ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান

 

দাড়ি রাখার বিধান : 



প্রশ্ন: দাড়ি রাখার বা কাটার ইসলামী নির্দেশনা কি ? 

কেউ বলে সুন্নাত, কেউ বলে নফল (নাউযুবিল্লাহ) নাকি,  এটা আসলে ওয়াজিব? দাড়ি রাখার বা কাটার ইসলামী নির্দেশনা কি? দলীল সহ জানতে চাই


১। 


প্রথমে একটি হাদিস দেখি: যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহাব্বত করল সে যেন আমাকেই মুহাব্বত করল। আর যে আমাকে মুহাব্বত করল সে আমার সাথে জান্নাতে বসবাস করবে। (তিরমিযী শরীফ, মেশকাত- পৃ: ৩০) দাঁড়ির হুকুম ও পরিমাপ: ইসলামী শরীয়তে একমুষ্টি পরমান লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব বা আবশ্যক। দাঁড়ি এক মুষ্টির কম রাখা বা একেবারে তা মুন্ডিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ। স্বয়ং হুজুর স. এর দাঁড়ি রাখা এবং তার অসংখ্য হাদীসে উম্মতের প্রতি দাঁড়ি রাখার সাধারণ নির্দেশই প্রমান করে যে, দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং না রাখা হারাম। কারন, শরীয়ত প্রবর্তক কর্তৃক কোন বিষয়ের প্রতি সাধারন নির্দেশ হলে তা পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম হয়ে যায়। আরে এটা ফিক্বাহ শাস্ত্রের একটি মূলনীতিও বটে। এছাড়া সাহাবা, সালফে সালেহীন এবং ফুক্বাহাগণের দাঁড়ি রাখার নিরবচ্ছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন উক্তিসমূহের দ্বারাও এক মুষ্টি পরিমাপ লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত করা হারাম প্রমাণিত হয়। নিম্নে দাঁড়ি সম্পর্কিত কতিপয় হাদীস, সাহাবাগণের আমল ও ফুক্বাহাগণের উক্তিসমূহ উল্লেখ করা হল: হাদীস শরীফে দাঁড়ি: ১. হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, দশটি বিষয় সকল নবী রাসূলগণের সুন্নাত। তন্মধ্যে গোঁফ ছোট করা এবং দাঁড়ি লম্বা করা অন্যতম। (মুসলিম শরীফ,১/১২৯) ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল স. ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোঁফ কাট এবং দাঁড়ি লম্বা কর, আর অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর। (মুসলিম শরীফ,১/১২৯) ৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। রাসূল স. ইরশাদ করেন, মুশরিকদের বিরোধিতরা কর, দাঁড়ি লম্বা কর, আর গোঁফ ছোট কর। (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫, মুসলিম) ৪. হুজুর স. বলেছেন যে, তোমরা ভালভাবে গোঁফ কাট এবং দাড়ি বাড়াও। (বুখারী শরীফ) ৫. হুজুর স. এরশাদ করেন যে, গোঁফ কাট এবং দাড়ি ছড়িয়ে রাখ। (কাজী এয়াজ শরহে মুসলিম নববী) ৬. হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম স. ইরশাদ করেন, দাড়ি বাড়াও , গোঁফ কাট এবং এ ক্ষেত্রে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন করোনা। (মাসনাদে আহমদ) ৭. নবী করীম স. এর আমল দ্বারাও দাড়ি প্রমান পাওয়া যায়। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, সাহাবী হযরত খাব্বাব রা.-কে কেউ জিজ্ঞেস করেন, হুজুর পাক স. কি জোহর ও আছর নামাযে কেরআত পাঠ করতেন? তিনি বলেন, হ্যা, পাঠ করতেন। লোকটি পুন:প্রশ্ন করেন, আপনি কিভাবে তা বুঝতেন ? তিনি বলেন হুজুর স.-এর দাড়ি মুবারকের দোলায় আমরা বুঝতাম যে, তিনি কিরআত পাঠ করছেন। (তাহাবী শরীফ) বলাবাহুল্য, কেরআত পাঠকালে ঐ দাড়ি দোলাই পরিদৃষ্ট হবে, যা যথেষ্ট দীর্ঘ হয়, ছোট ছোট দাড়ি কখনো দুলবে না।

(নাহিদ আকিব) 


---------------------------


২। 


রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো এবং মোচ ছোট কর । দাড়ি সংক্রান্ত এ সহীহ হাদীসটি একাধিক হাদীস গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে উমর রা. এর হাদীসে আছে-রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, তোমরা দাড়ি লম্বা করো, গোফ ছোট রাখো । কোন কোন হাদীসে উপরোক্ত বাক্যের পূর্বে আছে-“তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা করো”। রাসূল সা. এর দাড়ি মোবারক ছিল কালো, গভীর, ঘন প্রশস্ত । তাঁর বক্ষ মুবারক দাড়িতে ভরে যেতো । প্রিয় নবী সা. দাড়ি রেখেছেন এবং গোটা উম্মতকে দাড়ি রাখার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন । দাড়ি পুরুষের সৌন্দর্য, যেমন চুল নারীর সৌন্দর্য । দাড়ি রাখা ওয়জিব । চার মাযহাবের কোন মাযহাবে এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই । দাড়ি রাখা সুন্নত নয় । যেমন এ যুগের অনেকেই ধারণা করেন এবং দাড়ি রাখার ব্যাপারে মারাত্মক অবহেলা করেন । ফলশ্রুতিতে চব্বিশ ঘন্টা কবীরা গুনাহে লিপ্ত থকেন । আল্লাহর ক্রোধ তাদের প্রতি। এক কথায় দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব । আলেমদের চূড়ান্ত মত হল, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা কোন কাজকে জরুরী ও ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয় । দাড়ি এক মুষ্টির ভিতরে কাটা কিংবা ছাটা হারাম। (১)দাড়ি মুন্ডানো এবং ছোট করা মুশরিক অগ্নিপুজক এবং বিধর্মীদের আলামত আর মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম । হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির বেশবুষা আকার আকৃতি সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে ঐ জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গন্য হবে। (জামে ছগীর ২/৮) (২)দাড়িবিহীন চেহারা নারী জাতির চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। এধরনের সামঞ্জস্য অবলম্বন করা হারাম । হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ তা’আলা অভিসম্পাত করেন সেসব পুরুষের উপর যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। (৩)রাসূল সা. সারাজীবন লম্বা দাড়ি রেখেছিলেন, যদি দাড়ি মুন্ডানো কিংবা মুষ্টি পরিমাণের আগে কর্তন করা জায়িয হত, তাহলে তিনি সারা জীবনে কম পক্ষে একবার হলেও তা করে দেখাতেন । অথচ তার দ্বারা তা প্রমাণিত নয় । (৪) সকল সাহাবায়ে কেরামের দাড়ি লম্বা ছিল, কোন একটি দুর্বল হাদীসও এমন পাওয়া যায় না যদ্বারা বুঝা যায় যে, কোন একজন সাহাবী জীবনে কখনো দাড়ি মুন্ডিয়েছেন বা খাটো করেছেন। (৫) ফাতাওয়া শামীতে বর্ণিত আছে যে, পুরুষের জন্য দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।

(জহুরুল হক) 


---------------------

৩। 


রাসূল সঃ বলেছেন,  "اوفلوا اللحي"  অর্থাৎ দাড়িকে বাড়াও, এই

আমলটি "মুতাওয়াতির আমল" অর্থাৎ কোন নবী রাসূল,

সাহাবায়ে কেরাম কিংবা কোন তাবেয়ি ' এদের কারো ব্যপারে

শুনা যায় না যে তারা দাড়ি কেটেছেন।

দাড়ি রাখা আমলটি সুন্নাত, তবে এর হুকুম হল ওয়াজিব।

কেননা  হাদিসে দাড়ি রাখতে আদেশ করা হয়েছে,আর আদেশ

বাচক শব্দ ব্যবহৃত হলে তার হুকুম ওয়াজিব হয়।

( মো: আব্দুল্লাহ নোমান) 

-------------------------------------

৪। 

১. দাড়ি বাড়াও। (বুখারী, মুসলিম শরীফ) ২. দাড়ি পূর্ণ কর। (মুসলিম শরীফ) ৩. দাড়ি ঝুলন্ত ও লম্বা রাখ। (মুসলিম শরীফ) ৪. দাড়ি বহার রাখ। (মাজমাউল বিহার) ৫. দাড়ি বেশী রাখ (বুখারী, মুসলিম) ৬. দাড়িকে ছাড়, অর্থাৎ কর্তন করো না। (তাবরানী) দাঁড়ি ও সাহাবায়ে কেরামের আমল : ১.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা.যখন হজ্জ্ব বা উমরা আদায় করতে, তখন স্বীয় দাঁড়ি মুষ্টি করে ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (বুখারী শরীফ- ২/৮৭৫) ২. হযরত আবু হুরায়রা রা. স্বীয় দাঁড়ি ধরতেন, অতঃপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ লি-ইবনি আবি শাইবা- ১৩/১১২) দাঁড়ি ও ফুক্বাহাদের উক্তি: ১. হানাফী মাযহাবের কিতাব শরহে মুনহাল ও শরহে মানজুমাতুর আদবের মধ্যে লিখেছেন, নির্ভরযোগ্য ফতোয়া হল দাড়ি মুন্ডানো হারাম। ২.মাওলানা আশেকে এলাহী মিরাঠী রহ. তার প্রণিত “’”দাড়ি কী কদর ও কীমত” কিতাবে চার মাজহাবের ফক্বীহগণের মতামত শাফেয়ী মাজাহাবের প্রামান্য গ্রন্থ “আল ওবাব” হতে উদ্বৃত করেছেন : ইমাম ইবনুর রাফ’আ বলেন, ইমাম শাফেয়ী রহ. “আলউম্ম” কিতাবে লেখেন যে, দাড়ি কাটা হারাম। ৩. মালেকী মাজহাব মতেও দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপভাবে ছুরত বিগড়ে যাওয়া মত ছেটে ফেলাও হারাম। (কিতাবুল ওবদা) ৪. হাম্বলী মাজহাবের কিতাব “শাহহুল মুন্তাহা” ও “শরহে মুজ্জুমাতুল আদব” এর উল্লেখ হয়েছে যে, নির্ভরযোগ্য মত হল দাড়ি মুন্ডন করা হারাম। অনুরূপ অন্যান্য গ্রন্থাকারও দাড়ি রাখা ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে মাননীয় ইমামদের ইজমা (ঐকমত) বর্ণনা করেছেন। দাড়ি কর্তনকারী আল্লাহ পাকের দুশমনদের মধ্যে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. নিজ রচিত “কিতাবুজ্জুহুদে” আকীল ইবনে মোদরেক সালামী হতে উদ্ধৃতি করেন যে, আল্লাহ জাল্লা শানুহু বনী ইস্রাইলের এক নবীর নিকট এই অহী প্রেরন করেন যে, তিনি যেন নিজ কওম বনী ইস্রাইলকে এ কথা জানিয়ে দেন যে, তারা যেন আল্লাহ তা’য়ালার দুশমনদের বিশেষ খাদ্য শুকরের গোশত না খায় এবং তাদের বিশেষ পানীয় অর্থাৎ শরাব(মদ) পান না করে এবং তাদের শিক্ল ছুরত (আকৃতি) না বানায়। যদি তারা এমন করে অর্থাৎ শুকরের গোশত খায়, বা মদ পান করে, অথবা দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে (ফ্রেন্সকাট করে) অথবা বড় বড় মোচ রাখে, তা’হলে তারাও আমার দুশমন হবে, যেমন তারা আমার দুশমন। (দালায়েলুল আসর) কওমে লূতের নিন্দনীয় বৈশিষ্ট্য ও ধ্বংসের কারন: প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনে আসাকেরসহ আরো কতিপয় মুহাদ্দিস হযরত হাসান রা. হতে নবী করীম স. এর এই মুবারক হাদীস বর্ণনা করেন যে, দশ প্রকার পাপে লূত সম্প্রদায় ধ্বংস হয়েছিল; তন্মধ্যে দাড়ি কাটা, গোঁফ বড় রাখা অন্যতম। আল্লাহ সুবানুহুতা’'য়ালা আমাদের সকলকে দাঁড়ি রাখার গুরুত্ব অনুধাবন করে যারা এখন দাঁড়ি রাখিনি তাদের দাঁড়ি রাখার তৌফিক দান করুন এবং যারা দাঁড়ি সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করেন তাদের হেদায়াত দান করুন। আমীন।

(বায়োজিদ হোসাইন) 

