প্রশ্ন: ২৬৪ : মাযহাব অর্থ কি ?

মাযহাব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিনঅনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
মাযহাব (আরবিمذهب‎‎ maḏhab, "doctrine"; pl. مذاهب maḏāhibTurkishmezhepUrdu: مذہب mezheb) হল ইসলামী ফিকহ বা ব্যবহারশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত এক একটি চর্চাকেন্দ্র। নবী মুহাম্মদ-এর ইসলাম প্রচারের পর আনুমানিক প্রায় দেড়শত বছরের মধ্যে অসংখ্য মাযহাবের উৎপত্তি হয়। সাহাবাদের মধ্যেও অনেকেই নিজস্ব মাযহাব প্রতিষ্ঠার জন্য কৃতিত্বের অধিকারী হয়ে আছেন। সময়ের সাথে সাথে সেগুলো বিবর্ধিত, বিভিন্ন স্থানে সম্প্রসারিত ও বিভাজিত হয়, কিছু আবার সীমিত চর্চার মাধ্যমে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অবশেষে সাম্প্রতিক শতকে মোট আটটি প্রধান মাযহাবকে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক সার্বিকভাবে গড় হিসাব অনুযায়ী পালনযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।

আম্মান বার্তা[সম্পাদনা]

২০০৪ সালের ৯ই নভেম্বর জর্দানের আম্মানে অনুষ্ঠিত আম্মান বার্তা সম্মেলনে বিশ্বের ৫০ টি দেশের ২০০ জন মুসলিম আলেমের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত আটটি মাজহাবকে বর্তমান সময়ের জন্য পালনীয় হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।[১][২]
  1. হানাফি (সুন্নি)
  2. মালিকি(সুন্নি)
  3. শাফিয়ি (সুন্নি)
  4. হাম্বলি (সুন্নি)
  5. জাহিরি (সুন্নি)
  6. জাফরি (শিয়াইসমাইলি সহ)
  7. জায়েদি (শিয়া)
  8. ইবাদি (খারেজি)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1.  Hassan Ahmed Ibrahim, "An Overview of al-Sadiq al-Madhi's Islamic Discourse." Taken from The Blackwell Companion to Contemporary Islamic Thought, pg. 172. Ed. Ibrahim Abu-Rabi'. HobokenWiley-Blackwell, 2008. আইএসবিএন ৯৭৮১৪০৫১৭৮৪৮৮
  2.  The Three Points of The Amman Message V.1

উপরন্তু পড়ুন[সম্পাদনা]

প্রশ্ন: ২৬৩ : পুরুষের জন্য মাহরাম নারীকুল।

পুরুষদের মাহরাম[সম্পাদনা]

ছেলেদের জন্য মাহরাম হল ১৪ জন। তারা হলেন,

মায়ের মত ৫ জন[সম্পাদনা]

  1. মা
  2. খালা
  3. ফুফু
  4. শাশুড়ি
  5. দুধ-মা

বোনের মত ৫ জন[সম্পাদনা]

  1. বোন
  2. দাদি
  3. নানি
  4. নাতনি
  5. দুধ-বোন

মেয়ের মত ৪ জন[সম্পাদনা]

  1. মেয়ে
  2. ভাই-এর মেয়ে
  3. বোনের মেয়ে
  4. ছেলের বউ



মহিলাদের মাহরাম[সম্পাদনা]

মহিলাদের মাহরাম ১৪ জনঃ

বাবার মত ৫ জন[সম্পাদনা]

  1. বাবা
  2. চাচা
  3. মামা
  4. শ্বশুর
  5. দুধ-বাপ

ভাই-এর মত ৫ জন[সম্পাদনা]

  1. ভাই
  2. দাদা
  3. নানা
  4. নাতি
  5. দুধ-ভাই

ছেলের মত ৪ জন[সম্পাদনা]

  1. ছেলে
  2. ভাই-এর ছেলে
  3. বোনের ছেলে
  4. মেয়ের জামাই

প্রশ্ন: ২৬২ : দরূদ শরীফের অর্থ কি ?

