প্রশ্ন: ১২৬ : গাদীরে খাম এর ঘটনা ।

“গাদীরে খাম-এর ঘটনা”

আসলে এ হাদীসের মূল তাৎপর্য তো বুঝা যায় হযরত আলীর সঙ্গে দন্দ্বে ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন মুয়াবিয়া এবং মুআবিয়া খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করে  রাজতন্ত্র ব্যবস্থা চালু করেছেন। অতএব, গাদীরে খাম এর ঘটনা এ সাক্ষ্য দেয় যে, হযরত আলী রা: হক্ব এর উপর ছিলেন। 

ইমাম আহমাদ বলেনঃ হুসাইন ইবন মুহাম্মদ ও আবু নুআইম আল মুআন্না উভয়ে কাতার থেকে, তিনি আবুত-তুফাইল থেকে বর্ণনা করেন। আবুত-তুফাইল বলেন, আলী- কূফার উন্মুক্ত স্থান রাহ্বায় লোকজন সমবেত করেন, এরপর তাদেরকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলেন, গাদীরে খাম দিবসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যা বলেছিলেন তা তাোমাদের মধ্যে যে সব মুসলমান শুনেছিল তারা দাঁড়িয়ে বলুক।
এ কথার পর উপস্থিত লোকদের অনেকেই দাঁড়িয়ে যায়। আবু নুআইম বলেন, অনেক লোক দণ্ডায়মান হয়। তারা সাক্ষ্য দেয় যে, সে দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আলীর হাত ধারণ করে জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, তোমরা কি জান যে, আমি মুমিনগণের জন্যে তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক আপন ? তারা জওয়াবে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কথা যথার্থ। তখন তিনি বলেন, আমি যার অভিভাবক এও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! এর সাথে যে বন্ধুত্ব রাখবে তাকে আপনি বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করুন; আর এর সাথে যে শত্রুতা পোষণ করবে আপনি তার সাথে শত্রুতার সম্পর্ক করুন। রাবী আবু নুআইম বলেন, আমার মনে এ বিষয়ে সন্দেহ জাগায় আমি বেরিয়ে যাইদ ইবন আরকামের কাছে গিয়ে বললাম, আমি আলীকে এই এই কথা বলতে শুনলাম। যাইদ ইবন আরকাম বললেন, তুমি এতে সন্দেহ কর কেন? আমিই তো রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি। ইমাম নাসাঈ এ ঘটনা হাবীব ইবন আবু ছাবিতের সূত্রে আবু-তুফাইল থেকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
আবু বকর আশ-শাফিঈ বলেনঃ মুহাম্মদ ইবন সুলাইমান ..... যাইদ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী লোকদেরকে শপথ দিয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে কে শুনেছে যে, আমি যার অভিভাবক আলীও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! তাকে যে বন্ধু জানে আপনি তাকে বন্ধু বানান এবং তাকে যে শত্রু জানে আপনিও তাকে শত্রু জানুন। তখন ষোল ব্যক্তি দাঁড়িয়ে এ কথার সাক্ষ্য দেয়। আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
আবূ ইয়া'লা ও আবদুল্লাহ ইবন আহমদ তার পিতার মুসনাদ গ্রন্থে বলেনঃ কাওয়ারীরী ..... আবদুর রহমান ইবন আবু লায়লা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাহবাতে আলী যখন লোকদের কাছে কসম দিয়ে কথা বলেছিলেন তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তিনি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, গাদীরে খামে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যা বলেছিলেন তা তোমাদের মধ্যে কে কে শুনেছে? আলী তথায় দাঁড়িয়েছিলেন আর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন, আমি যার অভিভাবক আলীও তার অভিভাবক। এ কথা যারা শুনেছিলে তারা সাক্ষ্য দাও।'
আবদুর রহমান বলেন, এরপর বারজন বদরী সাহাবী দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি যেন এখনও দেখতে পাচ্ছি তাদের একজনের পরিধানে ছিল পাজামা। তারা বললো, আমরা গাদীরে খাম দিবসে রাসূলুল্লহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি কি মুমিনগণের জন্যে তাদের নিজেদের চেয়ে ও তাদের মায়েদের স্বামীদের চেয়ে অধিক আপন নই ? আমরা বললাম, হ্যা ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ! আপনি তাকে বন্ধু বানান যে আলীকে বন্ধু বানায় এবং আপনি তার সাথে শত্রুতা করেন যে আলীর সাথে শত্রুতা করে।
