প্রশ্ন: ৩৬২ : ফজরের নামাজ কাজা হলে সে লোক কি অন্য কোন ওয়াক্তের ইমামতি করতে পারবে।

 

ফজরের নামাজ কাজা হলে সে লোক কি অন্য কোন ওয়াক্তের ইমামতি করতে পারবে।


উত্তর: ব্যক্তিটি যদি সাহেবে তরতীব না হয়ে থাকে, অর্থাৎ স্মরণ অতীতকালে তার কেনো নামাজ বাদ পড়েনি এবং তিনি ধারাক্রম অনুয়ায়ী কায়েমী নামাজী। তখন সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও কোনো ওয়াক্তের নামাজ না পড়া অবস্থায় তার পরবর্তী নামাজ হবে না। যিনি এমন নন, তার নামাজ হবে। এখানে ফজরের নামাজ কাজা যদি তিনি পড়ে নিয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী ওয়াক্তের ইমামতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
সূত্র : জামেউল ফাতাওয়া, ইসলামী ফিক্হ ও ফাতওয়া বিশ্বকোষ।

প্রশ্ন: ৩৬১ : পবিত্র কুরআন শিক্ষা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 কুরঅান শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা,গুরুত্ব,ফজিলত ও শিক্ষা না করার কুফল:-