দুরূদ বা দুরূদ শরীফ (ফার্সিدرود‎‎) হল একটি সম্ভাষণ যা মুসলমানরা নির্দিষ্ট বাক্যাংশ পড়ে ইসলামের শেষ পয়গম্বর মুহাম্মাদ (সা:)-এর শান্তির প্রার্থণা উদ্দেশ্যে পাঠ করা হয়ে থাকে। এটি একটি ফার্সি শব্দ যা মুসলমানদের মুখে বহুল ব্যবহারের কারণে ১৭শ শতাব্দীতে বাংলা ভাষায় অঙ্গীভূত হয়ে যায়।বৃহত্তর অর্থে মুহাম্মাদ-এর প্রতি এবং তার পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি এবং সহচরদের প্রতি আল্লাহ্‌র দয়া ও শান্তি বর্ষণের জন্য প্রার্থনা করাই দুরূদ। দুরূদকে প্রায়ই সম্মানসূচকভাবে ইসলামী পরিভাষায় "দুরূদ শরীফ"ও বলা হয়ে থাকে।
মুহাম্মাদ-এর নাম উচ্চারণের সময় সর্বদা "সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" (অর্থ: আল্লাহ'র শান্তি বর্ষিত হোক তার উপর) বলা হয়, যা একটি দুরূদ। একটি দুরূদের অর্থ এরকম: "হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ-এর প্রতি আপনি দয়া পরবশ হোন। তাঁর আলোচনা ও নামকে আপনি এই পৃথিবীর সকল আলোচনা ও নামের মাঝে সর্বোচ্চ স্থানে রাখুন।"

প্রশ্ন: ২৬১ : ‘না’রায়ে তাকবীর’ অর্থ কী? এটা বলা যাবে কি?


উত্তর:
‘নায়রায়ে তাকবীর’ এর মধ্যে ১ম শব্দটি উর্দূ (نعره) অর্থ: ধ্বনী বা উচ্চ আওয়াজ।
তাকবীর শব্দটি আরবী। অর্থ: আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব।
সুতরাং না’রায়ে তাকবীর অর্থ হল, তাকবীর ধ্বনী। অর্থাৎ তোমরা উচ্চ উওয়াজে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা দাও।
– কোথাও কোথাও বলতে শুনা যায়, ‘লিল্লাহে তাকবীর; অর্থাৎ আল্লাহর জন্য তাকবীর বা বড়ত্বের ঘোষণা।
– কোথাও কোথাও কেবল বলা হয় “তাকবীর।”
এ শব্দগুলোতে যেহেতু শরীয়া বিরোধী কিছু নেই সুতরাং তা বলতেও কোন দোষ নেই ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
————————
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।।

