প্রশ্ন: ৪৬: রাসূলুল্লাহ (সা:) কি ইলমে গায়েবের অধিকারী ? তিনি কি হাযির নাযির ?

রাসুল সা: ইলমে গায়েবের মালিক নন, এবং তিনি  হাযির নাযিরও নন । প্রমাণ স্বরূপ নিচের আয়াত গুলো মনযোগ সহকারে  পড়ুন, মহান আল্লাহ নিজেই এ বিষয়গুলো পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন : 

وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا [٤:١١٣

(হে নবী )   আল্লাহ তোমার ওপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন, এমন সব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিল না এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বেশী। (সুরা নিসা : ১১৩)



أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ [٩٣:٦]
(৯৩-সুরা দুহা:৬.) (হে নবী )  তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে পাননি? তারপর তোমাকে আশ্রয় দেননি?৬

وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ [٩٣:٧]
(৯৩-সুরা দুহা:৭.) (হে নবী )  তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া অবস্থায় পান, তারপর তিনিই পথ দেখান।৭
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰ [٩٣:٨]
(৯৩-সুরা দুহা:৮.)(হে নবী )   তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পান, তারপর তোমাকে ধনী করেন।৮
ذَٰلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۖ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ [١٢:١٠٢]
(১২-সুরা ইউসুফ:১০২.) হে মুহাম্মাদ! এ কাহিনী অদৃশ্যলোকের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি। নয়তো, তুমি তখন উপস্থিত ছিলে না যখন ইউসুফের ভাইয়েরা একজোট হয়ে যড়যন্ত্র করেছিল। 
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا إِلَىٰ مُوسَى الْأَمْرَ وَمَا كُنتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ [٢٨:٤٤]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৪.) (হে মুহাম্মাদ!) তুমি সে সময় পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না।৬০ যখন আমি মূসাকে এ শরীয়াত দান করেছিলাম এবং তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না।৬১ 
وَلَٰكِنَّا أَنشَأْنَا قُرُونًا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ الْعُمُرُ ۚ وَمَا كُنتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا وَلَٰكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ [٢٨:٤٥]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৫.) বরং এরপর (তোমার যুগ পর্যন্ত) আমি বহু প্রজন্মের উদ্ভব ঘটিয়েছি এবং তাদের ওপর অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।৬২ তুমি মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও উপস্থিত ছিলে না, যাতে তাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে পারতে৬৩ কিন্তু আমি সে সময়কার এসব তথ্য জানাচ্ছি।

وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِن رَّحْمَةً مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ [٢٨:٤٦]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৬.) আর তুমি তূর পাহাড়ের পাশেও তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম। কিন্তু এটা তোমার রবের অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে)৬৪ যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি,৬৫ হয়তো তারা সচেতন হয়ে যাবে।
====================================
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা সমূহ থেকে পরিস্কার জানা যাচ্ছে যে, রাসুল সা: আলেমুল গায়েব ছিলেন না, বরং, তাঁর নবুওয়াতী প্রয়োজনে যেখানে যেটুকু প্রয়োজন আল্লাহ তাকে অহীর মাধ্যমে অদৃশ্যের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন, অথবা মিরাজের মাধ্যমে, বা জাগ্রত অবস্থায় বা ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য  স্বপ্নের মাধ্যমে অদৃশ্য  জগতের বিভিন্ন বিষয় দেখিয়ে দিয়েছেন।  ব্যস এতটুকুই।  তবে তার অবস্থা সাধারণ দার্শনিকের ন্যায়  শুধুমাত্র কল্পনা বা চিন্তার যৌক্তিকতা পর্যন্ত  সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার অবস্থা হচ্ছে চাক্ষুষ বর্ণনাকারী।  তিনি যা বর্ণনা করেছেন তা তাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং, তিনি হচ্ছেন চাক্ষুষ স্বাক্ষী তথা  চাক্ষুষ বর্ণনাকারী।
অপরদিকে, আসলে  আলেমুল গায়েব  একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন  : 
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ [٥٩:٢٢]
(৫৯-সুরা হাশর:২২.) আল্লাহই সেই ৩২ মহান সত্তা যিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। ৩৩ অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন। ৩৪ তিনিই রহমান ও রহীম।৩৫
(1)عَالِمُالْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا ﴿الجن: ٢٦﴾
(৭২-সুরা জ্বিন:২৬.) তিনি গায়েবী বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তাঁর গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না।২৬ [[টিকা:২৬) অর্থাৎ গায়েবী বিষয়ের সবটুকু জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। গায়েবী বিষয়ের এ পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান তিনি কাউকেই দেন না।]] (۷۲: ۲۶)



এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হচ্ছেন একমাত্র হাজির নাযির : 


وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ [٥٠:١٦]
 
(৫০-ক্বাফ:১৬.) আমি১৯ মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী কাছে আছি।২০
 
টিকা:২০) অর্থাৎ আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান ভিতর ও বাহির থেকে এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টিত করে আছে যে, আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান তার যতটা নিকটে ততটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও নয়। তার কথা শোনার জন্য আমাকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আমি সরাসরি জানি। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় পাকড়াও করতে হয় তখনও আমাকে কোথাও থেকে এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। সে যেখানেই থাকুক, সর্বদা আমার আয়ত্বাধীনেই আছে যখন ইচ্ছা আমি তাকে বন্দী করবো। 
 

প্রশ্ন: ৪৫: ওযু সংক্রান্ত আয়াত কোন সূরার কত নাম্বার আয়াতে আছে? ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি ?

(1) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ ﴿المائدة: ٦﴾
(৫-সুরা মায়েদা:৬.) হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য তৈরী হও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো, মাথার ওপর হাত বুলাও এবং পা দু’টি গোড়ালী পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো।২৪ যদি তোমরা ‘জানাবাত’ অবস্থায় থাকো, তাহলে গোসল করে পাক সাফ হয়ে যাও। ২৫ যদি তোমরা রোগগ্রস্ত হও বা সফরে থাকো অথবা তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মলমূত্র ত্যাগ করে আসে বা তোমরা নারীদেরকে স্পর্শ করে থাকো এবং পানি না পাও, তাহলে পাক-পবিত্র মাটি দিয়ে কাজ সেরে নাও। তার ওপর হাত রেখে নিজের চেহারা ও হাতের ওপর মসেহ করে নাও। ২৬ আল্লাহ তোমাদের জন্য জীবনকে সংকীর্ণ করে দিতে চান না কিন্তু তিনি চান তোমাদেরকে পাক-পবিত্র করতে এবং তাঁর নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করে দিতে,২৭ হয়তো তোমরা শোকর গুজার হবে 
[[টিকা:২৪) নবী ﷺ এ হুকুমটির যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা থেকে জানা যায়, কুল্লি করা ও নাক সাফ করা ও মুখ ধোয়ার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া মুখমণ্ডল ধোয়ার কাজটি কখনই পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর কান যেহেতু মাথার একটি অংশ তাই মাথা মসেহ করার মধ্যে কানের ভেতরের ও বাইরের উভয় অংশও শামিল হয়ে যায়। তাছাড়া অযু শুরু করার আগে দু’হাত ধুয়ে নেয়া উচিত। কারণ যে হাত দিয়ে অযু করা হচ্ছে সে হাতেরই তো আগে পাক-পবিত্র হবার প্রয়োজন রয়েছে।]]
 [[টিকা:২৫) স্ত্রী সহবাসের কারণে ‌‘জানাবাত ’ হোক বা স্বপ্নে বীর্য স্খলনের কারণে হোক উভয় অবস্থায়ই গোসল ওয়াজিব। এ অবস্থায় গোসল ছাড়া নামায পড়া বা কুরআন স্পর্শ করা জায়েয নয়। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আন্‌ নিসার ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ টীকা দেখুন)]]
 [[টিকা:২৬) ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা আন নিসার ৬৯ ও ৭০ টীকা।]] 
[[টিকা:২৭) আত্মার পবিত্রতা যেমন একটি নিয়ামত ঠিক তেমনি শরীরের পবিত্রতাও একটি নিয়ামত। আর মানুষের ওপর আল্লাহর নিয়ামত তখনই সম্পূর্ণ হতে বা পূর্ণতা লাভ করতে পারবে যখন সে আত্মা ও শরীর উভয়ের তাহারাত ও পাক-পবিত্রতা অর্জনের জন্য পূর্ণ হেদায়াত লাভ করতে সক্ষম হবে।]] (۵: ۶)

 ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি ? 

ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি? ইমামদের মতামতসহ জানতে চাই!


অসংখ্য ধন্যবাদ! যিনি এই প্রশ্নটির উত্তর জানতে চেয়েছেন। আমি একজন অধ্যয়নরত তালিবুল ইলম। ইসলমী শরীয়ত বা বিধানের কোন সিদ্ধান্ত জানানোর মত শক্তি এখনো আমার হয়ে উঠেনি। তাই এখানে কেবল আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু আপনি মাসআলাটি সবিস্তারে দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাননি তাই আমি সেদিকে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। হ্যা, ভবিষ্যতে কেউ সেভাবে জানতে চাইলে কোন প্রাজ্ঞ মুফতি সাহেবের সত্যয়নসহ আমরা তা পেশ করতে আন্তরিক থাকবো। ইনশাআল্লাহ।

প্রশ্ন: ওযুর ফরজ কয়টি ও কি কি? জানিয়ে বাধিত করবেন!

উত্তর: ওযুর ফরজ চারটি এবং সেগুলোকে নিম্নে এক এক করে উল্লেখ করা হলো_
১. সমস্ত মুখ ধৌত করা তথা কপালের চুলের গোড়া থেকে নিয়ে থুতনির নিচ পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে নিয়ে অপর কানের লতি পর্যন্ত ধৌত করা।
২. উভয় হাত কনুইসহ ধৌত করা।
৩. মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেহ করা।
৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা।
উপরে উল্লেখিত চারটি ফরয আইম্মায়ে আহনাফের নিকট এবং তাদের দলীল-প্রমাণ ও মূলনীতির উপর নির্ভর করে কোরআন ও হাদীস থেকে উপলব্ধ ও উৎসারিত। তবে অন্যান্য আইম্মায়ে কেরাম ওযুর ফরয কয়টি ও কি কি তা নিয়ে ভিন্নমত পোষন করেন।
* ইমাম শাফী রহ. বলেন:- ওযুর ফরয ছয়টি। উপরোক্ত ৬টি এবং
৫. নিয়ত করা।
৬. তারতীব রক্ষা করা।
* ইমাম মালেক রহ. বলেন:- ওযুর ফরয ৭টি। উপরের প্রথমোক্ত দুইটি এবং
৩. সমস্ত মাথা মাসেহ করা।
৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা।
৫. নিয়ত করা।
৬. তারতীব ঠিক রাখা।
৭. ধারাবাহিকভাবে ওযু করা তথা এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে অপর অঙ্গ ধৌত করা।
* ইমাম আহমদ রহ. বলেন:- ওযুর ফরয ৯টি। উপরের প্রথমোক্ত দুইটি এবং
৩. সমস্ত মাথা মাসেহ করা।
৪. উভয় পা টাখনুসহ ধৌত করা।
৫. নিয়ত করা।
৬. তারতীব ঠিক রাখা।
৭. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়া।
৮. কুলি করা।
৯. নাকে পানি দেয়া।
উল্লেখ্য: বাংলাদেশের অধিকাংশ জনসাধারণ হানাফী মাযহাব অনুসারে আমল করে থাকেন। তাই তাদের জন্য প্রথমোক্ত চারটি ফরযই প্রযোজ্য। তবে অন্যান্য ইমামগণ অতিরিক্ত যে বিষয়গুলোকে ফরয বলেছেন তা আইম্মায়ে আহনাফের নিকট সুন্নত। 
তাই যদি একজন হানাফী মাযহাবের অনুসারী প্রতিটি সুন্নতসহ ওযু আদায় করে তাহলে সকল ইমামগণের মতানুসারে তার ওযু সহীহ হয়ে যাবে। আর আমাদের সেভাবেই ওযু করা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।

প্রশ্ন: ৪৪: কোন আয়াতে বলা হয়েছে আখেরাতে অন্ধ ভাবে উঠানো হবে?

اعمي  বা অন্ধ শব্দ  সম্বলিত কিছু আয়াত  :

 
(2) وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ﴿فاطر: ١٩﴾
(৩৫-সুরা ফাতের:১৯.) অন্ধ ও চক্ষুষ্মান সমান নয়, (۳۵: ۱۹)
 
(3) وَمَن كَانَ فِي هَٰذِهِ أَعْمَىٰ فَهُوَ فِي الْآخِرَةِ أَعْمَىٰ وَأَضَلُّ سَبِيلًا ﴿الإسراء: ٧٢﴾
 
(১৭-সুরা বনী ইসরাঈল:৭২.) আর যে ব্যক্তি এ দুনিয়াতে অন্ধ হয়ে থাকে সে আখেরাতেও অন্ধ হয়েই থাকবে বরং পথ লাভ করার ব্যাপারে সে অন্ধের চেয়েও বেশী ব্যর্থ। (۱۷: ۷۲)
 
(4) قَالَ رَبِّ لِمَ حَشَرْتَنِي أَعْمَىٰ وَقَدْ كُنتُ بَصِيرًا ﴿طه: ١٢٥﴾
 
(২০-সুরা ত্বহা:১২৫.) -সে বলবে, “হে আমার রব! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখানে আমাকে অন্ধ করে উঠালে কেন?” (۲۰: ۱۲۵)
 
(5) أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَىٰ أَبْصَارَهُمْ ﴿محمد: ٢٣﴾
 
(৪৭-সুরা মুহাম্মাদ:২৩.) আল্লাহ তা’আলা এসব লোকের ওপর লা’নত করেছেন এবং তাদেরকে অন্ধ ও বধির বানিয়ে দিয়েছেন। (۴۷: ۲۳)
 
وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا وَنَحْشُرُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَعْمَىٰ ﴿طه: ١٢٤﴾
 
(২০-সুরা ত্বহা:১২৪.) আর যে ব্যক্তি আমার “যিকির” (উপদেশমালা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য হবে দুনিয়ায় সংকীর্ণ জীবন১০৫ এবং কিয়ামতের দিন আমি তাকে উঠাবো অন্ধ করে।”
 
(7) مَثَلُ الْفَرِيقَيْنِ كَالْأَعْمَىٰ وَالْأَصَمِّ وَالْبَصِيرِ وَالسَّمِيعِ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا أَفَلَا تَذَكَّرُونَ ﴿هود: ٢٤﴾
 
(১১-সুরা হুদ:২৪.) এ দল দু’টির উপমা হচ্ছেঃ যেমন একজন লোক অন্ধ ও বধির এবং অন্যজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন। এরা দু’জন কি সমান হতে পারে?২৮ তোমরা (এ উপমা থেকে) কি কোন শিক্ষা গ্রহণ করো না?
 

