প্রশ্ন: ২৩৪ : তালাক সংঘটিত হওয়ার জায়েজ কারণ সমূহ।

তালাক শব্দের অর্থ 'বিচ্ছিন্ন', ত্যাগ করা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্মে আনুষ্ঠানিক বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। স্বামী সর্বাবস্থায় তালাক দিতে পারেন। স্ত্রী শুধুমাত্র তখনই তালাক দিতে পারবেন, যদি বিয়ের সময় এর লিখিত অনুমতি দেওয়া হয়।পরিভাষায় তালাক অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।
জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়েপড়ে তিক্ত,বিষক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চূড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন বিবাহ নামকছে, সেখানে তালাক ঘোষণার কোন পদ্ধতি বলা হয়নি। মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- "কোন পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসলিম আইনে অনুমোদিত যে কোন পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন" অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরীয়ত প্রবর্তিত তালাক সংক্রান্ত বিধানাবলি ভালভাবে জানা ও বুঝা খুবই জরুরী। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরী।

তালাকের উদ্দেশ্য[সম্পাদনা]

তালাক প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়,জুলুম ও নিদারুন কষ্ট,জ্বালাতন ও উৎপীড়ন ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা।

তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি[সম্পাদনা]

তালাক শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবী তালাক সম্পর্কে বলেছেন তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াভহতা উপলদ্ধি করা যায়।তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা, তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে।

তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয়[সম্পাদনা]

দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে বিবাধ-বিরোধ মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ধরনের বিরোধ দেখা দিলে তাদের জন্য নসীহত রয়েছে যে আর তাহলে প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে ধৈর্য্য ও সহ্য শক্তি রক্ষা করে অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে তা ঘৃনা হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবন রক্ষার সার্থে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। এর পরেও যদি দাম্পত্য জীবন সংরক্ষন করতে ব্যার্থ হয় তবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিরোধ মনোমালিন্য হয়েছে বলে ভয় কর তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবারের থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তারা দু'জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাদের সেজন্য তওফীক দান করবেন এবং তার সংশোধন করে স্বমী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে মিল মিশ করার চেষ্টা করবেন। আর যদি মিলমিশ অসম্ভব বলে মনে করেন তবে তাদের মধ্যেবিচ্ছেদের ব্যাবস্থা করবেন।
মুসলিম পারিবারিক আইনে বিরোধ মিমাংসার জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপোস করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান বা সালিসী পরিষদের উপর। তিনি উভয় পক্ষকে নটিশের মাধ্যমে উপস্তিত করার জন্য বলবেন। কোন পক্ষ যদি হাজির না হয় তবে তাকে হাজির করার ক্ষমতা তার নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে আপোস মীমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া চেয়ারম্যানের আর কোন দ্বায়িত্ব নেই। তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই।

প্রকার[সম্পাদনা]

ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- (১)তালাকে সুন্নাত (২) তালাকে বাদী (৩)তালাকে তাফবীজ (৪)তালাকে মোবারত ও (৫)খোলা তালাক।
কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ- (১) তালাকে রেজী ও (২)তালাকে বাইন
তালাকে বাইন আবার দুই প্রকারঃ- (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির।
মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ- (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব
(ক)তালাকে হাসানঃ- তালাকে হাসানা তাকে বলে,যে তুহুরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সহবাস,যায়েজ অবস্থা কিংবা গর্ভাবস্থা নেই। উলালেখিত অবস্থা সমুহ নেই এমন তুহুর অবস্থায় শুধু মাত্র এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পূর্ণ হতে দেওয়া। অর্থাৎ তিন তুহুর অতিক্রম করলে তালাকটি কার্যকর হয়ে যায়। এমতাবস্থায় স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্য যে কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে কিংবা তালাক প্রপ্তা স্ত্রী ইচ্ছা করলে এবং স্বামী চাইলে তারা পুনঃ বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। এই ধরনের তালককে বলা হয় তালাকে আহসান।
"(খ) তালাকে হাসানঃ-" হাসান তালাক হলো প্রত্যেক তুহুরে একটি করে তালাক দিবে। এই নিয়মে তিন তুহুরে তিন তালাক দেওয়ার নিয়ম কে তালাকে হাসান বলে। তালাকে হাসান দিলে অর্থাৎ তিন তুহুরে তিন তালেক দিলে সেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। সে তার স্বামীর নিকট রেজাত বা পূন বিবাহে আসতে পারবেনা। তবে স্ত্রীর যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী যদি কোন দৈবাত কারণে তালাক দেয় অধবা মৃত্যু বরণ করে তবে ইচ্ছা করলে পূর্বের স্বামীর সহিত বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হতে পারবে।
"(গ) তালােক েবদীঃ-" বিদায়াত তালাক হলো কোন ব্যক্তি একসাথে তিন তালাক দিয়ে দেওয়া বা হায়েয অবস্থায় তিন তালাক দেওয়া অথবা যে তুহুরে সহবাস করেছে সেই তুহুরে তিন তালাক দেওয়া। উল্লেখিত যে কোন প্রকারে তালাক দেওয়া হউক না কেন তালাক দাতা গুনাহগার হবে গর্ভাবস্থা প্রকাশ পাইনি এমন সন্দেহ জনক অবস্থায় তিন তালাক প্রদান করাও বিদায়াত বা হারাম। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ তালাক অনুষ্টিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অথবা শরীয়ত প্রবর্তিত পদ্ধতি কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছেনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে চেয়ারম্যান,মেম্বার বা কোন গণ্য মান্য ব্যক্তি তালাকের নোটিশ সহি বা স্বাক্ষর করলেই তালাক হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা তালাকের ঘোষণা দেন না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় তালাকের নোটিশে লিখা হয় এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক ও বাইন তালাক। এমন ধরনের তালাক প্রকাশ্য তালাকে বিদয়ীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং যারা এধরনের তালাক অনুষ্ঠিত করিয়া থাকেন তারা সবাই গুনাহ্গার হবেন।
ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ-

ইদ্দত কাল[সম্পাদনা]

ইসলামে তালাকের পর একজন মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হয়।সেই (ইদ্দত কালীন) সময়ের মধ্যে একজন মুসলীম নারীর পুন:বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুসলীম নারীর জন্য ইদ্দত দুই প্রকার বা ভাগে ভাগ করা সম্ভব।
১)তালাকের পর ২)স্বামীর মৃত্যুর পর
প্রথমত তালাকের পর, একজন মুসলীম নারীকে তার তালাকের পর ৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা করতে হবে ।এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দত কালীন সময়।

তালাকের পর পুনর্বিবাহ[সম্পাদনা]

১৯৬১ সালের পূর্বে বাংলাদেশে নিয়ম ছিল যে, তালাকের পর স্বামী ও স্ত্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন স্বামী তালাক প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ দ্বারা উক্ত শর্তটি রহিত করে দেওয়া হয়েছে । অর্থাৎ তালাকের পর স্বামী ও স্ত্রী যদি পুনরায় একত্রে থাকতে চায় তবে তাদের নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে না।

তালাকের প্রবণতা[সম্পাদনা]

২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে দেখা যায় বাংলাদেশে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মধ্যেই তালাক প্রবণতা বেশি।[১] কারন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বর্তমানে নারী মুখবুজে সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করেন না। প্রতিবাদ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1.  "পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি তালাক দিচ্ছেন"। ২ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০০৯

প্রশ্ন: ২৩৩ : একই বৈঠকে একসাথে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক পতিত হবে? নাকি এক তালাক হবে?

প্রশ্ন: একই বৈঠকে একসাথে তিন তালাক দিলে কি তিন তালাক পতিত হবে? নাকি এক তালাক হবে?

উত্তর:

সুনান আবু দাউদ :: তালাক অধ্যায় ১৩
হাদিস ২১৯৭
হুমায়দ ইবন মাস‘আদা--মুজাহিদ (র) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবন আববাস (র) - এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে যে, সে তার স্ত্রীকে তিন তালাক প্রদান করেছে। তখন তিনি চুপ করে থাকেন, যাতে আমার মনে হয়, তিনি ( ইবন অববাস) তাকে ঐ স্ত্রী পুনরায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিবেন। এরপর তিনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর বলেন, তোমাদের কেউ যেন এখান থেকে গমণপূরবক আহ্মকের মত কাজ না করে এবং বলে, হে ইবন আববাস! আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ ‘‘ আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ কে ভয় করে, তার জন্য পরিত্রাণের কোন পথ দেখছি না। তুমি তোমার রবের নাফরমানী করেছ এবং তোমার স্ত্রীকে তোমার নিকট হতে পৃথক করে দিয়েছ। অথচ আল্লাহ্ তা‘আলার নির্দেশঃ ‘‘ হে নবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে, তখন তাদের ইদ্দতের মধ্যে তাদের তালাক দিবে।’’
আবূ দাঊদ , শু‘বা, আইউব, ইবন জুরায়জ ও আ‘মাশ প্রমুখ রাবীগণ - সকলেই ইবন আববাস (রা) হতে উক্ত হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি এটাকে তিন তালাক হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (র) বলেন, হাম্মাদ ইবন যায়িদ --ইবন আববাস (রা) হতে বর্ণনা করেন যে, যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে একই সাথে তিন তালাক প্রদান করবে তাতে এক তালাকই হবে। Grade: Sahih (Al-Albani)

=========================

এক সাথে তিন তালাক দিলে তা তিন তালাক হবে নাকি এক তালাক হিসেবে গণ্য হবে, এ নিয়ে মতভেদ আছে। বেশীর ভাগ আলেমের মতে এক সাথে তিন তালাক দিলে তা তিন তালাক হিসেবেই কার্যকর হবে, তবে, কোনো কোনো আলেমের মতে এক সাথে তিন তালাক দিলে তা এক তালাক হিসেবেই গন্য হবে, কেননা, এক তুহুরে একটির বেশী তালাক দেওয়া যায়না।  তাদের মতে কুরআনে বলা হয়েছে, তালাক হলো দুইবার , এরপর হয় রাখবে না হয় বিদায় করে দিবে। আর এই দুই তালাকও দুই তুহুরে দিতে হবে। 

