সবসময় সাদা স্রাব বের হলে নামাজ কিভাবে পড়বে

 প্রশ্ন                                                                                                         

আমার সবসময় সাদা স্রাব বের হতেই থাকে প্রত্যেকবার নামাজের সময় কাপড় পরিবর্তন করে নতুনভাবে অজু করে নামাজ পড়ি কিন্তু নামাজের মাঝেও স্রাব বের হয়ে কাপড় নষ্ট হয়ে যায় প্রশ্ন হলোআমি কিভাবে নামাজ পড়ব?

উত্তর                                                                                                       

بسم الله الرحمٰن الرحيمحامدا و مصليا و مسلما

যেহেতু আপনার সবসময় স্রাব বের হতেই থাকে, ফরজ নামাজ পড়া যায়- এতটুকু সময় যেহেতু আপনি পান না, তাই শরিয়তের দৃষ্টিতে আপনি ইস্তেহাজাগ্রস্ত ও মাজুর। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হল, আপনি প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজের জন্য অজু করবেন এবং কাপড়ের যে অংশে স্রাব লেগেছে তা ধুয়ে নিবেন।

ঐ অজু দিয়ে ঐ ওয়াক্তের মাঝে যত ইচ্ছা ফরজ ও নফল নামাজ আপনি পড়তে পারবেন (তবে অজু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে অজুটি ভেঙ্গে যাবে)। এ সময় স্রাব বের হতে থাকলেও কোনো সমস্যা নেই। ওয়াক্ত শেষ হয়ে গেলে আপনার অজু ভেঙ্গে যাবে। পরবর্তী ওয়াক্তের জন্য পুনরায় অজু করে নিতে হবে।

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ فِي الْمُسْتَحَاضَةِ ‏‏ تَدَعُ الصَّلاَةَ أَيَّامَ أَقْرَائِهَا الَّتِي كَانَتْ تَحِيضُ فِيهَا ثُمَّ تَغْتَسِلُ وَتَتَوَضَّأُ عِنْدَ كُلِّ صَلاَةٍ وَتَصُومُ وَتُصَلِّي

‘আদী ইবনে সাবিত (রহ.) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) ইস্তিহাযার রোগিণী সম্পর্কে বলেন, ইতোপূর্বে সে যে কয়দিন ঋতুবতী থাকত ততদিন নামাজ ছেড়ে দেবে; অতঃপর গোসল করবে এবং প্রত্যেক নামাজের ওয়াক্তে নতুন করে অজু করবে এবং রোজা রাখবে ও নামাজ আদায় করবে।’ [সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ১২৬]

আল্লাহ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।

و الله تعالى أعلم بالصواب

وصلى الله تعالى على رسوله وعلى آله وسلم

উত্তর দিচ্ছেন:

ড. মুফতি মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী

সূত্রhttp://www.drkhalilurrahman.com/6136/article-details.html

হুরমতে মুসাহারাত কি ? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

হুরমতে মুসাহারাত অর্থ হল, নিকটাত্মীয় কে সম্মান প্রদর্শন করা।(হুরমত অর্থ সম্মান+এবং মুসাহারাত অর্থ নিকটাত্মীয়)

দুই জন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় বা সমাজে চলমান রয়েছে,সেটা সাধারণত নসব তথা বংশগত কারণে হয়ে থাকে বা রেযা'আত তথা দুধ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে কিংবা মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত থাকে।

শরীয়তে মাহরাম নন মাহরাম তথা বিয়ে-শাদীর বৈধ-অবৈধ পার্সন সাধারণত এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।হয়তো নসবের কারণে কাউকে বিয়ে করা হারাম নতুবা বৈবাহিক সম্পর্কের ইস্যুতে হারাম কিংবা দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম ।
কুরআনে কারীমে যে চৌদ্দ জনের নমুনা পেশ করা হয়েছে,এসব মূলত এই তিনটি সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।

বংশগত সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম যেমন,পিতা তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না,ইত্যাদি।
দুধ সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম,যেমন দুধ সন্তান তার দুধ মাকে/বোনকে বিয়ে করতে পারবে না।বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম, যেমন,জামাই সে তার শাশুড়ী কে বিয়ে করতে পারবে না।

বৈবাহিক সম্পর্ক যাকে মুসাহারাত বলে,সেটা কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে?আমরা জানি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে।সুতরাং কোনো মানুষ তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এবং তার সন্তানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এমনকি সে তার স্ত্রীর মা বা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ তাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে। যা বিয়েকে বাধা প্রদাণ করে।

ঠিকতেমনিভাবে যিনা-ব্যভিচার তথা অবৈধ সম্পর্কের কারণেও হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে।ব্যভিচারী পরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে।

যিনা ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে,

★উক্ত নারীর সাথে সহবাসের কামভাব নিয়ে স্পর্শ করতে হবে।

★খালি গায়ে স্পর্শ হতে হবে বা এমন পাতলা কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হতে হবে যে, কাপড় থাকার পরও শরীরের স্পন্দন অনুভূত হয়।বিস্তারিত জানুন-1233


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ

মূল লিংক

আসসালামু আলাইকুম হুজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দয়া করে উত্তর দিলে অনেক উপকার হবে।
প্রশ্ন : শ্বশুর যদি ছেলের বৌকে কামভাব নিয়ে স্পর্শ করে যদিও ছেলের বৌ এর এতে কোনো দোষ নেই তাহকে কি ওই বৌ কি তার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাই??  তাকে কি তালাক দিবে তার স্বামী??


ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ
 আল্লাহ তা'আলা বলেন,
 ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺴَﺒًﺎ ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ 
তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা ফুরক্বান-৫৪) 
হুরমতে মুসাহারাত অর্থ হল, নিকটাত্মীয় কে সম্মান প্রদর্শন করা।(হুরমত অর্থ সম্মান+এবং মুসাহারাত অর্থ নিকটাত্মীয়) দুই জন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় বা সমাজে চলমান রয়েছে,সেটা সাধারণত নসব তথা বংশগত কারণে হয়ে থাকে বা রেযা'আত তথা দুধ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে কিংবা মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত থাকে। শরীয়তে মাহরাম নন মাহরাম তথা বিয়ে-শাদীর বৈধ-অবৈধ পার্সন সাধারণত এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।হয়তো নসবের কারণে কাউকে বিয়ে করা হারাম নতুবা বৈবাহিক সম্পর্কের ইস্যুতে হারাম কিংবা দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম । কুরআনে কারীমে যে চৌদ্দ জনের নমুনা পেশ করা হয়েছে,এসব মূলত এই তিনটি সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে। বংশগত সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম যেমন,পিতা তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না,ইত্যাদি। দুধ সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম,যেমন দুধ সন্তান তার দুধ মাকে/বোনকে বিয়ে করতে পারবে না।বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম, যেমন,জামাই সে তার শাশুড়ী কে বিয়ে করতে পারবে না। বৈবাহিক সম্পর্ক যাকে মুসাহারাত বলে,সেটা কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে?আমরা জানি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে।সুতরাং কোনো মানুষ তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এবং তার সন্তানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এমনকি সে তার স্ত্রীর মা বা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ তাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে। যা বিয়েকে বাধা প্রদাণ করে। 

এখন প্রশ্ন জাগে,তাহলে বিয়ের মত অবৈধ সম্পর্কের কারণে কি হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে? যেমন কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচার করলো,এখন সেই যিনাকারীর ছেলে উক্ত মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। 
জবাবে বলা যায়, এই মাসআলায় উলামাদের মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
 

 (প্রথম মত) 

 যিনা-ব্যভিচার তথা অবৈধ সম্পর্কের কারণে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে।ব্যভিচারী পরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে। এটা হানাফি মাযহাব,হাম্বলী মাযহাব,এবং ইমাম সাওরী রাহ ও আওযায়ী রাহ এর অভিমত। 
 তাদের দলিল 
 (১) ﻭَﻻَ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻧَﻜَﺢَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺳَﻠَﻒَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﻭَﻣَﻘْﺘًﺎ ﻭَﺳَﺎﺀ ﺳَﺒِﻴﻼً যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।(সূরা নিসা-২২) আয়াতে অশ্লীল, গযবের কাজ,এবং নিকৃষ্ট আচরণ বলা হয়েছে।কাজেই বুঝা গেল এখানে নিকাহ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।সুতরাং অর্থ হবে যাদেরকে তোমাদের পিতামহগণ সহবাস করেছেন,(বিয়ের মাধ্যমে বা বিয়ে ছাড়া)তাদের সাথে তোমরা(বিয়ে বা বিয়ে ছাড়া কোনোভাবে) সহবাসে লিপ্ত হইওনা। 
(২) বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﻞٍ، ﻧَﻈَﺮَ ﺇﻟﻰ ﻓﺮْﺝ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻭﺍﺑﻨﺘﻬﺎ " . আল্লাহ ঐ মানুষের দিকে তাকাবেন না, যে কোনো মহিলার লজ্জাস্থান এবং ঐ মহিলার মেয়ের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে।(বিয়ের মাধ্যমে হোক বা বিয়ে ছাড়া হোক) 
(৩)কিয়াস তথা যেভাবে বৈধ সহবাসের কারণে হুরমত সাব্যস্ত হয়,ঠিকসেভাবে অবৈধ সহবাসের কারণেও হুরমত সাব্যস্ত হবে। 

(দ্বিতীয় মত) 

যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত প্রমাণিত হবে না।সুতরাং যদি কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়,তাহলে সেই মহিলার মা-মেয়েকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।এটা শাফেয়ী মাযহাব,মালিকী মাযহাব ও ইবনে হযম জাহিরী এবং এক বিবরণ অনুযায়ী ইমাম আহমদ রাহ এর র মত। 
তাদের দলিল 
(ক) কুরআনে কারীমে যাদেরকে হারাম বলা হয়েছে,তারা ব্যতীত বাকী সবাই হালাল।সুতরাং অবৈধ যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত হয়ে কেউ আর হারাম হবেন না। 
 (২) আল্লাহ তা'আলা বংশ এবং বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারা বান্দার উপর অনুগ্রহ করেছেন।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺴَﺒًﺎ ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা ফুরকান-৫৪) সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহকৃত কোনো জিনিষ অবৈধ কোনো কিছু দ্বারা সাব্যস্ত হবে না। 
 (৩) বর্ণিত রয়েছে, রাসূল্লাহ সাঃ বলেছেন,
 ﺭﻭﻱ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻗﺎﻝ : " ﻻ ﻳُﺤﺮِّﻡ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺍﻟﺤﻼﻝ " . 
হারাম কোনো হালালকে হারাম করে না। 


 কোন মত গ্রহণযোগ্য ও অগ্রাধিকার যোগ্য? 

