৪১। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : খন্দক যুদ্ধক্ষেত্রের নকশা

৪১। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : খন্দক যুদ্ধক্ষেত্রের নকশা

 

তাফহীমুল কুরআন থেকে : 


( বিস্তারিত : ৩৩ নং সুরা আহযাব এর ভূমিকায়  বিস্তারিত দেখুন....   ) :   

......আহ্‌যাবের যুদ্ধ ........

এ অবস্থায় আহ্‌যাব যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এটি ছিল আসলে মদীনার এ শক্তিটিকে গুঁড়িয়ে দেবার জন্য আরবের বহুসংখ্যক গোত্রের একটি সম্মিলিত হামলা। এর উদ্যোগ গ্রহণ করে বনী নযীরের মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে খয়বরে বসতি স্থাপনকারী নেতারা। তারা বিভিন্ন এলাকা সফর করে কুরাইশ, গাতফান, হুযাইল ও অন্যান্য বহু গোত্রকে একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে বিরাট বাহিনী নিয়ে মদীনার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে। এভাবে তাদের প্রচেষ্টায় ৫ হিজরীর শাওয়াল মাসে আরবের বিভিন্ন গোত্রের এক বিরাট বিশাল সম্মিলিত বাহিনী এ ক্ষুদ্র জনপদ আক্রমণ করে। এতবড় বাহিনী আরবে ইতিপূর্বে আর কখনো একত্র হয়নি। এতে যোগ দেয় উত্তর থেকে বনী নযীর ও বনী কাইনুকার ইহুদিরা। এরা মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে খয়বর ও ওয়াদিউল কুরায় বসতি স্থাপন করেছিল। পূর্ব থেকে যোগ দেয় গাত্‌ফানের গোত্রগুলো (বনু সালীম, ফাযারাহ, মুর্‌রাহা, আশজা’, সা’আদ ও আসাদ ইত্যাদি)। দক্ষিণ থেকে এগিয়ে আসে কুরাইশ তাদের বন্ধু গোত্রগুলোর সমন্বয়ে গঠিত বিশাল বাহিনী সহকারে। এদের সবার সম্মিলিত সংখ্যা দশ বারো হাজারের কম হবে না। 

এটা যদি অতর্কিত আক্রমণ হতো তাহলে তা হতো ভয়াবহ ধ্বংসকর। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা তাইয়েবায় নির্লিপ্ত ও নিষ্ক্রিয় বসে ছিলেন না। বরং সংবাদদাতারা এবং সমস্ত গোত্রের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা ইসলামী আন্দোলনের সহযোগী ও প্রভাবিত লোকেরা তাঁকে দুশমনদের চলাফেরা ও প্রত্যেকটি গতিবিধি সম্পর্কে সর্বক্ষণ খবরাখবর সরবরাহ করে আসছিলেন।* এ বিশাল বাহিনী তাঁর শহরে পৌঁছবার আগেই ছ’দিনের মধ্যেই তিনি মদীনার উত্তর পশ্চিম দিকে পরিখা খনন করে ফেলেন এবং সাল্‌’আ পর্বতকে পেছনে রেখে তিন হাজার সৈন্য নিয়ে পরিখার আশ্রয়ে প্রতিরক্ষা যুদ্ধ পরিচালনা করতে প্রস্তুত হন। মদীনার দক্ষিণে বাগান ও গাছপালার পরিমাণ ছিল এত বেশী (এবং এখনো আছে) যে, সেদিক থেকে কোন আক্রমণ চলানো সম্ভব ছিল না। পূর্বদিকে ছিল লাভার পর্বতমালা। তার উপর সম্মিলিত সৈন্য পরিচালনা করা কোন সহজ কাজ ছিল না। পশ্চিম-দক্ষিণ কোণের অবস্থাও এ একই ধরনের ছিল। তাই আক্রমণ হতে পারতো একমাত্র ওহোদের পূর্ব ও পশ্চিম কোণগুলো থেকে। নবী করীম (সা.) এদিকেই পরিখা খনন করে নগরীকে সংরক্ষিত করে নেন। আসলে মদীনার বাইরে পরিখার মুখোমুখি হতে হবে, এটা কাফেররা ভাবতেই পারেনি। তাদের যুদ্ধের নীল নক্‌শায় আদতে এ জিনিসটি ছিলই না। কারণ আরববাসীরা এ ধরনের প্রতিরক্ষার সাথে পরিচিত ছিল না। ফলে বাধ্য হয়েই সেই শীতকালে তাদেরকে একটি দীর্ঘ স্থায়ী অবরোধের জন্য তৈরি হতে হয়। অথচ এজন্য তারা গৃহ ত্যাগ করার সময় প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। 

এরপর কাফেরদের জন্য শুধুমাত্র একটা পথই খোলা ছিল। তারা ইহুদি গোত্র বনী কুরাইযাকে বিশ্বাসঘাতকতায় উদ্বুদ্ধ করতে পারতো। এ গোত্রটির বসতি ছিল মদীনার দক্ষিণ পূর্ব কোণে। যেহেতু এ গোত্রটির সাথে মুসলমানদের যথারীতি মৈত্রী চুক্তি ছিল এবং এ চুক্তি অনুযায়ী মদীনা আক্রান্ত হলে তারা মুসলমানদের সাথে মিলে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত হতে বাধ্য, তাই মুসলমানরা এদিক থেকে নিশ্চিত হয়ে নিজেদের পরিবার ছেলে মেয়েদেরকে বনী কুরাইযার সন্নিহিত এলাকায় পাঠিয়ে দেয় এবং সেদিকে প্রতিরক্ষার কোন ব্যবস্থা করেনি। কাফেররা মুসলমানদের প্রতিরক্ষার এ দুর্বল দিকটি আঁচ করতে পারে। তাদের পক্ষ থেকে বনী নযীরের ইহুদি সরদার হুয়াই ইবনে আখ্‌তাব বনী কুরাইযার কাছে পাঠানো হয়। বনী কুরাইযাকে চুক্তি ভংগ করে দ্রুত যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করানোই ছিল তার কাজ। প্রথমদিকে তারা অস্বীকার করে এবং তাদেরকে পরিষ্কার বলে দেয়, মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আমরা চুক্তিবদ্ধ এবং আজ পর্যন্ত তিনি আমাদের সাথে এমন কোন ব্যবহার করেননি যার ফলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনতে পারি। কিন্তু যখন ইবনে আখ্‌তাব তাদেরকে বললো, “দেখো, আমি এখন সারা আরবের সম্মিলিত শক্তিকে এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছি। একে খতম করে দেবার এটি একটি অপূর্ব সুযোগ। এ সুযোগ হাতছাড়া করলে এরপর আর কোন সুযোগ পাবে না” তখন ইহুদি জাতির চিরাচরিত ইসলাম বৈরী মানসিকতা নৈতিকতার মর্যাদা রক্ষার ওপর প্রাধান্য লাভ করে এবং বনী কুরাইযা চুক্তি ভংগ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। 

* জীতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর মোকাবিলায় একটি আদর্শবাদী আন্দোলনের প্রাধান্যের এটি হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। জাতীয়তাবাদীরা শুধুমাত্র নিজেদের জাতির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমর্থন ও সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল হয়। কিন্তু একটি আদর্শবাদী ও নীতিবাদী আন্দোলন নিজের দাওয়াতের মাধ্যমে সবদিকে এগিয়ে চলে এবং স্বয়ং ঐ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলোর মধ্য থেকেও তার সমর্থক বের করে আনে। 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারেও বেখবর ছিলেন না। তিনি যথা সময়ে এ খবর পেয়ে যান। সংগে সংগেই তিনি আনসার সরদারদেরকে (সা’দ ইবনে উবাদাহ, সা’দ ইবনে মু’আয, আবদুল্লাহ ইবনে রওয়াহ ও খাওয়াত ইবনে জুবাইর) ঘটনা তদন্ত করার এবং এ সংগে তাদের বুঝাবার জন্য পাঠান। যাবার সময় তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন, যদি বনী কুরাইযা চুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে ফিরে এসে সমগ্র সেনাদলকে সুস্পষ্ট ভাষায় এ খবর জানিয়ে দেবে। কিন্তু যদি তারা চুক্তি ভংগ করতে বদ্ধপরিকর হয় তাহলে শুধুমাত্র আমাকে ইঙ্গিতে এ খবরটি দেবে যাতে এ খবর শুনে সাধারণ মুসলমানরা হিম্মতহারা হয়ে না পড়ে। এ সরদারগণ সেখানে পৌঁছে দেখেন বনি কুরাইযা তাদের নোংরা চক্রান্ত বাস্তবায়নে পুরোপুরি প্রস্তুত। তারা প্রকাশ্যে তাঁদেরকে জানিয়ে দেয়   لاعقد بيننا وبين محمد ولا عهد   “আমাদের ও মুহাম্মাদের মধ্যে কোন অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নেই।” এ জবাব শুনে তারা মুসলিম সেনাদলের মধ্যে ফিরে আসেন এবং ইঙ্গিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানান عضل وقاره   অর্থাৎ ‘আদল ও কারাহ ইসলাম প্রচারক দলের সাথে রাজী’ নামক স্থানে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল বনী কুরাইযা এখন তাই করছে। এ খবরটি অতি দ্রুত মদীনার মুসলমানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দেয়। কারণ এখন তারা দু’দিক থেকেই ঘেরাও হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের শহরের যে অংশে তারা কোন প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেয়নি সে অংশটি বিপদের সম্মুখীন হয়ে গিয়েছিল। তাদের সন্তান ও পরিবারের লোকেরা সে অংশেই ছিল। এর ফলে মুনাফিকদের তৎপরতা অনেক বেশী বেড়ে যায়। মু’মিনদের উৎসাহ-উদ্যম নিস্তেজ করে দেবার জন্য তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মনস্তাত্বিক হামলা শুরু করে দেয়। কেউ বলে, “আমাদের সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছিল পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্য জয় করা হবে কিন্তু এখন অবস্থা এমন যে আমরা পেসাব পায়খানা করার জন্যও বের হতে পারছি না।” কেউ একথা বলে খন্দক যুদ্ধের ময়দান থেকে ছুটি চাইতে থাকে যে, এখন তো আমাদের গৃহও বিপদাপন্ন, সেখানে গিয়ে সেগুলো রক্ষা করতে হবে। কেউ এমন ধরনের গোপন প্রচারণাও শুরু করে দেয় যে, আক্রমণকারীদের সাথে আপোষ রফা করে নাও এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের হাতে তুলে দাও। এটা এমন একটা কঠিন পরীক্ষার সময় ছিল যার মধ্যে পড়ে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির মুখোস উন্মোচিত হয়ে গেছে যার অন্তরে সামান্য পরিমাণও মুনাফিকি ছিল। একমাত্র সাচ্চা ও আন্তরিকতা সম্পন্ন ঈমানদাররাই এ কঠিন সময়েও আত্মোৎসর্গের সংকল্পের ওপর অটল থাকে। 

এহেন নাজুক সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাত্‌ফানদের সাথে সন্ধির কথাবার্তা চালাতে থাকেন এবং তাদেরকে মদীনায় উৎপাদিত ফলের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু যখন আনসার সরদার বৃন্দের (সা’দ ইবনে উবাদাহ ও সা’দ ইবনে মু’আয) সাথে তিনি চুক্তির এ শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা করেন তখন তাঁরা বলেন, “হে আল্লাহর রসূল! আমরা এমনটি করবো এটা কি আপনার ইচ্ছা? অথবা এটা আল্লাহর হুকুম, যার ফলে আমাদের এটা করা ছাড়া আর কোন পথ নেই? না কি নিছক আমাদেরকে বাঁচাবার একটি ব্যবস্থা হিসেবে আপনি এ প্রস্তাব দিচ্ছেন?” জবাবে তিনি বলেন, “আমি কেবল তোমাদের বাঁচাবার জন্য এ ব্যবস্থা অবলম্বন করছি। কারণ আমি দেখছি সমগ্র আরব একজোট হয়ে তোমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আমি তাদের এক দলকে অন্য দলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত করে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাই।” একথায় উভয় সরদার এক কন্ঠে বলেন, “যদি আপনি আমাদের জন্য এ চুক্তি করতে এগিয়ে গিয়ে থাকেন তাহলে তা খতম করে দিন। যখন আমরা মুশরিক ছিলাম তখনও এ গোত্রগুলো আমাদের কাছ থেকে একটি শস্যদানাও কর হিসেবে আদায় করতে পারেনি, আর আজ তো আমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনার গৌরবের অধিকারী। এ অবস্থায় তারা কি এখন আমাদের থেকে কর উসূল করবে? আমাদের ও তাদের মাঝখানে এখন আছে শুধুমাত্র তলোয়ার যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাদের ও তাদের মধ্যে ফায়সালা না করে দেন।” একথা বলে তাঁরা চুক্তিপত্রের খসড়াটি ছিঁড়ে ফেলে দেন, যার ওপর তখনো স্বাক্ষর করা হয়নি। 