আবদুল্লাহ ইবন আহমদ ..... আবদুর রহমান ইবন আবু লাইলা থেকে এ হাদীস অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তারপর বারজন লোক দাঁড়িয়ে বললো, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে দেখেছি এবং তাঁর কথা শুনেছি যখন তিনি আপনার হাত ধরে বলেছিলেন : হে আল্লাহ! আপনি তাকে বন্ধু বানান যে আলীকে বন্ধু বানায় এবং তার সাথে শত্রুতা করেন যে আলীর সাথে শত্রুতা করে। আপনি তাকে সাহায্য করুন যে আলীকে সাহায্য করেন এবং তাকে পরিত্যাগ করুন যে আলীকে পরিত্যাগ করে। এ হাদীস অনুরূপ বর্ণনা করেছেন আবু দাউদ আত-তাহবী যার নাম ঈসা ইবন মুসলিম ..... আবদুর রহমান ইবন আবূ লাইলা থেকে। দার কুতনী এ বর্ণনাকে গরীব বলেছেন।
তিবরানী বলেনঃ আহমদ ইবন ইবরাহীম ইবন আবদুল্লাহ ইবন কাইসান মাদীনী ..... ইমাইরাহ ইবন সা'দ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দেখেছি- আলী (রা) মিম্বরের উপর বসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীগণকে কসম দিয়ে বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) গাদীরে খাম দিবসে যা কিছু বলেছিলেন তোমাদের মধ্যে সে কথ্য শ্রবণকারী কেউ আছে কি ? তখন বারজন লোক দাঁড়িয়ে গেল। তাদের মধ্যে আবূ হুরায়রা (রা), আবু সাঈদ ও আনাস ইবন মালিকও ছিলেন। তারা সাক্ষ্য দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তারা বলতে শুনেছেন যে, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি তাকে বন্ধু বানান, যে আলীকে বন্ধু বানায়। আপনি তাকে শত্রু বানান, যে আলীকে শত্রু বানায় ।
আবুল আব্বাস ইবন উকদাতাল হাফিজ আশ-শীঈ .... আমর ইবন মুররাহ্ সাঈদ ইবন ওহাব ও যাইদ ইবন নাকী থেকে বর্ণিত। তারা বলেন, আমরা রাহবাহ্ নামক জায়গায় আলী (রা)-কে বলতে শুনেছি। এরপর সে কথার উল্লেখ করেন। তখন তেরজন লোক দাড়িয়ে সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছিলেন, আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু। হে আল্লাহ! যারা আলীর সাথে বন্ধুত্ব রাখে আপনিও তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখুন। আর যারা তার সাথে শত্রুতা রাখে তাদের সাথে আপনিও শত্রুতা রাখুন। যারা তার সাথে মহব্বত রাখে, আপনি তাদেরকে মহব্বত করুন। আর যারা তার সাথে বিদ্বেষ রাখে আপনিও তাদের সাথে বিদ্বেষ রাখুন। যারা তাকে সাহায্য করে, আপনি তাদেরকে সাহায্য করুন। আর যারা তাকে বর্জন করে, আপনি তাদেরকে বর্জন করুন। আবু ইসহাক বলেন, তিনি এ হাদীস বর্ণনা শেষে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু বকর! এ সনদের শাইখ কারা ? আবদুল্লাহ ইবন আহমদ ..... আবু ইসহাক থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ।
আবদুর রাযযাক বলেন, ইসরাঈল, আবু ইসহাক সনদে সাঈদ ইবন ওহাব ও আবদে খাইর থেকে বর্ণনা করেন। তারা উভয়ে বলেন, আমরা কূফার রাহবাতে আলীকে বলতে শুনেছি যে,
তিনি আল্লাহর শপথ করে জিজ্ঞেস করেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে কে শুনেছে যে, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। তখন কয়েকজন সাহাবী দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছে।
ইমাম আহমাদ বলেনঃ মুহাম্মদ ইবন জাফর ..... সাঈদ ইব্‌ন ওহাব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী লোকদের শপথ দিয়ে জিজ্ঞেস করলে পাঁচজন বা ছয়জন সাহাবী দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দেয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছিলেন, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক।