==========================





প্রশ্ন: ২৩২ : নারীদের সাবধানতার জন্য হাদীস।

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [মহিলাদেরকে সম্বোধন করে] বললেন,
‘‘হে মহিলা সকল! তোমরা সাদকাহ-খয়রাত করতে থাক ও অধিকমাত্রায় ইস্তিগফার কর। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীরূপে দেখলাম।’’ একজন মহিলা নিবেদন করল, ‘আমাদের অধিকাংশ জাহান্নামী হওয়ার কারণ কি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা অভিশাপ বেশি কর এবং নিজ স্বামীর অকৃতজ্ঞতা কর। বুদ্ধি ও ধর্মে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিচক্ষণ ব্যক্তির উপর তোমাদের চাইতে আর কাউকে বেশি প্রভাব খাটাতে দেখিনি।’’ মহিলাটি আবার নিবেদন করল, ‘বুদ্ধি ও ধর্মের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দু’জন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্য সমতুল্য। আর [প্রসবোত্তর খুন ও মাসিক আসার] দিনগুলিতে মহিলা নামায পড়া বন্ধ রাখে।’’ (মুসলিম) [1]
[1] সহীহুল বুখারী ৩০৪, ১৪৬২, মুসলিম ৭৯, ৮০, নাসায়ী ১৫৭৬, ১৫৭৯, আবূ দাউদ ৪৬৭৯, ইবনু মাজাহ ১২৮৮, ৪০০৩, আহমাদ ৫৩২১, ১০৯২২, ১০৯৮৮, ১১১১৫ হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

ইবনু ‘আববাস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়। (আমি দেখি), তার অধিবাসীদের বেশির ভাগই নারীজাতি; (কারণ) তারা কুফরী করে। জিজ্ঞেস করা হল, ‘তারা কি আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে?’ তিনি বললেনঃ ‘তারা স্বামীর অবাধ্য হয় এবং অকৃতজ্ঞ হয়।’ তুমি যদি দীর্ঘদিন তাদের কারো প্রতি ইহসান করতে থাক, অতঃপর সে তোমার সামান্য অবহেলা দেখতে পেলেই বলে ফেলে, ‘আমি কক্ষণো তোমার নিকট হতে ভালো ব্যবহার পাইনি।’
(বুখারি-৪৩১,৭৪৮,১০৫২,৩২০২,৫১৯৭; মুসলিম ৮/১ হাঃ ৮৮৪, আহমাদ ৩০৬৪) ( প্রকাশনীঃ ২৮,ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৮)

প্রশ্ন: ২৩১ : নামাজে মনযোগ রাখার উপায়।


হাশরের ময়দানে একটি সিজদা করার আদেশ করা হবে। যারা নামাজ পড়তো তারা সিজদা করতে সক্ষম হবে, এবং যারা নামাজ পড়তো না তারা সিজদা করতে পারবেনা। মনে করবেন, আল্লাহর আদেশে হাশরের ময়দানে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন। হাশরের ময়দানের একপাশে জাহান্নাম আছে, একপাশে জান্নাত আছে। একটু পরেই হিসাব নিকাশ হবে। এই কথাগুলো অনুভবে রাখলে ইনশাআল্লাহ নামাজে মনযোগ থাকবে।

এ ছাড়াও :

(১) নামাজে যা কিছু পড়ছেন তার বাংলা অর্থ শিখে নেবেন। আরবীতে পড়ার সময় বাংলা অর্থের দিকে খেয়াল করবেন।

(২) মনে করবেন এটাই আপনার শেষ নামাজ ।

(৩) খেয়াল রাখবেন আপনি আল্লাহর সামনে আছেন এবং আল্লাহ আপনাকে দেখছেন। আপনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা দিচ্ছেন। আল্লাহর সামনে দাড়িয়ে আছেন।

(৪) নিজের কবরের কথা খেয়াল করবেন।

(৫) নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করবেন।

প্রশ্ন: ২৩০ : ইসলামে ছবির বিধান ।

৩৪ নং সুরা সাবা :

﴿يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ ۚ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا ۚ وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ﴾
১৩) তারা তার জন্য তৈরি করতো যা কিছু সে চাইতো, উঁচু উঁচু ইমারত, ছবি, ২০ বড় বড় পুকুর সদৃশ থালা এবং অনড় বৃহদাকার ডেগসমূহ৷২১ হে দাউদের পরিবার! কাজ করো কৃতজ্ঞতার পদ্ধতিতে৷ আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ৷২২
২০. মূলে(তামাসিল) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে এটি (তিমসাল) শব্দের বহু বচন । আল্লাহর সৃষ্ট জিনিসের মতো করে তৈরি করা প্রত্যেকটি জিনিসকে আরবীতে বলে ।এসব জিনিস মানুষ, পশু, গাছ, ফুল, নদী বা অন্য যে কোন নিষ্প্রাণ জিনিসও হতে পারে ।
"এমন প্রত্যেকটি কৃত্রিম জিনিসকে তিমসাল বলা হয় যা আল্লাহর তৈরি করা জিনিসের মতো করে তৈরি করা হয়েছে" ।

