খাসি অথবা বলদ কুরবানী করা ।

 " খাসী ও বলদ কুরবানি নিয়া-ফেত্নাবাজীদের বিব্রান্তি নিরসনে পড়ুন ও শেয়ার করুন"

বিষয়ঃ- খাসী দ্বারা কোরবানী করার শরয়ী বিশ্লেষণ।
লেখকঃ- মুফতী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল রেজভী, হানাফী, ক্বাদেরী।
খাসীর পরিচয়
===========
প্রথমে আমরা খাসী অর্থে ব্যবহৃত শব্দ গুলোর প্রতি লক্ষ্য করব। আর এ অর্থে ব্যবহৃত শব্দগুলো হলোঃ- خَصِیُّ (খাসীয়্যিয়ুন), مَوْجُوءُ (মাওজুউন) مَجْبُوْب (মাজবুবুন)।
★ خَصِیُّ (খাসীয়্যিয়ুন) শব্দটি اَلْخِصَاءُ “আল-খিসাউ” শব্দ থেকে গঠিত। আর “আল খিসাউ” অর্থ হলো- খাসী করা। (আল কাউসার,১৭৭ পৃষ্ঠা)
[]=> এক লক্ষ পচিশ হাজার শব্দার্থ সম্বলিত ফিরোজুল লুগাত এর ৫৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছেঃ- “খাসী ঐ প্রানীকে বলা হয় যার অন্ডকোষ বের করা হয়েছে।
[]=> সদরুশ শরীয়ত আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আ’যমী রেজভী হানাফী (রাদ্বীয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেনঃ- “(খাসী) অর্থাৎ যার অন্ডকোষ পৃথক করা হয়েছে। (বাহারে শরীয়ত, ১৫ তম খন্ড, ৬৮৯ পৃষ্ঠা)
★ مَجْبُوْبٌ (মাজবুবুন) শব্দটি “جِبَابُ বা جَبٌّ (জিবাবুন বা জাব্বুন) থেকে গঠিত। যার অর্থ অন্ডকোষ কেটে বের করা। (আল কাউসার, ১৫৪ পৃষ্ঠা)
[]=> আলা হযরত কেবলার ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়ার ৮ম খন্ড ৪৬৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, المجبوب العاجز عن الجماع অর্থাৎ, মাজবুব হল যৌন সঙ্গম থেকে অক্ষম। আর যে প্রাণী যৌন সঙ্গম থেকে অক্ষম তাকেই খাসী বলা হয়।
★ مَوْجُوْءٌ (মাওজুউন) শব্দটি وِجَاءٌ (বিজাউন) অথবা وَجْاْ (ওজাউন) থেকে গঠিত। وِخَاءٌ বা وَجْاٌ অর্থ হলঃ- অন্ডকোষ থেতলে দিয়ে খাসী করা। (আল কাউসার,৫৮৭ পৃষ্ঠা)
[]=> আবু হানিফাতাচ্ছানী (যুগের দ্বিতীয় আবু হানিফা) আল্লামা শায়খ জাইনুদ্দীন ইবনে নজীম (রাদ্বীয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) বলেনঃ-
الموجوء المخصی من الوجء وهو ان يضرب عروق الخصيۃ بشیء.
অর্থাৎ, (মাওজুউন) হলো খাসী। অর্থাৎ, কোন যন্ত্রের দ্বারা অন্ডকোষের রগসমূহ থেতলে দেয়া হয়েছে এমন প্রাণী। (বাহরুর রায়েক, ৮ম খন্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা) এখানেও আমরা জানতে পারলাম খাসীকৃত প্রাণীকেই (মাওজুউন) বলা হয়।
এছাড়াও ★ ইমাম আলাউদ্দিন আবু বকর বিন মাসউদ আল কাসানী হানাফী (রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার লিখিত কিতাব, “বাদাঈ-উস-সানাঈ ৫ম খন্ড, ৮০ পৃষ্ঠায়, ★ আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্হ আওনুল মাবুদ, ৭ম খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠায়, ★ হিদায়া কিতাবের ৪৪৮ নং পৃষ্ঠা ৩নং পাদটিকায় ঐ (মাওজুউন) অর্থ অন্ডকোষ থেতলিয়ে দেওয়া, কিংবা দুইটি অন্ডকোষ টেনে বের করা, অথবা লোহার যন্ত্রদিয়ে অন্ডকোষের রগসমূহ কেটে দেওয়া হয়েছে এমন প্রানীকে (মাওজুউন) তথা খাসী বলা হয়।
সম্মানিত পাঠক! উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, অন্ডকোষ কর্তিত, বা অন্ডকোষ থেতলিত, অথবা অন্ডকোষের রগসমূহ কর্তিত পশুকেই খাসী বলা হয়। সুতরাং যারা বলেন যে আরব দেশে পাঠাকেই খাসী বলা হয়, আমি আপনাদেরকে বলবো দয়া করে আপনারা উপরোক্ত কিতাবগুলো এবং উল্লেখিত অভিধানগুলো ছাড়াও অন্যান্য অভিধানগুলো দেখুন। আর প্রকৃত সত্য বিষয়টি প্রচার করে সাধারণ মু’মিন মুসলমানদেরকে বিভ্রান্তির কবল থেকে হেফাজত করুন। মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবীবের উসিলায় আমাদের সকলকে সত্য গ্রহন করার তাওফিক দান করুন।(আমিন)
হালাল পশুকে খাসী করার বিধান
=======================
সম্মানিত পাঠক! সর্বস্তরের মুজতাহিদগণের ঐক্যমত হলো হালাল পশুকে খাসী করা জায়েয। এ পর্বে আমি ঐ মহান ব্যক্তির মতামত দ্বারাই শুরু করছি যিনির পরিচয়ে আমরা হলাম রেজভী। আর তিনি হলেন ১৪ শত শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, ইমামে আহলে সুন্নাত, ইমাম আহমদ রেজা খাঁন আলাইহির রাহমাতুর রাহমান।
১ নং দলিল,
আলা হযরত কিবলার শাহকার গ্রন্হ ফাতাওয়া-ই-রেজভীয়া যা হানাফী মাযহাবের সকল ফাতাওয়া গ্রন্হের সারাংশ, যা ১২ খন্ড (বর্তমান ৩০ খন্ড) উক্ত কিতাবের ৮ম খন্ডের ৪৬৮ পৃষ্ঠায় রয়েছে-
وفی الهنديۃ عن الخلاصۃ يجوز المجبوب العاجز عن الجماع
(পশুকে) যৌন সঙ্গম থেকে অক্ষম করে দেয়া জায়েয। উক্ত কথাটি হিন্দিয়া কিতাবের মধ্যে খোলাসা থেকে আনা হয়েছে। “উক্ত ইবারতের সার কথা হল পশুকে খাসী করা জায়েয।”
২ নং দলিল,
আলা হযরতের নিকট একটি প্রশ্ন আর আলা হযরতের জবাবঃ-
মাস’আলাঃ- ওলামা-ই-দ্বীন এ মাস’আলার ব্যাপারে কি বলেন যে, ষাড় এবং বকরাকে খাসী করা জায়েয আছে কিনা? বিস্তারিত বর্ণনা করুন প্রতিদান দেওয়া হবে।
উত্তরঃ- সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। এর মধ্যে উপকার রয়েছে। খাসীর গোশত উত্তম হয়। খাসী এবং বলদ পরিশ্রম বেশি সহ্য করতে পারে। প্রকৃত পক্ষে পশুকে খাসী করার মধ্যে যদি বাস্তবিকই কোন উপকার অথবা ক্ষতিদূরিকরণ উদ্দেশ্য হয় তাহলে সাধারণ ভাবে হালাল। যদিও গোশত খাওয়া অযোগ্য প্রাণী হয়। যেমন, বিড়াল ইত্যাদি। নতুবা হারাম। এ মূল নিতির ভিত্তিতে আমাদের উলামায়ে কেরাম ঘোড়াকেও খাসী করা জায়েয বলেছেন। যখন ক্ষতি দূরিকরণ উদ্দেশ্য হয়, যদিও বা কেউ কেউ নিষেধ করে থাকেন। (আহকামে শরীয়ত, ৩য় খন্ড,২৩৬ ও ২৩৭ পৃষ্ঠা)
৩ নং দলিল,
তিনি আরো বলেনঃ- হ্যা মানুষকে খাসী করা সর্বসম্মতিক্রমে একেবারেই হারাম। দুররুল মুখতারে বর্ণিত আছে- চতুষ্পদ জন্তু এমনকি বিড়ালকেও খাসী করা জায়েয আছে। আর মানুষকে খাসী করা হারাম। কেউ কেউ বলেছেন ঘোড়াকে খাসী করার মধ্যে যদি উপকার থাকে তবে হালাল অন্যথায় হারাম। (আহকামে শরিয়ত, ৩ খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা।)
৪ নং দলিল,
১২দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মুহিউদ্দিন আওরঙ্গজেব বাদশাহ আলমগীর কর্তৃক প্রায় সাতশত মুজতাহিদ দ্বারা লিখিত ফাতাওয়া-ই-আলমগীরীতে উল্লেখ রয়েছে-
خصاء بنی ادم حرام بالاتفاق واماخصاء الفرس فقد ذكر شمس الاٸمة الحلوانی فی شرحه لابأس به عند اصحابنا وذكر شيخ الاسلام فی شرحه انه حرام واما فی غيره من البهاٸم فلابأس به اذا كان فيه منفعۃ واذا لم يكن فيه منفعۃ او دفع ضرر فهو حرام كذا فی الذخريۃ-
অর্থাৎ, আদম সন্তানের খাসী করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। সামসুল আইম্মা হালয়ানী তার শারাহ এর মধ্যে বলেন আমাদের আসহাবের মতে ঘোড়াকে খাসী করার মধ্যে কোন ক্ষতি নেই। আর শায়খুল ইসলাম তার শরাহ এর মধ্যে হারাম বলে উল্লেখ করেছেন। ঘোড়া ব্যতীত অন্যান্য পশুকে খাসী করার মধ্যে যদি কোন উপকার থাকে তবে খাসী করতে কোন ক্ষতি নেই। আর যদি কোন উপকার বা ক্ষতি দূরীকরণ উদ্দেশ্য না হয় তবে হারাম। (ফাতাওয়া-ই-আলমগীরী, ৫ম খন্ড, ৩৫৭ পৃষ্ঠা।)
৫ নং দলিল,
৫ম তবকার মুজতাহিদ আবুল হাসান আহমদ বিন আবু বকর মুহাম্মদ বিন আহমদ বিন জাফর বিন হামদান আল বাগদাদী আল কুদুরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেনঃ-
ولابأس بخصاء البهاٸم
অর্থাৎ, চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসী করণে কোন ক্ষতি নেই। (মুখতাসারুল কুদুরী, ৩৮৭ পৃষ্ঠা)
৬ নং দলিল,
শায়খুল ইসলাম বোরহান উদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবু বকর আল ফারগানী আল মুরগীনানী আল হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেনঃ-
ولابأس بخصاء البهاٸم
অর্থাৎ, চতুষ্পদ প্রানীকে খাসী করণে কোন ক্ষতি নেই। (আল হিদায়া, ২য় খন্ড, ৪৭৪ পৃষ্ঠা)
৭ নং দলিল,
তাফসীরে জালালাইন ৭৮ পৃষ্ঠা ১৯ নং পাদটিকায় সূরা নিসার ১১৯ নং আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে-
كره انس خصاء الغنم وجوزه الجمهور لان فيه غرضا ظاهرا
অর্থাৎ, হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ছাগলকে খাসী করা অপছন্দ করেছেন। আর জমহুর তথা অধিকাংশ উলামা-ই-কেরাম জায়েয বলেছেন। কেননা এতে প্রকাশ্য উদ্দেশ্য রয়েছে।
৮ নং দলিল,
اخرج عبد الرزاق و عبدبن حميد وابن جرير عن سبيل انه سمع شهربن حوشب قرا هذه الايۃ فليغيرن خلق اﷲ قال الخصاء منه فامرت ابا التياج فسأل الحسن عن خصاء الغنم قال لابأس به-
অর্থাৎ, হযরত আব্দুর রাজ্জাক, আবদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে জারীর হযরত শাবীল থেকে বর্ণনা করেন তিনি শাহর বিন শাবীলকে فليغيرن خلق اﷲ (অত:পর তারা আল্লাহ’র সৃষ্টিকে পরিবর্তন করবে) আয়াতটি পড়তে শুনেছেন। তিনি বলেন, এখানে খাসী করন বুঝানো হয়েছে। অত:পর আমি তিয়াজকে আদেশ করলাম অত:পর তিনি হাসানকে খাসী করন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেনঃ- তিনি বলেন তাতে কোন ক্ষতি নেই। (তাফসীরে দুররুল মানছুর ২য় খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা।)
