প্রশ্ন: ৩৪২ : আরাফাতের দিন কোনটি ? এই দিনটির তাৎপর্য ।

বছরের শ্রেষ্ঠ রাত (সূর্যাস্ত থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত) হলো লাইলাতুল কাদর বা কদরের রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশ রাতের যেকোনো একটি বেজোড় রাত। অন্য দিকে, বছরের শ্রেষ্ঠ দিন (বিশেষ করে জোহরের সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত) হলো জিলহজ মাসের ৯ তারিখ যা ইয়াওমু আরাফাত বা আরাফাতের দিন হিসেবে পরিচিত। তাই বছরের সর্বোত্তম দিন হিসেবে এ দিন স্বীকৃত। এ দিনের রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত; যেমন- এক. ক. এ দিন হলো আরাফাতের দিন যে দিনের কসম খেয়েছেন মহান আল্লাহ তার কালামে। (অনুবাদার্থে) ‘এবং কসম জোড় ও বেজোড়ের’ (সূরা ফাজর-৩)।

এ বেজোড় হলো জিলহজ মাসের ৯ তারিখ যা ইয়াওমু ‘আরাফাত নামে প্রসিদ্ধ। খ. কুরআনে এ দিনকে ‘মাশহুদ’ (দৃষ্ট) বলা হয়েছে এবং এর কসম খাওয়া হয়েছে (সূরা বুরুজ-৩)। দুই. হাদিসে ‘মাশহুদ’কে আরাফাতের দিন বলা হয়েছে (তিরমিজি)। হাদিসের আলোকে ইয়াওমু আরাফাত তথা আরাফাতের দিনকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন বলা হয়েছে (সহিহ ইবন হিব্বান)। তিন. এ দিনকে ইয়াওমুল ‘ইতকি মিনান নার বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিনও বলা হয়। হাদিসে বর্ণিত যে, আরাফাতের দিনের চেয়ে আর কোনো দিন এমন নেই যেদিন আল্লাহ বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে সর্বাধিক সংখ্যায় মুক্তি দেন; তিনি সেদিন নিকটবর্তী হন অতঃপর তিনি তাঁর ফেরেশতাদের সাথে গর্ব প্রকাশ করেন এবং বলেন, তারা কী চায়? (সহিহ মুসলিম)।
এদিন করণীয় আমল 
এক. এদিনে সাওম পালন করা। হাদিস শরিফে এ প্রসঙ্গে নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘ইয়াওমু আরাফাত তথা আরাফাতের দিনের সিয়াম সম্পর্কে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এর জন্য আগের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন’ (সহিহ মুসলিম)। সাওম পালন করার বিষয়টি যারা হজ করবে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যারা হজ পালন করবেন তাদের সিয়াম পালনের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া এবং এ জন্য সঠিকভাবে ইবাদতে মশগুল হতে না পারার আশঙ্কায় কোনো কোনো আলেম তাদের ক্ষেত্রে সাওম পালন করা মাকরুহ বলেছেন। তবে সিদ্ধান্তমূলক কথা হলো- যারা সাওম পালন করেও এ দিনের ইবাদত-বন্দেগিতে দুর্বলতা অনুভব করবেন না, তারাও সাওম পালন করতে পারবেন। আর যারা দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা করবেন, তারা সাওম পালন না করে বিভিন্ন ইবাদতে মশগুল হবেন। আরাফাতের দিনে মূল বিষয় হচ্ছে- ইবাদতে মশগুল থাকা ও যত বেশি সম্ভব দোয়া করা।
দুই. এ দিন ফজরের সালাতের পর থেকে ১৩ তারিখ আসরের সালাত পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরজ সালাতের পর তাকবির পড়া শুরু করবেন। তাকবিরের জন্য বিভিন্ন শব্দাবলি রয়েছে; তবে বহুল ব্যবহৃত শব্দাবলি হলো- অবশ্যই আরবিতে বিশুদ্ধ উচ্চারণ করতে হবে (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদু)। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, (অনুবাদার্থে) ‘তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করবে’ (সূরা বাকারাহ-২০৩)। কতবার তাকবির পড়তে হবে এর জন্য নির্ধারিত কোনো সংখ্যা বর্ণিত নেই। তাই তাকবির একবার পড়াই যথেষ্ট। অনুচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবেন, যেন পরে আসা মুসল্লিদের সালাতে ব্যাঘাত না ঘটে। সুর দিয়ে একই সাথে সবাই মিলে তাকবির পড়া অনেকের দৃষ্টিতে বিদয়াত। কারণ এতে যেমন পরে আসা মাসবুক মুসল্লিদের সূরা কিরাত ও তাসবিহ আদায়ে কষ্ট হয়, তেমনি তা কুরআনে বর্ণিত জিকরের আদব পরিপন্থী। কুরআনে আল্লাহ পাক জিকরের আদব প্রসঙ্গে বলেন, (অনুবাদার্থে) ‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে স্মরণ করো’ (সূরা আরাফ-২০৫)। একাকী যারা সালাত আদায় করবেন তারা এবং মহিলারাও তাকবির পাঠ করবেন।
তিন. দেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে এ দিন যাবতীয় পাপাচার থেকে হিফাজত করবেন। ইমাম আহমাদ একটি হাদিস বর্ণনা করেন যে, ‘আরাফাতের দিন; যে ব্যক্তি এদিন নিজের কান (শ্রবণশক্তি) চোখ (দৃষ্টিশক্তি) এবং জিহ্বাকে হিফাজত করবেন, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে’ (মুসনাদে আহমাদ)।

চার. একাগ্রতা, ইখলাস, নিষ্ঠা, সততা ও ঈমানের সাথে যত বেশি সম্ভব নবী সা: থেকে প্রাপ্ত দোয়া করবেন। যেমন- একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, আরাফাতের দিন নবী সা: যে দোয়াটি বেশি পাঠ করতেন তা হলো- ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ (মুসনাদে আহমাদ)। তিরমিজির বর্ণনায় রয়েছে, নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘সর্বত্তোম দোয়া হলো আরাফাতের দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীরা যে দোয়া করেছি তার মধ্যে সর্বোত্তমটি হলো- লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয় হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’ (সুনানে তিরমিজি)। উচ্চারণিক ভুল থেকে বাঁচার জন্য দোয়াগুলো অবশ্যই আরবিতে বিশুদ্ধ উচ্চারণে শিখতে হবে।
পাঁচ. এক কথায় বলা যায়, এ দিনের একটি মুহূর্তও যেন বেকার না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। হ্যাঁ, হাজী সাহেবদের জন্য প্রয়োজনে জোহরের আগেই একটু বিশ্রাম নেয়া যেতে পারে। এরপর সালাত, তিলাওয়াত, জিকর, তাসবিহ, তাহলিল, তাকবির, তাহমিদ ও ইস্তিগফার ইত্যাদিসহ দোয়া করতে থাকবেন।
সৌদি আরবের বাইরে কোন দিন আরাফাতের দিন হিসেবে গণ্য করা হবে : বিষয়টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে রয়েছে বেশ বিতর্ক। আসলে বিতর্কের মূল বিষয় হলো বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টীয় সনের মতো একই সাথে একই সময় হিজরি সন পালন করা যায় কি না। কেউ কেউ এমন ধারণা পোষণ করে এর পক্ষে জোরালো ভূমিকা রেখে চলেছেন। আরবি স্যাটেলাইট ক্যালেন্ডারের কথাও শোনা যাচ্ছে। এ জন্য তারা বেশ কিছু যুক্তির অবতারণা করে থাকেন, যেগুলোর আলোচনা এ স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তবে এতটুকু বলা যায়, আল্লাহ পাক যে নিয়মে চন্দ্র-সূর্যের পরিক্রমা পরিচালনার ব্যবস্থা করেছেন তাতে বোধ হয় এটা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। দেখুন, মাগরিবের সালাত বছরের এক সময় পড়তে হয় ৫টার কিছু পর; আবার সেই একই মাগরিবের সালাত আদায় করতে হচ্ছে অন্য সময় সন্ধ্যে ৭টার পর।
পার্থক্য প্রায় দুই ঘণ্টার মতো। অনুরূপ অন্যান্য সালাতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এখন যদি বলা হয়, না একই নিয়মে বছরব্যাপী সালাতের সময় নির্ধারণ করতে হবে, তা হলে তা কি সম্ভব? না, অবশ্যই না। কারণ এটা সূর্যের পরিক্রমার সাথে সম্পৃক্ত। অনুরূপ ক্যালেন্ডারের তারিখও একই সময় নির্ধারণ এখনো অসম্ভব বলেই মনে হয়। কেননা আরবি তথা চন্দ্র মাসের সূচনা হয় চাঁদের উদয়ের সাথে। অর্থাৎ আরবি মাসের সূচনা হয় সন্ধ্যার আগমনের সাথে। রাত ১২টার পরে নয়। তাই কোনো দেশে এক ঘণ্টা বা কোনো দেশে তিন থেকে ছয় ঘণ্টা বা ১১ ঘণ্টা পরে দিনের সূচনা হবে। অন্য দিকে, যেমন অনেকে বলে থাকেন, আজ বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগেও এমন কথা বলা বুদ্ধিহীনতার পরিচায়ক। কারণ, স্যাটিলাইটের বদৌলতে নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছি আরাফাতের ময়দান লোকে লোকারণ্য। হাজী সাহেবান হজের মূল রুকন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান পালন করছেন। সে দেশের লোকেরা আজ সাওম পালন করছে এবং অন্যান্য ইবাদত করছে। তাহলে আমরা কেন একই তারিখে আরাফাতের দিন পালন করতে পারব না?
উত্তরে বক্তব্য হলো- তাহলে এমনটি করলে কেমন হয় যে, তারা যখন যে সময় দিনের বিভিন্ন সালাত আদায় করেন আমরাও সে সময় একই সালাত আদায় করব। কারণ চোখেই দেখতে পাচ্ছি তারা আমাদের সময় সকাল প্রায় ৮টায় ফজরের সালাত আদায় করছে। চোখে দেখেও আমরা কিভাবে এর বিরোধিতা করতে পারি? তা ছাড়া তারা আগামীকাল ঈদুল আজহা পালন করবে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও কি তা করতে পারি? আসলে কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। বিষয়টি হলো- প্রথমত. আরাফার দিন বলতে কোন দিনকে বুঝানো হয়? সর্বসম্মতভাবে সেটা ৯ জিলহজ যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এ তারিখেই সৌদি আরবে আরাফার দিন পালিত হয়। তাই যে যেদিন ৯ জিলহজ হবে, সেদিনেই আরাফার রোজা রাখা হবে। এটাই স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত. মূল কথা হলো- আল্লাহর হুকুম মানা। আল্লাহ আমাদের জন্য এক বা দু’দিন পর আরাফাতের দিন বা ‘ঈদের দিন নির্ধারণ করেছেন; যেমন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সময় নির্ধারণ করেছেন যা সূর্যের সাথে সম্পর্কিত।
অতএব আমরা আমাদের দেশের হিসাব অনুযায়ী যদি আল্লাহর হুকুম পালন করি, তাহলে অসুবিধা কোথায়? এতে কি সওয়াব পাওয়া যাবে না? নাকি সওয়াবে কমতি হবে? আমরা তো আল্লাহর হুকুমই পালন করছি। এখানেই আল্লাহ পাকের কুদরতের নিশানা পরিলক্ষিত হয়। বিশ্বব্যাপী পালিত হোক ঈদ ও আরাফাতের দিন। সব মানুষ যে যেখানে আছেন, সে দেশের হিসাব অনুযায়ী পালন করবে আল্লাহর বিধান-আহকাম।

  • ড. হাফিজ এ বি এম হিজবুল্লাহ
লেখক : প্রফেসর, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

প্রশ্ন: ৩৪১ : আল কুরআনের মুতাশাবিহাত আয়াাত বলতে কি বুঝায় ।

সুরা আলে  ইমরান, আয়াত নং : ৭ :

