প্রশ্ন: ২৯৩: অসুস্থ ব্যাক্তির জন্য দোয়া।

হাদিস ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। মানুষের জীবনযাত্রায় হাদিসের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জীবনের সব সমস্যার সমাধানে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা। যার ইঙ্গিত কুরআনে এসেছে, ‘এবং (তিনি)  প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।’ (সুরা নজম) সুতরাং হাদিসের ওপর আমল করা জরুরি। হাদিসে এসেছে, অসুস্থ্য ব্যক্তিকে দেখতে গেলে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কিভাবে দোয়া করতে হবে। তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো-

০১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন কোনো রুগ্ন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, যার এখনো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট সাতবার এই দোয়াটি বলবে-

أَسْأَلُ اللهَ العَظيمَ، رَبَّ العَرْشِ العَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ
উচ্চারণ : আসআলুল্লাহাল আজিমা, রাব্বাল আরশিল আজিমি, আঁইয়্যাশফিয়াক’ অর্থাৎ `আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য (সুস্থতা) প্রার্থনা করছি` আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমজি, আবু দাউদ)

০২. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন বেদুঈনকে দেখতে গেলেন। আর তাঁর নিয়ম এই ছিল যে, যখন তিনি কোনো রোগীকে দেখতে যেতেন তখন বলতেন-

لَا بَأْسَ طُهُوْرٌ اِنْشَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : লা- বা’সা তুহু-রুন ইনশাআল্লাহ।
অর্থ : ‘ভয় নেই, আল্লাহর মেহেরবানীতে আরোগ্য লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

০৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমাদের মধ্যে কেউ যখন অসুস্থ হতো তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাত রোগীর শরীরে বুলাতেন এবং বলতেন-
اَذْهَبِ الْبَأْسَ رَبَّ النَّاسِ - وَاشْفِ اَنْتَ الشَّافِي - لَا شِفَاءَ اِلَّا شِفَائُكَ شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقْمًا
উচ্চারণ : আজহাবিল বা’সা রব্বান না-সি, ওয়াশফি আনতাশ শা-ফি-, লা শিফাআ’ ইল্লা- শিফা-উকা শিফা-আ’ লা ইউগাদিরু সুক্বমা।
অর্থ : ‘হে মানুষের প্রতিপালক! এ রোগ দূর কর এবং আরোগ্য দান কর, তুমিই আরোগ্য দানকারী। তোমার আরোগ্য ব্যতিত কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য, যা বাকী রাখে না কোনো রোগ।’ (বুখারি, মিশকাত)

পরিশেষে...
অসুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রত্যেকের দোয়া করা উচিত। যেভাবে দোয়া করতে শিখিয়েছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে উপরোক্ত হাদিসগুলোর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

প্রশ্ন: ২৯২ : অজুর দোয়া ।


অযুর শুরু ও শেষের দোয়া


জিজ্ঞাসা–৮৯৫: আসসালামু আলাইকুম। অযুর দোয়া সম্পর্কে নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কি বলেছেন?– Amzad
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
এক. অযুর পূর্বে এবং পরে দোয়া পড়া রাসূলুল্লাহ  থেকে প্রমাণিত আছে। সুতরাং এই দুই সময়ে দোয়া পড়া সুন্নাত। অযুর পূর্বে দোয়া হল, বিসমিল্লাহ বলে অযু শুরু করা। রাসূলুল্লাহ  বলেন,
لا وُضُوءَ لِمَنْ لَمْ يَذْكُرْ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলবে না, তার অযু পরিপূর্ণ হবে না। (তিরমিযি ২৫)
দুই. অযুর শেষে কী দোয়া পড়া হবে; এবিষয়ে বেশ কয়েকটি হাদিস রয়েছে। সকল হাদিসের সমষ্টিতে দোয়াটি এভাবে দাঁড়ায়–
: أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ ، سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ ، أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ أنْتَ ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ
‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর গোলাম ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ্‌! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’
যেমন, রাসূলুল্লাহ  বলেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ الْوَضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، إِلا فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ
তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরূপে উযূ করে এই দোয়া পাঠ করবে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর গোলাম ও রাসুল।’ তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম ২৩৪)
ইমাম তিরমিযি রহ. উক্ত দোয়ার নিম্নের অংশ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন,
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ
‘হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন।’ (তিরমিযি ৫৫)
আর উক্ত দোয়ার শেষাংশ ইমাম নাসাঈ তাঁর আল-কুবরা (৯৯০৯), হাকিম (১/৫৬৪) গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল  বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ فَقَالَ: سُبْحَانَكَ اللهُمَّ، وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ، كُتِبَ فِي رَقٍّ ثُمَّ طُبِعَ بِطَابَعٍ فَلَمْ يُكْسَرْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَة
যে ব্যক্তি ওযূ করার পর বলবে, ‘মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ্‌! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’ তাহলে তার জন্য কাগজে তার আমল নামা লিখে এমনভাবে মুদ্রণ করা হবে, যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত নষ্ট হবে না।
উল্লেখ্য, অযুর মাঝখানে বিভিন্ন অঙ্গ দোয়ার সময় যে দোয়াগুলো পড়া হয়। সেগুলো অযুর দোয়া হিসেবে হাদিসে আসে নি। তবে মুফতি তাকী উসমানী দা. বা. বলেন, এই দোয়াগুলো বিভিন্ন সময়ে রাসুলুল্লাহ  পড়েছেন বলে প্রমাণিত আছে। তাই এগুলো পড়া বেদআত হবে না; বরং বরকতের কারণ হবে। (ইসলাহী খুতুবাত ১৩/১২৬)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


========================================

আরবি হাদিস

 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ ألوُضُوءَ، ثُمَّ يَقُوْلُ: أَشهَدُ أَنْ لاَ إلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ؛ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ». رواه مسلم، وزاد الترمذي: «اَللهم اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ» 

বাংলা অনুবাদ: 

 উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পরিপূর্ণরূপে অজু করে যে ব্যক্তি এই দোয়া বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ।’ অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাস ও প্রেরিত দূত (রসূল)। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।” ইমাম তিরমিযি (উক্ত দুআর শেষে) এ শব্দগুলি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, «اَللهم اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ» অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর। [মুসলিম ২৩৪, তিরমিযি ৫৫, নাসায়ি ১৪৮, ১৫১, আবু দাউদ ১৬৯, ৯০৬, ইবন মাজাহ ৪৭০, আহমদ ১৬৯১২, ১৬৯৪২, ১৬৯৯৫]



প্রশ্ন : ২৯১ : নামাজে মনঃসংযোগের জন্য চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া যাবে কি?