প্রশ্ন: ৪৩: বন্ধক দেয়া-নেয়ার ইসলামী রীতি

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম’ (সূরা মায়েদা : ৩)। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যা কিছু সে করে বা করতে হয় এবং সেসব করতে গিয়ে মানুষটি যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হয় সেসবের উত্তর ইসলামে রয়েছে। যেমন : জন্মের পর শিশুটির প্রতিপালন কিভাবে হবে, তার শিক্ষা-দীক্ষার কী হবে, তার বিয়েশাদি কিভাবে হবে, তার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী এদের কার প্রতি তার কী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে? তার জীবিকা অর্জনের পথ ও পদ্ধতি কী হবে, সমাজে ও রাষ্ট্রে তার কী ভূমিকা থাকতে হবে- এভাবে যত প্রশ্ন করা যায় এবং ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে সব কিছুরই গাইডলাইন দেয়া আছে ইসলামে। অর্থাৎ জীবনে চলার জন্য তাকে অন্য কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী হতে হবে না। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্রীয়জীবন পর্যন্ত এবং রাঁধুনি থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত- সব ক্ষেত্রে সবাইকে সর্বত্র ইসলামের গাইডলাইন মেনে চলতে হবে। এটাই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহর উলুহিয়াতের সোজাসুজি অর্থ। 
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ : ‘হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো’ (সূরা বাকারা : ২০৮)। কিছু মানব, কিছু মানব না, নামাজ আর রোজা মানব জাকাত আর হজ মানব না, ইসলামের পারিবারিক আইন মানব, ইসলামের অর্থনৈতিক বিধান মানব না, ইসলামের সামাজিক নিয়মনীতি মানব, কিন্তু রাজনৈতিক নির্দেশনা মানব নাÑ এ রকম বেছে বেছে মুসলমান হওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্য সুস্পষ্ট : ‘তবে কি তোমরা (মুসলমানরা) কুরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস করো এবং কিছু অংশকে অমান্য করো? তোমাদের যারা এ রকম করে তাদের একমাত্র প্রতিফল দুনিয়ার জীবনে হীনতা এবং কিয়ামতের দিন তারা ভয়ঙ্কর শাস্তির মুখোমুখি হবে’ (সূরা বাকারা: ৮৫)।
আমাদের সবার জানা থাকা উচিত, আমাদের কোন লেনদেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর বিধান মতো হচ্ছে, আর কোনটি নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, আর্থিক কাজ-কারবারের ক্ষেত্রে ইসলামের চূড়ান্ত রায় হচ্ছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন’ (সূরা বাকারা : ২৭৫)। কালাম-ই-পাকের চারটি সূরার বারটি আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা সুদকে সর্বাত্মকভাবে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং শেষে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হও।’ (এ নির্দেশের পরও) যদি তোমরা সুদ না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা করো তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। এতে তোমরা জুলুম করবে না এবং মজলুমও হবে না’ (সূরা বাকারা : ২৭৮ - ২৭৯)। আমরা জানি, মানুষের জীবনে যত রকমের অর্থনৈতিক মুয়ামালাত-মুয়াশারাত রয়েছে তা সবই ইসলামি অর্থব্যবস্থায় প্রধানত তিন ভাগে পরিচালিত হয়। এগুলো হলো (ক) বাই মেকানিজম (ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি), (খ) ইজারা মেকানিজম (ভাড়া পদ্ধতি) এবং (গ) শিরকাত মেকানিজম (অংশীদারি কারবার পদ্ধতি)।
শরিয়তে এর বাইরেও আর্থিক লেনদেন রয়েছে। যেমন- কর্জ (করদ বা ঋণ), জাকাত, সাদাকাহ, ফিতরা, ওয়াকফ, হেবা প্রভৃতি। এসব লেনদেন থেকে কোনো প্রকার বেনিফিট বা মুনাফা বা লাভ পাওয়া যায় না। আর্থিক বা অ-আর্থিক যেকোনো ধরনের বেনিফিট পেতে হলে আমাদের অবশ্যই ওপরের তিনটি পদ্ধতির কোনো না কোনোটির আওতায় লেনদেন করতে হবে।
জমি ও দোকান রেহান বা বন্ধক দেয়া-নেয়া : দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমি রেহান দেয়া ও নেয়ার প্রচলন দেখা যায়। আমাদের চেনা সমাজে জমি রেহান দেয়া-নেয়ার যে প্রচলন রয়েছে তা এ রকম : এখানে কোনো অভাবী জমির মালিক নগদ টাকার প্রয়োজনে টাকার বিনিময়ে অন্যের কাছে জমি রেহান দেন। শর্ত থাকে যে, যত দিন না এ টাকা ফেরত দেয়া হবে তত দিন রেহান গ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকবেন। তিনি যদি এ জমি ১০ বছরও ভোগ করে থাকেন তবুও ওই টাকা পুরোটা দিয়ে তবে জমি ফেরত পেতে হবে। ইদানীং আবার দোকানও রেহান দেয়া হচ্ছে। যত দিন পর্যন্ত দোকান মালিক টাকা এক সাথে পরিশোধ করতে না পারবেন তত দিন পর্যন্ত দোকানটি রেহান গ্রহীতার ভোগ-দখলে থাকবে। রেহান গ্রহীতা এ দোকান নিজে পরিচালনা করবেন অথবা তৃতীয় কারো কাছে ভাড়া দেবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ লেনদেনটি ইসলামি শরিয়তের কোন পদ্ধতিতে সম্পাদিত হলো?
জাবির (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: কয়েক বছরের জন্য জমি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।’ মুসলিম (বাবু কিরাইল আরদ): হাদিস নম্বর : ৩৮২২। বোঝা গেল, সমাজে প্রচলিত ‘রেহান’ কোনো শরিয়তসম্মত ক্রয়-বিক্রয় নয়।
তবে কি এটি ইজারা মেকানিজম বা ভাড়া পদ্ধতি? ভাড়া দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে তো জমি ইজারা নিয়ে যে টাকা ভাড়া হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে তা ফেরত দেয়ার শর্ত করা যায় না। কেউ কাউকে বাড়ি বা দোকান ভাড়া দিয়ে প্রাপ্ত ভাড়ার টাকা দোকান বা বাড়ি ফেরত নেয়ার সময় ফেরত দেয়? ইসলামি শরিয়ত তথা কোনো আইনেই এমন আর্থিক লেনদেনের প্রমাণ নেই। বোঝা গেল, গ্রামীণ সমাজে প্রচলিত ‘রেহান’ কোনো শরিয়তসম্মত ইজারা বা ভাড়া পদ্ধতিও নয়।
তবে কি এটি শিরকাত মেকানিজম (অংশীদারি কারবার পদ্ধতি)? তা হবে কেন? এটি তো কোনো ব্যবসায় নয়। এখানে কেউ কারো লাভ-লোকসানের অংশীদার নয়।
তবে এটি কী? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে টাকার দাতাকে। এ ক্ষেত্রে টাকা গ্রহীতার দায়িত্ব কম। কারণ তিনি দায়ে পড়ে জমি বা দোকান দিয়েছেন। তবে তিনি একেবারে দায়মুক্তও নন। এখানে টাকার দাতাকে (রেহান গ্রহীতা) বলতে হবে, এ টাকা তিনি কী হিসেবে দিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তাহলে রেহান কথাটা কোত্থেকে এলো? ‘রাহন’ আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো যেকোনো কারণে কোনো বস্তুকে আটকে রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ‘রাহন’ হলো কোনো দাবির বিপরীতে কোনো বস্তুকে এমনভাবে আটক রাখা, যাতে আটককৃত বস্তু দিয়ে দাবি বা অধিকার বা পাওনা আদায় সম্ভব হয়। যেমন- ঋণ। সোজা কথায়, রেহান অর্থ বন্ধক। বন্ধক রাখার বিষয়টি ইসলামি শরিয়তে অনুমোদিত। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোনো লেখক না পাও তবে হস্তান্তরকৃত/অধিকৃত/আয়ত্তাধীন বন্ধকী বস্তু নিজ দখলে রাখবে।’ (সূরা বাকারাহ : ২৮৩)। সূরা মুদ্দাচ্ছিরের ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের দায়ে আবদ্ধ (রাহিনাহ)।’ রাসূলুল্লাহ সা: নিজে এক ইহুদি থেকে বাকিতে কিছু খাদ্য ক্রয় করেছিলেন এবং সেই দেনার গ্যারান্টি হিসেবে তাঁর বর্মটি ইহুদির কাছে রেহান (বন্ধক) রেখেছিলেন। বুরহানুদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবুবকর আল-ফারগানি আল-মারগিনানি (রহ:) তার আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে বলেছেন, ‘রেহান (বন্ধক) রাখা জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে ইজমা রয়েছে। রেহান (বন্ধক) হচ্ছে নিজের পাওনা উসুল নিশ্চিত করার নিমিত্তে সম্পাদিত একটি চুক্তি।’ ইমাম শাফেয়ি (রহ:) বলেছেন, বন্ধকী বস্তু (রেহান) বন্ধক গ্রহীতার কাছে আমানতস্বরূপ থাকে। আল-মারগিনানি (রহ:) তাঁর আল-হিদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায়ে আরো বলেছেন, ‘বন্ধক’ (রেহান) গ্রহীতা ব্যক্তির জন্য জায়েজ নেই বন্ধকের (রেহান) মাল দিয়ে উপকৃত হওয়া। সেবা নেয়া, বসবাস করা বা পরিধান করা কোনোটাই জায়েজ নয়। রেহান রাখা হয় শুধু নিজের পাওনা আদায় করার জন্য।
হানাফি মাজহাবের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ, নির্ভরযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রামাণ্য ফিকাহ গ্রন্থ আল-হেদায়া কিতাবের ‘রাহন’ অধ্যায় থরোলি পড়ে গেলে এটি পরিষ্কার বোঝা যাবে যে, রাশিদুন যুগের রেহানের উদ্দেশ্য ও পদ্ধতির সাথে আমাদের সমাজে প্রচলিত রেহানের উদ্দেশ্য ও এর ধরনের কোনো মিল নেই। আল-হেদায়া কিতাবের বিস্তারিত আলোচনা হতে বোঝা যায়, ঋণদাতা কেবলই তার ঋণের টাকা ফেরত পাওয়াটা নিশ্চিত করতে ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে সমমূল্যের বা কাছাকাছি মূল্যের কিছু একটা রেহান বা বন্ধক রাখছেন। এই রেহান বা বন্ধক রাখার দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্যই নেই। হেদায়া কিতাবে বন্ধকী (রেহান) মালের যে সব বর্ণনা রয়েছে তা এ রকম : এক রেহান গ্রহীতার কাছ থেকে রেহানের ঘোড়া হারিয়ে গেলে রাসূলুল্লাহ সা: তাকে লক্ষ্য করে বললেন, যাহাবা হাক্কুকা (তোমার অধিকার হারিয়ে গেছে)। এখানে রেহান হচ্ছে একটি ঘোড়া। ঘোড়াটি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
কোনো ব্যক্তি কারো কাছে আংটি রেহান রাখার পর সে যদি তা ব্যবহার করে তবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ তাকে আংটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়নি, শুধু হেফাজতের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এখানে রেহান হচ্ছে একটি আংটি। আংটিটি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
দু-তিনটি তরবারি রেহান রাখার পর রেহান গ্রহীতা ব্যক্তি যদি তিনটি তরবারি কোমরে ঝুলিয়ে চলে তবে তাকে ক্ষতি পূরণ দিতে হবে না। কিন্তু দু’টি ঝুলালে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কারণ বীরপুরুষেরা রণাঙ্গনে সাধারণত দু’টি তরবারি কোমরে ঝুলিয়ে চলেন। তিনটি নয়। এখানে রেহান হচ্ছে তরবারি। তরবারি রেহান দেয়া হয়েছে গৃহীত ঋণের জামানত হিসেবে।
রেহান নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে এমন বহু উদাহরণ দেয়া হয়েছে হেদায়া কিতাবে। এখানে এগুলো উদ্ধৃত করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসলামি শরিয়তে রেহান আসলে কী জিনিস তার একটি পরিষ্কার চিত্র পাঠকের মানসপটে অঙ্কন করা। ওপরে উদ্ধৃত উদাহরণগুলো থেকে জানা যাচ্ছে যে, রেহান কোনো লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য হচ্ছে ঋণ পাওয়া। ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য রেহান হচ্ছে একটি নিমিত্ত মাত্র। এবং রেহানের (বন্ধক) মাল হয়ে থাকে সাধারণত কোনো অলাভজনক বস্তু। যেমনÑ আংটি, তরবারি, ঘোড়া, গোলাম প্রভৃতি।
অথচ আমাদের সমাজে যা প্রচলিত আছে তাতে রেহানটাই মুখ্য। যত অল্প টাকা ঋণ দিয়ে যত বেশি ফসলি জমি বা যত বেশি ভাড়া যোগ্য দোকান রেহান নেয়া যায় সে চেষ্টাই সব রেহান গ্রহীতাকে করতে দেখা যায়। যে জমিতে যত বেশি ফসল উৎপন্ন হয় ও যে দোকান ভাড়া দিয়ে যত বেশি ভাড়া পাওয়া যায় সে জমি বা দোকানের বিপরীতে তত বেশি ঋণ পাওয়া যায়। সোজা কথায়, রেহানের জমি বা দোকানটা হচ্ছে প্রদত্ত ঋণের বিনিময়। জমি থেকে ফসল আহরণ করে কিংবা দোকান থেকে ভাড়া পেয়ে লাভবান হওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উদ্দেশ্য এই রেহান নেয়ার মধ্যে নেই। যদি এটিই প্রকৃত ঘটনা হয় তবে এটি একটি নিখাদ সুদের কারবার ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কুল্লু কারদিন জাররা নাফ’আন ফাহুয়া রিবা’ (যে ঋণ অতিরিক্ত কিছু উপার্জন করে, তাই সুদ)। হ্যাঁ, ঋণের বিপরীতে রেহান বা জামানত গ্রহণ করা জায়েজ আছে। কিন্তু ঋণের বিনিময়ে কোনো প্রকার ফায়দা হাসিল করা বিলকুল হারাম।
বুঝিবা এই তথাকথিত রেহানের নামে বাংলার গরিব কৃষককে জমিদারের শোষণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই শের-ই-বাংলা গত শতাব্দীর তৃতীয় দশকে গঠন করেছিলেন ‘ঋণ সালিসি বোর্ড’! পরবর্তীকালে ‘পূর্ব বাংলার প্রজাস্বত্ব আইন’ দিয়ে জমিদারি প্রথা বিলোপের মাধ্যমে তিনি এ দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব সাধন করেন। দেড় হাজার বছর আগে ইসলাম এ-জাতীয় জুলুমের উপায়-উপকরণকে যে হারাম ঘোষণা করেছে শের-ই-বাংলা তার মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবেন বৈকি!
ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সা:-এর সুন্নাহ ও রাশিদুন যুগের ঐতিহ্য থেকে যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হলো, জমির মালিক হয়তো নিজে চাষ করবে, তা সম্ভব না হলে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অন্য লোক দিয়ে চাষাবাদ করাবে। বর্গা, তথাকথিত রেহান ও নগদ লাগানো হতে এটি উত্তম।
এ ছাড়া রেহানের আরো সুন্দর ও শরিয়তসম্মত কী কী বিকল্প হতে পারে তা নিয়ে উচ্চতর গবেষণা হতে পারে। অবশ্য একটি সহজ বিকল্প হতে পারে একাধিক বছরের জন্য লিজ দেয়া এবং লিজ গ্রহীতার কাছ থেকে বার্ষিক হারে ভাড়া বাবদ টাকা নেয়া। মনে করা যাক এক বিঘা জমির বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা নেয়া হলো এই চুক্তিতে যে, প্রতি বছরের জন্য পাঁচ হাজার টাকা কেটে নেয়া হবে। জমির মালিক যদি তিন বছর পর জমি ফেরত নিতে চান, কিংবা লিজ গ্রহীতা টাকা ফেরত নিতে চান, তাহলে ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাবেন। অবশ্য চুক্তির সময়ে কমপক্ষে কয় বছরের আগে জমি ফেরত নেয়া যাবে না, তা উল্লেখ করা যায়।


