প্রশ্ন ১৪ঃ নামায এর বিস্তারিত ।

নামায

মুসলিমদের প্রধান ইবাদাত









নামাযনামাজ (ফার্সিنَماز‎‎) বা সালাত হল ইসলাম ধর্মের প্রধান ইবাাদত । প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত (নির্দিষ্ট নামাযের নির্দিষ্ট সময়) নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক বা ফরজ। নামায ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। শাহাদাহ্‌ বা বিশ্বাসের পর নামাযই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
নামায শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত (ফার্সিنماز‎‎) এবং বাংলা ভাষায় পরিগৃহীত একটি শব্দ যা আরবি ভাষার সালাত শব্দের (আরবিصلاة‎‎, কুরআনিক আরবি: صلوة,) প্রতিশব্দ। বাংলা ভাষায় 'সালাত'-এর পরিবর্তে সচরাচর 'নামাজ' শব্দটিই ব্যবহৃত হয়। ফার্সিউর্দুহিন্দিতুর্কী এবং বাংলা ভাষায় একে নামায (ফার্সি ভাষা থেকে উদ্ভূত) বলা হয়। কিন্তু এর মূল আরবি নাম সালাত (একবচন) বা সালাহ্‌(বহুবচন)।
"সালাত" -এর আভিধানিক অর্থ দোয়া, রহমত, ক্ষমা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থ: ‘শরী‘আত নির্দেশিত ক্রিয়া-পদ্ধতির মাধ্যমে আল্লাহর নিকটে বান্দার ক্ষমা ভিক্ষা ও প্রার্থনা নিবেদনের শ্রেষ্ঠতম ইবাদতকে ‘সালাত’ বলা হয়, যা তাকবীরে তাহরীমা দ্বারা শুরু হয় ও সালাম দ্বারা শেষ হয়’।[১]

ইতিহাসসম্পাদনা

ইসলামের বিভিন্ন বর্ণনা অনুযায়ী মুহাম্মাদ (সা.) ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং অব্যবহিত পরে সূরা মু’মিন-এর ৫৫ নম্বর আয়াত স্রষ্টার পক্ষ থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামাজ মুসলিমদের জন্য ফরজ (আবশ্যিক) হওয়ার নির্দেশনা লাভ করেন। তিনি ৬১৪ খ্রিষ্টাব্দে সকাল, সন্ধ্যা ও দুপুরে দৈনিক তিন ওয়াক্ত নামাজের আদেশ লাভ করেন। ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজের সময় পাঁচওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, এ সময় যুহর, আসর ও ইশা ২ রাকায়াত পড়ার বিধান ছিল। ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে আল্লাহর তরফ থেকে ২ রাকায়াত বিশিষ্ট যুহর, আসর ও ইশাকে ৪ রাকায়াতে উন্নীত করার আদেশ দেয়া হয়।[২]

শর্তসম্পাদনা

কারো ওপর নামাজ ফর‌য হওয়ার জন্য শর্তগুলো হলোঃ-
  • মুসলিম হওয়া
  • সাবালক হওয়া এবং
  • সুস্থ মস্তিস্কের হওয়া।

নামাযের শর্তাবলীসম্পাদনা

নিম্নের পাঁচটি কারণ সংঘটিত হলে নামাজ বৈধ হয়।
  • নামাজের ওয়াক্ত সম্পর্কে নিশ্চিত হলে। অনিশ্চিত হলে নামাজ হবে না, যদি তা ঠিক ওয়াক্তেও হয়।
  • কাবামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তবে অসুস্থ এবং অপারগ ব্যাক্তির জন্য এই শর্ত শিথিলযোগ্য।
  • সতর ঢাকা থাকতে হবে। পুরুষের সতর হল নাভির উপর থেকে হাঁটুর নিচ (টাখনুর উপরে) পর্যন্ত, আর নারীর সতর হল মুখমণ্ডল, দুই হাতের কব্জি ও দুই পায়ের পাতা ব্যতীত সারা শরীর।
  • পরিধেয় কাপড়, শরীর ও নামাজের স্থান পরিষ্কার বা পাক-পবিত্র হতে হবে।
  • অযুগোসল বা তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা আর্জন করতে হবে।

নামাযের ফরজসম্পাদনা

নামাযের ফরজ মোট ১৩ টি। আহকাম ৭ টি। আরকান ৬ টি। নামাযের বাহিরের কাজগুলিকে আহকাম বলে। আর নামাযের ভিতরের কাজগুলোকে আরকান বলে।

আহকামসম্পাদনা

  • শরীর পবিত্র হওয়া।
  • কাপড় বা বস্ত্র পবিত্র হওয়া।
  • নামাযের জায়গা পবিত্র হওয়া।
  • সতর ঢেকে রাখা।
  • কিবলামুখী হওয়া।
  • ওয়াক্তমত নামায আদায় করা
  • নামাযের নিয়্যত করা।

আরকানসম্পাদনা

  • তাকবীরে তাহরীমা (আল্লাহু আকবার) বলে নামায শুরু করা।
  • দাঁড়িয়ে নামায পড়া।
  • সুরা ফাতিহার সাথে কুরআন পড়া।
  • রুকু করা।
  • দু্ই সিজদা করা।
  • শেষ বৈঠক করা।

নামাজের ওয়াজিব ১৪টি

১. প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহা পূর্ণ পড়া। (বুখারি ১/১০৪, হাদিস : ৭৫৬)
২.  প্রথম দুই রাকাতে সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য একটি সুরা বা ছোট তিন আয়াত পরিমাণ মেলানো। (বুখারি ১/১০৫, হাদিস : ৭৭৬, মুসলিম ১/১৮৫,   হাদিস : ৪৫১)
৩. ফরজের প্রথম দুই রাকাতকে কিরাতের জন্য নির্দিষ্ট করা। (বুখারি ১/১০৫, হাদিস : ৭৭৬, মুসলিম ১/১৮৫,  হাদিস : ৪৫১)
৪. সুরা ফাতিহা অন্য সুরার আগে পড়া। (বুখারি ১/১০২, ১০৩, হাদিস : ৭৪৩, মুসলিম ১/১৯৪, হাদিস : ৪৯৮, তিরমিজি, হাদিস : ১/৫৭, হাদিস : ২৪৬ সহিহ)
৫. নামাজের সব রুকন ধীরস্থিরভাবে আদায় করা (অর্থাৎ রুকু, সিজদা ও রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসে কমপক্ষে এক তাসবিহ পরিমাণ দেরি করা)। (বুখারি ১/১০৯, হাদিস : ৭৯৩, মুসলিম ১/১৭০, হাদিস : ৩৯৭, আবু দাউদ ১/১২৪, ১২৪, হাদিস : ৮৫৬, ৮৫৭, ৮৫৮)
৬. প্রথম বৈঠক করা (অর্থাৎ তিন অথবা চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের দুই রাকাতের পর বসা)। (বুখারি ১/১১৪, হাদিস : ৮২৮)
৭. উভয় বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়া। (বুখারি ১/১১৫, হাদিস : ৮৩০, ৮৩১, মুসলিম ১/১৯৪, ১৭৩, হাদিস : ৪৯৮, ৪০২, ৪০৩, তিরমিজি ১/৮৯, হাদিস : ৩৯১)
৮. প্রতি রাকাতের ফরজ ও ওয়াজিবগুলোর তারতিব বা ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা। (বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩)
৯. ফরজ ও ওয়াজিবগুলো নিজ নিজ স্থানে আদায় করা। (যেমন—দ্বিতীয় সিজদা প্রথম সিজদার সঙ্গে করা। প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয়াতু শেষ করে তত্ক্ষণাৎ তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি। (বুখারি ২/৯২৪, হাদিস : ৬২৫১, তিরমিজি ১/৬৬, ৬৭, হাদিস : ৩০২, ৩০৩)
১০. বিতর নামাজে তৃতীয় রাকাতে কিরাতের পর কোনো দোয়া পড়া। অবশ্য দোয়া কুনুত পড়লে ওয়াজিবের সঙ্গে সুন্নতও আদায় হয়ে যাবে। (বুখারি ১/১৩৬, হাদিস : ১০০২, তিরমিজি ১/১০৬, হাদিস : ৪৬৪১ হাসান, ইবনে মাজাহ ১/৮৩, হাদিস : ১১৮২)
১১. দুই ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা। (আবু দাউদ ১/১৬৩, হাদিস : ১১৫৩ হাসান, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪১৬, হাদিস : ১৯৭৩৪ হাসান, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ২/১৭২, হাদিস : ৫৬৯৪ হাসান, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/২৯৩, হাদিস : ৫৬৮৬)
১২. দুই ঈদের নামাজে দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার পর রুকুতে যাওয়ার সময় ভিন্নভাবে তাকবির বলা। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ ১/৪৯৫, হাদিস : ৫৭০৭ সহিহ, মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৩/২৯৩ হাদিস : ৫৬৮৬ সহিহ, তাহাবি ৪/৩৪৮, হাদিস : ১৬৭৪)
(এই তাকবিরটি অন্যান্য নামাজে সুন্নত)
১৩. ইমামের জন্য জোহর, আসর এবং দিনের বেলায় সুন্নত ও নফল নামাজে কিরাত আস্তে পড়া। আর ফজর, মাগরিব, এশা, জুমা, দুই ঈদ, তারাবি ও রমজান মাসের বিতর নামাজে কিরাত শব্দ করে পড়া। (মুসলিম ১/২৯১, হাদিস : ২৫৯, নাসায়ি ১/১১২, হাদিস : ৯৭০ সহিহ, তিরমিজি ১/১০৬)
মনে রাখতে হবে, আস্তে পড়ার অর্থ মনে মনে পড়া নয়। কেননা এতে নামাজ শুদ্ধ হয় না; বরং আওয়াজ না করে মুখে উচ্চারণ করে পড়া জরুরি)।
১৪. সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। (বুখারি ১/১১৫, হাদিস : ৮৩৭)

