প্রশ্ন: ৪৫০ : ঝড় বৃষ্টি কালীন সময়ের দোয়া ।

 মেঘের গর্জনে পঠিতব্য দোয়া

ক. হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কুর`আন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ

উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি
অর্থ : পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। (মুয়াত্তা)
খ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন-

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুলহিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা জা-লিকা।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও। (তিরমিজি)

ঝড় তুফানের সময়ের দোয়া

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না। (বুখারি) ঝড়-তুফানের সময় এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে।  

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।`

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।

প্রশ্ন: ৪৪৯ : নিফাস বা সন্তান প্রসব পরবর্তীকালীন পবিত্র হওয়ার সময় সীমা ।

 

সন্তান প্রসবের পর নারীদের যে রক্তশ্রাব হয় শরিয়তের ভাষায় তাকে ‘নেফাস’ বলে। 

নেফাস চলাকালীন সময়ে নারীদের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ সময়ে তাদের জন্য অনেক ইবাদত করাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যেমন: নামাজ ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। সেইসঙ্গে স্বামী সহবাসও। 

তবে তা কতো দিন? এ সময়ে তাদের জন্য কী কী নিষিদ্ধ বা হারাম? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

নেফাস কাকে বলে?

নেফাসের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘জন্ম’। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীদের যোনি থেকে যে রক্তস্রাব হয় শরিয়তের ভাষায় তাকেই নেফাস বলে।

নেফাসের সময়সীমা: 

নেফাসের সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিন। সর্বনিম্ন সময়ের সীমা নেই। এক দুই ঘণ্টা বা এক দুই দিনেও বন্ধ হতে পারে। তবে আমাদের দেশের নারীদের সাধারণত ১৫, ২০, ২৫ দিন হয়ে থাকে। ৪০ দিনের বেশি রক্ত বের হলে একে এস্তেহাজা বা রোগ মনে করতে হবে। নেফাসের রক্ত ১৫, ২০, ২৫, ২৭, ৩০, ৩৫ দিনের মধ্যে কিংবা উক্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন বন্ধ হতে দেখবে তখন গোসল করে নামাজ দোয়া পড়া ইত্যাদি কাজ শুরু করবে।

প্রসবের পর যদি কারো একেবারেই রক্ত না যায়, তবুও তাকে গোসল করতে হবে। এ গোসল ফরজ। নেফাসের সময়সীমার মধ্যে সর্বক্ষণ রক্ত আসা জরুরি নয় বরং মাঝে মধ্যে দুই চার ঘণ্টা বা দুই একদিন রক্ত বন্ধ হয়ে থেকে আবার এলেও সেই মাঝখানের সময়কেও নেফাসের সময় ধরা হবে।

কোনো নারীর হয়তো ৩০ দিন রক্ত যাওয়ার অভ্যাস ছিল, কিন্তু একবার ৩০ দিন অতিক্রম হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ হল না; এমতাবস্থায় সে গোসল না করে অপেক্ষা করবে। অত:পর যদি পূর্ণ ৪০ দিন শেষে বা ৪০ দিনের ভেতর রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে এইসব কয় দিনও নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি ৪০ দিনের বেশি রক্ত জারি থাকে, তাহলে পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক ৩০ দিন নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। ৪০ দিন পরে গোসল করে নামাজ পড়তে থাকবে এবং ৩০ দিনের পরের ১০ দিনের নামাজের কাযা করবে।

নেফাসের বিধান:

চল্লিশ দিনের আগে যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যেদিন বন্ধ হবে, সেদিন গোসল করে নামাজ পড়া শুরু করে দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে স্বামী সহবাসও তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে এবং সকল ধরণের বিধি নিষেধ রোহিত হয়ে যাবে। আর যদি চল্লিশ দিনেও বন্ধ না হয়, তাহলে একে ইস্তেহাজার রক্ত মনে করে নামাজ রোজা শুরু করে দিতে হবে। তখন নামাজ রোজা ফরজ। নামাজ কাযা করা যাবে না। এ অবস্থায় স্বামী সহবাসও বৈধ।

একটি ভুল ধারণা:

একটি ভুল ধারণা আছে যে, সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামাজ পড়া যায় না। কথাটি সঠিক নয়। যার রক্ত বন্ধ না হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ মেয়াদ হলো চল্লিশ দিন। অর্থাৎ যদি আগে বন্ধ না হয়, লাগাতার ঝরতে থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ মেয়াদকাল চল্লিশ দিন পর্যন্ত। কিন্তু যদি এর আগেই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এর আগ থেকে নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।

নেফাস অবস্থায় যা বর্জনীয় যা করণীয়:

নেফাস অবস্থায় নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। পবিত্র কোরআন শরীফ বা কোনো আয়াত স্পর্শ করতে বা মুখস্ত পড়তে পারবে না। তবে পবিত্র কোরআন শরীফ গিলাফে জড়ানো থাকলে গিলাফের ওপর দিয়ে স্পর্শ করা জায়েজ আছে। অনেকে নাপাক অবস্থায় পরনের শাড়ি, দোপাট্রা বা কামিজের আচল দ্বারা পবিত্র কোরআন শরীফ স্পর্শ করে। এটাও জায়েজ নয়। পরিধানের কাপড় ছাড়া আলাদা কোনো পবিত্র কাপড়ের সাহায্যে স্পর্শ করলে জায়েজ হবে।

যে টাকা-পয়সা বা বরতনে বা তাবীজে পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াত লেখা আছে সেই টাকা পয়সা, তাবীজ এবং বরতনও স্পর্শ করতে পারবে না। হ্যাঁ, কোনো থলি বা পাত্রে রাখলে সে থলি বা পাত্র স্পর্শ করতে পারবে এবং থলি বা পাত্রের গায়ে ধরেও উঠাতে পারবে।
 
নিজের নেফাস অবস্থায় যে নারী ছাত্র-ছাত্রীদের পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ান, তারা শুধু বানান পড়াতে পারবেন। তেলাওয়াত পড়ানো যাবে না। অর্থাৎ শব্দ শব্দ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ানোর অনুমতি রয়েছে। আর যদি তেলাওয়াতও পড়াতে হয় তবে প্রত্যেক আয়াতকে আলাদা আলাদা অংশ করে দুই এক শব্দের পরপর নি:শ্বাস ছেড়ে পড়াবেন যেন প্রতিটি অংশ পবিত্র কোরআন শরীফের ক্ষুদ্রতম আয়াত অপেক্ষা ছোট থাকে। ছোট আয়াতের সমান হয়ে গেলে গুনাহগার হবেন।

তবে সূরা ফাতেহা কিংবা পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখিত কোনো দোয়ার আয়াত যেমন রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও অথবা রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ইত্যাদি দোয়ার নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হবে না। তেলাওয়াতের নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হবে।