লেখক : প্রবন্ধকার

আবু নুসাইবা মুহাম্মদ নূরুন্নবী
০৩ মার্চ ২০১৬,বৃহস্পতিবার, ১৯:২৭


সূত্র

প্রশ্ন: ৪২:বিদআত কি? বিদআতে হাসানা ও বিদআতে সাইয়া সম্পর্কে :

★★ বিদআতের ব্যাপারে কত রকম হাদিস আছে?

উত্তর : ৩ রকম হাদিস :

১) এক প্রকার হাদিস যা বিদআত শব্দের উল্লেখ আছে কিন্তু তা ভাল বিদআত না মন্দ বলা নেই। শুধু রাসুলের পরে সেগুলোর আবিষ্কার হবে বলা আছে। তা ভালও হতে পারে খারাপও হতে হতে পারে।

২) স্পষ্ট ভাবে সেই সব বিদআতে নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে, ঘৃনা, লানত, শাস্তি, অভিশাপ ইত্যাদি বর্নিত আছে, তা কুরআন ও সুন্নাহর পরিবর্তন করবে বলা আছে। বিদআতে সাইয়া

৩) স্পষ্টভাবে এক প্রকার নতুন কিছুর প্রবর্তনকে সওয়াব ও কল্যানময় বলা হয়েছে যা কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা - কিয়াস কোনটার বিপরীতে নয়। বিদআতে হাসানা।



                          বিদআত এর অর্থ ও সংগা কি ? :



NOTE : এগুলো মুলত প্রকৃত পক্ষে মন্দ বিদআতের অর্থ ও সংগা দেয়া হয়েছে অধিকাংশ কারন বিদাত কি বুঝানোর জন্য।
কারন বিদাতে হাসানাকে প্রকৃতপক্ষে আমরা বিদাত বলে সম্বোধন করি না। যেমন :
আল-কোরআন বাইন্ডিং বা কোরআন খতম, খতমে ইউনুস এগুলো বিদআত কিন্তু আমরা একে বিদাত বলিও না চিন্তায়ও আনি না, সংগারও প্রয়োজন মনে করি না কিন্তু আসলে নির্দিষ্ট করে বললে তা বিদাতে হাসানা বলা উচিত। যেমন :

★ ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই।” (আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্) অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা পেশ করে থাকে।

★ আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

“নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাবেয়ীনগণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে।” (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১)


বিদআতের অর্থ :

(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।” (লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩, বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫)

(২) “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭)

(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯, মিরকাত শরীফ)

(৪) “জেনে রাখ, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পারে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।” (আশয়াতুল লোমআত)

(৫) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা।” (আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩)

(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়।” (লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬)

(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬) সুতরাং বিদয়াত শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা।

বিদয়াতের সংগা  :

(১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)

(২) আল্লামা ইসমাইল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, “বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০)

(৩) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (শরহে মুসলিম লিন নববী)

(৪) হাফেজ ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে, শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়।” (জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)

(৫) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা।” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল লোগাত) শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয়। এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে।


সংগা ১ : বিদআত হল এমন নতুন বিষয়াদির আবিষ্কার যা রাসুলুল্লাহ (সা) এর যুগে ছিল না, পরে আবির্ভুত বা আবিষ্কৃত হয়েছে। তা ভাল ও হতে পারে খারাপও হতে পারে।


এ সম্পর্কে :

★‘মিরকাত’ الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে।

وَفِى الشَّرْعِ اِحْدَاثُ مَالَمْ يَكُنْ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ

বিদআত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের যুগে ছিল না।

★ আশআতুল লুমআতে বর্ণিত আছে-

“যে কাজ হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে সূচিত হয়েছে, তা বিদআত”

NOTE: এই বিদআত ভালও হতে পারে খারাপও হতে পারে। কেন ভাল হতে পারে? কারন নিচের কাজগুলোও স্পষ্ট বিদআত যা রাসুলের যুগের পরে এসেছে কিন্তু ভাল বিদআত।


যেমন :
ভাল কিছু বিদআতের প্রচলন হল :
★ ইটের তইরি মসজিদ → সুন্নতী মসজিদ হল মাটির তইরি
★ মাদ্রাসা → রাসুলের যুগে ছিল না
★ জুমুয়ার ২ আজান → হযরত উসমান (রা) এর খেলাফত কালে চাল হয় (বুখারী)
★ কুরআন শরীফ একত্রিত করন → হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে। (বুখারী)
★ তারাবিহ নামাজ জামায়াতে আদায়→ হযরত উমর (রা) এর খিলাফত কালে চালু হয় (বুখারী)
★ রমজানে ৩ দিনে তারাবিহ নামাজের মধ্যে কুরআন খতম → ইমাম বুখারী তার সংগীদের নিয়ে জামায়াতে ৩ দিতে এক খতম দিতেন তারাবির নামাজে।

Note: নিচে এগুলো রেফারেন্স সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।


সংগা ২ : বিদআত হল এমন কিছু যা কুরআন এবং সুন্নাহর পরিবর্তন কারী।

★ অনুরুপ হযরত আয়েশা (রা) থেকেও সহীহ বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সা) বলেন, "কেউ যদি নতুন কিছু (বিদাত) সংযোজন করে এবং তা ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা প্রত্যাখ্যাত।" [বুখারী ৩য় খণ্ড, বুক ৪৯, হাদিস নং ৮৬১]


★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।


এটা সব সময়ই খারাপ। এমন বিদআত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে অভিশাপ ও লানতের ব্যাপারে বা শাস্তির ব্যাপারে সেগুলো মন্দ বিদআতকে বুঝানো হয়েছে।
খারাপ বিদআত হল এক কথায় আকিদাগত বিদআত।


★★★ হাদিস থেকে ২ প্রকার বিদআতের সংগার উদ্ভাবন :



★ মিশকাত শরীফের العلم অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।

যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য ছাওয়াব পাবেন; যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও ছাওয়াব পাবেন, তবে তাঁদের ছাওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না; এবং যারা ইসলামে মন্দরীতি প্রচলন করে, এর জন্য তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না।

উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা বিদআতের সংগা :



 ★ ফাতওয়ায়ে শামীর ভুমিকায় ইমাম আবু হানীফা (রহ:) এর ফযীলত বর্ণনা প্রসংগে উল্লেখিত আছে।

উলামায়ে কিরাম বলেন- এসব হাদীস সমূহ ইসলামের কানুন হিসেবে প্রযোজ্য- যে কেউ ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করলে সে এর উপর সমস্ত আমলকারীদের গুনাহের ভাগী হবে; আর যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আমলকারীদের ছওয়াবের ভাগী হবেন। এর থেকেও প্রমাণিত হলো ভাল বিদআতে ছওয়াব আছে ও মন্দ বিদআতে গুনাহ হয়।


★ আশআতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খন্ডে الاعتصام হাদীছটি وكل بدعة ضلالة প্রসংগে উল্লেখিত আছে।

যে বিদআত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদআতে হাসানা বলা হয়। আর যা বিপরীত, সেটাকে বিদআতে গুমরাহী বলা হয়।




                        বিদআতের বিস্তারিত শ্রেনী বিভাগ :-



কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিদাতের প্রকার ভেদ আলোচনা করা হল। সুতরাং ইহা ১ প্রকার বলা মানে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।

★ ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-

১। বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত।

২। বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।

(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো – যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াতঃ

বিদয়াতে আ’মালী প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত-

(ক) বিদয়াতে হাসানা,
(খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।


(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার তিন প্রকার-

(১) বিদয়াতে ওয়াজিব,
(২) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
(৩) বিদয়াতে মোবাহ্।

★ আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম শরীফ)




(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার-

(১) বিদয়াতে হারাম,
(২) বিদয়াতে মাকরূহ্।

এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

★ “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মিশকাত শরীফ)

★ আরো ইরশাদ হয়েছে,

 كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.

 অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।” উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয়।



★ আবার কেউ কেউ বলেন : বিদ‘আত দু প্রকার :

১)  বিদ‘আতে ফিদ্দীন (البدعةفيالدين)  (মন্দ)
২)  অন্যটা হল বিদ‘আত লিদ্দীন (البدعةللدين)  (ভাল)


★ মহান আল্লাহ বলেন,

مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا

অর্থঃ যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে৷ আর আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন৷"
[সূরা নিসা ৮৫]


★ রাসুল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মে কোনো সুন্নাতুন্ হাসানা তথা উত্তম প্রথা/রীতি প্রবর্তন করেন, তিনি এর সওয়াব পান এবং যারা তার পরে ওতে আমল করবে, তাদের সওয়াবও তিনি পেতে থাকেন; আর তাদের (পরবর্তী আমলকারীদের) সওয়াবেরও এতে ন্যূনতম কমতি হয় না। অনুরূপ ভাবে কেউ যদি ধর্মে খারাপ কিছু সংযোজন করে আর কেউ তা অনুসরণ করে, সে ওই মন্দের জন্য দায়ী থাকবে।” [সাহীহ মুসলিম : ৬৪৬৬]

Note: এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিদাত ২ প্রকার।

★ ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,

ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺤﺚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺳﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﺤﺬﻳﺮ ﻣﻦ ﺍﺧﺘﺮﺍﻉ ﺍﻻ ﺑﺎﻃﻴﻞ ﺍﻟﻤﺴﺘﻘﺒﺤﺎﺕ -

অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস শরীফে ভাল কাজের সূচনা এবং উত্তম রীতি-রেওয়াজ চালু করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ভ্রান্ত ও অনিষ্ট রীতি-রেওয়াজ চালু করার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।

Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।

★ ইমাম নববী উল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন,

ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺨﺼﻴﺺ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ( ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ) ﻭﺍﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﺎﺕ ﺍﻟﺒﺎﻃﻠﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺬﻣﻮﻣﺔ –

অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস -এ হুজুর সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ফরমানে মুবারক

ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ

(প্রত্যেক নতুন বস্তুই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত গোমরাহী) এর ব্যাখ্যা হল যে, অত্র হাদীসের মধ্যে বিদ’আত থেকে উদ্দেশ্য নব্য ভ্রান্ত বিষয়াদি এবং মন্দ বিদ’আত।

Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।

★ হযরত আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত-৯৭৩ হিজরী) বর্ণনা করেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺰﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻓﻌﻞ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻌﻬﺪ ﻓﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭﺗﻨﻘﺴﻢ ﺍﻟﻰ ﺧﻤﺴﺔ ﺍﺣﻜﺎﻡ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻮﺟﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨﺪﺏ ﺍﻟﺦ ﻭﻃﺮﻳﻖ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺫﻟﻚ – ﺍﻥ ﺗﻌﺮﺽ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﺍﻟﺸﺮﻉ- ﻓﺎﻯ ﺣﻜﻢ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﻴﻪ، ﻓﻬﻰ ﻣﻨﻪ – ﻓﻤﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻮﺍﺟﺒﺔ ﺗﻌﻠﻢ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﻔﻬﻢ ﺑﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻣﺬﻫﺐ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺪﺭﻳﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻤﺪﺍﺭﺱ ﻭﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻟﺼﻠﻮﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺒﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻫﺔ ﺯﺧﺮﻓﺔ ﺍﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻟﻤﺼﺎﺣﻒ ﺍﻯ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭﺍﻻ ﻓﻬﻰ ﻣﺤﺮﻣﺔ- ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ – ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﻭﻛﻞ ﺿﻼﻟﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ- ﻭﻫﻮ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻻ ﻏﻴﺮ -

অর্থাৎ, হযরত আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরশাদ করেন, বিদ’আত এমন একটি কাজ যার প্রচলন হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর যুগে ছিল না।এবং এটা (বিদ’আত) কে পাঁচটি বিধানে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াজিব-মুস্তাহাব এবং অন্যান্য। এটা জানার উপায় এই যে, বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) কে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতিতে পেশ করা হবে। ফলে ঐ বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) যেই বিধানে পড়বে তবে তা উহার অন্তর্ভুক্ত হবে।

