প্রশ্ন: ২৮৭ : আখেরী জোহর পড়তে হবে কেন ?

জুময়া শরীয়তের একটি প্রধান নিদর্শন । উহা ছহীহভাবে আদায় হওয়ার জন্য ফকিহগণ নিৰ্দ্ধারিত কতিপয় শর্ত নির্দিষ্ট করিয়াছেন । উক্ত শর্তসমূহ যেস্থানে সম্পূর্ণরূপে পাওয়া যাইবে তথায় জুময়াও ছহীহভাবে আদায় হইবে এবং উক্ত দিবসের জোহরের  ফরজের দায়িত্ব হইতে নিষ্কৃতি পাইবে । তবে যে স্থানে জুময়ার শর্তসমূহের মধ্যে কেন একটিও শর্ত অনুপস্থিত থাকে , সেথায় জুময়ার নামাজ পড়া ফরজ হইবে না বরং জোহরের ফরজ নামাজ পড়িলেই চলিবে । আর যে স্থানে কিছু সংখ্যক শর্ত পাওয়া যাইবে,  সেই স্থানে জুময়া ও আখেরী জোহর পড়া বিধি ।

এই আখেরী জোহর নামাজ দিয়া বর্তমান মুসলিম সমাজ বিভ্রান্তির মধ্যে হা ডুবু খাইতেছে । কোন কোন ওলামায়ে দ্বীন বলিতেছেন — এই নামাজ পড়িবার কোন  প্রয়ােজন নাই , আবার কেহ বা বলিতেছেন — না পড়িবার প্রয়ােজন আছে । এখন এই নামাজ পডিলে আমাদের ক্ষতি হইবে না লাভ হইবে , তাহা আমরা একটু চিন্তা ভাবনা করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পারিব । নিম্নের উদাহরণটি পড়িয়া নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন ।

উদাহরণ – মনে করুন এক ব্যক্তি বিদেশে যাইবে একটি মূল্যবান ঘড়ি ক্রয় করিতে । ঘড়ি ক্রেতা জানিত ঘড়িটির মূল্য এক হাজার টাকা ; কিন্তু বিদেশে রওনা হওয়ার পথে অন্য এক ব্যক্তি তাহাকে বলিল ভাই ! আপনি যে ঘড়িটি ক্রয় করিতে যাইতেছেন , ঐ ঘড়িটির মূল্য কিন্তু দুই হাজার টাকা । ঘড়ি ক্রেতা ঘড়ির দুই হাজার । টাকা মূল্য শুনিয়া আরাে এক হাজার টাকা বেশী করিয়া লইল । কেননা বিদেশে তাে কেহ তাহাকে টাকা ধার দিবে না , তাছাড়া পুণরায় দেশে ফিরিয়া আসিয়া টাকা নিয়ে যাওয়াও সম্ভব নহে এবার ঘড়িক্রেতা বিদেশে গিয়া ঘড়ি ক্রয়ের সময় জানিতে পারিল যে , সত্যিই ঘড়িটির মূল্য দুই হাজার টাকা । এখন বলুন যদি ঘড়িক্রেতা দ্বিতীয় ব্যক্তির কথা না শুনিয়া টাকা বেশী করিয়া না নিয়া যাইত তবে তাহার ঘড়ি ক্রয় করা হইত কি ?

সুধি পাঠকগণ ! নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন । এই আখেরী জোহর পড়া নিয়া ) একদল আলেম বলিতেছেন ইহা পড়া ওয়াজিব , কেহ বলিতেছেন ইহা সুন্নাত কেহ বা বলিতেছেন ইহা মুস্তাহাব আবার কেহ বা বলিতেছেন পড়ার কোন প্রয়ােজন নাই ।আমরা সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে হাবুডুবু খাইতেছি । এখন আমরা আখেরী জোহর পড়িব কিনা ? তবে যাঁহারা বলিতেছেন আখেরী জোহর পড়িবার কোন  প্রয়ােজন নাই , তাহারা কিন্তু একথা বলেন না যে , ঐ নামাজ পড়িলে কোন গােণাহ  হইবে , কিন্তু যাঁহারা বলিতেছেন যে , আখেরী জোহর পড়া ওয়াজিব , সুন্নাত বা মােস্তাহাব তাহাদের মতে কিন্তু ঐ নামাজ না পড়িলে কঠিন গােণাহগার হইবে এবং জুময়া ছহীহ হইবে না । সুতরাং আখেরী জোহর পড়িলে যখন কোন গোণাহ নাই   সেক্ষেত্রে আখেরী জোহর পড়াই শ্রেয় । ইহাতে দোষ হইবে কিনা পাঠকগণ , চিন্তা করিয়া দেখুন । এখন বলুন সত্যিই যদি কিয়ামাতের দিনে আল্লাহপাকের নিকট আখেরী জোহর ত্যাগকারীরা গােণাহগার বলিয়া প্রমাণিত হয় , সেইদিন কিন্তু কিয়ামাতের ময়দান হইতে ফিরিয়া আসিয়া আর আখেরী জোহর আদায় করিয়া যাওয়া কোনমতেই সম্ভব হইবে না । যেমন বিদেশ হইতে ফিরিয়া  আসিয়া ঘড়ি ক্রেতার পুণরায় টাকা নিয়ে যাওয়া সম্ভব নহে।


এছাড়াও আখেরী জোহরের ব্যাপারে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ভিডিওটি দেখতে পারেন।  ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন। । 


প্রশ্ন : কোনো ব্যক্তি জুমার নামাজের শেষের রাকাতের রুকু পেলেন না, তিনি জুমার নামাজ কীভাবে পড়বেন? তিনি কি জোহর নামাজ পড়বেন, না কি জুমার নামাজ পড়বেন? কীভাবে নিয়ত করবেন?
উত্তর : জুমার নামাজ সপ্তাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নামাজ। জুমার নামাজে দুই রাকাত নামাজ এবং দুটি খুতবা রয়েছে। কেউ যদি খুতবা মিস করেন এবং নামাজও দুই রাকাত মিস করেন, তাহলে সেই ব্যক্তির আর জুমার নামাজ নেই। ঐদিন তিনি জোহরের নামাজ পড়বেন। জুমার নামাজ পড়তে হলে ন্যূনতম এক রাকাত নামাজ পেতে হবে। আর রাকাত পাওয়াটি যেহেতু রুকু থেকে সাব্যস্ত হয়, অতএব কারো যদি দ্বিতীয় রাকাতে রুকু ছুটে যায়, তাহলে তিনি হয়তো সামিল হবেন, এরপর তিনি জোহরের পূর্ণাঙ্গ চার রাকাত নামাজ আদায় করবেন। অথবা যদি একান্তই নামাজ না পান, তাহলে তিনি আলাদা জোহরের নামাজ পড়ে নেবেন। একাকী জুমার নামাজ তিনি পড়তে পারবেন না।


No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...