যাত্রা পুস্তক ১৬ অধ্যায়, গণনা পুস্তক ১১: ৭-৯, যিহেশূয়৫: ১২

ঈশ্বর-দত্ত খাদ্য
1সমগ্র ইসরায়েলী সমাজ এলিম থেকে যাত্রা করে এলিম ও সিনাই পর্বতের মাঝামাঝি সীন প্রান্তরে এসে উপস্থিত হল। মিশর ছাড়ার পর দ্বিতীয় মাসের পনেরো তারিখে তারা সেখানে এসে পৌঁছাল। 2ইসরায়েলীরা সই প্রান্তরে মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে লাগল। 3তারা তাঁদের বলল, মিশরে থাকতেই প্রভু পরমেশ্বর যদি আমাদের মেরে ফেলতেন তাহলেই ভাল হত। সেখানে আমরা হাঁড়িভর্তি মাংস এবং ইচ্ছামত রুটি খেতে পেতাম। কিন্তু তোমরা আমাদের সকলকে অনাহারে মারার জন্য এই প্রান্তরে নিয়ে এসেছ।
4প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, আমি আকাশ থেকে তোমাদের জন্য খাদ্য বর্ষণ করব। ইসরায়েলীরা প্রতিদিন মাঠে গিয়ে তাদের দৈনিক রসদ কুড়িয়ে আনবে। আমি তাদের পরীক্ষা করে দেখতে চাই, তারা আমার বিধান মেনে চলে কি না।যোহন 6:31 5ষষ্ঠ দিনে তারা অন্যান্য দিনের চেয়ে দ্বিগুণ রসদ সংগ্রহ করে খাবার প্রস্তুত করে রাখবে।
6মোশি ও হারোণ তখন ইসরায়েলীদের বললেন, আজ সন্ধ্যায় তোমরা জানতে পারবে যে প্রভু পরমেশ্বরই তোমাদের মিশর থেকে মুক্ত করে এনেছেন। 7আর সকালে তোমরা দেখতে পাবে প্রভু পরমেশ্বরের মহিমা। তাঁর বিরুদ্ধে তোমাদের বিক্ষোভের কথা তিনি জানতে পেরেছেন। তোমাদের এই বিক্ষোভ আমাদের বিরুদ্ধে নয়, কারণ আমরা কিছুই নই। 8মোশি আরও বললেন, তোমাদের অভিযোগের জবাবে প্রভু পরমেশ্বর যখন সন্ধ্যায় তোমাদের মাংস খাওয়াবেন এবং সকালে তোমাদের প্রাণভরে রুটি খাওয়াবেন তখন তোমরা একথা বুঝতে পারবে। আমরা কেউ নই, তোমাদের এই বিক্ষোভ আমাদের বিরুদ্ধে নয়, স্বয়ং প্রভু পরমেশ্বরের বিরুদ্ধে।
9হারোণের মাধ্যমে মোশি সমগ্র ইসরায়েলী সমাজকে নির্দেশ দিলেন, তোমরা সকলে প্রভু পরমেশ্বরের সম্মুখে এস, তিনি তোমাদের অভিযোগ শুনেছেন। 10হারোণের কথা শোনার সময় ইসরায়েলীরা সকলে প্রান্তরের দিকে তাকাল। সেখানে হঠাৎ মেঘপুঞ্জের মধ্য থেকে প্রভু পরমেশ্বরের প্রতাপ দৃশ্যমান হল। 11প্রভু মোশিকে বললেন, 12আমি ইসরায়েলীদের অভিযোগ শুনেছি। তাদের তুমি বল, আজ সন্ধ্যায় তারা মাংস খেতে পাবে আর কাল সকালে তারা যত ইচ্ছা রুটি পাবে। তখন তোমরা জানবে যে আমি, প্রভু পরমেশ্বরই তোমাদের আরাধ্য ঈশ্বর।
13সেই দিন সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে তিতির পাখী উড়ে এসে ইসরায়েলীদের শিবির ছেয়ে ফেলল, আর সকালে শিবিরের চারিদিকে শিশিরপাত হল। 14শিশির শুকিয়ে গেলে দেখা গেল প্রান্তরে সূক্ষ্ম তুষারকণার মত এক ধরণের জিনিস পড়ে রয়েছে। 15ইসরায়েলীরা সেগুলি দেখে বলাবলি করতে লাগল, এগুলি কি? মোশি তাদের বললেন, এই সেই ঈশ্বর-দত্ত খাদ্য।১ করি 10:3 16এ সম্পর্কে প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ এই: তোমাদের প্রত্যেকের খোরাক মাথা পিছু এক ওমের হিসেবে নিজেদের পরিবারের জন্য এই জিনিস কুড়িয়ে নেবে।  

17ইসরায়েলীরা তা-ই করল। তাদের কেউ বা কিছু বেশী কেউ বা কিছু কম সংগ্রহ করল, 18কিন্তু ওমেরের মাপে হিসেব করার পর দেখা গেল যারা বেশী কুড়িয়েছিল তাদের উদ্বৃত্ত কিছু হল না এবং যারা কম কুড়িয়েছিল তাদেরও কিছু কম পড়ল না। যার যতটা প্রয়োজন তার সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়াল তা-ই।২ করি 8:15 19মোশি তাদের বললেন, আগামী কাল পর্যন্ত তোমরা কেউ এর কিছুই বাকী রাখবে না। 20কেউ কেউ মোশির কথা না শুনে পরের দিন পর্যন্ত ঐ খাদ্যের কিছুটা রেখে দিল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, তাতে পোকা ধরেছে এবং দুর্গন্ধ হয়েছে। মোশি তাদের উপর খুব রাগ করলেন।
21এরপর থেকে তারা প্রতিদিন সকালে যার যেমন প্রয়োজন সেই পরিমাণ খাদ্যই সংগ্রহ করত। রোদের তাপ বেড়ে গেলে সেই খাদ্য গলে যেত। 22ষষ্ঠ দিনে তারা জনপিছু দুই ওমের হিসেবে দ্বিগুণ পরিমাণ খাদ্য সংগ্রহ করল। ইসরায়েলী সমাজের প্রবীণেরা এসে মোশিকে সে কথা জানালেন। 23মোশি তাদের বললেন, প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ হচ্ছে এই: আগামীকাল কর্মবিরতির দিন, প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে পালনীয় পবিত্র বিশ্রাম দিন। অতএব আজ তোমরা রুটি তরকারী যা দরকার তৈরী করে নাও। আজকের উদ্বৃত্ত যা থাকবে তা আগামীকালের জন্য রেখে দেবে।যাত্রা 20:8-11
24মোশির নির্দেশ মত তারা সেদিনের উদ্বৃত্ত খাদ্য পরের দিনের জন্য রেখে দিল, কিন্তু তাতে দুর্গন্ধ হল না বা পোকা ধরল না। 25মোশি বললেন, আজ তোমরা এগুলি খাও কারণ আজ প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশিত বিশ্রাম দিন। আজকে তোমরা প্রান্তরে কোন খাদ্য পাবে না। 26ছয়দিন তোমরা খাদ্য সংগ্রহ করতে পারবে, কিন্তু সপ্তম দিনে অর্থাৎ বিশ্রামদিনে তোমরা কিছুই পাবে না।
27তবুও সপ্তম দিনে কিছু লোক খাদ্য সংগ্রহ করতে প্রান্তরে বেরিয়ে গেল, কিন্তু তারা কিছুই পেল না। 28প্রভু পরমেশ্বর তখন মোশিকে বললেন, আর কতকাল তোমরা আমার নির্দেশ অমান্য করে চলবে? 29মনে রেখ, আমি, প্রভু পরমেশ্বরই তোমাদের জন্য বিশ্রামদিন নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। সেইজন্যই আমি ষষ্ঠ দিনে দুদিনের খাদ্য দিয়ে থাকি। সপ্তম দিনে যে যেখানে আছে সেখানেই থাকবে, ঘর থেকে কেউ বার হবে না। 30তাই এরপর থেকে ইসরায়েলীরা সপ্তম দিনে কোন কাজ করত না।

31ইসরায়েলীরা সেই খাদ্যের নাম দিল মান্না16:31 মান্না: ‘এটি কি?’ এই প্রশ্নসূচক কখাটির হিব্রু শব্দ ‘মান্না’।। এগুলি সাদা, ধনে বীজের মত এবং এর স্বাদ ছিল মধু দিয়ে তৈরী পিঠের মত।গণনা 11:7-8
32মোশি বললেন, প্রভু পরমেশ্বরের আদেশ: তোমরা একটি পাত্রে এক ওমের পরিমাণ মান্না সংরক্ষণ করে রাখবে তোমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য। তারা যেন দেখতে পায়, মিশর থেকে তোমাদের উদ্ধার করে আনার সময় আমি প্রান্তরে তোমাদের কি ধরণের খাদ্য দিয়েছিলাম।
33মোশি হারোণকে বললেন, একটি পাত্রে এক ওমের পরিমাণ মান্না সংগ্রহ করে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য সেটি প্রভু পরমেশ্বরের পীঠস্থানে স্থাপন কর।হিব্রু 9:4 34প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে যেমন নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই অনুযায়ী হারোণ সেটি প্রভু পরমেশ্বরের চুক্তিসিন্দুকের সম্মুখে সংরক্ষণ করে রাখলেন 35ইসরায়েলীরা বসতি স্থাপন করার যোগ্য কোন দেশে না পৌঁছান পর্যন্ত চল্লিশ বছর ধরে মান্না খেয়েছিল। কনান দেশের সীমান্তে না পৌঁছান পর্যন্ত মান্নাই ছিল তাদের খাদ্য।যিহো 5:12 36ওমের হচ্ছে এক এফার দশ ভাগের এক ভাগ।
=======================================

