প্রশ্ন: ৪৪০ : আযান ও ইকামতের হুকুম কি ?

 আযান

বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজের সময় হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।

ইকামত

বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজ দাঁড়িয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।

আযান ও ইকামতের হুকুম

১- জামাতের সাথে নামাজজ আদায়ের ক্ষেত্রে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আযান ইকামত সুন্নতে মুআক্কাদা, নামাজ আদায়কারী মুসাফির হোক বা মুকিম; কেননা আযান ও ইকামত ইসলামের শাআয়ের বা নিদর্শনমালার মধ্যে দুটি নিদর্শন, তাই এ-দুটোকে বন্ধ করা বৈধ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন নামাজের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়। আর তোমাদের মধ্যে বয়সে যে বড় সে যেন ইমামতি করে।»
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

২- জামাত ব্যতীত একা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে আযান-ইকামত সুন্নত। উকবা ইবনে আমের রাযি. বলেন, «আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,«আল্লাহ তাআলা ওই মেষের রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন যে পাহাড়ের চূড়ার একটি টিলায় নামাজের জন্য আযান দেয় ও নামাজ পড়ে। (এ-দৃশ্য দেখে আল্লাহ তাআলা বলেন, «তোমরা আমার এই বান্দার দিকে চেয়ে দেখ, সে আযান দেয়, নামাজ কায়েম করে এবং আমাকে ভয় পায়। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।»।
(বর্ণনায় নাসায়ী)

আযানের হিকমত

১- নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা এবং নামাজ অনুষ্ঠানের স্থান বিষয়ে জানান দেয়া।

২- জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া।

৩- যারা গাফেল তাদেরকে সজাগ করা এবং যারা ভুলে যায় তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

আযান কখন শরীয়তভুক্ত হয়েছে ও তার কারণ কি?

«আযান প্রথম হিজরীতে শরীয়তভুক্ত হয়েছে। আর এর কারণ হলো : নামাজের ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে এ ব্যাপারে কোনো আলামত নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিলে মুসলমানগণ পরস্পরে পরামর্শ করলেন। যখন রাত হলো, আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখলেন যে, একব্যক্তি ঘন্টা বহন করে আছে। তিনি লোকটিকে বললেন, «তুমি কি এ ঘন্টাটি বিক্রি করবে?» লোকটি বলল, «তুমি এটা দিয়ে কি করবে?» আবদুল্লাহ বললেন, «নামাজের প্রতি আহবান জানাব।» লোকটি বলল,«আমি কি তোমাকে এর থেকেও উত্তম বিষয়ের কথা বলব না?» আবদুল্লাহ বললেন,«জ্বি বলবেন।» অতঃপর লোকটি তাকে আযান শেখালেন এরপর ইকামত শেখালেন। আবদুল্লাহ বলেন,«যখন সকাল হলো, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম, স্বপ্ন বিষয়ে তাঁকে খবর দিলাম। শুনে তিনি বললেন,«এটা সত্য স্বপ্ন। তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও, তাঁকে এ-দায়িত্ব অর্পন করো, কেননা সে তোমার চাইতে অধিক সুন্দর আওয়াজের অধিকারী।»
(বর্ণনায় আবু দাউদ)

আযানের ফজিলত

১- আযানের আওয়াজ যাদের কাছে পৌঁছবে তাদের প্রত্যেকেই কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, «মুয়াজ্জিনের আওয়াজ যার কাছেই পৌঁছবে, হোক সে মানুষ, জিন অথবা অন্যকোনো জিনিস, সে কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।» (বর্ণনায় বুখারী)

২- মানুষ যদি জানত এর মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই এর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «মানুষ যদি জানত আযান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে আর তারা লটারির আশ্রয় নেয়া ছাড়া তা পেত না, তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারির আশ্রয় নিত।»(বর্ণনায় বুখারী)

আযান বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

১-আযানদাতাকে মুসলমান, পুরুষ ও সজ্ঞানব্যক্তি হতে হবে।

২-আযানের শব্দমালায় তরতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।

৩- আযানের শব্দমালার উচ্চারণে নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে হবে, অর্থাৎ একবাক্য উচ্চারণের পর অন্যবাক্য উচ্চারণে অতিরিক্ত দেরি করা যাবে না।

৪- নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের পর আযান দিতে হবে।

আযানের সুন্নত

১- কেবলামুখী হয়ে আযান দেয়া।

২- ছোট-বড় উভয় নাপাকি থেকে আযানদাতাকে পবিত্র থাকা।

৩- হাইয়া আলাস্সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় ডানে ও বামে ফেরা।

৫- মুয়ায্যিনের দুই কানে দুই তর্জনী আঙ্গুল রাখা।

৬- মুয়ায্যিনকে সুন্দর আওয়াজসম্পন্ন হওয়া।

৭- সুর দিয়ে ধীরস্থিরতাসহ আযান দেয়া।

আযান ও ইকামত প্রদানের পদ্ধতি

আযান প্রদানের পদ্ধতি :

الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله

(বর্ণনায় মুসলিম)

ইকামত প্রদানের পদ্ধতি :

الله أكبر الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، قد قامت الصلاة، قد قامت الصلاة، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله

আযান শ্রবণকারীর ক্ষেত্রে যা মুস্তাহাব

১- মুয়াজ্জিন যা বলে তা বলা, তবে হাইয়া আলাস্সালাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় لا حَوْل ولا قُوَّة إِلا بالله বলা।
(বর্ণনায় বুখারী)

২- আযানের পর বলা :

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إلا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا، وَبِمُحَمَّد صلى الله عليه وسلمٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا.

«আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। আর মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং দীন হিসেবে ইসলামের প্রতি আমি সন্তুষ্টচিত্ত।» (বর্ণনায় মুসলিম)

৩- আযানের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। এরপর বলা :

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ.

«হে আল্লাহ, যিনি এই পরিপূর্ণ আহবান এবং কায়েমতব্য নামাজের রব! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা তথা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান ও মর্যাদা দান করুন এবং আপনি তাঁকে প্রেরণ করুন প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা আপনি তাঁকে দিয়েছেন।» (বর্ণনায় আবু দাউদ)

৪- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের জন্য দুআ করা; কেননা এসময় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।» (বর্ণনায় আহমদ)

আযান ও ইকমতের কিছু আহকাম

১. দুই নামাজ একসাথে জমা করে পড়লে আযান হবে একটা আর ইকামত হবে প্রতি নামাজের জন্য আলাদা আলাদা।

২. ইকামতের পর যদি নামাজ শুরু হতে দেরি হয় তবে পুনরায় ইকামত দেয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. মুয়ায্যিনের উচিত আযানের শব্দমালা উচ্চারণে ভুল না করা। যেমন :

- «আল্লাহু আকবার»এর জায়গায় (آلله آكبر؟) «আ-আল্লাহু আকবার» বলা। যার অর্থ হবে, «আল্লাহ কি সবচেয়ে বড়?»

