প্রশ্ন: ১৪২: বিতর নামাজ।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
ইবনে আক্তার ধানমণ্ডি, ঢাকা প্রশ্ন : আরামবাগ এলাকার এক মসজিদের খতীবকে অনেকবার এ কথা বলতে শুনেছি যে, বিতর নামাযের একাধিক পদ্ধতি হাদীসের কিতাবে রয়েছে, তবে হানাফীরা যেভাবে বিতর পড়ে, অর্থাৎ দুই বৈঠক ও এক সালামে তিন রাকাত-এই পদ্ধতি হাদীস শরীফে নেই। তার বক্তব্য হল, বিতর যদি তিন রাকাতই পড়তে হয় তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে বসা যাবে না। অন্যথায় তা মাগরিবের নামাযের সাদৃশ্য হয়ে যাবে। আর হাদীস শরীফে বিতরকে মাগরিবের সাদৃশ্য বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, দুই বৈঠক ও এক সালামে কি বিতর পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়? যদি না থাকে তাহলে আমরা কোন ভিত্তিতে এভাবে বিতর নামায আদায় করছি?
উত্তর : আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া সালামুন আলা ইবাদিহিল্লা লাযিনাস তাফা, আম্মা বাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে-পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়।
নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত।
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।-সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩
সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন, হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১
এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يسلم في الركعتين الأوليين من الوتر অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা করার পর বলেন- هذا حديث صحيح على شرط الشيخين অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’-এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০
এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে।
ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী রাহ. ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা রাহ.-এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯
সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার আরবী পাঠ নিম্নরূপ- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث لا يسلم إلا في آخرهن অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১
(৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- قلت لعائشة : بكم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر؟ قالت: كان يوتر بأربع وثلاث, وست وثلاث, وثمان وثلاث, وعشر وثلاث, ولم يكن يوتر بأنقص من سبع, ولا بأكثر من ثلاث عشرة. অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯
চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী ৩/২৬ باب كيف صلاة الليل, كتاب التهجد)- এ লেখেন- هذا أصح ما وقفت عليه من ذلك, وبه يجمع بين ما اختلف عن عائشة في ذلك. والله أعلم আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। حتى صلى ستا ثم أوتر بثلاث وصلى ركعتين -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২
(৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন- كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاث ويقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى, وفي الثانية قل يا أيها الكفرون, وفي الثالثة قل هو الله أحد. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। -সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১ ইমাম নববী রাহ. ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল। এখানে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি- عن ثابت قال: قال أنس: يا أبا محمد خذ عني فإني أخذت عن رسول الله صلى الله عليه وسلم, وأخذ رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله, ولن تأخذ عن أحد أوثق مني, قال: ثم صلى بي العشاء, ثم صلى سب ركعات يسلم بين الركعتين, ثم أوتر بثلاث يسلم في آخرهن (الروياني وابن عساكر, ورجاله ثقات, كما في كنز العمال) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ., বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত-উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল)

জরুরি জ্ঞাতব্য

বিতর নামাযের ব্যাপারে আজকাল এক ব্যাপক অবহেলা এই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, একে এমন এক নামায মনে করা হয় যার আগে কোন নফল নামায নেই, যেমন মাগরিবের নামায; এর আগে নফল নামায মাসনূন নয়; অথচ বিতরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সবচেয়ে ভাল এই যে, যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে ইশার পর পড়া হয় তবুও উত্তম এই যে, দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- لا توتروا بثلاث تشبهوا بصلاة المغرب, ولكن أوتروا بخمس, أو بسبع, أو بتسع, أو بإحدى عشرة ركعة, أو أكثر من ذلك. তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। -মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদীস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২
মোটকথা, বিতরের আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়-দুই, চার, ছয়, আট-যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও। ৩ নং-এর অধীনে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, যাতে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন-বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায আদায় করতেন। উল্লিখিত হাদীসে ওই নির্দেশনাই এসেছে যে, শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়। তবে বিতর সর্বাবস্থায় তিন রাকাতই।
উক্ত হাদীসের সাথে একথার কোন সম্পর্ক নেই যে, তিন রাকাত এক বৈঠকেই পড়তে হবে, তাহলেই শুধু তা মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে যাবে। তাই তিন রাকাত পড়তে হলে তা এক বৈঠকেই পড়তে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার পদ্ধতি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, তিন রাকাত বিতরের আগে নফল পড়ে নাও। হাদীসের ব্যাখ্যা ছেড়ে নিজের পক্ষ থেকে বিতরের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা বিভ্রানি- ছাড়া আর কিছুই নয়।
শরীয়তে সকল নামাযের মূলকথা এই যে, প্রতি দুই রাকাতে বৈঠক হবে এবং তাশাহহুদ পড়া হবে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে সহীহ মুসলিম ১/১৯৪, হাদীস ৪৯৮-এ একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক ব্যাপক বাণী উদ্ধৃত রয়েছে। তাতে তিনি ইরশাদ করেন- وفي كل ركعتين التحية ‘প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ রয়েছে।’ একই হুকুম একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত রয়েছে। শরীয়তের ব্যাপক শিক্ষা পরিহার করে কোন রেওয়ায়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে একথা বলা যে, তিন রাকাত বিতর পড়লে শুধু এক বৈঠকেই পড়া-এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা من أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد -এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা উম্মতকে উক্ত অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন। আমীন।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপরই লেখাটি সমাপ্ত করছি। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই আগামী কোনো সংখ্যায় হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ.)এর একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করা হবে, যা তাঁর ‘ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম’ কিতাবে প্রকাশিত হয়েছে। هذا, وصلى الله تعالى وسلم على سيدنا ومولانا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين, وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

