প্রশ্ন:১০০: পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে বেশিরভাগ জায়গায় ‘আমরা’ বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তাহলে তিনি নিজেই নিজেকে ‘আমরা’ বলছেন কেন? বুঝিয়ে বলবেন কি?

উত্তর : এটি আরবী বাক রীতির অংশ। সেখানে এক ব্যক্তি ‘আমি’ বলে। মহান অর্থে ‘আমি’র জায়গায় ‘আমরা’ও বলে। এটা কেবল কোরআন শরীফে নয়, আরবী সাহিত্যে প্রচুর দেখা যায়। যেমন, একজনকে বলা হয় ‘আলাইকা’ কিন্তু আমরা সালামের সময় বলি ‘আলাইকুম’। যার অর্থ ‘আপনাদের ওপর’। বাংলায় তরজমার সময় কোরআনের আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবেই করা কর্তব্য। যেখানে আল্লাহ নিজেকে ‘আমি’ বলেছেন, সেখানে আমি। যেখানে ‘আমরা’ বলেছেন, সেখানে ‘আমরা’ বলাই শুদ্ধ। এই ‘আমরা’ বহু বচনের জন্য নয়। মহত্বের জন্য। 

সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী

================

প্রশ্নঃ আমরা জানি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় । কিন্তু 'পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন স্থানে আল্লাহর শানে 'আমরা' ব্যবহার করা হয়েছে । এর কারণ কী ?

উত্তরঃ মনগড়াভাবে কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াতের অর্থ করা যাবে না । ইমাম রাযীন বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজ মতামত দ্বারা কুরআনের ব্যাপারে কিছু বলে ভুল করল, সে কুফরী করল ।

একদা আবুবকর (রাঃ)-কে একটি অক্ষরের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'যদি কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষরের ব্যাপারে এরূপ কথা বলি যেরূপ আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল না, তাহলে কোন্ আসমান আমাকে ছায়া দিবে, কোন যমীন আমাকে বিশ্রামের স্থান দিবে? আমি কোথায় যাবো আর কী করবো ? (বিস্তারিত,তাফসীর কুরতুবী মুকাদ্দামা) ।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ স্বীয় সম্মান-মর্যাদা বুঝানোর জন্য এরূপ বহুবচন শব্দ (নাহনু-আমরা) ব্যবহার করেছেন । সেকারণে 'নবীদের কাহিনী' বইয়ে সংশ্লিষ্ট আয়াতে যেখানে বহুবচনের শব্দ এসেছে সেখানে বহু বচনেরই অর্থ করা হয়েছে । মূলতঃ আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব বুঝানের জন্যই বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে । যেটা ভাষার অলংকারের মধ্যেও পড়ে । [from Monthly At-Tahreek, june-2010]