বি. দ্র.: উল্লিখিত ওয়াজিবগুলো থেকে কোনো একটি ভুলে ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে।
(ফাতাওয়া শামি, ১৪:৪৫৬, আলমগিরি, ১:৭১, আল বাহরুর রায়িক, ১:৫১০)


নামাজের নিয়মসম্পাদনা


বাংলাদেশের একটি মসজিদে মুসলমান পুরুষদের নামাযের দৃশ্য।
নামাজ দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। নামাজের ধাপ বা অংশকে রাকাত বলা হয়। প্রতি রাকাতের শুরুতে সুরা ফাতিহাও অপর একটি সুরা পাঠের পর রুকু করতে হয় অর্থাৎ হাঁটুতে হাত রেখে ভর দিয়ে পিঠ আনুভূমিক করে অবনত হতে হয়। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে তার পর সিজদা দিতে হয়। তিন বা চার রাকাতের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়া পড়তে হয়। নামাজের শেষ রাকাতে সিজদার পর বসে "আত্তাহিয়াতু" দোয়ার সাথে "দরূদ শরীফ" পড়তে হয়। নামাজের শেষভাগে দুই দিকে সালাম ফেরাতে হয়। এর পর দলবদ্ধভাবে মুনাজাত বা প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। নামাজের কিছু নিয়ম পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।

নামাযের ওয়াক্ত ও রাকাতসম্পাদনা


১ ফযর, ২ যোহর, ৩ আসর, ৪ মাগরিব, ৫ ইশা
প্রতিদিন একজন মুসলিমকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হয়। প্রথম ওয়াক্ত হল "ফজর নামাজ" সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত এর ব্যপ্তিকাল। এরপর "যুহর ওয়াক্ত" বেলা দ্বিপ্রহর হতে "আসর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত যার ব্যপ্তি। তৃতীয় ওয়াক্ত "আসর ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। চতুর্থ ওয়াক্ত হচ্ছে "মাগরিব ওয়াক্ত" যা সূর্যাস্তের ঠিক পর পরই আরম্ভ হয় এবং এর ব্যপ্তিকাল প্রায় ৩০-৪৫ মিনিট। "মাগরিব ওয়াক্ত" এর প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আরম্ভ হয় "ইশা ওয়াক্ত" এবং এর ব্যপ্তি প্রায় "ফজর ওয়াক্ত"-এর আগ পর্যন্ত।
উপরোক্ত ৫ টি ফরজ নামায ছাড়াও ইশা'র নামাজের পরে বিতর নামাজ আদায় করা ওয়াজিব। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সুন্নত নামাজ ও মুসলিমরা আদায় করে থাকে।
কোন ওয়াক্ত-এর নামাজ কয় রাকাত তা দেয়া হল :
নামসময়ফরযের পূর্বেফরযফরযের পর
ফযর(فجر)ঊষা থেকে সূর্যোদয়২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা২ রাকাত-
যুহর(ظهر)ঠিক দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা৪ রাকাত২/৪ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা
আসর(عصر)যোহরের শেষ ওয়াক্ত থেকে সূর্য হলুদ বর্ণ পূর্ব পর্যন্ত অন্য মতে সূর্যস্তের পূর্ব পর্যন্ত২/৪ রাকাত সুন্নাতে গায়ের মুয়াক্কাদা৪ রাকাত-
মাগরিব(مغرب)সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলিপর্যন্ত-৩ রাকাত২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা
ইশা(عشاء)গোধূলি থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত৪ রাকাত সুন্নতে গায়ের মুয়াক্কাদা৪ রাকাত২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা
বিতর(وتر)ইশার পর থেকে ফজরের পূর্র পর্যন্ত১ বা ৩ বা ৫ বা ৭ বা ৯ বা ১১ বা ১৩
 সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতিদিন এ নামাজগুলো পড়তেন।
শুক্রবারে জুমা যুহর নামাজের পরিবর্তে পড়তে হয়
এশা নামাজ আদায় করার পর বেজোড় সংখ্যক রাকাত বিতর এর ওয়াজিব নামাজ আদায় করতে হয়।

অন্যান্য নামাযসম্পাদনা

ফরয নামায ছাড়াও মুসলমানগণ আরো কিছু নামায আদায় করে থাকেন। সেগুলোকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়ে থাকে। তবে শ্রেণিবিভাগ অনুসারে ফরয ছাড়া বাকি নামাযগুলোকে ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল এই তিনভাগে ভাগ করা যায়।

ওয়াজিব নামাযসম্পাদনা

নিয়মিত ওয়াজিব নামায হচ্ছে বিতিরের নামায। প্রত্যেকদিন এশার নামাযের পর হতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত এই ওয়াজিব নামাযের সময় থাকে। এছাড়া কোন নফল নামাযের নিয়ত করলে তা আদায় করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

সুন্নাত নামাযসম্পাদনা

মুসলমানদের নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) যেই নামাযগুলো আদায় করতেন, তাকে সুন্নাত নামায বলে। সুন্নাত নামায দুই প্রকার। ১. সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ২. সুন্নাতে যায়েদাহ
  • সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ বলতে ঐসব নামাযকে বুঝায়, যেগুলো নবী (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন।
  • সুন্নাতে যায়েদাহ বলতে বুঝায়, মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) যেসব সুন্নাত নিত্য আদায় করতেন না।

নফল নামাযসম্পাদনা

জানাযার নামাযসম্পাদনা

সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের নামাযসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1.  ছালাতুর রাসূল (ছা:)- মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
  2.  রাসূলুল্লাহ সা:-এর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি


------------------------------------

নামাজ ভঙ্গের কারণগুলো তুলে ধরা হলো-

১. নামাজে কথা বলা যাবে না। কথা অল্প-বেশি যাই হোক। যেমন- সালাম আদান-প্রদান, হাঁচির উত্তর দেয়াসহ যে কোনো কথা।
২. ইচ্ছা-অনিচ্ছায় নামাজের কোনো একটি ফরজ ছুটে গেলে।
৩. বিনা প্রয়োজনে গলা খাকড়ানো  বা পরিষ্কার করা।
৪. দুঃখ-কষ্ট বা বেদনারকারণে নামাজের মধ্যে উহ্ বা আহ্ ইত্যাদি আওয়াজ করা। এমনকি আল্লাহর ভয়ে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করলেও।
৫. ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বা ভুলবশত নামাজে পানাহার করলে। অবশ্য দাঁতের ফাঁকে আটকানো ছোলা থেকে কম বেরুলে তা খেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।
৬. নামাজ পড়াকালীন এমন কাজ করা যা বাইরে থেকে দেখে এমন মনে করা যে, লোকটি নামাজ পড়ছে কিনা। যেমন দু`হাত দিয়ে কাপড় ঠিক করা, মহিলারা চুলে ঝুটি বাঁধা বা নামাজ অবস্থায় বাচ্চাকে দুধ পান করানো বা নামাজে হাটা-চলা করা।
৭. নামাজে কুরআন তিলাওয়াতে এমন ভুল পড়া যাতে অর্থ পাল্টে যায়।
৮. বয়স্ক ব্যক্তির নামাজে অট্টহাসি হাসা।
৯. নামাজের মধ্যে কুরআন মাজিদ দেখে দেখে পড়া বা অন্য কোনো লেখা পড়লেও নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
১০. মুক্তাদি ব্যতিত অপর ব্যক্তির ইমামের লোকমা দেয়া।
১১. অপবিত্র জায়গায় সেজদা দেয়া।
১২. ক্বিবলামুখী না হয়ে নামাজ পড়া।
১৩. নামাজে এমন কিছু প্রার্থনা করা, যা মানুষের কাছে চাওয়া যায়।
১৪. ইমামের আগে আগে মুক্তাদির নামাজের কার্যক্রম সম্পন্ন করা।


প্রশ্ন ৩৫ : বুখারী শরীফ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই ।

সহীহ বুখারী (আরবিصحيح البخاري‎‎) একটি প্রসিদ্ধ হাদীস বিষয়ক গ্রন্থ। এর আসল ও পুরো নাম, الجامع المسند الصحيح المختصر من أمور رسول اللّٰه صلى اللّٰه عليه و سلم وسننه وأيامه 

ইমাম বুখারী (রঃ)

নামঃ  মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল। কুনিয়াতঃ আবূ আবদুল্লাহ। লকবঃ শায়খুল ইসলাম ও আমীরুল মু’ মিনীন ফীল হাদিস।