প্রশ্ন: ১৪১ : বীর্য কি পাক না নাপাক ?

প্রশ্ন
আসসালামু  আলাইকুম , আমার  প্রশ্ন  হচ্ছে বীর্য  কি  পাক  না  নাপাক  ?????
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
বীর্য নাপাক। পাক হবার প্রশ্নই উঠে না।বীর্য নাপাক বলেই শুকনা হলে খুটিয়ে তুলে ফেলা ও ভিজা হলে কাপড়টি ধৌত করার কথা হাদীসে এসেছে। যেমন-

عَمْرُو بْنُ مَيْمُونٍ، قَالَ: سَأَلْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ يَسَارٍ [ص:56] فِي الثَّوْبِ تُصِيبُهُ الجَنَابَةُ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ: «كُنْتُ أَغْسِلُهُ مِنْ ثَوْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَخْرُجُ إِلَى الصَّلاَةِ، وَأَثَرُ الغَسْلِ فِيهِ» بُقَعُ المَاءِ
অনুবাদ- আমার বিন মাইমুন রহঃ সুলাইমান বিন ইয়াসার রাঃ কে বীর্য লাগা কাপড়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,হযরত আয়শা রাঃ বলেছেন, “আমি রাসূল সাঃ এর কাপড় থেকে তা ধুয়ে ফেলতাম তারপর তিনি নামাযের জন্য বের হতেন এমতাবস্থায় যে,কাপড়ে পানির ছাপ লেগে থাকতো। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৩১, ২২৯}
এ পরিচ্ছেদের অধীনে গায়রে মুকাল্লিদ আলেম ওহীদুজ্জামান সাহেব লিখেছেনঃ “ইমাম বুখারী রহঃ এ পরিচ্ছেদে বীর্য ছাড়া অন্য কোন নাপাকীর কথা উল্লেখ করেননি। হয়তো বাকি নাপাককে বীর্যের উপরই কিয়াস করেছেন। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ এর নিকট বীর্য নাপাক।{তাইসীরুল বারী-১/১৭০}
ইমাম বুখারীর বিরোধীতা করে বীর্যকে কথিত আহলে হাদীসরা দলীল ছাড়াই সর্ববস্থায় পবিত্র বলে থাকে তাদের আকাবীরদের অন্ধ তাকলীদ করে । খাওয়া-পান করা সবই মনে হচ্ছে জায়েজ তাদের কাছে?!
তাছাড়া রাসূল সাঃ এটা সিক্ত থাকলে ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর কাপড়ে লাগলে তা ধৌত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাক হলে ধৌত করার নির্দেশনা দিলেন কেন? আর নবীজী সাঃ এর কাপড়ে যে বীর্য লেগে শুকিয়ে গেয়েছিল, তা তিনি খুটিয়ে তুলে ফেলাটাই প্রমাণ করে তা পাক থাকলে খুটে ফেলে দেয়ার দরকার কি? যেমন কাপড়ে যদি আটা লেগে শুকিয়ে যায়, তাহলে তা খুটিয়ে ফেলে দিলে তা একেবারেই উঠে যায়, এমনি বীর্যও শুকিয়ে শক্ত হয়ে গেলে তা তুলে ফেললে তার কোন কিছু আর বাকি থাকে না, তাই নবীজী সাঃ খুটিয়ে তুলে ফেলার পর তা না ধুয়েই নামায পড়েছেন। বীর্য পাক এজন্য নয়।
এছাড়া অন্যান্য হাদীসে এসেছে-
يَا عَمَّارُ إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ: مِنَ الْغَائِطِ وَالْبَوْلِ وَالْقَيْءِ وَالدَّمِ وَالْمَنِيِّ
আম্মার বিন ইয়াসার রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয় ৫টি কারণে কাপড় ধৌত করতে হয়, যথা-১-পায়খানা, ২-প্রশ্রাব, ৩-বমি, ৪-রক্ত, ৫-বীর্য। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৫৮}
হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাঃ বলেন-বীর্য সিক্ত থাকলে তা ধুয়ে ফেল, আর শুকিয়ে গেলে তা খুটিয়ে ফেল। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৯৩৩}
সুতরাং বুঝা গেল যে, বীর্য নাপাক। তা শুকনো হলে খুটিয়ে তুলে ফেলতে হবে। আর সিক্ত হলে ধুয়ে ফেলতে হবে। কাপড়ে বীর্য লেগে থাকলে উক্ত কাপড়সহ নামায পড়লে তা শুদ্ধ হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

প্রশ্ন: ১৪০ : জ্বর সংক্রান্ত হাদিস সমূহ।

পরিচ্ছদঃ ৭৬/২৮. 