================

প্রশ্ন : (ক) কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা নিজের জন্য কোথাও সীগায়ে ওয়াহিদ (একবচন) ব্যবহার করেছেন আবার কোথাও সীগায়ে জমা (বহুবচন) ব্যবহার করেছেন। আবার কোথাও একই আয়াতে সীগায়ে ওয়াহিদ ও জমা উভয়টি ব্যবহার করেছেন। যেমন
فَذَرْنِي وَمَنْ يُكَذِّبُ بِهَذَا الْحَدِيثِ سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ ، وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ (القلم : 44)
তো আল্লাহ তাআলার জন্য ব্যবহৃত সীগায়ে ওয়াহিদ ও জমা-এর বাংলা অনুবাদে আমরা সাধারণত কোনো পার্থক্য করি না; বরং সর্বাবস্থায় সীগায়ে ওয়াহিদ দ্বারাই অনুবাদ করে থাকি।
আরবী আদব ও তাফসীরের সাথে মুনাসাবাত রাখেন এমন একজন আলেমের জোরালো দাবি হচ্ছে, ‘আলোচ্য ক্ষেত্রসমূহেও তরজমায় ওয়াহিদ ও জমার পার্থক্য করা জরুরি। অন্যথায় তা হবে কুরআনে কারীমের বালাগাত পরিপন্থী এবং তাহরীফে মা‘নবীর সূক্ষ্ম একটি প্রকার’।
তিনি বলেন, ফার্সী, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় রচিত কুরআনুল কারীমের তরজমাগুলোতে এ ধরনের স্থানেও ওয়াহিদ ও জমার পার্থক্য করা হয়েছে। কিন্তু বাংলা তরজমাগুলোতে এই পার্থক্যটা করা হয়নি। তবে ব্যতিক্রম হল, ইংরেজি তরজমা  থেকে যারা বাংলা অনুবাদ করেছেন, তারা অবশ্য উপরোক্ত পার্থক্য রক্ষা করেছেন।
অতএব নিমেণাক্ত প্রশ্ন দুটির বিসত্মারিত উত্তর জানানোর জন্য বিশেষভাবে আবেদন করছি।
(ক) কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে জমার সীগা ব্যবহারের হেকমত কী?
(খ) আরবী ও বাংলা সাহিত্য অনুসারে এবং তরজমাতুল কুরআনের উসূল মোতাবেক এ ধরনের জমার সীগার বাংলা তরজমা কী হওয়া উচিত? এবং এ বিষয়ে ঐ আলেমের বক্তব্য কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আল্লাহ তাআলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
উত্তর: আল্লাহ তাআলার কালাম কুরআনুল কারীমের ভাষা হচ্ছে খাঁটি ও বিশুদ্ধ আরবী ভাষা। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : وهذا لسان عربي مبين (আর এটা সুস্পষ্ট আরবী ভাষা)। অর্থাৎ এই আরবী কুরআনের ভাষা হল, আরবী ভাষার অনন্য সাধারণ বাকরীতিসম্মত এবং আরবীর অনুপম অলংকার ও সাহিত্যগুণসম্পন্ন।
সুতরাং কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলার শানে যে ‘যমীরে মুতাকালিস্নম’ বা বক্তাপক্ষের[1] কোথাও একবচনের সর্বনাম, কোথাও বহুবচনের সর্বনাম এবং কোথাও পাশাপাশি একবচন ও বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়েছে, তা আরবী বাকরীতি ও অলংকারসম্মত হবে বৈকি। আল্লাহ তাআলা সব দিক থেকে এক অদ্বিতীয় ও ‘লা-শারীক’-এই বিবেচনায় তাঁর সম্বন্ধে একবচনের সর্বনাম ব্যবহার হতে পারে। আবার আল্লাহ তাআলা হলেন মহামহিম, সার্বভৌমত্বের মালিক এবং সকল গুণাবলীর আধার- এই মহিমা ও গুণাবলীর বহুত্ব বরং অসীমতা ও অপরিমেয়তার বিবেচনায় তাঁর সম্বন্ধে বহুবচনের যমীর ও সর্বনাম ব্যবহার হতে পারে।
আরবী ভাষায় কোনো মহান ও সম্মানিত ব্যক্তির জন্য বহুবচনের ব্যবহার সুপরিচিত। এটিকে সম্মানার্থে বহুবচন বলা হয়।বরং এটিকে অনেক আরবী ভাষাবিদ ‘বহুবচন’ না বলে ‘মহিমাজ্ঞাপক একবচনের সর্বনাম’ বলেছেন। তাঁদের ভাষায় এর নাম হলো: ضمير العظمة، نون العظمة، ضمير المتكلم المعظم نفسه، ضمير المتكلم الواحد المطاع، لفظ المتكلم المطاع ইত্যাদি। [2]
ফার্সি-উর্দু-হিন্দীতে কি সাহিত্যের ভাষা, কি কথ্য ভাষা উভয়টাতেই সমানভাবে বক্তাপক্ষ ও শ্রোতাপক্ষের সর্বনামে সম্মানার্থে বহুবচনের প্রয়োগ সুপ্রচলিত। এছাড়া উর্দূ-হিন্দীতে ‘আপ’এই বিশেষ সর্বনামটি সম্মানার্থে শ্রোতা ও অন্যপক্ষের জন্যে ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব ভাষাভাষী এবং এসব ভাষার সাথে পরিচিত যে কোনো ব্যক্তিই এ বিষয়টি  সম্পর্কে ওয়াকিফহাল, এসব ভাষার যে কোনো অভিধান ও ব্যাকরণগ্রন্থেই এ বিষয়টির উলেস্নখ পাওয়া যাবে। নমুনাস্বরূপ দেখা যেতে পারে : ‘ফীরুযুল লুগাহ’ (‘হাম’ ও ‘তোম’ শব্দ দুটি) এবং ‘উর্দু ছারফ ও নাহব’, বাবায়ে উর্দু, ড. আব্দুল হক, উর্দু একাডেমী, করাচি (যমীরের আলোচনা)।
পক্ষান্তরে আমাদের আধুনিক বাংলা ভাষায় সম্মানার্থে বহুবচনের ব্যবহার অজ্ঞাত। এ ছাড়া বাংলা ভাষার একটি বৈশিষ্ট্য হল, এতে ক্রিয়া ও সর্বনামের  সাধারণ, অন্তরঙ্গ বা তুচ্ছতাবোধক এবং গৌরববাচক বিশেষরূপ রয়েছে। যথা : মধ্যম ও প্রথম পুরুষে বলা হয়: তুই চলিস, তুমি চল, আপনি চলেন, সে চলে, তিনি চলেন। (ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, পৃ. ৪৩০)
আর বক্তাপক্ষে একবচনের ‘আমি’ সর্বনামটি সাধারণরূপ। সকলেই নিজের সম্বন্ধে এটি ব্যবহার করতে পারেন, তবে মৌলিকভাবে ‘আমি’ সর্বনামটি মান্যার্থে ব্যবহৃত এবং ‘মুই’ সর্বনামটি তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত। (দ্রষ্টব্য : বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ড. মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ পৃ. ৭৫)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন: ‘মুই’ এককালে উত্তমপুরুষ সর্বনামের সাধারণ ব্যবহারে প্রচলিত ছিল, প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে তা দেখতে পাই। ‘আমহি’ ক্রমশ ‘আমি’ রূপ ধরে ওকে করল কোণঠাসা, ও রইল গ্রাম্য ভাষার আড়ালে। সেকালের সাহিত্যে ওকে দেখা গেছে দীনতা প্রকাশের কাজে। যেমন মুঞি অতি অভাগিনী। নিজের প্রতি অবজ্ঞা স্বাভাবিক নয়  তাই ওকে সংকোচে সরে দাঁড়াতে হল। কিন্তু মধ্যম পুরুষের বেলায় যথাস্থানে কুণ্ঠার কোনো কারণ নেই, তাই ‘তুই’ শব্দে বাধা ঘটেনি, নীচের বেঞ্চিতে ও রয়ে গেল।’ ‘তুহিঁ’ ‘তুমি’ রূপে ভর্তি হয়েছে উপরের কোঠায়। এরও গৌরবার্থ অনেকখানি ক্ষয়ে গেল, বোধ করি নির্বিচার সৌজন্যের আতিশয্যে। তাই উপরওয়ালাদের জন্যে আরও একটা শব্দের আমদানি করতে হয়েছে, ‘আপহিঁ’ থেকে ‘আপনি’। (দ্রষ্টব্য : বাংলা ভাষার পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরিচ্ছেদ-১৪)
মজার বিষয় হল, বাংলা ভাষায় সম্মানসূচক উপরোক্ত সর্বনামগুলো ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুসারে গৌরবে বহুবচন থেকেই উৎপন্ন। ভারতীয় ভাষাতত্ত্বের প্রখ্যাত পন্ডিত ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন- একবচনের রূপ ‘তুই’ তুচ্ছতাবোধক হইয়া দাঁড়ালে বহুবচনের ‘তুমি’ গৌরবে বা আদরে একবচনের রূপ ধারণ করে। তদনন্তর ‘তুমি’-এর নূতন বহুবচনের রূপ ‘তোমরা’ প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। ‘তুই-মুই করা’- এই বাক্যে ‘তুই মুই’ পদদ্বয়ের দ্বারা তুচ্ছতা বা অসম্মানজ্ঞাপক প্রয়োগের কথা সূচিত হইতেছে। (দ্রষ্টব্য : ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ, পৃ. ২৭৭)
তুলনামূলক ব্যাকরণের আলোচনায় তিনি লিখেছেন: ‘গৌরবে বহুবচনের প্রয়োগ হইতে উৎপন্ন কতকগুলি সর্বনামের গৌরবে প্রয়োগ বাঙ্গালাতে দেখা যায়। সংস্কৃতে উহা অজ্ঞাত। যথা : এ-ইনি, সে-তিনি, তাহার-তাঁহার’ ইত্যাদি।’
(দ্রষ্টব্য : প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৩০; আরও দ্রষ্টব্য : বাংলা ভাষার পরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পরিচ্ছেদ -১৪)
একইভাবে, মান্যার্থে ব্যবহৃত এক বচনের ‘আমি’ মূলে বহুবচন ছিল। ভাষা তাত্ত্বিক ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে লিখেছেন- ‘প্রাচীন বাঙ্গালায় ‘মুই’ মূলত : একবচনের পদ। আমি (আহ্মি = আমহি, আহ্মে = আমহে) বহুবচনের; আসামীতে এখনও মুই একবচনে ও আমি বহুবচনে ব্যবহৃত হয়। তদ্রূপ উড়িয়াতে ‘মুঁ’ (একবচন) ‘আম্ভে’ বহুবচন, হিন্দুসত্মানীতে ‘মৈঁ’ (একবচন), ‘হম’ (বহুবচন)। বহুবচনের ‘আমি’ ক্রমে একবচনেও ব্যবহৃত হইতে থাকে। এবং একবচনের ‘মুই’ বিরল-প্রচার বা অপ্রচলিত হইয়া যায়। ‘আমি’ তখন পুরোপুরি একবচনেরই পদ হইয়া দাঁড়ায়, এবং বহুবচনের জন্য ‘আমি’ হইতে ‘আমরা-সব’, ‘আমরা’ প্রভৃতি নূতন রূপের সৃষ্টি হয়। (দ্রষ্টব্য : ভাষা-প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ পৃ. ২৭২) আরও দ্রষ্টব্য : বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান : (আমি, অহং, অস্মদ, আহ্মা); বাংলা একাডেমী, বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান; (আমি, আমী শব্দের বিবর্তন)
ইংরেজি ভাষায়ও সম্মানার্থে উত্তমপুরুষের বহুবচনের প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। দৃষ্টান্ত স্বরূপ ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পক্ষ হতে ভারতের প্রধান ও জনগণের প্রতি ঘোষণাপত্রের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ঘোষণাপত্রটির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ এখানে উল্লেখ করছি-
Whereas, for divers weighty reasons, We have resolved, by and with the advice and consent of the lords Spiritual and Temporal, and Commons, in Parliament assembled, to take upon Ourselves the Government of the Territories in India heretofore administered in trust for Us by the Honorable East India Company:
Now, therefore, We do by these presents notify and declare that, by the advice and consent aforesaid, We have taken upon Ourselves the said Government; and We hereby call upon all OurSubjects within the said Territories to be faithful, and to bear true Allegiance to UsOur Heirs, and Successors, and to submit themselves to the authority of those whom We may hereafter, from time to time, see fit to appoint to administer the Government of Our said Territories, in Our name and on Our behalf:
 (Queen's proclamation, P-2) উপরোক্ত উদ্বৃতিতে রাণী ভিক্টোরিয়ার জন্য সম্মানার্থে প্লুরাল রূপ ব্যবহার করা হয়েছে। ইংরেজিতে একে 'Royal we' বলা হয়। দ্রষ্টব্য: Oxford Advanced Learner's Dictionary, P-1337 কিন্তু বর্তমান ইংরেজি সাধারণ কথ্য ভাষায় ও সাহিত্যের ভাষায় এর প্রচলন কতটুকু তা এমুহূর্তে আমার জানবার সুযোগ হয়নি। এ বিষয়ে ইংরেজি ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকদের শরণাপন্ন হওয়া দরকার।
যাহোক, বিভিন্ন ভাষায় ব্যক্তির মর্যাদা ও গৌরব প্রকাশের জন্য একবচনের স্থলে বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়ে থাকে। এর কারণ সম্ভবত এই যে, একজন মান্য ও বরেণ্য ব্যক্তি সাধারণত একলা থাকেন না, বা নিঃসঙ্গ ও নিঃসহায় হন না। বরং তাঁর সাথে থাকে তাঁর সহচর ও সহযোগী, খাদেম ও সেবক এবং ভক্ত ও সমর্থক।
তিনি যদি হন কোনো সম্রাট বা সম্রাজ্ঞী কিংবা রাষ্ট্রপ্রধান তবে তো তাঁর সাথে থাকবে উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতা এবং আজ্ঞাবহ বিভিন্ন বাহিনী। এই বিবেচনায় একজন মান্য ও মহৎ ব্যক্তির পক্ষে বহুবচনের সর্বনাম প্রয়োগ তাঁর গৌরব ও মাহাত্ম্যের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। এ ধরনের ব্যাখ্যাই হাফেজ সালাহুদ্দীন খলীল সাফাদী (মৃত্যু : ৭৬৪ হি.) পেশ করেছেন। দেখুন : নুছরাতুছ-ছায়ির আলাল মাছালিছ সায়ির (১/৭১, আল মাকতাবাতুশ শামিলা সংস্করণ)
ইমামুন নাহব রযীউদ্দীন মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (মৃত্যু : ৬৮৬ হি.) ‘আল ওয়াফিয়া শারহুল কাফিয়া’ গ্রন্থে  (ফেয়েলে মুযারের বহছ ৪/১৮)- যা ‘শরহুর রযী’ নামে প্রসিদ্ধ- বলেন:
 ويقول الواحد المعظم أيضا : نفعل وفعلنا، وهو مجاز عن الجمع لعدهم المعظم كالجماعة অর্থাৎ সম্মানী ও মহান ব্যক্তি একজন হলেও বহুবচনের সর্বনাম ব্যবহার করে বলেন,  نفعل বা فعلنا । এটি বহুবচনের রূপকার্থ হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কারণ, একজন মহান ব্যক্তি একাই অনেক জনের সমষ্টিতুল্য।
তবে কুরআনে কারীমে যে বহুবচনরূপী ضمير العظمة (মহিমাব্যঞ্জক সর্বনাম) ব্যবহার হয়েছে তা নিজস্ব ব্যঞ্জনা এবং শব্দালংকার ও অর্থালংকারে সমৃদ্ধ। এ বিষয়ে ‘তাফসীরুল কুরআন’-এর অনেক কিতাবে সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহে কোথাও সংক্ষিপ্তভাবে এবং কোথাও কিছুটা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে অতি সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয় পেশ করছি :
এক. পূর্বোক্ত ব্যাখ্যা অনুসারে আল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে বহুবচনরূপী ضمير المتكلم الواحد المعظم نفسه ব্যবহারের একটি উদ্দেশ্য হল- তাঁর শানে জালাল ও মহিমা এবং সব বিষয়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অভিব্যক্তি প্রকাশ করা। অর্থাৎ এখানে এমন একটি আবহ তৈরি হয় যেন মহামহিম আল্লাহ ضمير العظمة-এর মাধ্যমে আপন মহিমায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। ফলে শ্রোতাগণের উপর মহিমা ও গৌরবের এমন তাজাল্লীর বিচ্ছুরণ হয় যা আয়াতের ভাব ও মর্মবাণীকে তাদের অন্তরের গভীর অনুভূতির সাথে পূর্ণ একাত্ম করে দেয়। কুরআনী বালাগাতের এই রহস্য সম্পর্কে নিমেণাক্ত তাফসীরগ্রন্থগুলো দেখা যেতে পারে-
(১) নাযমুদ দুরার ফি তানাসুবিল আয়াতি ওয়াস সুয়ার, হাফেজ বুরহানুদ্দীন আল বিকায়ী (মৃত্যু : ৮৮৫ হি.)। এতে ‘যমীরুল আযামাহ’-এর প্রতিটি স্থানের তাফসীর দেখার মত। কারণ এতে প্রতিটি স্থানে ‘যমীরুল আযামাহ’-এর তাফসীর সযত্নে পুনরুক্ত হয়েছে।
(২) আল কাশশাফ, জারুল্লাহ যমখশারী (মৃত্যু : ৫৩৮ হি.) (দ্রষ্টব্য : সূরা ত্বহা ১-৪, ৫৩; সূরা নামল : ১৬ আয়াতসমূহের তাফসীর)
(৩) আল বাহরুল মুহীত, আবূ হায়্যান আন্দালুসী, (মৃত্যু : ৭৪৫ হি.) (বিশেষত সূরা বাকারা-২৩, ৩৪, ৪৯ আয়াতসমূহের তাফসীর দ্রষ্টব্য)
(৪) তাফসীরু আবিস সুউদ, কাযী আবুস সুউদ আল হানাফী (মৃত্যু : ৯৮২ হি.)
(৫) আশরাফুত তাফাসীর, (বিভিন্ন আয়াত সর্ম্পকে  হযরত থানভী রাহ. -এর তাফসীরের সংকলন) ২/৯৪, ৩/৮৯-৯০
কুরআনুল কারীমে ضمير العظمة প্রয়োগের মাধ্যমে শানে জালাল ও মহিমা প্রকাশের বিশেষ কিছু ক্ষেত্র লক্ষ করা যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপ কিছু ক্ষেত্রের উল্লেখ এখানে করা হচ্ছে :
(ক) مقام الأمر والنهي- অনুজ্ঞা ও নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে। যেমন-
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ (البقرة 3434:2)
وَقُلْنَا يَا آَدَمُ اسْكُنْ أَنْتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا (البقرة ২: ৩৫)
قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا (البقرة ২: ৩৮)
قُلْنَا يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَى إِبْرَاهِيمَ  (الأنبياء 69:21)
وَقُلْنَا مِنْ بَعْدِهِ لِبَنِي إِسْرَائِيلَ اسْكُنُوا الْأَرْضَ                                                         (الإسراء1104:17 )
وَقُلْنَا لَهُمُ ادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا  (النساء 154:4)
 وَقُلْنَا لَهُمْ لَا تَعْدُوا فِي السَّبْتِ (النساء 154:4)
(খ) مقام إهلاك الكافرين وتعذيبهم কাফেরদেরকে ধ্বংস ও শাসিত্ম প্রদান প্রসঙ্গে। এর অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন-
 فَفَتَحْنَا أَبْوَابَ السَّمَاءِ بِمَاءٍ مُنْهَمِرٍ (سورة القمر 11:54)
نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَى عَذَابٍ عَظِيمٍ  (سورة التوبة 101:9)
(গ) مقام التوبيخ ومقام التهويل তিরস্কারের স্থলে এবং কোনো কিছুর ভয়াবহতা বর্ণনা প্রসঙ্গে।
(ঘ) مقام الامتنان بالفضل والعطاء আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ কোনো দান ও অনুগ্রহের আলোচনা প্রসঙ্গে। যেমন-
إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا (سورة الفتح 48:1)
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ----  (سورة الكوثر 1:108)
(ঙ) مقام مقام الامتنان بالخلق والرزق والإحياء والبعث والتفضيل সৃজন, রিযিক দান, মৃত্যুর পর পুনরায় জীবন দান ইত্যাদির আলোচনা প্রসঙ্গে। এর অনেক উদাহরণ রয়েছে।
(চ) অধিকতর বড় কোনো নিআমতের উলেস্নখ প্রসঙ্গে। যেমন-
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُمْ مِنْ آَلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ (البقرة২ : ২৪)  
দ্রষ্টব্য : আল বাহরুল মুহীত- আবু হায়্যান, ১/২৭৩,
দুই. ‘মুতাকাল্লিম’ বা বক্তাপক্ষের ضمير العظمة-এর বাচনভঙ্গি অত্যন্ত উচ্চমর্যাদার বালাগাতমন্ডিত হয়ে থাকে। কারণ এতে বালাগাতের পরিভাষায় "الالتفات" এবং "التفنن" নামক দুটি সৌন্দর্য তৈরি হয়। الالتفات হল বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে বক্তব্যের যমীর বা সর্বনামের ধারা পরিবর্তন করা। এর বিভিন্ন ধরন ও প্রকার রয়েছে। আমরা কুরআনে কারীমে লক্ষ করেছি যে, যেখানেই আল্লাহ তাআলা সম্বন্ধে বহুবচনরূপী ضمير العظمة ব্যবহৃত হয়েছে সেখানেই এর পূর্বে বা পরে তাঁর সম্বন্ধে ইসমে যাহের কিংবা যমীরে ওয়াহেদ গায়েব তথা অন্যপক্ষের একবচনের সর্বনাম কিংবা ওয়াহেদ মুতাকালিস্নম তথা বক্তাপক্ষের একবচনের সর্বনাম ব্যবহার হয়েছে। এতে যেমন بلاغة الالتفات -এর সৌন্দর্য এসেছে তেমনি গৌরব ও সম্মানার্থে একবচনের জায়গায় বহুবচনের রূপ ব্যবহারের বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে বুঝে এসেছে।
প্রতিটি التفات -এর স্থানগত সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি নিজস্ব সৌন্দর্যও রয়েছে। যেমন আকস্মিক ধারা পরিবর্তন দ্বারা ‘তাফান্নুন’ ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়, ফলে শ্রোতা সচকিত হয়ে বিষয়বস্ত্তর প্রতি অধিকতর মনোযোগী হয়। সেই সাথে কালাম ইজাযপূর্ণ ও সুসংক্ষিপ্ত হয়। তাছাড়া ইলতিফাত দ্বারা উদ্দিষ্ট ভাব ও মর্মটি ইঙ্গিতে প্রকাশ করা হয়। আর ইঙ্গিতময়তা প্রত্যক্ষভাষণের চেয়ে আকর্ষণীয় হয়ে থাকে।
তিন. হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রাহ.সহ কারো কারো মতে ضمير العظمة ব্যবহারের একটি হিকমত বা অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য কোথাও কোথাও এদিকে ইঙ্গিত করা যে, আলোচ্য কাজটি আল্লাহ তাআলার হুকুমে তাঁর সেসকল কর্মীবাহিনী ও ফেরেশতাগণ আঞ্জাম দিয়ে থাকেন, যাদেরকে তিনি তাঁর তাকবীনী হুকুম কার্যকর করার জন্য নিযুক্ত রেখেছেন।