১। ওয়াজিব বিদ’আতঃ এর মধ্যে (অন্যতম) রয়েছে ইলমে নাহু শিক্ষা করা। যার মাধ্যমে কুরআন মাজীদ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর হাদীস শরীফকে বুঝা যায়।

২। হারাম বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে ক্বদরিয়্যাহ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় (বাতিল ফির্কা) সমূহ।

৩। মুস্তাহাব বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এবং তারাবীহ নামাজের জন্য একত্রিত হওয়া।

৪। মুবাহ (বৈধ) বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে নামাজের পর মুসাফাহা (করমর্দন) করা।

৫। মাকরুহ বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ এবং পবিত্র কুরআন মাজিদের সৌন্দর্যকরণ। অর্থাৎ স্বর্ণ ব্যতিরেকে অন্যান্য বস্তু দ্বারা (মসজিদ এবং কুরআন মাজিদের) সৌন্দর্যকরণ। (অন্যদিকে) স্বর্ণ দ্বারা এহেন সৌন্দর্যকরণ করাও হারাম (এগুলো হল বিদ’আতের পাঁচটি প্রকার।) আর হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে যে,প্রত্যেক বিদ’আত হল গোমরাহী (ভ্রষ্টতা) এবং প্রত্যেক গোমরাহী-ই জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম। তাহলে এই হাদীস শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (অর্থাৎ এই হাদীস শরীফে শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের কথা উল্লেখ হয়েছে, নতুবা অসংখ্য নব্য সৃষ্টি দ্বীনের জন্য আবশ্যকীয়।)

Reference : ফতোয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ,পৃষ্ঠা-১০৯,দারুল ফিকার, বৈরুত,লেবানন।



★ হাদিসে বর্নিত আছে,

````যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না।

```` আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)

NOTE : প্রবর্তন বা প্রচলন মানে নতুন কিছুর আবিষ্কার।


★ ‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’।
[সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]


★ হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী (রহ) সহিহ ইসনদসহ "মানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (রহ) " কিতাবে বর্ননা করেন, মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) আমাদের নিকট বর্ননা করেছেন যে,

** মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) তিনি ** আবু আল-আব্বাস আল আসসাম (রহ) থেকে তিনি ** রাবী ইবনে সুলায়মান (রহ) থেকে তিনি ** ইমাম শাফেঈ (রহ) থেকে বর্ননা করেছেন যে ইমাম শাফেঈ (রহ) তাকে (সুলায়মানকে) জানিয়েছেন :

নব আবিষ্কৃত বিষয়সমুহের মধ্যে থেকে ২ ধরনের বিষয় প্রমানিত হয় :

১) নতুন আবিষ্কৃত বিষয় গুলোর মধ্যে ১টা হল যা কুরআন অথবা সুন্নাহ অথবা কোন (শরীয়তের) বর্ননা অথবা (উম্মতের বা ইমামগনের সর্বজনীন) ঐক্যমতের বিরোদ্ধে আবির্ভাব হবে সেগুলো হবে পথভ্রষ্টতা (আল-বিদাতু আল- দ্বালালাতু)

২) দ্বিতীয়ত এমন কিছু ভাল জিনিস নতুন আবিষ্কৃত বা আবির্ভুত হবে যেগুলোর কোনটাই কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা-কিয়াসের বহির্ভুত হবে না।
তখন সেটা হবে এমন বিদআত যা নিন্দনীয় হবে না (বরং তা উত্তম হবে) (ঘায়রু মাযমুমাতিন)।

Reference :
** ইমাম বায়হাকী (রহ) : মানাকিবমানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (রহ)
** মোল্লা আলী কারী (রহ) : মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯

English Translation :


Al-Hafidh al-Imam al-Bayhaqi (Alayhir Rahmah) narrates through a sahih isnad (authentic chain of transmission) in Manaqib al-Imam al-Shafi'i, that Muhammad ibn Musa ibn al-Fadl narrated to us that Abu al-'Abbas al-Assam narrated to him that Rabi' ibn Sulayman narrated to him that al-Imam ash-Shafi'i informed him:

"The newly-invented matters from the affairs are of two kinds: One of them is whatever is innovated contravening the Book, or the Sunnah, or a narration, or a consensus, then this is an innovation of misguidance (al-bid'atu al-dalalatu). The second is whatever is innovated of the good which does not contravene any of these, then this is an innovation which is not blameworthy (Ghayru Mazmumatin)."




★ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে :-

ﺛﻢ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﻧﻮﻋﻴﻦ _ ﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﺤﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﺴﺘﻘﺒﺤﺔ

অতঃপর বিদআত ২ প্রকার। বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত । আর যদি তা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত। (উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)



                         ১) বিদআতে সাইয়া সম্পর্কে :



এই মন্দ বিদাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস জেনে নিন :


★ সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেনে,”আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,(যখন আমি হাউজে কাউসারের পানি পান করাব তখন) “অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদের আমি চিনি, এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অত:পর তাদের ও আমার মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি (ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত!” তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে, তারা আপনার পর `````কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অত:পর আমি বলল-”যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে````, তারা দূর হোক, তারা দূর হোক।”-[বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৬৬৪৩]

NOTE: আগেই আলোচনা করেছি আয়েশা (রা) এর হাদিসহাদিস : বিদাত হল এমন জিনিস যা কুরআন ও সুন্নাহ এর পরিবর্তনকারী। সুতরাং এই হাদিসে নিষ:ন্দেহে বিদাতে সাইয়ার দিকে ইংগিত করা হয়েছে।

★ * রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোন বিদআতিকে সাহায্য করে, আল্লাহ্‌ তাকে লানত করেন।”-[মুসলিম]

★ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”-[মুসলিম]

★ “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।

Note : এখানে বিদাতে সাইয়ার কথা মুলত বুঝানো হয়েছে।

★ যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,


“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।



                             হাদিসের ব্যাখ্যা :


অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ।

★ এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করা হয়,

“ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে

 كل بدعة ضلالة  হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,

“সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী।”


★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।

★★★ এ প্রসংগে ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।

وَالْمَعْنى اَنَّ مَنْ اَحْدَثَ فِى الْاِسْلَامِ رَايًا فَهُوَ مَرْدُوْد عَلَيْهِ اَقُوْلُ فِىْ وَصْفِ هَذَا الْاَمْرِ اِشَارَة اِلى اَنَّ اَمْرَ الْاِسْلَامِ كَمَلَ

যে কেউ ইসলামে এ ধরণের আকীদা প্রচলন করে, যা ধর্মের পরিপন্থী সে মরদুদ। আমি বলতে চাই যে هذالامر দ্বারা ওদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে ইসলামের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হয়েছে।

★ মিশকাত الايمان بالقدرঅধ্যায়ে উল্লেখিত আছে হযরত ইবনে উমর (রা:) কে কেউ বললেন অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন-

بَلَغَنِىْ اَنَّهُ قَدْ اَحْدَثَ فَاِنْ كَانَ اَحْدَثَ فَلَا تُقْرِئَه مِنِّى السَّلَامَ

আমি জানতে পারলাম যে, সে বিদআতী হয়ে গেছে। তা যদি হয়, তাকে আমার সালাম বলবেন না।
জিজ্ঞাসা করা হলো বিদআতী কিভাবে হতে পারে? ফরমালেন :-

يَقُوْلُ يَكُوْنُ فِىْ اُمَّتِىْ خَسْفٌ وَمَسْخٌ اَوْقَذْفٌ فِىْ اَهْلِ الْقَدْرِ

হুযুর আলাইহিসসালাম ইরশাদ ফরমাতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কদরীয়া সম্প্রদায়ের বেলায় ভূমি ধ্বসে যাবে, চেহারা বিকৃত হবে, অথবা পাথর বর্ষিত হবে।

Note:
প্রতিভাত হলো যে, কদরীয়া ফিরকাকে অর্থাৎ যারা তকদীরকে অস্বীকার করতো তাদেরকে বিদআতী বলা হয়েছে। এই হল আকিদাগত বিদআতের Example.

★ দুররুল মুখতারের কিতাবুল সালাত الامت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছে।

وَمَبْتَدَعٍ اَىْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ وَهِىْ اِعْتِقَادُ خِلَافِ الْمَعْرُوْفِ عَنِ الرَّسُوْلِ

বিদআতী ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। বিদআত হচ্ছে সেই আকীদার বিপরীত আকীদা পোষন করা যা হুজুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন।


★ ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া প্রথম খন্ড কিতাবুল বিদআতের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে- যে বিদআতের ব্যপারে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আকীদাগত বিদআত যেমন : রাফেজী ও খারেজীদের আকিদাগত বিদআত।



                        ২) বিদআতে হাসানা সম্পর্কে উদাহরন সহ :



★★★ NOTE: এই বিদাতে হাসানার অধিকাংশ দলিল ইতিপুর্বে (বিদাতের শ্রেনীবিভাগ পর্বে CLASSIFICATION OF BIDAH) এর মধ্যে আলোচিত হয়ে গেছে তাই ওই গুলো পুনরাবৃত্তি করলাম না।

★ এখন বিদআতে হাসানার প্রমান নিন আল-কুরআন থেকে আল্লাহ তায়ালা ফরমান :

وَجَعَلْنَا فِىْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْاهُ رَافَةً وَّرَحْمَةً وَّرَهْبَانِيَّةٍ اِبْتَدَعُوْاهَا مَا كَتَبْنَا هَاعَلَيْهِمُ اِلّابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ

“আমি তাদের আত্মায়, যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন, আরাম ও রহমত দান করেছি সন্ন্যাসবাদ তারাই প্রবর্তন করেছিল; আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি। আল্লাহর রেজামন্দির উদ্দেশ্যে এর সূচনা করেছিল”

★ পুনরায় ইরশাদ করেন-

فَاَتْيَنَا الَّذِيْنَ امَنُوْا مِنْهُمْ اَجْرَهُمْ

“তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আমি ওদেরকে পুরস্কার দিয়েছি”।

★ তবে হ্যাঁ, যারা একে চালু রাখতে পারেনি, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

فَمَارَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا

“এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি”।

Note: লক্ষ্য করুন এখানে বিদআতের জন্য নিন্দা করা হয়নি বরং এটা চালু রাখতে না পারায় আল্লাহ অসুন্তুষ্ট।


★ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে – عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء .

অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)




★ অপর হাদিসে বর্নিত আছে :

ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ  ٌ

 যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথা আবিষ্কার করল তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে, এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে। এতে লোকেরা যে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে।আবার তাদেরকে ও কম দেওয়া হবে না। আর যে ইসলামে একটি খারাপ প্রথা চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না।  ( ইবনু মাজাহ,১ম খণ্ড,হাদিস-১৭৩,সহিহ)



★ আবু যার (রা) বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় যে আল্লাহ্‌র রাসূলকে (সাঃ) জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ "ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলবেন যে কোনো ভালো কাজ করল এবং মানুষ এরজন্য তাকে প্রশংসা করল?" আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) বললেনঃ "এটি হোলো মু'মিনের জন্য আগাম সুসংবাদ।" [মুসলিম]



যদি বিদআত শুধু ১প্রকারই হয় আর মন্দ কাজকেই বুঝায় তবে নিচের কাজগুলো যারা চালু করেছেন তাদেরকে কি ওহাবী-সালাফীগন জাহান্নামী বলার সাহস আছে?কিন্তু তাদের আকিদার কারনে তাদের না বুঝে মুর্খের মত ফতোয়ার কারনে ঠিকই ওনাদের উপর পরোক্ষভাবে সেই জাহান্নামীর অপবাদ পরে থাকে (নাউযুবিল্লাহ) :


★ মিশকাত শরীফের
الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-

اتبعوا السواد الاعظم فانه من شذشذ فى النار-

বড় জামাতের অনুসরণ করুন। যে এর থেকে পৃথক রইল, সে দোযখে পৃথক অবস্থায় থাকবে।

★ আরও উল্লেখ আছে-

ماراه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن ومن فارق الجماعة شبرا فقد خلع ريقة الاسلام عن عنقه-

মুসলমান যাকে ভাল মনে করে, আল্লাহর কাছেও সে ভাল। মুসলমানগণের জামাত থেকে কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমাণও পৃথক রইল, সে যেন ইসরামের রশি নিজ গলা থেকে ফেলে দিল।

★ কুরআনে কারীমে আছে-

ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى ونصله جهنم –

যে মুসলমানের পথ থেকে ভিন্ন পথ চলে, আমি তাকে সে অবস্থায় ছেড়ে দেব এবং তাকে দোযখে প্রবেশ করাবো।



★ ‘আশআতুল লুমআত’ এ فعليكم بسنتى এর প্রোপটে উল্লেখিত আছে-

يس برجه خلفائـ راشدين بدان كرده باشند- اكرجه باجتهاد وقياس ايشان بود موافق سنت نبوى است اطلاق بدعت بران نتوان كرد-

যে বিষয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন রায় দিয়েছেন, তা যদি নিজস্ব কিয়াস ও ইজতিহাদ দ্বারা হয় এবং সুন্নাতের নববী অনুযায়ী হয়, তবে তাকে বিদআত বলা সমচীন নয়।




                            আবু বকর (রা) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :




★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা:) কে যখন কুরআনে পাক একত্রিত করার হুকুম দিলেন, তখন তিনি আরয করলেন।

كيف تفعلون شيئالم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هو خير-

আপনি এ কাজ কেন করতে যাচ্ছেন, যা হুযুর আলাইহিস সালাম করেননি। হযরত সিদ্দিক (রা:) ফরমালেন, এতো ভাল কাজ। অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত হযরত সিদ্দীক (রা:) এর সমীপে আরয করলেন, কুরআন একত্রিতকরণ হচ্ছে বিদআত। তাই আপনি কেন বিদআতে হাত দিচ্ছেন। তখন হযরত সিদ্দীক (রা:) ইরশাদ ফরমালেন- বিদআত বটে তবে উত্তম বিদআত। এর থেকে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কিরামের কাজ হচ্ছে বিদআতে হাসানা।


Reference : বুখারী শরীফ : দ্বিতীয় খন্ড :  كتاب فضائل القران এর جمع القران অধ্যায়।


★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) যখন কুর্‌আন সংকলন করার কথা বললেন তখন সাহাবা গণ আরজ করলেন হে খলিফাতুল মুসলেমিন” আপনি কি এমন কাজ (বিদাত) করবেন যা রাসূল (সাঃ) করেননি? তখন সিদ্দিকে আকবর বললেন আল্লাহর কসম এটা ভাল কাজ.।

Reference : মেশকাত শরিফ পৃষ্ঠা ১৯৩

প্রমাণিত হল হযরত আবু বকর (রাঃ) ভাল বিদাত গ্রহণ করেছেন ।


                               উমর (রা) এর বিদআতে হাসানার প্রচলন :



হযরত উমর (রা:) স্বীয় খিলাফাতের যুগে নিয়মিতভাবে জামাত সহকারে তারাবীর নামায আদায় করার হুকুম দিয়েছিলেন এবং জামাত অনুষ্ঠিত হতে দেখে বলেছেন نعمت البدعة هذه- এতো বড়ই ভাল বেদআত। দেখুন হযরত উমর (রা:) নিজেই নিজের প্রচলিত কাজকে বিদআত হাসানা বলেছেন।

হযরত উমর (রাঃ) ৩০ দিন জামাত সহকারে তারাবিহ নামাজ চালু করেন, যা রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) এর সময় ছিলনা।

★ হযরত উমর (রাঃ) একদা হযরত আব্দুর রহমান (রাঃ) কে সাথে নিয়ে রাতে বের হলেন. যখন তিনি সবাইকে জামাত সহকারে তারাবীহ নামাজ পরতে দেখলেন তখন তিনি খুশি হয়ে বললে ” এটা কতইনা উত্তম বিদাত !”