الله أكبار তথা কে লম্বা করে উচ্চারণ করা।

الله وأكبر (আল্লাহু ওয়াকবার) বলা।

৪. নামাজের ইকামত হয়ে গেলে কোনো নফল নামাজ শুরু করা বৈধ নয়। আর যদি ইতঃমধ্যেই নফল নামাজ শুরু করে দিয়ে থাকে তাহলে যদি সামান্য অংশ বাকি থাকে তবে পরিপূর্ণ করে নেবে। এর অন্যথা হলে সালাম ব্যতীতই নামাজ ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে ফরয নামাজে ইকতেদা করবে।

৫. ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারে এমন শিশুর আযান শুদ্ধ হবে।

৬- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে কাযা হয়ে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য আযান-ইকামত শুদ্ধ। একবার সাহাবায়ে কেরাম নিদ্রারত অবস্থায় সূর্য ওঠে গেলে «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল রাযি. কে আযান দিতে বলেন। এরপর সবাই অজু করেন ও দু»রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেন। এরপর তিনি বিলাল রাযি. কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে ফজরের ফরয নামাজ আদায় করেন।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)

যা উচিত নয়

১- এমনভাবে অতিরিক্ত সুর সংযোজন অথবা গানের সুরে আযান দেয়া উচিত নয় যার ফলে অক্ষর ও জের-যবর-পেশ ইত্যাদিতে কমবেশ হয়ে যায়।

২- আযানের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর উঁচু স্বরে দরুদ পড়া।

৩- «কাদ কামিতিস্সালাত» শোনার সময় «আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামা» (আল্লাহ তা কায়েম দায়েম রাখুন) বলা উচিত নয়। বরং এ-ক্ষেত্রে সরাসরি «কাদকাতিস্সালাত»-ই বলতে হবে।

৭- যে ব্যক্তি আযানের সময় মসজিদে থাকবে সে আযানের পর ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, «রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এই বলে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তোমরা মসজিদে থাকবে আর নামাজের আযান দেয়া হবে, তখন তোমাদের কেউ যেন নামাজ আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়।»(বর্ণনায় আহমদ)ফজরের আযান

১- ফজরের আযানের সাথে,لصلاة خيرمن النوم) দুইবার বলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«...যদি ফজরের নামাজ হয়, তবে (আযানের সময়) বলবে

২- الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ، الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ


-------------

মূল লিংক 

প্রশ্ন: ৪৩৯ : মৃত শিশুর জানাজা ।

প্রশ্ন-বিস্তারিত: জন্মের কয়েকঘন্টা পরে শিশু মারা গেলে, তার কি গোসল দেওয়া লাগবে? 

আসলাম উদ্দিন

- উত্তর :  জ্বি গোসল দেওয়া লাগবে, জানাজা দেওয়া লাগবে, নাম রাখা লাগবে এবং সে মীরাসও পাবে। 

------------------------------------------------------------

নবজাতক জন্ম নেবার পরপরই যদি মারা যায় তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে?

প্রশ্ন

নবজতাক জীবিত জন্ম নেবার পরপরই যদি মারা যায়, তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে কি?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

হ্যাঁ, তার জানাযা পড়তে হবে। জীবিত মানুষ মারা গেলে যে হুকুম, জন্ম নেবার পর মারা গেলে তারও একই হুকুম। তার নামও রাখতে হবে।

عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: الطِّفْلُ لاَ يُصَلَّى عَلَيْهِ، وَلاَ يَرِثُ، وَلاَ يُورَثُ حَتَّى يَسْتَهِلَّ

হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শিশুর উপর জানাযা পড়া হবে না, তার থেকে কেউ মিরাছ পাবে না এবং তাকেও মিরাছ দেয়া হবে না। তবে যদি জন্মের পর কাঁদে তথা জীবিত জন্ম নেয়।(তাহলে তার জানাযা পড়তে হবে এবং মিরাছ পাবে) [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১০৩২]

عَنْ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: «لَا يُوَرَّثُ الْمَوْلُودُ حَتَّى يَسْتَهِلَّ، وَلَا يُصَلَّى عَلَيْهِ حَتَّى يَسْتَهِلَّ، فَإِذَا اسْتَهَلَّ، صُلِّيَ عَلَيْهِ وَوُرِّثَ،

ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, না কাঁদলে জন্ম নেয়া নবজাতক মিরাছ পাবে না। এবং তার জানাযাও পড়া হবে না যদি না কাদে। তবে যদি কাদে তাহলে তার জানাযা পড়া হবে এবং মিরাছ পাবে। [সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৩১৭৪]

من استهل بعد الولادة سمى، وغسل وصلى عليه (الفتاوى الهندية، الباب الحادى والعشرون فى صلاة الجنازة، الفصل الثانى فى الغسل-1/159)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।


-----------------------------------------------------

মৃত শিশুর জানাজা সম্পর্কিত আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর এখানে দেখতে পারেন। 

প্রশ্ন: ৪৩৮ : মোহরানা / দেনমোহর সম্পর্কিত আলোচনা ।

 মোহরানা নারীর অর্থনৈতিক অধিকার। একশ্রেণির মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, মোহরানা কেবলই আনুষ্ঠানিক ঘোষণামাত্র। অনেকে মনে করেন, মোহরানা হলো বিবাহের নিশ্চয়তা, যা কেবল তালাক দিলেই পরিশোধযোগ্য! অথচ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী মোহরানার সম্পর্ক বিবাহের সঙ্গে, তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

অন্যদিকে মোটা অঙ্কের মোহরানা ধার্য করা এখন আমাদের সমাজে সামাজিক ‘ঐতিহ্যে’ পরিণত হয়েছে। অতি ভালোবাসার ছলে কিংবা বাসরঘরের আনুষ্ঠানিকতার ছদ্মাবরণে ‘মোহর মাফ’ করে দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। এ ব্যাপারে হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.) লিখেছেন, মোহরের অর্থ স্ত্রীর হাতে দেওয়ার পর স্ত্রী যদি তা ইচ্ছামতো খরচ করার সুযোগ লাভ করা সত্ত্বেও স্বামীকে দিয়ে দেন, কেবল সে ক্ষেত্রেই তা মাফ বলে গণ্য হবে, অন্যথায় অর্থ নারীর হস্তগত না করে মাফ নিলে এ মাফ গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা দেখা যায়, বাসরঘরে এ প্রক্রিয়ায় ‘মাফ’ করে দেওয়ার পর যদি কোনো কারণে সংসার ভেঙে যায়, ওই নারী মোহরানা দাবি করতে দ্বিধা করেন না, এমনকি নিজের অধিকার আদায়ে মামলাও করে থাকেন। এতে বোঝা যায়, আগে যে তিনি ‘মাফ’ করে দেওয়ার কথা বলেছেন, সেটি ছিল কথার কথা কিংবা সামাজিক প্রথা। এ প্রক্রিয়ায় মূলত মোহরানা মাফ হয় না।

