প্রশ্ন: ১২৪ : যাকাত ।

যাকাতের নিসাব ও বন্টনের খাত

যাকাতের নিসাব:
যাকাতযোগ্য সম্পত্তির বিবরণ, তার নিসাব বা সর্বনিমণ পরিমাণ ও যাকাত আদায়ের হার সংক্রান্ত চার্ট নিম্নরূপঃ
ক্রম
যাকাতযোগ্য সম্পত্তির বিবরণ
যাকাতের নিসাব
(ন্যূনতম যে পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করা ফরজ)
যাকাত পরিশোধের হার
১.
হাতে রক্ষিত অথবা ব্যাংকে নগদ গচ্ছিত অর্থ, শেয়ার সার্টিফিকেট, প্রাইজবন্ড ও সার্টিফিকেট সমূহ।
৫২.৫ তোলা রূপা বা তার সমপরিমাণ বাজার মূল্য।
মোট অর্থের শতকরা ২.৫%।
২.
স্বর্ণ/রৌপ্য, মূল্যবান ধাতু ও স্বর্ণ বা রৌপ্যের অলংকার।
৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা সমপরিমাণ অর্থ।
আদায়কালীন বাজার মূল্য অনুযায়ী মোট অর্থের শতকরা ২.৫%।
৩.
বাণিজ্যিক সম্পদ ও শিল্পজাত ব্যবসায় প্রতিশ্রুত লভ্যাংশের ভিত্তিতে প্রদত্ত অর্থ।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
আদায়কালীন বাজার মূল্যের শতকরা ২.৫%।
৪.
উৎপাদিত কৃষিজাত ফসল।
-
বৃষ্টির পানিতে উৎপাদিত ফসলের উশর  ১/১০ অংশ,  সেচে উৎপাদিত জমিরফসলের  ১/২০  অংশ  অথবা শস্যের বাজার মূল্যের সমপরিমাণ প্রতি মৌসুমে আদায়যোগ্য।
৫.
পশু সম্পদ
(ক) ভেড়া বা ছাগল প্রভৃতি।
১ থেকে ৩৯টি পর্যমত্ম
যাকাত প্রযোজ্য নয়।
৪০থেকে ১২০টি
১টি ভেড়া/ছাগল


১২১ থেকে ২০০টি
২টি ভেড়া/ছাগল


২০১ থেকে ৩০০টি
৩টি ভেড়া/ছাগল


এর অতিরিক্ত প্রতি ১০০টির যাকাত
১টি করে ভেড়া/ছাগল

(খ) গরম্ন, মহিষ ও অন্যান্য গবাদি পশু।
১ থেকে ২৯টি পর্যমত্ম
যাকাত প্রযোজ্য নয়।


৩০ থেকে ৩৯টি
এক বছর বয়সী ১টি বাছুর


৬০টি এবং ততোধিক
প্রতি ৩০টির জন্য ১ বছর বয়সী এবং প্রতি ৪০টির জন্য ২ বছর বয়সী বাছুর।

(গ) ব্যবসার উদ্দেশ্যে মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগী পালন এবং ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত জমি, নির্মিত বাড়ী প্রভৃতির বাজার মূল্যের হিসাব হবে।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
তবে বাজার মূল্যের ২.৫% অর্থ।
৬.
খণিজ দ্রব্য।
যে কোন পরিমাণ।
উত্তোলিত খণিজ দ্রব্যের শতকরা ২০ ভাগ।
৭.
প্রভিডেন্ট ফান্ডঃ
সরকারী প্রতিষ্ঠানে বা যে সকল কর্পোরেশনে সরকারী নিয়মানুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তন করা হয়, উক্ত প্রভিডেন্ট ফান্ডের কর্তৃনকৃত টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে এই টাকা গ্রহণ করার পর একবছর পূর্ণ হলে সম্পূর্ণ টাকার উপর যাকাত প্রদান করতে হবে।
৫২.5 তোলা রূপার মূল্য।
শতকরা ২.৫ ভাগ।
৮.
কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির উদ্যোগে প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করা হলে প্রতি বছর তার উপর যাকাত দিতে হবে।
৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য।
শতকরা ২.৫ ভাগ।
     
বি.দ্র.: নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়ার দিন থেকে এক বছর পুর্তির পর যাকাত ফরয হয়।
যাকাতের সম্পদ সঠিকভাবে বন্টন করার উপর অধিক গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। এই কারণে আলস্নাহপাক নিজেই যাকাত ব্যয় বন্টনের খাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। যাকাত কেবল নি:স্ব, অভাবগ্রস্থ ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্থদের জন্য, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান। আলস্নাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময় (আল কুরআন, ৯:৬০)। এ খাতের বাইরে অন্য কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না। নিম্নে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উলেস্নখিত ৮টি খাতের বর্ণনা দেয়া হলো।
যাকাত বন্টনের নির্ধারিত ৮টি খাতের বিবরণ:
      প্রথম খাতঃ ফকীর- ফকীর হলো সেই ব্যক্তি যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। যে ব্যক্তি রিক্তহস্ত, অভাব মেটানোর যোগ্য সম্পদ নেই, ভিক্ষুক হোক বা না হোক, এরাই ফকীর। যে সকল  স্বল্প সামর্থ্যের দরিদ্র মুসলমান যথাসাধ্য চেষ্ট করা সত্ত্বেও বা দৈহিক অক্ষমতাহেতু প্রাত্যহিক ন্যায়সঙ্গত প্রয়োজনটুকু মেটাতে পারে না, তারাই ফকীর। কারও মতে যার কাছে একবেলা বা একদিনের খাবার আছে সে ফকীর।
      দ্বিতীয় খাতঃ মিসকীন- মিসকীন সেই ব্যক্তি যার কিছুই নেই, যার কাছে একবেলা খাবারও নেই। যে সব লোকের অবস্থা এমন খারাপ যে, পরের নিকট সওয়াল করতে বাধ্য হয়, নিজের পেটের আহারও যারা যোগাতে পারে না, তারা মিসকীন। মিসকীন হলো যার কিছুই নেই, সুতরাং যার কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই, তাকে যাকাত দেয়া যাবে এবং সেও নিতে পারবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকীর বা মিসকীন যাকেই যাকাত দেয়া হবে, সে যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়।
     তৃতীয় খাতঃ আমেলীন-  ইসলামী সরকারের পক্ষে লোকদের কাছ থেকে যাকাত, উসর প্রভৃতি আদায় করে বায়তুল মালে জমা প্রদান, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ। এদের পারিশ্রমিক যাকাতের খাত থেকেই আদায় করা যাবে। কুরআনে বর্ণিত আটটি খাতের মধ্যে এ একটি খাতই এমন, যেখানে সংগৃহীত যাকাতের অর্থ থেকেই পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এ খাতের বৈশিষ্ট্য হলো এতে ফকীর বা মিসকীন হওয়া শর্ত নয়। পক্ষান্তরে, অবশিষ্ট ৫টি খাতে দরিদ্র ও অভাবগ্রস্থ দূরীকরণে যাকাত আদায় শর্ত।
      চতুর্থ খাতঃ মুআলস্নাফাতুল কুলুব (চিত্ত জয় করার জন্য)- নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম। যাদের চিত্ত (দ্বীন ইসলামের প্রতি আকর্ষণ করে) আকর্ষণ ও উৎসাহিত করণ আবশ্যকীয় মনে করে যাকাত দান করা হয়, যাতে তাদের ঈমান পরিপক্ক হয়। এ খাতের আওতায় দুঃস্থ নওমুসলিম ব্যক্তিদের যাকাত প্রদানের ব্যাপারে ফকিহগণ অভিমত প্রদান করেছেন।
      পঞ্চম খাতঃ ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি- এ খাতে ক্রীতদাস-দাসী/বন্দী মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। অন্যায়ভাবে কোন নিঃস্ব ও অসহায় ব্যক্তি বন্দী হলে তাকেও মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।