৫৭২৩. ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও।
নাফি‘ (রহ.) বলেন, ‘আবদুল্লাহ তখন বলতেনঃ আমাদের উপর থেকে শাস্তিকে হালকা কর। [৩২৬৪] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৯৯)

পরিচ্ছদঃ ৭৬/২৮. 


৫৭২৪. ফাতিমাহ বিনত্ মুনযির (রহ.) হতে বর্ণিত যে, আসমা বিনত আবূ বাকর (রাঃ)-এর নিকট যখন কোন জ্বরে আক্রান্ত স্ত্রীলোকদেরকে দু‘আর জন্য নিয়ে আসা হত , তখন তিনি পানি হাতে নিয়ে সেই স্ত্রীলোকটির জামার ফাঁক দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি। [মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১১,আহমাদ ২৬৯৯২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০০)

পরিচ্ছদঃ ৭৬/২৮. 

৫৭২৫. ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর। [৩২৬৩] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০১)

পরিচ্ছদঃ ৭৬/২৮. 

৫৭২৬. রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ জ্বর হয় জাহান্নামের তাপ থেকে। কাজেই তোমরা তা পানি দিয়ে ঠান্ডা কর। [৩২৬২; মুসলিম ৩৯/২৬, হাঃ ২২১২] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০২)


হাদিসে কুদসি নং - ১৪৫ : জ্বর ও রোগ-ব্যাধি কাফফারা


আরবি হাদিস عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ( عَنْ رَسُولُ اللَّه صلى الله عليه وسلم : أَنَّهُ عَادَ مَرِيضًا -وَمَعَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ- مِنْ وَعْكٍ كَانَ بِهِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : «أَبْشِرْ إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ: نَارِي أُسَلِّطُهَا عَلَى عَبْدِي الْمُؤْمِنِ فِي الدُّنْيَا لِتَكُونَ حَظَّهُ مِنْ النَّارِ فِي الْآخِرَةِ». ( حم, جه, ت ) حسن বাংলা অনুবাদ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলেন, তিনি এক রোগীকে দেখতে যান, যে জ্বরের কারণে অসুস্থ ছিল, -আবু হুরায়রা ছিলেন তার সাথে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, “সুসংবাদ গ্রহণ কর, আল্লাহ বলেন, আমার আগুন দুনিয়াতে আমি আমার মুমিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখেরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়”। [আহমদ, ইব্‌ন মাজাহ ও তিরমিযি] হাদিসটি হাসান।


বুখারী 

৫৬৭৮

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا أَبُو أَحْمَدَ الزُّبَيْرِيُّ، حَدَّثَنَا عُمَرُ بْنُ سَعِيدِ بْنِ أَبِي حُسَيْنٍ، قَالَ حَدَّثَنِي عَطَاءُ بْنُ أَبِي رَبَاحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ دَاءً إِلاَّ أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً ‏"‏‏.‏
আবূ হুরাইরা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬৩)






প্রশ্ন: ১৩৯ : দোয়া কুনুত না জানা থাকলে কি পড়বেন ?

===================================================

====================================================

======================================================

প্রশ্ন

প্রশ্ন: বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করতে আমার খুব কষ্ট হয়; যেমন বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুত। এ কারণে আমি এ দোয়ার জায়গায় একটি সূরা পড়তাম। যখন আমি জানতে পারলাম যে, এ দোয়া পড়া ফরজ; তখন দোয়াটি মুখস্থ করার চেষ্টা করতে থাকি। আমি নামাযের মধ্যে একটি বই থেকে দেখে দেখে দোয়াটি পড়ি। বইটিকে আমার পাশে একটি টেবিলের উপরে রাখি। আমি কিবলামুখী থেকেই বই থেকে দোয়াটি পড়ি। আমার এ আমলটি কি জায়েয?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
১. বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআন শরিফ দেখে পড়া জায়েয আছে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ দেখে পড়ার হুকুম কি? এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল কি?
উত্তরে তিনি বলেন: রমযানে কিয়ামুল লাইলের নামাযে কুরআন শরিফ দেখে পড়তে কোন বাধা নেই। কারণ এতে করে মুসল্লিদেরকে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শুনানো যেতে পারে। এবং যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়েছে; যা মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) দেখে পড়া ও মুখস্থ থেকে পড়া উভয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তাঁর আযাদকৃত দাস যাকওয়ানকে কিয়ামে রমযানে তাঁর ইমামতি করার নির্দেশ দিতেন এবং সে মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়ত।[ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ উক্তিটি নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ভাষায় সংকলন করেছেন]
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৫)]
২. বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে। ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।[ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০]
৩. প্রশ্নকারী ভাই যা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে কুরআন পড়তেন নিঃসন্দেহে এটা করা ঠিক হয়নি। কারণ কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দোয়া করা। তাই যেসব আয়াতে দোয়া আছে সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েয হবে। যেমন ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ  [آل عمران: 8]
(অনুবাদ:হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।)[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮]
৪. প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ফরয; এ কথা সহিহ নয়। বরং দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। তাই মুসল্লি যদি দোয়ায়ে কুনুত নাও পড়েন নামায সহিহ হবে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?
জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?
উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়।
আল্লাহই তাওফিকদাতা।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৯)]
===================================================

