছাগল


২০১ থেকে ৩০০টি
৩টি ভেড়া/ছাগল


এর অতিরিক্ত প্রতি ১০০টির যাকাত
১টি করে ভেড়া/ছাগল

(খ) গরম্ন, মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু।
১ থেকে ২৯টি পর্যমত্ম
যাকাত প্রযোজ্য নয়।


৩০ থেকে ৩৯টি
এক বছর বয়সী ১টি বাছুর


৬০টি এবং ততোধিক
প্রতি ৩০টির জন্য ১ বছর বয়সী এবং প্রতি ৪০টির জন্য ২ বছর বয়সী বাছুর।

(গ) ব্যবসার উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগী পালন এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, নির্মিত বাড়ী প্রভৃতির বাজার মূল্যের হিসাব হবে।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
তবে বাজার মূল্যের ২.৫% অর্থ।
৬.
খণিজ দ্রব্য।
যে কোন পরিমাণ।
উত্তোলিত খণিজ দ্রব্যের শতকরা ২০ ভাগ।
৭.
প্রভিডেন্ট ফান্ডঃ
সরকারী প্রতিষ্ঠানে বা যে সকল কর্পোরেশনে সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তন করা হয়, উক্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের কর্তৃনকৃত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে এই টাকা গ্রহণ করার পর একবছর পূর্ণ হলে সম্পূর্ণ টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে।
৫২.5 তোলা রূপার মূল্য।
শতকরা ২.৫ ভাগ।
৮.
কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির উদ্যোগে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করা হলে প্রতি বছর তার উপর যাকাত দিতে হবে।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
শতকরা ২.৫ ভাগ।
     
বি.দ্র.: নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়ার দিন থেকে এক বছর পুর্তির পর যাকাত ফরয হয়।
যাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বন্টন করার উপর অধিক গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। এই কারণে আলস্নাহপাক নিজেই যাকাত ব্যয় বন্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যাকাত কেবল নি:স্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আলস্নাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (আল কুরআন, ৯:৬০)। এ খাতের বাইরে অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। নিম্নে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উলেস্নখিত ৮টি খাতের বর্ণনা দেয়া হলো।
যাকাত বন্টনের নির্ধারিত ৮টি খাতের বিবরণ:
      প্রথম খাতঃ ফকীর- ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল  স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্ট করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকীর। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।
      দ্বিতীয় খাতঃ মিসকীন- মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন। মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।
     তৃতীয় খাতঃ আমেলীন-  ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কুরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ দূরীকরণে যাকাত আদায় শর্ত।
      চতুর্থ খাতঃ মুআলস্নাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য)- নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিত করণ আবশ্যকীয় মনে করে যাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়। এ খাতের আওতায় দুঃস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহগণ অভিমত প্রদান করেছেন।
      পঞ্চম খাতঃ ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দী হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

      ষষ্ঠ খাতঃ ঋণগ্রস্থ-  এ ধরণের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোন ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না- জায়েয প্রথা  অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।
      সপ্তম খাতঃ আলস্নাহর পথে- সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে যে, ‘‘যাকাত এই সমসত্ম লোকের জন্য  যারা আলস্নাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফেরা করতে পারে না, যাচঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত বলে মনে করে।
      অষ্টম খাতঃ অসহায় মুসাফির- যে সমসত্ম মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মত এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়।

প্রশ্ন: ১২৩ : মহিলাদের নামাজের সময়ে পর্দা ।

মেয়েদের নামাযের ক্ষেত্রে কিছু বাহ্যিক দিক রয়েছে, যেগুলি পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন। যেমন-
১. সালাতে মহিলাদের জন্য পর্দা আবশ্যক, অর্থাত্ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’লা বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সুরা আহযাব- ৩৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮] হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/২৫১] মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
২. সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না। এটা হল ফোকাহকেরামদের ইজমা। কারণ মেয়েদের আওয়াজ হল একটা ফিতনা।
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى عَدَمِ جَوَازِ أَذَانِ الْمَرْأَةِ وَإِقَامَتِهَا لِجَمَاعَةِ الرِّجَال،
অর্থাত্, ফোকাহকেরামদের ঐক্যমত হচ্ছে যে পুরুষদের জামাতে মেয়েরা আযান এবং একামত দেয়া যায়েজ নাই।
৩. কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে। নবী করীম (স:) বলেছেন: لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً “মেয়েরা পুরুষদের ইমামতি করবে না।” (ইবনে মাজাহ)
৪. জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে। হযরত আবুহুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) বলেছেন:
خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا ، وَشَرُّهَا آخِرُهَا ، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا ، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا هَذَا. حَدِيثٌ صَحِيحٌ، أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ
“পুরুষদের জন্য উত্তম সাফ্ (কাতার) হল প্রথম সাফ‌, আর খারাপ সাফ হল পিছনের সাফ্। পক্ষান্তরে মেয়েদের জন্য উত্তম সাফ্ হল পিছনের সাফ্ এবং সবচেয়ে খারপ সাফ্ হল প্রথম সাফ্। (সহীহ মুসলিম)
৫. পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৬. স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত। মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৭. যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাতের উপর হাত দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে। রসুল (স:) এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই।

