প্রশ্ন :
মলমূত্রত্যাগের স্থানকেও খুর দ্বারা পরিস্কার করতে হবে!..এইটা করলে যখন নতুন ভাবে লোম উঠে তখন খুবই কষ্ট হয়।যদি লোম গুলো না চেচে যতদূর সম্ভব ছোটো করি জায়েজ হবে কি?কারণ ওখানে চুল কাটা খুবই কঠিন কাজ আসে পাশে কেটে ও যেতে পারে,আর যদিও কেটে দেই তাহলে যখন নতুন করে চুল উঠবে তখন মারাত্বক খোচা লাগে যা সাধারণ চলা ফেরা নামাজ ইত্যাদি বিষয়ে ভীষণ সমস্যা সৃষ্টি করে।
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী নাভীর নীচের অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা হলো :
পায়ের পাতার উপর ভর করে বসা অবস্থায় নাভী থেকে চার পাঁচ আঙ্গুল পরিমাণ নীচে যে ভাঁজ বা রেখা সৃষ্টি হয় সেখান থেকেই অবাঞ্ছিত লোমের সীমানা শুরু। ঐ ভাঁজ থেকে দুই উরু পর্যন্ত ডান বামের লোম, গোপনাঙ্গের চার পাশের লোম, অণ্ডকোষ থেকে মলদ্বার পর্যন্ত উদগত লোম এবং প্রয়োজনে মলদ্বারের আশ-পাশের লোম অবাঞ্ছিত লোমের অন্তর্ভুক্ত।
সাহাবী আনাস রাযি. বলেন,
وُقِّتَ لَنَا فِي قَصِّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ، وَنَتْفِ الإِبِطِ، وَحَلْقِ الْعَانَةِ، أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ يَوْماً.
অর্থাৎ, গোঁফ ছোট রাখা , নখ কাঁটা, বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা এবং নাভীর নিচের লোম চেঁছে ফেলার জন্যে আমাদেরকে সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল যেন, আমরা তা করতে চল্লিশ দিনের অধিক দেরী না করি। (মুসলিম ২৫৮)
আরো জানুনঃ
পায়ুপথের আশেপাশের অবাঞ্ছিত লোম পুরুষরা ব্লেড/খুর দিয়ে পরিষ্কার করতে অসুবিধা হলে লোমনাশক ক্রীম বা তরল পদার্থ দিয়ে সেই লোম পরিষ্কার করা যাবে। এতে কোন অসুবিধা নেই।
,
★প্রশ্নে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে,সেই সমস্যার আলোকে কেহ যদি সেটা ব্লেড বা খুর ব্যবহার না করে,তলল পদার্থ ব্যবহার করে,এটিও কোনো সমস্যা নয়,আবার কেহ যদি শুধু যতদূর সম্ভব ছোটো করে,তাও জায়েজ হবে।
তবে পরিস্কার রাখতে হবে।
,
কেউ যদি কাঁচি দ্বারা ছোট করে রাখে, তাহলে জায়েয হবে, তবে উত্তম হবে না।
فإن أزال شعره بغير الحديد لا يكون على وجه السنة
যদি কেউ চেঁছে না ফেলে অন্য কোনভাবে পরিষ্কার করে তাহলে তা সুন্নাহ অনুযায়ী হবে না। (কিতাবুন নাওয়াযিল ১৫/৫৪৭)
(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)
------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
=======================
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় :-
যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করার বিধান :-
ইসলামে পুরুষ এবং মহিলার গোপনাঙ্গের চুল কাটার বিধান স্বভাবজাত সুন্নাত। ইবনু বায (রঃ) এটা সুন্নাতের মুআক্কাদাহ বা ওয়াজিব।(ফাতাওয়াল নূর আলাদ দারব লিইবনে বায-৯/২৫৬)