"এমন প্রত্যেকটি ছবিকে তিমসাল বলা হয়, যা অন্য কোন জিনিসের আকৃতি অনুযায়ী তেরি করা হয়েছে, তা সপ্রাণ ও নিষ্প্রাণ যাই হোক না কেন" । (তাফসীরে কাশশাফ)
এ কারণে কুরআন মজিদের এ বর্ণনা থেকে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য যে ছবি তেরি করা হতো তা মানুষের ও প্রাণীর ছবি অথবা তাদের ভাস্কর মূর্তি হওয়াটা আপরিহার্য ছিল না । হতে পারে হযরত সুলাইমান (আ) নিজের ইমারতগুলো যেসব ফুল, পাতা, প্রাকৃতিক দৃশ্য ও কারুকাজে শোভিত করেছিলেন সেগুলোকেই তামাসীল বলা হয়েছে ।
হযরত সুলাইমান (আ) ফেরেশতা ও নবীদের ছবি অংকন করিয়েছিলেন, কোন কোন মুফাসসিরের এ ধরনের বক্তব্যই বিভ্রান্তির উদগাতা। বনী ইসরাঈলের পৌরাণিক বর্ণনাবলী থেকে তারা একথা সংগ্রহ করেন এবং তারপর এর ব্যাখ্যা এভাবে করেন যে, পূর্ববর্তী শরীয়াতগুলোতে এ ধরনের ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল না। কিন্তু কোন প্রকার অনুসন্ধান না করে এ বর্ণনা গুলো উদ্ধৃত করার সময় এ মনীষীবৃন্দ একথা চিন্তা করেননি যে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম যে মূসার শরীয়াতের অনুসারী ছিলেন সেখানে ও শরীয়াতে মুহাম্মাদীর (সা) মতো মানুষের ও প্রাণীর ছবি ও মূর্তি নির্মাণ একই পর্যায়ে হারাম ছিল। আর তারা একথাও ভুলে যান যে, বনী ইসরাঈলের একটি দলের তার সাথে শত্রুতা ছিল এবং এরি বশবর্তী হয়ে তারা শিরক, মূর্তি পূজা ও ব্যভিচারের নিকৃষ্টতম অপবাদ তার প্রতি আরোপ করে। তাই তাদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে এ মহিমান্বিত পয়গম্বর সম্পর্কে এমন কোন কথা কোন ক্রমেই মেনে নেয়া উচিত নয় যা আল্লাহ প্রেরিত কোন শরীয়াতের বিরুদ্ধে চলে যায়। একথা সবাই জানেন, হযরত মূসা আলাইহিমুস সালামের পরে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম পর্যন্ত ইসরাঈলে যত নবীই এসেছেন তারা সবাই ছিলেন তাওরাতের অনুসারী। তাদের একজন ও এমন কোন শরীয়াত আনেননি যা তাওরাতের আইন রদ করে দেয়। এখন তাওরাতের প্রতি দৃষ্টি দিলে দেখা যাবে সেখানে মানুষ ও পশুর ছবি ও মূর্তি নির্মানকে বারবার একেবারেই হারাম বলে ঘোষণা করা হচ্ছে-
"তুমি আপনার নিমিত্তে খোদিত প্রতিমা নির্মাণ করিও না, উপরিস্থ স্বর্গে, নীচস্থ পৃথিবীতে ও পৃথিবীর নীচস্থ জলমধ্যে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি নির্মাণ করিও না। ‍‌(যাত্রা পুস্তক ২০: ৪)
"তোমরা আপনাদের জন্য অবস্তু প্রতিমা নির্মান করিও না, না ক্ষোদিত প্রতিমা কিংবা স্তুম্ভ স্থাপন করিও না, ও তাহার কাছে প্রণিপাত করবার নিমিত্তে তোমাদের দেশে কোন ক্ষোদিত প্রস্তুর রাখিও না"। (লেবীয় পুস্তক ২৬: ১)
"পাছে তোমরা ভ্রষ্ট হইয়া আপনাদের জন্য কোন আকারের মূর্তিতে ক্ষোদিত প্রতিমা নির্মান কর, পাছে পুরুষের বা স্ত্রীর প্রতিকৃতি, পৃথিবীস্থ কোন পশুর প্রতিকৃতি, আকাশে উড্ডীয়মান কোন পক্ষীর প্রতিকৃতি, ভূচর কোন সরীসৃপের প্রতিকৃতি, অথবা ভূমির নীচস্থ জলচর কোন জন্তুর প্রতিকৃতি নির্মান কর"। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪: ১৬-১৮)
"যে ব্যক্তি কোন ক্ষোদিত কিংবা ছাদে ঢালা প্রতিমা, সদাপ্রভুর ঘৃণিত বস্তু, শিল্পকরের হস্তনির্মিত বস্তু নির্মান করিয়া গোপনে স্থাপন করে, সে শাপগ্রস্ত"। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৭ : ১৫)
এ পরিস্কার ও সুষ্পষ্ট বিধানের পর কেমন করে একথা মেনে নেয়া যেতে পারে যে, হযরত সুলাইমান (আ) জিনদের সাহায্যে নবী ও ফেরেশতাদের ছবি বা তাদের প্রতিমা তৈরি করার কাজ করে থাকবেন। আর যেসব ইহুদী হযরত সুলাইমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দিতো যে, তিনি নিজের মুশরিকা স্ত্রীদের প্রেমে বিভোর হয়ে মূর্তি পূজা করতে শুরু করেছিলেন, তাদের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে একথা কেমন করে মেনে নেয়া যায়। (দেখুন বাইবেলের রাজাবলী -১, ১১অধ্যায়)
তবুও মুফাসসিরগণ বনী ইসরাঈলের এ বর্ণনা উদ্ধৃত করার সাথে সাথে একথাও সুষ্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, মুহাম্মাদ (সা) মের শরীয়াতে এটি হারাম। তাই এখন হযরত সুলাইমানের (আ) অনুসরণ করে ছবি ও ভাস্কর মূর্তি নির্মাণ করা কারো জন্য বৈধ নয়। কিন্তু বর্তমান যুগের কিছু লোক পাশ্চাত্যবাসীদের অনুকরণে চিত্রাংকন ও মূর্তি নির্মাণকে হালাল করতে চান। তারা কুরআন মজীদের এ আয়াতকে নিজেদের জন্য প্রমাণ হিসেবে গণ্য করছেন। তারা বলেন, একজন নবী যখন এ কাজ করেছেন এবং আল্লাহ নিজেই যখন তার কিতাবে একথা আলোচনা করেছেন এবং এর ওপর তার কোন প্রকার অপছন্দনীয়তার কথা প্রকাশ করেননি তখন অবশ্যই তা হালাল হওয়া উচিত।
পাশ্চাত্য সভ্যতার এসব অন্ধ অনুসারীর এ যুক্তি দুটি কারণে ভুল। প্রথমত কুরআনে এই যে, তামাসীল শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এ থেকে সুষ্পষ্টভাবে মানুষ ও পশুর ছবির অর্থ প্রকাশ হয় না। বরং এ থেকে নিষ্প্রাণ জিনিসের ছবিও বুঝা যায়। তাই নিছক এ শব্দটির ওপর ভিত্তি করে কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষের ও পশুর ছবি হালাল এ বিধান দেয়া যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত বিপুল সংখ্যক শক্তিশালী সনদযুক্ত মুতাওয়াতির হাদীস থেকে একথা প্রমাণিত ও সংরক্ষণকে অকাট্যভাবে ও চুড়ান্তভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন। এ প্রসংগে নবী করীম (সা) থেকে যেসব উক্তি প্রমাণিত হয়েছে এবং সাহাবীগণ থেকে যেসব বাণী ও কর্ম উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলো আমি এখানে উল্লেখ করছি।
(.........................................)
"উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। হযরত উম্মে হাবীবা (রা) ও হযরত উম্মে সালামাহ (রা) আবিসিনিয়ায় একটি গীর্জা দেখেছিলেন, তাতে ছবি ছিল। তাঁরা নবী করীম (সা) কে একথা বলেন। নবী (সা) তাদের অবস্থা এমন ছিল যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সৎলোকের জন্ম হতো, তার মৃত্যুর পর তার কবরের ওপর তারা একটি উপাসনালয় তৈরি করতো এবং তার মধ্যে এ ছবিগুলো তৈরি করতো। কিয়ামতের দিন তারা আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি হিসেবে গণ্য হবে"।
(...........................)
"আবু হুজাইফা বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) চিত্রকর্মের প্রতি লানত বর্ষণ করেছেন। (বুখারীঃ ব্যবসা-বাণিজ্য অধ্যায়, তালাক অধ্যায়, পোশাক অধ্যায়)
(...........................................)
"আবু যুরআহ বলেন, একবার আমি হযরত আবু হুরাইরার (রা) সাথে মদীনার একটি গৃহে প্রবেশ করলাম। দেখলাম, গৃহের ওপর দিকে একজন চিত্রকর চিত্র নির্মাণ করছে। এ দৃশ্য দেখে হযরত আবু হুরাইরাহ (রা) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছি যে, মহান আল্লাহ বলেন, তার চেয়ে বড় জালেম তার কে হবে যে আমার সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে! তারা একটি শস্যদানা অথবা একটি পিঁপড়ে বানিয়ে দেখাক তো"। (বুখারী-পোশাক অধ্যায়, মুসনাদে আহমাদ ও মুসলিমের বর্ণনায় পরিষ্কার হয়েছে, এটি ছিল মাওয়ানের গৃহ)
(....................................................)
আবু মুহাম্মাদ হাযালী হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ (সা) একটি জানাযায় শরীক হয়েছিলেন। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছে যে মদীনায় গিয়ে সকল মূর্তি ভেংগে ফেলবে। সকল কবর ভূমির সমান করে দেবে এবং সকল ছবি নিশ্চিহ্ন করে দেবে৷ এক ব্যক্তি বললো, আমি এ জন্য প্রস্তুত। কাজেই সে গেলো কিন্তু মদীনাবাসীদের ভয়ে এ কাজ না করেই ফিরে এলো। তখন হযরত আলী (রা) নিবেদন করলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি যাই৷ নবী করীম (সা) বললেন, ঠিক আছে তুমি যাও। হযরত আলী (রা) গেলেন এবং ফিরে এসে বললেন, আমি কোন মূর্তি না ভেংগে কোন কবর ভূমির সমান না করে এবং কোন ছবি নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়িনি। একথায় নবী করীম (সা) বললেন, এখন যদি কোন ব্যক্তি এ জাতীয় কোন জিনিস তৈরি করে তাহলে সে মুহাম্মাদের (সা) ওপর যে শিক্ষা অবতীর্ণ হয়েছে তার সাথে কুফরী করলো। (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম-জানাযাহ অধ্যায় এবং নাসাঈ, জানাযাহ অধ্যায়েও এ বিষয়বস্তু সম্বলিত একটি হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে)।
--------------------------------------
"ইবনে আব্বাস (রা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, ----আর যে ব্যাক্তি ছবি অংকন করলো তাকে শাস্তি দেয়া হবে এবং তাকে বাধ্য করা হবে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করার জন্য। কিন্তু সে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। (বুখারী, তাফসীর অধ্যায় ; তিরমিযী, পোশাক অধ্যায় ; নাসাঈ সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)
----------------------------------
"সাঈদ ইবনে আবুল হাসান বলেন, আমি ইবনে আব্বাসের (রা) কাছে বসে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাক্তি এলো এবং সে বললো, হে আবু আব্বাস! আমি এমন এক ব্যাক্তি যে নিজেই হাতে রোজদার করে এবং এ ছবি তৈরি করেই আমি রোজগার করি। ইবনে আব্বাস জবাব দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যা বলতে শুনেছি তোমাকেও তাই বলবো। আমি নবী করীম (সা) থেকে একথা শুনেছি যে, যে ব্যাক্তি ছবি তৈরি করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন এবং যতক্ষন সে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার না করবে ততক্ষন তাকে রেহাই দেবেন না । আর সে কখনো তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করতে পারবে না। একথা শুনে সে ব্যাক্তি বড়ই উত্তেজিত হয়ে উঠলো এবং তার চেহারা হলুদ হয়ে গেলো। এ অবস্থা দেখে ইবনে আব্বাস (রা) বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! যদি তোমার ছবি আঁকতেই হয়, তাহলে এই গাছের ছবি আঁকো অথবা এমন কোন জিনিসের ছবি আঁকো যার মধ্যে প্রাণ নেই"। (বুখারী ব্যবসায় অধ্যায় ; মুসলিম, পোশাক অধ্যায় ; নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)
---------------------------------------
"আবুদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, নবী (সা) বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছ চিত্রকরেরা সবচেয়ে কঠিন শাস্তি পাবে"। (বুখারী, পোশাক অধ্যায়; মুসলিম, পোশাক অধ্যায়; নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায় এবং মুসনাদে আহমাদ)
(…………………..)
আবুদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সা) বলেন, "যারা এ ছবি আঁকে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, যা কিছু তোমরা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো"। (বুখারী পোশাক অধ্যায়, মুসলিম পোশাক অধ্যায়, নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায় মুসনাদে আহমাদ )
(.......................................................)
হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি একটি বালিশ কেনেন। তার গায়ে ছবি আঁকা ছিল। তারপর নবী (সা) এলেন। তিনি দরোজায়ই দাঁড়িয়ে রইলেন। ভিতরে প্রবেশ করলেন না। আমি বললাম, আমি এমন প্রত্যেকটি গোনাহ থেকে তাওবা করছি যা আমি করেছি। নবী করী (সা) বললেন, এ বালিশটি কেন৷ বললাম, আপনি এখানে আসবেন এবং এর গায়ে হেলান দেবেন এ জন্য একটা এখানে রাখা হয়েছে। বললেন, এই ছবি অংকনকারীদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, যা কিছু তোমরা তৈরি করেছো তাকে জীবিত করো। আর ফেরেশতারা(রহমতের ফেরশতারা) এমন কোন গৃহে প্রবেশ করে না যেখানে ছঁবি থাকে। (বুখারী, পোশাক অধ্যায়; মুসলিম ,পোশাক অধ্যায়; নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায়; ইবনে মাজাহ, ব্যবসায় অধ্যায়, মুআত্তা, অনুমতি চাওয়া অধ্যায়)
(..........................................................................)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সা) আমার কাছে এলেন। তখন আমি একটি পর্দা টাংগিয়ে রেখেছিলাম। তার গায়ে ছবি আঁকা ছিল। তার চেহারার রং বদলে গেলো। তারপর তিনি পর্দাটা নিয়ে ছিড়ে ফেললেন এবং বললেন, কিয়ামতের দিন যাদেরকে কঠিনতম শাস্তি হবে তাদের মধ্যে আল্লাহর সৃষ্টির অনুরূপ সৃষ্টি করার চেষ্টা যারা করে তারাও রয়েছে। (বুখারী, পোশাক অধ্যায়, মুসলিম পোশাক অধ্যায়, নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায়)
(.........................................................)
হযরত আয়েশা (রা) বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সা) সফর থেকে ফিরে এলেন। তখন আমি আমার দরোজায় একটি পর্দা টাংগিয়ে রেখেছিলাম। তার গায়ে পক্ষ বিশিষ্ট ঘোড়ার ছবি আঁকা ছিল। নবী করীম (সা) হুকুম দিলেন, এটি নামিয়ে ফেলো। আমি তা নামিয়ে ফেললাম। (মুসলিম পোশাক অধ্যায়, নাসাঈ, সৌন্দর্য অধ্যায়)
(.............................)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা) ঘরের মধ্যে ছবি রাখতে মানা করেছেন এবং ছবি আঁকতেও নিষেধ করেছেন। (তিরযিমী, পোশাক অধ্যায়)
(..........................................)
ইবনে আব্বাস (রা) আবু তালহা আনসারী (রা) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সা) বলেছেন, ফেরেশতারা (অর্থাৎ রহমতের ফেরেশতারা) এমন কোন গৃহে প্রবেশ করে না যেখানে কুকুর পালিত থাকে এবং এমন কোন গৃহেও প্রবেশ করে না যেখানে ছবি থাকে। (বুখারী, পোশাক অধ্যায়)
(...............................................................................................)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, একবার জিব্রীল নবী (সা) এর কাছে আসার ওয়াদা করেন কিন্তু অনেক দেরী হয়ে যায় এবং তিনি আসেন না। নবী করীম (সা) এতে পেরেশান হন। তিনি ঘর থেকে বের হয়ে পড়েন এবং তাকে পেয়ে যান। তিনি তার কাছে অভিযোগ করেন। তাতে তিনি বলেন, আমরা এমন কোন গৃহে প্রবেশ করি না যেখানে কুকুর বা ছবি থাকে। (বুখারী, পোশাক অধ্যায়, এ বিষয়বস্তু সম্বলিত বহু হাদীস বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজা, ইমাম মালেক ও ইমাম মুহাম্মাদ বিভিন্ন সাহাবী থেকে উদ্ধৃত করেছেন )