ইমাম আহমদ বলেনঃ ইয়াহইয়া ইবন আদম ..... রাবাহ ইবন হারিছ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদল লোক রাহবাতে আলীর সামনে হাযির হয়ে বললো, সালাম আপনার উপর, হে আমাদের অভিভাবক! আলী বললেন, আমি কিভাবে তোমাদের অভিভাবক। তোমরা তো আরব জনগোষ্ঠী ? তারা বললো, আমরা গাদীরে খাম দিবসে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন : আমি যার অভিভাবক, এই আলীও তার অভিভাবক। রাবাহ বলেন, ঐ লোকগুলো চলে গেলে আমি তাদের অনুসরণ করলাম এবং কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা? তারা বললেন, এরা সবাই আনসার। আবু আইয়ুব আনসারীও তাদের মধ্যে ছিলেন।
আবু বকর ইবন আবূ শাইবাহু বলেনঃ শারীক, হানাশ সূত্রে রাবাহ ইবন হারিছ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আলীর সাথে রাহ্বাতে বসেছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি তথায় উপস্থিত হয়। সফরের আলামত তার উপর স্পষ্ট। ঐ লোকটি এসে বললো- আপনার উপর সালাম হে আমার মাওলা! উপস্থিত লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, ইনি কে ? তখন আবু আইয়ুব বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা।
আহমাদ বলেনঃ মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ..... যিয়াদ ইবন আবু যিয়াদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আলী ইবন আবু তালিবকে লোকের সামনে কসম করতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর কসম করে বলছি এমন কোন মুসলমান আছে কি, যে গাদীরে খামে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর বক্তব্য শুনেছে? তখন বারজন বদরী সাহাবী দাঁড়িয়ে সে কথার সাক্ষ্য দেয়। আহমাদ বলেন, ইন নুমাইর ..... ইবন উমর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাহবাতে আলীকে বলতে শুনেছি। তিনি লোকদের কসম করে বলেন, গাদীরে খাম দিবসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা বলেছিলেন, তা শুনেছে এমন কেউ আছে কি? তখন তেরজন লোক দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি যার অভিভাবক আলীও তার অভিভাবক।
আহমাদ বলেনঃ হাজ্জাজ ইন-শাইর ...... আলী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) গাদীরে খামে বলেছিলেন, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। রাবী বলেন, পরবর্তীতে লোকে এর সাথে আরও কিছু কথা জুড়ে দিয়েছে। যেমন হে আল্লাহ! যে আলীকে বন্ধু বানায় তাকে আপনি বন্ধু করে নিন, আর যে তাকে শত্রু জানে তার সাথে আপনি শত্রুতার ব্যবহার করুন। এ হাদীস আলী (রা) থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত। যাইদ ইন আরকাম থেকেও বিভিন্ন সনদে বর্ণিত হয়েছে।
গুনদুর বলেন, শু'বাহ ...... আবূ মারইয়াম অথবা যাইদ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, ইতিপূর্বে আমি এ হাদীস ইবন আব্বাস থেকে শুনেছি। তিরমিযী এ হাদীস বিনদারের সূত্রে গুনদুর থেকে বর্ণনা করে বলেছেন তা হাসান, গরীব। ইমাম আহমাদ বলেনঃ আফফান .... যাইদ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে এক উপত্যকায় অবতরণ করি। উপত্যকাটির নাম খাম। তিনি আমাদেরকে সালাতের প্রস্তুতি নিতে বললেন। এরপর যোহরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি কিছু বক্তব্য রাখেন। তখন বাবলা বৃক্ষের উপর কাপড় রেখে রৌদ্র থেকে ছায়া দেওয়া হয়। তিনি বললেন, তোমরা কি জাননা, অথবা বলেছেন, তোমরা কি সাক্ষ্য দিবে না যে, প্রত্যেক মু'মিনের জন্যে আমি তার নিজের চেয়ে অধিক আপন ? উপস্থিত সবাই বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তা হলে আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি তাকে শত্রু বানান যে আলীকে শত্রু বানায়। আর তাকে বন্ধু বানান যে আলীকে বন্ধু বানায়। আহমদ অনুরূপ বর্ণনা গুনদুরের সূত্রে ভিন্ন সনদে যাইদ ইবন আরকাম থেকে বলেছেন। যাইদ ইন আরকাম থেকে বেশ কিছু রাবী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমন- আবু ইসহাক সাবীঈ, হাবীব আসাফ, আতিয়্যাহ আওফী, আবু আবদুল্লাহ শামী ও আবুত-তুফাইল আমির ইবন ওয়াছিলা।