উত্তর : না, রাসুল (সা.) চোখ খুলে ইবাদত করেছেন। আমরা চোখ বন্ধ না করে চোখ খুলেই ইবাদত করব। এটা আপনার মনের বিষয় যে চোখ খোলা না রেখে চোখ বন্ধ করলে নামাজের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া যাবে।
মনোযোগ দেওয়ার জন্য যদি চোখ বন্ধ করার প্রয়োজন থাকত, তাহলে রাসুল (সা.) বলতেন যে, তোমরা চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করো। তিনি নামাজ পড়ার সময় সিজদার দিকে লক্ষ্য করেছেন এবং যখন তাসাহুদের মধ্যে বসেছেন, তখন হাঁটুর ওপর বা তাঁর শাহাদত আঙুলের দিকে দৃষ্টিপাত করেছেন। দণ্ডায়মান অবস্থায় সিজদার দিকে দৃষ্টি থাকবে। এটাই হলো নিয়ম।

জিজ্ঞাসা–২২৩: আসসালামু আলাইকুুম…নামাযের সময় রিয়া হবার আশংকা থাকলে চোখ বন্ধ করে নামায আদায় করা যাবে কি?: Noman: fjarfim1205@gmail.com
জবাব:وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
নামাজে চোখ বন্ধ করা নবীজি ﷺ এর সুন্নাহয় নেই; বরং তিনি যখন নামাজে দাঁড়াতেন, আল্লাহ্‌র সামনে গভীর বিনয়ে মাথা নিচু রাখতেন আর দৃষ্টি সিজদার স্থানে রাখতেন। ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, যখন কেউ তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে দেখা করে তখন তার ভালোবাসার একটি বহিঃপ্রকাশ হল সে লজ্জা আর শ্রদ্ধায় মাথা নিচু রাখে এবং আমাদেরও ঠিক এই রকম হতে হবে। রাসূল  বলেন,
فإذا صليتم فلا تلتفتوا فإن الله ينصب وجهه لوجه عبده في صلاته ما لم يلتفت
যখন কেউ নামাজে দাঁড়াবে, সে যেন এদিক সেদিক না তাকায়, কারণ আল্লাহ তখন তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে রাখেন যতক্ষণ না সে এদিক সেদিক তাকায়। (তিরমিযি)
বাদায়ে’গ্রন্থে এসেছে,
وَيُكْرهُ أَنْ يُغْمِضَ عَيْنَيْهِ فِي الصَّلَاةِ؛ لِمَا رُوِيَ عَنْ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – أَنَّهُ نَهَى عَنْ تَغْمِيضِ الْعَيْنِ فِي الصَّلَاةِ؛ وَلِأَنَّ السُّنَّةَ أَنْ يَرْمِيَ بِبَصَرِهِ إلَى مَوْضِعِ سُجُودِهِ وَفِي التَّغْمِيضِ تَرْكُ هَذِهِ السُّنَّةِ؛
চোখ বন্ধ করে নামায পড়া মাকরূহ। কেননা রাসূল  চোখ বন্ধ করে নামাজ পড়া থেকে নিষেধ করেছেন। আর সুন্নাত হল, সেজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে নামায পড়া। চোখ বন্ধ রাখলে এই সুন্নাত তরক হয়ে যায়। (বাদায়ে’ ১/২১৬)
তবে যদি চোখ খোলা রেখে কিছুতেই খুশুখুজু (একাগ্রতা) না আসে তাহলে মাঝে মাঝে চোখ একটু বন্ধ করা যাবে। (রাদদুল মুহতার ১/৬৪৫ আলমুগনী ২/৩০)
প্রশ্নকারী ভাই, বাকি রিয়ার ব্যাপারে কথা হল, নিয়তের ব্যপারে সজাগ থাকবেন। নামাযে মনোযোগ আনার জন্য সুন্নাহসম্মত উপায়গুলো অবলম্বন করবেন।



প্রশ্ন: ২৯০ : জাহান্নাম কয়টি ও কি কি ?

জাহান্নাম মূলত একটিই। গুণগত বা স্তরগত বৈচিত্র্য বিবেচনায় জাহান্নামের একাধিক নাম কুরআন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে জাহান্নামের মোট সাতটি নাম আলোচিত হয়েছে।  সূরা হাজর ৪৪ ।  কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের অভিতম হলো এ সাতটি বস্তুত জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম। হাদীসের ভাষ্যে জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম পাওয়া যায় না। তবে সাহাবীদের বক্তব্যে জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম পাওয়া যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, জাহান্নামের সাতটি স্তরের নাম হলো জাহান্নাম, সাঈর, লাজা, হুতামা,সাকার, জাহীম,  হাবিয়া। এটিই সর্বনিম্ন স্তর। তাফসীরে ইবনে আবি হাতেম ৯/৬১,

 বিস্তারিত:  https://islamqa.info/ar/8578


Question

I am looking for the different name of the Hell-fire.  I have found these: Blazing Fire (35:6),  Flaming Fire (33:64),  Crushing Fire (104:4,5), and Burning Flame (83:16).  Are these correct and could you give me a few more?

Answer

Praise be to Allaah.

“The Fire of Hell has many names, which reflect its characteristics. It is called Jaheem, Jahannam, Lazaa, al-Sa’eer, Saqar, al-Hatamah and al-Haawiyah, according to its various characteristics. That which is named is one and the same. The believer is obliged to believe in and affirm all the names that have been proven in the Book of Allaah or the Sunnah of His Messenger (peace and blessings of Allaah be upon him).” 
Majmoo’ Fataawa wa Rasaa’il al-‘Uthaymeen by al-Salmaan, 2/58. 
It is called al-Jaheem (fire) because of its blazing fire. 
It is called Jahannam (Hell) because of the depth of its pit – according to al-Qaamoos. 
It is called Lazaa (blazing fire) because of its flames. 
It is called al-Sa’eer (blazing flame) because it is kindled and ignited (this word is derived from the root sa’ara meaning to kindle).  
It is called Saqar (Hell) because of the intensity of its heat. 
It is called al-Hatamah (broken pieces, debris) because it breaks and crushes everything that is thrown into it. 
It is called al-Haawiyah (chasm, abyss) because the one who is thrown into it is thrown from top to bottom… and so on. 
Some of the scholars, mufassireen (Qur’aan commentators) and others mentioned other names besides these. 
Some of them said that these names are the names for the various levels and degrees of Hell, and some of them divided people into various categories on the basis of these levels. But it is not correct to divide people in Hell into categories on this basis, even though the division of people into categories on the basis of their actions is something that is proven from the texts – just as it is not correct to name the various levels of Hell in the manner in which they mentioned. The correct view is that each of these names which they mentioned is a name for the whole of Hell, not for a part of it in exclusion of another part. 
Al-Yawm al-Aakhir (the Last Day) – al-Jannah wa’l-Naar (Paradise and Hell) by Dr. ‘Umar al-Ashqar, 26. 
And Allaah knows best.