ইসরায়েলীদের বিক্ষোভ ও তার দণ্ড
1এক সময় ইসরায়েলীরা তাদের দুঃখকষ্ট সম্পর্কে বিক্ষোভ প্রকাশ করতে লাগল। তাদের কথা শুনে প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধ প্রজ্বলিত হল। প্রভু পরমেশ্বরের কাছ থেকে অগ্নিশিখা এসে তাদের মধ্যে জ্বলে উঠল এবং তাদের ছাউনির এক প্রান্ত গ্রাস করল। 2লোকেরা তখন মোশির কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করতে লাগল। মোশি প্রভু পরমেশ্বরের কাছে বিনতি জানালেন তখন আগুন প্রশমিত হল। 3এই জন্য সেই স্থানের নাম দেওয়া হল তাবেরা (প্রজ্বলন) কারণ সেখানে প্রভু পরমেশ্বরের অগ্নিশিখা জ্বলে উঠেছিল। 4কিছু বিদেশী লোক তাদের সঙ্গে জুটে গিয়েছিল। তারা লোভাতুর হয়ে উঠল আর ইসরায়েলীরাও আবার কান্নাকাটি করে বলতে লাগল, হায় কে আর এখন আমাদের মাংস খাওয়াবে? 5মিশরে আমরা বিনামূল্যে মাছ খেতে পেতাম। শসা, তরমুজ, কন্দ, পেঁয়াজ ও রসুন পেতাম। সে সব কথা এখন মনে পড়ছে। 6এখন আমরা শুকিয়ে মরছি, একমাত্র মান্না ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না।  
7এই মান্না ছিল ধনে বীজের মত, গুগগুলের মত খয়েরী এর রঙ।যাত্রা 16:31 8লোকে প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে এগুলি সংগ্রহ করত এবং যাঁতায় পিষে বা উদুখলে গুঁড়ো করে হাঁড়িতে সিদ্ধ করত, তারপর তা দিয়ে রুটি তৈরী করত। তার স্বাদ ছিল তেলে ভাজা পিঠের মত। 9রাত্রে তাঁবুর উপর শিশিরের সঙ্গে মান্নাও ঝরে পড়ত।যাত্রা 16:13-15
10মোশি ইসরাযেলীদের কান্নাকাটি শুনতে পেলেন। তারা সপরিবারে ছাউনির মুখে বসে কান্নাকাটি করছিল। এতে প্রভু পরমেশ্বর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। মোশিও অসন্তুষ্ট হলেন। 11মোশি প্রভুকে বললেন, তুমি কেন তোমার এই দাসকে এই দুদর্শায় ফেলেছ? আমি কিসের জন্য তোমার এত বিরাগভাজন হলাম যার ফলে এই লোকদের বোঝা তুমি আমার উপর চালিয়ে দিয়েছ? 12আমি কি এদের গর্ভে ধারণ করেছি, না প্রসব করেছি যার জন্য তুমি এদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, সেই দেশে দুগ্ধপোষ্য শিশুর ধাত্রীর মত আমাকে এদের বক্ষে ধারণ করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিয়েছ?  

13এই লোকদের খাওয়ানোর জন্য মাংস আমি কোথায় পাব? এরা তো আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলছে, আমাদের মাংস খেতে দাও। 14একা আমি এই লোকদের বোঝা আর বইতে পারছি না, এই বোঝা আমার পক্ষে গুরুভার। 15এই-ই যদি তোমার উদ্দেশ্য হয় তবে আমাকে এখনই মেরে ফেল। আমার প্রতি যদি তোমার কৃপাদৃষ্টি থাকে তাহলে এমন কর যেন আমাকে এই দুর্ভোগ আর পোহাতে না হয়।  

16তখন প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, ইসরায়েলীদের মধ্যে প্রবীণ ও নেতৃস্থানীয় বলে যাদের তুমি জানো তাদের মধ্য থেকে সত্তর জনকে সংগ্রহ কর এবং সম্মিলন শিবিরের দ্বারে তাদের উপস্থিত কর। তারা সেখানে তোমার সঙ্গে এসে দাঁড়াক। 17আমি সেখানে অবতীর্ণ হয়ে তোমার সঙ্গে কথা বলব। তোমার উপরে অধিষ্ঠিত আত্মার কিছু অংশ নিয়ে তাদের উপরে অপর্ণ করব। তারা তোমার সঙ্গে একত্রে এই লোকদের ভার বহন করবে। তোমাকে একা আর এদের ভার বহন করতে হবে না। 18আর তুমি লোকদের বল, তোমরা আগামী কালের জন্য নিজেদের শুচিশুদ্ধ কর, তোমাদের মাংস খেতে দেওয়া হবে। কারণ তোমরা প্রভু পরমেশ্বরের কাছে বিলাপ করে বলেছ, হায়, এখানে কে আমাদের মাংস খেতে দেবে, মিশরেই আমরা ভাল ছিলাম। প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের মাংস দেবেন,তোমরা যত খুশী খেও। 19একদিন, দুদিন বা পাঁচ, দশ, বিশদিন নয়, 20পুরো এক মাস তোমাদের মাংস খাওয়ানো হবে। যতদিন না সব বমি হয়ে যায় এবং তোমাদের অরুচি ধরে যায়, ততদিন তোমাদের মাংস খাওয়ানো হবে, কারণ যে প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের মাঝে অধিষ্ঠান করছেন, তাঁকে তোমরা অগ্রাহ্য করেছ। তাঁর সামনে তোমরা কন্নাকাটি করে বলেছ, হায়, আমরা কেন মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এলাম।
21মেশি বললেন, আমি যাদের সঙ্গে আছি তারা সংখ্যায় ছয় লক্ষ পদাতিক। আর তুমি বলছ, পুরো এক মাস ধরে তুমি তাদের মাংস খাওয়াবে। 22এদের পেট ভরানোর জন্য কি তাহলে গরুভেড়ার পাল যা আছে সব মেরে ফেলতে হবে? না সমুদ্রের সব মাছ জোগাড় করতে হবে? 23প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, প্রভু পরমেশ্বরের পরাক্রম কি লোপ পেয়েছে? আমার কথা সত্য কি না তাই আজই দেখতে পাবে।
24মোশি বাইরে এসে জনতার কাছে প্রভু পরমেশ্বরের এই সমস্ত কথা ঘোষণা করলেন এবং ইসরায়েলী প্রবীণদের মধ্য থেকে সত্তর জনকে একত্র করে সম্মিলন শিবিরের চারপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। 25তখন প্রভু পরমেশ্বর মেঘপুঞ্জে অবতীর্ণ হয়ে মোশির সঙ্গে কথা বললেন এবং যে আত্মা মোশির উপরে অধিষ্ঠিত ছিলেন, তাঁর কিছু অংশ সেই সত্তর জন প্রবীণের উপর অপর্ণ করলেন। সেই আত্মা তাঁদের উপর অধিষ্ঠিত হলে তাঁরা আত্মায় আবিষ্ট হয়ে কথা বলতে লাগলেন। কিন্তু তার পুনরাবৃত্তি আর হল না। 26দুই জন লোক নিজেদের ছাউনির মধ্যেই ছিলেন। তাঁদের একজনের নাম ইলদদ্ আর একজনের নাম মেদদ। তাঁদেরও উপরেও আত্মা অধিষ্ঠিত হলেন। তাঁরা ঐ তালিকাভুক্ত লোকদের মধ্যে থাকলেও সম্মিলন শিবিরের কাছে যান নি। তাঁরা নিজেদের ছাউনিতেই ভাবাবিষ্ট হয়ে কথা বলতে লাগলেন। 27তখন একটি যুবক দৌড়ে মোশির কাছে গিযে বলল, ইলদদ্ ও মেদদ তাঁদের ছাউনির মধ্যে ভাবাবিষ্ট হয়ে কথা বলছেন। 28একথা শুনে নুনের পুত্র যিহোশূয়, যিনি বাল্যকাল থেকেই ছিলেন মোশির সহকারী, বলে উঠলেন, মহাশয় আপনি ওদের নিষেধ করুন। 29কিন্তু মোশি তাঁকে বললেন, তুমি কি আমার স্বার্থে ওদের ঈর্ষা করছ? অামি চাই প্রভু পরমেশ্বরের সব প্রজাই নবী হোক, প্রভু যেন তাঁর আত্মা তাদের সকলের উপরেই অর্পণ করেন। 30পরে মোশি ও ইসরায়েলী প্রবীণেরা তাঁদের ছাউনিতে চলে গেলেন।
31তখন প্রভু পরমেশ্বরের কাছ থেকে নির্গত এক বায়ুপ্রবাহ সমুদ্র থেকে ভারুই পাখির ঝাঁক উড়িয়ে এনে ছাউনির উপরে ফেলল। ছাউনির দুই ধারে একদিনের পথ পর্যন্ত মাটি থেকে প্রায় দুহাত উঁচু হয়ে পাখিগুলি পড়ে রইল। 32আর লোকেরা সারাদিন ও সারা রাত এবং তার পরের দিনও সারা দিন ভারুই পাখি কুড়াতে লাগল। যারা সবচেয়ে কম কুড়িয়েছিল তাদেরও সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় দশ হোমর। ছাউনির চারিদিকে তারা সেগুলি ছড়িয়ে রাখল। 33কিন্তু সেই মাংস মুখে দিয়ে চিবানোর আগেই প্রভু পরমেশ্বরের ক্রোধ ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে প্রজ্বলিত হয়ে উঠল। প্রভু পরমেশ্বর তাদের মহামারীর দ্বারা আঘাত করলেন। 34এই কারণে সেই স্থানের নাম দেওয়া হল কিবরোৎ-হত্তাবা (লোভের কবর) কেননা সেইখানে তারা লোভী লোকগুলোকে কবর দিয়েছিল। 35কিবরোৎ-হত্তাবা থেকে ইসরায়েলীরা যাত্রা করে হাৎসেরোৎ-এ গিয়ে পৌঁছাল এবং সেখানেই অবস্থিতি করল।

