রাসুল সা: ইলমে গায়েবের মালিক নন, এবং তিনি হাযির নাযিরও নন । প্রমাণ স্বরূপ নিচের আয়াত গুলো মনযোগ সহকারে পড়ুন, মহান আল্লাহ নিজেই এ বিষয়গুলো পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন :
وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا [٤:١١٣
(হে নবী ) আল্লাহ তোমার ওপর কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন, এমন সব বিষয় তোমাকে শিখিয়েছেন যা তোমার জানা ছিল না এবং তোমার প্রতি তাঁর অনুগ্রহ অনেক বেশী। (সুরা নিসা : ১১৩)
أَلَمْ يَجِدْكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ [٩٣:٦]
(৯৩-সুরা দুহা:৬.) (হে নবী ) তিনি কি তোমাকে এতিম হিসেবে
পাননি? তারপর তোমাকে আশ্রয় দেননি?৬
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ [٩٣:٧]
(৯৩-সুরা দুহা:৭.) (হে নবী ) তিনি তোমাকে পথ না পাওয়া
অবস্থায় পান, তারপর তিনিই পথ দেখান।৭
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغْنَىٰ [٩٣:٨]
(৯৩-সুরা দুহা:৮.)(হে নবী ) তিনি তোমাকে নিঃস্ব অবস্থায়
পান, তারপর তোমাকে ধনী করেন।৮
ذَٰلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۖ وَمَا كُنتَ
لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ [١٢:١٠٢]
(১২-সুরা ইউসুফ:১০২.) হে মুহাম্মাদ! এ কাহিনী
অদৃশ্যলোকের খবরের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমাকে অহীর মাধ্যমে জানাচ্ছি। নয়তো, তুমি
তখন উপস্থিত ছিলে না যখন ইউসুফের ভাইয়েরা একজোট হয়ে যড়যন্ত্র করেছিল।
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الْغَرْبِيِّ إِذْ قَضَيْنَا
إِلَىٰ مُوسَى الْأَمْرَ وَمَا كُنتَ مِنَ الشَّاهِدِينَ [٢٨:٤٤]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৪.) (হে মুহাম্মাদ!) তুমি সে
সময় পশ্চিম প্রান্তে উপস্থিত ছিলে না।৬০ যখন আমি মূসাকে এ শরীয়াত দান করেছিলাম এবং
তুমি সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্তও ছিল না।৬১
وَلَٰكِنَّا أَنشَأْنَا قُرُونًا فَتَطَاوَلَ عَلَيْهِمُ
الْعُمُرُ ۚ
وَمَا كُنتَ ثَاوِيًا فِي أَهْلِ مَدْيَنَ تَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا
وَلَٰكِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ [٢٨:٤٥]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৫.) বরং এরপর (তোমার যুগ
পর্যন্ত) আমি বহু প্রজন্মের উদ্ভব ঘটিয়েছি এবং তাদের ওপর অনেক যুগ অতিক্রান্ত হয়ে
গেছে।৬২ তুমি মাদয়ানবাসীদের মধ্যেও উপস্থিত ছিলে না, যাতে তাদেরকে আমার আয়াত শুনাতে
পারতে৬৩ কিন্তু আমি সে সময়কার এসব তথ্য জানাচ্ছি।
وَمَا كُنتَ بِجَانِبِ الطُّورِ إِذْ نَادَيْنَا وَلَٰكِن
رَّحْمَةً مِّن رَّبِّكَ لِتُنذِرَ قَوْمًا مَّا أَتَاهُم مِّن نَّذِيرٍ مِّن
قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ [٢٨:٤٦]
(২৮-সুরা ক্বাসাস:৪৬.) আর তুমি তূর পাহাড়ের পাশেও
তখন উপস্থিত ছিলে না যখন আমি (মূসাকে প্রথমবার) ডেকেছিলাম। কিন্তু এটা তোমার রবের
অনুগ্রহ (যার ফলে তোমাকে এসব তথ্য দেয়া হচ্ছে)৬৪ যাতে তুমি তাদেরকে সতর্ক করো
যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোন সতর্ককারী আসেনি,৬৫ হয়তো তারা সচেতন হয়ে যাবে।
====================================
উপরোক্ত আয়াতে কারীমা সমূহ থেকে পরিস্কার জানা যাচ্ছে যে, রাসুল সা: আলেমুল গায়েব ছিলেন না, বরং, তাঁর নবুওয়াতী প্রয়োজনে যেখানে যেটুকু প্রয়োজন আল্লাহ তাকে অহীর মাধ্যমে অদৃশ্যের সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন, অথবা মিরাজের মাধ্যমে, বা জাগ্রত অবস্থায় বা ঘুমন্ত অবস্থায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে অদৃশ্য জগতের বিভিন্ন বিষয় দেখিয়ে দিয়েছেন। ব্যস এতটুকুই। তবে তার অবস্থা সাধারণ দার্শনিকের ন্যায় শুধুমাত্র কল্পনা বা চিন্তার যৌক্তিকতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার অবস্থা হচ্ছে চাক্ষুষ বর্ণনাকারী। তিনি যা বর্ণনা করেছেন তা তাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে, সুতরাং, তিনি হচ্ছেন চাক্ষুষ স্বাক্ষী তথা চাক্ষুষ বর্ণনাকারী।
অপরদিকে, আসলে আলেমুল গায়েব একমাত্র মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন :
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ عَالِمُ
الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۖ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ [٥٩:٢٢]
(৫৯-সুরা হাশর:২২.) আল্লাহই সেই ৩২ মহান সত্তা
যিনি ছাড়া আর কোন মা’বুদ নেই। ৩৩ অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সবকিছুই তিনি জানেন। ৩৪ তিনিই
রহমান ও রহীম।৩৫
(৭২-সুরা
জ্বিন:২৬.) তিনি গায়েবী বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তাঁর গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান
কারো কাছে প্রকাশ করেন না।২৬ [[টিকা:২৬) অর্থাৎ গায়েবী বিষয়ের সবটুকু জ্ঞান
একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। গায়েবী বিষয়ের এ পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান তিনি কাউকেই দেন
না।]] (۷۲: ۲۶)
এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হচ্ছেন একমাত্র হাজির নাযির :
وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا
تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ ۖ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ
الْوَرِيدِ [٥٠:١٦]
(৫০-ক্বাফ:১৬.) আমি১৯ মানুষকে সৃষ্টি করেছি আর
তাদের মনে যেসব কুমন্ত্রণা উদিত হয় তা আমি জানি। আমি তার ঘাড়ের রগের চেয়েও তার বেশী
কাছে আছি।২০
টিকা:২০) অর্থাৎ
আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান ভিতর ও বাহির থেকে এমনভাবে মানুষকে পরিবেষ্টিত করে আছে যে,
আমার ক্ষমতা ও জ্ঞান তার যতটা নিকটে ততটা নিকটে তার ঘাড়ের শিরাও নয়। তার কথা শোনার
জন্য আমাকে কোথাও থেকে আসতে হয় না। তার মনের মধ্যে উদিত কল্পনাসমূহ পর্যন্ত আমি
সরাসরি জানি। অনুরূপভাবে তাকে যদি কোন সময় পাকড়াও করতে হয় তখনও আমাকে কোথাও থেকে
এসে তাকে পাকড়াও করতে হয় না। সে যেখানেই থাকুক, সর্বদা আমার আয়ত্বাধীনেই আছে যখন
ইচ্ছা আমি তাকে বন্দী করবো।
No comments:
Post a Comment