এসব হাদীসের মোকাবিলায় আরো কিছু হাদীস এমন পেশ করা হয় যেগুলোতে ছবির ব্যাপারে ছাড় পাওয়া যায়। যেমন আবু তালহা আনসারীর এ হাদীস- যে কাপড়ে ছবি উৎকীর্ণ থাকে তা দিয়ে পর্দা তৈরি করে টানিয়ে দেবার অনুমতি আছে। বুখারী, পোশাক অধ্যায়) হযরত আয়েশার (রা) এ বর্ণনা- ছবিযুক্ত কাপড় ছিড়ে যখন তিনি তা দিয়ে তোষক বা গদি বানিয়ে নেন তখন নবী করীম (সা) তা বিছাতে নিষেধ করেননি। (মুসলিম) সালেম ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উমরের (রা) এ হাদীস- প্রকাশ্য স্থানে যে ছবি টাংগিয়ে দেয়া হয়েছে তা নিষিদ্ধ, ছবি সম্বলিত যে কাপড় বিছানায় বিছিয়ে দেয়া হয়েছে তা নিষিদ্ধ নয়। (মুসনাদে আহমাদ) কিন্তু এর মধ্য থেকে কোন কাপড়ের গায়ে ছবি অংকন করার বৈধতা এর মধ্য থেকে কোন একটি হাদীস থেকেও পাওয়া যায় না। এ হাদীসগুলোতে যদি কোন কাপড়ের গায়ে ছবি অংকিত থাকে এবং তা কিনে নেয়া হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তা কিভাবে ব্যবহার করতে হবে কেবলমাত্র সে কথাই আলোচিত হয়েছে। এ বিষয়ে আবু তালহা আনসারীর বর্ণিত হাদীসটি কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটি এমন বহু সহীহ হাদীসের পরিপস্থী যেগুলোতে নবী (সা) ছবি সম্বলিত কাপড় টানিয়ে দিতে কেবল নিষেধই করেননি বরং তা ছিড়ে ফেলেছেন তাছাড়া তিরমিযী ও মুআত্তায় হযরত আবু তালহার নিজের যে কার্যক্রম উদ্ধৃত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, তিনি ছবি সম্বলিত পর্দা ঝুলানো তো দূরের কথা এমন বিছানা বিছাতেও অপছন্দ করতেন যাতে ছবি আঁকা থাকতো। আর হযরত আয়েশা ও সালেম ইবনে আবদুল্লাহর রেওয়ায়াত সম্পের্ক বলা যায়, তা থেকে কেবলমাত্র এতটুকু বৈধতাই প্রকাশ পায় যে, ছবি যদি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে না থাকে বরং হীনভাবে বিছনায় রাখা থাকে এবং তাকে পদদলিত করা হয়, তাহলে তা সহনীয়। যে সভ্যতা ও সংস্কৃতি চিত্রাংকন ও মুর্তি নির্মান শিল্পকে মানব সভ্যতার সবচেয়ে গৌরবোজ্জাল কৃতিত্ব গণ্য করে এবং তা মুসলমানদের মধ্যে প্রচলিত করতে চায় সার্বিকভাবে তার বৈধতা এ হাদীসগুলো থেকে কেমন করে প্রমাণ করা যেতে পারে৷
ছবির ব্যাপারে নবী (সা) চূড়ান্তভাবে উম্মাতের জন্য যে বিধান রেখে গেছেন তার সন্ধান বর্ষীয়ান ও শ্রেষ্ঠ সাহাবীগণের অনুসৃত কর্মনীতি থেকেই পাওয়া যায়। ইসলামে এটি একটি স্বীকৃত মূলনীতি যে, সমস্ত পর্যায়ক্রমিক বিধান ও প্রাথমিক উদারনীতির পর সর্বশেষে নবী করীম (সা) যে বিধান নির্ধারণ করেন সেটাই নির্ভরযোগ্য ইসলামী বিধান। নবী করীমের (সা) পর শ্রেষ্ঠ ও বর্ষীয়ান সাহাবীগণ কর্তৃক কোন পদ্ধতিকে কার্যকর করা একথাই প্রমাণ পেশ করে যে, নবী করীম (সা) উম্মাতের ঐ পদ্ধতির ওপরই রেখে গিয়েছিলেন। এবার দেখুন ছবির ব্যাপারে এই পবিত্র দলটির আচরণ কিরূপ ছিল-
(..............................................................)
হযরত উমর (রা) খৃষ্টানদের বলেন, আমরা তোমাদের গীর্জায় প্রবেশ করবো না, কারণ তার মধ্যে ছবি রয়েছে।(বুখারী, সালাত অধ্যায়)
(................................)
ইবনে আব্বাস (রা) গীর্জায় নামায পড়ে নিতেন কিন্তু এমন কোন গীর্জায় পড়তেন না যার মধ্যে ছবি থাকতো।
(বুখারী, সালাত অধ্যায়)
(.............................)
"আবুল হাইয়াজ আসাদী বলেন, হযরত আলী (রা) আমাকে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সা) আমাকে যে অভিযানে পাঠিয়েছিলেন আমি কি তোমাকে সেখানে পাঠাবো না৷ আর তা হচ্ছে এই যে, তুমি মূর্তি না ভেংগে ছাড়বে না, কোন উঁচু কবর মাটির সমান না করে ছেড়ে দেবে না এবং কোন ছবি নিশ্চিহ্ন না করে ছাড়বে না।( মুসলিম জানাযাহ অধ্যায় এবং নাসাঈ জানাযাহ অধ্যায়)
(.....................................)
"হানশুল কিনানী বলেন, হযরত আলী (রা) তার পুলিশ বিভাগের কোতায়ালকে বলেন, তুমি জানো আমি তোমাকে কোন অভিযানে পাঠাচ্ছি৷ এমন অভিযানে যাতে রসূলুল্লাহ (সা) আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তা হচ্ছে এই যে, প্রত্যেকটি ছবি নিশ্চিহ্ন করে দাও এবং প্রত্যেকটি কবরকে জমির সাথে মিশিয়ে দাও"। (মুসনাদে আহমাদ)
এই প্রমাণিত ইসলামী বিধানকে ইসলামী ফকীহগণ মেনে নিয়েছেন এবং তারা একে ইসলামী আইনের একটি ধারা গন্য করেছেন। কাজেই আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তাওযীহ এর বরাত দিয়ে লিখছেন-
আমাদের সহযোগীগণ (অর্থাৎ হানাফী ফকীহগন) এবং অন্যান্য ফকীহগন বলেন, কোন জীবের ছবি আঁকা কেবল হারামই নয় বরং মারাত্মক পর্যায়ের হারাম এবং কবীরাহ গোনাহের অন্তরভুক্ত। অংকনকারী হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য অথবা অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা তৈরি করলেও সর্বাবস্থায় তা হারাম। কারণ এতে আল্লাহর সৃষ্টিকর্মের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে। অনুরূপভাবে ছবি কাপড়ে, বিছানায়, দীনারে বা দিরহামে অথবা পয়সায় কিংবা কোন পাত্রে বা দেয়ালে যেখানেই অংকন করা হোক না কেন তা হারাম। তবে জীব ছাড়া অন্য কোন জিনিস যেমন গাছ পালা ইত্যাদির ছবি অংকন করা হারাম নয়। এ সমস্ত ব্যাপারে ছবির ছায়াধারী হবার বা না হবার মধ্যে কোন ফারাক নেই। এ অভিমতই প্রকাশ করেছেন ইমাম মালেক (রা), ইমাম সুফিয়ান সওরী (রা) ইমাম আবু হানীফা (রা) এবং অন্যান্য উলামা। কাযী ঈয়ায বলেন, মেয়েদের খেলনা পুতুল এর আওতা বহির্ভূত। কিন্তু ইমাম মালেক (রা) এ গুলো কেনাও অপছন্দ করতেন। (উমদাতুল কারী ২২ খন্ড, ৭০ পৃষ্ঠা এ অভিমতকেই ইমাম নববী মুসলিমের ব্যাখ্যায় আরো বেশী বিস্তারিত আকারে উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন শারহে নববী, মিসরে মুদ্রিত, ১৪ খন্ড, ৮১-৮২ পৃষ্ঠা)
এতো গেলো ছবি আঁকা সম্পর্কিত বিধান। এখন থাকে অন্যের আঁকা ছবি ব্যবহার করার বিষয়। এ ব্যাপারে আল্লামা ইবনে হাজার অবকালানী মুসলিম ফকীহগণের অভিমত এভাবে ব্যক্ত করেছেন-
"মালেকী ফকীহ ইবনে আরাবী বলেন যে, ছবির ছায়া তার হারাম হওয়ার ব্যাপারে তো ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে- চাই তা অসম্মানজনকভাবে রাখা হোক বা না হোক। একমাত্র মেয়েদের খেলার পুতুল এ ইজমার বাইরে থাকে। --- ইবনে আরাবী একথাও বলেন, যে ছবির ছায়া হয় না তা যদি তার নিজের অবস্থায় অপরিবর্তিত থাকে (অর্থাৎ আয়নার প্রতিচ্ছায়ার মতো না হয় বরং ছাপানো ছবির মতো স্থায়ী ও অনড় হয়) তাহলে তাও হারাম তাকে হীনতার সাথে রাখা হোক বা না হোক। তবে হ্যাঁ, যদি তার মাথা কেটে দেয়া হয় অথবা তার অংশগুলো আলাদা করে দেয়া হয়, তাহলে তার ব্যবহার বৈধ। ---- ইমামুল হারামাইন একটি অভিমত উদ্ধৃত করেছেন। সেটি হচ্ছে এই যে, পর্দা বা বালিশের ওপর যদি কোন ছবি আঁকা থাকে, তাহলে তা ব্যবহারের অনুমতি আছে কিন্তু দেয়াল বা ছাদের গায়ে লাগানো ছবি অবৈধ। কারণ এ অবস্থায় ছবি মর্যাদা লাভ করে। পক্ষান্তরে পর্দা ও বালিশে ছবি অসম্মানজনক অবস্থায় থাকবে। ---- ইবনে আবী শাইবা ইকরামা (রা) থেকে উদ্ধৃত করেছেন, তাবঈদের যুগের আলেমগন এ অভিমত পোষণ করতেন যে, বিছানায় ও বালিশে ছবি, থাকলে তা তার জন্য লাঞ্জনাকর হয়। তাছাড়া তাদের এ চিন্তা ও ছিল যে, উচু জায়গায় যে ছবিই লাগানো হয় হারাম এবং পদতলে যাকে পিষ্ট করা হয় তা জায়ের। এ অভিমত ইবনে সীরীন, সালেম ইবনে আবদুল্লাহ, ইকরামা ইবনে খালেদ এবং সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকেও উদ্ধৃত হয়েছে। (ফাতহুল বারী, ১০ খন্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা)
এ বিস্তারিত আলোচনা থেকে একথা ভালোভাবেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইসলামে ছবি হারাম হওয়ার ব্যাপারটি কোন মতদ্বৈততামূলক বা সন্দেহযুক্ত বিষয় নয়। বরং নবী (সা) সুস্পষ্ট উক্তি, সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা এবং মুসলিম ফকীগহণের সর্বসম্মত ফতোয়ার ভিত্তিতে এটি একটি স্বীকৃত আইন। বিদেশী ও বিজাতীয় সভ্যতা সংস্কৃতি প্রভাবিত কিছু লোকের চুলচেরা অপব্যাখ্যা তাতে কোন পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।
এ প্রসংগে আরো কয়েকটি কথাও অনুবাধন করতে হবে। এর ফলে আর কোন প্রকার বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না।
কেউ কেউ ফটো ও হাতে আঁকা ছবি মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করেন। অথচ শরীয়াত ছবিকেই হারাম করেছে, ছবির কোন বিশেষ পদ্ধতিকে হারাম করেনি। ফটো ও হাতে আঁকা ছবির মধ্যে ছবি হবার দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নেই। তাদের মধ্যে যা কিছু পার্থক্য তা কেবলমাত্র ছবি নির্মান পদ্ধতির দিক দিয়েই আছে এবং এদিক দিয়ে শরীয়াত স্বীয় বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য করেনি।
কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে থাকেন, ইসলামে ছবি হারাম করা হয়েছিল শুধুমাত্র শিরক ও মূর্তি পূজা রোধ করার জন্য। আর এখন তার কোন ভয় নেই। কাজেই এখন এ নির্দেশ কার্যকর না থাকা উচিত। কিন্তু এ যুক্তি সঠিক নয়। প্রথমত হাদীসে কোথাও একথা বলা হয়নি যে, কেবলমাত্র শিরক মূর্তি পূজার বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ছবিকে হারাম করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত এ দাবীও একেবারেই ভিত্তিহীন যে, বর্তমানে দুনিয়ায় শিরক ও মূর্তিপুজার অবসান ঘটেছে। আজ এই উপমহাদেশেই কোটি কোটি মুশরিক ও মূর্তিপূজারী রয়ে গেছে। দুনিয়ার বিভকভিন্ন এলাকায় বিভিন্নভাবে শিরক হচ্ছে। খৃষ্টানদের মতো কিতাবধারীগণও আজ হযরত ঈসা (আ), হযরত মারয়াম (আ) ও তাদের বহু মনীষীর মূর্তি ও ছবির পূজা করছে। এমনকি মুসলমানদের একটি বড় অংশ ও সৃষ্টিপূজার বিপদ থেকে রেহাই পেতে পারেনি।
কেউ কেউ বলেন, কেবলমাত্র মুশরিকী ধরনের ছবিগুলোই নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। অর্থাৎ এমনসব ব্যক্তির ছবি ও মূর্তি যাদেরকে উপাস্য বানিয়ে নেয়া হয়েছে। বাদবাকি অন্যান্য ছবি ও মূর্তি হারাম হবার কোন কারণ নেই। কিন্তু এ ধরনের কথা যারা বলেন তারা আসলে শরীয়াত প্রণেতার উক্তি ও বিধান থেকে আইন আহরণ করার পরিবর্তে নিজেরাই নিজেদের শরীয়াত প্রণেতা হয়ে বসেছেন। তারা জানেন না, ছবি কেবলমাত্র শিরক ও মূর্তিপূজার কারন হয় না বরং দুনিয়ায় আরো অনেক ফিতনার ও কারণ হয়েছে এবং হয়ে চলছে। যেসব বড় বড় উপকরণের মাধ্যমে রাজা বাদশাহ, স্বৈরাচারী ও রাজনৈতিক নেতাদের শ্রেষ্টত্বের প্রভাব সাধারণ মানুষের মগজে বসিয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়েছে ছবি তার অন্যতম। দুনিয়ায় অশ্লীলতা ও যৌনতার বিস্তারের জন্যেও ছবিকে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয়েছে এবং আজকের যুগে এ ফিতনাটি অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশী অগ্রসরমান। বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঘৃণা ও শত্রুতার বীজ বপন, ছবিকে ব্যাপক হারে ব্যবহার করা হয় এবং আজকের যুগে এর প্রচলন হয়েছে সবচেয়ে বেশী। তাই শরীয়াত প্রণেতা কেবলমাত্র মূর্তিপূজা প্রতিরোধের জন্য ছবি হারাম হবার হুকুম দিয়েছেন, একথা মনে করা আসলেই ভুল। শরীয়াত প্রণেতা শর্তহীনভাবে জীবের ছবি আঁকা নিষিদ্ধ করেছেন। আমরা নিজেরা যদি শরীয়াত প্রণেতা নই বরং শরীয়াত প্রণেতার অনুসারী হয়ে থাকি, তাহলে আমাদের শর্তহীনভাবে এ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা নিজেদের পক্ষ থেকে হুকুমের কোন কার্যকারণ বের করে সে দৃষ্টিতে ছবি হারাম এবং কিছু ছবি হালাল গণ্য করতে থাকবো, এটা আমাদের জন্য কোনক্রমেই বৈধ নয়।
কিছু লোক আপাত দৃষ্টিতে একেবারেই অক্ষতিকর ধরনের কতিপয় ছবির দিকে ইংগিত করে বলেন, এগুলোতে ক্ষতি কি ৷ এগুলোতে শিরক, আশ্লীলতা বিপর্যয় সৃষ্টি, রাজনৈতিক প্রচারণা এবং এমনি ধরনের অনন্যা ক্ষতিকর বিষয় থেকে পুরোপুরি মুক্ত ।এ ক্ষেত্রে এগুলোর নিষিদ্ধ হবার কারণ কি হতে পারে৷ এ ব্যাপারে লোকেরা আবার সেই একই ভুল করে অর্থাৎ প্রথমে হুকুমের কার্যকারণ নিজেরা বের করে এবং তারপর প্রশ্ন করতে থাকে, যখন অমুক জিনিসের মধ্যে এ কার্যকারণ পাওয়া যাচ্ছে না তখন তা নাজায়েয হবে কেন ৷ এ ছাড়াও তারা ইসলামী শরীয়াতের এ নিয়মটিও বোঝে না যে, শরীয়াতে হালাল ও হারামের মধ্যে এমন কোন অস্পষ্ট সীমারেখা কায়েম করে না যা থেকে মানুষ এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না যে সে বৈধতার সীমার মধ্যে কতদূরে অবস্থান করছে এবং কোথায় এ সীমা অতিক্রম করে গেছে । বরং শরীয়াত এমন পার্থক্য রেখা টেনে দেয় যাকে প্রত্যেক ব্যক্তি উন্মুক্ত দিবালোকের মতো প্রত্যক্ষ করতে পারে ।জীবের ছবি হারাম এবং অজীবের ছবি হালাল -- ছবির ব্যপারে এ পার্থক্য রেখা পুরোপুরি সুস্পষ্ট। এ পার্থক্য রেখার মধ্যে কোন প্রকার সংশয়ের অবকাশ নেই । যে ব্যক্তি শরীয়াতের বিধান মেনে চলতে চায় তার জন্য কোন জিনিসটি হারাম এবং কোন জিনিসটি হালাল তা সে পরিষ্কারভাবে জানতে পারে । কিন্তু জীবের ছবির মধ্যে যদি কোনটিকে জায়েয ও কোনটিকে নাজায়েয গণ্য করা হয় তাহলে উভয় ধরনের ছবির বৃহত্তর তালিকা দিয়ে দেবার পরও বৈধতা ও অবৈধতার সীমারেখা কোনদিনও সুস্পষ্ট হতে পারে না এবং অসংখ্য ছবি এমন থেকে যাবে সেগুলোকে বৈধতার সীমারেখার মধ্যে না বাইরে মনে করা হবে সে ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাবে । এ ব্যাপারটি ঠিক তেমনি যেমন মদের ব্যাপারে ইসলামের হুকুম হচ্ছে এ থেকে একেবারেই দূরে অবস্থান করতে হবে ।এটি এ ব্যাপারে একটি সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু যদি বলা হয়, এর এমন একটি পরিমাণ ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকা উচিত যার ফলে নেশার সৃষ্টি হয় , তাহলে হালাল ও হারামের মধ্যে কোন জায়গায়ও পার্থক্য রেখা প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারবে না এবং কি পরিমাণ মদ পান করা যাবে এবং কোথায় গিয়ে থেমে যেতে হবে , এ ফায়সালা কোন ব্যক্তিই করতে পারবে না ।(আরো বেশী বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন , রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ খন্ড, ১৫২-১৫৫ পৃষ্ঠা!)