﴿هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ﴾
৭) তিনিই তোমাদের প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছেন ৷ এ কিতাবে দুই ধরনের আয়াত আছেঃ এক হচ্ছে, মুহ্কামাত, যেগুলো কিতাবের আসল বুনিয়াদ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে, মুতাশাবিহাত৷ যাদের মনে বক্রতা আছে তারা ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সবসময় মুতাশাবিহাতের পিছনে লেগে থাকে এবং তার অর্থ করার চেষ্টা করে থাকে৷ অথচ সেগুলোর আসল অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না ৷ বিপরীত পক্ষে পরিপক্ক জ্ঞানের অধিকারীরা বলেঃ ‘‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে’’ ৷ আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে৷ 
৫. মুহকাম পাকাপোক্ত জিনিসকে বলা হয়৷ এর বহুবচন 'মুহকামাত'৷ 'মুহকামাত আয়াত' বলতে এমন সব আয়াত বুঝায় যেগুলোর ভাষা একেবারেই সুস্পষ্ট, যেগুলোর অর্থ নির্ধারণ করার ব্যাপারে কোন প্রকার সংশয়-সন্দেহে অবকাশ থাকে না, যে শব্দগুলো দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উপস্থাপন করে এবং যেগুলোর অর্থ বিকৃত করার সুযোগ লাভ করা বড়ই কঠিন৷ এ আয়াতগুলো 'কিতাবের আসল বুনিয়াদ' ৷ অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে এ আয়াতগুলো সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করে৷ এ আয়াতগুলোর মাধ্যমে দুনিয়াবাসীকে ইসলামের দিকে আহবান জানানো হয়েছে৷ এগুলোতেই শিক্ষা ও উপদেশের কথা বর্ণিত হয়েছে৷ ভ্রষ্টতার গলদ তুলে ধরে সত্য-সঠিক পথের চেহারা সুস্পষ্ট করা হয়েছে৷ দীনের মূলনীতি এবং আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদাত, চরিত্রনীতি,দায়িত্ব-কর্তব্য ও আদেশ-নিষেধের বিধান এ আয়াতগুলোতেই বর্ণিত হয়েছে৷ কাজেই কোন সত্যানুসন্ধানী ব্যক্তি কোন্ পথে চলবে এবং
৬. 'মুতাশাবিহাত' অর্থ যেসব আয়াতের অর্থ গ্রহণে সন্দেহ-সংশয়ের ও বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে দেবার অবকাশ রয়েছে৷
বিশ্ব-জাহানের অন্তর্নিহিত সত্য ও তাৎপর্য, তার সূচনা ও পরিণতি, সেখানে মানুষের অবস্থান, মর্যাদা ও ভূমিকা এবং এ ধরনের আরো বিভিন্ন মৌলিক বিষয় সম্পর্কিত সর্বনিম্ন অপরিহার্য তথ্যাবলী মানুষকে সরবরাহ না করা পর্যন্ত মানুষের জীবন পথে চলার জন্য কোন পথনির্দেশ দেয়া যেতে পারে না, এটি একটি সর্বজন বিদিত সত্য৷ আবার একথাও সত্য, মানবিক ইন্দ্রিয়ানভুতির বাইরের বস্তু-বিষয়গুলো, যেগুলো মানবিক জ্ঞানের আওতায় কখনো আসেনি এবং আসতেও পারে না, যেগুলোকে সে কখনো দেখেনি, স্পর্শ করেনি এবং যেগুলোর স্বাদও গ্রহণ করেনি, সেগুলো বুঝাবার জন্য মানুষের ভাষার ভাণ্ডারে কোন শব্দও রচিত হয়নি এবং প্রত্যেক শ্রোতার মনে তাদের নির্ভুল ছবি অংকিত করার মতো কোন পরিচিত বর্ণনা পদ্ধতিও পাওয়া যায় না৷ কাজেই এ ধরনের বিষয় বুঝাবার জন্য এমন সব শব্দ ও বর্ণনা পদ্ধথিত অবলম্বন করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে, যেগুলো প্রকৃত সত্যের সাথে নিকটতর সাদৃশ্যের অধিকারী অনুভবযোগ্য জিনিসগুলো বুঝাবার জন্য মানুষের ভাষায় পাওয়া যায়৷ এ জন্য অতি প্রাকৃতিক তথা মানবিক জ্ঞানের ঊর্ধের ও ইন্দ্রিয়াতীত বিষয়গুলো বুঝাবার জন্য কুরআন মজীদে এ ধরনের শব্দ ও ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে৷ যেসব আয়াতে এ ধরনের ভাষা ও শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোকেই 'মুতাশাবিহাত' বলা হয়৷
কিন্তু এ ভাষা ব্যবহারের ফলে মানুষ বড়জোর সত্যের কাছাকাছি পৌছতে পারে অথবা সত্যের অস্পষ্ট ধারণা তার মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে, এর বেশী নয়৷ এ ধরনের আয়াতের অর্থ নির্ণয়ের ও নির্দিষ্ট করনের জন্য যত বেশী চেষ্টা করা হবে তত বেশী সংশয়-সন্দেহ ও সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে৷ ফলে মানুষ প্রকৃত সত্যের নিকটতর হবার চাইতে বরং তার থেকে আরো দূরে সরে যাবে৷ কাজেই যারা সত্যসন্ধানী এবং আজেবাজে অর্থহীন বিষয়ের চর্চা করার মানসিকতা যাদের নেই, তারা 'মুতাশাবিহাত' থেকে প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা লাভ করেই সন্তুষ্ট থাকে৷ এতটুকুন ধারণাই তাদের কাজ চালাবার জন্য যথেষ্ট হয়৷ তারপর তারা 'মুহ্‌কামাত' এর পেছনে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োগ করে৷ কিন্তু যারা ফিত্‌নাবাজ অথবা বাজে কাজে সময় নষ্ট করতে অব্যস্ত, তাদের কাজই হয় মুতাশাবিহাতের আলোচনায় মশগুল থাকা এবং তার সাহায্যেই তারা পেছন দিয়ে সিঁদ কাটে৷
৭. এখানে এ অমূলক সন্দেহ করার কোন প্রশ্নই ওঠে না যে, মুতাশাবিহাতের সঠিক অর্থ যখন তারা জানে না তখন তারা তার ওপর কেমন করে ঈমান আনে? আসলে একজন সচেতন বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী ব্যক্তির মনে মুতাশাবিহাত আয়াতগুলোর দূরবর্তী অসংগত বিশ্লেষন ও অস্পষ্ট বিকৃত ব্যাখার মাধ্যমে কুরআন আল্লাহর কিতাব হবার বিশ্বাস জন্মে না৷ এ বিশ্বাস জন্মে মুহকামাত আয়াতগুলো অধ্যায়নের মাধ্যমে৷ মুহকামাত আয়াতগুরোর মধ্যে চিন্তা-গবেষণা করার পর যখন তার মনে কুরআন আল্লাহর কিতবা হবার ব্যপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিন্ততা আসে তখন মুতাশাবিহাত তার মনে কোন প্রকার দ্বন্দ্ব ও সংশয় সৃষ্টিতে সক্ষম হয় না৷ তাদের যতটুকু সরল অর্থ সে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় ততটুকুই গ্রহণ করে নেয় করার নামে উল্‌টা সিধা অর্থ করার পরিবর্তে সে আল্লাহর কালামের ওপর সামগ্রিকভাবে ঈমান এনে কাজের কথাগুলোর দিকে নিজে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়৷
(তাফহীমুল কুরআন) 