মা'রূফ ইবন হারবুয আবুত-তুফাইলের সূত্রে হুযাইফা ইবন উসাইদ থেকে বর্ণনা করেন । তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বিদায় হজ্জ থেকে প্রত্যাবর্তন কালে বাতহার বৃক্ষাদির কাছে থামার নির্দেশ দেন। বৃক্ষাদির কাছেই সবাইকে নিয়ে সালাত আদায় করেন । সালাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে বলেনঃ লোক সকল! লাতীফুল খাবীর আল্লাহ্ আমাকে জানিয়েছেন যে, যে কোন নবীকে তার পূর্ববর্তী নবীর অর্ধেক বয়স দান করা হয়। আমার ধারণা খুব শিগগিরই আমার ডাক এসে যাবে, আর আমি সে ডাকে সাড়া দিব। আমাকে জিজ্ঞেস করা হবে এবং তোমরাও জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা তখন কি জওয়াব দিবে ? তারা বললো, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি আপনার দায়িত্ব পৌছে দিয়েছেন, উপদেশ দান করেছেন এবং অসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। ফলে মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তমভাবে পুরস্কৃত করবেন। তিনি বললেন, তোমরা কি এ কথার সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, মৃত্যু সত্য, কিয়ামত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই এবং কবরে যারা আছে তাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে? সাহাবাগণ বললেন, হ্যা, অমরা ও সবের সাক্ষ্য দিই।
তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন। এরপর তিনি বললেন, লোক সকল! আল্লাহ্ আমার অভিভাবক আর আমি মু'মিনদের অভিভাবক। আর আমি তাদের ব্যাপারে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক কল্যাণকামী। আমি যার অভিভাবক এও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি তাকে বন্ধু করুন যে একে বন্ধু বানায় এবং তাকে আপনার শত্রু করুন যে একে শত্রু বানায়। এরপর তিনি বলেনঃ লোক সকল! আমি তোমাদের আগে বিদায় নিব। হাউযে কাউসারে আমার সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। সে হাউযের দীর্ঘতা হবে আমার চোখ হতে সানআ পর্যন্ত দূরত্বের সমান। তার পানপাত্রের সংখ্যা হবে নক্ষত্রের সংখ্যার সমান। পান পাত্রগুলো রৌপ্য নির্মিত। তোমরা যখন আমার সাথে মিলিত হবে তখন আমি তোমাদের নিকট এ দুটি ভার বস্তু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো। কাজেই ভেবে দেখ এ দুটির সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে। এরমধ্যে বড় ভার বস্তুটি হলো আল্লাহর কিতাব। এর একটা দিক রয়েছে আল্লাহর হাতে আর একটি দিক আছে তোমাদের হাতে। কাজেই একে শক্তভাবে ধারণ করবে। একে ত্যাগ করবে না, পরিবর্তন করবে না। আর একটি হলো আমার পরিবার– আহলে বাইত। কেননা, আল্লাহ্ লাতীফুল খাবীর আমাকে জানিয়েছেন যে, এ দুটির একটি থেকে আরেকটি কখনও পৃথক হবে না, হাওযে আমার কাছে না আসা পর্যন্ত। এ হাদীস ইবন আসাকির মা’রূফের সূত্রে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
আবদুর রাযযাক বলেনঃ মা'মার ...... বারা ইবন আযিব থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সাথে বের হই। চলতে চলতে গাদীরে খাম-এ অবতরণ করি। সেখানে সকলকে একত্র করার জন্যে তিনি ঘোষক পাঠান। একত্রিত হওয়ার পর তিনি বলেন : আমি কি তোমাদের কাছে তোমাদের নিজেদের চেয়ে আপন নই? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের কাছে তোমাদের মায়েদের চেয়ে আপন নই? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের কাছে তোমাদের পিতাদের চেয়ে আপন নই? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমি কি নই, আমি কি নই, আমি কি নই ? আমরা বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বললেন, আমি যার অভিভাবক, আলীও তার অভিভাবক। হে আল্লাহ! আপনি অভিভাবক হন তার যে তাকে অভিভাবক মানে এবং আপনি বিরোধিতা করেন তার যে তার বিরোধিতা করে। তখন উমর ইবন খাত্তাব আলী (রা)-কে বললেন, সৌভাগ্য তোমার হে আবু তালিবের নন্দন! আজ হতে তুমি সমস্ত মু'মিনের অভিভাবক হয়ে গেলে। ইবন মাজাহ্ এ হাদীস হাম্মাদ ইবন সালমার সূত্রে ...... বারা ইব্‌ন আযিব থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। মূসা ইবন উসমান হারামী আবূ ইসহাকের সূত্রে বারা থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এ হাদীস আরও বর্ণিত হয়েছে সা'দ, তালহা ইবন উবাইদুল্লাহ, জাবির ইবন আবদুল্লাহ (তার থেকে বিভিন্ন সূত্রে), আবু সাঈদ খুদরী, হাবাশী ইব্‌ন জুনাদাহ্, জারীর ইবন আবদুল্লাহ্, উমর ইব্‌ন খাত্তাব ও আবূ হুরায়রা থেকে। আবু হুরায়রা থেকে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ সবের মধ্যে হাফিজ আবু বকর খাতীব বাগদাদী আবদুল্লাহ ইবন আলী ইবন মুহাম্মদ ইবন বুশরান সূত্রে ..... আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীস সবচেয়ে গরীব। এ হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জ মাসের আঠারো তারিখে সাওম পালন করবে সে ব্যক্তি ষাট মাস সাওম পালন করার সওয়াব পাবে। এ আঠারো যিলহজ্জ তারিখ ছিল গাদীরে খাম দিবস। সে দিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আলী ইবন আবু তালিবের হাত ধারণ করে লোকদের বলেছিলেন, আমি কি মু'মিনগণের অভিভাবক নই! সাহাবাগণ বললেন হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি তখন বললেন, আমি যার অভিভাবক আলীও তার অভিভাবক। তখন উমর ইবন খাত্তাব আলীকে বললেন, বাহঃ বাহুঃ হে আবু তালিবের নন্দন! তুমি তো আমার অভিভাবক ও সকল মুসলমানের অভিভাবক হয়ে গেলে। তখন আল্লাহ্ পাক এ আয়াত নাযিল করেন الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ অর্থাৎ আজ আমি তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম। আর যে ব্যক্তি রজব মাসের সাতাইশ তারিখে সাওম পালন করবে সে ব্যক্তিকে ষাট মাস সাওম পালন করার সওয়াব দেওয়া হবে। এই দিনে জিবরাঈল ফেরেশতা সর্ব প্রথম রিসালাতের কাজ নিয়ে অবতরণ করেন।
খাতীবে বাগদাদী বলেন, এ হাদীস হাবশূনের বর্ণনা বলে প্রসিদ্ধ। তিনি একাই তা বর্ণনা করেছেন। তার অনুসরণ করেছেন আহমদ ইবন উবাইদুল্লাহ ইবন আব্বাস ইবন সালিম ইবন মাহরান- যিনি ইবুন নাবারী নামে খ্যাত। তিনি আলী ইবন সাঈদ শামী থেকে বর্ণনা করেছেন। গ্রন্থকার বলেন, এ হাদীস কয়েকটি কারণে মুনকার হওয়ার যোগ্য। একটি হলো গাদীরে খাম দিবসে الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ আয়াত নাযিল হওয়ার কথা। ইন হারুন আবাদী সূত্রে আবু সাঈদ খুদরী থেকেও অনুরূপ কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু এ বর্ণনাও সহীহ নয়। বস্তুত এ আয়াত নাযিল হয়েছিল আরাফাত দিবসে। বুখারী ও মুসলিম উমর ইবন খাত্তাব থেকে এ প্রসঙ্গে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। বহু সংখ্যক সাহাবী থেকে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ঐ সব সাহসী ব্যতীত যাদের নাম “আমি যার অভিভাবক” বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, তাদের থেকে যে সনদে বর্ণিত হয়েছে সে সব সনদ দুর্বল।
আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, সপ্তম খণ্ড হুবহু লিখা।

4 comments:

  1. এই ঘটনা আপনাকে কপি পেস্ট করতে বলা হয় নাই। আমি শুধু জানতে চাই ঐদিন ভাষণের মধ্য ঐ "স্থলাভিষিক্ত" কথার তাতপর্য কী ছিল?

    ReplyDelete
    Replies
    1. This comment has been removed by the author.

      Delete
    2. ভাইজান, ১। ইসলামিক জ্ঞান মূলত: কপি পেষ্ট হতে হবে। এখানে নিজের থেকে বানিয়ে বলার বা বাড়িয়ে বলার কিছু নাই। ২। আর ঐদিনের ভাষণের মধ্যে স্থালাভিষিক্ত কথা ছিলনা। আপনি ভুল বুঝেছেন। ঐদিনের ভাষণের মধ্যে “মাওলা” কথাটি ছিল, যার অর্থ হলো অভিভাবক বা বন্ধু।

      Delete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...