---------------------------

৫। 

মুসলমাদেরকে দাড়ি রাখতে ও লম্বা করতে রাসূল সাঃ নির্দেশ দিয়েছেন। দাড়ি ছোট করতে ও মুন্ডন করতে রাসূল সাঃ নিষেধ করেছেন। নিম্ন এ সম্পর্কে রাসূল সাঃ এর বাণী উল্লেখ করা হল। ১-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ গোঁফ নিশ্চিহ্ন করতে, আর দাড়ি বড় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৪} ২-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা গোঁফকে কর্তন কর, এবং দাড়িকে লম্বা কর। তোমরা অগ্নিপূজকদের বিপরীত কর। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৬} ৩-হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা ঐ সব পুরুষদের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং ঐ সব মহিলাদের উপর আল্লাহ তাআলার ভর্ৎসনা যারা পুরুষদের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৪৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫০} দাড়ি থাকা পুরুষের নিদর্শন। আর দাড়ি না থাকা মহিলাদের নিদর্শন। তাই দাড়ি কেটে মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ এ হাদীসের ভাষায় নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ৪-রাসূল সাঃ এর যুগে মুশরিক ও অগ্নি উপাসকদের মধ্যে দাড়ি ছোট করে রাখা বা দাড়ি মুন্ডন করার রীতি প্রচলিত ছিল। রাসূলুল্লাহ সাঃ তার উম্মতকে বিশেষভাবে এ সকল অমুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধিতা করতে এবং বড় দাড়ি রাখতে নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন- হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ি লম্বা কর। আর গোঁফকে খাট কর। আর ইবনে ওমর রাঃ যখন হজ্ব বা ওমরা করতেন, তখন তিনি তার দাড়িকে মুঠ করে ধরতেন, তারপর অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৫৫৩} রাসূল সাঃ এর দাড়ি রাসূল সাঃ এর দাড়ি লম্বা ছিল। সাহাবাগণের দাড়িও লম্বা ছিল। ১-হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, “তিনি অনেক বড় দাড়ির অধিকারী ছিলেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৬৩১১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯৪৬} ২-হযরত জাবির বিন সামুরা রাঃ বলেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাড়ি ছিল বেশি বা ঘন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬২৩০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৭৪৫৬} ফক্বীহদের দৃষ্টিতে দাড়ির বিধান উপর্যুক্ত হাদীসগুলোর আলোকে মুসলিম উম্মাহের ফক্বীহগণ একমত যে, দাড়ি বড় করা মুসলিমের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এবং দাড়ি মুন্ডন করা বা “একমুষ্টি” এর কম রাখা নিষিদ্ধ। পারিভাষিক মূলনীতির আলোকে কোন কোন ফক্বীহ দাড়ি রাখা “ফরজ” বলে উল্লেখ করেছেন। কেউ তা “ওয়াজিব”মত দিয়েছেন। কেউ বা “সুন্নাত” বলেছেন। পঞ্চম হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ ইবনে হাযম যাহিরী আলী ইবনে আহমাদ বলেন “দাড়ি ছেড়ে দেওয়া ও গোঁফ কর্তন করা ফরজ”। {আল মুহাল্লা-২/২২০} চতুর্থ হিজরী শতকের অন্যতম মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আবু আওয়ানা ইয়াকুব ইবনে ইসহক বলেন “গোঁফ কর্তন করা এবং তা ছোট করা ওয়াজিব ও দাড়ি বড় করা ওয়াজিব”। { মুসনাদে আবী আওয়ানা-১/১৬১} ষষ্ঠ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস ও মালিকী ফক্বীহ কাযী ইয়াজ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা, কাটা বা পুড়ানো মাকরূহ। তবে দাড়ির দৈর্ঘ ও প্রস্থ থেকে কিছু কাটা ভাল। দাড়ি কাটা বা ছাটা যেমন মাকরূহ, তেমনি প্রসিদ্ধির জন্য তা বেশি বড় করাও মাকরূহ”। {ফাতহুল বারী-১০/৩৫০, নাইলুল আওতার-১/১৩৬} একাদশ হিজরীতে প্রসিদ্ধ হাম্বলী ফক্বীহ মানসূর বুহুতী রহঃ বলেন যে, “দাড়ি মুন্ডন করা হারাম, এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা মাকরূহ নয়। {কাশশাফুল কিনা-১/৭৫} একাদশ শতকে প্রসিদ্ধ হানাফী ফক্বীহ আলাউদ্দীন হাসকাফী রহ^ তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আদ দুররুল মুখতার” এ লিখেন যে, “দাড়ি লম্বা করার সুন্নাত সম্মত পরিমাণ এক মুষ্টি। নিহায়া গ্রন্থে এক মুষ্টির অতিরিক্ত দাড়ি কর্তন করা ওয়াজিব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক মুষ্টির কম পরিমাণ দাড়ি ছাটা কেউই বৈধ বলেন নি। মরক্কো অঞ্চলের কিছু মানুষ ও মেয়েদের অনুকরণপ্রিয় কিছু হিজড়া পুরুষ এরূপ সমর্বসম্মতভাবে নিষিদ্ধ কর্মে লিপ্ত হয়। {রদ্দুল মুহতার-২/৪১৭-৪৮১} কোন মুহাদ্দিস, ফক্বীহ, ইমাম বা আলিম এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখার সুষ্পষ্ট অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা যায় না। যারা দাড়ি থেকে কিছু ছাটার অনুমতি দিয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একমুষ্টির অতিরিক্তই শুধু কাটা যাবে। তাই একমুষ্টি হওয়ার আগেই দাড়ি কাটা, মুন্ডানো ইসলামের দৃষ্টিতে মাকরূহে তাহরীমী তথা হারামের কাছাকাছি গোনাহ। আহবান ও দাওয়াত দাড়ি রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। দাড়ি ছোট করা এবং মুন্ডানো উভয়টিই মারাত্মক অপরাধ। দাড়ি মুসলিমের পরিচায়ক। সুতরাং যখন একজন পুরুষের মুখে দাড়ি গজানো শুরু হয় তখন থেকেই দাড়িতে কেঁচি বা ব্লেড ব্যবহার না করা। ছোট বা মুন্ডানো থেকে বিরত থাকা জরুরী। সকল নবীদের মুখে দাড়ি ছিল। সকল সাহাবাগণের মুখে দাড়ি ছিল। সকল আল্লাহ ওয়ালা বুজুর্গদের মুখে দাড়ি ছিল। তাই দাড়ি নিয়ে ব্যাঙ্গ করা, বিরূপ মন্তব্য করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকর হবে। নিজে দাড়ি রাখতে হবে, সেই সাথে দাড়িওয়ালা ব্যক্তিদের সম্মান করা, এবং দাড়ি অবমাননা হয এমন কোন কাজ করা যাবে না।

-------------------------

৬। 

মানুষের ব্যক্তিত্ব বোঝা যায় তার পোশক-আশাকে। মুসলিমদের অন্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করতে এবং তাদের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা তৈরি করতে আল্লাহ তাদের নির্দিষ্ট একটি ইউনিফর্ম দিয়েছেন। পুরুষের ইউনিফর্ম হলো– ঢিলেঢালা পুরুষালী পোশাক, যা পায়ের গোড়ালির উপর থাকবে। মুখে থাকবে প্রাকৃতিক দাড়ি, গোঁফ ছেটে রাখা হবে। কিন্তু ইসলামি ইউনিফর্মের দাড়ি অংশটাকে সাধারণ মুসলিমরা তো বটেই, অনেক নিষ্ঠাবান মুসল্লি পর্যন্ত অবহেলা করে থাকে । অথচ দাড়ি কেটে একজন মানুষ অনেক ভাবে ইসলাম লঙ্ঘন করে থাকে-
আল্লাহর অবাধ্যতা : আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত, পারস্যের সম্রাট কিসরা ইয়েমেনের শাসকের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ [সা.] এর কাছে দু’জন দূত পাঠান। যাদের দাড়ি ছিল না আর গোঁফ ছিল বড়। রাসুলের [সা.] কাছে তাদের এই অবয়ব দেখে মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেন। জিজ্ঞেস করেন, কে তোমাদের এমন করতে বলেছে? তারা উত্তর দিল, আমাদের প্রভু কিসরা। তিনি তখন ইরশাদ করেন, আমার রব, যিনি পবিত্র ও সম্মানিত, তিনি আদেশ করেছেন যেন আমি দাড়ি লম্বা রাখি এবং গোঁফ ছোট রাখি। (তাবারি, ফিক্বহুস সিরাহ পৃষ্ঠা-৩৫৯ ) সুতরাং দাড়ি কাটা মানে আল্লাহর নির্দেশের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ।

রসুলের [সা.] আদেশ অমান্যকরণ : ইবন ওমর [রা.] বলেন, রাসুলুল্লাহ [সা.] আমাদের আদেশ করেছেন, ‘গোঁফ ছেটে রাখো, আর দাড়িকে দীর্ঘ হবার সুযোগ দাও । (বুখারি ও মুসলিম) সুতরাং দাড়ি কাটলে আল্লাহর সাথে রাসুলের [সা.] আদেশও অমান্য করা হবে । যার পরিণাম সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে- ‘আর যে আল্লাহ ও তার রাসুলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। (সুরা জ্বিন, আয়াত ২৩)
সুন্নাত থেকে বিচ্যুতি : আল্লাহর প্রেরিত সব রাসুলদের বর্ণনায় দাড়ির কথা পাওয়া যায়। কোরআনে হজরত হারুন [আ.]-এর দাড়ির বর্ণনা এসেছে। জাবির বিন সামুরাহ [রা.] বলেন,রাসুলের [সা.] দাড়ি ছিল বেশ বড় । সুতরাং দাড়ি কাটা হলে নবি-রসুলগণের স্বভাব ও তাদের রেখে যাওয়া আদর্শের পরিপন্থী কাজ করা হবে।
সাহাবাদের আদর্শের খেলাফ : সাহাবাদের দৈহিক বর্ণনার মধ্যে দাড়ির দৈর্ঘ্যের কথাও এসেছে। হজরত আবু বকরের [রা.] দাড়ি ঘন ছিল, হজরত ওমর, ওসমান ও হজরত আলির [রা.] -এর দাড়ি দীর্ঘ ছিল। খেলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে রাসুল [সা.] আকড়ে থাকতে বলেছেন।
অমুসলিমদের অনুকরণ : আবু হোরায়রা [রা.] বলেন, রাসুল ইরশাদ করেছেন- ‘গোঁফ ছোট কর ও দাড়ি বড় কর, অগ্নি উপাসকদের থেকে ভিন্নবেশী হও।’ অন্য হাদিসে এসছে, দাড়ি বড় রাখার মাধ্যমে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের বিপরীত করো। মুশরিকদের চেয়ে আলাদা হও।’ (মুসলিম শরিফ)
নারীদের অনুকরণ : দাড়ি না রাখার মাধ্যমে নারীদের মতো মুখাবয়ব বানানো হয়, যাতে প্রকরান্তরে তাদের অনুকরণ করাই হয়। ইবনে আব্বাস [রা.] বলেন, রাসুল [সা.] সে সব পুরুষদের অভিশম্পাত করেছেন যারা নারীদের অনুকরণ করে । (বুখারি ও মুসলিম)
ইসলামকে উপহাস : দাড়ি না রাখতে রাখতে সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে যদি কোনো মুসলিম দাড়ি রাখে তাহলে তাকে ভিন্নমতাদর্শী বলে কটাক্ষ করা হয়। এছাড়াও অনেকেই আজকাল ভাবতে শুরু করেছে যে, দাড়ি রাখার আসলে তেমন প্রয়োজনই নেই। এটা ইসলামের একটি আবশ্যকীয় বিষয়কে উপহাস করার সুযোগ তৈরি করে দেয় ।
দাড়ি রাখা সুন্নাত নাকি ওয়াজিব : আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত একটা ভুল ধারণা হলো যে, দাড়ি রাখা সুন্নাত, সুতরাং এটা রাখলেও চলে না রাখলেও চলে। মনে রাখতে হবে রাসুলের [সা.] যে সব সুন্নাত সব মানুষের অনুকরণের জন্য তাকে বলে ‘সুন্নাতে ইবাদাত’। যা আমলের দিক থেকে ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তিনি দাঁড়ি কখনো কাটেননি, কাটার অনুমতি দেননি বরং তা ছেড়ে দিতে বলেছেন। তাই দাড়ি রাখা সুন্নাতে ইবাদাত হিসেবে ওয়াজিব, যা লঙ্ঘনের মাধ্যমে একজন মানুষ আল্লাহ ও তার রাসুলের অব্যাধ্যতা করে থাকে। তাছাড়া চার মাজহাবের ইমাম, ইবনে তাইমিয়া, ইবন হাজাম, বিন বায, নাসিরুদ্দিন আলবানিসহ ন্যায়পন্থি আলেম দাড়ি কাটাকে হারাম বলেছেন। আমাদের সবার উচিত এর ওপর পরিপূর্ণভাবে আমল করা।