সতর্কতামূলক হানাফি মাযহাবকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।যাতেকরে বেপর্দা ও ফ্রি মিক্সিং ইত্যাদি সম্পূর্ণ রূপে খতম হয়ে নিরাপদ পরিবেশ কায়েম হয়।সুপ্রিয় পাঠকবর্গ! এখন মূল প্রশ্নের জবাবে আসি! হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য হানাফি ফিকহে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে।সেগুলো লক্ষণীয়। শশুর যদি তার ছেলের বৌকে কামভাব নিয়ে স্পর্শ করে,তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে উক্ত ছেলের বৌ ছেলের জন্য তৎক্ষণাৎ হারাম হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-৭/২৪৩) উক্ত নারীর সাথে সহবাসের কামভাব নিয়ে স্পর্শ করতে হবে।
 لما في ردالمحتار،ج:٣-ص:٣٣ (نسخة شاملة) ويشترط وقوع الشهوة عليها لا على غيرها لما في الفيض لو نظر إلى فرج بنته بلا شهوة فتمنى جارية مثلها فوقعت له الشهوة على البنت تثبت الحرمة، وإن وقعت على من تمناها فلا 
অর্থাৎ- যাকে স্পর্শ করা হচ্ছে,তাকে নিয়ে কামভাব থাকতে হবে।কেননা বর্ণিত রয়েছে,কেউ যদি তার মেয়ের লজ্জাস্থানের দিকে কামভাব ছাড়া দৃষ্টি দেয়,এবং কল্পনায় অন্য কোনো নারীকে সে সঙ্গী হিসেবে চায়,কিন্তু তৎক্ষণাৎ তার মেয়ের দিকে তার কামভাব জাগ্রত হয়ে যায়,তাহলে তখন হুরমতে মুসাহারা সাব্যস্ত হয়ে যাবে(তথা তার বিবি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে)তবে যদি তার কামভাব কল্পিত সে নারীর উপরই থাকে তাহলে হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হবে না।ফাতাওয়ায়ে শামী-৩/৩৩(শামেলা) খালি গায়ে স্পর্শ হতে হবে বা এমন পাতলা কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হতে হবে যে, কাপড় থাকার পরও শরীরের স্পন্দন অনুভূত হয়।
 لما في ردالمحتار،ج:٣/ ص:٣٤ (قوله: بحائل لا يمنع الحرارة) أي ولو بحائل إلخ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة، كذا في أكثر الكتب، وكذا لو جامعها بخرقة على ذكره، فما في الذخيرة من أن الإمام ظهير الدين أنه يفتى بالحرمة في القبلة على الفم والذقن والخد والرأس، وإن كان على المقنعة محمول على ما إذا كانت رقيقة تصل الحرارة معها بحر. 
বউয়ের কোনো দোষ নেই সেটা ঠিক,তবে যে ঘরে সে নিরাপদ নয় সেখানে তার থাকাটাও উচিৎ নয়। মূলকথা হল,শাশুড়ের স্পর্শের কারণে বউয়ের সাথে শাশুড়ের একটা সম্পর্ক বা সম্বন্ধ কায়েম হয়ে গেছে।এখন এ সম্পর্কের দাবী হল,শাশুড়ের ছেলে তথা বউয়ের জামাই এখন উক্ত বউয়ের জন্য সন্তান সমতূল্য হয়ে যাবে। সুতরাং সে এখন তার বউকে মায়ের মত সম্মান করবে।এখানে মূলত সম্মাণের কারণেই বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।বিয়ে ভেঙ্গে যাবে সে জন্য তালাকের প্রয়োজন পড়বে না।জাযাকুমুল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ


মূল লিংক 



ছেলের স্ত্রীকে স্পর্শ করার দ্বারা কি স্ত্রীটি ছেলের জন্য হারাম হয়ে যায়?

প্রশ্ন:

From: zaied bin khalid

Subject: ছেলের বউকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে
Country : বাংলাদেশ
Mobile : Message Body

আসসালামু আলাইকুম। ভাই কেমন আছেন। প্রশ্ন বিস্তারিত না হওয়ায় আমি দুঃখিত।

প্রশঃ ছেলে যে মেয়েকে পছন্দ করে তাকে ছেলেটির বাবা ঘটনাক্রমে (মেয়েটি বাবু কোলে নেয়া অবস্থায় ছিল) মেয়েটির হাতের নিচে স্তনের অংশে হাত দেয়। সেখানে ছেলেটির ভাই মা উপস্থিত ছিল ( টিভি দেখছিল)। মেয়েটির দাবি বাবা তার অখানে ইচ্ছাকৃত হাত দেয়। কিন্তু ছেলেটির দাবি তার বাবা বাবুকে ধরতে গীয়ে হাত পরে জায়। উভয়ের দাবির আলোকে জবাব চাই। ধন্যবাদ।

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

পিতা মেয়েটিকে স্পর্শ করার সময় নিম্ন বর্ণিত শর্ত যদি পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত মেয়ে সে পিতার সন্তানের জন্য হারাম হয়ে যাবে। তথা বিবাহ হয়ে থাকলে ভেঙ্গে যাবে। আর না হয়ে থাকলে কোনদিন উক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। যদি এর মাঝের একটি শর্তও ফউত হয়ে যায়, তাহলে এ নিষিদ্ধতা প্রয়োগ হবে না। শর্তগুলো নিম্নরূপ-

সরাসরি খালি গায়ে বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে মেয়েকে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

فى الدر المختار- أو لمس ) ولو بحائل لا يمنع الحرارة

وقال ابن عبدين- ( قوله : بحائل لا يمنع الحرارة ) أي ولو بحائل إلخ ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة ، كذا في أكثر الكتب (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/107-108)

