রাসুল সা: কতটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন এবং কতটি যুদ্ধে তিনি স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন।

 বুখারী (রঃ)....কিতাবুল মাগাযীতে উল্লেখ করেন যায়দ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) কয়টি গাযওয়ায় অংশগ্রহণ করেছেন ? তিনি বললেন ১৯ টিতে ৷

আর সহীহ্ বুখারীতে বুরায়দা সুত্রে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা) ১৬ টি গাযওয়ায় যোগদান করেন ৷ আর মুসলিম শরীফে একই রাবী থেকে বর্ণিত আছে, যে, তিনি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সঙ্গে ১৬ টা গাযওয়ায় অংশ গ্রহণ করেন ৷ একই রাবী সুত্রে মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, রাসুলুল্লাহ্ (স) ১৯ টা গাযওয়ায় যোগদান করেন ৷ আর এগুলোর মধ্যে যুদ্ধ করেন ৮ টিতে ৷ হাকিম (রঃ) হিশাম সুত্রে কাতাদার বরাতে বর্ণনা করেন,  রাসুলুল্লাহ্ (সা) এর গাযওয়া এবং সারিয়ার মোট সংখ্যা ছিল ৪৩ টি ৷  ইমাম আহমদ (রঃ) আযহার ইবন কাসিম রাসিবী সুত্রে কাতাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (স)-এর গাযওয়া ও সারিয়ার মোট সংখ্যা ৪৩টি (১৯টি গাযওয়া আর ২৪টি সারিয়া)

মহানবী (সঃ) এর জীবদ্দশায় 19 টি গাযওয়া + 24 টি সারিয়া = 43 টি যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

বিঃ দ্রঃ গাযওয়া হচ্ছে ঐ সব যুদ্ধাভিযান, যেণ্ডলোতে স্বয়ং নাবী কারীম (সাঃ) উপস্থিত ছিলেন ৷ পক্ষান্তরে সারিয়া বলা হয় তাঁর প্রেরিত বাহিনীগুলির অভিযান সমূহকে।

তথ্য সূত্রঃ 
(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তৃতীয় খন্ডঃ 429 পৃষ্ঠা)

কোন মহিলার স্বামী নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে কতদিন অপেক্ষার তিনি অন্য জায়গায় বিবাহ বসতে পারবেন?

 উত্তর : কোনো কোনো মত অনুযায়ী ৪ বছর। আবার ৭ বছর এর মতও আছে। সারা জীবন অপেক্ষা করতে হবে - এমন মতও আছে। আসলে এখানে বিষয়টি পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে দেখতে হবে। যেমন: স্বামী যদি দুই বছর খোরপোষ না দেয়, অথবা আরো কম সময় হতে পারে, স্ত্রী তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদ চাইতে পারে। আবার স্বামী যদি পুরুষত্ব হীন হয়, স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা মেটাতে না পারে, তবে স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইতে পারে। এখানে সময়ের কোনো বালাই নাই। সুতরাং, স্বামীর নিরুদ্দেশ হওয়ার দ্বারা স্ত্রী কি ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, কোনো পাপে জড়িয়ে পড়ছে কিনা, ইত্যাদি দিক বিবেচনা করে আদালত বিচ্ছেদের রায় দিতে পারে এবং সময় কম বেশী করতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে স্ত্রীর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সময় কম বেশী করতে পারবে এবং বিচ্ছেদের আদেশ দিতে পারবে।

উক্ত আদেশের পর ইদ্বত পালনের পর ঐ মহিলা অন্যত্র বিবাহ বসতে পারবেন।

দারিদ্রতা, দু:খ কষ্ট, রোগ শোক থেকে মুক্তি লাভের দোয়া

উত্তর : আল্লাহর পথে চলতে হবে, পরকালের কথা সর্বদা মনে জাগরূক রাখতে হবে, কবর ও জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন আর শাস্তির কথা চিন্তা করবেন, দুনিয়ার কোনো কষ্ট থাকবেনা ইনশাআল্লাহ। সাথে এই দোয়াটি বুঝে পড়তে পারেন:


(বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, যে কোনো দোয়াই অর্থ সহ বুঝে দোয়া করতে হবে, আরবীতে বলার সময় বাংলা অর্থের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, এবং সে অনুযায়ী নিজের কর্মও সাজাতে হবে) ।  

১) 

হজরত আবু হুরাইরা [রা.] বলেন: একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বের হলাম, আমার হাত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত মুবারক দিয়ে ধরা ছিল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীর্ণশীর্ণ আকৃতির একজন লোকের কাছে আসলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? লোকটি বললো, অসুখ-বিসুখ ও দরিদ্রতার কারণে আমার এ দশা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো পড়লে তোমার অসুখ বিসুখ ও দরিদ্রতা দূর হয়ে যাবে? লোকটি বললো: আপনার সঙ্গে বদর ও ওহুদ যুদ্ধে অংশীদার থাকা অপেক্ষা এসব কোনো কিছুই আমার জন্য তেমন আনন্দদায়ক নয়। একথা শুনে রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিয়ে বললেন, আরে একজন অল্পেতুষ্ট দরিদ্র ব্যক্তি যা পাবে বদর ও ওহুদের অংশীদাররা কি সেথায় পৌঁছতে পারবে? হজরত আবু হুরাইরা [রা.] বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! তাহলে আমাকেই তা শিখিয়ে দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উপরোক্ত দোয়াটি শিখিয়ে দিলেন। হজরত আবু হুরাইরা [রা.] বলেন: কিছুদিন পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন, তখন আমার অবস্থা ভাল হয়ে গিয়েছিল। রাসুল আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি ব্যাপার! আমি বললাম, আপনি যে কালিমাসমূহ আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলেন আমি সেগুলো নিয়মিত পড়ছি [ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার অবস্থার পরিবর্তন করে দিয়েছেন]। [মুসনাদে আবু ইয়ালা-৬৬৭১, ইবনুস সুন্নি-৫৫১, ইবনে কাসির-৫/১৩৭, রূহুল মাআনি-৮/২৬৬] রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখনই কোনো বিষয়ে আমি চিন্তিত হয়েছি বা বিপদে পড়েছি তখনই হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম কোনো মানুষের আকৃতিতে এসে আমাকে বলতেন: হে মুহাম্মদ! আপনি বলুন... [এই দোয়াটি পড়তে বলতেন] [মুসতাদরাকে হাকেম-১৮৮৬, তারগিবুত তারহিব-২৮১৫ এর বরাতে-রূহুল মাআ’নী-৮/২৬৬] 

আরবি দোআ : 


 تَوَكَّلْتُ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ وَلِيٌّ مِنَ الذُّلِّ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا. 


বাংলা উচ্চারণ : তাওয়াক্কালতু আলাল হাইইল্লাজি লা ইয়ামুতু। আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি লাম ইয়াত্তাখিজ ওয়ালাদাও ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু শারিকুন ফিল মুলকি। ওয়া লাম ইয়াকুল লাহু ওয়ালিয়্যুম মিনাজ জুল্লি,  ওয়া কাববিরহু তাকবিরা। 


অর্থ : আমি ভরসা করলাম ওই চিরঞ্জীব সত্তার উপর যিনি কখনো মৃত্যু বরণ করবেন না। সমস্ত প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য যিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি। তার রাজত্বের মাঝে কোনো অংশীদার নেই এবং তাকে লাঞ্চনা থেকে বাঁচানোর জন্য কোনো সহযোগীর প্রয়োজন নেই। অতএব তুমি উত্তমরূপে তাঁরই বড়ত্ব ও মহিমা বর্ণনা কর। 


==============================================

২) 

ইমাম মালেক রহ. হজরত ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণনা করেন যে, একবার এক ব্যক্তি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললো: ইয়া রাসুলাল্লাহ! দুনিয়া আমার থেকে বিমুখ হয়েছে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শণ করেছে। রাসুল বললেন, তুমি কি ফেরেশতাদের দোয়া ও আল্লাহর সব সৃষ্টিজীবের তাসবীহ পড় না? যে তাসবীহের কারণে তাদেরকে রিজিক দেয়া হয়? সুবহে সাদেকের সময় তুমি সে তাসবীহ একশবার করে পড়বে, তাহলে দেখবে দুনিয়া তোমার কাছে তুচ্ছ হয়ে আসবে। লোকটি চলে গেল। এবং এ দোয়াটি পড়তে লাগল। কিছুদিন পরে আবার সে ফিরে এসে বললো ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কাছে এত অধিক সম্পদ জমা হয়েছে যেগুলো হেফাজত করার মত কোনো জায়গা আমার কাছে নেই। [জিয়াউন্নবী-৫/৯০২] 

আরবি দোআ 

سبحان الله وبحمده سبحان الله العظيم أستغفر الله 


বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম। আসতাগফিরুল্লাহ। 

অর্থ : আল্লাহ তায়ালা সব অসম্পূর্ণতা থেকে পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই। মহান আল্লাহ পবিত্র। আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করছি। 


==================================================

 মূল- হজরত মাওলানা ইউনুস বিন উমর পালনপূরী 

অনুবাদ- মাওলানা মিরাজ রহমান

হায়েজ নেফাছ অবস্থায় ইবাদত

 হায়েজ যখন নারীদের জন্য নিয়ামত!