বংশ পরিচয়ঃ  মুহাম্মদ ইবন ইসমাইল ইবন ইবব্রাহীম ইবন মুগীরা ইবন বারদিযবাহ, আল জু’ফী আল বুখারী (রঃ)। ইমাম বুখারী (রঃ) এর ঊর্ধ্বতন পুরুষ বারদিযবাহ ছিলেন অগ্নিপূজক। বারদিযবাহ শব্দটি ফারসি। এর অর্থ কৃষক। তার পুত্র মুগীরা বুখারার গভর্নর ইয়ামান আল জু’ফি এর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন। এজন্য ইমাম বুখারীকে আল জু’ফী আর বুখারার অধিবাসী হিসেবে বুখারী বলা হয়।
ইমাম বুখারীর প্রপিতামহও মুগীরা এবং পিতামহ ইবরাহীম সম্বন্ধে ইতিহাসে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না। অবশ্য জানা যায় যে, তার পিতা ইসমা’ঈল (রঃ) একজন মুহাদ্দিস ও বুজুর্গ ব্যাক্তি ছিলেন। ইমামা মালিক, হাম্মাদ ইবন যায়েদ ও আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক (রঃ) প্রমূখ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসের কাছে তিনি হাদিস শিক্ষা লাভ করেন। তিনি জীবনে কখনো হারাম বা সন্দেহজনক অর্থ উপার্জন করেননি। তার জীবিকা নির্বাহের উপায় ছিল ব্যবসাবাণিজ্য। তার আর্থিক অবস্থা ছিল সচ্ছল।
জন্ম ও মৃত্যুঃ  ইমাম বুখারী ১৯৪ হিজরীর ১৩ই শাওআল জুমু’আর দিন সালাতের কিছু পরে বুখারায় জন্ম গ্রহণ করেন। এবং ২৫৬ হিজরীর ১লা শাওয়াল শনিবার ঈদের রাতে ইশার সালাতের সময় সমরকন্দের নিকট খারতাংগ পল্লীতে ইনতিকাল করেন। তার বয়স হয়েছিল ১৩ দিন কম বাষট্টি বছর। খারতাংগ পল্লীতেই তাঁকে দাফন করা হয়।
ইমাম বুখারী (রঃ)-এর শিশু কালেই পিতা ইসমাইল (রঃ)ইনতিকাল করেন। তার মাতা ছিলেন পরহেজগার ও বুদ্ধিমতী। স্বামীর রেখে যাওয়া বিরাট ধনসম্পত্তির দ্বারা তিনি তার দুই পুত্র আহামদ ও মুহাম্মাদকে লালন-পালন করতে থাকেন। শৈশবে রোগে আক্রান্ত হলে মুহাম্মাদের চোখ নষ্ট হয়ে যায়, অনেক চিকিৎসা করে ও যখন তার দৃষ্টিশক্তি কিছুতেই ফিরে এল না, তখন তার মা আল্লাহ্‌র দরবারে খুব কান্নাকতি র দু’আ করতে থাকেন। এক রাতে তিনি স্বপ্নে দেখলেন যে, এক বুযুর্গ ব্যাক্তি তাঁকে এই বলে সান্তনা দিচ্ছেন যে, তোমার কান্নাকাটির ফলে আল্লাহ তা’আলা তোমার ছেলের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন।  সপ্নেই তিনি জানতে পারলেন সেই বুযুর্গ হজরত ইব্রাহীম (আঃ)। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পেলেন যে, সত্যিই তার পুত্রের চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে। বিস্ময় আর আনন্দে তিনি আল্লাহ্‌র দরবারে দু’রাকাত শোকরানা সালাত আদায় করেন।*
পাঁচ বছর বয়সেই মুহাম্মাদকে বুখারার এক প্রাথমিক মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়া হয়। মুহাম্মাদ বাল্যকাল থেকেই প্রখর স্মৃতিশক্তি ও মেধার অধিকারী ছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সেই তিনি কুরআন মজীদ হিফজ করে ফেলেন এবং দশ বছর বয়সে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। দশ বছর বয়সে তিনি হাদীসশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য বুখারার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম দাখিলী (রঃ)-এর হাদিস শিক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সে যুগের নিয়মানুসারে তার সহপাঠীরা খাতা কলম নিয়ে উস্তাদ থেকে শ্রুত হাদীস লিখে নিতেন, কিন্তু ইমাম বুখারী (রঃ) খাতা কলম কিছুই সঙ্গে নিতেন না। তিনি মনোযোগের সাথে উস্তাদের বর্ণিত হাদীস শুনতেন। ইমাম বুখারী (রঃ) বয়সে সকলের থেকে ছোট ছিলেন। সহপাঠীরা তাঁকে এই বলে ভৎসনা করত যে, খাতা কলম ছাড়া তুমি অনর্থক কেন এসে বস? একদিন বিরক্ত হয়ে তিনি বললেনঃ তোমাদের লিখিত খাতা নিয়ে এস। এতদিন তোমরা যা লিখেছ তা আমি মুখস্থ শুনিয়ে দেই। কথামতো তারা খাতা নিয়ে বসল আর এত দিন শ্রুত কয়েক হাজার হাদীস ইমাম বুখারী (রঃ) হুবহু ধারাবাহিক শুনিয়ে দিলেন। কথাও কোন ভুল করলেন না। বরং তাঁদের লেখার ভূল-ত্রুতি হয়েছিল, তারা তা সংশোধন করে নিল। বিস্ময়ে তারও হতবাক হয়ে গেল। এই ঘটনার পর ইমাম বুখারী (রঃ) এর প্রখর স্মৃতিশক্তির কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ল।
ষোল বছর বয়সে ইমাম বুখারী (রঃ) বুখারা ও তার আশপাশের শহরের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণ থেকে বর্ণিত প্রায় সকল হাদীস মুখস্থ করে নেন। সেই সাথে মুসলিম বিশ্বের খ্যাতিমান মুহাদ্দিস আবদুল্লাহ ইবনুল-মুবারক ও ওয়াকী ইবনুল-জাররাহ (রঃ)-এর সংকলিত হাদীস গ্রন্থসমূহ মুখস্থ করে ফেলেন। এরপর তিনি মা ও বড় ভাই আহম্মদের সাথে হজ্জে গমন করেন। হজ্জ শেষে বড় ভাই ও মা ফিরে আসেন। ইমাম বুখারী (রঃ) মক্কা মুকাররামা ও মদীনা তাইয়্যেবাহ কয়েক বছর অবস্থান করে উভয় স্থানের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের নিকট থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করতে থাকেন। এই সময় তিনি ‘কাযায়াস-সাহাবা ওয়াত-তাবিঈন’ শীর্ষক তাঁর প্রথম গ্রন্থ রচনা করেন। এরপর মদীনায় অবস্থানকালে চাঁদের আলোতে ‘তারীখে কবীর’ লিখে।।