স্পর্শ করলে পুরুষ মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।

পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।

আর মহিলার উত্তেজনা হল মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।

وفى رد المحتار- قوله (بشهوة) اي ولو من احدهما،

وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى

 وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)

স্পর্শ করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। সেই সাথে স্পর্শ করার শেষে, হাত ছেড়ে দেওয়ার পর যদি উত্তেজনা অনুভূত হয় তাহলেও নিষিদ্ধতার সাব্যস্ত হবে না।

وفى الدر المختار- والعبرة للشهوة عند المس والنظر لا بعدهما

وفى رد المحتار- ( قوله : والعبرة إلخ ) قال في الفتح : وقوله : بشهوة في موضع الحال ، فيفيد اشتراط الشهوة حال المس ، فلو مس بغير شهوة ، ثم اشتهى عن ذلك المس لا تحرم عليه (رد المحتار-كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/108)

স্পর্শ করার পর উদ্ভূত উত্তেজনা স্থীর হওয়ার পূর্বেই বীর্যপাত না হতে হবে। যদি উত্তেজনা হওয়ার সাথে সাথেই বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলেও নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

وفى الدر المختار- هذا إذا لم ينزل فلو أنزل مع مس أو نظر فلا حرمة به بفتى

وفى رد المحتار- قوله : فلا حرمة ) لأنه بالإنزال تبين أنه غير مفض إلى الوطء هداية .

قال في العناية : ومعنى قولهم إنه لا يوجب الحرمة بالإنزال أن الحرمة عند ابتداء المس بشهوة كان حكمها موقوفا إلى أن يتبين بالإنزال ، فإن أنزل لم تثبت ، وإلا ثبت(الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/109

মহিলার বয়স ৯ বছর থেকে কম না হতে হবে। আর পুরুষের বয়স ১২ বছর থেকে কম না হতে হবে। {হুরমতে মুসাহারাত-১৯}

যদি স্পর্শকারী মহিলা হয়, আর উত্তেজনা হওয়ার দাবি করে, আর স্বামীর এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় যে, স্ত্রী সত্য বলছে, বা স্পর্শকারী পুরুষ হয় ও উত্তেজনার দাবি করে, তাহলেও তার সংবাদের উপর স্বামীর প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি সত্য বলছে, তাহলে নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে নতুবা নয়। কেননা স্ত্রী এ দাবি করার মাধ্যমে স্বামী থেকে বাঁচতে চাচ্ছে, তাই স্বামীর সত্যায়ন জরুরী, তাছাড়া যদি দুই জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, স্পর্শ করার সময় উত্তেজনা ছিল তাহলে স্বামীর সত্যায়নের কোন প্রয়োজন নেই। {ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২০, হুরমতে মুসাহারাত-১৯}

উল্লেখিত ৬টি শর্ত পাওয়া গেলে মেয়েটিকে বিয়ে করা ছেলেটির জন্য হারাম হয়ে যাবে। আর যদি কোন একটি শর্তও ফওত হয়ে যায়, তাহলে মেয়েটিকে বিয়ে করা ছেলেটির জন্য হারাম সাব্যস্ত হবে না।

যদি কোন সাক্ষ্য না থাকে কিন্তু ছেলেটির এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত ধারণা হয় যে, এমন ঘটনা ঘটেছে যাতে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয়, তাহলে ছেলের জন্য তা অস্বিকার করা জায়েজ নয়। {আল হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা, ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৩/১১৮, ৪/১১৮}

আর যদি মেয়ের সুনিশ্চিত বিশ্বাস হয় যে, এমন ঘটনাই ঘটেছে, যার দরূন ছেলেটি তার জন্য হারাম হয়ে গেছে, তাহলে মেয়েটি আল্লাহকে ভয় করে ছেলেটি থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখবে। কখনোই বিয়ে করবে না। {হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা, ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২১}

বিস্তারিত জানতে দেখুন-

হুরমতে মুসাহারাত

হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


(

পাদটিকা : 

তবে,  হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আলেমের বক্তব্য হলো:  কুরআনের একটি মূলনীতি হলো, একজনের  বোঝা বা কাজের  শাস্তি আরেকজন ভোগ করবে না।  কিন্তু এখানে স্ত্রীর দোষে, বা  পুরুষের  দোষে, কিংবা স্বামীর দোষে কিংবা পিতার দোষে - ইত্যাদির কারণে আরেকজন ভুক্তভোগী হয়। তালাক হয়ে যাওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী নিদারুণ সমস্যায় পড়তে পারে। তাই  এক্ষেত্রে তাদের বিচারের দাবী করা হবে, কিন্তু তালাক হওয়ার বিষয়টা সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত, যার কোনো দোষ নেই,  তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, সে কি তালাক নিতে চায়, নাকি নিতে চায় না, এবং  তার সিদ্ধান্তের আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

যদি অপরাধী স্বামী হয়, তাহলে স্ত্রী তালাক নিতে চাইলে হয়তো স্বামীকে দ্বিগুণ মোহরানা পরিশোধ করতে হবে, আবার যদি অপরাধী স্ত্রী হয়, তাহলে স্বামী তালাক দিতে চাইলে তার মোহরানা মাফ করে দেওয়া হবে, -- এরকম কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, পরিস্থিতির আলোকে। 

তবে, এ বিষয়টাও যথেষ্ট আলোচনার দাবীদার, আলেমদেরকে বিষয়টি আরো গভীর ভাবে দেখতে হবে। 