১. কুরআন শিক্ষা ফরয :
প্রত্যেক মুসলিমকে কুরআন পড়া জানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে তাকে অবশ্যই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। কুরআন শিক্ষা করা এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, আল্লাহ তা‘আলা কুরআন শিক্ষা করা ফরয করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ ﭐﻗۡﺮَﺃۡ ﺑِﭑﺳۡﻢِ ﺭَﺑِّﻚَ ﭐﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ١ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻌﻠﻖ : ١ ‏]
অর্থ: ‘পড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন’ [সূরা আলাক : ১]।
কুরআন শিক্ষায় কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। উম্মাতকে কুরআন শিক্ষার নির্দেশ দিয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
‏« ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ، ﻭَﺍﺗْﻠُﻮﻩُ ‏»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তিলাওয়াত কর’ [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ:৮৫৭২]।
২.সালাত আদায়ের জন্য কুরআন শিক্ষা:
আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদার বান্দাহদের উপর প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। কুরআন তেলাওয়াত ছাড়া সালাত আদায় হয় না। সালাত আদায় করার জন্যও কুরআন শিখতে হবে। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﻓَﭑﻗۡﺮَﺀُﻭﺍْ ﻣَﺎ ﺗَﻴَﺴَّﺮَ ﻣِﻦَ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥِۚ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ : ٢٠ ‏]
অর্থ: ‘অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ [সূরা আল-মুযযাম্মিল: ২০]।
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﻻََ ﺻَﻼَﺓَ ﻟِﻤَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃْ ﺑِﻔَﺎﺗِﺤَﺔِ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ ‏» .
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পড়ে না তার সালাতই হয় না’। [সহীহ বুখারী:৭৫৬]
৩. কুরআন প্রচারের জন্য শিক্ষা করা :
কুরআন মাজীদে কুরআন প্রচারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশের আলোকে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম কুরআন প্রচার-প্রসারে নিজেদেরকে নিয়োজিত করেছেন। যে ব্যক্তি কুরআন পড়তে জানে না, সে কীভাবে তা প্রচার করবে ? সুতরাং কুরআন প্রচার-প্রসারে ভূমিকা পালন করার জন্য তা শিক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ۞ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎۡ ﻣَﺂ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴۡﻚَ ﻣِﻦ ﺭَّﺑِّﻚَۖ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻤﺎﺋﺪﺓ : ٦٧ ‏]
অর্থ: হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]।
৪. কুরআন শিক্ষা অন্তরের প্রশান্তি :
মানব জীবনে অর্থ বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কুরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻭَﺗَﻄۡﻤَﺌِﻦُّ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢ ﺑِﺬِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِۗ ﺃَﻟَﺎ ﺑِﺬِﻛۡﺮِ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻄۡﻤَﺌِﻦُّ ﭐﻟۡﻘُﻠُﻮﺏُ ٢٨ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺮﻋﺪ : ٢٨ ‏]
অর্থ : ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ [সূরা আর-রা‘দ:২৮]।
৫.হেদায়াত লাভের জন্য কুরআন শিক্ষা :
কুরআনের মাধ্যমেই হেদায়াতের সন্ধান পাওয়া যাবে। সেজন্য কুরআন থেকে হেদায়াত পাবার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে । কুরআনে বলা হয়েছে,
﴿ ﺇِﻥَّ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻳَﻬۡﺪِﻱ ﻟِﻠَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺃَﻗۡﻮَﻡُ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٩ ‏]
অর্থ: ‘নিশ্চয় এ কুরআন এমন পথ-প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল ও সঠিক’।
[সূরা বনি-ইসরাঈল:০৯]
৬. জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা:
প্রত্যেক মুমিনের সর্বোচ্চ কামনা হলো জান্নাতে যাওয়া। তাই জান্নাতে যাওয়ার জন্য কুরআন শিক্ষা করতে হবে। হাদিসে এসেছে,
‏« ﺍَﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻳَﺸْﻔَﻌَﺎﻥِ ﻟِﻠْﻌَﺒْﺪِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﺃَﻱْ ﺭَﺏِّ ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻄَّﻌَﺎﻡَ ﻭَﺍﻟﺸَّﻬَﻮَﺍﺕِ ﺑِﺎﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ ﻭَﻳَﻘُﻮﻝُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻣَﻨَﻌْﺘُﻪُ ﺍﻟﻨَّﻮْﻡَ ﺑِﺎﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺸَﻔِّﻌْﻨِﻲ ﻓِﻴﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﻴُﺸَﻔَّﻌَﺎﻥِ ‏» .
অর্থ: সিয়াম ও কুরআন কিয়ামাতের দিন মানুষের জন্য এভাবে সুপারিশ করবে যে, সিয়াম বলবে হে আমার রব, আমি দিনের বেলায় তাকে (এ সিয়াম পালনকারীকে) পানাহার ও যৌনতা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। অনুরূপভাবে কুরআন বলবে, হে আমার রব,আমাকে অধ্যয়নরত থাকায় রাতের ঘুম থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবূল কর। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর উভয়ের সুপারিশই কবূল করা হবে [মুসনাদআহমাদ: ৬৬২৬]।
*কুরআন শিক্ষা ও তিলাওয়াতের ফযিলত:-
১. কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা:
কুরআন তিলাওয়াত আল্লাহর সাথে একটি লাভজনক ব্যবসা। বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দুটিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির আসংখা নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﺇِﻥَّ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺘۡﻠُﻮﻥَ ﻛِﺘَٰﺐَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍْ ﭐﻟﺼَّﻠَﻮٰﺓَ ﻭَﺃَﻧﻔَﻘُﻮﺍْ ﻣِﻤَّﺎ ﺭَﺯَﻗۡﻨَٰﻬُﻢۡ ﺳِﺮّٗﺍ ﻭَﻋَﻠَﺎﻧِﻴَﺔٗ ﻳَﺮۡﺟُﻮﻥَ ﺗِﺠَٰﺮَﺓٗ ﻟَّﻦ ﺗَﺒُﻮﺭَ ٢٩ ﻟِﻴُﻮَﻓِّﻴَﻬُﻢۡ ﺃُﺟُﻮﺭَﻫُﻢۡ ﻭَﻳَﺰِﻳﺪَﻫُﻢ ﻣِّﻦ ﻓَﻀۡﻠِﻪِۦٓۚ ﺇِﻧَّﻪُۥ ﻏَﻔُﻮﺭٞ ﺷَﻜُﻮﺭٞ ٣٠ ﴾ ‏[ ﻓﺎﻃﺮ : ٢٩، ٣١ ‏]
‘‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’’ [সূরা ফাতির ২৯-৩০]
২. কুরআন পাঠকারী প্রত্যেক হরফের জন্য সওয়াব লাভ করে:
কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিরাট সওয়াব অর্জন করার সুযোগ রয়েছে। এর সাথে অনেক উপকারিতাও রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﻣَﻦْ ﻗَﺮَﺃَ ﺣَﺮْﻓًﺎ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﻠَﻪُ ﺑِﻪِ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﻨَﺔُ ﺑِﻌَﺸْﺮِ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﺃَﻗُﻮﻝُ ﺍﻟﻢ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺃَﻟِﻒٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻟَﺎﻡٌ ﺣَﺮْﻑٌ ﻭَﻣِﻴﻢٌ ﺣَﺮْﻑٌ ‏»
