হুরমতে মুসাহারাত কি ? বিস্তারিত জানতে চাই।

 

হুরমতে মুসাহারাত অর্থ হল, নিকটাত্মীয় কে সম্মান প্রদর্শন করা।(হুরমত অর্থ সম্মান+এবং মুসাহারাত অর্থ নিকটাত্মীয়)

দুই জন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় বা সমাজে চলমান রয়েছে,সেটা সাধারণত নসব তথা বংশগত কারণে হয়ে থাকে বা রেযা'আত তথা দুধ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে কিংবা মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত থাকে।

শরীয়তে মাহরাম নন মাহরাম তথা বিয়ে-শাদীর বৈধ-অবৈধ পার্সন সাধারণত এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।হয়তো নসবের কারণে কাউকে বিয়ে করা হারাম নতুবা বৈবাহিক সম্পর্কের ইস্যুতে হারাম কিংবা দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম ।
কুরআনে কারীমে যে চৌদ্দ জনের নমুনা পেশ করা হয়েছে,এসব মূলত এই তিনটি সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।

বংশগত সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম যেমন,পিতা তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না,ইত্যাদি।
দুধ সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম,যেমন দুধ সন্তান তার দুধ মাকে/বোনকে বিয়ে করতে পারবে না।বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম, যেমন,জামাই সে তার শাশুড়ী কে বিয়ে করতে পারবে না।

বৈবাহিক সম্পর্ক যাকে মুসাহারাত বলে,সেটা কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে?আমরা জানি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে।সুতরাং কোনো মানুষ তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এবং তার সন্তানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এমনকি সে তার স্ত্রীর মা বা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ তাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে। যা বিয়েকে বাধা প্রদাণ করে।

ঠিকতেমনিভাবে যিনা-ব্যভিচার তথা অবৈধ সম্পর্কের কারণেও হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে।ব্যভিচারী পরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে।

যিনা ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হওয়ার কিছু শর্ত রয়েছে,

★উক্ত নারীর সাথে সহবাসের কামভাব নিয়ে স্পর্শ করতে হবে।

★খালি গায়ে স্পর্শ হতে হবে বা এমন পাতলা কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হতে হবে যে, কাপড় থাকার পরও শরীরের স্পন্দন অনুভূত হয়।বিস্তারিত জানুন-1233


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ

মূল লিংক

আসসালামু আলাইকুম হুজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দয়া করে উত্তর দিলে অনেক উপকার হবে।
প্রশ্ন : শ্বশুর যদি ছেলের বৌকে কামভাব নিয়ে স্পর্শ করে যদিও ছেলের বৌ এর এতে কোনো দোষ নেই তাহকে কি ওই বৌ কি তার স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাই??  তাকে কি তালাক দিবে তার স্বামী??


ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ
 আল্লাহ তা'আলা বলেন,
 ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺴَﺒًﺎ ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ 
তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা ফুরক্বান-৫৪) 
হুরমতে মুসাহারাত অর্থ হল, নিকটাত্মীয় কে সম্মান প্রদর্শন করা।(হুরমত অর্থ সম্মান+এবং মুসাহারাত অর্থ নিকটাত্মীয়) দুই জন মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় বা সমাজে চলমান রয়েছে,সেটা সাধারণত নসব তথা বংশগত কারণে হয়ে থাকে বা রেযা'আত তথা দুধ সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে কিংবা মুসাহারাহ তথা বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত থাকে। শরীয়তে মাহরাম নন মাহরাম তথা বিয়ে-শাদীর বৈধ-অবৈধ পার্সন সাধারণত এর ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে।হয়তো নসবের কারণে কাউকে বিয়ে করা হারাম নতুবা বৈবাহিক সম্পর্কের ইস্যুতে হারাম কিংবা দুধ সম্পর্কের কারণে হারাম । কুরআনে কারীমে যে চৌদ্দ জনের নমুনা পেশ করা হয়েছে,এসব মূলত এই তিনটি সম্পর্কের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়েছে। বংশগত সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম যেমন,পিতা তার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না,ইত্যাদি। দুধ সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম,যেমন দুধ সন্তান তার দুধ মাকে/বোনকে বিয়ে করতে পারবে না।বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে বিয়ে হারাম, যেমন,জামাই সে তার শাশুড়ী কে বিয়ে করতে পারবে না। বৈবাহিক সম্পর্ক যাকে মুসাহারাত বলে,সেটা কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে?আমরা জানি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে।সুতরাং কোনো মানুষ তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এবং তার সন্তানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এমনকি সে তার স্ত্রীর মা বা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ তাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে। যা বিয়েকে বাধা প্রদাণ করে। 