)




মূল লিংক 



আরো বিস্তারিত দেখতে পারেন এই লিংকে । 



জানাযার নামাজে ক্বিরাত বা সুরা ফাতিহা পাঠ করা ।

 

জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে জানতে চাই

প্রশ্ন

গুলশানুর রহমান

আসসালামু আলাইকুম,

জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে জানতে চাই। দলীলসহ জানাতে পারলে উপকৃত হব।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

জানাযার নামায সুরতের দিক থেকে নামায। যেমন এর জন্য নামাযের মত অজু করা জরুরী। তাকবীরে তাহরিমা বলে নিয়ত করা জরুরী। কিবলামুখী হওয়া। সতর ঢাকা ইত্যাদি নামাযের মতই জরুরী।

কিন্তু মৌলিকভাবে এটি নামায নয়। বরং এটি হল মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ ও ক্ষমা প্রার্থনা তথা ইস্তিগফার। হাদীসে এসেছে-

عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : ( إذا صليتم على الميت فأخلصوا له الدعاء

যখন তোমরা মাইয়্যেতের জন্য জানাযার নামায পড়, তখন ইখলাসের সাথে দুআ কর। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৩০৭৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩২০১, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৭৯৭, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬৭৫৫}

আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম লিখেনঃ

ويُذكر عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أنه أمر أن يقرأ على الجنازة بفاتحة الكتاب ولا يصح إسناده

অনুবাদঃ উল্লেখ করা হয় যে, রাসূল সাঃ জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা পড়তে আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ বক্তব্যের সনদ সহীহ নয়। {যাদুল মা’আদ-১/১৪১}

সূরা ফাতিহা না থাকার আরেকটি বড় কারণ হল, জানাযার নামাযে কেরাত নেই। আল মুদাওয়ানাতুল কুবরা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে,

قلت لعبد الرحمن بن القاسم: أي شيء يقال على الميت في قول مالك؟ قال: الدعاء للميت. قلت: فهل يقرأ على الجنازة في قول مالك؟ قال: لا(المدونة الكبرى، كتاب الجنائز، باب ما جاء فى القرائة على الجنائز-1/158

অনুবাদঃ আমি আব্দুর রহমান বিন কাসেম রহঃ কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ইমাম মালিক রহঃ এর মাযহাবে মৃতের জন্য কী পড়া হয়? তিনি বললেনঃ মৃতের জন্য দুআ পড়া হয়। আমি বললামঃ ইমাম মালিক রহঃ এর মতে কি জানাযার নামাযে কিরাত আছে? তিনি বললেনঃ না। আল মুদাওয়ানুতল কুবরা-১/১৫৮}

এ কারণে ইবনে ওহাব রহঃ অনেক বড় বড় সাহাবী যেমন হযরত ওমর রাঃ, হযরত আলী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ, হযরত ফুযালা বিন ওবাদা রাঃ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ, হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ, হযরত ওয়াসিলা বিন আসক্বা রাঃ, এবং আকাবীরে তাবেয়ীগণ যেমন কাসেম বিন মুহাম্মদ, সালেম বিন আব্দুল্লাহ, সাআদ বিন মুসায়্যিব, আতা বিন আবী রাবাহ, ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহঃ প্রমূখদের ব্যাপারে নকল করেন যে, তারা কেউ জানাযার নামাযে কেরাত পড়তেন না। আর ইমাম মালিক রহঃ ও জানাযার নামাযে কেরাত পড়াকে আমলযোগ্য হওয়াকে অস্বিকার করেছেন। {প্রাগুক্ত}

হ্যাঁ, তবে যেহেতু সূরায়ে ফাতিহার আলোচ্য বিষয় আল্লাহ তাআলা হামদ এবং সানা এবং দুআ সমৃদ্ধ। তাই যদি কেউ কেরাতের নিয়ত ছাড়া হামদ-সানা এবং দুআর নিয়তে প্রথম তাকবীরের পর জানাযার নির্ধারিত দুআর বদলে সূরা ফাতিহা পড়ে নেয়,তাহলে এর সুযোগ আছে।

رُوِيَ عن ابْنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه أَنَّهُ سُئِلَ عن صَلَاةِ الْجِنَازَةِ هل يُقْرَأُ فيها فقال لم يُوَقِّتْ لنا رسول اللَّهِ صلى اللَّهُ عليه وسلم قَوْلًا وَلَا قِرَاءَةً وفي رِوَايَةٍ دُعَاءً وَلَا قِرَاءَةً كَبِّرْ ما كَبَّرَ الْإِمَامُ وَاخْتَرْ من أَطْيَبِ الْكَلَامِ ما شِئْت وفي رِوَايَةٍ وَاخْتَرْ من الدُّعَاءِ أَطْيَبَهُ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তাকে জানাযার নামাযে কেরাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন তিনি জবাবে বলেন যে, রাসূল সাঃ আমাদের জন্য কোন বিশেষ শব্দ বা কেরাত নির্ধারিত করেননি। এক বর্ণনায় এসেছে যে, কোন বিশেষ দুআ বা কেরাত নির্ধারিত করেননি। যখন ইমাম তাকবীর বলবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর উত্তম থেকে উত্তম বাক্য [সানা, দুআ, ইত্যাদি] চাইলে এখতিয়ার করে নাও। অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, উত্তম থেকে উত্তম দুআ ইখতিয়ার করে নাও। {বাদায়েউস সানায়ে-১/৩১৩, আলমুগনী লিইবনে কুদামা-২/৪৮৫}