নেফাসের সময়ে নামাজ, রোজা, কাবা শরীফের তাওয়াফ নিষিদ্ধ। হায়েজের সময়ে যে নামাজগুলো পড়া যায়নি তা পাক হওয়ার পর কাজা করতে হবে না। কিন্তু রোজা মাফ নেই। রোজা কাজা করতে হবে।
 
নেফাস চলাকালে নামাজের সময় হলে ওজু করে কোনো পাক জায়গায় কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আল্লাহ আল্লাহ করবে। নামাজ পড়বে না। এমন করা মুস্তাহাব।

নেফাস কালে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গম হারাম এবং এই সময়ে স্ত্রীর হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত স্থানের প্রতি দৃষ্টি দেওয়াও মাকরূহে তাহরিমী। নেফাসের সময়ে সহবাস করলে কবীরা গুনাহ হবে। তবে স্ত্রীর হাটু থেকে নাভী ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করা, একত্রে আহার করা ও একত্রে শয়ন করা জায়েয রয়েছে। তবে হায়েজের দোহাই দিয়ে স্ত্রী থেকে একেবারেই দূরে সরে যাওয়া যাবে না।
 
স্ত্রীর নাপাক অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গমের সুযোগ না পাওয়ায় স্বামী যদি যৌবনের উম্মদনায় ও কামরিপুর তাড়নায় এমন অস্থির হয়ে পড়ে যে অন্যত্র পাপ করে ফেলতে পারে তবে স্ত্রীর রাণে ঘষে অথবা তার দ্বারা হস্তমৈথুন করিয়ে কামোত্তজনা দমন করা যেতে পারে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেফাসওয়ালী মহিলাদের মেয়াদ সাব্যস্ত করেছেন চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৪৯, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৩১১, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৮৫২, সুনানে কুবরালিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৬১৯)

সিজারে সন্তান হলে পরবর্তী স্রাব হায়েজ হিসেবে গন্য হবে নাকি নেফাস হিসেবে?

সন্তান স্বাভাবিক নিয়মে ভূমিষ্ট হোক বা সিজারের মাধ্যমে হোক, ভূমিষ্ট হওয়ার পর মহিলার যে রক্তস্রাব আসে তা নেফাস বলেই গণ্য হবে। হায়েজ হিসেবে নয়। তাই চল্লিশ দিনের ভেতরে স্রাব বন্ধ না হলে স্ত্রী সহবাস হরাম এবং তার নামাজ পড়তে বন্ধ থাকবে। তবে চল্লিশ দিনের ভেতরে যেদিন-ই স্রাব বন্ধ হবে সেদিন থেকে গোসল করার পর সবকিছু বৈধ হবে। সূত্র: আলবাহরুর রায়েক ১/২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭)

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে


=================

নিফাসের সর্বাধিক সময় চল্লিশ দিন, যার সূচনা হয় প্রসব থেকে অথবা তার দুই বা তিনদিন পূর্ব থেকে । উম্মে সালামা [রা]-এর হাদীসে এসেছে- নবী [সা]-এর যুগে নিফাসের নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত। নিফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। এ বিষয়ে সকল আহলে ইলম একমত। ইমাম তিরমিযী [রহ] প্রমুখগণ আলেমদের এরূপ ঐকমত্য নকল করেছেন। তবে যে নারী চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হয়ে যাবে, যেমন তার রক্ত বন্ধ হলো, সে গোসল করবে ও নামাজ আদায় করবে। নিফাসের সর্বনিম্ন কোনো মেয়াদ নেই। কারণ তার নির্দিষ্ট মেয়াদ নবী [সা] থেকে বর্ণিত হয় নি। যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে সেটা যদি হায়েযের সময় হয় হায়েয গণ্য হবে, যদি হায়েযের সময় না হয় ইস্তেহাযাহ গণ্য হবে, তাই চল্লিশ দিন পার হলে ইবাদত ত্যাগ করবে না। মূল : ড. সালেহ ইবনে ফাওজান ভাষান্তর : মাওলানা মনযূরুল হক


======================


প্রশ্ন: জনাব, সমত্মান প্রসবের পর মহিলাদের যে ওযর দেখা দেয়, (যাকে নেফাস বলা হয়) আমি যতটুকু জানি আলেমদের মতে তার সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন। আমার জানা মতে অধিকাংশ আলেমের মাযহাব এটাই যে, চল্লিশ দিনের আগে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যাবে, এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায-রোযা আদায় করতে পারবে। আর চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হলে অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্ত ইস্তেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে।  এ ক্ষেত্রে সে নামায আদায় করা শুরু করে দিবে।

আমার প্রশ্ন হল, এই মাসআলার দলীল কী? হাদীসে তো চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকার’ কথা এসেছে। চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হয়ে যাবে- এমন কথা আমি কোনো সহীহ হাদীসে পাইনি। হাঁ, কিছু যয়ীফ রেওয়ায়েতে إلا إلا أن ترى الطهر قبل ذلك   (তবে যদি চল্লিশ দিনের পূর্বেই পবিত্রতা দেখতে পায়) বাক্যটি এসেছে। কিন্তু সহীহ হাদীসে আমি এ কথা পাইনি।

এ কথা বলা কঠিন যে, ইমামগণের সবাই এ হাদীসের এই উদ্দেশ্যই বুঝেছেন যে, চল্লিশ দিন হল সর্বোচ্চ সময়সীমা, (নির্দিষ্ট সময়সীমা নয়) কেননা ইবনুল জারুদের ‘আল মুন্তাকায়’ সাহাবী হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর আমল বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে স্ত্রী সহবাস করতেন না। বোঝা গেল, হাদীসের এই অর্থ অর্থাৎ চল্লিশ দিন নির্দিষ্ট সময়সীমা না হয়ে সর্বোচ্চ সময়সীমা হওয়া- এটি সর্বসম্মত মত নয়। তাহলে এই হুকুমের সূত্র কী? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

-আব্দুল্লাহ, মিরপুর, ঢাকা

 

উত্তর: আপনাকে মোবারকবাদ, মাশাআল্লাহ একটি মাসআলা বোঝার জন্য আপনি অনেক মেহনত করেছেন।   إلا أن ترى الطهر قبل ذلك স্পষ্টভাবে না পেয়ে আপনি চিন্তিত হয়েছেন। বস্তুত إلا أن ترى الطهر قبل ذلك অংশটি যে রেওয়ায়েতগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়নি ঐ রেওয়ায়েতগুলোতেও এ অংশটি ধর্তব্য। হাদীসের শব্দ- كانت النفساء تجلس على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم أربعين يوما (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকতেন’।) এখানে ‘বসে থাকা’র অর্থ হল, ‘অপেক্ষা করা’। অর্থাৎ তারা এই অপেক্ষায় থাকবে যে, কখন রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, যেন নামায শুরু করা যায়। রক্ত বন্ধ হলে (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে। তবে এই অপেক্ষার সময়সীমা বলে দেওয়া হয়েছে চল্লিশ দিন। অর্থাৎ চল্লিশ দিনের অধিক অপেক্ষা করবে না। যদি তারপরও রক্ত বন্ধ না হয় তবুও (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে।

