গোসল ফরজ হওয়ার কারণ সমূহ - যেসব কারণে শরীর নাপাক হয় :

 গোসলের আভিধানিক অর্থ

কোনো কিছুর ওপর পানি পূর্ণাঙ্গরূপে বাইয়ে দেয়া।

শরয়ী পরিভাষায় গোসলের অর্থ

আল্লাহ তাআলার ইবাদতের উদ্দেশে সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গরূপে শরীর ধৌত করা।

গোসল ফরজ হওয়ার কারণসমূহ

১-বীর্যপাত

বীর্য হলো: গাড়-সাদা পানি যা যৌন-উত্তেজনাসহ ঠিকরে বের হয়, যারপর শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বীর্য গন্ধে অনেকটা পঁচা ডিমের মতো। ইরশাদ হয়েছে :
( وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ ) (আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও[ সূরা আল মায়েদা:৬] আলী রাযি. বলেছেন, ‘তুমি যদি সজোরে পানি নির্গত করো, তবে গোসল করো।’
(বর্ণনায় আবু দাউদ)

মাসায়েল

১- যদি কারো স্বপ্নদোষ হয় আর বীর্যপাত না ঘটে, তবে গোসল ফরজ হবে না। যদি ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর বীর্যপাত ঘটে তবে গোসল ফরজ হবে।

২- কেউ যদি বীর্য দেখতে পায় আর স্বপ্নদোষের কথা মনে না থাকে, তবে গোসল ফরজ হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পানি তো পানির জন্য’(বর্ণনায় মুসলিম) অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল ফরজ হবে’।

৩- যদি পুরষাঙ্গে বীর্যের স্থানান্তর অনুভূত হয়, আর বীর্য বের না হয় তবে গোসল ফরজ হবে না।

৪- যদি কারো অসুস্থতার কারণে উত্তেজনা ব্যতীত বীর্যপাত ঘটে তবে গোসল ফরজ হবে না।

৫- যদি গোসল ফরজ হওয়ার পর গোসল করে নেয় এবং গোসলের পর বীর্য বের হয়, তাহলে পুনরায় গোসল করতে হবে না। কেননা এ সময় সাধারণত উত্তেজনা ব্যতীত বীর্য নির্গত হয়। এ অবস্থায় সতর্কতার জন্য অজু করে নেয়াই যথেষ্ট হবে।

৬- যদি ঘুম থেকে জাগার পর আদ্রতা দেখা যায়, এবং কারণ মনে না থাকে, তবে এর তিন অবস্থা হতে পারে:

ক - আদ্রতা যে বীর্য থেকে নয় এ ব্যাপারে আশ্বস্ত হলে গোসল ফরজ হবে না। বরং এ আদ্রতার হুকুম হবে পেশাবের ন্যায়।

খ- বীর্য কি না এ ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হলে যাচাই করে দেখতে হবে। যদি এমন বিষয় মনে করা সম্ভব হয় যা উক্ত আদ্রতা বীর্য থেকে হওয়ার সম্ভাবনাকে পোক্ত করে দেয়, তবে তা বীর্য বলেই গণ্য হবে। আর যদি এমন বিষয় মনে করা সম্ভব হয় যা উক্ত আদ্রতা যে মযী তার সম্ভাবনাকে পোক্ত করে দেয়, তবে তা মযী বলেই গণ্য হবে।

গ - আর যদি কোনো কিছুই মনে করতে না পারা যায়, তাহলে সতর্কতার জন্য গোসল করা জরুরি।

৭- যদি বীর্য দেখা যায় কিন্তু কখন স্বপ্নদোষ হয়েছে তা মনে না থাকে, তাহলে গোসল করতে হবে এবং সর্বশেষ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর যত নামাজ আদায় করা হয়েছে তা পুনরায় পড়তে হবে।

২-সঙ্গম ঘটলে

পুরষাঙ্গ ও যোনির সম্মিলনকে সঙ্গম বলে। আর এটা ঘটে পুরষাঙ্গের পুরো অগ্রভাগ যোনির অভ্যন্তরে প্রবেশ করার ফলে। এতটুকু হলেই সঙ্গম বলে ধরা হবে এবং বীর্যপাত না ঘটলেও গোসল ফরজ হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘নারী ও পুরুষের গুপ্তাঙ্গের সম্মিলন ঘটলেই গোসল ফরজ হয়ে যাবে।’(বর্ণনায় তিরমিযী)