বলাবাহুল্য, মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর এ সৃষ্টিজগতের পরিচালনার জন্য কারো মুখাপেক্ষী নন। আর এ জন্যই তিনি পৃথিবীর রাজা-বাদশাহদের মতো নন, যাদের প্রয়োজন হয় উযীর বা মন্ত্রীর এবং বিভিন্ন বাহিনীর। আল্লাহ হলেন কুল জাহানের স্রষ্টা ও পালনকর্তা। তিনি আবার কার মুখাপেক্ষী? বরং সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী। তাঁর শান তো এই-
 إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ  (سورة يس ৮২:৩৬)
আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন হিকমত ও উদ্দেশ্যে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত রেখেছেন। তাদের নিজস্ব কোনো ইচ্ছা বা ইখতিয়ার নেই। তারা কেবল আল্লাহ তাআলার হুকুম তামীল করেন। তাদেরকে যে কাজেরই নির্দেশ দেয়া হয় সেটাকেই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে আঞ্জাম দেন। সুতরাং আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট এবং তাঁর পূর্ণ আজ্ঞাধীন ও নিয়ন্ত্রনাধীন হওয়ার কারণে যদি ফেরেশতাদের কথা মহান আল্লাহ তাআলার সাথে বহুবচনরূপী ضمير ضمير العظمة -এর মধ্যে উল্লিখিত হয় তবে তা আল্লাহর নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অভিব্যক্তিই প্রকাশ করবে এবং এতে তাঁর গৌরব ও মহিমাই ফুটে উঠবে।ضمير العظمة -এর এই হিকমত ও রহস্য সম্পর্কে নিমেণাক্ত কিতাবসমূহ দেখা যেতে পারে।
(ক) মাজমূউল ফাতাওয়া- শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ৩/৬৫, ৫/৫০৮-৫০৯, ১৩/১৪৫,২৭৬
(খ) নাযমুদ দুরার, বুরহানুদ্দীন বিকায়ী, (সূরা আরাফ : ১৮২, সূরা কলাম : ৪৪, সূরা তূর : ৪৮ আয়াতসমূহের তাফসীর)
চার. মুতাকাল্লিম বা বক্তাপক্ষের ضمير العظمة -এর একাধিক ব্যঞ্জনার্থ রয়েছে। যেমন, ইসনাদ কিংবা ইযাফাতের মাধ্যমেضمير العظمة -এর দিকে সম্বন্ধকৃত বিষয়ের প্রতি শ্রোতার অন্তরে সমীহবোধ জাগ্রত করা। মুসনাদের প্রতি ইহতেমাম ও যত্ন প্রদর্শন করা। মুসনাদের বিশেষত্ব প্রকাশ করা। আদিষ্ট বিষয়ের প্রতি সম্বোধিত ব্যক্তির অন্তরে অধিকতর গুরুত্ববোধ সৃষ্টি করা এবং কোনো কিছুর ভয়াবহতা তুলে ধরা। অথবা কোনো কিছু শুধু আল্লাহ তাআলাই করতে পারেন, এই ইখতেসাস ও বিশেষায়ণ ইত্যাদি ভাব ও মর্মের ব্যঞ্জনা। উদাহরণস্বরূপ নিমেণাক্ত আয়াতগুলোর তাফসীর দ্রষ্টব্য:
وَإِنْ كُنْتُمْ فِي رَيْبٍ مِمَّا نَزَّلْنَا عَلَى عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِنْ مِثْلِهِ  (البقرة 3223:2 )
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا (الأعراف  64:7)
وَمَنْ رَزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا (النحل 75:16)
إِنَّا أَعْتَدْنَا لِلظَّالِمِينَ نَارًا أَحَاطَ بِهِمْ سُرَادِقُهَا         (الكهف 29:18)
فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ        (القيامة 18:75)
وَاللَّهُ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَسُقْنَاهُ إِلَى بَلَدٍ مَيِّتٍ  (الفاطر:  9:35)
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا   (الأنعام  34:6)
উপরোক্ত আয়াতগুলোর তাফসীর ‘তাফসীরে রুহুল মা‘আনী’, ‘নাযমুদ দুরার’, ‘তাফসীরু আবিস সুউদ’ থেকে বিশেষভাবে দেখা যেতে পারে।
পাঁচ. উপরোক্ত কারণসমূহ ছাড়াও শব্দগত, অর্থগত এবং প্রসঙ্গের পারিপার্শ্বিকতার সূক্ষ্ম বিচারেও যমীরে ওয়াহেদ এবং বহুবচনরূপী ‘যমীরুল আযামাহ’ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে তাফসীরে রুহুল মাআনী ও তাফসীরু আবিস সুউদ থেকে নিমেণাক্ত আয়াতসমূহের তাফসীর দেখা যেতে পারে:
وَلَوْ شِئْنَا لَآَتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدَاهَا وَلَكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّي لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (سورة السجدة 113:32)
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُمْ مِنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ ، وَأُمْلِي لَهُمْ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ (سورة الأعراف 182:7)
তরজমা ও তরজমাতুল কুরআন প্রসঙ্গ
ضمير العظمة -এর বাংলা তরজমা সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশের আগে তরজমা এবং তরজমাতুল কুরআন সংক্রান্ত মৌলিক কয়েকটি কথা আলোচনা করা প্রয়োজন।
(ক) তরজমা ও অনুবাদের প্রচলিত মূল অর্থ ভাষান্তর। এ অর্থে যে কোনো গ্রন্থ বিশেষত সাহিত্যগুণসম্পন্ন কোনো কিছু এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় যথার্থ তরজমা করা সত্যিকার অর্থেই এক দুরূহ কাজ। একথা বহুবার বহুজন বলেছেন। কেননা প্রত্যেকটি ভাষা আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। প্রত্যেক ভাষাতেই আছে তার নিজস্ব প্রকাশরীতি, প্রতীকী বাকভঙ্গিমা ও অভিব্যক্তি। তাই ভাষাগত ঐসব বৈশিষ্ট্যের অনুবাদ সহজ নয়। এই কারণে অনেক সময় কোনো সাহিত্য এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় আক্ষরিক অনুবাদ করতে গেলে আড়ষ্ট হয়ে যায় এবং তাতে মূলের ভাবোদ্দীপনা সঞ্চারিত হয় না। আর যদি অনুবাদের ভাষাকে পুষ্পিত, লালিত্যপূর্ণ ও গতিময় করবার জন্য মূলের ভাবটা দিয়ে সেটাকে নতুন করে সৃষ্টি করা হয়; শব্দ, বাক্য, উপমা, প্রবাদ, বাগধারা স্বাধীনভাবে পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন করা হয়, তবে তো তাকে আর নিছক তরজমা বা অনুবাদ বলা যায় না। এটাকে তরজমার ভাষায় মূলের তরজুমানী ও প্রতিনিধিত্ব বলা যেতে পারে। সুতরাং তরজমা মূলানুগ হওয়ার পাশাপাশি স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সেটা হবে যদি তরজমার ভাষাটা ভাষার স্বাভাবিক বাগভঙ্গিমা ও প্রকাশরীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
(খ) বাস্তব সত্য এই যে, আল্লাহর কালাম কুরআনুল কারীমের যথাযথ তরজমা করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। কারণ কুরআন হলো كلام معجز (অক্ষমকারী কালাম),যার সমতুল্য ছোট একটি সূরাও তৈরি করা সম্ভব নয়। মূল আরবী ভাষায়ও সম্ভব নয় এবং অন্য কোনো ভাষায়ও সম্ভব নয়। জিন ও ইনসান মিলেও যদি চেষ্টা করে তবু নয়। তাছাড়া কুরআন হল আরবী নযম ও শব্দ এবং অর্থ ও মর্মের সমষ্টি। কুরআনের অন্যতম প্রধান ‘ইজায’ ও অলৌকিকত্ব হল তার বালাগাত-ফাসাহাত অর্থাৎ ভাষার অনন্য সাধারণ বিশুদ্ধতা, অলংকারময়তা, গতি-স্বাচ্ছন্দ্য, ধ্বনি-গাম্ভীর্য ও ব্যঞ্জনা। তাই কুরআনের ঐসব অনন্য বৈশিষ্ট্য ও আবেদন তরজমার ভাষায় প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়।
সে কারণেই সাধারণভাবে আমরা যদিও বলি, ‘তরজমাতুল কুরআন’ কিন্তু আরবের সুবিজ্ঞ আলিমগণ অতি গভীর ও সূক্ষ্ম চিন্তা থেকে অতিরিক্ত শব্দ যোগ করে বলে থাকেন:
ترجمة معاني القرآن الكريم বা  ترجمة تفسير القرآن الكريم
(গ) উদ্দেশ্যভেদে এবং পাঠকদের রুচিবৈচিত্র্যের কারণে কুরআনুল কারীমের তরজমা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ‘বা-মোহাওয়ারাহ’ ও সরল তরজমা, আদবী ও সাহিত্যপূর্ণ তরজমা, মূলানুগ তরজমা এবং শাব্দিক ও আক্ষরিক তরজমা। এসবের প্রত্যেকটিরই রয়েছে বিভিন্ন স্তর, মাত্রা ও ধরন। তাই তরজমাতুল কুরআনের পথিকৃত আকাবির আহলে ইলমের তরজমায় বিভিন্নতা রয়েছে। এ বিষয়টি বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। এখন সে সুযোগ নেই। তবে সর্বক্ষেত্রে প্রধান শর্ত হল আয়াতের মূল আবেদন, ওহীর ভাবগাম্ভীর্য এবং কালামুল্লাহর শানে জামাল ও শানে জালাল যেন যথাসম্ভব অক্ষুণ্ণ থাকে। তেমনি ‘নযমে কুরআন’ -এর ছাপ ও ছায়াও যদ্দুর সম্ভব রক্ষিত থাকে।
(ঘ) কুরআনের আরবী ভাষা ও আমাদের হিন্দুস্তানী ভাষাসমূহের বাকরীতি, বাক্যকাঠামো এবং পদবিন্যাসে বিস্তর ফারাক রয়েছে। এ কারণে মূল আরবীর হুবহু অনুসরণে আক্ষরিক অনুবাদ করতে গেলে তা কখনো কখনো নিতান্ত শ্রুতিকটু ও দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। তেমনি শাব্দিক তরজমায় কুরআনে কারীমে ব্যবহৃত বিশেষ আরবী বাগধারা, অলংকার ও প্রবচনগুলোর অর্থ অনেক ক্ষেত্রেই সুস্পষ্ট হয় না। তাই সহজায়ন বা সরলায়নের জন্য অনুবাদের ভাষায় মূলের বিন্যাস ও কাঠামোতে পরিবর্তন কখনো অনিবার্য হয়, কখনো উত্তম হয়, কখনো বৈধ হয়। স্পষ্টায়নের জন্য অনুবাদের ভাষায় আরবীর বিশেষ বাগধারা, অলংকার ও প্রবচনের সমার্থবোধক বাগধারা ও অলংকার ব্যবহার করা হয়। আর যেসব ক্ষেত্রে সমার্থবোধক বাগধারা ও অলংকার পাওয়া যায় না সেসব স্থানে তরজমায় মর্মার্থ দেয়া হয় বা ভাব তরজমা করা হয়।
ফার্সী, উর্দু ও বাংলা ভাষায় রচিত নির্ভরযোগ্য তরজমাগুলো পর্যালোচনা করা হলে এবং ভূমিকা অংশ পড়া হলে উপরোক্ত কথাই বুঝে আসে। বিশেষত নিমেণাক্ত তরজমাগুলোর ভূমিকা দ্রষ্টব্য:
১। তরজমায়ে শাইখুল হিন্দ
২। তাফসীরে মাজেদী
৩। হক্কানী তাফসীর, ছদর ছাহেব রাহ.
৪। এমদাদিয়া লাইব্রেরী কর্তৃক প্রকাশিত ‘বঙ্গানুবাদ নূরানী কোরআন শরীফ’ (যা কয়েকজন আকাবির আহলে ইলম কর্তৃক সম্পাদিত)
৫। আলকুরআনুল কারীম (বঙ্গানুবাদ) ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ। (যা দেশের বিশিষ্ট আহলে ইলম, ভাষাবিদ এবং সাহিত্যিকদের তত্ত্বাবধানে প্রস্তুত করা হয়েছে।)
ضمير العظمة -এর বাংলা অনুবাদ প্রসঙ্গ
প্রাচীন বাংলা ভাষায় ‘গৌরবে বহুবচন’ বলে একটি বিষয় ছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার এখনকার যা স্বাভাবিক প্রকাশরীতি- বিশেষত কথ্যভাষা, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ভাষা- তাতে ‘গৌরবে বহুবচন’ জনসাধারণের কাছে একেবারেই অজ্ঞাত। অধিকন্তু বাংলা ভাষায় সর্বনাম ও ক্রিয়ার গৌরবসূচক বিশেষ রূপ ব্যবহার হয়ে থাকে, যা পূর্বেই আমরা আলোচনা করেছি। এজন্যই সম্ভবত বাংলাভাষার আধুনিক শব্দকোষ ও ব্যাকরণগ্রন্থে ‘গৌরবে বহুবচনে’র উল্লেখ করা হয় না। বরং শ্রোতা ও অন্যপক্ষের সর্বনামের সাধারণ, মানী এবং অন্তরঙ্গ বা তুচ্ছতাবোধক- এই তিনটি রূপ উল্লেখ করা হয়।
বর্তমান বাংলা ভাষায় একবচনের জায়গায় বহুবচন ব্যবহারের নযীর আছে। কিন্তু তা ‘গৌরবে’ নয়। বিনয় প্রকাশের জন্য। ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ-আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহার বিধি’ (পৃ. ১৫৭-১৫৮) থেকে একটি উদ্ধৃতি দেখুন- ‘বিনয়ে বহুবচনে’র প্রয়োগ দেখা যায় বাংলায়, বাচনে বা লেখায়, বক্তৃতায় বক্তা বা লেখকেরা অনেক সময় ‘আমি’ ‘আমার’ ইত্যাদি ব্যবহার না করে ‘আমরা’ ‘আমাদের’ ব্যবহার করেন: আমরা এই ঐক্যবুদ্ধিরই জয়গান গাই, আমাদের মনে হয় এ নীতি ভ্রান্ত ইত্যাদি।’
এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতা, কোনো দল বা সংগঠনের প্রধান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা কোনো মান্য ও গুরুজন নিজের কোনো সিদ্ধান্ত ও অভিপ্রায় ঘোষণা করার ক্ষেত্রে অনেক সময় ‘আমি’ ‘আমার’ না বলে, বহুবচনের ‘আমরা’ ‘আমাদের’ বলে থাকেন, এ থেকে কারো মনে হতে পারে যে, এই ‘আমরা’ ‘আমাদের’ এবং আরবী ‘যমীরুল আযামাহ’ অভিন্ন জিনিস। কিন্তু এই ধারণা বাস্তবসম্মত মনে হয় না। কারণ এ ধরনের বক্তব্যে বক্তা প্রকৃত বিচারে মাত্র একজন নন। এতে প্রধান বক্তা ও তার অধীন ও অনুগত বা ভক্ত ও সমর্থক- এই দুয়ে মিলে ‘আমরা’ ‘আমাদের’ কথাটি প্রয়োগ করা হয়। এই ‘আমরা’ তো অংশীদারিভাবে কাজটি সকলের করণীয় এই অভিব্যক্তি নির্দেশ করে। সুতরাং এটাকে -‘গৌরবে বহুবচনে’র ব্যবহার বলা চলে না। এর একটি প্রমাণ হল সম্মানী ব্যক্তিকে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে এখনকার বাংলা ভাষায় বহুবচনের প্রয়োগ নেই। বরং এর জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র শব্দ ‘আপনি’।
অতএব কুরআনী ‘যামীরুল আযামাহ’-এর অনুবাদ যদি বাংলায় বহুবচনের ‘আমরা’ ‘আমাদের’ দ্বারা করা হয় তা হবে শাব্দিক অনুবাদ। এতে আরবীর শব্দ-গৌরব, অলংকার ও ব্যঞ্জনা উঠে আসবে না। অধিকন্তু এতে বাংলাভাষী সাধারণ পাঠকের অন্তরে ‘আকিদায়ে তাওহীদ’ বিষয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে এবং প্রকাশরীতি আড়ষ্ট বা অস্বাভাবিক হওয়ায় পাঠকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কিন্তু বাংলা তরজমায় যদি ‘আমি’ ও ‘আমার’ (যাতে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনুসারে কিছুটা হলেও গৌরবার্থ রয়েছে) প্রয়োগ করা হয়, তবে মূল আরবীর পূর্ণ ব্যঞ্জনা ও আবেদন প্রকাশ না পেলেও উপরোক্ত আশংকা দুটি থেকে মুক্ত থাকবে। এসব কারণে সাধারণ পাঠকদের উদ্দেশ্যে রচিত তরজমাতুল কুরআনে কুরআনী ‘যামীরুল আযামাহ’-এর বাংলা অনুবাদ বর্তমান সময়ে ‘আমি’ ‘আমার’ করাই শ্রেয় মনে হয়। বাংলা ভাষায় তরজমাতুল কুরআনের পথিকৃত আকাবির আলেমগণ এ নীতিই অবলম্বন করেছেন। এখান থেকে সরে আসার অনিবার্য কোনো কারণ এখন আছে বলে মনে হয় না। তবে বর্তমানেও যদি শব্দে শব্দে আভিধানিক এবং ব্যাকরণিক অর্থ জানবার উদ্দেশ্যে ‘তাহতা-লফযী’ আক্ষরিক তরজমা করা হয়, তবে তা ভিন্ন কথা। এ ধরনের তরজমায় ‘যামীরুল আযামাহ’-এর অনুবাদ বহুবচনের ‘আমরা’ ও ‘আমাদের’ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, কবি গোলাম মুস্তফাসহ[3] আরো কেউ কেউ আরবী-ফার্সী-উর্দূ ও ইংরেজির অনুকরণে আরবী ‘যামীরুল আযামাহ’-এর বাংলা তরজমা বহুবচনের ‘আমরা’ ও ‘আমাদের’ দ্বারা করার যুক্তি দেখিয়েছেন। কিন্তু এই আক্ষরিক অনুকরণ সরল ও বাংলা-‘বা-মোহাওয়ারাহ’ তরজমায় সঙ্গত মনে হয় না। এর কারণগুলো ইতোপূর্বে সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে।
মনে রাখতে হবে অন্যান্য অনেক ভাষার মত বাংলা ভাষাও আজন্ম দাঁড়িয়ে থাকেনি একই জায়গায় অথবা একই চেহারায়। একদিকে যেমন অন্য নানা ভাষা থেকে নতুন নতুন শব্দ গ্রহণ ও আত্মস্থ করে সে বাড়িয়ে নিয়েছে তার শব্দভান্ডার, অন্যদিকে তেমনি ধীরে ধীরে তার প্রকাশরীতিও অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। প্রকাশরীতি ধীরে ধীরেই পাল্টায়, গায়ের জোরে রাতারাতি তাকে পাল্টানো যায় না। সুতরাং ভবিষ্যতে যদি বাংলা ভাষায় আবারও ‘গৌরবে বহুবচন’ প্রয়োগের প্রচলন ঘটে তখন সমকালীন বাকরীতি অনুসারে আরবী ‘যামীরুল আযামাহ’-এর তরজমা বহুবচন দ্বারা করা যেতে পারে।
কেবল ‘যামীরুল আযমাহ’ কেন ভাষাবিদদের মতে বাংলা ও আরবী ভাষার মাঝে সাদৃশ্য অপেক্ষা পার্থক্যই অধিক। কারণ এই দুই ভাষা সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন দুইটি ভাষা-গোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত। সংস্কৃত, বাঙ্গালা, ফার্সী, হিন্দুস্তানী ও ইংরেজি প্রভৃতি আর্য-গোষ্ঠীর ভাষার গঠন-প্রণালী ও ব্যাকরণ এবং শেমীয়-গোষ্ঠীর ভাষা আরবীর গঠন-প্রণালী ও ব্যাকরণ নানা দিক দিয়ে পরস্পর হতে খুবই পৃথক। যেমন, অনেক আরবী বর্ণের বিশুদ্ধ আরবী উচ্চারণ অনুসারে প্রতিবর্ণীকরণ সম্ভব নয়।
আরবীতে ও সংস্কৃতে ফেয়েল ও ক্রিয়ার তিনটি বচন আছে, কিন্তু বাংলায় ক্রিয়ার বচন-ভেদ নেই। একবচন ও বহুবচনে ক্রিয়ার রূপ অভিন্ন।
আরবী ও ইংরেজিতে সর্বনামের লিঙ্গভেদ রয়েছে, কিন্তু প্রমিত বাংলা ভাষায় সর্বনাম শব্দে নারী-পুরুষবাচক পার্থক্য করা হয় না। আমি, তুমি, সে, তারা, এটা, ওটা ইত্যাদি সর্বনাম স্ত্রী-পুরুষ উভয় ক্ষেত্রে একই রূপে ব্যবহৃত হয়।
আরবী ও সংস্কৃত ভাষায় সংখ্যা অনুযায়ী বিশেষ্যপদের বচন পাল্টে যায়। তাই আরবীতে বলা হয় রজুলুন, রজুলানি, রিজালুন। সংস্কৃতে বলা হয়, নর:, নরৌ, নরা:। কিন্তু বাংলায় সংখ্যা যা-ই হোক, সেই অনুযায়ী বিশেষ্যপদের বচন পাল্টানোর দরকার হয় না। তাই ১ -এর ক্ষেত্রে যা ‘মানুষ’, সংখ্যাটা ১ -এর বেশি হলেও তা মানুষই থেকে যায়, ‘দুজন মানুষেরা’ বা ‘তিনজন মানুষেরা’ লিখবার দরকার হয় না বাংলা ভাষায়। ইংরেজিতে দ্বিবচনের বিশেষ রূপ নেই, আছে শুধুই একবচন ও বহুবচন। সিঙ্গুলার ও পস্নুরাল। সংখ্যাটা ১ হলে ‘Man’, ১-এর বেশি হলেই  Men’। এ ধরনের আরো অনেক পার্থক্যই রয়েছে, যা বাংলা ভাষায় অবিকল নকল করা সম্ভব নয়।
আরবী বাকরীতি বাংলায় অপ্রচলিত হওয়ার কারণে তরজমার ক্ষেত্রে তা পরিবর্তন করে বাংলা ভাষার স্বাভাবিক বাকরীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তরজমা করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। দুটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করছি :
১. মোখাতাব ও শ্রোতার অন্তরে ভবিষ্যতে ঘটিতব্য কোনো ঘটনার সুনিশ্চয়তার বিশ্বাস বদ্ধমূল করার উদ্দেশ্যে ‘‘সীগায়ে মুসতাকবাল’’-এর পরিবর্তে ‘‘সীগায়ে মাযী’’ ব্যবহার হয়। এ ধরনের সীগায়ে মাযী-এর বাংলা তরজমা কোথাও কোথাও ‘মাযী’ বা অতীত কালের ক্রিয়া দিয়ে করা সম্ভব। কিন্তু সব জায়গায় তা খাটবে না। উদাহরণস্বরূপ কুরআনে কারীমের কয়েকটি আয়াত লক্ষ্য করুন-
(ক) সূরাতুল আরাফের ৪৩ ও ৪৪ নং আয়াত। এ আয়াতে জান্নাতী ও জাহান্নামীদের কিছু অবস্থা ও সংলাপ তুলে ধরা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ঘটবে। কিন্তু ঘটনার সুনিশ্চয়তা বোঝানোর জন্য সীগায়ে মাযী ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য ভাষায় এই ইঙ্গিতপূর্ণ ব্যবহারের প্রচলন নেই বলেই সকল নির্ভরযোগ্য তরজমায় ভবিষ্যতের ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে।
(খ) সূরাতুন নামল : ৮৭ নং আয়াত সম্পর্কেও একই কথা।
(গ) أَتَى أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ  সূরা নাহলের প্রথম আয়াত। এখানে অবশ্য বাংলায় অতীতকালের ক্রিয়া ব্যবহার করা সম্ভব। তাই তা অনেকে করেছেন। মুফতী মুহাম্মাদ তকী উসমানী দা.বা.-এর ‘আসান তরজমায়ে কুরআন’য়ে আয়াতের তরজমা ও তার টীকা দ্রষ্টব্য।
২. আরবী ভাষায় অনেক সময় মর্যাদাগত দূরত্ব ও সুউচ্চতার প্রতি ইঙ্গিত করার উদ্দেশ্যে নিকটবর্তী জিনিসের জন্য দূরবর্তী ‘ইসমুল ইশারাহ’ ذلك ، أولئك ব্যবহার হয়ে থাকে। এই প্রকাশরীতি অন্যভাষায় অপ্রচলিত। তাই এই দূরবর্তী ‘ইসমুল ইশারাহ’-এর তরজমা নিকট-নির্দেশক সর্বনাম দ্বারাই করা হয়। উদাহরণস্বরূপ কুরআনে কারীমের সূরা বাকারার ذَلِكَ الْكِتَابُ لَارَيْبَ فِيهِ    এবং
  أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ  
আয়াতের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
সর্বশেষ কথা হল, ‘গৌরবে বহুবচন’ এখনকার বাংলা ভাষায়, বিশেষত কথ্য ভাষায় জনসাধারণের কাছে অজ্ঞাত। এ অবস্থায় বাংলা অনুবাদে সম্মানার্থে ‘বহুবচন’ প্রয়োগের দরকার হয় না। সেটা রীতিও নয়। এ সত্ত্বেও যদি অন্যান্য ভাষার অনুসরণে কেউ তা তরজমাতুল কুরআনে ব্যবহার করতে চান, তবে তাঁর জন্য অবশ্যকরণীয় হল, তিনি টীকায় সতর্ক করবেন যে, এটি সম্মানার্থে বহুবচন, সংখ্যাবাচক বহুবচন নয়। l