প্রশ্ন: ৩৪০ : রাসুল সা: এর সন্তান সন্ততি ।

হযরত রাসুল পাক (সঃ)-এর সন্তান সন্তুতি ....................
রাহ্‌মাতাল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তিন পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন । তাঁর পুত্রগণ ছিলেন-
১। হযরত কাশেম (রাঃ),
২। হযরত আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) ওরফে তাহের (রাঃ) ওরফে তৌয়ব (রাঃ) এবং
৩। হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) ।
আর কন্যাগণ ছিলেন-
১। হযরত জয়নাব (রাঃ),
২। হযরত রোকেয়া (রাঃ),
৩। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) এবং
৪। হযরত ফাতেমা (রাঃ) ।
হযরত রাসুল (সঃ)-এর পুত্রগণ শৈশবেই ইন্তেকাল করেন । ফলে তাঁদের সম্বন্ধে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি । তাছাড়া তাঁদের সংখ্যা নিয়েও মতভেদ রয়েছে । হযরত রাসুল (সঃ)-এর তিন পুত্র ছিল । তাঁর দ্বিতীয় পুত্র হযরত আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর উপাধি ছিল 'তাহের' এবং 'তৌয়ব' । এ কারণে কেউ কেউ বলেন, হযরত রাসুল (সঃ)-এর চার পুত্র ছিল । পক্ষান্তরে হযরত রাসুল (সঃ)-এর কন্যাগণ ইসলামী যুগ দেখতে পেয়েছেন এবং মদীনায় হিজরতের অংশ নিয়েছেন । এ কারণে কন্যাদের সম্পর্কে কোন মতভেদ নেই ।
১. হযরত কাসিম (রাঃ) : হযরত রাসুল (সঃ)-এর প্রথম সন্তান ছিলেন হযরত কাসিম (রাঃ) । হযরতের বিয়ের তিন বছর পর তিনি জন্মগ্রহণ করেন । হযরত কাসিম (রাঃ) দুই বছর বয়সে পরলোক গমন করেন । তাঁর নাম অনুসারেই হযরত রাসুল (সঃ)-কে আবুল কাসিম না কাসিমের পিতা বলা হতো । হযরত রাসুল (সঃ) এই শব্দটি খুব ভালবাসতেন । এই জন্যই সাহাবীগণ অতি ভক্তি ও ভালবাসার সাথে তাঁর কথা উল্লেখ করতে আবুল কাসিম (সঃ) বলতেন ।
২. হযরত জয়নাব (রাঃ) : হযরত রাসুল (সঃ)-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন হযরত জয়নাব (রাঃ) । হযরতের বিয়ের পাঁচ বছর পরে, অর্থাৎ তাঁর ত্রিশ বছর হলে তাঁর খালাতো ভাই আবু আস্‌ ইবনে রবির সাথে তাঁর বিয়ে হয় । হযরত রাসুল (সঃ) নবুয়ত লাভের পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, কিন্তু তাঁর স্বামী আবু আস ইসলাম গ্রহণ করেনি ।
হযরত জয়নাব (রাঃ) বদরের যুদ্ধের পর মদিনায় হিজরত করার পথে কাফেরগণ কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন এবং দীর্ঘদিন শয্যাশায়িনী থাকার পর হিজরী ৮ম সালে ইন্তেকাল করেন । হযরত জয়নাব (রাঃ)-এর স্বামী আবু আস হিজরী ৭ম সালে ইসলাম গ্রহণ করে মদিনায় হিজরত করেন ।
হযরত জয়নাব (রাঃ)-এর গর্ভে একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন । পুত্রটির নাম ছিল আলী ও কন্যাটির নাম ছিল উমামা । আলী তার মাতার মৃত্যুর পরেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় । হযরত রাসুল (সঃ)-এর মৃত্যুর পরে হযরত আলী (রাঃ) উমামাকে বিয়ে করেন । হিজরী ৫০ সালে হযরত উমামা (রাঃ) ইন্তেকাল করেন । তাঁর কোন সন্তানাদি জন্মগ্রহণ করেনি ।
৩. হযরত রোকেয়া (রাঃ): হযরত রোকেয়া (রাঃ) তাঁর বোন হযরত জয়নাব (রাঃ)-এর তিন বছরের ছোট ছিলেন । আবু লাহাবের পুত্র ওতবার সাথে তাঁর বিয়ে হয় । আবু লাহাবের আর এক পুত্রের সাথে হযরত রোকেয়া (রাঃ)-এর ছোট বোন হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ)-এর বিয়ে হয় ।
যখন পবিত্র কুরানের সূরা লাহাব নাজিল হয় তখন আবু লাহাব হযরত রাসুল (সঃ)-এর প্রতি রাগান্বিত হয়ে তার উভয় পুত্রকে বলেন, তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দাও । মুহাম্মদের কন্যাদেরকে তালাক না দিলে আমি তোমাদের মুখ দর্শন করবো না । তারা নিতান্ত অনিচ্ছা সত্তেও হযরত রাসুল (সঃ)-এর দু'কন্যাকে তালাক দিতে বাধ্য হয় ।
এ উভয় মেয়ের বিয়েই বাল্যকালে সম্পন্ন হয়েছিল । তখনও তাঁদের কোন সন্তানাদি জন্মে নাই । অতঃপর মক্কা বিজয়ের পর ওত্‌বা ইসলাম গ্রহণ করে । ওত্‌বা হযরত রোকেয়া (রাঃ)-কে তালাক দেয়ার পর হযরত রাসুল (সঃ) তাঁকে হযরত উসমান (রাঃ)-এর সাথে বিয়ে দেন । হযরত উসমান (রাঃ) আবিসিনিয়ায় হিজরত করার সময় হযরত রোকেয়া (রাঃ)-কেও সাথে নিয়ে যান । তৎপর হযরত রাসুল (সঃ) মদীনা হিজরত করার পরে হযরত উসমান (রাঃ) তাঁর স্ত্রী হযরত রোকেয়া (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মদীনা চলে যান ।
হযরত রাসুল (সঃ) যখন বদরের যুদ্ধে যান তখন হযরত রোকেয়া (রাঃ) কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে শয্যা শায়িনী ছিলেন । সেজন্য তাঁকে দেখাশুনা করার জন্য হযরত উসমান (রাঃ) যুদ্ধে যেতে পারেন নি । হযরত রাসুল (সঃ) বদরের যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পূর্বেই হযরত রোকেয়া (রাঃ) ইন্তেকাল করেন । আবিসিনিয়ায় অবস্থানকালে হযরত উসমান (রাঃ)-এর ঔরসে হযরত রোকেয়া (রাঃ)-এর একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল, তার নাম রাখা হয়েছিল আবদুল্লাহ্‌ । মাতার ইন্তেকালের কিছুদিন পরেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন ।
৪. হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ): হযরত রোকেয়া (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর হযরত রাসুল (সঃ) তাঁর তৃতীয় কন্যা হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ)-কে হযরত উসমান (রাঃ)-এর সাথে বিয়ে দেন । এজন্য হযরত উসমান (রাঃ)-এর একটি উপাধি হয় "জিন্নুবায়েন" অর্থাৎ দুটি নূরের অধিকারী । হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ)-এর কোন সন্তানাদি জন্মেনি । হিজরী নবম সালের শাবান মাসে তিনি ইন্তেকাল করেন ।
৫. হযরত ফাতিমা জোহরা (রাঃ): বিশ্ব নবী হযরত রাসুল (সঃ)-এর সর্ব কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল হযরত ফাতিমাতুজ জোহ্‌রা (রাঃ) । হযরত রাসুল (সঃ)-এর নবুয়ত লাভের পরের বছর তিনি জন্মগ্রহণ করেন । হিজরী ৬ষ্ঠ সালে আল্লাহ্‌ তায়ালার নির্দেশেই হযরত রাসুল (সঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর সাথে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে বিয়ে দেন । বিয়ের ৭মাস ১৫ দিন পর তাঁদের প্রথম বাসর রাত যাপন করা হয় । বিয়ের সময় হযরত ফাতিমার বয়স ছিল ১৫ বছর ৫ মাস এবং হযরত আলী (রাঃ) বয়স হয়েছিল ২১ বছর ৫ মাস ।
হযরত রাসুল (সঃ) তাঁর কন্যাদের মধ্যে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে সর্বাপেক্ষা অধিক স্নেহ করতেন । তিনি কোথাও যাওয়ার সময় সর্বশেষে তাঁর নিকট থেকে বিদায় নিতেন । তাঁকে না বলে তিনি কোথাও যেতেন না । আবার কোন স্থান থেকে বাড়ী ফিরে তিনি সর্বপ্রথম কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর সাথে দেখা সাক্ষাৎ না করে কিছু ও কিছু কথাবার্তা না বলে কারও সাথে দেখা বা আলাপ করতেন না ।
হযরত ফাতিমা (রাঃ) তাঁর স্বামী হযরত আলী (রাঃ)-কে অত্যন্ত ভালবাসতেন, ভক্তি, শ্রদ্ধা ও খেদমত করতেন । তিনি নবী কন্যা বলে কখনও স্বামীর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রকাশ করতেন না । হযরত আলী (রাঃ)-ও তাঁর স্ত্রী হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে নিজের প্রানাপেক্ষা বেশি ভালবাসতেন । হযরত ফাতিমা (রাঃ) জীবিত থাক্লা পর্যন্ত হযরত আলী (রাঃ) অন্য কোন বিয়ে করেননি । তাঁর ইন্তেকালের পরে সংসার অচল হয়ে পড়ায় উমামা (রাঃ)-কে বিয়ে করেছিলেন ।
হযরত রাসুল (সঃ)-এর ওফাতের ছ'মাস পরে হযরত ফাতিমা (রাঃ) জান্নাতবাসিনী হন । হযরত রাসুল (সঃ) ওফাতের আগেই কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে জানিয়েছিলেন- মা! তুমি আমার ইন্তেকালে দুঃখিত হয়ো না, আমার মৃত্যুর ঠিক ছ'মাস পরেই তুমি জান্নাতে আমার সাথে মিলিত হবে ।
বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর বংশ একমাত্র হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বংশ থেকেই দুনিয়ায় জারী রয়েছে । তাঁর তিনি পুত্র ও তিন কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিলেন । পুত্রদের নাম যথাক্রমে হযরত ইমাম হাসান (রাঃ), হযরত ইমাম হোসাইন (রাঃ) ও হযরত ইমাম মোহসিন (রাঃ) । হযরত ইমাম মোহসিন (রাঃ) শিশুকালেই মৃত্যু মুখে পতিত হন । কন্যাদের নাম যথাক্রমে হযরত রোকেয়া (রাঃ), হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) ও হযরত জয়নাব (রাঃ) । জ্যেষ্ঠা কন্যা হযরত রোকেয়া (রাঃ) শৈশবকালেই ইন্তেকাল করেন । হযরত ইমাম হাসান (রাঃ)-এর ১৫ পুত্র ও ৮ কন্যা জন্মগ্রহণ করেন । আর হযরত হোসাইন (রাঃ)-এর ৬ পুত্র ও ৩ কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিলেন । তাঁদের বংশধরগণই আজ পর্যন্ত দুনিয়ায় বিদ্যমান রয়েছেন- তাঁরাই প্রকৃত সৈয়দ বংশ নামে অভিহিত ।
৬. হযরত আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) : হযরত আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর উপাধি ছিল তৈয়ব ও তাহির । হযরত রাসুল (সঃ) নবুয়ত লাভের পর তাঁর জন্ম হয় এবং শৈশবেই তিনি পরলোক গমন করেন । তাঁর মৃত্যু সম্পর্কেই সূরা আল্‌ কাওছার অবতীর্ণ হয় । হযরত আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য কেউ থাকবে না ভেবে একদিন আস ইবন ওয়ায়িল বলল, মুহাম্মদ (সঃ) পুত্রহীন নির্বংশ । তাঁর নাম লওয়ার জন্যও কেউ থাকবে না , তিনি মরে গেলে তাঁর উৎপাত হতে তোমরা শান্তি লাভ করবে । তখনই সূরা কাওসার অবতীর্ণ করে আল্লাহ্‌ তায়ালা তার প্রতিউত্তরে বলে দিলেনঃ
নির্বোধ কফেরগন বহু পুত্রের পিতা হওয়ার গৌরবে এবং জনবহুল বংশের মত্ত হয়ে রাসুল (সঃ)-কে এসব কথা বলেছিল । যবুর ও কোরআনে আল্লাহ্‌ তায়ালা তাঁর সম্বন্ধে কি বলেছেন, তা তারা জানত না । পবিত্র যবূরে মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত হয়েছে, আমি তোমার নাম সমস্ত পুরুষ-পরম্পরায় স্মরণ করবো । এই জাতিরা যুগে যুগে চিরকাল তোমার প্রশংসা করবে । হযরত রাসুল (সঃ)-এর প্রশংসায় যবূরে অন্যত্র আছে, তাঁর নাম অনন্তকাল থাকবে; সূর্যের স্তিতি পর্যন্ত তাঁর নাম সতেজ থাকবে, মানুষেরা তাতে আশীর্বাদ পাবে, সমুদয় জাতি তাঁকে ধন্য ধন্য বলবে ।
পবিত্র যবূর ও কোরানের ঘোষণার ফলে আজ বিশ্ব জগতে হযরত রাসুল (সঃ)-এর নাম সুনাম ও সুখ্যাতি সকলের নিকটই প্রিয় । শত্রুমিত্র নির্বিশেষে সকলেই তাঁর সুখ্যাতি ও যশকীর্তি গাইতে বাধ্য । অসংখ্য মুসলমান অন্তরে বাহিরে, সুখে-দুঃখে, আনন্দে বিপদে সর্বাবস্থায় আজানে, ইকামতে, তাশাহুদে, নামাজে, কালিমায় সর্বদা তাঁর পবিত্র নাম স্মরণ করে এবং মুগ্ধ প্রাণে তাঁর যশকীর্তি গাইতে থাকে । আর যারা নিজেদের জনবহুল বংশের অহংকারে মত্ত ছিল, আজ কোথাও তাদের নাম গন্ধ শুনতে পাওয়া যায় না ।
৭. হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) : হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) অষ্টম হিজরীর জিলহজ্জ মাসে হযরত মারিয়া কিবতিয়া(রাঃ)-এর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন । মদীনা মুনাওয়ারার আলিয়া নামক স্থানে হযরত রাসুল (সঃ) হযরত মারিয়া (রাঃ)-এর সাথে বাসস্থান নির্মাণ করেছিলেন । সেখানেই তাঁর জন্ম হয় । এই জন্য আলিয়া মহল্লাটি মাশরবায়ে ইব্রাহীম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে ।
হযরত ইব্রাহীম (রাঃ) হযরত রাসুল (সঃ)-এর সর্বকনিষ্ঠ পুত্র । সালমা নামক ধাত্রী সূতিকা গৃহে নবজাতক ইব্রাহীম (রাঃ)-এর পরিচর্যা করেন এবং তার স্বামী আবু রাফি হযরত রাসুল (সঃ)-এর নিকট এই সুসংবাদ পৌঁছান । এই সংবাদে সন্তুষ্ট হয়ে হযরত রাসুল (সঃ) আবু রাফিকে একটি গোলাম দান করেন ।
সপ্তম দিবসে হযরত রাসুল (সঃ) তাঁর আকীকানুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন । তাঁর মাথার চুল কেটে চুলের সমপরিমাণ রূপা দান করলেন । হযরত রাসুল (সঃ)-এর ভক্তিভাজন পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহীম (রাঃ)-এর নামানুসারে তাঁর নাম রাখলেন ইব্রাহীম । অতঃপর তাঁকে দুগ্ধ পান করানোর জন্য উম্মু বুরদা আন্‌সারিয়াকে ধাত্রী নিযুক্ত করলেন পারিশ্রমিক সরূপ তাঁকে এক কিত্তা খেজুর-বাগান দান করলেন । উম্মু বুরদার ঘরেই হযরত ইব্রাহীম (রাঃ)-এর ইন্তেকাল হয় । সংবাদ পেয়ে হযরত রাসুল (সঃ) হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন আওফ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে উম্মু বুরদার বাড়ীতে গেলেন । তিনি গিয়ে দেখতে পেলেন, প্রাণ-প্রতীম ইব্রাহীম (রাঃ) অন্তিম অবস্থায় আছেন, যেন পিতার নিকট হতে শেষ বিদায় গ্রহণের অপক্ষা করছেন । তিনি তাঁকে তুলে কোলে নিলেন । তাঁর পবিত্র নয়নযুগল হতে দরদর করে অশ্রুজল প্রবাহিত হতে লাগল । হযরত আবদুর রহমান ইব্‌ন আওফ (রাঃ) বললেন- হুজুর, আপনারও এ-অবস্থা? তিনি বললেন, ইয়া রহমত । তিনি আরও বললেন- "হে প্রিয় ইব্রাহীম, তোমার কারণে আমরা চিন্তিত, নয়নে অশ্রু, অন্তরে দুঃখ, কিন্তু আমরা এমন কোন কথা বলব না যা আল্লাহ্‌র নিকট অপছন্দনীয় ।"
হযরত ইব্‌ন আওফ (রাঃ) বলেন, তিনি (হযরত ইব্রাহীম) শৈশবেই পরলোক গমন করেছেন ।
->রাহ্‌মাতাল্লিল আলামীনের গৌরবময় জীবনকথা ।
(দাগন ভূইয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা)

প্রশ্ন: ৩৩৯: আত্মহত্যার শাস্তি কি চিরস্থায়ী জাহান্নাম ?