=======================================

গিলগলে তারণোৎসব
1জর্ডনের পশ্চিমতীরবাসী ইমোরীদের রাজারা এবং সমুদ্রের নিকটবর্তী কনানীদের রাজারা যখন শুনতে পেলেন যে ইসরায়েলীরা নদী পার না হওয়া পর্যন্ত প্রভু পরমেশ্বর তাদের সামনে জর্ডনের জল শুকিয়ে ফেলেছিলেন তখন তাঁরা সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন। ইসরায়েলীদের সামনে দাঁড়াবার সাহস তাঁদের হল না।
2প্রভু পরমেশ্বর এই সময়ে যিহোশূয়কে বললেন, তুমি চকমকি পাথরের ছুরি তৈরী করে ইসরায়েলীদের দ্বিতীয় বার সুন্নত করাও। 3যিহোশূয় চকমকি পাথরের ছুরি তৈরী করে অগ্রত্বক্‌ পর্বত5:3 অগ্রত্বক পর্বত- হিব্রু : গিবিয়া- হাআরালোৎ-এর কাছে ইসরায়েলী পুরুষদের সুন্নত সংস্কার করালেন। 4যিহোশূয় তাদের সুন্নত সংস্কার করালেন এই জন্য যে মিশর থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষম যে সব পুরুষ বেরিয়ে এসেছিল তারা আসার পথে প্রান্তরে থাকতেই মারা গিয়েছিল। 5তাদের সকলেরই সুন্নত সংস্কার হয়েছিল, কিন্তু মিশর ত্যাগ করার পর যাত্রাপতে প্রান্তরে যাদের জন্ম হয়েছিল তাদের কারও সু্ন্নত সংস্কার পালন করা হয় নি। 6যে সব যোদ্ধা মিশর থেকে বেরিয়ে এসেছিল তারা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ অমান্য করায় তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলীরা চল্লিশ বছর প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। কারণ সুজলা শুফলা যে দেশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রভু পরমেশ্বর তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিয়েছিলেন সেই দেশ তিনি তাদের কাউকে দেখতে দেবেন না বলে শপথ করেছিলেন।গণনা 14:28-35 7তাদের পরিবর্তে তাদের যে সন্তানসন্ততিদের তিনি লালন-পালন করছিলেন যিহোশূয় তাদেরই সুন্নত করিয়েছিলেন, কারণ যাত্রাপথে তাদের সুন্নত করা হয় নি। 8সমগ্র জাতির সুন্নতকরণ সম্পন্ন হওয়ার পর সকলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত যে যার নিজের শিবিরেই রইল। 9প্রভু পরমেশ্বর তখন যিহোশূয়কে বললেন, মিশরীদের দেওয়া যে কলঙ্ক তোমাদের ছিল তা আমি আজ অপসারণ করলাম। সেই জন্যই ঐ জায়গাটি আজও গিল্‌গল5:9 অর্থ : অপসারণ নামে পরিচিত।
10ইসরায়েলীরা গিল্‌গলে শিবির স্থাপন করল এবং সেই মাসের চৌদ্দ তারিখে সন্ধ্যায় যিরিহো উপত্যকায় তারণোত্সব পালন করল।যাত্রা 12:1-13 11তারণোৎসবের পরের দিন তারা সেই দেশে উৎপন্ন শস্যের তৈরী খামিরবিহীন রুটি ও ভাজা শস্য ভোজন করল।  
12প্রথম যে দিন তারা সেই দেশের উত্পন্ন শস্য আহার করল, সেই দিন থেকেই মান্না বর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। সেই বছর থেকে তারা কনান দেশের উত্পন্ন ফসল ভোগ করতে শুরু করল।যাত্রা 16:35

The Talmud Selection, H. Polano, Pp, 150-54



"And the Lord said to Aaron, ' Go to meet Moses*"
"Oh that some one would make thee as my brother,"
is one of the beautiful expressions of Solomon's
song.
What kind of a brother? Not as was Cain to Abel, for
"Cain rose up against his brother Abel and slew him."
Not as Ishmael to Isaac, for Ishmael hated Isaac; neither
as Esau, for "Esau hated Jacob." Not as the brothers of
Joseph, for "they could not speak peaceably to him;" but
even such a brother as Aaron to Moses, as it is written,
"And he (Aaron) went and met him (Moses) by the mount
of God, and kissed him" (Ex. 4 : 27).
"And after that Moses and Aaron went in."
Where were the elders? We find it written, "Thou and
the elders of Israel shall come."
The elders started out, but dropped off gradually,
through fear; therefore, after this, it is always written
simply, "Moses and Aaron went in."
"Thus hath said the Everlasting One," &*c.
According to Rabbi Chiyah, it happened at this time
that all the neighbouring kings were calling upon Pharaoh
to pay their homage to him and bring him presents; and
each of the princes brought with him his god. Moses and
Aaron stood at the palace gates, and the guard thinking
they too were tributaries, bade them enter. Pharaoh looked
at them, and seeing them to be strangers he imagined that
they also brought him presents, and he wondered why they
did not salute him as the others did. He spoke and asked
them, "What is your desire?" And they answered, "Thus
saith the Lord, let my people go," &c.
And Pharaoh said in angry pride:

====================================


"Who is this Lord that I am to obey,—at whose voice I
am to let Israel go? He has never made me an offering
or appeared before me; I know him not, nor will I let
Israel go."
Then he continued:
"Lo, I will consult my records and see if I find there the
name of your God. Here I find the names of all the gods;
the gods of Amon, the gods of Moab, the gods of Zedin,
but the name of your God I cannot find."
And Moses answered:
"Our God is a living God."
And Pharaoh said to him:
"Is he young or old? What is his age; how many
cities has he captured; how many countries has he con-
quered; how long has been his reign?"
Then said Moses:
"His power fills the universe, He was before the
world saw light, He will be, when the world exists no more.
He formed thee; with His spirit thou breathest."
And Pharaoh further asked, "What are his deeds?" To
which the messengers of God replied:
"The voice of the Lord breaketh in pieces the cedars;
He stretched out the heavens, He laid the foundation of
the earth, rending the mountains and breaking into stones
the rocks. His bow is of fire, His arrows are of flame. He
formed the mountains and the hills, covered the fields with
green, bringing forth fruits and herbs. He removeth kings,
and kings He exalteth."
"Ye come to me with falsehoods," returned Pharaoh
"ye tell me that your God is the Lord of the world; know
then that Egypt is mine, and I have created the great
river Nile which floweth in its boundaries."

===========================================

(" Mrs. is my stream, and I have made it for myself."
Ezekiel 19: 3).
Then Pharaoh asked of his magicians, "Have ye ever
heard of their God?" And the magicians answered, "We
have heard of him. He is the son of wise men, the son of
a king of olden time."
"Thou askest now, 'Who is the Lord ¥ said Moses.
"The time will come when thou wilt say, 'The Lord is
righteous.' Thou sayest now, ' I know not your Lord.' The
time cometh when thou wilt say, 'I have sinned against
your Lord.'"
"And they met Moses and Aaron . . . 'to put a sword in
their hands to slay us.'"
"Yea," said the overburdened children of Israel to Moses
and Aaron, "we are like a lamb which the wolf has carried
from its flock, the shepherd strives to take it from him, but
between the two the lamb is pulled to pieces; between ye
and Pharaoh will we all be killed."
"ThenMoses said to the Lord, 'O Lord, wherefore hast
Thou let so much evil come upon this people f"
The Lord had already informed Moses that He would
harden Pharaoh's heart, and that he would refuse to let
Israel go; therefore God now replied to him, "Thou wilt
see now what I am going to do to Pharaoh, but thou wilt
not see what I shall do to the three kingdoms of Canaan.''
"And Iappeared to Abraham" &c
The Lord said to Moses:
"Woe, woe, that the righteous are no more; I mourn for the patriarchs. I revealed myself to Abraham, to Isaac,
*nd to Jacob as God Almighty, but not by the name
* Eternal,' as I have done to thee, yet they never murmured

==============================

either at my commands or at my works. I said to Abraham,
1 Arise, walk through the land, its length and breadth, for I
will give it to theeand when his wife died and he wanted
but a grave for her, he was obliged to buy it with money,
yet he did not murmur and reproach me, saying, 'Thou
didst promise to give me all this land, and now I am
obliged to sue for and purchase but a very small portion.'
I said to Isaac, ' Sojourn in this land, for unto thee and thy
seed will I give all these countriesand when he wanted a
little water he could get none, for the herdsmen of Gerar
did strive with his herdsmen to prevent their digging a well;
still Isaac raised not his voice against me. I said to Jacob,
'The ground whereon thou liest, to thee will I give itand
when he wished to pitch there his tent he was obliged to
pay a hundred kessiiah, yet he did not murmur against the
Lord, or even ask of me my name, as thou hast done."
"And the Lord spake unto Moses and Aaron, and gave
them a charge unto the children of Israel, and unto Pharaoh,
the king of Egypt."
A king had a fine and elegant orchard in which he planted
trees, both fruitful and unfruitful. His servants said to him,
"What benefit is there in the planting of barren trees?"
And he replied to them, " Fruitful trees and those which
bear not, are equally useful; where could we procure wood
for our houses, our ships, and our utensils, if we did not
have these sturdy trees which bear no fruit Y'lflA**** Qtrtrh
Even as the righteous glorify the Lord in their happiness
to does the punishment of the wicked glorify the Lord
when they proclaim, "Justly have we been punished."
When Aaron performed the miracles with his staff,
Pharaoh laughed, and made light of them, saying:
"It is customary for merchants to carry their wares to


==============================


 places wanting them,—why shouldst thou come with such
tricks to a country full of magicians as Egypt is?"
He sent for some small children, and even they changed
their rods into serpents.
"But Aaron's staff swallowed up their staves
The swallowing of their staves was not the only miracle,
but that Aaron's staff did not grow larger in size thereafter,
added to the wonder
 

