প্রশ্ন: ১২৫ : সুরা ইখলাস নাযিল হওয়া সংক্রান্ত।

নামকরণ :

ইখলাস শুধু এ সূরাটির নামই নয় ,এখানে আলোচ্য বিষয়বস্তুর শিরোনামও । কারণ , এখানে খালেস তথা নির্ভেজাল তাওহীদের আলোচনা করা হয়েছে। কুরআন মজীদের অন্যান্য সূরার ক্ষেত্রে সাধারণত সেখানে ব্যবহৃত কোন শব্দের মাধ্যমে তার নামকরণ করতে দেখা গেছে। কিন্তু এ সূরাটিতে ইখলাস শব্দ কোথাও ব্যবহৃত হয়নি। কাজেই এর এ নামকরণ করা হয়েছে এর অর্থের ভিত্তিতে। যে ব্যক্তি এ সূরাটির বক্তব্য অনুধাবন করে এর শিক্ষার প্রতি ঈমান আনবে , সে শিরক থেকে মুক্তি লাভ করে খালেস তাওহীদের আলোকে নিজেকে উদ্ভাসিত করবে।

নাযিলের সময়- কাল

এর মক্কী ও মাদানী হবার ব্যাপারে মতভেদ আছে। এ সূরাটি নাযিল হবার কারণ হিসেবে যেসব হাদীস উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর ভিত্তিতেই এ মতভেদ দেখা দিয়েছে। নীচে পর্যায়ক্রমে সেগুলো উল্লেখ করছি :
(১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বর্ণনা করেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশ পরিচয় * আমাদের জানান। একথায় এ সূরাটি নাযিল হয়। ( তাবারানী) ।
(২) আবুল আলীয়াহ হযরত উবাই ইবনে কাবের (রা) বরাত দিয়ে বর্ণনা করেন , মুশরিকরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশ পরিচয় আমাদের জানান। এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন । ( মুসনাদে আহমাদ , ইবনে আবী হাতেম , ইবনে জারীর , তিরমিযী , বুখারী ফিত তারীখ , ইবনুল মুনযির , হাকেম ও বায়হাকী ) এ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস আবুল আলীয়ার মাধ্যমে ইমাম তিরমিযী উদ্ধৃত করেছেন। সেখানে হযরত উবাই ইবনে কা'বের বরাত নেই। ইমাম তিরমিযী একে অপেক্ষকৃত বেশী নির্ভুল বলেছেন।
* আরববাসীদের নিয়ম ছিল , কোন অপরিচিত ব্যক্তির পরিচয় লাভ করতে হলে তারা বলতো , ( আরবী -------) ( এর বংশধারা আমাদের জানাও ) কারণ তাদের কাছে পরিচিতির জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হতো বংশধারার। সে কোন বংশের লোক ? কোন গোত্রের সাথে সম্পর্কিত ? একথা জানার প্রয়োজন হতো । কাজেই তারা যখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে তাঁর রব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলো তিনি কে এবং কেমন , তখন তারা তাঁকে একই প্রশ্ন করলো। তারা প্রশ্ন করলো , ( আরবী ------------) অর্থাৎ আপনার রবের নসবনামা ( বংশধারা ) আমাদের জানান।
(৩) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণনা করেন , এক গ্রামীণ আরব ( কোন কোন হাদীস অনুযায়ী লোকেরা ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , আপনার রবের বংশধারা আমাদের জানান। এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন ( আবু ইয়ালা , ইবনে জারীর , ইবনুল মুনযির , তাবারানী ফিল আওসাত , বায়হাকী ও আবু নু’আইম ফিল হিলইয়া )
(৪) ইকরামা হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে রেওয়ায়াত করেন , ইহুদীদের একটি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে হাযির হয়। তাদের মধ্যে ছিল কা’ব ইবনে আশরাফ ও হুই ইবনে আখতাব প্রমুখ লোকেরা । তারা বলে , “ হে মুহাম্মাদ ! ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) আপনার যে রব আপনাকে পাঠিয়েছেন তিনি কেমন সে সম্পর্কে আমাদের জানান। ” এর জবাবে মহান আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন। ( ইবনে আবী হতেম , ইবনে আদী , বায়হাকী ফিল আসমায়ে ওয়াস সিফাত )
এ ছাড়াও ইমাম ইবনে তাইমিয়া কয়েকটি হাদীস তাঁর সূরা ইখলাসের তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। সেগুলো হচ্ছে :
(৫) হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন , খয়বারের কয়েকজন ইহুদী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলে , “ হে আবুল কাসেম ! আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূরের পরদা থেকে , আদমকে পচাগলা মাটির পিণ্ড থেকে , ইবলিসকে আগুনের শিখা থেকে , আসমানকে ধোঁয়া থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে তৈরি করেছেন । এখন আপনার রব সম্বন্ধে আমাদের জানান ( অর্থাৎ তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট ? ) ” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথার কোন জবাব দেননি। তারপর জিব্রীল ( আ) আসেন। তিনি বলেন , হে মুহাম্মাদ ! ওদেরকে বলে দাও , “ হুওয়াল্লাহু আহাদ ” ( তিনি আল্লাহ এক ও একক ) --------------------