এখন প্রশ্ন জাগে,তাহলে বিয়ের মত অবৈধ সম্পর্কের কারণে কি হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে? যেমন কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচার করলো,এখন সেই যিনাকারীর ছেলে উক্ত মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। 
জবাবে বলা যায়, এই মাসআলায় উলামাদের মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
 

 (প্রথম মত) 

 যিনা-ব্যভিচার তথা অবৈধ সম্পর্কের কারণে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে।ব্যভিচারী পরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে। এটা হানাফি মাযহাব,হাম্বলী মাযহাব,এবং ইমাম সাওরী রাহ ও আওযায়ী রাহ এর অভিমত। 
 তাদের দলিল 
 (১) ﻭَﻻَ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻧَﻜَﺢَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺳَﻠَﻒَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﻭَﻣَﻘْﺘًﺎ ﻭَﺳَﺎﺀ ﺳَﺒِﻴﻼً যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।(সূরা নিসা-২২) আয়াতে অশ্লীল, গযবের কাজ,এবং নিকৃষ্ট আচরণ বলা হয়েছে।কাজেই বুঝা গেল এখানে নিকাহ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।সুতরাং অর্থ হবে যাদেরকে তোমাদের পিতামহগণ সহবাস করেছেন,(বিয়ের মাধ্যমে বা বিয়ে ছাড়া)তাদের সাথে তোমরা(বিয়ে বা বিয়ে ছাড়া কোনোভাবে) সহবাসে লিপ্ত হইওনা। 
(২) বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﻞٍ، ﻧَﻈَﺮَ ﺇﻟﻰ ﻓﺮْﺝ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻭﺍﺑﻨﺘﻬﺎ " . আল্লাহ ঐ মানুষের দিকে তাকাবেন না, যে কোনো মহিলার লজ্জাস্থান এবং ঐ মহিলার মেয়ের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে।(বিয়ের মাধ্যমে হোক বা বিয়ে ছাড়া হোক) 
(৩)কিয়াস তথা যেভাবে বৈধ সহবাসের কারণে হুরমত সাব্যস্ত হয়,ঠিকসেভাবে অবৈধ সহবাসের কারণেও হুরমত সাব্যস্ত হবে। 

(দ্বিতীয় মত) 

যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত প্রমাণিত হবে না।সুতরাং যদি কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়,তাহলে সেই মহিলার মা-মেয়েকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।এটা শাফেয়ী মাযহাব,মালিকী মাযহাব ও ইবনে হযম জাহিরী এবং এক বিবরণ অনুযায়ী ইমাম আহমদ রাহ এর র মত। 
তাদের দলিল 
(ক) কুরআনে কারীমে যাদেরকে হারাম বলা হয়েছে,তারা ব্যতীত বাকী সবাই হালাল।সুতরাং অবৈধ যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত হয়ে কেউ আর হারাম হবেন না। 
 (২) আল্লাহ তা'আলা বংশ এবং বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারা বান্দার উপর অনুগ্রহ করেছেন।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন, ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺴَﺒًﺎ ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা ফুরকান-৫৪) সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহকৃত কোনো জিনিষ অবৈধ কোনো কিছু দ্বারা সাব্যস্ত হবে না। 
 (৩) বর্ণিত রয়েছে, রাসূল্লাহ সাঃ বলেছেন,
 ﺭﻭﻱ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻗﺎﻝ : " ﻻ ﻳُﺤﺮِّﻡ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺍﻟﺤﻼﻝ " . 
হারাম কোনো হালালকে হারাম করে না। 


 কোন মত গ্রহণযোগ্য ও অগ্রাধিকার যোগ্য? 