(মাওলানা মনযূরুল হক)


------------------------------------------

৭। 

(সংগ্রহ)

প্রশ্নঃ দাড়ি রাখা কি ওয়াজিব? দাড়ি শেভ করা বা কামানো কি পাপ?
উত্তরঃ দাড়ি রাখা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দূর করুনঃ

শুধু আমাদের দেশেই না বেশীরভাগ দেশেই দাড়ি রাখা সম্পর্কে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, সেটা হল ''দাড়ি রাখা সুন্নত; অতএব দাড়ি রাখলে ভাল আর না রাখলে তেমন কোন সমস্যা নেই, একটা সুন্নত পালন করা হল না এই আর কি।'' জেনে রাখুন, এটা সম্পূর্ণ একটা ভুল ধারণা।

দাড়ী আল্লাহর একটি মহান ও বড় নে’য়ামত। দাড়ী দ্বারা তিনি পুরুষকে অনুগৃহীত করেছেন এবং নারী জাতি থেকে তাকে বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। দাড়ী শুধুমাত্র মুখমন্ডলের উপর কয়েকটি
কেশগুচ্ছই নয়; বরং ইহা ইসলামের বাহ্যিক বড় একটি নিদর্শন। দাড়ী ছেড়ে রেখে এবং তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। আল্লাহ্ বলেন,
ﺫَﻟِﻚَ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻌَﻈِّﻢْ ﺷَﻌَﺎﺋِﺮَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺈِﻧَّﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺗَﻘْﻮَﻯ ﺍﻟْﻘُﻠُﻮﺏِ
“এই কারণে যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শন সমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, এটা তো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই পরিচয়।” [ সূরা হাজ্জ- ৩২]

দাড়ী মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর অনুসৃত নীতির একটি অন্যতম পরিচয়। তিনি দাড়ী ছেড়ে দিতে ও লম্বা করতে আদেশ করেছেন। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, দাড়ীর প্রতি এত গুরুত্ব ও তার প্রতি সম্মানের নির্দেশ থাকা সত্বেও অধিকাংশ মুসলমান বিষয়টিকে অতি নগন্য ও তুচ্ছ মনে করে। যেন ঘৃণা ভরে প্রতিদিন তা ছেঁচে ফেলতে মহা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যারা মুন্ডন করে না তারা আরেক ষ্টাইলে তার সাথে খেলা-ধুলা করে। কেউ শুধুমাত্র থুতনীর উপর ছোট ছোট করে রাখে আবার কেউ খুবই হালকা করে কাল একটি রেখার মত করে রাখে। কেউ আবার দাড়িকে গোঁফের সাথে মিলিয়ে দিয়ে গোলাকৃতী করে রাখে।

এই চিত্রগুলো দেখলে একদিকে যেমন দুঃখ লাগে অন্য দিকে তা যেন হাস্যেরও পাত্র। যে মুসলমানকে দাড়ী ছেড়ে দিতে আদেশ করা হয়েছে, দাড়ীকে সম্মান করতে বলা হয়েছে সেই মুসলমান তো দূরের কথা কোন বিবেকবানের পক্ষেও এরকম আচরণ করা শোভনীয় নয়।
 
বড়ই পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্ তা’আলা যে আকৃতিতে দাড়ীকে সৃষ্টি করেছেন সে অবস্থাতেই তা নিজ মুখমন্ডলে অবশিষ্ট রেখে ইসলামী শিষ্টাচারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকারী এরকম সভ্য মানুষের সংখ্যা আজ খুবই বিরল। (লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্)

দাড়ী মুন্ডন হারাম হওয়ার দলীলঃ

আল্লাহ্ বলেন,
ﻭَﻟَﺂَﻣُﺮَﻧَّﻬُﻢْ ﻓَﻠَﻴُﻐَﻴِّﺮُﻥَّ ﺧَﻠْﻖَ ﺍﻟﻠَّﻪِ
“(শয়তান বলে) আমি অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, তারা তখন আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দিবে।” [ সূরা নিসাঃ ১১৯]

দাড়ী মুন্ডন করা বা কর্তন করা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার শামিল। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"দশটি জিনিস স্বভাবজাত। তম্মধ্যে তিনি উল্লেখ করেছেনঃ গোফ কর্তন করা ও দাড়ী ছেড়ে দেয়া।" [ মুসলিম]

অতএব গোঁফ লম্বা করা আর দাড়ী কেটে ফেলা সুস্থ স্বভাব বিরোধী কাজ।

ইবনে ওমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﻭَﻓِّﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﻭَﺃَﺣْﻔُﻮﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ
“তোমরা মুশরিকদের বিরোধীতা কর। দাড়ী ছেড়ে দাও এবং গোঁফ ছোট কর।” [বুখারী ও মুসলিম]

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
ﺟُﺰُّﻭﺍ ﺍﻟﺸَّﻮَﺍﺭِﺏَ ﻭَﺃَﺭْﺧُﻮﺍ ﺍﻟﻠِّﺤَﻰ ﺧَﺎﻟِﻔُﻮﺍ ﺍﻟْﻤَﺠُﻮﺱَ
“গোঁফ ছেঁটে ফেল এবং দাড়ী লম্বা কর আর এর মাধ্যমে অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা কর।” [ মুসলিম]

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যাবতীয় বিষয়ে মুশরিক-হিন্দু, ইহূদী-খৃষ্টান ও অগ্নী পুজকদের বিরোধীতা করা প্রতিটি মুসলমানের উপর ওয়াজিব।

এ জন্যে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
“যারা কোন জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে,
সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” [ আবু দাউদ, আহমাদ হাদীছ সহীহ ]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﺄْﺧُﺬْ ﻣِﻦْ ﺷَﺎﺭِﺑِﻪِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻨَّﺎ
“যে ব্যক্তি গোঁফ কাটে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” [ তিরমিযী, নাসাঈ, হাদীছ সহীহ ]

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ ওয়াজিব বা আবশ্যকতার দাবী রাখে। অন্য দিকে দাড়ী মুন্ডন করার মাধ্যমে নিজেকে নারীদের কাতারে শামিল করা হয়। কেননা নারীরা দাড়ী বিহীন । কোন নারী যদি পুরুষের আকৃতি ধারণ করে এবং কোন পুরুষ যদি নারীর আকৃতি ধারণ করে তবে তারা লা’নতপ্রাপ্ত।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর সাদৃশ্য অবলম্বনকারী পুরুষকে এবং পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বনকারীনী নারীকে অভিশাপ করেছেন।” [ছহীহ আবু দাউদ, তিরমিযী]

দাড়ী রাখা ওয়াজিব না সুন্নাত?

এ নিয়ে মানুষ মতোবিরোধ করলেও দাড়ী রাখা যে ওয়াজিব সেটাই প্রনিধাণযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য কথা। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাড়ী রেখেছেন বলেই ইহা নবীজীর সুন্নাত বলে তার গুরুত্ব কমিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কেননা নবীজী দাড়ী নিজে রেখেছেন এবং তা রাখার জন্যে নির্দেশও দিয়েছেন। আর
আল্লাহ্ তা’আলা যেমন ফরয করেন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তেমনি ফরয বা ওয়াজিব করেন। তার কারণ হচ্ছে নবীজী কখনো নিজের কল্পনা প্রসূত কোন কথা বলতেন না। আল্লাহ্ তাঁর নিকট যা ওহী করতেন তিনি তাই বলতেন। (সূরা নজমঃ ৩,৪) 

তাছাড়া নবীজী দাড়ীর বিষয়ে যে সকল আদেশ সূচক শব্দ ব্যবহার করেছেন তার বিপরীতে এমন কোন হাদীছ খুঁজে পাওয়া যাবে না যা দ্বারা দাড়ীকে সুন্নাত বা মুস্তাহাব সাব্যস্ত যাবে।
তিরমিযীতে একটি হাদীছে বলা হয়েছেঃ
ﻛﺎﻥ ﻳﺄﺧﺬ ﻣﻦ ﻟﺤﻴﺘﻪ ﻣﻦ ﻋﺮﺿﻬﺎ ﻭﻃﻮﻟﻬﺎ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈর্ঘ ও প্রস্ত দিক থেকে তাঁর দাড়ী কাটতেন।” এ হাদীছটি মওযু বা জাল যার কোন ভিত্তি নেই। ইমাম তিরমিযী
হাদীছটি বর্ণনা করার পর নিজেই একথার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। [ দ্রঃ ছহীহ তিরমিযীঃ হা/২৭৬২]

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেন, দাড়ী মুন্ডান, উঠানো বা কর্তন করা কোনটাই জায়েয নয়। শায়খ বিন বায (রঃ) বলেন, দাড়ীকে সংরক্ষণ করা, পরিপূর্ণ রাখা ও তা ছেড়ে দেয়া ফরয। এই ফরযের প্রতি অবহেলা করা জায়েয নয়। 

শাইখ ইবনে উসাইমীন (রঃ) বলেন, দাড়ী রাখা ওয়াজিব,
উহা মুন্ডন করা হারাম বা কাবীরা গুনাহ।

প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকাহবিদগণও দাড়ী ছেড়ে দেয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ র্দুরে মুখতারে (২য় খন্ড/৪৫৯ পৃঃ) বলা হয়েছেঃ পুরুষের জন্য দাড়ী কর্তন করা হারাম। নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, দাড়ী এক মুষ্টির বেশী হলে তা কেটে ফেলা ওয়াজিব। কিন্তু এর চাইতে বেশী কর্তন করা যেমনটি পশ্চিমা দেশের লোকেরা এবং খোঁজা পুরুষেরা করে তা কেউ বৈধ বলেননি। আর দাড়ী সম্পূর্ণটাই কেটে চেঁছে ফেলা হিন্দুস্থানের ইহূদী ও কাফের-মুশরেকদের কাজ।”
মালেকী মাযহাব মতে দাড়ী কাটা হারাম। (আল আদাভী আলা শারহে কিফায়াতুত্ তালেব রাব্বানী ৮ম খন্ড ৮৯ পৃঃ)

ইমাম শাফেঈ (রহঃ) তাঁর প্রখ্যাত গ্রন্থ ‘আল উম্ম’ উল্লেখ করেছেন যে, দাড়ী কর্তন করা হারাম।
শাফেঈ মাযহাবের আলেম আযরাঈ বলেনঃ সঠিক কথা হচ্ছে কোন কারণ ছাড়া সম্পূর্ণ দাড়ী মুন্ডন করা হারাম। (হাওয়াশী শারওয়ানী ৯ম খন্ড ৩৭৬ পৃঃ)
হাম্বলী মাযহাবের বিদ্বানগণও দাড়ী মুন্ডনকে হারাম বলেছেন। (ইনসাফ, শরহে মুন্তাহা)

অতএব দাড়ী মুন্ডন করা বড় পাপ। এ থেকে তওবা করা আবশ্যক। অবশ্য দাড়ী মুন্ডন করা ও কেটে ছোট করার পাপ এক সমান নয়। যদিও উভয়টিই পাপের কাজ। অনেক মানুষ দাড়ী মুন্ডন করাটাকে খুবই ছোট ও তুচ্ছ ব্যাপার মনে করে। কিন্তু ইহা মুন্ডন করা কোন সময় সবচেয়ে বড় গুনাহের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। কেননা এটা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হওয়ার অন্যতম। আর প্রকাশ্যে এভাবে অন্যায়ে লিপ্ত হয়ে তওবা না করলে হতে পারে দাড়ী মুন্ডনকারী আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ﻛُﻞُّ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻣُﻌَﺎﻓًﻰ ﺇِﻻ ﺍﻟْﻤُﺠَﺎﻫِﺮِﻳﻦَ
“আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে পাপের কাজে লিপ্ত হয় তাদেরকে ক্ষমা করা হবে না।” [বুখারী ও মুসলিম ]

তাছাড়া কোন মানুষ যদি দাড়ীকে অপছন্দ করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে অথবা দাড়ীওয়ালা মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে,
তবে সম্ভাবনা আছে একারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং মুরতাদ হয়ে যাবে। কেননা নবী (ছাঃ) যা নিয়ে এসেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা বা ব্যঙ্গ করা বা তা ঘৃণা ও অপছন্দ করা ইসলাম ভঙ্গ হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। 

আল্লাহ্ বলেন,
ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢُ ﺍﺗَّﺒَﻌُﻮﺍ ﻣَﺎ ﺃَﺳْﺨَﻂَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻛَﺮِﻫُﻮﺍ ﺭِﺿْﻮَﺍﻧَﻪُ ﻓَﺄَﺣْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟَﻬُﻢْ
“এই কারণে যে, তারা এমন বস্তুর অনুসরণ করেছে যার প্রতি আল্লাহ্ রাগাম্বিত। আর তারা তাঁর সন্তুষ্টিকে অপছন্দ করেছে। ফলে তিনি তাদের আমলগুলো বরবাদ করে দিয়েছেন।” [ সূরা মুহাম্মাদঃ ২৮]

সাবধান মুসলমান! নিজের আমল বরবাদ করবেন না বা অজ্ঞতা বশতঃ ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবেন না।

প্রিয় ভাই! সালাত সিয়াম ও অন্যান্য ওয়াজিব বিষয়ে আপনি যেমন আপনার পালনকর্তার আনুগত্য করেছেন। 
কেন এই বিষয়টিতে তাঁর নাফরমানী করছেন?
 উভয় বিষয়ের আদেশকারী রব কি একজনই নয়? 
কোথায় আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শন?
কোথায় ঈমানের বলিষ্ঠতা ও সত্যতা?
শরীয়তের বিধান নিয়ে কেন এই ছিনিমিনি খেলা?

