প্রশ্ন: ৪৭ : কোরবানির সাথে কি আকিকা দেওয়া যাবে কিনা ?

প্রশ্ন : জুমআর বয়ানে খতীবসাহেব বললেন, ‘অনেকে কুরবানীর সাথে আকীকার অংশ দিয়ে থাকেন এভাবে করা জায়েয নয়। কুরবানির সাথে আকীকার অংশ দিলে আকিকা আদায় হবে না।’ সঠিক মাসআলাটি জানতে চাই!

  উত্তর : কুরবানি ও আকীকা আলাদাভাবেই করা উচিৎ। তবে একত্রে করলে আদায় হবে না তা নয়। একত্রে করলেও কুরবানী-আকীকা দুটোই আদায় হবে। কারণ আকীকাও এক ধরনের কুরবানী। হাদীস শরীফে আকীকার উপরও ‘নুসুক’ শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। আর এখানে ‘নুসুক’ অর্থ কুরবানী। হাদীসের আরবী পাঠ এই- سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا أحب العقوق كأنه كره الاسم، قالوا يا رسول الله! نسألك عن أحدنا يولد له، فقال : من أحب منكم أن ينسك عن ولده فليفعل، على الغلام شاتان مكافأتان، وعلى الجارية شاة. [দ্র. আলমুসান্নাফ, আব্দুর রাযযাক : ৭৯৬১; আলমুসনাদ, আহমদ : ৬৭১৩, ৬৭২২; আসসুনান, আবু দাউদ (আকীকা অধ্যায়)২৮৪২; আস-সুনান, নাসায়ী : ৭/১৬২, ১৬৩; আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৪ হাদীস : ২৪৭২৭; আলমুসতাদরাক,হাকিম, ৫/৩৩৭, হাদীস : ৭৬৬৬] سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن العقيقة، فقال : لا يحب الله العقوق، من ولد له منكم ولد فأحب أن ينسك عنه فليفعل. [দ্র. আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২১, হাদীস : ২৪৭২২; আলমুয়াত্তা, ইমাম মালিক, আকীকা অধ্যায়, হাদীস : ৬৫৮] আকীকাও যখন এক প্রকারের কোরবানী তখন একটি গরু বা উট দ্বারা একাধিক ব্যক্তির (সাত জন পর্যন্ত) আলাদা-আলাদা কুরবানী আদায় হওয়ার হাদীসগুলো থেকে কুরবানী-আকীকা একত্রে আদায়েরঅবকাশও প্রমাণিত হয়। এটা শরীয়তের পক্ষ হতে প্রশস্ততা যে, গরু বা উটের ক্ষেত্রে একটি‘জবাই’ সাত জনের সাতটি জবাইয়ের স্থালাভিষিক্ত গণ্য হয়। একারণে একটি উট বা গরু সাতজনের পক্ষে যথেষ্ট হয়। সহীহ মুসলিমে সাহাবী জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘আমরা হজ্বের ইহরামবেঁধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বের হলাম। তিনি আমাদেরকেআদেশ করলেন যেন প্রত্যেক উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হয়ে কুরবানী করি।’ [সহীহমুসলিম, কিতাবুল হজ্ব, হাদীস : ১৩১৮/৩৫১] خرجنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم مهلين بالحج، فأمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نشترك في الإبل والبقر، كل سبعة منا في بدنة. অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘(একটি) গরু সাতজনের পক্ষহতে এবং (একটি) উট সাতজনের পক্ষ হতে (কুরবানী করা যাবে)।’ البقرة عن سبعة والجزور عن سبعة. [আস-সুনান, আবু দাউদ, হাদীস : ২৮০১, কিতাবুল আযাহী] সারকথা, ‘নুসুক’ বা কুরবানীর ক্ষেত্রে শরীয়তের প্রতিষ্ঠিত মূলনীতি এই যে, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বারক্ষেত্রে একটি ‘জবাই’ (إراقة الدم) দ্বারা একটি কুরবানী আদায় হলেও উট ও গরুর ক্ষেত্রে একটি‘জবাই’ দ্বারা সাতটি কুরবানী আদায় হতে পারে। অর্থাৎ এখানে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়া’ও (সর্বোচ্চসাত জনের) কুরবানী আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট। আকীকাও যেহেতু ‘নুসুক’ বা কুরবানী তাই এ মূলনীতিতে আকীকাও শামিল থাকবে। সুতরাং ‘একটি পশু জবাই’ করা দ্বারা যেমন তা আদায় হবে, তেমনি নির্ধারিত নিয়মে ‘জবাইয়ে শরীক হওয়ার’ (شركة في دم) দ্বারাও তা আদায় হবে। সুতরাং এ প্রশ্নের অবকাশ নেই যে, ‘আকীকায় তো পশু জবাই করতে বলা হয়েছে। অতএব অন্ততএকটি পশু জবাইয়ের দ্বারাই তা আদায় হতে পারে।’ কারণ শরীয়তের দৃষ্টিতে পশু জবাই (إراقة الدم)-এর দায়িত্ব যেমন একটি পশু জবাই করার দ্বারা আদায় হয় তেমনি নির্ধারিত পশুতে ‘শরীকহওয়ার’ দ্বারাও (شركة في دم) আদায় হয়। আকীকার ক্ষেত্রে এই মূলনীতি প্রযোজ্য নয় বলে দাবি করলে ব্যতিক্রমের বিধান সম্বলিত দলীল লাগবে। আমাদের জানামতে এমন কোনো দলীল নেই। 