উল্লেখিত হুকুম বর্ণনা করার সময় অনেক সাহাবা ও তাবেঈগণ تجلس শব্দের স্থানে تنتظر বা تربص শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ‘অপেক্ষা করবে’। এটা (‘অপেক্ষা করবে’) মূলত ঐ হাদীসেরই ব্যাখ্যা যাতে ‘বসে থাকবে’ শব্দ এসেছে। উদাহরণত, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিআল্লাহু আনহু, আনাস রাযিআল্লাহু আনহু প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম এবং হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ, আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহ, ও যাহহাক ইবনে মুযাহিম রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ তাবেঈনদের আছার ও উক্তিসমূহ হাদীসের কিতাবগুলোতে تنتظر বা تربص শব্দে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১/৩১২-৩১৩ (১১৯৭-১২০০); মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৯/৪১৭ (১৭৭৪১); আল আওসাত, ইবনুল মুনযির, ২/৩৭৬-৩৭৭ (৮২৪-৮২৮);  মুসনাদে দারেমী ৫/১৯১ (১০৪৪, ১০৪৫) (ফতহুল মান্নানসহ)

দ্বিতীয়ত আল মুন্তাকা ইবনুল জারুদের উদ্ধৃতিতে হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর যে রেওয়ায়েতের কথা আপনি বলেছেন তাতে যদিও চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হওয়ার হুকুম উলেস্নখ নেই কিন্তু মুসনাদে দারেমী ৫/১৮৫ (১০৩৭) ও ইবনুল মুনযির রচিত আল আওসাতে ২/৩৭৬ (৮২৫) হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.- এরই একটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যাতে এ  বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসনাদে দারেমীর রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

 أخبرنا جعفر بن عون أنا إسماعيل بن مسلم، عن الحسن عن عثمان بن أبي العاص، قال: وقت النفساء أربعين يوما، فإن طهرت وإلا فلا تجاوزه حتى تصلي.

 ‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাদের সময়সীমা চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগেই পবিত্র হয়ে যায়, (তাহলে  পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে।) অন্যথায় চল্লিশ দিন পর নামায শুরু করতে বিলম্ব করবে না।’’

এই রেওয়ায়েতের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য।

ইবনুল মুনযিরের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

حدثنا يحيى (ابن محمد) ، ثنا أحمد بن يونس، ثنا زائدة، عن هشام عن الحسن عثمان ابن أبي العاص قال: تمكث النفساء أربعين ليلة إلا أن ترى الطهر قبل ذلك.

‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ রাত অবস্থান করবে। তবে যদি এর আগে পবিত্রতা দেখে।’’

এর বর্ণনাকারীগণও সবাই  নির্ভরযোগ্য।

অতএব জুমহুর ফুকাহায়ে কেরামের যে মাযহাব আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন তা দলীলের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী।


(মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক)

মূল লিংক

প্রশ্ন: ৪৪৮ : রোগ / অসুস্থতা সম্পর্কে ইসলামের ধারণা ।

    আল্লাহ তায়ালা মাঝে মধ্যে রোগ-বালাই দিয়ে বান্দার ঈমানের দৃঢ়তা বা ওজন পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখতে চান, বিপদ-আপদকালীন সময়ে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কে বা কারা, তাঁর উপর অবিচল আস্থা বা বিশ্বাস রেখে, ধৈর্য্যের সাথে সামনের দিকে এগিয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।’ (সূরা বাকারা:১৫৫)। ‘আর ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি।’ (সূরা আম্বিয়া:৩৫)।

মানুষের ভালো-মন্দ উভয়ের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সমভাবে ক্ষমতাবান। আমরা অসুস্থ হলে, তিনিই আমাদের সুস্থতা দান করেন। রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে চিকিৎসক শুধুমাত্র চেষ্টা করতে পারেন। মানুষ একে অপরের জন্য কেবল মাত্র দোয়া করতে পারে। আরোগ্য দানের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তায়ালার দয়ার উপর নির্ভর করে। আল্লাহর সাহায্য বা দয়া ব্যাতিত কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে কারোরই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কারো উপর আযাব গজব দান করেন, কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা স্পর্শ করান, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান।’ (সূরা আনআ’ম:১৭-১৮)। ‘কে আছে অসহায় ও বিপন্নের ডাকে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে এবং কষ্ট ও বিপদ দূরীভ‚ত করে দেয়?’ (সূরা নামল:৬২)।
আল্লাহ ছাড়া যেমন, মানুষের কোনো সাহায্যকারী নেই। তেমনি দুনিয়া এমন কোনো রোগ নেই, যে রোগের ঔষধ বা প্রতিষেধক সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেন নাই। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি। যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বোখারি: ৫২৭৬)।
যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তা দান করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা রোগ-বালাইর মধ্যেও মানুষের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। দুনিয়াতে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই মানুষের উপকারার্থে। এজন্যে পানি, বৃক্ষ- লতা, রোদ-বৃষ্টি ও ফলফলাদি থেকে শুরু করে সবকিছুর মাঝেই ঔষধি গুণ ক্ষমতা রয়েছে। যখন মানুষের মধ্যে বালা-মুসিবতের আগমণ ঘটে। তখন আল্লাহ তায়ালা বালা-মুসিবতের পাশাপাশি বান্দার জন্য কল্যাণও পাঠিয়ে দেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন.‘মুসলমানের উপর যেসব বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত পতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও তার গোনাহ মাফ হয়।’ (বোখারি:৫২৩৮)।
যখনই আমাদেরকে কোনো রোগ-ব্যাধি আক্রমণ করবে। তখন কঠিন ইস্পাতের ন্যায় অন্তরে আল্লাহর রহমতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহর নিকট আরোগ্য লাভের জন্য সাহায্য চাইতে হবে। অতীত জীবনের ভ‚ল-ক্রুটির জন্য বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার পড়তে হবে। তাহলে আল্লাহ অবশ্যই কঠিন রোগ-বিমার থেকে শেফা দান করবেন। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন দান করুক। আমীন।

===============================

আধুনিক যুগে আরাম-আয়েশ ও রোগমুক্তির উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য সত্ত্বেও আমরা রোগব্যাধিকে হার মানাতে পারছি না। নতুন রোগ আসছে আর বেড়ে চলেছে অস্থিরতা।

একজন মুসলমান হিসেবে আমরা যদি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল-কুরআন এর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “আমি কোরআনে এমন বস্তু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত। ” (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮২)

তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা কি রহমত-বরকত অন্বেষণ করছি! হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যারা আল-কুরআন এর পথে চলছে, তারা কি অসুস্থ হবে না? আমরা সুস্থ থাকার জন্য কত কিছুই না করি! যারা কখনো অসুস্থ হননা তারা হয়ত অবাক হবেন কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, ‘দোজখি লোক দেখার যাদের ইচ্ছা থাকে, তাদের বলো, যার কোনো দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে। ’ অর্থাৎ অসুস্থতাও আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এখন যদি বলি অসুস্থতা-সুস্থতা দু’টিই আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাহলে আমরা অযথা ওষুধ খাচ্ছি কেন? ওষুধের কি কোনো ক্ষমতা নেই! হযরত মুসা (আ.) এক বার পীড়িত হয়েছিলেন। ইসরাইল বংশীয় অভিজ্ঞ লোকেরা বলেছিল, ‘অমুক দ্রব্য এ রোগের ওষুধ, আপনি তাহা ব্যবহার করেন’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ওষুধ সেবন করবো না, স্বয়ং আল্লাহ আমাকে আরোগ্য করবেন। ’ তার রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তিনি কিছুতেই ওষুধ সেবনে সম্মত হলেন না, পীড়াও দূর হলোনা। ইতিমধ্যে ‘ওহী’ নাজেল হলো, ‘হে মুসা! আমি নিজের গৌরবের শপথ করে বলছি, ‘‘তুমি যতোদিন ওষুধ সেবন না করবে, আমি ততোদিন কিছুতেই তোমাকে আরোগ্য করবো না। অতঃপর তিনি ওষুধ সেবন করে স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাদিস শরিফে আছে, হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! রোগ কি কারণে আর আরোগ্যই বা কি কারণে ঘটে?’ উত্তর এসেছিল, ‘উভয়ই আমার আদেশে ঘটে’ । তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চিকিৎসক তবে কোনো কাজের জন্য হয়েছে? উত্তর এলো, ‘কতগুলো লোক চিকিৎসা কার্যে, ওষুধের উপলক্ষে জীবিকা পাবে এবং আমার বান্দাদের প্রফুল্ল রাখবে এ উদ্দেশে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। ’ অর্থাৎ মানুষের উচিত, যিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি যেন ভরসা করে, ওষুধের ওপর যেন কিছুমাত্র ভরসা না করে, কেননা বহুলোক ওষুধ সেবন করেও মারা যাচ্ছে। (সৌভাগ্যের পরশমনি, ইমাম গাযযালী (র.) )

আল্লাহ তা’আলা যে বান্দার মঙ্গলের জন্য রোগ দেন এই কথাটাই আমরা মানতে নারজ বরং একটু অসুস্থ হলেই আমরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন। ”

সুতরাং রোগমুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোনো এক সাহাবি তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিয়ে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবি বললেন, অসুখ আগের মতো বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এলো যে, অসুখের কোনো পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে ওষুধ দ্রুত কাজ করেনি। ’’ এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (তফসীর মা’ আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা-৭৪৭)

বান্দার মেজাজ বা ধারণার ওপর আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা নির্ভর করে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “মৌমাছির পেট থেকে রং বেরংয়ের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আন-নাহল, আয়াত ৬৯) আল্লাহ তা’আলা যে জীবন বিধান দিয়েছেন তাই মানুষের সমগ্র জীবনের সর্বদিকের ওষুধ। রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসক, রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ এবং সঠিক সেবনবিধি। এ চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রোগের চিকিৎসা। আল্লাহ তা’আলা রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি) সবশেষে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উক্তির মাধ্যমে লেখা শেষ করবো তা হলো, “তোমরা দু’টি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু (আহার্যের মধ্যে) এবং অপরটি আল কুরআন (কিতাবসমূহের মধ্যে) (মিশকাত শরীফ)। খাদ্যের মধ্যে  আরেকটি হচ্ছে কালোজিরা ।  এটিও শেফাদানকারী হিসেবে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

প্রশ্ন: ৪৪৭ : আযানের জওয়াব / দোয়া - এর হাদীস সমূহ।

১। সুনানে আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)- ৫২৩  নং হাদীস :  


باب مَا يَقُولُ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَلَمَةَ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنِ ابْنِ لَهِيعَةَ، وَحَيْوَةَ، وَسَعِيدِ بْنِ أَبِي أَيُّوبَ، عَنْ كَعْبِ بْنِ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِي إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ تَعَالَى وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ اللَّهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ عَلَيْهِ الشَّفَاعَةُ ‏"‏ ‏.‏ 


পরিচ্ছেদঃ ৪১. মুআযযিনের আযানের জবাবে যা বলতে হয়।

৫২৩. মুহাম্মাদ ইবনু সালামা .... আবদুল্লাহ্ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেনঃ যখন তোমরা মুআযযিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে- তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আযান শেষে) আমার প্রতি দরূদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে- আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর এবং ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ্ তা’আলার একজন বিশিষ্ট বান্দা ঐ স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে তাঁর জন্য শাফা’আত করা আমার উপর ওয়াজিব হবে। (মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী)।


২।  সুনানে আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) - ৫২৫ নং হাদীস : 


باب مَا يَقُولُ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ الْحُكَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا غُفِرَ لَهُ ‏"‏ ‏.



পরিচ্ছেদঃ ৪১. মুআযযিনের আযানের জবাবে যা বলতে হয়।

৫২৫. কুতায়বা ইবনু সাঈদ .... সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ “আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রাদীতু বিল্লাহে রব্বান ওয়া বি-মুহাম্মাদিন রাসূলান ওয়া বিল-ইসলামে দ্বীনান” তার সমস্ত (সগীরা) ণ্ডনাহ্ মাফ হয়ে যাবে। (মুসলিম, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ)।



৩। বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) - ৫৮৭ নং হাদীস : 


باب الدُّعَاءِ عِنْدَ النِّدَاءِ

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ ‏"‏‏.‏




পরিচ্ছেদঃ ৪০০। আযানের দু'আ

৫৮৭। আলী ইবনু আইয়্যাশ (রহঃ) ... জাবির ইবনু আবদুল্লাহ‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যাক্তি আযান শুনে দু’আ করেঃ ‘হে আল্লাহ-এ পরিপূর্ণ আহবান ও সালাতের প্রতিষ্ঠিত মালিক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওয়াসীলা ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন এবং তাঁকে সে মাকেমে মাহমূদে পৌছিয়ে দিন যার অঙ্গিকার আপনি করেছেন’- কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে।



৪।  তিরিমিযী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) - 210 নং হাদীস : 

باب مَا جَاءَ مَا يَقُولُ الرَّجُلُ إِذَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ مِنَ الدُّعَاءِ

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ الْحُكَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ اللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ حُكَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ ‏.