Reference :
** মিশকাত শরীফের قيام شهر رمضان অধ্যায়
** ইমাম বুখারী : সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড : পৃষ্টা ২৬৯



                               হযরত উসমান (রা) বিদাতে হাসানার প্রচলন :


★ হযরত ওসমান (রাঃ) জুমার নামাজে খুতবার আযান (দ্বিতীয় আজান) চালু করেছেন, যা রাসূল (সাঃ) ও দুই খলিফার আমলে ছিলনা। (সহীহ বুখারী পার্ট ১. পৃষ্ঠা ১২০)

★ যদিও গায়র মুকাল্লিদীনের অর্থাৎ আহলে হাদিস ভাইদের নিকট এই আযান বেদআত (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন :

★ মুহাম্মদ ইদরীস সালাফী এক প্রশ্নের জবাবে লিখে-"প্রথম আযান বেদআত" (জমীমা জাদীদা ফতোয়ায়ে সাত্তারিয়া-২য় খন্ড, ১৩পৃ:)

★ আব্দুস সাত্তার রহমানী গায়র মুকাল্লিদ "আজীব ও গরীব বেদআত" নামক এক কিতাব লিখেছেন,

উক্ত কিতাবে বেদআতের নামে হযরত উসমান রা: এর চালুকৃত আযানের আলোচনা করতে গিয়ে এটাকে বেদআতের মধ্যে শামীল করেছেন। (আজীব ও গরীব বেদআত-২৯)



                                ইমাম বুখারী (রহ) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :



★ ইমাম বুখারী (রাহ) এর আমলের বিবরণঃ
_____________
মুসাব্বিহ বিন সায়ীদ (রাহ) বলেন,
ইমাম বুখারী (রাহ) এর অভ্যাস ছিল, রামাদান মাসের প্রথম রাত থেকেই তাঁর সাথীগণ তাঁর নিকট জমায়েত হতেন। অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর প্রতি রাকাতে তিনি ২০ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরী পর্যন্ত তিনি কোর’’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবে প্রতি তিনদিনে সেহরীর সময় তাঁর এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত হয়ে যেত।
আর প্রতি এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত শেষে ইমাম বুখারী বলতেন,
এখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে।
রেফারেন্সঃ
১/সিফাতুস সাফওয়াহঃ২/৩৫৪
২/সিয়ারু আ’লামিন নুবালা

ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল থেকে যা পাওয়া গেলঃ
____________________________
১/ প্রতি রাকাতে ২০ টি আয়াত তেলাওয়াত করা। অর্থাৎ আয়াতের নাম্বার নির্ধারণ করা।
২/ প্রতিরাত সালাতের জন্য কোর’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করা।
৩/ প্রতি তৃতীয় রাতে জামাতের সাথে সালাত আদায়ে কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত খতম করা।
৪/ প্রতি তৃতীয় রাতে সাথীদেরকে বলাঃ দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে। তার মানে তিনি কোর’আন খতম করে দোয়া করতেন।

আমাদের দৃষ্টিতে এ আমলঃ
______________
আমরা মনে করি, এ আমল একটি উত্তম আমল, যা আল্লাহর সুন্তুস্টি অর্জনে এবং অশেষ ছওয়াব হাসিলে সহায়ক।

হে লা-মাযহাবীঃ
______________
আপনারা কোন আমলকে বা ইবাদতকে বেদ’আত নির্ধারণ করতে গিয়ে যে বিষয়গুলোর অবতারণা করে ধোঁকাবাজি করে থাকেন, তা হচ্ছে-
১/এমন আমল কি রাসুল (সা) করেছেন?
২/ এমন আমল কি সাহাবায়ে কেরাম করেছেন?
যদি না করে থাকেন, তবে তা বেদ’আত ও বাতিল আমল বলে গণ্য হবে।
এটা হচ্ছে কোন বিষয়কে বেদ’আত বানাতে আপনাদের পলিসি ও চালাকি।

সরাসরি প্রশ্নঃ
_______
এবার ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল নিয়ে আপনাদের নিকট সরাসরি প্রশ্নঃ
আপনাদের এ পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী হয়ে যাচ্ছেন।
কারণ, প্রতি রামাদান মাসে তিনি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেমে সালাত আদায় করতেন যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলুন তো,
১/রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে এভাবে প্রতিরাত এক তৃতীয়াংশ কোর’আনে কারীম তেলাওয়াত করে প্রতি তিন দিনে সাহাবীদের নিয়ে নামাজে কোর’আন খতম করেছেন?
২/ রামাদানে প্রতি তৃতীয় রাতে খতম শেষে দোয়া কবুলের কথা বলেছেন? বা দোয়া করেছেন?
৩/ একজন সাহাবী ও কি রামাদান মাসে এভাবে সালাত আদায় করেছেন?
আমি বলছি, করেন নি। এমন কোন প্রমাণ নেই।
আর সে জন্য আপনাদের বেদ’আতের পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল ইবাদতে এক নতুন আবিস্কার।
আর আপনাদের মতে প্রতিটি বেদ’আত ই ভ্রস্ট। যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
আর একই কারণে আপনাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী।



                               তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও
                         সালেহীনগনের বিদাতে হাসানা :



★ ইমামগন ও মুহাদ্দিসগন হাদিস সংকলন বিদাতে হাসানা এগুলো রাসুলের যুগে ছিল না তাই কেউ সংকলনও করেন নি, এসব হাদিস সংগ্রহ শুরু হয়েছিল তাবেঈগনের যুগ থেকে।

★ বর্তমানে যে সহিহ সিত্তাহ ছাড়াও শত শত হাদিসের কিতাব পেয়েছি আমরা তা সব বিদাতে হাসানার ফসল। নয়তো এক বার ভাবুন তো যদি আমাদের কাছে হাদিস না পোছাত কি অবস্থা হত আমাদের?

★ তাছাড়াতাছাড়া পুর্ববর্তী ইমামগন থেকে আজ পর্যন্ত ইমামগন কুরআন-সুন্নাহ থেকে গবেষনাভিত্তিক যুগ উপযোগী বিভিন্ন ফতোয়ার উদ্ভাবন করে থাকেন যেগুলো ছাড়া আমাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে যেত। এসব উত্তম বিদআত।

★ তাছাড়া বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাব, অথবা ৪ মাজহাব সেগুলো সব উত্তম বিদআত।

এই হাদিস থেকে তার প্রমান দেখুন :


রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন-

ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ

হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।

Reference :

** সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯,

** সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬,

** সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪


                                অন্যান্য উদাহরন :



জায়েয ও উত্তম বিদআতসমুহ একনজরে :

★ নিচের সমস্ত কাজগুলো বিদআত কারন কুরআন হাদিসে এগুলোর নিয়ম উল্লেখ নেই যে এভাবে এই খতম পড়তে হবে, অমুক তসবিহ এত হাজার বার বা এত লক্ষ বার পড়তে হবে কিন্তু এগুলো উত্তম বিদআত তথা বিদআতে হাসানা যা অনুমতি স্পষ্ট সহিহ হাদিসে এসেছে । এর নিয়ম কুরআন হাদিসে নেই তবুও এসব কাজকে নাজায়েয ফতোয়াদানকারী জাহান্নামের পাপ অর্জনকারী।
'
★ কুরআন শরীফ একত্রিকরন : আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে (বুখারী)

★ হাদিস সংকলন : কোন সাহাবীগনও লিখে রাখেন নি।

★ জামায়াতে তারাবিহ আদায় : উমর (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)

★ জুমার দ্বিতীয় আজান : উসমান (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)

★ ইদে মিলাদুন্নবী (সা) ইসলামিক স্বর্নযুগের পুর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের ইজমা।

★ খতমে তারাবিহ : রমজানে ৩০ দিনের মধ্যে বা তার আগেই ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজের মধ্যে সমস্ত আল-কুরআন খতম। -(ইমাম বুখারী (রহ) নিজে এই আমল করতেন)

★ খতমে বুখারী : বুখারী শরীফ খতম (যা রাসুলের যুগের ২০০-৩০০ বছর পর ইমাম বুখারী সংকলন করেছিলেন উক্ত কিতাব)

★ খতমে ইউনুস : "লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ জুয়ালিমিন" উক্ত আয়াতের নির্দিষ্ট সংখ্যক খতম।

★ খতমে তাসমিয়া : বিসমিল্লাহ শরীফ এর খতম।

★ খতমে খাজেগান : অনেক কিছু নিয়ে এই খতম।

★ খতমে গাউসিয়া : অনেক তসবিহ ও সুরা নিয়ে এ খতম।

★ গেয়ারবী শরীফ পাঠ করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও উত্তম কাজ ।

★ তাছাড়া অলীগনের লিখা বিভিন্ন দুরুদ ও অলীগনে কাশফ (অন্তরচক্ষু) বা স্বপ্নে প্রাপ্ত দুরুদ যা ফজিলতের জন্য পাঠ করা হয় সব সওয়াবের কাজ। যেমন : আমি যদি কোন দুরুদ লিখি যে :
'' হে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা) ওনার বংশধরগনের উপর আপনার স্বীয় সন্তুষ্টি অনুপাতে ও স্বীয় গুনাবলী, স্বীয় সৃষ্টি , স্বীয় ক্ষমতা, স্বীয় জিকির এবং সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য সৃষ্টির জিকিরের সংখ্যানুপাতে শান্তি ও রহমত বর্ষিত করুন, প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে উপরে উল্লেখিত সমস্ত কিছুর কোটি কোটি গুনে বর্ধিত করে কিয়ামত পর্যন্ত, হে পরম করুনাময়, হে মহামহিম আল্লাহ।
:
তা কি নাজায়েজ হবে নাকি জায়েয হবে আপনারাই বুঝবেন।

★ রেডিও টেলিভিশন এ ইসলামিক প্রোগ্রাম শুনা ও দেখা।


★ ওহাবী সালাফীরা যখন ডাক্তার জাকির নায়েকের ভাষন শুনে টিভিতে সেটাও কিন্তু
বিদআত যদি বিদাত বলে শুধু খারাপই বুঝায় তবে এসব বন্ধ করে দিন।

★ মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোষাক ব্যাবহার করে ইবাদতের জন্য এসবের মধ্যেও বিদাতে হাসানার উদাহরন রয়েছে।

★ মাটির পাত্রে খাওয়া সুন্নত। এখন কয়জন খান মাটির পাত্রে যে পাত্রই আবিষ্কার হয়েছে তা বিদাতে হাসানা।

NOTE: অনেকে যুক্তি দিয়ে বলে এসব নাকি ইসলামের সাথে সম্পর্কিত নয়। সত্যি কি তাই?
ইসলাম কি কাপড় -চোপর,  হাট -বাজার, চলা-ফেরা, হাটা-খাওয়া, উঠা -বসা, কথা বলা এসব কিছুর সুন্নত শিখায় নি?
এসব কিছুর সাথে সম্পর্কিত সকল নব আবিষ্কৃত জিনিস গুলো সবই বিদাত। ভাল বা কল্যানের জন্য হলে বিদাতে হাসানা। আর মানুষের ক্ষতির জন্য হলে তা বিদাতে সাইয়া।

সূত্র

প্রশ্ন: ৪১ : সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, ও সাক্ষীদাতা সকলেই কি অপরাধী ?

সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, ও সাক্ষীদাতা সকলেই অভিশপ্ত:::::
যারা সুদ দেয়,আর যারা খায় এবং এই বিষয়ে যারা চুক্তিপত্র তৈরি করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে তারা সবাই জাহান্নামী।
এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে,,


--(لعن رسول الله (ص
اكل الربا و مو كله و كاتبه و شا هديه و قال هم سواء
অর্থাত------ আল্লাহুর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা,সুদের চুক্তি লেখক,এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।তিনি বলেছেন পাপের দিক দিয়ে তারা সকলেই সমান অপরাধী।[সহিহ মুছলিম]


২) সুদের সর্বনিম্ন গুনাহ:---
সুদি লেনদেনের জন্য যে সমস্ত গুনাহ হয়ে থাকে তার সর্বনিম্ন টি হলো "আপন মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য"
হাদীসে এরশাদ হয়েছে---"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত " রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সুদের মধ্যে তিয়াত্তর টি গুনাহ রয়েছে।আর সর্ব নিম্ন গুনাহ টি হলো - নিজের মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য।{ মুসতাদরাকি হাকিম}


৩) সুদ যিনা অপেক্ষা অধিক মারাত্বক অপরাধ: ছত্রিশ বার যিনা করা অপেক্ষা এক দিরহাম সুদ গ্রহন করা অধিক অপরাধ।
হাদিসে আছে--- " যে ব্যাক্তি জেনেশুনে সুদের এক দিরহাম গ্রহণ করে,তার এই অপরাধ ছত্রিশবার যেনা করা অপেক্ষা ও মারাত্বক।( মুসনাদে আহমাদ ও তিবরানী)..