আরবী ভার্সন : 

السؤال

أنا أبحث عن أسماء لجهنم وقد وجدت بعضاً مثل: المحرقة والمحطمة والملتهبة ... هل هذه أسماء صحيحة ؟ أرجو تزويدي بأسماء أخرى.

نص الجواب

الحمد لله
" نار جهنم لها أسماء متعددة ، وهذا التعدد في الأسماء لاختلاف صفاتها . فتسمى الجحيم ، وتسمى جهنم ، ولظى ، والسعير ، وسقر ، والحطمة ، والهاوية بحسب اختلاف الصفات . والمسمى واحد  ، فكل ما صح في كتاب الله أو سنة الرسول صلى الله عليه وسلم من أسمائها فإنه يجب على المؤمن أن يصدق به وأن  يثبته "
مجموع فتاوى ورسائل العثيمين للسلمان : 2/58
وقد سميت الجحيم لشدة تأجج نارها .
وسميت جهنم لبعد قعرها -كما في القاموس-
وسميت لظى لتلهبها .
وسميت السعير لأنها تُوقد وتهيج فهي فعيل بمعنى مفعول.
وسميت سقر وصقر لشدة حرها .
وسميت الحطمة لحطمها -أي كسرها وهشمها - كل ما يلقى فيها .
وسميت الهاوية لأنه يُهوى فيها من علو إلى سفل ... وهكذا
وذكر بعض أهل العلم من المفسرين وغيرهم أسماء أخرى غير هذه المذكورة
وذكر بعضهم أن هذه الأسماء المذكورة أسماء لدركات النار وطبقاتها ، ثم قسم بعضهم الناس على هذه الطبقات ، ولم يصح تقسيم الناس في النار وفق هذا التقسيم - وإن كان انقسام الناس وتفاوتهم بحسب أعمالهم أمر ثابت بالنصوص الكثيرة - ، كما لم يصح تسمية دركات النار على الوجه الذي ذكروه . والصحيح أن كل واحد من هذه الأسماء التي ذكروها اسم على النار كلها ، و ليس لجزء من النار دون جزء.
اليوم الآخر - الجنة والنار-    للدكتور عمر الأشقر : 26.

প্রশ্ন: ২৮৯ : ওজুর ফরজ ও সুন্নত সমূহ এবং অজুর নিয়ম।

ওযুর ফরজ ৪টি – 
  • সমস্ত মুখমন্ডল কপালের উপরিভাগের চুলের গোড়া হইতে থুতনী পর্যন্ত, এক কর্নের লতি থেকে অন্য কর্নের লতি পর্যন্ত ধৌত করা
  • উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।
  • চারভাগের একভাগ মাথা মাসেহ করা ( ঘন দাঁড়ি থাকিলে আঙ্গুলী দ্বারা খেলাল করা ফরয )।
  • উভয় পা টাখনু গিরা সহকারে ধৌত করা।
ওযুর সুন্নাত ১৪টি
  • নিয়ত করা।
  • বিসমিল্লাহ্‌ বলে ওযু শুরু করা।
  • হাতের আঙ্গুল খিলাল করা।
  • উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধৌত করা।
  • মিসওয়াক করা।
  • তিনবার কুলি করা।
  • তিনবার নাকে পানি দেয়া।
  • সম্পূর্ন মুখ মন্ডল তিনবার ধৌত করা।
  • উভয় হাতের কনুইসহ তিনবার ধৌত করা।
  • সমস্ত মাথা একবার মাসেহ করা।
  • টাখনু সহ উভয় পা তিবার ধৌত করা।
  • পায়ের আঙ্গুল খিলাল করা।
  • এক অঙ্গ শুকানোর পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
  • ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ওযুর কাজ গুলো সম্পূর্ন করা।
ওযূর নিয়মসমূহ – 
  • প্রথমে বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম পাঠ করা।
  • দুই হাতের কবজি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। প্রথমে ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে ডান হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার এবং এরপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করতে হবে।
  • ডান হাতে পানি নিয়ে তা মুখে দিয়ে ভাল্ মত কুলি করতে হবে। এভাবে তিনবার, যেন কোন প্রকার খাদ্যকণা মুখের ভিতর না থাকে। [রোজা থাকা অবস্থায়ও এটাই করতে হবে, তবে অনেক হুঁশিয়ার থাকতে হবে যেন পানি পেটে না যায়]
  • ডান হাতে পানি নিয়ে নাকে পানি দিয়ে বাম হাতের বৃদ্ধাংগুলি,আর কনিষ্ঠাংগুলি দ্বারা নাকের ভিতর পরিষ্কার করতে হবে। এমনভাবে পানি প্রবেশ করাতে হবে যেন নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়। নাকের ভিতর কিছু থাকলে নাক ঝাড়তে হবে। এভাবে তিনবার। প্রতিবারই পরিষ্কার পানি দিতে হবে নাকে।
  • এবারে মুখমন্ডল অর্থাৎ কপালের উপরে যেখান থেকে স্বাভাবিকভাবে মাথার চুল গজায় সেখান থেকে নিচের থুতনির নীচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে আরেক কানের লতি পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান, পানি দিয়ে তিনবার ধৌত করতে হবে। দাঁড়ি থাকলে তা খিলাল করতে হবে। যেন দাঁড়ি পরিষ্কার হয় এবং সম্ভব হলে দাঁড়ির গোড়ায় পানি পৌঁছায় (পাতলা দাঁড়ির ক্ষেত্রে). গোঁফের খেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এভাবে তিনবার করতে হবে।
  • এবারে বাম হাত দিয়ে পানি দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ভালভাবে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর একি ভাবে ডান হাত দিয়ে বাম হাতও পরিষ্কার করতে হবে। কারো হাতে আংটি থাকলে দেখতে হবে আংটির নিচেও যেন পানি প্রবেশ করে। নখেও যেন কোন ময়লা না থাকে।
  • মাথা মাসেহ করাটা একটু খেয়াল করে করতে হবে। উপরের ছবির মত করে বৃদ্ধাংগুলি আর শাহাদাত আংগুলি আলাদা রেখে দুই হাত দিয়ে কপালে চুল শুরু হবার জায়গা থেকে পিছনে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করতে হবে। তারপর একই ভাবে হাত উল্টিয়ে মাথার তিন-চতুর্থাংশ পিছন থেকে সামনে মাসেহ করতে হবে। এবারে শাহাদাত আংগুলি দ্বারা কানের ভিতরের অংশ আর বৃদ্ধাংগুলি দ্বারা কানের বাইরের অংশ পরিষ্কার করতে হবে। এরপর হাতের পিছনের অংশ দিয়ে ঘাড় মাসেহ করতে হবে।
  • এরপর ডান হাত দিয়ে পানি ঢেলে বাম হাত দিয়ে ডান পা টাখনু বা গোঁড়ালি পর্যন্ত ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে এমনভাবে যেন আংগুলের ভিতরও কোন ময়লা না থাকে। প্রথমে ডান পায়ের কনিষ্ঠ আংগুল থেকে খিলাল করতে হবে, বাম পা এর ক্ষেত্রে বৃদ্ধাংগুলি থেকে শুরু করতে হবে। এভাবে তিনবার। মোজা মসাহ্‌: যিনি মুসাফির (সফররত) নন তিনি সকালে ওযূ করে মোজা পরে থাকলে পরবর্তী সকাল পর্যন্ত পা না ধুয়ে শুধু মোজার উপর ভিজা হাত বুলিয়ে দিবেন। আর যিনি মুসাফির তিনি ওযু করে মোজা পায়ে রেখে থাকলে তিনদিন পর্যন্ত ওযূ করে মোজায় মসাহ্‌ করতে পারেন (মেশ্‌কাত)।
  • হাত ও পা ধোয়ার সময় আঙ্গুল খেলাল করা।
নোট : প্রসঙ্গত- উল্লেখ্য যে, নিয়মিত দাঁত মাজা রসূল করীম (সাঃ)-এর একটি বিশেষ সুন্নত। এ ব্যাপারে তিনি তাঁর উম্মতকে বিশেষভাবে তাগিদ প্রদান করেছেন। হযরত (সাঃ) বলেছেন, উম্মতের কষ্ট না হলে প্রত্যেক নামাযের পূর্বে তিনি মিসওয়াক করার আদেশে দিতেন।
ওযু ভঙ্গের কারণ ৭টি – 
  • পায়খানা বা পেশাবের রাস্তা দিয়া কোন কিছু বাহির হওয়া ( সামান্য হলেও ) ।
  • মুখ ভরিয়া বমি হওয়া ।
  • শরীরের ক্ষতস্থান হইতে রক্ত, পুঁজ বা পানি বাহির হইয়া গড়াইয়া পড়া ।
  • থুতুর সাথে রক্তের ভাগ সমান বা বেশী হওয়া ।
  • চিৎ বা কাৎ হইয়া হেলান দিয়া ঘুমানো ।
  • পাগল, মাতাল, অচেতন হওয়া ।
  • নামাযে উচ্চস্বরে হাসা ।