গ্রন্থনা ও সম্পাদনা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল-কাউসার 
সূত্র


=======================================



কোরবানি এবং আকিকা সর্ম্পকে জরুরি ৬টি প্রশ্ন-জবাব

বেশ কিছু ভাই প্রশ্নটি করেছেন, এক
গরুতে কোরবানি এবং আকিকা দেওয়া যাবে কিনা?
এ বিষয়ের ওপর বেশ কিছু মাসআলা-ফতোয়ার
কালেকশন তুলে ধরলাম- আল্লাহ আমাদের
সবাইকে সঠিকভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
১. কোরবানির পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : কোরবানির গরু, মহিষ ও উটে আকীকার
নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কোরবানি ও
আকীকা দুটোই সহীহ হবে।
[বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০, তাহতাবী আলাদ্দুর
৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২]
২. কোরবানির পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক
হওয়া
মাসআলা : এক কোরবানির পশুতে আকীকা, হজ্বের
কোরবানির নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের
নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।
[বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬,
আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬,
আলমুগনী ৫/৪৫৯]
৩. প্রশ্ন: কেউ যদি একটি গরুতে একভাগ আকীকা আর
বাকি অংশ কোরবানির
নিয়তে কোরবানি করে তবে তার আকীকা ও
কোরবানি আদায় হবে কি না?
উত্তর: হ্যাঁ, গরু, উট, মহিষে সাত ভাগের এক ভাগ
আকীকা ও বাকি অংশ কোরবানির নিয়ত
করলে আকীকা ও কোরবানি দু’টোই আদায়
হয়ে যাবে।
[রদ্দুল মুহতার ২/৫৪৩, ৬/৩২৬;
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০৪;
ইমদাদুল আহকাম ৪/২৮২]
৪. প্রশ্ন: কোরবানির গরুতে আকীকার জন্য অংশ
দেওয়া যাবে কি? আমরা স্বামী-স্ত্রীর পক্ষ
থেকে কোরবানির দুই অংশ, মৃত বাবা-মার দুই অংশ
এবং মেয়ে ও ছেলের আকীকার তিন অংশ-
এভাবে এক গরুতে কোরবানি ও আকীকা করতে চাই।
এটা জায়েয হবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, কোরবানির গরুর সাত ভাগে আকীকার
অংশ দেওয়া জায়েয। এতে কোরবানি ও
আকীকা দু’টোই আদায় হবে।
আপনি প্রশ্নে যেভাবে বলেছেন
সেভাবে কোরবানি ও আকীকা করতে পারবেন।
[ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৫০; বাদায়েউস
সানায়ে ৪/২০৯; মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ৮/২৪৪;
মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩৩১-৩৩৩; শরহুল মুহাযযাব
৮/৪০৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬]
৫. প্রশ্ন: একই পশুতে কোরবানির সঙ্গে আকিকাও
করা যাবে কিনা?
উত্তর: একই গরু মহিষ ও উটের মধ্যে কোরবানি ও
আকিকা একসঙ্গে করা যাবে। (মাহমুদিয়া, ২৬/৪১৩)
৬. প্রশ্ন: আকীকা কী? আকীকার হুকুম কী? আকীকার
সময় কি নির্ধারিত? কেউ কি নিজের
আকীকা নিজেই করতে পারবে? আকীকা আদায়ের
নিয়ম কী? আকীকার গোশত কি পিতা-মাতা ও
আত্মীয়স্বজনরা খেতে পারবে? জানিয়ে বাধিত
করবেন।
উত্তর: সন্তান জন্মগ্রহণের শুকরিয়াস্বরূপ যে পশু যবাই
করা হয় তাকে আকীকা বলে। আর
আকীকা করা মুস্তাহাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সন্তানের