এ সময় গাত্‌ফান গোত্রের আশ্‌জা’ শাখার না’ঈম ইবনে মাস’উদ নামক এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আসেন। তিনি বলেন, এখনো কেউ আমার ইসলাম গ্রহনের খবর জানে না। আপনি আমাকে দিয়ে যে কোন কাজ করাতে চান আমি তা করতে প্রস্তুত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তুমি গিয়ে শত্রুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করো।* একথায় তিনি প্রথমে যান বনী কুরাইযার কাছে। তাদের সাথে তাঁর মেলামেশা ছিল খুব বেশী। তাদেরকে গিয়ে বলেন, কুরাইশ ও গাতফান তো অবরোধে বিরক্ত হয়ে এক সময় ফিরে যেতেও পারে। এতে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু তোমাদের তো মুসলমানদের সাথে এখানে বসবাস করতে হবে। তারা চলে গেলে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? আমার মতে তোমরা ততক্ষণ যুদ্ধে অংশ নিয়ো না যতক্ষণ বাইর থেকে আগত গোত্রগুলোর মধ্য থেকে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ লোককে তোমাদের কাছে যিম্মী হিসেবে না রাখে। একথা বনী কুরাইযার মনে ধরলো। তারা গোত্রসমূহের সংযুক্ত ফ্রন্টের কাছে যিম্মী চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। এরপর তিনি কুরাইশ ও গাতফানের সরদারদের কাছে যান। তাদেরকে বলেন, বনী কুরাইযা কিছুটা শিথিল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। তারা তোমাদের কাছে যদি যিম্মী হিসেবে কিছু লোক চায় তাহলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই এবং তাদেরকে মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতে সোপর্দ করে আপোষ রফা করে নিতে পারে। কাজেই তাদের সাথে সতকর্তার সাথে কাজ করা উচিত। এর ফলে সম্মিলিত জোটের লোকেরা বনী কুরাইযার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে। তারা কুরাইযার নেতৃবৃন্দের কাছে বার্তা পাঠায় যে, দীর্ঘ অবরোধে আমাদের জন্য বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। এখন আমরা চাই একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ। আগামীকাল তোমরা ওদিক থেকে আক্রমণ করো, আমরা একই সংগে এদিক থেকে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালাবো। বনী কোরাইযা জবাবে বলে পাঠায়, আপনারা যতক্ষণ যিম্মী স্বরূপ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমাদের হাওয়ালা করে না দেন ততক্ষণ আমরা যুদ্ধের বিপদের সম্মুখীন হতে পারি না। এ জবাব শুনে সম্মিলিত জোটের নেতারা না’ঈমের কথা সঠিক ছিল বলে বিশ্বাস করে। তারা যিম্মী দিতে অস্বীকার করে। ফলে বনী কুরাইযা বিশ্বাস করে না’ঈম আমাদের সঠিক পরামর্শ দিয়েছিল। এভাবে এ যুদ্ধ কৌশল বড়ই সফল প্রমাণিত হয়। এর ফলে শত্রু শিবিরে ফাটল সৃষ্টি হয়। 

*এ সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেনالحرب خدعة  অর্থাৎ যুদ্ধে প্রতারণা করা বৈধ। 

 ।এখন অবরোধ কাল ২৫ দিন থেকেও দীর্ঘ হতে চলছিল। শীতের মওসুম চলছিল। এত বড় সেনাদলের জন্য পানি, আহার্যদ্রব্য ও পশুখাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে চলছিল, অন্যদিকে বিভেদ সৃষ্টি হওয়ার কারণে অবরোধকারীদের উৎসাহেও ভাটা পড়েছিল। এ অবস্থায় এক রাতে হঠাৎ ভয়াবহ ধূলিঝড় শুরু হয়। এ ঝড়ের মধ্যে ছিল শৈত, বজ্রপাত ও বিজলী চমক এবং অন্ধকার ছিল এত গভীর যে নিজের হাত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল না। প্রবল ঝড়ে শত্রুদের তাঁবুগুলো তছনছ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ভীষণ হৈ-হাংগামা সৃষ্টি হয়। আল্লাহর কুদরাতের এ জবরদস্ত আঘাত তারা সহ্য করতে পারেনি। রাতের অন্ধকারেই প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহের পথ ধরে। সকালে মুসলমানরা জেগে ওঠে ময়দানে একজন শত্রুকেও দেখতে পায়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ময়দান শত্রুশূন্য দেখে সংগে সংগেই বলেন: 

 । لن تغزوكم قريش بعد عامكم هذا ولكنكم تغزونهم

 । “এরপর কুরাইশরা আর কখনো তোমাদের ওপর আক্রমণ চালাবে না, এখন তোমরা তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে।” এটি ছিল অবস্থার একেবারে সঠিক বিশ্লেষণ। কেবল কুরাইশ নয়, সমস্ত শত্রু গোত্রগুলো একত্র হয়ে সম্মিলিতভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে নিজেদের শেষ অস্ত্র হেনেছিল। এতে হেরে যাওয়ার পরে এখন আর তাদের মদীনার ওপর আক্রমণ করার সাধ্য ছিল না। এখন আক্রমণাত্মক শক্তি (Offensive) শত্রুদের হাত থেকে মুসলমানদের হাতে স্থানান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। ............

 ...........তাবুক অভিযান : মক্কা বিজয়ের আগেই রোম সাম্রাজ্যের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গিয়েছিল..............

 


৪০। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : ইসরাঈলী নেতৃবৃন্দ যে ইয়াহুদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল

৪০। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : ইসরাঈলী নেতৃবৃন্দ যে ইয়াহুদী রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিল


 তাফহীমুল কুরআন থেকে 


(৩৩-সুরা আহযাব এর ৭৭ নং টিকার পরিশিষ্টের শেষাংশ) 

 হযরত ঈসা আ: এর দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপাটিও অনুরূপ। তাঁর নিছক আগমনেই খতমে নবুওয়াতের দুয়ার ভেঙ্গে যাবেনা। তবে তিনি এসে যদি নবীর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর প্রাক্তন নবুওয়াতের মযার্দাও অস্বীকার করে বসে, তাহলে এক্ষত্রে আল্লাহর নবুওয়াত বিধি ভঙ্গ হয়। হাদীসে এ দুটি পথই পরিপূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাদীসে একদিকে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: এর পর আর কোন নবী নেই এবং অন্যদিকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ঈসা আ: পুনর্বার আগমন করবেন। এ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, তাঁর এ দ্বিতীয় আগমন নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার উদ্দেশ্যে হবে না।  

অনুরূপভাবে তাঁর আগমনে মুসলমানদের মধ্যে কুফর ও ঈমানের কোনো নতুন প্রশ্ন দেখে দেবে না। আজও কোনো ব্যক্তি তাঁর পূর্বের নবুওয়াতের উপর ঈমান না আনলে কাফের হয়ে যাবে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: নিজেও তাঁর ঐ নবুওয়াতের প্রতি ঈমান রাখতেন। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: এর সমগ্র উম্মতও শুরু থেকেই তাঁর ওপর ঈমান রাখে। হযরত ঈসা আ: এর পুনর্বার আগমনের সময়ও এই একই অবস্থা অপরিবর্তিত তাকবে। মুসলমানারা কোনো নতুন নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনবে না, বরং আজকের ন্যায় সেদিনও তারা ঈসা ইবনে মারয়াম আ: এর পূর্বের নবুওয়াতের যপরই ঈমান রাখবে। এ অবস্থাটি বর্তমানে যেমন খতমে নবুওয়াত বিরোধী নয়, তেমনি সেদিনও বিরোধী হবে না। 

সর্বশেষ যে কথাটি এ হাদীসগুলো এবং অন্যান্য বহুবিধ হাদীস থেকে জনা যায় তা হচ্ছে, হযরত ঈসা আ: কে যে দাজ্জালের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নির্মুল করার জন্য পাঠনো হবে সে হবে ইহুদী বংশোদ্ভুত।  সে নিজেকে ”মসীহ” রূপে পেশ করবে। ইহুদীদের ইতিহাস ও তাদের ধর্মী চিন্তা-বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান নেই এমন কোনো ব্যক্তি বিষয়টির তাৎপর‌্য অনুধাবন করতে সংক্ষম হবে না। হযরত সুলায়মান আ: এর মৃত্যুর পর যখন বনী ইসরাঈল ক্রমাগত অবক্ষয় ও পতনের শিকার হতে থাকলো এমন কি অবশেষে ব্যাবিলন ও আসিরিয়া অধিপতিরা তাদেরকে পরধীন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করলো এবং দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত করে দিলো, তখন বনী ইসরাঈরে নবীগণ তাদেকে সুসংবাদ দিতে থাকলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন “মসীহ” এসে তাদেরকে এ চরম লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেবেন। এসব ভবিস্যদ্বানীর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা একজন সমীহের আগমনের প্রতীক্ষারত ছিল্ তিনি হবেন বাদশাহ। তিনি যুদ্ধ করে দেশ জয় করবেন। বনী ইসরাঈলকে বিভিন্ন দেশ তেকে এনে ফিলিস্তীনে একত্র করবেন এবং তাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কায়েম করবেন। কিন্তু তাদের এসব আশা আকাংখাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যখন ঈসা ইবনে মারায়ম আ: আল্লাহর পক্ষ থেকে “মসীহ” হয়ে আসলেন এবং কোন সেনাবাহিনী ছাড়াই আসলেন, তখন ইহদীরা তাঁকে “মসীহ” বলে মেনে নিতে অস্বীকার করলো। তারা তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদী দুনিয়া সে প্রতিশ্রুত মসীহর প্রতীক্ষা (Promised Messiah) করছে,  যার আগমনের সুসংবাদ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। তাদের সাহিত্য সে কাঙ্ক্ষিত যুগের সুখ-স্বপ্ন কল্পকাহিনীতে পরিপূর্ণ। তালমুদ ও রিব্বীদের সাহিত্য গ্রন্থ সমূহে এর যে নকশা তৈরি করা হয়েছে তার কল্পিত স্বাদ আহরণ করে শত শত বছর থেকে ইহুদী জাতি জীবন ধারণ করছে। তারা বুক ভরা আশা নিয়ে বসে আছে যে, এ প্রতিশ্রুত মসীহ হবেন একজন শক্তিশারী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত সমগ্র এলাকা ( যে এলাকাটিতক ইহুদীরা নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বলে মনে করে) আবার ইহুদীদের দখলে আনবেন এবং সারা দুনিয়া থেকে ইহুদীদেরকে এনে এখানে একত্র করবেন। 

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে রাসুলুল্লাহ সা: এর ভবিষ্যদ্বানীর আলোকে ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মহানবী সা: এর কথামতো ইহুদীদের প্রতিশ্রুত “মসীহ”র ভূমিকা পালনকারী প্রধানতম দাজ্জালের আগমনের জন্য মঞ্চ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে গেছে। ফিলিস্তীনের বৃহত্তর এলাকা থেকে মুসলমানদেরকে বেদখল করা হয়েছে।  সেখানে ইসরাঈল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীরা দলে দলে এসে এখানে বাসস্থান গড়ে তুলছে। আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রান্স তাকে একটি বিরাট সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছে।  ইহুদী পুঁজিপতিদের সহায়তায় ইহুদী বৈজ্ঞানিক ও শিল্পপতিগণ তাকে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের মুসলিম দেশগুলোর জন্য তাদের এ শক্তি এক মহাবিপদে পরিণত হয়েছে। এ রাষ্ট্রের শাসকবর্গ তাদের এ “উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দেশ” দখল করার আকাংখাটি মোটেই ঢেকে ছেপে রাখেনি। দীর্ঘকাল থেকে ভবিষ্যত ইহুদী রাষ্ট্রের যে নীলনকশা তারা প্রকাশ করে আসছে পরের পাতায় তার একটি প্রতিকৃতি  দেয়া হলো। 