====================================================

======================================================

প্রশ্ন: ১৩৮ : আমি শব্দের অর্থসহ সুবহানা রাব্বিয়াল আ'যীম, সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা, সামীয়া'ল্লাহুলিমান হামিদাহ, রাব্বানা লাকাল হামদ এই দোয়া গুলুর পরিপুর্ন অর্থ জানতে চাই।

সুবহানা রাব্বিয়াল আ'যীম - আমার রব পবিত্র এবং সুমহান ।

সুবহানা রাব্বিয়াল আ'লা - আমার রব পবিত্র এবং সর্বোচ্চ বড় ।

সামীয়া'ল্লাহুলিমান হামিদাহ - কেউ যদি আল্লাহর প্রশংসা করে তবে আল্লাহ তা শুনেন।

রাব্বানা লাকাল হামদ - হে আমাদের রব, সমস্ত প্রশংসা তোমার-ই।

প্রশ্ন: ১৩৭: জিহাদের প্রয়োজনীয়তা কি ?

===================================================

====================================================

======================================================একটি আম গাছে ঝুলে থাকে, তাাকে মাটির মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিটিক্ষণ জিহাদ করে গাছে ঝুলে থাকতে হয়, কিন্তু যখন তার বোটা নরম হয়ে যায়, জিহাদ করার ক্ষমতা কমে যায়, তখন সে মাটিতে পড়ে যায়, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাকে টেনে মাটিতে নামিয়ে ফেলে। ঠিক এভাবেই একজন মুমিনকে ইসলামের উপর টিকে থাকার জন্য সার্বক্ষণিক মানুষ শয়তান, জ্বিন শয়তান এবং নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করে যেতে হয়।

পারিভাষিক অর্থে রাসুলুল্লাহ সা: এর জীবনী থেকে আমরা পাই: আল্লাহর জমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য মোখিক দাওয়াত, হাতের লিখণী, সংগঠন ক্বায়েম ইত্যাদি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত পর্যায়ে শুধুমাত্র প্রয়োজন ও অবস্থার প্রেক্ষাপটে অস্ত্র ধারণ করাকে জিহাদ বলা হয়। ===================================================

====================================================

======================================================

প্রশ্ন: ১৩৬ : জমি বন্ধক নেয়া জায়েজ কিনা ?

উত্তর: যে টাকা দিয়ে জমি বন্ধক নেওয়া হয়, অত:পর ঐ জমির ফসল / ঘর ভাড়া  বন্ধক গ্রহীতা ভোগ করে, তাহলে যে মূলত: তার প্রদেয় টাকার সুদ খায় ।

এর সমাধান হলো  যদি ফসল বন্ধক গ্রহীতা নিজে চাষ করে/ বা অন্যকে দিয়ে চাষ করায় এবং সে ফসল ভোগ করে  তাহলে  প্রতি বছর বন্ধকী টাকা থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কর্তিত হবে। এবং এভাবে একসময় পুরো বন্ধকী টাকা পরিশোধ হয়ে যাবে এবং  জমি মুক্ত হয়ে বন্ধক দাতার নিকট ফেরত চলে যাবে।

আর ঘর ভাড়ার ব্যাপারেও একই বিধান। প্রতি মাসে যে পরিমাণ ঘর ভাড়া পাবে তা রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়ে নীট লাভ যে পরিমাণ টাকা থাকবে তা বন্ধক গ্রহীতা গ্রহণ  করবে এবং বন্ধকী টাকা থেকে সেই  নীট ভাড়ার টাকা  কর্তিত হতে থাকবে। এভাবে একসময় পুরো টাকা  পরিশোধ হয়ে যাবে এবং বন্ধকদাতার নিকট উক্ত ঘর/ঘরগুলো ফেরত চলে যাবে।

প্রশ্ন: ১৩৪: জানাযার নামাজের নিয়ম।

জানাযার নামাজ ফরজে কিফায়া। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাযার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো-

১. প্রথমত মৃত ব্যক্তিকে ক্বিবলার দিকে সম্মুখে রেখে ইমাম ও মুসল্লিদের দাঁড়ানো।
২. মুসল্লীরা নামাজের অজুর ন্যায় অজু করে ইমামের পিছনে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।
৩. মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে ইমাম তার মাথার পাশে দাঁড়ানো। আর মহিলা হলে কফিনের মাঝ বরাবর দাঁড়ানো। মৃত ব্যক্তির মাঝ বরাবর দাঁড়ানোতে কোনো দোষ নেই।