প্রশ্ন: ১২২ : ইমামের তিলাওয়াত অশুদ্ধ হলে ।

প্রসঙ্গঃ
অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীর পিছনে নামাযের ইক্তিদা করা৷
প্রশ্নঃ
আমাদের মসজিদের আগের ইমাম সাহেব চলে যাওয়ার পর এমন একজন ইমাম আনছে যার কুরআন
তেলয়াত খুব অশুদ্ধ ৷ তাই জানতে চাই, এই ইমামের পিছনে নামায হবে কি? যদি না হয় তাহলে আমি কি জামাত বাদ দিয়ে একা বাড়িতে নামায পড়ব ? আমাদের বাড়ির পাশে কোন মসজিদ নাই ৷ অনেক দূরে আছে ৷
উত্তরঃ
কুরআনে কারীম শুদ্ধ করে পড়তে পারে এমন ব্যক্তি অশুদ্ধ তিলাওয়াত কারী ইমামের পিছনে নামায পড়লে তার নামায হয় না। অতএব যদি আপনাদের মসজিদের ইমামের তিলাওয়াত অশুদ্ধ ও আপনার তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় তাহলে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়লে আপনার নামায হবে না ৷ নামায আবার দোহরিয়ে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, আপনাদের উচিত উক্ত ইমামকে পরিবর্তন করে শুদ্ধ তিলাওয়াতকারী কোন ইমামকে রাখা, অথবা উক্ত ইমামকে তিলাওয়াত শুদ্ধ করে আসার তাগিদ দেয়া। যদি তা সম্ভব না হয়, আপনি আশপাশের অন্য কোন মসজিদে জামাতে নামায আদায় করবেন ৷ তাও সম্ভব না হলে জামাতের সওয়াব পেতে উক্ত ইমামের ইক্তিদা করার পর, আবার নামাযটি দোহরিয়ে নিবেন।
-আল হিদায়া-১/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৫২;
আলবাহরুর রায়েক-১/৬৩০-৬৩১ ফাতাওয়া শামী- ২/৩২৪ ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/
১৪৩-১৪৪ ৷

প্রশ্ন : ১২১ : তাক্বওয়া কি ?