৯ নং দলিল,
তাফসীরে ফায়জুর রহমান ৫ম পারা ২৭৭ পৃষ্ঠায় সূরা নিসার ১১৯ নং আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- অর্থাৎ, এ আয়াতাংশের সাধারণ হুকুম দ্বারা বুঝা যায় যে, মানুষ অথবা পশু কোন কিছুকেই খাসী করা যাবে না। কিন্তু ফোকাহা-ই-কেরাম প্রয়োজনে পশুকে খাসী করা জায়েয বলেছেন। কিন্তু আদম সন্তানদের মধ্যে পুরুষকে খাসী করা সর্বাবস্থায় হারাম।
অনুরূপভাবে তাফসীরে বায়জভী শরীফের ৭ম খন্ড, ৩০৪ ও ৩০৫ পৃষ্ঠায়, তাফসীরে রুহুল মায়ানী ৫ম খন্ড, ২০৬ পৃষ্ঠায় এবং তাফসীরে রুহুল বায়ান ২য় খন্ড, ৩৩৪ পৃষ্ঠায় সূরা নিসার উক্ত আয়াতাংশের তাফসীরে বলা হয়েছে যে, ফোকাহা-ই-কেরাম প্রয়োজনে পশুকে খাসী করার বৈধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। সম্মানিত পাঠক মন্ডলী! উপরুক্ত দলিল ভিত্তিক আলোচনার দ্বারা আমরা সুস্পষ্ঠভাবে বুঝতে পারলাম যে, সাধারণ ভাবে পশুকে খাসী করা হারাম কিন্তু ফোকাহায়ে কেরামের সর্বসম্মত ঐক্যমত হলো প্রয়োজনে পশুকে খাসী করা বৈধ। কেননা এতে প্রকাশ্য উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এ উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা আ’লা হযরত কেবলা তার আহকামে শরীয়তের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। যা আমরা আলোচ্য বিষয়ের ২ নং দলিলে লক্ষ্য করেছি।
★ হে আল্লাহ! আমাদের সকলকে সত্য বুঝার এবং গ্রহন করার তৌফিক দান করুন। আমিন বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।
খাসী দ্বারা কোরবানী করার বিধান
========================
উট, গরু, ছাগল এবং এগুলোর অধিন সকল প্রকার প্রাণীর নর, মাদী এবং খাসী দ্বারা কোরবানী করা জায়েয। এ বিষয়ে সদরুশ শরীয়ত আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আ’যমী রেজভী হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বাহরে শরীয়তের ১৫ তম খন্ডের ৬৮৯ পৃষ্ঠায় বলেনঃ-
نراور مادہ خصی اور غیر خصی سب کاایک حکم ہے یعنی سب کی قربانی ہو سکتی ہے
অর্থাৎ, নর এবং মাদী, খাসী এবং খাসী নয় এমন সকল পশুর একই বিধান। অর্থাৎ এমন সকল পশুর কোরবানীই জায়েয হবে।
পবিত্র হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত খাসী কোরবানী করা সুন্নাতে মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাসী কোরবানী করেছেন সেহেতু সর্বযোগের ও সর্বস্তরের মুজতাহিদ গণের রায় হল, যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে খাসীর মধ্যে আইব বা ত্রুটি দেখা যায় মূলতঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে ইহা কোন আইব বা ত্রুটি নয় বরং তা হল কামাল পরিপূর্ণতা। কেননা খাসীর গোশত অধিক সুস্বাদু। তাই সমস্ত মুহাদ্দিসীন ও মুজতাহীদগণের ঐক্যমত হল খাসী কোরবানী করা আফজল বা উত্তম নিম্নে দলিল ভিত্তিক আলোচনা করা হল-
হাদিস শরীফ দ্বারা খাসী কোরবানীর প্রমাণ
==============================
১ নং দলিল,
عن جابر رضی الله تعالی عنه قال ذبح النبی صلی الله علیه وسلم یوم الذبح کبشین اقرنین املحین موجوئین۔
অর্থাৎ, হযরত জাবির (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের শিং বিশিষ্ট দু’টি খাসী ছাগল কোরবানী ঈদের দিন জবেহ করেছেন।
রেফারেন্সঃ- ১) আবু দাউদ শরীফ, ৩৮৬ পৃষ্ঠা।
২) মিশকাত শরীফ, ২২৮ পৃষ্ঠা।
২ নং দলিল,
حدثنا محمدبن یحی ثنا عبد الرزاق ابن سفیان الثوری عبد الله بن محمد بن عقیل عن ابی سلمة عن عاٸشة و عن ابی هریرة ان رسول الله صلی الله علیه وسلم کان اذا اراد ان یضحی اشتری کبشین عظیمین سمینین اقرنین املحین موجوأین فذبح احدهما عن امته لمن شهد لله بالتوحید و شهد له بالبلاغ و ذبح الاخر عن محمد وعن ال محمد صلی الله علیه وسلم۔
অর্থাৎ, হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ও হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোরবানীর ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি মোটা তাজা, গোশতযুক্ত, শিং যুক্ত, সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের ও খাসীকৃত দুম্বা (মেষ) ক্রয় করতেন। অত:পর এর একটি আপন উম্মতের যারা আল্লাহ’র তাওহীদের স্বাক্ষী দেয় এবং তার নবুওয়াতের প্রচারের স্বাক্ষী দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার পরিবার বর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।
রেফারেন্সঃ- ইবনু মাজাহ শরীফ, ২২৫ পৃষ্ঠা।
শরহুল হাদিস দ্বারা খাসী কোরবানীর প্রমাণ
==============================
৩ নং দলিল
১০ ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) রচিত কিতাব মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ এর মধ্যে হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর বর্ণিত হাদিস মাওজুয়াআইনের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেনঃ-
فی شرح السنة کره بعض اهل العلم الموجوٸة لنقصان العضو و الاصح انه غیر مکروه الان الخصاء یزید اللحم طیبا و الان ذالک العضو لایٶکل۔
অর্থাৎ, শরহে সুন্নাহ নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে বাহ্যিক ত্রুটির কারণে কোন কোন আহলে এলেম খাসী কোরবানী অপছন্দ করেছেন। আর অধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল খাসী কোরবানী মাকরুহ বিহীন জায়েয। কেননা নিশ্চয়ই খাসীর গোশত অধিক এবং উত্তম হয় (আর যে অঙ্গটা কেটে ফেলে দেওয়া হয়) উহা খাওয়ার যোগ্য নহে।
রেফারেন্স :- মিরকাত শরহে মিশকাত ৩য় খন্ড, ৫১৩ পৃষ্ঠা।
উপরুক্ত দলিল দ্বারা প্রমাণিত হলো খাসীর মধ্যে বাহ্যিক দৃষ্টিতে (নুকসা) বা ত্রুটি পরিলক্ষিত হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা কোন ত্রুটি বলে গণ্য নহে বরং তা কামাল বা পরিপূর্ণতাই।
৪ নং দলিল,
১১ দশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) “মাওজুআইনের” ব্যাখ্যায় বলেনঃ- যদি বলা হয় যে, কিছু অঙ্গ কমে যাওয়ায় খাসী ত্রুটি যুক্ত হবে যেহেতু কান কাটা ও শিং ভাঙ্গা হওয়ার কারণে কোরবানী জায়েয হয় না সেহেতু খাসী ত্রুটি যুক্ত হওয়ার পরেও কি করে কোরবানী যায়েজ হবে? উত্তর হলো, খাসী করার কারণে প্রাণীর মধ্যে বাহ্যিক ত্রুটি দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাই পরিপূর্নতা। কেননা খাসীর গোশত উত্তম, সুস্বাদু এবং খাসীর মূল্যও অনেক বেশি হয়ে থাকে।
রেফারেন্সঃ- আশয়াতুল লুমআত ফার্সী ১ম খন্ড ৬১০ পৃষ্ঠা।
আশয়াতুল লুমআত উর্দু ২য় খন্ড, ৬৮৯ পৃষ্ঠা।
৫ নং দলিল,
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সেরতাজ হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ারখান নঈমী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) মিরআতুল মানাযীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ এর মধ্যে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস শরীফে “মাওজুআইন” এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ-
اس حديث سے معلوم ہواکہ خصی قربانی جاتزہے کہ خصی ہونا عیب نہيں بلکہ کمال ہے کہ خصی کا گوشت اعلی ہوتا ہے يوں ہی خصی بتل خصی بھیے کی بھی قربانی درست ہے۔
অর্থাৎ, এ হাদিস শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যে, খাসীকৃত পশুর কোরবানী জায়েয। কেননা পশু খাসীকৃত হওয়া কোন দোষের নয় বরং পরিপূর্ণতা। কারন খাসীর গোশত উন্নত মানের হয়। অনুরূপ খাসীকৃত বলদ ও মহিষের কোরবানীও দুরস্ত আছে।
রেফারেন্সঃ- মিরআত শরহে মিশকাত ২য় খন্ড ৩৭১ পৃষ্ঠা।
৬ নং দলিল
সহীহ আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ আওনুল মাবুদ শরহে আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ রয়েছেঃ-
قال الخطابی وفی هذا دلیل علی ان الخصی فی الضحایا غیر مکروه وقد کرهه بعض اهل العل لنقص العضو وهذا النقص لیس بعیب لان الخصاء یزید اللحم طیبا و ینفی فیه الزهومة و سوء الراٸحة۔
অর্থাৎ, খাত্তাবী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, আর এতেই দলিল রয়েছে যে, নিশ্চয়ই কোরবানীর ব্যাপারে খাসী মাকরূহ নয় যদিও কোন কোন আলেম বাহ্যিক দৃষ্টিতে খাসীর মধ্যে ত্রুটি দেখে খাসী কোরবানী করা অপছন্দ করেছেন। অথচ এ বাহ্যিক ত্রুটি (শরীয়তের দৃষ্টিতে) কোন আইব বা ত্রুটির মধ্যে গণ্য নয়, কেননা খাসীকৃত পশুর গোশত অধিক সুস্বাদু ও দুর্গন্ধমুক্ত এবং এর দ্বারা গরীব মিসকীন উপকৃত হয়।
রেফারেন্সঃ- আওনুল মাবুদ শরহে আবু দাউদ, ৭ম খন্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠা।
ফাত্বওয়ার কিতাব দ্বারা খাসী কোরবানীর প্রমাণ
=================================
চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ইমামে আহলে সুন্নাত আযীমুল বারাকাত, আযীমুল মারতাবাত, হামীয়ে সুন্নাত, মাহীয়ে বিদআত, পরওয়ানায়ে শাময়ে রিসালাত মুসলীম উম্মার জাগরণকারী হযরাতুল আল্লামা, মাওলানা, আল হাফিজ, আল-ক্বারী আশ শাহ ইমাম আহমদ রেজা খান (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) “আল আত্বাইয়ান নাবুবিয়্যাহ ফিল ফাত্বওয়া-ই-রেজভীয়া” এর মধ্যে দুইটি প্রশ্নের উত্তরে খাসী কোরবানী করা উত্তম বলেছেন। পাঠকগণের সুবিধার্থে প্রশ্ন দুইটি সহ উপস্থাপন করলাম।