(৬) আমের ইবনুত তোফায়েল রসূলুল্লাহকে (সা) বলেন : হে মুহাম্মাদ ! আপনি আমাদের কোন জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছেন ? তিনি জবাব দেন , “ আল্লাহর দিকে ।” আমের বলে : “ ভালো , তাহলে তার অবস্থা আমাকে জানান। তিনি সোনার তৈরি , না রূপার অথবা লোহার? ” একথার জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়।
(৭) যাহহাক , কাতাদাহ ও মুকাতেল বলেন , ইহুদীদের কিছু আলেম রসূলুল্লাহ (সা) কাছে আসে। তারা বলে : “ হে মুহাম্মাদ ! আপনার রবের অবস্থা আমাদের জানান। হয়তো আমরা আপনার ওপর ঈমান আনতে পারবো। আল্লাহ তাঁর গুণাবলী তাওরাতে নাযিল করেছেন। আপনি বলুন , তিনি কোন বস্তু দিয়ে তৈরি ? কোন গোত্রভুক্ত ? সোনা , তামা পিতল , লোহা , রূপা , কিসের তৈরি ? তিনি পানাহর করেন কি না ? তিনি উত্তরাধিকারী সূত্রে কার কাছ থেকে পৃথিবীর মালিকানা লাভ করেছেন ? এবং তারপর কে এর উত্তরাধিকারী হবে ? এর জবাবে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন ।
(৮) ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণনা করেন , নাজরানের খৃষ্টানদের সাতজন পাদরী সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রদিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করে ।তারা তাঁকে বলে : “ আমাদের বলুন , আপনার রব কেমন ? তিনি কিসের তৈরি ? ” তিনি বলেন , “ আমার রব কোন জিনিসের তৈরি নন। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা ।” এ ব্যাপারে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন।
এ সমস্ত হাদীস থেকে জানা যায় , রসূলুল্লাহ (সা) যে মাবুদের ইবাদাত ও বন্দেগী করার প্রতি লোকদের আহবান জানাচ্ছিলেন তার মৌলিক সত্তা ও অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক প্রশ্ন করেছিল। এ ধরনের প্রশ্ন যখনই এসেছে তখনই তিনিই জবাবে আল্লাহর হুকুমে লোকদেরকে এ সূরাটিই পড়ে শুনিয়েছেন। সর্বপ্রথম মক্কায় কুরাইশ বংশীয় মুশরিকরা তাঁকে এ প্রশ্ন করে । তাদের এ প্রশ্নের জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়। এরপর মদীনা তাইয়েবায় কখনো ইহুদী , কখনো খৃষ্টান আবার কখনো আরবের অন্যান্য লোকেরাও রসূলুল্লাহকে (সা) এই ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। প্রত্যেকবারই আল্লাহর পক্ষ থেকে ইশারা হয় জবাবে এ সূরাটি তাদের শুনিয়ে দেবার । ওপরে উল্লেখিত হাদীসগুলোর প্রত্যেকটিতে একথা বলা হয় যে , এর জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়। এর থেকে এ হাদীসগুলো পরস্পর বিরোধী একথা মনে করার কোন সংগত কারণ নেই । আসলে হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবতীর্ণ কোন আয়াত বা সূরা থাকতো তাহলে পরে রসূলুল্লাহ (সা) সামনে যখনই সেই বিষয় আবার উত্থাপিত হতো তখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত আসতো , এর জবাব উমুক আয়াত বা সূরায় রয়েছে অথবা এর জবাবে লোকদেরকে উমুক আয়াত বা সূরা পড়ে শুনিয়ে দাও। হাদীসসমূহের রাবীগণ এ জিনিসটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন , যখন উমুক সমস্যা দেখা দেয় বা উমুক প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তখন এ আয়াত বা সূরাটি নাযিল হয়। একে বারংবার অবতীর্ণ হওয়া অর্থাৎ একটি আয়াত বা সূরার বারবার নাযিল হওয়াও বলা হয়।
কাজেই সঠিক কথা হচ্ছে , এ সূরাটি আসলে মক্কী । বরং এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করলে একে মক্কায় একেবারে প্রথম যুগে অবতীর্ণ সূলাগুলোর অন্তরভুক্ত করা যায়। আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে কুরআনের কোন বিস্তারিত আয়াত তখনো পর্যন্ত নাযিল হয়নি। তখনো লোকেরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর দিকে দাওয়াতের বার্তা শুনে জানতে চাইতো : তাঁর এ রব কেমন , যাঁর ইবাদাত - বন্দেগী কারার দিকে তাদেরকে আহবান জানানো হচ্ছে। এর একেবারে প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তরভুক্ত হবার আর একটি প্রমাণ হচ্ছে , মক্কায় হযরত বেলালকে (রা) তার প্রভু উমাইয়া ইবনে খালাফ যখন মরুভূমির উত্তপ্ত বালুকার ওপর চিৎ করে শুইয়ে তার বুকের ওপর একটা বড় পাথর চাপিয়ে দিতো তখন তিনি “ আহাদ ” “ আহাদ ” বলে চিৎকার করতেন। এ আহাদ শব্দটি এ সূরা ইখলাস থেকেই গৃহীত হয়েছিল।

বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য

নাযিল হওয়ার উপলক্ষ সম্পর্কিত যেসব হাদীস ওপরে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর ওপর এক নজর বুলালে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে এসেছিলেন তখন দুনিয়ার মানুষের ধর্মীয় চিন্তা - ভাবনা ও ধ্যান - ধারণা কি ছিল তা জানা যায়। মূর্তি পূজারী মুশরিকরা কাঠ , পাথর সোনা, রূপা ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের তৈরি খোদার কাল্পনিক মূর্তিসমূহের পূজা করতো । সেই মূর্তিগুলোর আকার , আকৃতি ও দেহাবয়ব ছিল। এ দেবদেবীদের রীতিমত বংশধারাও ছিল। কোন দেবী এমন ছিল না যার স্বামী ছিল না। আবার কোন দেবতা এমন ছিল না যার স্ত্রী ছিল না। তাদের খাবার দাবারেরও প্রয়োজন দেখা দিতো । তাদের পূজারীরা তাদের জন্য এসবের ব্যবস্থা করতো। মুশরিকদের একটি বিরাট দল খোদার মানুষের রূপ ধারণ করে আত্মপ্রকাশ করায় বিশ্বাস করতো এবং তারা মনে করতো কিছু মানুষ খোদার অবতার হয়ে থাকে । খৃষ্টানরা এক খোদায় বিশ্বাসী হলেও তাদের খোদার কমপক্ষে একটি পুত্র তো ছিলই এবং পিতা পুত্রের সাথে খোদায়ী সাম্রাজ্য পরিচালনার ব্যাপারে রুহুল কুদুসও ( জিব্রীল) অংশীদার ছিলেন । এমন কি খোদার মাও ছিল এবং শাশুড়ীও । ইহুদীরাও এক খোদাকে মেনে চলার দাবীদার ছিল কিন্তু তাদের খোদাও বস্তুসত্তা ও মরদেহ এবং অন্যান্য মানবিক গুণাবলীর উর্ধে ছিল না। তাদের এ খোদা টহল দিতো , মানুষের আকার ধারণ করে আত্ম প্রকাশ করতো। নিজের কোন বান্দার সাথে কুশতিও লড়তো । তার একটি পুত্রও ( উযাইর ) ছিল। এ ধর্মীয় দলগুলো ছাড়া আরো ছিল মাজূসী - অগ্নি উপাসক ও সাবী -তারকা পূজারী দল। এ অবস্থায় যখন লোকদেরকে এক ও লা- শারীক আল্লাহর আনুগত্য করার দাওয়াত দেয়া হয় তখন তাদের মনে এ প্রশ্ন জাগা নিতান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল যে , সেই রবটি কেমন , সমস্ত রব ও মাবুদদেরকে বাদ দিয়ে যাকে একমাত্র রব ও মাবুদ হিসেবে মেনে নেবার দাওয়াত দেয়া হচ্ছে ? এটা কুরআনের অলৌকিক প্রকাশভংগীরই কৃতিত্ব। এ সমস্ত প্রশ্নের জবাব মাত্র কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করে কুরআন মূলত আল্লাহ অস্তিত্বের এমন সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা পেশ করে দিয়েছে , যা সব ধরনের মুশরিকী চিন্তা ও ধ্যান -ধারণার মূলোৎপাটন করে এবং আল্লাহর সত্তার সাথে সৃষ্টির গুণাবলীর মধ্য থেকে কোন একটি গুণকেও সংযুক্ত করার কোন অবকাশই রাখেনি।