স্বভাবজাত সুন্নাত :- স্বভাবজাত সুন্নাত হলো এমন রীতি যা সম্পাদন করলে এর সম্পাদনকারী এমন ফিতরাতের সাথে বিশেষিত হবেন যে ফিতরাতের উপর আল্লাহ্ তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এর উপর ভিত্তি করে তার হাশর-নাশর হবে। আল্লাহ্ তাদেরকে এর জন্য ভালবাসবেন। যেন তারা এর মাধ্যমে পূর্ণগুণের অধিকারী হতে পারে এবং আকৃতিগতভাবে মর্যাদা পায়। এ ব্যাপারে ইসলামী শরীয়াত একমত যে, এটা একটি প্রাচীন সুন্নাত যা সকল নাবী পছন্দ করেছেন। এটি স্বভাবজাত বিষয়, যা সকল নাবী পছন্দ করেছেন। (নাইলুল আওতার-১/১০৯)
স্বভাবজাত রীতি অনুসরণের মাধ্যমে দ্বীনই ও দুনিয়াবী অনেক কল্যাণ রয়েছে। যেমন: এর ফলে সমুদয় দৈহিক গঠন সুন্দর থাকে এবং শরীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নণ থাকে। (উম্মদাতুল কারী-২২/৪৫)
স্বভাবজাত সুন্নাত সমূহ :- عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: " عَشْرٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ الْمَاءِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَنَتْفُ الْإِبِطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ " قَالَ زَكَرِيَّا: قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ অর্থাৎ - আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন: ১০ টি বিষয় স্বভাবের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ খাটো করা, দাঁড়ি লম্বা করা, মিসওয়াক করা, নাকে পানি দেয়া, নখ কাটা, অঙ্গের গিরাসমূহ ঘষে মেজে ধৌত করা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা, নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করা, মলমূত্র ত্যাগের পর পানি ব্যবহার করা তথা ইসতিনজা করা। যাকারিয়া বলেন, মাস‘আব বলেছেন: আমি দশ নম্বরটি ভুলে গেছি। সম্ভবতঃ তা হলো কুলি করা।( মুসলিম হা/ ২৬১ আবূ দাউদ হা/৫২, ইবনে মাজাহ হা/২৯৩)
অপর হাদিসে পাঁচটি বলা হয়েছে - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ قَالَ: الْفِطْرَةُ خَمْسٌ: الِاخْتِتَانُ، وَالِاسْتِحْدَادُ، وَقَصُّ الشَّارِبِ، وَتَقْلِيمُ الْأَظْفَارِ، وَنَتْفُ الْإِبْطِ অর্থাৎ - আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেন: স্বভাবজাত বিষয় ৫ টি। খাতনা করা, নাভীর নীচের লোম পরিষ্কার করা, গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা।(বুখারী হা/৫৮৯১, মুসলিম হা/২৫৭)
যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করা :-
লোম পরিস্কার করার পরিসীমা :-
নাভীর নিচের(العانة ) বা যৌনাঙ্গের কোন যায়গা উদ্দেশ্য? এ নিয়ে কয়েকটি মত;
(ক) ইমাম নাওয়াবী (রঃ) বলেন, شعر العانة(যৌনাঙ্গের লোম) হল- পুরুষাঙ্গের উপর ও তার আশপাশের লোম। অনুরুপভাবে মহিলাদের যোনির উপর ও তার আশপাশের লোম। (শারহুন নাওয়াবী আলা মুসলিম-৩/১৪৮)
(খ) আবুল আব্বাস ইবনু শুরাইজ হতে বর্ণিত আছে- যৌনাঙ্গের লোমসহ পায়ুপথের আশপাশের লোম কাটা মুস্তাহাব্ব।
(গ) দাক্বীকুল ঈদ বলেন, পুরুষাঙ্গের ও যোনির উপরের অংশের লোম।