মূল লিংক

প্রশ্ন: ২৮৮ : ইফক এর ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাই।

ইফকের ঘটনাঃ আয়িশা(রা) এর উপর অপবাদের ঘটনা নিয়ে ইসলাম বিরোধীদের আপত্তি ও তার জবাব
================================================
.
মেয়েদের দেখে সবচেয়ে বেশী চোখ হেফাজতকারী ছেলের উপরেই মাঝে মাঝে চরিত্রহীনতার অভিযোগ আসে। অশ্লীলতা থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা মেয়েটার উপরেই আসে চূড়ান্ত অশ্লীলতার অভিযোগ। নির্দোষ মানুষের পৃথিবীটা তখন খুব সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। জীবনটা মেঘে আঁধার হয়ে পড়ে। কিন্তু তাঁরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। তাই আল্লাহ স্বয়ং তাদের ইজ্জতের হেফাজত করেন। যেমনটা করেছিলেন মরিয়াম(আঃ) এর ক্ষেত্রে। করেছিলেন আমাদের মা আয়েশা(রাঃ) এর ক্ষেত্রে। চারপাশের সকল মেঘ দূরীভূত হয়ে ঝকঝকে সূর্য উঠে। কিন্তু যাদের হৃদয়কে বক্রতা জেকে বসে, তারা কপটতা করবেই। সেকালে করেছে, একালেও করবে। আজকের গল্প তেমন একটা ঘটনাকে নিয়ে।
.
ঘটনাটা সীরাতের পাতায় “ইফকের ঘটনা” নামে পরিচিত। ঘটনাটি ঘটে পঞ্চম হিজরীর শাবান মাসে। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে। এ যুদ্ধে আগে থেকেই বুঝা যাচ্ছিলো যে, তেমন কোন রক্তপাত ঘটবে না। মুসলিমরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জিতবে। তাই মদিনার বিপুল সংখ্যক মুনাফিকরা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। ইবনে সা’দ বর্ণনা করেন- “এই অভিযানে অসংখ্য মুনাফিক অংশগ্রহণ করে যা অন্য কোনো অভিযানে আগে দেখা যায়নি।”
.
রাসূল(সাঃ) যখন কোনো সফরে বের হতেন, তখন স্ত্রী নির্বাচনের জন্য লটারী করতেন। বনু মুসতালিকের যুদ্ধে অভিযানে সফরসঙ্গী হিসেবে লটারীতে আয়েশা(রাঃ) এর নাম আসে। আয়েশা(রাঃ) যাত্রাকালে প্রিয় ভগ্নি আসমা(রাঃ) এর একটি হার ধার নেন। হারটির আংটা এতো দূর্বল ছিলো যে বারবার খুলে যাচ্ছিলো। সফরে আয়েশা(রাঃ) নিজ হাওদাতে আরোহণ করতেন। এরপর হাওদার দায়িত্বে থাকা সাহাবীগণ হাউদা উঠের পিঠে উঠতেন। তখন আয়েশা(রাঃ) এর বয়স ছিল কেবল চৌদ্দ বছর। তিনি এতো হালকা গড়নের ছিলেন যে, হাওদা-বাহক সাহাবীগণ সাধারণত বুঝতে পারতেন না যে, ভিতরে কেউ আছে কি নেই!
.
সফরকালে রাতের বেলায় এক অপরিচিত জায়গায় যাত্রাবিরতি হয়। আয়েশা(রাঃ) প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দূরে চলে গেলেন। ফেরার সময় হঠাৎ গলায় হাত দিয়ে দেখলেন ধার করা হারটি নেই। তিনি প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেন। প্রথমত, তার বয়স ছিল কম আর তার উপরে হারটি ছিল ধার করা। হতভম্ব হয়ে তিনি হারটি খুঁজতে লাগলেন। বয়স কম হবার কারণে তার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিলো না। তিনি ভেবেছিলেন যাত্রা আবার শুরু হবার আগেই তিনি হারটি খুঁজে পাবেন আর সময়মতো হাওদাতে পৌঁছে যাবেন। তিনি না কাউকে ঘটনাটি জানালেন, না তার জন্য অপেক্ষা করার নির্দেশ দিলেন।
.
খুঁজতে খুঁজতে তিনি হারটি পেয়ে গেলেন কিছুক্ষণ পর। কিন্তু ততক্ষণে কাফেলা রওনা হয়ে গেছে। তারা ভেবেছিলেন, আয়েশা(রাঃ) হাওদার মধ্যেই রয়েছেন। এদিকে আয়েশা(রাঃ) কাফেলার স্থানে এসে কাউকে পেলেন না। তিনি চাদর মুড়ি দিয়ে সেখানেই পড়ে রইলেন। ভাবলেন, যখন কাফেলা বুঝতে পারবে তখন আবার এখানে ফিরে আসবে।
.
সে সফরে সাকাহ হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন সফওয়ান(রাঃ)। সাকাহ বলতে কাফেলার রক্ষণাবেক্ষণকারীদের বুঝানো হয়। তাদের কাজ ছিলো কাফেলাকে কিছু দূর থেকে অনুসরণ করা। কেউ পিছিয়ে পড়লে কিংবা কোনো কিছু হারিয়ে গেলে তা কাফেলাকে পৌঁছে দেয়া। সফওয়ান(রাঃ) ছিলেন খুব বড়ো মাপের সাহাবী। তিনি পথ চলতে চলতে অস্পষ্ট অবয়ব দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন। আর চাদর মুড়ি দেয়া অবস্থাতেও আয়েশা(রাঃ) কে চিনতে পারলেন। কারণ, পর্দার বিধান নাযিল হবার পূর্বে তিনি আয়েশা(রাঃ) কে দেখেছিলেন। আয়েশা(রাঃ) তখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তাকে সজাগ করার জন্য সফওয়ান(রাঃ) জোরে
“ইন্না-লিল্লাহ” বলে আওয়াজ দিলেন। বললেন, “এ যে রাসূল(সা) এর সহধর্মিণী! আল্লাহ আপনার উপরে রহম করুন! কি করে আপনি পিছে রয়ে গেলেন?”