      ষষ্ঠ খাতঃ ঋণগ্রস্থ-  এ ধরণের ব্যক্তিকে তার ঋণ মুক্তির জন্য যাকাত দেয়ার শর্ত হচ্ছে- সেই ঋণগ্রস্থের কাছে ঋণ পরিশোধ পরিমাণ সম্পদ না থাকা। আবার কোন ইমাম এ শর্তারোপও করেছেন যে, সে ঋণ যেন কোন অবৈধ কাজের জন্য- যেমন মদ কিংবা না- জায়েয প্রথা  অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য ব্যয় না করে।
      সপ্তম খাতঃ আলস্নাহর পথে- সম্বলহীন মুজাহিদের যুদ্ধাস্ত্র/সরঞ্জাম উপকরণ সংগ্রহ এবং নিঃস্ব ও অসহায় গরীব দ্বীনি শিক্ষারত শিক্ষার্থীকে এ খাত থেকে যাকাত প্রদান করা যাবে। এ ছাড়াও ইসলামের মাহাত্ম ও গৌরব প্রচার ও প্রসারের কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে যারা জীবিকা অর্জনের অবসর পান না এবং যে আলিমগণ দ্বীনি শিক্ষাদানের কাজে ব্যাপৃত থাকায় জীবিকা অর্জনের অবসর পান না। তারা অসচ্ছল হলে সর্বসম্মতভাবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া যাবে।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় বর্ণিত আছে যে, ‘‘যাকাত এই সমসত্ম লোকের জন্য  যারা আলস্নাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফেরা করতে পারে না, যাচঞা না করার জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত বলে মনে করে।
      অষ্টম খাতঃ অসহায় মুসাফির- যে সমসত্ম মুসাফির অর্থ কষ্টে নিপতিত তাদেরকে মৌলিক প্রয়োজন পুরণ হওয়ার মত এবং বাড়ী ফিরে আসতে পারে এমন পরিমাণ অর্থ যাকাত থেকে প্রদান করা যায়।

প্রশ্ন: ১২৩ : মহিলাদের নামাজের সময়ে পর্দা ।

মেয়েদের নামাযের ক্ষেত্রে কিছু বাহ্যিক দিক রয়েছে, যেগুলি পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন। যেমন-
১. সালাতে মহিলাদের জন্য পর্দা আবশ্যক, অর্থাত্ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’লা বলেন:
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সুরা আহযাব- ৩৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮] হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/২৫১] মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।
২. সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না। এটা হল ফোকাহকেরামদের ইজমা। কারণ মেয়েদের আওয়াজ হল একটা ফিতনা।
اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى عَدَمِ جَوَازِ أَذَانِ الْمَرْأَةِ وَإِقَامَتِهَا لِجَمَاعَةِ الرِّجَال،
অর্থাত্, ফোকাহকেরামদের ঐক্যমত হচ্ছে যে পুরুষদের জামাতে মেয়েরা আযান এবং একামত দেয়া যায়েজ নাই।
৩. কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে। নবী করীম (স:) বলেছেন: لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً “মেয়েরা পুরুষদের ইমামতি করবে না।” (ইবনে মাজাহ)
৪. জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে। হযরত আবুহুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স:) বলেছেন:
خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا ، وَشَرُّهَا آخِرُهَا ، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا ، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا هَذَا. حَدِيثٌ صَحِيحٌ، أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ
“পুরুষদের জন্য উত্তম সাফ্ (কাতার) হল প্রথম সাফ‌, আর খারাপ সাফ হল পিছনের সাফ্। পক্ষান্তরে মেয়েদের জন্য উত্তম সাফ্ হল পিছনের সাফ্ এবং সবচেয়ে খারপ সাফ্ হল প্রথম সাফ্। (সহীহ মুসলিম)
৫. পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।
৬. স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত। মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
৭. যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাতের উপর হাত দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে। রসুল (স:) এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)
উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই।

প্রশ্ন: ১২২ : ইমামের তিলাওয়াত অশুদ্ধ হলে ।

প্রসঙ্গঃ
অশুদ্ধ তিলাওয়াতকারীর পিছনে নামাযের ইক্তিদা করা৷
প্রশ্নঃ
আমাদের মসজিদের আগের ইমাম সাহেব চলে যাওয়ার পর এমন একজন ইমাম আনছে যার কুরআন
তেলয়াত খুব অশুদ্ধ ৷ তাই জানতে চাই, এই ইমামের পিছনে নামায হবে কি? যদি না হয় তাহলে আমি কি জামাত বাদ দিয়ে একা বাড়িতে নামায পড়ব ? আমাদের বাড়ির পাশে কোন মসজিদ নাই ৷ অনেক দূরে আছে ৷
উত্তরঃ
কুরআনে কারীম শুদ্ধ করে পড়তে পারে এমন ব্যক্তি অশুদ্ধ তিলাওয়াত কারী ইমামের পিছনে নামায পড়লে তার নামায হয় না। অতএব যদি আপনাদের মসজিদের ইমামের তিলাওয়াত অশুদ্ধ ও আপনার তিলাওয়াত শুদ্ধ হয় তাহলে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়লে আপনার নামায হবে না ৷ নামায আবার দোহরিয়ে পড়তে হবে।
উল্লেখ্য যে, আপনাদের উচিত উক্ত ইমামকে পরিবর্তন করে শুদ্ধ তিলাওয়াতকারী কোন ইমামকে রাখা, অথবা উক্ত ইমামকে তিলাওয়াত শুদ্ধ করে আসার তাগিদ দেয়া। যদি তা সম্ভব না হয়, আপনি আশপাশের অন্য কোন মসজিদে জামাতে নামায আদায় করবেন ৷ তাও সম্ভব না হলে জামাতের সওয়াব পেতে উক্ত ইমামের ইক্তিদা করার পর, আবার নামাযটি দোহরিয়ে নিবেন।
-আল হিদায়া-১/১৩০; বাদায়েউস সানায়ে-১/৩৫২;
আলবাহরুর রায়েক-১/৬৩০-৬৩১ ফাতাওয়া শামী- ২/৩২৪ ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/
১৪৩-১৪৪ ৷

প্রশ্ন : ১২১ : তাক্বওয়া কি ?