সুতরাং বুঝা গেল যে, জানাযার নামাযে সূরা ফাতিহা পড়া ঠিক নয়।

সূরায়ে ফাতিহা পড়ার পক্ষে একটি দুর্বল দলিল ও জবাব

যারা জানাযার নামাযে সূরায়ে ফাতিহা পড়ার কথা বলে থাকেন। তারা একটি দলিল দিয়ে থাকেন যে, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন সূরা ফাতিহা ছাড়া নামায হয় না। তাই জানাযার নামাযও সূরা ফাতিহা ছাড়া হবে না।

উত্তর

আসলে জানাযার নামায মূলত নামায নয়। বরং সুরতের দিক থেকে নামায, মূলত দুআ। যা ইতোপূর্বে বলা হয়েছে। যদি নামাযই হতো, তাহলে জানাযায় কেরাত নেই কেন?

জানাযায় রুকু সেজদা নাই কেন?

সুতরাং বুঝা গেল এটি পূর্ণাঙ্গ নামায নয়,তাই খালেস নামাযের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হাদীসকে জানাযার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ইসলামী ফিক্বহ সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচায়ক।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

মূল লিংক 

ইমাম সাহেব তিলাওয়াতে ভুল করলে।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: ইমাম নামাজের মধ্যে ভুল কেরাত পড়ে। যে ইমামের পিছনে নামাজ পড়ে সে তাজবিদ জানে। এক্ষেত্রে তার নামাজটি কি হবে?


উত্তর : জামায়াতের শৃংখলা এবং যেহেতু নির্ধারিত ইমাম এর বিষয়, এবং জামায়াতে শামিল হওয়া জরুরী, তাই হুট করে জামায়াত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া যাবেনা। ক্বিরাতের বিষয়টি নিয়ে প্রথমত ইমাম সাহেবের সাথে একান্তে কথা বলতে হবে, তার কোথাও ভুল হলে সেগুলো তাকে ধরিয়ে দিতে হবে, এবং সংশোধন করাতে হবে, এখানে শ্রদ্ধা সম্মান এবং সংশোধনের নিয়ত থাকবে, তুচ্ছ বা তাচ্ছিল্য এর নিয়ত থাকবেনা। অনেকে আছে, নিজে একটু শুদ্ধ তিলাওয়াত পারলে, তখন আর কোনো ইমাম সাহেবের তিলাওয়াত তার ভালো লাগেনা, তুচ্ছ করতে থাকে, এইটা একটা খারাপ রোগ। এই মানসিক রোগেরও চিকিৎসা করা দরকার। আরবী একটা বিদেশী ভাষা হিসেবে অন্য ভাষার মানুষের জন্য আরবী ১০০% শুদ্ধ করে পড়তে পারা কিছুটা কঠিন। এই সত্যটি মনে রাখতে হবে।


অপরদিকে, ইমাম সাহেবকে একান্তে বলার পরও তার মধ্যেও যদি সংশোধিত হওয়ার নিয়ত না থাকে তবে বিষয়টি কমিটির লোকদের কাছে জানাবেন, তাদের নিয়ে ইমাম সাহেবকে নিয়ে বসতে হবে। এরপর ইমাম সাহেবের যে স্থানে ভুল হয়, সেখানে তিলাওয়াত করতে বলতে হবে, এভাবে তার ভুল বিষয়টি কমিটিকে জানাতে হবে, এবং ভালো ও বিশুদ্ধ তিলাওয়াতকারী ইমাম নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে, এ পদক্ষেপ গুলো ততক্ষণ নেওয়া যাবেনা, যতক্ষণ না ইমাম সাহেবের সাথে একান্তে বসে তাকে জানানো হয়েছে, এবং সংশোধিত বিষয়টি তাকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শয়তান কি মানুষের মনের গোপন কথা জানে ?

 আসলে  এ বিষয়টি পরিস্কার ভাবে কোথাও উল্লেখ করা হয় নাই।  


এ ব্যাপারে  দুটি বিষয় দুটি দিক রয়েছে। একদিকে বলা হয়েছে : 


মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান আদমসন্তানের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৭৪)


অর্থাৎ, শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা দেয়,  আর মনের মধ্যে কুমন্ত্রণা দিতে হলে তো  শিরা উপশিরায় চলাচল করতে পারতে হবে। 


অপর দিকে, কুরআনে বলা হয়েছে : 

যা কিছু তোমরা প্রকাশ করে থাকো তা আমি জানি এবং যা কিছু তোমরা গোপন করো তাও আমি জানি।” (বাক্বারা: ৩৩) 


اِنَّ اللّٰهَ عَلِیْمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ

আল্লাহ‌ মনের গোপন কথাও জানেন।  (আলে ইমরান : ১১৯ ) 


এ দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, মনের গুঢ় গোপন কথা জানেন আসলে একমাত্র আল্লাহ।   এ  বিষয়ে আসলে আর কারো ক্ষমতা নাই। 



 এখন, এ দুটি বিষয়ের সমন্বয় এভাবে করা যেতে পারে যে, যেমন আপনার একজন  পরিচিত লোক বা বন্ধু  বা আপন লোকই হোক সে আপনার মনের কথা জানেনা ঠিকই, কিন্তু আপনার মনে কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দিতে পারে এবং সে অনুযায়ী আপনাকে কাজ করাতে পারে। এইটা সম্ভব। কিন্তু আপনার মনের গোপন কথা আসলে কি তা সে জানেনা। 


ওয়াল্লাহু আ’লাম। 


কসমের কাফফারার রোজা কি লাগাতার রাখতে হবে।

 প্রশ্ন

আমি বিভিন্ন সময়ে একই বিষয়ে কসম করেছিলাম। তবে তা ভঙ্গ করে ফেলি। প্রতিবার ভঙ্গ করার জন্য কাফফারা হিসেবে ৩ টি করে রোযা হিসাব করে মোট পরিমাণ হল ২৪ টি। এখন এই রোযা গুলো কি সময়-সুযোগ মত একটি একটি করে রাখা যাবে? নাকি একাধারে তিনটি তিনটি করে রাখতে হবে?