জন্য আকীকা করতে হয়। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ
থেকে যবাই কর এবং তার ‘জঞ্জাল’ শ দূর কর (অর্থাৎ
চুল চেছে ফেল)। (সহীহ বুখারী ২/৮২২) রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ
করেন, যার সন্তান ভূমিষ্ট হয় সে যদি শিশুটির পক্ষ
থেকে আকীকা করা পছন্দ করে তাহলে যেন তাই
করে। (সুনানে নাসায়ী ২/১৬৭)
জন্মের সপ্তম দিনে আকীকা করা উত্তম। সপ্তম
দিনে সম্ভব না হলে ১৪ বা ২১ তম
দিনে করা ভালো। কেননা হাদীস শরীফে এই তিন
দিনের উল্লেখ আছে। এ তিন দিনেও
করা না হলে পরে যে কোনো দিন
আকীকা করা যেতে পারে। হযরত আমর ইবনে শুআইব-এর
সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবজাতকের
সপ্তম দিনে আকীকা করা, নাম রাখা ও তার
জঞ্জাল দূর করার (অর্থাৎ মাথার চুল কাটার)
নির্দেশ দিয়েছেন। (মুসান্নাফ
ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৬) হযরত বুরাইদা রা.
থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আকীকার পশু
সপ্তম বা চৌদ্দতম বা একুশতম দিনে যবাই করা হবে।
(আলমুজামুল আওসাত ৫/৪৫৭)
কারো আকীকা করা না হলে বড় হয়ে নিজের
আকীকা নিজেও করতে পারবে। হযরত আনাস রা.
বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়ত প্রাপ্তির পর নিজের
আকীকা নিজে করেছেন। (প্রাগুক্ত ১/৫২৯; মাজমাউয
যাওয়াইদ, হাদীস : ৬২০৩; আলমুফাসসাল
ফী আহকামিল আকীকা, ড. হুসামুদ্দীন ইবনে মূসা,
জামেয়াতুল কূদস, পৃ. ১৪২) হাসান বসরী রাহ. বলেন,
তোমার
যদি আকীকা না করা হয়ে থাকে তাহলে তুমি নিজের
আকীকা করে নাও। যদিও তুমি ইতিমধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক
হয়ে গেছ। (আলমুহাল্লা ৬/২৪০) পুত্র সন্তান
হলে দুটি আর কন্যাসন্তান হলে একটি ছাগল/ভেড়া/
দুম্বা দ্বারা আকীকা করা উত্তম। তবে পুত্রসন্তানের
ক্ষেত্রে একটি যবাই করলেও আকীকার হক আদায়
হয়ে যাবে। এছাড়া উট, মহিষ, গরু
ইত্যাদি দ্বারা আকীকা করা যায়।
হযরত উম্মে কুরয রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আকীকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,
পুত্রসন্তানের পক্ষ থেকে দুটি ছাগল আর
কন্যাসন্তানের পক্ষ থেকে একটি ছাগল যবাই করবে।
(জামে তিরমিযী ১/১৮৩) হযরত ইবনে আববাস রা.
থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত হাসান ও
হুসাইন রা-এর পক্ষ
থেকে একটি একটি ভেড়া আকীকা করেছেন। (আবু
দাউদ ২/৩৯২) হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করেন, যার কোনো সন্তান জন্মলাভ
করে সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল
দ্বারা আকীকা করে। (আলমুজামুল আওসাত ২/৩৭১,
হাদীস : ৩৭১) আকীকার গোশত পিতা-মাতা ও
অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ধনী-গরীব
নির্বিশেষে সকলেই
খেতে পারবে। হযরত আয়েশা রা. বলেন, (আকীকার
গোশত) নিজে খাবে, অন্যদের
খাওয়াবে এবং সদকা করবে।
[মুসতাদরাকে হাকেম ৫/৩৩৮; আলমুগনী ১৩/৩৯৩, ৩৯৭,
৪০০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১২/৩২৭, হাদীস :
২৪৭৪৩, ২৪৭৩৭; মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৪/৩২৯, ৩৩০, ৩৩১;
তুহফাতুল মাওদূদ বি আহকামিল মাওলূদ ৭৮]
ibnaltaf

সূত্র 



No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...