প্রশ্ন: ২৬০ : অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ।

অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করার পরিনাম ভয়াবহ
🔷2:188 সূরা আল বাকারাহ🔷
وَلَا تَأْكُلُوٓا أَمْوٰلَكُم بَيْنَكُم بِالْبٰطِلِ وَتُدْلُوا بِهَآ إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوٰلِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোন অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পার।
আর তোমরা অন্যায় ভাবে পরস্পরের মাল গ্রাস করো না এবং জানা সত্ত্বেও অসৎ উপায়ে লোকের মাল গ্রাস করার উদ্দেশে তা বিচারকের নিকট নিয়ে যেয়ো না।
১৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে মানুষের স¤পদে স্বতন্ত্র অধিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একজন মানুষ অন্যায়ভাবে যেমন মিথ্যা শপথ, ডাকাতি, চুরি, ঘুষ নিয়ে ও সুদ খেয়ে অন্যের সম্পদ হরণ করবে তা হারাম।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হজ্জে বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত, সম্পদ সব কিছু হারাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮, সহীহ মুসলিম হা:১৬৭৯)
হাফেয ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন: এখানে ঐ সব ব্যক্তিদের আলোচনা করা হচ্ছে, যাদের কাছে অপরের কোন প্রাপ্য থাকে কিন্তু প্রাপকের নিকট তার প্রাপ্য অধিকারের কোন প্রমাণ থাকে না, ফলে এ দুবর্লতার সুযোগ গ্রহণ করে সে আদালতের আশ্রয় নিয়ে বিচারকের মাধ্যমে নিজের পক্ষে ফায়সালা করিয়ে নেয় এবং এভাবে সে প্রাপকের অধিকার হরণ করে। এটা জুলুম ও হারাম। আদালতের ফায়সালা জুলুম ও হারামকে বৈধ ও হালাল করে দিতে পারে না। আদালত কেবল বাহ্যিক দিক অবলোকন করে বিচার করে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি একজন মানুষ। লোকজন আমার নিকট বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয়ে থাকে। স্বভাবত একজন অপরজন অপেক্ষা বেশি যুক্তিতর্কে পারদর্শী হয়ে থাকে। তার যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে আমি হয়তো তারই পক্ষে ফায়সালা দিয়ে থাকি (অথচ প্রকৃত ঘটনা এর বিপরীত)। তবে জেনে রেখ: যে ব্যক্তির পক্ষে এরূপ ফায়সালা দেয়ার ফলে কোন মুসলিমের হক আমি তাকে দিয়ে দেই, ওটা হবে তার জন্য জাহান্নামের আগুনের টুকরা। অতএব সেটা সে গ্রহণ করবে বা ছেড়ে দেবে। (সহীহ বুখারী হা: ২৬৮০)
কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: হে আদম সন্তান! জেনে রেখ, বিচারকের মীমাংসা তোমার জন্য হারামকে হালাল এবং অন্যায়কে ন্যায় করে দিতে পারে না। বিচারক সাক্ষীদের সাক্ষ্য অনুসারে বাহ্যিক অবস্থা দেখে বিচার করে। তাছাড়া তিনি মানুষ, তার দ্বারা ভুল হওয়াও সম্ভব। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়তের তাফসীর)
অতএব এরূপ ধোঁকাবাজী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্যের সম্পদ ভোগ করলে এর বিনিময়ে তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে।
----------------------------
👉 *বান্দার হক:*
👉বান্দার হক কে আমরা তুচ্ছ মনে করি, কিন্তু বান্দার হক নষ্ট করা আল্লাহর হক নষ্ট করা হইতেও ভয়াবহ!!!
👉২ টি মিনিট সময় নিয়ে পড়ার বিনীত অনুরোধ রইলো!!!
👉হক দুই প্রকারঃ-
👉১ আল্লাহর প্রতি হক
👉২ বান্দার প্রতি হক
👉১ আল্লাহর হকঃ
আল্লাহর হক নষ্ট করলে আল্লাহ চাইলে শিরক ব্যতীত অন্য যে কোন গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন বলে আমাদের বলেছেন!
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে! এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন! যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়! (সূরা নিসা: ১১৬)
তবে এই আয়াতে উল্লেখিত গুনাহ হচ্ছে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত যেগুলো আল্লাহর হক সেগুলো পালন না করার গুনাহ!
👉২ বান্দার হকঃ
বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ ক্ষমা করার এখতিয়ার আল্লাহ নিজ হাতে রাখেন নি! যেমন, আমি যদি একজনকে ধোঁকা দিয়ে ১ টি টাকাও নিয়ে নিই, কোন কথা বা গালির সাহায্যে মনে কষ্ট দেই, তবে একমাত্র সেই লোক (যার হক নষ্ট করলাম) সে বাদে আর কেউ ক্ষমা করতে পারবে না!
👉বান্দার হকের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেনঃ-
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺟِﺮُ ﻣَﻦْ ﻫَﺠَﺮَ ﻣَﺎ ﻧَﻬَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ
প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার কথা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে! আর মুহাজির সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা যে পরিত্যাগ করে! (সহীহুল বুখারী: ৬৪৮৪)
👉অন্যত্র রাসূল ( সা:) বলেনঃ-
ﺑِﺤَﺴْﺐِ ﺍﻣْﺮِﺉٍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺮِّ ﺃَﻥْ ﻳَﺤْﻘِﺮَ ﺃَﺧَﺎﻩُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢَ ﻛُﻞُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺣَﺮَﺍﻡٌ ﺩَﻣُﻪُ ﻭَﻣَﺎﻟُﻪُ ﻭَﻋِﺮْﺿُﻪُ
একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় মনে করে! এক মুসলিমের রক্ত, সম্পদ ও মান-সম্মান অন্য মুসলিমের জন্য হারাম! (সহিহ মুসলিম: ৬৪৩৫
👉মহান আল্লাহ, সুরা হুজুরাত-এর পরপর তিনটি আয়াতে হাক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করছেন!
ঝগড়া হলে মীমাংসা করে নেওয়াঃ-
ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺇِﺧْﻮَﺓٌ ﻓَﺄَﺻْﻠِﺤُﻮﺍ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧَﻮَﻳْﻜُﻢْ ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮﻥَ
নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই, তাই তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও আর আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও! (আল-হুজুরাত, ৪৯/১০)
👉হাদীসে পারস্পরিক বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়াকে সিয়াম, ছাদাক্বাহ, এমনকি সলাতের চাইতে উত্তম বলা হয়েছে! (সহীহ আবু দাঊদ: ৪৯৯২)
একবার রাসুলূল্লাহ (সাঃ) তাঁর পাশে উপবিষ্ট সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)কে বললেন-তোমরা কি জানো,গরীব কে ?
সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) বললেন-আমাদের মধ্যে তো গরীব তাদেরকে বলা হয়,যাদের কাছে ধন-সম্পদ,টাকা-পয়সা না থাকে। তখন রাসুলূল্লাহ (সাঃ)বললেন- প্রকৃত পক্ষে আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে গরীব সে, যে কিয়ামতের দিন নামায,রোযা,যাকাত, সবকিছু নিয়ে উঠবে,কিন্তু তার এ কর্মগুলো থাকবে যে, সে দুনিয়াতে কারো সাথে মন্দ আচরন করেছে,কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে,কাউকে আঘাত করেছে, কাউকে খুন করেছে ইত্যাদি, তাই এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কিছু নেকী একে দিবে, কিছু নেকী ওকে দিবে! এভাবে দিতে দিতে বান্দার হক আদায়ের পূর্বে যদি তার নেকী শেষ হয়ে যায়, তাহলে এই হকদারদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে! (সহীহ মুসলিম: ৬৪৭৩)
👉আল্লাহ আরো বলেন-
যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে! (সূরা আহযাব: ৫৮)
অর্থাৎ কোন মানুষকে যে কোন ভাবে কষ্ট দিলে তা আল্লাহ ক্ষমা করবেন না! ক্ষমা কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারে!
বান্দার হক নষ্ট করলে তা হতে ক্ষমা চাওয়ার উপায়ঃ-
১. যার হক নষ্ট করেছি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে!
এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম) সে মারা গেছেন, সেই ক্ষেত্রে তার উপযুক্ত উত্তরাধিকার এর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে! (এই নজীর মক্কা বিজয়- এর পরে দেখা যায়)
২. এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন দেখতে হবে, অপরাধ এর ধরন কি? যদি, অপরাধটি আর্থিক ক্ষতি বিষয়ক হয়, তবে সমপরিমাণ অর্থ কোন সওয়াব এর প্রত্যাশা না করে কোন ভাল কাজে দিয়ে দিতে হবে! (যেমন, মসজিদ নির্মাণ) এবং আল্লাহ-র কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে!
৩. এখন, আমি যদি মন থেকে অপরাধ স্বীকার করলাম, এত দেরিতে যখন (যার হক নষ্ট করলাম), সে মারা গেছেন বা পাওয়া যাচ্ছে না এবং তার উপযুক্ত কোন উত্তরাধিকার কেও পাওয়া যাচ্ছে না, তখন যদি, অপরাধটি ঐ লোককে অপমান করার মত কিছু হয়, যেমন ব্যাক্তিগত আক্রমণ (অহংকার, হিংসা, ঘৃণা) এর মত হয়, তখন কোন সওয়াব এর প্রত্যাশা না করে কাফফারা স্বরূপ ১০ জন মিসকিনকে এক বেলা খাইয়ে দিয়ে, আল্লাহর কাছে মন থেকে ক্ষমা চাইতে হবে!
মনে রাখতে হবে আল্লাহ মুখ দেখেন না মন দেখেন!
৪. উপরের কোন ভাবেই ক্ষমা না চাইলে , তাকে অবশ্যই কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে শেষ বিচারের সময় বিচারের মুখোমুখী হতেই হবে!
👉শিক্ষণীয় বিষয়:👈
👉১. অন্যায়ভাবে মুসলিম ভাইয়ের সম্পদ হরণ করা হারাম।
👉২. বিচার-ফায়সালায় অন্যায়ভাবে রায় প্রকাশে ঘুষ দেয়া ও নেয়া উভয়ই হারাম।
👉৩. বিচারক অজান্তে কারো জিনিস অন্যকে দিয়ে দিলেই হালাল হয়ে যাবে না।
👉৪. কোন মানুষ এমন কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মানুষের অন্তরের খবর জানেন না। বরং প্রকৃতপক্ষে শুধু আল্লাহ তা‘আলাই সকলের অন্তরের খবর জানেন।