৩ - কাফির ব্যক্তি মুসলমান হলে

এর প্রমাণ কায়েস ইবনে আসেম যখন ইসলাম গ্রহণ করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে গোসল করার নির্দেশ দেন।(বর্ণনায় আবু দাউদ)

৪ - হায়েয ও নিফাস বন্ধ হলে

আয়েশা রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাতিমা বিনতে আবি হুবাইশ রাযি. কে বলেন, ‘হায়েয এলে নামাজ ছেড়ে দাও, আর হায়েয চলে গেলে গোসল করো ও নামাজ পড়ো।’ নিফাস হলো হায়েয এর মতো, এ ব্যাপারে কারো দ্বীমত নেই।(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

৫ - মৃত্যু ঘটলে

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কন্যা যায়নাব রাযি. এর মৃত্যুর পর তিনি বলেছেন, ‘তাকে তিনবার গোসল দাও, অথবা পাঁচবার অথবা তারও বেশি যদি তোমরা ভালো মনে করো।’(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

গোসলের বিবরণ

গোসলের ক্ষেত্রে ফরজ হলো গোসলের নিয়তে সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া। তা যেভাবেই হোক না কেন। তবে মুস্তাহাব হলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোসলের অনুসরণ করা। উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রাযি. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবত থেকে গোসলের জন্য পানি রাখলেন। অতঃপর তিনি ডান হাত দিয়ে বাম হাতে দুই অথবা তিনবার পানি ঢাললেন। এরপর তিনি তাঁর গুপ্তাঙ্গ ধৌত করলেন। এরপর তিনি জমিনে অথবা দেয়ালে দুই অথবা তিনবার হাত মারলেন। অতঃপর তিনি কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনি তাঁর চেহারা ও দুই বাহু ধৌত করলেন। এরপর তিনি মাথায় পানি ঢাললেন। শরীর ধৌত করলেন। তিনি তাঁর জায়গা থেকে সরে গেলেন এবং দু’পা ধৌত করলেন। বর্ণনাকারী বলেন,‘এরপর আমি একটি কাপড়ের টুকরা নিয়ে এলাম। অবশ্য তিনি তা চাইলেন না। তিনি তাঁর হাত দিয়েই পানি ঝেড়ে ফেলতে শুরু করলেন।’(বর্ণনায় বুখারী)

সে হিসেবে গোসল করার পদ্ধতি হলো:

১- দুই অথবা তিনবার কব্জি পর্যন্ত দু’হাত ধোয়া।

২- গুপ্তাঙ্গ ধোয়া।

৩- জমিন অথবা দেয়ালে দুই অথবা তিনবার হাত মারা।

৪- নামাজের অজুর ন্যায় অজু করা, তবে মাথা মাসেহ ও পা ধোয়া ব্যতীত।

৫- মাথায় পানি ঢালা।

৬- সমস্ত শরীর ধোয়া।

৭- যেখানে দাঁড়িয়ে গোসল করা হয়েছে সেখান থেকে সরে গিয়ে পা ধোয়া ।

জুনুবী ব্যক্তির ওপর যা হারাম

১- নামাজ

দলিল, আল-কুরআনের আয়াত:

(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ )

{হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর, তবে যদি তোমরা পথ অতিক্রমকারী হও।} [আন-নিসা:৪৩]

২- বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করা

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘বায়তুল্লাহর তাওয়াফ হলো নামাজতুল্য’।
(বর্ণনায় নাসায়ী)

৩- কুরআন স্পর্শ করা।

এর দলিল, আল কুরআনের আয়াত,

(لَّا يَمَسُّهُۥٓ إِلَّا ٱلۡمُطَهَّرُونَ ) {কেউ তা স্পর্শ করবে না পবিত্রগণ ছাড়া।}[সূরা আল ওয়াকিয়া:৭৯], হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পবিত্রতা ব্যতীত কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না’।(হাদীসটি ইমাম মালিক তাঁর মুয়াত্তা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।)

৪– কুরআন পড়া

আলী রাযি. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তেন্জা সেরে বের হয়ে আসতেন, তিনি আমাদেরকে কুরআন পড়ে শোনাতেন, আমাদের সাথে গোশত খেতেন, জানাবত ব্যতীত কোনো কিছু তাঁকে কুরআন থেকে বারণ করত না’।
(বর্ণনায় তিরমিযী)