‘‘যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পাঠ করে, তাকে একটি নেকি প্রদান করা হয়। প্রতিটি নেকি দশটি নেকির সমান। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ।’’ [সুনান আত-তিরমিযি:২৯১০]
৩. কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি:
কুরআন শিক্ষার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখেরাতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺧَﻴْﺮُﻛُﻢْ ﻣَﻦْ ﺗَﻌَﻠَّﻢَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻪُ ‏»
অর্থ: ‘‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অপরকে শিক্ষা দেয় ’’ [বুখারী: ৫০২৭]।
৪. কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে :
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশ করবে।এটা বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
‏« ﺍﻗْﺮَﺀُﻭﺍ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﺄْﺗِﻲ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻣَﺔِ ﺷَﻔِﻴﻌًﺎ ﻟِﺄَﺻْﺤَﺎﺑِﻪِ ‏»
অর্থ:‘তোমরা কুরআন তিলাওয়াত কর, কারণ, কুরআন কেয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে’ [মুসলিম: ১৯১০]।
৫. কুরআন পড়া উত্তম সম্পদ অর্জন
কুরআন পড়া বা শিক্ষা দেয়ার কাজে নিয়োজিত থাকা উত্তম সম্পদ অর্জন করার অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‏« ﺃَﻳُّﻜُﻢْ ﻳُﺤِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳَﻐْﺪُﻭَ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ ﺇِﻟَﻰ ﺑُﻄْﺤَﺎﻥَ ﺃَﻭْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻌَﻘِﻴﻖِ ﻓَﻴَﺄْﺗِﻲَ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﻨَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻛَﻮْﻣَﺎﻭَﻳْﻦِ ﻓِﻲ ﻏَﻴْﺮِ ﺇِﺛْﻢٍ ﻭَﻟَﺎ ﻗَﻄْﻊِ ﺭَﺣِﻢٍ ﻓَﻘُﻠْﻨَﺎ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻧُﺤِﺐُّ ﺫَﻟِﻚَ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﻓَﻠَﺎ ﻳَﻐْﺪُﻭ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﻓَﻴَﻌْﻠَﻢُ ﺃَﻭْ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺁﻳَﺘَﻴْﻦِ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻋَﺰَّ ﻭَﺟَﻞَّ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﻧَﺎﻗَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺛَﻠَﺎﺙٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺛَﻠَﺎﺙٍ ﻭَﺃَﺭْﺑَﻊٌ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻪُ ﻣِﻦْ ﺃَﺭْﺑَﻊٍ ﻭَﻣِﻦْ ﺃَﻋْﺪَﺍﺩِﻫِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺑِﻞِ ‏»
তোমাদের কেউ কেন সকালে মসজিদে গিয়ে আলস্নাহর কোরআন হতে দুটি আয়াত পড়ে না বা শিক্ষা দেয় না ? তাহলে সেটি তার জন্য দুটি উট লাভ করার চেয়ে উত্তম হবে। তিনটি আয়াত তিনটি উট অপেক্ষা উত্তম। চারটি আয়াত চার উট অপেক্ষাা উত্তম। অনুরূপ আয়াতের সংখ্যা অনুপাতে উটের সংখ্যা অপেক্ষা উত্তম।-[সহীহ মুসলিম : ১৩৩৬]।
৬. কুরআন তিলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে :
কুরআন তিলাওয়াত বানাদাহর জন্য এমন উপকারী যে, তা তিলাওয়াত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨُﻮﻥَ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺇِﺫَﺍ ﺫُﻛِﺮَ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺟِﻠَﺖۡ ﻗُﻠُﻮﺑُﻬُﻢۡ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺗُﻠِﻴَﺖۡ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﺀَﺍﻳَٰﺘُﻪُۥ ﺯَﺍﺩَﺗۡﻬُﻢۡ ﺇِﻳﻤَٰﻨٗﺎ ﻭَﻋَﻠَﻰٰ ﺭَﺑِّﻬِﻢۡ ﻳَﺘَﻮَﻛَّﻠُﻮﻥَ ٢ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻧﻔﺎﻝ : ٢ ‏]
অর্থ: ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’। [সূরা আনফাল:২]
৭. কুরআনের ধারক-বাহক ঈর্ষণীয় ব্যক্তি:
কোন ব্যক্তি কুরআনের জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে তার হক আদায় করে তেলাওয়াত করলে তার সাথে ঈর্ষা বা তার মত হওয়ার আকাঙ্খা করা যাবে।
‏« ﻻََ ﺣَﺴَﺪَ ﺇِﻻَّ ﻓِﻲ ﺍﺛْﻨَﺘَﻴْﻦِ ﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥَ ﻓَﻬْﻮَ ﻳَﺘْﻠُﻮﻩُ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ﻭَﺭَﺟُﻞٌ ﺁﺗَﺎﻩُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﺎﻻً ﻓَﻬْﻮَ ﻳُﻨْﻔِﻘُﻪُ ﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻭَﺁﻧَﺎﺀَ ﺍﻟﻨَّﻬَﺎﺭِ ‏»
অর্থ: ‘একমাত্র দুই ব্যক্তির উপর ঈর্ষা করা যায়। এক ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা কোরআনের ইলম দান করেছেন, সে দিবা-রাত্রি ঐ কোরআন তিলাওয়াতে ব্যস্ত থাকে। দ্বিতীয় সে ব্যক্তি, যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন। সে তা দিনরাত (বৈধ কাজে) খরচ করে’ [সহীহ বুখারী :৭৫২৯]।
*কুরআন শিক্ষা না করার পরিনতি:-
১. রাসূলের অভিযোগ পেশ :
কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিতে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের জন্য শাফায়াত চাইবেন। কিন্তু যারা কুরআন শিক্ষা করেনি, কুরআনের যেসব হক রয়েছে তা আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবেন। কুরআনে এসেছে :
﴿ ﻭَﻗَﺎﻝَ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻳَٰﺮَﺏِّ ﺇِﻥَّ ﻗَﻮۡﻣِﻲ ﭐﺗَّﺨَﺬُﻭﺍْ ﻫَٰﺬَﺍ ﭐﻟۡﻘُﺮۡﺀَﺍﻥَ ﻣَﻬۡﺠُﻮﺭٗﺍ ٣٠ ﴾ ‏[ ﺍﻟﻔﺮﻗﺎﻥ : ٣٠ ‏]
অর্থ: ‘আর রাসূল বলবেন, হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে’ [সূরা আল-ফুরকান-৩০] ইবন কাসীর বলেন, কুরআন না পড়া, তা অনুসারে আমল না করা, তা থেকে হেদায়াত গ্রহণ না করা, এ সবই কুরআন পরিত্যাগ করার শামিল।
২. কিয়ামতে অন্ধ হয়ে উঠবে :
যে কুরআন শিখা থেকে থেকে বিমুখ হয়ে থাকল, সে কতইনা দুর্ভাগা! আলকুরআনে এসেছে,
﴿ ﻭَﻣَﻦۡ ﺃَﻋۡﺮَﺽَ ﻋَﻦ ﺫِﻛۡﺮِﻱ ﻓَﺈِﻥَّ ﻟَﻪُۥ ﻣَﻌِﻴﺸَﺔٗ ﺿَﻨﻜٗﺎ ﻭَﻧَﺤۡﺸُﺮُﻩُۥ ﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﺃَﻋۡﻤَﻰٰ ١٢٤ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺏِّ ﻟِﻢَ ﺣَﺸَﺮۡﺗَﻨِﻲٓ ﺃَﻋۡﻤَﻰٰ ﻭَﻗَﺪۡ ﻛُﻨﺖُ ﺑَﺼِﻴﺮٗﺍ ١٢٥ ﻗَﺎﻝَ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﺃَﺗَﺘۡﻚَ ﺀَﺍﻳَٰﺘُﻨَﺎ ﻓَﻨَﺴِﻴﺘَﻬَﺎۖ ﻭَﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﭐﻟۡﻴَﻮۡﻡَ ﺗُﻨﺴَﻰٰ ١٢٦ ﴾ ‏[ ﻃﻪ : ١٢٤، ١٢٦ ‏]
অর্থ: আর যে আমার যিক্র (কুরআন) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, নিশচয় তার জীবন-যাপন হবে সংকুচিত এবং আমি কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থয় উঠাবো। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন ? অথচ আমিতো ছিলাম দৃষ্টিশক্তিসম্পন্নণ? তিনি বলবেন, অনুরুপভাবে তোমার নিকট আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অত:পর তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল’ [সূরা তাহা-১২৪-১২৬]।