আত্মহত্যার শাস্তি
আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, জাহান্নামে সেই ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)
আত্মহত্যাকারী কি স্থায়ী জাহান্নামি?
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস হলো, যারা ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যাবে, তারা স্থায়ী জাহান্নামি হবে না। যে হাদিসে আত্মহত্যাকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের কথা রয়েছে, তার ব্যাখ্যা হলো—তা ওই লোকের জন্য, যে তাকে হালাল মনে করেছে। তখন তো সে কাফির হয়ে যাবে। তাই আত্মহত্যাকারীকে যত দিন ইচ্ছা আল্লাহ শাস্তি দিয়ে পরে ইমানের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আত্মহত্যাকারীর জানাজা ও দাফন
যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জানাজা পড়া যাবে। তবে সম্ভ্রান্ত লোক ও আলিমরা তাতে শরিক না হওয়া উত্তম। প্রখ্যাত তাবেয়ি ইবরাহিম নখয়ি বলেন, ‘যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জন্য জানাজা পড়া যাবে। তেমনি জেনার কারণে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে যেসব নারী মারা যাবে, তাদেরও জানাজা পড়া যাবে। একইভাবে যে ব্যক্তি মদ পানের কারণে মারা যাবে, তারও জানাজা পড়া যাবে।’ (ইব্ন আবি শায়বা, হাদিস : ১১৯৮৪)
অন্য হাদিসে এসেছে : জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.)-এর দরবারে এক লোককে হাজির করা হয়, তীরের ফলা দ্বারা যে নিজেকে হত্যা করেছে। তখন তিনি তার ওপর নামাজ পড়েননি।’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮) তাই আমির, আলিম ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা ওই ব্যক্তির জানাজায় শরিক হবেন না।

প্রশ্ন: ৩৩৮ : মৃত ব্যাক্তির নামে আকীকা।

বিষয়ঃ মৃত ব্যক্তির আকিকা
প্রশ্নঃ
আমার চাচা কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন।(আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত দান করুন) তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় নিয়ত করেছিলেন আগত কুরবানীতে কুরবানীর সাথে তার আকিকার কাজটিও সেরে নিবেন। কিন্তু প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরলোক গমন করায় তা আর হয়নি। এখন তার পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছেন মৃত চাচার ইচ্ছানুযায়ী আগত কুরবানীতে তার নামে আকিকা করবেন।
প্রশ্ন হল,শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির আকিকা করা যাবে কি? অথবা তার ইচ্ছানুযায়ী আকিকা করলে কোন গোনাহ হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।জাঝাকাল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আকীকার হাকীকত না বুঝার কারণে আমাদের সমাজে কিছু ভুল রেওয়াজের প্রচলন রয়েছে।
আকীকাহ কোন ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। বরং এটি মুস্তাহাব। সহীহ পদ্ধতিতে করলে সওয়াব আছে, না করলে কোন গোনাহ নেই।
আর আকীকাহ শুধু জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে। কোন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আকীকা করার কোন প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। তা’ই তা না করাই শ্রেয়।
আকীকাহ করা যেমন মুস্তাহাব। সেই মুস্তাহাব আদায়েরও কিছু মুস্তাহাব পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
আকীকাহ করতে হয়, সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর সপ্তম দিনে।
عَنْ أُمِّ كُرْزٍ الْكَعْبِيَّةِ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ
উম্মে কুরযিল কা’বিয়্যাহ রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দু’টি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী [আক্বিকা দিবে]। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৩৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৫১৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৯৬৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৩১৩, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৬৪৮, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯০}
সেই সপ্তম দিনের দিন, সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডন করে তার সমমূল্যের টাকা দান করতে হয়।
عن سمرة بن جندب أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال « كل غلام رهينة بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق ويسمى
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-প্রত্যেক বালকের পক্ষ থেকে আক্বিকা হল বন্ধক স্বরূপ, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করবে, এবং তার মাথা মুন্ডাবে, এবং তার নাম রাখবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৪৭, সুনানে দারামী, হাদীস নং-১৯৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০০৮৩}
عن جعفر بن محمد عن أبيه أنه قالوزنت فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شعر حسن وحسين وزينب وأم كلثوم فتصدقت بزنة ذلك فضة
হযরত যাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন-হযরত ফাতেমা বিনতে রাসূল সাঃ হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের চুল ওজন করে সে পরিমাণ রোপা সদকা করে দিয়েছেন। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৮২৬২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৭৯}
ছেলের জন্য দু’টি বকরী, আর কন্যার জন্য একটি বকরী। বা গরু, উট ও মহিষে হলে ছেলের জন্য দু’টি শরীক ও মেয়ের জন্য একটি শরীকানা থাকা।
সপ্তম দিনে আকীকাহ না করতে পারলে চৌদ্দতম দিনে করবে। না পারলে একুশতম দিন করবে। যদি তা’ও না পারা যায়, তাহলে সন্তান বালেগ হবার আগ পর্যন্ত যেকোন দিন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও জন্ম নেবার পর থেকে সপ্তম দিন গণনা করে সপ্তম দিনের দিন দেয়াটাই উত্তম বলে ফুক্বাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন।
عن أم كرز قالت قالت امرأة من أهل عبد الرحمن بن أبي بكر إن ولدت امرأة عبد الرحمن غلاما نحرنا عنه جزورا فقالت عائشة : لا بل السنة عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة يطبخ جدولا ولا يكسر لها عظم فيأكل ويطعم ويتصدق يفعل ذلك في اليوم السابع فإن لم يفعل ففي أربع عشرة فإن لم يفعل ففي إحدى وعشرين
হযরত উম্মে কুরজ বলেন, আব্দুর রহমান বিন আবী বকরের পরিবারের এক মহিলা বলেন, আব্দুর রহমানের স্ত্রী ছেলে সন্তান প্রসব করে, তখন আমরা তার পক্ষ থেকে একটি ভেড়া জবাই করেছি। তখন হযরত আয়শা রাঃ বললেন-এমনটি, বরং পদ্ধতি হল-ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি সমান পর্যায়ের বকরী আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী দিবে [আক্বিকা]।
তারপর এটিকে রান্না করবে, তবে এর হাড্ডিকে ভাঙ্গবে না। তারপর তা নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, এবং দান করবে।
একাজগুলো করবে সপ্তম দিন, সেদিন সক্ষম না হলে চৌদ্দতম দিন, সেদিনও সক্ষম না হলে একুশতম দিন করবে আক্বিকা। [মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯২}
বালেগ হবার পর আকীকার গুরুত্ব বাকি থাকে না। তবু যদি কেউ দিয়ে থাকে, তাহলে আদায় হয়ে যাবে।
فَنَقَلَ الرَّافِعِيُّ أَنَّهُ يَدْخُلُ وَقْتُهَا بِالْوِلَادَةِ قَالَ وَذِكْرُ السَّابِعِ فِي الْخَبَرِ بِمَعْنَى أَنْ لَا تُؤَخَّرَ عَنْهُ اخْتِيَارًا ثُمَّ قَالَ وَالِاخْتِيَارُ أَنْ لَا تُؤَخَّرَ عَنِ الْبُلُوغِ فَإِنْ أُخِّرَتْ عَنِ الْبُلُوغِ سَقَطَتْ عَمَّنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَعُقَّ عَنْهُ لَكِنْ إِنْ أَرَادَ أَنْ يعق عَن نَفسه فعل  (فتح البارى لابن حجر، كتاب العقيقة- قَوْلُهُ بَابُ إِمَاطَةِ الْأَذَى عَنِ الصَّبِيِّ-9/872)
সন্তান মৃত্যুবরণ করার পর তার আকীকাহ দেবার কোন প্রমাণ হাদীসের কোথাও বর্ণিত হয়নি। তা’ই তা থেকে বিরত থাকা উচিত। হ্যাঁ, যদি তার ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকে, তাহলে এর সুযোগ রয়েছে বলে অনুমেয় হয়।
কুরবানীর সাথেও আলাদা অংশ নির্দিষ্ট করে আকীকাহ দেয়া যায়। তবে উত্তম নয়। উত্তম হল সপ্তম দিনের দিন আকীকাহ করা।
উপরোক্ত বিধানাবলী উল্লেখ করে দেয়া হল, যাতে করে আকীকাহ সংশ্লিষ্ট বিধানাবলী পরিস্কার হয়ে যায়।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, আপনার মৃত চাচার জন্য আকীকাহ করার কোন প্রয়োজন নেই।
যদি করেও তাহলে সতর্কতা স্বরূপ আলাদা পশুতে করাটাই উচিত বলে মুফতীয়ানে কেরাম মতামত ব্যক্ত করেছেন। কুরবানীর পশুতে এক সাথে মিলিয়ে করবে না। [ফাতাওয়া রহিমীয়া-১০/৬২]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

প্রশ্ন: ৩৩৭ : কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কি বৈধ ?


উত্তর :
১) রাসুল সা: এর রওজা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা বৈধ।
২) এ ছাড়া মৃত্যূর কথা স্মরণ করার উদ্দেশ্যে বাড়ির আশে পাশের কবরস্থান বা বিরানভূমিতে যাওয়াই যথেষ্ট। এজন্য কোন বিশেষ ব্যাক্তির কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর না করাই উচিত, কারণ এতে কবর কেন্দ্রিক বিদআত চালু হওয়ার আশংকা রয়েছে।



