যাত্রা পুস্তক ১১-১৪

যাত্রাপুস্তক - ১১

(10) প্রথম সন্তানের মৃত্যু
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, আমি আরও একবার ফারাও এবং মিশরীদের বিরুদ্ধে আঘাত হানব, তার পরে সে তোমাদের মুক্তি দেবে। সেই সময় সে তোমাদের সকলকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেবে। 2তুমি এখন ইস্‌রায়েলীদের বল যে প্রত্যেক পুরুষ ও নারী যেন তার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সোনা ও রূপোর অলঙ্কার চেয়ে নেয়। 3প্রভু পরমেশ্বরের অনুগ্রহে ইসরায়েলীরা মিশরীদের প্রীতিভাজন হয়ে উঠল। ফারাও-এর পারিষদবর্গ ও দেশবাসী সকলের কাছেই মোশি একজন মহান ব্যক্তিরূপে পরিচিত হলেন।
4মোশি ফারাও-এর দরবারে গিয়ে ঘোষণা করলেন, প্রভু পরমেশ্বর বলেছেন, নিশীথরাত্রে আমি মিশরীদের বিরুদ্ধে অভিযান করব, 5আর তার ফল মিশরের সমস্ত প্রথমজাত সন্তান মারা যাবে। ফারাও-এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র থেকে শুরু করে যাঁতা পেষাই করে যে ক্রীতদাসী, তারও প্রথম সন্তান পর্যন্ত সকলেই মারা যাবে। পশুপালের মধ্যে প্রথমজাত পশুগুলিও মরে যাবে। 6সারা মিশরে হাহাকার ও কান্নাকাটির এমন রোল উঠবে যা আগে কখনও হয়নি এবং পরেও কোনকালে হবে না। 7কিন্তু ইসরায়েলীদের বিরুদ্ধে একটি কুকুরও ডাকবে না, তাদের মানুষ কিংবা পশু কারোই কোন ক্ষতি হবে না। আর এতেই তোমরা জানবে যে প্রভু পরমেশ্বর মিশরী ও ইসরায়েলীদের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করেছেন। 8তখন আপনার এই অমাত্যবর্গ সকলেই এসে আমার কাছে প্রণিপাত করে বলবে, আপনি আপনার সমস্ত লোকজনকে নিয়ে এ দেশ ছেড়ে চলে যান। তারপর আমি চলে যাব। এই কথা বলে মোশি সক্রোধে ফারাও-এর দরবার ছেড়ে চলে গেলেন।
9প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, ফারাও তোমাদের কথা শুনবে না, তাই আমাকে মিশরে আরও কিছু অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে। 10মোশি ও হারোণ ফারাও-এর সামনে প্রভুর অলৌকিক ক্ষমতার নিদর্শনগুলি দেখালেন, কিন্তু প্রভু পরমেশ্বর ফারাও-এর হৃদয় কঠিন করে দেওয়ায় তিনি ইসরায়েলীদের দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন না।
==========================
তারণোৎসব পালনের নির্দেশ
1প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, 2এই মাসই তোমাদের বৎসরের প্রথম মাস হিসাবে গণ্য হবে। 3সমগ্র ইসরায়েলী সমাজের কাছে তোমরা ঘোষণা কর: এই মাসের দশ তারিখে প্রত্যেক ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য একটি মেষশাবক সংগ্রহ করবে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য একটি করে মেষশাবক নির্দিষ্ট। 4কোন পরিবার যদি সম্পূর্ণ একটা মেষশাবকের মাংস আহার করে শেষ করতে না পারে তাহলে সেই পরিবারের কর্তা তার নিকটতম প্রতিবেশির সঙ্গে মিলে একটি মেষশাবক সংগ্রহ করবে। পরিবারের লোকসংখ্যা এবং প্রত্যেকের খাওয়ার পরিমাণ হিসেব করেই তারা মেষশাবকটি সংগ্রহ করবে। 