৫- মসজিদে অবস্থান করা, তবে যদি হেঁটে অতিক্রম করে যাওয়া হয় তার কথা ভিন্ন

ইরশাদ হয়েছে:

(يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَقۡرَبُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنتُمۡ سُكَٰرَىٰ حَتَّىٰ تَعۡلَمُواْ مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغۡتَسِلُواْۚ)
{হে মুমিনগণ, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, যতক্ষণ না তোমরা গোসল কর।}
[সূরা আন-নিসা:৪৩]

মুস্তাহাব গোসল

১- জুমার জন্য গোসল করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, {‘যে ব্যক্তি জুমার জন্য অজু করল সে এর দ্বারাই নেয়ামত পেয়ে গেল, আর যে ব্যক্তি গোসল করল, তবে গোসলই উত্তম।’}[বর্ণনায় আবু দাউদ]

২- হজ্ব ও উমরার জন্য গোসল করা। যায়েদ ইবনে ছাবেত রাযি. থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ইহরামের উদ্দেশে কাপড় পরিত্যাগ করতে ও গোসল করতে দেখেছেন।’ (বর্ণনায় তিরমিযী)

৩- মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার পর গোসল করা। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে গোসল করাল সে যেন গোসল করে।’(বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)

৪- প্রতিবার সঙ্গমের পর গোসল করা। আবু রাফে রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের কাছে গমন করলেন, এবং প্রত্যেকের কাছেই গোসল করলেন। বর্ণনাকারী বলেন,‘আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, একবার গোসল করলেই কি হয় না? উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটাই উত্তম, অধিক ভালো ও পবিত্রতা’।(বর্ণনায় আবু দাউদ)

যা উচিত নয়

১- জানাবতের গোসল এতটুকু দেরিতে করা যে নামাজের ওয়াক্ত চলে যায়।

২- নারীর মাসিক থেকে পবিত্র হওয়ার পর পরবর্তী ফরজ নামাজ ছেড়ে দেয়া। যদি কোনো নারী যোহরের নামাজের শেষ ওয়াক্তে পবিত্র হয় এবং এক রাকাত পড়া যাবে এমন সময় বাকী থাকে তবে তার ওপর যোহরের নামাজ ফরজ বলে গণ্য হবে এবং গোসল করে যোহরের নামাজ পড়তে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে এক রাকাত নামাজ পেল সে ফজরের নামাজ পেল। আর যে ব্যক্তি সুর্যাস্তের পূর্বে এক রাকাত আসরের নামাজ পেল সে আসরের নামাজ পেল’।
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

হিজাব বা বোরখার উপর দিয়ে মাথা মাসেহ করা ।

 

 হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ীর উপর মাসেহ করেছেন। 

وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَزِيعٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ، - يَعْنِي ابْنَ زُرَيْعٍ - حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْمُزَنِيُّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ تَخَلَّفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَتَخَلَّفْتُ مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى حَاجَتَهُ قَالَ " أَمَعَكَ مَاءٌ " . فَأَتَيْتُهُ بِمَطْهَرَةٍ فَغَسَلَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ ثُمَّ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ فَأَخْرَجَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ وَأَلْقَى الْجُبَّةَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ وَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى خُفَّيْهِ ثُمَّ رَكِبَ وَرَكِبْتُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَوْمِ وَقَدْ قَامُوا فِي الصَّلاَةِ يُصَلِّي بِهِمْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَقَدْ رَكَعَ بِهِمْ رَكْعَةً فَلَمَّا أَحَسَّ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ فَصَلَّى بِهِمْ فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَقُمْتُ فَرَكَعْنَا الرَّكْعَةَ الَّتِي سَبَقَتْنَا .

মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু বাযী (রহঃ) ... মুগীরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (এক সফরে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনে রয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সাথে পেছনে পড়লাম। তিনি হাজত পূরণ করে বললেন, তোমার সাথে কি পানি আছে? আমি একটি পানির পাত্র নিয়ে এলাম। তিনি উভয় হাতের কবজা পর্যন্ত এবং মুখমন্ডল ধূইলেন তারপর উভয় বাহু বের করতে চাইলেন; কিন্তু জোব্বার আস্তিনে আটকে গেল। এতে জোব্বার নিচ থেকে তিনি হাত বের করলেন এবং জোব্বাটি কাঁধের ওপর রেখে দিলেন। উভয় হাত ধুইলেন, মাথার সম্মুখভাগ এবং পাগড়ি ও উভয় মোযার ওপর মাসেহ করলেন। তারপর তিনি সাওয়ার হলেন এবং আমিও সাওয়ার হলাম।