৩.মূক, বধির অবস্থায় ঊঠবে:
সবচেয়ে বড় হেদায়েত আল-কুরআন প্রত্যাখ্যানকারীদের কবর হবে সংকীর্ণ, যার দরুন তাদের দেহের পাঁজরগুলো বাঁকা হয়ে যাবে। অবশেষে কিয়ামতের দিন মূক ও বধির হয়ে উঠবে । আলকুরআনে এসেছে :
﴿ ﻭَﻧَﺤۡﺸُﺮُﻫُﻢۡ ﻳَﻮۡﻡَ ﭐﻟۡﻘِﻴَٰﻤَﺔِ ﻋَﻠَﻰٰ ﻭُﺟُﻮﻫِﻬِﻢۡ ﻋُﻤۡﻴٗﺎ ﻭَﺑُﻜۡﻤٗﺎ ﻭَﺻُﻤّٗﺎۖ ﻣَّﺄۡﻭَﻯٰﻬُﻢۡ ﺟَﻬَﻨَّﻢُۖ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﺧَﺒَﺖۡ ﺯِﺩۡﻧَٰﻬُﻢۡ ﺳَﻌِﻴﺮٗﺍ ٩٧ ﴾ ‏[ ﺍﻻﺳﺮﺍﺀ : ٩٧ ‏]
আমি কিয়ামতের দিন তাদেরকে সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায়, অন্ধ অবস্থায়, মূক অবস্থায়, বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল জাহান্নাম। যখন জাহান্নামের আগুন নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে আমি তখন তাদের জন্য অগ্নি আরও বাড়িয়ে দেব। [সূরা বনি-ঈসরাইল:৯৭]
৪.গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত :
কুরআন শিক্ষা না করা গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শামিল। কুরআনে এসেছে,
﴿ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻛَﭑﻟۡﺄَﻧۡﻌَٰﻢِ ﺑَﻞۡ ﻫُﻢۡ ﺃَﺿَﻞُّۚ ﺃُﻭْﻟَٰٓﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﭐﻟۡﻐَٰﻔِﻠُﻮﻥَ ١٧٩ ﴾ ‏[ ﺍﻻﻋﺮﺍﻑ : ١٧٨ ‏]
অর্থ: ‘এরা চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বরং এরা তাদের চেয়েও আরো অধম ও নিকৃষ্ট এরাই হলো গাফেল’ [সূরা আরাফ-১৭৯] ।
৫. কুরআন দলিল হিসাবে আসবে :
কুরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কুরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসাবে উপস্থিত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন :
‏« ﻭَﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﺣُﺠَّﺔٌ ﻟَﻚَ ﺃَﻭْ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ‏»
অর্থ: কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলীল। [সহীহ মুসলিম: ৩২৮ ]
৬. জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে :
জাহান্নামের মত ভয়াবহ কঠিন জায়গা আর নেই। কুরআন শিক্ষা না করার কারণে জাহান্নামে যেতে হবে। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‏« ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ ﻣُﺸَﻔَّﻊٌ ، ﻭَﻣَﺎ ﺣِﻞٌ ﻣُﺼَﺪَّﻕٌ ، ﻣَﻦْ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺇِﻣَﺎﻣَﻪُ ﻗَﺎﺩَﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺟَﻌَﻠَﻪُ ﺧَﻠْﻒَ ﻇَﻬْﺮِﻩِ ﺳَﺎﻗَﻪُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ . ‏»
অর্থ: ‘কুরআন সুপারিশকারী এবং তাঁর সুপারিশ গ্রহণযোগ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি কুরআনকে সামনে রেখে তাঁর অনুসরণ করবে, কুরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি একে নিজ পশ্চাতে রেখে দিবে, কুরআন তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে’ [সহীহ ইবনে হিববান : ১২৪]।
৭. আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে:
কুরআন শিক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন না করলে এ বিষয়ে আখেরাতে জবাবদিহী করতে হবে । তা‘আলা বলেন,
﴿ ﻭَﺇِﻧَّﻪُۥ ﻟَﺬِﻛۡﺮٞ ﻟَّﻚَ ﻭَﻟِﻘَﻮۡﻣِﻚَۖ ﻭَﺳَﻮۡﻑَ ﺗُﺴَۡٔﻠُﻮﻥَ ٤٤ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺰﺧﺮﻑ : ٤٤ ‏]
অর্থ: নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ। আর অচিরেই তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে। [সূরা যুখরুফ : ৪৪]
*কুরআন শিক্ষায় করণীয়:-
[১] ভাল শিক্ষকের কাছে পড়া:
যিনি সহীহভাবে কুরআন পড়তে পারেন তার নিকটই কুরআন শিক্ষা করতে হবে। বিশেষ করে যে শিক্ষকের কুরআন শিক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ আছে তার কাছে পড়লে আরো ভাল হয়।
[২] নিয়মিত পড়া :
সহীহভাবে কুরআন শিক্ষার জন্য নিয়মিত সময় দেয়া দরকার। যদিও কম সময় হয়। প্রতিদিন শেখার মধ্যে থাকলে সহীহভাবে কুরআন শিক্ষা সহজ হবে এবং যা শেখা হবে তা আয়ত্ত্বে থাকবে।
[৩] মশক করা :
কোন যোগ্য শিক্ষকের কাছে মশক করলে পড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। মশক হলো- শিক্ষক পড়বে তারপর সেভাবে ছাত্রও পড়বে। এ ছাড়া বিভিন্ন সিডির মাধ্যমেও মশক করা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিখ্যাত ক্বারী মানশাওয়াভীর কুরআন প্রশিক্ষণ সিডির সহযোগিতা নেয়া যেতে পারে।
[৪] পরিবার পরিজন ও সন্তানদের শিক্ষা দেয়া:
প্রত্যেক মুসলিমকে তার পরিবার পরিজন ও সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। কুরআনে এসেছে,
﴿ ﻳَٰٓﺄَﻳُّﻬَﺎ ﭐﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺀَﺍﻣَﻨُﻮﺍْ ﻗُﻮٓﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢۡ ﻭَﺃَﻫۡﻠِﻴﻜُﻢۡ ﻧَﺎﺭٗﺍ ﴾ ‏[ ﺍﻟﺘﺤﺮﻳﻢ : ٦ ‏]
অর্থ:‘হে ইমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও’ [সূরা তাহরীম-৬]।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন,
‏« ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁَﻥ ، ﻓَﺘَﻌَﻠَّﻤُﻮﻩ ﻭَﻋَﻠَّﻤُﻮﻩ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻜُﻢ ، ﻓَﺈِﻧَّﻜُﻢ ﻋَﻨْﻪ ﺗُﺴْﺄَﻟُﻮْﻥ ، ﻭَﺑِﻪ ﺗُﺠْﺰَﻭْﻥ ‏»
অর্থর্: কুরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কুরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কুরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। [শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬]
[৫] ফযিলাতপূর্ণ সূরাগুলো বেশী বেশী করা :
ফযীলতপূর্ণ সূরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‏« ﺃَﻳَﻌْﺠِﺰُ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﺃَﻥْ ﻳَﻘْﺮَﺃَ ﻓِﻰ ﻟَﻴْﻠَﺔٍ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻭَﻛَﻴْﻒَ ﻳَﻘْﺮَﺃُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻗَﺎﻝَ : ‏( ﻗُﻞْ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﺣَﺪٌ ‏) ﻳَﻌْﺪِﻝُ ﺛُﻠُﺚَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ . ‏»
‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বললেন, কুরআনের এক তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া পড়বে তিনি বললেন, (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য’ [সহীহ বুখারী: ৫০১৫] ।
অতএব যেসব সূরা ও আয়াত সম্পর্কে অধিক ফযীলত ও বেশি নেকীর কথা বর্ণিত হয়েছে এবং যেগুলো ভালোভাবে শেখা ও বেশি বেশি পড়া দরকার তার মধ্যে রয়েছে, শুক্রবার ফজর নামাজে সূরা আলিফ-লাম-সিজদাহ পড়া, ঘুমানোর আগে সূরা মুলক এবং ফরয নামাজের পর সূরা নাস, সূরা ফালাক ও আয়াতুল কুরসী পড়া। আল্লাহ তা‘আলা পাঠকসহ আমাদের সকলকে কুরআন শিক্ষার তাওফীক দিন। আমীন।
(@)