প্রশ্ন: ২৫৯ : নামাযে হাসলে ।

প্রসঙ্গঃ
নামাযে হাসলে
প্রশ্নঃ
নামাযে দাঁড়িয়ে একবার আমার খুব হাসি পেল। অনেক চেষ্টা করলাম তা দমিয়ে রাখতে। মুখে হাত চাপা দিলাম। তারপরও নাক দিয়ে হাসির আওয়াজ বেরিয়ে গেল।
এর দ্বারা নামায এবং অযু সবই কি নষ্ট হবে?
উত্তরঃ
যদি এই পরিমাণ জোরে আওয়াজ বের হয় যে, কেবল পাশের লোকটি ছাড়া অন্য কেউ আওয়াজ শুনেনি, তাহলে শুধু নামায নষ্ট হবে অযু ভাঙ্গবে না।
আর যদি হাসির আওয়াজ এত বেশি জোরে হয় যে পাশের লোক ছাড়াও আশপাশের অন্যান্য লোক শুনে তাহলে নামাযও নষ্ট হবে অযুও নষ্ট ভেঙ্গে যাবে।
তবে এই হুকুম প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য। নাবালেগ যদি নামাযের মধ্যে উচ্চ স্বরে হাসে তাহলে তার অযু ভাঙ্গবে না। নামায ভেঙ্গে যাবে। যদি বয়স সাত বৎসরের চেয়ে বেশি হয় তাহলে তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে।
(#বাহরুর রায়েকঃ খন্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০ #আহসানুল ফাতাওয়াঃ খন্ড ৪,পৃষ্ঠা ৪৩০)