মোহাম্মদ শামসুল হুদা : 
 সুদ : ইসলামে ‘সুদ’কে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সুদ হচ্ছে শোষণের হাতিয়ার। সুদ গরীবকে আরো গরীব বানায় এবং ধনীকে আরো ধনী হবার সুযোগ করে দেয়। তাই সুদের মধ্যে ছড়িয়ে আছে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের অসংখ্য কুফল। সুদ হারাম হওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধি বিধান অষ্টম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ৭টি আয়াত, ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদের নিষিদ্ধতা প্রমাণিত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন (কবর থেকে) ঐ ব্যক্তির ন্যায় ওঠবে যাকে শয়তান আছর করে মাতাল করে দিয়েছে। এ ধরনের শাস্তির কারণ এই যে, সুদখোর লোকেরা বলত, বেচা-কেনাতো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ তা’আলা বেচা কেনাকে হালাল করেছেন আর সুদরকে করেছেন হারাম। সূরা আল বাক্বারাহ ২: ১৭৫।
আল্লাহ্ তা’আলা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। শৃঙ্খলাবদ্ধতা, ঐক্য সংহতির মনোভাব, স্বতন্ত্রবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, প্রতিশ্রুতিশীলতা, আত্মত্যাগ, সততা, সংযমশীলতা, মিতব্যয়ীতা, কঠোর পরিশ্রম, স্বজাতির সেবায় নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদন জাতীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণ ইত্যাদি মহৎ ও উন্নত গুণাবলী ইসলামের বৈশিষ্ট্য। মুসলমানগণ আজ এ সমস্ত গুণাবলী থেকে দূরে সরে গেছে। শৃঙ্খলাহীনতার কারণই মুসলমানগণের অধঃপতনের কারণ তাই শৃঙ্খলাহীনতার উৎপত্তি ঘটে চিন্তা চেতনার গীনতা থেকে। তাই চিন্তা-চেতনায় দীনতা যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নিঃস্ব, কপর্দকশূন্য ও পতের বিখারীতে পরিণত হয়েছে। এমন কি রাজা বাদশাহ পর্যন্ত রাজ্যহারা হয়ে গেছে।
আমি বলতে চাই মুসলমানরা যদি উন্নতি চায় এবং অন্যান্য জাতিসমূহের সাথে নিজেদের সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে প্রথমেই সুদী লেনদেন বর্জন করা ও নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থাপনাকে আঁকড়ে দরা এবং অবাধ ও স্বচ্ছ লেনদেনের সুব্যবস্থা করা।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে- “আল্লাহ্ পাক সুদের মাল নিশ্চিহ্ন করে দেন।”
বাহ্যত: কারো মনে হতে পারে যে, সুদের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আসলে পার্থিব জীবনেই সুদের সম্পদকে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চিহ্ন করে দেন। যেমন- সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া, অযথা খরচ বেশি হওয়া ইত্যাদি। সম্পদ নিশ্চিহ্ন হওয়ার আরেরকটি দিক হলো, সুদখোর তার উপার্জিত সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে না। অভাব অনটনের মাঝেই সে একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মোট কথা সুদী মালে কোন বরকত থাকে না। পক্ষান্তরে দান খয়রাতের মাধ্যমে বাহ্যত: সম্পদ হ্রাস হচ্ছে বলে মনে হলেও আল্লাহ পাক সে সম্পদের মাঝে বরকত দান করেন। ফলে সে সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির এই নি’আমত কখনো দুনিয়াতেই লাভ হয়, আর পরকালে তার প্রতিদানতো নিশ্চিতরূপেই পাওয়া যাবে।
সুদের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়তে গিয়ে মানসিক দিক থেকে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সুদর গ্রহণের ফলে অন্তর এমনই পাষাণ হয়ে যায় যে, কারো প্রতি কোন মায়া মমতা থাকে না। কারো বিপদে সুদখোরের মনে সহানুভূতি জাগে না। এমনকি আপন আত্মীয়ের কাছ থেকেও সুদ গ্রহণ করতে তার বিবেক বাধা দেয় না। এজন্য বলতে চাই সুদ বর্জনেই হলো উন্নতির বিকল্প পথ। সুদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অস্থায়ী সুখ লাভ করা যেতে পারে কিন্তু সাদকার মাধ্যমে শুধুমাত্র অস্থায়ী সুখই লাভ হবে না বরং সাদাক্বাহ্ পরকালের দীর্ঘ ও চিরস্থায়ী সুখ শান্তি বয়ে আনবে।
সুদখোর কঠোর নিষ্ঠুর, নির্মম ও নির্দয়। দরিদ্র জনগণের প্রতি তাদের মায়া মমতা ও সহানুভূতির লেশমাত্র নেই। তাই সমাজের অসহায় ও রগীব লোকেরা সুদখোরদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে বাহ্যিক ভয় করে বটে, কিন্তু সম্মান করে না। ভয় ও সম্মান ককনো এক জিনিস নয়। দুই লোকদের ভয় করাটা স্বাভাবিক। কারণ তারা কারো কোন ক্ষতি করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সমাজের কোন স্তরেই তাদের সম্মান নেই। সবাই তাদেরকে ঘৃণা করে। সুতরাং সুদখোররা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পৃথিবীর কোথাও সুদখোরদের সুখে সম্মানে নেই। পক্ষান্তরে যারা হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করেন এবং দান খয়রাত করেন, তারা সুখ শান্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছেন। তাদেরকে কখনো ধন-সম্পদের পিছনে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। তাদের সুখ শান্তি হয়তো কম। তাদের বাহ্যিক চাকচিক্য হয়তো নেই কিন্তু স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে তারা সুখ শান্তিতে আছে। এটাই তো প্রকৃত সুখ।
ঘুম : বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের নিকট ঘুষ একটি বহুল পরিচিত শব্দ। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে এ সর্বনাশা অসুখ। ক্রমেই সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। আজকাল যে দিকে তাকান, সেদিকেই ঘুষ চোখে পড়ে, নজরে আসে। ঘুমের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়, দেব-দেবীর কাহিনী পড়লে দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, মনুষ্য কর্তৃক নানা রকম উপটৌকন বা ঘুষ প্রদানের ঘটনা দেখা যায়। ফল-মূল, অস্ত্র, শস্য, নারী থেকে আরম্ভ করে কি না ছিল সেই উপটৌকনের তালিকায়। এই উপমহাদেশে ঘুষের ব্যাপক প্রসার ঘটে বিদেশী শস্তিসমূহ এই অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর। ঘুষ শুধু উপরথেকে নিচেই বিস্তৃত হয়নি। নিচ থেকে বিস্তৃত হয়েছে পরেও। ব্রিটিশ আমলে ঘুষ প্রতিষ্টানিকতা পায়। এই আমলে জনগণের কল্যাণের নামে প্রণীত হয় নানাবিধ আইন। ভূমি রাজস্ব আদায় উন্নয়, আইন-শৃঙ্খলা, রক্ষা, বিচার কার্য ইত্যাদির সাথে সাথে ইংরেজ রাজ পুরুষদের ব্যক্তিগত উচ্চভিলাসের পথ পরিক্রমায় ঘুষের পরিধি বিস্তৃত থাকে।
ঘুষ হচ্ছে অনেকটা প্রেমের মতো। প্রেম নামক অমিত শক্তি যেমন প্রেমিক-প্রেমিকাকে দুর্বার গতিতে টানে-ঘুষ নামক যাদুকরী শক্তি একভাবে কাছে টানে- ঘুষদাতা এবং ঘুষখোরকে। প্রেমিক প্রেমিকাকেন একজন আরেক জনের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার সঠিক কারণ যেমন বলা যায় না, তেমনি ঘুষ দাতা ও ঘুষরখোরের পরস্পরের আকর্ষণের সুনির্দিষ্ট কারণ বর্ণনা করা অসম্ভব। ঘুষের সংজ্ঞায় বলতে হয়- কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রগণের জন্যে য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় তাই হচ্ছে উৎকোচ বা ঘুষ। ঘুষ কখনো দিতে বাধ্য করা হয়, আবার কখনো নিজস্ব প্রয়োজনেই দেয়া হয়।
পবিত্র কুরআন মজীদ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন : “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্দ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যানয়ভাবে আত্সসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৮৮।
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন, “হে মানব জাতি। যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৬৮।
আলোচ্য আয়াতে হারাম পন্থার সম্পদ অর্জন এবং ভোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা এবং ঘুষের দালাল সকলের উপর অভিসম্পদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামে যাবে।” পবিত্র কুরআনে ও গুনাহের কাজ। ঘুষ মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই নষ্ট করে দেয়।
আমাদের বর্তমান সমাজে ঘুষ একটি মারাত্মক সংক্রামক বাধির ন্যায় বিস্তার লাভ করেছে। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। কেউ ঘুষ দিচ্ছে স্বেচ্ছায়, আবার কেউ ঘুষ দিচ্ছে বাধ্য হয়ে এবং ঘৃণা ভরে। ঘুষের অর্থ আজ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মিশে আছে আমাদের রক্ত মাংসের সাথে। যারা সুদ ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের জীবনের সামান্য নিরাপত্তাও নেই। কোথাও বসে দুদ- বিশ্রাম করার ফুরসতও তাদের হয় না।
মোটকথা, হারাম উপার্জনের পরিণতি অশুভই হয়ে থাকে। আর যারা অন্যের দু’পয়সা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে না। যতদূর সম্ভব হালাল উপার্জন দিয়ে খেয়ে পরে কোন রকমে জীবন কাটিয়ে দেয়। এ ধরনের লোকেরা কতই না সুখে আছে।
আর বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলতে চাই। বিচারক ও তার সহযোগীদের মধ্যে ঘুষের আদান প্রদান করা ইসলাম চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে মানুষের ধন-সম্পত্তির কিংদংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।” সূরা আর বাক্বারাহ ২: ১৮৮”।
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, বিচারকের ফয়সালা বা রায়ের দ্বারা কোন হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় না। আবার কোন হালাল জিনিসও হারাম হয়ে যায় না। কারণ বিচারকদের রায় সাধারণত: প্রকাশ্য যুক্তি প্রমাণ ও দলিলাদির উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়ে থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি ধোঁকা দিয়ে কিংবা ভুয়া দলিল ও প্রমাণপত্র পেশ করে অথবা ভুল তথ্য সরবরাহ করে বা ভুল যুক্তি দিয়ে বিচারকের ফায়সালাকে নিজের স্বপক্ষে আনার এবং সত্যকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করবে সেই দায়ী এবং গুনাহগার হবে। আর যদি কেউ বিচারককে ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং বিচারক ঘুষ খেয়ে রায় দেন, তাহলে ঘুষদাতা ও বিচারক উভয়েই দায়ী ও গুনাহগার হবে।
ঘুষখোর প্রথম জীবনে ঘুষের বাড়তি আয়ে খুবই ভাল থাকে কিন্তু শেষ জীবনে যখন মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে পরপারের পথে যাত্রা করেন তখনই দেখা দেয় বিড়ম্বনা। রোগে শোকে মুহ্যমান হয়ে যান। শত ধন-সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর দেয়া নি’আমত ভক্ষণ করাও তার পক্ষে দূরহ হয়ে পড়ে। নিজের পাশাপাশি সন্তান-সন্তুতি স্ত্রীসহ অন্যান্য সকলে রোগাক্রান্ত হন কিংবা বিভিন্ন জটিলতায় আটকে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। আর পরকালে ঘুষখোরদের জন্য তো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নির্দিষ্ট রয়েছে। তাদের অপরাধ অমার্জনীয়। ঘুষকোরদের নেক ‘আমল, নেক কাজ কোন কাজে আসবে না। তাদের জাহান্নাম গমন রোধ করতে পারবে না।
হাদীসে এসেছে- “আর রাশি ওয়াল মুরতাশি ফিননারে।” অর্থাৎ ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহিতা উভয়ে সমান অপরাধে অপরাধী।
হাদীসে- “সত্তর প্রকার অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। ঘুষ গ্রহণের অপরাধনিজের মায়ের সাথে ৩০ (ত্রিশ) বার যিনা করার গর্হিত কাজ।”
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে “ঘুষ” খাওয়াটা এখন অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে এবং বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ দেয়া হচ্ছে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি আমাদের সমাজে লজ্জার কোন বিষয় নয়। যে কাজটিতে সফল হয়, তার প্রশংসা হয়। উপরি যেখানে বড়, সেখানে অন্য বিবেচনা থোড়াই আমল পায়। ঘুষের ব্যাপারে পারিবারিক প্রতিরোধ নেই। কোন পিতাই প্রায় বলেন না তোর ঘুষের টাকায় ভাত খাব না, তোর টাকা গন্ধযুক্ত টাকা। কোন স্ত্রীই বলেন না স্বামীকে বেতন তো অত নয়, পেলে কোথায় অত টাকা। কোন সন্তানই বলে না তোমার পাপের ভাগ বা গুনাহর ভার তোমার একার; আমরা তোমার হালাল রুজির নুন-ভাতেই তুষ্ট ছিলাম। আনুবীক্ষণিক ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তানের সব পিতা-মাতাই সন্তানের বাড়তি আয়ে তুষ্ট থাকেন। সন্তান একাধিক থাকলে উৎস নির্বিশেষে যার আয় বেশি তাকে নিয়ে বেশি গৌরব করেন।
তাই আমাদেরকে ঘুষ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেজন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠি, পরিবার, অঞ্চল, সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানব বন্ধন, শোভা যাত্রা, সভা ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মাসজিদ, মন্দিরে সকল স্তর থেকে ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে ও সমালোচনা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষাই ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ নৈতিকতা অর্জন ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি নির্মূল করা কখনো সম্ভব নয়। মানুষকে মহত হতে হবে। কেননা মহত মানুষের জীবন ও আদর্শই সাফল্যের বাতিঘর।
পরিশেষে বলতে চাই, গুষ মানুষের সীমাহীন লোভ সৃষ্টি করে এবং দানশীলতার মতো মহৎ গুণকে দূর করে দেয়। ঘুষ মানুষের উদারতা, সহনশীলতা, দানশীলতা মনোভাবের পরিবর্তে স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, কৃপণতা, নির্মমতা ও প্রতিশোধমূলক মনোভাবের জন্ম দেয়। মোটকথা, ঘুষ হচ্ছে মানুষের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক।
ঋণ : পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ঋণদাতার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, “কে এমন আছে, যে আল্লাহকে কর্জে হাসনা বা উত্তম ঋণ দিবে এরপর তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।” সূরা আল হাদীস ৫৭ : ১১।
আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা মহান আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ তা’আলা গুণাগ্রাহী সহনশীল। উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থ হচ্ছে তার বান্দাদের ঋণ দিয়ে তাদের অভাব মোচন করা। কেউ যদি মহান আল্লাহর বান্দার প্রতি করুণা করে তাহলে আল্লাহ তা’আলাও তার প্রতি করুণা করবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে একবার ঋণ (কর্জে হাসানা) দিলে তা মহান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ দু’বার সাদাক্বাহ, করার সমতুল্য।”
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “আর ঋণ গ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও তবে তা তোমাদের জন্য খুবই উত্তম যদি তোমার উপলব্ধি করতে পারতে।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ২৮০।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে এভাবে উপদেশ দিয়েছেন ‘গুনাহ কম করো’ তোমার মৃত্যু সহজ হবে: ঋণ কম করো, স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা এবং পাওনা পরিমোধ টাল-বাহানা করা মারাত্মক অপরাধ এবং ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামান্তর।
অন্যত্র এক হাদীসে ঋণ গ্রহণের নিন্দা করা হয়েছে এবং ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই দুই রকম হাদীসের মর্মার্থ হলো বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা নিন্দনীয়। সুতরাং এর থেকে বিরত থাকা উচিত।
একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত ঋণ গ্রহণ করা মোটেই ঠিক হবে না। একান্ত প্রয়োজন যেমন- জিহাদ করা, কাফনের কাপড় ক্রয় করা, লজ্জা নিবারণের কাপড় কেনা ইত্যাদি। অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঋণ নেয়া যেতে পারে। আর এসব ব্যাপারে ঋণ নিলে আল্লাহ তা’আলা সেই ঋণ আদায়ে সাহায্য করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : আমি জান্নাতের দরজায় লেখা দেখেছি যে সাদাক্বাহ দিলে দশ গুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর ঋণ লাভমুক্ত ঋণ) প্রদান করলে আঠার গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়।
অন্য এক হাদীসে এর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, সাদাক্বাহ্ প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চাওয়া হয়, আর ঋণ চাওয়া হয় শুধু প্রয়োজনের কারণেই। এটাই স্বাভাবিক অবস্থা তাছাড়া কারো প্রযোজনে পূর্ণ করেদিলে সে ব্যক্তি যে পরিমাণ খুশি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্য ঋণ দেয়া অনেক বেশি সাওয়াবের কাজ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : মহান আল্লাহর রাস্তাসমূহের একটি রাস্তা। আল্লাহ তা’আলা যখন কাউকে অপমাণিত করতে চান, তখন তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন। ঋণগ্রন্থ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার জান্নাতে প্রবেশ হওয়ার বিষয়টি স্থগিত হয়। অর্থা- তার আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না তার ঋণ আদায় করা হয়।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, শহীদদের সমস্ত গুনাহ  মাফ করা হয় কিন্তু ঋণ মাফ করা হয় না। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলাসিতা বর্জন করা উচিত এবং মেহমান অতিথি আসলেও তাদের জন্য ঋণ করে মেহমানদারী করা ঠিক না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাউকে ঋণ দেয়, ঋণী ব্যক্তি যেন তাকে উপহার না দেয়। স্ত্রীর মোহরানা বাকী থঅকলেও এই মোহরানাও ঋণের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই যে, ব্যক্তি ঋণগ্রন্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে বড়ই দুর্ভাগা।
সহীহুল বুখারী’র এক রিওয়ায়েতে আছে নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তির কাছে কারো কোন পাওনা থাকে তার উচিত দুনিয়াতেই তা পরিশোধ করা অথবা মাফ করিয়ে নেয়া। নতুবা কিয়ামতের দিন দিরহাম দিনার, টাকা পয়সার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। কারো যদি কোন দাবি থাকলে তা নিজের সৎকর্ম দিয়ে পরিশোধ করা হবে। সৎকর্ম মেষ হয়ে গেলে পাওনাদারদের গুনাহ প্রাপ্য অর্থ পরিমাণে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সহীহুল বুখারী।
বাংলাদেশে অনেক বে-সরকারি সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থাগুলি দারিদ্র বিমোচন করার জন্য ঋণ দিয়ে থাকেন। সংস্থাগুলি ১ বছর বা দু বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ তুলে নেন। তাতে দখা যায় ঋণের সুদের পরিমাণ ২২ থেকে ৩৫ ভাগ দাড়িয়ে যায়। আবার এই ঋুণ সময় মত না দিলে ঋণ গ্রহিতাকে অপমাণ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র, ঘরের টিন প্রভৃতি খুলে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে পত্রিকান্তে দেখা যায় বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরুষ বা মহিলা ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন-যাপন করছে। আমার মনে হয় ঋণনিয়ে ১০ থেকে ২০ ভাগ লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও বাকী ৮০ ভাগ লোক স্বাবলম্বীর আওতায় পড়ে না। বরঞ্চ ঋণ গ্রহিতাদের ঋণ দাতা সংস্থার সুদ দিতে দিতে তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে ফেলে ও হয়রানি ছাড়াও মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত হয়। তবে এনজিওগুলো যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ঠেঙ্গামারা শতশত সংস্থাগুলো সব ধরনের লোক বা ব্যবসা খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। এনজিওগুলো হতে ভিক্ষুকরা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ। ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ এদেরকে ঋণের সুদ দিতে হয়নি। এ ধরণের সুদ মুক্ত ঋণ দিলে বেশির ভাগ ঋণ গ্রহীতাদের স্বালম্বী হওয়ার রাস্তা সুগম হয়।
কোন সংস্থা ব্যাংক, বীমা, কাহারো কাছে ঋণগ্রস্ত হওয়া মোটেই ঠিক না। ঋণ ছাড়াই কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুদী অর্থাবস্থায় ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন ও অন্যান্য সুদী প্রতিষ্ঠানগুলো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে না। কারণ সুদসহ মূলধন ফেরত পাবে এটাই তাদের প্রধান হিসাব।
সুদ মানুষের মধ্যে নির্মমতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, কৃপণতা, নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার জন্ম দেয় সুদ হচ্ছে মানুষের উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক। সুদ মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধিও মেধা বিকাশের বাধা সৃষ্টি করে। মোট কথা সুদ সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি করে। অতএব এ থেকে বেঁচে থাকা সকলের দায়িত্ব।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক দিনাজপুরের কাগজ। রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক ও দি নিউন্যাশন, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।