প্রশ্ন: ৩৬০ : পরিবারের জন্য খরচ কারিদের আল্লাহ কি সুখবর দিয়েছেন

 মুমিনের সব কাজই ইবাদত; যদি তা হয় আল্লাহর হুকুম এবং রাসুল (সা.)-এর সুন্নত মোতাবেক। একজন মানুষের জন্য নামাজ, রোজা যেমন ইবাদত, তেমনি সংসার করাও ইবাদত। পরিবারের লোকদের জন্য খরচ করাও ইবাদত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সওয়াবের আশায় কোনো মুসলমান যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, তা তার সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (মুসলিম : ১২/১৪, হাদিস : ১০০২)

পরিবারের জন্য খরচ করলে মহান আল্লাহ যেমন রিজিকে বরকত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন, তেমনি পরিবারের জন্য উপার্জনরত ব্যক্তিকেও তিনি দিয়েছেন মুজাহিদের মর্যাদা।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে সালাতে দণ্ডায়মান এবং দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)

কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবারের লোকদের স্বাবলম্বী করাকে সদকা করার চেয়েও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সদকার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে স্ত্রীর মুখে ভালোবেসে তুলে দেওয়া একলোকমা খাবারকেও। হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মক্কায় রোগগ্রস্ত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার শুশ্রূষার জন্য আসেন। আমি বললাম, আমার তো সম্পদ আছে। সেগুলো আমি অসিয়ত করে যাই? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করতে পারো। আর এক-তৃতীয়াংশই তো বেশি। ওয়ারিশদের মানুষের কাছে মুখাপেক্ষী অবস্থায় (মানুষের কাছে হাত পেতে পেতে ফিরবে) ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে তাদের বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। আর যা-ই তুমি খরচ করবে, তা-ই তোমার জন্য সদকা হবে; এমনকি যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে, সেটাও। সম্ভবত আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে, আবার অন্যরা (কাফির সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৪)

লিংক

ব্যক্তিগত প্রয়োজনে খরচ করার ব্যাপারটি পার্থিব মনে হলেও এতে আল্লাহ তাআলা প্রতিদান দেবেন। অন্যদিকে পরিবারের ভরণ-পোষণ খরচ বহনের বিষয়টিও জাগতিক বিষয় মনে হলেও এটি একটি মহান দ্বীনি দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর বিনিময়ে আল্লাহ আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন।

অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে কোরআন ও হাদিসে পরিবারের জন্য ব্যয়ের বিষয়টিকে কোনোভাবে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বরং নিজের ও পরিবারের জন্য বৈধ রিজিকের সন্ধান করা একজন মুসলিমের ফরজ বা অত্যাবশক দায়িত্ব।

এ গুরুভার কাজে রয়েছে বিপুল সওয়াব ও পুণ্য।

রাসুল (সা.) হাদিস শরিফে বলেন, ‘মানুষের সর্বোত্তম মুদ্রা সেটি, যা সে তার পরিবারের খরচে ব্যয় করে। ’ (মুসলিম : হাদিস ৯৯৪)

হাদিসে আরো এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হালাল রিজিকের সন্ধান করা অন্যান্য ফরজ ইবাদতের পর অন্যতম একটি ফরজ। ’ (আল মুজামুল কাবির, হাদিস নং: ৯৯৯৩)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার পরিবারে যে খরচ করে তা-ও সদকাস্বরূপ, অর্থাৎ এতেও সে সদকার সওয়াব পাবে। ’ (বুখারি : হাদিস নং: ৪০০৬)

উল্লেখ্য, সদকা অর্থ দান ও বদান্যতা; যার বিনিময়ে আল্লাহ আখেরাতে পুরস্কৃত করবেন।

পরিবারের জন্য সাধ্যমত খরচ করা আভিজাত্যের পরিচয় বহন করে। কৃপণতা করা সম্পূর্ণ অনুচিত। কৃপণতার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ার বাণী এসেছে। কোরআনে ও হাদিসে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের উত্তমভাবে পরিবারের জন্য ব্যয় করার তাওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: bn24.islam@gmail.com

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮
এমএমইউ/এমজেএফ

সাহাবায়ে কেরাম ইসলামের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ইসলামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে যার প্রমাণ পাওয়া যায়। মৃত্যুশয্যায়ও তারা ইসলামের ব্যাপারে ছিলেন সতর্ক। যার ফলে মৃত্যুকালেও তাঁদের সমূদয় সম্পদ ইসলামের জন্য সদকা করতে চাইতেন। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সমগ্র বিশ্ব মানবতার জন্য রহমত। তাই তিনি নির্ধারণ করেছেন মৃত্যুকালে কী পরিমান সম্পদ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখতে হবে আর সর্বোচ্চ কতটুকু সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করবে। এ সম্পর্কিত একটি হাদিস এখানে তুলে ধরা হলো-


হজরত সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মক্কায় রোগাগ্রস্থ হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পরিচর্যার জন্য আসতেন। আমি বললাম, আমার তো মাল (সম্পদ) আছে। সেগুলো সব আমি ওসিয়্যাত করে যাই? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন, এক-তৃতীয়াংশ করতে পার। এক-তৃতীয়াংশই বেশি। মানুষের কাছে হাত পেতে ফিরবে, এরূপ অসহায় অবস্থায় ওয়ারিশদেরকে রেখা যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। আর যা-ই তুমি খরচ করবে, তাই তোমার জন্য সাদকা হবে। এমনকি যে লোকমাটি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে, তাও। আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করবেন এই আশা। তোমার দ্বারা অনেক লোক উপকৃত হবে। আবার অন্যেরা (কাফের সম্প্রদায়) ক্ষতিগ্রস্তও হবে। (বুখারি)



প্রশ্ন: ৩৫৯ : আল কুরআনে ব্যবহৃত ওয়াকফ ও সাংকেতিক চিহ্ন এর বিবরণ ।

 

হজরত উসমান গণী (রাযিআল্লাহু আনহু) পবিত্র কোরআন জমা করেন। কিন্তু তখনও পবিত্র কোরআনুল কারীমে নুকতা, যের, যবর ও পেশ ছিলো না। তাই অনারবদের পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে কষ্ট হতো। 

তারপর ইসলাম আরো বিস্তৃত হয়। তখন প্রয়োজন দেখা দেয় পবিত্র কোরআনুল কারীমে নুকতা, যের, যবর, পেশ লাগানোর। যেন আরব, অনারব, সাধারণ, বিশিষ্ট্য সকলে বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করতে পারে। এ লক্ষ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। নিম্নে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো।

নুকতার সংযোজন:

আরবদের তেলাওয়াতকারীরা এত বেশি অভ্যস্ত ছিলেন যে, নুকতা ছাড়া তেলাওয়াত করতে কোনো অসুবিধা হতো না। বাক্যের পূর্বাপর অবস্থা দেখে, সাদৃশ্যপূর্ণ হরফগুলোকে খুব সহজেই পৃথক করতে পারতেন। বিশেষ করে, পবিত্র কোরআনুল কারীমে বিভিন্ন জায়গায় সংশয় এজন্য তৈরি হতো না যে, এর সংরক্ষণ লেখার ওপর ছিলো না বরং ছিলো হিফজ বা মুখস্থের ওপর। তাই কোথাও সংশয় তৈরি হলে সরাসরি হাফেজদের দ্বারস্থ হয়ে সংশয় নিরসন করে নিতেন।