স্মরণ রাখতে হবে, স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই, হাদিস শরিফে তাঁকে বলা হয়েছে ‘ব্যভিচারী’। (দেখুন : মাজমাউজ জাওয়াইদ : ৪/৫২২-৫২৩)

অনেক বড় অঙ্কের মোহর ধার্য করা যেমন কাম্য নয়, তেমনি তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত নয়। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই, যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয় এবং নারীর জন্য অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্মানের বিষয় হয়। নবী করিম (সা.)-এর সুন্নাহ ও সাহাবায়েকেরামের সাধারণ রীতি এ ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি উম্মুল মুমিমিন আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করিম (সা.) কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) তাঁর স্ত্রীদের সাড়ে বারো উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪২৬; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১০৫)

উম্মুল মুমিনিনদের মধ্যে উম্মে হাবিবা (রা.)-এর মোহর বেশি ছিল। তাঁর মোহর ছিল চার হাজার দিরহাম। হাবশার বাদশাহ নাজাশি তাঁকে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিলেন। এবং মোহরও তিনিই পরিশোধ করেছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১০৭)

মহানবী (সা.) নিজ কন্যা ফাতেমা (রা.)-এর মোহর পাঁচ শ দিরহাম নির্ধারণ করেছিলেন, যা প্রায় ১৩১ তোলা তিন মাশা রুপার সমতুল্য। তেমনি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে অনেকের মোহর এর কাছাকাছি নির্ধারণ করেছিলেন, যা মধ্যম পর্যায়ের হওয়ার কারণে এটি গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত পরিমাণ। তবে সামর্থ্য অনুযায়ী মোহনারা দেওয়া হোক—এটাই ইসলাম চায়। কেউ সম্পদের স্তূপ দিতে চাইলেও সে সুযোগ আছে। কিন্তু সেটা যেন ঘোষণায় সীমাবদ্ধ না থাকে।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির করো এবং তাদের একজনকে অগাধ অর্থও (সম্পদের স্তূপ) দিয়ে থাকো, তবু তা থেকে কিছুই গ্রহণ করো না...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২০)

এ আয়াত থেকে জানা যায়, কেউ চাইলে স্ত্রীকে মোটা অঙ্কের মোহরানা দিতে পারবেন। কোরআনের অন্য আয়াতে এসেছে, ‘বিত্তবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবন-জীবিকা সীমিত, সে আল্লাহ যা দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করবে...।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৭)

 

মোহরানা তলব করার অধিকার

মোহরানা নগদ আদায় না করলেও বিবাহ শুদ্ধ হবে ঠিক, তবে পরে আদায়ের মেয়াদ নির্ধারিত করে নিতে হবে। কিন্তু কেউ যদি তাও না করেন, তাহলে ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীকে এ অধিকার দিয়েছে যে মোহর আদায় না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী নিজেকে স্বামীর হাতে অর্পণ করা থেকে বিরত থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থাতেও স্বামীকে স্ত্রীর ব্যয়ভার নিয়মিত বহন করতে হবে। কারণ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ এবং মোহরানা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস। যে মোহরের মেয়াদ নির্ধারিত হয়নি, তা তলব করা স্ত্রীর বৈধ অধিকার। একে অবাধ্যতা বিবেচনা করে স্ত্রীর নিয়মিত ব্যয়ভার বন্ধ করার অধিকার স্বামীর নেই। ইসলামী আইনবিদরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, স্বামী মোহর আদায় করে স্ত্রীকে নিজের বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন। যদি মোহরানা আদায় না করে নিয়ে যেতে চান, আর স্ত্রী মোহরানা দাবি করে নিজ ঘরে অনড় থাকেন, তাহলেও স্ত্রী মোহর তো পাবেনই, উপরন্তু নিয়মিত ভরণ-পোষণ পাওয়ার অধিকার থাকবে। কারণ তিনি তাঁর ন্যায়সংগত দাবি আদায়ের স্বার্থেই বাড়ি যাচ্ছেন না। এমনকি মোহরানা উসুল না হওয়া পর্যন্ত স্বামীকে শয্যাযাপন, ভ্রমণ ইত্যাদি থেকে বাধা দেওয়ার অধিকারও স্ত্রীর রয়েছে। (দুররে মুখতার : ৪/২৯০)

 

যে পাঁচ কারণে মোহরানা অবশ্যই দিতে হবে

পাঁচটি কারণে ইসলামী শরিয়ত নারীকে মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

১. মোহরানা স্ত্রীর প্রতি সম্মান ও অনুরাগ প্রকাশের একটি মাধ্যম। স্ত্রী তাঁর মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজন ত্যাগ করে স্বামীর ঘরে আসেন। এই কঠিনতম ত্যাগ স্বীকার করে তিনি আসেন অতিথির বেশে। তাই ইসলামী শরিয়ত মোহরানা ও বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে এই অতিথিকে বরণ করার নির্দেশ দিয়েছে। এই মোহরানা যে এক ধরনের উপঢৌকন এবং সেটা সন্তুষ্টচিত্তে দিতে হয়, সে বিষয়টি কোরআনের ভাষায় দেখুন : ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করো...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৪)

২. মোহরানা নারীর সৌন্দর্য, মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে। কেননা অর্থকড়ি পার্থিব জীবনের শোভা ও সৌন্দর্যের পরিচায়ক। ইরশাদ হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের শোভা...।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৬)

৩. ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ একটি চুক্তি। ইসলাম এই চুক্তির শর্ত হিসেবে অর্থ দেওয়ার কথা বলেছে। কেননা অর্থবিনিময় চুক্তিকে সুদৃঢ় করে। কিন্তু ইসলামে স্ত্রীর কাছ থেকে উপকৃত হওয়ার বিষয়টিকে এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে স্থির করা হয়নি। তাই বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর স্ত্রীর কাছ থেকে দৈহিকভাবে উপকৃত না হয়েও যদি কেউ স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, তবু মোহরানার অধিকার বলবৎ থাকে। কেননা পুরুষ সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। তবে পুরুষ যেন সবদিক থেকে বঞ্চিত না হন, সে কথা বিবেচনা করে ইসলাম চুক্তিকৃত মোহরানার অর্ধেক পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি তাদের স্পর্শ করার আগে তালাক দাও অথচ মোহরানা ধার্য করে থাক, তাহলে যা তোমরা ধার্য করেছ, তার অর্ধেক (আদায় করবে)...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৭)