5পশুটি নিখুঁত এবং এক বছর বয়সের পুংশাবক হওয়া চাই। মেষ কিংবা ছাগ শাবকের যে কোন একটি হলেই চলবে। 6সেই শাবকটিকে তোমরা এই মাসের চোদ্দ তারিখ পর্যন্ত সযত্নে পালন করবে এবং ঐ দিন সন্ধ্যায় সমগ্র ইসরায়েলী সমাজ সমবেতভাবে ঐ পশুগুলিকে বধ করবে। 7তারপর তার রক্ত কিছুটা নিয়ে তারা যে ঘরে বসে সেই মাংস খাবে, সেই ঘরের দরজার দুই বাজু এবং উপরের অংশে লাগাবে। 8সেই রাত্রে তারা সেই মাংস আগুনে ঝলসে খামিরবিহীন রুটি ও তেতো শাকের সঙ্গে খাবে। 9ঐ মাংস তোমরা কাঁচা বা জলে সেদ্ধ করে খাবে না, মাথা, পা সমেত সবশুদ্ধ পশুটিকে আগুনে ঝল্‌সে খাবে। তার কোন অংশ ফেলা যাবে না। 10তোমরা ঐ মাংসের কিছুই সকাল পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখবে না। খাওয়ার পরে যা কিছু বাকী থাকবে সব আগুনে পুড়িয়ে ফেলবে। 11এইভাবে তোমরা আহার করবে: তোমরা শক্ত করে কটিবন্ধন করবে, পায়ে পরে নেবে পাদুকা এবং হাতে নেবে যষ্টি — এই অবস্থায় তোমরা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেবে। এই হবে প্রভু পরমেশ্বরের তারণোৎসব।
12ঐ রাত্রে আমি মিশরের মধ্য দিয়ে যাব এবং মিশরের মানুষ ও পশু নির্বিশেষে সকলের প্রথমজাত সন্তানকে সংহার করব। আমি প্রভু পরমেশ্বর এইভাবেই মিশরের দেবতাদের দণ্ডবিধান করব। 13তোমরা যে সব বাড়িতে বাস কর, সেগুলি এই রক্তের দ্বারা চিহ্নিত করবে। যে সব বাড়িতে রক্তের চিহ্ন দেখব সেগুলি আমি পরিহার করে যাব। মিশরের উপর আমি যে মারাত্মক আঘাত হানব তা তোমাদের স্পর্শ করবে না। 14তোমরা এই দিনটিকে স্মরণীয় দিনরূপে উদ্‌যাপন করবে এবং এই দিনে প্রভু পরমেশ্বরের উৎসব করবে। পুরুষানুক্রমে চিরকাল তোমরা এই রীতি পালন করবে।যাত্রা 23:15; 34:18; লেবীয় 23:6-8; গণনা 28:17-25; দ্বি.বি. 16:3-8 15সাত দিন তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে। প্রথম দিনেই বাড়ি থেকে সমস্ত খামির সরিয়ে ফেলবে। প্রথম দিন থেকে সপ্তম দিনের মধ্যে যদি কেউ খামিরযুক্ত রুটি খায় তাহলে সে ইসরায়েলী সমাজ থেকে বিচ্যুত হবে। 16প্রথম ও সপ্তম দিনে পবিত্র সমাবেশের আয়োজন করবে। ঐ দুই দিন খাবার তৈরী করা ছাড়া আর কোন কাজ করা চলবে না। 17এই নির্দেশগুলি তোমরা যথাযথভাবে পালন করব কারণ মনে রেখ, এই দিনে আমি তোমাদের সমগ্র জাতিকে মিশর থেকে উদ্ধার করে এনেছিলাম। তোমরা পুরুষানুক্রমে চিরকাল উল্লিখিত বিধি অনুযায়ী এই দিবস উদ্‌যাপন করবে।
18তোমরা প্রথম মাসের চোদ্দ তারিখের সন্ধ্যা থেকে আরম্ভ করে একুশ তারিখের সন্ধ্যা পর্যন্ত খামিরবিহীন রুটি খাবে। 19এই সাতদিন তোমরা ঘরে কোন খামির রাখবে না। এই সময়ে কেউ যদি খামিরযুক্ত কিছু খায়, তাহলে বিদেশী বা স্বজাতি, যেই হোক না কেন ইসরায়েলী সমাজে সে হবে পতিত। 20তোমরা খামিরযুক্ত কিছুই খাবে না, তোমাদের সকলের বাড়িতে শুধু খামিরবিহীন রুটি খাওয়া হবে।