প্রশ্ন ৪০ : পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা কুরআনের কোথায় আছে ?


﴿فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ﴾

কাজেই ২২   আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো ২৩   যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় এবং যখন তোমাদের সকাল হয়৷  (সুরা রূম : আয়াত ১৭ )

২২ . এখানে "কাজেই " শব্দটি এ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে, যখন তোমরা জানতে পারলে ঈমান ও সৎকাজের এহেন পরিণাম হবে এবং কুফরী ও মিথ্যা আরোপের এহেন পরিণাম হবে তখন তোমাদের এ ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত৷ তাছাড়া "কাজেই" শব্দটির এ অর্থও হয় যে, মুশরিক ও কাফেররা পরকালীন জীবনকে অসম্ভব গণ্য করে আল্লাহকে মূলত অক্ষম ও অপারগ ঘোষণা করছে৷ কাজেই এর মোকাবিলায় তুমি আল্লাহর প্রশংসা করো, তাঁর মহিমা প্রচার করো এবং এ দুর্বলতা থেকে তিনি মুক্ত একথা ঘোষণা করে দাও৷ এখানে নবী (সা) কে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাঁর মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে সমগ্র মুমিন সমাজকে৷
২৩ . আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরিকরা নিজেদের শিরক ও আখেরাত অস্বীকারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি যেসব দোষ- ত্রুটি ও দুর্বলতা আরোপ করে থাকে সেই অনন্য মহামহিম সত্ত্বাকে তা থেকে পাক- পবিত্র ঘোষণা করা এবং একথা প্রকাশ করা৷ এ ঘোষণা ও প্রকাশের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে নামায৷ এরি ভিত্তিতে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবনে যায়েদ ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে "তাসবীহ পাঠ" তথা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ নামায পড়া৷ এ তাফসীরের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের এ আয়াতের মধ্যেই রয়ে গেছে অর্থাৎ এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার জন্য কয়েকটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে৷ একথা সুস্পষ্ট, আল্লাহ সমস্ত দোষ- ত্রুটিমুক্ত - এ আকীদা পোষণ করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য আবার সকাল- সাঁঝে এবং দুপুরে(জোহর) ও রাতের (ঈশা) নামাযের সময় নির্ধারণের প্রশ্নই উঠতো না৷ কারণ এ আকীদা তো মুসলমানদের সবসময়ই পোষণ করতে হবে৷ এভাবে যদি শুধুমাত্র মুখেই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলেও এ সময়গুলো নির্ধারণ করার কোন অর্থ হয় না৷ কারণ মুসলমানকে তো সবসময় এ আকীদা প্রকাশ করতে হবে৷ এভাবে যদি নিছক কণ্ঠের মাধ্যমে আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ করার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলেও এসময়গুলো নির্ধারণ করা অর্থহীন হয়ে পড়ে৷ কারণ মুসলমানকে তো সর্বক্ষণ একথা প্রকাশ করতে হবে৷ তাই সময় নির্দিষ্ট করার মাধ্যমে আল্লাহর গুণ ও মহিমা প্রচার করার হুকুম নিসন্দেহে তাঁর একটি বিশেষ কার্যকর কাঠামোর প্রতিই ইঙ্গিত করে৷ আর এ কার্যকর কাঠামোটি নামায ছাড়া আর কিছুই নয়৷ 
 
 

﴿وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ﴾

আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে তাঁর জন্যই প্রশংসা এবং (তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো) তৃতীয় প্রহরে এবং যখন তোমাদের কাছে এসে যায় যোহরের সময়৷ ২৪   (সুরা রূম : আয়াত ১৮ )


২৪ . এ আয়াতে চারটি সময়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছেঃ ফজর , মাগরিব, আসর ও যোহর৷ এ ছাড়াও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরো যেসব ইশারা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ


 ﴿أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا﴾

''নাম কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠ করো৷" (বনী ইসরাঈল ৭৮)



﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ﴾

"আর নামায কায়েম করো দিনের দুই মাথায় এবং রাতের কিছু অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর৷" (হুদ , ১১৪ আয়াত )

 صْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ

"আর তোমার রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্য উদিত হবার আগে এবং তাঁর অস্ত যাবার আগে৷ আর রাতের কিছু সময়ও আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং দিনের প্রান্তভাগেও৷" (ত্বাহা , ১৩০ আয়াত)


এর মধ্যে থেকে প্রথম আয়াতটি বলছেঃ নামাযের সময়সীমা হচ্ছে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ঈশা পর্যন্ত এবং এরপর হচ্ছে ফজরের সময়৷ দ্বিতীয় আয়াতে দিনের দুই প্রান্ত অর্থ ফজর ও মাগরিবের সময় এবং কিছু রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরের সময়টি হচ্ছে ঈশার ওয়াক্ত৷ তৃতীয় আয়াতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে অর্থ ফজরের সময় এবং অস্তমিত হওয়ার পূর্বে অর্থ আসরের সময়৷ রাতের সময়ের মধ্যে মাগরিব ও ঈশা উভয়ই অন্তরভুক্ত৷ আর দিনের প্রান্ত হচ্ছে তিনটিঃ এক, সকাল৷ দুই, সূর্য ঢলে পড়া এবং তিন, মাগরিব৷ এভাবে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা আজ যে পাঁচটি সময়ে নামায পড়ে থাকে কুরআন মাজীদ বিভিন্ন স্থানে সে সময়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছে৷কিন্তু একথা স্পষ্ট শুধুমাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করে কোন ব্যক্তিও নামাযের সময় নির্ধারণ করতে পারতো না৷ মহান আল্লাহর নিযুক্ত কুরআনের শিক্ষক মুহাম্মাদ (সা) নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে এ ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনা না দিলে তাদের পক্ষে সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া সম্ভবপর ছিল না৷
এখানে একটু থেমে হাদীস অস্বীকারকারীদের ধৃষ্ঠতাঁর কথা ভাবুন৷ তারা "নামায পড়া" কে বিদ্রুপ করে এবং বলে, মুসলমানরা বর্তমানে যে নামায পড়ছে এটা আদতে সে জিনিসই নয় কুরআনে যার হুকুম দেয়া হয়েছে৷ তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কুরআন তো নামায কায়েম করার হুকুম দেয় এবং তাঁর অর্থ নামায পড়া নয় বরং "রবুবিয়াতের ব্যবস্থা" কায়েম করা৷ এখন তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করুন, রবুবিয়াতের এ অভিনব ব্যবস্থাটি কোন ধরনের যাকে সূর্য উদিত হবার পূর্বেই কায়েম করা যেতে পারে অথবা আবার সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে কিছু রাত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্তও কায়েম করা যায় ? আর কোন ধরনের রবুবিয়াত ব্যবস্থা বিশেষ করে জুমার দিন কায়েম করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ?
----------------------------------------
আর বিশেষ ধরনের এমন কি রবুবিয়াত ব্যবস্থা আছে যা কায়েম করার জন্য মানুষ যখন অগ্রসর হয় তখন প্রথমে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে ফেলে গাঁট পর্যন্ত আর এই সাথে মাথাও মসেহ করে নেয়, অন্যথায় তাকে কায়েম করা যেতে পারে না?
--------------------------------------
আর রবুবিয়াত ব্যবস্থার মধ্যে এমন কি বিশেষত্ব আছে, যার ফলে যদি মানুষ নাপাকির অবস্থায় থাকে, তাহলে যতক্ষণ গোসল না করে নেয় ততক্ষণ তাকে কায়েম করতে পারে না?
--------------------
আর এটাই বা কেমন ব্যাপার, যদি কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে মিলন করে এবং সেখানে পানি না পাওয়া যায় তাহলে এ অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থাকে কায়েম করার জন্য পাক- পবিত্র মাটিতে হাত ঘসে নিয়ে সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর ঘসতে হবে ?
--------------------------------------
আর এ কেমন ধরনের অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থা যে, যদি কখনো সফর করতে হয় তাহলে মানুষ তাকে পুরোপুরি কায়েম করার পরিবর্তে অর্ধেকটাই কায়েম করে?
---------------------------------
আর এটা কোন ধরনের কৌতুকপ্রদ ব্যাপার যে, যদি মুসলিম সেনাদল শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেনাদলের অর্ধেক সিপাহী অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে " রবুবিয়াত ব্যবস্থা" কায়েম করতে থাকবে এবং বাকি অর্ধেক ময়দানে শত্রুর মোকাবিলা করতে থাকবে ? তাঁরপর যখন প্রথম দলটি ইমামের পেছনে রবুবিয়াত ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে একটি সিজদা করে নেবে তখন উঠে দাঁড়িয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি তাদের জায়গায় এসে ইমামের পেছনে "রবুবিয়াত ব্যবস্থা" কায়েম করতে থাকবে ?
------------------------------------
কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো একথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে যে নামায কায়েম করার অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের নামায কায়েম করা যা সারা দুনিয়ার মুসলমানরা পড়ে থাকে৷কিন্তু হাদীস অস্বীকারকারীদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা নিজেরা পরিবর্তিত না হয়ে ইসলামকে পরিবর্তিত করার জন্য চাপ দিয়ে চলছে৷ আসলে যতক্ষণ কোন ব্যক্তি মহান আল্লাহর মোকাবিলায় একেবারেই শংকাহীন ও নির্লজ্জ না হয়ে যায় ততক্ষণ সে তাঁর বাণীর সাথে এ বিদ্রুপাত্মক আচরণ করতে পারে না, যা এরা করছে ৷ অথবা এমন এক ব্যক্তি কুরআনের সাথে এ তামাশা করতে পারে যে নিজের মনে কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে স্বীকৃতি দেয় না এবং নিছক ধোঁকা দেবার জন্য কুরআন কুরআন বলে চিৎকার করে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করতে চায়৷