৪. ইসলাম পরিবার ও পারিবারিক জীবনকে একটি প্রতিষ্ঠান কল্পনা করে। দুটি কারণে ইসলাম সেই প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এক. পুরুষ নারীর অর্থ ব্যয় করে থাকেন, যদিও নারী বিত্তবান হন। দুই. বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দৃঢ়তা ও দৈহিক শক্তিমত্তা। এই দুটি বিষয় বিবেচনা করে ইসলাম পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানের মূল দায়িত্ব স্বামী তথা পুরুষের ওপর অর্পণ করেছে। এ বিষয়ে কোরআনের ভাষ্য এমন : ‘পুরুষ নারীদের ওপর দায়িত্বশীল। কেননা আল্লাহ তাদের একজনকে অন্যজনের ওপর (সৃষ্টিগতভাবে) শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৪)

কিন্তু ইসলাম একদিকে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টিকে সামনে এনে পুরুষের ওপর পরিবারের মূল দায়িত্ব অর্পণ করেছে, অন্যদিকে পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানে মর্যাদায় ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে নারীর জন্য একটি বিশাল অ্যামাউন্ট বরাদ্দ করে নারীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখেছে। ইসলামের ভাষায় এটাকে মোহরানা বলা হয়।

৫. ইসলামী শরিয়তে মানুষের প্রতিটি অঙ্গের একটি আর্থিক মূল্য আছে, যদিও মানব অঙ্গ-প্রতঙ্গ অমূল্য সম্পদ। তথাপি জাগতিক নিয়মে কেউ কারো অঙ্গহানি করলে এর বিনিময় প্রদান জরুরি। আর বিবাহের মাধ্যমে যেহেতু পুরুষের মাধ্যমে নারীর এক ধরনের অঙ্গহানি হয়, তাই ইসলামী শরিয়ত এর ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোহরানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘...সুতরাং তাদের অভিভাবকের অনুমতিক্রমে তাদের বিয়ে করবে এবং ন্যায়সংগতভাবে তাদের প্রতিমূল্য (মোহরানা) আদায় করবে...।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৫)

এ আয়াতের শব্দচয়ন থেকে বোঝা যায়, মোহরানা নারীর প্রাপ্য ও অধিকার। এর একটি বিনিময় মূল্য রয়েছে। এটি নারীর অধিকার। ছলে-বলে-কৌশলে কিছুতেই নারীকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।



--------------------------------------------------------------------


একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ।  

আল্লাহ তা’আলা বলেন –

“আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে। [সূরা আন-নিসাঃ৪]


তবে এ ব্যাপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণভাবে দেনমোহর কম ধার্য করাই মুস্তাহাব।

রাসূল (সাঃ) বলেন –“সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প” [মুসনাদু আহমাদ; হাসান সানাদে]

এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)

দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক।

বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।”-মিশকাত শরিফ

দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত।

দেনমোহর যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।

সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) বলেন, ‘’আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উপবিষ্ট ছিলাম’’। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করলাম, আপনি আমাকে গ্রহণ করুন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) কিছুই বললেন না।

মহিলাটি এরূপ তিনবার বলল, কিন্তু তিনবারই রাসূল (সাঃ) চুপ থাকলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন আপনি যদি গ্রহন না করেন তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নিকট কি মহিলাকে দেনমোহর দেওয়ার মত কিছু আছে? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার বাড়ি থেকে খোঁজ করে একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসো। কিন্তু তিনি তাও আনতে পারেনি। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন আমার ঐ ঐ সূরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সা.) বললেন, মহিলাকে ঐ সূরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।

উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহিলাকে দেনমোহর প্রদান করা অত্যাবশ্যক।

দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ

সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত, “এবং নারীদের মধ্যে সধবা নারী ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, দেনমোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ।

দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমান হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণকেই দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।

দেনমোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমান হল মোহরে ফাতেমি।

মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাঃ-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা রাঃ-এর মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ৪/৩৫০)।  

 

হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা (রাঃ) তাদের সন্তানদের বিয়েতে দেনমোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমান দেনমহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর কারনে তা পারেননি।

সুরা নিসার ৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে” (সূরা নিসা-৪)”।

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে।


তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না।

আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে দেনমোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই দেনমোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ।

অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।

অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

আমরা এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে দেনমোহর স্ত্রীর হক যা অবশ্যই স্বামীকে প্রদান করতে হবে এবং খুশি মনে প্রদান করতে হবে। এটা স্ত্রীর প্রতি কোন দয়া বা দান নয় বরং স্ত্রীর পাওনা। বিয়ে সম্পর্কে কুরআন হাদিসের আরো নির্দেশনা পেতে পড়তে পারেন এই ব্লগটি-বিয়ে সম্পর্কিত কুরআন এর কয়েকটি আয়াত ও এর ফজিলত।


------------------------------------------------------------------


বিয়ের জন্য দেনমোহর অপরিহার্য। এটি নিছক কোনো দান নয়, স্ত্রীর পাকাপোক্ত অধিকার। এ অধিকার আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত। মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্ত্রী নিজেকে স্বামী থেকে দূরে রাখতে পারে। বস্তুত মোহরানা সতীত্বের বিনিময়, পবিত্র বন্ধনের বাহ্যিক দায়বদ্ধতা আর নারীর ভবিষ্যৎ জীবনের গ্যারান্টি। মোহর সম্পর্কে আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং স্ত্রীদের মোহর মনের সন্তোষসহকারে আদায় করো।’ Ñসূরা নিসা : ৪। ‘আর তাদের ন্যায়সঙ্গত মোহর আদায় করো’- সূরা নিসা : ২৫। যেহেতু আল কুরআনের ভাষা ‘ন্যায়সঙ্গত মোহর’ সেহেতু এ ব্যাপারে স্বামীর অর্থনৈতিক শক্তি-সামর্থ্য বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে মোহর নির্ধারণ করতে হবে। মোহর কোনো অর্থ-বিত্তের প্রতিযোগিতা নয়, এটি স্বামীর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত কর্তব্য। এ কর্তব্য পালনে কোনো ধরনের এসপার-ওসপার করার অবকাশ নেই। পৃথিবীর সব দেশে যুগ যুগ ধরে ধর্মীয় রীতিতেই বিয়ে-বাগদান সম্পন্ন হয়ে আসছে। অনুরূপভাবে মুসলমানদের বিয়েও ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক আনজাম দিতে হয়। সহি আকিদা-অনুষ্ঠানের ভিত্তিতে এ মহতি কাজ বাস্তবায়নে সবার একাগ্রতা লক্ষণীয়। সবাই চায় ইসলাম সমর্থন করে না এমন কিছু বিয়েতে হবে না। তাই কাজের বেলায়ও মোহর, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক খরচাদি যথা সম্ভব ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে পরিমিতভাবে সম্পাদন করা সমীচীন।