প্রশ্ন: ২২৯ : অজুর সুন্নত কয়টি ও কি কি ?

ওযুর মধ্যে ১৮টি সুন্নত ঃ
১. নিয়ত করা। ২. ওযুর শুরুতে উভয় হাত কব্জিসহ ধোয়া। ৩. বিসমিল্লাহ পড়া। ৪. মিসওয়াক করা। ৫. তিনবার কুলি করা। ৬. তিনবার নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা। ৭. ঘন দাড়িতে খিলাল করা।
৮. হাত-পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা ৯. ফরজ ও সুন্নত কাজগুলো তিনবার করে করা। ১০. সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। ১১. উভয় কান মাসেহ করা। ১২. অঙ্গসমূহ হাত লাগিয়ে ভালো করে ধোয়া।
১৩. এক অঙ্গ ধোয়ার পর দেরি না করে অন্য অঙ্গ ধোয়া। ১৪. ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। ১৫. প্রত্যেক অঙ্গ ডান দিক থেকে আরম্ভ করা ১৬. হাত ও পা আঙ্গুলের দিক থেকে ধোয়া আরম্ভ করা।
১৭. মাথা মাসেহ সামনের দিক হতে আরম্ভ করা। ১৮. গর্দান মাসেহ করা।

প্রশ্ন: ২২৮ : ইসলামে সালাম দেওয়ার বিধান ।

ইসলামে সালামের বিধান

মুফতি মাহমুদ হাসান  



ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।' সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।' (মুসলিম : ৫৪)
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, 'খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।' (বোখারি : ১২)
সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম', রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'দশ নেকি।' অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'বিশ নেকি।' অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'ত্রিশ নেকি।' (তিরমিজি : ২৬৮৯)
সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম।
উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলবে। কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু' বলবে।
চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)
সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২)
উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে। (বুখারি : ৬২৩১)
উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না। হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)
সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫) যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে 'আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা' বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা 'ওয়ালাইকা' বা ওয়ালাইকুম' বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।
তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯)
মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত। আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯)
কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)
যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪)
লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার





প্রশ্ন : ২২৭ : শিরক এর তালিকা

শিরক কি ? শিরকের তালিকা দেখে জেনে নিন।
শিরক হচ্ছে সকল পাপের চাইতে বড় পাপ। যা আল্লাহ তা’আলা যা কক্ষনো ক্ষমা করবেন না। যদি কোন ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তাকে চিরস্থায়ী জাহান্নামে থাকতে হবে। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, শিরকের ভয়বহতা এত বেশি, যে শিরক মানুষের সব আমাল নস্ট করে দেয়, মানুষকে চিরস্থায়ী জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” (সূরা আন-নিসা ৪: ৪৮)
হাদিসের বর্ণিত আছে “যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সাথে কিছু শরিক করা অবস্থায় মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম-৯৩)
কুরআনে ‍আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ ۖ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ
“যখন লোকমান তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বললেনঃ হে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শিরক করনা; কেননা শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায় ” (সূরা লোকমান ৩১:১৩)।
মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদাহ -৫:৭২)
আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় নাবীকে সাবধান করে বলেন,
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ
“আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। ”(সূরা যুমার-৩৯:৬৫)
অতএব এ আয়াৎ থেকে আমরা জানতে পারি নাবী (সা) যদি শিরক করতো তাহলে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেত অতএব আমরা উম্মতরা কোথায় আছি। সুতরাং শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান, শিরক থেকে সাবধান। হে আল্লাহ, হে বিশ্বজগতের পালনকর্তা তোমার কাছে আমরা যাবতীয শিরক থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমীন। ছুম্মা আমীন।
একনজরে আমাদের সমাজে প্রচলিত শিরক
নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল...
1. আহবানের শিরকঃ আহ্বানের শিরক বলতে মানুষের ক্ষমতার বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা কোন পার্থিব ক্ষতি হতে রক্ষা পাবার উদ্দেশে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করা বুঝায়। (সূরা জিন ৭২:১৮, রাদ-১৩:১৪, মারিয়াম-১৯:৪৮)
2. ফরিয়াদের শিরকঃ ফরিয়াদের শিরক বলতে নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকাকে বুঝায়। রোগ নিরাময়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা। (সূরা আনফাল-৮:৯, আনকাবুত-২৯:৬৫)
3. আশ্রয়ের শিরক- কোন অনিষ্টকর বস্তু বা ব্যক্তি হতে বাঁচার জন্য আলাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে আশ্রয় নেয়া বা সরনাপন্ন হওয়া। (সূরা ফুসসিলাত/ হা মিম আসসাজদাহ-৪১:৩৬, সূরা মুমিনুন-২৩:৯৭-৯৮, সূরা ফালাক ১১৩:-১-৫, সূরা নাস ১১৪:১-৬)
4. আশা বা বাসনার শিরক- মানুষের অসাধ্য কোন বস্তু আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে কামনা করা। যেমন, কোন পিরের কাছে সন্তান কামনা করা। (সূরা আশ-শুআরা-৪২:৪৯,৫১)
5. নামাজের শিরক- রুকু, সিজদাহ, সওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাজের শিরক বলতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝান হয়। (সূরা হাজ্জ-২২:৭৭, আনআম-৬:১৬২-১৬৩)
6. তাওয়াফের শিরক- কাবা ঘর ব্যতিত অন্য কোন বস্তুর তাওয়াফ করা।(হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২: ১২৫)
7. তাওবার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে তাওবা করা। (সূরা নুর-২৪:৩১, আল ইমরান-৩:১৩৫)
8. জবাইয়ের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করা। চাই তা আল্লাহর নামেই করা হোক বা অন্য কারো নামে বা নাবী বা জিনের নামে। (সূরা আনআম- ৬:১২১, ১৬২-১৬৩)
9. মানতের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জন্য মানত করা। (সূরা-হাজ্জ-২২:২৯, বাকারাহ-২:২৭০, আনআম-৬:১৩৬)
10. আনুগত্যের শিরক- বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।(তাওবা-৯:৩১, আনআম-৬:১২১,আরাফ-৭:৩,)
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্ধভাবে চার মাঝহাবের চার জন মহামতি ইমামের অন্ধ অনুসরণ করাও শিরক। উপরন্তু এই চার জন মহান ব্যক্তি কখনই নিজেকে অন্ধভাবে অনুসরন করতে বলেনি। যদি কোন ব্যক্তি মনে করে বর্তমান যুগে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা অচল এবং গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র,পীরতন্ত্র,ধরমনিরপেক্ষ মতবাদ ইত্যাদিই হল আধুনিক পদ্ধতি তাহলে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। খ্রিস্টানরা তাদের আলিমদের উপাসনা করত না তবে তারা হালাল হারামের ব্যপারে বিনা প্রমানে তাদের আলিমদের সিদ্ধান্ত মেনে নিত। আর এটিই হচ্ছে শিরক। (তিরমিজি-অধ্যায় ৪৭ হা: নং ৩০৯৫)
11. ভালবাসার শিরক- দুনিয়ার কাউকে এমন ভাবে ভালবাসা যাতে তাঁর আদেশ নিষেধ কে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধের উপর প্রাধান্য দেয়া অথবা সমপর্যায়ের মনে করা। প্রকৃতিগত ভালবাসা (খাবার), স্নেহ জাতীয় ভালবাসা (সন্তানের জন্য পিতার), আসক্তিগত ভালবাসা (স্বামীর জন্য স্ত্রীর) ইত্যাদির কোনটাকেই আল্লাহ তাআলার ভালবাসার উপর স্থান দেয়া যাবে না। (বাকারাহ-২:১৬৫, তাওবা-৯:২৪)
12. ভয়ের শিরক- একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রকাশ্যভাবে দুনিয়া বা আখিরাত সংক্রান্ত যে কোন ক্ষতি সংঘটন করতে পারে বলে অন্ধ বিশ্বাস করে তাকে ভয় পাওয়াকে বুঝানো হয়। মানুষ, মূর্তি, জিন ইত্যাদির অনিষ্টতা থেকে ভয় পাওয়া শিরক। প্রভাবশালি শাসকের ভয়ে ভাল কাজ বা জিহাদ হতে দূরে থাকা ছোট শিরক। তবে শত্রুর ভয়, বাঘের ভয় ইত্যাদি স্বাভাবিক ভয় শিরকের অন্তরভুক্ত নয়। (সূরা আনাআম- ৬:৮০-৮১, হুদ-১১:৫৪-৫৫, তাওবাহ-৯:১৩)
13. ভরসার শিরক- মানুষের অসাধ্য ব্যপারসমুহের ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ভরসা করা। কারো সমস্যা দূরীকরণ, চাকরি লাভ, রোগমুক্তি ইত্যাদি ব্যপারে আল্লাহর উপরেই ভরসা রাখতে হবে। দান, সাদাকার ব্যপারে নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তির উপর ভরসা ছোট শিরক। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক তাঁর কর্মচারীদের উপর মালামাল উৎপাদন বা কোন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ভরসা করতে পারে। তবে সম্পূর্ণরূপে ভরসা করা শরিয়াতে জায়েজ নয়।(মায়িদাহ-৫:২৩, ইউনুস-১০:৮৪)
14. সুপারিশের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পরকালের মুক্তির জন্য সুপারিশ কামনা করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। (জুমার-৩৯:৪৪, আনাআম-৬: ৫১, বাকারাহ-২:২৫৫)
15. হিদায়াতের শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত করতে পারে এমন বিশ্বাস করা অথবা কারো নিকট হিদায়াত কামনা করা। (বাকারাহ-২:২৭২, ইউসুফ-১০:১০৩)
16. সাহায্য প্রার্থনার শিরক- মানুষের সাধের বাইরে কোন কাজ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নিকট কামনা করা। (ফাতিহা-১:৫)
17. কবরের শিরক- কবরে শায়িত কারো জন্য ইবাদাত ব্যয় করা। অর্থাৎ সেখানে সালাত আদায় করা, সিজদাহ করা শিরক (মুসলিম-৯৮৯) তাঁর নিকট কিছু চাওয়া। তাঁর (ওসীলায়) মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে কিছু চাওয়া। সেখানে মসজিদ নির্মাণসহ আরও অসংখ্য শিরক বিদ্যমান। (নুহ-৭১:২৩, ) (বুখারি- ৪২৭,২৮)
18. আল্লাহর অবস্থান সম্পর্কিত শিরক- আল্লাহ মুমিনের অন্তরে বিরাজমান মনে করা। আল্লাহ সবার অন্তরে বিররাজমান মনে করা। আল্লাহ সকল বস্তুর মাঝে লুকায়িত মনে করা। আল্লাহ সম্পর্কে সহিহ আকিদা হল, তিনি আরশের উপর অবস্থান করছেন। তাঁর আকার আছে কিন্তু তিনি তাঁর মত।তার সদৃশ (মত)কেউ নেই। (মূলক- ৬৭:১৬-১৭, , ইমরান- ৩:৫৫, আরাফ- ৭:৫৪)
19. দেখা ও শোনার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষ হোক নাবি বা রসুল সব শুনতে বা দেখতে পান এমন মনে করা শিরক। (সূরা ইউনুস- ১০:৬১, তাহা-২০:৪৬)
20. কিয়ামতের শিরক- কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কোন নাবি, রসুল, পীর, অলি, ইত্যাদি মানুষরা অন্যান্য মানুষদের আজাব হতে বাচাতে পারবে এটা মনে করা শিরক। এছাড়া অন্য কেউ মানুষকে আল্লাহর আজাব হতে কাউকে ক্ষমা করাতে পারবে এমনটা মনে করাও শিরক। (সূরা তাহরিম- ৬৬:১০, শুআরা- ২৬:২১৪, তাওবাহ- ৯:৮০)
21. গায়েব জানার শিরক- আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষ হোক নাবি, রসুল, বুজুর্গ গায়েব জানেন এমনটা বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা নামল- ২৭:৬৫, সূরা আনআম- ৬:৫০-৫৯)
22. মানুষের অন্তরের কথা- আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মানুষের মনের কথা জানেন না। এর বিপরীতে বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা মুলক- ৬৭:১৩,১৪)
23. আল্লাহ ছাড়া সন্তান সন্ততি কেউ দিতে পারে- আল্লাহ যাকে চান সন্তান দিতে পারেন। অন্য কারো এই ক্ষমতা নেই। (সূরা শুরা- ৪২:৪৯-৫০)
24. আল্লাহ ছাড়া সুস্থতা- একমাত্র আল্লাহ তাআলাই মানুষকে সুস্থতা দান করতে পারেন, অন্য কেউ নয়। (সূরা শুআরা- ২৬:৭৮-৮২)
25. কাজ করার শিরক- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ ইচ্ছা করলেই কোন ভাল কাজ করতে পারবে বা কোন খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারবে এমন মনে করা শিরক। (সূরা হুদ-১১: ৮৮)
26. ক্ষতির শিরক- আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কেউ কারো ক্ষতি করতে পারে এমনটা মনে করা শিরক। (সূরা ফাতহ- ৪৮:১১)
27. জীবন মৃত্যু- আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে বাঁচাতে পারে বা মারতে পারে এমন মনে করা শিরক। (সূরা মুমিন- ৬৮)
28. আল্লাহ ছাড়া সবাই মৃত- যদি কেউ মনে করেন আল্লাহ ছাড়াও অন্য কোন নাবি,রসুল,গাউস,কুতুব সর্বদা জীবিত রয়েছেন তাহলে সে শিরক করছে। (সূরা রাহমান- ৫৫:২৬-২৭,সূরা ইমরান- ৩:১৮৫,১৪৪, সূরা জুমার- ৩৯:৩০)
29. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বিশ্ব পরিচালনা করেন- কোন নাবি, রসূল, গাউস, কুতুব, ওলি বিশ্ব পরিচালনায় অংশ নেন, একথা মনে করা শিরক। আল্লাহ তাআলা সময়কেও নিয়ন্ত্রন করেন। তাই সময় বা যুগকে গালি দেয়া গর্হিত কাজ। (সূরা রাদ- ১৩:২,সূরা ইউনুস- ১০:৩১, সূরা সাজদাহ-৩২:৫)
30. অন্তরের পরিবর্তন- একমাত্র আল্লাহ তাআলাই কারো অন্তরের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। এর ব্যতিক্রমে বিশ্বাস করা শিরক। (সূরা আনফাল- ৮:২৪) (তিরমিজি- ৩৫২২)
31. যাদু-টোনা, বাণ মারা।
32. ওরশ : অনেক মাযারে ও পীরের দরবারে অমাবস্যা, পূর্ণিমা, পীরের জন্ম বা মৃত্যু তারিখ নির্দিষ্ট করে ওরশ হয়ে থাকে। বেপর্দা অবস্থায় নারী-পুরুষ একত্রে বসে যিকির করে, কাওয়ালী গান শোনে। ভন্ড পীর, ফকীররা এ সব ওরশে ওয়ায নসীহ’তের নামে শরী‘আত বিরোধী আক্বীদা-বিশ্বাস প্রচার করে। শাহী তবারক রান্না করা হয়। ওরশের পরে যে টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়, তা পীর ও তার খাদেমদের পকেটে চলে যায়। ওরশ মূলতঃ আনন্দোৎসব ও টাকা উপার্জনের পন্থা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
33. খাজা বাবার ডেগ :একদল লোক বিশেষত যুবকেরা রজব মাস এলেই পথে-ঘাটে, বাজারে যেখানেই সুযোগ পায় সেখানেই একটা ডেগ বা বড় হাড়ি বসায়। লালসালু কাপড় বিছিয়ে, বাঁশ দিয়ে ছাউনি দিয়ে, বিজলী বাতি জ্বালিয়ে, চকমকি কাগজ এবং বিভিন্ন ধরনের রং লাগিয়ে ঘর সাজিয়ে তার মধ্যে স্থাপন করে ডেগ। তারা একে বলে ‘খাজা বাবার ডেগ’। এটা একটা বিনা পুজির ধর্মব্যবসা।
34. ন্যাংটা বাবায় বিশ্বাস: এরুপ বিশ্বাস করা যে ন্যাংটা বাবা ভবিষ্যত বা গায়েব জানেন তার ভাল-মন্দ করার ক্ষমতা আছে ।