============================
রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কি অবৈধ?
-মাও.আ.জ.ম ওবায়দুল্লাহ
ইসলাম শান্তির ধর্ম। এখানে গোঁড়ামির কোন স্থান নেই। ব্যক্তির খেয়াল-খুশি উক্তি ও মনগড়া যুক্তির কারণে ইসলামের কোন হুকুম পরিবর্তন হয়না। বরং শরীয়তের মানদন্ডেই শরীয়তের বিধি-নিষেধ বিচার করা হয়। কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে শরীয়তের হুকুম নির্ধারণ করা হয়না। অতএব কোন বিষয়ের উপর জায়েজ না-জায়েজের হুকুম লাগাতে হলে শরীয়ত সে বিষয়ে কি হুকুম দিয়েছে, সে দিকটাই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। নতুবা হিতে বিপরীত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায় এবং ব্যক্তির মনগড়া সিদ্ধান্ত ও শরয়ী সিদ্ধান্তের মাঝে পারস্পরিক টক্কর লেগে যায়; যা সম্পূর্ণ অনৈসলামিক আচরণ। কোন মুসলিম ব্যক্তির পক্ষে তা শোভনীয় নয়। শরয়ী বিধানকে নিজের মনগড়া উক্তি দ্বারা সাব্যস্ত করতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে হালালের উপর হারাম এবং হারামের উপর হালাল ফতোয়া এসে যায়; যা নিতান্তই কুফুরী। তাই আসুন, আর নয় মনগড়া উক্তি; সকল বিষয় আমরা ইসলামের নিক্তিতে পরিমান করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হই।
আমাদের এবারের পরিবেশনা ‘রওজা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কি অবৈধ?’ এ বিষয় নিয়ে। আলোচ্য বিষয়টি বর্ণনা করার পূর্বে রওজা কিংবা কবর জিয়ারতের হুকুম নিয়ে আলোচনা করা দরকার।
কবর জিয়ারতের হুকুম:
কবর জিয়ারত শরীয়তের এমন একটি বিধান যার মাধ্যমে কবর দেশের মানুষের সাথে জীবিতদের সম্পর্ক গড়ে উঠে। মৃতদের আতœা খুশি হয়। মউতের কথা স্মরণ হয়। যার ফলে মানুষ অন্যায় আচরণ থেকে ফিরে আসে এবং পরকালের কথা স্মরণ হয়। মানুষ নেক কাজ করতে উদ্যোগী হয় এবং পাপ কাজ হতে বিরত থাকে।
‘কবর জিয়ারত’ একটি সুন্নাত আমল। কোন রকম এখতেলাফ ছাড়াই বিভিন্ন হাদিসের আলোকে ‘কবর জিয়ারত’ সুন্নাত প্রমাণিত হয়। হযরত রাসূল (স.) স্বয়ং কবর জিয়ারত করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। যেমন- তিরমিজি শরীফে এসেছে-
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أَبِيهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم- ্র قَدْ كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَقَدْ أُذِنَ لِمُحَمَّدٍ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ فَزُورُوهَا فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الآخِرَةَ গ্ধ.
হযরত সুলাইমান ইবনে বুরাইদাহ্ (রা.) স্বীয় পিতা হতে বর্ণনা করেন, ‘হযরত রাসূলে পাক (স.) বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (তোমরা শোন), হযরত মুহাম্মদ (স.) কে তার মায়ের কবর জিয়ারত করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা কবর জিয়ারত করো। কবর জিয়ারতে পরকালের কথা স্মরণ হয়।’
আবু দাউদ শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ أَتَى رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَبْرَ أُمِّهِ فَبَكَى وَأَبْكَى مَنْ حَوْلَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র اسْتَأْذَنْتُ رَبِّى تَعَالَى عَلَى أَنْ أَسْتَغْفِرَ لَهَا فَلَمْ يُؤْذَنْ لِى فَاسْتَأْذَنْتُ أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِى فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ بِالْمَوْتِ গ্ধ.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলে আকরাম (স.) মায়ের কবর জিয়ারত করে কাঁদলেন এবং তাঁর সাথীগণকেও কাঁদালেন। অতপর বললেন, আমি আল্লাহ পাকের দরবারে আমার মায়ের মাগফিরাতের দরখাস্ত করেছিলাম। আল্লাহ পাক আমাকে উহার অনুমতি দিলেননা। কিন্তু জিয়ারত করার আবেদন করলাম, উহার অনুমতি পেলাম। ওহে সাহাবাগণ! তোমরা কবর জিয়ারত করো। কেননা কবর জিয়ারতে মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়। (আবু দাউদ শরীফ-২/৪৬১)
উপরোক্ত হাদিসসমূহ দ্বারা কবর জিয়ারত সুন্নাত প্রমাণিত হয়।
জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর
আমাদের দেশে এ ব্যাপারটি নিয়ে দু’দল লোকের সৃষ্টি হয়েছে। একদল লোক বলে, রওজা কিংবা কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শরীয়ত সম্মত। আবার একদল লোক যারা এর বিরোধীতা করে তারা বলে, জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা বিদয়াত, না জায়েয, শিরক ইত্যাদি। এ নিয়ে আমাদের দেশে অনেক দলাদলির সৃষ্টি হয়েছে; যা নিতান্তই অশোভনীয়। এমতাবস্থায় সাধারণ মুসলমান সঠিক সমাধান পাওয়ার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়ে যায়। যেহেতু সকলেই নিজস্ব মতামত প্রমাণ করতে কুরআন ও হাদিসের সুস্পষ্ট দলিল উপস্থাপন করে। তাই সাধারণ মুসলমান কোনটি রেখে কোনটি আমল করবে, তা ভেবে তারা কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেনা। তাই পাঠক মহলের কাছে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এ ব্যাপারে সঠিক ও নিরপেক্ষ মতামত তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছি। প্রথমেই বিরোধীদের মতামত দিয়ে শুরু করছি।
বিরোধীদের মতামত
যারা কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা অবৈধ মনে করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাফিজ ইবনে তাইমিয়া, ইবনে বাত্তা, ইবনে আকিল প্রমূখ। তারা বলে থাকেন, কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা গোনাহের কাজ, এহেন সফরে কসর নামাজ জায়েয নেই। যেহেতু কসর নামাজ পড়তে হয় শরয়ী সফরে। আর কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা শরয়ী সফর নয়, এই সফর হল বিদয়াত। ইহা পূর্ববতী যুগে ছিলনা। ইহা হাদিসে বর্ণিত নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত। তাদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা তিন মসজিদ ব্যতিত অন্যান্য সকল সাধারণ মসজিদ, মাজার, মাশাহিদ এবং এবাদতের উদ্দেশ্যে সফর করা হয় এমন যে কোন স্থান সকল ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বিরোধীদের দলিল:
১ নং দলিল:
لا تشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد المسجد الحرام ومسجد الرسول صلى الله عليه و سلم ومسجد الأقصى
‘হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, হযরত রাসূলে মাকবুল স. এরশাদ করেছেন, তিন মসজিদ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সফর করা হবেনা: মসজিদে হারাম, মসজিদুর রসূল এবং মসজিদুল আকসা। [বুখারী-১১৩২, মুসলিম-৩৪৫০, তিরমিজি-৩২৬, আবু দাউদ-২০৩৫]
২ নং দলিল:
عَنْ شَهْرٍ قَالَ : لَقِينَا أَبَا سَعِيدٍ وَنَحْنُ نُرِيدُ الطُّورَ فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : لاَ تُشَدُّ الْمَطِيُّ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ : الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ، وَمَسْجِدِ الْمَدِينَةِ ، وَبَيْتِ الْمَقْدِسِ.
হযরত শাহর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুর পাহাড়ে যাওয়ার হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. এর সাথে আমাদের দেখা হল, তিনি বললেন: আমি রাসূলে পাক স.কে বলতে শুনেছি: তিন মসজিদ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সফর করা হবেনা: মসজিদে হারাম, মাসজিদুল মাদিনাহ এবং বায়তুল মাকদিস। [মুসনাদ ইমাম আহমাদ-১১৮৮৩]
৩ নং দলিল:
عَنْ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْحَارِثِ بْنِ هِشَامٍ أَنَّهُ قَالَ لَقِىَ أَبُو بَصْرَةَ الْغِفَارِىُّ أَبَا هُرَيْرَةَ وَهُوَ جَاءٍ مِنَ الطُّورِ فَقَالَ مِنْ أَيْنَ أَقْبَلْتَ قَالَ مِنَ الطُّورِ صَلَّيْتُ فِيهِ. قَالَ أَمَا لَوْ أَدْرَكْتُكَ قَبْلَ أَنْ تَرْحَلَ إِلَيْهِ مَا رَحَلْتَ إِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ ্র لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثِ مَسَاجِدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِى هَذَا والْمَسْجِدِ الأَقْصَى
হযরত উমর ইবনে আব্দুর রহমান হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বাসরা আল-গিফারী তুর পাহাড় হতে প্রত্যাগত হযরত আবু হুরায়রা রা. এর সাথে দেখা করলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কোথা হতে এসেছেন? হযরত আবু হুরায়রা রা. জবাব দিলেন, তুর পাহাড় থেকে, আমি সেখানে নামাজ পড়েছি। তিনি বললেন, আমি যদি আপনাকে সেখানে রওয়ানা হওয়ার আগে পেতাম তবে আপনি যেতে পারতেন না, কারণ আমি শুনেছি, রাসূলে পাক স. বলেছেন, তিন মসজিদ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে সফর করা হবেনা: মসজিদে হারাম, আমার এই মসজিদ এবং মসজিদে আক্বসা। [মুসনাদে ইমাম আহমাদ-২৪৫৭৯]
৪ নং দলিল:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ ্র إِنَّمَا يُسَافَرُ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِ الْكَعْبَةِ وَمَسْجِدِى وَمَسْجِدِ إِيلِيَاءَ গ্ধ.
হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক স. বলেছেন: সফর কেবলমাত্র তিন মসজিদের উদ্দেশ্যেই করা হবে: কা’বার মসজিদ, আমার মসজিদ এবং মসজিদে ঈলিয়া। [মসলিম শরীফ-৩৪৫২]
জমহুর আইম্মায়ে কেরামের জবাব:
১. জমহুর আইম্মায়ে কেরাম ও উলামায়ে এজাম হাফিজ ইবনে তাইমিয়ার জবাব দিতে গিয়ে ঐ সকল হাদিস সম্পর্কে বলেন, উল্লিখিত হাদিস সমূহ শুধুমাত্র মসজিদ এবং তাতে নামাজ আদায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট, সুতরাং ঐ সকল হাদিসের মর্ম হচ্ছে অধিক পূণ্য লাভের আশায়, ইবাদতের নিয়তে ঐ তিন মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা নিষেধ এবং এটাই সঠিক। এর উপর ইজমা এবং ইহাই সর্বকালে জমহুর উলামায়ে উম্মাতের অভিমত। সুতরাং জিয়ারতে রওজায়ে আতহারের উদ্দেশ্যে সফর করা যে জায়েয এর প্রথম দলিল স্বয়ং উপরোক্ত হাদিস সমূহ। আইম্মায়ে হাদিস ইমাম বুখারী, মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, আবু দাউদের তরজমাতুল বাবও জমহুরের পক্ষে সহায়ক দলিল।
২. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুর রহীম আল মোবারকপুরী রহ. কর্তৃক লিখিত তিরমিজি শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘তুহফাতুল আহওয়াজী’ তে شَدُّ الرِّحَالُ এর হাদিসের জবাবে বলেন-
وأجابوا عن الحديث بأجوبة منها أن المراد أن الفضيلة التامة إنما هي في شد الرحال إلى هذه المساجد بخلاف غيرها فإنه جائز وقع في رواية لأحمد بلفظ لا ينبغي للمطي أن تعمل وهو لفظ ظاهر في غير التحريم
ومنها أن النهي مخصوص بمن نذر على نفسه الصلاة في مسجد من سائر المساجد غير الثلاثة فإنه لا يجب الوفاء به
ومنها أن المراد حكم المساجد فقط وأنه لا تشد الرحال إلى مسجد من المساجد للصلاة فيه غير هذه الثلاثة وأما قصد غير المساجد لزيارة صالح أو قريب أو طلب علم أو تجارة أو نزهة فلا يدخل في النهي ويؤيده ما روى أحمد من طريق شهر بن حوشب قال سمعت أبا سعيد وذكر عنده الصلاة في الطور فقال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا ينبغي للمصلي أن يشد رجاله إلى مسجد تبتغي فيه الصلاة غير المسجد الحرام والمسجد الأقصى ومسجدي
উলামায়ে কেরাম উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বিভিন্ন জবাব দিয়েছেন, প্রথমত: এখানে উদ্দেশ্যে হল, তিন মসজিদের পরিপূর্ণ ফজিলত বর্ণনা করা- অন্যান্য মসজিদ ব্যতিত এই তিন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করলে সে ফজিলত হাসিল করা যাবে। আর তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয আছে, তার প্রমাণ রয়েছে মুসনাদে আহমাদে। সেখানে এক বর্ণনায় এসেছে- আরোহণকারী ব্যক্তির জন্য সমীচীন নয় যে, নামাজে অধিক সওয়াবের আশায় প্রসিদ্ধ তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করবে। এই হাদিসের স্পষ্ট ভাষ্যে তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে সফর করা নাজায়েয সাব্যস্ত হয়না। দ্বিতীয়ত: উক্ত হাদিসের নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য মসজিদে নামাজ আদায়ের মানতকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেহেতু অন্যান্য মসজিদে নামাজের মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব নয়। তৃতীয়ত: উক্ত হাদিসের নিষেধাজ্ঞার হুকুম শুধুমাত্র মসজিদের ক্ষেত্রে; অন্যান্য উদ্দেশ্যে সফরের ক্ষেত্রে নয়। আর তা হল, তোমরা নামাজে অধিক সওয়াবের নিয়তে তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য মসজিদের দিকে নিজেদের বাহনকে হাকাবেনা। তবে মসজিদ ব্যতিত অন্যান্য উদ্দেশ্যে যেমন- নেককার সালেহ কিংবা আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দার সাথে সাক্ষাৎ, ইলমে দীন অর্জন, ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং বনভোজনের উদ্দেশ্যে সফর এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়। এ কথাকে আরো শক্তিশালী করে ইমাম আহমাদ রহ. এর এক রেওয়ায়েত, যা হযরত শহর ইবনে হাওশাবের সূত্রে বর্ণিত। হযরত শহর ইবনে হাওশাব বলেন, আমি হযরত আবু সাঈদ রা. এর কাছে শুনেছি, তিনি (হযরত আবু সাঈদ রা.) হযরত নবী করিম (স.) এর নিকট তূর পাহাড়ে নামাজের বিষয়ে আলোচনা করলেন। হযরত নবী করিম (স.) বলেন, কোন নামাজি ব্যক্তি মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসা এবং আমার মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদে নামাজে (অধিক সওয়াবের নিয়তে) নিজের কদম হাকাবেনা
২. ইমাম শাওকানী شَدُّ الرِّحَالُ এর হাদিসের জবাবে বলেন, মসজিদের এ’তেবারে ক্বসরটি এখানে এজাফী, হাক্বীক্বী নয়। উপরোক্ত হাদিস সমূহে ইবাদতের নিয়তে কিংবা অধিক ফজিলতের আশায় অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করতে বারণ করা হয়েছে। অতএব বুঝা গেল, রওজা মোবারক কিংবা আউলিয়ায়ে কেরামের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত নয়। এর দলিল হল একটি হাসান হাদিস:
لا ينبغي لمطي أن تُشدّ رِحاله إلى مسجد تبتغي فيه الصلاة غير مَسْجِدِى هَذَا والمسجد الحرام والْمَسْجِدِ الأَقْصَى-
‘আমার এই মসজিদ, মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আক্বসা ছাড়া অন্য কোন মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয নয়।’
অতএব ইবাদত কিংবা অধিক ফজিলতের আশা না থাকলে তিন মসজিদ ছাড়া অন্য যে কোন মসজিদের উদ্দেশ্যেও সফর করা জায়েয হবে। যেমন- অনেক মানুষ ঐতিহাসিক পুরানা মসজিদ, পুরানা স্থাপনা দর্শন করতে সফর করে; এই সফর না জায়েয নয়। না জায়েয হওয়ার যৌক্তিক কোন কারণও এখানে বিদ্যমান নেই।
৩. বিরোধীদের তৃতীয় দলিল হযরত বাসরা আল-গিফারী রা. এর হাদিসের জবাব হচ্ছে- হযরত আবু হুরায়রা রা. তিন মসজিদ ভিন্ন অন্য স্থান তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন অধিক পূণ্যের আশায় নামাজ আদায় করার নিয়তে। অথচ তুর পাহাড়ে নামাজ আদায় করলে তিন মসজিদের মত অধিক সওয়াব লাভ করা যায়না; হাদিসেও এর কোন প্রমাণ নেই। এজন্য হযরত বাসরা আল-গিফারী হযরত আবু হুরায়রা রা. কে অধিক সওয়াবের আশায় সেখানে সফর করতে বারণ করতে চেয়েছিলেন।
৪. ইমাম শাওকানী আরো বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য এবং সমস্ত পার্থিব প্রয়োজনে সফর করা জায়েয, উকুফে আরাফাহ, মিনা, মুজদালিফা, জিহাদ ও হিজরতের নিয়তে দারুল কুফর হতে সফর করা ওয়াজিব এবং ইলম তলবের জন্য সফর করা মুস্তাহাব এর উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৫. ইমাম শাওকানী যুক্তির নিরিখে আরো বলেন, জমহুর উলামায়ে কেরাম لا تتخذوا قبري عيداً ‘আমার কবরকে ঈদে পরিণত করোনা’ হাদিস সম্পর্কে বলেন, এই হাদিসে জিয়ারতকে নিষেধ করা হয় নাই। বরং বেশী বেশী জিয়ারত করার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যাতে দুই ঈদের মত মাঝে মাঝে তাঁর কবর শরীফ জিয়ারত করা না হয়, বরং সব সময়ই জিয়ারত করা হয়। এই মতকে নবী করিম স. এর বাণী لا تجعلوا بيوتكم قبوراً ‘তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থান বানাইওনা’ আরো শক্তিশালী করে, অর্থাৎ ঘরে নামাজ পড়া ছেড়ে দিওনা। হাফিজ মুনজিরী এভাবে বলেছেন। সুবকী বলেন, لا تتخذوا قبري عيداً এর অর্থ হল, জিয়ারতের জন্য সময় নির্ধারিত করোনা যে ঐ সময় ছাড়া জিয়ারত হবেনা অথবা ঈদের দিনের মত ফূর্তি আমোদের স্থান বানাইওনা, বরং কেবলমাত্র জিয়ারত, দোয়া, সালাত ও সালামের নিয়তে হাজির হবে। [নাইলুল আওতার ৫/১০৪, আল-ফাতহুর রব্বানী-১৩/২০]
৬. ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন,
لا تجعلوا قبري عيدا هو واحد الأعياد أي لا تجعلوا زيارة قبري عيدا أو لا تجعلوا قبري مظهر عيد فإنه يوم لهو وسرور وحال الزيارة خلاف ذلك وقيل يحتمل أن يكون المراد الحث على كثرة زيارته ولا يجعل كالعيد الذي لا يأتي في العام إلا مرتين
‘তোমরা আমার কবরকে ঈদ বানাইওনা, যেহেতু কবর হল এক প্রকার ঈদের মত। অর্থাৎ তোমরা আমার কবরের জিয়ারতকে ঈদের মত করে দিওনা, অথবা ঈদের দিন যে রকম আনন্দ ফূর্তি করা হয় আমার কবরকে সে রকম আনন্দ ফূর্তির বস্তুতে পরিণত করিওনা। কারণ কবর জিয়ারত হল আনন্দ ফূর্তির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা (অর্থাৎ কবর জিয়ারতের মাধ্যমে আখেরাতের কথা স্মরণ হয়, দুনিয়ার আরাম আয়েশের কথা একটু সময়ের জন্য হলেও মানুষ ভুলে যায়)। আবার কেউ কেউ বলেন, নবীজির কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জিয়ারতের প্রতি অত্যধিক গুরুত্বারোপ করা এবং ঈদের মত যেন বছরে দু’বার জিয়ারত করা না হয়।’