৭ নং দলিল,
جناب مولانا صاحب بعد سلام علیک کے واضح ہوکہ بقر عید کی قربانی میں بکر خصی جاٸز ہے یا نہیں؟
الجواب: خصی قربانی افضل ہے اور اس میں ثواب زیادہ ہے۔
মাস’আলাঃ- জনাব মাওলানা সাহেব, সালামবাদ আরজ, কোরবানী ঈদে খাসীকৃত ছাগল কোরবানী করা কি জায়েয?
উত্তরঃ- খাসী কোরবানী উত্তম এবং এতে অধিক সাওয়াব রয়েছে।
রেফারেন্সঃ- ফাত্বওয়া-ই-রেজভীয়া ৮ম খন্ড, ৪৪২ পৃষ্ঠা।
৮ নং দলিল,
کیا فرما تے ہیں علماۓ دین اس مسٸلہ میں کہ بکر ے دوطرح خصی کۓ جاتے ہیں ایک یہ کہ رگیں کوٹ دی جاٸیں اس میں کوٸ عضوکم نہیں ہوتا دوسرے یہ کہ آلت تراش کر پھیک دی جاتی ہے اس صورت میں ایک عضو کم ہوگیا، ایسے خصی بھی قربانی جاٸز ہے یا نہیں؟ بعض لوگ بوجہ مذکور مما نعت کرتی ہیں بینوا اتوجروا۔
الجواب: جاٸز ہے کہ اس کی کمی سے جانور میں عیب نہیں اتا بلکہ وصف بڑھ جا تا ہے کہ خصی کا گوشت بہ نسبت محل کے زیادہ اچھا ہوتا ہے۔
মাস’আলাঃ- ওলামা-ই-দ্বীন কি বলেন- এ মাস’আলার ব্যাপারে যে, বকরা ছাগলকে দু’ভাবে খাসী করা হয়ে থাকে, (১) রগ কেটে দিয়ে। এতে কোন অঙ্গ কমে যায় না; (২) কোন যন্ত্রের দ্বারা অন্ডকোষ কেটে ফেলে দেয়া হয়। এ অবস্থায় এক অঙ্গ কমে যায়। এ দু’প্রকার খাসী দ্বারা কোরবানী করা জায়েয কিনা? কোন কোন লোক উল্লেখিত কারণে খাসী কোরবানী নিষেধ করে থাকেন। বিস্তারিত বর্ণনা করুন, প্রতিদান দেয়া হবে।
উত্তরঃ- জায়েয। কারণ অন্ডকোষ কমতির দ্বারা প্রাণীর মধ্যে কোন ত্রুটি আসেনা। বরং তার গুন বেড়ে যায়। কেননা খাসীর গোশত পাঠার তুলনায় অধিক উত্তম হয়ে থাকে।
রেফারেন্সঃ- ফাতাওয়া-ই-রেজভীয়াহ, ৮ম খন্ড ৪৬৮ পৃষ্ঠা।
৯ নং দলিল,
যুগের দ্বিতীয় আবু হানিফা আশ শায়খ যাইন উদ্দিন ইবনে নাজীম (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব বাহরুর রাইক শরহু কানযিদ দাকাইক এ উল্লেখ করেন-
والخصی وعن ابی حنیفة رحمة الله تعلی هو اولی لان لحمه اطیب وقد صح انه علیه الصلوة والسلام ضحی بکبشین املحین موجوٸین۔
অর্থাৎ, হযরত ইমাম আ’যম আবু হানিফা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) হতে বর্ণিত, খাসী কোরবানী করা উত্তম। কেননা নিশ্চয় খাসীর গোশত অধিক সুস্বাদু। আর তিনি সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, নিশ্চয় রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের দু’টি খাসী কোরবানী করেছেন।
রেফারেন্সঃ- রাহরুর রাইক শরহু কানযিদ দাকইক, ৮ম খন্ড, ১৭৬ পৃষ্ঠা।
১০ নং দলিল,
১২০০ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ মুহিউদ্দিন আওরঙ্গজেব বাদশাহ আলমগীর যিনি প্রায় সাতশত মুজতাহিদ দ্বারা ফাত্বওয়া-ই-আলমগীরী লিখিয়েছেন।(সুবহানাল্লাহ) #আমরা এখন খাসী কোরবানী সম্পর্কে ঐ প্রামণটি দেখব যা একযোগে এক বৈঠকে সাতশত মুজতাহিদ ঐক্যমত পোষণ করেছেন; আর তা হলো-
والخصی افضل من الفحل لانه اطیب لحما کذا فی المحیط۔
অর্থাৎ, পাঠা থেকে খাসী কোরবানী উত্তম। কেননা খাসীর গোশত অধিক সুস্বাদু।
রেফারেন্সঃ- ফাত্বওয়া-ই-আলমগীরী, ৪র্থ খন্ড, ২৯৯ পৃষ্ঠা।
১১ নং দলিল,
মালাকুল ওলাম নামে খ্যাত ইমাম আলা উদ্দিন আবু বকর বিন মাসউদ আল কাসানী আল হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর লিখিত বিশ্ব নন্দিত কিতাব ”বাদাঈ-উস-সানাঈ”তে উল্লেখ করেন-
روی عن ابی حنیفة رحمة الله تعالی فانه روی عنه انه سٸل عن التصحیة بالخصی فقال ما زاد فی لحمه انفع مما ذهب من خصیتیه۔
অর্থাৎ, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানিফা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তাকে খাসী দ্বারা কোরবানী করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যে পশুর দু’টি অন্ডকোষ কেটে বের করা হয়েছে এমন পশুর গোশত বেশী বিধায় তা দ্বারা অধিক উপকার সাধিত হয়।
রেফারেন্সঃ- বাদাঈ-উস-সানাঈ, ৫ম খন্ড, ৮০ পৃষ্ঠা।
১২ নং দলিল,
হানাফী মাযহাবের তৃতীয় তবকার মুজতাহিদ আল্লামা কাজী খান (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ফাত্বওয়া-ই-কাজী খান এর মধ্যে উল্লেখ আছে-
والانثی من الابل والبقر افضل من الذکر المعز افضل وکذا الذکر من الضأن اذا کان موجوٸا ای خصیا۔
অর্থাৎ, কোরবানীর ক্ষেত্রে উট থেকে উষ্ট্রী এবং ষাড় থেকে গাভী উত্তম। আর ছাগল এবং দুম্বা তখনি উত্তম হবে যখন তা খাসী হবে।
রেফারেন্সঃ- ফাত্বওয়া-ই-কাজী খান ৪র্থ খন্ড, ৩৩১ পৃষ্ঠা।
১৩ নং দলিল,
শারেহুল বোখারী আল্লামা আইনী হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর বিশ্বখ্যাত কিতাব “আল বিনাইয়া ফি-শারহিল হিদায়া” তে উল্লেখ করেছেন-
والخصی بالجر ای ویجوز ان یضحی بالخصی و هو منزوع الخصیتین ﴿لان لحمها اطیب﴾ وان لحمه اوجه علی ما لا یخفی ﴿وقد صح انخفاض ان النبی صلی الله علیه وسلم ضحی بکبشین املحین موجوٸین۔
অর্থাৎ, খাসী দ্বারা কোরবানী জায়েয। আর খাসী হল যার অন্ডকোষ দুটি টেনে বের করা হয়েছে। নিশ্চয় খাসীর গোশত অতি উত্তম। এতে কোন সন্দেহ নাই। আর সহীহ হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নিশ্চয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের দু’টি খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কোরবানী করেছেন।
রেফারেন্সঃ- আল বিনাইয়া ফি-শারহিল হিদায়া, ১১ তম খন্ড, ৪৪ পৃষ্ঠা।
১৪ নং দলিল,
সদরুশ শরীয়ত খলীফায়ে আ’লা হযরত আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী আ’যমী রেজভী হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর রচিত বাহারে শরীয়তের মধ্যে রয়েছে-
بکری بکرے سے افضل ہے مگر خصی بکرا بکری سے افضل ہے۔
অর্থাৎ, নর ছাগল থেলে মাদী ছাগল থেকে উত্তম। কিন্তু খাসী নর ও মাদী থেকেও উত্তম।
রেফারেন্সঃ- বাহারে শরীয়ত, ১৫ তম খন্ড ৬৮৯ পৃষ্ঠা।
১৫ নং দলিল,
৬ষ্ঠ তবকার মুজতাহিদ আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেনঃ-
تجوز التضحیة المجبوب العاجز عن الجماع
অর্থাৎ, মাযবুব (অন্ডকোষ কর্তিত) যে পশু সঙ্গমে অক্ষম এমন পশুদ্বারা কোরবানী করা জায়েয।
১৬ নং দলিল,
পঞ্চম তবকার মুজতাহিদ আল্লামা আবুল হোসাইন আহমদ বিন আবু বকর আল বাগদাদী আল কুদুরী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন-
الخصی جاٸز فی الهدی لان ذلک یسمنه و یطیب لحمه کذا فی الجوهرة۔
অর্থাৎ, খাসী কোরবানী জয়েয। কেননা উহা মোটা তাজা হয় এবং গোশত হয় সুস্বাদু। অনুরূপ বর্ণনা জাওহিরা কিতাবেও রয়েছে।
রেফারেন্সঃ- কুদুরি, ৬৮ পৃষ্ঠা।
১৭ নং দলিল,
আল্লামা ছানা উল্লাহ পানিপথী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন- খাসী, শিং ভাঙ্গা (তবে মূলোৎপাটিত নয়) যে প্রাণীর শিং বিলকুল নেই, এমন পাগল প্রাণী যা ঘাস পানি খায়, চর্ম রোগাক্রান্ত তবে মোটাতাজা, যে প্রাণীর কতেক দাত নাই তবে খাদ্য গ্রহনে সক্ষম, যে প্রাণীর অধিকাংশ দাত আছে, যে প্রাণীর লেজ বা কানের অধিকাংশ আছে, যে প্রাণীর পায়ের খুর নেই তবে চলাফেরা করতে পারে, যে প্রাণীর কান জন্মগত ভাবেই ছোট এই সমস্ত প্রাণী দ্বারা কোরবানী করা বৈধ।
রেফারেন্সঃ- মালা-বুদ্দা মিনহু-১৪৬ পৃষ্ঠা।
১৮ নং দলিল,
পঞ্চম তবকার মুজতাহিদ শায়খুল ইসলাম বোরহান উদ্দিন আবুল হাসান আলী ইবনে আবু বকর আল ফারগানী আল মুরগীনানী আল হানাফী (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর রচিত বিশ্ব বিখ্যাত আল হিদায়া কিতাবের মধ্যে রয়েছে-
والخصی لان لحمها اطیب قد صح ان النبی صلی الله علیه وسلم ضحی بکبشین املحین موجوٸین۔
অর্থাৎ, খাসী দ্বারা কোরবানী জায়েয। কেননা খাসীর গোশত অধিক উত্তম। সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, রাসুলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের দু’টি খাসী কোরবানী করেছেন।
রেফারেন্সঃ- হেদায়া মায়া দিরায়া, ২য় খন্ড, ৪৪৮ পৃষ্ঠা।
উপরোক্ত দলিল ভিত্তিক আলোচনার দ্বারা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়ে গেলো যে, খাসীকৃত পশুর দ্বারা কোরবানী করা শুধু জায়েযই নয় বরং অতি উত্তম। কেননা স্বয়ং হুজুর কারীম রউফুর রাহীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাত মোবারকে খাসী কোরবানী করেছেন। যা সহীহ হাদিস বলে হানাফী মাযহাবের সকল মুহাদ্দিস ও মুজতাহিদগণ ঐক্যমত পোষণ করেছেন।
“সুতরাং শরীয়তের হুকুম অনুযায়ী হালালকে হারাম জানা আর হারামকে হালাল জানা কুফুরী” অতএব যারা খাসী কোরবানীকে হারাম বলে ফাত্বওয়া দিয়ে থাকেন তাদের চিন্তা করা উচিত তাদের এই ফাত্বওয়া কার উপর প্রস্তাবে।
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সত্য গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন ছুম্মা আমিন বিজাহে নাবীয়্যিল কারীম আলাইহিস সালাতু ওয়াত তাসলীম।
সংগ্রহে-মনিরুল ইসলাম
কামিল ফিকহ
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,চট্টগ্রাম৷