যাত্রাপুস্তক ১৪: ১৫-১৬ ও ২১-২২

ইসরায়েলীদের লোহিত সাগর অতিক্রম
 
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2তুমি ইসরায়েলীদের বল, তারা যেন ফিরে গিয়ে বেল-সফোনের পূর্ব দিকে মিগ্‌দোল ও সাগরের মাঝামাঝি পি-হা-হিরোতের সম্মুখে সাগর তীরে শিবির স্থাপন করে। 3তাহলে ফারাও মনে করবে যে ইসরায়েলীরা পথ হারিয়ে দেশের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রান্তরের মধ্যে আটকে পড়েছে। 4আমি ফারাও-এর বুদ্ধি বিকল করে দেব, সে ইসরায়েলীদের আক্রমণ করতে ছুটে যাবে, তখন আমি ফারাও ও তার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে পরাস্ত করব। তখন লোকে আমার মহিমা বুঝতে পারবে। মিশরীরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর। ইসরায়েলীরা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ পালন করল।
ফারাও-এর সৈন্যসামন্তের সলিল সমাধি
5মিশর-রাজ ফারাও সংবাদ পেলেন যে ইসরায়েলীরা পালিয়ে গেছে। তখন তাদের সম্পর্কে ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গের মনোভাব বদলে গেল। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, এ আমরা কি করলাম? আমাদের দাসত্ব থেকে ইসরায়েলীদের কেন মুক্তি দিলাম? 6ফারাও তখন রথ সাজিয়ে সৈন্যসামন্তসহ যাত্রা করলেন। 7বাছাই করা ছয়শো রথ ছাড়াও মিশরের অন্যান্য রথ ও সেরা রথারোহী সেনানীরা তাঁর সঙ্গে গেল। 8প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর বুদ্ধি লোপ করে দিয়েছিলেন, তাই ফারাও বিদ্রোহী ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। 9ফারাও-এর সমস্ত অশ্বারোহী, রথী ও পদাতিক সৈন্যসহ মিশরীরা তাদের তাড়া করে গেল এবং বেল সফোনের পূর্ব দিকে পি-হা-হিরোতে সাগরতীরে, যেখানে ইসরায়েলীরা শিবির স্থাপন করেছিল, সেখানে গিয়ে পৌঁছাল। 10ফারাও কাছাকাছি এসে পড়লে ইসরায়েলীরা দেখতে পেল মিশরীরা তাদের পিছনে ছুটে আসছে। তারা খুব ভয় পেয়ে চীৎকার করে প্রভু পরমেশ্বরকে ডাকতে লাগল। 11তারা মোশিকে বলল, মিশরে কবর দেওয়ার জায়গা ছিল না বলেই কি তুমি আমাদের মারবার জন্য এই প্রান্তরে নিয়ে এসেছ? মিশর থেকে বার করে এনে তুমি আমাদের কি দশা করেছ দেখ। 12এই জন্যই তো মিশরে থাকতে আমরা তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের কথা ছেড়ে দাও, আমরা মিশরীদের দাস হয়েই থাকব। এখানে এই প্রান্তরে মরার চেয়ে দাস হয়ে থাকাই ভাল ছিল।
13মোশি তাদের বললেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, সাহস কর, দেখ, প্রভু পরমেশ্বর আজ কি করে তোমাদের উদ্ধার করেন। মিশরীদের তোমরা আজ দেখছ বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনদিন তাদের দেখতে পাবে না। 14প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন, শান্ত হও তোমরা।
15প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তোমরা কেন অনর্থক কোলাহল করছ? ইসরায়েলীদের তুমি এগিয়ে যেতে বল।  
 
16 আর তুমি তোমার হাতের লাঠিটা সমুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দাও, তাহলে সমুদ্র দুভাগ হয়ে যাবে। তখন ইসরায়েলীরা শুকনো পথেই সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যেতে পারবে।  
 
17আমি মিশরীদের ক্রোধে এমন উন্মত্ত করে তুলব যে তারা তাদের পিছনে ছুটে যাবে, আর তখন আমি ফারাও ও তার রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যদের ধ্বংস করব। এতে লোকে জানবে আমার মহিমা। 18রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ ফারাও-কে পরাস্ত করার পর মিশরীরা বুঝতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর।
19ঈশ্বরের দূত, যিনি ইসরায়েলী বাহিনীর অগ্রবর্তী ছিলেন তিনি ঘুরে তাদের পিছন দিকে গেলেন। তখন ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে মেঘপুঞ্জ সরে তাদের পিছনে গিয়ে 20মিশরী বাহিনী ও ইসরায়েলী বাহিনীর মাঝখানে এসে অবস্থিত হল। মেঘের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় মিশরীদের উপরে রাত্রির অন্ধকার ঘনিয়ে এল কিন্তু ইসরায়েলীদের দিক আলোকিত হয়ে রইল। তখন মিশরীরা সারারাত ইসরায়েলীদের কাছে আসতে পারল না।14:20 হিব্রু অস্পষ্ট। 
 
 21মোশি সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আর প্রভু পরমেশ্বর সারা রাত প্রবল পূবালী বাতাস বইয়ে সমুদ্রের জল সরিয়ে দিলেন। সমুদ্রের জল দুভাগ হয়ে গেল। মাঝখানে তৈরী হল শুকনো পথ।
 
 22ইসরায়েলীরা সেই পথের উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডান দিকে ও বাঁদিকে সমুদ্রের জল দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।১ করি 10:1-2; হিব্রু 11:29
 
 
23ফারাও-এর সমস্ত রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসামন্তসহ মিশরীরা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রের মধ্যে নেমে গেল। 24রাত্রির শেষ প্রহরে প্রভু পরমেশ্বর মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে মিশরী সেনাবাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে তাদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করলেন। 25তিনি তাদের রথের চাকা বিকল করে দিলেন এবং তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হল। মিশরীরা তখন বলতে লাগল, চল, ইসরায়েলীদের কাছ থেকে আমরা পালিয়ে যাই, প্রভু পরমেশ্বরই ওদের পক্ষ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।
26প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, সমুদ্রের দিকে তোমার হাত বাড়াও তাহলে মিশরীদের রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যদের সমুদ্রের জল এসে ডুবিয়ে দেবে। 27মোশি তখন সমুদ্রের দিকে হাত বাড়ালেন। ভোরবেলায় সমুদ্রের জল আবার যথাস্থানে ফিরে এল। পলায়নরত মিশরীরা সেই জলরাশির মুখে গিয়ে পড়ল। প্রভু পরমেশ্বর তাদের সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করেলন। 28ফারাও-এর সেনাবাহিনী, রথী, অশ্বারোহী ইত্যাদি যারা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল, সমুদ্রের জল ফিরে এসে তাদের গ্রাস করল, তাদের একজনও রক্ষা পেল না। 29ইসরায়েলীরা কিন্তু শুকনো মাটির উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডানদিকে ও বাঁদিকে দুপাশে জলরাশি দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।
30সেই দিন প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের কবল থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার করলেন। ইসরায়েলীরা দেখল সমুদ্রতটে মিশরীরা মরে পড়ে রয়েছে। 31মিশরীদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের প্রচণ্ড পরাক্রমের এই মহান কীর্তি দেখে ইসরায়েলীদের মন তাঁর প্রতি সম্ভ্রমে ভরে গেল। তারা প্রভু পরমেশ্বর ও তাঁর সেবক মোশির উপর আস্থা স্থাপন করল।
 