তাকওয়া কি???
তাকওয়া এতই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে দুইশতেরো বেশি জায়গায় এই তাকওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাকওয়া কি জিনিস?
তাকওয়া কাকে বলে!!
একবার উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) —উবাই বিন কাব (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেন~
মা মাআনাত তাকওয়া?
তাকওয়া কি জিনিস?
তাকওয়া কাকে বলে?
তাকওয়া অর্থ কি?
উবাই বিন কাব (রাঃ) বললেন- আপনি কি কখনও এমন কোন সুরু পথ দিয়ে চলেছেন! যার দুপাশে কাটাদার গাছ রয়েছে! বা আপনি কি কখনও কাটাদার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে পথ অতিক্রম করেছেন??
তখন উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন হা করেছি।
উবাই বিন কাব (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কাটাদার জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কি ভাবে পথ অতিক্রম করে থাকেন?
উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন আমি আমার জামা—কাপড়কে গুছিয়ে, শরীরকে গুটিয়ে খুব সতর্কতার সাথে পথ অতিক্রম করি! যাতে করে আমার জামা কাপড়ে আমার শরীরে কাটা বিদ্ধ না হয়!
উবাই বিন কাব (রাঃ) তখন উমর ইবনুল খাত্বাব (রাঃ) বললেন—আপনি যে ভাবে কাটার আচড় থেকে বাচার জন্য খুব সতর্কতার সাথে পথ অতিক্রম করে থাকেন! ঠিক তেমনি ভাবে দুনিয়ার জীবনে সতর্কতার সাথে গুনাহ থেকে বেচে চালার নামই হচ্ছে তাকওয়া।
ভাই ও বোনেরা — উবাই বিন কাব (রাঃ) এর উল্লেখিত বক্তব্য থেকে আমার বুঝতে পারলাম যে দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে সতর্কতার সাথে গুনাহ থেকে বেচে চলার নামই হলো তাকওয়া।
তাকওয়ার অর্থ বুঝার জন্য আরেকটি উদাহরণ দেই—মনে করুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন। আপনি যে রুমে বসে কাজ করেন সেই রুমে আপনার মাথার উপরে একটি সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে! যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আপনাকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করছেন! আপনি কি কাজ করছেন নাকি কাজে ফাকি দিচ্ছেন।
সেই প্রতিষ্ঠানে আপনি কি ভাবে থাকবেন। আপনি কি কাজে ফাকি দিবেন নাকি সবসময় সতর্ক থাকবেন এবং উধ্যমতার সাথে কাজ করবেন। নিশ্চয় আপনি সতর্ক থাকবেন এবং ঠিক মত কাজ করবেন। কারন আপনার মাথার উপর সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। আর প্রতিষ্ঠানের পরিচালক আপনাকে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছে।
ঠিক তেমনি ভাবে তাকওয়ার মানেই হচ্ছে এই সবসময় অনুভূতি থাকা যে টুয়েন্টি ফোর অওয়ার আল্লাহ তাআলা আপনাকে মনিটরিং করছেন। চব্বিশ ঘন্টা আল্লাহ সুবহানু ওয়াত-আলা আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছেন। পৃথিবীর সবাইকে ফাকি দিতে পারলেও আপনি আল্লাহ সুবহানু ওয়তা-আলাকে ফাকি দিতে পারবেন না। পৃথিবীর সবাইকে ধোকা দিতে পারলেও আপনি আল্লাহ সুবহানু ওয়াত-আলাকে ধোঁকা দিতে পারবেন না।
কারন—অল্লাহু বাছিরুম বিল ইবাদ!
অর্থ—বান্দা যা করছে আল্লাহ তাআলা সবেই দেখছেন!
অল্লাহু বাছিরুম বিমা তামালুন!
অর্থ—তোমরা যা করছো আল্লাহ তাআলা সবিই দেখছেন! আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ব্যাপারে অবগত আছেন!
আপনার অপরাধ গুলো কেউ দেখুখ আর না দেখুখ আল্লাহ তাআলা কিন্তু ঠিকিই দেখছেন!পৃথিবীর অন্য কোন শক্তিনয় শুধু মাত্র এই অনুভূতিটাই আপনাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখতে পারে। শুধু এই অনুভূতিটা থাকার কারনে সাহাবা (রাঃ) অইয়ামে জাহিলিয়াতের সময়েও তারা সোনার মানুষে পরিনত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা আল্লাহকে ভয়করে সবধরনের গুনাহর কাজ থেকে বিরত থেকেছেন।
প্রিয় ভাইও বোনেরা আসুন তাকওয়া অর্জন করি আল্লাহকে ভয় করতে শিখি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে মাজিদে ইরশাদ করেন—হে ঈমানদরগন!আল্লাহকে যথাযথ ভয়কর। আর মুসলিম না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। (-আল ইমরানঃ১০২)
ìììআবু আনাছííí

প্রশ্ন: ১২০ : বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়তে ভুলে গেলে ।

