﴿وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا﴾
(নিসা: ১০১) আর যখন তোমরা সফরে বের হও তখন নামায সংক্ষেপ করে নিলে কোন ক্ষতি নেই৷ ১৩২ (বিশেষ করে) যখন তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফেররা তোমাদেরকে কষ্ট দেবে৷ ১৩৩ কারণ তারা প্রকাশ্য তোমাদের শত্রুতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷
১৩২. যেসব ওয়াক্তে চার রাকআত নামায ফরয সেসব ওয়াক্তে ফরয নামায দুই রাকআত পড়াই হচ্ছে শান্তির সময়ের সফরের কসর৷ আর যুদ্ধের সময়ে কসর করার ব্যাপারে কোন সীমা নির্দিষ্ট নেই৷ যুদ্ধের অবস্থায় যেভাবে সম্ভব নামায পড়ে নিতে হবে৷ জামায়াতে পড়ার সুযোগ থাকলে জামায়াতে পড়ে নিতে হবে৷ অন্যথায় ব্যক্তিগতভাবে একা একা পড়ে নিতে হবে৷ কিবলার দিকে মুখ করে পড়া সম্ভব না হলে যে দিকে মুখ করে পড়া সম্ভব সেদিকে মুখ করে পড়তে হবে৷ সাওয়ারীর পিঠে বসে চলন্ত অবস্থায়ও পড়া যেতে পারে৷ রুকূ' ও সিজদা করা সম্ভব না হলে ইশারায় পড়তে হবে৷ প্রয়োজন হলে নামায পড়া অবস্থায় হাঁটতেও পারে৷ কাপড়ে রক্ত লেগে থাকলেও কোন ক্ষতি নেই৷ এতো সব সহজ ব্যবস্থার পরও যদি অবস্থা এতই বিপদজ্জনক হয়, যার ফলে নামায পড়া সম্ভবপর না হয়ে থাকে, তাহলে বাধ্য হয়ে নামায পিছিয়ে দিতে হবে৷ যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় হয়েছিল৷
সফরে কি কেবল ফরয পড়া হবে, না সুন্নতও পড়া হবে- এ ব্যাপারে মতবিরোধ আছে৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যা কিছু প্রমানিত তা হচ্ছে এই যে, তিনি সফরে ফজরেরর সুন্নাত ও এশার বেতের নিয়মিত পড়তেন কিন্তু অন্যনান ওয়াক্তে কেবল ফরয পড়তেন৷ নিয়মিত সুন্নাত পড়া তাঁর থেকে প্রমাণিত হয়নি৷ তবে নফল নামাযের যখনই সুযোগ পেতেন পড়ে নিতেন৷ এমনকি সাওয়ারীর পিঠে বসেও নফল নামায পড়তেন৷ এজন্যই হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) লোকদের সফরে ফজর ছাড়া অন্য ওয়াক্তে সুন্নাতগুলো জায়েয গণ্য করেছেন এবং অধিকাংশ উলামা সুন্নত ও নফল পড়া বা না পড়া উভয়টি জায়েয গন্য করেছেন এবং ব্যক্তি ইচ্ছার ওপর তা ছেড়ে দিয়েছেন৷ হানাফী মাযহাবের সর্বজন গৃহীত মতটি হচ্ছে, মুসাফির যখন পথে চলমান অবস্থায় থাকে তখন তার সুন্নাত না পড়াই উত্তম আর যখন কোন স্থানে অবস্থান করতে থাকে এবং সেখানে নিশ্চিন্ত পরিবেশ বিরাজ করে, সে ক্ষেত্রে সুন্নাত পড়াই উত্তম৷
যে সফরে কসর করা যেতে পারে সে সম্পর্কে কোন কোন ইমাম শর্ত আরোপ করেছেন যে, তা হতে হবে ফী সাবীলিল্লাহ- আল্লাহর পথে৷ যেমন জিহাদ, হজ্জ, উমরাই ইসলামী জ্ঞান আহরণ ইত্যাদি৷ ইবনে উমর, ইবনে মাসউদ ও আতা এরি ওপর ফতোয়া দিয়েছেন৷ ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমাদ বলেন, সফল এমন কোন উদ্দেশ্যে হতে হবে যা শরীয়াতের দৃষ্টিতে জায়েয৷ হারাম ও নাজায়েয উদ্দেশ্য সামনে রেখে যে সফর করা হয় তাতে কসরের অনুমতির সুবিধা ভোগ করার অধিকার কারোর নেই৷ হানাফীদের মতে যে কোন সফরে কসর করা যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে সফরের ধরণ সম্পর্কে বলা যায়, তা নিজেই সওয়াব বা আযাবের অধিকারী হতে পারে৷ কিন্তু কসরের অনুমতির ওপর তার কোন প্রভাব পড়ে না৷