প্রথম তারণোৎসব
21মোশি ইসরায়েলীদের নেতৃস্থানীয় সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা এখনই গিয়ে প্রত্যেক পরিবারের জন্য মেষশাবক জোগাড় করে তারণোৎসবের বলি উৎসর্গ কর। 22আর এক গোছা এসোব12:22 এসোব এক ধরনের সুগন্ধি লতা বিশেষ গামলায় রাখা রক্তে ডুবিয়ে দরজার দুই বাজু ও উপরেরর অংশে সেই রক্ত লেপন করে দাও। ভোর না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘর থেকে বার হবে না। 23প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের সংহার করার জন্য দেশের মধ্য দিয়ে যাবেন, তখন দরজার দুই বাজু ও উপরের অংশে রক্ত দেখলে তিনি সেই বাড়ি অতিক্রম করে যাবেন এবং তাঁর সংহারককে তোমাদের বাড়িতে ঢুকে আঘাত হানতে দেবেন না।হিব্রু 11:28 24তোমরা ও তোমাদের বংশধরেরা চিরকাল এই বিধি পালন করবে। 25প্রভু পরমেশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে দেশ তোমাদের দেবেন সেই দেশে গিয়েও তেমরা এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 26তোমাদর সন্তানসন্ততিরা যখন জিজ্ঞাসা করবে, এই অনুষ্ঠানের অর্থ কি? 27তখন তোমরা তাদের বলবে, এ হচ্ছে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে তারণোৎসবের বলিদান। মিশরদেশে তিনি যখন মিশরীদের সংহার করেছিলেন, তখন তিনি ইসরায়েলীদের বাড়িগুলি অতিক্রম করে গিয়েছিলেন এবং আমাদের পরিবারসমূহকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন।
সমবেত জনতা তখন নত হয়ে প্রণিপাত করল। 28প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে যে সব নির্দেশ দিয়েছিলেন ইসরায়েলীরা সব পালন করল।
প্রথমজাত সন্তানদের মৃত্যু
29সেই দিন মধ্যরাত্রে প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র থেকে আরম্ভ করে কারাগারের কয়েদীর জ্যেষ্ঠ সন্তান পর্যন্ত মিশরের সমস্ত প্রথমজাত সন্তানকে সংহার করলেন। প্রথমজাত পশুগুলিও মারা গেল। 30ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গ এবং মিশরীরা সকলেই বাকী রাত জেগে কাটাল। সারা মিশরে তীব্র ক্রন্দনরোল উঠল, কারণ দেশে এমন একটি পরিবার ছিল না যেখানে কেউ মারা যায়নি।
31সেই রাত্রেই ফারাও মোশি ও হারোণকে ডেকে এনে বললেন, ইসরায়েলীদের সকলকে নিয়ে তোমরা শিগ্‌গির আমার প্রজাদের কাছ থেকে চলে যাও। তোমরা যেমন চেয়েছিলে সেই ভাবেই গিয়ে প্রভু পরমেশ্বরের আরাধনা কর। 32তোমাদের কথামত গরু-ভেড়ার পালও সঙ্গে নিয়ে যাও, আর আমার জন্য প্রভু পরমেশ্বরের করুণা ভিক্ষা কর।
