প্রশ্ন: ৪৪৬ : কবর পাকা করা নিষেধ সংক্রান্ত হাদীস ।

 ১। 

মুসলিম শরীফ : 2137 : 

পরিচ্ছেদঃ ৩২. কবরে চুনকাম করা এবং এর উপর অট্টালিকা নির্মাণ প্রসঙ্গে

২১৩৭-(৯৫/...) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) ... জাবির (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ২১১৬, ইসলামীক সেন্টার ২১১৯)

باب النَّهْىِ عَنْ تَجْصِيصِ الْقَبْرِ، وَالْبِنَاءِ، عَلَيْهِ ‏‏

وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نُهِيَ عَنْ تَقْصِيصِ الْقُبُورِ، ‏.‏


২। 

সুনানে নাসায়ী : 2027 :-2028

জাবির রা: থেকে বর্ণিত রাসুল সা: কবরে পাকা ঘর নির্মাণ, কবরকে বর্ধিতকরণ এবং চুনকাম করা থেকে নিষেধ করেছেন। সুলায়মান ইবনে মূসা (রহ:) এর বর্ণনায় একথাটি অতিরিক্ত রয়েছে, “তিনি কবরের উপর লেখা থেকেও নিষেধ করেছেন”। 


৩।  তিরমিযী ১০৫২ : সহিহ হাদীস : 

জাবির রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কবর পাকা করতে, তার উপর কোন খিছু লিখতে বা কিছু নির্মাণ করতে এবং তা পদদলিত করতে রাসুল সা: নিষেধ করছেন।  - (সহীহ, আহকুমুল জানায়িজ-২০৪, তাহযীরাস সাজিদ - ৪০, লিখতে নিষেধ করেছেন ব্যতীত, মুসলিম। 

৪। সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৫৬২ : জাবির রা: থেকে বর্ণিত রাসুল সা: কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। 

৫ ও ৬ । 

এছাড়াও একই মর্মার্থ সম্বলিত হাদীস : রিয়াদুস সালেহীন ১৭৭৬, বুলুগুল মারাম ৫৮০, নম্বর হাদীসেও এসেছে। 

-------------------------------------------------------

বুযুর্গদের কবর পাকা বলে কি কবর পাকা করা জায়েজ হয়ে যাবে?

প্রশ্ন

নাম:মুহাম্মদ ওসমান গনি। জেলা: চট্টগ্রাম।।

প্রশ্ন- কবর পাকা করা নাজায়েজ বলা হয়।কিনতু দেখা যায় পূর্ববর্তী বূযুর্গদের হয়তো একটি কবর নেই পাকা ছাড়া।।আমার প্রশ্ন হলো কবর পাকা করা অনেক আগে থেকে শুরু হয়ছে কিনতু তৎকালীন আলেমরা কি এর প্রতিরোধ করেছেন।।অনেক বিখ্যাত ইমামদের কবর পাকা করার সময় অনেক বিখ্যাত ইমাম পৃথিবীতে জীবিত ছিলেন।।তারা কি তাদের কোন কিতাবে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন?? হযরত শাহ ওয়ালীউললাহ(রহঃ) এর আমলে ও অনেক আলেমের কবর পাকা হয়েছে।।কিনতু তিনি কি এর প্রতিবাদ করেছেন?? হযরত মইনুদ্দিন চিশতি (রহঃ) এর কবর পাকা করার সময় কি কোন প্রতিবাদ হয়েছে??

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

কবর পাকা করার নিষেধাজ্ঞা রাসূল সাঃ থেকে জারি হয়েছে। পরবর্তী খাইরুল কুরুনেও এ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেছেন বিজ্ঞ ফুক্বাহা, মুহাদ্দিসগণ।

কারা কবর পাকা করাতে নিষেধ করেছেন তার একটি ছোট্ট তালিকা নিচে প্রদত্ব করা হল।

রাসূল সাঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন

عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: «نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ، وَأَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ، وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهِ

হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল সাঃ কবরে চুনকাম করতে, কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করতে, এবং কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৯৭০}

عَنْ أَبِي الْهَيَّاجِ الْأَسَدِيِّ، قَالَ: قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: أَلَا أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ «أَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا إِلَّا طَمَسْتَهُ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا إِلَّا سَوَّيْتَهُ

হযরত আবুল হাইয়াজ আসাদী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার হযরত আলী রাঃ আমাকে বলেন, আমি কি তোমাকে সেই কাজে পাঠাবো না, যে কাজে রাসূল সাঃ আমাকে পাঠিয়েছিলেন? ঐ কাজ এই যে, কোন মূর্তি দেখলে তা নষ্ট করে ফেলবে, আর কোন উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে। {মুসলিম, হাদীস নং-৯৬৯}

ইমাম আবু হানীফা রহঃ কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন!