[1] আরবী ব্যাকরণের পরিভাষায় যা মুতাকাল্লিম, হাযের ও গায়েব তা প্রচলিত বাংলা ব্যাকরণে উত্তম পুরুষ, মধ্যম পুরুষ ও প্রথম পুরুষ নামে পরিচিত। এতে মূলত সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুকরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণয়ে এ স্থলে বক্তাপক্ষশ্রোতাপক্ষ ও অন্যপক্ষ- এই পরিভাষাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে।
[2] দ্রষ্টব্য : তাফসীরুল বাহরিল মুহীত, আবূ হাইয়ান আন্দালুসী (মৃত্যু : ৭৪৫ হি.) (সূরা বাকারা : ৩৪,৩৯); আল কাশশাফ, জারুল্লাহ যমখশারী (মৃত্যু : ৫৩৮ হি.) সূরা ত্বহা : ১-৪,৫৩); রুহুল মাআনী, আলস্নামা মাহমুদ আলূসী, (মৃত্যু : ১২৭০ হি.) (সূরা আলে ইমরান : ৮৪, সাজদা : ১৩, হিজর : ১২, কাসাস : ৯); আল মুযহির ফি উলূমিল লুগাহ ওয়া আনওয়ায়িহা, সুয়ূতী : ১/৩৩৩; আন নাহবুল ওয়াফী (যমীরের আলোচনা); আল মুজামুল ওয়াসীত (নাহনু মাদ্দা)