33ইসরায়েলীরা যাতে তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যায় সেই জন্য মিশরীরা তাদের খুব পীড়াপীড়ি করতে লাগল। তারা বলল, তা না হলে আমরা সকলেই মারা পড়ব। 34ইসরায়েলীরা তখন ময়দায় খামির না মিশিয়েই ময়দা শুদ্ধ বাসন চাদরে জড়িয়ে কাঁধে তুলে নিল। 35তারা মোশির কথা মত মিশরীদের কাছ থেকে সোনারূপার অলঙ্কার ও কাপড়চোপড় আগেই চেয়ে নিয়েছিল।যাত্রা 3:21-22 36প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের জন্য মিশরীদের মনে প্রীতির সঞ্চার করেছিলেন, তাই তারা যা চেয়েছিল মিশরীরা তাদের সবই দিয়েছিল। এ ভাবেই তারা মিশরীদের ধনসম্পদ হস্তগত করল।
মিশর ছেড়ে ইসরায়েলীদের যাত্রা
37ইসরায়েলীরা রামেসেস নগর থেকে সুক্কোতের দিকে যাত্রা করল। নারী ও শিশু বাদে তাদের দলে ছিল প্রায় ছয় লক্ষ পুরুষ। 38এ ছাড়াও বিভিন্ন জাতির অনেক লোক এবং গরু-ভেড়া ও ছাগলের বিরাট পাল তাদের সঙ্গে গেল। 39মিশর থেকে যে ময়দার তালগুলি তারা নিয়ে এসেছিল, সেগুলি দিয়ে তারা খামিরবিহীন রুটি তৈরী করল, কারণ তাদের কাছে খামির ছিল না। মিশর ছেড়ে তাদের এত তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছিল যে খাবার তৈরী করার সময়টুকুও তারা পায়নি। 40ইসরায়েলীরা চারশ ত্রিশ বছর মিশরে ছিল।আদি 15:13; গালা 3:17 41চারশ ত্রিশ বছর যে দিন পূর্ণ হল সেই দিনই প্রভু পরমেশ্বরের প্রজাবাহিনী মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এল। 42এই রাত ছিল জাগরণের রাত, কারণ প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের মিশর থেকে উদ্ধার করে আনার জন্য এই রাত্রে ছিলেন অতন্দ্র প্রহরায়। সেই জন্যই ইসরায়েলীরা পুরুষানুক্রমে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে এই জাগরণের রাত্রি পালন করে।
তারণোৎসব পালনের বিধি-নির্দেশ
43প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে বললেন, এই বিধি অনুযায়ী তোমরা তারণোৎসব পালন করবে: অন্য কোন জাতির লোক এই উৎসবের ভোজে অংশ গ্রহণ করবে না। 44কিন্তু অর্থমূল্যে ক্রীত দাসেরা সুন্নত সংস্কারের পরই ভোজে অংশ গ্রহণ করতে পারবে। 45অতিথি কিংবা বেতনভোগী মজুরেরাও এই ভোজ খেতে পারবে না।
46একই ঘরে বসে সকলকে এই খাবার খেতে হবে, মাংসের কোন অংশ ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া চলবে না এবং তার কোন হাড় ভাঙ্গতে পারবে না।গণনা 9:12; যোহন 19:36 47সমগ্র সমাজ এই উৎসব পালন করবে। 48তোমাদের মধ্যে বসবাসকারী কোন বিদেশী যদি প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে তারণোৎসব পালন করতে চায়, তাহলে তার পরিবারের সকল পুরুষকে সু্ন্নত করতে হবে, তারপর সে উৎসবে যোগদান করতে পারবে। তখন তাকে স্বজাতীয় বলে গণ্য করতে হবে। কিন্তু সুন্নত সংস্কারহীন কোন লোক ভোজে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। 49ইসরায়েল কুলজাত কিম্বা তোমাদের সঙ্গে বসবাসকারী বিদেশী, সকলের জন্যই এক বিধি। 50প্রভু পরমেশ্বর মোশি ও হারোণকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ইসরায়েলীরা সকলেই সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করল। 51এই দিনেই প্রভু পরমেশ্বর ইসরায়েলীদের গোষ্ঠী অনুসারে দলে দলে ভাগ করে সকলকে মিশর থেকে উদ্ধার করে আনলেন।