যাত্রা পুস্তক ১১-১৪

যাত্রাপুস্তক - ১১

(10) প্রথম সন্তানের মৃত্যু
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, আমি আরও একবার ফারাও এবং মিশরীদের বিরুদ্ধে আঘাত হানব, তার পরে সে তোমাদের মুক্তি দেবে। সেই সময় সে তোমাদের সকলকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেবে। 2তুমি এখন ইস্‌রায়েলীদের বল যে প্রত্যেক পুরুষ ও নারী যেন তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার চেয়ে নেয়। 3প্রভু পরমেশ্বরের অনুগ্রহে ইসরায়েলীরা মিশরীদের প্রীতিভাজন হয়ে উঠল। ফারাও-এর পারিষদবর্গ ও দেশবাসী সকলের কাছেই মোশি একজন মহান ব্যক্তিরূপে পরিচিত হলেন।
4মোশি ফারাও-এর দরবারে গিয়ে ঘোষণা করলেন, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, নিশীথরাত্রে আমি মিশরীদের বিরুদ্ধে অভিযান করব, 5আর তার ফল মিশরের সমস্ত প্রথমজাত সন্তান মারা যাবে। ফারাও-এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র থেকে শুরু করে যাঁতা পেষাই করে যে ক্রীতদাসী, তারও প্রথম সন্তান পর্যন্ত সকলেই মারা যাবে। পশুপালের মধ্যে প্রথমজাত পশুগুলিও মরে যাবে। 6সারা মিশরে হাহাকার ও কান্নাকাটির এমন রোল উঠবে যা আগে কখনও হয়নি এবং পরেও কোনকালে হবে না। 7কিন্তু ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে একটি কুকুরও ডাকবে না, তাদের মানুষ কিংবা পশু কারোই কোন ক্ষতি হবে না। আর এতেই তোমরা জানবে যে প্রভু পরমেশ্বর মিশরী ও ইসরায়েলীদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। 8তখন আপনার এই অমাত্যবর্গ সকলেই এসে আমার কাছে প্রণিপাত করে বলবে, আপনি আপনার সমস্ত লোকজনকে নিয়ে এ দেশ ছেড়ে চলে যান। তারপর আমি চলে যাব। এই কথা বলে মোশি সক্রোধে ফারাও-এর দরবার ছেড়ে চলে গেলেন।
9প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, ফারাও তোমাদের কথা শুনবে না, তাই আমাকে মিশরে আরও কিছু অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে। 10মোশি ও হারোণ ফারাও-এর সামনে প্রভুর অলৌকিক ক্ষমতার নিদর্শনগুলি দেখালেন, কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর ফারাও-এর হৃদয় কঠিন করে দেওয়ায় তিনি ইসরায়েলীদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন না।
==========================
তারণোৎসব পালনের নির্দেশ
1প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, 2এই মাসই তোমাদের বৎসরের প্রথম মাস হিসাবে গণ্য হবে। 3সমগ্র ইসরায়েলী সমাজের কাছে তোমরা ঘোষণা কর: এই মাসের দশ তারিখে প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য একটি মেষশাবক সংগ্রহ করবে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে মেষশাবক নির্দিষ্ট। 4কোন পরিবার যদি সম্পূর্ণ একটা মেষশাবকের মাংস আহার করে শেষ করতে না পারে তাহলে সেই পরিবারের কর্তা তার নিকটতম প্রতিবেশির সঙ্গে মিলে একটি মেষশাবক সংগ্রহ করবে। পরিবারের লোকসংখ্যা এবং প্রত্যেকের খাওয়ার পরিমাণ হিসেব করেই তারা মেষশাবকটি সংগ্রহ করবে। 5পশুটি নিখুঁত এবং এক বছর বয়সের পুংশাবক হওয়া চাই। মেষ কিংবা ছাগ শাবকের যে কোন একটি হলেই চলবে। 6সেই শাবকটিকে তোমরা এই মাসের চোদ্দ তারিখ পর্যন্ত সযত্নে পালন করবে এবং ঐ দিন সন্ধ্যায় সমগ্র ইসরায়েলী সমাজ সমবেতভাবে ঐ পশুগুলিকে বধ করবে। 7তারপর তার রক্ত কিছুটা নিয়ে তারা যে ঘরে বসে সেই মাংস খাবে, সেই ঘরের দরজার দুই বাজু এবং উপরের অংশে লাগাবে। 8সেই রাত্রে তারা সেই মাংস আগুনে ঝলসে খামিরবিহীন রুটি ও তেতো শাকের সঙ্গে খাবে। 9ঐ মাংস তোমরা কাঁচা বা জলে সেদ্ধ করে খাবে না, মাথা, পা সমেত সবশুদ্ধ পশুটিকে আগুনে ঝল্‌সে খাবে। তার কোন অংশ ফেলা যাবে না। 10তোমরা ঐ মাংসের কিছুই সকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখবে না। খাওয়ার পরে যা কিছু বাকী থাকবে সব আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। 11এইভাবে তোমরা আহার করবে: তোমরা শক্ত করে কটিবন্ধন করবে, পায়ে পরে নেবে পাদুকা এবং হাতে নেবে যষ্টি — এই অবস্থায় তোমরা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবে। এই হবে প্রভু পরমেশ্বরের তারণোৎসব।
12ঐ রাত্রে আমি মিশরের মধ্য দিয়ে যাব এবং মিশরের মানুষ ও পশু নির্বিশেষে সকলের প্রথমজাত সন্তানকে সংহার করব। আমি প্রভু পরমেশ্বর এইভাবেই মিশরের দেবতাদের দণ্ডবিধান করব। 13তোমরা যে সব বাড়িতে বাস কর, সেগুলি এই রক্তের দ্বারা চিহ্নিত করবে। যে সব বাড়িতে রক্তের চিহ্ন দেখব সেগুলি আমি পরিহার করে যাব। মিশরের উপর আমি যে মারাত্মক আঘাত হানব তা তোমাদের স্পর্শ করবে না। 14তোমরা এই দিনটিকে স্মরণীয় দিনরূপে উদ্‌যাপন করবে এবং এই দিনে প্রভু পরমেশ্বরের উৎসব করবে। পুরুষানুক্রমে চিরকাল তোমরা এই রীতি পালন করবে।যাত্রা 23:15; 34:18; লেবীয় 23:6-8; গণনা 28:17-25; দ্বি.বি. 16:3-8 15সাত দিন তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। প্রথম দিনেই বাড়ি থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে। প্রথম দিন থেকে সপ্তম দিনের মধ্যে যদি কেউ খামিরযুক্ত রুটি খায় তাহলে সে ইসরায়েলী সমাজ থেকে বিচ্যুত হবে। 16প্রথম ও সপ্তম দিনে পবিত্র সমাবেশের আয়োজন করবে। ঐ দুই দিন খাবার তৈরী করা ছাড়া আর কোন কাজ করা চলবে না। 17এই নির্দেশগুলি তোমরা যথাযথভাবে পালন করব কারণ মনে রেখ, এই দিনে আমি তোমাদের সমগ্র জাতিকে মিশর থেকে উদ্ধার করে এনেছিলাম। তোমরা পুরুষানুক্রমে চিরকাল উল্লিখিত বিধি অনুযায়ী এই দিবস উদ্‌যাপন করবে।
18তোমরা প্রথম মাসের চোদ্দ তারিখের সন্ধ্যা থেকে আরম্ভ করে একুশ তারিখের সন্ধ্যা পর্যন্ত খামিরবিহীন রুটি খাবে। 19এই সাতদিন তোমরা ঘরে কোন খামির রাখবে না। এই সময়ে কেউ যদি খামিরযুক্ত কিছু খায়, তাহলে বিদেশী বা স্বজাতি, যেই হোক না কেন ইসরায়েলী সমাজে সে হবে পতিত। 20তোমরা খামিরযুক্ত কিছুই খাবে না, তোমাদের সকলের বাড়িতে শুধু খামিরবিহীন রুটি খাওয়া হবে।
প্রথম তারণোৎসব
21মোশি ইসরায়েলীদের নেতৃস্থানীয় সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা এখনই গিয়ে প্রত্যেক পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় করে তারণোৎসবের বলি উৎসর্গ কর। 22আর এক গোছা এসোব12:22 এসোব এক ধরনের সুগন্ধি লতা বিশেষ গামলায় রাখা রক্তে ডুবিয়ে দরজার দুই বাজু ও উপরেরর অংশে সেই রক্ত লেপন করে দাও। ভোর না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘর থেকে বার হবে না। 23প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের সংহার করার জন্য দেশের মধ্য দিয়ে যাবেন, তখন দরজার দুই বাজু ও উপরের অংশে রক্ত দেখলে তিনি সেই বাড়ি অতিক্রম করে যাবেন এবং তাঁর সংহারককে তোমাদের বাড়িতে ঢুকে আঘাত হানতে দেবেন না।হিব্রু 11:28 24তোমরা ও তোমাদের বংশধরেরা চিরকাল এই বিধি পালন করবে। 25প্রভু পরমেশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে দেশ তোমাদের দেবেন সেই দেশে গিয়েও তেমরা এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 26তোমাদর সন্তানসন্ততিরা যখন জিজ্ঞাসা করবে, এই অনুষ্ঠানের অর্থ কি? 27তখন তোমরা তাদের বলবে, এ হচ্ছে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে তারণোৎসবের বলিদান। মিশরদেশে তিনি যখন মিশরীদের সংহার করেছিলেন, তখন তিনি ইসরায়েলীদের বাড়িগুলি অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং আমাদের পরিবারসমূহকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
সমবেত জনতা তখন নত হয়ে প্রণিপাত করল। 28প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসরায়েলীরা সব পালন করল।
প্রথমজাত সন্তানদের মৃত্যু
29সেই দিন মধ্যরাত্রে প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র থেকে আরম্ভ করে কারাগারের কয়েদীর জ্যেষ্ঠ সন্তান পর্যন্ত মিশরের সমস্ত প্রথমজাত সন্তানকে সংহার করলেন। প্রথমজাত পশুগুলিও মারা গেল। 30ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গ এবং মিশরীরা সকলেই বাকী রাত জেগে কাটাল। সারা মিশরে তীব্র ক্রন্দনরোল উঠল, কারণ দেশে এমন একটি পরিবার ছিল না যেখানে কেউ মারা যায়নি।
31সেই রাত্রেই ফারাও মোশি ও হারোণকে ডেকে এনে বললেন, ইসরায়েলীদের সকলকে নিয়ে তোমরা শিগ্‌গির আমার প্রজাদের কাছ থেকে চলে যাও। তোমরা যেমন চেয়েছিলে সেই ভাবেই গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের আরাধনা কর। 32তোমাদের কথামত গরু-ভেড়ার পালও সঙ্গে নিয়ে যাও, আর আমার জন্য প্রভু পরমেশ্বরের করুণা ভিক্ষা কর।
33ইসরায়েলীরা যাতে তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যায় সেই জন্য মিশরীরা তাদের খুব পীড়াপীড়ি করতে লাগল। তারা বলল, তা না হলে আমরা সকলেই মারা পড়ব। 34ইসরায়েলীরা তখন ময়দায় খামির না মিশিয়েই ময়দা শুদ্ধ বাসন চাদরে জড়িয়ে কাঁধে তুলে নিল। 35তারা মোশির কথা মত মিশরীদের কাছ থেকে সোনারূপার অলঙ্কার ও কাপড়চোপড় আগেই চেয়ে নিয়েছিল।যাত্রা 3:21-22 36প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের জন্য মিশরীদের মনে প্রীতির সঞ্চার করেছিলেন, তাই তারা যা চেয়েছিল মিশরীরা তাদের সবই দিয়েছিল। এ ভাবেই তারা মিশরীদের ধনসম্পদ হস্তগত করল।
মিশর ছেড়ে ইসরায়েলীদের যাত্রা
37ইসরায়েলীরা রামেসেস নগর থেকে সুক্কোতের দিকে যাত্রা করল। নারী ও শিশু বাদে তাদের দলে ছিল প্রায় ছয় লক্ষ পুরুষ। 38এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতির অনেক লোক এবং গরু-ভেড়া ও ছাগলের বিরাট পাল তাদের সঙ্গে গেল। 39মিশর থেকে যে ময়দার তালগুলি তারা নিয়ে এসেছিল, সেগুলি দিয়ে তারা খামিরবিহীন রুটি তৈরী করল, কারণ তাদের কাছে খামির ছিল না। মিশর ছেড়ে তাদের এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছিল যে খাবার তৈরী করার সময়টুকুও তারা পায়নি। 40ইসরায়েলীরা চারশ ত্রিশ বছর মিশরে ছিল।আদি 15:13; গালা 3:17 41চারশ ত্রিশ বছর যে দিন পূর্ণ হল সেই দিনই প্রভু পরমেশ্বরের প্রজাবাহিনী মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এল। 42এই রাত ছিল জাগরণের রাত, কারণ প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনার জন্য এই রাত্রে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরায়। সেই জন্যই ইসরায়েলীরা পুরুষানুক্রমে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে এই জাগরণের রাত্রি পালন করে।
তারণোৎসব পালনের বিধি-নির্দেশ
43প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, এই বিধি অনুযায়ী তোমরা তারণোৎসব পালন করবে: অন্য কোন জাতির লোক এই উৎসবের ভোজে অংশ গ্রহণ করবে না। 44কিন্তু অর্থমূল্যে ক্রীত দাসেরা সুন্নত সংস্কারের পরই ভোজে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। 45অতিথি কিংবা বেতনভোগী মজুরেরাও এই ভোজ খেতে পারবে না।
46একই ঘরে বসে সকলকে এই খাবার খেতে হবে, মাংসের কোন অংশ ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া চলবে না এবং তার কোন হাড় ভাঙ্গতে পারবে না।গণনা 9:12; যোহন 19:36 47সমগ্র সমাজ এই উৎসব পালন করবে। 48তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন বিদেশী যদি প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে তারণোৎসব পালন করতে চায়, তাহলে তার পরিবারের সকল পুরুষকে সু্ন্নত করতে হবে, তারপর সে উৎসবে যোগদান করতে পারবে। তখন তাকে স্বজাতীয় বলে গণ্য করতে হবে। কিন্তু সুন্নত সংস্কারহীন কোন লোক ভোজে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। 49ইসরায়েল কুলজাত কিম্বা তোমাদের সঙ্গে বসবাসকারী বিদেশী, সকলের জন্যই এক বিধি। 50প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ইসরায়েলীরা সকলেই সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করল। 51এই দিনেই প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের গোষ্ঠী অনুসারে দলে দলে ভাগ করে সকলকে মিশর থেকে উদ্ধার করে আনলেন।
=============================================
প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে প্রথম সন্তান উৎসর্গের বিধি
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2ইসরায়েলী সমাজের প্রত্যেকটি জ্যেষ্ঠ সন্তান, প্রত্যেকটি প্রথমজাত সন্তানকে আমার উদ্দেশে উৎসর্গ করতে হবে। মানুষের হোক বা পশুরই হোক, প্রত্যেকটি প্রথম সন্তান আমার।গণনা 3:13; লুক 2:23
3মোশি ইসরায়েলীদের বললেন, আজকের এই দিনটি তোমরা বিশেষভাবে স্মরণে রাখবে। এই দিন তোমরা দাসত্বের আগার মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছ, প্রভু পরমেশ্বর মহাপরাক্রমে তোমাদের উদ্ধার করেছেন। এই দিনে খামিরযুক্ত কোন কিছুই খাওয়া চলবে না। 4আবির মাসের এই দিনে তোমাদের যাত্রা সুরু হল। 5প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কনানী, হিত্তীয়, ইমোরী, হিব্বীয় এবং যিবুষী প্রভৃতি জাতি যে দেশে বাস করে, সুজলা-সুফলা সমৃদ্ধিশালী সেই কনান দেশ তিনি তোমাদের দান করবেন। প্রভু পরমেশ্বর যখন সেই দেশে তোমাদের নিয়ে যাবেন তখন সেখানেও তোমরা এই মাসে এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 6সাতদিন তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে এবং সপ্তম দিনে পরমেশ্বরের সম্মানার্থে উৎসব করবে। 7সাতদিন তোমাদের খামিরবিহীন রুটি খেতে হবে, ঐ সময়ে সারা দেশে খামিরযুক্ত কোন দ্রব্য কিংবা খামির যেন দেখতে পাওয়া না যায়। 8ঐ দিন তোমরা তোমাদের সন্তানসন্ততিদের বলবে মিশর ছেড়ে চলে আসার দিন প্রভু পরমেশ্বর আমাদের জন্য যা করেছিলেন তারই স্মরণে এই অনুষ্ঠান। 9প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ যাতে সর্বদা তোমাদের ওষ্ঠাগ্রে থাকে সেই জন্য হাতে ও কপালে ধারণ করা স্মারক চিহ্নের মতই এই অনুষ্ঠান হবে তোমাদের কাছে স্মারক স্বরূপ। কারণ প্রভু পরমেশ্বর মহাপরাক্রম প্রকাশ করে মিশর থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছেন। 10এই বিধি অনুযায়ী প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট সময়ে তোমার এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 11তোমাদের পূর্বপুরুষ ও তোমাদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের কনান দেশে নিয়ে যাবেন ও, সেই দেশ তোমাদের দান করবেন। 12তোমরা কিন্তু তখন তোমাদের সমস্ত প্রথম সন্তানকে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করো। তোমাদের পশুপালের প্রথমজাত পুং শাবকগুলিও প্রভু পরমেশ্বরের হবে।যাত্রা 34:19-20; লুক 2:23 13প্রথমজাত পুং গর্দভ শাবকগুলিও তোমরা মেষ কিম্বা ছাগশিশুর বিনিময়ে মুক্ত করতে পার। যদি মুক্ত না কর তাহলে সেগুলির ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবে। প্রথমজাত পুত্র-সন্তানদের তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করবে। 14পরবর্তীকালে তোমাদের সন্তানসন্ততিরা যখন জিজ্ঞাসা করবে, এ সবের অর্থ কি? তখন তোমরা তাদের বলবে, প্রভু পরমেশ্বর নিজ শক্তিতে দাসত্বের আগার মিশর থেকে আমাদের উদ্ধার করে এনেছিলেন। 15উদ্ধত ফারাও আমাদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছিল, প্রভু পরমেশ্বর তখন মিশরের মানুষ ও পশুকুলের প্রথমজাত সমস্ত সন্তানকে সংহার করেছিলেন। এই কারণেই আমরা প্রথমজাত সন্তান যদি পুরুষ হয় তবে তাকে প্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করি, আর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে আমরা পণ দিয়ে মুক্ত করি। 16প্রভু পরমেশ্বরের এই মহান কীর্তি স্মরণে রাখার জন্য এর প্রতীক চিহ্ন তোমরা হাতে ও কপালে ধারণ করবে। কারণ প্রভু পরমেশ্বর নিজ পরাক্রমে মিশর থেকে আমাদের উদ্ধার করেছিলেন।
মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভ
17ফারাও ইসরায়েলীদের মুক্তি দেওয়ার পর ঈশ্বর তাদের ফিলিস্তিনীদের দেশের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেলেন না, যদিও সেই পথেই কনানের দূরত্ব ছিল সবচেয়ে কম। কারণ ঈশ্বর মনে করলেন, পথে যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখীন হলে ইসরায়েলীরা হয়তো মত পরিবর্তন করে আবার মিশরে ফিরে যাবে। 18তাই ঈশ্বর তাদের ঘুর-পথে প্রান্তরের মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরের দিকে পরিচালিত করলেন। সশস্ত্র ইসরায়েলীরা ব্যূহ রচনা করে মিশর ছেড়ে এগিয়ে চলল।
19মোশি যোষেফের অস্থিগুলি সঙ্গে নিলেন, কারণ যোষেফ এ ব্যাপারে ইসরায়েলীদের শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, ঈশ্বর একদিন নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সদয় হবেন, সেদিন তোমরা যখন এখান থেকে চলে যাবে তখন আমার অস্থিগুলি সঙ্গে নিয়ে যেও।আদি 50:25; যিহো 24:32
20ইসরায়েলীরা সুক্কোত থেকে রওনা হয়ে প্রান্তরের সীমান্তে এথসে এসে শিবির স্থাপন করল। 21যাত্রাপথে ঈশ্বর সর্বদা তাদের অগ্রবর্তী থাকতেন। দিনে তিনি মেঘপুঞ্জ থেকে তাদের পথ নির্দেশ করতেন এবং রাতে অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে আলোক বিতরণ করতেন, ফলে তারা দিনে ও রাতে সব সময়েই পথ চলতে পারত। 22ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে দিনের মেঘপুঞ্জ ও রাতের অগ্নিস্তম্ভ কখনোই অপসৃত হত না।
==================================