in feed ad

dfgadsfgagasdfasdfa
asdfasdfasdfasdf

in article ad

skadj;lkjasdlkfjasldkfjl;askdf
lskdjflaksdjflaksjdflkasdff

প্রশ্ন: ৯৯ : আসসালামু আলাইকুম,পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়া স্বত্বেও কেউ যদি গলায় স্বর্ণের চেইন, হাতে স্বর্ণের রিং নিয়া নামাজ পড়লে, সেই নামাজ সহীহ হবে কি না বা তার নামাজ হবে কি না.??বিষয়টি কোরআন হাদিসের দলিলসহকারে উপস্থাপন করলে কৃতজ্ঞ থাকব। জাজাকাল্লাহু খায়ের।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
“স্বর্ণ ও রেশমী বস্ত্র আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ এবং পুরুষের জন্য সেগুলো হারাম”।
সিলসিলা আস-সাহীহাহ ১৮৬৫, ৩০৩০।
যে দুনিয়াতে স্বর্ণ পড়বে সে যদি জান্নাতে যায় তাহলে সে জান্নাতে স্বর্ণ পড়তে পারবেনা।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আমার উম্মতের যে ব্যক্তি দুনিয়াতে স্বর্ণ পরিধান করবে, আল্লাহ তার প্রতি জান্নাতের স্বর্ণ হারাম করে দিবেন”।
মুসনাদে আহমাদ,আদাবুয যিফাফ ২২২ পৃষ্ঠা।
একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সামনে এক সাহাবী স্বর্ণের আংটি পড়ে আসেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঐ সাহাবীর আংগুল থেকে আংটি খুলে ফেলে দেন।
“রাসুল (সাঃ) এক লোকের হাতে স্বর্ণের একটি আংটি দেখলেন। তিনি তা খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ”তোমাদের কোন ব্যক্তি যদি আগুনের টুকরো হাতে রাখতে চায় তাহলে সে যেনো এই আংটি হাতে রাখে”।
সহীহ মুসলিম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটিকে আগুনের টুকরা বলেছেন,
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি তার প্রিয়জনকে আগুনের কড়া বা আংটি পরানো পছন্দ করে, সে যেন তাকে স্বর্ণের কড়া বা আংটি পড়ায়”।
আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৪০১, বাংলা মিশকাত হা/৪২০৫।
--------------------------------------------------------------
QUESTION: সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পাথরের আংটি পড়া কি ঠিক?
ANSWER: সমস্যা বা বিপদ থেকে মুক্তির জন্য, কল্যানের জন্য আংটি পড়া শিরক কারণ এর দ্বারা সে আংটিকে তাকদীরের মালিক মনে করে। এছাড়াও এটা এক প্রকার তাবীজ, তাবীজ পরা সম্পূর্ণ শিরক এবং হারাম।
নিয়ত ঠেক রেখে শুধু সৌন্দর্যের জন্য আংটি পড়া যাবে, তবে পুরুষদের জন্য বিলাসবহুল আংটির পেছনে টাকা অপচয় করা ঠিকনা।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) রূপার আংটি পড়েছেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আকীক পাথরের আংটি পড়েছেন এটা একটা জাল হাদীস।
পুরুষের জন্য স্বর্ণের আংটী হারাম।

===================================



হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَجُلًا، جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ خَاتَمٌ مِنْ شَبَهٍ، فَقَالَ لَهُ: مَا لِي أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ الْأَصْنَامِ؟ فَطَرَحَهُ، ثُمَّ جَاءَ وَعَلَيْهِ خَاتَمٌ مِنْ حَدِيدٍ، فَقَالَ: مَا لِي أَرَى عَلَيْكَ حِلْيَةَ أَهْلِ النَّارِ؟ فَطَرَحَهُ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مِنْ أَيِّ شَيْءٍ أَتَّخِذُهُ؟ قَالَ: اتَّخِذْهُ مِنْ وَرِقٍ، وَلَا تُتِمَّهُ مِثْقَالًا

একদা জনৈক ব্যক্তি পিতলের আংটি পরে নবী ﷺ–এর নিকট আসলে তিনি তাকে বলেন, ব্যাপার কি, আমি তোমার থেকে মূর্তির গন্ধ পাচ্ছি কেন? একথা শুনে সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দেয়। এরপর সে ব্যক্তি একটি লোহার আংটি পরে আসলে, তিনি তাকে বলেন, আমি তোমাকে জাহান্নামীদের অলংকার পরা অবস্থায় দেখছি! তখন সে ব্যক্তি তা খুলে ফেলে দেয় এবং বলে, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমি কী ধরনের আংটি ব্যবহার করবো? তিনি ﷺ বলেন, এক মিসকাল (৪.৩৭৪ গ্রাম) ওযনের কম রূপা দিয়ে আংটি তৈরী করে তা ব্যবহার কর। (আবু দাউদ ৪২২৩ তিরমিযি ১৭৮৫ নাসায়ি ৫১৯৫)


অতএব, এরপরও কেন আপনি স্বর্ণের চেইন বা আংটি পড়ে নামাজ আদায় করবেন ?

প্রশ্ন: ৯৮: পাঁচ ভায়ের মধ্যে প্রত্যেকের উপর কুরবানী ওয়াজিব, বড় ভাই যদি প্রত্যেকের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করে দেয় তাহলে সকলের ওয়াজিব আদায় হবে কিনা?জানতে ইচ্ছুক ।

এক কুরবানী পরিবারের সবার পক্ষ থেকে হয়ে যায় মর্মে সহীহ মুসলিমে হাদীস আছে?