আয়েশা আক্তার শ্রাবণী


হায়েজ, মেন্স, পিরিয়ড, মাসিক। একেকজন একেক নামে ডাকলেও জিনিস একই। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বয়সী মেয়েরা এই প্রাকৃতিক সমস্যাটি সামলে থাকেন। অনেকের বড় কষ্টের কারণ এই হায়েজ। অথচ একটু অন্য ভাবে চিন্তা করলেই দেখতে পাবেন, এটি কিন্তু নারীদের জন্যে একটি দারুণ নিয়ামত। কিভাবে?!

কারণ হায়েজ অবস্থায় :

১) যত খুশি যিকির করা যায়।
২) যত খুশি ইস্তেগফার করা যায়।
৩) জাহান্নামের ভয়াবহতা নিয়ে গভীর চিন্তা করা যায়। [কারণ হায়েজ অবস্থায় সময় বেশি পাওয়া যায়]
৪) জান্নাত নিয়ে গভীর চিন্তার সাগরে ডুবে থাকা যায়।
৫) অতিমাত্রায় দুরুদ পাঠ করা যায়।
৬) দোয়া কবুলের সময়গুলোতে বেশি বেশি দোয়া করা যায়।
৭) রাতের শেষাংশে অল্প সময়ের জন্য উঠে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা যায়।
৮) সবথেকে বড় কথা, অতিমাত্রায় দোয়া, দুরুদ- যিকির, ইস্তেগফার পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং নেকির পাল্লা ভারি করা যায় যা নাজাতের পথ।

[ হায়েজ অবস্থায় নারীদের কষ্ট হলেও, মুখে যত বেশি দোয়া, দুরুদ, যিকির ইস্তেগফার পাঠ করা যায়, যা পবিত্র থাকা অবস্থায় কখনোই সম্ভব হয় না]

যুবতীদের হায়েজ সর্বনিম্ন ৩ দিন থাকার কথা। এই ৩ দিন যদি সে শুধুই ইস্তেগফার করে তাহলে একে তো আল্লাহর ভালোবাসা পেলোই, তাছাড়া আল্লাহর ক্ষমার দ্বারা নিজেও পবিত্র হয়ে যেতে পারল। কারণ, আল্লাহ তায়ালা এমন নন যে, তার বান্দা টানা ৩ দিন ইস্তেগফার করবে অথচ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন না।

৩ দিন একটানা দুরুদ পাঠ করলে কতবার রহমত বর্ষণ হবে চিন্তা করতে পারেন?

একবার দুরুদ পাঠ করলে ১০ বার রহমত নাযিল হয়। তাহলে ৩ দিনে ৩০০০ বার দুরুদ পাঠ করলে রহমত বর্ষণ হয়, ৩০০০*১০=৩০,০০০ বার অর্থাৎ ৩০ হাজার বার।
৩০ হাজার বার যদি রহমত বর্ষিত হয় তাহলে আপনার অবস্থান ৩ দিনে কোথায় যাওয়ার কথা? চিন্তা করেছেন?
আপনি তো রহমতের সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকবেন।

আপনি যদি ৩ দিনে ৩০০০ বার তাসবিহ পড়েন। তাহলে কতো নেকি আসে? ৩০০০*১০=৩০,০০০ নেকি।

এটা কি কোন বুদ্ধিমান ত্যাগ করে? হায়েজকেও কাজে লাগাতে হবে বুদ্ধি দিয়ে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মা- বোনদেরকে এভাবে আমল করার তৌফিক দিন, আমিন!


======================


হায়েযের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোনো বস্তু নির্গত ও প্রবাহিত হওয়া।

হায়েয কী?

আর শরীয়তের পরিভাষায় হায়েয বলা হয় ওই প্রাকৃতিক রক্তকে, যা বাহ্যিক কোনো কার্যকারণ ব্যতীতই নির্দিষ্ট সময়ে নারীর যৌনাঙ্গ দিয়ে নির্গত হয়।​

হায়েয প্রাকৃতিক রক্ত। অসুস্থতা, আঘাত পাওয়া, পড়ে যাওয়া এবং প্রসবের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এই প্রাকৃতিক রক্ত নারীর অবস্থা ও পরিবেশ-পরিস্থিতির বিভিন্নতার কারণে নানা রকম হয়ে থাকে এবং এ কারণেই ঋতুস্রাবের দিক থেকে নারীদের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যায়।

সাধারণত ৯ বছরের আগে এই রক্ত দেখা দেয় না। ৯ বছরের আগে এই রক্ত দেখা দিলে তা এস্তেহাজা বা অসুস্থতার রক্ত বলে গণ্য হবে। তেমনি ৫৫ বছরের পর কোনো নারীর হায়েয দেখা দেয় না। তখন রক্ত দেখা দিলে তা যদি লাল বা কালো রঙের হয় তবে তা হায়েয কিন্তু রঙ হলুদ বা ধুসর মাটির মত হলে তা এস্তেহাজা বলে গণ্য হবে।

হায়েযের সময়-সীমা:

হায়েয এর সময়সীমা সর্বনিম্ন ৩দিন ৩ রাত এবং সর্বাধিক ১০দিন ১০ রাত। হায়েয এর সময় রক্ত সবসময় প্রবাহিত না হয়ে কিছু সময় পর পর প্রবাহিত হলেও তা হায়েয বলে গণ্য হবে। ৩ দিন ৩ রাতের কম বা ১০ দিন ১০ রাতের বেশি রক্ত স্রাব হলে তাকে এস্তেহাজা’র রক্ত বলে গণ্য করা হবে। (তুহফায়ে খাওয়াতীন)

হায়েয অবস্থায় নামাজ:

হায়েয এর সময়গুলোতে নামাজ পড়া নিষেধ। নামাজ পুরোপুরি মাফ হয়ে যায় এবং পরে কাজা করতে হয় না কিন্তু রোজা সাময়িকভাবে বাদ হয় এবং পরে রোজার কাজা আদায় করে নিতে হয়। এছাড়া ওয়াক্তের নামাজ এখনো আদায় করেন নি কিন্তু নামাজ পড়ার সময় এখনো আছে এই অবস্থায় হায়েজ শুরু হলে সেই ওয়াক্তের নামাজ মাফ হয়ে যাবে। নামাজের শেষ ওয়াক্তে হায়েজ হয়েছে কিন্তু এখনও যদি নামাজ না পড়ে থাকেন তাহলে সেটারও ক্বাযা পরতে হবে না। 

যদি কারো ১০দিন এর কম স্রাব হয় এবং এমন সময়ে গিয়ে রক্ত বন্ধ হয় যে খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে নেয়ার পর একবার আল্লাহু আকবর বলার সময় থাকে, তবে সেই ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হবে। এমন অবস্থায় নামাজ শুরু করার পর ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলেও নামাজ শেষ করতে হবে। তবে ফজরের ওয়াক্ত হলে যদি নামাজ শুরু করার পর সূর্য উদিত হয়ে যায় তবে সে নামাজ কাজা করতে হবে। (সূত্র: হেদায়া, হায়েজ অধ্যায়।)

হায়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআন পড়া, কোরআন শেখানো:

হায়েজ অবস্থায় যেমনিভাবে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা না জায়েয, তদ্রুপ কাউকে শেখানোর উদ্দেশ্যেও পড়া নাজায়েয। তাই হায়েজ অবস্থায় যাতে মহিলা শিক্ষিকাদের পবিত্র কোরআন পড়াতে না হয় এ ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এ ধরণের সুব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত হায়েয অবস্থায় যদি কখনো বাচ্চাদেরকে পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ানো জরুরি হয়, তাহলে শব্দে শব্দে থেমে কিংবা বানান করে পড়াবে। এ ছাড়া নিজে মুখে উচ্চারণ না করে বাচ্চাদেরকে দিয়ে পড়িয়ে শুধু ভুল জায়গা ধরিয়ে দিতে পারবে। (তথ্যসূত্র: খুলাসাতুল ফাতাওয়া, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, ফাতহুল কাদীর)

হয়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা:

হয়েয অবস্থায় পবিত্র কোরআনের আয়াত লেখা থেকে বিরত থাকা জরুরি। তবে একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে আয়াতের লিখিত অংশে হাত না লাগিয়ে লেখা যেতে পারে। (তথ্যসূত্র: ফাতহুল কাদীর, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)

হায়েয অবস্থায় তাসবীহ-তাহলীল, জিকির-আযকার, দোয়া-দরুদ পড়া:

মাসিক চলাকলীন সময় জিকির-আযকার করা, দরুদ শরীফ পড়া, ওযীফা পড়া, বিভিন্ন দোয়া পড়া যায়। এমনকি এসময় পবিত্র কোরআনে কারীমের দোয়ার আয়াতগুলোও দোয়া হিসেবে পড়া যাবে। পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত হিসেবে পড়া যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে, মা‘মার (রাহ.) বলেন, আমি যুহরী (রাহ.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতী নারী ও যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে? তিনি বললেন, না। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০২) 

ইবরাহীম নাখায়ী (রাহ.) বলেন, ঋতুমতী নারী ও যার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং বিসমিল্লাহও পড়তে পারবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৫)

হায়েয অবস্থায় সহবাস:

পবিত্র কোরআন ও হাদীসে এ সময়ে সহবাস করতে পরিস্কার নিষেধাজ্ঞা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, আর আপনার কাছে জিজ্ঞেস করে হায়েয সম্পর্কে। বলে দেন, এটা অশুচি। কাজেই তোমরা হায়েয অবস্থায় স্ত্রীগণ থেকে বিরত থাকো এবং যতক্ষন না তারা পবিত্র হয়ে যায় ততক্ষণ তাদের নিকটবর্তী হবে না। যখন উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হয়ে যায়, তখন গমন কর তাদের কাছে, যে ভাবে আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং যারা অপবিত্রতা হতে বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। (বাকারা/আয়াত-২২২)

হজরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ঋতুবতীর সঙ্গে মিলিত হয় কিংবা কোনো মহিলার পশ্চাৎদ্বারে সঙ্গম করে অথবা কোনো গণকের নিকটে যায়, নিশ্চয়ই সে মুহাম্মাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তা অস্বীকার করে’। (তিরমিযী, হাদীস নং-১৩৫, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৯২৯০) 

সুতরাং স্বামীর জন্য জায়েয হবে না স্ত্রী সহবাস করা যতক্ষন না স্ত্রী হায়েয থেকে মুক্ত হয়ে গোসল করে পবিত্র হয়।
এছাড়া ডাক্তারদের মতেও এ সময় স্ত্রী সহবাস করা অনুচিত। কারণ এ সময় নারীরা অসুস্থ্য বোধ করে। স্রাবের রক্তের সঙ্গে বিভিন্ন রোগের জীবানু বের হয়ে থাকে। যা সহবাসের মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাই শরীয়তের বিধানের পাশাপাশি ডাক্তারী মতেও এ সময় সহবাস করা থেকে বিরত থাকাই কর্তব্য।

হায়েজ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে এক নম্বর ক্ষতি হলো, মহান আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিধানকে লঙ্ঘণ করা হয়। এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কিছুই হতে পারে না। যে কর্মের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামীন অসন্তুষ্ট হোন। তার বিধান লঙ্ঘিত হয়। এর চেয়ে ক্ষতি আর কী হতে পারে?

হায়েয অবস্থায় সহবাসের কাফফারা:

হায়েজ অবস্থায় যদি কেউ যৌনমিলনে লিপ্ত হয় তবে তার ওপর এই পাপের কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। কাফফারার পরিমাণ হলো এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার। এ ক্ষেত্রে দলীল হলো, আবু দাউদ বর্ণিত একটি হাদীস। কোনো কোনো আলেম হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত হলো, হাদীসটির বর্ণনা কারীরা সকলেই নির্ভর যোগ্য। সুতরাং দলীল হিসেবে উহা গ্রহণযোগ্য।

এই কাফফারা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত হল: 

(১) ব্যক্তির জ্ঞান থাকা। (যে হায়য অবস্থায় ইহা হারাম) (২) স্মরণ থাকা। (ভুল ক্রমে নয়) এবং (৩) ইচ্ছাকৃতভাবে সে কাজে লিপ্ত হওয়া। (কারো জবরদস্তী করার কারণে নয়।) যদি উক্ত কাজে স্বামীর অনুগত হয় তবে তারও ওপর উক্ত কাফফারা ওয়াজিব হবে।

ওষুধ খেয়ে হায়েয বন্ধ রেখে রোজা রাখা ও সহবাস করা:

ট্যাবলেট খেয়ে মাসিক বন্ধ করে রোজা রাখলে রোজা হয়ে যাবে। ট্যাবলেট দ্বারা হায়েয বন্ধ হলে স্বামীর সঙ্গে মেলামেশাও করতে পারে। তবে মেয়েদের স্বাভাবিক অবস্থায় বিরুদ্ধে এ নিয়মে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই ট্যাবলেট না খাওয়াই উত্তম। বরং, স্রাব চালু থাকতে দিবে এবং পরবর্তীতে রোজা কাজা করে নিবে। মনে রাখবেন, এতে রমজানের রোজার সওয়াব কমবে না।

নারীদের হায়েয অবস্থায় রোজা পালন:

হায়েয অবস্থায় মেয়েদের জন্য ওয়াজিব হলো রোজা বর্জন করা। এ অবস্থায় রোজা আদায় করা জায়েয হবে না। সুস্থতার পর তাদের রোজা কাজা আদায় করতে হবে। সালাতের কাজা আদায় করতে হবে না। হাদীসে এসেছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, তাকে জিজ্ঞেস করা হলো হায়েজ থেকে পবিত্রতার পর মহিলারা কি নামাজ ও রোজার কাজা আদায় করবে? তিনি বললেন: ‘এ অবস্থায় আমাদের রোজার কাজা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সালাতের নয়।’ (বুখারী ও মুসলিম) 

হায়েয অবস্থায় তাওয়াফ ও মসজিদে যাওয়া:

হায়েয অবস্থায় তাওয়াফে জিয়ারত জায়েজ নেই। এমনকি তাওয়াফের জন্য মসজিদে হারামের ভিতরে প্রবেশ করাও জায়েজ নেই। যদি তাওয়াফ করাবস্থায় হায়েজ শুরু হয়ে যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ তাওয়াফ বন্ধ করে দেবে এবং পরবর্তীতে পবিত্র হওয়ার পর কাজা করবে। (কিতাবুল মাসায়েল : ৩ : ৪০৩) 

রাসূলুল্লাহ (সা.) মা আয়েশা (রা:)-কে বলেছিলেন, ‘হজ্জ সম্পাদনকারী একজন ব্যক্তি যা করে তুমিও তা করতে থাক। তবে পবিত্রতা অর্জন পর্যন্ত পবিত্র ঘর কাবার তওয়াফ থেকে বিরত থাকবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

হায়েয অবস্থায় মসজিদেও গমন করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ‘কোন ঋতুবতী এবং নাপাক ব্যক্তির জন্য (যার ওপর গোসল ফরজ) মসজিদে অবস্থান করা আমি বৈধ করিনি। (আবু দাউদ)

হায়েয কেন হয়?

অনেকে প্রশ্ন করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা কেন মেয়েদের মাসিকের মতো একটা কষ্ট দিলেন? এত রক্ত নষ্ট হয়ে কী লাভ? প্রত্যেক মাসে স্বামীদের ৭-১০ দিন কষ্ট করতে হবে, কী দরকার ছিল এসবের?