শ্রেষ্টত্ব ও গুরুত্ব

এ কারণে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৃষ্টিতে এ সূরাটি ছিল বিপুল মহত্বের অধিকারী । বিভিন্নভাবে তিনি মুসলমানদেরকে এ গুরুত্ব অনুভব করাতেন । তারা যাতে এ সূরাটি বেশী করে পড়ে এবং জনগণের মধ্যে একে বেশী করে ছড়িয়ে দেয় এ জন্য ছিল তাঁর এ প্রচেষ্টা। কারণ এখানে ইসলামের প্রাথমিক ও মৌলিক আকীদাকে ( তাওহীদ ) এমন ছোট ছোট চারটি বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে , যা শুনার সাথে সাথেই মানুষের মনে গেঁথে যায় এবং তারা সহজেই মুখে মুখে সেগুলো আওড়াতে পারে। রসূলুল্লাহ (সা) বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে লোকদের বলেছেন , এ সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান --- এ মর্মে হাদীসের কিতাবগুলোতে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বুখারী , তিরমিযী , মুসলিম , আবু দাউদ , নাসাঈ , ইবনে মাজাহ , মুসনাদে আহামাদ , তাবারানী ইত্যাদি কিতাবগুলোতে বহু হাদীস আবু সাঈদ , খুদরী , আবু হুরাইরা , আবু আইয়ুব আনসারী , কুলসুম বিনতে উকবাহ ইবনে আবী মু’আইত , ইবনে উমর , ইবনে মাস্থউদ , কাতাদাহ ইবনুন নূ’মান , আনাস ইবনে মালেক ও আবু মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত হয়েছে। মুফাসসিরগণ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ উক্তির বহু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেছেন। তবে আমাদের মতে সহজ , সরল , ও পরিস্কার কথা হচ্ছে , কুরআন মজীদ যে দীন ও জীবন ব্যবস্থা পেশ করে তার ভিত্তি রাখা হয়েছে তিনটি বুনিয়াদী আকীদার ওপর। এক, তাওহীদ। দুই , রিসালাত । তিন , আখেরাত । এ সূরাটি যেহেতু নির্ভেজাল তাওহীদ তত্ব বর্ণনা করেছেন তাই রসূলুল্লাহ ( সা) একে কুরআনের এক - তৃতীয়াংশের সমান গণ্য করেছেন।
হযরত আয়েশার (রা) একটি রেওয়ায়াত বুখারী ও মুসলিম এবং হাদীসের অন্যান্য কিতাবগুলোতে উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক অভিযানে এক সাহাবীকে সরদারের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তিনি সমগ্র সফলকালে প্রত্যেক নামাযে “ কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ ” পড়ে কিরআত শেস করতেন। এটা যেন তার স্থায়ী রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল ফিরে আসার পর তার সাথীরা রসূলুল্লাহ (সা) কাছে একথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন , তাকে জিজ্ঞেস করো , সে কেন এমনটি করেছিল? তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দেন : এতে রহমানের গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। তাই এর পাঠ আমার অত্যন্ত প্রিয়। রসূলুল্লাহ (সা) একথা শুনে লোকদের বলেন : আরবী -------------------------------------------------- “তাকে জানিয়ে দাও , আল্লাহ তাকে ভালোবাসেন ।”
প্রায় এ একই ঘটনা বুখারী শরীফে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বললেন , জনৈক আনসারী কুবার মসজিদে নামায পড়াতেন। তাঁর নিয়ম ছিল , তিনি প্রত্যেক রাকাআতে ( আরবী --------------) পড়তেন। তারপর অন্য কোন সূরা পড়তেন। লোকেরা এ ব্যাপারে আপত্তি উঠায় । তারা বলেন , তুমি এ কেমন কাজ করছো , প্রথমে ( আরবী ------------) পড়ো তারপর তাকে যথেষ্ট মনে না করে আবার তার সাথে আর একটি সূরা পড়ো ? এটা ঠিক নয়। শুধূমাত্র “ কুল হুওয়াল্লাহ” পড়ো অথবা একে বাদ দিয়ে অন্য একটি সূরা পড়ো। তিনি জবাব দেন , আমি এটা ছড়াতে পারবো না। তোমরা চাইলে আমি তোমাদের নামায পড়াবো অথবা ইমামতি ছেড়ে দেবো। কিন্তু লোকেরা তাঁর জায়গায় আর কাউকে ইমাম বানানোও পছন্দ করতো না। অবশেষে ব্যাপারটি রসূলুল্লাহর (সা) সামনে আসে। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন , তোমার সাথীরা যা চায় তা করতে তোমার বাধা কোথায় ? কোন জিনিসটি তোমাকে প্রত্যেক রাকআতে এ সূরাটি পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে ? তিনি বলেন : এ সূরাটিকে আমি খুব ভালোবাসি । রসূলুল্লাহ (সা) জবাবে বলেন : আরবী ---------------------------------- অর্থাৎ “ এ সূরার প্রতি তোমার ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। ”

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...