ইসরায়েলীদের লোহিত সাগর অতিক্রম
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2তুমি ইসরায়েলীদের বল, তারা যেন ফিরে গিয়ে বেল-সফোনের পূর্ব দিকে মিগ্‌দোল ও সাগরের মাঝামাঝি পি-হা-হিরোতের সম্মুখে সাগর তীরে শিবির স্থাপন করে। 3তাহলে ফারাও মনে করবে যে ইসরায়েলীরা পথ হারিয়ে দেশের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রান্তরের মধ্যে আটকে পড়েছে। 4আমি ফারাও-এর বুদ্ধি বিকল করে দেব, সে ইসরায়েলীদের আক্রমণ করতে ছুটে যাবে, তখন আমি ফারাও ও তার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে পরাস্ত করব। তখন লোকে আমার মহিমা বুঝতে পারবে। মিশরীরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর। ইসরায়েলীরা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ পালন করল।
ফারাও-এর সৈন্যসামন্তের সলিল সমাধি
5মিশর-রাজ ফারাও সংবাদ পেলেন যে ইসরায়েলীরা পালিয়ে গেছে। তখন তাদের সম্পর্কে ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গের মনোভাব বদলে গেল। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, এ আমরা কি করলাম? আমাদের দাসত্ব থেকে ইসরায়েলীদের কেন মুক্তি দিলাম? 6ফারাও তখন রথ সাজিয়ে সৈন্যসামন্তসহ যাত্রা করলেন। 7বাছাই করা ছয়শো রথ ছাড়াও মিশরের অন্যান্য রথ ও সেরা রথারোহী সেনানীরা তাঁর সঙ্গে গেল। 8প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর বুদ্ধি লোপ করে দিয়েছিলেন, তাই ফারাও বিদ্রোহী ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। 9ফারাও-এর সমস্ত অশ্বারোহী, রথী ও পদাতিক সৈন্যসহ মিশরীরা তাদের তাড়া করে গেল এবং বেল সফোনের পূর্ব দিকে পি-হা-হিরোতে সাগরতীরে, যেখানে ইসরায়েলীরা শিবির স্থাপন করেছিল, সেখানে গিয়ে পৌঁছাল। 10ফারাও কাছাকাছি এসে পড়লে ইসরায়েলীরা দেখতে পেল মিশরীরা তাদের পিছনে ছুটে আসছে। তারা খুব ভয় পেয়ে চীৎকার করে প্রভু পরমেশ্বরকে ডাকতে লাগল। 11তারা মোশিকে বলল, মিশরে কবর দেওয়ার জায়গা ছিল না বলেই কি তুমি আমাদের মারবার জন্য এই প্রান্তরে নিয়ে এসেছ? মিশর থেকে বার করে এনে তুমি আমাদের কি দশা করেছ দেখ। 12এই জন্যই তো মিশরে থাকতে আমরা তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের কথা ছেড়ে দাও, আমরা মিশরীদের দাস হয়েই থাকব। এখানে এই প্রান্তরে মরার চেয়ে দাস হয়ে থাকাই ভাল ছিল।
13মোশি তাদের বললেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, সাহস কর, দেখ, প্রভু পরমেশ্বর আজ কি করে তোমাদের উদ্ধার করেন। মিশরীদের তোমরা আজ দেখছ বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনদিন তাদের দেখতে পাবে না। 14প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন, শান্ত হও তোমরা।
15প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তোমরা কেন অনর্থক কোলাহল করছ? ইসরায়েলীদের তুমি এগিয়ে যেতে বল। 16আর তুমি তোমার হাতের লাঠিটা সমুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দাও, তাহলে সমুদ্র দুভাগ হয়ে যাবে। তখন ইসরায়েলীরা শুকনো পথেই সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যেতে পারবে। 17আমি মিশরীদের ক্রোধে এমন উন্মত্ত করে তুলব যে তারা তাদের পিছনে ছুটে যাবে, আর তখন আমি ফারাও ও তার রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যদের ধ্বংস করব। এতে লোকে জানবে আমার মহিমা। 18রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ ফারাও-কে পরাস্ত করার পর মিশরীরা বুঝতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর।
19ঈশ্বরের দূত, যিনি ইসরায়েলী বাহিনীর অগ্রবর্তী ছিলেন তিনি ঘুরে তাদের পিছন দিকে গেলেন। তখন ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে মেঘপুঞ্জ সরে তাদের পিছনে গিয়ে 20মিশরী বাহিনী ও ইসরায়েলী বাহিনীর মাঝখানে এসে অবস্থিত হল। মেঘের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় মিশরীদের উপরে রাত্রির অন্ধকার ঘনিয়ে এল কিন্তু ইসরায়েলীদের দিক আলোকিত হয়ে রইল। তখন মিশরীরা সারারাত ইসরায়েলীদের কাছে আসতে পারল না।14:20 হিব্রু অস্পষ্ট। 21মোশি সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আর প্রভু পরমেশ্বর সারা রাত প্রবল পূবালী বাতাস বইয়ে সমুদ্রের জল সরিয়ে দিলেন। সমুদ্রের জল দুভাগ হয়ে গেল। মাঝখানে তৈরী হল শুকনো পথ। 22ইসরায়েলীরা সেই পথের উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডান দিকে ও বাঁদিকে সমুদ্রের জল দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।১ করি 10:1-2; হিব্রু 11:29
23ফারাও-এর সমস্ত রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসামন্তসহ মিশরীরা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রের মধ্যে নেমে গেল। 24রাত্রির শেষ প্রহরে প্রভু পরমেশ্বর মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে মিশরী সেনাবাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে তাদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করলেন। 25তিনি তাদের রথের চাকা বিকল করে দিলেন এবং তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হল। মিশরীরা তখন বলতে লাগল, চল, ইসরায়েলীদের কাছ থেকে আমরা পালিয়ে যাই, প্রভু পরমেশ্বরই ওদের পক্ষ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।
26প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, সমুদ্রের দিকে তোমার হাত বাড়াও তাহলে মিশরীদের রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যদের সমুদ্রের জল এসে ডুবিয়ে দেবে। 27মোশি তখন সমুদ্রের দিকে হাত বাড়ালেন। ভোরবেলায় সমুদ্রের জল আবার যথাস্থানে ফিরে এল। পলায়নরত মিশরীরা সেই জলরাশির মুখে গিয়ে পড়ল। প্রভু পরমেশ্বর তাদের সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করেলন। 28ফারাও-এর সেনাবাহিনী, রথী, অশ্বারোহী ইত্যাদি যারা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল, সমুদ্রের জল ফিরে এসে তাদের গ্রাস করল, তাদের একজনও রক্ষা পেল না। 29ইসরায়েলীরা কিন্তু শুকনো মাটির উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডানদিকে ও বাঁদিকে দুপাশে জলরাশি দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।
30সেই দিন প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের কবল থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার করলেন। ইসরায়েলীরা দেখল সমুদ্রতটে মিশরীরা মরে পড়ে রয়েছে। 31মিশরীদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের প্রচণ্ড পরাক্রমের এই মহান কীর্তি দেখে ইসরায়েলীদের মন তাঁর প্রতি সম্ভ্রমে ভরে গেল। তারা প্রভু পরমেশ্বর ও তাঁর সেবক মোশির উপর আস্থা স্থাপন করল।