উক্ত নকশায় দেখা যাবে, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের সমগ্র এলাকা এবং প্রায় সমগ্র ইরাক ছাড়াও তুরস্কের ইস্কান্দারুন, মিসরের সিনাই ও ব-দ্বীপ এলাকা এবং মদীনা মুনাওয়ারাসহ আরবের অন্তরগত হিজায ও নজদের উচ্চভূমি পর্যন্ত তারা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আগামীতে কোনো একটি বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে তারা ঐসব এলাকা গখল করার চেষ্টা করবে এবং ঐ সময়ই কথিত প্রধানতম দাজ্জাল তাদের প্রতিশ্রুত মসীহরূপে আগমন করবে। রাসুলুল্লাহ সা: কেবল তার আগমন সংবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং এই সাথে একথাও বলেছেন যে,  সে সময় মুসলমানদের ওপর বিপদের পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে এবং এক একটি দিন তাদের নিকট এক একটি বছর মনে হবে। এজন্য তিনি নিজে মসীহ দাজ্জালের সন্ত্রাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং মুসলমানদেরকেও আশ্রয় চাইতে বলেছেন। 

এ মসীহ দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ কোনো ‘মসীলে মসীহ’কে পাঠাবেন না, বরং আসল মসীহকে পাঠাবেন। দুই হাজার বছর আগে ইহুদীরা এই আসল মসীহকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলো এবং নিজেদের বিশ্বাস ও জানামতে তারা তাঁকে শূলবিদ্ধ করে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এ্ই আসল মসীহ ভারত, আফ্রিকা বা আমেরিকায় আত্মপ্রকাশ করবেন না, বরং তিনি আবির্ভূত হবেন দামেশকে। কারণ তখন সেখানেই যুদ্ধ চলতে থাকবে। মেহেরবানী করে পরের পাতার নকশাটিও দেখুন । এতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাঈলের সীমান্ত থেকে দামেশক মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মাইলের মধ্যে অবস্থিত। ইতি পূর্বে আমি যে হাদীস উল্লেখ করে এসেছি, তার বিষয়বস্তু মনে থাকলে সহজেই একথা বোধগম্য হবে যে, মসীহ দাজ্জাল ৭০ হাজার ইহূদী সেনাদল নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করবে এবং দামেশকের সামনে উপস্থিত হবে। ঠিক সেই মুহুর্তে দামেশকের পূর্ব অংশের অবস্থিত মসজিদের একটি সাদা মিনারের নিকট সুবহে সাদেকের পর হযরত ঈসা আ: নাযিল হবেন এবং ফজর নামায শেষে মুসলমানদেরকে নিয়ে দাজ্জালের মুকাবিলায় রওয়ানা হবেন। তাঁর প্রচন্ড আক্রমণে দাজ্জাল পশ্চাদপরসরণ করে উফায়েকের পার্বত্য পথ দিয়ে (২১ নম্বর হাদীস দেখুন) ইসরাঈলের দিকে ফিরে যাবে। কিন্তু তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করতেই থাকবেন। অবশেষে লিড্ডা বিমান বন্দরে সে তাঁর হাতে নিহত হবে ( ১০, ১৪, ১৫ নং হাদীস )। এরপর ইহুদীদেরকে সব জায়গা থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হবে এবং ইহুদী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে ( ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর হাদীস) এবং মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে সমস্ত মিল্লাত একীভূত হয়ে যাবে (৬ ও ১৫ নং হাদীস)। 

কোনো প্রকার জড়তা ও অষ্পষ্টতা ছাড়াই এ দ্ব্যর্থহীন সত্যটিই হাদীস থেকে ফুটে উঠেছে। এই সুদীর্ঘ আলোচনার পর এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, “প্রতিশ্রুত মসীহ”র নামে আমাদের দেশে যে ব্যবসা চালানো হচ্ছে তা একটি প্রকান্ড জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

এ জালিয়াতির সবচাইতে হাস্যকর দিকটি এবার আমি তুলে ধরতে চাই। যে ব্যক্তি নিজেকে এ ভবিষ্যদ্বানীতে উল্লিখিত মসীহ বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে ঈসা ইবনে মারয়াম হবার জন্য নিম্নোক্ত বক্তব্যটি পেশ করেছেন: 

”তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) বারাহীনে আহমদীয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মারয়াম। অত:পর যেমন বারাহীনে আহমদীয়য় প্রকাশিত হয়েছে, দুই বছর পর্যন্ত আমি মারয়ামের গুণাবলী সহকারে লালিত হই..... অত:পর....মারয়ামের ন্যায় ঈসার রূহ আমার মধ্যে ফুঁৎকারে প্রবেশ করানো এবং রূপকার্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে, যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবে না, সেই ইলহামের মাধ্যমে যা বারাহীনে আহমদীয়ার চতুর্থ অংশে উল্লেখিত হয়েছে, আমাকে মারয়াম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়েছে। কাজেই এভাবে আমি হলাম ঈসা ইবনে মারয়াম।” (কিশতীয়ে নূহ ৮৭, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা)। 

অর্থাৎ প্রথমে তিনি মারয়াম হন, অত:পর নিজে নিজেই গর্ভবতী হন তারপর নিজের পেট থেকে নিজেই ঈসা ইবনে মারয়ামরূপে জন্ম নেন। এরপরেও সমস্যা দেখো দিল যে, হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারয়াম দামেশকে আত্মপ্রকাশ করবেন। দামেশক কয়েক হাজার বছর থেকে সিরিয়ার একটি প্রসিদ্ধ ও সর্বজন পরিচিত শহর। পৃথিবীর মানচিত্রে আজও এ শহরটি এ নামেই চিহ্নিত । কাজেই অন্য একটি রসাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে  এ সমস্যাটির সমাধান দেয়া হয়েছে। 

”উল্লেখ্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে দামেশক শব্দের অর্থআমার নিকট এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে,  এ স্থানে এমন একটি শহরের নাম দামেশক রাখা হয়েছে যেখানে এজিদের স্বভাবসম্পন্ন ও অপবিত্র এজিদের অভ্যাস ও চিন্তার অনুসারী লোকদের বাস। ....... এই কাদীয়ান শহরটি এখানকার অধিকাংশ এজিদী স্বভাব সম্পন্ন লোকের অধিবাসের কারণে দামেশকের সাতে সামঞ্জস্য ও সম্পর্ক রাখে।(এযালায়ে আওহাম, টিকা ৬৩ থেকে ৭৩ পর্যন্ত।) 

আর একটি জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। হাদীসের বক্তব্য অনুসারে ইবনে মারয়াম একটি সাদা মিনারের নিকট নেমে আসবেন। এ সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলা হয়েছে অর্থাৎ মসীহ সাহেব নিজেই এসে নিজের মিনারটি তৈরী করে নিয়েছেন। এখন বলুন, কে তাঁকে বুঝাতে যাবে যে, হাদীসের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায়, ইবনে মারয়ামের নেমে আসার পূর্বেই মিনারটি সেখানে মওজুদ  থাকবে। অথচ এখনা দেখো যাচ্ছে, প্রতিশ্রুত মসীহ সাহেবের আগমেনর পর মিনারটি তৈরি হচ্ছে। 

সর্বশেষ ও সবচেয়ে জটিল সমস্যটি এখনো রয়ে গেছে। অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনামতে ঈসা ইবনে মারয়াম আ.লুদ্দ (লিড্ডা)-এর প্রবেশদ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ সমস্যার সমাধান কনতে গিয়ে প্রথমে আবোলতাবোল অনেক কথাই বলা হয়েছে। কখনো স্বীকার করা হয়েছে যে, বায়তুল মুকাদাদাসের একটি গ্রামের নাম লিড্ডা ( এযালায়ে আওহাম, আঞ্জুমানে আহমদীয়া, লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত, ক্ষুদ্রাকার, ২২০ পৃষ্ঠা)। আবার কখনো বলা হয়েছে, লিড্ডা এমন সব লোককে বলা হয় যারা অনর্থক ঝগড়া করে। ....... যখন দাজ্জালের অনর্থক ঝগড়া চরমে পৌছে যাবে তখন প্রতিশ্রুত মসীহর আবির্ভাব হবে এবং তার সমস্ত ঝগড়া শষে করে দেবে” (এযালায়ে আওহাম, ৭৭০ পৃষ্ঠা)। কিন্তু এতোকিছু করেও যখন সমস্যার সমাধান হলো না তখন পরিস্কার বলে দেয়া হলো যে, লিড্ডা ( আরবীতে লুদ্দ) অর্থ হচ্ছে পাঞ্জাবের লুদিয়ানা শহর। আর লুদিয়ানার প্রবেশ দ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে, দুষ্টদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মীর্জা গোলাম আহমদ সাহেবের হাতে এখানেই সর্বপ্রথম বাইয়াত হয় (আলহুদা, ৯১ পৃষ্ঠা)। 

যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি এসব বক্তব্য-বর্ণনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করলে এ সিদ্ধান্তে পৌছতে বাধ্য হবেন যে, এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে ডাহা মিথ্যুক ও বহুরূপীর অভিনয় করা হয়েছে। 



৩৯। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : প্রকৃত মসীহ এর অবতীর্ণ হওয়ার স্থান

৩৯। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : প্রকৃত মসীহ এর অবতীর্ণ হওয়ার স্থান

 তাফহীমুল কুরআন থেকে : 


(৩৩-সুরা আহযাব এর ৭৭ নং টিকার পরিশিষ্টের শেষাংশ) 

 হযরত ঈসা আ: এর দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপাটিও অনুরূপ। তাঁর নিছক আগমনেই খতমে নবুওয়াতের দুয়ার ভেঙ্গে যাবেনা। তবে তিনি এসে যদি নবীর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর প্রাক্তন নবুওয়াতের মযার্দাও অস্বীকার করে বসে, তাহলে এক্ষত্রে আল্লাহর নবুওয়াত বিধি ভঙ্গ হয়। হাদীসে এ দুটি পথই পরিপূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাদীসে একদিকে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: এর পর আর কোন নবী নেই এবং অন্যদিকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, ঈসা আ: পুনর্বার আগমন করবেন। এ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, তাঁর এ দ্বিতীয় আগমন নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করার উদ্দেশ্যে হবে না।  

অনুরূপভাবে তাঁর আগমনে মুসলমানদের মধ্যে কুফর ও ঈমানের কোনো নতুন প্রশ্ন দেখে দেবে না। আজও কোনো ব্যক্তি তাঁর পূর্বের নবুওয়াতের উপর ঈমান না আনলে কাফের হয়ে যাবে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: নিজেও তাঁর ঐ নবুওয়াতের প্রতি ঈমান রাখতেন। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা: এর সমগ্র উম্মতও শুরু থেকেই তাঁর ওপর ঈমান রাখে। হযরত ঈসা আ: এর পুনর্বার আগমনের সময়ও এই একই অবস্থা অপরিবর্তিত তাকবে। মুসলমানারা কোনো নতুন নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনবে না, বরং আজকের ন্যায় সেদিনও তারা ঈসা ইবনে মারয়াম আ: এর পূর্বের নবুওয়াতের যপরই ঈমান রাখবে। এ অবস্থাটি বর্তমানে যেমন খতমে নবুওয়াত বিরোধী নয়, তেমনি সেদিনও বিরোধী হবে না। 