প্রশ্ন: ২৫৮ : ইসলামে পুরুষের পর্দা ।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে যাবতীয় ক্ষতিকর বা অকল্যাণকর বস্তু ও বিষয়কে হারাম করা হয়েছে এবং যাবতীয় কল্যাণকর বিষয় বা বস্তুকে করা হয়েছে হালাল। 

পূর্ববর্তী একটি আলোচনায় ইসলামের যাবতীয় হারাম ও হালাল বিষয়কে আলোকপাত করা হয়েছে। আজকের আলোচ্য বিষয় পর্দা। 
পর্দা না করা ইসলামে হারাম। কারণ ইসলামে পর্দা করার ফরজ এবং সরাসরি পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বার বার পর্দা করার কথা বলা হয়েছে। নারী এবং পুরুষ উভয় পক্ষের জন্যই পর্দা করা আবশ্যকীয়। ইসলামের বিধানে উভয়কেই পর্দা পালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পর্দা পালন করা একজন মুসলিম নারী ও পুরুষের অনন্য রুচিবোধ এবং সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ। পর্দা পুরুষের উন্নত চরিত্র গঠনের পাশাপাশি নারীর মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচও বটে।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় সবসময় নারীদের পর্দার কথা আলোচনা করা হয় এবং সেই সঙ্গে ভুলে যায় পুরুষের পর্দা পালনের কথা। আর তাই আজকের মূল আলোচ্য বিষয় ইসলামী শরিয়তে পুরুষের পর্দার বিধান। 
পবিত্র কোরআন মাজীদে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে মহান আল্লাহপাক বলছেন, ‘হে নবী! মুমিনদের (পুরুষ) বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এতেই তাদের জন্য পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে, আল্লাহ তা সম্পর্কে অবহিত আছেন।’ (সূরা: আন-নূর, আয়াত: ৩০)
এই আয়াতের শুরুতেই ঈমানদার পুরুষদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে। ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত কিংবা তাকানোই হচ্ছে- যৌন প্রবৃত্তির শুরুর এবং এর শেষ পরিণতি পাপ ও ফেতনাসহ জিনা ব্যভিচার যার পরিণাম ভয়ঙ্কর।
মানুষের জীবনে পোশাক একটি অপরিহার্য বিষয়। ইসলামেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। পোশাক মূলত লজ্জা নিবারণের উপকরণ হলেও মানবজীবনে পোশাকের ভূমিকা অনেক পরিব্যপ্ত। সাজ-সজ্জা বা সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপকরণ থেকে শুরু করে আর্থিক মুনাফা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম হলো এই পোশাক-পরিচ্ছদ। ইসলামে নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা পোশাকের বিধান রয়েছে। 
ইসলামে পুরুষের পর্দা পালন করার নিয়ম-কানুন পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীস সমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে নিয়ম গুলো আলোচনা করা হলো-
 