এর উত্তর হচ্ছে, জরায়ুর ভেতরের দেওয়ালে একটি স্তর থাকে যেখানে ভ্রণ গিয়ে সংযুক্ত হয়। যখন এই স্তরটি খসে পড়ে, তখন কিছু রক্তসহ তা বেড়িয়ে যায়, এটাই মাসিক। এই জটিল স্তরটি সুস্থ, সবল ভ্রণকে গ্রহণ করে, এবং বিকৃত ভ্রণকে মাসিকের মাধ্যমে বের করে দিয়ে অসুস্থ, বিকৃত বাচ্চা হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। 

মহান আল্লাহ তায়ালা এই স্তরে যথেষ্ট ব্যবস্থা করে রেখেছেন, যেন এটি ভ্রণের স্বাস্থ্য যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে: সেটাকে রাখবে, না-কি বের করে দেওয়া ভালো হবে। 

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে


====================


হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে?

প্রশ্ন

সম্মানিত মুফতী সাহেব।

আমাদের এক ভাই বলছেন যে, হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় মহিলাদের জন্য কুরআন ধরা নিষিদ্ধ, কিন্তু পড়তে কোন সমস্যা নেই।

হায়েজ ও নেফাসের অবস্থায় কুরআন পড়া নিষেধ এটা মাযহাবী বক্তব্য। হাদীসের মাঝে এমন কোন বক্তব্য আসেনি

মুফতী সাহেবের কাছে আমার প্রশ্ন হল, উক্ত ভাইয়ের কথাটির বাস্তবতা কতটুকু?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উক্ত ভাইটির কথা সঠিক নয়।

আর তিনি যেভাবে মাযহাবী বক্তব্য বলে তাচ্ছিল্য করলেন এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে, তিনি মাযহাব বিষয়ে ধারণা রাখেন না। মাযহাবতো কুরআন ও হাদীসের বাহিরের কোন কিছু নয়। বরং কুরআন ও হাদীসের বিধানের একটি বিন্যাস্ত রূপের নাম মাযহাব।

তো এটি মাযহাবী বক্তব্য কুরআন ও হাদীসের নয়, এমনটি বলাই অজ্ঞতা। কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যের উল্টো মাযহাবের বক্তব্য হতেই পারে না।

হলে সেটিতে আর গ্রহণযোগ্য মাযহাবই থাকে না।

 

হাদীসকে সামনে রেখেই ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন, হায়েজ ও নেফাসগ্রস্থ মহিলা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। এটি শুধু মাযহাবী মতামত নয়, হাদীসে বর্ণিত বিধান।

عن إبراهيم قال : الحائض والجنب يذكران الله ويسميان (مصنف عبد الرزاق، كتاب الطهارة، باب الحائض تذكر الله ولا تقرأ القرآن، رقم الحديث-989)

অনুবাদ-হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হায়েজ এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করতে পারবে, এবং তার নাম নিতে পারবে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৮৯}

عن ابن عمر : عن النبي صلى الله عليه و سلم قال لا تقرأ الحائض ولا الجنب شيئا من القرآن (سنن الترمذى، ابواب الطهارات، باب ما جاء في الجنب والحائض : أنهما لا يقرأن القرآن، رقم الحديث-131)

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৩১, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১, মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩}

عن أبي سعيد الخدري أليس إذا حاضت لم تصل ولم تصم (صحيح البخارى، كتاب الحيض، ترك الحائض الصوم، رقم الحديث-298)

অনুবাদ-হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-মহিলারা হায়েজা অবস্থায় নামায পড়তে পারে না, এবং রোযাও রাখতে পারে না। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৯৮}

يستحب للحائض اذا دخل وقت الصلاة ان تتوضأ وتجلس عند مسجد بيتها تسبح وتهلل قدر ما يمكن أداء الصلاة لو كانت طاهرة (الفتاوى الهندية، كتاب الطهارة، الفصل الرابع فى احكام الحيض والنفاس والإستحاضة- 1/38)

অনুবাদ-হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}

وأما حكم الحيض والنفاس فمنع جواز الصلاة والصوم وقراءة القرآن ومس المصحف إلا بغلاف ودخول المسجد والطواف بالبيت (بدائع الصنائع، كتاب الطهارة، باب الحيض والنفاس-1/163)

অনুবাদ-হায়েজ নিফাসওয়ালী মহিলার ক্ষেত্রে নামায পড়া নিষিদ্ধ, রোযা রাখা নিষিদ্ধ। কুরআন পড়া নিষিদ্ধ। গিলাফ ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। {বাদায়েউস সানায়ে’-১/১৬৩}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পাগড়ি পরিধান ও ব্যবহার বিধি

 মসজিদে নামাজের সময় অনেককেই দেখা যায় যে, শুধু ফরজ নামাজের সময় পাগড়ি পরিধান করেন। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হলো, পাগড়ি বেঁধে নামাজ আদায় করলে ১ রাকাতে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায়।


আবার অনেককে এটাও বলতে শোনা যায় যে, যদি ইমাম সাহেব পাগড়ি বেঁধে নামাজ পড়ান তাহলে ইমাম ও মুক্তাদিরা নামাজে সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবেন। বিষয়টি কী আসলে কী এটা নিয়ে এক ধরনের দ্বন্দ্ব কাজ করে অনেকের মনে।

বস্তুত পাগড়ি সুন্নত পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাধারণত যে সব পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন। এটা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আছে। সাহাবা ও তাবেয়িরাও নামাজে এবং নামাজের বাইরে ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন বলে বহু হাদিস ও বর্ণনা রয়েছে। তাদের নিকট পাগড়ি একটি অতি পছন্দনীয় পোশাক বিশেষ। তারা অন্যান্য পোশাকের ন্যায় তা ব্যবহার করতেন। খোলাফায়ে রাশেদিন, পরবর্তী খলিফা, ইসলামের ইমাম ও মনীষীরা প্রায় সবাই পাগড়ি পরিধান করতেন।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন বলে বহু হাদিসে এর বর্ণনা রয়েছে। যেমন হজরত জাবের (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তার মাথায় কালো পাগড়ি ছিল। -সহিহ মুসলিম

আরেক হাদিসে অাছে, হজরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা.) বলেন, একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অজু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির ওপর মাসেহ করলেন। -সহিহ মুসলিম

তাবেয়ি হজরত সোলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ (রহ.) বলেন, আমি মুহাজির সাহাবিদেরকে কালো, সাদা, হলুদ ও সবুজসহ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী আলেম-উলামাদের অনুসরণে পাগড়ি ব্যবহার করলে অবশ্যই সওয়াব হবে। এটা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।


মনে রাখতে হবে, পাগড়ি শুধুমাত্র নামাজের বিশেষ পোশাক নয়; বরং নামাজে এবং নামাজের বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই সমভাবে পরিধানযোগ্য একটি পোশাক। সাহাবা, তাবেয়ি ও পূর্ব যুগের আলেমরা পাগড়িকে শুধু নামাজের সঙ্গে সীমাবদ্ধ করতেন না। এই মূলনীতির আলোকে বলা চলে, শুধু নামাজের সময় পাগড়ি ব্যবহার করা, অন্য সময় ব্যবহার না করা পূর্ব আলেমদের রীতি পরিপন্থী কাজ।

পাগড়ি বেঁধে নামাজ আদায় করলে সত্তর রাকাতের সওয়াব পাওয়া যায় বলে যে কথা প্রচলিত আছে, এটা সহিহ নয়। এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। অনেকে এটাকে হাদিসও বলে মনে করেন। ইসলামি শরিয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।

অনুরূপভাবে পাগড়ি পরিধান করে দুই রাকাত নামাজ পাগড়িহীন পঁচিশ রাকাতের সমান এবং পাগড়ি পরিধান করে এক জুমা পাগড়িবিহীন সত্তর জুমার সমান- বলে যেসব কথা হাদিসের নামে প্রচলিত আছে; এর কোনোটিই গ্রহণযোগ্য নয়। হাদিস বিশারদ আলেমরা এ সব বর্ণনাকে জাল বলেছেন। -লিসানুল মিজান: ৩/২৪৪

অতএব পাগড়ি পরিধান করে নামাজ আদায় করলে সত্তর গুণ, পঁচিশ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া সংক্রান্ত যে সব কথা প্রচলিত আছে সেগুলো হাদিসশাস্ত্রজ্ঞ ও বিজ্ঞ আলেমদের সুস্পষ্ট ভাষ্যমতে বাতিল। এ সব বর্ণনাকে ভিত্তি করে অধিক ফজিলত পাওয়ার আশায় পাগড়িকে শুধু নামাজের সময় ব্যবহার করা ঠিক নয়।