ইমাম বুখারী (রঃ)হাদীস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তৎকালীন মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত জ্ঞানকেন্দ্র কূফা, বসরা, বাগদাদ, সিরিয়া, মিসর, খুরাসান প্রভৃতি শহরে বার বার সফর করেন। সেই সকল স্থানের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসদের থেকে তিনি হাদীস শিক্ষালাভ করেন। আর অন্যদের তিনি হাদীস  শিক্ষাদান করতে থাকেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থ রচনায়ও ব্যাপৃত থাকেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘জামি’ সহীহ বুখারী  শরীফ সর্বপ্রথম মক্কা মুকাররামায় মসজিদে হারামে প্রণয়ন শুরু করেন এবং দীর্ঘ ষোল বছর সময়ে এই বিরাট বিশুদ্ধ গ্রন্থ রচনা সমাপ্ত করেন। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইমাম বুখারী (রঃ) অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি নিজেই বলেছেন যে, একলাখ সহীহ ও দুইলাখ গায়ের সহীহ হাদীস তাঁর মুখস্থ ছিল। তাঁর এই অস্বাভাবিক ও বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির খ্যাতি সারা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। বিভিন্ন শহরের মুহাদ্দিসগণ বিভিন্নভাবে তাঁর এত স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা করে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছেন এবং সকলের স্বীকার করেছেন যে, হাদীসশাস্ত্রে তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। এ সম্পর্কে তাঁর জীবনী গ্রন্থে বহু চমকপ্রদ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। মাত্র এগার বছর বয়সে বুখারার বিখ্যাত মুহাদ্দিস দাখালী’র হাদীস বর্ণনা কালে যে ভুল সংশোধন করে দেন, হাদীস বিশারদগণের কাছে তা সত্যিই বিস্ময়কর । ইমাম বুখারি এক হাজারেরও বেশী সংখ্যক মুহাদ্দিস থেকে হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাক্কী ইবন ইবরাহীম, আবূ আসিম, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল, আলী ইবনুল মাদানী, ইসহাক ইবন রাহওয়াসহ, হুমাইদী , ইয়াহইয়া, উবায়দুল্লাহ ইবন মূসা, মুহাম্মদ ইবন সালাম আল বায়কান্দী ও মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ আল ফারইয়াবী (রঃ) প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর উস্তাদদের অনেকেই তাবিঈদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবার তিনি তাঁর বয়ঃকনিষ্ঠদের থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইমাম বুখারী (রঃ) এর থেকে বুখারী শরীফ শ্রবণকারীর সংখ্যা নব্বই হাযারেরও অধিক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর ছাত্রসংখ্যা বিপুল। তাঁদের মধ্যে ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, আবূ হাতিম আর রাযী (রঃ) প্রমুখ প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ইমাম বুখারী (রঃ) মহৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। দান-খয়রাত করা তাঁর স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল।  উত্তরাধিকারসূত্রে তিনি পিতার বিরাট ধন-সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর সবই গরীব দুঃখী ও হাদীস শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে অতি সামান্য আহার করতেন। কখনোও কখনও দুই তিনটি বাদাম খেয়ে সারাদিন কাটিয়ে দিয়েছেন। বহু বছর তরকারী ছাড়া রুটি খাওয়ার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ইমাম বুখারী (রঃ)-এর সততা জনশ্রুতিতে পরিণত হয়েছিল। প্রসঙ্গত এখানে একটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়। আবূ হাফস (রঃ) একবার তাঁর কাছে বহু মূল্যবান পণ্যদ্রব্য পাঠান। এক ব্যাবসায়ী তা পাঁচ হাজার দিরহাম মুনাফা দিয়ে খরিদ করতে চাইলে তিনি বললেনঃ তুমি আজ চলে যাও, আমি চিন্তা করে দেখি। পরের দিন সকালে আরেক দল ব্যাবসায়ী এসে দশ হাজার দিরহাম মুনাফা দিতে চাইলে তিনি বললেনঃ গতরাতে আমি একদল ব্যাবসায়ীকে দিবার নিয়্যাত করে ফলেছি; কাজেই আমি আমার নিয়্যাতের খেলাফ করতে চাই না। পরে তিনি তা পূর্বোক্ত ব্যবসায়ীকে পাঁচ হাজার দিরহামের মুনাফায় দিয়ে দিলেন। নিয়্যাত বা মনের সংকল্প রক্ষা করার জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম মুনাফা ছেড়ে দিতে তিনি দ্বিধাবোধ করেন নি। ইমাম বুখারী (রঃ) বলেনঃ আমি জীবনে কোন দিন কারো গীবত শিকায়াত করিনি। তিনি রমযান মাসে পুরো তারাবীতে এক খতম এবং প্রতি তিন রাতে এক খতম কুরআন মজিদ তিলাওয়াত করতেন। একবার নফল সালাত আদায় কালে তাঁকে এক বিচ্ছু ষোল সতেরো বার দংশন করে, কিন্তু তিনি যে সুরা পাঠ করছিলেন তা সমাপ্ত না করে সালাত শেষ করেন নি। এভাবে তাকওয়া-পরহেযগারী, ইবাদত-বন্দেগী দান-খয়রাতের বহু ঘটনা তাঁর জীবনীকারগন বর্ণনা করেছেন, যা অসাধারণ ও বিস্ময়কর।
ইমাম বুখারী (রঃ)-কে জীবনে বহু বিপদ ও কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। হিংসুকদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেন। বুখারার গভর্নর তাঁর দুই পুত্রকে প্রাসাদে গিয়ে বিশেষভাবে হাদীস শিক্ষাদানের আদেশ করেন। এতে হাদীসের অবমাননা মনে করে ইমাম বুখারী (রঃ) তা প্রত্যাখ্যান করেন। এ সুযোগে দরবারের কিছু সংখ্যক হিংসুকের চক্রান্তে তাঁকে শেষ বয়সে জন্মভূমি বুখারা ত্যাগ করতে হয়েছিল। এ সময় তিনি সমরকন্দবাসীর আহবানে সেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রোওয়ানা হন। পথিমধ্যে খরতাংগ পল্লীতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলেন। সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পহেলা শাওয়াল শনিবার ২৫৬ হিজরীতে ইন্তিকাল করেন। দাফনের পর তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হতে থাকে। লোকে দলে দলে তাঁর কবরের মাটি নিতে থাকে। কোনভাবে তা নিবৃত করতে না পেরে কাটা দিয়ে ঘিরে তাঁর কবর রক্ষা করা হয়। পরে জনৈক ওলিআল্লাহ আকিদা নষ্ট হওয়ার আশংকায় সে সুঘ্রান বন্ধ হওয়ার জন্য দু’আ করেন এবং তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়।
বুখারী শরীফ
বুখারী শরীফের পূর্ণ নাম আল জামিউল মুসনাদুস সহীহুল মুখতাসারু মিন উমূরি রাসূলিল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ওয়া সুনানিহী ওয়া আয়্যামিহী। হাদীসের প্রধান প্রধান বিষয়সমূহ সম্বলিত বলে একে ‘জামি’ বা পূর্ণাঙ্গ বলা হয়। কেবল মাত্রও সহীহ হাদীসে সন্নিবেশিত বলে ‘সহীহ’ এবং ‘মারফূ’ ‘মুত্তাসিল’ হাদীস বর্ণিত হওয়ার এর মুসনাদ নামকরণ করা হয়েছে।
সকল মুহাদ্দিসের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, সমস্ত হাদীসগ্রন্থের মধ্যে বুখারী শরীফের মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে এবং কুরআন মজীদের পরেই সর্বাপেক্ষা বিশুদ্ধ গ্রন্থ। এক লাখ সহীহ ও দুই লাখ গায়ের সহীহ মোট তিন লাখ হাদীস ইমাম বুখারী (রঃ)-এর মুখস্থ ছিল। এ ছাড়া তাঁর কাছে সংগৃহীত আরও তিন লাখ, মোট ছয় লাখ হাদীস থেকে যাচাই-বাছাই করে তিনি দীর্ঘ ষোল বছরে এ গ্রন্থখানি সংকলন করেন। বুখারী শরীফে সর্বমোট সাত হাজার তিনশত সাতানব্বইটি হাদীস সংকলিত হয়েছে। ‘তাকরার’ বা পুনরাবৃত্তি (যা বিশ্বের প্রয়োজনে করা হয়েছে) বাদ দিলে এই সংখ্যা মাত্র দুই হাজার পাঁচশত তের-তে দাঁড়ায়। মু’আল্লাক ও মুতাবা’আত যোগ করলে এর সংখ্যা পৌছায় নয় হাজার বিরাশিতে। বুখারী শরীফের সর্বপ্রধান বর্ণনাকারী ফারাবরী (রঃ)-এর বর্ণনা অনুসারে বিখ্যাত ভাষ্যকার হাফিয ইবন হাজার (রঃ) কতৃক     গননার সংখ্যা এখানে প্রদত্ত হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনাকারী ও গণনাকারীদের গণনায় এ সংখ্যার তারতম্য পরিলক্ষি ত হয়।
উপরে বর্ণিত সুক্ষ যাচাই-বাছাই ছাড়াও প্রতিটি হাদীস সংকলনের আগে ইমাম বুখারী গোসল করে দু’রাকাত সালাত আদায় করে ইসতিখারা করার পর এক-একটি হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন। এরূপ কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের ফলে অন্যান্য হাদীসগ্রন্থের তুলনায় সারা মুসলিম জাহানে বুখারী শরীফ হাদীসগ্রন্থ হিসেবে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পেরেছে। জমহূর মুহাদ্দিসের বুখারী শরীফের বর্ণিত প্রতিটি হাদীস নিঃসন্দেহে সহীহ ও গ্রহণযোগ্য।
বুখারী শরীফ সংকলনের জন্য ইমাম বুখারী (রঃ)-এর উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে, তাঁর বিখ্যাত ওস্তাদ ইসহাক ইবন রাহওয়ায়হ (রঃ) পরোক্ষভাবে তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমারদের মধ্যে কেউ কি এমন নেই, যে ‘ গায়ের সহীহ হাদীস’ থেকে ‘সহীহ হাদীস’ বাছাই করে একখানি গ্রন্থ সংকলন করতে পারে?
ইমাম বুখারী (রঃ) একবার স্বপ্নে দেখেন যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর দেহ মুবারকের উপর মাছি এসে বসছে আর তিনি পাখা দিয়ে সেগুলকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। তা’বীর বর্ণনাকারী আলিমগন এর ব্যাখ্যা দিলেন যে, রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর সহীহ হাদীসসমূহ  ‘গায়ের সহীহ’ হাদীস থেকে বাছাইয়ের কাজ স্বপ্ন দ্রষ্টা দ্বারা সম্পাদিত হবে। তখন থেকেই ইমাম বুখারীর মনে এরূপ একটি গ্রন্থ সংকলনের ইচ্ছা প্রবল হয়ে উঠে এবং তিনি দীর্ঘ ষোল বছরের অক্লান্ত সাধনার পর তা সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়। এই গ্রন্থ প্রনয়নে তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল সহীহ হাদীসের একখানি উচ্চাঙ্গের গ্রন্থ রচনা করা এবং তাঁর সে উদ্দেশ্য নিঃসন্দেহে সফল হয়েছে। এ গ্রন্থের হাদীস সন্নিবেশের পর তিনি চিন্তা করলেন যে, অধ্যায়নের সাথে সাথে যাতে লোক এর ভাবার্থ ও নির্দেশিত বিধানবলী সম্পর্কে অবহিত ও উপকৃত হতে পারে তজ্জন্য হাদীসসমূহ তিনি বিভিন্ন অধ্যায় ও পরিচ্ছেদে বিন্যস্ত করে ‘তরজমাতুল বাব’ বা শিরোনাম কায়েম করেন। যেহেতু দীন-ই-ইসলামের শিক্ষা ব্যাপক ও বিস্তৃত, তাই এর বিধানাবলীর পরিসীমা নির্ধারণ করা দুষ্কর। পক্ষান্তরে ইমাম বুখারী (রঃ) কর্তৃক সংকলিত হাদীসগুলোর সংখ্যা সীমিত। এই সীমিত সংখ্যক হাদীস দ্বারা দীন-ই ইসলামের ব্যাপক ও বিস্তৃতি শিক্ষার দলীল-প্রমাণ উপস্থাপন দুষ্কর। তাই ইমাম বুখারী (রঃ) সংকলিত হাদীসগুলি দ্বারা ব্যাপক বিধানাবলীর দলীল কায়েম করতে গভীর জ্ঞ্যান ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁকে ইশারা বা ইঙ্গিতের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে। ফলে বুখারী শরীফ অধ্যয়নে তারজমাতুল বাব ও বর্ণিত হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান  করা আলিমদের দৃষ্টিতে একটি কঠিন সমস্যা ও প্রধান বিবেচ্য বিষয়।
বুখারী শরীফ প্রনয়নের পর থেকে আজ এই পর্যন্ত এই কঠিন সমস্যার সমাধান করতে মুহাদ্দিস, ফকীহ ও আলিম সমাজকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। শিরোনামের এই রহস্য ভেদ করতে প্রত্যেকেই স্বীয় জ্ঞ্যান-বিবেকের তুণ থেকে তীর নিক্ষেপে কোন কসুর করেন নি, তবুও মুহাক্কিক আলিমদের ধারণায়, আজও কারো নিক্ষিপ্ত তীর থেকে তীর নিক্ষেপ কোন কসুর করেন নি, তবুও মুহাক্কিক আলিমদের ধারণায়, আজও কারো নিক্ষিপ্ত তীর লক্ষ্যস্থল ভেদে সর্বক্ষেত্রে পুরোপুরি সমর্থ হয় নি। এজন্য বলা হয়ে থাকে ‘ফিকহুল বুখারী ফী তারাজিমিহী’ অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রঃ)-এর জ্ঞ্যান-গরিমা ও বুদ্ধি-চাতুর্য তাঁর গ্রন্থের তরজমা বা শিরোনামের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। পরবর্তীকালে মহিষীগণ এই লুক্কায়িত রত্ন যথাযথ উদ্ধারের সর্বশক্তি ও শ্রম ব্যায় করেও পূর্ণভাবে সফলকাম হতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বুখারী শরীফ সংকলনের পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীর সকল দেশের সকল শ্রেণীর মুসলিম মনীষীগণ যেভাবে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছেন আল্লাহ্‌র কালাম কুরআন মজীদ ছাড়া আর কোন গ্রন্থের প্রতি এরূপ ঝুঁকে পড়েন নি। একমাত্র ইমাম বুখারী (রঃ) থেকে নব্বই হাজারেরও অধিক সংখ্যক লোক এ গ্রন্থের হাদীস শ্রবণ করেছে। তারপর প্রত্যেক যুগেই অসংখ্য হাদীস শিক্ষার্থী এ অধ্যয়ন করে আসছে। এ গ্রন্থের ভাষ্য পুস্তকের সংখ্যাও অগণিত। এ সব এর মধ্যে হাফিয ইবন হাজার আসকালানী (র) (জ. ৭৬২ হি. মৃ. ৮৫৫ হি. )-এর ‘উমদাতুল-কারী ও আল্লামা শিহাবুদ্দীন আহমদ কাসতালানী (রঃ) (জ. ৮৫১ হি. মৃ.  ৯২৩ হি. )-এর ‘ইরশাদুস-সারী’ সমধিক প্রসিদ্ধ। এঁরা তিনজনই মিসরের অধিবাসী ছিলেন। এ ছাড়া বর্তমান যুগে সহীহ বুখারী অধ্যয়নের ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হিসেবে মওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রঃ) ( জ. ১২৪৪ হি. মৃ. ১৩২৩ হি.) কৃত ‘লামেউদ দারারী’ এবং মওলানা সৈয়দ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (জ. ১২৯২ হি. মৃ. ১৩৫২ হি. ) কৃত ‘ফয়যুল বারী’ বিশেষভাবে সমাদৃত। ইমাম বুখারী (রঃ) ও তাঁর সংকলিত বুখারী শরীফের যে উচ্ছাসিত প্রশংসা ও এর উপরে যে ব্যাপক ‘ইলমী চর্চা হয়েছে তাঁর সহস্র ভাগের এক ভাগ বর্ণনা করাও এ স্বল্প পরিসরে সম্ভবপর নয়।