মোহর আল্লাহর বিধান হলেও সেটি ধার্য করার কর্তব্য দায়িত্বশীল বর কনে কিংবা তাদের অভিভাবকদের। আমাদের সমাজে সাধারণত উভয়পক্ষের মুরব্বিরাই সেটি নির্ধারণ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে মুরব্বিরা বর-কনে উভয়ের নিকটাত্মীয় মা-বাবা-ভাইবোন ও ভাবী, খালা, ফুফুকে প্রদত্ত মোহরের সাথে তুলনা করে সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এটি ধার্য করে থাকে। মোহরের সুনির্দিষ্ট কিংবা সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নেই। তবে হানাফি মাজহাবের মতে, সর্বনি¤œ মোহর ১০ দিরহাম অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ অর্থ। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই’ (বায়হাকি)। অবশ্যই আল্লাহর রাসূল মদিনায় হিজরত করার পর অসচ্ছলতার কারণে নিঃস্ব এক সাহাবির কাছে কুরআন জানার বিনিময়ে একটি মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ‘কুরআনের যা কিছু তোমার জানা আছে, তা স্ত্রীকে শিক্ষা দেবে এর বিনিময়ে আমি মেয়েটিকে তোমার কাছে বিয়ে দিলাম।’ (মুসনাদে আহমদ) আরেকজন গরিব সাহাবিকে রাসূল সা: বলেছিলেন, ‘মোহরানা বাবদ তাকে কিছু দিতে চেষ্টা করো, তা যদি একটি লোহার আংটিও হয়’। সামর্থ্যবান স্বামী-স্ত্রীকে অধিক মোহর দিতে পারে। তাতে ইসলামে কোনো আপত্তি নেই। তবে তা যেন লৌকিকতা না হয়। ইসলামে লৌকিকতা বা রিয়া ছোট শিরকের সমতুল্য। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সবসময় যেহেতু এক রকম নয়, সেহেতু মোহরও ইসলামে নির্ধারিত নয়। এটি স্বামীর সামর্থ্য, স্ত্রীর মর্যাদা ও পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। রাসূলে আকরাম সা: বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য’।


যদি পারস্পরিক ঠিকঠাক হওয়ার পরও বড় অঙ্ক মোহরের জন্য বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা হয় অথবা কোনো ধরনের তিক্ততার জন্ম নেয় তাহলে এটি কোনো পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক নয়। তা ছাড়া যেকোনো একদেশদর্শিতা, একরোখা মনোভাব ও অযাচিত হস্তক্ষেপ অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির অবতারণা করে না- সেটা বলা যায় না। সে জন্য নিঃসঙ্গতা কিংবা হারামের পথ ছেড়ে কেউ হালাল পথে আসতে চাইলে সবার সহযোগিতা করা ধর্মীয় দায়িত্ব। বিয়েকে যত বেশি সহজ করা যায় ততই সমাজের কল্যাণ।
বিয়েতে কঠিন অবস্থা সৃষ্টি করা সঠিক নয়। পরস্পর পছন্দ হওয়ার পর সহজ উপায়ে বিয়ে সম্পাদন করা উচিত। লোক দেখানো ও ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে দেনমোহরের ব্যাপারে অস্বাভাবিক কিছু ধার্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেয়া যেমনি বৈধ নয়, তেমনি বরপক্ষকেও বেশি চাপাচাপি করা যুক্তিসঙ্গত নয়।

সহজ ও অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে সম্পাদন প্রসঙ্গে হজরত আম্মাজান আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সা: ফরমায়েছেন, ‘নিশ্চয় বরকতের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ও গ্রহণযোগ্য বিয়ে হলো, যে বিয়ে সবচেয়ে স্বল্প খরচে সম্পাদিত হয়’। (বায়হাকি শোয়াবুল ঈমান)। জাহেলিয়া যুগে মোহরানা নিয়ে কন্যাপক্ষ ও বরপক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলত এবং অধিক পরিমাণ মোহর ধার্য হতো। পরবর্তীকালে মোহর আদায় নিয়ে শুরু হতো নানা জটিলতা ও ঝগড়া-ঝাটি। বর্তমানে মুসলিম সমাজেও একই অবস্থা। মোহরের প্রকৃত গুরুত্ব ও মর্যাদা বাকি নেই। এখন স্রেফ রসম-রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। অনেকে এটা প্রথাগত ব্যাপার বলে মনে করে। মেয়েপক্ষ বিরাট অঙ্কের মোহর দাবি করে তারা এটাকে সামাজিক মান-সম্মানের বিষয় কিংবা তালাকের প্রতিবন্ধক হিসেবে ভেবে থাকে। বস্তুতপক্ষে ইসলামে মোহরের সাথে বংশীয় মানমর্যাদা ও তালাকের কোনো সম্পর্ক নেই। যারা মনে করেন কেবল বিয়েবিচ্ছেদ হলেই দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন।


ইসলামী শরিয়ত স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা স্বামীর ওপর ফরজ করে দিয়েছে। আর মোহর পরিশোধ করা ছাড়া বিয়েই হতে পারে না। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের থেকে যে স্বাদ গ্রহণ করো তার বিনিময়ে অপরিহার্য ফরজ হিসেবে তাদের মোহর পরিশোধ করো।’-সূরা নিসা : ২৪। দেখা যায়, অনেকের মোহর পরিশোধের নিয়তই থাকে না। প্রচারের উদ্দেশ্যে এটাকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা মনে করা হয়। এ সম্পর্কে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো একটা পরিমাণ মোহরানা ধার্য করে কোনো নারীকে বিয়ে করল, অথচ আল্লাহ জানেন তা পরিশোধ করার ইচ্ছে তার নেই, এ ব্যক্তি আল্লাহর নামে তার স্ত্রীকে প্রতারিত করল এবং নাহকভাবে তার সতীত্ব নিজের জন্য হালাল মনে করে ভোগ করল এমন ব্যক্তি কিয়ামতে ‘জিনাকারী ব্যভিচারী হিসেবে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ)
দেনমোহরের ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে বেশি প্রচলিত পরিমাণ হলো মোহরে ফাতেমি। মোহরে ফাতেমি বলা হয় ওই পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা যা রাসূলুল্লাহ সা:-এর মেয়ে হজরত ফাতিমা রা:-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আর এর পরিমাণ ছিল ৫০০ দিরহাম যা ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপার সমতুল্য। (জাওয়াহিরুল ফতোওয়া, ৪/৩৫০)।

হজরত ওমর রা: এর খিলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেকগুণ বেশি মোহর ধার্য করতে শুরু করেন তখন হজরত ওমর রা: দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমাণ দেনমোহরের পক্ষে ছিলেন না কিন্তু সূরা আন নিসার ৪ নম্বর আয়াতের কারণে তিনি তা পারেননি। এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে’। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে। তাই কোনো ধরনের বাছ-বিচার ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহর মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করা ন্যায়সঙ্গত নয়। আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে সে ক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমি ধার্য করা হলে এর দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো ও নারীত্বের অবমাননা হয়। তাই মোহরে ফাতেমি বড় কথা নয়, স্বামীর সামর্থ্যরে আলোকে দেনমোহর ধার্য হওয়া উচিত। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত মহানবী সা:-এর জীবনেও দেখা যায়, যেমন: তিনি উম্মুল মোমিনিন হজরত উম্মে হাবিবার দেনমোহর ধার্য করেছিলেন চার হাজার দিরহাম (১১৯০০ গ্রাম রৌপ্য মুদ্রা)। সুতরাং সবাই সবসময় সুন্নতের দোহাই দিয়ে ফকিরি হালত দেখাবেন- সেটা সঠিক নয়। নারীদের যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের শিক্ষা- এটি আমাদের বুঝতে হবে।