কোন কোন ইমাম ''কোন ক্ষতি নেই" (---------------------------) বাক্যটি থেকে এ অর্থ নিয়েছেন যে, সফরে কসর করা জরুরী নয়৷ বরং সফরে কসরের নিছক অনুমতিই দেয়া হয়েছে৷ ব্যক্তি চাইলে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে আবার চাইলে পুরো নামায পড়তে পারে৷ ইমাম শাফেঈ এ মতটি গ্রহণ করেছেন, যদিও তিনি কসর করাকে উত্তম এবং কসর না আসে উত্তম কাজ ত্যাগ করার অন্তরভুক্ত করেছেন৷ ইমাম আহমাদের মতে কসর করা ওয়াজিব৷ একটি বর্ণনা মতে ইমাম মালিকেরও এই একই মত উদ্ধৃত হয়েছে৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হামেশা সফরে কসর করেছেন, এটা হাদীস থেকে প্রমাণিত৷ কোন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে একথা প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি সফরে কখনো চার রাকাআত ফরয পড়েছেন৷ ইবনে উমর বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর, উমর, ওসমান রাদিআল্ল্লাহু আনহুমের সাথে সফর করেছি৷ আমি কখনো তাদের সফরে কসর না করতে দেখিনি৷ এরি সমর্থনে ইবনে আব্বাস এবং আরো অসংখ্য সাহাবীর নির্ভরযোগ রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে৷ হযরত উসমান যখন হজ্জের সময় মীনায় চার রাকাআত পড়ালেন তখন সাহাবীগণ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেন৷ হযরত উসমান তখণ এই জবাব দিয়ে লোকদের নিশ্চিন্ত করলেন: আমি মক্কায় বিয়ে করেছি আর যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমি শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন শহরে পারিবারিক জীবন শুরু করে সে যেন সেই শহরের অধিবাসী৷ তাই আমি এখানে কসর করিনি এই রেওয়ায়াতগুলোর বিরুদ্ধে হযরত আয়েশা থেকে এমন দু'টি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে যা থেকে জানা যায় যে, কসর করা বা পূর্ণ নামায পড়া উভয়টিই ঠিক কিন্তু এই রেওয়ায়াতগুলো সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হবার সাথে সাথে হযরত আয়েশার (রা) নিজের থেকে প্রমাণিত মতেরও বিরোধী ৷ তবে একথা সত্য যে, সফরে ও অ-সফরের মাঝামাঝি একটি অবস্থা রয়েছে৷ সে অবস্থায় একই অস্থায়ী নিবাসে সুবিধা মতো কখনো কসর করা যেতে পারে আবার কখনো পুরো নামায পড়ে নেয়া যেতে পারে৷ সম্ভবত হযরত আয়েশা (রা) এই অবস্থাটি সম্পর্কে বলেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফরে কসর করেছেন আবার পুরো নামাযও পড়েছেন৷ আর কুরআনের এই ''সফরে কসর করলে ক্ষতি নেই" বাক্যটি এ ক্ষেত্রে কোন নতুন কথা নয়৷ ইতিপূর্বে সূরা বাকারার ১৯ রুকু'তেও সাফা ও মারাওয়া পাহাড় দু'টির মাঝখানে 'সাঈ' করার নির্দেশও এই একই ভাষায় দেয়া হয়েছে অথচ এই 'সাঈ' 'মানাসিকে হজ্জ' অর্থাৎ হজ্জএর গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলীর অন্তরভূক্ত এবং ওয়াজিব৷ আসলে এই উভয় স্থানেই লোকদের মনের একটা আশংকা দূর করাই ছিল এর মূল লক্ষ্য৷ সেই আশংকাটি ছিল এই যে, এ ধরনের কাজে কোন গোনাহ হবে নাতো বা এতে সওয়াবে কোন কমতি দেখা দেবে না তো! এ ধরনের আশংকা দূর করার উদ্দেশ্যই এ স্থানে এ বর্ণনাভংগী গ্রহণ করা হয়েছে৷
কি পরিমাণ দূরত্বের সফল হলে তাতে কসর করা যেতে পারে? এ ব্যাপারে ' যাহেরী ফিকাহ'-এর মত হচ্ছে এর কোন পরিমাণ নেই৷ কম বা বেশী যে কোন দূরত্বের সফল হোক না কেন তাতে কসর করা যেতে পারে৷ ইমাম মালিকের মতে ৪৮ মাইল বা এক দিন রাতের কম সময়ের সফরে কসর নেই৷ ইমাম আহমাদও একই মত পোষন করেন৷ ইবনে আব্বাসও (রা) এই মত পোষণ করতেন৷ ইমাম শাফেঈর একটি বিবৃতিতে এ মতের সমর্থন পাওয়া যায়৷ হরত আনাস (রা) ১৫ মাইলের সফরে কসর কায়েয মনে করেন৷ ''একদিনের সফর কসর করার জন্য যথেষ্ট" হযরত উমরের (রা)) এই মত ইমাম আওয়াযী ও ইমাম যুহ্রী গ্রহণ করেছেন৷ হাসান বসরী দুই দিন এবং ইমাম আবু ইউসুফ দুই দিনের বেশী দুরত্বের সফরে কসর জায়েয মনে করেন৷ ইমাম আবু হানীফার মতে পায়ে হেঁটে বা উটের পিঠে চড়ে তিন দিন সফল করে যে দুরত্ব অতিক্রম করা যা( অর্থাৎ প্রায় ১৮ ফরসঙ্গ বা ৫৪ মাইল) তাতে কসর করা যেতে পারে৷ ইবনে উমর, ইবনে মাসউদ ও হযরত উসমান রাদি আল্লাহু আনহুম এই মত পোষণ করেন৷
সফরের মাঝখানে কোথাও অবস্থান করলে কতদিন পর্যন্ত কসর করা যেতে পারে-এ ব্যাপারেও ইমামগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন৷ ইমাম আহমাদের মতে যেখানে ৪ দিন অবস্থান করার ইচ্ছা থাকে সেখানে পুরা নামায পড়তে হবে৷ ইমাম মালেক ও ইমাম সাফেঈর মতে যেখানে ৪ দিনের বেশী সময় অবস্থানের নিয়ত করলে পুরা নামায পড়ার হুকুম দিয়েছেন৷ এ অধ্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত হয়নি৷ আর যদি কোন স্থানে এক ব্যক্তি বাধ্য হয়ে আটকে পড়ে এবং সবসময় তার খেয়াল থাকে যে, বাধা দূর হলেই সে বাড়ীর দিকে রওয়ানা হবে, তাহলে এমন স্থানে সে অনির্দিষ্ট কালের জন্য কসর করতে থাকবে৷ এ ব্যাপারে সমস্ত উলামায়ে কেরাম একমত৷ সাহাবায়ে কেরামদের থেকে এমন অসংখ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা থেকে জানা যায়, তাঁরা এ ধরনের অবস্থায় দুই দুই বছর পর্যন্ত অনবরত কসর করেছেন৷ এরি ওপর কিয়াস করে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল কয়েদীকেও তার সমগ্র ব্যাপী কসর করার অনুমতি দিয়েছেন৷
No comments:
Post a Comment