প্রশ্ন: ৩৩৮ : মৃত ব্যাক্তির নামে আকীকা।

বিষয়ঃ মৃত ব্যক্তির আকিকা
প্রশ্নঃ
আমার চাচা কিছুদিন পূর্বে মারা গেছেন।(আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাত দান করুন) তিনি জীবিত থাকা অবস্থায় নিয়ত করেছিলেন আগত কুরবানীতে কুরবানীর সাথে তার আকিকার কাজটিও সেরে নিবেন। কিন্তু প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে পরলোক গমন করায় তা আর হয়নি। এখন তার পরিবারের সদস্যরা চাচ্ছেন মৃত চাচার ইচ্ছানুযায়ী আগত কুরবানীতে তার নামে আকিকা করবেন।
প্রশ্ন হল,শরীয়তের দৃষ্টিতে মৃত ব্যক্তির আকিকা করা যাবে কি? অথবা তার ইচ্ছানুযায়ী আকিকা করলে কোন গোনাহ হবে কি? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।জাঝাকাল্লাহ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আকীকার হাকীকত না বুঝার কারণে আমাদের সমাজে কিছু ভুল রেওয়াজের প্রচলন রয়েছে।
আকীকাহ কোন ফরজ বা ওয়াজিব আমল নয়। বরং এটি মুস্তাহাব। সহীহ পদ্ধতিতে করলে সওয়াব আছে, না করলে কোন গোনাহ নেই।
আর আকীকাহ শুধু জীবিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে। কোন মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আকীকা করার কোন প্রমাণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয়। তা’ই তা না করাই শ্রেয়।
আকীকাহ করা যেমন মুস্তাহাব। সেই মুস্তাহাব আদায়েরও কিছু মুস্তাহাব পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-
আকীকাহ করতে হয়, সন্তান জন্মগ্রহণ করার পর সপ্তম দিনে।
عَنْ أُمِّ كُرْزٍ الْكَعْبِيَّةِ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ « عَنِ الْغُلاَمِ شَاتَانِ مُكَافِئَتَانِ وَعَنِ الْجَارِيَةِ شَاةٌ
উম্মে কুরযিল কা’বিয়্যাহ রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দু’টি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী [আক্বিকা দিবে]। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৩৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৫১৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৯৬৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৩১৩, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৬৪৮, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯০}
সেই সপ্তম দিনের দিন, সন্তানের মাথার চুল মুণ্ডন করে তার সমমূল্যের টাকা দান করতে হয়।
عن سمرة بن جندب أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- قال « كل غلام رهينة بعقيقته تذبح عنه يوم سابعه ويحلق ويسمى
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-প্রত্যেক বালকের পক্ষ থেকে আক্বিকা হল বন্ধক স্বরূপ, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করবে, এবং তার মাথা মুন্ডাবে, এবং তার নাম রাখবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৪৭, সুনানে দারামী, হাদীস নং-১৯৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০০৮৩}
عن جعفر بن محمد عن أبيه أنه قالوزنت فاطمة بنت رسول الله صلى الله عليه وسلم شعر حسن وحسين وزينب وأم كلثوم فتصدقت بزنة ذلك فضة
হযরত যাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন-হযরত ফাতেমা বিনতে রাসূল সাঃ হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের চুল ওজন করে সে পরিমাণ রোপা সদকা করে দিয়েছেন। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৮২৬২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৭৯}