পরিচ্ছেদঃ মু'আযযিনের আযানের পর দু'আ।

২১০. কুতায়বা (রহঃ) .... সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন মু'আযযিনের আযান শুনে যে ব্যাক্তি নিম্নের দু'আটি পড়বে আল্লাহ তাআলা তাঁর গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। দুআটি হলঃ

وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ قَالَ أَبُو عِيسَى وَهَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ لَا نَعْرِفُهُ إِلَّا مِنْ حَدِيثِ اللَّيْثِ بْنِ سَعْدٍ عَنْ حُكَيْمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قَيْسٍ

- ইবনু মাজাহ ৭২১, মুসলিম, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১০ [আল মাদানী প্রকাশনী]


=================================================




সংজ্ঞা : ‘আযান’ অর্থ, ঘোষণা ধ্বনি । পারিভাষিক অর্থ, শরী‘আত নির্ধারিত আরবী বাক্য সমূহের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ে উচ্চকণ্ঠে ছালাতে আহবান করাকে ‘আযান’ বলা হয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন : ‘যখন তোমরা সালাতের দিকে আহবান কর, তখন তারা (মুশরিকরা) এ নিয়ে ঠাটা বিদ্রুপ ও কৌতুক করে। তা এ জন্য যে, তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা উপলব্ধি করে না’। – [সূরা মায়িদা : ৫৮]

আল্লাহ তা’আলা আরোও বলেন : ‘ওহে যারা ঈমান এনেছ! যখন জুমু’আর দিনে নামাযের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণে তাড়াতাড়ি করবে ও বেচা-কেনা বন্ধ রাখবে। এইটিই হচ্ছে তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে’। – [সূরা জুমু’আ : ৯]

আযানের ফযীলত সম্পর্কিত সহীহ হাদিস সমূহ:
১. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান হাওয়া ছেড়ে পলায়ণ করে, যাতে সে আযানের শব্দ না শোনে। যখন আযান শেষ হয়ে যায়, তখন যে আবার ফিরে আসে। আবার যখন সালাতের জন্য ইকামত বলা হয়, তখন আবার দূরে সরে যায়। ইকামত শেষ হলে সে পুনরায় ফিরে এসে লোকের মনে কুমন্ত্রণা দেয় এবং বলে এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, বিস্মৃত বিষয়গুলো সে স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে লোকটি এমন পর্যায়ে পৌছে যে, সে কয় রাকাআত সালাত আদায় করেছে তা মনে করতে পারে না। [সহীহ বুখারী শরীফ -ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৫৮১, তাওহীদ পাবলিকেশন : ৬০৮]

২. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আবদুর রহমান আনসারী মাযিনী (র._ থেকে বর্ণিত যে, আবূ সায়ীদ খুদরী (রা.) তাকে বললেন, আমি দেখছি তুমি বকরী চরানো এবং বন-জঙ্গলকে ভালবাস। তাই তুমি যখন বকরী নিয়ে থাক, বা বন-জঙ্গলে থাক এবং সালাতের জন্য আযান দাও, তখন উচ্চকন্ঠে আযান দাও। কেননা, জিন, ইনসান বা যে কোন বস্তুই যতদূর পর্যন্ত মুয়াযযিনের আওয়ায শুনবে, যে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে। আবূ সায়ীদ (রা.) বলেন, একথা আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে শুনেছি। [বুখারী শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন : ৫৮২, তাওহীদ পাবলিকেশন : ৬০৯]

৩. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন যে, ‘ক্বিয়ামতের দিন মুওয়ায্যিনের গর্দান সবচেয়ে উঁচু হবে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৫৪।]

৪. মুওয়ায্যিনের আযান ধ্বনির শেষ সীমা পর্যন্ত সজীব ও নির্জীব সকল বস্ত্ত তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে। ঐ আযান শুনে যে ব্যক্তি ছালাতে যোগ দিবে, সে ২৫ ছালাতের সমপরিমাণ নেকী পাবে। মুওয়ায্যিনও উক্ত মুছল্লীর সমপরিমাণ নেকী পাবে এবং তার দুই আযানের মধ্যবর্তী সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করা হবে’। [নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/৬৬৭।]

৫. যে ব্যক্তি বার বছর যাবৎ আযান দিল, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। তার প্রতি আযানের জন্য ৬০ নেকী ও এক্বামতের জন্য ৩০ নেকী লেখা হয়’। [ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬৭৮।]

আযানের কালেমা সমূহ :১৫ টি
১. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — ২ বার
২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই)—২ বার
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল)—২ বার
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ (অর্থ : ছালাতের জন্য এসো) — ২ বার
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ (অর্থ : কল্যাণের জন্য এসো) — ২ বার
৬. আল্লা-হু আকবার (অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়) — ২ বার
৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ (অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই) — ১ বার
৮. ফজরের আযানের সময় “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ” – এর পরে “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” (নিদ্রা হ’তে ছালাত উত্তম)_ _ _ ২ বার বলবে।

আযান দেওয়ার সময় কানে আঙ্গুল দেওয়া ও মুখ ডানে বামে ঘুরানোঃ
১. আওন ইবনু আবূ জুহাইফা (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেন, আমি বিলাল (রাঃ) কে আযান দিতে দেথলাম এবং তাকে এদিক সেদিক ঘুরতে ও মুখ ঘুরাতে দেখলাম। তার (দুই হাতের) দুই আঙ্গুল উভয় কানের মধ্যে ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার রঙ্গীন তাবুর মধ্যে ছিলেন। (রাবী বলেন) আমার ধারণা, তিনি (আবূ জুহাইফা) বলেছেন, এটা চামড়ার তাবু ছিল। বিলালা (রাঃ) ছোট একটা বর্শা নিয়ে সামনে আসলেন এবং তা বাতহার শিলাময় যমিনে গেড়ে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এটা সামনে রেখে নামায আদায় করলেন। তার সামনে দিয়ে কুকুর এবং গাধা চলে যেত। তার গায়ে লাল চাদর ছিল। আমি যেন তার পায়ের গোছার উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি। সুফিয়ান বলেন, আমার মনে হয় এটা ইয়ামানের তৈরী চাদর ছিল। [সহীহ আত-তিরমিযি হাদিস/১৯৭, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭১১]

২. মুহাম্মদ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ জুহায়ফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বিলাল (রা.) কে আযান দিতে দেখেছেন। (এরপর তিনি বলেন) তাই আমি তার (বিলালের) ন্যায় আযানের মাঝে মুখ এদিকে সেদিকে (ডানে বামে) ফিরাই। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৬০৬, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬৩৪]