সর্বশেষ যে কথাটি এ হাদীসগুলো এবং অন্যান্য বহুবিধ হাদীস থেকে জনা যায় তা হচ্ছে, হযরত ঈসা আ: কে যে দাজ্জালের বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নির্মুল করার জন্য পাঠনো হবে সে হবে ইহুদী বংশোদ্ভুত।  সে নিজেকে ”মসীহ” রূপে পেশ করবে। ইহুদীদের ইতিহাস ও তাদের ধর্মী চিন্তা-বিশ্বাস সম্পর্কে জ্ঞান নেই এমন কোনো ব্যক্তি বিষয়টির তাৎপর‌্য অনুধাবন করতে সংক্ষম হবে না। হযরত সুলায়মান আ: এর মৃত্যুর পর যখন বনী ইসরাঈল ক্রমাগত অবক্ষয় ও পতনের শিকার হতে থাকলো এমন কি অবশেষে ব্যাবিলন ও আসিরিয়া অধিপতিরা তাদেরকে পরধীন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করলো এবং দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত করে দিলো, তখন বনী ইসরাঈরে নবীগণ তাদেকে সুসংবাদ দিতে থাকলেন যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন “মসীহ” এসে তাদেরকে এ চরম লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি দেবেন। এসব ভবিস্যদ্বানীর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা একজন সমীহের আগমনের প্রতীক্ষারত ছিল্ তিনি হবেন বাদশাহ। তিনি যুদ্ধ করে দেশ জয় করবেন। বনী ইসরাঈলকে বিভিন্ন দেশ তেকে এনে ফিলিস্তীনে একত্র করবেন এবং তাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কায়েম করবেন। কিন্তু তাদের এসব আশা আকাংখাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যখন ঈসা ইবনে মারায়ম আ: আল্লাহর পক্ষ থেকে “মসীহ” হয়ে আসলেন এবং কোন সেনাবাহিনী ছাড়াই আসলেন, তখন ইহদীরা তাঁকে “মসীহ” বলে মেনে নিতে অস্বীকার করলো। তারা তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদী দুনিয়া সে প্রতিশ্রুত মসীহর প্রতীক্ষা (Promised Messiah) করছে,  যার আগমনের সুসংবাদ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। তাদের সাহিত্য সে কাঙ্ক্ষিত যুগের সুখ-স্বপ্ন কল্পকাহিনীতে পরিপূর্ণ। তালমুদ ও রিব্বীদের সাহিত্য গ্রন্থ সমূহে এর যে নকশা তৈরি করা হয়েছে তার কল্পিত স্বাদ আহরণ করে শত শত বছর থেকে ইহুদী জাতি জীবন ধারণ করছে। তারা বুক ভরা আশা নিয়ে বসে আছে যে, এ প্রতিশ্রুত মসীহ হবেন একজন শক্তিশারী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি নীল নদ থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত সমগ্র এলাকা ( যে এলাকাটিতক ইহুদীরা নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত বলে মনে করে) আবার ইহুদীদের দখলে আনবেন এবং সারা দুনিয়া থেকে ইহুদীদেরকে এনে এখানে একত্র করবেন। 

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে রাসুলুল্লাহ সা: এর ভবিষ্যদ্বানীর আলোকে ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মহানবী সা: এর কথামতো ইহুদীদের প্রতিশ্রুত “মসীহ”র ভূমিকা পালনকারী প্রধানতম দাজ্জালের আগমনের জন্য মঞ্চ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে গেছে। ফিলিস্তীনের বৃহত্তর এলাকা থেকে মুসলমানদেরকে বেদখল করা হয়েছে।  সেখানে ইসরাঈল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীরা দলে দলে এসে এখানে বাসস্থান গড়ে তুলছে। আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রান্স তাকে একটি বিরাট সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছে।  ইহুদী পুঁজিপতিদের সহায়তায় ইহুদী বৈজ্ঞানিক ও শিল্পপতিগণ তাকে দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চারপাশের মুসলিম দেশগুলোর জন্য তাদের এ শক্তি এক মহাবিপদে পরিণত হয়েছে। এ রাষ্ট্রের শাসকবর্গ তাদের এ “উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দেশ” দখল করার আকাংখাটি মোটেই ঢেকে ছেপে রাখেনি। দীর্ঘকাল থেকে ভবিষ্যত ইহুদী রাষ্ট্রের যে নীলনকশা তারা প্রকাশ করে আসছে পরের পাতায় তার একটি প্রতিকৃতি  দেয়া হলো। 

উক্ত নকশায় দেখা যাবে, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের সমগ্র এলাকা এবং প্রায় সমগ্র ইরাক ছাড়াও তুরস্কের ইস্কান্দারুন, মিসরের সিনাই ও ব-দ্বীপ এলাকা এবং মদীনা মুনাওয়ারাসহ আরবের অন্তরগত হিজায ও নজদের উচ্চভূমি পর্যন্ত তারা নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে চায়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আগামীতে কোনো একটি বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে তারা ঐসব এলাকা গখল করার চেষ্টা করবে এবং ঐ সময়ই কথিত প্রধানতম দাজ্জাল তাদের প্রতিশ্রুত মসীহরূপে আগমন করবে। রাসুলুল্লাহ সা: কেবল তার আগমন সংবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বরং এই সাথে একথাও বলেছেন যে,  সে সময় মুসলমানদের ওপর বিপদের পাহাড় ভেঙ্গে পড়বে এবং এক একটি দিন তাদের নিকট এক একটি বছর মনে হবে। এজন্য তিনি নিজে মসীহ দাজ্জালের সন্ত্রাস থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং মুসলমানদেরকেও আশ্রয় চাইতে বলেছেন। 

এ মসীহ দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ কোনো ‘মসীলে মসীহ’কে পাঠাবেন না, বরং আসল মসীহকে পাঠাবেন। দুই হাজার বছর আগে ইহুদীরা এই আসল মসীহকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলো এবং নিজেদের বিশ্বাস ও জানামতে তারা তাঁকে শূলবিদ্ধ করে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এ্ই আসল মসীহ ভারত, আফ্রিকা বা আমেরিকায় আত্মপ্রকাশ করবেন না, বরং তিনি আবির্ভূত হবেন দামেশকে। কারণ তখন সেখানেই যুদ্ধ চলতে থাকবে। মেহেরবানী করে পরের পাতার নকশাটিও দেখুন । এতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাঈলের সীমান্ত থেকে দামেশক মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মাইলের মধ্যে অবস্থিত। ইতি পূর্বে আমি যে হাদীস উল্লেখ করে এসেছি, তার বিষয়বস্তু মনে থাকলে সহজেই একথা বোধগম্য হবে যে, মসীহ দাজ্জাল ৭০ হাজার ইহূদী সেনাদল নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করবে এবং দামেশকের সামনে উপস্থিত হবে। ঠিক সেই মুহুর্তে দামেশকের পূর্ব অংশের অবস্থিত মসজিদের একটি সাদা মিনারের নিকট সুবহে সাদেকের পর হযরত ঈসা আ: নাযিল হবেন এবং ফজর নামায শেষে মুসলমানদেরকে নিয়ে দাজ্জালের মুকাবিলায় রওয়ানা হবেন। তাঁর প্রচন্ড আক্রমণে দাজ্জাল পশ্চাদপরসরণ করে উফায়েকের পার্বত্য পথ দিয়ে (২১ নম্বর হাদীস দেখুন) ইসরাঈলের দিকে ফিরে যাবে। কিন্তু তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করতেই থাকবেন। অবশেষে লিড্ডা বিমান বন্দরে সে তাঁর হাতে নিহত হবে ( ১০, ১৪, ১৫ নং হাদীস )। এরপর ইহুদীদেরকে সব জায়গা থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হবে এবং ইহুদী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে ( ১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর হাদীস) এবং মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে সমস্ত মিল্লাত একীভূত হয়ে যাবে (৬ ও ১৫ নং হাদীস)। 

কোনো প্রকার জড়তা ও অষ্পষ্টতা ছাড়াই এ দ্ব্যর্থহীন সত্যটিই হাদীস থেকে ফুটে উঠেছে। এই সুদীর্ঘ আলোচনার পর এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকে না যে, “প্রতিশ্রুত মসীহ”র নামে আমাদের দেশে যে ব্যবসা চালানো হচ্ছে তা একটি প্রকান্ড জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়। 

এ জালিয়াতির সবচাইতে হাস্যকর দিকটি এবার আমি তুলে ধরতে চাই। যে ব্যক্তি নিজেকে এ ভবিষ্যদ্বানীতে উল্লিখিত মসীহ বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে ঈসা ইবনে মারয়াম হবার জন্য নিম্নোক্ত বক্তব্যটি পেশ করেছেন: 

”তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) বারাহীনে আহমদীয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মারয়াম। অত:পর যেমন বারাহীনে আহমদীয়য় প্রকাশিত হয়েছে, দুই বছর পর্যন্ত আমি মারয়ামের গুণাবলী সহকারে লালিত হই..... অত:পর....মারয়ামের ন্যায় ঈসার রূহ আমার মধ্যে ফুঁৎকারে প্রবেশ করানো এবং রূপকার্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে, যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবে না, সেই ইলহামের মাধ্যমে যা বারাহীনে আহমদীয়ার চতুর্থ অংশে উল্লেখিত হয়েছে, আমাকে মারয়াম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়েছে। কাজেই এভাবে আমি হলাম ঈসা ইবনে মারয়াম।” (কিশতীয়ে নূহ ৮৭, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা)। 

অর্থাৎ প্রথমে তিনি মারয়াম হন, অত:পর নিজে নিজেই গর্ভবতী হন তারপর নিজের পেট থেকে নিজেই ঈসা ইবনে মারয়ামরূপে জন্ম নেন। এরপরেও সমস্যা দেখো দিল যে, হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারয়াম দামেশকে আত্মপ্রকাশ করবেন। দামেশক কয়েক হাজার বছর থেকে সিরিয়ার একটি প্রসিদ্ধ ও সর্বজন পরিচিত শহর। পৃথিবীর মানচিত্রে আজও এ শহরটি এ নামেই চিহ্নিত । কাজেই অন্য একটি রসাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে  এ সমস্যাটির সমাধান দেয়া হয়েছে। 

”উল্লেখ্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে দামেশক শব্দের অর্থআমার নিকট এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে,  এ স্থানে এমন একটি শহরের নাম দামেশক রাখা হয়েছে যেখানে এজিদের স্বভাবসম্পন্ন ও অপবিত্র এজিদের অভ্যাস ও চিন্তার অনুসারী লোকদের বাস। ....... এই কাদীয়ান শহরটি এখানকার অধিকাংশ এজিদী স্বভাব সম্পন্ন লোকের অধিবাসের কারণে দামেশকের সাতে সামঞ্জস্য ও সম্পর্ক রাখে।(এযালায়ে আওহাম, টিকা ৬৩ থেকে ৭৩ পর্যন্ত।) 

আর একটি জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। হাদীসের বক্তব্য অনুসারে ইবনে মারয়াম একটি সাদা মিনারের নিকট নেমে আসবেন। এ সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলা হয়েছে অর্থাৎ মসীহ সাহেব নিজেই এসে নিজের মিনারটি তৈরী করে নিয়েছেন। এখন বলুন, কে তাঁকে বুঝাতে যাবে যে, হাদীসের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায়, ইবনে মারয়ামের নেমে আসার পূর্বেই মিনারটি সেখানে মওজুদ  থাকবে। অথচ এখনা দেখো যাচ্ছে, প্রতিশ্রুত মসীহ সাহেবের আগমেনর পর মিনারটি তৈরি হচ্ছে। 