পুরুষের সৌন্দর্য দাড়ী মুন্ডানোতে নয়। আল্লাহ্ তা’আলা মানুষকে সৃষ্টি করে তাকে নারী জাতী থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট মন্ডিত করেছেন। পৌরুষত্বের পরিচয় দাড়ী প্রদান করে তার সৌন্দর্য্যকে প্রস্ফুটিত করেছেন। কিভাবে মানুষ তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাকে পরিবর্তন করে নিজেকে নারী জাতীর সাথে সাদৃশ্য করতে চায়? ইসলামের শত্র“দের সাথে নিজেকে মিলিত করতে চায়? আর ধারণা করে যে, এতেই রয়েছে অতিরিক্ত সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব!? দাড়ী মুন্ডন না করলে বা না কাটলে যেন পুরুষের সৌন্দর্যই ফুটে উঠে না। পুরুষকে দাড়ী দিয়ে যেন আল্লাহ ভুল করেছেন। (নাউযুবিল্লাহ্) তাই সেই ভুল শোধরাতে তারা যেন ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

আল্লাহ্ বলেনঃ
ﺃﺃﻧْﺘُﻢ ﺃﻋْﻠَﻢُ ﺃﻡِ ﺍﻟﻠﻪُ
“তোমরাই কি বেশী জ্ঞান রাখ না আল্লাহ্ অধিক জ্ঞান রাখেন?” [ সূরা বাকারাঃ ১৪০]

দাড়ী বিহীন পুরুষ যদি অধিক সুন্দর হত তবে তা করতে আল্লাহ্ অপারগ ছিলেন না। কিন্তু তিনি এর মাধ্যমে পুরুষকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করতে চেয়েছেন। পার্থক্য করেছেন নারীদের থেকে।

সম্মানিত ভাই! 
আপনার এই কাজে কি দুনিয়াবী কোন উপকার আছে কি?
 পাবেন কি আখেরাতে কোন ছওয়াব-নেকী? 
কেন আপনি নিজেকে আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখিন করছেন? 
কেন আপনি প্রতিদিন একটি অযথা পরিশ্রমে নিজেকে ক্লান্ত করছেন?
 কেন সময় ও অর্থের অপচয় করছেন?

হে আল্লাহ্ তুমি আমাদের সবাইকে তোমার সন্তুষ্টি মূলক কাজ করার তাওফীক দাও এবং যে কাজে তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ রয়েছে তা থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান কর৷

আরো কিছু প্রাসাংগিক কথাঃ

* দাড়ি রাখা যাই হোক না কেন প্রকৃত মুসলমান দাড়ি রাখবে, এটাই স্বাভাবিক ।

এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কাটার সুযোগ শরীয়তে রয়েছে। হাদীসের কিতাবে পাওয়া যায়, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. ও হযরত আবু হুরায়রা রা. এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটেছেন।

আবু যুরআ রাহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. তাঁর দাড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস : ২৫৯৯২; ২৫৯৯৯)

কিন্তু কোনো সহীহ বর্ণনায় এক মুষ্ঠির ভিতরে দাড়ি কাটার কোনো অবকাশ পাওয়া যায় না।

এখন আপনি নিজেই ভেবে দেখুন, আপনি কি করবেন। আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশ মানবেন নাকি সমাজের মানুষের কাছে লজ্জার ভয়ে কিংবা কাফির-মুশরিকদের অন্ধ অনুসরণ করবেন? ৷৷৷ সংগৃহিত। 




রাসুল সা: এর পিতা মাতা জান্নাতী কিনা ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

আসসালামু আলাইকুম মুহতারাম,রাসূল সাঃ এর পিতা ও মাতা জান্নাতি কিনা??(আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ ও মতিউর রহমান মাদনী ওনাদের জাহান্নামি বলেছেন)যদি ওনারা তাওরাত বা ইনজিলের অনুসারী হন এবং মুমিন হন তাহলে জন্নাতি কেন হবেন না?একি ভাবে, হাতিম তায়ি একজন মুমিন খ্রীস্টান ছিলেন রাসূল সাঃ এর নবুয়ত প্রাপ্তির পূর্বেই ইন্তেকাল করেন। উনি জান্নাতি কি না??


উত্তর :

ওয়া আলাইকুম আস সালাম।

আসলে রাসুল সা: এর আগমনের পূর্বে সৎ এবং সঠিক দ্বীন বলতে যে বিষয়টি জানা যায়, তা হচ্ছে, দ্বীনে হানিফ। এটা আসলে মূলত ইব্রাহিম আ: এর মতাদর্শের ‍অনূকুল। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, রাসুল সা: এর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্ব সময়ে অনেকেই এই দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। আরেকটা বিষয় দেখতে হবে, যে, ঐ পূর্ব সময়ে কোনো ব্যাক্তি শিরকে লিপ্ত ছিল কিনা। অনেক সাহাবার ক্ষেত্রেই প্রমান পাওয়া গেছে, ইসলাম পূর্ব যুগে তারা কোনোদিন শিরকে লিপ্ত হননাই। কোনো মূর্তি পূজা করেন না। রাসুল সা: এর মা বাবার ক্ষেত্রেও এরকম কথা আমাদের জানা নাই। তারা মূর্তি পূজা করেছেন, বা শিরকে লিপ্ত হয়েছেন বলে এরকম কোনো বর্ণনা আমাদের নজরে আসে নাই। বিপরীত পক্ষে, ঐ সময় এমন কোনো সঠিক শরীয়তের উপস্থিতি ছিলনা বা তাদের কাছে পৌছায়নাই যা তারা মেনে চলতে পারতেন, বা অমান্য করেছেন। কুরআন বার বার বলেছে, আমি তোমাদেরকে এই নবীর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছি এজন্য যে, তোমরা যেন পরকালে না বলো, আমরা তো জানতাম না।” বরং, ইসলাম পূর্ব যুগেও এমন কিছু লোক ছিল, যারা কখনো মূর্তি পূজা করেন নাই এবং শিরককে তারা অপছন্দ করতো। সুতরাং, রাসুল সা: এর মাতা পিতার ব্যাপারেও ঐ বিষয় অনুযায়ীই ফায়সালা হবে। তবে, সাধারণ ভাবে সুধারণা রাখাই কর্তব্য। আরেকটা বিষয় হলো, আসলে রাসুল সা: এর মাতা পিতার শেষফল কি হবে, এই প্রশ্নের সাথে শরীয়তের কোনো বিষয়ই জড়িত নয়। অতএব, সে ব্যাপারে খামাখা অতিরিক্ত প্রশ্ন না করা এবং মাথা না ঘামানোই উত্তম। কুরআন অতিরিক্ত প্রশ্ন করতে নিষেধ করেছে। এজন্য সম্ভবত কোনো একজন সাহাবী রাসুল সা: কে তার পিতা মাতা জান্নাতী না জাহান্নামী এরকম প্রশ্ন করেননি। হাদীসে পরিস্কার ভাবে এরকম সরাসরি কোনা বর্ণনা পাওয়া যায় না।


তাই,  এ বিষয়টি মহান আল্লাহর উপরই ছেড়ে দিতে হবে। যেমন ধরুন: আবু তালিব রাসুল সা: এর এত উপকার করেছেন, কিন্তু তারপরেও তার ব্যাপারে   জান্নাতের পক্ষে কোন ফায়সালার কথা বলা হয়নি। বরং,মূল বিষয় হচ্ছে ঈমান। হযরত ইবরাহীম আ: এর পিতার জন্য দোয়া করতে হযরত ইবরাহীম আ: কে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত নূহ আ: এর ছেলের জন্য তাকে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখানে ব্লাড কানেকশন  এর কোন মূল্য নেই। আসল মূল্য  যার যার নিজের ঈমান ও আমাল।  আরেকটা বিষয় হচ্ছে,  আপনার প্রশ্নের উত্তরের সাথে অর্থাৎ তাদের   জান্নাতি বা জাহান্নামী হওয়ার  প্রশ্নের  উত্তরের সাথে, শরীয়তের কোন বিধিবিধানের কোন সম্পর্ক যেমন নেই, তেমনি তারা জান্নাতে গেলেও আপনার কোন লাভ নাই,  না  গেলেও আপনার কোন লস নাই। তাই এ ধরণের প্রশ্ন নিয়ে মাথাব্যাথা সৃষ্টি করারও কোন কারণ নেই। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রশ্ন শয়তানী ওয়াস ওয়াসার কারণে সৃষ্টি হয়।

সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

এক ব্যাক্তির বয়স ৮০। ছেলেদের কোনো গুরুতর অন্যায়ের কারণে তার ছেলেদের উপর খুব রাগ করে তাদের সম্পত্তি না দেওয়ার কথা বলেছেন। এটা কি ইসলাম সম্মত হবে ? উনাকে কি এজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে ?


উত্তর:

প্রথমত একজন ব্যাক্তি তার মোট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ (তিন ভাগের এক ভাগ) এমনিতেই উত্তরাধিকার ব্যতীত অন্যান্য কাউকে বা অন্য কোথাও অসীয়ত করে যেতে পারেন। এজন্য অসীয়ত নামা দলিলও করে যেতে পারেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা জরুরী এবং ইসলামের নির্দেশ। যেমন: দ্বীনী কাজে বা নিজের কোনো নাতির জন্য যার বাবা মারা গেছে যার ফলে সে উত্তরাধিকার হবে না। বাকী দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ব্যাপারে বলা যায়, ইসলাম সাধারণত মনে করে, সন্তান সৎ সন্তান হবে, বাবা মায়ের অধিকার কর্তব্য ও ইহসান (কর্তব্যের চাইতেও বেশী করা) , জায়েজ ক্ষেত্রে তাদের কথা মেনে চলা, তাদের মন রক্ষা করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সচেতন হবে এবং যথাযথ ভাবে পালন করবে।

(১) সেই ধরণের ক্ষেত্রে কোনো সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঐ পিতার নিজের সম্পত্তি তার নিজের জন্যই ব্যবহার করতে বা বিক্রি করতে হয়। ধরেন, শেষ বয়সে অসুখ হলো, এখন সন্তানদের কারো সামর্থ্য নাই মাতা পিতার চিকিৎসা করা। ফলে ঐ পিতা তার সম্পত্তি বিক্রয় করেই নিজের চিকিৎসা করাতে পারবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো সন্তান বাধা দেয়, এবং ঐ অসুস্থতার কারণে যদি পিতা বা মাতা মারা যায়, তবে তো এমন যেন সন্তানেরা পিতা মাতাকে হত্য করলো।

(২) বিপরীত পক্ষে, যদি দেখা যায়, সন্তানেরা শরীয়ত সম্মত ভাবে চলাফেরা করেনা, এবং পিতা মাতার প্রতি যে খোজ খবর, আচার আচরণ প্রয়োজন ছিল সন্তানেরা সেই দায়িত্ব পালন করেনা, তবে, ঐ পিতা নিজের বাকী দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তির ব্যাপারে যে কোনো সীদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে।

(৩) আর যদি দেখা যায় সন্তানেরা শরীয়ত সম্মত ভাবে জীবন যাপন করে, বাবা মায়ের প্রতি যথাযথ কর্তব্যও পালন করে, তবে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে কোনো ক্রমেই সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা, যদি কেউ এরূপ ক্ষেত্রেও সন্তানদেরকে উত্তরাধিকার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তাবে তাকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহী করতে হবে।