=============================================
প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে প্রথম সন্তান উৎসর্গের বিধি
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2ইসরায়েলী সমাজের প্রত্যেকটি জ্যেষ্ঠ সন্তান, প্রত্যেকটি প্রথমজাত সন্তানকে আমার উদ্দেশে উৎসর্গ করতে হবে। মানুষের হোক বা পশুরই হোক, প্রত্যেকটি প্রথম সন্তান আমার।গণনা 3:13; লুক 2:23
3মোশি ইসরায়েলীদের বললেন, আজকের এই দিনটি তোমরা বিশেষভাবে স্মরণে রাখবে। এই দিন তোমরা দাসত্বের আগার মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছ, প্রভু পরমেশ্বর মহাপরাক্রমে তোমাদের উদ্ধার করেছেন। এই দিনে খামিরযুক্ত কোন কিছুই খাওয়া চলবে না। 4আবির মাসের এই দিনে তোমাদের যাত্রা সুরু হল। 5প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে কনানী, হিত্তীয়, ইমোরী, হিব্বীয় এবং যিবুষী প্রভৃতি জাতি যে দেশে বাস করে, সুজলা-সুফলা সমৃদ্ধিশালী সেই কনান দেশ তিনি তোমাদের দান করবেন। প্রভু পরমেশ্বর যখন সেই দেশে তোমাদের নিয়ে যাবেন তখন সেখানেও তোমরা এই মাসে এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 6সাতদিন তোমরা খামিরবিহীন রুটি খাবে এবং সপ্তম দিনে পরমেশ্বরের সম্মানার্থে উৎসব করবে। 7সাতদিন তোমাদের খামিরবিহীন রুটি খেতে হবে, ঐ সময়ে সারা দেশে খামিরযুক্ত কোন দ্রব্য কিংবা খামির যেন দেখতে পাওয়া না যায়। 8ঐ দিন তোমরা তোমাদের সন্তানসন্ততিদের বলবে মিশর ছেড়ে চলে আসার দিন প্রভু পরমেশ্বর আমাদের জন্য যা করেছিলেন তারই স্মরণে এই অনুষ্ঠান। 9প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ যাতে সর্বদা তোমাদের ওষ্ঠাগ্রে থাকে সেই জন্য হাতে ও কপালে ধারণ করা স্মারক চিহ্নের মতই এই অনুষ্ঠান হবে তোমাদের কাছে স্মারক স্বরূপ। কারণ প্রভু পরমেশ্বর মহাপরাক্রম প্রকাশ করে মিশর থেকে তোমাদের উদ্ধার করেছেন। 10এই বিধি অনুযায়ী প্রতি বৎসর নির্দিষ্ট সময়ে তোমার এই অনুষ্ঠান পালন করবে। 11তোমাদের পূর্বপুরুষ ও তোমাদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রভু পরমেশ্বর তোমাদের কনান দেশে নিয়ে যাবেন ও, সেই দেশ তোমাদের দান করবেন। 12তোমরা কিন্তু তখন তোমাদের সমস্ত প্রথম সন্তানকে প্রভু পরমেশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করো। তোমাদের পশুপালের প্রথমজাত পুং শাবকগুলিও প্রভু পরমেশ্বরের হবে।যাত্রা 34:19-20; লুক 2:23 13প্রথমজাত পুং গর্দভ শাবকগুলিও তোমরা মেষ কিম্বা ছাগশিশুর বিনিময়ে মুক্ত করতে পার। যদি মুক্ত না কর তাহলে সেগুলির ঘাড় ভেঙ্গে ফেলবে। প্রথমজাত পুত্র-সন্তানদের তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করবে। 