আমরা যখন আমাদের কাওমের কাছে পৌছলাম তখন তারা সালাত  আদায় করছিল। আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) তাদের সালাত এ ইমামতি করছিলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে এক রাকআত পড়ে ফেলেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন টের পেয়ে তিনি পিছিয়ে আসছিলেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (সেখানে থাকতে) ইশারা করলেন। এতে তিনি (আবদুর রহমান ইবনু আওফ) তাদেরকে নিয়ে সালাত  আদায় করলেন। তিনি যখন সালাম ফিরালেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। তারপর আমাদের থেকে যে রাক’আত ছুটে গিয়েছিল তা আদায় করলাম।
(মুসলিম ৫২৬)

এর উপর ভিত্তি করে ইবনে হাযম সহ কিছু আলেম, মহিলাদের মাথার হিজাব বা ওড়নার উপর মাসেহ করা বৈধ বলে ফতোয়া প্রদান করেছেন। কিন্তু সরাসরি এ ব্যাপারে দলীল পাওয়া যায় না।
,
★তাই কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলোঃ  
বিশেষ কোন ওজর থাকলে মহিলাদের মাথার ওড়ানা বা হিজাবের উপর মাসেহ করা জায়েয রয়েছে। যেমন, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, মাথা খুলে মাসেহ করলে পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা, মাথায় মেহদী দিয়ে কাপড়ের মাধ্যমে চুল বাধা থাকলে বা খোলার পর পূণরায় বাধা কষ্টকর ইত্যাদি। অন্যথায় মাসেহ করা ঠিক নয়।
,
,
সুতরাং তাদের মতানুসারীগন এই মাসয়ালার উপর আমল করতে পারবেন।
কোনো সমস্যা নেই।   

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ

কবরে লাশ রাখার দোওয়া - কবরে লাশ রাখার সময় মিনহা খালাক্বনাকুম বলা যাবে কি ?

 

(أ) عَنْ أَبِىْ أُمَامَةَ قَالَ لَمَّا وُضِعَتْ أُمُّ كُلْثُوْمٍ ابْنَةُ رَسُوْلِ اللهِ  فِى الْقَبْرِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  ( مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَى) قَالَ ثُمَّ لاَ أَدْرِىْ أَقَالَ بِسْمِ اللهِ وَفِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ أَمْ لاَ..
(ক) আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর কন্যা উম্মু কুলছূমকে যখন কবরে রাখা হয়, তখন রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন, ‘মিনহা খালাক্বনা-কুম ওয়া ফীহা নুঈদুকুম ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’। অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লা-হি ওয়া ফী সাবীলিল্লা-হি ওয়া ‘আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লা-হি’ বললেন কি-না আমি জানি না। 

মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২১৮৭।
মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৩৪৩৩।
সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৬৭২৬।
খুলাসাতুল আহকাম, হাদীস নং-৩৬৫১।
জামেউল মাসানীদ ওয়াস সুনান, হাদীস নং-১১০২৪।
মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৪২৩৯।
কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-১৮৮১।
আলমুসনাদুল জামে, হাদীস নং-৫২৫৩।


যদিও, এ হাদীসটিকে অনেকে জয়ীফ বলেছেন,  কিন্তু যেহেতু উল্লেখিত গ্রন্থ সমূহে হাদীসটি এসেছে, সে হিসেবে আমল করা যেতে পারে। 

শায়েখ বিন বা’জ তার মাজমুয়ায়ে ফতোয়ার ১৩ তম খন্ডের পৃষ্ঠা ১৯৬ ও ১৯৭ তে এ আলোচনায় বলেছেন, এই দোয়া পাঠ করা সুন্নাহ। 

ইমাম নববীর কিতাবেও উপরে বর্ণিত আবু উমামার  হাদীসটি আনা হয়েছে, এবং, তিনি একে মুস্তাহাব বলেছেন। তিনি ব্যাখ্যায় বলেন, যদিও এ হাদীসের রাবী দুর্বল, তবে, ফজীলতের ক্ষেত্রে একে গ্রহণ করা যায়। 


বমি করলে রোজা ভেংগে যাবে কি ?