৪. জানাযার নিয়ত করে চার তাকবিরের সহিত নামাজ আদায় করা।
৫. কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধা।
৬. অন্যান্য নামাজের ন্যায় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।

৭. ছানা পড়া (কেউ কেউ সুরা ফাতিহা পড়ে অন্যান্য সুরা মিলানোর কথা উল্লেখ করেছেন।)
৮. দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরূদে ইবরাহিম পড়া।
৯. তৃতীয় তাকবির দিয়ে ইখলাসের সঙ্গে হাদিসে বর্ণিত দোয়াসমূহের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
১০. চতুর্থ তাকবির দিয়ে যথাক্রমে ডানে ও বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে জানাযার নামাজ শেষ করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় এবং নিজেদের সাওয়াব বৃদ্ধিতে সুন্দরভাবে জানাযার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


আমাদের জীবদ্দশাতেই আমাদের চোখের সামন দিয়ে আমাদের প্রিয়জনেরা কবরস্থ হন। চলে যান দাদাজান, দাদুজান, নানা ও নানুজি। এমনকি বাবা-মা, নিজ সন্তান বা সহোদর ভাই বা বোনের মৃত্যুও কখনো আমাদের দেখতে হয়। আমরা এ অনিবার্য বাস্তবতার আঘাতে চূড়ান্ত ব্যথাতুর শোক-স্তব্ধ বিহ্বল হয়ে যাই।
কিন্তু সেই ক্ষণটা আরও খুব আফসোসের হয় যখন তাদের বিদায় দেবার সময় শেষ জানাযার নামাযটুকুও না জানার কারণে পড়তে পারি না। জানা থাকে না পদ্ধতি, কারো জানা থাকে না সহজ দু’আটিও। এ নিবন্ধে ইনশাআল্লাহ পাঠকদের জন্যে এমনই অজানাগুলো তুলে ধরা হবে।
প্রথমেই জেনে নিই জানাযার নামাযের ফযিলত
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের জানাযায় শরীক হয়ে নামায পড়ে এবং তাকে কবরও দেয় সে দু’কীরাত নেকী পায়। প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড় সমান নেকী। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার নামায পড়ে এবং মাটি দেয় না সে এক কীরাত নেকী পাবে। -সহীহ বুখারী ও মুসলিম
রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, কোন মুসলমানের জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেননি, যদি শরীক হয়ে ঐ লাশের জন্য দুআ করে তাহলে আল্লাহতা’য়ালা তাদের সুপারিশ নিশ্চয়ই কবুল করবেন। -সহীহ মুসলিম ও মিশকাত
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-যখন কোনো মুসলমানের ইন্তেকাল হয় এবং একশ জনের কাছাকছি সংখ্যক মুসলমান তাঁর জানাযার নামায পড়ে ও তাঁর জন্য সুপারিশ করে তো এই সুপারিশ কবুল করা হয়’। -জামে আত-তিরমীযি
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে আমরা জানাযার নামাযে শরীক হওয়াতে নিজের ও মৃত ব্যক্তির লাভের কথা জানলাম। নিম্নে জানাযার নামাযের নিয়ম ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো উল্লেখ করা হল।
জানাযা নামাযের নিয়মঃ
১. প্রথম তাকবীরের পর ছানা পড়া
২. দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরূদ পড়া
৩. তৃতীয় তাকবীরের পর জানাযার দুআ পড়া
৪. চতুর্থ তাকবীরের পর সালাম ফিরানো।
হাত উঠানো : জানাযা নামাযে শুধু প্রথম তাকবীরে হাত উঠাবে এছাড়া আর কোন তাকবীরে হাত ওঠানোর বিধান নেই।
জামাত যেভাবে দাঁড়াবে : জামাআতের সামনে কাফন ঢাকা লাশ রাখতে হবে। তার পেছনে লাশের সিনা বরাবর ইমাম দাঁড়াবেন। তার পেছনে মুক্তাদীরা কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবেন। সবাই মনে মনে ইচ্ছা করবেন : এই মৃত ব্যক্তির দুআর জন্য জানাযার নামায পড়ছি। মূলত এটাই হল নিয়ত।
জানাযা নামাযের নিয়ত :
শুদ্ধ আরবি জানা না থাকলে জানাযার নামাযসহ যে কোন নামাযের নিয়তই নিজের মাতৃভাষায় করাই উচিত। অর্থ না জেনে অশুদ্ধ আরবিতে নিয়ত করার বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। কেননা নিয়ত তো হল অন্তরের ইচ্ছা ও সংকল্পের নাম। তবু আগ্রহীদের জন্য নিম্নে আরবি নিয়ত উল্লেখ করছি।
نَوَيْتُ اَنْ اُوَدِّيْ لِلّٰهِ تَعَالٰى اَرْبَعَ تَكْبِرَاتٍ صَلْوَةِ الْجَنَازَةِ فِرْضِ الْكِفَايْةِا لثَّنَاءُ لِلّٰهِ تَعَالٰى وَالصَّلَوةُ عَلٰى النَّبِي وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيْتِ اِقْتَدَيْتُ بِهَذَاالاِمَامِ مُتَوَجِّهًا ا لٰى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفِةِ اَللهُ اَكْبَر.
বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন উওয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবা’আ তাকবীরাতিন সালাতিল জানাযাতি ফারদিল কেফাইয়তি আছ্ছানাউ লিল্লাহি ওয়াস সালাতু আলান্নাবীয়্যি ওয়াদ্দু’আউ লিহাযাল মাইয়্যিতি ইক্বতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি-আল্লাহু আকবার।
নিয়তের অর্থ : (সংক্ষেপে) আল্লাহর জন্য আমি কেবলামুখী হয়ে চার তাকবীরের সাথে এই ইমামের পেছনে জানাযার ফরযে কেফায়া নামায আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
নিয়ত করে ইমাম উচ্চস্বরে আল্লাহু আকবার বলে অন্য নামাযের মত হাত বাঁধবে। এরপর ছানা পাঠ করবে।
মুক্তাদীগণ ইমামের অনুসরণ করে একইভাবে তাকবীর দিয়ে ছানা পড়বে। এরপর ইমাম হাত উত্তোলন না করেই উচ্চস্বরে দ্বিতীয় তাকবির দিবে। এরপর নিম্নস্বরে অন্য নামাযের দরূদের ন্যায় দরূদ পড়বে। মুক্তাদীরাও ঐরূপ করবে। দরূদ শেষ করে ইমাম তৃতীয় তাকবীর দিয়ে হাত বাঁধা অবস্থাতেই মৃত ব্যক্তি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে নিম্ন স্বরে এই দুআ পড়বে-
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃত, উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী – সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাঁদেরকে জীবিত রেখেছেন ইসলামের উপর জীবিত রাখেন আর যাদেরকে মৃত্যু দান করেছেন তাদেরকে ঈমানের সাথেই মৃত্যু দান করেন।
আর জানাযা অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো হলে উক্ত দুআর পরিবর্তে এই দুআ পড়বে :
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً ا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفِّعًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজ আলহু লানা ফারাতাও ওয়াজ আলহু লানা আজরাও ওয়াজ আলহু লানা শাফিআও ওয়া মুশাফফাআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি তাকে আমাদের জন্য অগ্রবর্তী হিসেবে কবুল করুন, তাকে করুন আমাদের জন্য প্রতিদান স্বরূপ এবং তাকে বানান আমাদের জন্য সুপারিশকারী -যার সুপারিশ কবুল করা হবে।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক লাশ মেয়ের হলে ‘হু’ (هُ) স্থানে ‘হা’ (هَا) বলতে হবে। এই দুআ পাঠের পর ইমাম চতুর্থ তাকবীর বলে প্রথমে ডানে ও পরে বামে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি’ বলে সালাম ফিরাবে। মুক্তাদীরাও তার অনুকরণ করবে।
সংশ্লিষ্ট কিছু জরুরী মাসআলা :
মাসআলা : ছানা, দরূদ ও দুআর পরে যে আরো তিনবার তাকবীর বলতে হয় তখন ইমাম ও মোক্তাদীর হাত বাঁধা থাকবে।
মাসআলা : ইমাম তাকবীর ব্যতীত সবকিছুই চুপে চুপে বলবে, শুধু তাকবীর উচ্চস্বরে বলবে। মোক্তাদীরা তাকবীরসহ সবকিছুই আস্তে আস্তে বলবে।
মাসআলা : ডান দিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে ডান হাত এবং বাম দিকে সালাম ফিরানোর সাথে সাথে বাম হাত নামিয়ে ফেলবে।
মাসআলা : জানাযার নামাযের পরে আর কোন দুআ বা মোনাজাত এক সাথে করার বিধান নেই।
মাসআলা : জানাযার নামায ছুটে যাওয়ার আশংকা হলে (পানি নিকটে থাকা সত্ত্বেও) তায়াম্মুম করে জানাযায় শরীক হওয়া যায়।
মাসআলা : জুতা পায়ে রেখেও জানাযার নামায পড়া যায়। তবে শর্ত এই যে জুতার তলা এবং জুতার নিচে জায়গা পাক থাকতে হবে। আর যদি জুতা খুলে জুতার উপরে পা রেখে দাঁড়ায় তাহলে পায়ের সাথে লেগে থেকে জুতার উপরের অংশ পাক থাকলেই হবে।

জানাজার জন্য লাশ কিবলার দিকে রাখতে হবে। লাশ যদি পুরুষ হয় তবে, মাথার পাশ বরাবর ইমাম সাহেব দাঁড়াবেন। আর মহিলা হলে মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াবেন, এটাই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের সুন্নত।
নামাজের নিয়ম:
জানাজার নামাজ চার তাকবীরের সঙ্গে আদায় করতে হয়। ঈদের নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তুলতে হয়, তবে জানাজার নামাজে তাকবীর দেয়ার সময় হাত তোলার প্রয়োজন পড়ে না। 
জানাজার নামাজের নিয়ত: 
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ  عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
নিয়তের বাংলা উচ্চারন:

নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকরীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার। 
এখানে নিয়তে ‘লেহাযাল মাইয়্যেতে’ পুরুষ/ছেলে লাশ হলে পড়তে হবে, আর লাশ নারী/মেয়ে হলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতে’ বলতে হবে।
নিয়ত আরবিতে করতে না পারলে বাংলায় করলেও চলবে, আমি চার তাকবিরের সহিত ফরজে কিফায়া জানাজার নামাজ  কিবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে মরহুম ব্যক্তির (পুরুষ/মহিলার) জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আদায় করছি। আল্লাহু আকবার।
জানাজার নামাজে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা ও রাসূলের ওপর দরুদ পাঠ করা হয়। বাংলায় নিয়ত করলে তা বাংলায় বলে অথবা মনে মনে নিয়তে আনলেও চলবে।
নিয়তে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে।
আরবিতে সানা:
سُبْحَا نَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَا لَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ
বাংলা উচ্চারন:
সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
সানা পড়ার পরে তাকবীর বলে দরুদ শরীফ পড়তে হবে যেটা সাধারন নামাজে তাশাহুদের পর পড়া হয়। 
দরুদ শরীফ:
للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণ: 
আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদি ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
দরুদ শরীফ পড়ার পর তৃতীয় তাকবীর আদায় করে জানাজার দোয়া পড়তে হয়।
জানাজার দোয়া:
لَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَا نَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَىالاْيمَانِ بِرَحْمَتِكَ يَاَارْ حَمَالرَّحِمِيْنَ
উচ্চারণ: 
আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িইবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
তবে নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَا فِعًة وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন: 
আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
নাবালক ছেলের ক্ষেত্রে জানাজার দোয়া পড়তে হবে,
للَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَ لَنَا شَا فِعً وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন: 
আল্লাহুম্মাজ আলহা লানা ফারতাও ওয়াজ আলহা লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ ফায়ান। এরপর চতুর্থ তাকবীর দিয়ে একটু নীরব থেকে ডানে এবং বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
যদি কারো নামাজে আসতে দেরী হয়ে যায়, তবে ইমাম সাহেবকে অনুসরণ করতে হবে। সম্ভব হলে চার তাকবীর আদায় করে নিতে হবে, তা যদি সম্ভব না হয়, তবে ইমাম সাহবকে অনুসরণ করে সালাম ফিরিয়ে নিয়ে জানাজা নামাজ সম্পন্ন করবে। জানাজা নামাজ জামাতে আদায় করতে হয়,তাই এটি কাজা পড়ার সুযোগ নেই। 
ফরজে কেফায়া হওয়ার কারণে জানাজার নামাজ সমাজের কিছু মানুষ আদায় করলে দায়মুক্ত হওয়া যাবে। তবে, কেউ আদায় না করলে একসঙ্গে সবাই পাপের ভাগীদার হবে। সমস্যা থাকলে বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে একি এলাকার অন্য কেউ নামাজ পড়লে গুনাহগার হবে না।
হাদিসে আছে জানাজার নামাজে উহুদ পরিমাণ সাওয়াব আদায় হয়, তাই সুযোগ পেলে এই নামাজ ছাড়া উচিত নয়। এছাড়া একজন প্রতিবেশী হিসেবে, একজন আত্নীয় হিসেবেও এ নামাজ আদায় করা মুসলমানের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।
==================================
জানাযার ফরজ ২টি ও সুন্নাত ৩টি ও জানাযা নামাযের নিয়ম :
মাসআলাঃ জানাযার ফরজ ২টি
(১)চার তাকবীর বলা (২)দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া (শামী -৩/২০৯
মাসআলাঃ জানাযার সুন্নাত ৩টি
(১)সানা পড়া (২) দুরুদ শরীফ পড়া (৩) দোআ পড়া।
মাসআলাঃ
শুধু জুতার উপরিভাগ পাক হলেই জুতা খুলে জুতার ওপর দাঁড়িয়ে নামায পড়া জায়েয নিচের অংশ পাক হোক বা নাপাক হোক। (মারাকিল ফালাহ -৫৮২,বাহরুর রায়েক - ২/৩১৫,ইমদয ফতওয়া -১৮৩২,আহসানুল ফাতওয়া -৪/২০২)
জানাজার নামাজ
মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাইয়া, কাফন পরাইয়া তাহার মাগফিরাত ও পরকালে মুক্তির জন্য কতক লোক একত্র হইয়া যে নামায পড়িতে হয়, তাহাকে জানাযার নামায বলে। এই নামায মুসলমানদের উপর ফরযে কেফায়া অথাৎ জানাযার সংবাদ শ্রবণকারী সকল লোকের পক্ষ হইতেই ফরয আদায় হইয়া যায়, আর কেহই আদায় না করিলে প্রত্যেককেই গুণাহ্গার হইতে হইবে।
লাশকে গোসল করাইয়া কাফন পরাইয়া একটি প্রশস্ত পবিত্র স্থানে খাটের উপরে উত্তর শিয়রী করিয়া শয়ন করাইবে; তারপর মৃতের যাবতীয় ঋণ ও দেনা ইত্যাদি শোধ বা মাফ করাইয়া তাহার সন্তান বা অন্য কোন ওলী ব্যক্তি নামাযের ইমামতী করিতে মৃতকে সম্মুখে রাখিয়া তাহার বক্ষ বরাবর দন্ডায়মান হইবেন। লাশের ওলী নিজে ইমামতী না করিলে তাহার অনুমতিক্রমে অন্য কোন পরহেজগার আলেম ব্যক্তি ইমাম নিযুক্ত হইবেন। ইমামের পিছনে মোক্তাদিরা তিন, পাঁচ বা সাত এইরূপ বে-জোড় কাতারে দাঁড়াইবে। এই নামায দাঁড়াইয়া আদায় করিতে হয়, ইহাতে কোন রুকু সিজদা বা বৈঠক ইত্যাদি নাই। এই নামায বসিয়া পড়িলে শুদ্ধ হইবে না।
জানাজার নামাজের নিয়ত
উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিললাহে তায়ালা আরবাআ তাকরীরাতে ছালাতিল জানাযাতে ফারযুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিললাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতি এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি আললাহু আকবার।
অনুবাদঃ আমি আললাহর উদ্দেশ্যে জানাযা নামাজের চারি তাকবীর ফরযে কেফায়া কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে আদায় করার মনস্থ করলাম। ইহা আললাহু তায়ালার প্রশংসা রাসূলের প্রতি দরূদ এবং মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া (আর্শীবাদ) আললাহ মহান।
[আর নিয়তের ‘লেহাযাল মাইয়্যেতি’ শব্দটি কেবল পুরুষ লাশের বেলায় বলিতে হইবে, কিন্তু স্ত্রী লাশ হইলে ঐ শব্দটির স্থলে ‘লেহাযিহিল মাইয়্যেতি’ বলিতে হইবে।]
জানাযা নামাযের নিয়ত করার পরে প্রথম তাক্বীর বলবে
সানা পড়ার পরে দ্বিতীয় তাকবীর বলবে
দরুদ শরীফ পড়ার পরে তৃতীয় তাকবীর বলবে
জানাযার দোয়া
উচ্চারণঃ আললাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যেনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহীদিনা ওয়া গায়িবিনা ও ছাগীরিনা ও কাবীরিনা ও যাকারিনা ও উনছানা। আললাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলামী ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান বেরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহীমিন।
অনুবাদঃ হে আললাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত বালকও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আললাহ! আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে মৃত্যু মুখে পতিত কর।
জানাযার দোয়া পড়ার পরে চার নং তাকবীর বলে সালাম ফিরাইবে
লাশ নাবালক ছেলে হলে নিমোক্ত দোয়া পড়তে হয়
উচ্চারণঃ আললাহুম্মাজ আল্হুলানা ফারতাঁও ওয়াজ আল্হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আল্হুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়ান।
অনুবাদঃহে আললাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
লাশ নাবালক মেয়ে হলে নিমোক্ত দোয়া পড়তে হয়
উচ্চারণঃ আললাহুম্মাজ আল্হালানা ফারতাঁও ওয়াজ আল্হালানা আজরাঁও ওয়া যুখরাঁও ওয়াজ আলহা লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফায়াহ।