হজরত উসমান রাযিআল্লাহু আনহু পবিত্র কোরআনের কপিগুলো বিভিন্ন এলাকায় পাঠানোর সময়, প্রতিটির সঙ্গে একজন করে কারীও পাঠিয়ে ছিলেন; যারা ঐ এলাকার লোকদেরকে সহীহ শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শিখাবে।

পবিত্র কোরআনে নুকতা সর্বপ্রথম কে লাগিয়েছেন, এ বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে মতপার্থক্য রয়েছে। কনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় এ কাজ সর্বপ্রথম আবুল আসওয়াদ দুয়াইলি (রাহ.) করেছেন। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মত দিয়েছেন, এ কাজ তিনি হজরত আলী রাযিআল্লাহু আনহু এর নির্দেশে করেছিলেন। কেউ কেউ মত দিয়েছেন, কুফার গভর্নর যিয়াদ ইবনে আবু সুফিয়ান আসওয়াদ দুয়াইলি দ্বারা এ কাজ করিয়েছিলেন।

আর এক বর্ণনায় পাওয়া যায়, এ মহৎ কাজ ইরাকের এক সময়ের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ, হজরত হাসান বসরী (রাহ.) ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার ও নসর ইবনে আসেম লায়সি দ্বারা আঞ্জাম দিয়েছিলেন।

হরকত তথা যের, যবর ও পেশের সংযোজন:

নুকতার ন্যায় শুরুতে পবিত্র কোরআনুল কারীমে হরকতও (যের, যবর ও পেশ) ছিলো না। এ বিষয়েও অনেক মতপার্থক্য যে, সর্বপ্রথম কে হরকত লাগিয়েছিলেন? কেউ কেউ বলেছেন, একাজ আবুল আসওয়াদ দুওয়াইলি (রাহ.) আঞ্জাম দিয়েছেন। আর কারো কারো মত, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ পূর্বক্তো তিন ব্যক্তি দ্বারা এ কাজ করিয়েছিলেন।

এ সংক্তান্ত সকল বর্ণনাগুলো সামনে রাখলে বুঝা যায়, হরকত সর্বপ্রথম আবুল আসওয়াদ দুয়াইলিই (রাহ.) আবিস্কার করেন। কিন্তু তার আবিস্কৃত হরকত, বর্তমান হরকতের ন্যায় ছিলো না। তখন যবরের জন্য হরফের ওপর একটি নুকতা, যেরের জন্য হরফের নিচে একটি নুকতা ও পেশের জন্য হরফের সামনে এক নুকতা দেওয়া হতো। দুই যবর হলে ওপরে দুই নুকতা, দুই যের হলে নিচে দুই নুকতা আর পেশের জন্য সামনে দুই নুকতা দেওয়া হতো।

পরবর্তীতে খলীল ইবনে আহমদ, হামযা ও তাশদীদের সংকেতগুলো আবিস্কার করেন। তারপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, ইয়াহইয়া ইবনে ইয়ামার, নসর ইবনে আসেম আললাইছি ও হাসান বসরী (রাহ.) এই তিন ব্যক্তিকে হরকত ও নুকতা এক সঙ্গে লাগানোর নির্দেশ দেন। তখন হরকতের জন্য নুকতার পরিবর্তে বর্তমানের যের, যবর, পেশ ঠিক করেন। যেন হরফের নুকতা আর হরকতের নুকতা একসঙ্গে মিলে কোন জটিলতা সৃষ্টি না করে।

পবিত্র কোরআনুল কারীমের মনজিল:

সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুম ও তাবিয়ীগণের সাধারণ নিয়ম ছিলো, প্রতি সপ্তাহে একবার পবিত্র কোরআন খতম করা। তাই দৈন্দিন তেলাওয়াতের জন্য, পবিত্র কোরআনের একটি নির্দিষ্ট অংশ ঠিক করে নিয়েছিলেন। ঐ দৈন্দিন তেলাওয়াতর ঐ নির্দিষ্ট অংশকেই ‘হিজব’ বা ‘মনজিল’ বলে। এভাবে পবিত্র কোরআনুল কারীমকে পূর্ণ সাত মনজিলে ভাগ করা হয়েছে।

পবিত্র আল কোরআনের ত্রিশ পারা:

বর্তমানে পবিত্র কোরআনুল কারীমকে ত্রিশটি অংশে ভাগ করা হয়েছে, যাকে ত্রিশ পারা বলা হয়। পারার এই ভাগ অর্থ হিসেবে নয়, বরং বাচ্চাদের পড়ানোর সুবিধার্থে। তাই অনেক সময় এমন হয় একটি বিষয়ের মাঝে পারা শেষ হয়ে যায়। নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল, কে এই ত্রিশ পারার ভাগটি করেছেন।

কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মত হলো, হজরত ওসমান (রা.) পবিত্র কোরআন জমা করার সময় এ ভাগটি করেছিলেন। কিন্তু পূর্ববর্তীদের কিতাবাদিতে তার কোনো প্রমাণ পাওয় যায় না। বদরুদ্দীন জারকাশি (রাহ.) লিখেন, ‘কোরআনের ত্রিশ পারার ভাগ চলে আসছে এবং মাদরাসার পবিত্র কোরআনের কপিগুলোতে এই ভাগটি রয়েছে।’ বাহ্যিকভাবে মনে হয়, এই ভাগ সাহাবায়ে কেরামের যুগের পর পবিত্র কোরআনের শিক্ষা দেওয়ার সুবিধার্থে করা হয়েছিলো।

পবিত্র কোরআনুল কারীমে রুকুর চিহ্ন:

পবিত্র আল কোরাআনে পৃষ্ঠার পার্শ্বে আরবী ‘ع’ অক্ষর দিয়ে রুকুর চিহ্ন দেওয়া থাকে। অর্থের দিকে লক্ষ্য করে মূলত রুকু ঠিক করা হয়। অর্থাৎ যেখানে একটি বিষয়ের আলোচনা শেষ হয়েছে, সেই জায়গা বরাবর পার্শ্বে রুকুর আলামত ‘ع’ বসানো হয়। অনেক গবেষণার পরও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, কখন কে এই রুকুগুলো ঠিক করেছেন। সম্ভবত এর উদ্দেশ্য ছিলো, এমন একটি পরিমাণ ঠিক করে দেয়া, যতটুকু এক রাকাতে পড়া দরকার। পবিত্র আল কোরআনের এই রুকুকে, রুকু বলার কারণ হলো, সাধারণত এখানে পৌঁছে নামাজের রুকুতে যাওয়া হয়। তারাবির প্রতি রাকাতে যদি এক রুকু পরিমাণ তেলাওয়াত করা হয়, তাহলে সাতাশতম রাতে পবিত্র কোরআন খতম হয়।