৭. শরহে শেফা শরীফে লেখা রয়েছে,
يحتمل أن يراد به الحث على كثرة زيارته إذ هى أفضل القربات واكد المستحبات بل قريبة من درجة الواجبات فالمعنى اكثروا من زيارتى ولا تجعلوها كالعيد تزورنى فى السنة مرتين أو فى العمر كرتين ـ
এই হাদিস দ্বারা এই উদ্দেশ্যও হতে পারে যে, আল্লাহর রাসূলের বেশী বেশী জিয়ারতের উপর উৎসাহিত করা হয়েছে, কেননা ইহা শ্রেষ্ঠতম ইবাদত এবং অন্যতম মুস্তাহাব একটি আমল, বরং ওয়াজিবের কাছাকাছি। সুতরাং অর্থ হল তোমরা আমার বেশী বেশী জিয়ারত করো এবং আমার জিয়ারতকে ঈদের মত বানাইওনা যে, তোমরা আমাকে বছরে দুইবার অথবা জিন্দেগীতে দুইবার জিয়ারত করবে। [শরহে শিফা শরীফ-২/১৪৩]
৮. এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, شَدُّ الرِّحَالُ এর হাদিসের সাথে কবর জিয়ারতের কোন সম্পর্কই নেই। কেননা হাদিসে مستثنى منه উল্লেখ নেই, অতএব তা مستثنى مفرغ হবে। এখানে مستثنى টি যদি ভিন্ন জিনস মেনে مستثنى منقطع করি, তখন বাক্যটি হবে تشدوا الرحال الى شيئ الا الى ثلاثة مساجد لا। তখন অর্থ হবে, তোমরা তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোথাও যেমন- মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোট-কাচারী, হাসপাতাল ইত্যাদি কোথাও সফর করিওনা। তখন এ ব্যাখ্যার মধ্যে কবর জিয়ারতও শামিল হবে। অর্থাৎ কবর জিয়ারতও নিষেধ হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এ ব্যাখ্যা কি সঠিক হবে? না, তা কখনো সঠিক হতে পারেনা। কেননা এ ব্যাখ্যা সঠিক ধরলে তো জীবন যাত্রাই অচল হয়ে যাবে, কোন প্রকার সফর করাই যাবেনা। যেমন- শিক্ষা লাভের জন্য বিদেশ সফর করা যাবেনা, ব্যবসা বাণিজ্য ও বেচা কেনা করার জন্য বাজার-ঘাটে যাওয়া যাবেনা, নামাজ আদায় করার জন্য তিন মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করা যাবেনা ইত্যাদি। অতএব অত্র হাদিসের ভিন্ন ব্যাখ্যা ধরতে হবে, অর্থাৎ مستثنى منه টি একই জিনসের ধরে مستثنى متصل করতে হবে। তখন পূর্ণাঙ্গ বাক্য হবেلا تشدوا الرحال الى مسجد الا الى ثلاثة مساجد- অর্থাৎ তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতিত অন্য কোন মসজিদের উদ্দেশ্যে বেশী সওয়াবের আশায় তোমাদের বাহন হাকাবেনা। আর এ সঠিক ব্যাখ্যাটিই আমরা নি¤েœাক্ত হাদিসেও দেখতে পাই: যেমন ফয়জুল বারী শরহে বুখারীর ২য় খন্ড ৪৩৩ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে-
لما فى المسند لاحمد رح قوله عليه الصلوة والسلام لا تشدوا الرحال الى مسجد ليصلى فيه الا الى ثلاثة مساجد- فدل على ان نهى شد الرحال يقتصر على المساجد ولا تعلق بزيارة القبور-
অর্থাৎ ‘যেহেতু মুসনাদে আহমাদে লিখিত আছে, হযরত নবী করিম (স.) বলেছেন, তোমরা (অধিক সওয়াবের আশায়) নামায আদায় করার জন্য তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করবেনা।
● উক্ত হাদিস হতে প্রমাণিত হলো, সফরের নিষেধাজ্ঞা মসজিদের উপর সীমাবদ্ধ, কবর জিয়ারতের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই’। অর্থাৎ তোমরা নামাযের উদ্দেশ্যে কোন মসজিদের দিকে যানবাহন যোগে যেয়োনা, যদি যেতে হয় তাহলে এ তিনটি মসজিদ তথা মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসায় নামাজ আদায় করার জন্য অধিক সওয়াবের নিয়তে যাও। অধিক সওয়াবের আশায় অন্য মসজিদে যেয়োনা। কারণ মসজিদে হারামে প্রতি রাকআতে এক লক্ষ রাকআতের সওয়াব, মসজিদে আকসা ও মসজিদে নববীতে প্রতি রাকআতে পঞ্চাশ হাজার রাকআতের সওয়াব পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অন্যান্য সকল মসজিদে নামায আদায় করার সওয়াব সমান, কাজেই নামাযের উদ্দেশ্যে কোন মসজিদে যানবাহন যোগে সফরের প্রয়োজন নেই। জানা আবশ্যক, অত্র হাদিসটি কবর জিয়ারতের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখে না বিধায়, যারা জিয়ারতের ক্ষেত্রে এ হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করেন, উহা বাতিল বলে গণ্য হলো।
৯. যুক্তির নিরিখে একটা কথা বলা আবশ্যক যে, সহিহ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, কবর জিয়ারত একটি সুন্নাত আমল। অতএব সুন্নাত আদায় করার জন্য সফর করাও সুন্নাত। কারণ এ কথা কেউ অস্বীকার করেনা যে, ফরজ আমলের জন্য সফর করা দরকার হলে সে উদ্দেশ্যে সফর করাও ফরজ। যেমন- জুমআর নামাজ আদায় করা ফরজ, যেহেতু ঘরে বসে তা আদায় করা সম্ভব নয়; তাই এর জন্য সফর করাও ফরজ। আবার ইলমে দীন অর্জন করা ফরজ, এর জন্য যদি সফর দরকার হয় সে জন্য সফর করাও ফরজ। তেমনিভাবে ওয়াজিব আদায় করার জন্য সফর করা প্রয়োজন হলে সে উদ্দেশ্যে সফর করাও ওয়াজিব। আবার সুন্নাত আমলের জন্য সফর করা প্রয়োজন হলে সে উদ্দেশ্যে সফর করাও সুন্নাত। যেমন- দূরে অবস্থিত কোন অসুস্থ ব্যক্তির খেদমতের জন্য সেখানে সফর করা সুন্নাত। আবার হারাম কাজের উদ্দেশ্যে সফর করাও হারাম। যেমন- কাউকে হত্যার উদ্দেশ্যে সফর করা। এভাবে মাকরূহ কাজের উদ্দেশ্যে সফর করা মাকরূহ।
● অতএব রওজা শরীফ জিয়ারত কিংবা কবর জিয়ারত করা যেহেতু সুন্নাত, তাই এ উদ্দেশ্যে সফর করাও সুন্নাত হবে। কারণ কবর জিয়ারত তো আর ঘরে বসে করা যায়না, এজন্য সফর করা প্রয়োজন হয়। আর নবীজীর উক্ত হাদিসের কারণে যদি কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর না জায়েয প্রমাণিত হত, তাহলে কখনোই নবীজীর সুন্নাত ‘কবর জিয়ারত’ আমল করা সম্ভব হতনা। কারণ, সফর ব্যতিত কবর জিয়ারত কখনো সম্ভব নয়। তাছাড়া নবী করিম (স.) কি কবর জিয়ারতের সুন্নাত আমলকে চিরতরে মানসুখ করে গেছেন? এই প্রশ্ন রইল আমার বিরোধী ভাইদের কাছে।
● আর একটি কথা, যা না বললেই নয়। সেটা হল, আমার বিরোধী ভাইয়েরা এ ক্ষেত্রে যে অভিমত পেশ করেন; কিন্তু কাজ করেন তার বিপরীত, অর্থাৎ আমাদের মত অনুযায়ী আমল করেন। যেমন- শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরী-নকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য আমরাও বিদেশ সফর করি, তেমনি তারাও বিদেশ সফর করে থাকেন। কারণ, নবীজীর হাদিস দ্বারা যদি তিন মসজিদ ব্যতিত অন্যান্য উদ্দেশ্যে সফর করা না জায়েয প্রমাণিত হয়, তাহলে এ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শুধু ‘কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরই’ অর্šÍভূক্ত হবেনা; এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে তখন ‘কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর’সহ অন্যান্য সকল সফর শামিল হয়ে যাবে। তখন ‘কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর’ যেমনিভাবে না জায়েয হবে, তেমনিভাবে শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরী-নকরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে সফর করাও না জায়েয হবে। এখন আমার ভাইদের কাছে প্রশ্ন হল, তারা কি শিক্ষা লাভের জন্য মাদরাসা বা ইউনিভার্সিটিতে সফর করেন না? চাকরী-নকরী ও ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য বিদেশ সফর করেন না? এ প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ সূচক হয়, তাহলে আপনারা কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কোন দলিলের ভিত্তিতে না জায়েয বলে থাকেন! এটা অবশ্যই অবাক লাগার কথা।
● আমার ভাইয়েরা আবার বলতে পারেন, “নবীজীর হাদিসের নিষেধাজ্ঞা তিন মসজিদ ব্যতিত অন্যান্য মসজিদের উপর সীমাবদ্ধ। মসজিদ ভিন্ন অন্যান্য উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয আছে। তাছাড়া মসজিদ ভিন্ন অন্যান্য সফর নিষেধ হওয়ার কথা অত্র হাদিসে বলা হয়নি। এজন্য আমরা দীনি শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরী-নকরী, ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য বিদেশ সফর করে থাকি”। আমার ভাইদের এ কথার জবাবে আমরা বলতে পারি যে, তখন আপনাদের কথায়ই আমাদের অভিমত ‘কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয’ সাব্যস্ত হয়ে যায়। কারণ, ‘শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে বিদেশ সফর’ যদি উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত না হয়, তখন ‘কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর’ও উক্ত নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হবেনা। যেহেতু কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর নিষেধের কথাও উক্ত হাদিসে বলা হয়নি এবং কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরের সাথে উক্ত হাদিসের কোন সম্পর্কই নেই। অতএব আমার বিরোধী ভাইদের কথায়ই কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয প্রমাণিত হয়।
কোরআন থেকে জমহুরের দলিল:
১. আল্লাহর বাণী:
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا
‘তারা যখন তাদের নফসের উপর জুলুম করেছিল তখন যদি তারা আপনার দরবারে আসত, অত পর (আপনার ওসিলা নিয়ে) আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য সুপারিশ করতেন তবে অবশ্যই তারা আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পেত।’ [সূরা নিসা-৬৪]
● শাইখুল ইসলাম ইমাম আল্লামা সুবকী রহ. বলেন: ‘এই আয়াতে তাওবা কবুল তথা আল্লাহর মেহেরবাণী হাসিলের জন্য তিনটি শর্ত দেয়া হয়েছে: (ক) আল্লাহর রাসূলের দরবারে হাজির হওয়া। অতপর (খ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। এবং (গ) আল্লাহর রাসূল কর্তৃক তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা (শুপারিশ) করা।’ তাছাড়া অত্র আয়াতে তাওবা কবুল হওয়ার জন্য নবীজীর দরবারে গমন করা এবং নবীজী কর্তৃক আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কথা বলা হয়েছে, তা আজও বহাল রয়েছে। কারণ, উপরোক্ত আয়াত মানসূখ হয়ে যায়নি এবং মানসূখ হওয়ার কোন প্রমাণও বিদ্যমান নেই।
● আল্লাহর রাসূল কর্তৃক সমস্ত ঈমানদারদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার কথা পাওয়া যায় নি¤েœাক্ত আয়াতে: وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ‘ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার আপন লোকদের এবং সাধারণ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ত্রুটির জন্য।’ [সূরা মুহাম্মদ-১৯]
সুতরাং তিন শর্তের মধ্যে অন্যতম শর্ত হল আল্লাহর রাসূল কর্তৃক উম্মাতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা বা শুপারিশ পাওয়া গেল উপরোক্ত আয়াতে। বাকী দুই শর্ত তথা আল্লাহর রাসূলের দরবারে হাজির হওয়া, অতপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যদি পূর্ণ হয় তাহলেই আল্লাহকে ক্ষমাকারী, মেহেরবানরূপে পাওয়া যাবে। [শিফাউস সিকাম-৬৭]
● ইমাম সুবকী রহ. এ সম্পর্কে মুসলিম শরীফ থেকে একটি হাদিস উল্লেখ করেন, বিশিষ্ট তাবিঈ হযরত আসিম বিন সুলাইমান সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন সারজিস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-
رأيت النبي صلى الله عليه و سلم وأكلت معه خبزا ولحما أو قال ثريدا قال فقلت له أستغفر لك النبي صلى الله عليه و سلم ؟ قال نعم ولك ثم تلا هذه الآية واستغفر لذنبك وللمؤمنين والمؤمنات
‘আমি নবী পাক (স.) কে দেখেছি, আমি তার সাথে রুটি এবং গোশত অথবা ছরীদ খেয়েছি। তিনি (তাবিঈ আছিম বিন সুলাইমান) বলেন, আমি তাঁকে (সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন সারজিস রা. কে) বললাম, নবী পাক (স.) কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা (সুপারিশ) করেছেন? তিনি (সাহাবী) উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, এবং তোমার জন্যও (ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন)। অতপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন: ক্ষমা প্রার্থনা করুন আপনার আপন লোকদের এবং সাধারণ মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের ত্রুটির জন্য। [মুসলিম, আহমাদ]
● তাছাড়া এখনো রওজা শরীফে নবীজী (স.) তাঁর উম্মাতের জন্য এস্তেগফার করেন এর সরাসরি প্রমাণ রয়েছে বিভিন্ন হাদিসে:
عن ابن مسعود رفعه: حياتي خير لكم ومماتي خير لكم تعرض علي أعمالكم فما كان من حسن حمدت الله عليه وما كان من سيء استغفرت الله لكم رواه البزار بإسناد جيد-
ইমাম বাজ্জার উত্তম সনদে হযরত ইবনে মাসউদ রা. থেকে একটি মারফূ হাদিস বর্ণনা করেন, হযরত নবী করিম স. এরশাদ করেছেন: আমার জীবন তোমাদের জন্য উত্তম, আমার ওফাত (শরীফ)ও তোমাদের জন্য উত্তম, আমার সামনে তোমাদের আমলসমূহ পেশ করা হয়, ভাল আমল দেখলে আল্লাহর প্রশংসা করি আর মন্দ আমল দেখলে আল্লাহর দরবারে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। [জারকানী- ১/৯৭ মা.শা.]
● ইমাম সাখাভী রহ. মুসনাদুল হাদিস থেকে এবং ইমাম সুবকী রহ. ইবনে আব্দুল্লাহ মুজনী থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, হযরত নবী করিম (স.) এরশাদ করেছেন:
حياتى خير لكم تحدثوننى ونحدث لكم‘ فإذا أنا مت كانت وفاتى خيرا لكم تعرض على أعمالكم‘ فان رأيت خيرا حمدت الله وإن رأيت غير ذلك استغفرت الله لكم (القول البديع فى الصلاة على الحبيب الشفيع- شفاء السقام)
অর্থ: আমার হায়াত তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক, তোমরা আমার সাথে আলোচনা কর এবং আমিও তোমাদের সাথে আলোচনা করি। আমি যদি ইন্তেকাল করি তবে আমার ওফাতও তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক, আমার সামনে তোমাদের আমলসমূহ পেশ করা হয়। আমি মঙ্গল দেখলে আল্লাহর প্রশংসা করি, আর অন্য কিছু দেখলে তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি। [আল-কাওলুল বাদী-১৫৫, শিফাউস সিকাম-৩৮]
● ইমামে আহলে সুন্নাত হযরত জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহ. রওজা শরীফে হযরত নবী করিম স. এর কর্ম ও দায়িত্ব সম্পর্কে বলেন,
النظر فى أعمال أمته ، والإستغفار لهم من السيئات، والدعاء بكشف البلاء عنهم، والتردد فى أقطار الأرض لحلول البركة فيها، وحضور جنازة من مات من صالح أمته، فإن هذه الأمور من جملة أشغاله فى البرزخ كما وردت بذلك الأحاديث والأثار(إنباء الأذكاء)
ক. উম্মাতের আমলের প্রতি নজর রাখা। খ. উম্মাতের পাপ মার্জনার জন্য ইস্তেগফার করা।
গ. উম্মাতের জন্য বিপদ আপদ থেকে মুক্তির দোয়া করা। ঘ. দুনিয়ার দিক দিগন্তে আসা যাওয়া করা যাতে সেখানে বরকত নাজিল হয়। ঙ. তার নেককার উম্মাতের জানাযায় হাজির হওয়া। বিভিন্ন হাদিস এবং আছার মুতাবেক এগুলো হচ্ছে আলমে বরযখে হুজুরে পাক (স.) এর কয়েকটি কাজ। (ইম্বাউল আজকিয়া-২৪)
২. আল্লাহ পাকের বাণী:
ومَنْ يَخْرُجْ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ
অর্থ: যে কেউ আপন ঘর থেকে বের হয় আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশ্যে.....(সূরা-নিসা-১০০)
উল্লেখিত আয়াতের ওয়াজহে ইস্তিদলাল হল রাসূল (স.) এর খেদমতে তাঁর ইন্তিকালের পরে আসা, তাঁর ইন্তিকালের পূর্বে আসার মতই, যদিও সাহাবিয়াত প্রমাণিত না হয়। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অভিমত। তাছাড়া আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আক্বীদা হচ্ছে আম্বিয়ায়ে কেরাম তাদের কবরে জিন্দা আছেন, তারা কবরে আজান ও ইকামাতের সাথে নামাজ আদায় করেন, তাদেরকে তথায় খাবার দেওয়া হয়।
إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا - لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
অর্থ: আমি আপনাকে অবশ্যই (মানুষের কাছে) সত্যের সাক্ষী, (জান্নাতের) সুসংবাদ বহনকারী এবং (জাহান্নামের) সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, যাতে তোমরা (একমাত্র) আল্লাহর উপর এবং তার নবীর উপর (সর্বতোভাবে) ঈমান আনো, (দীন প্রতিষ্ঠার কাজে) তাকে সাহায্য করো, (আল্লাহর নবী হিসেবে) তাঁকে সম্মান করো; (সর্বোপরি) সকাল ও সন্ধ্যা আল্লাহর মাহাতœ্য ঘোষণা করো। [সূরা আল-ফাতহ-৮,৯]
এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূল (স.) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্য মুমিন বান্দাদেরকে আদেশ করেছেন। আল্লাহর রাসূলের ওফাত শরীফের পর বর্তমানে তাঁর রওজা মুবারকের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁকে সালাম জানানো হচ্ছে অন্যতম তাজীম বা সম্মান প্রদর্শন।
● উপরোক্ত কথার সমর্থনে আবু আব্দিল্লাহ হুসাইন ইবনে হাসান হিলমী রহ. তাঁর আলমিনহাজ নামক কিতাবে বলেন,
فأما اليوم فمن تعظيمه زيارته (شفاء السقام فى زيارة خير الأنام)
অর্থ: বর্তমানে জিয়ারত হচ্ছে হযরত নবী করিম (স.) এর প্রতি অন্যতম তা’জীম। (শিফাউস সিকাম-৫৩)
ইমামে আহলে সুন্নাত শাইখুল ইসলাম ইমাম সুবকী রহ. বলেন:
زيارة القبر تعظيم، وتعظيم النبى صلى الله عليه وسلم واجب (شفاء السقام فى زيارة خير الأنام)
অর্থ: কবর জিয়ারত হচ্ছে তাজীম, আর নবী পাক (স.) এর প্রতি তাজীম ওয়াজিব। (শিফাউস সিকাম-৬৯)
ইমাম নাবহানী রহ. বলেন:
والسفر لزيارته صلى الله عليه وسلم فيه تعظيمه وتوقيره صلى الله عليه وسلم الذى نحن مكلفون به شرعا من جانب الله تعالى (شواهد الحق)
অর্থ: আল্লাহর রাসূল (স.) এর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাতে রয়েছে তাঁর প্রতি যথাযথ তাজীম বা সম্মান প্রদর্শন, আল্লাহর পক্ষ থেকে শরীয়তে আমরা যে বিষয়ে আদিষ্ট। (শাওয়াহিদুল হাক্ব-১৪৪)
(চলবে...)
লেখক:
সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র হিযবুল্লাহ