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

বমি করলে কী রোজা ভাংবে কী

উত্তর : ইচ্ছাকৃত ভাবে বমি করলে রোজা ভেংগে যাবে। আর অনিচ্ছাকৃত বমি করলে রোজা ভাংবে না, যদি না তা পুনরায় গিলে ফেলে। গিলে ফেললে রোজা ভেংগে যাবে, গিলে না ফেললে বরং বাইরে ফেলে দিলে রোজা ভাংবে না।

বায়েন তালাক কি

 

তালাকে বায়েন

‘যে তালাক দ্বারা স্ত্রী চূড়ান্তভাবে পৃথক হয়ে যায়, তাকে তালাকে বায়েন বা বিচ্ছিন্নকারী তালাক বলে’। এটি চারটি অবস্থায় হ’তে পারে।-

১. সহবাসের পূর্বেই স্ত্রীকে তালাক দেওয়া। এই তালাকের কোন ইদ্দতকাল নেই, বরং তালাকের পরেই স্ত্রী অন্য স্বামী গ্রহণ করতে পারে।

২. মালের বিনিময়ে স্বামীর নিকট থেকে স্ত্রী তালাক গ্রহণ করা। ‘খোলা’ তালাকের সময় স্বামী তখনই মালের বিনিময়ে পাবে, যখন সে পূর্বেই স্ত্রীর মহরানা সম্পূর্ণ পরিশোধ করে রাখবে। নচেৎ স্ত্রীর নিকট থেকে বিনিময়ের দাবী করা যাবে না।

৩. যখন তৃতীয় তালাক পূর্ণ হবে। যেমন প্রথমবার পবিত্র হওয়ার পরেই সহবাসহীন অবস্থায় এক তালাক দিল। ২য় বার একইভাবে তালাক দিল। তৃতীয় বার একইভাবে তালাক দিল। কিন্তু এবার আর ফেরৎ নিতে পারবে না। কেননা ঐ তালাক এবার ‘বায়েন’ তালাকে পরিণত হ’ল। এরপর তার পক্ষে আর পূর্ব স্বামীর কাছে ফিরে যাবার পথ নেই। যতক্ষণ না সে অন্যত্র স্বেচ্ছায় বিবাহ করে ও স্বেচ্ছায় তালাকপ্রাপ্তা হয়।

৪. স্বামীর কোন মারাত্মক ত্রুটির কারণে বা দীর্ঘ কারাবাসের কারণে বা দীর্ঘদিন স্বামী নিখোঁজ হওয়ার কারণে আদালতের মাধ্যমে স্ত্রী কর্তৃক বিবাহ বাতিল করা। এটাকে ‘ফিস্খে নিকাহ’ বলে।[1]



[1]. আবদুল্লাহ বিন যায়েদ আলে মাহমূদ,  আত-তালাকুস সুন্নী ওয়াল বেদ‘ঈ (ক্বাতার : সরকারী প্রকাশনা ১৯৮৪), পৃঃ ৬২।

দুধ মাতা হওয়ার জন্য শর্ত - কতবার দুধ পান করাতে হবে।

 দুধমা হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, দুধ পানের সময় কালের মধ্যে দুধ পান করা। আর তা হচ্ছে, শিশুর প্রথম দুই বছর। ♠♠♠ শিশু কত বার পান করলে দুধ মা হবে। ★ ইমাম শাফেয়ি ও ইসহাক (র.) বলেন, পাঁচটি ভিন্ন সময়ে পাঁচবার, শিশু দুধপান করতে হবে। ★ ইমাম আহমদ ( র.) বলেন, তিনবার দুধ পান করতে হবে। ★ ইমাম আবু হানিফা ও মালেক ( র.) বলেন, যে কোনো পরিমাপ দুধ পান করলে, চাহে তা কম হোক বা বেশি হোক। তবে, নিশ্চিত হতে হবে যে, সামান্য পরিমাণ দুধ হলেও দুধ শিশুর পেঠে প্রবেশ করছে। 


--------------------

পরিচ্ছেদঃ ৬. (কোন মহিলার দুধ) পাঁচ চুমুক খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে

৩৪৮৯-(২৪/১৪৫২) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ...... আয়িশাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ “দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়"। অতঃপর তা রহিত হয়ে যায় خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ এর দ্বারা “পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়"। অতঃপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত করা হত।" (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬২, ইসলামীক সেন্টার ৩৪৬১)