পবিত্র আল কোরআনে ওয়াকফের চিহ্ন:

পবিত্র আল কোরআনের তেলাওয়াত ও তাজবীদ সহজ করণার্থে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইলমী খেদমত করা হয়। তা হলো, পবিত্র আল কোরআনের জায়গায় জায়গায় ওয়াকফ বা থামার জন্য সংকেত লাগানো হয়। এই সংকেতগুলোকেই ওয়াকফের আলামত বলা হয়। এগুলো লাগানোর উদ্দেশ্য হলো, একজন ব্যক্তি, যে আরবী জানেন না, সেও যেন জায়গা মতো থামতে পারে। এমন কোথাও যেন না থামেন, যেখানে থামার কারণে অর্থ গড়বর হয়ে যায়। এই সংকেতগুলোর অধিকাংশ আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ (রাহ.) আবিস্কার করেন। এই সংকেতগুলোর বিস্তারিত বিবরণ হলো এই।

ط  এই চিহ্ন ‘ওয়াকফে মুতলাক’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, এখানে বাক্যটি পূর্ণ হয়েছে। অতএব এখানে থামা উত্তম। ج এটি ওয়াকফে জায়েজ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর উদ্দেশ্য হলো এখানে থামা জায়েজ। ز  ওয়াকফে মুজাওয়ায এর সংক্ষিপ্ত রূপ। উদ্দেশ্য হলো এখানে ওয়াকফ জায়েজ। তবে উত্তম হলো ওয়াকফ না করা।

ص ওয়াকফে মুরাখখাস এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর অর্থ হলো, এখানে বাক্য পূর্ণ হয়নি, তবে বাক্য যেহেতু অনেক বড়, তাই অন্য কোথাও ওয়াকফ না করে এখানেই করা চাই।

م ইহা ওয়াকফে লাযেম এর সংক্ষিপ্ত রূপ। م দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এখানে ওয়াকফ না করলে অর্থ অনেক গড়বর হয়ে যাবে। এজন্য এখানে ওয়াকফ করা অনেক উত্তম। কেউ কেউ এটাকে ওয়াকফে ওয়াজিবও বলে থাকেন। কিন্তু এর দ্বারা শরয়ী ওয়াজিব উদ্দেশ্য নয় যে, এখানে ওয়াকফ না করলে ওয়াজিব ছাড়ার গুনাহ হবে। বরং উদ্দেশ্য হলো সকল ওয়াকফের মধ্যে এটাই উত্তম ওয়াকফ।

لا এই অক্ষরটি ‘লা তাক্বিফ’ (থেমো না) এর সংক্ষিপ্ত রুপ। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, এখানে থামলে গুনাহ হবে। কেননা  এই চিহ্ন সম্বলিত অনেক জায়গা এমন রয়েছে, যেখানে ওয়াকফ করলে কোনো সমস্যা নেই। তবে শুরু করার সময় পুনরায় তা তেলাওয়াত করা চাই।

সকল সাংকেতিক অক্ষরের ব্যাপারে সুনিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এগুলো আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ (রাহ.) এর উদ্ভাবন। এগুলো ছাড়াও আরো বহু সাংকেতিক হরফ বা শব্দ ব্যবহার হয়েছে। যেমন: م এই শব্দটি  ‘মোয়ানাকা’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এই আলামত সে স্থানে লাগানো হয়, যেখানে এক আয়াতের দুটি ব্যাখার সম্ভাবনা থাকে।

এক ব্যাখ্যা অনুযায়ী ওয়াকফ এক জায়গায় হয়। আরেক ব্যাখ্যা অনুযায়ী অন্য জায়গা ওয়াকফ হবে। এজন্য যে কোনো এক জায়গায় ওয়াকফ করলেই চলবে। কিন্তু এক জায়গায় ওয়াকফ করে ফেললে অন্য জায়গায় আর ওয়াকফ করা যাবে না।

وقف النبى صلىالله عليه وسلم(ওয়াকফুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই শব্দটি ঐ সকল স্থানে লেখা হয়, কোনো বর্ণনা দ্বারা যে স্থানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওয়াকফ প্রমাণিত।

سكته  ইহা ‘সাকতা’ এর চিহ্ন। সাকতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এখানে থামতে হবে তবে নিঃশ্বাস ছাড়া যাবে না। তা ঐ সকল জায়গায় ব্যবহৃত, যেখানে মিলিয়ে পড়া দ্বারা অর্থ ভুল বুঝার সম্ভাবনা থাকে।

وقفه  তাজবীদের পরিভাষায় ইহাকে ‘ওয়াকফা’ বলা হয়। এর স্থলেও শ্বাস না ছেড়ে থামতে হয়। তবে এখানে থামার পরিমাণ ‘সাকতা’ এর তুলনায় একটু বেশি।

ق ইহা قيل عليه الوقف (ক্বিলা আলাইহিল ওয়াকফু) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। উদ্দেশ্য হলো, এখানে থামা, না থামার ব্যাপারে মতপার্থক্য আছে।

قف এই শব্দের উচ্চারণ হলো ‘ক্বিফ’ যার অর্থ হলো থেমে যাও ! এই চিহ্ন ঐ জায়গায় ব্যবহার হয়, যেখানে বাক্যের অবস্থা থেকে মনে হয় এখানে থামা ঠিক হবে না। অথচ থামা দরকার।

صلىইহা الوصل اولى (আল ওসলু আওলা) এর সংক্ষিপ্ত রুপ। যার অর্থ হলো মিলিয়ে পড়া উত্তম। صل ইহা قد يوصل (ক্বাদ ইয়ূসলু) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর অর্থ হলো এমন স্থানে কেউ কেউ থামতেন। আর কেউ কেউ মিলিয়ে পড়াকে পছন্দ করতেন। (প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থ মাআরেফুল কোরআন (উর্দু) থেকে সংগৃহৃত)

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র কোরআনের আলোয় আলোকিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন।

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে

প্রশ্ন: ৩৫৮ : বিয়ে সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত।

 