﴿أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا﴾

 নামায কায়েম করো ৯১ সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ৯২ নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত ৯৩ এবং ফজরে কুরআন পড়ারও ব্যবস্থা করো৷ ৯৪ কারণ ফজরের কুরআন পাঠ পরিলক্ষিত হয়ে থাকে৷৯৫ (সুরা বনী ইসরাঈল ৭৮ )
 
৯১. পর্বত প্রমাণ সমস্যা ও সংকটের আলোচনা করার পর পরই নামায কায়েম করার হুকুম দেয়া হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ মর্মে একটি সূক্ষ্ম ইংগিত করেছেন যে, এ অবস্থায় একজন মু'মিনের জন্য যে অবিচলতার প্রয়োজন হয় তা নামায কায়েমের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে ৷
৯২. (আরবী -----------------) এর অনুবাদ করেছি "সূর্য ঢলে পড়া" অবশ্যি কোন কোন সাহাবা ও তাবেঈ "দুলূক" অর্থ নিয়েছেন সূর্যাস্ত ৷ কিন্তু অধিকাংশের মতে এর অর্থ হচ্ছে দুপুরে সূর্যের পশ্চিমে ঢলে পড়া ৷ হযরত উমর, ইবনে উমর, আনাস ইবনে মালিক, আবু বায়যাতাল আসলামী, হাসান বাসরী, শা'বী, আতা, মুজাহিদ এবং একটি বর্ণনামতে ইবনে আব্বাস ও এ মতের সমর্থক ৷ ইমাম মুহাম্মাদ বাকের ও ইমাম জাফর সাদেক থেকেও এই মত বর্ণিত হয়েছে ৷ বরং কোন কোন হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও (আরবী -------------) এর এ ব্যাখ্যাও উদ্ধৃত হয়েছে, যদিও এর সনদ তেমন বেশী শক্তিশালী নয় ৷
৯৩. (আরবী ------------) এর অর্থ কেউ কেউ নিয়েছেন "রাতের পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যাওয়া ৷ " আবার কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন মধ্যরাত ৷ যদি প্রথম অর্থটি মেনে নেয়া হয় তাহলে এর মানে হবে এশার প্রথম ওয়াক্ত ৷ আর দ্বিতীয় অর্থটি মেনে নিলে এখানে এশার শেষ ওয়াক্তের দিকে ইংগিত করা হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে ৷
৯৪. ফজর শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ভোর হওয়া বা প্রভাতের উদয় হওয়া অর্থাৎ একেবারে সেই প্রথম লগ্নটি যখন প্রভাতের শুভ্রতা রাতের আঁধার চিরে উঁকি দিতে থাকে ৷ ফজরের কুরআন পাঠ মানে হচ্ছে, ফজরের নামায, কুরআন মজীদে নামায প্রতিশব্দ হিসেবে কোথাও ' সালাত ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আবার কোথাও বিভিন্ন অংশের মধ্য থেকে কোন একটির নাম নিয়ে সমগ্র নামাযটি ধরা হয়েছে ৷ যেমন তাসবীহ, যিকির, হামদ (প্রশংসা) কিয়াম (দাঁড়ানো) রুকূ ' সিজদাহ ইত্যাদি ৷ অনুরূপভাবে এখানে ফজরের সময় কুরআন পড়ার মানে শুধু কুরআন পাঠ করা নয় বরং নামাযে কুরআন পাঠ করা ৷ এভাবে নামাযের উপাদান ও অংশ কি ধরনের হতে হবে কুরআন মজীদ সেদিকে পরোক্ষ ইংগিত দিয়েছে ৷ আর এ ইংগিতের আলোকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের কাঠামো নির্মাণ করেন ৷ বর্তমানে মুসলমানদের মধ্যে নামাযের এ কাঠামোই প্রচলিত ৷
৯৫. ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার মানে হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয় ৷ হাদীসে সুস্পষ্ট একথা বর্ণনা করা হয়েছে যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক নামায ও প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী তবুও যখন ফজরের নামাযের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষের কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি একটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী ৷ এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে দীর্ঘ আয়াত ও সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন ৷ সাহাবায়ে কেরামও তাঁর এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং পরবর্তী ইমামগণ একে মুসতাহাব গণ্য করেন ৷ এ আয়াতে সংক্ষেপে মি'রাজের সময় যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল তার সময়গুলো কিভাবে সংগঠিত ও বিন্যস্ত করা হবে তা বলা হয়েছে ৷ নির্দেশ দেয়া হয়েছে একটি নামায পড়ে নিতে হবে সূর্যোদয়ের আগে ৷ আর বাকি চারটি নামায সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে ৷ তারপর এ হুকুমটি ব্যাখ্যা করার জন্য জিব্রীল আলাইহিস সালামকে পাঠানো হয়েছে ৷ তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযগুলোর সঠিক সময়ের শিক্ষা দান করেছেন ৷ আবু দাউদ ও তিরমিযীতে বলেন আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
"জিব্রীল দু'বার আমাকে বায়তুল্লাহর কাছাকাছি জায়গায় নামায পড়ান ৷ প্রথম দিন যোহরের নামায ঠিক এমন সময় পড়ান যখন সূর্য সবেমাত্র হেলে পড়েছিল এবং ছায়া জুতার একটি ফিতার চাইতে বেশী লম্বা হয়নি ৷ তারপর আসরের নামায পড়ান এমন এক সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমপরিমাণ ছিল ৷ এরপর মাগরিবের নামায এমন সময় পড়ান যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে ৷ অতপর পশ্চিমাকাশের লালিমা খতম হবার পরপরই এশার নামায পড়ান আর ফজরের নামায পড়ান ঠিক যখন রোযাদারের ওপর খাওয়া দাওয়া হারাম হয়ে যায় তেমনি সময় ৷ দ্বিতীয় দিন তিনি আমাকে যোহরের নামায এমন সময় পড়ান যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমান ছিল ৷ আসরের নামায পড়ান এমন সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের দ্বিগুণ ছিল ৷ মাগরিবের নামায পড়ান এমন সময় যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে ৷ এশার নামায পড়ান এমন সময় যখন রাতের তিনভাগের একভাগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং ফজরের নামায পড়ান আলো চারদিকে ভালভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ৷ তারপর জিব্রীল আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে মুহাম্মাদ! এই হচ্ছে নবীদের নামায পড়ার সময় এবং এ দু'টি সময়ের মাঝখানেই হচ্ছে নামাযের সঠিক সময় ৷ "(অর্থাৎ প্রথম দিন প্রত্যেক নামাযের পথম সময় এবং দ্বিতীয় দিন শেষ সময় বর্ণনা করা হয় ৷ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায এ দু'টি সময়ের মাঝখানে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ৷)
কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায়ও পাঁচটি নামাযের এ ওয়াক্তসমূহের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে ৷ যেমন সূরা হূদে বলা হয়েছে:
আরবী ---------------------------------------------------------------------------
"নামায কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিব) এবং কিছু রাত পার হয়ে গেলে (অর্থাৎ এশা) ৷ "(১১৪ আয়াত)
আরবী --------------------------------------------------------------------------
"আর নিজের রবের হামদ (প্রশংসা) সহকারে তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা) করতে থাকো সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসর) এবং রাতের সময় আবার তাসবীহ করো (এশা) আর দিনের প্রান্তসমূহে (অর্থাৎ সকাল, যোহর ও মাগরিব)"(১৩০ আয়াত)
তারপর সূরা রূমে বলা হয়েছে:
আরবী -------------------------------------------------------------------------
"কাজেই আল্লাহর তাসবীহ করো যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় (মাগরিব) এবং যখন সকাল হয় (ফজর) ৷ তাঁরই জন্য প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং তাঁর তাসবীহ করো দিনের শেষ অংশে (আসর) এবং যখন তোমাদের দুপুর (যোহর) হয় ৷ "[ ১৭-১৮ আয়াত ]
নামাযের সময় নির্ধারণ করার সময় যেসব প্রয়োজনীয় দিকে নজর রাখা হয়েছে তার মধ্যে সূর্য পূজারীদের ইবাদাতের সময় থেকে দূরে থাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ৷ সকল যুগেই সূর্য মুশরিকদের সবচেয়ে বড় বা অনেক বড় মাবুদের স্থান দখল করেছে ৷ সূর্য উদয় ও অস্তের সময়টায়ই তারা বিশেষ করে তার পূজা করে থাকে ৷ তাই এসব সময় নামায পড়াকে হারাম করা হয়েছে ৷ তাছাড়া সাধারণত সূর্য উদয়ের পর থেকে নিয়ে মধ্য গগণে পৌঁছার সময়ে তার পূজা করা হয়ে থাকে ৷ কাজেই ইসলামে হুকুম দেয়া হয়েছে, দিনের বেলার নামাযগুলো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে পড়া শুরু করতে হবে এবং সকালের নামায সূর্য হবার আগেই পড়ে ফেলতে হবে ৷ এ প্রয়োজনীয় বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা করেছেন ৷ একটি হাদীসে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ (রা) বর্ণনা করছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযের সময় জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন:
আরবী --------------------------------------------------------------------------
"ফজরের নামায পড়ো এবং সূর্য উদিত হতে থাকলে বিরত হও, সূর্য ওপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত ৷ কারণ সূর্য যখন উদিত হয় তখন শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে দিয়ে বের হতে থাকে এবং এ সময় কাফেররা তাকে সিজদা কর ৷
তারপর তিনি আসরের নামাযের উল্লেখ করার পর বললেন:
আরবী ----------------------------------------------------------------------------
"তারপর নামায থেকে বিরত হও সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত ৷ কেননা, সূর্য শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"৷ (মুসলিম)
এ হাদীসে সূর্যের শয়তানের শিংয়ের মাঝখানে দিয়ে উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়াকে একটা রূপক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় শয়তান লোকদের জন্য একটি বিরাট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেয় ৷ লোকেরা যখন সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় তার সামনে সিজদা করে তখন যেন মনে হয় শয়তান তাকে নিজের মাথায় করে এনেছে এবং মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে ৷ রসূল (সা) তাঁর নিজের নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে এ রূপকের রহস্য ভেদ করেছেন "এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"৷


=====================


﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ﴾


 আর দেখো, নামায কায়েম করো দিনের দু’ প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর৷ ১১৩ আসলে সৎকাজ অসৎকাজকে দূর করে দেয়৷ এটি একটি স্মারক তাদের জন্য যারা আল্লাহকে স্মরণ রাখে৷১১৪ (সুরা হুদ : ১১৪)

১১৩. দিনের দু'প্রান্ত বলতে ফজর ও মাগরিব এবং কিছু রাত অতিবাহিত হবার পর বলতে এশার সময় বুঝানো হয়েছে৷ এ থেকে বুঝা যায়, এ বক্তব্য এমন এক সময়ের যখন পাঁচ ওয়াক্তের নামায নির্ধারিত হয়নি৷ মি'রাজের ঘটনা এরপর সংঘটিত হয় এবং তাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বিধান দেয়া হয়৷ (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন বনী ইসরাঈল ৯৫, ত্বা-হা ১১১, রুম ১২৪ টীকা)

১১৪. অর্থাৎ যেসব অসৎকাজ দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে এবং সত্যের এ দাওয়াতের প্রতি শত্রুতার ব্যাপারে তোমাদের সাথে যেসব অসৎকাজ করা হচ্ছে এসবগুলো দূর করার আসল পদ্ধতি হচ্ছে এই যে, তোমরা অনেক বেশী সৎ হয়ে যাও এবং নিজেদের সৎকাজের সাহায্যে এ অসৎকাজকে পরাস্ত করো৷ আর তোমাদের সৎ বানাবার সর্বোত্তম মাধ্যম হচ্ছে এ নামায৷ নামায আল্লাহর স্মরণকে তরতাজা করতে থাকবে এবং তার শক্তির জোরে তোমরা অসৎকাজের এ সংঘবদ্ধ তুফানী শক্তির কেবল মোকাবিলাই করতে পারবে তাই নয় বরং দুনিয়ায় কার্যত সৎকাজ ও কল্যাণের ব্যবস্থাও কায়েম করতে পারবে৷ (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন আনকাবুত ৭৭-৭৯ টীকা)




Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...