বিয়ে পবিত্র বন্ধন। প্রজন্ম সৃষ্টির চিরায়ত প্রক্রিয়া। সৃষ্টি সুখের উল্লাস। নৈতিক সম্পর্কের যোগসূত্র। অনন্তকালে নিজের জীবনের ঠিকানা গড়ে নেয়া আর চরিত্র হিফাজতের উত্তম প্রতিষেধক। তাই ন্যূনতম অর্থ ও স্বাস্থ্য থাকলে বিয়ে ছাড়া শান্তির কোনো পথ নেই। এ শান্তির সমাজ সৃষ্টির জন্য আমাদের উচিত দেনমোহরের বেলায় কড়াকড়ি আরোপ না করে বিয়ের সামগ্রিক পরিবেশকে সহজ ও প্রাণবন্ত করে তোলা।
লেখক : এমফিল গবেষক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর


--------------------------------------------------


মোহরে ফাতেমী সম্পর্কে জানতে এখানে দেখুন। 

Make download link form Tafhim App - Sahitto Section

কিভাবে সাহিত্য ডাউনলোড লিংক তৈরী করবেন, তার  ভিডিও লিংক :  https://youtu.be/eogSZAciodg


সাহিত্য  ডাউনলোড লিংক ফরমেট  : https://drive.google.com/uc?export=download&id= (এখানে আইডিটা বসবে) । 

Full Link Example : 

<a href="https://drive.google.com/uc?export=download&id=16tg-3pDpXMoT2Lbrhrymcgz1si_ZMylJ#তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাত.txt">Download/Read</a>

Name Format : তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাত (Text Book) - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী #তাওহীদ রিসালাত ও আখেরাত.txt

Gmail : noorhossain888@gmail.com

প্রশ্ন: ৪৩৭ : হিজড়াদেরকে বিবাহ করা যাবে ?

৭১/১৬ঃ হিজড়াদের বিয়ে কি বৈধ? তারা কি পরিবারের অভিশাপ?
--------------------------------
আবদুস শহীদ নাসিম
---------------------
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। আমাদের সমাজে অনেক হিজড়া দেখা যায়। তাদেরকে পরিবার থেকে বের করে দেয়া হয়। পরিবারে তাদের অভিশাপ মনে করা হয়। তারা কোথাও দলবদ্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের বিয়ে শাদী কি জায়েয? এম আসলাম
জবাবঃ ওয়ালাইকুম সালাম। আপনি একটি সামাজিক সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। হুবহু এ বিষয়টি নিয়েই পাকিস্তানের আলেমদের সগঠন 'তানজিমে ইত্তেহাদে উম্মত' দেশের শীর্ষ ৫০ আলেমের একটি ফতোয়া প্রকাশ করেছে। গতকাল ২৭ জুন সেদেশের জাতীয় পত্রিকা 'এক্সপ্রেস ট্রিবিউন' এ খবর দিয়েছে। ফতোয়ায় বলা হয়ঃ
"যেসব হিজড়ার মধ্যে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি সে যে কোনো নারী বা অন্য কোনো নারীসুলভ হিজড়াকে বিয়ে করতে পারবে। একইভাবে কোনো হিজড়ার মধ্যে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য বেশি থাকলে সে নিজের পছন্দমতো বিয়ে করতে পারবে। তবে যাদের মধ্যে নারী এবং পুরুষ উভয় ধরনের বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান রয়েছে তারা কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।"
এই আলেমরা আরও বলেনঃ
"আগে সম্পত্তি থেকে হিজড়াদের বঞ্চিত করা হতো। এটা একেবারেই অবৈধ। আর অনেক বাবা-মা মনে করেন, আল্লাহ রাগ করে তাদের হিজড়া সন্তান দান করেছেন। এটা মোটেও ঠিক নয়। আল্লাহই ভালো জানেন আমাদের জন্য কোনটা ঠিক। এ ধরনের বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।"
তাদের ফতোয়ায় সমাজে হিজড়াদের প্রতি যে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয় তা থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হিজড়াদের অপমান করা বা তাদের আজেবাজে কথা বলাকে হারাম বলেও উল্লেখ করেন তারা।
আশা করি এ ফতোয়া থেকে আপনার প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেছেন।
---------------------------
২৮/০৬/২০১৬

===================================================


প্রশ্ন: কোনো মুসলিম পুরুষ কি ‘হিজড়া’কে বিয়ে করতে পারবে?

উত্তর: হিজড়াকে আরবিতে খুনসা বলা হয়। খুনসা সাধারণত দুই রকম হয়: ১. খুনসা মুশকিলাহ, ২. খুনসা গাইরে মুশকিলাহ

খুনসা মুশকিলাহ: কোনভাবেই যাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি। তারা পুরুষ না মহিলা বোঝা যায় না।

এমন খুনসা বা হিজড়াকে বিয়ে করা বৈধ নয়। (ফতওয়ায়ে শামি: ৬/৭২৯)

খুনসা গাইরে মুশকিলাহ: বিভিন্ন আলামতের মাধ্যমে যাদের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক বা পুরুষবাচক কোনো আলামতের মাধ্যমে ধারণা করা যায় তাদের লিঙ্গ (জেন্ডার) এই ধরণের।
এদেরকে বিবাহ করা জায়েজ। 

বিবাহের পদ্ধতি হলো আলামতের মাধ্যমে যদি স্ত্রীগোত্রীয় প্রমাণিত হয় তাহলে পুরুষের সঙ্গে এবং পুরুষগোত্রীয় প্রমাণিত হলে স্ত্রীলোকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। (ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া: ২০/২০১)

লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতি 

সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার আগে পেশাব করার ধরণ দেখে নেওয়া। অর্থাৎ যদি পুরুষদের মত পেশাব করে পুরুষগোত্রীয়, যদি মেয়েদের মত পেশাব করে নারীগোত্রীয় গণ্য হবে।

যদি দাড়ি গজায় তাহলে পুরুষগোত্রীয় আর যদি বুক স্ফীত হয় নারীগোত্রীয় ধরা হবে।

স্বপ্নদোষ থেকেও আন্দাজ করা যায়। যদি পুরুষালী স্বপ্ন দেখে পুরুষ, যদি মেয়েদের মত স্বপ্ন দেখে নারী।