.
আয়েশা(রাঃ) কোনো কথার জবাব দিলেন না। সফওয়ান(রাঃ) একটি উট এনে তাতে আয়েশা(রাঃ) কে আরোহণ করতে বলে দূরে সরে দাঁড়ান। আয়েশা(রাঃ) উটের পিঠে আরোহণ করলে তিনি উটের লাগাম ধরে সামনে পথ চলতে থাকেন। অনেক চেষ্টা করেও ভোরের আগে তারা কাফেলাকে ধরতে পারলেন না।
.
ঘটনাটি এতোটুকুই। এবং যে কোনো সফরে এমনটা ঘটা একদম স্বাভাবিক। কিন্তু যাদের হৃদয়ে বক্রতা আছে তারা ঘটনাটিকে লুফে নিলো। কুৎসা রটাতে লাগলো। তবে যাদের হৃদয় পবিত্র তারা এসব শোনামাত্রই কানে আঙ্গুল দিয়ে বলতেনঃ আল্লাহ মহাপবিত্র! এটা সুস্পষ্ট অপবাদ ছাড়া কিছুই না।
আবু আইয়ুব(রাঃ) তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, “হে উম্মে আইয়ুব! যদি তোমার ব্যাপারে কেউ এমন মন্তব্য করতো, তুমি কি মেনে নিতে?” তার স্ত্রী জবাব দিলেন, “আল্লাহ মাফ করুন, কোনো অভিজাত নারীই তা মেনে নিতে পারে না।” তখন আবু আইয়ুব(রাঃ) বললেন, “আয়েশা(রাঃ) তোমার চেয়ে অনেক অনেক বেশি অভিজাত। তাহলে তার পক্ষে এটা কিভাবে মেনে নেয়া সম্ভব!”
.
এ ঘটনা সব জায়গায় ছড়ানোর মূল হোতা ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই। আমিরুল মুনাফিকুন, মুনাফিকদের সর্দার। ঘটনাক্রমে আরো তিনজন সম্মানিত সাহাবী এই কুচক্রে জড়িয়ে পড়েন। হাসসান ইবনে সাবিত(রাঃ), হামনা বিনতে জাহশ(রাঃ) আর মিসতাহ ইবনে আসাসাহ(রাঃ)।
.
এদিকে আয়েশা(রাঃ) মদিনা পৌঁছানোর পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। রাসূল(সাঃ) আর আবু বকর(রাঃ) তাকে কিছুই জানালেন না। আয়েশা(রাঃ) আর রাসূল(সাঃ) এর মধ্যে খুবই উষ্ণ সম্পর্ক ছিলো সবসময়। রাসূল(সাঃ), আয়েশা(রাঃ) কে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন। এক সাথে দৌড় খেলতেন, ইচ্ছা করে হেরে যেতেন। আয়েশা(রাঃ) পাত্রের যে দিক দিয়ে পান করতেন, রাসূল(সাঃ) সেদিক দিয়ে পানি পান করতেন।
.
আয়েশা(রাঃ) অসুস্থ হলে তিনি দয়া আর কোমলতা প্রদর্শন করতেন। কিন্তু এবারের অসুস্থতায় আগের মতো কোমলতা প্রদর্শন করলেন না। আয়েশা(রাঃ) লক্ষ্য করলেন রাসূল(সা:) আর আগের মতো তার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলেন না।
পুরো ব্যাপারটায় তিনি খুব কষ্ট পেলেন। তাই রাসূল(সাঃ) এর অনুমতি নিয়ে পিতৃগৃহে চলে গেলেন। তখনো তিনি আসল ঘটনাটি জানতেন না। পরবর্তীতে, একদিন রাতের বেলা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে বের হলে মিসতাহ(রাঃ) এর মা তাকে পুরো ঘটনাটি জানান। নিজের ছেলেকে মা হয়ে অভিশাপ দেন। আয়েশা(রাঃ) এর কাছে তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেলো। তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তিনি রাত-দিন অবিরত কাঁদতে থাকলেন।
.
এদিকে তার বিরুদ্ধে অপবাদকারীরা আরো জোরে শোরে তাদের কুৎসা রটাতে থাকে। প্রায় ১ মাস হয়ে যায়। কোনো মীমাংসা হয় না। মুনাফিক আর গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিশ্বাস করতো আয়েশা(রাঃ) নির্দোষ ছিলেন। তারপরেও স্বচ্ছতার স্বার্থে রাসূল(সাঃ) ঘটনার তদন্ত করলেন। তিনি উসামা(রাঃ) আর আলী(রাঃ) এর সাথে পরামর্শ করলেন। উসামা(রাঃ) বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আপনার পরিবার সম্পর্কে আমরা ভালো ভিন্ন আর কিছুই জানি না।” আলী(রাঃ) ঘটনার আরো সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রাসূল(সাঃ) কে ঘরের দাসীদের জিজ্ঞেস করতে বললেন। দাসীকে জিজ্ঞেস করা হলে সে বললোঃ তার মধ্যে আমি দোষের কিছুই দেখি না। কেবল এতোটুকুই যে, তিনি যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়েন, আর বকরী এসে সব সাবাড় করে নিয়ে যায়।
.
রাসূল(সাঃ) বুকভরা কষ্ট নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। বললেন, “লোকসকল! মানুষের কি হয়েছে? তারা আমার পরিবার সম্পর্কে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তারা মিথ্যা বলছে আমার পরিবারের বিরুদ্ধে।”
রাসূল(সাঃ) এরপর আবু বকর(রাঃ) এর গৃহে আগমন করেন। আয়েশা(রাঃ)কে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ হে আয়েশা! লোকেরা কি বলাবলি করছে তা তো তোমার জানা হয়ে গেছে। তুমি আল্লাহকে ভয় করো। আর লোকেরা যেসব বলাবলি করছে তাতে লিপ্ত হয়ে থাকলে তুমি আল্লাহর নিকট তওবা করো। আল্লাহতো বান্দার তওবা কবুল করে থাকেন।