শরীরের অবাঞ্চিত লোম ও পায়ুপথের লোম পরিস্কার করা ।

 প্রশ্ন : 

মলমূত্রত্যাগের স্থানকেও খুর দ্বারা পরিস্কার করতে হবে!..এইটা করলে যখন নতুন ভাবে লোম উঠে তখন খুবই কষ্ট হয়।যদি লোম গুলো না চেচে যতদূর সম্ভব ছোটো করি জায়েজ হবে কি?কারণ ওখানে চুল কাটা খুবই কঠিন কাজ আসে পাশে কেটে  ও যেতে পারে,আর যদিও কেটে দেই তাহলে যখন নতুন করে চুল উঠবে তখন মারাত্বক খোচা লাগে যা সাধারণ চলা ফেরা নামাজ ইত্যাদি বিষয়ে ভীষণ সমস্যা সৃষ্টি করে।


জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো :

পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় সেখান থেকেই অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা শুরু। ঐ ভাঁজ থেকে দুই উরু পর্যন্ত ডান বামের লোম, গোপনাঙ্গের চার পাশের লোম, অণ্ডকোষ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত উদগত লোম এবং প্রয়োজনে মলদ্বারের আশ-পাশের লোম অবাঞ্ছিত লোমের অন্তর্ভুক্ত।

সাহাবী আনাস রাযি. বলেন,

وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً.

অর্থাৎ, গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। (মুসলিম ২৫৮)

আরো জানুনঃ 

পায়ুপথের আশেপাশের অবাঞ্ছিত লোম পুরুষরা ব্লেড/খুর দিয়ে পরিষ্কার করতে অসুবিধা হলে লোমনাশক ক্রীম বা তরল পদার্থ দিয়ে সেই লোম পরিষ্কার করা যাবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।
,
★প্রশ্নে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে,সেই সমস্যার আলোকে কেহ যদি সেটা ব্লেড বা খুর ব্যবহার না করে,তলল পদার্থ ব্যবহার করে,এটিও কোনো সমস্যা নয়,আবার কেহ যদি শুধু যতদূর সম্ভব ছোটো করে,তাও জায়েজ হবে। 
তবে পরিস্কার রাখতে হবে। 
,
কেউ যদি কাঁচি দ্বারা ছোট করে রাখে, তাহলে জায়েয হবে, তবে উত্তম হবে না।
فإن أزال شعره بغير الحديد لا يكون على وجه السنة
যদি কেউ চেঁছে না ফেলে অন্য কোনভাবে পরিষ্কার করে তাহলে তা সুন্নাহ অনুযায়ী হবে না। (কিতাবুন নাওয়াযিল ১৫/৫৪৭)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)


=======================


এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :-

যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করার বিধান :-
ইসলামে পুরুষ এবং মহিলার গোপনাঙ্গের চুল কাটার বিধান স্বভাবজাত সুন্নাত। ইবনু বায (রঃ) এটা সুন্নাতের মুআক্কাদাহ বা ওয়াজিব।(ফাতাওয়াল নূর আলাদ দারব লিইবনে বায-৯/২৫৬)

স্বভাবজাত সুন্নাত :- স্বভাবজাত সুন্নাত হলো এমন রীতি যা সম্পাদন করলে এর সম্পাদনকারী এমন ফিতরাতের সাথে বিশেষিত হবেন যে ফিতরাতের উপর আল্লাহ্‌ তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এর উপর ভিত্তি করে তার হাশর-নাশর হবে। আল্লাহ্‌ তাদেরকে এর জন্য ভালবাসবেন। যেন তারা এর মাধ্যমে পূর্ণগুণের অধিকারী হতে পারে এবং আকৃতিগতভাবে মর্যাদা পায়। এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়াত একমত যে, এটা একটি প্রাচীন সুন্নাত যা সকল নাবী পছন্দ করেছেন। এটি স্বভাবজাত বিষয়, যা সকল নাবী পছন্দ করেছেন। (নাইলুল আওতার-১/১০৯)
স্বভাবজাত রীতি অনুসরণের মাধ্যমে দ্বীনই ও দুনিয়াবী অনেক কল্যাণ রয়েছে। যেমন: এর ফলে সমুদয় দৈহিক গঠন সুন্দর থাকে এবং শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নণ থাকে। (উম্মদাতুল কারী-২২/৪৫)

স্বভাবজাত সুন্নাত সমূহ :- عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: " عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ অর্থাৎ - আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: ১০ টি বিষয় স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ খাটো করা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, অঙ্গের গিরাসমূহ ঘষে মেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করা, মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার করা তথা ইসতিনজা করা। যাকারিয়া বলেন, মাস‘আব বলেছেন: আমি দশ নম্বরটি ভুলে গেছি। সম্ভবতঃ তা হলো কুলি করা।( মুসলিম হা/ ২৬১ আবূ দাউদ হা/৫২, ইবনে মাজাহ হা/২৯৩)
অপর হাদিসে পাঁচটি বলা হয়েছে - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ قَالَ: الْفِطْرَةُ خَمْسٌ: الِاخْتِتَانُ، وَالِاسْتِحْدَادُ، وَقَصُّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ، وَنَتْفُ الْإِبْطِ অর্থাৎ - আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন: স্বভাবজাত বিষয় ৫ টি। খাতনা করা, নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার করা, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা।(বুখারী হা/৫৮৯১, মুসলিম হা/২৫৭)

যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করা :-
লোম পরিস্কার করার পরিসীমা :-
নাভীর নিচের(العانة ) বা যৌনাঙ্গের কোন যায়গা উদ্দেশ্য? এ নিয়ে কয়েকটি মত;
(ক) ইমাম নাওয়াবী (রঃ) বলেন, شعر العانة(যৌনাঙ্গের লোম) হল- পুরুষাঙ্গের উপর ও তার আশপাশের লোম। অনুরুপভাবে মহিলাদের যোনির উপর ও তার আশপাশের লোম। (শারহুন নাওয়াবী আলা মুসলিম-৩/১৪৮)
(খ) আবুল আব্বাস ইবনু শুরাইজ হতে বর্ণিত আছে- যৌনাঙ্গের লোমসহ পায়ুপথের আশপাশের লোম কাটা মুস্তাহাব্ব।
(গ) দাক্বীকুল ঈদ বলেন, পুরুষাঙ্গের ও যোনির উপরের অংশের লোম।
(ঘ) কেউ বলেছেন, যেখানে লোম গজায় সেই যায়গাকে العانة বলা হয়েছে। তাই পায়ুপথের লোম কাটা উত্তম ও মুস্তাহাব্ব।(পরের তিনটি মতই পাবেন; আওনুল মা'বূদ-১/৫৪)

যা দিয়ে যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করতে হবে :- যে কোন উপকরণ দিয়ে পরিস্কার করা যায়। নারী-পুরুষ যে কেউ 'লোম নাশক' মেডিসিন বা ক্রীম (রিমোভাল ক্রীম) ব্যবহার করতে পারবে।(ফাতাওয়া নূর আলাদ দারব লিইবনে বায-৯/২৫৬)
ইমাম নাওয়াবী বলেন, চাঁছা, কাটা, ছাটা ও উপড়িয়ে ফেলা বৈধ। (শারহুন নাওয়াবী আলা মুসলিম-৩/১৪৮)
তবে সর্বাধিক উপযুক্ত পন্থা হল- বেল্ট ব্যবহার করা। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। আবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ত্বকের কোমলতা রক্ষা করে। হাদিসে লোহা তথা বেল্ট ব্যবহারের কথাই আছে।

সময় :- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَلْقَ الْعَانَةِ، وَتَقْلِيمَ الْأَظْفَارِ، وَقَصَّ الشَّارِبِ، وَنَتْفَ الْإِبِطِ، أَرْبَعِينَ يَوْمًا مَرَّةً অর্থাৎ - আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা ও নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দিয়েছেন, আমরা যেন তা চলিস্নশ রাতের বেশি ছেড়ে না রাখি। (মুসলিম হা/২৫৭, আবূ দাউদ হা/৪২০০)
অবশ্যই অনেকেই বলে থাকে, চল্লিশের বেশি সময় অতিক্রম করলে স্বলাত হবে না। কিন্তু একথা ঠিক নয়। স্বলাত হবে। কিন্তু উচিত নয় বা বৈধ নয় চল্লিশ দিনের বেশি ছেড়ে রাখা।(ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ-১/৫/১৪৪)