আর ইমাম পাগড়ি বেঁধে নামাজ পড়ালে ইমাম ও মুক্তাদি সকলেই সত্তর গুণ সওয়াব লাভ করবে, এ কথার সপক্ষেও কোনো বর্ণনা নেই। তাই ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- নির্ভরযোগ্য প্রমাণাদি ছাড়া এ ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

উল্লেখ থাকে যে, পাগড়িকে নিয়মিত পোশাকের অংশ বানানো যে উত্তম কাজ তা লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। পাগড়ি মুসলমানদের বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত পোশাক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পাগড়ি শুধু নামাজের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়।

পাগড়ি বাঁধার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। সেগুলো হলো-

ক. পূর্ণ পাগড়ি মাথার ওপর বাঁধা এবং এর কোনো লেজ বা ঝুল না রাখা।

খ.  পূর্ণ পাগড়ি মাথার ওপর বাঁধা এবং লেজ বা ঝুল পেছনে ঝুলিয়ে রাখা।

নবী করিম (সা.) থেকে উভয় পন্থার পাগড়ি বাঁধার কথা প্রমাণিত। তবে তিনি সাধারণতঃ দু’কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে পেছন দিকে পাগড়ির লেজ ঝুলিয়ে রাখতেন।

ইমাম নববি (রহ.) বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা.) পাগড়ি দুই ধরণের ছিল। ছোট পাগড়ি ছিল আনুমানিক তিন গজ কাপড়ের, আর বড় পাগড়ি ছিল সাত গজ কাপড়ের। -আপকি মাসায়েল আওর উনকা হল

পাগড়ি টুপির ওপর এবং টুপি ছাড়া উভয়ভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বিদের সঙ্গে সাদৃশ্য হতে পারে বিধায় পাগড়ি টুপির ওপর বাঁধা উত্তম।

Tafhimul Quran Apk / Aab Download

(বি:দ্র: ডাউনলোড ও  ইনষ্টল  করার পূর্বে অবশ্যই নিচের লিংক থেকে ভিডিওটি দেখে নেবেন

How To Install Tafhim App From Blogger  ) 

-------------------------------


প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করার কারণে যারা এ্যাপ চালাতে পারছিলেন না, তাদের জন্য অল্টারনেট ডাউনলোড লিংক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন আলহামদুলিল্লাহ বাগ ফিক্স হওয়াতে প্লে স্টোর থেকেই সরাসরি ডাউনলোড করে এ্যাপ চালাতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। 


তাই অল্টারনেট ডাউনলোড লিংক এর পরিবর্তে সরাসরি প্লে স্টোর ডাউনলোড লিংক দেওয়া হলো : 


তাফহীমুল কুরআন Al Quran ByWord - Apps on Google Play


ফজর নামাজের আযানের পর দুই রাকাআত সুন্নত ছাড়া অন্য কোন নামাজ পড়া যাবে কি

 সুবহে সাদিক বা ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পর থেকে ফজরের নামাজ পড়া পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কি কোনো নফল নামায পড়া যাবে? 

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- সুবহে সাদিক থেকে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামাজ পড়া নিষেধ। এই ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাফসা (রা.) বলেন, ‘যখন ফজর উদিত হতো, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সংক্ষেপে (ছোট সূরা দিয়ে) পড়তেন। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সুবহে সাদিক হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামাজ পড়া যাবে না।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৭)

ভুলক্রমে হত্যার শাস্তি ।

 প্রশ্ন                                                                                                         

আমার এক বন্ধু শিকার করতে গিয়ে ভুলবশত একজন লোককে হত্যা করে ফেলে। এক্ষেত্রে তার কী করণীয়?

উত্তর                                                                                                       

بسم الله الرحمٰن الرحيمحامدا و مصليا و مسلما

ভুলবশত কেউ যদি কাউকে হত্যা করে ফেলে তাহলে ইসলাম এক্ষেত্রে কাফফারার বিধান রেখেছে। কাফফারার দুটি অংশ রয়েছে। যথা:

প্রথমত, একজন মুসলমান দাস বা দাসী আযাদ করে দেওয়া। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে লাগাতার দুইমাস রোযা রাখা।

দ্বিতীয়ত, দিয়াত তথা আর্থিক ক্ষতিপূরণ। আর তা হল, ১০০ উট বা ২০০ গরু বা ২ হাজার বকরি। আর মূল্যের মাধ্যমে দিলে দশ হাজার দিরহাম বা তার সমপরিমাণ মূল্য(এক দিরহাম=২.৯৭৫ গ্রাম রূপা) বা এক হাজার দিনার বা তার সমপরিমাণ মূল্য (এক দিনার=৪.২৫ গ্রাম স্বর্ণ) নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারিদের দিতে হবে।

আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেন,

وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَنْ يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً وَمَنْ قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلَّا أَنْ يَصَّدَّقُوا فَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ عَدُوٍّ لَكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ وَإِنْ كَانَ مِنْ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُؤْمِنَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِنَ اللَّهِ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا

‘আর কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত (হলে ভিন্ন কথা)। যে ব্যক্তি ভুলক্রমে কোন মুমিনকে হত্যা করবে, তাহলে একজন মুমিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং দিয়াত (রক্ত পণ দিতে হবে) যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিজনদের কাছে। তবে তারা যদি সদাকা (ক্ষমা) করে দেয় (তাহলে দিতে হবে না)। আর সে যদি তোমাদের শত্রু কওমের হয় এবং সে মুমিন, তাহলে একজন মুমিন দাস মুক্ত করবে। আর যদি এমন কওমের হয় যাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে তাহলে দিয়াত দিতে হবে, যা হস্তান্তর করা হবে তার পরিবারের কাছে এবং একজন মুমিন দাস মুক্ত করতে হবে। তবে যদি না পায় তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম পালন করবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাস্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ৯২]

হেদায়া ৪/৪৬০; রাওয়াইয়ুল বয়ান ফি তাফসিরি আয়াতিল আহকাম ১/৩৬০

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

و الله تعالى أعلم بالصواب

وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم


উত্তর প্রদানে:

ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী

সূত্রhttp://www.drkhalilurrahman.com/4257/article-details.html

===================

( তবে আরেকটি কথা আছে, তা হলো ইসলামে বিচার প্রক্রিয়ায় আরো একটি বিষয় যুক্ত আছে, তা হচ্ছে, তা’যির। যখন, কিসাস বা দিয়াত অথবা ইসলমের অন্য কোনো সুষ্পষ্ট শাস্তির উল্লেখের সাথে অপরাধকারীর অপরাধের পরিপূর্ণ মিল ও শর্ত পাওয়া যায়না, তখন বিচারক অপরাধকারীকে তা’যির বা ভিতিমূলক শাস্তি প্রদান করতে পারেন। আবার বিচারক তার সুষ্পষ্ট যুক্তির ভিত্তিতে বা সাক্ষীদের দ্বারা বা তদন্তকারীদের দ্বারা  আনীত প্রমাণের প্রেক্ষিতে  অপরাধীকে বেকসুর খালাসও দিতে পারেন। )


তাফহীম এ্যাপে টালি খাতা / আয় ব্যয় / কর্জে হাসানা ইত্যাদি বিভাগ যোগ করা প্রসঙ্গে ।



    الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ 

কিন্তু যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হয় ঠিক সেই লোকটির মতো যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থায় উপনীত হবার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “ব্যবসা তো সুদেরই মতো।” অথচ আল্লাহ‌ ব্যবসাকে হালাল করে দিয়েছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। (আল-বাক্বারা: ২৭৫)

لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَبْتَغُوا فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ ۚ 

আর হজ্বের সাথে সাথে তোমরা যদি তোমাদের রবের অনুগ্রহের সন্ধান করতে থাকো তাহলে তাতে কোন দোষ নেই।( আল-বাক্বারা: ১৯৮)\n \nটিকা: 218 : এটিও প্রাচীন আরবের একটি জাহেলী ধারণা ছিল। হজ্জ সফর কালে অর্থ উপার্জনের জন্য কোন কাজ করা তারা খারাপ মনে করতো। কারণ তাদের মতে, অর্থ উপার্জন করা একটি দুনিয়াদারীর কাজ। কাজেই হজ্জের মতো একটি ধর্মীয় কাজের মধ্যে এ দুনিয়াদারীর কাজটি করা তাদের চোখে নিন্দনীয়ই ছিল। কুরআন এ ধারণার প্রতিবাদ করছে এবং তাদের জানিয়ে দিচ্ছে, একজন আল্লাহ‌ বিশ্বাসী ব্যক্তি যখন আল্লাহর আইনের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করে নিজেদের অর্থ উপার্জনের জন্য প্রচেষ্টা চালায় তখন আসলে সে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করে। কাজেই এক্ষেত্রে সে যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সফর করতে গিয়ে তার মাঝখানে তাঁর অনুগ্রহের সন্ধানও করে ফেরে, তাহলে তার কোন গোনাহ হবে না।



প্রশ্ন:   একই এপ্স এর ভিতরে এত কিছু না দিয়ে অন্য এপ্স বানান...