(১) পুরুষের নাভীর ওপর থেকে হাঁটুর নিচে এবং টাকনুর ওপর পর্যন্ত ঢাকতে হবে। পুরুষের হাটুর ওপরে এবং টাকনুর নিচে কাপড় পরা কবিরা গুনাহ । 
(২) এমন পোশাক পরিধান করবে, যা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যৌন আবেদনময় হবে না এবং বিকৃত চিন্তার জন্ম দিবেনা। 
(৩) পোশাক এমন পাতলা হওয়া যাবেনা যাতে কাপড় পরা সত্বেও ওপর দিয়ে ভেতরের চামড়া নজরে আসে। কারণ এমন কাপড় পরা না পরা একই কথা। 
(৪) পোশাক হতে হবে ঢিলেঢালা এবং মার্জিত। এমন আঁট-সাঁট (টাইটফিট) হওয়া যাবেনা যাতে দেহের উঁচু-নিচু গঠন বোঝা যায় । 
(৫) পোশাকটি যেন কোনো অবিশ্বাসী/কাফেরদের অনুকৃত না হয়। প্রিয় নবীজী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন (পোশাকে, চাল-চলনে অনুকরণ) করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।’ (আবূ দাউদ, মিশকাত: ৪৩৪৭)
(৬) পোশাকটি যেন বিপরীত লিঙ্গের পোশাকের অনুরূপ না হয়। এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন-সেই সমস্ত নারীদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন, যারা পুরুষদের বেশ ধারণ করে এবং সেই সমস্ত পুরুষদেরকেও অভিশাপ দিয়েছেন, যারা নারীদের বেশ ধারণ করে। (আবূ দাউদ: ৪০৯৭, ইবনে মাজাহ: ১৯০৪)
(৭) পোশাক যেন জাঁকজমকপূর্ণ প্রসিদ্ধিজনক না হয়। কারণ, এমন ধরনের পোশাক পরলে সাধারণত পরিধানকারীর মনে অহংকারের সৃষ্টি হয়। তাই মহানবী (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধিজনক পোশাক পরবে, আল্লাহ্ তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন। (আহমাদ, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ, মিশকাত: ৪৩৪৬) 
পোশাকের পর্দা ছাড়াও একজন পুরুষের চোখের পর্দা, মনের পর্দা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন পুরুষের চোখ শুধুমাত্র তার নিজের স্ত্রীর সৌন্দর্য দর্শন করার অনুমতি পায়। একজন পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী এবং কিছু নির্ধারিত নারী ব্যতীত অন্য কোন নারীর চেহারার সৌন্দর্য চোখে দেখা বা দেহের আকৃতি অন্তরে অনুভব করাও ‘হারাম’। 
বুরায়দা (রা.) কতৃক বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার হজরত আলী (রা.)-কে বলেন, ‘হে আলী! তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেলো না। হঠাৎ অনিচ্ছাকৃতভাবে যে দৃষ্টি পড়ে তার জন্য তুমি ক্ষমা পাবে। কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি তোমার জন্য বৈধ নয়।’ (আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাউদ, দারেমী, মিশকাত: ৩১১০)
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনের সূরা আন-নূরের ৩০নং আয়াতে নারীদের পর্দা করার কথা বলার আগে পুরুষের চোখের পর্দা হেফাজত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যখন কেউ তা জেনেও এই নির্দেশ অমান্য করল সে মহান আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার করল। 
আর সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ বলেছেন যে, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যারা আমার আয়াত সমূহকে অবজ্ঞা করবে, আমি তাদেরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করব। তাদের শরীরের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, আমি সেখানে আবার নতুন চামড়া দিব, যেন তারা আজাবের স্বাদ পূর্ণভাবে আস্বাদন করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।’ (সূরা: আন নিসা, আয়াত: ৫৬) 
 
একজন পুরুষের জন্য নির্ধারিত কতকজন নারীকে দেখা ইসলামে জায়েজ রয়েছে তারা হলেন: 
(১) মা (আপন ও সৎ উভয় ),
(২) দাদী, পরদাদী, 
(৩) নানী, পরনানী, 
(৪) মেয়ে ( বৈপিত্রেয়া, বৈমাত্রিয়া মেয়ে ও দুধ মেয়ে ),
(৫) পুতনী ( দুধ ছেলে, বৈমাত্রেয়া ও বৈপিত্রেয় ছেলের মেয়ে ),
(৬) নাতনী ( দুধ মেয়ে ও বৈপিত্রেয়া মেয়ের মেয়ে),
(৭) বোন (তিন প্রকার: আপন, বৈমাত্রিয়া বোন ও বৈপিত্রিয়া বোন ),
(৮) ফুফু (আপন ফুফু, বৈমাত্রিয়া ফুফু, বৈপিত্রিয়া ফুফু ও দুধ ফুফু ), 
(৯) খালা (আপন খালা, বৈমাত্রিয়া খালা, বৈপিত্রিয়া ও দুধ খালা )
(১০) ভাতিজী, 
(১১) ভাগ্নী,
(১২) দুধ মা (আড়াই বছরের মধ্যে যার দুধ পান করা হয়েছে),
(১৩) দুধ বোন, 
(১৪) শাশুড়ী(শুধু আপন শাশুড়ী), 
(১৫) ঔরসজাত ও দুধ পুত্রের বধু বা স্ত্রী, এবং
(১৬) অতি বৃদ্ধা মহিলা, যাদের প্রতি তাকালে আকর্ষণ বিকর্ষণে পরিণত হয়। 
পরিশেষে বলতে হয়, পর্দার কিছু বিধান আছে যা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। যেমন সতরের বিধান, নজরের বিধান, নারী-পুরুষের মেলামেশার বিধান ইত্যাদি। 
তবে কিছু বিধান শুধু মৌলিকভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন: পরিবারের কর্তা হিসেবে অধীনস্তদের পর্দা সম্পর্কে অবগত করার বিধান এবং তাদের পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের বিধান এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিচালক হিসেবে সর্বশ্রেণীর মুসলিম নর-নারীর জন্য পর্দার বিধান। 
মূলকথা হচ্ছে ইসলামী শরিয়তে পর্দার বিধান শুধু নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তেমনি পর্দার বিধান শুধুই ব্যক্তিজীবনের বিষয় নয় বরং পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেরও ক্ষেত্রেও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 
তাই সকল মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য, পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা তাহলেই ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ এবং রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা, স্বস্থি ও পবিত্রতা ফিরে আসবে।
ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