তাকওয়া কি???
তাকওয়া এতই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে দুইশতেরো বেশি জায়গায় এই তাকওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাকওয়া কি জিনিস?
তাকওয়া কাকে বলে!!
একবার উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) —উবাই বিন কাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন~
মা মাআনাত তাকওয়া?
তাকওয়া কি জিনিস?
তাকওয়া কাকে বলে?
তাকওয়া অর্থ কি?
উবাই বিন কাব (রাঃ) বললেন- আপনি কি কখনও এমন কোন সুরু পথ দিয়ে চলেছেন! যার দুপাশে কাটাদার গাছ রয়েছে! বা আপনি কি কখনও কাটাদার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পথ অতিক্রম করেছেন??
তখন উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন হা করেছি।
উবাই বিন কাব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কাটাদার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কি ভাবে পথ অতিক্রম করে থাকেন?
উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন আমি আমার জামা—কাপড়কে গুছিয়ে, শরীরকে গুটিয়ে খুব সতর্কতার সাথে পথ অতিক্রম করি! যাতে করে আমার জামা কাপড়ে আমার শরীরে কাটা বিদ্ধ না হয়!
উবাই বিন কাব (রাঃ) তখন উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন—আপনি যে ভাবে কাটার আচড় থেকে বাচার জন্য খুব সতর্কতার সাথে পথ অতিক্রম করে থাকেন! ঠিক তেমনি ভাবে দুনিয়ার জীবনে সতর্কতার সাথে গুনাহ থেকে বেচে চালার নামই হচ্ছে তাকওয়া।
ভাই ও বোনেরা — উবাই বিন কাব (রাঃ) এর উল্লেখিত বক্তব্য থেকে আমার বুঝতে পারলাম যে দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে সতর্কতার সাথে গুনাহ থেকে বেচে চলার নামই হলো তাকওয়া।
তাকওয়ার অর্থ বুঝার জন্য আরেকটি উদাহরণ দেই—মনে করুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন। আপনি যে রুমে বসে কাজ করেন সেই রুমে আপনার মাথার উপরে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে! যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আপনাকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করছেন! আপনি কি কাজ করছেন নাকি কাজে ফাকি দিচ্ছেন।
সেই প্রতিষ্ঠানে আপনি কি ভাবে থাকবেন। আপনি কি কাজে ফাকি দিবেন নাকি সবসময় সতর্ক থাকবেন এবং উধ্যমতার সাথে কাজ করবেন। নিশ্চয় আপনি সতর্ক থাকবেন এবং ঠিক মত কাজ করবেন। কারন আপনার মাথার উপর সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আর প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আপনাকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছে।
ঠিক তেমনি ভাবে তাকওয়ার মানেই হচ্ছে এই সবসময় অনুভূতি থাকা যে টুয়েন্টি ফোর অওয়ার আল্লাহ তাআলা আপনাকে মনিটরিং করছেন। চব্বিশ ঘন্টা আল্লাহ সুবহানু ওয়াত-আলা আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। পৃথিবীর সবাইকে ফাকি দিতে পারলেও আপনি আল্লাহ সুবহানু ওয়তা-আলাকে ফাকি দিতে পারবেন না। পৃথিবীর সবাইকে ধোকা দিতে পারলেও আপনি আল্লাহ সুবহানু ওয়াত-আলাকে ধোঁকা দিতে পারবেন না।
কারন—অল্লাহু বাছিরুম বিল ইবাদ!
অর্থ—বান্দা যা করছে আল্লাহ তাআলা সবেই দেখছেন!
অল্লাহু বাছিরুম বিমা তামালুন!
অর্থ—তোমরা যা করছো আল্লাহ তাআলা সবিই দেখছেন! আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ব্যাপারে অবগত আছেন!
আপনার অপরাধ গুলো কেউ দেখুখ আর না দেখুখ আল্লাহ তাআলা কিন্তু ঠিকিই দেখছেন!পৃথিবীর অন্য কোন শক্তিনয় শুধু মাত্র এই অনুভূতিটাই আপনাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। শুধু এই অনুভূতিটা থাকার কারনে সাহাবা (রাঃ) অইয়ামে জাহিলিয়াতের সময়েও তারা সোনার মানুষে পরিনত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা আল্লাহকে ভয়করে সবধরনের গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকেছেন।
প্রিয় ভাইও বোনেরা আসুন তাকওয়া অর্জন করি আল্লাহকে ভয় করতে শিখি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে মাজিদে ইরশাদ করেন—হে ঈমানদরগন!আল্লাহকে যথাযথ ভয়কর। আর মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। (-আল ইমরানঃ১০২)
ìììআবু আনাছííí

প্রশ্ন: ১২০ : বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়তে ভুলে গেলে ।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করতে আমার খুব কষ্ট হয়; যেমন বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুত। এ কারণে আমি এ দোয়ার জায়গায় একটি সূরা পড়তাম। যখন আমি জানতে পারলাম যে, এ দোয়া পড়া ফরজ; তখন দোয়াটি মুখস্থ করার চেষ্টা করতে থাকি। আমি নামাযের মধ্যে একটি বই থেকে দেখে দেখে দোয়াটি পড়ি। বইটিকে আমার পাশে একটি টেবিলের উপরে রাখি। আমি কিবলামুখী থেকেই বই থেকে দোয়াটি পড়ি। আমার এ আমলটি কি জায়েয?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
১. বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআন শরিফ দেখে পড়া জায়েয আছে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ দেখে পড়ার হুকুম কি? এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল কি?
উত্তরে তিনি বলেন: রমযানে কিয়ামুল লাইলের নামাযে কুরআন শরিফ দেখে পড়তে কোন বাধা নেই। কারণ এতে করে মুসল্লিদেরকে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শুনানো যেতে পারে। এবং যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়েছে; যা মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) দেখে পড়া ও মুখস্থ থেকে পড়া উভয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তাঁর আযাদকৃত দাস যাকওয়ানকে কিয়ামে রমযানে তাঁর ইমামতি করার নির্দেশ দিতেন এবং সে মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়ত।[ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ উক্তিটি নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ভাষায় সংকলন করেছেন]
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৫)]
২. বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে। ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।[ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০]
৩. প্রশ্নকারী ভাই যা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে কুরআন পড়তেন নিঃসন্দেহে এটা করা ঠিক হয়নি। কারণ কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দোয়া করা। তাই যেসব আয়াতে দোয়া আছে সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েয হবে। যেমন ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ  [آل عمران: 8]
(অনুবাদ:হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।)[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮]
৪. প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ফরয; এ কথা সহিহ নয়। বরং দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। তাই মুসল্লি যদি দোয়ায়ে কুনুত নাও পড়েন নামায সহিহ হবে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?
জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?
উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়।
আল্লাহই তাওফিকদাতা।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৯)]