প্রশ্ন

প্রশ্ন: বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করতে আমার খুব কষ্ট হয়; যেমন বিতিরের নামাযের দোয়ায়ে কুনুত। এ কারণে আমি এ দোয়ার জায়গায় একটি সূরা পড়তাম। যখন আমি জানতে পারলাম যে, এ দোয়া পড়া ফরজ; তখন দোয়াটি মুখস্থ করার চেষ্টা করতে থাকি। আমি নামাযের মধ্যে একটি বই থেকে দেখে দেখে দোয়াটি পড়ি। বইটিকে আমার পাশে একটি টেবিলের উপরে রাখি। আমি কিবলামুখী থেকেই বই থেকে দোয়াটি পড়ি। আমার এ আমলটি কি জায়েয?
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
১. বিতিরের নামাযে কোন একটি কাগজ কিংবা পুস্তিকা থেকে দেখে দেখে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে কোন অসুবিধা নেই; যাতে করে আপনি দোয়াটি মুখস্ত করে নিতে পারেন। মুখস্থ হয়ে গেলে আর বই দেখা লাগবে না; আপনি মুখস্থ থেকে দোয়া করতে পারবেন; যেমন যে ব্যক্তির কুরআনের বেশি কিছু মুখস্থ নেই নফল নামাযে তার জন্য কুরআন শরিফ দেখে পড়া জায়েয আছে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: তারাবীর নামাযে কুরআন শরীফ দেখে পড়ার হুকুম কি? এবং এ ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর দলিল কি?
উত্তরে তিনি বলেন: রমযানে কিয়ামুল লাইলের নামাযে কুরআন শরিফ দেখে পড়তে কোন বাধা নেই। কারণ এতে করে মুসল্লিদেরকে সম্পূর্ণ কুরআন শরিফ শুনানো যেতে পারে। এবং যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর দলিলের মাধ্যমে নামাযে কুরআন তেলাওয়াতের বিধান সাব্যস্ত হয়েছে; যা মুসহাফ (কুরআনগ্রন্থ) দেখে পড়া ও মুখস্থ থেকে পড়া উভয়টিকে অন্তর্ভূক্ত করে। আয়েশা (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি তাঁর আযাদকৃত দাস যাকওয়ানকে কিয়ামে রমযানে তাঁর ইমামতি করার নির্দেশ দিতেন এবং সে মুসহাফ দেখে দেখে কুরআন পড়ত।[ইমাম বুখারি তাঁর সহিহ গ্রন্থে এ উক্তিটি নিশ্চয়তাজ্ঞাপক ভাষায় সংকলন করেছেন]
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৫)]
২. বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত হুবহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত শব্দে হওয়া ওয়াজিব নয়। বরং মুসল্লি অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়াতেও পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া আছে এমন কিছু আয়াত পড়েন সেটাও জায়েয আছে। ইমাম নববী বলেন: জেনে রাখুন, অগ্রগণ্য মাযহাব মতে, কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই। তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে; এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কুরআনের আয়াত পড়লেও কুনুতের উদ্দেশ্য হাছিল হয়ে যাবে। তবে, হাদিসে যে দোয়া এসেছে সেটা পড়া উত্তম।[ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০]
৩. প্রশ্নকারী ভাই যা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি দোয়ায়ে কুনুতের পরিবর্তে কুরআন পড়তেন নিঃসন্দেহে এটা করা ঠিক হয়নি। কারণ কুনুতের উদ্দেশ্য হচ্ছে- দোয়া করা। তাই যেসব আয়াতে দোয়া আছে সেসব আয়াত পড়া ও সেগুলো দিয়ে কুনুত করা জায়েয হবে। যেমন ধরুন আল্লাহ তাআলার বাণী:
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ  [آل عمران: 8]
(অনুবাদ:হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা।)[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮]
৪. প্রশ্নকারী ভাই উল্লেখ করেছেন যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ফরয; এ কথা সহিহ নয়। বরং দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। তাই মুসল্লি যদি দোয়ায়ে কুনুত নাও পড়েন নামায সহিহ হবে।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রমযান মাসে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার হুকুম কি? দোয়ায়ে কুনুত বাদ দেয়া কি জায়েয?
জবাবে তিনি বলেন: বিতির নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়া সুন্নত। যদি কখনও কখনও বাদ দেয় এতে কোন অসুবিধা নেই।
তাঁকে আরও জিজ্ঞেস করা হয়: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ে; এ আমল কি সলফে সালেহীন থেকে বর্ণিত আছে?
উত্তরে তিনি বলেন: এতে কোন অসুবিধা নেই। বরং এটি পালন করা সুন্নত। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুসাইন বিন আলী (রাঃ) কে বিতিরের নামাযের ‘দোয়ায়ে কুনুত’ শিখাতেন। তিনি দোয়ায়ে কুনুত কখনও কখনও বাদ দেয়া কিংবা নিয়মিত পড়া কোন নির্দেশ দেননি। এতে প্রমাণিত হয় যে, উভয়টি করা জায়েয। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি যখন মসজিদে নববীতে সাহাবীদের ইমামতি করতেন তখন তিনি কোন কোন রাতে দোয়ায়ে কুনুত পড়তেন না; সম্ভবত তিনি এটা এ জন্য করতেন যাতে করে মানুষ জানতে পারে যে, দোয়ায়ে কুনুত পড়া ওয়াজিব নয়।
আল্লাহই তাওফিকদাতা।
[ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা (২/১৫৯)]

আরাফার দিনে রোজার বিধান কী? প্রশ্নঃ ১১৮

একসাথে রোজা ও ঈদ হবে কি না তা নিয়ে মতবিরোধ চলছে এবং থাকবেও। কেননা এই মতবিরোধ যৌক্তিক কিন্তু এটার ওপর কিয়াস করে আরাফার রোজা কোনো তারিখে হবে সেটা নিয়ে মতবিরোধের কোনো কারণ আমি দেখছি না এবং মতবিরোধ থাকা উচিত‌ও না। এটা মূলত মতবিরোধের কোনো বিষয় নয়।
কেননা রাসূলুল্লাহর স্পষ্ট হাদিস রয়েছে,
صيام يوم عرفة احتسب على الله ان يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده.
অর্থাৎ আরাফার দিনের রোজা তার পূর্বের এক বছর এবং পরবর্তী এক বছর মোট দুই বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়।
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে , রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম "আরাফার দিনে" রোজা রাখতে বলেছেন, 9 জিলহজ শব্দ উল্লেখ করেননি। যদিও 9 জিলহজ আর আরাফার দিনের মধ্যে বাহ্যত কোনো পার্থক্য নেই। কেননা 9 জিলহজ‌ই আরাফার দিন কিন্তু এখানে একটি বিরাট সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে ।
,
আর তা হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন রোজা রাখতে এই জন্য বলেছেন যে, সেই দিন হাজীগন আরাফার ময়দানে যাবেন, তাকবীর-তাহলীল বলবেন। অনেক মর্যাদা পাবেন , নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারবেন। আমরা যারা যেতে পারি না আমরা ওই দিন রোজা রাখে যেন তাদের সাথে স‌ওয়াবে একটু শরিক হ‌ই এবং নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারি। এখন আমরা যদি নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী 9 জিলহজ রোজা রাখি তাহলে সেইদিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে থাকেন না , সে দিন তারা কুরবানী করে থাকেন। অতএব, রাসূলের রোজা রাখার নির্দেশ দেওয়ার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় । যদি রাসুলুল্লাহ 9 জিলহজ শব্দটি হাদীসে উল্লেখ করতেন তাহলে বাংলাদেশের তারিখ অনুযায়ী 9 জিলহজ রোজা রাখার সুযোগ ছিল কিন্তু তিনি যেহেতু 9 জিলহজ শব্দে উল্লেখ না করে "আরাফার দিন" শব্দটি উল্লেখ করেছেন। অতএব যেদিন হাজীগণ আরাফার ময়দানে অবস্থান করেন সেই দিনই রোজা রাখা এই হাদিসের উদ্দেশ্য এবং পূর্ণ ফজিলত পেতে হলে আগামীকাল তথা বাংলাদেশ তারিখ অনুযায়ী 8 জিলহজ রোজা রাখতে হবে। দ্বিধাদ্বন্দ্ব এড়াতে চাইলে সর্বোত্তম হচ্ছে 8 এবং 9 দুই দিন‌ই রোজা রাখা। এখন কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, 9 তারিখ রোজা রাখলে সেই দিন তো সৌদি আরবে ঈদ । আর ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। এই প্রশ্ন না তোলার জন্যই প্রথমে বলেছি যে, রোজা এবং ঈদ একসাথে হবে না আলাদা হবে সেটা নিয়ে মতভেদ করা যৌক্তিক এবং উভয় পক্ষের দলিল-প্রমাণ বিদ্যমান। অত‌এব, 9 জিলহজ সৌদি আরব ঈদ হইলে সেই দিন বাংলাভাষীর জন্য রোজা রাখা হারাম হয় না। কেননা রোজা ও হজ্জ্ব প্রত্যেক দেশেই রয়েছে কিন্তু আরাফা একটা জায়গাতেই হয়ে থাকে। অতএব, আরাফার ক্ষেত্রে সেটাকেই ফলো করতে হবে কিন্তু রোজা ও ঈদের ক্ষেত্রে তা জরুরী নয় ।
(তবে জরুরি কিনা তা বিস্তর আলোচনার বিষয়)।
(উত্তর দিয়েছেনঃ আসলাম সাঈদী)

app-ads.txt, ads.txt

1. app-ads.txt
2. ads.txt

google.com, pub-2301465691992245, DIRECT, f088c47fec942fa0
google.com, pub-2301465691992245, DIRECT, f08c47fec0942fa0