নক, গোঁফ এবং বগলের লোম :-
নক সর্বোচ্চ চল্লিশ দিনের আগেই কাটতে হবে। তবে কেউ চাইলে সপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক বা যে কোন সময় কাটতে পারবে। কিন্তু চল্লিশ দিনের বেশি রাখা যাবে না। নক বড় রাখা বেজাতিদের কাজ। এতে নারী পুরুষ সমান।
গোঁফ খাটো করতে হবে। একেবারে চাঁছা বা উপড়িয়ে ফেলা বা অনেক দিন ছেড়ে রাখা বৈধ নয়। এটা শুধু পুরুষদের জন্যই।
বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে কাটাও বৈধ।(ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ-১/৫/১৯১, আল-ফাতাওয়াল হিন্দীয়াহ-৫/৩৫৮)
দাক্বীকুল ঈদ বলেন, বগলের লোম যে কোন উপকরণ দিয়ে অপসারণ করা যায়।
কারও কারও মতে, চাঁছাও যাবে। যেহেতু উদ্দেশ্য হল পরিচ্ছন্নতা। (আওনুল মা'বূদ-১/৫৪)
তবে উপড়িয়ে ফেলার উপকার হল - হাত জমা থাকায় বগলে একপ্রকার দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। উপড়িয়ে ফেলায় ময়লা ও ঘাম কম হবে এবং লোমের গোড়ার দুর্গন্ধসহ উঠে আসবে। কিন্তু কাটলে দুর্গন্ধ থেকেই যায়। এতে নারী-পুরুষ সমান।
ইসলামের সকল বিধিবিধান রুচি ও স্বাস্থ্য সম্মত। ইসলাম আপনাকে সবসময়ই সঠিক পথ দেখাবে তা যতই গোপন ও ব্যক্তিগত হোক না কেন।


কবরস্থানের উপর / কবরের উপর ঘর বাড়ি বা মসজিদ নির্মাণ করা কি জায়েজ ?

প্রশ্নঃ কবর স্থান ভেঙ্গে যদি কেউ বসববাস করার জন্য বাড়ী নির্মান করে তাহলে শরীয়তে তার বিধান কি?

উত্তর  দিয়েছেন ডঃ মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ

উত্তরঃ প্রথম কথা হচ্ছে কবরস্থানটি যদি ওয়াফকৃত না হয়ে থাকে, ব্যক্তিমালিকানাধীন থেকে থাকে এবং এখানে যদি বর্তমানে কবর দেয়া না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কবরস্থানকে যদি সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলা হয় অথবা কবরস্থানকে যদি উঠিয়ে অন্য কোনো স্থানে স্থানান্তর করা হয় তাহলে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা, দোকানপাট নির্মাণ করা, মার্কেট নির্মাণ করা অথবা অন্য কোনো কাজ করা সম্পূর্ণ জায়েয। এতে কোনো অসুবিধে নেই।

২য় মাস’আলা হচ্ছে, কবরস্থানটি যদি কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করা হয়ে থাকে তাহলে ওয়াকফ হওয়ার কারণে এখানে বাড়ি নির্মাণ করা, দোকানপাট নির্মাণ করা বা অন্য কোনো কাজ করা জায়েয নেই যেহেতু এটিকে কবরের জন্য বা কবর দেয়ার জন্য ওয়াকফ করা হয়েছে।

৩য় মাস’আলাটা হচ্ছে কবরস্থান ওয়াকফ করা হয়েছে কিনা সেটাও জানা নেই, ব্যক্তিমালিকানায় কিনা সেটাও জানা নেই কিন্তু সেটাকে বর্তমানে কবরস্থান হিসেবে ধরা হয় না এবং এটা বর্তমানে ধরতে গেলে ছাড়া বাড়ির মতো; সেখানে কবরও দেয়া হয়না আর সেটি কবরস্থান হিসেবেও ব্যবহার হয়না অর্থাৎ এমনিই পড়ে আছে। হয়তো অনেক আগে অথবা প্রাচীন যুগে এখানে কবর দেয়া হয়েছে। যদি এমনটি হয় তাহলে সেখানে বিধান হচ্ছে, কবরস্থান খুঁড়ে ফেলা এবং সেখানে লাশ বা অন্যকিছু পাওয়া গেলে সেটি অন্যস্থানে দাফন করতে হবে এবং এই জায়গাটুকু খাস জায়গা হিসেবে কারো ব্যক্তিমালিকানা যদি সেখানে প্রমাণিত হয় তাহলে সেটাকে তিনি ভেঙ্গে অন্য কাজে লাগাতে পারবেন এবং তার জন্য এটি বৈধ রয়েছে। অর্থাৎ ঐ কবরস্থানকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া ইসলামী শরিয়তে নাজায়েয নয় বরং জায়েয রয়েছে।

আমরা জানি আল্লাহর নবী ﷺ মসজিদে নববী ﷺ যেখানে নির্মাণ করেছেন সেই স্থানটি মূলত একসময় কবরস্থান ছিল। কবরগুলো একসময় উপড়ে ফেলা হয়েছে তারপর রাসূলুল্লাহ্ ﷺ সেখানে মদীনার মসজিদটি তৈরি করেছেন। সুতরাং, কবরগুলো উপড়ে ফেলার পর যদি সেখানে অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে তাহলে সেটাও নাজায়েয নয়, জায়েয রয়েছে। তবে ওয়াফকের বিষয়টি সতর্কতার সাথে খেয়াল রাখতে হবে। যদি ওয়াফকৃত হয় কবরস্থানের জন্য তাহলে সেখানে বাড়ি নির্মাণ করা বা অন্য কোনো কাজ করা জায়েয নেই।


=====================


প্রসঙ্গঃ
পুরাতন কবরের উপর বসবাসের ঘর নির্মান করা ৷
প্রশ্নঃ
মুফতী সাহেব! আমাদের বাড়ির পাশে ত্রিশ/ চল্লিশ বছর আগের দুটি কবর আছে ৷ বাড়ি ভরাট ও বৃদ্ধি করায় কবর দুটি বাড়ির ভিতরে পড়ে গেছে ৷ জানার বিষয় হল, সেখানে বসবাসের উদ্দেশ্যে কোনো ঘর নির্মাণ করা বৈধ হবে কি না? দয়া করে জানাবেন।
উত্তরঃ
প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে কবরটি অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ার কারণে লাশ মাটি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই যেহেতু প্রবল, তাই কবরের জায়গাটি ওয়াকফকৃত না হলে কবরটিকে সমান করে দিয়ে তার উপর ঘরবাড়ি নির্মাণ করা এবং সেখানে বসবাস করা জায়েয হবে।
আর কবরের জায়গাটি যদি ওয়াকফকৃত হয়, তাহলে পুরাতন হলেও তাতে অন্য কিছু করা জায়েয হবে না।
-খানিয়া ৩/৩১৪; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; রদ্দুল মুহতার ২/২৩৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭ ৷
মুফতী মেরাজ তাহসীন
মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷


=============================================

কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা যাবে কি?


জিজ্ঞাসা–৯৭: আমার প্রশ্ন হলো, অনেক দিনের পুরোনো অথবা অল্প দিনের পুরোনো কবরের উপরে বসত বাড়ি তৈরি করা কি বৈধ হবে?–ইবনে সুলতান: ibnesultan29121995@gmail.com

জবাব : কবরের উপর ঘর তৈরি করে বসবাস করা নাজায়েয ও নিন্দনীয় কাজ। এ কাজের দ্বারা কবরবাসীকে অপমান করা হয়। এমনকি কবরের উপর বসাও অত্যন্ত গর্হিত কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

 لا تُصَلُّوا إِلَى الْقُبُورِ وَلا تَجْلِسُوا عَلَيْهَا

“তোমরা কবরের দিকে মুখ করে নামায পড়বে না এবং কবরের উপর বসবে না। ” (মুসলিম, হা/ ২১২২)

ইবনু তায়মিয়াহ (রহ.) বলেন,  ফকীহগণ এ বিষয়ে একমত যে, কবরের উপর মসজিদ,বাড়ি-ঘর ইত্যাদি করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে নিষেধ করে গিয়েছেন ।(মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫ )

তবে যদি একান্ত কোনো কারণে বাড়ি-ঘর করতে হয় আর কবর অল্প-পুরোনো বা নূতন হয় তাহলে লাশ উঠিয়ে অন্যত্র কবর স্থানান্তর করতে হবে। পক্ষান্তরে যদি কবর অনেক পুরাতন হয় তাহলে সেখানে মাটির নিচে পুঁতে রেখে সমান করার মাধ্যমে কবর মিটিয়ে দিয়ে উপরে বাড়ি নির্মাণ করতে পারবেন। (ফাতহুল কাদীর ২/১০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৪৭১; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/১৭৫; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২২/১৯৪-৯৫)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী


=======================


কবরের উপর মসজিদ নির্মাণের হুকুম কি?

প্রশ্ন

বরাবর,

লুৎফর রহমান  ফরায়েজী

বিষয়: কবর স্থানের উপর মসজিদ তৈরীর বিষয়ে কুরআন এবং হাদিসের আলোকে সমাধানের জন্য লিখিত ফতোয়ার আবেদন।

জনাব,

বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা পাবনা জেলার আটঘরিয়া, উপজেলার, চাঁদভা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। আমরা মৌখিক ভাবে ওয়াকফ করা কবর স্থান যে কবরস্থানে মানুষ মাটি দেওয়া হচ্ছে প্রায় ৮০/৯০ বছর ধরে এই রকম জায়গা মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করে নিয়ে সেই কবর গুলোর হাড়-হাড্ডি সেখান থেকে উত্তোলন না করে বরং কবর গুলো ঐ অবস্তাতেই রেখে দিয়ে তার উপর ৩ ফুট মাটি দিয়ে উচু করে কবরগুলো মাটির নিচে চাপা দিয়েছি এবং মসজিদের পিলার করতে গিয়ে মাটি খনন করার সময় যে সমস্ত হাড়-হাড্ডি পাওয়া গেছে সে সমস্ত হাড়-হাড্ডি গুলোও আবার ঐ কবরের মধ্যেই চাপা দিয়েছি এবং সেখানে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার প্লান করে ২০০৮ সালে একটি জুময়া মসজিদ তৈরীর কাজ শুরু করি কিন্তু মসজিদের এখনও অনেক কাজ বাদ রয়েছে। প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে শুধু মাত্র ছাদ, মেঝে এবং গিরিলের দরজা, জানালা লাগিয়ে নামাজ পড়ার মত একটা পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে এখনও রং প্লাস্টার, টাইস এ সমস্ত সকল কাজ বাদ রয়েছে। এবং এতদিন ধরে আমরা সেই মসজিদে নামাজও পড়ে আসছি। এখন এই মসজিদে আমদের নামাজ সঠিক হবে কিনা, (অথচ ঐ কবরস্থান ছাড়াও মসজিদের পাশে মসজিদ করার মত অনেক বড় জায়গা রয়েছে যে জায়গাটুকুও মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করা সেখানে কোন কবরও নাই সেই জায়গায় মসজীদ না করে কবরস্থানের উপর মসজীদ করেছি) এই বিষয়টির সঠিক সমাধান পাওয়ার জন্য আপনার বরাবর মসজিদ তৈরীর জায়গা বিষয়ে লিখিত তথ্য পেশ করলাম। আমাদের লিখিত তথ্যাদি পড়ার পড়ে কুরআন এবং হাদিসের উপর ভিত্তি করে সঠিক সমাধান দিতে আপনার সদয় মরজি হয়।