14পরবর্তীকালে তোমাদের সন্তানসন্ততিরা যখন জিজ্ঞাসা করবে, এ সবের অর্থ কি? তখন তোমরা তাদের বলবে, প্রভু পরমেশ্বর নিজ শক্তিতে দাসত্বের আগার মিশর থেকে আমাদের উদ্ধার করে এনেছিলেন। 15উদ্ধত ফারাও আমাদের মুক্তি দিতে অস্বীকার করেছিল, প্রভু পরমেশ্বর তখন মিশরের মানুষ ও পশুকুলের প্রথমজাত সমস্ত সন্তানকে সংহার করেছিলেন। এই কারণেই আমরা প্রথমজাত সন্তান যদি পুরুষ হয় তবে তাকে প্রভুর উদ্দেশে উৎসর্গ করি, আর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে আমরা পণ দিয়ে মুক্ত করি। 16প্রভু পরমেশ্বরের এই মহান কীর্তি স্মরণে রাখার জন্য এর প্রতীক চিহ্ন তোমরা হাতে ও কপালে ধারণ করবে। কারণ প্রভু পরমেশ্বর নিজ পরাক্রমে মিশর থেকে আমাদের উদ্ধার করেছিলেন।
মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভ
17ফারাও ইসরায়েলীদের মুক্তি দেওয়ার পর ঈশ্বর তাদের ফিলিস্তিনীদের দেশের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেলেন না, যদিও সেই পথেই কনানের দূরত্ব ছিল সবচেয়ে কম। কারণ ঈশ্বর মনে করলেন, পথে যুদ্ধবিগ্রহের সম্মুখীন হলে ইসরায়েলীরা হয়তো মত পরিবর্তন করে আবার মিশরে ফিরে যাবে। 18তাই ঈশ্বর তাদের ঘুর-পথে প্রান্তরের মধ্য দিয়ে লোহিত সাগরের দিকে পরিচালিত করলেন। সশস্ত্র ইসরায়েলীরা ব্যূহ রচনা করে মিশর ছেড়ে এগিয়ে চলল।
19মোশি যোষেফের অস্থিগুলি সঙ্গে নিলেন, কারণ যোষেফ এ ব্যাপারে ইসরায়েলীদের শপথ করিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, ঈশ্বর একদিন নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সদয় হবেন, সেদিন তোমরা যখন এখান থেকে চলে যাবে তখন আমার অস্থিগুলি সঙ্গে নিয়ে যেও।আদি 50:25; যিহো 24:32
20ইসরায়েলীরা সুক্কোত থেকে রওনা হয়ে প্রান্তরের সীমান্তে এথসে এসে শিবির স্থাপন করল। 21যাত্রাপথে ঈশ্বর সর্বদা তাদের অগ্রবর্তী থাকতেন। দিনে তিনি মেঘপুঞ্জ থেকে তাদের পথ নির্দেশ করতেন এবং রাতে অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে আলোক বিতরণ করতেন, ফলে তারা দিনে ও রাতে সব সময়েই পথ চলতে পারত। 22ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে দিনের মেঘপুঞ্জ ও রাতের অগ্নিস্তম্ভ কখনোই অপসৃত হত না।
==================================

ইসরায়েলীদের লোহিত সাগর অতিক্রম
1প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, 2তুমি ইসরায়েলীদের বল, তারা যেন ফিরে গিয়ে বেল-সফোনের পূর্ব দিকে মিগ্‌দোল ও সাগরের মাঝামাঝি পি-হা-হিরোতের সম্মুখে সাগর তীরে শিবির স্থাপন করে। 3তাহলে ফারাও মনে করবে যে ইসরায়েলীরা পথ হারিয়ে দেশের মধ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং প্রান্তরের মধ্যে আটকে পড়েছে। 4আমি ফারাও-এর বুদ্ধি বিকল করে দেব, সে ইসরায়েলীদের আক্রমণ করতে ছুটে যাবে, তখন আমি ফারাও ও তার সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে পরাস্ত করব। তখন লোকে আমার মহিমা বুঝতে পারবে। মিশরীরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর। ইসরায়েলীরা প্রভু পরমেশ্বরের নির্দেশ পালন করল।