আরাফার দিনে রোজার বিধান কী? প্রশ্নঃ ১১৮

একসাথে রোজা ও ঈদ হবে কি না তা নিয়ে মতবিরোধ চলছে এবং থাকবেও। কেননা এই মতবিরোধ যৌক্তিক কিন্তু এটার ওপর কিয়াস করে আরাফার রোজা কোনো তারিখে হবে সেটা নিয়ে মতবিরোধের কোনো কারণ আমি দেখছি না এবং মতবিরোধ থাকা উচিত‌ও না। এটা মূলত মতবিরোধের কোনো বিষয় নয়।
কেননা রাসূলুল্লাহর স্পষ্ট হাদিস রয়েছে,
صيام يوم عرفة احتسب على الله ان يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده.
অর্থাৎ আরাফার দিনের রোজা তার পূর্বের এক বছর এবং পরবর্তী এক বছর মোট দুই বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "আরাফার দিনে" রোজা রাখতে বলেছেন, 9 জিলহজ শব্দ উল্লেখ করেননি। যদিও 9 জিলহজ আর আরাফার দিনের মধ্যে বাহ্যত কোনো পার্থক্য নেই। কেননা 9 জিলহজ‌ই আরাফার দিন কিন্তু এখানে একটি বিরাট সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে ।
,
আর তা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন রোজা রাখতে এই জন্য বলেছেন যে, সেই দিন হাজীগন আরাফার ময়দানে যাবেন, তাকবীর-তাহলীল বলবেন। অনেক মর্যাদা পাবেন , নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারবেন। আমরা যারা যেতে পারি না আমরা ওই দিন রোজা রাখে যেন তাদের সাথে স‌ওয়াবে একটু শরিক হ‌ই এবং নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারি। এখন আমরা যদি নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী 9 জিলহজ রোজা রাখি তাহলে সেইদিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে থাকেন না , সে দিন তারা কুরবানী করে থাকেন। অতএব, রাসূলের রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় । যদি রাসুলুল্লাহ 9 জিলহজ শব্দটি হাদীসে উল্লেখ করতেন তাহলে বাংলাদেশের তারিখ অনুযায়ী 9 জিলহজ রোজা রাখার সুযোগ ছিল কিন্তু তিনি যেহেতু 9 জিলহজ শব্দে উল্লেখ না করে "আরাফার দিন" শব্দটি উল্লেখ করেছেন। অতএব যেদিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন সেই দিনই রোজা রাখা এই হাদিসের উদ্দেশ্য এবং পূর্ণ ফজিলত পেতে হলে আগামীকাল তথা বাংলাদেশ তারিখ অনুযায়ী 8 জিলহজ রোজা রাখতে হবে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব এড়াতে চাইলে সর্বোত্তম হচ্ছে 8 এবং 9 দুই দিন‌ই রোজা রাখা। এখন কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, 9 তারিখ রোজা রাখলে সেই দিন তো সৌদি আরবে ঈদ । আর ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এই প্রশ্ন না তোলার জন্যই প্রথমে বলেছি যে, রোজা এবং ঈদ একসাথে হবে না আলাদা হবে সেটা নিয়ে মতভেদ করা যৌক্তিক এবং উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান। অত‌এব, 9 জিলহজ সৌদি আরব ঈদ হইলে সেই দিন বাংলাভাষীর জন্য রোজা রাখা হারাম হয় না। কেননা রোজা ও হজ্জ্ব প্রত্যেক দেশেই রয়েছে কিন্তু আরাফা একটা জায়গাতেই হয়ে থাকে। অতএব, আরাফার ক্ষেত্রে সেটাকেই ফলো করতে হবে কিন্তু রোজা ও ঈদের ক্ষেত্রে তা জরুরী নয় ।
(তবে জরুরি কিনা তা বিস্তর আলোচনার বিষয়)।
(উত্তর দিয়েছেনঃ আসলাম সাঈদী)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...