باب التَّحْرِيمِ بِخَمْسِ رَضَعَاتٍ ‏

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ ‏.‏ ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ ‏.‏


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
 
 ১৮। দুধপান (كتاب الرضاع)

পরিচ্ছেদঃ ৬. (কোন মহিলার দুধ) পাঁচ চুমুক খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে

৩৪৯০-(২৫/...) আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ্ আল কা'নবী (রহঃ) ..... আমরাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়িশাহ (রাযিঃ) কে বলতে শুনেছেন, যখন তিনি দুধপানের ঐ পরিমাণ সম্পর্কে আলোচনা করলেন যার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়। আমরাহ বললেন যে, আয়িশাহ (রাযিঃ) বলেছিলেন, আল-কুরআনে নাযিল হয়عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ "নির্ধারিত দশবার দুধপানে"। অতঃপর নাযিল হয় خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ "নির্ধারিত পাঁচবার দুধপানে।" (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬৩, ইসলামীক সেন্টার. ৩৪৬২)

باب التَّحْرِيمِ بِخَمْسِ رَضَعَاتٍ ‏

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ الْقَعْنَبِيُّ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ بِلاَلٍ، عَنْ يَحْيَى، - وَهُوَ ابْنُ سَعِيدٍ - عَنْ عَمْرَةَ، أَنَّهَا سَمِعَتْ عَائِشَةَ، تَقُولُ - وَهْىَ تَذْكُرُ الَّذِي يُحَرِّمُ مِنَ الرَّضَاعَةِ - قَالَتْ عَمْرَةُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ نَزَلَ فِي الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ثُمَّ نَزَلَ أَيْضًا خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ ‏.‏


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 বর্ণনাকারীঃ আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রহঃ)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
 
 ১৮। দুধপান (كتاب الرضاع)

পরিচ্ছেদঃ ৬. (কোন মহিলার দুধ) পাঁচ চুমুক খাওয়াতে হারাম সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে

৩৪৯১-(.../...) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ..... আমরাহ্ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) কে অনুরূপ বলতে শুনেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩৪৬৪, ইসলামীক সেন্টার ৩৪৬৩)

باب التَّحْرِيمِ بِخَمْسِ رَضَعَاتٍ ‏

وَحَدَّثَنَاهُ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، قَالَ سَمِعْتُ يَحْيَى بْنَ سَعِيدٍ، قَالَ أَخْبَرَتْنِي عَمْرَةُ، أَنَّهَا سَمِعَتْ عَائِشَةَ، تَقُولُ ‏.‏ بِمِثْلِهِ ‏.‏

আল্লাহর গুণ বাচক শব্দ দিয়ে মানুষের নাম রাখা প্রসঙ্গে:

 প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম দিয়ে কোন মানুষ কে সম্বোধন করলে শিরক হবে কি?

উত্তর:
জানা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম গুলো দু প্রকার। এগুলোর মধ্যে কিছু নাম কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট পক্ষান্তরে কিছু গুণবাচক নাম আছে যেগুলো বান্দার জন্যও প্রযোজ্য।

নিম্নে উভয় প্রকার নামের কতিপয় উদাহরণ পেশ করা হল।

 যে সকল গুণবাচক নাম কেবল আল্লাহ তাআলার শানেই প্রযোজ্য। এ সকল নাম দ্বারা বান্দার নাম করণ করা বৈধ নয়। যেমন:

১) আল্লাহ (মাবুদ বা উপাস্য)
২) আল ইলাহ (উপাস্য)
৩) আর রহমান (পরম করুণাময়),
৪) আল খালিক (স্রষ্টা/সৃষ্টিকর্তা)
৫) আল বারী (উদ্ভাবক/স্রষ্টা )
৬) আল-কুদ্দুস (মহা পবিত্র)।
৭) আল আওয়াল (সর্ব প্রথম)
৮) আল আখির (সর্ব শেষ)
৯) আল মুহয়ী (জীবন দাতা)
১০) আল মুমীত (মৃত্যু দাতা)
১১) আল আহাদ (একক ও অদ্বিতীয়)
১২) আস সামাদ (মুখাপেক্ষী হীন বা স্বয়ং সম্পন্ন)
১৩) রাযযাক (রিজিক বা জীবিকা দান কারী)
১৪) আল্লামুল গুয়ুব (অদৃশ্য বিষয়ে সম্যক অবগত)
এ নামগুলো কেবল মহান আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। তাই এ সকল নাম দ্বারা কোন ব্যক্তির নাম রাখা বা কাউকে ডাকা বৈধ নয়। সুতরাং কোন মানুষকে কেবল রহমান, রাযযাক, খালেক, কুদ্দূস ইত্যাদি বলে ডাকা হারাম। বরং এ শব্দগুলো দ্বারা মানুষের নাম রাখা বা নাম ধরে ডাকার ক্ষেত্রে এগুলোর শুরুতে আব্দ (দাস বা গোলাম) শব্দ ব্যবহার করা আবশ্যক। যেমন আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুল খালেক ইত্যাদি।