ফারাও-এর সৈন্যসামন্তের সলিল সমাধি
5মিশর-রাজ ফারাও সংবাদ পেলেন যে ইসরায়েলীরা পালিয়ে গেছে। তখন তাদের সম্পর্কে ফারাও ও তাঁর পারিষদবর্গের মনোভাব বদলে গেল। তাঁরা বলাবলি করতে লাগলেন, এ আমরা কি করলাম? আমাদের দাসত্ব থেকে ইসরায়েলীদের কেন মুক্তি দিলাম? 6ফারাও তখন রথ সাজিয়ে সৈন্যসামন্তসহ যাত্রা করলেন। 7বাছাই করা ছয়শো রথ ছাড়াও মিশরের অন্যান্য রথ ও সেরা রথারোহী সেনানীরা তাঁর সঙ্গে গেল। 8প্রভু পরমেশ্বর মিশররাজ ফারাও-এর বুদ্ধি লোপ করে দিয়েছিলেন, তাই ফারাও বিদ্রোহী ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে গেলেন। 9ফারাও-এর সমস্ত অশ্বারোহী, রথী ও পদাতিক সৈন্যসহ মিশরীরা তাদের তাড়া করে গেল এবং বেল সফোনের পূর্ব দিকে পি-হা-হিরোতে সাগরতীরে, যেখানে ইসরায়েলীরা শিবির স্থাপন করেছিল, সেখানে গিয়ে পৌঁছাল। 10ফারাও কাছাকাছি এসে পড়লে ইসরায়েলীরা দেখতে পেল মিশরীরা তাদের পিছনে ছুটে আসছে। তারা খুব ভয় পেয়ে চীৎকার করে প্রভু পরমেশ্বরকে ডাকতে লাগল। 11তারা মোশিকে বলল, মিশরে কবর দেওয়ার জায়গা ছিল না বলেই কি তুমি আমাদের মারবার জন্য এই প্রান্তরে নিয়ে এসেছ? মিশর থেকে বার করে এনে তুমি আমাদের কি দশা করেছ দেখ। 12এই জন্যই তো মিশরে থাকতে আমরা তোমাকে বলেছিলাম, আমাদের কথা ছেড়ে দাও, আমরা মিশরীদের দাস হয়েই থাকব। এখানে এই প্রান্তরে মরার চেয়ে দাস হয়ে থাকাই ভাল ছিল।
13মোশি তাদের বললেন, তোমরা ভয় পেয়ো না, সাহস কর, দেখ, প্রভু পরমেশ্বর আজ কি করে তোমাদের উদ্ধার করেন। মিশরীদের তোমরা আজ দেখছ বটে, কিন্তু ভবিষ্যতে আর কোনদিন তাদের দেখতে পাবে না। 14প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন, শান্ত হও তোমরা।
15প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, তোমরা কেন অনর্থক কোলাহল করছ? ইসরায়েলীদের তুমি এগিয়ে যেতে বল। 16আর তুমি তোমার হাতের লাঠিটা সমুদ্রের দিকে বাড়িয়ে দাও, তাহলে সমুদ্র দুভাগ হয়ে যাবে। তখন ইসরায়েলীরা শুকনো পথেই সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে পার হয়ে যেতে পারবে। 17আমি মিশরীদের ক্রোধে এমন উন্মত্ত করে তুলব যে তারা তাদের পিছনে ছুটে যাবে, আর তখন আমি ফারাও ও তার রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যদের ধ্বংস করব। এতে লোকে জানবে আমার মহিমা। 18রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসহ ফারাও-কে পরাস্ত করার পর মিশরীরা বুঝতে পারবে যে আমিই প্রভু পরমেশ্বর।