ইমামতির নিয়ম কানুন । প্রশ্ন: ১১৯ ।

ইমামতির নিয়ম কানুন ।


ইমামতির জন্য আলাদা কোন নিয়ম কানুন আছে কি ?










এই ভিডিওটি দেখুন (ক্লিক করুন)  : ইমামতির জন্য আলাদা নিয়ম কানুন আছে কি ? 










যে ইমামতি করার অধিক হকদার

এ ক্ষেত্রে তরতীব হলো নিম্নরূপ:
প্রথমত: আল্লাহর কিতাব অধিক পাঠকারী: অর্থাৎ যে ব্যক্তির অধিক কুরআন মুখস্থ আছে এবং কুরআনের হুকুম-আহকাম বিষয়ে অধিক অধিক সমঝদার।
দ্বিতীয়ত: সুন্নতে নববী সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী: অর্থাৎ যে সুন্নতে নববীর হুকুম আহকাম, অর্থ ও ভাব সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী।
তৃতীয়ত: হিজরতের ক্ষেত্রে অগ্রগামী: অর্থাৎ যে ব্যক্তি দারুল কুফর থেকে দারুল ইসলামে অন্যদের তুলনায় আগে হিজরত করেছে। আর যদি হিজরত না থাকে তাহলে যে ব্যক্তি তাওবা ও গুনাহ পরিত্যাগের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় আগে।
চতুর্থত: অন্যদের তুলনায় বয়সে যিনি বড়: যদি উল্লিখিত বিষয়ের ক্ষেত্রে সবাই সমান হয় সেক্ষেত্রে এ বিষয়টি প্রযোজ্য।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব অধিক পাঠকারী সে মানুষের ইমামতি করবে। যদি আল্লাহর কিতাব অধিক পাঠের ক্ষেত্রে মানুষ সমান হয়, তাহলে যে ব্যক্তি সুন্নত সম্পর্কে বেশি জ্ঞানী। আর যদি সুন্নতের ক্ষেত্রে সবাই সমান হয়, তাহলে যে হিজরতের ক্ষেত্রে অধিক পুরাতন। আর যদি হিজরতের ক্ষেত্রে সবাই সমান হয়, তাহলে ইসলামের ক্ষেত্রে যে অধিক পুরাতন।»(বর্ণনায় মুসলিম)
মসজিদে ইমাম নিয়োগের সময় অথবা যে মসজিদের সুনির্দিষ্ট কোনো ইমাম নেই সে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ পড়ার সময় এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। পক্ষান্তরে যদি ইমামতির জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো লোক থাকে, অথবা বাড়ির মালিক ইমাম হন, কর্ণধার ব্যক্তি তার অধীনস্থদের ইমাম হন, এ ক্ষেত্রে তাকেই ইমামতির জন্য এগিয়ে দিতে হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «অধিপতি ব্যক্তির অধীনস্থ কেউ যেন তার ইমামতি করতে না যায়, আর বাড়ির মালিকের অনুমতি ব্যতীত কেউ যেন বসার জন্য তৈরি করে রাখা জায়গায় না বসে।»(বর্ণনায় বুখারী)

ইমাম ও মুকতাদীর দাঁড়ানোর স্থান

১-মুকতাদী একজন হলে: ইমামের বরাবর ডানে দাঁড়াবে। ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন,,«আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক রাতে নামাজ পড়েছি, অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বামে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেছন দিক থেকে আমার মাথা ধরে তাঁর ডানে এনে দাঁড় করালেন।»(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
২-জামাত যদি দুজন বা দুজনের অধিক লোকের হয়, তাহলে ইমাম তাদের সম্মুখে ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় দাঁড়াবে। এর প্রমাণ জাবের ও জিবার রাযি. এর হাদীস যে, তাদের দুজনের একজন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডানে অন্যজন বামে দাঁড়ালেন। জাবের রাযি. বলেন,«অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দুজনের হাত ধরে পেছনে সরিয়ে দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলেন।»(বর্ণনায় মুসলিম)

নামাজে নারীদের দাঁড়ানোর পদ্ধতি

১- শুধু নারীরা যদি জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে, তবে সুন্নত হলো তাদের ইমাম তাদের কাতারের মাঝেই দাঁড়াবে। সামনে দাঁড়াবে না।
২- নারী পুরুষের পেছনে দাঁড়াবে যদি পুরুষ নারীর ইমাম হয়। আর যদি পুরুষদের জামাতের সাথে নামাজ আদায় করে তবে পুরুষদের কাতারের পেছনে দাঁড়াবে।
৩- যদি একদল নারী পুরুষদের জামাতের সাথে নামাজ আদায় করতে যায়, তবে সুন্নত হলো নারীরা পুরুষদের থেকে দূরুত্বে পেছনে, পুরুষদের কাতারের মতোই কাতার করে দাঁড়াবে। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লাম বলেন,«নারীদের সর্বোত্তম কাতার হলো শেষ কাতার এবং নিকৃষ্টতম কাতার হলো প্রথম কাতার।»(বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)

ইমামের পিছনে ইকতিদা করা বিষয়ক কিছু আহকাম

১- ঘর থেকে মাইকের আওয়াজ শুনে বা রেডিও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত নামাজের ইমামের সাথে ইকতিদা করে নামাজ আদায় করা শুদ্ধ নয়।
২- মসজিদের বাইরে থেকে ইমামের ইকতিদা করা শুদ্ধ হবে যদি কাতার সংযুক্ত থাকে।
৩- মসজিদের ছাদে অথবা ইমামের দাঁড়ানোর স্তর থেকে নিচে নামাজ পড়া বৈধ রয়েছে, যদি ইমামের আওয়াজ শোনা যায়।
৪- নফল নামাজ আদায়কারীর পেছনে ফরয নামাজ আদায়কারীর ইকতিদা করা শুদ্ধ নয়। তবে এর উল্টোটা শুদ্ধ
|(বর্ণনায় বুখারী)