🔹 পক্ষান্তরে কিছু গুণবাচক নাম আছে যেগুলো নাম অথবা গুণ হিসেবে বান্দার জন্যও প্রযোজ্য।

নিম্নে এ জাতীয় কিছু নামের তালিকা প্রদান করা হল (দলীল সহকারে):

✪ ১) রউফ (মমতাময়ী)
✪ ২) রাহীম (দয়ালু)
কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রঊফ (স্নেহ ও মমতাময়ী) এবং রহিম (দয়ালু) শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
“তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।” (সূরা তওবা: ১২৮)
✪ ৩) হালীম (সহনশীল)
✪ ৪) রাশীদ (সঠিকপথ প্রাপ্ত বা সুবুদ্ধি সম্পন্ন)
আল্লাহ তাআলা নবী শুআইব আ. কে উদ্দেশ্য করে উক্ত দুটি গুণ বাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন আল্লাহ তআলা বলেন:
إِنَّكَ لَأَنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ
“তুমি তো অত্যন্ত সহনশীল, সৎপথের পথিক।” (সূরা হুদ: ৮৭)
✪ ৫) ক্বাবী (শক্তিশালী)
আল্লাহ তাআলা মূসা আলাইহিস সালামকে ক্বাবী বা শক্তিশালী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ
“কর্মচারী হিসেবে তাকেই নিয়োগ দেয়া উত্তম যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।” (সূরা কাসাস: ২৬)

✪ ৬) আল মালিক (রাজা/বাদশাহ)
আল্লাহ মিসরের শাসককে ‘রাজা/বাদশাহ’ বলেছেন। যেমন:
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ
“আর বাদশাহ বলল: তাকে (ইউসুফ আ. কে) আমার কাছে নিয়ে এসো।” (সূরা ইউসুফ: ৫৪)
✪ ৭) আযীয (প্রতাপশালী বাদশাহ)
আল্লাহ তাআলা মিসরের শাসককে আযীয হিসেবে উল্লেখ করেছেন:
قَالَتِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ
“আযীয-পত্মি বলল..:” (সূরা ইউসুফ: ৫১)
✪ ৮) হাফিয (রক্ষক)
✪ ৯) আলীম (অধিক জ্ঞানবান)
قَالَ اجْعَلْنِي عَلَىٰ خَزَائِنِ الْأَرْضِ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ
“ইউসুফ বলল: আমাকে দেশের ধন-ভাণ্ডারে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান।”
✪ ১০) হাই (জীবিত)
আল্লাহ বলেন:
وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ
“আর তিনি জীবিতকে মৃত থেকে বের করেন।” (সূরা আনআম: ৯৫)

✪ ১১) সামী’ (শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন)
✪ ১২) বাসীর (দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন)
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে উদ্দেশ্য করে এই দুটি শব্দ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّا خَلَقْنَا الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ أَمْشَاجٍ نَّبْتَلِيهِ فَجَعَلْنَاهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
“আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্র বিন্দু থেকে, এভাবে যে, তাকে পরীক্ষা করব অতঃপর তাকে করে দিয়েছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন।”সূরা দাহার/ইনসান ২য় আয়াত)
✪ ১৩) আলী (সুউচ্চ)। সাহাবী আলী বিন আবি তালিব রা.
✪ ১৪) হাকীম (জ্ঞানী বা প্রজ্ঞাবান): সাহাবী হাকীম বিন হিযাম রা.