সাদাক্বাতুল ফিতর কাদের উপর ওয়াজিব

 

আসলে যাদের উপর যাকাত ওয়াজিব তাদের উপর ফিতরাও ওয়াজিব। তবে, একটু পার্থক্য হলো, যাকাত নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরী, কিন্তু ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদের উপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরী নয়। যেমন: ঈদের আগের দিনও যদি কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তবে তার উপর ফিতরা ওয়াজিব, কিন্তু যাকাত ওয়জিব নয়। 

----------------------



হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত

ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﻗَﺎﻝَ : « ﻓَﺮَﺽَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺯَﻛَﺎﺓَ ﺍﻟْﻔِﻄْﺮِ ﻃُﻬْﺮَﺓً ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﻣِﻦْ ﺍﻟﻠَّﻐْﻮِ ﻭَﺍﻟﺮَّﻓَﺚِ ﻭَﻃُﻌْﻤَﺔً ﻟِﻠْﻤَﺴَﺎﻛِﻴﻦِ ﻣَﻦْ ﺃَﺩَّﺍﻫَﺎ ﻗَﺒْﻞَ ﺍﻟﺼَّﻼﺓِ ﻓَﻬِﻲَ ﺯَﻛَﺎﺓٌ ﻣَﻘْﺒُﻮﻟَﺔٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺩَّﺍﻫَﺎ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟﺼَّﻼﺓِ ﻓَﻬِﻲَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺎﺕِ » 

রাসূলুল্লাহ সাঃ সদকাতুল ফিতরকে ওয়াজিব করেছেন।রোযাকে বেহুদা ও অশ্লীলতা থেকে পবিত্র করতে।এবং মিসনদকিনদের জন্য খাদ্য স্বরূপ হিসেবে।সুতরাং যারা ঈদের নামাযের পূর্বে ফিতরা কে আদায় করে নিবে,তাদের সেই সদকাহ হলো মকবুল সদকাহ।আর যারা ঈদের নামাযের পর সেটাকে আদায় করবে,তাদের সেই সদকাহ অন্যন্য নফল সদকাহ এর মত। অর্থাৎ-আল্লাহ ইচ্ছা করলে কবুল করবেন,আর ইচ্ছা না করলে কবুল করবেন না।(সুনানু আবি-দাউদ-১৩৭১)

যাকাত যারা খেতে পারবে ফিতরা ও তারা খেতে পারবে।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৯/৬১৯)

ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা মুস্তাহাব।ইমাম আবু-হানিফা রাহ এর মতে দুই বৎসর পূর্বেও ফিতরাকে আদায় করা যায়।ঈদের নামাযের পূর্বে কেউ আদায় করতে না পারলে ঈদের নামাযের পরে অবশ্যই আদায় করে নেবেন।পরে কতদিন পর্যন্ত? মূত্যুর পূর্বে যেকোনো সময় আদায় করতে পারবেন।তবে তারাতারি আদায় করাই মুস্তাহাব।(কিতাবুল-ফাতাওয়া-৩/৩৫৩)
বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-1511


ফিতরা কার উপর ওয়াজিব?
وهي واجبة على الحر المسلم المالك لمقدار النصاب فاضلا عن حوائجه الأصلية كذا في الاختيار شرح المختار، ولا يعتبر فيه وصف النماء ويتعلق بهذا النصاب وجوب الأضحية، ووجوب نفقة الأقارب هكذا في فتاوى قاضي خان.

ভাবার্থ- নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ভার ব্যতীত প্রত্যেক  নেসাব (৭.৫ ভড়ি স্বর্ণ/৫২.৫ ভড়ি রূপা বা রূপার সমমূল্য) পরিমাণ মালের মালিক স্বাধীন মুসলমানের উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।
এক্ষেত্রে বাড়ন্ত মাল হওয়া জরুরী নয়।শুধু তাই নয়, বরং এ পরিমাণ মালের মালিকের উপর  কোরবানী ও নিকটাত্মীয়দের ব্যয়ভার গ্রহণ ওয়াজিব।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১৯২)


★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয়ভার ব্যতীত প্রত্যেক  নেসাব (৭.৫ ভড়ি স্বর্ণ/৫২.৫ ভড়ি রূপা বা রূপার সমমূল্য) পরিমাণ মালের মালিক স্বাধীন মুসলমানের উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।

এখানে বছর পূর্ণ হওয়া আবশ্যক নয়।
ঈদের দিন এই পরিমান সম্পদের মালিক হলেই সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব।     

(০২)
আপনি আদায় করে দিলেও হবে।
আদায় করে দেয়ার বিষয়টি তাকে অবহিত করবেন।

(০৩)
উত্তম হবে ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা।

তবে আগে আদায় করলেও হয়ে যাবে,সমস্যা নেই।

(০৪)
আপনি চাইলে চাল দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন। অবশ্য হাদিসে বর্ণিত বস্তুগুলোর দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে আর কোন মতানৈক্য বাকি থাকে না। যদি চাল দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চান, তাহলে অর্ধ সা গম বা এক সা খেজুর, যব, কিশমিশ বা পনিরের মূল্যের সমপরিমাণ চাল দিতে হবে। এর কম হলে সদকাতুল ফিতর আদায় হবে না।

(পরিমাণঃ)

গম হলে আধা সা' (১.৬৫০গ্রাম)

যব বা খেজুর হলে এক সা' (৩.৩০০গ্রাম)

★আপনি চাল দিয়ে সদকায়ে ফিতর আদায় করলে ১.৬৫০গ্রাম গমের মূল্য কত আসে,বা ৩.৩০০গ্রাম খেজুরের মূল্য কত আসে,সেই মূল্য সমপরিমাণ টাকার চাল ক্রয় করে দিতে পারেন।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

নামাজে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে ?

 

নামাজে কুরআন দেখে দেখে পড়া যাবে ? 


উত্তর দেখুন 

সেহরি সঠিক হবে নাকি সাহরি

 

সেহরি সঠিক হবে নাকি সাহরি



সাহরীর শেষ সময়

সাহরীর শেষ সময় তথা  রোজা শুরু হওয়ার সর্বশেষ সময়ঃ

.
ইবনু উম্মে মাকতুম রাঃ অন্ধ ছিলেন, তিনি আজান দিতেন, তিনি কি সুবহে সাদিক দেখতে পেতেন? তিনি সুবহে সাদিক নিজে দেখতে পেতেন না। তাহলে তিনি কিভাবে আজান দিতেন?
.
লোকেরা যখন বলতো সুবহে সাদিক হয়েছে তখন তিনি আজান দিতেন। সুতরাং
.
১) লোকেরা দেখতো সুবহে সাদিক হয়েছে। আর এখন যে সেহরির শেষ সময় বলেন, আপনি কি দেখতে পান সুবহে সাদিক হয়েছে?
.
২) লোকেরা প্রতিদিন ঠিক ঠিক ঘড়ি দেখে সুবহে সাদিকের কথা বলতো? না। তাহলে তাদের বলায় দুই দশ মিনিট এদিক ওদিক হতো। কিন্তু এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠেনি। কারণ, অন্ধ ইবনু উম্মে মাকতুম রাঃ এর জন্য লোকেদের কথা ছাড়া আজান দেওয়ার কায়দা ছিলনা।
.
তাহলে সেই কয়েক মিনিটের জন্য কি সাহাবায়ে আজমাঈনদের সকলের রোজা ভেংগে গেছে? না ভেংগে যায়নাই।
.
অতএব, মূলত রোজা হচ্ছে দিনের সাথে সম্পর্কিত। সুবহে সাদিকের সাথে নয়। বরং সাবধানতার জন্য শেষ সময় সুবহে সাদিক নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে,
.
১) দুই চার পাচ মিনিট এদিক ওদিক হয়ে গেলেই রোজা হবেনা।
.
২) আবার এর মানে এও নয় যে, সুবহে সাদিকের অন্ধকার কেটে গিয়ে ফর্সা হয়ে গেছে, কিন্তু সেই ফর্সা হওয়ার সময়ও আপনি খাচ্ছেন।
َكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ۖ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ ۚ [٢:١٨٧]
আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। [সূরা বাকারা-১৮৭]
এই আয়াতে দেখুন, এখানে "সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে" লেখা নাই, এইটা বানোয়াট। বরং লেখা আছে "ভোরের শুভ্র রেখা পরিস্কার দেখা যেতে হবে।"
সুতরাং, মূল কথা হলো লোকদের জন্য সেহরী খাওয়ার ব্যাপারটি কঠিন করে দেওয়া যাবেনা। "জরুরি প্রয়োজনে" "অন্ধকার থাকা কালীন"ও খেয়ে নেওয়া যেতে পারে।
আর হাদিসেই আছে, তোমরা ইবনু উম্মে মাকতুমের আজান শোনা কালীন খাওয়ার পাত্র হাতে থাকলে, তা রেখে দিওনা, বাকী খাবার শেষ করো।
সুতরাং, বুঝা গেল, জরুরি ক্ষেত্রে অন্ধকার থাকাকালীন আজানের সময়ও খাওয়া যাবে।
বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থের, রমজান অধ্যায়ের হাদিস গুলো গভীর মনযোগ দিয়ে পড়লে অনেক বিষয়ই সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
বরং, আজান চলাকালীন সময়ে খেলে রোজা হবেনা, কোনো একটি হাদিসেও একথা বলা হয়নাই।
আপনারা ইসলামকে লোকদের জন্য কেন কঠিন করে তোলেন?

---------------------------------------------------------------------------------------------------

(মুয়াত্তা ইমাম মালিক : ১৬০ )
সাহরীর সেহরীর শেষ সময়

সাহরীর সেহরীর শেষ সময়

সাহরীর সেহরীর শেষ সময়

সাহরীর সেহরীর শেষ সময়


বীমা করা কি জায়েজ ? বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করা কি জায়েজ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: 

    আসসালামু আলাইকুম। আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি,চাকরির পাশাপাশি আমি বীমা পেশা নিয়ে ও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি,কিন্তু বীমা পলিসি গ্রহন করা,আর বীমা পেশায় কাজ করে উপার্জন করা,অনেকের মতে হালাল, আবার অনেকের মতে হারাম।এখন আমি এই পেশাটাকে নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার আগে,হালাল হারাম এর বিষয়টি নিশ্চিত হতে চায়।অনুগ্রহ করে, রেফারেন্স সহ বিষয়টি জানালে উপকৃত হব।ধন্যবাদ।



উত্তর :  ওয়া আলাইকুম আস সালাম। 

বীমার যে ইসলামী কনসেপ্ট  এর কথা বলা হয়, তা হলো, 

(১)  ধরুন, একটি কল্যাণ ফান্ড। সবাই টাকা রাখবে । শর্ত হলো,  কল্যাণ ফান্ডের সদস্যদের মধ্যে কেউ যদি কোনো সমস্যায় পরে তাহলে তাকে একটি নির্দিষ্ট হারে অনুদান দেওয়া হবে। অথবা তার  মৃত্যুর পরে কল্যাণ ফান্ডের পক্ষ থেকে  একটি পরিমাণ অর্থ পাবে।  


(২) কল্যাণ ফান্ডে যে অর্থ জমা হবে, এই টাকা  সম্পুর্ণ সুদমুক্ত ব্যবসায় খাটানো হবে।  সদস্যদের ক্লেইম এই লভ্যাংশ থেকে পরিশোধ করা হবে, অথবা, প্রথম মূল টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে, এরপর যদি লভ্যাংশে ক্লেইম পুরণ হয়, তাহলে ভালো, আর ক্লেইম পূরণ করার পর যদি লভ্যাংশ থেকে যায়, তাও রেখে দেওয়া হবে,  এবং একসময় ক্লেইমের পরিমাণের টাকা বৃদ্ধি করা হবে। 


(৩) যারা বীমা জোগাড় করবেন,  কোম্পানীর কাজ হবে, প্রথমতো একটি পার্সেন্টেজ তাদেরকে দেওয়া, কিন্তু প্রথমত দিতে হবে, তাদের আলাদা টাকা থেকে, অবশ্যই ক্লায়েন্টের  পরিশোধিত কিস্তি থেকে নয়। যদি ব্যবসায়িক ভাবে  ঐ টাকা থেকে কোনোদিন  লাভ  আসে তাহলে ঐ লাভ থেকে কোম্পানী কর্মীদের  বেতন কেটে রাখবে।  যদি লভ্যাংশ উদ্বৃত থাকে তবে তা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করবে। 


----- এখন আপনি দেখুন, আপনি যে বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করবেন, তার কোনো পর্যায়ে  

(১) সুদের অস্তিত্ব আছে কিনা  

(২) কোনো পর্যায়ে এমন কোনো নীতি  আছে কিনা যে, গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হবে 

(৩) কোনো পর্যায়ে এমন কোনো নীতি আছে কিনা যাতে কোম্পানীর  কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বা তার টার্গেট পূরণ না করতে পারলে তাকে না খেয়ে থাকতে হবে, (কারণ  এইটা একটা জুলুম), তার টার্গেট পূরণ না করতে পারলেও তাকে ন্যুনতম একটা বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তাকে না খেয়ে থাকতে না হয়।  


--- এই তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে সেখানে চাকুরী করতে পারেন।  

জামায়াতে নামাজের কাতারে শিশুদের অবস্থান / দাড়ানো প্রসঙ্গে।

 প্রশ্ন : আমরা তো জানি, সাত বছর হলে বাচ্চাদের জন্য নামাজ ফরজ। আমি মসজিদে দেখেছি, ইমাম সাহেব বলেন বা পাশাপাশি আরো কিছু মুরুব্বি বলেন, বাচ্চারা নামাজে দাঁড়ালে বলে, ‘পিছনে যাও, পিছনে যাও। একদম লাইনের শেষে যাও।’ দেখা যায় যে তাদের রাস্তায়ও জায়গা হয় না। ইসলামী দৃষ্টিতে এটা কতটুকু জায়েজ?