ছেলের জন্য দু’টি বকরী, আর কন্যার জন্য একটি বকরী। বা গরু, উট ও মহিষে হলে ছেলের জন্য দু’টি শরীক ও মেয়ের জন্য একটি শরীকানা থাকা।
সপ্তম দিনে আকীকাহ না করতে পারলে চৌদ্দতম দিনে করবে। না পারলে একুশতম দিন করবে। যদি তা’ও না পারা যায়, তাহলে সন্তান বালেগ হবার আগ পর্যন্ত যেকোন দিন করতে পারে। তবে এক্ষেত্রেও জন্ম নেবার পর থেকে সপ্তম দিন গণনা করে সপ্তম দিনের দিন দেয়াটাই উত্তম বলে ফুক্বাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন।
عن أم كرز قالت قالت امرأة من أهل عبد الرحمن بن أبي بكر إن ولدت امرأة عبد الرحمن غلاما نحرنا عنه جزورا فقالت عائشة : لا بل السنة عن الغلام شاتان مكافئتان وعن الجارية شاة يطبخ جدولا ولا يكسر لها عظم فيأكل ويطعم ويتصدق يفعل ذلك في اليوم السابع فإن لم يفعل ففي أربع عشرة فإن لم يفعل ففي إحدى وعشرين
হযরত উম্মে কুরজ বলেন, আব্দুর রহমান বিন আবী বকরের পরিবারের এক মহিলা বলেন, আব্দুর রহমানের স্ত্রী ছেলে সন্তান প্রসব করে, তখন আমরা তার পক্ষ থেকে একটি ভেড়া জবাই করেছি। তখন হযরত আয়শা রাঃ বললেন-এমনটি, বরং পদ্ধতি হল-ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি সমান পর্যায়ের বকরী আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী দিবে [আক্বিকা]।
তারপর এটিকে রান্না করবে, তবে এর হাড্ডিকে ভাঙ্গবে না। তারপর তা নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, এবং দান করবে।
একাজগুলো করবে সপ্তম দিন, সেদিন সক্ষম না হলে চৌদ্দতম দিন, সেদিনও সক্ষম না হলে একুশতম দিন করবে আক্বিকা। [মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯২}
বালেগ হবার পর আকীকার গুরুত্ব বাকি থাকে না। তবু যদি কেউ দিয়ে থাকে, তাহলে আদায় হয়ে যাবে।
فَنَقَلَ الرَّافِعِيُّ أَنَّهُ يَدْخُلُ وَقْتُهَا بِالْوِلَادَةِ قَالَ وَذِكْرُ السَّابِعِ فِي الْخَبَرِ بِمَعْنَى أَنْ لَا تُؤَخَّرَ عَنْهُ اخْتِيَارًا ثُمَّ قَالَ وَالِاخْتِيَارُ أَنْ لَا تُؤَخَّرَ عَنِ الْبُلُوغِ فَإِنْ أُخِّرَتْ عَنِ الْبُلُوغِ سَقَطَتْ عَمَّنْ كَانَ يُرِيدُ أَنْ يَعُقَّ عَنْهُ لَكِنْ إِنْ أَرَادَ أَنْ يعق عَن نَفسه فعل  (فتح البارى لابن حجر، كتاب العقيقة- قَوْلُهُ بَابُ إِمَاطَةِ الْأَذَى عَنِ الصَّبِيِّ-9/872)
সন্তান মৃত্যুবরণ করার পর তার আকীকাহ দেবার কোন প্রমাণ হাদীসের কোথাও বর্ণিত হয়নি। তা’ই তা থেকে বিরত থাকা উচিত। হ্যাঁ, যদি তার ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দিয়ে থাকে, তাহলে এর সুযোগ রয়েছে বলে অনুমেয় হয়।
কুরবানীর সাথেও আলাদা অংশ নির্দিষ্ট করে আকীকাহ দেয়া যায়। তবে উত্তম নয়। উত্তম হল সপ্তম দিনের দিন আকীকাহ করা।
উপরোক্ত বিধানাবলী উল্লেখ করে দেয়া হল, যাতে করে আকীকাহ সংশ্লিষ্ট বিধানাবলী পরিস্কার হয়ে যায়।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে, আপনার মৃত চাচার জন্য আকীকাহ করার কোন প্রয়োজন নেই।
যদি করেও তাহলে সতর্কতা স্বরূপ আলাদা পশুতে করাটাই উচিত বলে মুফতীয়ানে কেরাম মতামত ব্যক্ত করেছেন। কুরবানীর পশুতে এক সাথে মিলিয়ে করবে না। [ফাতাওয়া রহিমীয়া-১০/৬২]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...