ইমামের পূর্বে কোনোকিছু করে ফেলা।

১- মুকতাদীর উচিত ইমামের অনুকরণ করা। অর্থাৎ ইমাম যখন কোনো কিছু করবে এর অব্যবহিত পরেই মুকতাদী তা করবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«ইমাম এ জন্য রাখা হয়েছে যে মানুষ তার অনুকরণ করবে। অতঃপর সে যখন তাকবীর দেবে তখন তোমরাও তাকবীর দাও। যখন রুকু করবে তোমরাও রুকু করো। যখন সিজদা করবে তোমরাও সিজদা করো।» 
[বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম]
২- ইমামের পূর্বে কোনোকিছু করে ফেলা হারাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জোর দিয়ে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন,«তোমাদের কেউ কি আশঙ্কা করে না যে, সে যখন ইমামের পূর্বে মাথা উঠিয়ে ফেলবে, আল্লাহ তার মাথাকে গাধার মাথায় পরিণত করবেন, অথবা তার আকৃতিকে গাধার আকৃতিতে রূপান্তরিত করবেন?»
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)
অজুবিহীন ব্যক্তির পেছনে নামাজ
অজুবিহীন ব্যক্তির পেছনে নামাজ পড়া শুদ্ধ নয়। কিন্তু যদি এ ব্যাপারে নামাজ শেষ হওয়ার পর জানা যায়, তবে মুকতাদীর নামাজ শুদ্ধ হয়েছে বলে ধরা হবে। তবে ইমামকে পুনরায় তার নামাজ আদায় করে নিতে হবে।