(ঘ) কেউ বলেছেন, যেখানে লোম গজায় সেই যায়গাকে العانة বলা হয়েছে। তাই পায়ুপথের লোম কাটা উত্তম ও মুস্তাহাব্ব।(পরের তিনটি মতই পাবেন; আওনুল মা'বূদ-১/৫৪)
যা দিয়ে যৌনাঙ্গের লোম পরিস্কার করতে হবে :- যে কোন উপকরণ দিয়ে পরিস্কার করা যায়। নারী-পুরুষ যে কেউ 'লোম নাশক' মেডিসিন বা ক্রীম (রিমোভাল ক্রীম) ব্যবহার করতে পারবে।(ফাতাওয়া নূর আলাদ দারব লিইবনে বায-৯/২৫৬)
ইমাম নাওয়াবী বলেন, চাঁছা, কাটা, ছাটা ও উপড়িয়ে ফেলা বৈধ। (শারহুন নাওয়াবী আলা মুসলিম-৩/১৪৮)
তবে সর্বাধিক উপযুক্ত পন্থা হল- বেল্ট ব্যবহার করা। এর কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নাই। আবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ত্বকের কোমলতা রক্ষা করে। হাদিসে লোহা তথা বেল্ট ব্যবহারের কথাই আছে।
সময় :- عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «وَقَّتَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَلْقَ الْعَانَةِ، وَتَقْلِيمَ الْأَظْفَارِ، وَقَصَّ الشَّارِبِ، وَنَتْفَ الْإِبِطِ، أَرْبَعِينَ يَوْمًا مَرَّةً অর্থাৎ - আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদের জন্য গোঁফ খাটো করা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়িয়ে ফেলা ও নাভীর নীচের পশম পরিষ্কার করার জন্য নির্দিষ্ট সীমারেখা বেঁধে দিয়েছেন, আমরা যেন তা চলিস্নশ রাতের বেশি ছেড়ে না রাখি। (মুসলিম হা/২৫৭, আবূ দাউদ হা/৪২০০)
অবশ্যই অনেকেই বলে থাকে, চল্লিশের বেশি সময় অতিক্রম করলে স্বলাত হবে না। কিন্তু একথা ঠিক নয়। স্বলাত হবে। কিন্তু উচিত নয় বা বৈধ নয় চল্লিশ দিনের বেশি ছেড়ে রাখা।(ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ-১/৫/১৪৪)
নক, গোঁফ এবং বগলের লোম :-
নক সর্বোচ্চ চল্লিশ দিনের আগেই কাটতে হবে। তবে কেউ চাইলে সপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক বা যে কোন সময় কাটতে পারবে। কিন্তু চল্লিশ দিনের বেশি রাখা যাবে না। নক বড় রাখা বেজাতিদের কাজ। এতে নারী পুরুষ সমান।
গোঁফ খাটো করতে হবে। একেবারে চাঁছা বা উপড়িয়ে ফেলা বা অনেক দিন ছেড়ে রাখা বৈধ নয়। এটা শুধু পুরুষদের জন্যই।
বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলতে হবে। তবে কাটাও বৈধ।(ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমাহ-১/৫/১৯১, আল-ফাতাওয়াল হিন্দীয়াহ-৫/৩৫৮)
দাক্বীকুল ঈদ বলেন, বগলের লোম যে কোন উপকরণ দিয়ে অপসারণ করা যায়।
কারও কারও মতে, চাঁছাও যাবে। যেহেতু উদ্দেশ্য হল পরিচ্ছন্নতা। (আওনুল মা'বূদ-১/৫৪)
তবে উপড়িয়ে ফেলার উপকার হল - হাত জমা থাকায় বগলে একপ্রকার দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। উপড়িয়ে ফেলায় ময়লা ও ঘাম কম হবে এবং লোমের গোড়ার দুর্গন্ধসহ উঠে আসবে। কিন্তু কাটলে দুর্গন্ধ থেকেই যায়। এতে নারী-পুরুষ সমান।
ইসলামের সকল বিধিবিধান রুচি ও স্বাস্থ্য সম্মত। ইসলাম আপনাকে সবসময়ই সঠিক পথ দেখাবে তা যতই গোপন ও ব্যক্তিগত হোক না কেন।
No comments:
Post a Comment