ইমাম মুহাম্মদ রহঃ তার সংকলিত কিতাবুল আসারে উল্লেখ করেছেন-

وَنَكْرَهُ أَنْ يُجَصَّصَ أَوْ يُطَيَّنَ، أَوْ يُجْعَلَ عِنْدَهُ مَسْجِدٌ، أَوْ عَلَمٌ، أَوْ يُكْتَبُ عَلَيْهِ، وَنَكْرَهُ الْآجُرَ أَنْ يُبْنَى بِهِ أَوْ يَدْخُلَ الْقَبْرَ، وَلَا نَرَى بِرَشِّ الْمَاءِ عَلَيْهِ بَأْسًا، وَهُوَ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ

আমরা [কবরকে] চুনকাম করা, পাকা করা, অথবা তার নিকটে মসজিদ নির্মাণ করা, ঝান্ডা টানানো, কোন কিছু লেখা মাকরূহ মনে করি। এবং আমরা কবরকে ইট দ্বারা পাকা করা, কবরে প্রবেশ করাকে মাকরূহ মনে করি। তবে কবরে পানি ছিটিয়ে দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। এটাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য। {কিতাবুল আসার লিমুহাম্মদ-২/১৯১}

ইমাম আবু হানীফা রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৫০ হিজরীতে।

ইমাম মুহাম্মদ রহঃ ইন্তেকাল করেছেন ১৮৯ হিজরী।

উভয় ইমামদ্বয় কবর পাকা করাকে মাকরূহ বলেছেন।

তাছাড়া ইমাম হাসান বিন আম্মার বিন আলী বিন আলী আশশুরুনবুলালী আলমিসরী ইন্তেকাল করেছেন ১০৬৯ হিজরী।

কবর পাকা করাকে মাকরূহ বলেছেন। দেখুন-তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ-৫০৪।

এমনিভাবে আল্লামা তাহের মাজমাউল বিহারের ৩/২২৬ নং পৃষ্ঠায়, ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২৩৬ নং পৃষ্ঠায়, ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ ফাতহুল বারীর ৩/৫৫৯ নং পৃষ্ঠায়ও কবরকে পাকা করাকে মাকরূহ উল্লেখ করা হয়েছে।

যেখানে পরিস্কার ভাষায় হাদীসে ইরশাদ রয়েছে, গ্রহণযোগ্য ফুক্বাহায়ে কেরামগণ যুগে যুগে মাকরূহ বলেছেন। সুতরাং কোন বড় ব্যক্তির কবর পাকা থাকলেই সে কাজ জায়েজ হয়ে যাবে না।

সেই সাথে সবচে’ বড় কথা হল, যেসব মনীষীদের কবরকে পাকা করা হয়েছে, তারা নিজেরা কি কখনো তাদের পূববর্তী কোন বুযুর্গের কবরকে পাকা করেছেন?

কিংবা তারা কি তাদের কবরকে পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন?

তাছাড়া অনেক বুযুর্গানে দ্বীনের কবর ঘিরে প্রচুর পাপকর্ম করা হয়, গাঁজার আসর, গানের আসর বসানো হয়, বুযুর্গদের কবরের পাশে এসব গোনাহের কাজ করতে কি সেসব বুযুর্গরা আদেশ করে গেছেন?

এখন কেউ যদি মুইনুদ্দীন চিশতী রহঃ এর কবর পাশে গাঁজা খাওয়া হয় বলে, গাঁজা খাওয়াকে জায়েজ ফাতওয়া প্রদান করেন, তাহলে একথাটি ঠিক হবে?

দেখতে হবে কুরআন ও হাদীস কী বলে? ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার ভক্ত মুরিদান বা পরবর্তী ব্যক্তিরা কোন কাজ করলেই সেটি উক্ত বুযুর্গের কাজ বলে সাব্যস্ত হয় না। এসব বিষয় শরয়ী দলীলও হয় না।

সুতরাং হাদীসের দ্বারা এবং ফুক্বাহায়ে কেরামের মতামত দ্বারা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত যে, কবরকে পাকা করা নাজায়েজ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী



No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...