উত্তর: 

ভাই,  এ বিষয়ের  টা ব্যাখ্যা আছে। আলাদা পোস্ট দরকারঃ
১) আরেকটা এ্যাপের জন্য শুধু চুলা আর কড়াইতেই ১০/১২ এমবি সাইজ হয়, মূল এ্যাপ হয়তো ১ এমবির কম। এবারের আপডেট এ প্রায় ১৩ টা সেকশন যোগ করেছি। আকার বেড়েছে এক এমবির কম বেশী। আপনি আলাদা এ্যাপ নিলে ১০০ এমবিতেও হতো না।
২) তাফহীম এ্যাপের পাঠকদের প্রতি এবং সংগঠনের মায়ায় তাফহীম পাঠকদের সুবিধা দেওয়াই আমার মূল লক্ষ। পয়সা কামানো নয়। তারা যেন এক এ্যাপ থেকেই সুবিধা গুলো পায় এই লক্ষ। নইলে এ্যাডসেন্স এর অধীনে তাফহীম এ্যাপ দিয়ে কমপক্ষে ত্রিশটা (আরো বেশী হবে, কম করে বললাম) এ্যাপ বানানো যেতো।
৩) তাফহীমের একটা ব্রান্ড ভ্যালু আছে। যেমন, আজকের পোস্ট এর একই ইনবক্স কারী জানেন না, আমার একটা বাংলা-ইংরেজি-আরবী তিন ভাষায় ডিকশনারি ( সার্চ সিস্টেম সহ) একটা এ্যাপ আছে। তাই, নতুন জিনিস চালু করলে ব্রান্ড এর অধীনেই যেমন তারাতারি চালু হয়, আবার পাঠকও সেটা পায়, নইলে প্লেস্টোর এর এসইও তে (এ্যাফেক্টিভ) ইনক্লুড হতেই কোনো কোনো এ্যাপের দীর্ঘদিন লেগে যায়, আবার কোনোটা হয়তো, সাড়া জীবনেও অন্তর্ভুক্ত হয়না।
৪) যেহেতু পাঠককে সুবিধা দেওয়াই আমার প্রাইম টার্গেট, তাই এই এ্যাপেই থাকুক। আকার বৃদ্ধি মাত্র কয়েক কেবি।
৫) কুরআনে একটি আয়াত আছে, তোমরা হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে যখন যাও, তখন, পথে যদি সেই সাথে কিছু ব্যবসা বাণিজ্য করো, তাতে দোষ নাই। " তাফসীরে বলা হয়েছে, অনেকেই দ্বীন আর দুনিয়াকে আলাদা মনে করে, আসলে দ্বীন আর দুনিয়া আলাদা জিনিস নয়।
৬) এক সুবিধার টানে এ্যাপটি মোবাইলে রাখা। যেমন, পাঠককে বিভিন্ন সুবিধা দিতে পারলে, সে যখন তখন এ্যাপ ডিলিট করবেনা। যেমন ধরেন, টালিখাতা আয় ব্যায় সেকশনে যদি কেউ ইনশাআল্লাহ ২/৩ মাস হিসাব রাখে, বা ৬ মাস হিসাব রাখে, সে তখন হুট করে এ্যাপ ডিলিট করবেনা, ইনশাআল্লাহ।
প্লে কনসোল এর রিপোর্ট অনুযায়ী, আলহামদুলিল্লাহ টালিখাতা / আয় ব্যয় সেকশন এ্যাড করার পর তাফহীম এ্যাপের আনইন্সটল ইনফরমেশন ডাটা লেবেল অনেক অনেক কমে এসেছে। আলহামদুলিল্লাহ।
৭) আপনি দাওয়াতী কাজ করতে পারবেনঃ "ভাই এই এ্যাপে আপনার সব বাকী /নগদ লেনদে, সংসারের হিসাব রাখতে পারবেন। পাশাপাশি কুরআনও পড়তে পারবেন। মন চাইলে পড়বেন। কিন্তু হিসাব লেখা ও তারিখ মাস বছর ভিত্তিক হিসাবের সারাংশ ব্যালেন্স ঋণ উদ্দ্রিত্ত বাইর করতে পারবেন মাত্র এক ক্লিকে। " এভাবে, মূলত তাফহীম তাফসীর তার মোবাইলে আপনি দিয়া আসলেন।
শুধু টেবিলের উপর গোপনে বই রেখে আসতো। এভাবেও অনেক মানুষ দ্ব্বীনের পথে এসেছে।
আলহামদুলিল্লাহ, ইনশআল্লাহ তাফহীম এ্যাপেতো অন্যান্য সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে।

আজানে নবীজী সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুল চুম্বন বিদআত

 

আজানে নবীজী সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুল চুম্বন বিদআত!

মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

ইদানিং আজানের সময় “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শব্দ শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা বিষয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে অনেকে অনুরোধ করছেন। সেই হিসেবে এ বিষয়ে অল্প সময়ে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হল।

হাদীসের কোন গ্রহণযোগ্য কিতাবে আজানের সময় আঙ্গুল চুমু খাওয়া ও চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন কথা বর্ণিত হয়নি।

আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা যেসব কিতাব থেকে উক্ত মাসআলাটির প্রমাণ পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন, তা মূলত কয়েকটি। যথা-

কানযুল ইবাদ।

ফাতাওয়ায়ে সূফিয়া।

কুহুস্তানী রহঃ এর লিখা জামেউর রূমূজ।

কিতাবুল ফিরদাউস।

মূল উৎস এ ৪টি গ্রন্থ। যে ৪ কিতাবের রেফারেন্সে তা আনা হয়েছে, ফাতাওয়া শামী, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আলবাহরুর রায়েক এবং জালালাইনের হাশিয়ায়।

তাহলে মূল উৎস কিন্তু ৪টিই থাকছে। পরবর্তী কিতাব তথা ফাতাওয়া শামী, মারাকিল ফালাহ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ হওয়া মানে আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং মূল প্রমাণ্য উক্ত কয়েকটি কিতাবই থাকে। এবার আমরা দেখবো উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত সব কথাই কি গ্রহণযোগ্য? নাকি তাহকীক করতে হবে?

কানযুল ইবাদ

كنز العباد، في شرح الأوراد

يعني: أوراد الشيخ، الأجل، محيي السنة: شهاب الدين السهروردي.

والشرح:لبعض المشايخ.في مجلد.منقول من: كتب الفتاوى، والواقعات.

وهو: شرح فارسي: بقوله.لعلي بن أحمد الغوري، الساكن بخطة: كره.

কানযুল ইবাদ ফী শরহিল আওরাদ অর্থাৎ আওরাদুশ শায়খুল আজল মুহিউস সুন্নাহ শিহাবুদ্দীন আসসাহরাওয়ার্দীর ওযীফা এবং মালফুজাত কোন বুযুর্গ ব্যক্তি লিখেছেন। যা ফাতাওয়ার কিতাব ও জীবনী গ্রন্থ থেকে নেয়া। এক খন্ডে প্রকাশিত। এটি ফার্সি ভাষায় আলী বিন আহমাদ আলগুরীর অনুবাদে প্রকাশিত। যিনি খাত্তা এলাকার বাসিন্দা। [কাশফুজ জুনুন-২/১৫১৭]

এই হল, কানযুল ইবাদ কিতাবের হালাত। কোন বুযুর্গ লিখেছেন? কোন উৎসমূল থেকে তা সংগ্রহ করেছেন? তার কিছুই জানা নেই। এমন একটি মাজহূল গ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয় কি করে মুস্তাহাবের মত শরয়ী বিধানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে?

 ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ

আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী রহঃ বলেনঃ

((الفتاوي الصوفيّة)) لفضل الله [بن] محمد بن أيوب، تلميذ ((جامع المضمرات)) كما نقله صاحب ((الكشف)) عن البِرْكِليّ أنّه قال: إنّها ليست من الكتب المعتبرة، فلا يجوزُ العمل بما فيها إلا إذا علمَ موافقتها للأصول.

“জামেউল মুজমারাত” গ্রন্থ প্রণেতার ছাত্র ফযল বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব এর কিতাব “ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ” সম্পর্কে “কাশফুজ জুনুন” প্রণেতা বিরকিলিই এর বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ নিশ্চয় এটি [ফাতাওয়া সুফিয়্যাহ] কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব নয়। তাই এর মাঝে থাকা যেসব বিষয় উসূলে শরীয়তের সাথে না মিলে, এমন কথার উপর আমল করা যাবে না। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৫১, কাশফুজ জুনুন-২/১২২৫]

কুহুস্তানী

والقُهُسْتَانِيُّ كجارفِ سيل، وحاطب ليل خصوصاً واستناده إلى كتب الزاهديّ المعتزليّ. انتهى

আল্লামা শামী রহঃ বলেনঃ কুহুস্তানী হল, স্রোতে ভেসে যাওয়া এবং অন্ধকারে লাকড়ি সংগ্রহকারী। বিশেষ করে তিনি যখনি যাহেদ মু’তাজিলীর কিতাব থেকে কোন কথা গ্রহণ করে। [তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ-২/৩২৪, মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]

মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ কুহুস্তানী সম্পর্কে বলেনঃ

وقال على القاري المكيّ في رسالتِه: ((شم العوارض في ذم الروافض)): لقد صدقَ عصامُ الدين في حقّ القُهُسْتَانِيّ أنّه لم يكن من تلاميذ شيخ الإسلام الهَرَوي، لا من أعاليهم، ولا من أدانيهم، وإنّما كان دلاّل الكتب في زمانه، ولا كان يُعرف بالفقه وغيره بين أقرانه، ويؤيّدُه أنّه يجمعَ في ((شرحِه)) هذا بين الغث والسمين، والصحيح والضعيف من غير تحقيق وتدقيق، فهو كحاطب الليل، الجامعِ بين الرطب واليابس في الليل. انتهى.

মোল্লা আলী কারী আলমক্কী তার রিসালা “শাম্মুল আওয়ারিজ ফী জাম্মির রাওয়াফিজ” নামক গ্রন্থে লিখেনঃ ইসামুদ্দীন সাহেব কুহুস্তানীর বিষয়ে হক কথা বলেছেনঃ যে, তিনি আসলে শাইখুল ইসলাম আলহারওয়ী এর বড় ছোট কোন ছাত্রের মাঝেই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। বরং তিনি তার সময়কালে [ফিরাক্বে বাতিলার] কিতাবের দালাল ছিলেন। তিনি তার সময়কালে ফিক্বহ বা অন্য কোন বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন না। [ইমামুদ্দীন সাহেবের কথাটি] এ বিষয়টি আরো শক্তিশালী করে তার এই শরহে মুখতাসারুল বিকায়া [অর্থাৎ জামিউর রূমূজ] কিতাবে তাহকীক ছাড়াই গলত, সহীহ, সঠিক বেঠিক সব ধরণের কথা একত্রিত করা দেখে। তিনি যেন রাত্রের ঐ লাকড়ি একত্রকারীর মত, যে রাতের অন্ধকারে ভিজা শুকনা সব ধরণের লাকড়ি সংগ্রহ করে যায়। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]

এসব কথা জানার পরও কুহুস্তানী কিতাবের রেফারেন্স কিভাবে উপস্থাপন করে বিদআতি বন্ধুরা? অথচ এ বিষয়ে কোন বিশুদ্ধ হাদীসের টিকিটিও পাওয়া যায় না।

ফাতাওয়া শামী লেখকের মন্তব্যঃ

ইবনে আবেদীন শামী রহঃ আঙ্গুল চুমু খাওয়া সংক্রান্ত দলীল কানযুল ইবাদ, ফাতাওয়া সুফিয়া, কুহুস্তানী এবং বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতিতে নকল করার পর উল্লেখ করেনঃ

وَذَكَرَ ذَلِكَ الْجِرَاحِيُّ وَأَطَالَ، ثُمَّ قَالَ: وَلَمْ يَصِحَّ فِي الْمَرْفُوعِ مِنْ كُلِّ هَذَا شَيْءٌ.

এসব জিরাহী ও উল্লেখ করেছেন ও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তারপর লিখেনঃ এসবের [আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে লাগানো] কোন দলীলই মারফূ নয়। [ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৭০]

আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে মোছার কথাগুলো যেমন ইবনে আবেদীন রহঃ উল্লেখ করছেন, তেমনি শেষে এসবের কোনটিই যে বিশুদ্ধ নয়, তাও উল্লেখ করে দিয়ে তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন। তারপরও ইমাম শামী রহঃ উক্ত কাজের প্রবক্তা বলা কতটা খিয়ানত তা ভাবা যায়?

জালালাইনের হাশিয়ার মন্তব্য

ويكره تقبيل الظفرين ووضعهما على العينين لانه لم يرد فيه والذى ورد فيه ليس بصحيح (تعليقات جديدة حاشية جلالين-357

আঙ্গুলের নখ চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো মাকরূহ। কেননা, এর কোন প্রমাণ নেই। আর যেসব বর্ণনা এর স্বপক্ষে পেশ করা হয়, এর কোন কোনটিই সঠিক নয়। [জালালাইনের হাশিয়া-৩৫৭]

কিতাবুল ফিরদাউস এবং আলমাকাসিদুল হাসানাহ!

আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা সবচে’ বেশি দলীল দিতে দেখা যায় আল্লামা সাখাবী রহঃ এর কিতাব “আলমাকাসিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছিরিম মিনাল আহাদীসিল মুশতাহারাহ আলাল আলছিনাহ” নামক গ্রন্থ থেকে। অথচ উক্ত কিতাবে যদিও অনেক বর্ণনা এ প্রসঙ্গে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনটিই সংকলক ইমাম সাখাবী সহীহ বলেননি। বরং প্রতিটি বর্ণনাকেই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।

ذَكَرَهُ الدَّيْلَمِيُّ فِي الْفِرْدَوْسِ مِنْ حَدِيثِ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ أَنَّهُ لَمَّا سَمِعَ قول المؤذن أشهد أن محمد رَسُولُ اللَّه قَالَ هَذَا، وَقَبَّلَ بَاطِنَ الأُنْمُلَتَيْنِ السَّبَّابَتَيْنِ وَمَسَحَ عَيْنَيْهِ، فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ فَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ خَلِيلِي فَقَدْ حَلَّتْ عَلَيْهِ شَفَاعَتِي، ولا يصح

দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ মুআজ্জিনের মুখ থেকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শুনে হুবহু তা বললেন। তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন। এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য।

আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয়। [মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]

বর্ণনা আনার পর পরই আল্লামা সাখাবী রহঃ এর “বর্ণনাটি সহীহ নয়” বলে দেয়ার মাধ্যমে পরিস্কার এটি জাল। জাল বলার পরও উক্ত বর্ণনা দলীল হিসেবে কিভাবে পেশ করা হয়?

وكذا ما أورده أبو العباس أحمد ابن أبي بكر الرداد اليماني المتصوف في كتابه “موجبات الرحمة وعزائم المغفرة” بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه، عن الخضر عليه السلام أنه: من قال حين يسمع المؤذن يقول أشهد أن محمد رسول اللَّه: مرحبا بحبيبي وقرة عيني محمد بن عبد اللَّه صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثم يقبل إبهاميه ويجعلهما على عينيه لم يرمد أبدا،

প্রথম বর্ণনার মত এটিও বিশুদ্ধ নয় যে, যা সূফী আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আবী বকর ইয়ামানী স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ ওয়া আজায়িমুল মাগফিরাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ থেকে সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। বর্ণনাটি হল, হযরত খিজির আঃ থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি মুআজ্জিনকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বলবে “মারহাবান বিহাবীবী ওয়া কুররাতা আইনী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চুমু খাবে, এবং তা রাখবে দুই চোখে, সে ব্যক্তির চোখ কখনো পীড়িত হবে না।

[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]

আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা কত বড় প্রতারণা ভাবা যায়?