৩. মুওয়াযযিন ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে উচ্চকণ্ঠে আযান দিবে। দুই কানে আংগুল প্রবেশ করাবে, যাতে আযানে জোর হয়। ‘হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ ও ফালা-হ’ বলার সময় যথাক্রমে ডাইনে ও বামে মুখ ঘুরাবে, দেহ নয়। [বুখারী, মুসলিম, ছহীহ ইবনু খুযায়মা, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ৪১ অনুচ্ছেদ; তিরমিযী প্রভৃতি, ইরওয়া, ১/২৪০, ৪৮, ৫১ পৃঃ; নায়লুল আওত্বার ২/১১৪-১৬] অসুস্থ হ’লে বসেও আযান দেওয়া যাবে। [বায়হাক্বী, ইরওয়া ১/২৪২ পৃঃ।]

আযানের জবাব কিভাবে দিতে হবে :
আযানের বাক্য – – – – – আযানের জবাব
১. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার—২ বার
২. আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ —আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ — ২ বার
৩. আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ —আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ— ২ বার
৪. হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার
৫. হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ — লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ — ২ বার
৬. আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার — ১ বার
৭. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ —লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ — ১ বার
৮. ফজরের আযানের সময় “হাইয়া ‘আলাল ফালা-হ” – এর পরে “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — “আছছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম” — ২ বার

আযানের এর ক্ষেত্রে বিদআত/পরিহার্য্য বিষয় সমূহঃ
১. ফজরের আযানে ‘আছ ছালা-তু খায়রুম মিনান নাঊম’-এর জওয়াবে ‘ছাদাক্বতা ওয়া বারারতা’ বলার কোন ভিত্তি নেই। [মির‘আত ২/৩৬৩, হা/৬৬২-এর ভাষ্য দ্রষ্টব্য।]

২. এমনিভাবে এক্বামত-এর সময় ‘ক্বাদ ক্বা-মাতিছ ছালা-হ’-এর জওয়াবে‘আক্বা-মাহাল্লা-হু ওয়া আদা-মাহা’ বলা সম্পর্কে আবুদাঊদে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’। [আবুদাঊদ হা/৫২৮; ঐ, মিশকাত হা/৬৭০; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল হা/২৪১, ১/২৫৮-৫৯ পৃঃ।]

৩. ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ -এর জওয়াবে ‘ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ বলারও কোন দলীল নেই।

আযানের জবাব দেওয়ার ব্যাপারে সহীহ দলিল সমূহঃ
১. আবদুল্লাহ ইবন ইউসুফ (র.) _ _ _ আবূ সায়ীধ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনতে পাও তখন মুআযযিন যা বলে তোমরাও তার অনুরুপ বলবে। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৪, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১১]

২. ইসহাক ইবন রাহওয়াই (র.) _ _ _ ইয়াহইয়া (র.) থেকে অনুরুপ বর্ণিত আছে। ইয়াহইয়া (র.) বলেছেন, আমার কোন ভাই আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, মুআযযিন যখন “হাইয়া ‘আলাছ ছালা-হ” বলল, তখন তিনি (মু’আবিয়া (রা.)) “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াত্তা ইল্লা বিল্লাহ” বললেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের নবী (সাঃ) কে আমরা এরুপ বলতে শুনেছি। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৬, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১৩]

৩. ইবনুস সারহ _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! মুআযযিনরা তো আমাদের উপর ফযীলত প্রাপ্ত হচ্ছে (আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হচ্ছে)। আমরা কিভাবে তাদের সমান ছওয়াব পাব? তিনি বলেনঃ মুআযযিনরা যেরুপ বলে – তুমিও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর যখন আযান শেষ করবে, তখন আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তুমিও তদ্রুপ ছওয়ার প্রাপ্ত হবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৪]

৪. মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্না _ _ _ উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যখন মুআযযিন আযানের সময় আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলবে, তখন তোমরাও আল্লাহু আকবার বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে তখন তোমরাও আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলবে। অতঃপর মুআযযিন যখন “হাইয়া আলাস সালাহ্” বলবে তখন তোমরা বলবে, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতপর মুআযযিন যখন “হাইয়া আলাল ফালাহ” বলবে তখন তোমরা বলবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অতঃপর মুআযযিন যখন আল্লাহু আকবার বলবে তখন তোমরা আল্লাহু আকবার বলবে, অতঃপর মুআযযিন যখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তখন তোমরাও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। তোমরা যদি আন্তারিকভাবে এরুপ বল তবে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৭]

আযান ও আযানের জবাব শেষে সহীহ দোয়া সমূহঃ
১. আযানের জওয়াব দান শেষে প্রথমে দরূদ পড়বে। অতঃপর আযানের দো‘আ পড়বে।

২. আযানের দোয়াঃ “আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ।

৩. মুয়াযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা।

আযানের দোয়া সম্পর্কিত সহীহ দলিল সমূহঃ
১. মুহাম্মাদ ইবন সালামা _ _ _ আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সাঃ) কে বলতে শুনেছেনঃ যখন তোমরা মুআযযিনকে আযান দিতে শুনবে তখন সে যেরুপ বলে –তোমরাও তদ্রুপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আযান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর এরবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওসীলা প্রার্থনা কর এবং ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ তা’আলার একজন বিশিষ্ট বান্দা ঐ স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলার দু’আ করবে তার জন্য শাফাআত করা আমার উপর ওয়াজিব হবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৩]

২. কুতায়বা ইবন সাঈদ _ _ _ ইবন আবু ওয়াককাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযান শুনার পর বলবেঃ “আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু, রযীতু বিল্লা-হি রব্বা ওয়া বিমুহাম্মাদির রসূলা, ওয়া বিল ইসলামি দ্বীনা” – তার সমস্ত (সগীরা) গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। [সহীহ আবু দাউদ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫২৫]

৩. আলী ইবন আইয়্যাশ (র.) _ _ _ জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনে দু’আ করে : “আল্লাহুম্মা রব্বা হা-যিহিদ দা’ওয়াতিত তা-ম্মাহ ওয়াস্বলা-তির ক্ব-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফায্বীলাহ, ওয়াব’আছহু মাক্ব-মাম মাহ:মূদানিল্লাযী ওয়া’আত্তাহ”। — কিয়ামতের দিন সে আমার শাফা’আত লাভের অধিকারী হবে। [সহীহ বুখারী শরীফ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন : হাদিস/৫৮৭, তাওহীদ পাবলিকেশন : হাদিস/৬১৪] [সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১১]

৪. সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনে বলবে, “ওয়া আনা আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু রাযীতু বিল্লাহি রাব্বান ওয়া বিল-ইসলামি দীনান ওয়া বি মুহাম্মাদিন রাসূলান” আল্লাহ তা’আলা তার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। [ সহীহ আত তিরমিযি হাদিস/২১০, সহীহ ইবনু মাজাহ হাদিস/৭২১]

আযানের দো‘আয় বাড়তি/বিদআত বিষয় সমূহঃ
১. মনে রাখা আবশ্যক যে, আযান উচ্চৈঃস্বরে দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু উচ্চৈঃস্বরে আযানের দো‘আ পাঠ করা বিদ‘আত। অতএব মাইকে আযানের দো‘আ পাঠের রীতি অবশ্যই বর্জনীয়। আযানের অন্য দো‘আও রয়েছে।