প্রশ্ন ১৫ঃ খোজাকৃত পশু তথা খাসি বলদ ইত্যাদি কুরবানী করা কি জায়েজ?

(এক) মানব ইতিহাসে সর্ব প্রথম কোরবানি হল, হযরত আদম আলাইহিস্সালামের দুই পুত্র হাবিল এবং কাবিলের কোরবানী।
পবিত্র কোরআনুল কারিমের ভাষায়
ﻭﺗﻞ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻧﺒﺎﺍﺑﻨﻰ ﺁﺩﻡ ﺑﺎﻟﺤﻖ،، ﺍﺫﻗﺮﺑﺎ ﻗﺮﺑﺎﻧﺎ ﻓﺘﻘﺒﻞ ﻣﻦ ﺍﺣﺪﻫﻤﺎ ﻭﻣﻦ ﻳﺘﻘﺒﻞ ﻣﻦ ﺍﻻٰﺧﺮ، ﻗﺎﻝ ﻻﻗﺘﻠﻨﻚ، ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻤﺎ ﻳﺘﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺘﻘﻴﻦ *
আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত আপনি তাহাদিগকে যথাযত ভাবে শোনিয়ে দিন।
যখন তাহারা উভয়ে কোরবানি করিয়াছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হয়েছিল এবং অন্যজনের কবুল হইলনা। সে (কাবিল) বলিল আমি তোমাকে হত্যা করিবই। অপরজন(হাবিল) বলিল অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকিনদের কোরবানি কবুল করেন।
****পাড়া ৬, সুরা মায়িদা, আয়াত ২৭*****
সংক্ষিপ্ত ঘটনা
_____________
মা হাওয়া আলাইহিস্সালামার গর্ভে হাবিলের সাথে লিওয়া এবং কাবিলের সাথে অ্যাকলিমা জন্ম গ্রহন করেন।
তাই শরীয়ত অনুযায়ী হাবিলের সাথে অ্যাকলিমা এবং কাবিলের সাথে লিওয়ার বিবাহ ঘোষনা করা হল।
শয়তান কাবিলকে ধুকা দিল যে তোমার পিতা তোমার সাথে ইনসাফ করেনাই। তোমার সাথে যে জন্ম নিয়েছে তাকে সুন্দরী হওয়ার কারনে হাবিলের সংঘে বিবাহ দিচ্ছে। এটাতো ইনসাফ নয়।
শয়তানের যুক্তিতে কাবিল বষিভুত হয়ল।
অথপর যখন তারা উভয়েই কোরবানি করল তখন একজনের কবুল হল অন্যজনের হইনি। হাবিল একটি নর পশু দুম্বা কোরবানি করল আর গায়েবি আগুন তাহা উঠিয়ে নিল, আর কাবিল কিছু গম কোরবানি করল (অর্থাৎ আল্লাহর নামে ছেড়ে দিল) কিন্তু তাহা জমিনেই রয়েগেল।
তখন কাবিল হাবিলকে মেরে বললে হাবিল বলেন আল্লাহ মুত্তাকিনদের কোরবানি কবুল করেন।
কিন্তু অবষেশে কাবিল হাবিলকে শহীদ করে দিল।
তাই পৃথিবীতে যদি কেহ অন্যাই ভাবে কাউকে হত্যা করে তার অর্ধেক গুনা কাবিলকেই দেয়া হবে। কারন মানব ইতিহাসে প্রথম সেই খুনী।
শিক্ষা,,, আল্লাহর দেয়া আইনের পরিবর্তন করার পরিনাম শুভনয়।
এবং হাবিলের কোরবানিকৃত পশুটি পাঠা জাতিয় ছিল। খাসি নয়।
(দুই) কোরবানি হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্সালামের সুন্নাত হাদিস শরীফে রয়েছে ﺳﻨﺔ ﺍﺑﻴﻜﻢ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (কোরবানি) তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস্সালামের সুন্নাত।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা
____________
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ করেন,
ﺍﻟﺬﻯ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻤﻮﺕ ﻭﺍﻟﺤﻴﻮﺓ ﻟﻴﺒﻠﻮﻛﻢ ﺍﺣﺴﻦ ﻋﻤﻼ، ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺍﻟﻐﻔﻮﺭ +
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু এবং জীবন তোমাদীগকে পরিক্ষা করার জন্য– কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী,ক্ষ
মাশীল।
****পাড়া২৯, সুরা মুলক, আয়াত ২****
তিনি আরো বলেন,
ﻭﻟﻨﺒﻮﻧﻜﻢ ﺑﺸﻰﺀ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻮﻑ ﻭﺍﻟﺠﻮﻉ ﻭﻧﻘﺺ ﻣﻦ ﺍﻻﻣﻮﺍﻝ ﻭﺍﻻﻧﻔﺲ ﻭﺍﻟﺜﻤﺮﺕ، ﻭﺑﺸﺮ ﺍﻟﺼﺒﺮﻳﻦ **
আমি তোমাদিগকে কিছু ভয়, কিছু ক্ষুদা,এবং ধনসম্পদ ,জীবন ও ফল ফসলের ক্ষয়ক্ষতির দ্বারা অবশ্যই পরিক্ষা করব, শুভ সংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে।
***পারা২, সুরা বাকারা,আয়াত১৫৫*
***
এহেন বিষয় মুমিনগন লক্ষ্য করে দেখুন যে আমাদেরকে আল্লাহর পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে খুবই চিন্তার বিষয়।
একদিন একজন পিতা রাতের গভীরে তার আদরের ছোট মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে, জিজ্ঞাস করলেন মা তুমি কাঁদছ কেন? মেয়েটি বলল বাবা আগামীকাল আমার পরিক্ষা উস্তাদ বলেছেন ফেল করলে আমাকে মারবেন।
পিতা চিন্তিত হলেন, আহারে দুনিয়ার সামান্য পরিক্ষায় ফেল করলে উস্তাদ কিছু হুমকি দিবে,তাও আবার মার্জনাও হতে পারে। আর সে জন্য রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
আর মহিয়ান গরিয়ান আল্লাহ আমাকে পরিক্ষা নিচ্ছেন কিন্তু তার জন্য একটু চিন্তিতও হলামনা। আহারে আমার কঠিন হৃদয়।
*হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্সালামকে আল্লাহ নিজের জীবন এবং সন্তানের জীবনের দারা পরিক্ষা নিয়েছেন।
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্সালাম আল্লাহর আদেশে নিজের স্ত্রী হাজেরা এবং শিশু সন্তান ইসমাঈল আলাইহিস্সামকে নির্জন মরুভুমিতে রেখে আসলেন, শুকনা মরুভুমিতে ইসমাঈল আলাইহিস্সালামের উসিলাই পানি ও ফল ফলাদির ব্যবস্থা হয়ে গেল।
যখন পুত্র ইসমাঈল বাল্য জীবনে পদার্পন করলেন, আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্সালামকে তার প্রিয় সন্তানকে কোরবানি করার হুকুম দিলেন।
পবিত্র কোরআনের ভাষায়
ﻓﻠﻤﺎ ﺑﻠﻎ ﻣﻌﻪ ﺍﻟﺴﻌﻰ ﻗﺎﻝ ﻳٰﺒﻨﻰ ﺍﻧﻰٓ ﺍﺭٰﻯ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﻨﺎﻡ ﺍﻧﻰٓ ﺍﺫﺑﺤﻚ ﻣﺎﺫﺍ ﺗﺮٰﻯ ،،
অতঃপর সে (ইসমাঈল) যখন তাহার পিতার সাথে কাজ করিবার মত বয়সে উপনীত হইল, তখন ইব্রাহিম বলিল হে বৎস! আমি সপ্নে দেখি যে, তোমাকে আমি যবেহ করিতেছি, এখন তোমার অভিমত কি বল?
ﻗﺎﻝ ﻳٰﺎﺑﺖ ﺍﻓﻌﻞ ﻣﺎﺗﺆﻣﺮ ” ﺳﺘﺠﺪﻧﻰٓ ﺍﻧﺸﺎﺀﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺒﺮﻳﻦ ***
তিনি (ইসমাঈল) বললেন হে আমার পিতা !আপনি যাহা আদিষ্ট হইয়াছেন তাহাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছাই আপনি আমাকে ধৈর্য়শীল রুপে পাবেন।
****পারা২৩, সুরা সাফ্ফাত ، আয়াত১০২***
দেখুন মানব সকল আল্লাহকে রাজি এবং খুশি করার জন্য পিতা আপন হস্তে পুত্রকে কোরবানি করতে সামান্য দিদাবুদ পর্যন্ত করলেন না। পুত্রও কেমন পুত্র দেখুন আল্লাহর খুশিতে আপন পিতার হাতে কোরবান হতে দ্বিধাবুদ করেননি।
তাই আমার প্রাণের মুরশিদ আল্লামা শেরে গাজী আকবর আলী রেজভী রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু বলেন, জান গেলে জান পাওয়া যায়রে ঈমান গেলে আর ঈমান পাওয়া যায়না। যদি দিতে হয় জান তবুও দিবনা ঈমান।
ﻓﻠﻤﺎﺍﺳﻠﻤﺎ ﻭﺗﻠﻪ ﻟﻠﺠﺒﻴﻦ
যখন তাহারা আনুগত্য প্রকাশ করিল (অর্থাৎ পিতা কোরবানী করতে আর পুত্র কোরবানি হইতে) ইব্রাহিম তাহার পুত্রকে কাত করিয়া শুয়াইলেন।
***আয়াত১০৩***
ﻭﻧﺎﺩﻳﻨﻪ ﺍﻥ ﻳٰﺎﺑﺮٰﻫﻴﻢ
তখন আমি তাহাকে আহবান করিলাম, “হে ইব্রাহিম! **আয়াত১০৪**”
ﻗﺪ ﺻﺪﻗﺖ ﺍﻟﺮﺀﻳﺎ،، ﺍﻧﺎ ﻛﺬٰﻟﻚ ﻧﺠﺰﻯ ﺍﻟﻤﺤﺴﻨﻴﻦ
তুমি সপ্নাদেশ সত্যিই পালন করিলে!___
এইভাবেই আমি সতকর্মপরায়নদের পুরস্কৃত করিয়া থাকি।*”””
আয়াত১০৫
ﺍﻥ ﻫﺬﺍ ﻟﻬﻮ ﺍﻟﺒﻠٰﺆﺍ ﺍﻟﻤﺒﻴﻦ **