সতর্কতামূলক হানাফি মাযহাবকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।যাতেকরে বেপর্দা ও ফ্রি মিক্সিং ইত্যাদি সম্পূর্ণ রূপে খতম হয়ে নিরাপদ পরিবেশ কায়েম হয়।সুপ্রিয় পাঠকবর্গ! এখন মূল প্রশ্নের জবাবে আসি! হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য হানাফি ফিকহে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে।সেগুলো লক্ষণীয়। শশুর যদি তার ছেলের বৌকে কামভাব নিয়ে স্পর্শ করে,তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হয়ে উক্ত ছেলের বৌ ছেলের জন্য তৎক্ষণাৎ হারাম হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম-৭/২৪৩) উক্ত নারীর সাথে সহবাসের কামভাব নিয়ে স্পর্শ করতে হবে।
 لما في ردالمحتار،ج:٣-ص:٣٣ (نسخة شاملة) ويشترط وقوع الشهوة عليها لا على غيرها لما في الفيض لو نظر إلى فرج بنته بلا شهوة فتمنى جارية مثلها فوقعت له الشهوة على البنت تثبت الحرمة، وإن وقعت على من تمناها فلا 
অর্থাৎ- যাকে স্পর্শ করা হচ্ছে,তাকে নিয়ে কামভাব থাকতে হবে।কেননা বর্ণিত রয়েছে,কেউ যদি তার মেয়ের লজ্জাস্থানের দিকে কামভাব ছাড়া দৃষ্টি দেয়,এবং কল্পনায় অন্য কোনো নারীকে সে সঙ্গী হিসেবে চায়,কিন্তু তৎক্ষণাৎ তার মেয়ের দিকে তার কামভাব জাগ্রত হয়ে যায়,তাহলে তখন হুরমতে মুসাহারা সাব্যস্ত হয়ে যাবে(তথা তার বিবি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে)তবে যদি তার কামভাব কল্পিত সে নারীর উপরই থাকে তাহলে হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হবে না।ফাতাওয়ায়ে শামী-৩/৩৩(শামেলা) খালি গায়ে স্পর্শ হতে হবে বা এমন পাতলা কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ হতে হবে যে, কাপড় থাকার পরও শরীরের স্পন্দন অনুভূত হয়।
 لما في ردالمحتار،ج:٣/ ص:٣٤ (قوله: بحائل لا يمنع الحرارة) أي ولو بحائل إلخ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة، كذا في أكثر الكتب، وكذا لو جامعها بخرقة على ذكره، فما في الذخيرة من أن الإمام ظهير الدين أنه يفتى بالحرمة في القبلة على الفم والذقن والخد والرأس، وإن كان على المقنعة محمول على ما إذا كانت رقيقة تصل الحرارة معها بحر. 
বউয়ের কোনো দোষ নেই সেটা ঠিক,তবে যে ঘরে সে নিরাপদ নয় সেখানে তার থাকাটাও উচিৎ নয়। মূলকথা হল,শাশুড়ের স্পর্শের কারণে বউয়ের সাথে শাশুড়ের একটা সম্পর্ক বা সম্বন্ধ কায়েম হয়ে গেছে।এখন এ সম্পর্কের দাবী হল,শাশুড়ের ছেলে তথা বউয়ের জামাই এখন উক্ত বউয়ের জন্য সন্তান সমতূল্য হয়ে যাবে। সুতরাং সে এখন তার বউকে মায়ের মত সম্মান করবে।এখানে মূলত সম্মাণের কারণেই বিয়ে ভেঙ্গে যাবে।বিয়ে ভেঙ্গে যাবে সে জন্য তালাকের প্রয়োজন পড়বে না।জাযাকুমুল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ


মূল লিংক 



ছেলের স্ত্রীকে স্পর্শ করার দ্বারা কি স্ত্রীটি ছেলের জন্য হারাম হয়ে যায়?