.
আয়েশা(রাঃ) সে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে লক্ষ্য করে একথাগুলো বলার পর আমার চোখের অশ্রু সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়। আমার সম্পর্কে কুর’আন নাযিল হবে! আমার নিজেকে নিজের কাছে তার চাইতে তুচ্ছ মনে হয়েছে। তখন আমি বললাম- আমার সম্পর্কে যেসব কথা বলা হচ্ছে সে ব্যাপারে আমি কখনোই তওবা করবো না। আমি যদি তা স্বীকার করি তবে আল্লাহ জানেন যে আমি নির্দোষ আর যা ঘটেনি তা স্বীকার করা হয়ে যাবে। আমি ইয়াকুব(আঃ) আর নাম স্মরণ করতে চাইলাম। কিন্তু মনে করতে পারলাম না। তাই আমি বললাম- ইউসুফ(আঃ) এর পিতা যা বলেছিলেন, তেমন কথাই আমি উচ্চারণ করবোঃ
“ সুন্দর সবরই(উত্তম) আর তোমরা যা বলছো সে ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছি।” (সূরা ইউসুফঃ১৮)
.
এ পর্যায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নাযিল হলো আয়েশা(রাঃ) সম্পর্কে-
.
“যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে করো না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গোনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি।
যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না।” (সূরা নূরঃ ১১,১৯)
.
আয়াত নাযিলের পর আয়েশা(রা:) এর মা প্রচণ্ড খুশী হন। মেয়েকে বলেন: যাও মা! আল্লাহর রাসূলের শুকরিয়া আদায় করো। আয়েশা(রা:) তখন এক বুক অভিমান নিয়ে বললেন: আমি কখনোই তার শুকরিয়া আদায় করবো না। বরং যেই আল্লাহতায়ালা আমার নিষ্কুলষতার সাক্ষ্য দিয়েছেন, আমি কেবল তারই শুকরিয়া আদায় করবো।
.
.
লেখকরা যখন কোনো কিছু লিখেন তখন তাদের লেখায় তাদের জীবনের ছাপ ফুটে উঠে। এটা ফুটে উঠতে বাধ্য। এ ব্যাপারটা মানবীয়। যদি কুর’আন সত্যিই রাসূল(সাঃ) এর নিজের আবিষ্কার হতো, তবে তিনি তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে আয়াত রচনা করতেন। কারণ, পৃথিবীতে তিনি তখন আয়েশা(রাঃ)-কেই সবচেয়ে বেশী ভালোবাসতেন। এক মাস অপেক্ষা করে জল-ঘোলা করার সুযোগ দিতেন না। এক মাসের বেশী বিলম্ব করাটাই প্রমাণ করে, কুর’আন তার নিজের লেখা নয়।
.
ইসলাম বিদ্বেষীরা যেখানে কুৎসা রটনা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পায় না, সেখানেও আল্লাহ মুসলিমদের জন্য চমৎকার কিছু শিক্ষা রেখে দিয়েছেন। আমরা শিখতে পেরেছি, একজন সতী নারীর উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করা হলে তার কি করা উচিত? উন্নত দেশে যেখানে ধর্ষণের শাস্তি হয় না, সেখানে কুর’আন সতী নারীদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ কারীদের জন্য কঠোর শাস্তি আরোপ করেছে।
“যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।” (সূরা নূরঃ৪)
.
মিসতাহ(রাঃ) ভুলক্রমে এ কুৎসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিলেন। অথচ তার ভরন-পোষণ করতেন আবু বকর(রাঃ)। নিজের মেয়েকে এ অপবাদ দিতে দেখে, আবু বকর(রাঃ), মিসতাহ(রাঃ) কে আর সাহায্য করবেন না বলে প্রতিজ্ঞা করেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়ঃ
“তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।” (সূরা নূরঃ২২)
.
এ ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, কুর’আন রাসূল(সাঃ) এর কোনো ব্যক্তিগত বই ছিলো না। তা না হলে নিজ স্ত্রীকে নিয়ে বাজে মন্তব্যকারীর সাহায্য বন্ধ হতে দেখে উনার খুশী হওয়া উচিত ছিলো। এটাই স্বাভাবিক এবং মানবীয়। এ ঘটনা প্রমাণ করে, এ কুর’আন মানুষের তৈরি কোনো বই না।
.
বরং এ কুর’আন আল্লাহর পক্ষ থেকে। কেবল তাঁর কাছে নিজেকে বিনীত করেই প্রকৃত “মুক্তমনা” হওয়া সম্ভব।
=====
.
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন [ফেসবুক id: Shihab Ahmed Tuhin ]
#সত্যকথন
.
সহায়ক গ্রন্থাবলীঃ
১) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া(চতুর্থ খণ্ড)- ইবনে কাছির(রহঃ) [পৃষ্ঠাঃ২৯৩-৩০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন]
২) সীরাতে আয়েশা- সাইয়্যেস সুলাইমান নদভী(রহঃ)-[ পৃষ্ঠাঃ১২০-১৩৩, রাহনুমা প্রকাশনী]