২. বর্তমানে রেডিও বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে প্রচারিত আযানের দো‘আয় ‘ওয়ারঝুক্বনা শাফা‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাহ’ বাক্যটি যোগ করা হচ্ছে। যার কোন শারঈ ভিত্তি জানা যায় না। এছাড়া ওয়াল ফাযীলাতা-র পরে ওয়াদ্দারাজাতার রাফী‘আতা এবং শেষে ইন্নাকা লা তুখলিফুল মী‘আ-দ যোগ করা হয়, যা পরিত্যাজ্য।

৩. মাইকে আযানের দো‘আ পাঠ করা,অতঃপর শেষে লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লা-হ,ছাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলার ব্যাপারে কোন হাদিস কোথায় খুজে পাওয়া যায় না।

আযানের অন্যান্য মাসায়েলঃ
১. আযানের উদ্দেশ্য হবে স্রেফ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এজন্য কোন মজুরী চাওয়া যাবে না। তবে বিনা চাওয়ায় ‘সম্মানী’ গ্রহণ করা যাবে। কেননা নিয়মিত ইমাম ও মুওয়াযযিনের সম্মানজনক জীবিকার দায়িত্ব গ্রহণ করা সমাজ ও সরকারের উপরে অপরিহার্য কর্তব্য। [আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ]

২. আযান ওযূ অবস্থায় দেওয়া উচিত। তবে বে-ওযূ অবস্থায় দেওয়াও জায়েয আছে। আযানের জওয়াব বা অনুরূপ যেকোন তাসবীহ, তাহলীল ও দো‘আ সমূহ এমনকি নাপাক অবস্থায়ও পাঠ করা জায়েয আছে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৫১-৫২।]

৩. এক্বামতের পরে দীর্ঘ বিরতি হ’লেও পুনরায় এক্বামত দিতে হবে না। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮৯, ৯২ পৃঃ ;ছালাতুর রাসূল,তাখরীজ :আব্দুর রঊফ,১৯৮ পৃঃ।]

৪.ক্বাযা ছালাত জামা‘আত সহকারে আদায়ের জন্য আযান আবশ্যিক নয়। কেবল এক্বামতই যথেষ্ট হবে। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮৪, ‘দেরীতে আযান’ অনুচ্ছেদ-৬;মির‘আত ২/৩৮৭]

৫. আযান ও জামা‘আত শেষে কেউ মসজিদে এলে কেবল এক্বামত দিয়েই জামা‘আত ও ছালাত আদায় করবে। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯১ ‘আযান’ অধ্যায়,মাসআলা-১৮।]

৬. যিনি আযান দিবেন,তিনিই এক্বামত দিবেন। অন্যেও দিতে পারেন। অবশ্য মসজিদে নির্দিষ্ট মুওয়াযযিন থাকলে তার অনুমতি নিয়ে অন্যের আযান ও এক্বামত দেওয়া উচিত। তবে সময় চলে যাওয়ার উপক্রম হ’লে যে কেউ আযান দিতে পারেন। [ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৯০,৯২ পৃঃ;মাসআলা-১৩,২০।]

সাহারীর আযানঃ
সাহারীর আযান দেওয়া সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় তাহাজ্জুদ ও সাহারীর আযান বেলাল (রাঃ) দিতেন এবং ফজরের আযান অন্ধ ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) দিতেন। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘বেলাল রাত্রি থাকতে আযান দিলে তোমরা (সাহারীর জন্য) খানাপিনা কর, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেয়। কেননা সে ফজর না হওয়া পর্যন্ত আযান দেয় না’। [মিশকাত হা/৬৮০] তিনি আরও বলেন, ‘বেলালের আযান যেন তোমাদেরকে সাহারী খাওয়া থেকে বিরত না করে। কেননা সে রাত্রি থাকতে আযান দেয় এজন্য যে, যেন তোমাদের তাহাজ্জুদ গোযার মুছল্লীগণ (সাহারীর জন্য) ফিরে আসে ও তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিগণ (তাহাজ্জুদ বা সাহারীর জন্য) জেগে ওঠে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৬৮১]এটা কেবল রামাযান মাসের জন্য ছিল না। বরং অন্য সময়ের জন্যও ছিল। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় অধিক সংখ্যক ছাহাবী নফল ছিয়াম রাখতেন। [মির‘আত ২/৩৮২, হা/৬৮৫-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।]

আজও রামাযান মাসে সকল মসজিদে এবং অন্য মাসে যদি কোন মসজিদের অধিকসংখ্যক প্রতিবেশী নফল ছিয়ামে যেমন আশূরার দু’টি ছিয়াম, আরাফাহর একটি ছিয়াম, শাওয়ালের ছয়টি ছিয়াম ও তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হন, তাহ’লে ঐ মসজিদে নিয়মিতভাবে উক্ত আযান দেওয়া যেতে পারে। যেমন মক্কা ও মদীনায় দুই হারামে সারা বছর দেওয়া হয়ে থাকে।

সুরূজী প্রমুখ কিছু সংখ্যক হানাফী বিদ্বান রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানার উক্ত আযানকে সাহারীর জন্য লোকজনকে আহবান ও সরবে যিকর বলে দাবী করেছেন। ছহীহ বুখারীর সর্বশেষ ভাষ্যকার হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, এই দাবী ‘মারদূদ’ বা প্রত্যাখাত। কেননা লোকেরা ঘুম জাগানোর নামে আজকাল যা করে, তা সম্পূর্ণরূপে ‘বিদ‘আত’ যা ধর্মের নামে নতুন সৃষ্টি। উক্ত আযান-এর অর্থ সকলেই ‘আযান’ বুঝেছেন। যদি ওটা আযান না হয়ে অন্য কিছু হ’ত, তাহ’লে লোকদের ধোঁকায় পড়ার প্রশ্নই উঠতো না। আর রাসূল (ছাঃ)-কেও সাবধান করার দরকার পড়তো না। [ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহ বুখারী ‘ফজরের পূর্বে আযান’ অনুচ্ছেদ ২/১২৩-২৪]


মূল লিংক 







প্রশ্ন: ৪৪৬ : কবর পাকা করা নিষেধ সংক্রান্ত হাদীস ।

 ১। 

মুসলিম শরীফ : 2137 : 

পরিচ্ছেদঃ ৩২. কবরে চুনকাম করা এবং এর উপর অট্টালিকা নির্মাণ প্রসঙ্গে

২১৩৭-(৯৫/...) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৬, ইসলামীক সেন্টার ২১১৯)

باب النَّهْىِ عَنْ تَجْصِيصِ الْقَبْرِ، وَالْبِنَاءِ، عَلَيْهِ ‏‏

وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نُهِيَ عَنْ تَقْصِيصِ الْقُبُورِ، ‏.‏