উত্তর

- حامداومصلياومسلما، بسم الله الرحمن الرحيم -

কসমের কাফফারা শুধু রোযা রাখা নয়। আগে কসমের কাফফারা কী? তা জেনে নিনঃ

لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ • আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা, তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা, একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না,সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের,যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। -সূরা মায়িদা-৮৯

উক্ত আয়াতের আলোকে কসমের কাফফারা হল- ব্যক্তি তার পরিবারকে নিয়ে মধ্যম ধরণের যে খাবার গ্রহণ করে এমন খাবার দশজন মিসকিনকে দুই বেলা খাইয়ে দিবে। অথবা দুই জোড়া কাপড় দিয়ে দিবে। যা সদকায়ে ফিতির পরিমাণ টাকা একদিনের খরচ ধরা হবে। সেই হিসেবে সদকায়ে ফিতর পরিমাণকে দশ দিয়ে গুণ দিলে যত টাকা হয়,তাই হবে কসমের কাফফারা। যেমন গত রমজানে সদকায়ে ফিতির ছিল সর্বনিম্ন ৬৫ টাকা। তো সেই হিসেবে ৬৫০ (ছয় শত পঞ্চাশ টাকা) হবে কসমের কাফফারা। এটি বর্তমান মূল্য হিসেবে ধরা হয়েছে। আগে পরে পরিবর্তিত হতে পারে। আপনার উপর কতটি কাফফারা আদায় আবশ্যক? তা নির্ণয় করে হিসেবে করে টাকা দান করে দিতে হবে। যদি টাকা দিয়ে কাফফারা আদায় করতে সক্ষম না হন। তাহলেই কেবল আপনার উপর প্রতি কাফফারার জন্য তিনটি করে রোযা রাখা আবশ্যক। আর এ তিনটি করে রোযা লাগাতার রাখতে হবে। এবং তিনটি রোযার মাঝখানে বাদ দেওয়া যাবেনা,  একদিনও বাদ গেলে আবার নতুন করে তিনটি রাখতে হবে। কসমের কাফফারার রোযা লাগাতার রাখতে হয়। মাঝখানে বাদ দেবার সুযোগ নেই। বাদ গেলে নতুন করে আবার শুরু করতে হবে। তবে একটি কসমের কাফফারা হিসেবে তিনদিন রোযা রাখার পর, আরেকটি কসমের কাফফারার রোযা রাখা শুরু করার পূর্বে মাঝখানে বিরতি দিতে পারবেন। 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي آيَةِ كَفَّارَةِ الْيَمِينِ قَالَ: «هُوَ الْخِيَارُ فِي هَؤُلَاءِ الثَّلَاثِ الْأُوَلِ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ شَيْئًا مِنْ ذَلِكَ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مُتَتَابِعَاتٍ • হযরত ইবনে আব্বাস e থেকে কসমের কাফফারার আয়াত সম্পর্কে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথম তিনটির বিষয়ে এখতিয়ার আছে। যদি তাতে সক্ষম না হয়, তাহলে লাগাতার তিনদিন রোযা রাখবে। -সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩১৮২; মারিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-১৯৫৭৫

عَنْ عَلِيٍّ، أَنَّهُ كَانَ لَا يُفَرِّقُ صِيَامَ الْيَمِينِ الثَّلَاثَةِ أَيَّامٍ • হযরত আলী e থেকে বর্ণিত। তিনি কসমের কাফফারায় তিন দিন রোযার মাঝে কোন দিন বাদ দিতেন না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১২৩৬৫

- والله اعلم باالصواب -

সূত্র

  • رد المحتار, খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৭১৪
  • التحرير المختار, খন্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৩

আনুষঙ্গিক তথ্য

ফতোয়া প্রদানের তারিখ: ১৪ মে, ২১


মূল লিংক

ফজরের সময় সুন্নাত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামাজ পড়া।

 সুবহে সাদিক থেকে ফজরের নামাজ পড়া পর্যন্ত— এই সময়ের মধ্যে কি কোনো ধরনের নফল নামাজ পড়া যাবে? না পড়া গেলে কেন যাবে না, কোরআন-হাদিসের প্রমাণসহ জানাবেন। এমনটা উল্লেখ করে অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন।

মূলত সুবহে সাদিক থেকে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে ফজরের সুন্নত ব্যতীত অন্য কোনো নফল নামাজ পড়া নিষেধ। এই ব্যাপারে হাদিসে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে। হাফসা (রা.) বলেন, ‘যখন ফজর উদিত হত, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু ফজরের দুই রাকাত সুন্নত সংক্ষেপে (ছোট সুরা দিয়ে) পড়তেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৩)


আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সুবহে সাদিক হওয়ার পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামাজ পড়া যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৭)

সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব (রহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন- ‘(ফজরের) আজানের পর দুই রাকাত সুন্নত ছাড়া কোনো (নফল) নামাজ নেই।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৬)

হাসান বসরি, মুহাম্মাদ ইবনে সিরিন ও আতা (রহ.) প্রমুখ তাবেয়িগণও একই কথা বলেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ৬৪১০; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৪৭৫৩)


আরও দেখুন : আল-মুহিতুল বুরহানি : ২/১০; খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/৬৮; ফাতহুল কাদির : ১/২০৮-৯; তাবয়িনুল হাকায়েক : ১/২৩৪; শরহুল মুনইয়া, পৃষ্ঠা : ২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার : ১/৩৭৫

হিজামা বা রক্তমোক্ষণ কি ?