উত্তর : প্রথম কথা হচ্ছে, আপনার যে বক্তব্য, সাত বছর বয়সে সালাত ফরজ, এটা শুদ্ধ নয়। তবে সাত বছর বয়সে রাসূল (সা.) হাদিসের মধ্যে আমাদের বলেছেন যে, ‘সাত বছর বয়স হলে তাদের সালাতের নির্দেশ দাও।’ এখানে তাগিদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সালাত যাতে আমরা আদায় করি, সে জন্য নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে। ফরজ, এ কথা বলা হয়নি। কিন্তু ১০ বছরের বিষয়টি একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, এটি ফরজ। তখন বলা হয়েছে, ‘সালাতের জন্য তাদের প্রহার করো।’ প্রহার তো আর ফরজ না হলে করা যায় না।

এর পর যে চিত্রটি আপনি তুলে ধরেছেন, সেটি খুবই ভয়ংকর। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের হাতে ধরে মসজিদে নিয়ে না আসি, তাহলে কারা আনবে! এটি একেবারেই ভুল কাজ।

ইমাম বলেন, মসজিদের মোতোয়াল্লি বলেন অথবা মুসল্লি বলেন, যদি এই কাজটি করেন, তাহলে তিনি ভুল কাজ করেছেন, গুনাহের কাজ করেছেন। কোনো সন্তান যদি শিশুও হয়, যদি মসজিদে আসে, তাকে নাহার করা জায়েজ নেই, নাহার মানে হচ্ছে তাকে ধমক দেওয়া, অবজ্ঞা করা। এটা করার কোনো সুযোগ নেই।

বরং আমাদের উচিত মসজিদে আসার ব্যাপারে তাকে আরো উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করা, তাঁর প্রতি স্নেহ দেখানো, সুন্দর আচরণ করা। সে কাজটি আমরা করি না, এটি ভুল কাজ।

কারণ, নবী (সা.) উসামা (রা.)-কে কাঁধে করে নিয়ে আসতেন। নবী (সা.) যখন সিজদাহে যেতেন, উমায়মা (রা.) তাঁর পিঠে উঠে যেতেন। হাসান, হোসেন (রা.) নবী (সা.)-এর খুতবার সময় মসজিদে প্রবেশ করেছিল। নবী (সা.). খুতবা বন্ধ করে দুজনকে কোলে করে নিয়ে এলেন। এ রকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। সুতরাং ছোট শিশুদের মসজিদে আনা  একেবারেই বৈধ কাজ। নবী (সা.)-এর সুন্নাহ সমর্থিত কাজ এবং এ ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা দুর্ব্যবহার করা, অসৌজন্যমূলক আচরণ করা গর্হিত কাজ। যাঁরা করেছেন, তাঁরা ভুল কাজ করেছেন।

উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।) 

===============


শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসা কি জায়েজ নয়?

প্রশ্ন

নামঃ সাবেত বিন মুক্তার

দেশঃ বাংলাদেশ

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। ছোট বাচ্চাদেরকে বড়দের সাথে কাতারে দাঁড়ানোর ব্যাপারে কি কোন বাধ্যবাধকতা আছে?

এক ভাই বলেছেনঃ
বুখারী শরীফে এসেছে- রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামা বিনতে যায়নাব (রাঃ) কে বহন করে (কোলে কিংবা কাঁধে) নামাজ আদায় করতেন। যখন তিনি দন্ডায়মান হতেন তখন তাকে উঠিয়ে নিতেন আর সিজদাহ করার সময় নামিয়ে রাখতেন ।
আমরা একদা যুহর কিংবা আসর নামাজের জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম। বেলাল (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে নামাজের জন্য ডাকলেন। রাসুল (সাঃ) তার নাতনী হযরত উমামাহ (রাঃ) কে কাঁধে করে নিয়ে আমাদের কাছে আসলেন। রাসুল (সাঃ) ইমামতির জন্য নামাজের স্থানে দাড়ালেন আমরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম অথচ, সে (উমামাহ রা.) তার স্থানে তথা রাসুল (সাঃ) এর কাধেই আছে। রাসুল (সাঃ) নামাজের তাকবির দিলেন আমরাও তাকবীর দিলাম। রাসুল (সাঃ) রুকু করার সময় তাকে পাশে নামিয়ে রেখে রুকু ও সিজদাহ করলেন। সিজদাহ শেষে আবার দাড়ানোর সময় তাকে আগের স্থানে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে নামাজের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাকাতেই তিনি এমনটি করে যেতেন।
(সুনান আবু দাউদ ৯২০)

এ ছাড়াও রাসুল (সাঃ) এর খুতবা দেয়ার সময় তার নাতি হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আসলে তিনি খুতবা দেয়া বন্ধ রেখে তাদেরকে জড়িয়ে ধরে আদর করতেন, কোলে তুলে নিতেন চুম্বন করতেন আর বলতেন খুতবা শেষ করা পর্যন্ত আমি ধৈর্য ধারণ করতে পারব না। তাই, আমি খুতবা দেয়া বন্ধ করেই এদের কাছে চলে এসেছি।
(নাসায়ী শরীফ)

মুহাম্মাদ সঃ নিজে বাচ্চাদেরকে কোলে রেখে নামায পড়িয়েছেন। আর আমাদের বুজুর্গ-মুসল্লিরা মসজিদেই তাদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেন না।

রাসুলুল্লাহ সঃ বলেছেন
যে আমাদের ছোটদেরকে স্নেহ করে না এবং বড়দেরকে সম্মান করতে জানে না সে আমার দলভুক্ত নয়।
(আবু দাউদ, তিরমীজি, মুসনাদে আহমদ)

*** আমার প্রশ্ন বাচ্চার বয়স ৭ বছর হয়ে গেলে তাকে মসজিদে নিয়ে পাশে দাড় করালে কি কোন সমস্যা হবে? ৭ বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাচ্চাদেরকে নামাজের তাকিদ দিতে বলেছেন, ১০ বছর বয়সে না পড়লে শাসন করতে বলেছেন। তাই ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজ শিখানোর জন্য বাচ্চাদেরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়া কি উচিত নয় যদিও তারা কিছু দুষ্টামি করে বা নামাজের মধ্য দিয়ে হেঁটে যায়?

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

কে কি বলল, কে অনুমতি দিল আর কে দিল না? এর উপর ইসলামী বিধান নির্ভর নয়। বরং ইসলামের বিধান নির্ভর করে কুরআন সুন্নাহ এবং কুর্‌আন ও সুন্নাহ থেকে উৎসারিত ইসলামী ফিক্বহ।

হাদীসের মাঝে যেমন নাবালেগ শিশুদের মসজিদে নিয়ে আসার কথা এসেছে, তেমনি কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা ও সুবিন্যস্ত রূপ ইসলামী ফিক্বহের কিতাবেও তা এসেছে।

হাদীসের আলোকে ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেছেন, নামাযের কাতারে প্রথমে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষরা থাকবে। আর পিছনে থাকবে শিশুরা। কিন্তু তারা একসাথে থেকে দুষ্টুমি করার সম্ভাবনা থাকলে তাদের বড়দের কাতারের মাঝখানে মাঝখানে দাঁড় করাবে।

শিশুদের নামাযের প্রশিক্ষণের জন্য মসজিদে নিয়ে আসা উচিত। তবে খেয়াল রাখা উচিত দুষ্টুমি করে যেন অন্যদের নামাযের বিঘ্ন না ঘটায়।


فى رد المحتار- ويصح الرجل ثم الصبيان ظاهرة تعددهم فلو واحد دخل الصف (ردالمحتار-2/312-313

وفى تقريرات الرافعى- قال الرحمتى ربما يتعين فى زماننا ادخال الصبيان فى صفوف الرجال لأن المعهود منهم اذا اجتمع صبيان فاكثر فيبطل صلاة بعضهم ببعض وربما بعدى ضررهم الى افساد صلاة الرجال (رد المحتار-2/73

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

আজান শুরুর ঘটনা / আজান শুরুর ইতিহাস

 নামাজের জন্য মানুষকে আহ্বান করার একমাত্র মাধ্যম হলো আজান। জামাআতে নামাজ পড়ার জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। কেউ কেউ একে ওয়াজিব বা আবশ্যক বলেছেন। আজান ওহী না হলেও কতিপয় সাহাবায়েকেরামের স্বপ্নেপ্রাপ্ত বাক্য। যাই হোক নামাজের জন্য আজান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজানই মানুষকে দ্রুত নামাজের জন্য তৈরি হতে উদ্বুদ্ধ করে।

ইসলামের প্রাথমিক যুগে পবিত্র নগরী মক্কায় আজান ছাড়াই নামাজ পড়া হতো। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদিনায় হিজরত করে মসজিদ নির্মাণ করলেন তখন মুসলমানদের নামাজে অংশগ্রহণের জন্য একত্রিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট সংকেত নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলেন এবং সাহাবাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন।

সাহাবাদের পরামর্শ
সাহাবায়েকেরাম নামাজে অংশগ্রহণ একত্রিত হওয়ার জন্য সংকেত ঠিক করতে পরামর্শ সভায় বসলেন। পরামর্শ সভায় ৪টি প্রস্তাব উপস্থাপন হয়।
>> ঝাণ্ডা উড়ানো;
>> আগুন প্রজ্জ্বলন;
>> শিঙ্গা বাজানো;
>> ঢোল বাজানো।

পরমার্শ সভার ৪টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করা হয়। কারণ ঝাণ্ডা উড়ালে সব মানুষ তা বাড়ি বা দূর থেকে দেখতে পাবে না। দ্বিতীয়ত আগুন প্রজ্বলন অগ্নি উপাসকদের কাজ। তৃতীয়ত শিঙ্গা বাজানো খ্রিস্টানদের কাজ আর চতুর্থত ঢোল বাজানো ইয়াহুদিদের কাজ। এ কারণে সেদিন সমাধান ছাড়াই পরামর্শ সভার মূলতবি করা হয়।


সাহাবায়েকেরামগণ এ বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে করতেই যার যার বাড়ি চলে গেলেন। ঐ রাতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখেন-

‘এক ব্যক্তি শিঙ্গা নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে শিঙ্গাটি বিক্রি করতে বললে। শিঙ্গাটি কেনার কারণ জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ বললেন, ‘আমি শিঙ্গাটি দিয়ে মানুষকে নামাজে আসার জন্য আহ্বান করব।’
তখন শিঙ্গার মালিক ব্যক্তি বলল, ‘আমি কি এটি হতে উত্তম একটি জিনিসের সংবাদ দিব না? এ বলে তিনি আজানের বাক্যগুলো তাঁকে শিখিয়ে দিলেন।


সকালে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে স্বপ্নের কথাগুলো জানালেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার স্বপ্ন সত্য। তুমি বেলালকে আজানের বাক্যগুলো শিখিয়ে দাও। আজ থেকে বেলাল আজান দেবে।’

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদের শেখানো বাক্যগুলো দিয়ে হজরত বেলাল আজান দিলে, তা শুনে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবির দরবারে দৌড়ে এসে বললেন-