অনেক সময় হিজড়া পুরুষ স্ত্রীসম্ভোগের আগ্রহ বা স্ত্রী লোকের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। কেবল এই কারণে এক হিজড়া থেকে রাসুলুল্লাহ সা. তার স্ত্রীদের পর্দা করতে বলেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং – ৪৩২৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং – ২১৮০)

অনেক সময় হিজড়া নারীর হায়েজ হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে তাকে স্ত্রীলোক বলে গণ্য করা হবে।

স্মর্তব্য: দ্বিতীয় প্রকারের হিজড়াকে বিবাহ করা জায়েজ বলে যদিও ফুকাহায়ে কেরাম মত দিয়েছেন; কিন্তু একইসঙ্গে তারা সতর্ক করেছেন, স্বামী-স্ত্রী কেউ যেন অবৈধ পন্থায় তাদের যৌন চাহিদা পূরণ না করে। 

সুতরাং বিয়ে করার আগে অবশ্যই আবেগকে বিসর্জন দিয়ে বিবেক দিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

প্রশ্ন: ৪৩৬ : খতনা করার বিধি বিধান ।

 প্রশ্ন : খতনা করার হুকুম কী? কত বছর বয়সে খতনা করানো উত্তম? আমাদের এলাকায় এক লোক নতুন মুসলমান হয়েছে। তার বয়স ৩৫। তার খতনার বিধান কী? অনেকে ছেলের খতনা করিয়ে লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ায় এটা কেমন? এ ধরনের দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যাবে কী? অনুগ্রহ করে জানালে কৃতজ্ঞ হব। 


উত্তর : খতনা করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শিআরে ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফিতরাত (তথা নবীগণের সুন্নত) পাঁচটি : খতনা করা, নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করা, বগলের পশম উঠানো, মোঁচ ছোট করা এবং নখ কাটা। [সহীহ বুখারী, হাদীস : ৬২৯৭] 

শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান হওয়ার পরই সুবিধাজনক সময় ছেলের খতনা করিয়ে দেওয়া অভিভাবকের দায়িত্ব। আর কোনো কারণে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যদি খতনা না করা হয় অথবা বয়স্ক হওয়ার পর কেউ ইসলাম গ্রহণ করে তাহলেও তার খতনা করা জরুরি। অতএব প্রশ্নোক্ত নবমুসলিমকেও খতনা করে নিতে হবে। ইবনে শিহাব যুহরী রাহ. বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন ইসলাম গ্রহণ করত তখন সে বড় হলেও তাকে খতনা করার আদেশ করা হত। [আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস : ১২৫২] 


খতনার উত্তম সময়ের ব্যাপারে ফকীহগণ বলেন, শিশুর শারীরিক উপযুক্ততা ও তার বালেগ হওয়ার কাছাকাছি বয়সে পৌঁছার আগেই বা এর মাঝামাঝি সময়ে যেমন, ৭-১০ বছর বা অনুর্ধ্ব ১২ বছরের মধ্যে করে নেওয়া উত্তম। আর খতনা উপলক্ষ্যে কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রমাণ নেই। তাছাড়া বর্তমানে যে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের রেওয়াজ শুরু হয়েছে তা অবশ্যই বর্জনীয়। এছাড়া এতে গান-বাদ্য ইত্যাদি শরীয়তবিরোধী কোনো কিছু থাকলে তা তো সম্পূর্ণ নাজায়েয হবে। [ফাতহুল বারী ১১/৯২, ৯/৫০৩, ১০/৩৫৫, ৪/৪১৩; রদ্দুল মুহতার ৬/৭৫১-৭৫২, ৬/২৮২; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ২/১৩২; আলবাহরুর রায়েক ৭/৯৫-৯৬] 


গ্রন্থনা ও সম্পদানা : মাওলানা মিরাজ রহমান সৌজন্যে : মাসিক আল-কাউসার

প্রশ্ন: ৪৩৫ : আত্মহত্যাকারী কেন শাস্তি পাবে, যেহেতু বলা হয়েছে, মৃত্যুর দিন ক্ষণ নির্দ্দিষ্ট ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত: আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লা আমার প্রশ্ন হল নির্দিষ্ট সময়ে সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে এটা আল্লাহতালা বলে দিয়েছেন আর যার যেখানে মৃত্যু সেখানে তার মৃত্যু হবে আর যেখানে যার মৃত্যু আল্লাহতালা লেখে দিয়েছেন তার মৃত্যু সেখানে সেই অবস্থাতেই হবে কিন্তু যদি এরকম হয় তাহলে আর যারা আত্মহত্যা করে মারা যায় তাহলে সেটাকে কেন মহাপাপ বলা হবে আর আল্লাহ বলেছেন যার যেখানে মৃত লেখা আসে সে ভাবে মৃত্যু হবে প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তরটা জানতে চাই যদি জানেন তাহলে উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ


উত্তর : ওয়া আলাইকুম আস সালাম। প্রশ্নটি এভাবেও হতে পারে, আল্লাহর হুকুম ছাড়া কিছুই হয়না, তাহলে অপরাধী ব্যাক্তির দোষ কি ? এর উত্তর হচ্ছে :


১) মানুষ কে আশরাফুল মাখলুকাত বলা হয়েছে এবং তার জন্য জাহান্নাম ও জান্নাত নির্ধারিত আছে। অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের প্রধান পার্থক্য হলো বিবেক। এই বিবেক কে কাজে লাগিয়ে সে জান্নাত বা জাহান্নাম অর্জন করতে পারে।

২) আরেকটি বিষয় হচ্ছে তার ইচ্ছাশক্তি। একটি মানুষ কি ইচ্ছা করেছে, সেই অনুযায়ীই কর্ম সম্পাদনের তৌফিক আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। এখন যেহেতু, একজন ব্যক্তি পাপ কর্ম করার ইচ্ছা করেছে, তাই তাকে তৌফিক দেওয়া হয় ঐ পাপ কর্মটি করার। আর যেহেতু সে ইচ্ছা করেছিল, এবং পাপ সংঘটিতও করেছে, তাই তার বিচার হবে। এখন কোন ব্যাক্তি যদি কোন কাজ করার ইচ্ছা করে, আর যদি তাকে তা করতে সুযোগ না-ই দেওয়া হয়, এমনকি কখনোই কোন কাজ ব্যাক্তির ইচ্ছা অনুযায়ী করতে না-ই দেওয়া হয়, তাহলেতো আর এই দুনিয়া পরীক্ষা ক্ষেত্র হয়না। এখানে আপনি কাজ করার জন্য আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা পাবেন। এবং এর বিচার বা ফলাফল পাবেন পরকালে।


৩) আরেকটি বিষয় হচ্ছে : এটা ভালো করে বুঝে নিতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা আর সন্তুষ্টি এক জিনিস নয়। আল্লাহর ইচ্ছায় হয়তো একটি কাজ করার তৌফিক আপনি পাচ্ছেন, কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়তো তাতে নাও থাকতে পারে। একটি কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি তখনই পাবেন, যখন আল্লাহর হুকুম ও রাসুল সা: এর দেখানো নিয়ম অনুযায়ী আপনি কাজটি করবেন।


৪) আত্মহত্যাকারীর শাস্তি পাওয়ার এ সাথে আরেকটি কারণ রয়েছে, তা হলো দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষা ক্ষেত্র। আপনার কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহর দেওয়া বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা এবং মনযোগ সহকারে পরীক্ষা দেওয়া। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব, অথবা ফলাফল ও সুখভোগ এর স্থান হচ্ছে পরকাল। তো পাওয়া না পাওয়ার হিসাব নিকাশ মিলাতে গিয়ে অথবা অন্য যে কোন কারণে যদি আপনি আত্মহত্যা করেন, তাহলেতো এর অর্থ হলো ক) পরীক্ষার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই আপনি পরীক্ষার হল থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন অথবা খ) পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আপনি পরীক্ষার রেজাল্ট চাচ্ছেন । Is it good ? Is it right ?