প্রশ্ন:

From: zaied bin khalid

Subject: ছেলের বউকে স্পর্শ করা প্রসঙ্গে
Country : বাংলাদেশ
Mobile : Message Body

আসসালামু আলাইকুম। ভাই কেমন আছেন। প্রশ্ন বিস্তারিত না হওয়ায় আমি দুঃখিত।

প্রশঃ ছেলে যে মেয়েকে পছন্দ করে তাকে ছেলেটির বাবা ঘটনাক্রমে (মেয়েটি বাবু কোলে নেয়া অবস্থায় ছিল) মেয়েটির হাতের নিচে স্তনের অংশে হাত দেয়। সেখানে ছেলেটির ভাই মা উপস্থিত ছিল ( টিভি দেখছিল)। মেয়েটির দাবি বাবা তার অখানে ইচ্ছাকৃত হাত দেয়। কিন্তু ছেলেটির দাবি তার বাবা বাবুকে ধরতে গীয়ে হাত পরে জায়। উভয়ের দাবির আলোকে জবাব চাই। ধন্যবাদ।

জবাব

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

পিতা মেয়েটিকে স্পর্শ করার সময় নিম্ন বর্ণিত শর্ত যদি পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত মেয়ে সে পিতার সন্তানের জন্য হারাম হয়ে যাবে। তথা বিবাহ হয়ে থাকলে ভেঙ্গে যাবে। আর না হয়ে থাকলে কোনদিন উক্ত মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। যদি এর মাঝের একটি শর্তও ফউত হয়ে যায়, তাহলে এ নিষিদ্ধতা প্রয়োগ হবে না। শর্তগুলো নিম্নরূপ-

সরাসরি খালি গায়ে বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে মেয়েকে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

فى الدر المختار- أو لمس ) ولو بحائل لا يمنع الحرارة

وقال ابن عبدين- ( قوله : بحائل لا يمنع الحرارة ) أي ولو بحائل إلخ ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة ، كذا في أكثر الكتب (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/107-108)

স্পর্শ করলে পুরুষ মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।

পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।

আর মহিলার উত্তেজনা হল মানসিকভাবে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।

وفى رد المحتار- قوله (بشهوة) اي ولو من احدهما،

وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى

 وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)

স্পর্শ করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। সেই সাথে স্পর্শ করার শেষে, হাত ছেড়ে দেওয়ার পর যদি উত্তেজনা অনুভূত হয় তাহলেও নিষিদ্ধতার সাব্যস্ত হবে না।

وفى الدر المختار- والعبرة للشهوة عند المس والنظر لا بعدهما

وفى رد المحتار- ( قوله : والعبرة إلخ ) قال في الفتح : وقوله : بشهوة في موضع الحال ، فيفيد اشتراط الشهوة حال المس ، فلو مس بغير شهوة ، ثم اشتهى عن ذلك المس لا تحرم عليه (رد المحتار-كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/108)

স্পর্শ করার পর উদ্ভূত উত্তেজনা স্থীর হওয়ার পূর্বেই বীর্যপাত না হতে হবে। যদি উত্তেজনা হওয়ার সাথে সাথেই বীর্যপাত হয়ে যায়, তাহলেও নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

وفى الدر المختار- هذا إذا لم ينزل فلو أنزل مع مس أو نظر فلا حرمة به بفتى

وفى رد المحتار- قوله : فلا حرمة ) لأنه بالإنزال تبين أنه غير مفض إلى الوطء هداية .