এরপর আল্লামা সাখাবী রহঃ আরো ৬/৭টি বর্ণনা তার আলমাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থে এনেছেন। আনার পর পরিশেষে তিনি এসব বর্ণনা বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ

ولا يصح في المرفوع من كل هذا شيء.

এখানের কোন বর্ণনাই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়। [আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, প্রকাশনী দারুল কুতুব, বাইরুত]

“হাদীসে মারফূ” দ্বারা প্রমাণিত নয় মানে কী?

বিদআতি বন্ধুরা ইমাম সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য “হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়” দ্বারা সাধারণ লোকদের একটি ধোঁকা দিয়ে থাকেন। সেটি হল এই যে, তারা বলেন “ইমাম সাখাবীর মত হল, এসব বিষয় মারফূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কিন্তু মাকতূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

এটি একটি জলজ্যান্ত প্রতারণা। মূলত ইমাম সাখাবী রহঃ এর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উক্ত বিষয় মূলত কোন প্রকার হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়। পুরোটাই বানোয়াট।

যা পরিস্কার হয়ে যায় “আলমাকাসিদুল হাসানাহ” গ্রন্থের উক্ত কথাটির টিকা দেখলেই। টিকায় মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলআজহারী আলগুমারী লিখেনঃ

وحكى الخطاب في شرح مختصره خليل حكاية أخرى غير ما هنا، وتوسع في ذلك، ولا يصح شيء من هذا في المرفوع كما قال المؤلف، بل كله مختلق موضوع. [ط الخانجي

খাত্তাব শরহে মুখতাছারাহ খলীল নামক গ্রন্থে এখানে উদ্ধৃত হয়নি এমন আরেকটি ঘটনা নকল করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। অথচ এর মাঝের কোনটিই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং সব ক’টিই হল মনগড়া ও বানোয়াট। [তা’লীকে আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১-৪৪২, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলগুমারী]

মোল্লা আলী কারী রহঃ এর মন্তব্যঃ

মোল্লা আলী কারী রহঃ দায়লামীর “আলফিরদাউস” কিতাবের বরাতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর দিকে নিসবত করা আঙ্গুলে চুমু খাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি উদ্ধৃত করার পর আল্লামা সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য উল্লেখ করেনঃ

وقال السخاوى: لا يصح، وأورده الشيخ احمد الرداد فى كتابه موجبات الرحمة” بسند فيه مجاهيل مع انقطاعه عن الخضر عليه السلام، وكل ما يروى فى هذا فلا يصح رفعه البتة

قلت: واذا ثبت رفعه على الصديق فيكفى العمل به

সাখাবী বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। আর শায়খ আহমাদ আররদাদ স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ পর্যন্ত সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত এর কোনটিই রাসূল সাঃ এর ফরমান হওয়া প্রমাণিত নয়।

আমি বলি, যদি আবু বকর সিদ্দীক রাঃ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ হতো, তাহলে এর উপর আমল করা সঠিক হতো। [আলমওজুআতুল কুবরা, মোল্লা আলী কারী-২১০, বর্ণনা নং-৮২৯]

কিন্তু আফসোস! এ সংক্রান্ত কোন বর্ণনাকেই মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ বলে রায় দেননি। তাই এ আমলটি একটি মনগড়া ও বানোয়াট আমলই প্রমাণিত হয়।

একটি যুক্তি

বাইয়াতে রিজওয়ানে রাসূল সাঃ স্বীয় বাম হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে, স্বীয় ডান হাতের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামের বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।

নবীজী সাঃ নিজের হাতকে যেহেতু হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে বাইয়াত নিতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আজানের সময় রাসূল সাঃ এর নামের সময় স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল মনে করে চুমু খেতে পারবো না? [উৎসঃ ইশতিহার ওয়াজিবুল ই’তিবার, লেখক, মৌলভী মুখতার আহমাদ, কানপুর থেকে প্রকাশিত]

আমাদের জবাব

গায়রে মুজতাহিদ যখন মুজতাহিদের ভাব ধরে, তখন এমন ভয়ানক ইজতিহাদই করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাসূল সাঃ বাইয়াতে রিজওয়ানে স্বীয় হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করেছেন রূপক অর্থে। আর উক্ত কাজটি তিনি করেছেন আল্লাহর অহী অনুপাতে। কারণ রাসূল সাঃ এর কর্ম অহীয়ে গায়রে মাতলু। আর উক্ত বিষয়টি কুরআনে পরিস্কার বর্ণিত হয়েছে।

বিদআতি বন্ধুরা কি নিজেদের নবীজী সাঃ এর মত মনে করেন নাকি? স্বীয় পাপিষ্ঠ হাতের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল মনে করা কত বড় ধৃষ্ঠতা ভাবা যায়? আর এ ধৃষ্ঠতার নাম নাকি মুহাব্বতে রাসূল! বড়ই আজীব মানসিকতা তাদের।

মজার বিষয় হল, আঙ্গুল চুমুদাতা বন্ধুরা নিজের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, সেই সম্মান প্রদর্শন করেন, যা হযরত উসমান রাঃ করেছিলেন? হযরত উসমান রাঃ তো রাসূল সাঃ এর হাতে যে হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত আর লজ্জাস্থান স্পর্শ করেননি। [সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭]

কিন্তু নবীর আশেক দাবিদার এসব বন্ধুরা স্বীয় আঙ্গুলকে নবীর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, তারা কি উক্ত সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন? নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্তকৃত অঙ্গ দ্বারা নাপাক স্থানে হাত রাখা কত বড় বেআদবের কাজ একবার ভেবে দেখার সময় হবে কি?

কোন অহীর বিধানের ভিত্তিতে স্বীয় নাপাক আঙ্গুলকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এসব বিদআতিরা?

ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেঊন।

জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এর বক্তব্য

الحديث اللتى رويت فى تقبيل الاناميل وجعلها على العينين عنه سماع اسمه صلى الله عليه وسلم عن المؤذن فى كلمة الشهادة كلها موضوعات (تيسير المقال للسيوطى-123)

মুআজ্জিনের মুখে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে আঙ্গুল চুমু খাওয়া এবং তা চোখের উপর রাখা সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। {তাইসীরুল মাক্বাল লিস সুয়ূতী-১২৩}

আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেৌবী রহঃ এর মন্তব্যঃ

والحق ان تقبيل الظفرين عند سماع الاسم النبوى فى الاقامة وغيرها كلما ذكر اسمه عليه الصلاة والسلام مما لم يرد فيه خبر ولا اثر ومن قال به فهو المفترى الاكبر فهو بدعة شنيعة سيئة لا اصل لها فى كتب الشريعة ومن ادعى فعليه البيان (السعاية-1/46)

সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ এর নাম একামত বা অন্য কোন স্থানে শুনার পর আঙ্গুল চুমু খাওয়ার ব্যাপারে না কোন হাদীসে নববী [বিশুদ্ধ সূত্র অনুপাতে] আছে, না কোন সাহাবীর আমল বা বক্তব্য [বিশুদ্ধ সূত্রে] বর্ণিত আছে। তাই যে ব্যক্তি এ আমলের প্রবক্তা, সে ব্যক্তি অনেক বড় অপবাদ আরোপকারী। তাই একাজ ঘৃণ্য ধরণের বিদআত। শরয়ী গ্রন্থাবলীতে যার কোন ভিত্তি নেই। যে এসব কথা বলে, তার উচিত [সহীহ] প্রমাণ পেশ করা। [আসসিয়ায়া-১/৪৬]

শেষ কথা

উপরের দীর্ঘ আলোচনা ও তথ্য প্রমাণ দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজানের সময় বা অন্য সময় রাসূল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন বর্ণনাই সহীহ নয়। সবই মনগড়া ও বানোয়াট।

তাই এ কাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত। কিন্তু সুন্নত বা মুস্তাহাব না মনে করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি কোন ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর নাম শুনে মুহাব্বতে করে থাকে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না। কারণ তখন এটি আর বিদআতের সংজ্ঞায় থাকে না। কারণ বিদআত হবার জন্য তা সওয়াবের কাজ, বা সুন্নাত মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করতে হয়।

আবারো বলছি! একাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করলে তা পরিস্কার হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। মোহাব্বতের নামে বিদআতী ও আমলের নামে শিরকী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...