সর্বশেষ ও সবচেয়ে জটিল সমস্যটি এখনো রয়ে গেছে। অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনামতে ঈসা ইবনে মারয়াম আ.লুদ্দ (লিড্ডা)-এর প্রবেশদ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ সমস্যার সমাধান কনতে গিয়ে প্রথমে আবোলতাবোল অনেক কথাই বলা হয়েছে। কখনো স্বীকার করা হয়েছে যে, বায়তুল মুকাদাদাসের একটি গ্রামের নাম লিড্ডা ( এযালায়ে আওহাম, আঞ্জুমানে আহমদীয়া, লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত, ক্ষুদ্রাকার, ২২০ পৃষ্ঠা)। আবার কখনো বলা হয়েছে, লিড্ডা এমন সব লোককে বলা হয় যারা অনর্থক ঝগড়া করে। ....... যখন দাজ্জালের অনর্থক ঝগড়া চরমে পৌছে যাবে তখন প্রতিশ্রুত মসীহর আবির্ভাব হবে এবং তার সমস্ত ঝগড়া শষে করে দেবে” (এযালায়ে আওহাম, ৭৭০ পৃষ্ঠা)। কিন্তু এতোকিছু করেও যখন সমস্যার সমাধান হলো না তখন পরিস্কার বলে দেয়া হলো যে, লিড্ডা ( আরবীতে লুদ্দ) অর্থ হচ্ছে পাঞ্জাবের লুদিয়ানা শহর। আর লুদিয়ানার প্রবেশ দ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে, দুষ্টদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মীর্জা গোলাম আহমদ সাহেবের হাতে এখানেই সর্বপ্রথম বাইয়াত হয় (আলহুদা, ৯১ পৃষ্ঠা)। 

যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি এসব বক্তব্য-বর্ণনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করলে এ সিদ্ধান্তে পৌছতে বাধ্য হবেন যে, এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে ডাহা মিথ্যুক ও বহুরূপীর অভিনয় করা হয়েছে। 



৩৮। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : রাসুলুল্লাহ সা: এর সময়ে আরবের বিভিন্ন গোত্রের এলাকা

৩৮। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : রাসুলুল্লাহ সা: এর সময়ে আরবের বিভিন্ন গোত্রের এলাকা

 


( বিস্তারিত :  ৫৯ নং সুরা হাশর  এর  ভূমিকা দ্রষ্টব্য ) : 


   ইহুদি এবং মুসলমানরা পরস্পরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মেনে চলবে এই চুক্তি থেকে তা স্পষ্টভাবে জানা যায়। চুক্তির কতকগুলো বিষয় নিম্নরূপ:


   ( إن على اليهود نفقتهم وعلى المسلمين نفقتهم - وإن بينهم النصر على من حارب أهل هذه الصحيفة - وإن بينهم النصح والنصيحة والبر دون الإثم - وإنه لم يأثم امرؤ بحليفه , وإن النصر للمظلوم , وإن اليهود ينفقون مع المؤمنين ما داموا محاربين , وإن يثرب حرام جوفها لأهل هذه الصحيفة............ وإنه ما كان بين أهل هذه الصحيفة من حدث او اشتجار يخاف فساده فإن مرده إلى الله عز وجل وإلى محمد رسول الله........... وإنه لا تجار قريش ولا من نصرها , وإن بينهم النصر على من دهم يثرب - على كل أناس حصتهم في جانبهم الذي قبلهم – (ابن هشام – ج2 – ص147-150)



ইয়াহুদীরা নিজেদের ব্যয় বহন করবে এবং মুসলমানরাও নিজেদের ব্যয় বহন করবে। 

এই চুক্তির পক্ষসমূহের বিরুদ্ধে কেউ যুদ্ধ করলে তারা পরস্পরকে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে। 

নিষ্ঠা ও ঐকান্তিকতার সাথে তারা একে অপরের কল্যাণ কামনা করবে। তাদের পরস্পরের সম্পর্ক হবে কল্যাণ করা ও অধিকার পৌঁছিয়ে দেয়ার সম্পর্কে গোনাহ ও সীমালংঘনের সম্পর্ক নয়। 

কেউ তার মিত্রশক্তির সাথে কোন প্রকার খারাপ আচরণ করবে না। 

মজলুম ও নির্যাতিতদের সাহায্য করা হবে। 

যতদিন যুদ্ধ চলবে ইহুদীরা ততদিন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে মিলিতভাবে তার ব্যয় বহন করবে। 

এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী পক্ষাগুলোর জন্য ইয়াসরিবের অভ্যন্তরে কোন প্রকার ফিতনা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। 

এই চুক্তির শরীক পক্ষগুলোর মধ্যে যদি এমন কোন ঝগড়া-বিবাদ ও মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় যার কারণে বিপর্যয় সৃষ্টির আশংকা দেখা দিতে পারে তাহলে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বিধান অনুসারে তার মীমাংসা করবেন…………… 

কুরাইশ এবং তাদের মিত্র ও সাহায্যকারীদের আশ্রয় দেয়া হবে না। 

কেউ ইয়াসরিবের ওপর আক্রমণ করলে চুক্তির শরীকগণ তার বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করবে। প্রত্যেকপক্ষ নিজ নিজ এলাকার প্রতিরক্ষার দায়-দায়িত্ব বহন করবে। (ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৪৭ থেকে ১৫০ পর্যন্ত) 

এটা ছিল একটা সুস্পষ্ট ও অলংঘনীয় চূড়ান্ত চুক্তি। ইহুদীরা নিজেরাই এর শর্তাবলী গ্রহণ করেছিল। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক আচরণ করতে শুরু করল। তাদের এই শত্রুতা ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠতে লাগল। ................. এরপর উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে তাদের সাহস আরো বেড়ে গেল। এমনকি রসূলুল্লাহ (সা.) হত্যা করার জন্য বনী নাযীর গোত্র একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে বসলো। কিন্তু ঠিক বাস্তাবায়নের মুখে তা বানচাল হয়ে গেলো। ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ হলো, “বিরে মা’য়ুনা’র মর্মান্তিক ঘটনার (৪র্থ হিজরীর সফর মাস) পর আমর ইবনে উমাইয়া দামরী প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভুলক্রমে বনী আমের গোত্রের দু’জন লোককে হত্যা করে ফেলে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ছিলো চুক্তিবদ্ধ গোত্রের লোক। ‘আমর তাদেরকে শত্রু গোত্রের লোক মনে করেছিল। এ ভুলের কারণে মুসলমানদের জন্য তাদের রক্তপণ আদায় করা অবশ্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আর বনী আমের গোত্রের সাথে চুক্তিতে যেহেতু বনী নযীর গোত্রও শরীক ছিল, তাই রক্তপণ আদায়ের ব্যাপারে তাদেরকে শরীক হওয়ার আহবান জানাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কয়েকজন সাহাবীকে সাথে নিয়ে নিজে তাদের এলাকায় গেলেন। সেখানে তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কিছু খোশগল্পে ব্যস্ত রেখে ষড়যন্ত্র আঁটলো যে, তিনি যে ঘরের দেয়ালের ছায়ায় বসেছিলেন এক ব্যক্তি তার ছাদ থেকে তাঁর ওপর একখানা ভারী পাথর গড়িয়ে দেবে। কিন্তু তারা এই ষড়যন্ত্র কার্যকরী করার আগেই আল্লাহ তা’আলা যথা সময়ে তাঁকে সাবধান করে দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে উঠে মদীনায় ফিরে গেলেন। 


এরপর তাদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ আচরণের কোন প্রশ্নই ওঠে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবিলম্বে তাদেরকে চরমপত্র দিলেন যে, তোমরা যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চেয়েছিলে তা আমি জানতে পেরেছি। অতএব দশ দিনের মধ্যে মদীনা ছেড়ে চলে যাও। এ সময়ের পরেও যদি তোমরা এখানে অবস্থান করো তাহলে তোমাদের জনপদে যাকে পাওয়া যাবে তাকেই হত্যা করা হবে। অন্যদিকে আবদুল্লাহ ইবনে উবাই তাদেরকে খবর পাঠালো যে, আমি দুই হাজার লোক দিয়ে তোমাদের সাহায্য করবো। তাছাড়া বনী কুরায়যা এবং বনী গাতফানরাও তোমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। তাই তোমরা রুখে দাঁড়াও নিজেদের জায়গা পরিত্যাগ করো না। এ মিথ্যা আশ্বাসের ওপর নির্ভর করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চরমপত্রের জবাবে তারা জানিয়ে দিল যে, আমরা এখান থেকে চলে যাবো না। আপনার কিছু করার থাকলে করে দেখতে পারেন। এতে ৪র্থ হিজরী সনের রবিউল আউয়াল মাসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের অবরোধ করলেন। অবরোধের মাত্র ক’দিন পরই (কোন কোন বর্ণনা অনুযায়ী মাত্র ছয় দিন এবং কোন কোন বর্ণনা অনুসারে পনর দিন) তারা এই শর্তে মদীনা ছেড়ে চলে যেতে রাজী হলো যে, অস্ত্রশস্ত্র ছাড়া অন্য সব জিনিস নিজেদের উটের পিঠে চাপিয়ে যতটা সম্ভব নিয়ে যাবে। এভাবে ইহুদীদের দ্বিতীয় এই পাপী গোত্র থেকে মদিনাকে মুক্ত করা হলো। তাদের মধ্য থেকে মাত্র দুজন লোক মুসলমান হয়ে মদীনায় থেকে গেল এবং অন্যরা সবাই সিরিয়া ও খায়বার এলাকার দিকে চলে গেল। 

এ ঘটনা সম্পর্কেই এ সূরাটিতে আলোচনা করা হয়েছে।


৩৭। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : হযরত মূসা আ: এ কূপে ছাগলকে পানি পান করান

৩৭। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : হযরত মূসা আ: এ কূপে ছাগলকে পানি পান করান

 


وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِن دُونِهِمُ امْرَأَتَيْنِ تَذُودَانِ ۖ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا ۖ قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّىٰ يُصْدِرَ الرِّعَاءُ ۖ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ

(২৮-ক্বাসাস:২৩.)  আর যখন সে মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছল,৩৩ সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু’টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে রাখছে। মূসা মেয়ে দু’টিকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের সমস্যা কি?” তারা বললো, “আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি।”৩৪


[[টিকা:৩৩) এ স্থানটি, যেখানে হযরত মূসা পৌঁছেছিলেন, এটি ছিল আরবীয় বর্ণনা অনুযায়ী আকাবা উপসাগরের পশ্চিম তীরে মানকা থেকে কয়েক মাইল উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে এ জায়গাটিকে আল বিদ্’আ বলা হয়। সেখানে একটি ছোট মতো শহর গড়ে উঠেছে। আমি ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাবুক থেকে আকাবায় যাওয়ার পথে এ জায়গাটি দেখেছি। স্থানীয় অধিবাসীরা আমাকে জানিয়েছে, বাপ-দাদাদের আমল থেকে আমরা শুনে আসছি মাদয়ান এখানেই অবস্থিত ছিল। ইউসিফুস থেকে নিয়ে বাটন পর্যন্ত প্রাচীন ও আধুনিক পরিব্রাজক ও ভূগোলবিদগণও সাধারণভাবে এ স্থানটিকেই মাদয়ান বলে চিহ্নিত করেছেন। এর সন্নিকটে সামান্য দূরে একটি স্থানকে বর্তমানে “মাগায়েরে শু’আইব” বা “মাগারাতে শু’আইব” বলা হয়। সেখানে সামূদী প্যাটার্নের কিছু ইমারত রয়েছে। আর এর প্রায় এক মাইল দু’মাইল দূরে কিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর মধ্যে আমরা দেখেছি দু’টি অন্ধকূপ। স্থানীয় লোকেরা আমাদের জানিয়েছে, নিশ্চিতভাবে আমরা কিছু বলতে পারি না তবে আমাদের এখানে একথাই প্রচলিত যে, এ দু’টি কূয়ার মধ্য থেকে একটি কূয়ায় মূসা তাঁর ছাগলের পানি পান করিয়েছেন। একথাটি আবুল ফিদা (মৃত্যু ৭৩২ হিঃ) তাকবীমুল বুলদানে এবং ইয়াকুত মু’জামুল বুলদানে আবু যায়েদ আনসারীর (মৃত্যু ২১৬ হিঃ) বরাত দিয়ে উদ্ধৃত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এ এলাকার অধিবাসীরা এ স্থানেই মূসার ঐ কূয়াটি চিহ্নিত করে থাকে। এ থেকে জানা যায়, এ বর্ণনাটি শত শত বছর থেকে সেখানকার লোকদের মুখে মুখে বংশানুক্রমে চলে আসছে এবং এরই ভিত্তিতে দৃঢ়তার সাথে বলা যেতে পারে, কুরআন মজীদে যে স্থানটির কথা বলা হয়েছে এটা সেই স্থান।]]