যাত্রা পুস্তক ৫:২-৩

মিশর রাজের সম্মুখে মোশি ও হারোণ
1এর পরে মোশি ও হারোণ ফারাও-এর কাছে গিয়ে বললেন, ইসরায়েলীদের ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, তুমি আমার প্রজাদের ছেড়ে দাও, তারা প্রান্তরে গিয়ে আমার উদ্দেশে উৎসব অনুষ্ঠান করবে।
 2ফারাও বললেন, কে এই প্রভু পরমেশ্বর? তার আদেশে কেন আমি ইসরায়েলীদের ছেড়ে দেব? আমি তাকে চিনি না। ইসরায়েলীদের আমি ছাড়ব না।
 3তাঁরা বললেন, ইসরায়েলের ঈশ্বর আমাদের দর্শন দিয়েছেন, 
তাই দয়া করে আমাদের তিন দিনের পথ অতিক্রম করে প্রান্তরে যাওয়ার অনুমতি দিন। আমরা সেখানে গিয়ে আমাদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করব, তা না হলে তিনি আমাদের মহামারী কিম্বা যুদ্ধবিগ্রহ দ্বারা ধ্বংস করবেন।
 4মিশর রাজ মোশি ও হারোণকে বললেন, কেন তোমরা এদের কাজ থেকে নিরস্ত করতে চাইছ? যাও, নিজেদের কাজ কর।
5তিনি বললেন, এই লোকগুলো সংখ্যায় অনেক বেড়েছে, তা সত্ত্বেও তোমরা এদের কাজ থেকে নিবৃত্ত করতে চাইছ।
6সেই দিনই ফারাও কর্মপরিদর্শক ও মজুর-সর্দারদের আদেশ দিলেন, 7তোমরা আর আগের মত ইঁট তৈরীর জন্য এদের খড় দিও না । এখান থেকে ওরা নিজেরাই খড় জোগাড় করে নেবে। 8কিন্তু তোমরা দেখবে যেন ইঁট তৈরীর বরাদ্দ আগের মতই থাকে, কোন কারণেই তা কমাবে না। এই লোকগুলি অলস, সেই জন্যই এরা এদের দেবতার উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে যাওয়ার কথা বলে চেঁচামেচি করছে। 9এদের পরিশ্রমের মাত্রা আর‍ও বাড়িয়ে দাও, কাজে ব্যস্ত থাকলে এসব বাজে কথায় এরা কান দিতে পারবে না।
10কর্মপরিদর্শক ও মজুর-সর্দারেরা গিয়ে ইসরায়েলীদের বলল, ফারাও-এর হুকুম, এখন থেকে তোমাদের আর খড় দেওয়া হবে না। 11তোমরা নিজেরা যেখান থেকে পার খড় জোগাড় করে নাও, তোমাদের ইঁট তৈরীর বরাদ্দ কিন্তু কমানো হবে না। 12ইসরায়েলীরা তখন খড়কুটো জোগাড় করার জন্য মিশরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল, 13আগে যখন তাদের খড় সরবরাহ করা হত তখন দৈনিক যে পরিমাণ কাজ বরাদ্দ ছিল সেই পরিমাণ কাজ আদায় করার জন্য কর্মপরিদর্শকেরা তাদের উপর চাপ দিতে লাগল। 14ইসরায়েলীদের খাটানোর জন্য তাদের স্বজাতীয় যে সব মজুর-সর্দার নিয়োগ করা হয়েছিল, ফারাও-এর কর্মচারীরা তাদের মারধর করে কৈফিয়ত দাবী করতে লাগল, কেন তারা এখন আগের মত ইঁট তৈরী করতে পারছে না।
15ইসরায়েলী মজুর-সর্দারেরা ফারাও-এর কাছে গিয়ে নালিশ করল, মহারাজ, অধীনদের প্রতি এ রকম ব্যবহার করছেন কেন? 16আজকাল আমাদের খড় দেওয়া হয় না অথচ ইঁট তৈরী করতে বলা হচ্ছে, আবার চাবুক মারা হচ্ছে, কিন্তু এর জন্য আপনার লোকেরাই দায়ী। 17ফারাও বললেন, তোমরা অলস—অত্যন্ত অলস। সেই জন্যই তোমরা প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে বলি উৎসর্গ করতে যাওয়ার কথা বলছ। 18যাও, কাজ কর গিয়ে, খড় দেওয়া হবে না, কিন্তু বরাদ্দ ইঁট তোমাদের তৈরী করতেই হবে। 19দৈনিক ইঁট তৈরীর বরাদ্দ কমানো হবে না জেনে ইসরায়েলী মজুর-সর্দারেরা মহাসঙ্কটে পড়ল। 20ফারাও-এর দরবার থেকে বেরিয়ে এসে তারা দেখতে পেল মোশি ও হারোণ তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। 21তারা তাঁদের বলল, প্রভু পরমেশ্বরই তোমাদের বিচার করুন, কারণ তোমাদের জন্যই আজ আমরা ফারাও আর তাঁর কর্মচারীদের কোপে পড়েছি, আমাদের মেরে ফেলার জন্য তোমরাই তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছ।
22মোশি ফিরে গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের কাছে নিবেদন করলেন, হে প্রভু পরমেশ্বর, কেন তুমি ইসরায়েলীদের এই দুর্দশার মধ্যে ফেললে? কেনই বা তুমি আমাকে এখানে পাঠালে? আমি ফারাও-এর কাছে গিয়ে তোমার নাম করে কথা বলার পর থেকে সে এদের অনিষ্ট করেই চলেছে, কিন্তু তুমি তোমার প্রজাদের উদ্ধারের জন্য কিছুই করলে না।