প্রশ্ন: ২৫৭ : সালাতুদ দোহা ।

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত, একটি গুরুত্বপূর্ন নফল সলাত। বলা হয়ে থাকে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নফল সলাত। প্রথম হলো তাহাজ্জুতের সলাত এবং দ্বিতীয় হলো এই সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত । আসুন জেনেনেই এই সলাতের গুরুত্ব এবং সলাতের বিভিন্ন নিয়মকানুন ।  

সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত কেন এত গুরুত্বপূর্ন?

চাশতের সলাতের গুরুত্ব বুঝতে চলুন প্রথমে একটি হাদিস দেখে নেইহাদিস টি আবু যর রাঃ থেকে বর্ণিত
 আবূ যার (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেনতিনি বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই এমন অবস্থায় প্রভাব করে যেতাকে তার প্রত্যেক জোড়াগুলোর পরিবর্তে সাদকাহ দেয়া লাগে। কাজেই প্রত্যেক বার ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলা সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়প্রত্যেক বার ‘আল্লাহু আকবর’ বলা সাদকা হিসেবে গণ্য হয় এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করাও সাদকাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর এসবের মুকাবিলায় চাশতের দু’রাকআ’ত নামাযই হবে যথেষ্ট”। (মুসলিম ৭২০)
অর্থাৎ প্রতিদিন সকালে আমাদের প্রতিটি জোড়ার জন্য সাদকাহ করতে হয় আর তা আল্লাহু আকবারসুবাহানআল্লাহআলহামদুলিল্লাহলা-ইলাহা ইল্লালাহ ইত্যাদি বলারসৎ কাজ করাঅসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার মাধ্যমে হয়ে থাকে । আর সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায়ের মাধ্যে এই সাদকাহ আদায় হয়ে যায় । 
তাছাড়া রাসূল সাঃ এই সলাতের ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং তিনিও প্রায় নিয়মিতই এই সলাত পড়তেন। তাছাড়া অপর এক হাদিসে আবু হুরায়রা রাঃ বলেন-
 তিনি বলেনআমার খলীল ও বন্ধু [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আমাকে তিনটি কাজের ওসিয়্যাত (বিশেষ আদেশ) করেছেনমৃত্যু পর্যন্ত তা আমি পরিত্যাগ করব না। (তা হলঃ) ১. প্রতি মাসে তিনদিন সিয়াম পালন করা। ২. সালাতুয-যোহা (চাশত এর সালাত আদায় করা)। ৩. বিত্‌র (সালাত) আদায় করে শয়ন করা
(সহিহ বুখারী, তাহাজ্জুদ অধ্যায়, ১১৭৮)

অর্থাৎ সালাতুত দোহার এত গুরুত্ব যেরাসূল সাঃ আবু হুরায়রা রাঃ কে এ ব্যাপারে ওসিয়্যাত বা বিষেশ আদেশ করে গেছেন এবং তিনি এই ওসিয়্যাত মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পালন করার সিন্ধান্ত নিয়েছেন । 
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এই সলাতের গুরুত্ব অন্য সকল নফল সলাত থেকে বেশি ।

চাশতের নামাজ কখন পড়তে হয় ?

চাশতের নামাজ পড়তে হয় সূর্য উঠার ১৫ থেকে ২০ পর (যখন হারাম সময় পার হয়ে যায়) যোহর পর্যন্ত । যদিও এ সময় ইশরাকের সলাত রয়েছে ২ রাকাত । এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে,
আসিম ইবনে যামরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
 তিনি বলেনআমরা আলী (রাঃ) এর কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিনের (নফল) সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনতোমরা আসেভাবে আদায় করার ক্ষমতা রাখো না। বর্ণনাকারী বলেনআমরা বললামআমাদের মধ্যে যে সামর্থ্য রাখে সে আদায় করবে। এরপর তিনি বললেনআসরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে তেমন হলে তিনি ২ রাক’আত (ইশরাক সালাত) আদায় করতেন। আবার যোহরের সময় সূর্য যতটা উপরে থাকে (পূর্ব দিকে সূর্য ততটা উপর হলে) তিনি ৪ রাক’আত (চাশতের সালাত) আদায় করতেন। যোহরের পূর্বে ৪ রাক’আত ও পরে ২ রাক’আত এবং আসরের পূর্বে ৪ রাক’আত আদায় করতেন। প্রতি ২ রাক’আতে নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতানবীগণ এবং যেসকল মুমিন-মুসলিম তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের প্রতি সালাম প্রেরণের মাধ্যমে ব্যবধান করতেন