[[টিকা:৩৪) অর্থাৎ আমরা মেয়ে মানুষ। এ রাখালদের সাথে টক্কর দিয়ে ও সংঘর্ষ বাঁধিয়ে নিজেদের জানোয়ারগুলোকে আগে পানি পান করাবার সামর্থ্য আমাদের নেই। অন্যদিকে আমাদের পিতাও এত বেশী বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি নিজে আর কষ্টের কাজ করতে পারেন না। আমাদের পরিবারে আর দ্বিতীয় কোন পুরুষ নেই। তাই আমরা মেয়েরাই এ কাজ করতে বের হয়েছি। সব রাখালদের তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। মেয়ে দু’টি শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে এ বক্তব্য উপস্থাপন করে। এ থেকে একদিকে তাদের লজ্জাশীলতার প্রকাশ ঘটে। অর্থ্যাৎ একজন পর পুরুষের সাথে তারা বেশি কথাও বলতে চাচ্ছিল না। আবার এটাও পছন্দ করছিল না যে, এ ভিন দেশী অপরিচিত লোকটি তাদের ঘটনা সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা পোষণ করুক এবং মনে মনে ভাবুক যে, এরা কেমন লোক যাদের পুরুষরা ঘরে বসে রয়েছে আর ঘরের মেয়েদেরকে এ কাজ করার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।


এ মেয়েদের বাপের ব্যাপারে আমাদের এখানে এ কথা প্রচার হয়ে গেছে যে, তিনি ছিলেন হযরত শু’আইব আলাইহিস সালাম। কিন্তু কুরআন মজীদে ইশারা ইঙ্গিতে কোথাও এমন কথা বলা হয়নি যা থেকে বুঝা যেতে পারে তিনি শু’আইব আলাইহিস সালাম ছিলেন। অথচ শু’আইব আলাইহিস সালাম কুরআন মজীদে একটি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এ মেয়েদের পিতা যদি তিনিই হতেন তাহলে এখানে একথা সুস্পষ্ট না করে দেয়ার কোন কারণই ছিল না। নিঃসন্দেহে কোন কোন হাদীসে তাঁর নাম স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। কিন্তু আল্লামা ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীর উভয়ে এ ব্যাপারে একমত যে, এগুলোর কোনটিরও সনদ তথা বর্ণনাসূত্র নির্ভুল নয়। তাই ইবনে আব্বাস, ইবনে বসরী, আবু উবাইদাহ ও সাঈদ ইবনে জুবাইরের ন্যায় বড় বড় তফসীরকারক বনী ইসরাইলের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে তালমূদ ইত্যাদি গ্রন্থে এ মনীষীর যে নাম উল্লেখিত হয়েছে সেটিই বলেছেন। অন্যথায় বলা নিষ্প্রয়োজন, যদি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত শু’আইবের নাম স্পষ্ট করে বলা হতো তাহলে তাঁরা কখনো অন্য নাম উল্লেখ করতেন না।


বাইবেলের এক জায়গায় এ মনীষীর নাম বলা হয়েছে রূয়েল এবং অন্য জায়গায় বলা হয়েছে যিথ্রো এবং বলা হয়েছে তিনি মাদয়ানের যাজক ছিলেন। (যাত্রা পুস্তক ২: ১৬-১৮, ৩: ১ এবং ১৮: ৫) তালমূদীয় সাহিত্যে রূয়েল, যিথ্রো ও হুবাব তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম বলা হয়েছে। আধুনিক ইহুদী আলেমগণের মতে যিথ্রো ছিল ‘হিজ এক্সেলেন্সী’ এর সমার্থক একটি উপাধি এবং আসল নাম ছিল রূয়েল বা হুবাব। অনুরূপভাবে কাহেন বা যাজক (Kohen Midian) শব্দটির ব্যাখ্যার ব্যাপারেও ইহুদী আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে পুরোহিত (Priest) বা এর সমার্থক হিসেবে নিয়েছেন আবার কেউ রইস বা আমীর (Prince) অর্থে নিয়েছেন।


তালমূদে তাঁর যে জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হযরত মূসার জন্মের পূর্বে ফেরাউনের কাছে তাঁর যাওয়া-আসা ছিল। ফেরাউন তাঁর জ্ঞান ও বিচক্ষণতার প্রতি আস্থা রাখতো। কিন্তু যখন বণী ইসরাঈলের ওপর জুলুম-শোষণ চালাবার জন্য মিশরের রাজ পরিষদে পরামর্শ হতে লাগলো এবং তাদের সন্তানদের জন্মের পর পরই হত্যা করার সিদ্ধান্ত হলো তখন তিনি ফেরাউনকে এ অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য অনেক চেষ্টা চালান। তাকে এ জুলুমের অশুভ পরিণামের ভয় দেখালেন। তিনি পরামর্শ দিলেন, এদের অস্তিত্ব যদি আপনার কাছে এতই অসহনীয় হয়ে থাকে তাহলে এদেরকে মিসর থেকে বের করে এদের পিতৃ পুরুষের দেশ কেনানের দিকে পাঠিয়ে দিন। তাঁর এ ভূমিকায় ফেরাউন তাঁর প্রতি অসন্তষ্ট হয়ে তাঁকে অপদস্থ করে নিজের দরবার থেকে বের করে দিয়েছিল। সে সময় থেকে তিনি নিজের দেশ মাদ্‌য়ানে চলে এসে সেখানেই অবস্থান করছিলেন।


তাঁর ধর্ম সম্পর্কে অনুমান করা হয়, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মতো তিনিও ইবরাহীমী দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। কেননা, যেভাবে হযরত মূসা ছিলেন ইসহাক ইবনে ইবরাহীমের (আলাইহিস সালাম) আউলাদ ঠিক তেমনি তিনিও ছিলেন মাদ্‌য়ান ইবনে ইবরাহীমের বংশধর। এ সম্পর্কের কারণেই সম্ভবত তিনি ফেরাউনকে বনী ইসরাঈলের ওপর জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন করতে নিষেধ করেন এবং তার বিরাগভাজন হন। কুরআন ব্যাখ্যাতা নিশাপুরী হযরত হাসান বাসরীর বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ


أَنَّهُ كَانَ رَجُلاً مُسْلِمًا قَبْلَ الدَّيْنِ مِنْ شُعَيْبِ


“তিনি একজন মুসলমান ছিলেন। হযরত শু’আইবের দ্বীন তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন।”


তালমূদে বলা হয়েছে, তিনি মাদ্‌য়ানবাসীদের মূর্তি পূজাকে প্রকাশ্যে নির্বুদ্ধিতা বলে সমালোচনা করতেন। তাই মাদয়ানবাসীরা তাঁর বিরোধী হয়ে গিয়েছিল।]]



৩৬। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : মাদয়ান উপত্যকা

৩৬। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  :  মাদয়ান উপত্যকা

 


وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِن دُونِهِمُ امْرَأَتَيْنِ تَذُودَانِ ۖ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا ۖ قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّىٰ يُصْدِرَ الرِّعَاءُ ۖ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ

(২৮-ক্বাসাস:২৩.)  আর যখন সে মাদয়ানের কুয়ার কাছে পৌঁছল,৩৩ সে দেখলো, অনেক লোক তাদের পশুদের পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে একদিকে দু’টি মেয়ে নিজেদের পশুগুলো আগলে রাখছে। মূসা মেয়ে দু’টিকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমাদের সমস্যা কি?” তারা বললো, “আমরা আমাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাতে পারি না যতক্ষণ না এ রাখালেরা তাদের জানোয়ারগুলো সরিয়ে নিয়ে যায়, আর আমাদের পিতা একজন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি।”৩৪


[[টিকা:৩৩) এ স্থানটি, যেখানে হযরত মূসা পৌঁছেছিলেন, এটি ছিল আরবীয় বর্ণনা অনুযায়ী আকাবা উপসাগরের পশ্চিম তীরে মানকা থেকে কয়েক মাইল উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে এ জায়গাটিকে আল বিদ্’আ বলা হয়। সেখানে একটি ছোট মতো শহর গড়ে উঠেছে। আমি ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাবুক থেকে আকাবায় যাওয়ার পথে এ জায়গাটি দেখেছি। স্থানীয় অধিবাসীরা আমাকে জানিয়েছে, বাপ-দাদাদের আমল থেকে আমরা শুনে আসছি মাদয়ান এখানেই অবস্থিত ছিল। ইউসিফুস থেকে নিয়ে বাটন পর্যন্ত প্রাচীন ও আধুনিক পরিব্রাজক ও ভূগোলবিদগণও সাধারণভাবে এ স্থানটিকেই মাদয়ান বলে চিহ্নিত করেছেন। এর সন্নিকটে সামান্য দূরে একটি স্থানকে বর্তমানে “মাগায়েরে শু’আইব” বা “মাগারাতে শু’আইব” বলা হয়। সেখানে সামূদী প্যাটার্নের কিছু ইমারত রয়েছে। আর এর প্রায় এক মাইল দু’মাইল দূরে কিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর মধ্যে আমরা দেখেছি দু’টি অন্ধকূপ। স্থানীয় লোকেরা আমাদের জানিয়েছে, নিশ্চিতভাবে আমরা কিছু বলতে পারি না তবে আমাদের এখানে একথাই প্রচলিত যে, এ দু’টি কূয়ার মধ্য থেকে একটি কূয়ায় মূসা তাঁর ছাগলের পানি পান করিয়েছেন। একথাটি আবুল ফিদা (মৃত্যু ৭৩২ হিঃ) তাকবীমুল বুলদানে এবং ইয়াকুত মু’জামুল বুলদানে আবু যায়েদ আনসারীর (মৃত্যু ২১৬ হিঃ) বরাত দিয়ে উদ্ধৃত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এ এলাকার অধিবাসীরা এ স্থানেই মূসার ঐ কূয়াটি চিহ্নিত করে থাকে। এ থেকে জানা যায়, এ বর্ণনাটি শত শত বছর থেকে সেখানকার লোকদের মুখে মুখে বংশানুক্রমে চলে আসছে এবং এরই ভিত্তিতে দৃঢ়তার সাথে বলা যেতে পারে, কুরআন মজীদে যে স্থানটির কথা বলা হয়েছে এটা সেই স্থান।]]


[[টিকা:৩৪) অর্থাৎ আমরা মেয়ে মানুষ। এ রাখালদের সাথে টক্কর দিয়ে ও সংঘর্ষ বাঁধিয়ে নিজেদের জানোয়ারগুলোকে আগে পানি পান করাবার সামর্থ্য আমাদের নেই। অন্যদিকে আমাদের পিতাও এত বেশী বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি নিজে আর কষ্টের কাজ করতে পারেন না। আমাদের পরিবারে আর দ্বিতীয় কোন পুরুষ নেই। তাই আমরা মেয়েরাই এ কাজ করতে বের হয়েছি। সব রাখালদের তাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়ে নিয়ে চলে যাওয়া পর্যন্ত বাধ্য হয়ে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। মেয়ে দু’টি শুধুমাত্র একটি সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে এ বক্তব্য উপস্থাপন করে। এ থেকে একদিকে তাদের লজ্জাশীলতার প্রকাশ ঘটে। অর্থ্যাৎ একজন পর পুরুষের সাথে তারা বেশি কথাও বলতে চাচ্ছিল না। আবার এটাও পছন্দ করছিল না যে, এ ভিন দেশী অপরিচিত লোকটি তাদের ঘটনা সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা পোষণ করুক এবং মনে মনে ভাবুক যে, এরা কেমন লোক যাদের পুরুষরা ঘরে বসে রয়েছে আর ঘরের মেয়েদেরকে এ কাজ করার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে।