====================================================

ইমাম ও ইমামতিঃ
ইমামতির বিবিধ মাসাইলঃ
১-যে ইমামকে মুসল্লীগণ অপছন্দ করে তার ইমামতি:
এমন ইমাম যাকে মুসাল্লীরা অপছন্দ করে সেই ইমামের ইমামতি করা মাকরূহ। তবে বিদ্বানগণ মনে করেন, অপছন্দের কারণ যেন দ্বীনী কারণ হয়; কোন দুনিয়াবী কারণ না হয়। অনুরূপ অপছন্দকারীর সংখ্যা যেন বেশী হয়, দু-চার জনের অপছন্দ করা যথেষ্ট নয়। [নায়লুল আউত্বার, শাওকানী,৩/২২৫]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তিন শ্রেণীর লোকের নামায তাদের মাথার উপর থেকে এক বিঘতও উঠানো হয় না (অর্থাৎ তাদের নামায আল্লাহর নিকট কবূল হয় না)।
১-যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামত করে অথচ তাকে তারা অপছন্দ করে।
২-সেই মহিলা যে রাত্রি যাপন করে অথচ তার স্বামী তার উপর অসন্তুষ্ট।
৩-পলাতক দাস”। [সহীহ সুনান ইবনু মাজাহ, হাদীস নং-৭৯২]
ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বিষয়টিকে (ছোট ইমামতি) নামাযের ইমামতির সাথে সম্পর্কিত মনে করেন, বড় ইমাম তথা রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে মনে করেন না। কারণ রাষ্ট্রপরিচালকের ইমামতি বেশীরভাগ লোকেই অপছন্দ করে।
[নায়লুল আউত্বার,৩/২২৫] (বড় ইমামত ও ছোট ইমামত বিষয়টি ১ম পর্বে দেখুন)
২-নফল নামায পাঠকারীর পিছনে ফরয সালাত আদায় করাঃ
কোন ব্যক্তি কোথাও ফরয নামায পড়েছে অতঃপর এমন লোকদের ইমামতি করতে চায়, যারা এখনো সেই ফরয পড়েনি, তাহলে এমন করা বৈধ। এটা ইমামের জন্য নফল হবে এবং লোকদের জন্য ফরয। উলামাগণ এই বিষয়টিকে নফল নামায পাঠকারীর পিছনে ফরয নামায আদায় করা হিসাবে জানেন। সাহাবী মুয়ায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে ইশার নামায আদায় করতেন এবং নিজ গোত্রে ফিরে গিয়ে পুনরায় সেই নামায ইমাম হয়ে আদায় করতেন।
[মুসলিম, অধ্যায়ঃ সালাত, নং৪৬৫] অন্য বর্ণনায় উল্লেখ হয়েছে, সেটা তার জন্য (মুআযের জন্য) নফল হবে এবং অন্যদের জন্য ফরয। [শাফেয়ী ও দ্বারা কুত্বনী বর্ণনা করেন। দেখুন নায়লুল আউত্বার,৩/২১৩ এবং সঊদী স্থায়ী ফতোয়া বোর্ড, ফতোয়া নং ৪৭০৬, লাজনা দায়িমাহ,৭/৪০১]
উক্ত দলীলের আধারে বুঝা যায় যে, রামাযান মাসে যদি কোন ব্যক্তি ইশার নামায আদায় করার উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করে দেখে যে, লোকেরা ইশার নামায শেষ করে তারাবীহ পড়ছে, তাহলে সে ইশার ফরয নামাযের নিয়তে তাদের সাথে নামায পাঠ করবে এবং ইমামের সালাম ফিরানোর পর বাকি রাকায়াত পূর্ণ করবে। [সউদী ফতোয়া বোর্ড, নং৬৪৯৬]
৩-ফরয সালাত আদায়কারীর পিছনে নফল সালাত আদায় করাঃ
ফরয নামায আদায়কারী ইমামের পিছনে নফল নামায আদায় করা বৈধ। ইবনু কুদামাহ (রহঃ) বলেনঃ ‘আহলে ইলমদের এ বিষয়ে কোন মতভেদ আমাদের জানা নেই’। [মুগনী,৩/৬৮]
আবু যার গেফারী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ তোমার অবস্থা কেমন হবে, যখন শাষকগণ নামায সঠিক সময়ে না পড়ে বিলম্বে পড়বে? আমি বললামঃ এমন সময় আমার করণীয় কি? তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘তুমি সঠিক সময়ে নামায পড়ে নিবে অতঃপর তাদের সাথে সেই নামায পেলে তাও পড়ে নিবে; কারণ সেটা তোমার জন্য নফল হবে’’। [মুসলিম]
ইয়াজীদ বিন আসওয়াদ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, একদা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ফজরের নামায আদায় করেন। নামায শেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ব্যক্তিকে দেখেন, যারা তাঁর সাথে নামায পড়ে নি। তখন তিনি তাদের দু জনকে ডাকেন। তারা ভয়ে ভয়ে কাছে আসলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বলেনঃ ‘‘তোমরা দুই জনে আমাদের সাথে নামায পড়লে না কেন”? তারা বললঃ আমরা নিজ বাড়িতে নামায পড়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “এমন করো না, যখন তোমরা আপন বাড়িতে নামায পড়বে এবং ইমামকে এমতাবস্থায় পাবে যে, সে এখনো নামায পড়ে নি, তাহলে তার সাথে নামায পড়ে নিবে। কারণ; এটা তোমাদের জন্য নফল হয়ে যাবে”।
[আবু দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, দ্বারা কুত্বনী, ইবনুস সাকান এবং ইবনু হিব্বান হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আবু দাঊদ, আলবানী, নং৫৯০]
৪-নির্দিষ্ট ফরয সালাত আদায়কারীর পিছনে অন্য ফরয আদায় করাঃ
ফরয সালাত আদায়কারী ইমামের পিছনে মুক্তাদী অন্য ফরয নামায আদায় করতে পারে। উদাহারণ স্বরূপ ইমাম আসরের নামায পড়াচ্ছে আর তার সাথে কেউ যহরের নিয়তে যহর আদায় করছে। চাই ইমাম ও মুক্তাদীর নামাযের রাকাআত সংখ্যা এক হোক যেমন আসর আদায়কারীর পিছনে যহর পড়া কিংবা উভয়ের নামাযের রাকাআত সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হোক। যেমন ইশার ফরয নামায আদায়কারী ইমামের পিছনে মগরিব পড়া, কারণঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “ মানুষের আমলসমূহ নির্ভর করে তার নিয়তের উপরে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাই পায়, যার সে নিয়ত করে থাকে”।
[বুখারী, ১ম হাদীস]
তাই এখানে মুক্তাদী ও ইমাম যে যেই নিয়তে নামায পাঠ করবে, সে সেই অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।
এ বিষয়ের বৈধতায় উলামাগণ ঐসব দলীল উল্লেখ করেছেন যা, ইতিপূর্বে ফরয আদায়কারীর পিছনে নফল আদায় করা এবং নফল আদায়কারীর পিছনে ফরয আদায় করার দলীল হিসাবে উল্লেখ হয়েছে। কেননা যদি ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়ত একই হওয়া শর্ত হতো, তাহলে উপরোক্ত বিষয়দুটি বৈধ হত না।
ইবনু হাযম (রহঃ) বলেনঃ ‘না কুরআনে, না সুন্নতে, না ইজমায়, না কিয়াসে এমন কিছু এসেছে যা, ইমাম ও মা’মূমের (মুক্তাদীর) নিয়ত এক হওয়া জরূরী করে। তাই প্রত্যেক এমন বিধান যা কুরআন, সুন্নত এবং ইজমা জরুরী করে না, তা জরুরী নয়’।
[মুহাল্লা,৪/৩১৬-৩১৭]
একই ফরয নামাযে ইমাম ও মুক্তাদীর নিয়ত ভিন্ন হওয়ার সময় যদি তাদের নামাযের রাকাআত সংখ্যা এক হয়, তাহলে ইমামের পিছনে নামায পাঠকারীর কোন বাড়তি বা ঘাটতি কিছু করতে হয় না, যেমন যহর আদায়কারীর পেছনে আসর পড়া। কিন্তু মাগরিব আদায়কারীর পিছনে যদি কেউ ইশা পড়ে, তাহলে সে কী করবে? কারণ এখানে মুক্তাদীর রাকাআত সংখ্যা বেশী। শাইখ ইবনে উসায়মীন (রহঃ) বলেনঃ সে ইমামের সালাম ফিরানোর পর উঠে এক রাকাআত পড়ে নিবে। এই ভাবে যদি কেউ ইশার নামায সম্পাদনকারীর পিছনে মাগরিব পড়ে, তাহলে সে কী করবে? কারণ এক্ষেত্রে ইমামের থেকে তার রাকাআত সংখ্যা কম। তিনি বলেনঃ সে দুই নিয়মের যে কোন একটি করতে পারে। তৃতীয় রাকাআতের পর যখন ইমাম চতুর্থ রাকাআতের জন্য দাঁড়াবে তখন সে বসে তাশাহ্হুদের দুআ পড়ে ইমামের সালাম ফিরানোর অপেক্ষা করবে, যখন ইমাম চতুর্থ রাকাআত পড়ে সালাম ফিরাবে তখন সেও ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে কিংবা তৃতীয় রাকাআত শেষে যখন ইমাম চতুর্থ রাকাআতের জন্য দাঁড়াবে, তখন সে নিজে তাশাহ্হুদ দিয়ে সালাম ফিরাবে’।
এমন দৃষ্টান্ত সালাতুল খাওফের পদ্ধতিতে রয়েছে।[দেখুন,শারহুল মুমতি,৪/২৬১]
৫-নামাযরত অবস্থায় একাকী নামাযের নিয়ত পরিবর্তন করে ইমামতির নিয়ত করা
কিংবা ইমামতির নিয়ত পরিবর্তন করে মুক্তাদীর নিয়ত করাঃ
প্রত্যেক নামাযীকে নামাযের সময় ফরয, নফল, ইমামতি বা মুক্তাদী ইত্যদির নিয়ত অন্তরে করতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এক ব্যক্তি একাকী নামায পড়ার নিয়তে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যে কেউ তার সাথে শরীক হল, এখন কি সে একাকীর নিয়ত থেকে ইমামতির নিয়ত করতে পারে? কিংবা ইমামের অনুপস্থিতে কেউ ইমামতি করতে দাঁড়িয়েছে এমতাবস্থায় ইমাম উপস্থিত হয়েছে, তাহলে সে কি ইমামকে আগে করে দিয়ে মুক্তাদীর নিয়ত করতে পারে? বিষয়টিকে উলামাগণ নামাযরত অবস্থায় নিয়ত পরিবর্তন করা শিরোনামে উল্লেখ করেছেন।
একাকী নামাযী প্রয়োজনে নামাযরত অবস্থায় তার নিয়ত পরিবর্তন করে ইমামতির নিয়ত করতে পারে। ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বলেনঃ একদা আমি আমার খালা মায়মূনা (রাযিঃ) এর নিকট রাত যাপন করি, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে উঠে নামায (তাহাজ্জুদের নামায) শুরু করেন, তখন আমিও তাঁর সাথে তাঁর বাম পাশে নামাযে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথা ধরে ডান দিকে করে দেন”।
[বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬৯৯]
বুঝা গেল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একা নামাযের নিয়তে দাঁড়ান অতঃপর ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) মুক্তাদী হলে, তাঁকে ইমাম হতে হয়। অন্যদিকে একদা রামাযান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে একা নামায শুরু করলে ধীরে ধীরে অনেক সাহাবী পিছনে তাঁর ইক্তিদা করে নামায আদায় করেন।
[বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৭৩০-৭৩১]
অনুরূপ ইমামতির নিয়ত থেকে মুক্তাদী হওয়াও প্রমাণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বানু আমর বিন আউফ গোত্রে মীমাংসা করতে গেলে নামাযের সময় হয়। কোন কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপস্থিতিতে বিলম্ব হলে মুআয্ যিন আবু বকর (রাযিঃ) কে ইমামতি করতে বলেন। তিনি ইমাম হয়ে নামায শুরু করলে নবী উপস্থিত হন। লোকেরা ইশারা করলে আবু বকর (রাযিঃ) পিছনে সরে আসেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামতি করেন।
[বুখারী, আযান অধ্যায়, নং ৬৮৪]
বুঝা গেল, আবু বকর (রাযিঃ) ইমামতির নিয়ত পরিবর্তন করে মুক্তাদী হলেন।
লেখক: আব্দুর রাকীব মাদানী
দাঈ, দাওয়া’হ সেন্টার খাফজী, সাউদি আরাব
সম্পাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী

প্রশ্ন : ১১৮ : বিশ্বনবী সা: এর জানাযার ইমাম কে ছিলেন ?