লিখিত তথ্য

আমাদের গ্রামে আজ থেকে প্রায় ৮০/৯০ বছর আগে নামাজ পড়ার জন্য নির্ধারিত কোন মসজিদ এবং মানুষ মারা গেলে মাটি দেওয়ার জন্য নিরধারিত কোন কবরস্থানের জায়গা ছিলো না। ঠিক সেই সময় মেছের জোয়াদ্দার নামে একজন ব্যক্তি ইসলামী শরিওত মোতাবেক তাহার নিজস্ব একটি জমি মসজিদ ও কবরস্থান বরাবর আলাদা-আলাদা ভাবে উল্লেখ করে মৌখিক ভাবে ওয়াকফ করে দেয়  (কিন্তু সেই ওয়াকফের লিখিত কোন প্রমান নাই) । তার ওয়াকফ করা মসজিদের জায়গার উপর প্রথমে একটি ছোট মসজিদ ও তার পাশে ওয়াকফ করা কবরস্থানের উপর একটি কবরস্থান জমির মালিক নিজেই তৈরী করে দেয় এবং মানুষ মারা গেলে সেই কবরস্থানে মানুষকে মাটি দেওয়া হয় কিন্তু জমির মূল মালিক মেছের জোয়াদ্দারের মৃত্যুর পর তার দুই সন্তান মো: ওসমান গণি জোয়াদ্দার এবং ছোট সন্তান মো: আব্দুল গণি জোয়াদ্দার তার সমস্ত জমি জমার ওয়ারিশ হন।

তারা ওয়ারিশ হওয়ার পর আবার নতুন করে মসজিদ এবং কবরস্থানের সমস্ত জায়গা প্রায় ৩০ বছর পর শুধূ মসজিদ বরাবর সরকারী আইন অনুযায়ী ১৯৭০ সালের দিকে লিখিত দলিল করে দেয় কিন্তু যদিও দলিল করে দেয় দলিল করে দেওয়ার পরেও আবার নতুন করে গ্রামের জনগন ঐ কবরস্থানে কবর দেওয়ার কাজ যথানিয়মে চালাতে খাকে এবং রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার পরে সেই কবরস্থানে যাদেরকে মাটি দেওয়া হয় তাদের মধ্যে  গ্রামের প্রধানদের কবরও রয়েছে তার প্রমাণ সরুপ তাদের কবর এখনও নতুন যে মসজিদ করা হয়েছে সেই মসজিদের ভিতরে কিছু অংশ এবং মসজিদের বাইরে কিছু অংশ বিদ্যমান রয়েছে।

এবং এছাড়াও অনেক মানুষ সেখানে মাটি  দেওয়া হয়েছে। মাটি দিতে দিতে এমন একটি অবস্থান তৈরী হয়ে গিয়েছিলো যে, সেখানে আর কবর দেওয়ার কোন জায়গা ছিলো না আবার নতুন করে ঐ কবরস্থানে মাটি দিয়ে ভরাট করে নতুন কবর দেওয়ার কাজ শুরু হয়। সবার শেষে যে কবরটি দেওয়া হয় সেটা হলো মসজিদ তৈরীর মাত্র ৫ বছর আগে অর্থাত ২০০৪ সালে। কিন্তু ১৯৭০ সালেই আমাদের গ্রামে আবার একটা নতুন কবরস্থান তৈরী করা হয় এবং সেখানে ১৯৭০ সাল থেকে শুরু করে বতর্মানেও সেখানে মানুষ মাটি দেওয়া হচ্ছে আমাদের এই পুরাতন কবরস্থানে মানুষ মাটি দেওয়ার আর প্রয়োজন নাই। তাই আমাদের পুরাতন জামে মসজিদটি সংস্কার ও বড় করার জন্য পুরাতন মসজিদের সবটুকু জায়গা বহাল না রেখে কবরস্থানের  সকল কবরগুলো খনন না করে কবর গুলো ঐ অবস্থাতেই রেখে দিয়ে তার উপর নতুন করে ৩ ফুট মাটি দিয়ে উচু করে অনেক বড় একটি মসজিদ তৈরী করেছি এবং নামাজও পড়ছি।

এখন আমার প্রশ্ন হলো:

০১।

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী ওয়াকফ সহিহ বা বৈধ হওয়ার জন্য মৌখিক ওয়াক্ফই যথেষ্ট নাকি রেজিষ্ট্রি করা জরুরি? এ বিষয়ে জানতে চাই?

০২।

যদি কোরআন এবং হাদিসের নিয়ম অনুযায়ী নতুন করে আবার মসজিদ এবং কবরস্থানের সমস্ত জায়গা শুধূ মসজিদ বরাবর সরকারী আইন অনুযায়ী ওয়ারিশদের লিখিত দলিল করে দেওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে মসজিদের পাশে যে অনেক ফাকা জায়গা পড়ে রয়েছে সে জায়গাটুকুও মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রি করা, অথচ সেই জায়গায় মসজিদ না করে কবরস্থানের উপর আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মসজিদ তৈরী করেছি এবং নামাজ পড়ছি এখন সেই মসজিদে নামাজ পড়লে নামাজের সঠিক হক আদায় হবে কিনা?

০৩।

আর মসজিদ তৈরীর সময় ঐ সমস্ত সকল কবরগুলো খনন না করে, শুধু মাত্র পিলার করার জন্য যে জায়গাটুকু খনন করার দরকার সেই জায়গাটুকু খনন করেছি এবং সেখানকার যে হাড়-হাড্ডি গুলো পাওয়া গেছে সে হাড়-হাড্ডি গুল্ওো অন্য জায়গা না সড়িয়ে সেই কবরের মধ্যেই তার মানে মসজিদের নিচে চাপা দিয়েছি আর বাঁকি শত শত কবরগুলো কবরগুলো ঐ অবস্থাতেই রেখে দিয়ে  সমস্ত কবরগুলো গোটা মসজিদের মেঝের নিচে চাপা দিয়ে মসজিদ করেছি এবং এতদিন ধরে এই ভাবেই সেই মসজিদে আমরা নামাজও পড়ছি এখন আমাদের নামাজ হবে কিনা?

০৪।

আর যদি গ্রামের সকল জনগন একমত হয়ে মসজিদের মেঝ ভেঙ্গে ফেলে দিয়ে ঐ সকল কবরের হাড়-হাড্ডি তুলে ফেলে অন্য কবরস্থানে দাফন করে তারপর নতুন করে মেঝে তৈরী করে নামাজ পড়ি তাহলে সে কাজটি করা উত্তম হবে কি না এ বিষয়ে জানতে চাই?

০৫।

আর যদি আমরা হাড়-হাড্ডি না তুলে ঐ অবস্থাতেই নামাজ পড়ি এবং এ রকম অবস্থায় মসজিদ করে নামাজ পড়া শরিয়তের বিধান অনুযায়ী বিলকুল জায়েজ কিনা এ বিষয়ে জানতে চাই?

অতএব, জনাবের নিকট বিনীত অনুরোধ  আমাদের উপরোক্ত বিষয়গুলো ভাল ভাবে পড়ে ও বুঝে আমাদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দিয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করে দিতে আপনার সহানুভূতি কামনা করছি।

নিবেদক

গ্রাম বাসীদের পক্ষে

মো: আব্দুল হাই

গ্রাম: হাপানিয়া

উপজেলা: আটঘরিয়া

জেলা: পাবনা।

(বিঃদ্রঃ আমাদের উপরোক্ত ০৪ টি প্রশ্নেরে উত্তর  হাওলা সহ আলাদা আলাদা ভাবে দিবেন, তাহলে আমাদের প্রত্যেকটি বিষয়ে জানা হবে এবং আমরা খুব উপকৃত হব এবং এই প্রশ্নের উত্তরের ১ কপি যদি কুরিয়ার ও পোষ্টের মাধ্যমে পাঠাতেন তাহলে আমরা সারা জীবন আপনার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

১ নং প্রশ্নের জবাব

ওয়াকফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য লিখিত দেয়া বা রেজিষ্ট্রি করে দেয়া শর্ত নয়। শুধুমাত্র মৌখিক হুকুম দিয়ে জমিটি ওয়াকফকৃত প্রয়োজনে আলাদা করে দিলেই ওয়াকফ সম্পন্ন হয়ে যায়।

সেই হিসেবে মরহুম মেছের জোয়াদ্দার সাহেব মসজিদ ও কবরস্থানের জন্য আলাদা আলাদা দু’টি জমি ওয়াকফ করার কথা বলে পৃথক করে দেয়ার দ্বারাই ওয়াকফ শুদ্ধ হয়ে গেছে। উক্ত দু’টি নির্ধারিত স্থানে মসজিদ ও কবরস্থানের কাজ সমাপনের দ্বারা ওয়াকফটি আরো শক্তিশালী ও পূর্ণতা লাভ করেছে। পরবর্তীতে ওয়াকফকারীর ওয়ারিসদের কোন অধিকার নেই তার উপর কোনরূপ হস্তক্ষেপ করার।

وَأَبُو يُوسُفَ – رَحِمَهُ اللَّهُ – مَرَّ عَلَى أَصْلِهِ مِنْ زَوَالِ الْمِلْكِ بِمُجَرَّدِ الْقَوْلِ أَذِنَ فِي الصَّلَاةِ أَوْ لَمْ يَأْذَنْ، وَيَصِيرُ مَسْجِدًا بِلَا حُكْمٍ؛ لِأَنَّهُ إسْقَاطٌ كَالْإِعْتَاقِ، وَبِهِ قَالَتْ الْأَئِمَّةُ الثَّلَاثَةُ. (فتح القدير، كتال الوقف، فصل فى احكام المسجد، إذَا بَنَى مَسْجِدًا لَمْ يَزُلْ مِلْكُهُ عَنْهُ-6/234

وفى البحر الرائق- الخامس من شرائطه الملك وقت الوقف…………. اما لو وقف ضيعة غيره على جهات فبلغ الغيرفأجازه جاز بشرط الحكم والتسليم، ( البحر الرائق-5/188)

 