===================================================

লেখক: শায়খ আব্দুল আযীয ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন বায রাহিমাহুল্লাহ | অনুবাদ: শিহাবউদ্দিন হোসাইন

প্রশ্ন ১

কবর দৃষ্টিগোচর হলে বা কবরের দেয়াল অতিক্রম করলে কবরবাসীদেরকে সালাম করতে হবে কি?

উত্তর:

পথিক হলেও সালাম দেয়া উত্তম, এরূপ ব্যক্তির যিয়ারতের নিয়ত করে নেয়া উত্তম।

প্রশ্ন ২

যিয়ারতকারীর নির্দিষ্ট কবরের পাশে গিয়ে যিয়ারত করার হুকুম কি?

উত্তর:

গোরস্থানের প্রথম কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দো‘আ করাই যথেষ্ট, তবুও যদি নির্দিষ্ট কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দো‘আ ও সালাম করতে চায় করতে পারবে।

প্রশ্ন ৩

মৃত ব্যক্তি যিয়ারতকারীকে চিনতে পারে?

উত্তর:

কতিপয় হাদিসে এসেছে যে, যিয়ারতকারী যদি এমন হয় যে দুনিয়াতে তার সাথে পরিচয় ছিল তাহলে আল্লাহ যিয়ারতকারীর সালামের উত্তর দেয়ার জন্য তার রুহ ফিরিয়ে দেন । কিন্তু এ হাদিসের সনদে কিছু ত্রুটি রয়েছে। অবশ্য আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন।

প্রশ্ন ৪

উম্মে আতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত,“আমাদেরকে জানাযার সাথে চলতে নিষেধ করা হয়েছে, কিন্তু কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি”। হাদিসটির ব্যাখ্যা কি?

উত্তর:

আবস্থা দৃষ্টে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, বর্ণনাকারীর  মতে নিষেধটি কঠোর নয়, তবে আমাদের জেনে রাখা উচিত যে প্রত্যেক নিষেধ হারাম। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি যার থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করি, তোমরা তা পরিত্যাগ কর, আর আমি তোমাদেরকে যার আদেশ দেই, তোমরা তা সাধ্যানুসারে পালন কর”। [বুখারি ৩৯১]
এ হাদিস দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, মহিলাদের জানাযার সাথে কবর পর্যন্ত যাওয়া হারাম, তবে পুরুষদের ন্যায় তারা জানাযায় অংশ গ্রহণ করতে পারবে।
অনলাইনে নিরাপদ থাকতে ব্যাবহার করুন "Brave ব্রাউজার"। ডাউনলোড করতে এইখানে ক্লিক করুন

প্রশ্ন ৫

একটি হাদিসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে কবরের উপর জুতা নিয়ে হাটতে দেখে বললেন, হে জুতা ওয়ালা! তোমার জুতাদ্বয় খুলে নাও। এ হাদিসের উপর কি আমল করা যাবে? জুতা নিয়ে কেউ কবরের উপর হাটা-চলা করতে চাইলে তাকে কি নিষেধ করা হবে?