নিশ্চয়ই ইহা ছিল এক স্পষ্ট পরিক্ষা।
***আয়াত১০৬**
ﻭﻓﺪﻳﻨٰﻪ ﺑﺬﺑﺢ ﻋﻈﻴﻢ
আমি তাহাকে (ইসমাঈলকে) মুক্ত করিলাম (দুম্বা) কোরবানির বিনিময়ে।
**আয়াত ১০৭*”
ﻭﺗﺮﻛﻨﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻲ ﺍﻻﺧﺮﻳﻦ
আমি ইহা পরবর্তিদের জন্য স্মরণে রাখিয়াছি।
লক্ষ্যনীয় বিষয় , কোরবানি শুধু পশু জবাই আর গুস্ত খাওয়া নয়/ বরং আল্লাহর রাহে নিজের প্রবৃত্তিকে উৎসর্গ করে দেয়ার নামই কোরবানি।
তাই কোরবানি দিতে হবে নিখুত প্রানী। মনের ভাব পুরণ আর গুস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে যেন তেন একটা কোরবানি দিলেই হবেনা।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ বলেন
ﻣﺎ ﺗﺮٰﻯ ﻓﻰ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﻣﻦ ﺗﻔٰﻮﺕ ،،
দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোন খুঁত পাবেনা,
ﻓﺎﺭﺟﻊ ﺍﻟﺒﺼﺮ ﻫﻞ ﺗﺮﻯ ﻣﻦ ﻓﻄﻮﺭ ،،، *
তুমি আবার তাকাইয়া দেখ, কোন ত্রুটি দেখিতে পাও কি?
***পারা২৯, সুরা মুলক, আয়াত৩*”**
এখন যাহারা আল্লাহর নিখুঁত সৃষ্টি পাঠা এবং ষারকে খাসি কিংবা বলদ করেন আপনাদের নিকট আমার প্রশ্ন, আল্লাহর সৃষ্টি পাঠা এবং ষার এর মধ্যে কোন ত্রুটি দেখিতে পেয়েছেন কি?
দেখুন আল্লাহ কি বলেন
ﺛﻢ ﺍﺭﺟﻊ ﺍﻟﺒﺼﺮ ﻛﺮﺗﻴﻦ ﻳﻨﻘﻠﺐ ﺍﻟﻴﻚ ﺧﺎﺳﺄ ﻭﻫﻮ ﺣﺴﻴﺮ ،،،
অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফিরাও, সেই দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হইয়া তোমার দিকে ফিরিয়া আসিবে।
***আয়াত৪***
আমার প্রশ্ন যদি তোমরা কোন ত্রুটি দেখাতে না পার, তবে কেন খাসি কর।
এখন আরো কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করছি দেখুন ইসলামে খাঁসি করার অনুমতি আছে কিনা?/
পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন
ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻠﻪ؛ ﻭﻗﺎﻝ ﻻﺗﺨﺬﻥ ﻣﻦ ﻋﺒﺎﺩﻙ ﻧﺼﻴﺐ ﻣﻔﺮﻭﺿﺎ
‏( ١١٧ ‏)
ﻭﻻﺿﻠﻨﻬﻢ ﻭﻻﻣﻨﻴﻨﻬﻢ ﻭﻻﻣﺮﻧﻬﻢ ﻓﻠﻴﻐﻴﺮﻥ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ – ﻭﻣﻦ ﻳﺘﺨﺬ ﺍﻟﺸﻴﻄﻦ ﻭﻟﻴﺎ ﻣﻦ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺪ ﺧﺴﺮ ﺧﺴﺮﺍﻧﺎ ﻣﺒﻴﻨﺎ
‏( ١١٩ )
যার উপর আল্লাহ অভিশম্পাত করেছেন এবং সে বলেছে (শয়তান বলেছে )শপথ রইল,
আমি তোমার বান্দাদের মধ্য থেকে কিছু নির্দিষ্ট অংশ অবশ্যই নেবো ।
তাদেরকে আমার অনুগত করবো!
খাজাইনুল ইরফান ১৯০পৃষ্ঠা .সুরা নিসা, আয়াত ১১৮/টীকা৩০৯
শপথ রইলো, আমি নিশ্চয়ই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে ছারবো।
এবং নিশ্চয় তাদের মধ্যে বাসনা সৃষ্টি করবো এবং অবিশ্যই তাদেরকে নির্দেশ দিবো ।।
অতঃপর তারা চতুষ্পদ পশুর কর্ণচ্ছেদ করবে, এবং নিশ্চয় তাদেরকে বলবো! অতঃপর তারা আল্লাহর সৃষ্ট বস্তু গুলোকে বিকৃত করবে, এবং যে আল্লাহকে ছেড়ে শয়তান কে বন্ধু রুপে গ্রহণ করেছে সে সুস্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পতিত হয়েছে ॥
টীকা// শয়তান বিভিন্ন ধরনের বাসনা দিবে, কখনো দীর্ঘ জীবনের, কখনো পার্থিব জীবনের, কখনো এটার কখনো ওটার!
খাজাইনুল ইরফান টীকা ৩১০)সুরা নিসা আয়াত ১১৯
টীকা /পুরুষদের নারীদের মতো কর্ণচ্ছেদন করা নারীদের অলংকার পড়ানো, শারী ইত্যাদি পড়া!
টীকা //পাঠাকে খাসি করা, ও ষাড় কে বলদ বানানো
টীকা //খাসির মাঝে যে ক্ষোদ গুলি রয়েছে তাহল! পাঠার পুরুষত্ব আছে খাসিতে তাহা নাই!পাঠার লম্বা চুল হই খাসির মধ্যে তাহা নেই, পাঠার লম্বা শিং থাকে যা খাসিতে নেই, পাঠা বংশ বৃদ্ধি করতে সক্ষম, খাসি তা অক্ষম! এখন আল্লাহ সৃষ্টি করছেন
পাঠা মানুষ তাকে খাসি করে দিল ।অর্থাৎ শয়তানে অনুসারী হল ! কোরবানির পশু হবে নিখুঁত খাসিতে চারটি খুঁত! তাই খাসি বলদ কোরবানি নিষেধ ।
# হাদীস শরীফ দ্বারা খাঁসী করা নিষিদ্ধতার প্রমাণ
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺧﺼﺎﺀ ﻝ ﻭﺍﻟﺒﻬﺎﺋﻬﻢ –
ইবনে উমার রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণীত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর হস্তে “মানুষ ও পশুকে খাঁসী করা হতে বিরত করেন।
@@যারা খাঁসী কোরবানী উত্তম বলেন ,তাদের নিকট জিজ্ঞাসা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- আদেশ, নিষেধ মানা জরুরী কিনা? যদি জরুরী হয় তাহলে সবাই যদি এই আদেশ মোবারক গ্রহন করে খাঁসী করা বন্ধ দেওয়া হয়, তাহলে খাঁসী থাকবে কোথায় যে কোরবানি করার। যদি না থাকে তো কি কোরবানী দিবেন?
পূর্বেই বলেছি , রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম , খাসি করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আইয়ামে জাহেলিয়াতের যোগে খাসি করার প্রবণতা ব্যাপক ছিল। এমনকি মানব শিশুকেও খাসি করা হত। বয়স্করাও সেচ্ছাই খাসি হয়ে যেত।
আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোর হস্তে পশু ও মানুষকে খাসি করা থেকে বিরত করেন, নিম্নোক্ত হাদিস শরীফে তাহার প্রমাণ বহন করেন।
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻧﻬﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺧﺼﺎﺀ ﻝ ﻭﺍﻟﺒﻬﺎﺋﻢ ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ )
তারপরও যারা সেচ্ছায় খাসি তথা খোজা হতে চাইতেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে নামাজ এবং রোজার জন্য নির্দেশ দিতেন, খোজা হওয়ার জন্য নয়।
অপর একটি হাদিসে রয়েছ
ﻻﺧﺼﻰ ﻓﻰ ﺍﻻﺳﻼﻡ
ইসলাম ধর্মেই কোন খাসি নেই।
এখন, যাহারা খাসি কোরবানি উত্তম এবং খাসির মাংস সুসাদু বলে বেরাচ্ছেন। আপনাদের নিকট আমার আবারো দুটি প্রশ্ন ক.গোস্ত বেশি সুসাদু হলেইকি কোরবানি উত্তম হবে?
তাহলেতো মানুষের গুস্ত আরো বেশি সাদ হতে পারে ।
খ. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে খাসি করা নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছেন, সেখানে কার কথা আমরা মানব আপনাদের নাকি রাসুলের। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
ﻛﻞ ﻣﺎ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻛﺎﻣﻼ ﺑﻔﻄﺮﺗﻪ ﻓﺠﻌﻞ ﺍﻻﻧﺴﺎﻥ ﻧﺎﻗﺼﺎ ﺑﺴﻮﺀ ﺗﺪﺑﻴﺮﻩ
আল্লাহ পাক যে সকল জীবকে সৃষ্টগত দিক থেকে পূর্নাঙ্গ করেছেন, মানুষ তাহা ﺳﻮﺀ ﺗﺪﺑﻴﺮﻩ অর্থাৎ হীন কৌশলে অপূর্ণাঙ্গ ঘঠাচ্ছে।
হাদীস শরীফে রয়েছে
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻧﺎﻓﻊ ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻗﺎﻝ ﻧﻬﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺇﺧﺼﺎﺀ ﺍﻟﺨﻴﻞ ﻭﺍﻟﺒﻬﺎﺋﻢ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﻧﻤﺎﺀ ﺍﻟﺨﻠﻖ
ইবনে উমার হইতে বর্ণীত তিনি বলেন রসুলে আকরাম সাল্লাম ঘোড়া ও অন্যান্য প্রানী… খাসী করতে নিষেধ করেছেন…..এবং ইবনে উমার বলেন ইহাতে শৃষ্টির বংশ বৃদ্ধি আছে….
***মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৪৭৫৫
মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস নং-৪৭৯০
মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদীস নং-৯৩৬৭***
উপরোক্ত হাদিস শরীফের দ্বারা স্পষ্ট প্রমানিত হয় রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোড়া সহ সমস্ত প্রানীকেই খাসি করতে নিষেধ করেছেন যাতে করে তাদের বংশ বৃদ্ধি পায়। আর মানুষ তাকে খাসি করে বংস বৃদ্ধির ক্ষমতা হতে বঞ্চিত করে। ফলে পশুর মূল্যও বৃদ্ধি পায় এবং গরীবের জন্য কোরবানি করা দুরস্কর হয়ে পরে।
@@@ যারা খাসি কোরবানি উত্তম বলেন তাদের দলিল এবং নিচে তাহার খন্ডন করা হরা হল।
@@@
কিছু হাদীসের মাধ্যমে তা লক্ষ করি খাসী করা জানওয়ার কুরাবানীর জন্য রসুলও ব্যাবহার করতেন….
ﺑَﺎﺏُ ﻣَﺎ ﻳُﺴْﺘَﺤَﺐُّ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻀَّﺤَﺎﻳَﺎ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﺑْﻦُ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺍﻟﺮَّﺍﺯِﻱُّ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋِﻴﺴَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﺇِﺳْﺤَﺎﻕَ، ﻋَﻦْ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﺑْﻦِ ﺃَﺑِﻲ ﺣَﺒِﻴﺐٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻋَﻴَّﺎﺵٍ، ﻋَﻦْ ﺟَﺎﺑِﺮِ ﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺑَﺢَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟﺬَّﺑْﺢِ ﻛَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﺃَﻗْﺮَﻧَﻴْﻦِ ﺃَﻣْﻠَﺤَﻴْﻦِ ﻣُﻮﺟَﺄَﻳْﻦِ، ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﻭَﺟَّﻬَﻬُﻤَﺎ ﻗَﺎﻝَ : ﺇِﻧِّﻲ ﻭَﺟَّﻬْﺖُ ﻭَﺟْﻬِﻲَ ﻟِﻠَّﺬِﻱ ﻓَﻄَﺮَ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻋَﻠَﻰ ﻣِﻠَّﺔِ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﺣَﻨِﻴﻔًﺎ، ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ، ﺇِﻥَّ ﺻَﻠَﺎﺗِﻲ ﻭَﻧُﺴُﻜِﻲ ﻭَﻣَﺤْﻴَﺎﻱَ ﻭَﻣَﻤَﺎﺗِﻲ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﻟَﺎ ﺷَﺮِﻳﻚَ ﻟَﻪُ، ﻭَﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺃُﻣِﺮْﺕُ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﻣِﻨْﻚَ ﻭَﻟَﻚَ، ﻭَﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﺑِﺎﺳْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻛْﺒَﺮُ ﺛُﻢَّ ﺫَﺑَﺢَ
– জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন দু’টি ধূসর বর্ণের লম্বা শিংবিশিষ্ট খাসী করা ভেড়া যবাহ করেন…তিনি ভেড়া দু’টিকে কিবলাহমুখী করে শুইয়ে বলেনঃ ইন্নি ওয়াজহাতু ওয়াজহি লিললাযি ফত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা আলা মিলাতি ইব্রাহীমা হানিফাও, ওয়ামা আনা মিন মুশরেকিন… ইন্না স্বলাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহিয়ায়ি ওয়া মামাতি লিল্লাহি রব্বিল আলামিন লা শারিকা লাহু ওয়াবি যালিকা উমিরতো ওয়া আনা আওয়ালুল মুসলেমিন… আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাক ওয়া আন মুহাম্মাদিন ওয়া উম্মাতিহি অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবাহ করেন…
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৭৯৫
মিস্কাত সরিফ.. হাদীস নং-১৪৬
ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺨﻄﺎﺑﻲ ﺍﻟﻤﻮﺟﻮﺀ – ﻳﻌﻨﻲ ﺑﻀﻢ ﺍﻟﺠﻴﻢ ﻭﺑﺎﻟﻬﻤﺰ – ﻣﻨﺰﻭﻉ ﺍﻷﻧﺜﻴﻴﻦ ، ﻭﺍﻟﻮﺟﺎﺀ ﺍﻟﺨﺼﺎﺀ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺟﻮﺍﺯ ﺍﻟﺨﺼﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻀﺤﻴﺔ ، ﻭﻗﺪ ﻛﺮﻫﻪ ﺑﻌﺾ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻟﻨﻘﺺ ﺍﻟﻌﻀﻮ ، ﻟﻜﻦ ﻟﻴﺲ ﻫﺬﺍ ﻋﻴﺒﺎ ﻷﻥ ﺍﻟﺨﺼﺎﺀ ﻳﻔﻴﺪ
ﺍﻟﻠﺤﻢ ﻃﻴﺒﺎ ﻭﻳﻨﻔﻲ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺰﻫﻮﻣﺔ ﻭﺳﻮﺀ ﺍﻟﺮﺍﺋﺤﺔ
খাত্তাবী বলেন মওজুউন অর্থাৎ হামযাকে জিমের সঙ্গে সং্যুক্ত করা হয়েছে …অণ্ডকোষ কেটে বার করা হয়েছ বা পুরুষত্বহীন বানানো হয়েছে ….এবং খাসী করা হয়েছে.. এবং ইহাতে খাসী কুরবানী জাওয়ায়েযের প্রমান আছে…. যদিও কিছু আহলে ইল্ম বাহ্যিক দৃষ্টিতে খাসীর মধ্যে ত্রুটি দেখে খাসী কুরবানী করা অপছন্দ করেন… কিন্তু ঐ বাহ্যিক ত্রুটি (শরিয়াতের দৃষ্টিত) কোন আইবের মধ্যে গন্য নয় কেননা খাসীর মাংস অত্যাধিক সুস্বাদু এবং দুর্গন্ধ মুক্ত এবং এর দ্বারা গরীব মিস্কিন উপকৃত হয়…..
আওনুল মাবুদ, শরহে আবু দাউদ,খন্ড-৭, পৃষ্ঠা-৪৯৬
মওজুয়াইন শব্দের ব্যক্ষার আলোকে বোঝা গেলো রসুলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও খাসী করা জানোয়ার কুরবানী করেছেন….. খাসী করা জানোয়ার কুরবানী করা যায়েজ এবং যেহেতু এতে গরীব মিস্কিন উপকৃত হয় তাই ইহা বরং উত্তম গন্ধ যুক্ত মাংসের জানওয়ার কুরবানী করার চেয়ে….যাইহোক খাসী কুরবানী করা যায়েজ তার দলিল হিসাবে কিছু আরো হাদীস লক্ষ করুন….
ﺑَﺎﺏ ﺃَﺿَﺎﺣِﻲِّ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﷺ
ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻣُﺤَﻤَّﺪُ ﺑْﻦُ ﻳَﺤْﻴَﻰ، ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﻋَﺒْﺪُ ﺍﻟﺮَّﺯَّﺍﻕِ، ﺃَﻧْﺒَﺄَﻧَﺎ ﺳُﻔْﻴَﺎﻥُ ﺍﻟﺜَّﻮْﺭِﻱُّ، ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺑْﻦِ ﻋَﻘِﻴﻞٍ، ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﺳَﻠَﻤَﺔَ، ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻭَﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ ﻛَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺃَﻥْ ﻳُﻀَﺤِّﻲَ ﺍﺷْﺘَﺮَﻯ ﻛَﺒْﺸَﻴْﻦِ ﻋَﻈِﻴﻤَﻴْﻦِ ﺳَﻤِﻴﻨَﻴْﻦِ ﺃَﻗْﺮَﻧَﻴْﻦِ ﺃَﻣْﻠَﺤَﻴْﻦِ ﻣَﻮْﺟُﻮﺀَﻳْﻦِ ﻓَﺬَﺑَﺢَ ﺃَﺣَﺪَﻫُﻤَﺎ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻪِ ﻟِﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﻟِﻠَّﻪِ ﺑِﺎﻟﺘَّﻮْﺣِﻴﺪِ ﻭَﺷَﻬِﺪَ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﺒَﻼَﻍِ ﻭَﺫَﺑَﺢَ ﺍﻵﺧَﺮَ ﻋَﻦْ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ﻭَﻋَﻦْ ﺁﻝِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ ـ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ـ
আয়েশা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) ও আবূ হুরায়রা (রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত, ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক খাসী করা ভেড়া ক্রয় করতেন অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।
ইবনে মাজাহ,খন্ড-৩,হাদীস নং-৩১২২
 ৷৷৷ মূল পোস্ট এর লিংক ৷৷    