২ ও ৩ এবং ৫নং প্রশ্নের জবাব

ওয়াকফকারী যে স্থানকে কবরস্থান হিসেবে ওয়াকফ করে গেছে, সেটিতে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ নয়। ওয়াকফকারীর ওয়াকফের বিপরীত করে কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করাটি শরীয়ত গর্হিত কাজ হয়েছে। দেশীয় আইনের ফাঁক গলে এহেন কাজ করা কিছুতেই সমীচিন হয়নি। মসজিদের জন্য ওয়াকফকৃত স্থানে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। আর কবরস্থানটিকে কবরস্থান হিসেবেই রাখতে হবে। এর উল্টো করা জায়েজ নয়।

শরয়ী বিধানের উল্টো কবরস্থানের জন্য ওয়াকফকৃত জমিনে মসজিদ নির্মাণের ফলে কর্তৃপক্ষ শক্ত গোনাহগার হয়েছে।

شرط الواقف كنص الشارع أي في المفهوم والدلالة، ووجوب العمل به (رد المحتار، كتاب الوقف، مطلب فى قولهم شرط الواقف كنص الشارع-6/649، البحر الرائق، كتاب الوقف-5/245، النهر الفائق، كتاب الوقف-3/326

হ্যাঁ, কবরস্থানের স্থলে মসজিদ নির্মাণ করা জায়েজ আছে ২টি শর্তে। যথা-

১-  যদি উক্ত কবরস্থানটি আর কবর দেয়ার কাজে ব্যবহৃত না হয়।

২-  কবরস্থানে দাফনকৃত লাশ মাটির সাথে মিশে গিয়ে থাকে।

যদি উল্লেখিত উভয় শর্ত পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়েছে। সুতরাং তাতে নামাযও জায়েজ হচ্ছে।

فى عمدة القارى شرح صحيح البخارى- قال ابن القاسم لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم عليها مسجدا لم أر بذلك بأسا وذلك لأن المقابر وقف من أوقاف المسلمين لدفن موتاهم لا يجوز لأحد أن يملكها فإذا درست واستغنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد لأن المسجد أيضا وقف من أوقاف المسلمين لا يجوز تملكه لأحد فمعناهما على هذا واحد وذكر أصحابنا أن المسجد إذا خرب ودثر ولم يبق حوله جماعة والمقبرة إذا عفت ودثرت تعود ملكا لأربابها فإذا عادت ملكا يجوز أن يبنى موضع المسجد دارا وموضع المقبرة مسجدا وغير ذلك فإذا لم يكن لها أرباب تكون لبيت المال (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد-3/435 زكاريا

وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167

কিন্তু যদি এই দুই শর্তের একটি শর্তও না পাওয়া যায়, তাহলে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হয়নি।  সুতরাং তাতে নামায পড়া মাকরূহে তাহরিমী হচ্ছে।

وتكره الصلاة عليه وإليه لورود النهي عن ذلك، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب صلاة الجنائز، مطلب فى اهداء ثواب القرائة للنبى صلى الله عليه وسلم-3/154، تاتارخانية، كتاب الجنائز، باب التعزية والماتم-2/182

৪ নং প্রশ্নের জবাব

যদি কবরস্থানটি প্রয়োজনীয়তা আর না থাকে। অন্য কবরস্থানেই মানুষ এখন লাশ দাফন করে। ওয়াকফকৃত উক্ত কবরস্থানটি বিরান হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে উক্ত স্থান থেকে কবরের হাড়গোড় উঠিয়ে অন্যত্র সম্মানের সাথে দাফন করে উক্ত স্থানে মসজিদ নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।

তবে এক্ষেত্রেও হাড়গোড় একদম মাটির সাথে মিশে যাওয়ার পর কাজটি করলেই সর্বোত্তম হবে।

আর যদি এখনো উক্ত স্থানে মানুষ লাশ দাফন করে থাকে। তথা কবরস্থানটির প্রয়োজনীয়তা এখনো বাকি থাকে, তাহলে উক্ত স্থানে ওয়াকফকারীর নির্দেশনার উল্টো হওয়ায় মসজিদ নির্মাণ জায়েজ হবে না।

فى عمدة القارى شرح صحيح البخارى- قال ابن القاسم لو أن مقبرة من مقابر المسلمين عفت فبنى قوم عليها مسجدا لم أر بذلك بأسا وذلك لأن المقابر وقف من أوقاف المسلمين لدفن موتاهم لا يجوز لأحد أن يملكها فإذا درست واستغنى عن الدفن فيها جاز صرفها إلى المسجد لأن المسجد أيضا وقف من أوقاف المسلمين لا يجوز تملكه لأحد فمعناهما على هذا واحد وذكر أصحابنا أن المسجد إذا خرب ودثر ولم يبق حوله جماعة والمقبرة إذا عفت ودثرت تعود ملكا لأربابها فإذا عادت ملكا يجوز أن يبنى موضع المسجد دارا وموضع المقبرة مسجدا وغير ذلك فإذا لم يكن لها أرباب تكون لبيت المال (عمدة القارى شرح صحيح البخارى، كتاب الصلاة، باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد-3/435 زكاريا

وَلَوْ بَلَى الْمَيِّتُ وَصَارَ تُرَابًا جَازَ دَفْنُ غَيْرِهِ فِي قَبْرِهِ وَزَرْعُهُ وَالْبِنَاءُ عَلَيْهِ، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. (الفتاوى الهندية، كتاب الصلاة، الباب الحادى عشر فى الجنائز، الفصل السادس فى القبر الدفن-1/167

شرط الواقف كنص الشارع أي في المفهوم والدلالة، ووجوب العمل به (رد المحتار، كتاب الوقف، مطلب فى قولهم شرط الواقف كنص الشارع-6/649، البحر الرائق، كتاب الوقف-5/245، النهر الفائق، كتاب الوقف-3/326

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী


 

পৃথিবীর প্রকৃত বয়স ।

পুর্নাঙ্গ প্রশ্ন:---বিভিন্ন হাদিস বা বুখারীর হাদিস হতে অামরা পাই যে অাদম (অাঃ) পৃথিবীতে এসেছে প্রায় ৭ হাজার বছর পূর্বে। কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান বিভিন্ন মানব ফসিল পাচ্ছে যেগুলো কয়েক লক্ষ বছর পূর্বের। এবং বিভিন্ন লিখনি চিত্রও পাচ্ছে যেগুলো ৩০ হতে ৪০ হাজার বছর পূর্বের।তাহলে এটাকে কুরআনের অালোকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবো। এই বিষয়টি বিজ্ঞান ও কুরআনের অালোকে ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হবো। ধন্যবাদ।


উত্তর : উত্তরটা সহজ।(১) প্রথমে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে। তার অনেক পরে আদম আ: কে সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। (২) অথবা, সময়ের সৃষ্টি আল্লাহই করেছেন, কোথাও সাত হাজার বছর, কিন্তু অন্য কোথাও সাত কোটি বছর কেটে যেতে পারে, তদ্রূপ পৃথিবীর ক্ষেত্রেও এমন হতে পারে। (৩) বিভিন্ন স্থানে সময়ের এই কম বেশী হওয়া, হেরফের হওয়া - এ বিষয়টি মিরাজ এর ঘটনায় সবিস্তারে বর্ণনা করা আছে। (৪) মানব ফসিল এর বয়স নির্ণয়ের বিষয়টি এক আর কোন প্রানীর ফসিল এর বয়সের বিষয়টি ভিন্ন। যেমন: ফেরাউনের যে লাশ সংরক্ষিত রয়েছে, তা কিন্তু বয়সের হিসেবে মিলে গেছে, কেউ বা কোন বিজ্ঞানী কিন্তু দাবী করেন নাই, ফেরাউনের আগমনের সময় এবং এই লাশের বয়সের অনেক পার্থক্য রয়েছে, এমনটি কেউ দাবী করেনি। (৪) সাত হাজার বছর পূর্বে আদম আ: এসেছেন - এটা অকাট্য বর্ণনা নয়। এটা একটা আপাত হিসাব। আমরা জানি বনী ইসরাঈলে হাজার হাজার নবী এসেছে, তাদের বয়সের হিসাব, যুগের হিসাব ইত্যাদি যোগ করলে কিন্তু সময়টা অনেক লম্বা হয়ে যেতে পারে।


অতএব, এ বিষয়গুলো যথেষ্ট আলোচনার দাবী রাখে।

ইমাম সাহেবের অজু না থাকলে বা অজু ভেঙ্গে গেলে ।

এ ক্ষেত্রে প্রথমত দুটি বিষয়। 

(ক) 

ইমাম সাহেবের অজুই ছিলনা কিন্তু তার মনে নেই। এ ক্ষেত্রে আবার তিনটি বিষয়। (১)   হয়তো দুই রাকাত পড়ার পর তার মনে পড়েছে যে তার অজু ছিলনা। সেক্ষেত্রে নামায ভেঙ্গে দিতে হবে, এবং তিনি অজু করে এসে পুনরায় নামাজ প্রথম থেকে আরম্ভ করবেন।  (২) অথবা, পুরো নামাজ শেষ করার পর ইমাম সাহেবের মনে পড়েছে যে তার অজু ছিলনা। এক্ষেত্রেও কারো নামাজ হয়নি। তাই ইমাম সাহেব অজু করে এসে পুরো নামাজ পুনরায় পড়াবেন।  (৩) অথবা,   ঐ ওয়াক্ত চলে যাওয়ার পর বা দু একদিন পর ইমাম সাহেবের মনে পড়েছে, সেক্ষেত্রে তিনি সাধারণ ঘোষণা দিয়ে দিবেন, অমুক দিনের অমুক ওয়াক্তের নামাজ আপনারা মুসল্লীগণ নিজে নিজে আদায় করে নিবেন। ঘোষণাটি দুই তিনি ওয়াক্ত দেওয়া দরকার যাতে ঐ দিন যত মুসল্লী ছিল সবাই জেনে যেতে পারে। ইমাম সাহেব নিজেও একা একা উক্ত ওয়াক্তের নামাজ কাজা আদায় করবেন। 


(খ) ইমাম সাহেবের অজু ছিল কিন্তু নামাজের মধ্যে অজু ভেঙ্গে গেছে, সেক্ষেত্রে নিম্নের জবাবটি প্রযোজ্য হবে।  


ইমামের অযু ভেঙ্গে গেলে করণীয়

জিজ্ঞাসা–৩৩৮: কোনো নামাজে ইমামের যদি অযু ভেঙ্গে যায়, এমন সময় নামাজ ছেড়ে দিলে বা অযু ভাঙ্গার খবর প্রকাশ পেলে যদি ফেৎনার আশঙ্খা থাকে তাহলে কী করণীয়? জানালে ভাল হয়।– আব্দুর রহমান সেরনায়বাত: saraslam077@gmail.com

জবাব: প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, এটা তো জানা কথা যে, অযু ছাড়া নামাজ হয়না। আবু হুরায়রা রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসূল  বলেছেন,  لا تقبل صلاة أحدكم إذا أحدث حتى يتوضأ তোমাদের যদি অযু ভেঙ্গে যায় তাহলে অযু করা পর্যন্ত তোমাদের নামায কবুল করা হয় না। (মুসলিম: ২২৫)