উত্তর:

হ্যাঁ, বর্ণিত হাদিসের উপর আমল করা যাবে, সুতরাং কোন অবস্থাতেই কবরের উপর জুতা নিয়ে হাটা-চলা করা জায়েয হবে না। হ্যাঁ, বিশেষ প্রয়োজনে যেমন কবরের উপর যদি কাঁটাদার গাছ থাকে বা মাটি অত্যন্ত গরম হয়, যে কারণে খালিপায়ে চলা অসম্ভব হয়, এমতাবস্থায় জুতা নিয়ে কবরের উপর হাঁটা যেতে পারে, এরূপ কোন বিশেষ প্রয়োজন না হলে তাকে অবশ্যই নিষেধ করা হবে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। তাকে শরি‘আতের হুকুম জানিয়ে দেবে।

প্রশ্ন ৬

গোরস্থানে প্রবেশকালে জুতা খুলার বিধান কি?

উত্তর:

কবরের উপর দিয়ে হেঁটে গেলে জুতা অবশ্যই খুলতে হবে, আর যদি কবরের উপর দিয়ে না হেটে গোরস্থানের প্রথম কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়, তা হলে জুতা খুলতে হবে না।

প্রশ্ন ৭

জনৈক মহিলাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরের পাশে ক্রন্দরত আবস্থায় দেখে বলেছিলেন,“আল্লাহকে ভয়কর ও ধৈর্যধারণ কর”। (বুখারি ও মুসলিম) এ হাদিস কি মহিলাদের কবর যিয়ারত বৈধ প্রমাণ করে না?

উত্তর:

সম্ভবত উল্লিখিত ঘটনাটি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য কবর যিয়ারত বৈধ থাকাকালিন সময়ের ঘটনা। আর মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষিদ্ধকারী হাদিস এ হাদিসের জন্যে নাসেখ বা এ হাদিসকে রহিতকারী।

প্রশ্ন ৮

কিছু কিছু শহরে অনেক মানুষ কববের উপর ঘর তৈরি করে সেখানে বসবাস করে। এটা কতটুকু শরিয়ত সম্মত?

উত্তর:

এটা নেহায়েত গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ, এ কাজের দ্বারা কবরবাসীদের অপমান করা হয়, তাই তাদেরকে এ কাজ হতে বারণ করা এবং শরি‘আতের বিধান সম্পর্কে অবহিত করা জরুরী। তারা এসব কবরের উপর যেসব সালাত আদায় করেছে, তা সব বাতিল ও বৃথা। এ অবস্থায় কবরের উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বলেছেন:“কবরের দিকে মুখ করে নামাজ পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না”। [মুসলিম ২১২২]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লম আরো বলেছেন: “আল্লাহ ইয়াহূদী ও নাসারাদের উপর লানত করেছেন, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদে পরিণত করেছে”। [মুসলিম ১০৭৯]
এ হাদিস সম্পর্কে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বাণী দ্বারা তাদেরকে তাদের গর্হিত কাজের জন্য সতর্ক করেছেন।

প্রশ্ন ৯

জনৈক ব্যক্তির কবরের উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হল, আর ঐ ব্রিজের উপর দিয়ে একটি যাত্রিবাহী গাড়ি যাওয়ার সময় বিরত দিল, যাত্রীদের মাঝে একজন মহিলাও রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে গাড়িটির যাত্রা বিরতির কারণে সে মহিলা কি কবর যিয়ারতকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে, সে মহিলা কি কবরবাসীদের সালাম করবে?

উত্তর:

না, মহিলা কবর যিয়ারতকারীদের অন্তর্ভূক্ত হবে না, ব্রিজ কেন কবরের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেও কবর যিয়ারতকারী বলে গণ্য হবে না। মহিলা যদি পথচারী হয়, তবুও তার পক্ষে কবরবাসীদের সালাম না করা উত্তম।

প্রশ্ন ১০

একটি হাদিস প্রচলিত আছে, “যখন তোমরা কোন কাফেরের কবরের পাশ দিয়ে যাও, তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দাও”। এ হাদিসটি কতটুকু শুদ্ধ?

উত্তর:

আমার জানা মতে এ হাদিসের বিশুদ্ধ কোন সনদ নেই।

প্রশ্ন ১১

মহিলারা কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কবরবাসীদের সালাম দেবে কি?

উত্তর:

আমার জানা মতে কবরবাসীদেরকে মহিলাদের সালাম না-করা উচিৎ। কারণ সালাম বিনিময় কবর যিয়ারতের রাস্তা উম্মুক্ত করবে, দ্বিতীয়ত সালাম দেয়া কবর জিয়ারতের অন্তর্ভুক্ত। তাই মহিলাদের উপর ওয়াজি হচ্ছে সালাম বর্জন করা, তারা যিয়ারত ব্যতীত মৃতদের জন্য শুধু দো‘আ করবে।

প্রশ্ন ১২

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের নিয়ম কি?

উত্তর:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের সুন্নত তরিকা এই যে, কবরের দিকে মুখ করে সালাম দেবে, অতঃপর তাঁর দু’সাথী আবু-বকর ও ওমরকে সালাম দেবে, অতঃপর ইচ্ছা করলে অন্য জায়গায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে নিজের জন্য দো‘আ করবে।

প্রশ্ন ১৩

মহিলাগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করতে পারবে কি?

উত্তর:

মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত করা নিষেধ, যেসব হাদিসে মহিলাদের কবর যিয়ারত থেকে বারণ করা হয়েছে, সেখানে রাসূলের কবরও অন্তর্ভুক্ত, তাই তাদের জন্য জরুরী হচ্ছে রাসূলের কবর যিয়ারত না-করা। মহিলাদের জন্য রাসূলের কবর যিয়ারত বৈধ না অবৈধ এ সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম দু’ভাগে বিভক্ত, তাই সুন্নতের অনুসরণ ও মতানৈক্য থেকে বাঁচার জন্য মহিলাদের জন্য যে কোন কবর যিয়ারত ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়। তা ছাড়া মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ সংক্রান্ত হাদিসে রাসূলের কবরকে বাদ দেয়া হয়নি। এমতাবস্থায় হাদিসের ব্যাপকতার উপর আমল করাই ওয়াজিব, যতক্ষণ না এর বিপরীত কোন সহিহ হাদিস পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ১৪

মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারত করতে পারবে কি?

উত্তর:

মসজিদে প্রবেশকালে রাসূলকে শুধু সালাম করবে, শুধু কবর জিয়াতর উদ্দেশ্যে যাবে না, তবে মাঝে-সাজে যেতে পারে।

প্রশ্ন ১৫

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা কি জায়েয?

উত্তর:

মসজিদে নববি জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা জায়েয। তাই মসজিদে নববির যিয়ারত মূল উদ্দেশ্য করে সফর করবে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয় হিসেবে নবীর কবর যিয়ারত করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তিন মসজিদ ব্যতীত অন্য কোথাও সফর করা যাবে নাঃ মাসজিদে হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদে আকসা”। [বুখারি ২৮১]

প্রশ্ন ১৬

কবর জিয়ারতের জন্য জুমার দিনকে নির্দিষ্ট করা কেমন?

উত্তর:

এর কোন ভিত্তি নেই। যিয়ারতকারী সুযোগ বুঝে যখন ইচ্ছা যিয়ারত করবে। জিয়ারতের জন্য কোন দিন বা রাতকে নির্ধারিত করা বিদ‘আত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“আমাদের এ দ্বীনে যে কেউ নতুন কিছু আবিষ্কার করল, তা পরিত্যক্ত”। [বুখারি ৮৬১]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন: “যে এমন কোন কাজ করল যা আমাদের আদর্শ নয়, তা পরিত্যক্ত”। [হাদিসটি ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সূত্রে বর্ণনা করেছেন]

প্রশ্ন ১৭

মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত নিষেধ হওয়া সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে কিভাবে কবর জিয়ারতের দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন?

উত্তর:

কবর যিয়ারত প্রথমে সবার জন্য নিষেধ ছিল, অতঃপর সবার জন্য জায়েয হয়, অতঃপর শুধু মহিলাদের জন্য নিষেধ হয়। এ ব্যাখ্যার পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আহাকে কবর জিয়ারতের আদব তখন শিক্ষা দিয়েছিলেন যখন তা সবার জন্য জায়েয ছিল।

প্রশ্ন ১৮

কবরের পাশে দো‘আ কি দু’হাত তুলে করতে হবে?

উত্তর:

কবরের পাশে দু’হাত তুলে দো‘আ করা জায়েয আছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করে কবরবাসীদের জন্য দু’হাত তুলে দো‘আ করেছেন। (মুসলিম)

প্রশ্ন ১৯

কবরের পাশে সম্মিলিত দোয়ার কি হুকুম?

উত্তর:

কাউকে দো‘আ করতে দেখে শ্রোতাদের আমিন আমিন বলায় কোন বাঁধা নেই। তবে পরিকল্পিতভাবে সম্মিলিত দো‘আ করা যাবে না। অকস্মাৎ কাউকে দো‘আ করতে দেখে তার সাথে সাথে আমিন আমিন বলা যাবে, কারণ এটাকে সম্মিলিত দো‘আ বলা হয় না।

প্রশ্ন ২০

গোরস্থানের প্রথমাংশে সালাম দিলে সমস্ত কবরবাসীর জন্য সালাম বিবেচ্য হবে?

উত্তর:

এ সালামই যথেষ্ট, সে ইনশাল্লাহ জিয়ারতের সাওয়াব পেয়ে যাবে। যদি গোরস্থান অনেক বড় হয় আর সে ঘুরে ঘুরে সব দিক দিয়ে সালাম বিনিময় করতে চায় তাও করতে পারবে।

প্রশ্ন ২১

অমুসলিমের কবর যিয়ারত করা কি জায়েয?

উত্তর:

শিক্ষা গ্রহণের জন্য হলে অমুসলিমের কবর যিয়ারত করা জায়েয। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করে তাঁর জন্যে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি চেয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁকে এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়নি। শুধু জিয়ারতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

প্রশ্ন ২২

দু’ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করার কোন ভিত্তি আছে কি?

উত্তর:

আমার জানামতে এর কোন ভিত্তি নেই, যিয়ারতকারীর যখন সুযোগ হবে তখন সে যিয়ারত করবে, এটাই সুন্নত।

প্রশ্ন ২৩

মৃতের জন্য দো‘আ করার সময় কবর মুখী হয়ে দো‘আ করা কি নিষেধ?

উত্তর:

না, নিষেধ নয়, মৃতের জন্য দো‘আ করার সময় কেবলামুখী ও কবরমুখী উভয় বৈধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তির দাফন শেষে বললেন, “তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রর্থনা কর এবং তার ইস্তেকামাতের দো‘আ কর, কেননা তাকে এখন প্রশ্ন করা হবে”। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে, কিবলামুখী হয়ে দো‘আ কর। সুতরাং কিবলামুখী হয়ে দো‘আ করুক আর কবরমুখী হয়ে দো‘আ করুক উভয়ই জায়েয। রাসূলের সাহাবিগণ কবরের চতুর্পাশে দাঁড়িয়ে মৃতের জন্য দো‘আ করতেন।

প্রশ্ন ২৪

দু’হাত তুলে মৃতের জন্য দো‘আ করা কি জায়েয?

উত্তর:

কিছু কিছু হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কবর যিয়ারত করে দো‘আ করতেন তখন দু’হাত তুলেই দো‘আ করতেন। যেমন ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারত করে তাদের জন্য দো‘আ করার সময় দু’হাত তুলেছেন।

প্রশ্ন ২৫

আমাদের এখানে কিছু সৎকর্মী যুবক বাস করে, তারা নিজেদের সাথে কতক গাফেল লোকদেরকে কবর জিয়ারতের জন্য নিয়ে যেতে চায়, হয়ত তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় সঞ্চার হবে। এ ব্যাপারে আপনাদের মত কি?

উত্তর:

এটা একটি মহৎ কাজ, এতে কোন বাঁধা নেই। এটা ভাল কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

প্রশ্ন ২৬

কবরের উপর কোন চিহ্ন স্থাপন করার হুকুম কি?

উত্তর:

লিখা বা নাম্বারিং করা ব্যতীত শুধু পরিচয়ের জন্য কবরের উপর চিহ্ন স্থাপন করা যেতে পারে। বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর কিছু লিখতে নিষেধ করেছেন, আর নাম্বারিং করাও লিখার অন্তর্ভূক্ত। তবে কবরস্থ লোকের পরিচয়ের জন্য শুধু পাথর ইত্যাদি রাখা যাবে, কালো বা হলুদ রঙের পাথরও রাখা যাবে। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবি উসমান ইবন মাজউন রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবরের উপর চিহ্ন স্থাপন করেছিলেন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...