(সুনানে নাসাঈ, হা/৮৭৪; ইবনে মাজাহ, হা/১১৬১)

অর্থাৎ সূর্য যখন পূর্ব আকাশ থেকে উপরে উঠতে শুরু করেযেমনি ভাবে আসরের সময় সূর্য পশ্চিম আকাশে যেখানে থাকে তেমন পূর্ব আকাশে সূর্য আসলে ইশরাকের সলাত আদায় করতেন ।  আর তার থেকে উপরে উঠলে সালাতুত দোহা বা চাশতের সলাত আদায় করতেন । 
আরো সহজ করে বললেসকাল ৬:৩০ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত এমন সময় কালে ইশরাকের সলাত এবং ৯ টা থেকে যোহরের আগ পর্যন্ত বা সূর্য মাথার উপর উঠা পর্যন্ত চাশতের সলাত আদায়ের সময় । 

চাশতের সলাত কত রাকাত?

চাশতের সলাত ২ থেকে শুরু করে যত ইচ্ছা দুই দুই করে পড়া যায় । তবে অনেক হাদিস থেকে জানা যায় আল্লাহর রসূল সাঃ ৪ রাকাতের নিচে চাশতের সলাত পড়তেন না । তাই সর্বনিম্ন ৪ রাকাত পড়া সহীহ হবে । 
যেমন হাদীসে এসেছেমু’আযা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, 
 আমি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি চাশতের সালাত আদায় করতেনউত্তরে তিনি বললেনহ্যাঁ- ৪ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আল্লাহ চাইলে কখনো কখনো বেশিও পড়তেন
সহীহ মুসলিমহা/১৬৯৬ইবনে মাজাহহা/১৩৮১মুসনাদে আহমাদহা/২৪৬৮২বায়হাকীহা/৪৬৭৯সহীহ ইবনে হিব্বানহা/২৫২৯শারহুস সুন্নাহহা/১০০৫

এছাড়াও অপর এক হাদিসে এসেছে আল্লাহর রাসূল সাঃ চাশতের সলাত ১২ রাকাতও পড়তেনযেমন- আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
 যদি কখনো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিদ্রা বা প্রবল ঘুমের চাপের কারণে তাহাজ্জুদ আদায় করতে না পারতেনতাহলে তিনি দিনে (চাশতের সময়) ১২ রাক’আত সালাত আদায় করে নিতেন
শারহুস সুন্নাহহা/৯৮৬সহীহ ইবনে হিব্বানহা/২৬৪৫

সুতরাং চাশতের সলাত আমাদের সাধ্য মত ২ থেকে যত বেশি পড়া যায় পড়তে পারবো তবে সর্বনিম্ন ৪ রাকাত (যদি সমস্যা না থাকে) পড়া উত্তম হবে । 

চাশতের সলাত পড়তে কোন নিয়ম আছে কি?

চাশতের সলাত অন্য সকল নফল সলাতের মতই একটি সলাত এটি পড়তে আলাদা কোন নিয়ম কানুন নেই । সাধারন নফল সলাতের মত পছন্দ মত সুরা মিলিয়ে পড়া যায় । 

পরিশেষে একটি বিষয় বলতে চাই তাহলো আজ কাল আমরা মুসলিমরা এই নফল ইবাদতের আমল একদম করি না বললেই চলে । সত্যি কথা বলতে আমরা অনেকেই এমন এখনো আছি যারা একবারো জীবনে এই সলাত আদায় করি নি । তাই আসুন এই সুন্নাহকে আমরা জীবিত করি আমাদের আদায় করার মাধ্যমে যার ব্যাপারে রাসূল সাঃ এত গুরুত্ব দিয়েছেন যে তিনি বলতেন "আমার মা-বাবাকে জিন্দা করে পাঠানো হলেও আমি এই আট রাক’আতকে (চাশতের সলাত) ছাড়ব না।" (মুয়াত্তা ইমাম মালিক পরিচ্ছেদঃ ৮) । 
আমাদের যদি অত্যন্ত ব্যাস্ততায় দিন চলে যায় অথবা আমরা যদি আমাদের জীবিকা বা চাকরি নিয়ে বেশি ব্যাস্ত থাকিতবুও যেন ছুটির দিন গুলোতে আদায় করি । ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদের উত্তম প্রতিদান দিবেন । আমিন ।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...