قال في العناية : ومعنى قولهم إنه لا يوجب الحرمة بالإنزال أن الحرمة عند ابتداء المس بشهوة كان حكمها موقوفا إلى أن يتبين بالإنزال ، فإن أنزل لم تثبت ، وإلا ثبت(الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/109

মহিলার বয়স ৯ বছর থেকে কম না হতে হবে। আর পুরুষের বয়স ১২ বছর থেকে কম না হতে হবে। {হুরমতে মুসাহারাত-১৯}

যদি স্পর্শকারী মহিলা হয়, আর উত্তেজনা হওয়ার দাবি করে, আর স্বামীর এ ব্যাপারে প্রবল ধারণা হয় যে, স্ত্রী সত্য বলছে, বা স্পর্শকারী পুরুষ হয় ও উত্তেজনার দাবি করে, তাহলেও তার সংবাদের উপর স্বামীর প্রবল ধারণা হয় যে, লোকটি সত্য বলছে, তাহলে নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে নতুবা নয়। কেননা স্ত্রী এ দাবি করার মাধ্যমে স্বামী থেকে বাঁচতে চাচ্ছে, তাই স্বামীর সত্যায়ন জরুরী, তাছাড়া যদি দুই জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয় যে, স্পর্শ করার সময় উত্তেজনা ছিল তাহলে স্বামীর সত্যায়নের কোন প্রয়োজন নেই। {ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২০, হুরমতে মুসাহারাত-১৯}

উল্লেখিত ৬টি শর্ত পাওয়া গেলে মেয়েটিকে বিয়ে করা ছেলেটির জন্য হারাম হয়ে যাবে। আর যদি কোন একটি শর্তও ফওত হয়ে যায়, তাহলে মেয়েটিকে বিয়ে করা ছেলেটির জন্য হারাম সাব্যস্ত হবে না।

যদি কোন সাক্ষ্য না থাকে কিন্তু ছেলেটির এ ব্যাপারে সুনিশ্চিত ধারণা হয় যে, এমন ঘটনা ঘটেছে যাতে হারাম হওয়া প্রমাণিত হয়, তাহলে ছেলের জন্য তা অস্বিকার করা জায়েজ নয়। {আল হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা, ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৩/১১৮, ৪/১১৮}

আর যদি মেয়ের সুনিশ্চিত বিশ্বাস হয় যে, এমন ঘটনাই ঘটেছে, যার দরূন ছেলেটি তার জন্য হারাম হয়ে গেছে, তাহলে মেয়েটি আল্লাহকে ভয় করে ছেলেটি থেকে নিজেকে আলাদা করে রাখবে। কখনোই বিয়ে করবে না। {হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা, ইমদাদুল ফাতওয়া-২/৩২১}

বিস্তারিত জানতে দেখুন-

হুরমতে মুসাহারাত

হিলাতুন নাজেযা লিল হালিলাতিল আজেযা

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


(

পাদটিকা : 

তবে,  হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আলেমের বক্তব্য হলো:  কুরআনের একটি মূলনীতি হলো, একজনের  বোঝা বা কাজের  শাস্তি আরেকজন ভোগ করবে না।  কিন্তু এখানে স্ত্রীর দোষে, বা  পুরুষের  দোষে, কিংবা স্বামীর দোষে কিংবা পিতার দোষে - ইত্যাদির কারণে আরেকজন ভুক্তভোগী হয়। তালাক হয়ে যাওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী নিদারুণ সমস্যায় পড়তে পারে। তাই  এক্ষেত্রে তাদের বিচারের দাবী করা হবে, কিন্তু তালাক হওয়ার বিষয়টা সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীর উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত, যার কোনো দোষ নেই,  তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে, সে কি তালাক নিতে চায়, নাকি নিতে চায় না, এবং  তার সিদ্ধান্তের আলোকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 

যদি অপরাধী স্বামী হয়, তাহলে স্ত্রী তালাক নিতে চাইলে হয়তো স্বামীকে দ্বিগুণ মোহরানা পরিশোধ করতে হবে, আবার যদি অপরাধী স্ত্রী হয়, তাহলে স্বামী তালাক দিতে চাইলে তার মোহরানা মাফ করে দেওয়া হবে, -- এরকম কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, পরিস্থিতির আলোকে। 

তবে, এ বিষয়টাও যথেষ্ট আলোচনার দাবীদার, আলেমদেরকে বিষয়টি আরো গভীর ভাবে দেখতে হবে। 

)




মূল লিংক 



আরো বিস্তারিত দেখতে পারেন এই লিংকে । 



No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...