 হিজামা (আরবিحجامة‎‎ অর্থ:"শোষণ")‎‏ হল শিঙ্গা লাগানো নামক প্রচলিত চিকিৎসার আরবি নামকরণ। মাথাব্যথা শরীরব্যথার মত অসুস্থতা নিরাময়ে এই চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। হাদিসে এই চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।


হাদিসে উল্লেখ

আবূ হুরায়রাহ থেকে বর্ণিত,

নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন তোমরা যে সকল জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো তার কোনটির মধ্যে উপকার থাকলে তা রক্তমোক্ষণের মধ্যে আছে। 

সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৪৭৬

আবূ কাবশাহ আল-আনমারী বর্ণনা করেন:

নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথার মাঝখানে এবং দু’কাঁধের মাঝ বরাবর রক্তমোক্ষণ করাতেন এবং বলতেন: যে ব্যক্তি নিজ দেহের এ অংশ থেকে রক্তমোক্ষণ করাবে, সে তার কোন রোগের চিকিৎসা না করালেও তার কোন ক্ষতি হবে না।

সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৪৮৪

ইবনু উমার বলেন:

আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করানো উত্তম, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাফেজের মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করে। কেউ রক্তমোক্ষণ করাতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে বৃহস্পতিবারে তা করায়। তোমরা শুক্র, শনি ও রবিবার রক্তমোক্ষণ করানো পরিহার করো এবং সোমবার ও মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধবার তা করাবে না। কারণ এইদিনই আইউব (আলাইহিস সালাম) বিপদে পতিত হন। আর কুষ্ঠরোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়।

সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৪৮৮

মৃত ব্যাক্তিকে গোসল দেওয়ার পদ্ধতি

 মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া ফরজে কিফায়া। এবং কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন। যারা গোসল দিতে পারদর্শী তারাই মৃত ব্যক্তিকে গোসল দিবে। মৃত ব্যক্তিকে সঠিকভাবে গোসল দেয়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-


১. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় গোসলের খাটে শোয়াতে হয়। তারপর পরনের কাপড় সরিয়ে পুরুষ হলে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা কাপড় রাখতে হয়।

২. প্রায় বসার মত করে মৃত ব্যক্তির মাথাকে উঁচু করে আলতোভাবে মৃত ব্যক্তির পেটকে চাপ দিয়ে বেশি করে পানি ঢেলে ময়লা বের করা।

৩. গোসলদাতার হাতে একটি নেকড়া পেঁচিয়ে বা হাত মোজা পরিধান করে নেয়া।

৪. অতপর গোসলের নিয়ত করে প্রথমে নামাজের অজুর ন্যায় মৃত ব্যক্তিকে অজু করানো। তবে মুখে ও নাকে পানি প্রবেশ করানো যাবে না। বরং ভিজা আঙ্গুলদ্বয় নাকে ও মুখে প্রবেশ করানো।

৫. গোসল ফরজ অবস্থায় এবং ঋতুস্রাব ও সন্তান প্রসব করার পর মারা গেলে মুখ ও নাকে পানি পৌছানো জরুরি।

৬. তুলা দিয়ে দাঁতের মাড়ি পরিষ্কার করে দেয়া।

৭. অতপর কুল (বড়ই) পাতা ও সাবান মিশ্রিত হালকা গরম পানি দ্বারা প্রথমে মৃত ব্যক্তির মাথা ও দাড়ি ধৌত করা।
৮. তারপর ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ডান পার্শ্ব ধৌত করে বাম পার্শ্বের উপর রেখে পিঠের ডান অংশ ধৌত করা।

৯. অনুরুপভাবে ডান পাশের নেয় বাম পাশও ধৌত করা।

১০. এভাবে তিনবার ধৌত করা। তারপরও যদি ময়লা থাকে তবে ময়লা পরিষ্কার হওয়া পর্যন্ত বেজোড় করে ধৌত করা।

১১. গোসলের শেষ বারের পানির সঙ্গে কার্ফুর, আতর মিশিয়ে সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দেয়া।

১২. মৃত ব্যক্তির মোচ বা নখ বেশি লম্বা হয় তবে কেটে ফেলা। (তবে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে)

১৩. একটি পরিষ্কার কাপড় দ্বারা মৃত ব্যক্তির শরীরের পানি মুছে দেয়া।

১৪. মৃত ব্যক্তি মহিলা হলে চুলকে তিনটি বেণী করে পিছনের দিকে রাখা।

১৫. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর দেহ থেকে ময়লা বের হলে, বের হওয়ার স্থান ধৌত করে তুলা দ্বারা বন্ধ করে দেয়া। এক্ষেত্রে কেউ বলেছেন, অজু ও গোসল পুনরায় করানো লাগবে না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, অজু করাতে হবে। তবে অজু করানোই উত্তম।

এগুলো হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর উত্তম পদ্ধতি। যারা মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে উত্তম পদ্ধতিতে মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...