যাত্রা পুস্তক - ৭ ও ৯

যাত্রা পুস্তক : ৭ 


20মোশি ও হারোণ প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ মত কাজ করলেন। ফারাও ও তাঁর সভাসদ্‌দের সাক্ষাতে মোশি লাঠি তুলে নীলনদের জলে আঘাত করলেন আর নদীর জল রক্ত হয়ে গেল। 21নদীর সব মাছ মরে গেল, জলে এত দুর্গন্ধ হল যে মিশরীরা নীলনদের জল আর পান করতে পারল না। মিশর দেশের সর্বত্র জল রক্ত হয়ে গেল। 22তখন মিশরের জাদুকরেরাও মন্ত্রতন্ত্রের দ্বারা সেই রকম করল আর প্রভু পরমেশ্বর যেমন বলেছিলেন, ফারাও-এর হৃদয় তেমনই কঠিন হয়ে রইল। মোশি ও হারোণের কথা তিনি গ্রাহ্য করলেন না। 23ফারাও তাঁর প্রাসাদে ফিরে গেলেন, এই ঘটনা তাঁর মনে কোন রেখাপাত করল না। 24নীলনদের জল পানের অযোগ্য হওয়ায় মিশরীরা নদীতীরে ও আশেপাশে পানীয় জলের খোঁজে গর্ত খুঁড়তে লাগল। 25নীলনদের জলে প্রভু পরমেশ্বর আঘাত হানার পর এই ভাবে সাত দিন কেটে গেল।


===========================


যাত্রা পুস্তক : ৯ 




22প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, আকাশের দিকে হাত বাড়াও, তাহলে সারা মিশর দেশ মানুষ, পশু ও শস্যক্ষেত্রের উপরে শিলাবৃষ্টি শুরু হবে।



23মোশি তাঁর লাঠি আকাশের দিকে তুলে ধরলেন আর প্রভু পরমেশ্বর শিলাবৃষ্টি করতে লাগলেন।



বজ্রপাত হতে লাগল, আর এই ভাবেই তিনি সারা মিশর দেশে শিলাবৃষ্টি ঘটালেন। 24ভীষণ শিলাবৃষ্টির সঙ্গে ঘন ঘন বজ্রপাত হতে লাগল। মিশরী জাতির পত্তন অবধি সারা মিশর দেশে এমনটি আর কখনও ঘটে নি।প্রকা 8:7; 16:21 25সারা দেশব্যাপী মানুষ, পশু এবং যা কিছু বাইরে খোলা মাঠে ছিল, তাদের সকলের উপরে শিলাবৃষ্টি হল। ক্ষেতের শস্য সমস্ত ও তৃণগুল্ম নষ্ট হল, গাছপালাও বিধ্বস্ত হল।



   link-9

যাত্রা পুস্তক ৭-৮

যাত্রা পুস্তক 7
হারোণের প্রথম অলৌকিক কাজ
8প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, 9ফারাও যদি তোমাদের কোন অলৌকিক নিদর্শন দেখাতে বলে, তাহলে তুমি হারোণকে বলবে ফারাও-এর সম্মুখে তার লাঠিটা ফেলে দিতে, সেটা তখন সাপ হয়ে যাবে। 10মোশি ও হারোণ ফারাও-এর দরবারে গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ মতই কাজ করলেন। ফারাও এবং তাঁর অমাত্যবর্গের সামনে হারোণ তাঁর লাঠিটা ফেলে দিলেন আর সেটা সঙ্গে সঙ্গে সাপ হয়ে গেল। 11তখন ফারাও তাঁর দরবারের গুণিন ও জাদুকরদের ডেকে পাঠালেন আরা তারাও তাদের মন্ত্রতন্ত্রের দ্বারা সেই রকম কাজ করল।
 12তারা তাদের লাঠিগুলো মাটিতে ফেলে দিল এবং সেগুলি সাপ হয়ে গেল, কিন্তু হারোণের লাঠি সেগুলিকে গিলে ফেলল। 13প্রভু পরমেশ্বর যেমন বলেছিলেন, ফারাও-এর হৃদয় তেমনই কঠিন হয়ে রইল। তিনি মোশি ও হারোণের কথায় কান দিলেন না।
মিশরের উপরে দশ আঘাত
(1) নীলনদের জল রক্তে পরিণত
14প্রভু পরমেশ্বর তখন মোশিকে বললেন, ফারাও-এর বুদ্ধি লোপ পেয়েছে, সে ইসরায়েলীদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছে। 15ফারাও যখন সকালে নদীতে স্নান করতে যাবে তখন তার সঙ্গে গিয়ে দেখা কর। তুমি নদীতীরে তার জন্য অপেক্ষা করবে এবং যে লাঠিটা সাপে পরিণত হয়েছিল সেটা সঙ্গে নেবে। 16ফারাওকে তুমি বলবে, ইসরায়েলীদের আরাধ্য ঈশ্বর প্রভু পরমেশ্বর, আমাকে আপনার কাছে এই কথা বলতে পাঠিয়েছেন, তাঁর প্রজারা প্রান্তরে গিয়ে তাঁর উপাসনা করবে, আপনি তাদের ছেড়ে দিন। এ পর্যন্ত আপনি তাঁর কথা গ্রাহ্য করেন নি। 17-18দেখুন, আমার হাতে এই লাঠি দিয়ে আমি নীলনদের জলে আঘাত করব আর সঙ্গে সঙ্গে এর জল রক্ত হয়ে যাবে। নদীর সব মাছ মরে যাবে এবং জলে এত দুর্গন্ধ হবে যে মিশরীরা সেই জল আর পান করতে পারবে না। এতেই আপনি বুঝতে পারবেন যে তিনিই ‘নিত্যসত্তা প্রভুপরমেশ্বর’।প্রকা 16:4  
19প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তুমি হারোণকে বলো যেন সে মিশরের সমস্ত নদী, জলাশয়, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদির উপরে তার হাতের লাঠি বাড়িয়ে ধরে, তাহলে সেগুলির জল রক্ত হয়ে যাবে। সারা মিশরের জল রক্তে পরিণত হবে, এমন কি কাঠ ও পাথরের পাত্রে রাখা জলও রক্ত হয়ে যাবে।
20মোশি ও হারোণ প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ মত কাজ করলেন। ফারাও ও তাঁর সভাসদ্‌দের সাক্ষাতে মোশি লাঠি তুলে নীলনদের জলে আঘাত করলেন আর নদীর জল রক্ত হয়ে গেল। 21নদীর সব মাছ মরে গেল, জলে এত দুর্গন্ধ হল যে মিশরীরা নীলনদের জল আর পান করতে পারল না। মিশর দেশের সর্বত্র জল রক্ত হয়ে গেল। 22তখন মিশরের জাদুকরেরাও মন্ত্রতন্ত্রের দ্বারা সেই রকম করল আর প্রভু পরমেশ্বর যেমন বলেছিলেন, ফারাও-এর হৃদয় তেমনই কঠিন হয়ে রইল। মোশি ও হারোণের কথা তিনি গ্রাহ্য করলেন না। 23ফারাও তাঁর প্রাসাদে ফিরে গেলেন, এই ঘটনা তাঁর মনে কোন রেখাপাত করল না। 24নীলনদের জল পানের অযোগ্য হওয়ায় মিশরীরা নদীতীরে ও আশেপাশে পানীয় জলের খোঁজে গর্ত খুঁড়তে লাগল। 25নীলনদের জলে প্রভু পরমেশ্বর আঘাত হানার পর এই ভাবে সাত দিন কেটে গেল।
========================================================
 যাত্রা পুস্তক-8
(2) ব্যাঙের উপদ্রব
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তুমি গিয়ে ফারাওকে বল, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, আমার অর্চনা করার জন্য আমার প্রজাদের ছেড়ে দাও। 2যদি তুমি তাদের না ছাড়, তাহলে তোমার রাজ্যে আমি ব্যাঙের উপদ্রব ঘটাব। 3নীলনদ ব্যাঙে ছেয়ে যাবে এবং সেখান থেকে সেগুলি তোমার প্রাসাদে, শয়নকক্ষে, শয্যায় এবং তোমার পারিষদ ও প্রজাদের বাড়িতে গিয়ে উঠবে। এমন কি তোমাদের উনুন ও বাসনপত্রের মধ্যে গিয়েও ঢুকবে। 4তোমার এবং তোমার পারিষদ ও প্রজাদের গায়ে ব্যাঙ লাফিয়ে উঠতে থাকবে।
5প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তুমি হারোণকে বল, যেন সে মিশর দেশের সমস্ত নদী, নালা, খাল বিলের উপর তার লাঠি বাড়িয়ে ধরে, তাহলে সব ব্যাঙ ডাঙ্গায় উঠে আসবে।  
6 হারোণ মিশরের সমস্ত জলাশয়ের উপর তাঁর লাঠি বাড়িয়ে ধরলেন আর ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যাঙ এসে দেশ ছেয়ে ফেলল। 
 7মিশরী জাদুকরেরাও তাদের যাদুমন্ত্রবলে দেশে ব্যাঙের ঝাঁক নিয়ে এল।
(3) ডাঁশ মশার উপদ্রব
16প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে আবার বললেন, তুমি হারোণকে বল, সে যেন তার লাঠি দিয়ে মাটিতে ধুলোর উপর আঘাত করে, তাহলে সারা মিশর দেশ ডাঁশ মশায় ছেয়ে যাবে।  
17তাঁরা তা-ই করলেন।
 হারোণ তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে ধূলোর উপর আঘাত করলেন আর সেই ধূলো ডাঁশ মশায় পরিণত হয়ে মানুষ ও পশু সকলকেই ছেঁকে ধরল। 
দেশের সমস্ত ধূলিকণা ডাঁশ মশা হয়ে সারা দেশ ছেয়ে ফেলল। 18জাদুকরেরাও মন্ত্র পড়ে ডাঁশ মশা উৎপন্ন করার চেষ্টা করল কিন্তু তারা ব্যর্থ হল। 19মানুষ ও পশু সকলেই মশার দ্বারা আক্রান্ত হল দেখে জাদুকরেরা ফারাওকে বলল, ঈশ্বরের অঙ্গুলি সঙ্কেতেই এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রভু পরমেশ্বরের কথা মত ফারাও-এর বুদ্ধি বিকল হয়ে রইল। মোশি ও হারোণের কথা তিনি গ্রাহ্য করলেন না।লুক 11:20
 
========================================================== 


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...