প্রশ্ন
From: মো: মাহবুব
বিষয়ঃ কোরবানীর মাসায়েল
একটি পরিবারে যতযন সদস্য থাকে সবার পক্ষে কোরবানির জন্য একটি বকরি যথেষ্ট।
وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، وَابْنُ، بَشَّارٍ – وَاللَّفْظُ لاِبْنِ الْمُثَنَّى – قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ، بْنُ جَعْفَرٍ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ زُبَيْدٍ الإِيَامِيِّ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ أَوَّلَ مَا نَبْدَأُ بِهِ فِي يَوْمِنَا هَذَا نُصَلِّي ثُمَّ نَرْجِعُ فَنَنْحَرُ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ أَصَابَ سُنَّتَنَا وَمَنْ ذَبَحَ فَإِنَّمَا هُوَ لَحْمٌ قَدَّمَهُ لأَهْلِهِ لَيْسَ مِنَ النُّسُكِ فِي شَىْءٍ ‏”‏ ‏.‏ وَكَانَ أَبُو بُرْدَةَ بْنُ نِيَارٍ قَدْ ذَبَحَ فَقَالَ عِنْدِي جَذَعَةٌ خَيْرٌ مِنْ مُسِنَّةٍ فَقَالَ ‏”‏ اذْبَحْهَا وَلَنْ تَجْزِيَ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ ‏”‏ ‏.‏
বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ)
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হলো সলাত আদায় করা। তারপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। যে লোক এরূপ করলো সে আমাদের সুন্নাত পালন করলো। আর যে লোক (সলাতের আগে) যাবাহ করলো, সেটা কেবল গোশ্‌ত (খাওয়ার জন্য) হলো, যা সে নিজের পরিবারের জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা করলো। সেটা কুরবানীর কিছুই হলো না। আবূ বুরদাহ্‌ ইবনু নিয়ার (রাঃ) পূর্বেই কুরবানীর নিয়্যাতে যাবাহ করে ফেলেছিলেন। তাই তিনি বললেন, আমার কাছে একটি ছয় মাসের বকরীর বাচ্ছা আছে যা এক বছরের বাচ্চার চেয়েও হৃষ্টপুষ্ট। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি সেটিই কুরবানী করো। তোমার পরে আর কারো জন্য এটা যথেষ্ট হবে না। (ই.ফা. ৪৯১৩, ই.সে. ৪৯১৭)
সহিহ মুসলিম,হাদিস নং ৪৯৬৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
(এ কথাটির সত্যতা কতটুকু, এর বিস্তারিত উত্তর পেলে খুব উপকৃত হব)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত উক্ত হাদীসের দুই হাদীস পূর্বের হাদীসটি পড়লেই এ মাসআলা পরিস্কার হয়ে যাবে। হাদীসটি পড়ুন প্রথমেঃ
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، أَنَّ خَالَهُ أَبَا بُرْدَةَ بْنَ نِيَارٍ، ذَبَحَ قَبْلَ أَنْ يَذْبَحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ هَذَا يَوْمٌ اللَّحْمُ فِيهِ مَكْرُوهٌ، وَإِنِّي عَجَّلْتُ نَسِيكَتِي لِأُطْعِمَ أَهْلِي وَجِيرَانِي وَأَهْلَ دَارِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعِدْ نُسُكًا»، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ عِنْدِي عَنَاقَ لَبَنٍ هِيَ خَيْرٌ مِنْ شَاتَيْ لَحْمٍ، فَقَالَ: «هِيَ خَيْرُ نَسِيكَتَيْكَ، وَلَا تَجْزِي جَذَعَةٌ عَنْ أَحَدٍ بَعْدَكَ
হযরত বারা বিন আযিব রাঃ থেকে বর্ণিত। তার মামা আবু বুরদা বিন নায়ার রাঃ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগেই কুরবানী করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আজকের দিনতো গোশত খাবার দিন। সুতরাং এ দিনে গোশত খেতে বিলম্ব করা অপছন্দ লেগেছে। তাই আমি আমার পরিবার-পরিজন, পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনদের গোশত খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে নামাযের আগেই আমার বকরী যবেহ করে দিয়েছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তদস্থলে আরেকটি বকরী কুরবানী কর। আমার মামা বললেন, আমার নিকট এক বছরের কম বয়সের একটি দুধের বকরী আছে, যা গোশতের দিক থেকে দু’টি বকরীর চেয়ে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমার কুরবানীর জন্য সেটাই উত্তম। তবে তোমার পরে আর কারো জন্য ছয় মাসের বকরী দ্বারা (কুরবানী) যথেষ্ট হবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৯৬১, ইফাবা-৪৯৬৪, ই:সে:-৪৯১৪]
দু’টি হাদীসকে এক সাথে করে দেখুন। উভয় হাদীস একত্র করলে পরিস্কার হচ্ছে যে,সাহাবী এক বছরের চেয়ে কম বয়সী বকরী দিয়ে কুরবানী করতে চাইলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু এবারের জন্য এক বছরের কম বয়সী বকরী দিয়ে কুরবানী করার অনুমতি প্রদান করলেন।এর পর আর এক বছরের কম বয়সী বকরী দিয়ে কুরবানী দিলে হবে না মর্মেও জানিয়ে দিলেন।
যা পরিস্কার প্রমাণ করছে, এখানে কোন বয়সী বকরী জবাই করা যাবে? আর কুরবানী করার সময় কী? এটা বুঝানো উক্ত হাদীসের মূল বিষয়।
যদি পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক সবার উপর কুরবানী আবশ্যক হয়,আর তাদের পক্ষ থেকে একজন এক বকরী কুরবানী দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবার কোন কথাই এ হাদীসে উদ্ধৃত হয়নি।
সুতরাং এ কুরবানী পরিবারের সবার জন্য যথেষ্ট হবার দাবীর স্বপক্ষে এ হাদীস পেশ করা কোনভাবেই সঠিক নয়।
আর পরিবারের প্রাপ্ত বয়স্ক কয়েকজনের উপর কুরবানী আবশ্যক হলে একজন একটি কুরবানী দিলে তা সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে না। হতে পারে না।
তবে যদি অর্থ এই ধরা হয় যে, পরিবারের একজনের উপর কুরবানী আবশ্যক। তিনি কুরবানী করলেন। তখন তার কুরবানীর গোশত পরিবারের সবার জন্যই ভক্ষণ করা জায়েজ। সেই হিসেবে যদি বলা হয় “গোশত খাবার দিক থেকে একজনের কুরবানী পরিবারের জন্য যথেষ্ট” তাহলে একথাটি ঠিক আছে।
এক পরিবারের এক সদস্যের একটি কুরবানী পরিবারের সবার জন্য গোশত খাবার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সবার কুরবানীর জন্য তা যথেষ্ট হতেই পারে না।
কারণ,কুরবানী একটি ইবাদত। আর ইবাদত প্রতিটি ব্যক্তির উপর আলাদা আবশ্যক হয়। একজনের ইবাদত দ্বারা আরেকজনের ইবাদত আদায় হয় না। শুধু সওয়াব পৌঁছানো যেতে পারে। যেমন নামায আদায় করে অপরের জন্য সওয়াব পাঠানোর নিয়ত করল। এর দ্বারা সওয়াব পৌঁছবে। কিন্ত অপরের নামায আদায় হবে না।
আরো পরিস্কার করে বলি!
এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন কুরবানী আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে কিছুতেই কুরবানী আদায় হবে না। এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন রোযা রাখলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হবে?
এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন হজ্ব করলে সবার পক্ষ থেকে হজ্ব আদায় হবে?
এক পরিবারের পক্ষ থেকে একজন সদকায়ে ফিতির আদায় করলে সবার সদকায়ে ফিতির আদায় হয়ে যাবে?
একজন নামায পড়লে সবার আদায় হবে?
যদি না হয়,তাহলে একজন কুরবানী করলে সবার আদায় হবে কিভাবে?
নামায, রোযা, হজ্বের মত কুরবানীও একটি ইবাদত। যা প্রতিটি ব্যক্তির উপর আলাদাভাবে আবশ্যক হয়। একজন আদায় করলে আরেকজনের আদায় হবে কিভাবে? এটিতো একটি অযৌক্তিক ও হাস্যকর কথা।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ [٥٣:٣٨
কিতাবে এই আছে যে,কোন ব্যক্তি কারও বোঝা নিজে বহন করবে না। [সূরা নাজম-৩৮}
কিছু হাদীসের মাধ্যমে যে বুঝা যায় যে, সাহাবাগণ প্রথম যুগে পুরো পরিবারের মাঝে একনজই কুরবানী করতেন, এসব হাদীসের মানে হল, আমরাও বলি পরিবারের মাঝে যার উপর কুরবানী আবশ্যক সে কুরবানী করবে। যদি দুইজনের উপর আবশ্যক থাকে তাহলে দুইজন করবে। আর যদি একজনের উপর আবশ্যক থাকে, তাহলে একজন করবে।
তো ইসলামের শুরু যুগে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দারিদ্রতা ছিল। এতটা স্বচ্ছলতা ছিল না। আর পরিবারের মাঝে উপার্জনকারী যেহেতু একজনই হতো, তাই স্বাভাবিকভাবে ঘরের কর্তার উপরই কুরবানী আবশ্যক হতো, আর তিনি কুরবানী করতেন। আর এর গোস্ত পুরো পরিবারই খেতো। এ হল পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে সাহাবীদের কুরবানী করার মানে।
এর মানে এটা কখনোই ছিল না যে, পরিবারের সবার উপর কুরবানী আবশ্যক। কিন্তু তারা কেউ কুরবানী করতো না, শুধু একজনই করতেন। সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে এমনটি কিছুতেই ভাবা যায় না।
তাছাড়া কেউ কেউ এ দলীল পেশ করেন যে, রাসূল সাঃ এক বকরী পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে কুরবানী করতেন। তাই এক কুরবানী পুরো পরিবারের পক্ষ থেকে হয়ে যাবে।
একথাটিও ঠিক নয়। কারণ এক হল দায়িত্ব হিসেবে কুরবানী করা। আরেক হল সওয়াব পৌছানো। আবশ্যক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে কুরবানী একজন ব্যক্তির জন্য একটিই হবে। বাকি একজন কুরবানী করে কোটি মানুষের জন্য ঈসালে সওয়াব করতে পারবে। এতে কোন সমস্যা নেই। যেমন রাসূল সাঃ নিজের কুরবানী করার পর। সেটির ঈসালে সওয়াব সমস্ত উম্মতের জন্য করেছেন। এর দ্বারা পুরো পরিবারের ওয়াজিব কুরবানী একজন আদায় করলেই হয়ে যাবার কোন প্রমাণ হয় না। [তুহফাতুল আলমায়ী-৪/৪৩৭-৪৩৮]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

রাজশাহীর আদালতে কোরআনের পাখির একদিন....

Towhidur Rahman Sweet ভাইয়ের লিখা।



অনেকটা আকস্মিকভাবেই কোরআনের পাখি আললামা সাঈদী হুজুরকে গত ২১ তারিখে গোপনে রাজশাহীতে নিয়ে আসা হয়।২০১০ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়র ফারুক হত্যাকাণ্ডের আসামী হিসেবে ২৫/৭/১৯ তারিখে তাকে কোর্টে তোলা হবে।প্রথম ২ দিন গোপন থাকলেও ২৪ তারিখে মোটামুটি সবাই জেনে যায় যে সাইদী হুজুর রাজশাহী কারাগারে আর ২৫ তারিখে তাকে আদালতে নেয়া হবে। 
২৫ জুলাই ১৯ রাজশাহীর আদালত চত্তর যেমন ছিলো -
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরা কোর্ট চত্তরে কঠোর নিরাপত্তা বসানো হয়েছে।।কোর্টে প্রবেশের প্রধান রাস্তা থেকে শুরু করে সকল রাস্তায় চেক পোস্ট বসানো,বিনা তল্লাশীতে এবং কারন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।তারপরও চারদিকে লোকে লোকারণ্য ,লুঙ্গি পরা থেকে শুরু করে প্যনট পরা,পানজাবী টুপি পরা ,সাংবাদিকসহ সব শ্রেনীর লোকজনের উপস্থিতি একটু বেশি মনে হলো।প্রচন্ড ভীর ঠেলে যেতে যেতেই কয়েকবার কানে এলো,ইশ যদি এ্যকবার চেহারাডা দেখতে পেতাম।ডিউটির বাইরেও অনেক পুলিশ সদস্যকে দেখলাম ঘোরাঘুরি করছে।তাদের পাশে দারিয়ে কান পেতে শুনতে পেলাম ,তারা শুধু কোরআনের পাখিকে দেখার জন্য এসেছে।বেলা ১০.৩০ মিনিটে একটি প্রিজন ভ্যানে আদালত চত্তরে আনা হয় সাঈদী হুজুরকে।হুজুরকে বহনকারী গাড়ীটি আদালত চত্তরে প্রবেশ করা মাত্রই গাড়ীর পিছে পিছে জনতার ঢল নামে কিন্তু পুলিশ বাধা প্রদান করে ফলে তারা দুর থেকে তাকিয়ে থাকে তাদের প্রিয় মানুষকে এক নজর দেখার জন্য।
যেমন ছিল এজলাস রুম..
যে ভবনে কোর্ট বসবে সে ভবনের চারপাশে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা বলয়। শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মামলার আসামী,উকিল ও কোর্টের লোকজন ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচছেনা ।গেটের একপাশে কর্নারে দাড়িয়ে ছিলাম,পুলিশের বড় কর্মকর্তারা সামনে দাড়িয়ে আছে।সাইদী হুজুর আসা মাত্র এক পুলিশ কর্মকর্তা অনেকটা আবেগে জোরে করে বলে ফেললেন এইযে হুজুর আসছে।হুইল চেয়ারে করে হুজুর এজলাস রুমে প্রবেশ করলেন।প্রবেশ করা মাত্র সবাইকে হাত তুলে সালাম দিলেন।তার ছেলে মাসুদ সাঈদী হুজুরের হাত ধরে চুমু খেয়ে তাকে নিয়ে এজলাসের বেনচে বসলেন। দু সন্তানের মাঝখানে তিনি বসে ছিলেন।দীর্ঘ ৪৫ মিনিট ধরে কোর্ট চললো।ছোট্ট রুমে নারী পুরষ মিলে প্রায় শতাধিক আইনজীবি যার অধিকাংশই হুজুরকে এক নজর দেখার জন্য এসেছে। আমি শুধু তার দিকে খেয়াল রাখছিলাম।প্রায় ১০ বছর ধরে জেলে থাকার পরও হুজুরের চোখে মুখে হতাশার কোন ছোয়া নেই। চেহারায় আত্মবিশ্বাস ,অনড় মনোবল, কন্ঠে এখনও সাহসী উচ্চারণ,হাসতে হাসতে বলছেন,” ওরা আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে ।আদালত চলাকালীন হুজুর পানি খেতে চাইলো ,সাথে সাথে কয়েকজন পুলিশ দৌড়ে পানি নিয়ে আসলো এবং বিনয়ের সাথে হুজুরের হাতে দিলো।
আল্লাহ তায়ালা যাকে সম্মানিত করবেন তিনি যেখানেই থাকেন না কেন সম্মানিত হবেনই।বাতিলরা যারা হুজুরকে কারাগারে আটকে রেখে তার সমমান ও মর্যাদা হানি করতে চেয়ে ছিলো , তারা হয়তো জানেনা হুজুরের সমমান আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। যে শুধু ঈমানের পরীক্ষার কথা বলতো আজ সে ঈমানের পরীক্ষায় উর্ত্তীন ।আজও হুজুরের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত লাখো জনতা। মুসলিমরা কখনো হতাশ হয়না, নিরাশ হয় না।আমরাও হতাশ নয় ,নিরাশ হইনি।আজো লাখো আলেম ওলামা ,সাধারন জনগন ও মা বোনেরা প্রকাশ্যে ও রাতের আঁধারে দোয়া করেন হুজুরের জন্য। আমরা বিশ্বাসী এবং আশাবাদী হুজুর একদিন আবার ফিরবেন আমাদের মাঝে। আবারও তার কন্ঠে কোরআনের ঝংকার উঠবে আর সে ঝংকারে বাতিল শক্তি পালিয়ে যাবে ইনশায়াললাহ ।