এ মেয়েদের বাপের ব্যাপারে আমাদের এখানে এ কথা প্রচার হয়ে গেছে যে, তিনি ছিলেন হযরত শু’আইব আলাইহিস সালাম। কিন্তু কুরআন মজীদে ইশারা ইঙ্গিতে কোথাও এমন কথা বলা হয়নি যা থেকে বুঝা যেতে পারে তিনি শু’আইব আলাইহিস সালাম ছিলেন। অথচ শু’আইব আলাইহিস সালাম কুরআন মজীদে একটি পরিচিত ব্যক্তিত্ব। এ মেয়েদের পিতা যদি তিনিই হতেন তাহলে এখানে একথা সুস্পষ্ট না করে দেয়ার কোন কারণই ছিল না। নিঃসন্দেহে কোন কোন হাদীসে তাঁর নাম স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। কিন্তু আল্লামা ইবনে জারীর ও ইবনে কাসীর উভয়ে এ ব্যাপারে একমত যে, এগুলোর কোনটিরও সনদ তথা বর্ণনাসূত্র নির্ভুল নয়। তাই ইবনে আব্বাস, ইবনে বসরী, আবু উবাইদাহ ও সাঈদ ইবনে জুবাইরের ন্যায় বড় বড় তফসীরকারক বনী ইসরাইলের বর্ণনার ওপর নির্ভর করে তালমূদ ইত্যাদি গ্রন্থে এ মনীষীর যে নাম উল্লেখিত হয়েছে সেটিই বলেছেন। অন্যথায় বলা নিষ্প্রয়োজন, যদি নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত শু’আইবের নাম স্পষ্ট করে বলা হতো তাহলে তাঁরা কখনো অন্য নাম উল্লেখ করতেন না।


বাইবেলের এক জায়গায় এ মনীষীর নাম বলা হয়েছে রূয়েল এবং অন্য জায়গায় বলা হয়েছে যিথ্রো এবং বলা হয়েছে তিনি মাদয়ানের যাজক ছিলেন। (যাত্রা পুস্তক ২: ১৬-১৮, ৩: ১ এবং ১৮: ৫) তালমূদীয় সাহিত্যে রূয়েল, যিথ্রো ও হুবাব তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম বলা হয়েছে। আধুনিক ইহুদী আলেমগণের মতে যিথ্রো ছিল ‘হিজ এক্সেলেন্সী’ এর সমার্থক একটি উপাধি এবং আসল নাম ছিল রূয়েল বা হুবাব। অনুরূপভাবে কাহেন বা যাজক (Kohen Midian) শব্দটির ব্যাখ্যার ব্যাপারেও ইহুদী আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ একে পুরোহিত (Priest) বা এর সমার্থক হিসেবে নিয়েছেন আবার কেউ রইস বা আমীর (Prince) অর্থে নিয়েছেন।


তালমূদে তাঁর যে জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, হযরত মূসার জন্মের পূর্বে ফেরাউনের কাছে তাঁর যাওয়া-আসা ছিল। ফেরাউন তাঁর জ্ঞান ও বিচক্ষণতার প্রতি আস্থা রাখতো। কিন্তু যখন বণী ইসরাঈলের ওপর জুলুম-শোষণ চালাবার জন্য মিশরের রাজ পরিষদে পরামর্শ হতে লাগলো এবং তাদের সন্তানদের জন্মের পর পরই হত্যা করার সিদ্ধান্ত হলো তখন তিনি ফেরাউনকে এ অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য অনেক চেষ্টা চালান। তাকে এ জুলুমের অশুভ পরিণামের ভয় দেখালেন। তিনি পরামর্শ দিলেন, এদের অস্তিত্ব যদি আপনার কাছে এতই অসহনীয় হয়ে থাকে তাহলে এদেরকে মিসর থেকে বের করে এদের পিতৃ পুরুষের দেশ কেনানের দিকে পাঠিয়ে দিন। তাঁর এ ভূমিকায় ফেরাউন তাঁর প্রতি অসন্তষ্ট হয়ে তাঁকে অপদস্থ করে নিজের দরবার থেকে বের করে দিয়েছিল। সে সময় থেকে তিনি নিজের দেশ মাদ্‌য়ানে চলে এসে সেখানেই অবস্থান করছিলেন।


তাঁর ধর্ম সম্পর্কে অনুমান করা হয়, হযরত মূসা আলাইহিস সালামের মতো তিনিও ইবরাহীমী দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। কেননা, যেভাবে হযরত মূসা ছিলেন ইসহাক ইবনে ইবরাহীমের (আলাইহিস সালাম) আউলাদ ঠিক তেমনি তিনিও ছিলেন মাদ্‌য়ান ইবনে ইবরাহীমের বংশধর। এ সম্পর্কের কারণেই সম্ভবত তিনি ফেরাউনকে বনী ইসরাঈলের ওপর জুলুম-নির্যাতন-নিপীড়ন করতে নিষেধ করেন এবং তার বিরাগভাজন হন। কুরআন ব্যাখ্যাতা নিশাপুরী হযরত হাসান বাসরীর বরাত দিয়ে লিখেছেনঃ


أَنَّهُ كَانَ رَجُلاً مُسْلِمًا قَبْلَ الدَّيْنِ مِنْ شُعَيْبِ


“তিনি একজন মুসলমান ছিলেন। হযরত শু’আইবের দ্বীন তিনি গ্রহণ করে নিয়েছিলেন।”


তালমূদে বলা হয়েছে, তিনি মাদ্‌য়ানবাসীদের মূর্তি পূজাকে প্রকাশ্যে নির্বুদ্ধিতা বলে সমালোচনা করতেন। তাই মাদয়ানবাসীরা তাঁর বিরোধী হয়ে গিয়েছিল।]]



৩৫। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : যে ‍বৃক্ষের ওপর হযরত মূসা আ: আল্লাহর বানী শুনেছেন

 

৩৫। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  :  যে ‍বৃক্ষের ওপর হযরত মূসা আ: আল্লাহর বানী শুনেছেন


إِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِأَهْلِهِ إِنِّي آنَسْتُ نَارًا سَآتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ آتِيكُم بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ 

(২৭-নমল:৭.)  (তাদেরকে সেই সময়ের কথা শুনাও) যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো৮ “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।”৯                    


[[টিকা:৮) এটা তখনকার ঘটনা যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ানে আট দশ বছর অবস্থান করার পর নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন বাসস্থানের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। মাদয়ান এলাকাটি ছিল আকাবা উপসাগরের তীরে আরব ও সিনাই উপদ্বীপের উপকূলে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আশ্ শু’আরা, ১১৫ টীকা) সেখান থেকে যাত্রা করে হযরত মূসা সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশে পৌঁছেন। এ অংশের যে স্থানটিতে তিনি পৌঁছেন বর্তমানে তাকে সিনাই পাহাড় ও মূসা পর্বত বলা হয়। কুরআন নাযিলের সময় এটি তুর নামে পরিচিত ছিল। এখানে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে সেটি এরই পাদদেশে সংঘটিত হয়েছিল।                    এখানে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে সূরা “ত্বা-হা”-এর প্রথমে রুকূ’তে) উল্লিখিত হয়েছে এবং সামনের দিকে সূরা কাসাসেও (চতুর্থ রুকূ’) আসছে।]]                    


[[টিকা:৯) আলোচনার প্রেক্ষাপট থেকে মনে হয় যে, এটা ছিল শীতকালের একটি রাত। হযরত মূসা একটি অপরিচিত এলাকা অতিক্রম করছিলেন। এ এলাকার ব্যাপারে তাঁর বিশেষ জানা-শোনা ছিল না। তাই তিনি নিজের পরিবারের লোকদের বললেন, আমি সামনের দিকে গিয়ে একটু জেনে আসি আগুন জ্বলছে কোন্ জনপদে, সামনের দিকে পথ কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাছাকাছি কোন্ কোন্ জনপদ আছে। তবুও যদি দেখা যায়, ওরাও আমাদের মত চলমান মুসাফির যাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না, তাহলেও অন্ততপক্ষে ওদের কাছ থেকে একটু অংগার তো আনা যাবে। এ থেকে আগুন জ্বালিয়ে তোমরা উত্তাপ লাভ করতে পারবে।                    

হযরত মূসা (আ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খৃস্টান বাদশাহ কনষ্টানটাইন ৩৬৫ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঠিক যে জায়গায় এ ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে একটি গীর্জা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এর দু’শো বছর পরে সম্রাট জাষ্টিনিয়ান এখানে একটি আশ্রম (Monasterery) নির্মাণ করেন। কনষ্টান্টাইনের গীর্জাকেও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ আশ্রম ও গীর্জা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। এটি গ্রীক খৃস্টীয় গীর্জার (Greek Orthodox Church) পাদরী সমাজের দখলে রয়েছে। আমি ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে এ জায়গাটি দেখি। পাশের পাতায় এ জায়গার কিছু ছবি দেয়া হলো।]]



৩৪। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : তূর পাহাড়ে সেন্ট ক্যাথারাইন গীর্জা যেখানে হযরত মূসা আ: বৃক্ষকুঞ্জে প্রজ্জলিত আগুন দেখেছিলেন

 

৩৪। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : তূর পাহাড়ে সেন্ট ক্যাথারাইন গীর্জা যেখানে হযরত মূসা আ: বৃক্ষকুঞ্জে প্রজ্জলিত আগুন দেখেছিলেন



إِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِأَهْلِهِ إِنِّي آنَسْتُ نَارًا سَآتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ آتِيكُم بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ 

(২৭-নমল:৭.)  (তাদেরকে সেই সময়ের কথা শুনাও) যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো৮ “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।”৯                    


[[টিকা:৮) এটা তখনকার ঘটনা যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ানে আট দশ বছর অবস্থান করার পর নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন বাসস্থানের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। মাদয়ান এলাকাটি ছিল আকাবা উপসাগরের তীরে আরব ও সিনাই উপদ্বীপের উপকূলে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আশ্ শু’আরা, ১১৫ টীকা) সেখান থেকে যাত্রা করে হযরত মূসা সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশে পৌঁছেন। এ অংশের যে স্থানটিতে তিনি পৌঁছেন বর্তমানে তাকে সিনাই পাহাড় ও মূসা পর্বত বলা হয়। কুরআন নাযিলের সময় এটি তুর নামে পরিচিত ছিল। এখানে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে সেটি এরই পাদদেশে সংঘটিত হয়েছিল।                    এখানে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে সূরা “ত্বা-হা”-এর প্রথমে রুকূ’তে) উল্লিখিত হয়েছে এবং সামনের দিকে সূরা কাসাসেও (চতুর্থ রুকূ’) আসছে।]]                    


[[টিকা:৯) আলোচনার প্রেক্ষাপট থেকে মনে হয় যে, এটা ছিল শীতকালের একটি রাত। হযরত মূসা একটি অপরিচিত এলাকা অতিক্রম করছিলেন। এ এলাকার ব্যাপারে তাঁর বিশেষ জানা-শোনা ছিল না। তাই তিনি নিজের পরিবারের লোকদের বললেন, আমি সামনের দিকে গিয়ে একটু জেনে আসি আগুন জ্বলছে কোন্ জনপদে, সামনের দিকে পথ কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাছাকাছি কোন্ কোন্ জনপদ আছে। তবুও যদি দেখা যায়, ওরাও আমাদের মত চলমান মুসাফির যাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না, তাহলেও অন্ততপক্ষে ওদের কাছ থেকে একটু অংগার তো আনা যাবে। এ থেকে আগুন জ্বালিয়ে তোমরা উত্তাপ লাভ করতে পারবে।                    


হযরত মূসা (আ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খৃস্টান বাদশাহ কনষ্টানটাইন ৩৬৫ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঠিক যে জায়গায় এ ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে একটি গীর্জা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এর দু’শো বছর পরে সম্রাট জাষ্টিনিয়ান এখানে একটি আশ্রম (Monasterery) নির্মাণ করেন। কনষ্টান্টাইনের গীর্জাকেও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ আশ্রম ও গীর্জা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। এটি গ্রীক খৃস্টীয় গীর্জার (Greek Orthodox Church) পাদরী সমাজের দখলে রয়েছে। আমি ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে এ জায়গাটি দেখি। পাশের পাতায় এ জায়গার কিছু ছবি দেয়া হলো।]]



৩৩। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : তূর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সেন্ট ক্যাথারাইন গীর্জা

৩৩। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : তূর পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সেন্ট ক্যাথারাইন গীর্জা

 


إِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِأَهْلِهِ إِنِّي آنَسْتُ نَارًا سَآتِيكُم مِّنْهَا بِخَبَرٍ أَوْ آتِيكُم بِشِهَابٍ قَبَسٍ لَّعَلَّكُمْ تَصْطَلُونَ 