‘হে আল্লাহর রাসুল! ঐ সত্তার শপথ যিনি আপনাকে সত্য রাসুল হিসেবে প্রেরণ করেছেন। অবশ্যই আমি অবিকল এ বাক্যগুলোই স্বপ্নে দেখেছি।’

উল্লেখ্য যে, ঐ রাতে একই স্বপ্ন সাহাবিদের মধ্য থেকে ১৪ জনই দেখেন। যার মাধ্যমে নিয়মিত হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু নামাজের জন্য আজান দিতেন।

ফজরের আজানের বাড়তি বাক্য ‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ সম্পর্কে জানা যায় যে-
একদিন ফজরের সময় হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু আজান দিতে আসলেন, তখন তাকে বলা হলো, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুমে আছেন। তখন হজরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করলেন-
‘আস-সালাতু খাইরুম মিনান নাওম। অর্থাৎ ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম।’

হজরত সাঈদ ইবনে মুসায়্যিব বলেছেন, ‘পরে ফজরের আজানের সঙ্গে এ বাক্যটি শমিল করে দেয়া হয়।’

আর এভাবেই সর্বপ্রথম আজানের প্রচলন হয়। আজানের আওয়াজ শুনার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানরা মসজিদে জামাআতে নামাজ আদায়ে একত্রিত হয়।

জামাআতে নামাজ আদায়ের জন্য আজান দেয়া সুন্নাত। আবার কেউ কেউ একে ওয়াজিব বলেছেন।

তবে আজান দেয়া সুন্নাত বা ওয়াজিব যা-ই হোক না কেন, আজান ইসলামের প্রতীক। কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কারও বিপরীতে অভিযান পরিচালনা করতেন; ঐ সময় তাদের মধ্য থেকে যদি আজানের ধ্বনি আসত তবে তিনি তাদের সঙ্গে অভিযান বন্ধ করে দিতেন এবং বলতেন, তারা মুসলিম।’

আল্লাহ তা্আলা মুসলিম উম্মাহকে আজানের সঙ্গে সঙ্গে জামাআতে নামাজ আদায়ে মসজিদে একত্রিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

===========================




আযান একটি আহ্বান, প্রতিদিন আমরা পাঁচবার শ্রবণ করি। তার ধ্বনি আমাদের অন্তরসমূহকে নাড়া দেয়। আমাদের জীবন্ত করে তুলে, অলসতা দূর করে, উদ্দামতা আনয়ন করে। নিশ্চয় এটা ইসলামের নিদর্শন, তাওহীদের আলামত। আল্লাহ কি চান ? এ প্রশ্নের উত্তর যে জানতে চায়, সে যেন আযানের অর্থ নিয়ে চিন্তা করে।এটা সত্যের আহবান। এ হচ্ছে মুসলমানদের আযান !আমরা এর ঘটনা জানি ?আমরা জানি কিভাবে আমাদের কাছে এসেছে এ আযান ? কিভাবে মুসলমান এর সন্ধান পেয়েছে ? এবং কিভাবে পৌঁছতে পেরেছে মুসলমানগণ আযান পর্যন্ত ? এ এমন কতগুলো প্রশ্ন যা আযান প্রেমিক প্রত্যেকটি মানুষের জানা জরুরী। এ আযানের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অন্য জাতির চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে ভূষিত করেছেন। এর জন্য তিনি আমাদেরকে মনোনিত করেছেন, একে তিনি আমাদের আলামত বানিয়েছেন।

ইসলামের শুরুতে সালাতের সময় হলে মুসলমানেরা নিজের পক্ষ থেকে মসজিদে এসে উপস্থিত হত। আযান, আহবান বা অন্য কোন মাধ্যমে ডাকাডাকি ছাড়াই। ইবনে ওমর রাদিআলাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলতেন :

 

মুসলমানগণ যখন মদীনায় আগমন করে জড়ো হতেন, সালাতের সময়ের প্রতীক্ষা করতেন। তখন সালাতের জন্য ডাকাডাকি হতো না। একদিন তারা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। কেউ বলল : তোমরা নাসারাদের ন্যায় ঘণ্টার অনুসরণ কর। কেউ বলল না, বরং হর্ন গ্রহণ কর, ইহুদিদের শিঙ্গার ন্যায়। ওমর রাদিআলাহু আনহু বললেন : একজন লোক পাঠান, সে সালাত সালাত বলে ঘোষণা দেবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  হে বেলাল, তুমি দাঁড়াও, অতঃপর সালাতের ঘোষণা দাও। {বোখারি : (৫৭৯), মুসলিম : (৩৭৭) }


ইবনে খুজাইমা রাহিমাহুল্লাহ স্বীয় গ্রন্থে এ শিরোনামে এক অধ্যায়ের সূচনা করেছেন : এ অধ্যায়ের দলিলের বর্ণনা যে, আযানের প্রচলন হয়েছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনায় হিজরতের পর। তিনি মক্কায় সালাত আদায় করতেন আযান ও ইকামাত ছাড়াই। সহিহ ইবনে খুজাইমা : (১/১৮৯)

ইবনে ইসহাক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন লোকেরা কোন আহবান ছাড়াই তার নিকট সময় মত সালাতের জন্য উপস্থিত হতো। শায়খ আলবানী বলেছেন : এর সনদটি হাসান। দেখুন : ফিকহুস সীরাহ : (১/১৮১)

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক মহান চিন্তা ছিল, মানুষদের কিভাবে সালাতের জন্য উপস্থিত করা হবে ? অবশেষে আল্লাহর বিধান চলে আসে। আবু উমাইর বিন আনাস তার কোন আনসারী চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন :

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতের বিষয় নিয়ে খুব চিন্তা করলেন, এ জন্য তিনি কিভাবে মানুষদের জমায়েত করবেন ? তাকে বলা হলো : যখন সালাতের সময় হবে একটি পতাকা উত্তোলন করবেন, এ পতাকা দেখে একে অপরকে আহবান করবে। এ উত্তরে তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। অতঃপর তার কাছে হর্ন বাজানোর কথা বলা হলো। পূর্বের উল্লিখিত বোখারির বর্ণনায় যেরূপ রয়েছে। জিয়াদ বললেন : ইহুদিদের হর্ন। এ উত্তরেও তিনি সন্তুষ্ট হলেন না। তিনি বললেন : এটা ইহুদীদের কর্ম । অতঃপর তাকে ঘণ্টার কথা বলা হলো। তিনি বললেন : এটা নাসারাদের কর্ম।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ চিন্তায় গভীরভাবে চিন্তিত হয়ে আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ বিন আবদে রাব্বিহি বাড়ি ফিরলেন, তাকে স্বপ্নে আযান দেখানো হলো। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গমন করলেন এবং তাকে আযান বিষয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে সংবাদ দিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, অর্ধ ঘুম ও নিদ্রাবস্থায় ছিলাম, আমার কাছে এক আগমনকারী আসল অতঃপর আমাকে আযান দেখালো। তিনি বলেন : ওমরও তার পূর্বে এ স্বপ্ন দেখেছে, তিনি তা বিশ দিন গোপন রাখেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানান। তিনি বললেন : তুমি আমাকে কেন সংবাদ দাওনি ? বললেন : আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ আমার আগে বলে ফেলেছে, তাই আমার বলতে লজ্জা বোধ হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  হে বেলাল, দাঁড়াও, দেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ কি বলে, তুমি তার অনুসরণ কর। তিনি বললেন : অতঃপর বেলাল আযান দিল। আবু বিশর বলেন : আবু উমাইর আমাকে বলেছে, আনসারগণের ধারণা, সেদিন যদি আব্দুলাহ বিন জায়েদ অসুস্থ না হতেন, তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম তাকেই মুয়ায্যিন বানাতেন। আবু দাউদ : (৪৯৮), সহীহ আবু দাউদ লিল আলবানী: (৪৬৮)

এ স্বপ্নের কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রভূত আনন্দিত হন এবং আল্লাহর প্রশংসা করেন, যেরূপ অন্যান্য বর্ণনায় এসেছে। ওমর রাদিআলাহু আনহু যখন বেলালের মুখে আযানের ধ্বনি শুনলেন, চাদর হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে উপস্থিত হলেন। আর বললেন : হে রাসূল, যে আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ, সে যেরূপ বলেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : সকল প্রশংসা আল্লাহর। আবু দাউদ : (৪৯৯), শায়খ আলবানী হাদীসটি সহিহ বলেছেন : সহিহ আবু দাউদ : (৪৬৯)

অন্য বর্ণনায় হুবহু আযানের শব্দও বর্ণনা করা হয়েছে। মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জায়েদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হর্ণের ব্যাপারে চিন্তা করছিলেন এবং ঘন্টার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তার কাছ থেকে চলে গেলাম। অতঃপর আব্দুল্লাহকে সপ্নে দেখানো হলো। তিনি বলেন : আমি এক ব্যক্তিকে দেখলাম দুটি হলুদ জামা গায়ে একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়ানো। আমি তাকে বললাম : হে আল্লাহর বান্দা, তুমি কি ঘণ্টা বিক্রি করবে? সে বলল: তুমি এর দ্বারা কি করবে ? আমি বললাম : সালাতের জন্য আহবান করবো। সে বলল : আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা বলবো না ? আমি বললাম : তা আবার কি ? সে বলল : তুমি বলবে : {আযানের শব্দাবলি}

তিনি বলেন : আব্দুল্লাহ বের হয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন, অতঃপর স্বপ্ন সম্পর্কে অবহিত করলেন। বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আমি দেখলাম হলুদ জামা গায়ে এক ব্যক্তি একটি ঘণ্টা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তাকে সপ্নের বিবরণ শোনালেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন :  তোমাদের ভাই একটি স্বপ্ন দেখেছে, তুমি বেলালের সাথে মসজিদে যাও, তার কাছে গিয়ে বল, এবং বেলাল যেন এ শব্দ দ্বারা আহবান করে, কারণ তার আওয়াজ তোমার চেয়ে উচ্চ।” তিনি বলেন : আমি বেলালের সাথে মসজিদে গেলাম, অতঃপর আমি তার কাছে বলতে লাগলাম, সে তার মাধ্যমে সালাতের আহবান জানাতে লাগল।

সে বলল : ওমর ইবনে খাত্তাব আওয়াজ শোনে বের হয়ে আসলেন, বললেন : হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর শপথ, সে যেরূপ দেখেছে আমিও অনুরূপ দেখেছি। অতঃপর আবু উবাইদ বলেন, আবু বকর হিকমী আমাকে বলেছে যে, আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ আনসারী এ সম্পকের্ বলেছেন :
অর্থ : {আযানের জন্য আমি আল্লাহর অনেক প্রশংসা করছি, যিনি বড়ত্বের ও সম্মানের অধিকারী। যখন আমার কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এ নিয়ে সুসংবাদ দাতা আসল, তিনি আমাকে এর মাধ্যমে সুসংবাদ দাতা হিসিবে সম্মানিত করেন। লাগাতার তিন রাতে তিনি আমার কাছে আসেন, যখনই তিনি আসেন আমার সম্মান বৃদ্ধি করেন।}”
ইবনে মাজাহ : (৭০৬), শায়খ আলবানী হাদীসটি হাসান বলেছেন : সহিহ ইবনে মাজাহ : (৫৮০),

আর (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম) এর সংযোজন হয়েছে বেলাল রাদিআল্লাহু আনহু এর পক্ষ থেকে।অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুমতি প্রদান করেন।

বেলাল রাদিআলাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সালাতের সংবাদ দিতে আসেন, অতঃপর তাকে বলা হয়, তিনি ঘুমন্ত। ফলে তিনি বলেন :
(আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম , আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম)

এরপর থেকে ফজরের আযানে এটা প্রচলিত হয়।” ইবনে মাজাহ : (৭১৬), শায়খ আলবানী হাদীসটি সহিহ বলেছেন : সহিহ ইবনে মাজাহ : (৫৮৬)

এর মাধ্যমেই আমরা আযানের ঘটনা জানতে পারলাম, যা এখনো আমাদের কর্ণসমূহ আন্দোলিত করে। এটা মহান নিআমত, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাই, তিনি এর শোকর আদায় করার তাওফীক দান করুন। এবং আযান যেন আমাদের জন্য সংরক্ষণ করেন, যেন আমরা এর মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিম জয় করতে সক্ষম হই। সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য নিবেদিত



============================


ইসলামের সমস্ত বিষয়গুলোকে নির্দিষ্ট কিছু শিরোনামে বলতে চাইলে ইবাদত, লেনদেন, আচার ব্যবহার, আখলাক ও আকীদার আলোচনা আসবে। ইসলামের মূল হচ্ছে আকীদা বিশ্বাস। আর বাকিগুলো হচ্ছে শাখাগত বিষয়। 