অন-লাইনে আয়ের গাইডলাইন




ঘরে বসে অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে আয় করা যায়
ইন্টারনেট মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন অনলাইনে অর্থ আয়ের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। অনলাইনে আয়ের নানা পথও তৈরি হয়েছে। তবে অনলাইনে কাজ করে আয় করতে গেলে কোন প্ল্যাটফর্ম ধরে এগোচ্ছেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।




অনলাইনে আয় করার নানা সুযোগ থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতারণার মুখে পড়তে হতে পারে। অনলাইনে কাজ করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজের ক্ষেত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে হবে। কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট ও রিসোর্স আছে, যা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। জেনে নিন এসব সম্পর্কে::
ফ্রিল্যান্সিং


অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে ফ্রিল্যান্স কাজের সুযোগ দেয় কয়েকটি ওয়েবসাইট। সেখানে অ্যাকাউন্ট খুলে দক্ষতা অনুযায়ী কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। কাজদাতা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী যোগাযোগ করে ফ্রিল্যান্সারকে কাজ দেয়।

কয়েকটি ওয়েবাসাইটে কাজের দক্ষতার বিবরণ জানাতে হয়, যাতে ক্রেতা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন। এসব সাইটের মধ্যে ফাইভার ডটকম, আপওয়ার্ক ডটকম, ফ্রিল্যান্সার ডটকম ও ওয়ার্কএনহায়ার ডটকমে ফ্রিল্যান্সিং কাজ পাওয়া যায়। ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায় এসব সাইট থেকে। মনে রাখতে হবে, কাজ শেষ করার পর কাজদাতার অনুমোদন পেলেই তবেই অর্থ ছাড় দেবেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কাজের মানের ওপর কাজদাতা রেটিং দিতে পারেন। গ্রাহকের পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করে দিতে হয় ফ্রিল্যান্সারকে। বিভিন্ন অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে অর্থ আনা যায়।


নিজের ওয়েবসাইট তৈরি

এখন নিজের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অনলাইনেই অনেক উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে ডোমেইন নির্বাচন, টেমপ্লেট ও ওয়েবসাইট তৈরির নকশা প্রভৃতি। যখন পাঠক বা দর্শককে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন কনটেন্ট সেবা দেওয়ার প্রস্তুতি সারা, তখন গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারেন। গুগলের বিজ্ঞাপন যখন সাইটে দেখানো শুরু হবে এবং তাতে ক্লিক পড়বে, তখন আয় আসতে শুরু করবে। ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বা দর্শক যত বেশি হবে, আয়ের পরিমাণ তত বাড়বে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এই পদ্ধতিতে আয়ের ক্ষেত্রেও নিজের ওয়েবপেজ বা ব্লগ প্রয়োজন। যখন ওয়েবসাইট বা ব্লগ চালু হবে, তখন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লিংক তাতে যুক্ত করতে পারবেন। যখন আপনার সাইট থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বা সেবা কোনো দর্শক কিনবেন, তখনই আপনার আয় আসতে শুরু করবে।
গ্রাফিকস ডিজাইন
অনলাইনে ঘরে বসে আয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিকস ডিজাইন ভালো উপায়। যাঁরা এই কাজে দক্ষ, তাঁরা বিভিন্ন ডিজাইন অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে দিয়ে রাখেন। সেখান থেকে তাঁদের আয় আসে। তাঁদের তৈরি একটি পণ্য অনেকবার বিক্রি হয়, অর্থাৎ একটি ভালো নকশা থেকেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত আয় হতে থাকে। অনলাইনে এ ধরনের অনেক ওয়েবসাইটে গ্রাফিকসের কাজ বিক্রি করা যায়। এ ছাড়া অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতেও গ্রাফিকস ডিজাইনারদের অনেক চাহিদা রয়েছে।
জরিপ, সার্চ ও রিভিউ
অনলাইন জরিপে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতে পারেন। অনেক ওয়েবসাইট জরিপে অংশ নিলে অর্থ দেয়। এ ছাড়া অনলাইন সার্চ ও পণ্যের পর্যালোচনা লিখে আয় করতে পারেন। তবে, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংকিং তথ্য দেওয়া লাগতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে কাজ করার সময় সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। এ বিষয়ে কাজের সময় কোনটি প্রকৃত কাজ আর কোনটি স্ক্যাম—যাচাই-বাছাই করে নিয়ে কাজ করতে পারেন।
ভার্চ্যুয়াল সহকারী
এখন ভার্চ্যুয়াল সহকারীদের কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। ঘণ্টাপ্রতি আয়ও বেশি। বাড়ি থেকে করপোরেট অফিসের নানা কাজ অনলাইনে করে দেওয়ার সুবিধা আছে এখন। ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মী বা নিজের ব্যবসা নিজেই চালানো যায়। বিভিন্ন দক্ষতার ভিত্তিতে ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট নিয়োগ দেয় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ফোন কল, ই-মেইল যোগাযোগ, ইন্টারনাল রিসার্চ, ডেটা এন্ট্রি, এডিটিং, রাইটিং, ব্লগ, গ্রাফিকস, টেক সাপোর্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনার মতো কাজ থাকে। ২৪ / ৭ ভার্চ্যুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যাচ, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, পিপল পার আওয়ার, আপওয়ার্কের মতো সাইটগুলোতে কাজ পাওয়া যায়।
অনুবাদ
ইংরেজির পাশাপাশি অন্য কোনো ভাষা ভালোভাবে জানা থাকলে সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিভিন্ন ডকুমেন্ট অনুবাদ করে আয় করতে পারেন। যাঁদের স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, আরবি, জার্মানসহ অন্যান্য ভাষা জানা আছে এবং এগুলো থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ বা ইংরেজি থেকে এসব ভাষায় অনুবাদ করতে পারলে ভালো আয় করতে পারবেন। অনেক সময় কাজদাতারা নিজে সময়ের অভাবে অনুবাদের কাজ ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নেন। ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে এ ধরনের কাজ পাবেন।
অনলাইন টিউটর
কোনো বিষয়ে যদি আপনার পারদর্শিতা থাকে, তবে অনলাইনে সে বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারেন। অনলাইন টিউটরদের এখন চাহিদা বাড়ছে। সব বয়সী শিক্ষার্থীদের আপনি শিক্ষা দিতে পারবেন। এখানে অন্য দেশের শিক্ষার্থীদেরও পড়ানোর সুযোগ রয়েছে। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অনলাইন টিউশনির সুযোগ রয়েছে। সেখানে সুবিধামতো সময়ে পড়াতে পারেন ছাত্র। এসব সাইটে নিজের দক্ষতার পরীক্ষা দিতে হয়। একবার নির্বাচিত হয়ে গেলে ওয়েবিনার পরিচালক হিসেবে অনলাইন সেশন পরিচালনা করতে পারেন। দক্ষতা বাড়লে এ ক্ষেত্র থেকে অনেক আয় করার সুযোগ আছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এখন আর শুধু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নয়। এগুলো কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয় তাদের ব্র্যান্ডের প্রচার করার জন্য। অনলাইনে গ্রাহক টানা, প্রচার করার জন্য অবশ্য সৃজনশীলতা দরকার। বিভিন্ন পোস্ট তৈরি, ভিডিওর মাধ্যমে ফেসবুক বা অন্যান্য মাধ্যমে প্রকাশ করে তা ভাইরাল করতে পারলে ভালো অর্থ আসে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যান-ফলোয়ার তৈরিসহ তাঁদের ধরে রাখতে প্রচুর ধৈর্য ও প্রাসঙ্গিক বিষয় হওয়া জরুরি।
ওয়েব ডিজাইন
এখনকার অনলাইনের কাজের ক্ষেত্রে ওয়েব ডিজাইনের চাহিদা ব্যাপক। কোনো প্রজেক্টে ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত সহজে আয় করা যায়। সব ব্যবসায়ী প্রযুক্তিপ্রেমী নন। নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরিতে তাঁদের ওয়েব ডিজাইনারের দরকার পড়ে। যাঁরা ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে চান নিজেদের ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকেই ছোট ব্যবসা দাঁড় করাতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরিতে এখন কোডিং আর ওয়েব ডিজাইন দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা ও হালনাগাদের জন্যও ওয়েব ডিজাইনারকে দরকার পড়ে। ফলে ডিজাইনারকে বসে থাকতে হয় না। ক্লায়েন্ট ও কাজের ওপর ভিত্তি করে ওয়েব ডিজাইনারের আয় বাড়তে থাকে।
কনটেন্ট রাইটিং
যাঁরা লেখালেখিতে ভালো এবং একাধিক ভাষায় সাবলীল লিখতে পারেন, তাঁদের কাজের জন্য বসে থাকতে হয় না। অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে কাজ করে বা লিখে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। আর্টিকেল লেখার মানের ওপর ভিত্তি করে আয় আসে। কাজদাতা নির্দিষ্ট নীতি মেনে লেখার জন্য বলতে পারেন। নির্দিষ্ট বিষয় বা নিশ ধরে নিজের দক্ষতা বাড়াতে পারলে আয়ের ধারা বেড়ে যায়।
ব্লগিং
অনেকে শখ করে অনেক বিষয়ে লেখেন। কিন্তু শখের বিষয়টি যদি পেশাগত কাজে লাগাতে পারেন, তবে অনলাইনে আয় করতে পারবেন। ব্লগিং করেও আয় করার সুযোগ আছে। দুই উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করা যায়। একটি হচ্ছে নিজের ব্লগ সাইট তৈরি। ওয়ার্ডপ্রেস বা টাম্বলার প্ল্যাটফর্মে বিনা মূল্যে ব্লগ শুরু করতে পারেন। আবার চাইলে নিজে ডোমেইন হোস্টিং কিনে ব্লগ চালু করতে পারেন। তবে নিজে ব্লগ চালু করতে গেলে কিছু বিনিয়োগ করার দরকার হবে। ডোমেইন, হোস্টিং কিনতে হবে। নিজের ব্লগ শুরু করাটাই ভালো। কারণ, এতে নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অনেক পরিবর্তন করার সুযোগ আছে। বিজ্ঞাপন, ফেসবুকের ইনস্ট্যান্ট আর্টিকেল, পণ্যের পর্যালোচনা প্রভৃতি নানা উপায়ে ব্লগ থেকে আয় করতে পারেন। তবে ব্লগ লিখে আয় করতে গেলে রাতারাতি আয় আসবে না। এ জন্য প্রচুর সময় ও ধৈর্য থাকতে হবে। অনেকের ব্লগ থেকে আয় করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ব্লগে নিয়মিত কনটেন্ট আপডেটসহ তা সক্রিয় রাখতে কাজ করে যেতে হয়।
ইউটিউব
যাঁরা ব্লগ লিখে আয় করতে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁরা ক্যামেরার সাহায্য নিয়ে ভিডিও থেকে আয় করতে পারেন। এ জন্য অবশ্য সৃজনশীল আর ভালো সম্পাদনা জানতে হবে। নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাতে ভিডিও আপলোড করে সেখান থেকে আয় করতে পারেন। আপনার চ্যানেল কোন ক্যাটাগরির এবং তাতে কোন ধরনের ভিডিও রাখবেন, তা আগেই ঠিক করে রাখুন। যে বিষয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি, সেই বিষয়ে ভিডিও না রাখলে মানুষ তা দেখবে না। ভিডিও না দেখলে আয় হবে না। বিষয়টি অনেকটাই ব্লগের মতো। তবে এ ক্ষেত্রে কনটেন্ট হচ্ছে ভিডিও। চ্যানেলের সাবসক্রাইবার ও ভিডিও দেখার সময় বাড়লে আয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। প্রতি হাজার ভিউয়ের হিসাবে গুগল থেকে অর্থ পাবেন।
পিটিসি
অনেক ওয়েবসাইট আছে, যাতে রাখা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে আপনাকে অর্থ দেওয়া হবে। এ ধরনের সাইটকে পিটিসি সাইট বলে। প্রকল্প শুরুর আগে নিবন্ধন করতে হয়। তবে মনে রাখতে হবে পিটিসি সাইটগুলো বেশির ভাগ ভুয়া হয়। তাই কাজের আগে নিশ্চিত হতে হবে সেটি প্রকৃত সাইট কি না। অনেক সময় বন্ধুতে রেফারেন্স দিয়ে আয় করতে পারেন।
ডেটা এন্ট্রি
অনলাইনে সহজ কাজগুলোর একটি হচ্ছে ডেটা এন্ট্রি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য আয় খুব কম। তবে এ ধরনের কাজ অটোমেশনের কারণে এখন খুব কম পাওয়া যায়। যাঁদের কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও দ্রুতগতির টাইপিং দক্ষতা আছে, তাঁরা এ ধরনের কাজ করতে পারবেন। অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সিং সাইটে এ ধরনের কাজ রয়েছে। তবে যাঁদের কোনো কাজে দক্ষতা থাকে, তাঁরা সহজে কাজ পান এবং দ্রুত আয় বাড়াতে পারেন।