প্রশ্ন: ২৮৭ : আখেরী জোহর পড়তে হবে কেন ?

জুময়া শরীয়তের একটি প্রধান নিদর্শন । উহা ছহীহভাবে আদায় হওয়ার জন্য ফকিহগণ নিৰ্দ্ধারিত কতিপয় শর্ত নির্দিষ্ট করিয়াছেন । উক্ত শর্তসমূহ যেস্থানে সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাইবে তথায় জুময়াও ছহীহভাবে আদায় হইবে এবং উক্ত দিবসের জোহরের  ফরজের দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি পাইবে । তবে যে স্থানে জুময়ার শর্তসমূহের মধ্যে কেন একটিও শর্ত অনুপস্থিত থাকে , সেথায় জুময়ার নামাজ পড়া ফরজ হইবে না বরং জোহরের ফরজ নামাজ পড়িলেই চলিবে । আর যে স্থানে কিছু সংখ্যক শর্ত পাওয়া যাইবে,  সেই স্থানে জুময়া ও আখেরী জোহর পড়া বিধি ।

এই আখেরী জোহর নামাজ দিয়া বর্তমান মুসলিম সমাজ বিভ্রান্তির মধ্যে হা ডুবু খাইতেছে । কোন কোন ওলামায়ে দ্বীন বলিতেছেন — এই নামাজ পড়িবার কোন  প্রয়ােজন নাই , আবার কেহ বা বলিতেছেন — না পড়িবার প্রয়ােজন আছে । এখন এই নামাজ পডিলে আমাদের ক্ষতি হইবে না লাভ হইবে , তাহা আমরা একটু চিন্তা ভাবনা করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারিব । নিম্নের উদাহরণটি পড়িয়া নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন ।

উদাহরণ – মনে করুন এক ব্যক্তি বিদেশে যাইবে একটি মূল্যবান ঘড়ি ক্রয় করিতে । ঘড়ি ক্রেতা জানিত ঘড়িটির মূল্য এক হাজার টাকা ; কিন্তু বিদেশে রওনা হওয়ার পথে অন্য এক ব্যক্তি তাহাকে বলিল ভাই ! আপনি যে ঘড়িটি ক্রয় করিতে যাইতেছেন , ঐ ঘড়িটির মূল্য কিন্তু দুই হাজার টাকা । ঘড়ি ক্রেতা ঘড়ির দুই হাজার । টাকা মূল্য শুনিয়া আরাে এক হাজার টাকা বেশী করিয়া লইল । কেননা বিদেশে তাে কেহ তাহাকে টাকা ধার দিবে না , তাছাড়া পুণরায় দেশে ফিরিয়া আসিয়া টাকা নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নহে এবার ঘড়িক্রেতা বিদেশে গিয়া ঘড়ি ক্রয়ের সময় জানিতে পারিল যে , সত্যিই ঘড়িটির মূল্য দুই হাজার টাকা । এখন বলুন যদি ঘড়িক্রেতা দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা না শুনিয়া টাকা বেশী করিয়া না নিয়া যাইত তবে তাহার ঘড়ি ক্রয় করা হইত কি ?

সুধি পাঠকগণ ! নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন । এই আখেরী জোহর পড়া নিয়া ) একদল আলেম বলিতেছেন ইহা পড়া ওয়াজিব , কেহ বলিতেছেন ইহা সুন্নাত কেহ বা বলিতেছেন ইহা মুস্তাহাব আবার কেহ বা বলিতেছেন পড়ার কোন প্রয়ােজন নাই ।আমরা সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খাইতেছি । এখন আমরা আখেরী জোহর পড়িব কিনা ? তবে যাঁহারা বলিতেছেন আখেরী জোহর পড়িবার কোন  প্রয়ােজন নাই , তাহারা কিন্তু একথা বলেন না যে , ঐ নামাজ পড়িলে কোন গােণাহ  হইবে , কিন্তু যাঁহারা বলিতেছেন যে , আখেরী জোহর পড়া ওয়াজিব , সুন্নাত বা মােস্তাহাব তাহাদের মতে কিন্তু ঐ নামাজ না পড়িলে কঠিন গােণাহগার হইবে এবং জুময়া ছহীহ হইবে না । সুতরাং আখেরী জোহর পড়িলে যখন কোন গোণাহ নাই   সেক্ষেত্রে আখেরী জোহর পড়াই শ্রেয় । ইহাতে দোষ হইবে কিনা পাঠকগণ , চিন্তা করিয়া দেখুন । এখন বলুন সত্যিই যদি কিয়ামাতের দিনে আল্লাহপাকের নিকট আখেরী জোহর ত্যাগকারীরা গােণাহগার বলিয়া প্রমাণিত হয় , সেইদিন কিন্তু কিয়ামাতের ময়দান হইতে ফিরিয়া আসিয়া আর আখেরী জোহর আদায় করিয়া যাওয়া কোনমতেই সম্ভব হইবে না । যেমন বিদেশ হইতে ফিরিয়া  আসিয়া ঘড়ি ক্রেতার পুণরায় টাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নহে।


এছাড়াও আখেরী জোহরের ব্যাপারে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ভিডিওটি দেখতে পারেন।  ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। । 


প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি জুমার নামাজের শেষের রাকাতের রুকু পেলেন না, তিনি জুমার নামাজ কীভাবে পড়বেন? তিনি কি জোহর নামাজ পড়বেন, না কি জুমার নামাজ পড়বেন? কীভাবে নিয়ত করবেন?
উত্তর : জুমার নামাজ সপ্তাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। জুমার নামাজে দুই রাকাত নামাজ এবং দুটি খুতবা রয়েছে। কেউ যদি খুতবা মিস করেন এবং নামাজও দুই রাকাত মিস করেন, তাহলে সেই ব্যক্তির আর জুমার নামাজ নেই। ঐদিন তিনি জোহরের নামাজ পড়বেন। জুমার নামাজ পড়তে হলে ন্যূনতম এক রাকাত নামাজ পেতে হবে। আর রাকাত পাওয়াটি যেহেতু রুকু থেকে সাব্যস্ত হয়, অতএব কারো যদি দ্বিতীয় রাকাতে রুকু ছুটে যায়, তাহলে তিনি হয়তো সামিল হবেন, এরপর তিনি জোহরের পূর্ণাঙ্গ চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন। অথবা যদি একান্তই নামাজ না পান, তাহলে তিনি আলাদা জোহরের নামাজ পড়ে নেবেন। একাকী জুমার নামাজ তিনি পড়তে পারবেন না।


প্রশ্ন: ২৮৬: বিতর নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে বসা যাবে কি ?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইবনে আক্তার ধানমণ্ডি, ঢাকা প্রশ্ন : আরামবাগ এলাকার এক মসজিদের খতীবকে অনেকবার এ কথা বলতে শুনেছি যে, বিতর নামাযের একাধিক পদ্ধতি হাদীসের কিতাবে রয়েছে, তবে হানাফীরা যেভাবে বিতর পড়ে, অর্থাৎ দুই বৈঠক ও এক সালামে তিন রাকাত-এই পদ্ধতি হাদীস শরীফে নেই। তার বক্তব্য হল, বিতর যদি তিন রাকাতই পড়তে হয় তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে বসা যাবে না। অন্যথায় তা মাগরিবের নামাযের সাদৃশ্য হয়ে যাবে। আর হাদীস শরীফে বিতরকে মাগরিবের সাদৃশ্য বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বৈঠক ও এক সালামে কি বিতর পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়? যদি না থাকে তাহলে আমরা কোন ভিত্তিতে এভাবে বিতর নামায আদায় করছি?
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া সালামুন আলা ইবাদিহিল্লা লাযিনাস তাফা, আম্মা বাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়।
নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত।
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।-সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩
সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন, হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১
এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين الأوليين من الوتر অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০
এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।
ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী রাহ. ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা রাহ.-এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯
সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার আরবী পাঠ নিম্নরূপ- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث, وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة. অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯
চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী ৩/২৬ باب كيف صلاة الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في ذلك. والله أعلم আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। حتى صلى ستا ثم أوتر بثلاث وصلى ركعتين -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২
(৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث ويقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى, وفي الثانية قل يا أيها الكفرون, وفي الثالثة قل هو الله أحد. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। -সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১ ইমাম নববী রাহ. ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল। এখানে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি- عن ثابت قال: قال أنس: يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العمال) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ., বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল)