২। 

সুনানে নাসায়ী : 2027 :-2028

জাবির রা: থেকে বর্ণিত রাসুল সা: কবরে পাকা ঘর নির্মাণ, কবরকে বর্ধিতকরণ এবং চুনকাম করা থেকে নিষেধ করেছেন। সুলায়মান ইবনে মূসা (রহ:) এর বর্ণনায় একথাটি অতিরিক্ত রয়েছে, “তিনি কবরের উপর লেখা থেকেও নিষেধ করেছেন”। 


৩।  তিরমিযী ১০৫২ : সহিহ হাদীস : 

জাবির রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কবর পাকা করতে, তার উপর কোন খিছু লিখতে বা কিছু নির্মাণ করতে এবং তা পদদলিত করতে রাসুল সা: নিষেধ করছেন।  - (সহীহ, আহকুমুল জানায়িজ-২০৪, তাহযীরাস সাজিদ - ৪০, লিখতে নিষেধ করেছেন ব্যতীত, মুসলিম। 

৪। সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৫৬২ : জাবির রা: থেকে বর্ণিত রাসুল সা: কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। 

৫ ও ৬ । 

এছাড়াও একই মর্মার্থ সম্বলিত হাদীস : রিয়াদুস সালেহীন ১৭৭৬, বুলুগুল মারাম ৫৮০, নম্বর হাদীসেও এসেছে। 

-------------------------------------------------------

বুযুর্গদের কবর পাকা বলে কি কবর পাকা করা জায়েজ হয়ে যাবে?

প্রশ্ন

নাম:মুহাম্মদ ওসমান গনি। জেলা: চট্টগ্রাম।।

প্রশ্ন- কবর পাকা করা নাজায়েজ বলা হয়।কিনতু দেখা যায় পূর্ববর্তী বূযুর্গদের হয়তো একটি কবর নেই পাকা ছাড়া।।আমার প্রশ্ন হলো কবর পাকা করা অনেক আগে থেকে শুরু হয়ছে কিনতু তৎকালীন আলেমরা কি এর প্রতিরোধ করেছেন।।অনেক বিখ্যাত ইমামদের কবর পাকা করার সময় অনেক বিখ্যাত ইমাম পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন।।তারা কি তাদের কোন কিতাবে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন?? হযরত শাহ ওয়ালীউললাহ(রহঃ) এর আমলে ও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে।।কিনতু তিনি কি এর প্রতিবাদ করেছেন?? হযরত মইনুদ্দিন চিশতি (রহঃ) এর কবর পাকা করার সময় কি কোন প্রতিবাদ হয়েছে??

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কবর পাকা করার নিষেধাজ্ঞা রাসূল সাঃ থেকে জারি হয়েছে। পরবর্তী খাইরুল কুরুনেও এ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন বিজ্ঞ ফুক্বাহা, মুহাদ্দিসগণ।

কারা কবর পাকা করাতে নিষেধ করেছেন তার একটি ছোট্ট তালিকা নিচে প্রদত্ব করা হল।

রাসূল সাঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ

হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ কবরে চুনকাম করতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে, এবং কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭০}

عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ

হযরত আবুল হাইয়াজ আসাদী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হযরত আলী রাঃ আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাবো না, যে কাজে রাসূল সাঃ আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ঐ কাজ এই যে, কোন মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে। {মুসলিম, হাদীস নং-৯৬৯}

ইমাম আবু হানীফা রহঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন!

ইমাম মুহাম্মদ রহঃ তার সংকলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন-

وَنَكْرَهُ أَنْ يُجَصَّصَ أَوْ يُطَيَّنَ، أَوْ يُجْعَلَ عِنْدَهُ مَسْجِدٌ، أَوْ عَلَمٌ، أَوْ يُكْتَبُ عَلَيْهِ، وَنَكْرَهُ الْآجُرَ أَنْ يُبْنَى بِهِ أَوْ يَدْخُلَ الْقَبْرَ، وَلَا نَرَى بِرَشِّ الْمَاءِ عَلَيْهِ بَأْسًا، وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ

আমরা [কবরকে] চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা তার নিকটে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোন কিছু লেখা মাকরূহ মনে করি। এবং আমরা কবরকে ইট দ্বারা পাকা করা, কবরে প্রবেশ করাকে মাকরূহ মনে করি। তবে কবরে পানি ছিটিয়ে দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। এটাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য। {কিতাবুল আসার লিমুহাম্মদ-২/১৯১}

ইমাম আবু হানীফা রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৫০ হিজরীতে।

ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৮৯ হিজরী।

উভয় ইমামদ্বয় কবর পাকা করাকে মাকরূহ বলেছেন।

তাছাড়া ইমাম হাসান বিন আম্মার বিন আলী বিন আলী আশশুরুনবুলালী আলমিসরী ইন্তেকাল করেছেন ১০৬৯ হিজরী।

কবর পাকা করাকে মাকরূহ বলেছেন। দেখুন-তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-৫০৪।

এমনিভাবে আল্লামা তাহের মাজমাউল বিহারের ৩/২২৬ নং পৃষ্ঠায়, ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২৩৬ নং পৃষ্ঠায়, ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ফাতহুল বারীর ৩/৫৫৯ নং পৃষ্ঠায়ও কবরকে পাকা করাকে মাকরূহ উল্লেখ করা হয়েছে।

যেখানে পরিস্কার ভাষায় হাদীসে ইরশাদ রয়েছে, গ্রহণযোগ্য ফুক্বাহায়ে কেরামগণ যুগে যুগে মাকরূহ বলেছেন। সুতরাং কোন বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েজ হয়ে যাবে না।

সেই সাথে সবচে’ বড় কথা হল, যেসব মনীষীদের কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনো তাদের পূববর্তী কোন বুযুর্গের কবরকে পাকা করেছেন?

কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন?

তাছাড়া অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের কবর ঘিরে প্রচুর পাপকর্ম করা হয়, গাঁজার আসর, গানের আসর বসানো হয়, বুযুর্গদের কবরের পাশে এসব গোনাহের কাজ করতে কি সেসব বুযুর্গরা আদেশ করে গেছেন?

এখন কেউ যদি মুইনুদ্দীন চিশতী রহঃ এর কবর পাশে গাঁজা খাওয়া হয় বলে, গাঁজা খাওয়াকে জায়েজ ফাতওয়া প্রদান করেন, তাহলে একথাটি ঠিক হবে?

দেখতে হবে কুরআন ও হাদীস কী বলে? ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত মুরিদান বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোন কাজ করলেই সেটি উক্ত বুযুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না। এসব বিষয় শরয়ী দলীলও হয় না।

সুতরাং হাদীসের দ্বারা এবং ফুক্বাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবরকে পাকা করা নাজায়েজ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী



Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...