প্রশ্ন ১৩ : ব্যাভিচারী বিয়ে জায়েজ কি?

আসিফ----10.12.2018 তারিখে প্রশ্ন করেছেন

শিরোনাম: ব্যাভিচারী বিয়ে জায়েজ কি?

প্রশ্ন-বিস্তারিত:

তওবা বা হদের পর ব্যাভিচারী বিয়ে করা জায়েজ কি? ব্যভিচার করেছে এমন স্ত্রী রাখা জায়েজ কি? সরাসরি তাদের বিয়ে পবিত্র মুসলিমের সাথে জায়েজ এমন কোন হাদীস বা কুরআনের আয়াত থাকলে বলবেন। কোন মুফতির ফতোয়া বা তওবা করেছে এজন্য এমন কোন যুক্তি দিবেন না। হ্যা তবে, তওবা করেছে এবং বিয়ে করা জায়েজ এমন কোন সরাসরি হাদীস বা আয়াত থাকলে বা কোন হাদীসের ঘটনা এ সম্পর্কে থাকলে বলবেন।

উত্তরঃঃ

তারিখ: 11-12-18       সময়: 02-08

24-নং সুরা-সুরা: আন্-নূর
আয়াত নং :-3
টিকা নং:5,

الزَّانِى لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ ۚ وَحُرِّمَ ذٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

ব্যভিচারী যেন ব্যভিচারিনী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে এবং ব্যভিচারিনীকে যেন ব্যভিচারী বা মুশরিক ছাড়া আর কেউ বিয়ে না করে। আর এটা হারাম করে দেয়া হয়েছে মু’মিনদের জন্য।৫

তাফসীর :

টিকা:৫) অর্থাৎ অ-তাওবাকারী ব্যভিচারীর জন্য ব্যভিচারিণীই উপযোগী অথবা মুশরিক নারী। কোন সৎ মু’মিন নারীর জন্য সে মোটেই উপযোগী পুরুষ নয়। আর মু’মিনদের জন্য জেনে বুঝে নিজেদের মেয়েদেরকে এ ধরনের অসচ্চরিত্র লোকদের হাতে সোপর্দ করা হারাম। এভাবে যিনাকারীনী (অ-তাওবাকারী) মেয়েদের জন্য তাদেরই মতো যিনাকারীরা অথবা মুশরিকরাই উপযোগী। সৎ মু’মিনদের জন্য তারা মোটেই উপযোগী নয়। যেসব নারীর চরিত্রহীনতার কথা মু’মিনরা জানে তাদেরকে বিয়ে করা তাদের জন্য হারাম। যে সমস্ত পুরুষ ও নারী তাদের চরিত্রহীনতার পথে গা ভাসিয়ে দিয়েছে একমাত্র তাদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য। তবে যারা তাওবা করে নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছে তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। কারণ তাওবা ও সংশোধনের পর “যিনাকারী” হবার দোষ আর তাদের জন্য প্রযুক্ত হয় না। যিনাকারীর সাথে বিয়ে হারাম হবার অর্থ ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এ নিয়েছেন যে, আদতে তার সাথে বিয়ে অনুষ্ঠিতই হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক কথা হচ্ছে, এর অর্থ নিছক নিষেধাজ্ঞা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ করে যদি কেউ বিয়ে করে তাহলে আইনগতভাবে তা বিয়েই হবে না এবং এ বিয়ে সত্ত্বেও উভয় পক্ষকে যিনাকারী গণ্য করতে হবে একথা ঠিক নয়। নবী ﷺ একটি সার্বজনীন নিয়ম হিসেবে বলেনঃ الحرام لايحرم الحلال “হারাম হালালকে হারাম করে দেয় না।” (তাবারানী ও দারুকুতনী) অর্থাৎ একটি বেআইনী কাজ অন্য একটি আইনসঙ্গত কাজকে বেআইনী করে দেয় না। কাজেই কোন ব্যক্তির যিনা করার কারণে সে যদি বিয়েও করে তাহলে তা তাকে যিনায় পরিণত করে দিতে পারে না এবং বিবাহ চুক্তির দ্বিতীয় পক্ষ যে ব্যভিচারী নয় সেও ব্যভিচারী গণ্য হবে না। নীতিগতভাবে বিদ্রোহ ছাড়া কোন অপরাধ এমন নেই, যা অপরাধ সম্পাদনকারীকে নিষিদ্ধ ব্যক্তিতে (Outlaw) পরিণত করে। যার পরে তার কোন কাজই আইনসঙ্গত হতে পারে না। এ বিষয়টি সামনে রেখে যদি আয়াত সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা যায়, তাহলে আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে এই মনে হয় যে, যাদের ব্যভিচারী চরিত্র জনসমক্ষে পরিচিত তাদেরকে বিয়ে করার জন্য নির্বাচিত করা একটি গোনাহর কাজ। মু’মিনদের এ গোনাহ থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ এর মাধ্যমে ব্যভিচারীদের হিম্মত বাড়িয়ে দেয়া হয়। অথচ শরীয়াত তাদেরকে সমাজের অবাঞ্ছিত ও ঘৃণ্য জীব গণ্য করতে চায়।

অনুরূপভাবে এ আয়াত থেকে এ সিদ্ধান্তও টানা যায় না যে, যিনাকারী মুসলিম পুরুষের বিয়ে মুশরিক নারীর সাথে এবং যিনাকারীনী মুসলিম নারীর বিয়ে মুশরিক পুরুষের সাথে সঠিক হবে। আয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে একথা বলা যে, যিনা একটি চরম নিকৃষ্ট কুকর্ম। যে ব্যক্তি মুসলমান হয়েও এ কাজ করে সে মুসলিম সমাজের সৎ ও পাক-পবিত্র লোকদের সাথে আত্মীয় সম্পর্ক গড়ে তোলার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। তার নিজের মতো যিনাকারীদের সাথেই আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত অথবা মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত, যারা আদৌ আল্লাহর বিধানের প্রতি বিশ্বাসই রাখে না।

এ প্রসঙ্গে নবী ﷺ থেকে যেসব হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে সেগুলোই আসলে আয়াতের সঠিক অর্থ প্রকাশ করে। মুসনাদে আহমাদ ও নাসাঈতে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আসের (রাঃ) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, উম্মে মাহ্যাওল নামে একটি মেয়ে পতিতাবৃত্তি অবলম্বন করেছিল। এক মুসলমান তাকে বিয়ে করতে চায় এবং এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চায়। তিনি নিষেধ করে এ আয়াতটি পড়েন। তিরমিযী ও আবু দাউদে বলা হয়েছে, মারসাদ ইবনে আবি মারসাদ একজন সাহাবী ছিলেন। জাহেলী যুগে মক্কার ঈনাক নামক এক ব্যভিচারিণীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল। পরে তিনি তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা করেন এবং রসূলুল্লাহর ﷺ কাছে অনুমতি চান। দু’বার জিজ্ঞেস করার পরও তিনি নীরব থাকেন। আবার তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করেন, এবার তিনি জবাব দেনঃ يا مرثد الزَّانِى لاَ يَنْكِحُ إِلاَّ زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً فلاَ يَنْكِحُهَا “হে মারসাদ! ব্যভিচারী এক ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না, কাজেই তাকে বিয়ে করো না।” এছাড়াও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) ও হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) থেকেও বিভিন্ন হাদীস উদ্ধৃত হয়েছে। সেগুলোতে বলা হয়েছে, নবী ﷺ বলেছেনঃ “কোন দাইয়ুস (অর্থাৎ যে ব্যক্তি জানে তার স্ত্রী ব্যভীচারিনী এবং এরপরও সে তার স্বামী থাকে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না।” (আহমাদ, নাসাঈ, আবু দাউদ) প্রথম দুই খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমর (রাঃ) উভয়ই এ ব্যাপারে যে পদ্ধতি অবলম্বন করেন তা ছিল এই যে, তাঁদের আমলে যে অবিবাহিত পুরুষ ও নারী যিনার অভিযোগে গ্রেফতার হতো তাদেরকে তাঁরা প্রথমে বেত্রাঘাতের শাস্তি দিতেন তারপর তাদেরকেই পরস্পরের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতেন। ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি বড়ই পেরেশান অবস্থায় হযরত আবু বকরের (রাঃ) কাছে আসে। সে এমনভাবে কথা বলতে থাকে যেন তার মুখে কথা ভালভাবে ফুটছিল না। হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমরকে (রাঃ) বলেন ওকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়ে একান্তে জিজ্ঞেস করুন ব্যাপারখানা কি? হযরত উমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করতে সে বলে, তাদের বাড়িতে মেহমান হিসেবে এক ব্যক্তি এসেছিল। সে তার মেয়ের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে বসেছে। হযরত উমর (রাঃ) বলেনঃ قَبَّحَكِ اللَّهُ الا سترت على ابْنَتَكَ “তোমার মন্দ হোক, তুমি নিজের মেয়ের আবরণ ঢেকে দিলে না? ” শেষ পর্যন্ত পুরুষটি ও মেয়েটির বিরুদ্ধে মামলা চলে। উভয়কে বেত্রাঘাতের শাস্তি দেয়া হয়। তারপর উভয়কে পরস্পরের সাথে বিয়ে দিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) এক বছরের জন্য তাদেরকে দেশান্তর করেন। এ ধরনেরই আরো কয়েকটি ঘটনা কাযী আবু বকর ইবনুল আরাবী তাঁর আহকামুল কুরআন গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন (পৃষ্ঠা ৮৬, ২য় খণ্ড)।

(তাফহীমুল কুরআন)

Instructions

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।
আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসূলিক ওয়া আলাল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়া আলাল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত।

নিম্নের বিষয়গুলোতে ক্লিক করুন: 



-------------------------------------------------------------------------------------------------------


Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...