জরুরি জ্ঞাতব্য

বিতর নামাযের ব্যাপারে আজকাল এক ব্যাপক অবহেলা এই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, একে এমন এক নামায মনে করা হয় যার আগে কোন নফল নামায নেই, যেমন মাগরিবের নামায; এর আগে নফল নামায মাসনূন নয়; অথচ বিতরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সবচেয়ে ভাল এই যে, যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে ইশার পর পড়া হয় তবুও উত্তম এই যে, দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب, ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع, أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। -মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদীস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২
মোটকথা, বিতরের আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়-দুই, চার, ছয়, আট-যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও। ৩ নং-এর অধীনে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, যাতে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন-বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায আদায় করতেন। উল্লিখিত হাদীসে ওই নির্দেশনাই এসেছে যে, শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়। তবে বিতর সর্বাবস্থায় তিন রাকাতই।
উক্ত হাদীসের সাথে একথার কোন সম্পর্ক নেই যে, তিন রাকাত এক বৈঠকেই পড়তে হবে, তাহলেই শুধু তা মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে যাবে। তাই তিন রাকাত পড়তে হলে তা এক বৈঠকেই পড়তে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার পদ্ধতি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, তিন রাকাত বিতরের আগে নফল পড়ে নাও। হাদীসের ব্যাখ্যা ছেড়ে নিজের পক্ষ থেকে বিতরের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা বিভ্রানি- ছাড়া আর কিছুই নয়।
শরীয়তে সকল নামাযের মূলকথা এই যে, প্রতি দুই রাকাতে বৈঠক হবে এবং তাশাহহুদ পড়া হবে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে সহীহ মুসলিম ১/১৯৪, হাদীস ৪৯৮-এ একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক ব্যাপক বাণী উদ্ধৃত রয়েছে। তাতে তিনি ইরশাদ করেন- وفي كل ركعتين التحية ‘প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ রয়েছে।’ একই হুকুম একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত রয়েছে। শরীয়তের ব্যাপক শিক্ষা পরিহার করে কোন রেওয়ায়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে একথা বলা যে, তিন রাকাত বিতর পড়লে শুধু এক বৈঠকেই পড়া-এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد -এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা উম্মতকে উক্ত অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপরই লেখাটি সমাপ্ত করছি। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই আগামী কোনো সংখ্যায় হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ.)এর একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করা হবে, যা তাঁর ‘ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম’ কিতাবে প্রকাশিত হয়েছে। هذا, وصلى الله تعالى وسلم على سيدنا ومولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين, وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

প্রশ্ন: ২৮৫: নাপাক স্থানে জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লে হবে কি?

প্রশ্ন
শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব,
আমার ছোট বাচ্চাটি প্রসাব করে ঘর নাপাক করে ফেলে।একবার কাপড় ভিজিয়ে পরিষ্কার করি এবং জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করি। এবং প্রায়ই সে বিছানার চাদর, পাটি বিভিন্ন জায়গায় প্রসাব করার কারণে অনেক সময় ভুলেও যাই যে এই জায়গাটিতে সে পেশাব করেছে। কিন্তু নামাজের সময় জায়নামাজ বিছিয় নামাজ আদায় করি। প্রশ্ন হচ্ছে এরূপ পাকা ফ্লোরে শুকিয়ে যাওয়া জায়গায় জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়লে কি নামাজ আদায় হবে?
সাইফ
ঢাকা, বাংলাদেশ
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
 নাপাক স্থানের উপর কাপড় বিছিয়ে নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে। কোন সমস্যা নেই। সে হিসেবে জায়নামায বিছিয়ে নামায পড়লেও হয়ে যাবে।
لو بسط الثوب الطاهر على الأرض النجسة وصلى عليه جاز (البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة-1/268)
তথ্যসূত্র
আল বাহরুর রায়েক-১/২৬৮
ফাতওয়া শামী-১/৬২৬
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

প্রশ্ন: ২৮৪ : কোন কোন অবস্থায় দরূদ পড়া জায়েজ নয়?

প্রশ্ন
সম্মানিত মাওলানা লুৎফর রহমান ফরায়োজী সাহেব,
আমার নাম মোহাম্মদ হোসাইন। আমি বর্তমানে মালোশিয়াতে পড়াশোনা করছি। আমার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানাতে। আমি আপনার মাহফিলে উপস্থিত ছিলাম যেটি চৌধুরীহাট বাজার সংলগ্ন চনা গাজী বাড়ি মসজিদে হয়ে ছিল।
আমার প্রশ্ন হল আল্লাহর রাসূলের নাম শুনার পরেও কোন কোন জায়গায় আল্লাহর রাসূলের উপর দরুদ শরীফ পড়া যাবে না।
দয়া করে মাসয়ালাটি জানিয়ে বাধিত করলে উপকার হতো।
জাঝাকাল্লাহ হয়ের।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কয়েকটি অবস্থায় রাসূল সাঃ এর নাম শুনেও দরূদ পড়া যাবে না। যথা-
১-সহবাসের সময়।
২-পেশাব বা পায়খানার সময়।
৩- হাঁচির সময়।
৪- প্রাণী জবাই করার সময়।
৫-কুরআন তিলাওয়াতের মাঝে রাসূল সাঃ এর নাম এলেও দরূদ পড়বে না।
প্রথমোক্ত ৩ অবস্থায় দরূদ পড়া নিষিদ্ধ কারণ এতে করে দরূদের অপমান হয়। আর ৪র্থ অবস্থায় দরূদ পড়লে শিরকের সম্ভাবনা থাকায় দরূদ পড়া নিষিদ্ধ।
আর ৫ম অবস্থায় পড়া লাগবে না কারণ এতে করে কুরআন তিলাওয়াতের অপমান হয়। এমন সব অপমানজক অবস্থায় দরূদ পড়া নিষিদ্ধ। আরো যেসব স্থানে দরূদ পড়লে দরূদের অপমান হয়, বা শিরকের সম্ভাবনা থাকে সেসব স্থানে দরূদ পড়া নিষিদ্ধ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...