প্রশ্ন: ৯৭ : বসে নামাজ পড়ার মাসয়ালাহ।

প্রশ্ন : বসে বসে নামাজ পড়ার মাসালা একটু আলোচনা করবেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্যগত সমস্যা না থাকলেও অনেকে সুন্নত ও নফল নামাজ বসে পড়ে থাকেন।
উত্তর : ফরজ সালাত ছাড়া যত সুন্নত সালাত আছে সেগুলো বসে আদায় করা জায়েজ। সেখানে বসার অনুমোদন আছে। কিন্তু এ অনুমোদনটুকু এমন যে, সুস্থ থাকলেও পড়তে পারবেন, তবে সওয়াবের ক্ষেত্রে কম-বেশি হয়ে যাবে।
সুতরাং কোনো কাজের অনুমোদন পেলেই সে কাজটা করলে শুদ্ধ নয়। দাঁড়িয়ে পড়লে যে মর্যাদা বা সওয়াব পাওয়া যাবে, বসে পড়লে সে মর্যাদা বা সওয়াব পাওয়া যাবে না। এটিই হলো পার্থক্য।

=====================

প্রশ্ন : আমার আম্মা হচ্ছেন কিডনির রোগী। উনাকে ডাক্তার একদম হাঁটু গেড়ে বসতে নিষেধ করে দিয়েছেন। তো, উনি চেয়ারে বসে নামাজ পড়েন। সূরা ও রুকু দাঁড়িয়ে করেন। কিন্তু সেজদাহ চেয়ারে বসে বালিশে দেন অথবা ইশারায় সেজদাহ দেন। কিন্তু আমি আমাদের এলাকার মসজিদে লেখা দেখলাম যে চেয়ারে বসে নামাজ পড়া অকাট্যভাবে নাজায়েজ। তাহলে আমার আম্মা কীভাবে নামাজ পড়বেন, যেহেতু তাঁর বসা একদম নিষেধ।
উত্তর : চেয়ারে বসে নামাজ পড়া অকাট্যভাবে হারাম বা নিষিদ্ধ, এ রকম কোনো দলিল আছে বলে আমার জানা নেই। অকাট্যভাবে এটি দলিলবিহীন কথা। কারণ, ওজরের জন্য যেকোনো অবস্থায় সালাত আদায় করা জায়েজ। ওজরের জন্য যদি শুয়ে নামাজ পড়া যায়, ইশারায় নামাজ পড়া যায়, তাহলে বসে পড়া যাবে না কেন?
কোরআনে কারিমের মধ্যে আল্লাহ সুবানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘তোমাদের সাধ্যে যতটুকু কুলায়’ (সূরা-তাগাবু)। সুতরাং কেউ যদি দাঁড়াতে না পারেন, তিনি বসে পড়বেন; কেউ যদি বসতে না পারেন, তিনি শুয়ে পড়বেন; আর শুয়েও পড়তে না পারলে তিনি যেভাবে পারেন, সেভাবেই নামাজ পড়বেন। এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বিধান। সুতরাং ‘অকাট্যভাবে’ এটি দলিলবিহীন বক্তব্য।
ওজরের মাসয়ালা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মাসয়ালার ওপর     করার বৈধতা নেই। ইমাম শাফি (রা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো কারণে মানুষের ওপর কোনো বিষয় কঠিন, সংকীর্ণ হয়ে যায়, তখন ইসলাম এটাকে প্রশস্ত করে দেয়, সহজ করে দেয়।’ এটা সহজ করে দেওয়া হয়েছে। এটি একেবারেই জায়েজ। যাঁরা ফতোয়া দিয়েছেন, তাঁরা আন্দাজে ফতোয়া দিয়েছেন।

==============

ইসলাম মানুষের সহজাত ও স্বভাবজাত ধর্ম। মানুষের সাধ্যাতীত কোনো বিধান ইসলামে দেওয়া হয়নি। নামাজ আল্লাহর অলঙ্ঘনীয় বিধান। অসুস্থ হলেও নামাজ আদায় করতে হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ইসলাম কিছুটা অবকাশ দিয়েছে। বিকল্প পন্থা ও পদ্ধতিতে নামাজ আদায়ের সুযোগ দিয়েছে। তবে এর জন্য রয়েছে বিশেষ নীতিমালা। দাঁড়াতে ও সিজদা করতে সক্ষম, এমন ব্যক্তির জন্য নামাজে কিয়াম বা দাঁড়ানো ফরজ। যদি দাঁড়ানো বা সিজদাদানে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও কেউ ফরজ-ওয়াজিব নামাজ বসে আদায় করে, তবে নামাজের ফরজ ছেড়ে দেওয়ার কারণে তার নামাজ হবে না। নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। (দুররে মুখতার, যাকারিয়া বুক ডিপো ২/১৩২)
এমনকি সিজদা করতে সক্ষম ব্যক্তি যদি নামাজের কিছু অংশে দাঁড়াতে সক্ষম হয়, কিন্তু পুরো সময় দাঁড়িয়ে থাকতে অপারগ থাকে, তবে যেটুকু সময় দাঁড়াতে পারবে, তা কোনো লাঠি বা দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে হলেও সেটুকু দাঁড়ানো ফরজ। এমতাবস্থায় যদি না দাঁড়ায় এবং কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে দাঁড়ানোর পরিবর্তে বসেই নামাজ আদায় করে, তবে নামাজ হবে না। (দুররে মুখতার ২/২৬৭)
কেউ যদি দাঁড়াতে সক্ষম, কিন্তু রুকু-সিজদা বা শুধু সিজদা করতে সক্ষম না হয়, তার জন্য বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। সে ইশারার মাধ্যমে রুকু-সিজদা করবে। এ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার চেয়ে বসে ইশারায় নামাজ আদায় করা উত্তম। (দুররে মুখতার ২/৫৬৭, ফতোয়ায়ে আলমগিরি ১/১৩৬)
যেসব অক্ষমতার কারণে দাঁড়ানোর আবশ্যকতা রহিত হয়ে যায়, তা দুই প্রকার :
১. হাকিকি বা মৌলিক অর্থাৎ এমন অক্ষম, যে দাঁড়াতে পারে না।
২. হুকমি বা বিধানগত অর্থাৎ সে এমন অক্ষম নয় যে দাঁড়াতে পারে না, বরং দাঁড়ালে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অথবা এমন দুর্বলতা থাকে, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অক্ষমতা বলে বিবেচিত। যেমন অসুস্থতা, যার ব্যাপারে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তাররা পরামর্শ দেন যে দাঁড়ালে রোগ বৃদ্ধি পাবে অথবা সুস্থতা ফিরে আসতে বিলম্ব হবে কিংবা দাঁড়ানোর কারণে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হয়- এসব অবস্থায় বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ। (দুররে মুখতার মাআ রদ্দুল মুহতার-২/৫৬৫)
যদি অসহনীয় ও অস্বাভাবিক ব্যথা না হয়, বরং সামান্য ব্যথা অনুভব হয়, তবে তা শরিয়তের দৃষ্টিতে অক্ষমতা বলে বিবেচিত হবে না। এমতাবস্থায় বসে নামাজ আদায় করা জায়েজ নেই। (তাতারখানিয়া-যাকারিয়া বুক ডিপো-২/৬৬৭)
যে ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম, কিন্তু মাটিতে বসে সিজদার সঙ্গে নামাজ আদায় করতে সক্ষম, তবে তাকে মাটিতে বসে সিজদাসহকারে নামাজ আদায় করতে হবে। মাটিতে সিজদা না করে চেয়ারের ওপর বসে বা মাটিতে বসে ইশারা করে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না। (তাতারখানিয়া-যাকারিয়া বুক ডিপো-২/৬৬৭)
যদি সে রুকু-সিজদা করতে অপারগ হয়, কিন্তু মাটিতে বসে ইশারা করে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়, তবে যেভাবেই সম্ভব মাটিতে বসে ইশারা করে নামাজ আদায় করবে। কারণ শরিয়ত এমন অপারগদের মাটিতে বসার ব্যাপারে পূর্ণ ছাড় দিয়েছে। যে আসনে সম্ভব হয়, সেভাবেই বসে নামাজ আদায় করবে। (দুররে মুখতার মাআশ-শামি ২/৫৬৬)
এমন ব্যক্তি প্রয়োজন ছাড়া চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা অনুচিত। যদি কোনোভাবেই মাটিতে বসে নামাজ আদায় করার সাধ্য ও সামর্থ্য না থাকে, তবে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করা যাবে। কিন্তু যদি যেকোনোভাবে মাটিতে বসে রুকু-সিজদা করার সামর্থ্য থাকে, তবে চেয়ারে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না।
যে ক্ষেত্রে শরয়ি ওজরের কারণে চেয়ারে বসে ইশারার মাধ্যমে নামাজ আদায় করার অনুমতি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে সিজদার সময় ইশারার ওপরই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। উল্লিখিত দীর্ঘ আলোচনার সংক্ষিপ্ত নিম্নরূপ :
১. যে ব্যক্তি দাঁড়াতে সক্ষম নয়, কিন্তু যেকোনোভাবে মাটিতে বসে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করতে পারে, তাকে মাটিতে বসেই রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করতে হবে। চেয়ার ইত্যাদিতে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে না।
২. আর কেউ যদি দাঁড়াতে পারে, কিন্তু কোমর বা হাঁটুতে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় সিজদা করার শক্তি না রাখে অথবা সে মাটিতে বসতে পারে কিন্তু রুকু-সিজদার শক্তি রাখে না, এরূপ লোক মাটিতে বসে নামাজ আদায় করবে। চেয়ার ইত্যাদির ব্যবহার তাদের জন্য উচিত নয়। হ্যাঁ, যদি কোনোভাবেই মাটিতে বসা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, তখন চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করা যেতে পারে। এমতাবস্থায় চেয়ার ব্যবহার করলেও সাদামাটা চেয়ার ব্যবহার করবে। আসলে অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থাভেদে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়ের বিভিন্ন হুকুম হতে পারে। তাই এ বিষয়ে ঢালাও মন্তব্য কাম্য নয়।
লেখক : মুফতি ও সিনিয়র মুহাদ্দিস,
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বাংলাদেশ

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...