19ঈশ্বরের দূত, যিনি ইসরায়েলী বাহিনীর অগ্রবর্তী ছিলেন তিনি ঘুরে তাদের পিছন দিকে গেলেন। তখন ইসরায়েলীদের সম্মুখ থেকে মেঘপুঞ্জ সরে তাদের পিছনে গিয়ে 20মিশরী বাহিনী ও ইসরায়েলী বাহিনীর মাঝখানে এসে অবস্থিত হল। মেঘের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় মিশরীদের উপরে রাত্রির অন্ধকার ঘনিয়ে এল কিন্তু ইসরায়েলীদের দিক আলোকিত হয়ে রইল। তখন মিশরীরা সারারাত ইসরায়েলীদের কাছে আসতে পারল না।14:20 হিব্রু অস্পষ্ট। 21মোশি সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন আর প্রভু পরমেশ্বর সারা রাত প্রবল পূবালী বাতাস বইয়ে সমুদ্রের জল সরিয়ে দিলেন। সমুদ্রের জল দুভাগ হয়ে গেল। মাঝখানে তৈরী হল শুকনো পথ। 22ইসরায়েলীরা সেই পথের উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডান দিকে ও বাঁদিকে সমুদ্রের জল দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।১ করি 10:1-2; হিব্রু 11:29
23ফারাও-এর সমস্ত রথী ও অশ্বারোহী সৈন্যসামন্তসহ মিশরীরা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রের মধ্যে নেমে গেল। 24রাত্রির শেষ প্রহরে প্রভু পরমেশ্বর মেঘপুঞ্জ ও অগ্নিস্তম্ভের মধ্য থেকে মিশরী সেনাবাহিনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে তাদের মধ্যে ত্রাসের সঞ্চার করলেন। 25তিনি তাদের রথের চাকা বিকল করে দিলেন এবং তাদের অগ্রগতি ব্যাহত হল। মিশরীরা তখন বলতে লাগল, চল, ইসরায়েলীদের কাছ থেকে আমরা পালিয়ে যাই, প্রভু পরমেশ্বরই ওদের পক্ষ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।
26প্রভু পরমেশ্বর মোশিকে বললেন, সমুদ্রের দিকে তোমার হাত বাড়াও তাহলে মিশরীদের রথ ও অশ্বারোহী সৈন্যদের সমুদ্রের জল এসে ডুবিয়ে দেবে। 27মোশি তখন সমুদ্রের দিকে হাত বাড়ালেন। ভোরবেলায় সমুদ্রের জল আবার যথাস্থানে ফিরে এল। পলায়নরত মিশরীরা সেই জলরাশির মুখে গিয়ে পড়ল। প্রভু পরমেশ্বর তাদের সমুদ্রগর্ভে নিক্ষেপ করেলন। 28ফারাও-এর সেনাবাহিনী, রথী, অশ্বারোহী ইত্যাদি যারা ইসরায়েলীদের পিছনে তাড়া করে সমুদ্রে নেমে গিয়েছিল, সমুদ্রের জল ফিরে এসে তাদের গ্রাস করল, তাদের একজনও রক্ষা পেল না। 29ইসরায়েলীরা কিন্তু শুকনো মাটির উপর দিয়ে হেঁটে সমুদ্র পার হয়ে গেল। তাদের ডানদিকে ও বাঁদিকে দুপাশে জলরাশি দেয়ালের মত দাঁড়িয়ে রইল।
30সেই দিন প্রভু পরমেশ্বর মিশরীদের কবল থেকে ইসরায়েলীদের উদ্ধার করলেন। ইসরায়েলীরা দেখল সমুদ্রতটে মিশরীরা মরে পড়ে রয়েছে। 31মিশরীদের বিরুদ্ধে প্রভু পরমেশ্বরের প্রচণ্ড পরাক্রমের এই মহান কীর্তি দেখে ইসরায়েলীদের মন তাঁর প্রতি সম্ভ্রমে ভরে গেল। তারা প্রভু পরমেশ্বর ও তাঁর সেবক মোশির উপর আস্থা স্থাপন করল।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...