অনুবাদঃ হে আললাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।

প্রশ্ন:১৩৫ : আল্লাহর পরিচয় কিভাবে পাবো।

===================================================

====================================================

======================================================উত্তর : পবিত্র কুরআন অর্থ ও তাফসীর সহ গভীর ভাবে অধ্যয়ন করুন। দেখবেন পবিত্র কুরআনে  কয়েক আয়াত পর পর বহু আয়াতে বা আয়াতের শেষে আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। কুরআন থেকেই আপনি আল্লাহর পরিচয়, গুণাবলী, ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ।===================================================

====================================================

======================================================

প্রশ্ন: ১৩৩ : স্ত্রী গর্ভবতী হলে স্বামী কী জানাযা পড়তে পারে?


উত্তর: জ্বি,  স্ত্রী গর্ভবতী হলে স্বামী জানাযা পড়তে পারে। এ ব্যাপারে কোন বিধি নিষেধ নাই। কোন বিধিনিষেধ যদি কেউ আরোপ করে তবে তা কু সংস্কার।

প্রশ্ন: ১৩২ : মহনবী সা: এর নানার নাম কি ?

মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাতার পুরো নাম “আমিনা বিনতে ওয়াহাব”। দেখেই বুঝা যাচ্ছে, মাতা আমিনার পিতার নাম ওয়াহাব। আরবিতে পিতার নাম বিন/বিনতে(নারীর ক্ষেত্রে) দ্বারা নামের শেষে লাগানো হতো। নবীজীর (সাঃ) নানার পুরো নাম ওয়াহাব ইবনে আব্দ মানাফ। (জ্ঞাতার্থে, নবীজীর নানীর নাম বাররাহ বিনতে আব্দুল উজ্জাহ।)

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...