(২৭-নমল:৭.)  (তাদেরকে সেই সময়ের কথা শুনাও) যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললো৮ “আমি আগুনের মতো একটা বস্তু দেখেছি। এখনি আমি সেখান থেকে কোন খবর আনবো অথবা খুঁজে আনবো কোন অংগার, যাতে তোমরা উষ্ণতা লাভ করতে পারো।”৯                    


[[টিকা:৮) এটা তখনকার ঘটনা যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম মাদয়ানে আট দশ বছর অবস্থান করার পর নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে কোন বাসস্থানের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। মাদয়ান এলাকাটি ছিল আকাবা উপসাগরের তীরে আরব ও সিনাই উপদ্বীপের উপকূলে (দেখুন তাফহীমুল কুরআন সূরা আশ্ শু’আরা, ১১৫ টীকা) সেখান থেকে যাত্রা করে হযরত মূসা সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশে পৌঁছেন। এ অংশের যে স্থানটিতে তিনি পৌঁছেন বর্তমানে তাকে সিনাই পাহাড় ও মূসা পর্বত বলা হয়। কুরআন নাযিলের সময় এটি তুর নামে পরিচিত ছিল। এখানে যে ঘটনাটির কথা বলা হয়েছে সেটি এরই পাদদেশে সংঘটিত হয়েছিল।                    

এখানে যে ঘটনাটি বর্ণনা করা হচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ ইতিপূর্বে সূরা “ত্বা-হা”-এর প্রথমে রুকূ’তে) উল্লিখিত হয়েছে এবং সামনের দিকে সূরা কাসাসেও (চতুর্থ রুকূ’) আসছে।]]                    


[[টিকা:৯) আলোচনার প্রেক্ষাপট থেকে মনে হয় যে, এটা ছিল শীতকালের একটি রাত। হযরত মূসা একটি অপরিচিত এলাকা অতিক্রম করছিলেন। এ এলাকার ব্যাপারে তাঁর বিশেষ জানা-শোনা ছিল না। তাই তিনি নিজের পরিবারের লোকদের বললেন, আমি সামনের দিকে গিয়ে একটু জেনে আসি আগুন জ্বলছে কোন্ জনপদে, সামনের দিকে পথ কোথায় কোথায় গিয়েছে এবং কাছাকাছি কোন্ কোন্ জনপদ আছে। তবুও যদি দেখা যায়, ওরাও আমাদের মত চলমান মুসাফির যাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা যাবে না, তাহলেও অন্ততপক্ষে ওদের কাছ থেকে একটু অংগার তো আনা যাবে। এ থেকে আগুন জ্বালিয়ে তোমরা উত্তাপ লাভ করতে পারবে।                   


 হযরত মূসা (আ) যেখানে কুঞ্জবনের মধ্যে আগুন লেগেছে বলে দেখেছিলেন সে স্থানটি তূর পাহাড়ের পাদদেশে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম খৃস্টান বাদশাহ কনষ্টানটাইন ৩৬৫ খৃস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ঠিক যে জায়গায় এ ঘটনাটি ঘটেছিল সেখানে একটি গীর্জা নির্মাণ করে দিয়েছিলেন। এর দু’শো বছর পরে সম্রাট জাষ্টিনিয়ান এখানে একটি আশ্রম (Monasterery) নির্মাণ করেন। কনষ্টান্টাইনের গীর্জাকেও এর অর্ন্তভূক্ত করা হয়। এ আশ্রম ও গীর্জা আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। এটি গ্রীক খৃস্টীয় গীর্জার (Greek Orthodox Church) পাদরী সমাজের দখলে রয়েছে। আমি ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে এ জায়গাটি দেখি। পাশের পাতায় এ জায়গার কিছু ছবি দেয়া হলো।]]



৩২। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : মাদায়েনে সালেহ আ: এর উষ্ট্রী যে কূপে পানি পান করত

৩২। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  :  মাদায়েনে সালেহ আ: এর উষ্ট্রী যে কূপে পানি পান করত

 


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



৩১। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : মাদায়েনে সামুদীয় পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (২)

৩১। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  :  মাদায়েনে সামুদীয় পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (২)

 


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



৩০। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : পেট্টায় নিবতী পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (২)

৩০। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : পেট্টায় নিবতী পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (২)

 


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



২৯। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : মাদায়েনে সালেহ (আ:)-এর কিছু সংখ্যক সামূদীয় অট্টালিকা (২)

২৯। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  :  মাদায়েনে সালেহ (আ:)-এর কিছু সংখ্যক সামূদীয় অট্টালিকা (২)

 


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



২৮। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : পেট্টায় নিবতী পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (১)

 

২৮। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : পেট্টায় নিবতী পদ্ধতির একটি অট্টালিকা (১)


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



২৭। তাফহীমুল কুরআন : মানচিত্র সমূহ : মাদায়েনে সালেহ (আ:)-এর সামূদীয় অট্টালিকা (১)

 

২৭। তাফহীমুল কুরআন :  মানচিত্র সমূহ  : মাদায়েনে সালেহ (আ:)-এর সামূদীয় অট্টালিকা (১)


وَتَنْحِتُونَ مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا فَارِهِينَ 

(২৬-শুআরা:১৪৯.)  তোমরা পাহাড় কেটে তার মধ্যে সগর্বে ইমারত নির্মাণ করছো।৯৯                    


[[টিকা:৯৯) আদ জাতির সভ্যতার উল্ল্যেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল, তারা উঁচু উঁচু স্তম্ভ বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করতো। ঠিক তেমনি সামূদ জাতির সভ্যতা তার চেয়ে যে সবচেয়ে বেশী উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাচীনকালের জাতিসমূহের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছিল, তা ছিল এই যে, তারা পাহাড় কেটে তার মধ্যে ইমারত নির্মাণ করতো। তাই সূরা ‘আল ফজরে’ যেভাবে আদকে ‘যাতুল ইমাদ’ (ذَاتِ الْعِمَادِ)   অর্থাৎ স্তম্ভের অধিকারী পদবী দেয়া হয়েছে ঠিক তেমনি সামূদ জাতির বর্ণনা একথার মাধ্যমে করা হয়েছেঃ                  


  الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ                    

  

  “এমন সব লোক যারা উপত্যাকায় পাহাড় কেটেছে।” এছাড়া কুরআনে একথাও বলা হয়েছে যে, তারা নিজেদের দেশের সমতল ভূমিতে বড় বড় প্রাসাদ নির্মাণ করতোঃ  


  تَتَّخِذُونَ مِنْ سُهُولِهَا قُصُورًا (الاعراف: 74)                    

  

  এসব গৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি ছিল? فَارِهِينَ   শব্দের মাধ্যমে কুরআন-এর ওপর আলোকপাত করে। অর্থাৎ এসব কিছু ছিল তাদের নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব, সম্পদ, শক্তি ও প্রযুক্তির নৈপুন্যের প্রদর্শনী। কোন যথার্থ প্রয়োজনের তাগিদ এর পেছনে কার্যকর ছিল না। একটি বিকৃত ও ভ্রষ্ট সভ্যতার ধরণ এমনিই হয়ে থাকে। একদিকে সমাজের গরীব লোকেরা মাথা গোঁজারও ঠাঁই পায় না আর অন্যদিকে ধনী নেতৃস্থানীয় লোকেরা থাকার জন্য যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত প্রাসাদ নির্মাণ করে ফেলে তখন প্রয়োজন ছাড়াই নিছক লোক দেখাবার জন্য স্মৃতিস্তম্ভসমূহ নির্মাণ করতে থাকে।                   


  সামূদ জাতির এ ইমারতগুলোর কিছু সংখ্যক এখনো টিকে আছে। ১৯৫৯ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি নিজে এগুলো দেখেছি। পাশের পৃষ্ঠায় এগুলোর কিছু ছবি দেয়া হলো। এ জায়গাটি মদীনা তাইয়্যেবা ও তাবুকের মধ্যবর্তী হিজাযের বিখ্যাত আল’উলা নামক স্থান, (যাকে নবীর জামানায় ‘ওয়াদিউল কুরা’ বলা হতো) থেকে কয়েক মাইল উত্তরে অবস্থিত। স্থানীয় লোকেরা আজও এ জায়গাকে ‘আল হিজর’ ও ‘মাদয়ানে সালেহ’ নামে স্মরণ করে থাকে। এ এলাকায় ‘আল্উলা’ এখনো একটি শস্য-শ্যামল উপত্যকা। এখানে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পানির নহর ও বাগিচা। কিন্তু আজ হিজরের আশেপাশে বড়ই নির্জন ও ভীতিকর পরিবেশ বিরাজমান। লোকবসতি নামমাত্র। সবুজের উপস্থিতি ক্ষীণ। কূয়া আছে কয়েকটি। এরই মধ্যে একটি কূয়ার ব্যাপারে স্থানীয় লোকদের মধ্যে একথা প্রচলিত আছে যে, হযরত সালেহ (আ)-এর উটনী সেখান থেকে পানি পান করতো। বর্তমানে এটি তুর্কী আমলের একটি বিরান ক্ষুদ্র সামরিক চৌকির মধ্যে অবস্থিত। কূয়াটি একবারেই শুকনা। (এর ছবিও পাশের পাতায় দেখানো হয়েছে)। এ এলাকায় প্রবেশ করে আল্উলা’র কাছাকাছি পৌঁছতেই আমরা সর্বত্র এমনসব পাহাড় দেখলাম যা একেবারেই ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। পরিষ্কার মনে হচ্ছিল, কোন ভয়াবহ ভূমিকম্প এগুলোকে নীচে থেকে ওপর পর্যন্ত ঝাঁকানি দিয়ে ফালি ফালি করে দিয়ে গেছে। (এ পাহাড়গুলোরও কিছু ছবি পাশের পাতাগুলোয় দেয়া হয়েছে)। এ ধরণের পাহাড় আমরা দেখতে দেখতে গিয়েছি পূর্বের দিকে আল’উলা থেকে খয়বর যাবার সময় প্রায় ৫০ মাইল পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে জর্দান রাজ্যের সীমানার মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মাইল অভ্যন্তর পর্যন্ত। এর অর্থ দাঁড়ায়, তিন চারশো মাইল দীর্ঘ ও একশো মাইল প্রস্থ বিশিষ্ট একটি এলাকা ভূমিকম্পে একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।                    

  

  আল হিজরে আমরা সামূদ জাতির যেসব ইমারত দেখেছিলাম ঠিক একই ধরণের কতিপয় ইমারত আমরা পেলাম আকাবা উপসাগরের কিনারে মাদয়ানে এবং জর্দান রাজ্যের পেট্টা (PETRA) নামক স্থানেও। বিশেষ করে পেট্টায় সামূদী প্যাটার্নের ইমারত এবং নিবতীদের তৈরী করা অট্টালিকা পাশাপাশি দেখা গেছে। এগুলোর কারুকাজ ও নির্মাণ পদ্ধতিতে এত সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এক নজর দেখার সাথে সাথেই বুঝতে পারবে এগুলো এক যুগেরও নয় এবং একই জাতির স্থাপত্যের নিদর্শনও নয়। এগুলোরও আলাদা আলাদা ছবি আমি পাশের পৃষ্ঠায় দিয়েছি। ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ডটি (Daughty) কুরআনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য আল হিজরের ইমারত সম্পর্কে দাবী করেছেন, এগুলো সামূদের নির্মিত নয় বরং নিবতীদের তৈরী ইমারত। কিন্তু উভয় জাতির স্থাপত্য পদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ও সুস্পষ্ট ফারাক দেখা যায়। ফলে কেবলমাত্র একজন অন্ধই এগুলোকে একই জাতির নির্মিত বলে দাবী করতে পারে। আমার অনুমান, পাহাড় কেটে তার মধ্যে গৃহ নির্মাণ কৌশল সামূদই উদ্ভাবন করে এবং এর হাজার হাজার বছর পরে নিবতীরা খৃস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকে একে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছিয়ে দেয়। অতঃপর ইলোরায় (পেট্টার প্রায় সাতশো বছর পরে নির্মিত গূহা) এ শিল্পটির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়।]]



Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...