ইবনে মাজাহ শরিফে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মঙ্গলবার সাহাবায়ে কেরাম রাসুলে কারিম সা.-এর গোসল ও কাফনের কাজ শেষ করেন। নবীজির দেহ মোবারক রওজার পাশে রাখেন। সাহাবারা দল দলে নবীজির কাছে আসতে থাকেন। কারও ইমামতিতে নয়; সবাই একা একা নামাজ ও দুরুদ শেষে বেরিয়ে যান। (ইবনে মাজাহ) অন্য কিতাবে আছে, রাসুল সা.-এর ইন্তেকাল এর আগে সাহাবিরা নবীজির দরবারে আসলেন। সাহাবাদের দেখে নবীজির চোখে বেদনার জল। নবীজি বললেন, আমি তোমাদের আল্লাহর কাছে সোপর্দ করছি, আল্লাহ তোমাদের সঙ্গী হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা.! আপনার যাওয়ার সময় খুব নিকটে চলে এসেছে, আপনার ইন্তেকালের পর আপনাকে কে গোসল দিবে? রাসুল সা. বললেন, আমার আহলে বাইত মানে আমার পরিবারের সদস্যরা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন, কে আপনাকে কাফন পরাবে? রাসুল সা. বললেন, আমার আহলে বাইত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন কে আপনাকে কবরে নামাবে? রাসুল সা. বললেন, আমার আহলে বাইত। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ আবার জানতে চাইলেন কে আপনার জানাজা কে পড়াবে? তখন রাসুল সা.-এর চোখ বেয়ে বেদনার জল নেমে এলো। তিনি বললেন, তোমাদের নাবীর জানাজা এমন হবে না, যেমন তোমাদের হয়। যখন আমার গোসল হয়ে যাবে তখন তোমরা সবাই ঘর থেকে বের হয়ে যাবে। সবার আগে জিবরাইল আমার জানাজা পড়বে। তারপর মিকাঈল ও ই¯্রাফিল ধারাবাহিকভাবে আরশের অন্যান্য ফেরেশতারা আসবে ও আমার জানাজা পড়বে। তারপরে তোমাদের পুরুষরা, নারীরা এবং শিশুরা আমার জন্য দোয়া ও সালাম পড়বে। অতঃপর তোমরা আমাকে আল্লাহর সোপর্দ করে দিবে। (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-৫/২২২, দালায়েলুন নবুয়্যাহ লিলবায়হাককি) নবীজি সা.-এর জানাজা বিষয়ে আরো দীর্ঘ হাদিস পাওয়া যায় তিরিমিজি শরিফে। সাহাবি হজরত সালেম বিন ওবায়েদ রা. বলেন, আমি প্রথমে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. কে রাসুলে কারিম সা.-এর ইন্তেকালের সংবাদ দিই । তখন আবু বকর সিদ্দিক রা. আমাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে ভেতরে আসো । সাহাবি হজরত সালেম বিন ওবায়েদ রা. বলেন, হজরত আবু বকর রা. যখন রাসুলের নিকট যেতে চাইলেন, তখন চারপাশে মানুষের প্রচন্ড- ভিড় । হজরত আবু বকর রা. লোকদের বললেন, তোমরা আমাকে সামান্য রাস্তা দাও ! লোকেরা ভেতরে যাওয়ার পথ করে দিল ! তিনি ভেতরে গেলেন, মাথা নুইয়ে কাছে গিয়ে নবীজি সা. কে দেখলেন । নবীজির পবিত্র কপালে হজরত আবু বকর রা. চুমু খেলেন । তারপর কোরআনের আয়াত পড়লেন, যার অর্থ হলো, নিশ্চয় তুমিও ইন্তেকাল করবে এবং তারাও ইন্তেকাল করবে । হজরত আবু বকর রা. বেরিয়ে এলে; লোকেরা জানতে চাইলেন, ওগো নবীজির বন্ধু ! নবীজি কি ইন্তেকাল করেছেন ? হজরত আবু বকর রা. বললেন, হ্যা । তখন লোকেরা নবীজির ইন্তেকালের খবর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলো । তারপর সাহাবায়ে কেরাম হজরত আবু বকর রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, ওগো নবীজির বন্ধু ! নবীজির কি জানাজার নামাজ পড়া হবে ? তিনি বললেন, হ্যা । জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে ? হজরত আবু বকর রা. বললেন, এভাবে যে, এক এক জামাত নবীজির ঘরে প্রবেশ করবে এবং জানাজা পড়ে বেরিয়ে আসবে । তারপর অন্য জামাত প্রবেশ করবে । সাহাবারা হজরত আবু বকর রা. কে জিজ্ঞাসা করলেন, নবীজিকে কি দাফন করা হবে ? তিনি বললেন, জি । জিজ্ঞাসা করা হল, কোথায় ? তিনি বললেন, যেখানে আল্লাহ তায়ালা নবীজির রূহ কবজ করেছেন সেখানেই । কেননা, আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয় নবীজিকে এমন স্থানে মৃত্যু দান করেছেন যে স্থানটি উত্তম ও পবিত্র । সাহাবারা দৃঢ়ভাবে মেনে নিলেন হজরত আবু বকর রা.-এর কথা । হজরত আবু বকর রা. নিজেই নবীজির আহলে বায়াত তথা রাসুলের পরিবার ও বংশের মানুষদের ডেকে গোসল নির্দেশ দেন । (সূত্র : শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৯, ৩৯৭, শরফুল মুস্তফা, বর্ণনা নং-৮৫০, আল আনওয়ার ফি শামায়িলিন নাবিয়্যিল মুখতার, বর্ণনা নং-১২০৯) ইমাম শাফি রহ. এবং কাজি ইয়াজ রা. বলেন, নবীজি সা.-এর জানাজা পড়া হয়েছে । কিতাবুল উম্মু/ সিরাতে মস্তুফা/৩য় খ-: ২৩৫ পুনশ্চ : নবীজির জানাজা হয়েছে । সাহাবারা একা একা পড়েছেন । কেউ ইমামতি করেননি । তবে তাবাকাতে ইবনে সাদের বরাতে বলা হয়, হজরত আবু বকর ও ওমর রা. এক সঙ্গে নবীজি সা.-এর ঘরে উপস্থিত হন । নবীজির দেহ মোবরক সামনে রেখে নামাজ-সালাম ও দুরুদ পেশ করেন । দীর্ঘ দোয়ার সময় পেছনে সারিবদ্ধ সাহাবিরা আমিন আমিন বলেছেন । (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৫ম খ-: ২৬৫) 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...