এই সকল নাম দ্বারা বান্দার নাম রাখা জায়েজ রয়েছে। শুরুতে আব্দ (দাস বা গোলাম) যুক্ত করা আবশ্যক নয় তবে উত্তম।সুতরাং কাউকে কেবল রহীম, করীম, আলী, হাকীম, হালীম, রশীদ ইত্যাদি শব্দ দ্বারা নাম করণ করা হলেও তাতে কোন আপত্তি নেই। কোন আলেমই এগুলোকে শিরক বা কুফুর বলেন নি।
তবে আব্দুর রহিম, আব্দুল করিম, আব্দুল হালিম, আব্দুল হাকিম এভাবে বলাই অধিক উত্তম।

 তবে মনে রাখা আবশ্যক যে, উপরোক্ত নামগুলো নাম ও গুণ হিসেবে বান্দার ব্যাপারে প্রযোজ্য হলেও এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আল্লাহর সিফাত বা গুণের সাথে বান্দার গুণের কোন তুলনা চলে না। আল্লাহর প্রতিটি গুণ অপার, অসীম, অবিনশ্বর ও তুলনা বিহীন। পক্ষান্তরে বান্দার গুণাবলী নিতান্তই দুর্বল, সীমিত ও ক্ষণস্থায়ী। মহান স্রষ্টা আল্লাহ তার সৃষ্টি জগতের কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ ۖ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
ّকোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি সব শুনেন, সব দেখেন।” (সূরা শুরা: ১১)
আল্লাহু আলাম-আল্লাহই সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

বিড়ি সিগারেট জর্দা হারাম নাকি মাকরূহ ।

 প্রশ্ন-বিস্তারিত:

ভাই আপনি 11-12-2021 তারিখে একটি প্রশ্নোনের উত্তর দিয়েছেন বিড়ি সিগারেট জর্দা গুল খাওয়া যায় এগুলো মাকরূহ। কিন্তু কোনো দলিল দেননি। ভাই রাসুলুল্লাহ সাঃ এর এই হাদিস গুলো কি ব্যখ্যা করবেন। হাদিস আবুদাউদ 3679.80.81.82 নাশাঈ 5582.87।

উত্তর : দেখুন, আমরা যে দৃষ্টিকোণ থেকে মাকরূহ বলেছি, তার দলিল হলো, কোনো জিনিস হারাম হতে হলে তার সুষ্পষ্ট দলিল লাগবে, কিন্তু হালাল হতে হলে তার দলিল লাগবে না। যেমন: কুরআনে হালাল খাদ্যের কোনো তালিকা নাই, কিন্তু হারাম খাদ্যের তালিকা আছে। এর অর্থ হলো, ঐ হারাম খাদ্যগুলো ব্যতিরেকে বাকি সব হালাল। এখন, আসেন, নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যাপারে। ঐ হাদীস গুলোতে স্পষ্ট যে জিনিসগুলির কথা উল্লেখ আছে, তা অবশ্যই হারাম। এখন, পরবর্তীতে উৎপন্ন এমন কোনো দ্রব্য যা ঐ সময়ে ছিলনা, তার ব্যাপারে ঐ হুকুমকে কিয়াস করতে হবে। যেমন : জর্দা। এখন কিয়াস করতে গেলে দেখতে হবে, কোন কারণে মদ হারাম করা হয়েছে। মদ হারাম করা হয়েছে, নেশা হওয়ার কারণে যার ফলাফল হলো ব্যাক্তির স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়। এখন শুধু এই ফলাফলের জন্যই মদ হারাম, এমনও নয়, বরং, যেহেতু স্পষ্টভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, মদ হারাম, অতএব, হারাম। কিন্তু কিয়াস করার সময় আপনাকে কারণ খুজে দেখতে হবে। ১) স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায় ২) নিজের ক্ষতি নিজেই করে।

এখন, জর্দা খাওয়ার দ্বারা স্বাভাবিক জ্ঞান লোপ পায়না, তবে নিজের ক্ষতি করে। যেহেতু প্রধান কারণ পাওয়া যায়নি, তাই মাকরূহ বলা হয়েছে। আর নিজের ক্ষতির কথা যদি বলেন, তাহলে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, চিনি ও লবন হচ্ছে সাদা দুটি বিষ। তাহলে, কি চিনি ও লবণ খাওয়াকে কোনো আলেম হারাম ঘোষণা করেছেন ? আরেকটি বিষয় দেখুন: পান্তা ভাত খেলেও অনেকের এক ধরণের ঝিমুনি ভাব আসে। ঘুম আসে। কিন্তু পান্তা ভাতকে কেউ হারাম বলেনি। তবে, কোনো কোনো আলেমের মতে, অতিরিক্ত পচা গলা পান্তা ভাত খাওয়া মাকরূহ।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...