ইবাদতই এগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদতের প্রধান হচ্ছে নামাজ। নামাজের বিধান পূর্ববতী নবীগণের মধ্যেও ছিল। ইসলামে নামাজ ফরজ হয়েছে মেরাজের রজনীতে। সে ঘটনা আমরা জানি। প্রথম দেয়া হয় পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ। তা কমিয়ে আসতে আসতে সর্ব শেষ চূড়ান্ত হয় পাঁচ ওয়াক্ত।

নামাজ মেরাজের রজনীতে ফরজ হলেও, নামাজের জন্য আজান দেয়ার প্রচলন কিন্তু তখনো হয়নি। তা হয়েছে আরো পরে। মদিনায় হিজরতের পর। প্রচলন পরে হলেও রাসূল (সা.) মেরাজের রজনীতেই আজান শুনেছিলেন। কারো কারো মতে হজরত জিবরাইল (আ.) সে রাতে নবী করিম (সা.)-কে আজান শিক্ষা দিয়েছিলেন। তবে এই মতের পক্ষের হাদিসগুলো সনদগতভাবে দুর্বল হওয়ায় কেউ কেউ এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। মদিনায় আজানের প্রচলন হওয়ার ঘটনাটি ছিল এ রকম। মদিনায় হিজরতে পর মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকল। মক্কায় এতদিন স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হয়নি। মদিনায় স্বাধীনভাবে দ্বীনি কাজ করা ও মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে নামাজের জন্য লোকদেরকে ডাকার প্রয়োজন দেখা দিল। একদিন রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শ করলেন যে, নামাজের জন্য লোকদেরকে একত্রিত করার কী পদ্ধতি হতে পারে। কেউ কেউ পরামর্শ দিল, খৃষ্টানদের ন্যায় নামাজের সময় হলে ঘণ্টা বাজানো হোক। কয়েকজন পরামর্শ দিল, ইহুদিদের ন্যায় নামাজের সময় হলে সিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হোক। হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, একজন লোক ঠিক করলেই তো হচ্ছে। সে নামাজের সময় হলে লোকদেরকে ডেকে ডেকে জমা করবে। কিন্তু নবী করিম (সা.) এর নিকট কোনোটিই পছন্দ হচ্ছিল না। তাই বিষয়টি অমীমাংসিত অবস্থায় ওই দিনের বৈঠক শেষ হলো।

ওই দিনেরই রাতের ঘটনা। আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) স্বপ্নে দেখেন এক লোক দুটি ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। তিনি ওই লোককে বলেন, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি ওগুলো আমার কাছে বিক্রি করবে? ওই লোক প্রশ্ন করেন তুমি এর দ্বারা কী করবে? সাহাবি বলেন, এগুলো বাজিয়ে লোকদেরকে নামাজের দিকে ডাকব। তখন ওই লোক বলেন, নামাজে ডাকার জন্য আমি তোমাকে এর চেয়ে সুন্দর পদ্ধতি শিখিয়ে দিচ্ছি। এর পর ওই লোক আজানের শব্দগুলো শিখিয়ে দেন। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জায়েদ ফজরের সময় নবী করিম (সা.)-কে আজানের শব্দগুলো শুনালেন। রাসূল (সা.) শুনে বলেন এটা সত্য স্বপ্ন। রাসূল (সা.) তাকে নির্দেশ দিলেন, হজরত বেলালকে আজান শেখাও। হজরত বেলাল আজান শিখে আজান দেয়া শুরু করেন। আর এভাবেই আজানের সূচনা হয়েছে।

কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে, হজরত উমর (রা.) বেলালের আজান শুনে ঘুম থেকে ওঠে দৌঁড়ে গেলেন যে, আমিও তো স্বপ্নে এগুলো দেখেছি। রাসূল (সা.) তার কথা শুনে বলেন, সমস্ত তারিফ আল্লাহ তায়ালার জন্য। ঘটনাটি এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে। কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত উমর (রা.) এ ঘটনা ঘটারও বিশ দিন আগে আজানের শব্দগুলো স্বপ্নে দেখেছিলেন। আবু দাউদ, তিরমিজীসহ আরো বহু হাদিসের কিতাবে ইকামতের আলোচনাও এসেছে। অর্থাৎ আজানের সঙ্গে স্বপ্নে ইকামতও শিখিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে হজরত বেলাল (রা.) ফজরের নামাজে ‘আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম’ বাক্যটি যুক্ত করেন। হজরত নবী করিম (সা.) এটাকে পছন্দ করেছেন। বিধায় এখন এটাও আজানের অংশ।

অনেকে বিভ্রান্তি ছড়ান যে, আজান এসেছে একজন সাহাবির স্বপ্নের মাধ্যমে, যিনি নবী ছিলেন না। তারপরও তার স্বপ্নকে মেনে নিয়ে আজানের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বৈধতা দেয়া হয়েছে। অতএব ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন শরীয়তের দলীল, যেমন ওই সাহাবির স্বপ্ন দলিল হয়েছে। মূল বিষয় হচ্ছে, আজান শুধু স্বপ্নের মাধ্যমেই বৈধতা পেয়েছে বিষয়টি এমন নয়। বরং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সরাসরি ওহি নাজিল হয়েছিল। যেমন এক হাদিসে এসেছে, হজরত উমর (রা.) ঘণ্টা বানানোর জন্য দুটি কাঠ কিনেন। কিন্তু ওই রাতেই তিনি স্বপ্নে আজানের শব্দগুলো শিখেন। দৌঁড়ে রাসূল (সা.)-কে সংবাদ দিতে গেলে, তিনি বলেন, তোমার সংবাদ দেয়ার আগেই এ ব্যাপারে ওহি নাজিল হয়েছে। (বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭১) আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা হচ্ছে, নবীগণের স্বপ্ন শরীয়তের দলিল হতে পারে। কিন্তু ওলি আউলিয়াদের স্বপ্ন দলিল হতে পারে না। তাই এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। 

আজানের শব্দ সংখ্যা কম। তবে এর মাধ্যমে দ্বীনের মৌলিক শিক্ষা পেশ করা হয়েছে। ইমাম কুরতুবী (রাহ.) এ ব্যাপারে খুবই চমৎকার আলোচনা করেছেন। তিনি লেখেন, ‘আজানের শব্দ সংখ্যা কম হওয়া সত্তেও দ্বীনের মৌলিক বিষয় তথা আকীদার বিষয়গুলো সেখানে আলোচনা হয়েছে। আজানের সূচনা হয়েছে, আল্লাহু আকবার শব্দ দিয়ে। এর মধ্যে আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্ব ও বড়ত্বে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় শব্দ হচ্ছে ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। এখানে আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদ ও তার সঙ্গে শরিক না থাকার বিষয় আলোচনা হয়েছে। এরপর নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নবুওয়াতকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ আমি সাক্ষ দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল। এর পর দ্বীনের খুটি নামাজের আলোচনা হয়েছে। কারণ নামাজ ইবাদত হওয়া, নবী ছাড়া কারো মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। তারপর মানুষকে চির সফলতার দিকে ডাকা হয়েছে। এর দ্বারা মূলত আখেরাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ প্রকৃত সফলতা হচ্ছে, যা আখেরাতে লাভ হবে। শব্দগুলো দুইবার বলার কারণ হচ্ছে, বিষয়ের ওপর তাকিদ দেয়া। আজানের দ্বারা নামাজের ওয়াক্ত আসা, জামাতের দিকে আহ্বান জানানো হয়। এর দ্বারা দ্বীনের একটি প্রতীকেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আজানের জন্য কিছু শব্দকে নির্বাচন করা হলো, যা মুখে ঘোষণা করতে হয়; কোনো কাজকে নয়। কারণ, মুখে বলা সহজ, কাজ করে দেখানোর চেয়ে। যেন যে কোনো জায়গার, যে কেউ আজানের মাধ্যমে ইসলামের সুমহান বার্তা মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। (মাআরেফুস সুনান, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-১৬৮)

আজান সম্পর্কে প্রচলিত ভুল:
আজান ও আজানের উত্তর নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু প্রচলিত ভুল আছে। যেমন হাদিসে এসেছে, আজানের উত্তরে শ্রোতা ওই শব্দগুলোই বলবে যা মুয়াজ্জিন আজানে বলে। তবে হাইয়ালাস সালাহ ও হাইয়ালাল ফালাহ বলার সময় শ্রোতা বলবে ‘লা হাওলা ওলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’। কিন্তু আমাদের সমাজের কাউকে কাউকে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় দরূদ পড়তে শুনা যায়। এটা মূলত ভুল। নিয়ম হলো আজান শেষে যে কোনো দরূদ পাঠ করে দোয়া পড়া। দ্বিতীয় যে ভুল সমাজে প্রচলিত, নবী করিম (সা.) এর নাম শুনার সময় আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা চোখে লাগানো। আজান ও ইকামত উভয় ক্ষেত্রেই এটা করা হয়। এর সূত্র হচ্ছে মুসনাদে দাইলামি নামক কিতাব। ওই কিতাবে প্রচুর হাদিসের নামে বানোয়াট কথা রয়েছে। তো এমন একটি বানোয়াট হাদিস হচ্ছে ‘হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) যখন মুয়াজ্জিনকে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনলেন তখন তিনিও তা বলেন এবং তর্জনী আঙ্গুল দুটিতে চুমু খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিলেন। (তা দেখে) রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমার দোস্তের মতো আমল করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধারিত।’ এই হাদিস সম্পর্কে হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের পণ্ডিত ব্যক্তিদের মতামত হচ্ছে বানোয়াট হাদিস। আমাদের দেশের মানুষের ধর্মীয় আবেগের প্রবলতার কারণে অনেকে বিশ্বাসই করতে পারেন না যে, হাদিস বানোয়াট বা মিথ্যা হতে পারে। 

রাসূল (সা.) এর যুগের পর যখন আস্তে আস্তে ফেতনা ছড়াতে থাকে তখন বিভিন্ন গোমরা দল নিজেদের মতের স্বপক্ষে হাদিস বানাতে থাকে। আল্লাহ তায়ালাও তখন এমন ব্যক্তিদের দুনিয়াতে পাঠান, যারা দ্বীনের শিক্ষাকে হেফাজতের জন্য নিজেদের জীবন যৌবনকে ব্যয় করেছেন। যাদের মেধা ও সততা অতুলনীয়। উল্লিখিত হাদিসের ব্যাপারে ওই সকল হাদিসবেত্তাদের মত তুলে ধরছি। আল্লামা সাখাবী বলেন, এ হাদিস প্রমাণীত নয়। আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি বলেন, মুয়াজ্জিনের শাহাদাতে নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া ও তা চোখে মুছে দেয়ার ব্যাপারে যতগুলো হাদিস আছে সবগুলোই জাল ও বানোয়াট। আল্লামা লাখনোভী (রা.) লেখেন ‘ইকামত বা অন্য কোথাও নবী করিম (সা.) এর নাম শুনে নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেয়া) সম্পর্কে কনো হাদিস বা সাহাবির কোনো আসর বা আমল বর্ণিত হয়নি।’ (বিস্তারিত জানতে এসব হাদিস নয় বইয়ের প্রথম খন্ডের ১০৭ পৃষ্ঠা দেখুন) আজান দেয়ার সময় কথা বললে ঈমান চলে যাওয়া বা চল্লিশ বছরের নেকি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথাও শুনা যায়। এখানেও যে হাদিসগুলো পেশ করা হয় সব ভিত্তিহীন। 

তবে আজানের জবাব দিতে হলে অন্য কোনো কথা বা কাজ বন্ধ রাখা দরকার এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই বলে আমলে আনার জন্য হাদিস বানিয়ে বলা কখনো সমর্থনযোগ্য নয়। বহু হাদিসের কিতাবে হাদিস বানানোর গোনাহ সম্পর্কে হুশিয়ারি এসেছে। রাসূল (সা.) বলেন, যে আমার ব্যাপারে কোনো মিথ্যা বলবে সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। (সহীহ মুসলিম) হাদীসের মান না জেনে মানুষের সামনে বর্ণনা করাও এক ধরনের অন্যায়। তাই যে কোনো বিষয়ের হাদিস বলার আগে তা জেনে নেয়া। 

আজান সম্পর্কে আরেকটি ভুল হচ্ছে ঝড় তুফানে আজান দেয়া। ওই অবস্থার দোয়া আছে তা পড়তে হবে। বা আল্লাহর বড়ত্বসূচক কোনো বাক্য স্মরণ করা যায়। কিন্তু আজান দেয়া যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...