সুতরাং ফেতনার আশঙ্কায় অযু ছাড়া নামাজের অনুমতি নেই। বরং নামাযে যদি ইমাম সাহেবের অযু ভেঙ্গে যায় তাহলে তিনি কিরাত শুদ্ধ আছে এমন কাউকে তার প্রতিনিধি বানাবেন। প্রতিনিধি বাকি নামাজ মুসল্লীদের নিয়ে আদায় করবে। ইমাম সাহেব অযু করে এসে তার ইকতেদা করবেন।

আমর ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজরত ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত বের হলে কী করণীয় এ সম্পর্কে উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন, يَنْفَتِلُ فَيَتَوَضَّأُ، ثُمَّ يَرْجِعُ فَيُصَلِّي সে অযুর জন্য বের হয়ে যাবে এবং অযু করে আসবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫০)

ইবরাহিম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ عَلْقَمَةَ رَعَفَ فِي الصَّلاَةِ، فَأَخَذَ بِيَدِ رَجُلٍ فَقَدَّمَهُ، ثُمَّ ذَهَبَ، فَتَوَضَّأَ، ثُمَّ جَاءَ فَبَنَى عَلَى مَا بَقِيَ مِنْ صَلاَتِهِ

অর্থাৎ, আলকামার নামাজে নাক থেকে রক্ত বের হয়েছে, তখন তিনি এক ব্যক্তির হাত ধরে ইমামতির স্থানে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং তিনি বের হয়ে গিয়ে অযু করে আসলেন। তারপর বাকি নামাজে বেনা করছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৫৯৫৬)

হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব হেদায়াতে আছে,ومن سبقه الحدث في الصلاة انصرف فإن كان إماما استخلف وتوضأ وبنى অর্থাৎ, যে ব্যক্তির নামাযে হদস হবে অর্থাৎ নামাযে অযু চলে যাবে সে ফিরে আসবে। সে যদি ইমাম হয় তাহলে সে একজন প্রতিনিধি বানাবে এবং অযু করবে এবং তার নামাযে বেনা করবে। (হেদায়া: ১/৫৯)

والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

মুনাবাযা ও মুলামাসা পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় ।

আর আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “তোমরা পরস্পর পরস্পরের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কিন্তু তোমাদের পরস্পর সন্তুষ্টচিত্তে ব্যবসা করা বৈধ।” (আন্‌-নিসাঃ ২৯)


ছোঁয়ার মাধ্যমে কেনা-বেচা করা


আনাস (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ বেচা-কেনা হতে নিষেধ করেছেন।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতার কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। তিনি ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতেও নিষেধ করেছেন। মুলামাসা হলো, কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা)।



عن أبي سعيد الخدري -رضي الله عنه- مرفوعاً: «أن رسول الله -صلى الله عليه وسلم- نهى عن الْمُنَابَذَةِ-وهي طرح الرجل ثوبه بالبيع إلى الرجل قبل أن يقلبه، أو ينظر إليه-، ونهى عن الْمُلَامَسَةِ -والملامسة: لمس الرجل الثوب ولا ينظر إليه-».  

[صحيح] - [متفق عليه.]


আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মারফু‘ হিসেবে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ করেছেন। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। তিনি ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় করতেও নিষেধ করেছেন। মুলামাসা হলো কাপড়টি না দেখে স্পর্শ করা (এতেই বেচা-কেনা সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা)।  

সহীহ - মুত্তাফাকুন ‘আলাইহি (বুখারী ও মুসলিম)। (বুখারী : ২১৪৪ ) 


ব্যাখ্যা

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজানা বস্তুর বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন। কেননা, এতে ক্রেতা বা বিক্রেতার ক্ষতি নিহিত। হয় ক্রেতা কিনে ঠকে বা বিক্রেতা বিক্রি করে ঠকে। যেমন, বিক্রয়কৃত বস্তুটি ক্রেতা বা বিক্রেতা বা উভয়ের কাছে অস্পষ্ট। এ ধরণের বেচা-কেনার একটি হলো, ‘মুনাবাযা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়। আর তা হলো, বিক্রয় চূড়ান্ত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা কাপড়টি উল্টানো-পাল্টানো অথবা দেখে নেওয়ার আগেই বিক্রেতা কর্তৃক তা ক্রেতার দিকে নিক্ষেপ করা। এ ধরণের আরেকটি নিষিদ্ধ ক্রয়-বিক্রয় হলো, ‘মুলামাসা’ পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয়। তা হলো, কাপড়টি না দেখে বা উল্টানো-পাল্টানোর আগে শুধু স্পর্শ করে বেচা-কেনা সম্পন্ন করা। এ দু-ধরণের বেচা-কেনা বিক্রিত বস্তুর ব্যাপারে অজ্ঞতা ও অস্পষ্টতার অভিযোগ সৃষ্টি করে। ক্রেতা বা বিক্রতা যে কেউ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এতে কেউ অতিরিক্ত লাভবান হবে এবং অন্যজন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে তা মাইসার তথা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত— যা শরী‘আতে নিষিদ্ধ।   

প্রশ্ন: ৪৬৪ : ঈদ যেভাবে শুরু হয়েছে।

 নামকরণ

ঈদ শব্দটি আরবি। অর্থ খুশি, আনন্দ, অনুষ্ঠান, উৎসব, পর্ব ইত্যাদি। শব্দের মূল রূপ হলো আওদ, যার অর্থ ফিরে আসা। লিসানুল আরব অভিধানে রয়েছে, আরবদের কাছে ঈদ বলা হয় এমন সময়কে, যে সময় আনন্দ ও দুঃখ ফিরে আসে। আল মুহিত অভিধানে রয়েছে, যে রোগ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা অনুরূপ কোনো কিছু বারবার ফিরে আসে তাকে ঈদ বলা হয়। আল মুনজিদ অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদ এমন দিনকে বলা হয়, যাতে লোকজনের সমাগম হয় বা কোনো সম্মানিত ব্যক্তি অথবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণা করা হয়।

ঈদ প্রতিবছর সাজগোজ, আনন্দ-খুশি ও নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে ফিরে আসে। এ কারণে ঈদের দিনকে আনন্দ ও খুশির দিন বলা হয়। অভিধানে বলা হয়েছে, ঈদকে এ জন্য ঈদ বলা হয় যে তা প্রতিবছর নতুন আনন্দ ও খুশি নিয়ে ফিরে আসে। কোরআন মজিদেও ঈদ শব্দের ব্যবহার রয়েছে; যেমন—মরিয়ম তনয় ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য আসমান থেকে খাদ্যপূর্ণ খাঞ্চা প্রেরণ করুন, তা আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবার জন্য হবে ঈদ আনন্দোৎসব এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১১৪) এই আয়াতে আসমানি খাদ্য নাজিল হওয়ার দিনটি পরবর্তীদের জন্য স্মৃতিচারণার দিন হওয়ায় তাকে ঈদ বলা হয়েছে।

ঈদের প্রবর্তন

মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ঈদের প্রবর্তন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় পৌঁছে দেখতে পান যে মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিরা শরতের পূর্ণিমায় নওরোজ উৎসব এবং বসন্তের পূর্ণিমায় মেহেরজান উৎসব উদ্যাপন করছে। তারা এ উৎসবে নানা আয়োজন, আচার-অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব করে থাকে। মহানবী (সা.) মুসলমানদের এ দুটি উৎসব পালন করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের ওই উৎসবের বিনিময়ে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো পবিত্র দুটি দিন দান করেছেন। এতে তোমরা পবিত্রতার সঙ্গে উৎসব পালন করো। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) যখন মদিনায় আগমন করেন তখন তাদের দুটি দিন ছিল, যাতে তারা উৎসব পালন করত। তিনি জিজ্ঞেস করেন, এ দুটি কিসের দিন? তারা বলল, আমরা জাহেলি যুগে এ দুই দিন খেলাধুলা ইত্যাদি উৎসব পালন করতাম। এ নিয়মই চলে আসছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৬; মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ১৩৬৪৭)

মদিনায় প্রথম ঈদ

মুসলমানরা প্রথম ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ে দ্বিতীয় হিজরি মোতাবেক ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ বা ৩১ মার্চ। তখনকার ঈদে বর্তমান ঈদের মতো নতুন জামাকাপড়, কেনাকাটার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ-খুশি কম ছিল না। মহানবী (সা.) ঈদের দিন ছোট-বড় সবার আনন্দের প্রতি খেয়াল করতেন। মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরের সঙ্গে বিশ্বনবী (সা.) আনন্দ করতেন। শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব আনন্দ করার অনুমতি দিতেন। বালিকা বয়সী আয়েশা (রা.)-এর মনের বাসনাও রাসুল (সা.) পূরণ করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, একদা ঈদের দিন আবিসিনিয়ার কিছু লোক লাঠি নিয়ে খেলা করছে। মহানবী (সা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, হে আয়েশা! তুমি কি লাঠিখেলা দেখতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তখন আমাকে তাঁর পেছনে দাঁড় করান, আমি আমার গাল তাঁর গালের ওপর রেখে লাঠিখেলা দেখতে লাগলাম। তিনি তাদের উৎসাহ দিয়ে বললেন, হে বনি আরফেদা! লাঠি শক্ত করে ধরো। আমি দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তিনি তখন বলেন, তোমার দেখা হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, তাহলে এবার যাও।

ঈদে রাসুল (সা.)-এর আমল

মহানবী (সা.) ঈদের দিনে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে উত্তম পোশাক পরতেন। ঈদুল ফিতরে কিছু মিষ্টি দ্রব্য খেতেন।

ঈদুল আজহায় কিছু খেতেন না। কোরবানির গোশত দিয়ে দিবসের প্রথম আহার করতেন। ঈদগাহে এক রাস্তা দিয়ে যেতেন, অন্য রাস্তা দিয়ে আসতেন। তিনি ঈদে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। অতঃপর ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ থেকে ফারেগ হয়ে খুতবা দিতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করণীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন।

সাহাবায়ে কেরামের ঈদ

সাহাবায়ে কেরাম সর্বক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতেন। তাঁরা এ বাক্যের মাধ্যমে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থাৎ মহান আল্লাহ আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন।

সাহাবায়ে কেরাম মাহে রমজানে গুনাহ মাফ হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে বেশি চিন্তিত থাকতেন। তাই আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর ফারুক (রা.) ঈদুল ফিতরের নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে বলতে থাকেন, আমার গুনাহ মাফ না হলে আমি ঈদগাহে গিয়ে কিভাবে ইমামতি করতে পারি। তাঁদের ঈদে নতুন জামা, জুতা ও খাওয়াদাওয়ার ধুমধাম ছিল না। তবে আনন্দ কম ছিল না।

মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করা, তাঁকে কাছে পাওয়া, তাঁর নির্দেশ পালন করাই ছিল তাঁদের প্রকৃত আনন্দ। ঈদের দিন অনেক দূর থেকে সাহাবায়ে কেরাম ছুটে যেতেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য এবং তাঁর পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়ার জন্য।

 

লেখক : প্রধান ফকিহ

আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী


মূল লিংক 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...