প্রশ্ন: ৪৩৪ : বদর যুদ্ধ - সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও শহীদদের সংখ্যা ।

 ইসলামের প্রথম সমর অভিযান `গাযওয়ায়ে বদর বা বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ জয়ের ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। রাষ্ট্র হিসেবে মদিনার শক্তি, ভিত্তির স্বীকৃতি অর্জিত হয়। যদিও বদরের যুদ্ধের বছর অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনীর মধ্যে বহু খণ্ড যুদ্ধ সংঘঠিত হয়; তথাপিও বদরের যুদ্ধ ইসলাম, মুসলমান এবং মদিনার নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ২য় বছর অর্থাৎ ২য় হিজরি সালের ১৭ রমজান মদিনা থেকে ৭০ মাইল দক্ষিণে বদর নামক স্থানে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ইসলামের এ প্রথম যুদ্ধ সংগঠিত হয়। বদরের যুদ্ধের কিছু সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো-


মুসলিম বাহিনী

>> সৈন্য সংখ্যা : ৩১৩জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন।

>> মুসলিম সেনাপতি : বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

>> মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে : ৭০টি ও ২টি।


>> মুসলিম বাহিনী শহীদ হয় : ১৪ জন।

>> বদর যুদ্ধে কান্নাকাটি করে অংশগ্রহণের অনুমতি লাভকারী হলেন : হজরত ওমায়ের বিন ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।

>> আবু জাহেলকে হত্যা করেন ২ ভাই : হজরত মুআজ ও মুআওয়েজ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।

কুরাইশ বাহিনী

>> অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০জন।

>> কুরাইশ বাহিনীর ছিল অসংখ্য উট। ১০০টি ঘোড়া এবং ৬০০ লৌহবর্ম। কুরাইশ বাহিনীর জন্য প্রতিদিন ৯-১০টি উট খাওয়ার জন্য জবাই করা হতো।

>> অমুসলিম সেনাপতি : ওতবা বিন রবীআ।

>> অমুসলিম নিহত ৭০ জন এবং বন্দিও হয় ৭০ জন।

>> বদর যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় গোত্র অংশগ্রহণ করলেও বনু আদি গোত্রের কেউ এই যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

যুদ্ধের ফলাফল

ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

বদর যুদ্ধের প্রভাব

>> ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ জয়ের ফলে বিশ্বনেতা হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। ফলে মদিনার নতুন রাষ্ট্রকে অন্য আরব গোত্রগুলি মুসলিমদেরকে নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে।

বদরের যুদ্ধের পর নতুন রাষ্ট্র মদিনার শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকেই ইসলামের সুশীতল ছায় তলে আশ্রয় গ্রহণ করে। মুসলিম উম্মাহর কাছে বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

>> অন্যদিকে এ যুদ্ধে আবু জাহলসহ মক্কার অনেক প্রভাবশালী নেতৃবর্গ মৃত্যুবরণ করে। ফলে আবু সুফিয়ান কুরাইশদের নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। মক্কা বিজয়ের আগে বদর পরবর্তী যুদ্ধগুলোতে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে কুরাইশদের নেতৃত্ব দেয় আবু সুফিয়ান।

১০ হিজরিতে মক্কা বিজয়ের সময় আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেন।  খোলাফায়ে রাশেদার ৩০ বছর রাজত্বের পর তার ছেলে আমীর মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন।

বদরের যুদ্ধের শহীদদের পরিচয়
-------------------------------------------------
বদরের যুদ্ধ হল ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষাকারী প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলমানরা অসাধারণ বিজয় লাভ করেন এবং কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
এ যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে সর্ব মোট ১৪ জন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন। তার মধ্যে ৬ জন মোহাজের (মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকারী) এবং ৮ জন আনসার (মদীনায় মক্কার মোহাজেরদেরকে সাহায্যকারী) সাহাবী। মুসলমানদের কেউ বন্দী হননি।
অপরদিকে কাফেরদের ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দী হয়। সব মিলে ১৪০ জন।

 
বদরের যুদ্ধে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিচয় হলঃ

১. হযরত ওবায়দা ইবনে হারিছ (রাঃ) - মোহাজের।
২. হযরত ওমায়ের ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) - মোহাজের।
৩. হযরত যুশ-শিমালাইন (রাঃ) - মোহাজের।
৪. হযরত আকিল ইবনে বুকাইল (রাঃ) - মোহাজের।
৫. হযরত মাহজা ইবনে সালেহ (রাঃ)- মোহাজের। তিনি ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ) এর আযাদকৃত ক্রীতদাস।
৬. হযরত সাফওয়ান ইবনে বায়দা (রাঃ) - মোহাজের।
৭. হযরত সাদ ইবনে খায়সামা (রাঃ) - আনসার।
৮. হযরত মুবাশ্বর ইবনে আবদুল মুনযির (রাঃ) - আনসার।
৯. হযরত ওমায়ের ইবনে হুমাম (রাঃ) - আনসার।
১০. হযরত ইয়াযিদ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১১. হযরত রাফি ইবনে মুয়াল্লাহ (রাঃ) - আনসার।
১২. হযরত হারিছা ইবনে সুরাকা (রাঃ) - আনসার।
১৩. হযরত আওফ ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।
১৪. হযরত মুআওবিয ইবনে হারিছ (রাঃ) - আনসার।


তথ্যসূত্রঃ
১. মহানবীঃ ডঃ ওসমান গণি, মল্লিক ব্রাদার্স, কলিকাতা, ১৯৮৮, পৃঃ ২২৫-২৩৯.
২. সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃঃ ১৫৯.
৩. এক নজরে সীরাতুন্নবী পৃঃ২০.
৪. সীরাতুল মোস্তাফা (প্রথম খণ্ড)- ইদরীস কান্দলভী, পৃঃ ৬১৬-৬১৯.
৫. muhammad: Seal of the Prophet: Muhammad Zafrullah Khan.

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...