35. প্রাণীর ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি, ভাস্কর্য,প্রতিমা ইত্যাদির হুকুম : কোন নেতা, লিডার বা স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিবর্গের ছবি, চিত্র, প্রতিকৃতি, মূর্তি ভাস্কর্য ইত্যাদি তৈরি করা, মাঠে-ঘাটে, অফিস-আদালতে ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এগুলো স্থাপন করা, এগুলোকে সম্মান করা, এগুলোর উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি করা।
36. সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার : সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের স্মরণে সমাধি, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ বা শহীদ মিনার নির্মাণ, এগুলোকে সম্মান জানানো, সামনে দাঁড়িয়ে নীরবতা ১ মিনিট পালন করা ইত্যাদি।
37. অগ্নিপূজা এবং শিখা চিরন্তন, শিখা অনির্বাণ : ‘অগ্নি শিখা’ অগ্নিপূজকের উপাস্য দেবতা। তারা ভক্তি, প্রণাম ও নানা কর্মকান্ডের দ্বারা আগুনের পূজা করে থাকে। এ অগ্নিপূজা সম্পূর্ণ শিরক ও আল্লাহদ্রোহী কাজ। ‘শিখা চিরন্তন’ বা ‘শিখা অনিবার্ণের’ নামে অগ্নি মশালকে সারা দেশে ঘুরিয়ে ভক্তি শ্রদ্ধা জানানো এবং এগুলোর প্রজ্জ্বলনকে অব্যাহত রাখার জন্য বিশেষ ধরনের বেদীর ওপর এগুলো স্থাপন করা, অলিম্পিক মশাল সহ বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠানের মশাল প্রজ্জ্বলনও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
38. মঙ্গল প্রদীপ : হিন্দুদের অনুকরণে কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে বা কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা পালন করা।
39. তাছাওউফের শায়েখ বা পীরের কল্পনা : তাছাওউফের শায়খ বা পীরের চেহারা, আকৃতি ইত্যাদি কল্পনা করে মোরাকাবা, ধ্যান, যিকির বা অন্য যে কোন ইবাদত করা শিরক।
40. গায়রুল্লাহর নামে যিকির বা অযীফা : আল্লাহর যিকিরের ন্যায় কোন নাবী বা রসূল, পীর, ওলী-আওলিয়া, বুযুর্গ, আলিমের নাম জপ করা, বিপদের পড়লে তাদের নামের অযীফা পড়া। যেমন- ‘ইয়া রাহমাতুল্লিল আলামীন’, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’, ‘নূরে রাসূল, নূরে খোদা’, ‘হক বাবা, হক বাবা’ ইয়া বড়-পীর আব্দুল কাদির জিলানী, ইয়া গাউছুল আযম, ইত্যাদি।
41. আল্লাহ যা করান, তাই করি : একদল ফকীর বলে, আল্লাহ যা করান, তা-ই করি। আল্লাহ ছালাত আদায় করান না, তাই আদায় করি না , আল্লাহ গাঁজা টানাচ্ছেন, তাই টানি। তাক্বদীরে ছালাত থাকলে তো আদায় করব।
42. সীনায় সীনায় মা‘রেফতী : ভন্ডপীর বা দরবেশ দাবীদার একদল লোক বলে থাকে, ‘কুরআন শরীফ মোট ৪০ পারা। ৩০ পারায় যাহেরী ইলমের বিষয় আছে। বাকি ১০ পারা মারেফতী বিদ্যায় ভরা রয়েছে। এ ১০ পারা আমরা সীনায় সীনায় পেয়েছি। শরী‘আতের আলিমরা এগুলোর খবর রাখেন না।
43. শরী‘আতের ইত্তেবা সর্বাবস্থায় ফরয নয় : অনেকের ধারণা, মুরীদ যখন মা‘রেফাতের উচ্চ শিখরে পৌঁছে যায়, তখন তার জন্য শরী‘আতের হুকুম-আহকাম, ছালাত, ছওম ইত্যাদি মাফ হয়ে যায়।
44. শিরকের গন্ধযুক্ত উপাধি : পীর বা ওলীকে এমন কোন উপাধিতে সম্বোধন করা উচিত নয় যা অর্থগত দিক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রযোজ্য। যেমন- গাউছুল আযম (সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী), গরীবে নেওয়াজ (গরীবরা যার মুখাপেক্ষী), মুশকিল কোশা (যার মাধ্যমে বিপদাপদ দূর হয়), কাইয়ূমে যামান (যামানা কায়েম করেছেন যিনি) ইত্যাদি
45. সন্তানের নামকরণে নবী ও পীর-আওলিয়ার সাথে সম্পর্ক স্থাপন : গোলাম মুছত্বফা (মুছত্বফার গোলাম), আব্দুন্নবী (নবীর দাস), আব্দুর রসূল (রসূলের দাস), আলী বখশ (আলী (রা)-এর দান), হোসেন বখশ (হুসাইন (রা)-এর দান), পীর বখশ (পীরের দান), মাদার(‘মাদার’-কে বাংলাদেশের কিছু অঞ্চলের হিন্দুরা বড় ঋষি বলে জানে।) বখশ (মাদারের দান), গোলাম মহিউদ্দীন (মহিউদ্দীনের গোলাম), আব্দুল হাসান (হাসানের গোলাম), আব্দুল হুসাইন (হুসাইনের গোলাম), গোলাম রসূল (রসূলের গোলাম), গোলাম সাকলায়েন ইত্যাদি নাম রাখা।
46. মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন : সিলভা, কোয়ান্টাম বা অন্য কোন মেথডের (পদ্ধতি) দ্বারা মন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো এবং সকল সমস্যার সমাধান লাভ করার মাধ্যমে জীবনে সফলতা অর্জন করার কথা বলা।
47. গ্রহ নক্ষত্রের তা‘ছীর (প্রভাব): অনেকের ধারণা মানুষের ভাল-মন্দ, বিপদ-আপদ, উন্নতি-অবনতি ইত্যাদি গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে হয়। কেউ বিপদে পড়লে বলা হয়, ‘এ ব্যক্তির ওপর শনি গ্রহের প্রভাব পড়েছে’বা রাহুগ্রাস হয়েছে। কারো আনন্দের খবর শুনলে বলা হয়ে থাকে, ‘এ ব্যক্তি মঙ্গল গ্রহের নজরে সু নজরে আছে’।
48. চন্দ্র ও সূর্য্য গ্রহণের প্রভাব : অনেকের ধারণা চন্দ্র ও সূর্য্য গ্রহণ মানুষের ভাল-মন্দ, জন্ম-মৃত্যু, বিপদ-আপদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
49. গাইরুল্লাহর নামে কসম করা : আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর নামে কসম করল, সে কুফরী করল অথবা শিরক করল’। (হাদীছ ছহীহ। তিরমিযী, হা/১৫৩৫)।মূলত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন নামে কসম করলে কসম হয় না। যেমন- রসূলুল্লাহর কসম, কা‘বা ঘরের কসম, নিজ চোখের কসম,বাবা-মায়ের কসম, বিদ্যা বা বই এর কসম ইত্যাদি।
50. আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পীর, ওলী বা বুযুর্গ ব্যক্তির অসীলা গ্রহণ : আল্লাহকে পাওয়ার জন্য, তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে, ক্ষমা ও সাহায্য পাওয়ার জন্য কোন জীবিত বা মৃত পীর, ওলী বা বুযুর্গ ব্যক্তিকে অসীলা বা মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা ।
51. আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জীবন বিধান প্রণেতা- আল্লাহ তাআলাই একমাত্র মানব জাতির সার্বিক উন্নতির জন্য আইন বিধানের অধিকার রাখেন। এ কাজের যোগ্য তিনি ছাড়া আর কেউ নন। (সূরা ইউসুফ-১২:৪০) কোনো ব্যক্তি, শক্তি, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন অথবা কোনো দল যদি আল্লাহর দেয়া বিধানের হালালকে যদি হারাম করে আর হারামকে হালাল করে তা মেনে নেয়া শিরক। যেমন: গণতন্ত্র মেনে নিয়ে আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে মনগড়া আইন তৈরী করে ।
52. মানব রচিত বিধান দ্বারা শাসন করা, এমনিভাবে প্রথা ও চিরাচরিত অভ্যাস দ্বারা ফায়সালা করা।
53. পাশ্চাত্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, পুজিবাদ, জাতিয়াতাবাদ,প্রগতিবাদ ধর্মনিরপেক্ষবাদ সমর্থন ও বিশ্বাস করা।
54. মাসজিদ ছাড়া অন্য কোন জায়গায় অবস্থান করা/ খাদেম হওয়া- মাজারে খাদেম হওয়া শিরক। (বাকারাহ-২:১২৫)
55. কুরআনের বিকুতি ঘটেছে এমন ধারনা করা বা এ ধারনা করা যে কুরআন ৯০ পারা। ৬০ পারা গোপন রয়েছে।
56. দ্বীন ইসলামের ভিতর শরীয়ত মারেফত, হাক্বীক্বত, তরীক্বত নামে ভাগাভাগি সৃস্টি করা। ইসলামী শরীয়ত ছাড়া সব কুফরী।
57. পীর ধরা ওয়াজিব । যার পীর নাই তার শির নাই। যার পীর নাই তার পীর শয়তান, এসব কথা বলা ও বিশ্বাস করা।
58. মাজারের পার্শ্বস্থ গাছ, পুকুরের মাছ, কচ্ছপ কুমিরকে কথিত ওলির সংশ্লিস্ট কিছু মনে করা ও তাদের খাবার দেআ। এবং তাদের খাবার গ্রহনকে সৌভাগ্য মনে করা।
59. পীর-মুরশিদ, রাষ্ট্রীয় নেতা-নেত্রীদের ভক্তি সম্মানের উদ্দেশ্যে পশু জবাই করা।
60. নাবী (সা) জীবিত রয়েছেন এমন বিশ্বাস পোষন করা।
61. নাবী (সা) কে হাজির নাযির মনে করা।
62. কাশফ, ইলহাম, মুরাকাবা, মুশাহাদাহর দাবী করা ও চর্চ্চা করা।
মুহাম্মাদ আব্দুর রব আফফান কর্তৃক সংকলিত শিরকের তালিকা নিম্নরুপ:
63. আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে শপথ করা।
64. আল্লাহর মত করে অন্য কোন স্বত্তাকে বিনীত ও সম্মানের সাথে মুহাব্বত করা।
65. যে বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ সামর্থ রাখে না, সে ক্ষেত্রে অন্যের উপর ভরসা করা, যেমন : প্রয়োজন পূরণের জন্য মৃত ও অনুপস্থিত কোন স্বত্তার উপর ভরসা করা।
66. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুকে যেমন: প্রতিমা, মূর্তি, আস্তানা, দরগাহ বা কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তি, অনুরুপ অনুপস্থিত জ্বিন ও মানুষকে গোপনে গোপনে ভয় করা।
67. বিপদ-আপদ ও বদনজর থেকে মুক্তির জন্য তাবীজ-কবজ ঝুলানো (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড, পৃ: ১৫৪) সূতা-বালা বা অনুরুপ কিছু পরিধান করা। (মুসনাদে আহমাদ ৪র্থ খন্ড, পৃ: ১৫৬, ইবনে মাজাহ হা: নং ৩৫৩১)
68. হালাল-হারাম ও বিচার-ফায়সালার ক্ষেত্রে আলিম, পীর, ইমাম,দরবেশ ও শাসকদের অন্ধভাবে অনুসরণ । (সূরা তাওবা: ৯:৩১)
69. কোন কিছুতে ‍অশভ বা কুলক্ষন মনে করা বা কোন কিছু দ্বারা নির্ণয় করা। যেমন: বিকলাঙ্গ, পেচা বা অপছন্দনীয় কিছু দেখলে অশুভ মনে করা।
70. সুনাম অর্জনের জন্য লোক দেখানে বা শুনানো ইবাদত (রিয়া) করা।
71. আমল-ইবাদত নিছক দুনিয়ার জন্য করা।
72. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো বা কিছুর জন্য সিজদা বা মাথানত করা। যেমন: কদম বুচি করা।
73. আল্লাহর সিফাত সমূহে শিরক করা; যেমন আল্লাহর মতো ‍অন্য কাউকে পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু, রিযিকদাতা, বিধানদাতা এবং ক্ষমাশীল মনে করা।
74. আল্লাহ ব্যতীত কোন জ্বীন, ওলী, পীর-ফকির ইত্যাদির নিকট ফরিয়াদ ও সাহায্য প্রার্থনা, তাদের উপর ভরসা, তাদের উদ্দেশ্যে মান্নত ও জবাই করা।
75. কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা।
76. হেদায়েত, শাফায়াত ও মুক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নিকট কামনা করা।
77. পীর-ফকীর ও কবিরাজের শয়তানী তেলেসমাতি ও কারসাজীকে ওলীর কেরামত মনে করা।
78. কুরআন-হাদীস ভিত্তিক আলিমদের অনুসরণ ছেড়ে দিয়ে পীর ধরা ও তার অন্ধানুসরণ করা।
79. নাবী, ওলী-আউলিয়া ও পীর-বুযুর্গদের জন্য নামায ও অন্যান্য ইবাদত করা। [মূল: আল-ইসলাহ সিরিজ -৪ ,সংকলনে –মুহাম্মদ আব্দুর রব আফফান]
আসুন, আমরা সকলে ঈমানী দায়িত্ব পালন করি। মানুষকে শিরক মুক্ত ঈমানের আহ্বান জানাই।
নাবী ও ওলীদেরকে মহান আল্লাহ পাকের বৈশিষ্ট্যের সমকক্ষ না করি।
রাষ্টীয় ক্ষমতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেশের জনগণকে সকল ক্ষমতার মালিক বলে মনে না করি।
কোন ভাস্করয্য,মূর্তি,শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য নিরবে দাঁড়িয়ে না থাকি।
গনতন্ত্র,পীরতন্ত্র,রাজতন্ত্র,সমাজতন্ত্র,ধর্মনিরপেক্ষবাদকে না বলি ও প্রত্যাখান করি ও বাদ দেই।
মাজার ও কবরে নযর-মানত না করি।
মাজার ও কবরে গিয়ে মাজার ও কবর মুখী হয়ে দোয়া ও নামায না করি।
বিপদাপদ-বালামুছীবাতে, রিং, পৈতা,সূতা,শরীরে বাঁধা থেকে দূরে থাকি।
হাদীসে বর্ণিত দোয়া, আমলে আনার চেষ্টা করি।
গণক ও জোতির্বিদদের নিকট গমণ থেকে দূরে থাকি।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন এ-আক্বীদা-বিশ্বাস থেকে বেঁচে থাকি।
হে আল্লাহ! আমাদের শিরক মুক্ত জীবন দান করুন। আমীন।
শিরক সম্পর্কে সর্বদা মনে রাখার মতো কথা হল :
জীবন বিপন্ন হ’লেও শিরক করা যাবে না।
শিরকের পাপের কোন ক্ষমা নেই ।
শিরকের পরিণতি ধ্বংস ।
শিরক সমস্ত নেক আমলকে বিফল করে দেয়।
মুশরিকরা চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষেধ।
শিরক মিশ্রিত ঈমান কখনোই ঈমান হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
সুতরাং, শিরক থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবসময় আল্লাহ তা‘আলার নিকটে প্রাণখুলে দো‘আ করা ও সাহায্য প্রার্থনা করা কর্তব্য। রসূল (সা) শিরক হ’তে বাঁচার জন্য আমাদেরকে দো‘আ শিখিয়েছেন:
اَللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوْذُبِكَ أَنْ نُشْرِكَ شَيْئًا نَعْلَمُهُ وَنَسْتَغْفِرُكَ لَمَا لاَ نَعْلَمُ
‘আল্লাহুম্মা ইন্না না‘ঊযুবিকা আন নুশরিকা শাইআন না‘লামুহ, ওয়া নাসতাগফিরুকা লিমা লা না‘লামুহ।
“হে আল্লাহ্, জেনে বুঝে শিরক করা থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আমাদের অজ্ঞাত শিরক থেকে আপনার নিকটে ক্ষমা চাচ্ছি।” ( সহীহ-আদাবুল-মুফরাদ-৭১৬)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ছোট-বড় সকল প্রকার শিরক হ’তে রক্ষা করুন, আমীন!

