যাত্রাপুস্তক ১৪: ১৫-১৬ ও ২১-২২

ইসরায়েলীদের লোহিত সাগর অতিক্রম
 
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2তুমি ইসরায়েলীদের বল, তারা যেন ফিরে গিয়ে বেল-সফোনের পূর্ব দিকে মিগ্‌দোল ও সাগরের মাঝামাঝি পি-হা-হিরোতের সম্মুখে সাগর তীরে শিবির স্থাপন করে। 3তাহলে ফারাও মনে করবে যে ইসরায়েলীরা পথ হারিয়ে দেশের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রান্তরের মধ্যে আটকে পড়েছে। 4আমি ফারাও-এর বুদ্ধি বিকল করে দেব, সে ইসরায়েলীদের আক্রমণ করতে ছুটে যাবে, তখন আমি ফারাও ও তার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে পরাস্ত করব। তখন লোকে আমার মহিমা বুঝতে পারবে। মিশরীরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর। ইসরায়েলীরা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ পালন করল।
ফারাও-এর সৈন্যসামন্তের সলিল সমাধি
5মিশর-রাজ ফারাও সংবাদ পেলেন যে ইসরায়েলীরা পালিয়ে গেছে। তখন তাদের সম্পর্কে ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গের মনোভাব বদলে গেল। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, এ আমরা কি করলাম? আমাদের দাসত্ব থেকে ইসরায়েলীদের কেন মুক্তি দিলাম? 6ফারাও তখন রথ সাজিয়ে সৈন্যসামন্তসহ যাত্রা করলেন। 7বাছাই করা ছয়শো রথ ছাড়াও মিশরের অন্যান্য রথ ও সেরা রথারোহী সেনানীরা তাঁর সঙ্গে গেল। 8প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর বুদ্ধি লোপ করে দিয়েছিলেন, তাই ফারাও বিদ্রোহী ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। 9ফারাও-এর সমস্ত অশ্বারোহী, রথী ও পদাতিক সৈন্যসহ মিশরীরা তাদের তাড়া করে গেল এবং বেল সফোনের পূর্ব দিকে পি-হা-হিরোতে সাগরতীরে, যেখানে ইসরায়েলীরা শিবির স্থাপন করেছিল, সেখানে গিয়ে পৌঁছাল। 10ফারাও কাছাকাছি এসে পড়লে ইসরায়েলীরা দেখতে পেল মিশরীরা তাদের পিছনে ছুটে আসছে। তারা খুব ভয় পেয়ে চীৎকার করে প্রভু পরমেশ্বরকে ডাকতে লাগল। 11তারা মোশিকে বলল, মিশরে কবর দেওয়ার জায়গা ছিল না বলেই কি তুমি আমাদের মারবার জন্য এই প্রান্তরে নিয়ে এসেছ? মিশর থেকে বার করে এনে তুমি আমাদের কি দশা করেছ দেখ। 12এই জন্যই তো মিশরে থাকতে আমরা তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের কথা ছেড়ে দাও, আমরা মিশরীদের দাস হয়েই থাকব। এখানে এই প্রান্তরে মরার চেয়ে দাস হয়ে থাকাই ভাল ছিল।
13মোশি তাদের বললেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, সাহস কর, দেখ, প্রভু পরমেশ্বর আজ কি করে তোমাদের উদ্ধার করেন। মিশরীদের তোমরা আজ দেখছ বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনদিন তাদের দেখতে পাবে না। 14প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন, শান্ত হও তোমরা।
15প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তোমরা কেন অনর্থক কোলাহল করছ? ইসরায়েলীদের তুমি এগিয়ে যেতে বল।  
 
16 আর তুমি তোমার হাতের লাঠিটা সমুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দাও, তাহলে সমুদ্র দুভাগ হয়ে যাবে। তখন ইসরায়েলীরা শুকনো পথেই সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যেতে পারবে।  
 
17আমি মিশরীদের ক্রোধে এমন উন্মত্ত করে তুলব যে তারা তাদের পিছনে ছুটে যাবে, আর তখন আমি ফারাও ও তার রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যদের ধ্বংস করব। এতে লোকে জানবে আমার মহিমা। 18রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ ফারাও-কে পরাস্ত করার পর মিশরীরা বুঝতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর।
19ঈশ্বরের দূত, যিনি ইসরায়েলী বাহিনীর অগ্রবর্তী ছিলেন তিনি ঘুরে তাদের পিছন দিকে গেলেন। তখন ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে মেঘপুঞ্জ সরে তাদের পিছনে গিয়ে 20মিশরী বাহিনী ও ইসরায়েলী বাহিনীর মাঝখানে এসে অবস্থিত হল। মেঘের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় মিশরীদের উপরে রাত্রির অন্ধকার ঘনিয়ে এল কিন্তু ইসরায়েলীদের দিক আলোকিত হয়ে রইল। তখন মিশরীরা সারারাত ইসরায়েলীদের কাছে আসতে পারল না।14:20 হিব্রু অস্পষ্ট। 
 
 21মোশি সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আর প্রভু পরমেশ্বর সারা রাত প্রবল পূবালী বাতাস বইয়ে সমুদ্রের জল সরিয়ে দিলেন। সমুদ্রের জল দুভাগ হয়ে গেল। মাঝখানে তৈরী হল শুকনো পথ।
 
 22ইসরায়েলীরা সেই পথের উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডান দিকে ও বাঁদিকে সমুদ্রের জল দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।১ করি 10:1-2; হিব্রু 11:29
 
 
23ফারাও-এর সমস্ত রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসামন্তসহ মিশরীরা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রের মধ্যে নেমে গেল। 24রাত্রির শেষ প্রহরে প্রভু পরমেশ্বর মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে মিশরী সেনাবাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে তাদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করলেন। 25তিনি তাদের রথের চাকা বিকল করে দিলেন এবং তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হল। মিশরীরা তখন বলতে লাগল, চল, ইসরায়েলীদের কাছ থেকে আমরা পালিয়ে যাই, প্রভু পরমেশ্বরই ওদের পক্ষ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।
26প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, সমুদ্রের দিকে তোমার হাত বাড়াও তাহলে মিশরীদের রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যদের সমুদ্রের জল এসে ডুবিয়ে দেবে। 27মোশি তখন সমুদ্রের দিকে হাত বাড়ালেন। ভোরবেলায় সমুদ্রের জল আবার যথাস্থানে ফিরে এল। পলায়নরত মিশরীরা সেই জলরাশির মুখে গিয়ে পড়ল। প্রভু পরমেশ্বর তাদের সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করেলন। 28ফারাও-এর সেনাবাহিনী, রথী, অশ্বারোহী ইত্যাদি যারা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল, সমুদ্রের জল ফিরে এসে তাদের গ্রাস করল, তাদের একজনও রক্ষা পেল না। 29ইসরায়েলীরা কিন্তু শুকনো মাটির উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডানদিকে ও বাঁদিকে দুপাশে জলরাশি দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।
30সেই দিন প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের কবল থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার করলেন। ইসরায়েলীরা দেখল সমুদ্রতটে মিশরীরা মরে পড়ে রয়েছে। 31মিশরীদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের প্রচণ্ড পরাক্রমের এই মহান কীর্তি দেখে ইসরায়েলীদের মন তাঁর প্রতি সম্ভ্রমে ভরে গেল। তারা প্রভু পরমেশ্বর ও তাঁর সেবক মোশির উপর আস্থা স্থাপন করল।
 

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...