তাফহীমুল কুরআনের বিষয় নির্দেশিকা


Image result for তাফহীমুল কুরআনের বিষয় নির্দেশিকা


এখান থেকে পিডিএফ  ডাউনলোড করুন। 


এছাড়াও নিম্নের এ্যাপটির মধ্যে উপরোক্ত বিষয় অভিধানটি  ডিজিটাল সিস্টেমে দেওয়া আছে।

                           এ্যাপ ডাউনলোড করুন। 



প্রশ্ন: ২২৬ : চাদর গায়ে দিয়ে নামাজ পড়ার বিধান।

(১) নামাযে ’সদল’ অর্থাৎ কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া মাকরুহে তাহরীমি । যেমন: মাথা বা কাঁধের উপর চাদর কিংবা রুমাল ইত্যাদি এমনভাবে রাখা যে, উভয় প্রান্ত ঝুলতে থাকে । হ্যাঁ, যদি এক প্রান্ত এক কাঁধের উপর রাখা হয় এবং অপর প্রান্ত ঝুলতে থাকে তাহলে অসুবিধা নেই ।

(২) আজকাল কিছু কিছু লোক এক কাঁধে এমনভাবে রুমাল রাখে যে, তার এক প্রান্ত ঝুলে থাকে পেটে, অপর প্রান্ত পিঠে । এভাবে নামায পড়া মাকরুহে তাহরীমি ।
(বাহারে শরীয়ত-১ম খন্ড পৃ: ৬২৪)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...