বিয়ে সম্পর্কিত কুরআন এর কয়েকটি আয়াত ও এর ফজিলত

বিয়ে মহান আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ নেয়ামতের নাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ঈমানের পূর্ণতার সহায়ক। যুবক-যুবতীর চরিত্র গঠনের অন্যতম উপাদান। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিয়ে, যা প্রত্যেক মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বিয়ে নিয়ে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। এসব আয়াত আমাদের জন্য বিয়ের ব্যপারে পথ প্রদর্শক। এই ব্লগে বিয়ে সম্পর্কিত কুরআন এর কয়েকটি আয়াত ও এর ফজিলত নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

 মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়ে করায় উৎসাহিত করেছেন

বিয়ে একজন নারী বা পুরুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। বিয়ে ছাড়া আমাদের জীবন আনন্দময় হওয়া বা পরিপূর্ণতা লাভ করা কঠিন। তাই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন এবং আমরা যে বিয়ের মাধ্যমে শান্তি লাভ করতে পারবো সে কথাও বলেছেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন কারীমে এই প্রসঙ্গে বলেন,

“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা রুম : আয়াত ২১)

স্বাুমী-স্ত্রী একে অপরের পরিপূরক। একজন ব্যতীত অন্য জনের চলা কষ্টকর। আর বিষয়টিকে বুঝানোর জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অন্যত্র বলেন,

“তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

বিয়ে মানুষকে স্বাবলম্বী ও সম্পদশালী করে তুলে


বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের জন্য আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরী। কারণ বিয়ে সম্পর্কিত খরচ এবং বিয়ে পরবর্তী যত সাংসারিক ব্যয়ভার বহন করতে হবে তার সব কিছুই স্বামীর দায়িত্ব। এজন্য অনেক পুরুষই বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্বেও সত্ত্বেও আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে চায় না বা বিয়ে করতে পারেনা। আর এসব কারণে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়েও করতে বলেছেন এবং পাশাপাশি আর্থিক স্বাবলম্বী করে দেওয়ারও প্রতিশ্রতিও  দিয়েছেন।

“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।” (সূরা নূর : আয়াত ৩২-৩৩)

অর্থাৎ যাদের বিয়ের সময় হয়েছে কিন্তু বিয়ে করছে না শুধু আর্থিক সমস্যার কারণে যদি তারা ন্যায়পরায়ণ হয় তাহলে মহান আল্লাহ তাদেরকে স্বচ্ছল করে দিবেন, কারণ  তিনি বিরাট প্রাচুর্যের মালিক।

কাকে বিয়ে করা যাবেনা

একজন মুসলমান কাকে বিয়ে করতে পারবেনা সে বিষয়ে আল কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে।

“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা, তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদের স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।” [সূরা নিসা : আয়াত ২৩]

স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিতে হবে খুশীমনে

স্ত্রীদেরকে মোহর দিয়ে বিয়ে করতে হবে, আর মোহর খুশি মনে আদায় করতে হবে। কিন্তু আমরা আমাদের দেশে কখনো কখনো এই বিষয়টি কাবিন নামাতেই থাকে। নগদ প্রদানের অভ্যাস খুব কম। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই ব্যপারে স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে স্ত্রীদের মহরানা খুশি মনে দিয়ে দিতে হবে। মোহর আদায় প্রসঙ্গে আল কুরআনের আয়াত: 

“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” [সূরা নিসা : আয়াত ৪]

পুরুষদেরকে একটি বিয়ের জন্যই উৎসাহিত করেন তবে যোগ্যতা থাকলে দুটি বা চারটিও করতে পারবেন

“সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই,  অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” [সূরা নিসা : আয়াত ৩]

একজন পুরুষ কয়টি বিয়ে করতে পারবেন সে বিষয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ভালভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি একটি বিয়ের ব্যপারে গুরুত্ব আরোপ করেছেন কিন্তু কেউ যদি দুটি বা তার অধিক চারটি পর্যন্ত বিয়ে করতে চায়, করতে পারবেন। তবে সকল স্ত্রীর প্রতি সমতা রক্ষা করতে হবে; যা খুবই কষ্টকর। সেক্ষেত্রে তিনি একটি বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে বিয়ে সম্পর্কিত এসব আয়াত দ্বারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিয়ের মত মানব জীবনের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন যা আমাদের জন্য খুবই জরুরী।

প্রশ্ন: ৩৫৭ : অযুর সুন্নত ।

 দুই:

ওযুর সুন্নতসমূহ অনেক।

শাইখ সালেহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ্‌) বলেন: ওযুর সুন্নতসমূহ হচ্ছে-

১। মেসওয়াক করা। এর স্থান হচ্ছে- গড়গড়ার সময়। যাতে করে মেসওয়াক ও গড়গড়ার মাধ্যমে মুখ পরিস্কার করা যায়; যার ফলে ইবাদত, তেলাওয়াত ও আল্লাহ্‌র সাথে গোপন আলাপের জন্য নিজেকে তৈরী করে নেয়া যায়।

২। ওযুর শুরুতে চেহারা ধৌত করার আগে হাতের কব্জিদ্বয় তিনবার ধৌত করা। এ বিষয়টি হাদিসে উদ্ধৃত হওয়ার কারণে এবং যেহেতু হস্তদ্বয় হচ্ছে- ওযুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পানি ব্যবহার করার মাধ্যম।তাই এ দুটোকে ধৌত করার মাঝে সমস্ত ওযুর জন্য সতর্কতা অবলম্বন পাওয়া যায়।

৩। চেহারা ধৌত করার আগে গড়গড়া কুলি ও নাকে পানি দেয়া; অনেক হাদিসে এ দুটো দিয়ে শুরু করার কথা উদ্ধৃত হওয়ার কারণে। রোযাদার না হলে প্রকৃষ্টভাবে এ দুটো আদায় করবে। গড়গড়া কুলি প্রকৃষ্টভাবে আদায় করার অর্থ হল: গোটা মুখের ভেতরে পানি ঘুরানো। প্রকৃষ্টভাবে নাকে পানি দেয়ার অর্থ হচ্ছে: পানি টেনে একেবারে নাকের উপরে তুলে নেয়া।

৪। পানি দিয়ে ঘন দাঁড়ি খিলাল করা; যাতে করে ভেতরে পানি ঢুকে। দুই হাত ও দুই পায়ের আঙ্গুলগুলো খিলাল করা।

৫। ডান হাত ও ডান পা দিয়ে শুরু করা।

৬। মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয় ও পা-যুগল ধৌত করার ক্ষেত্রে একবারের অধিক তিনবার ধৌত করা।[আল-মুলাখ্‌খাস আল-ফিকহি (১/৪৪-৪৫) থেকে সমাপ্ত]

সুন্নতের মধ্যে আরও রয়েছে:

জমহুর আলেমের মতে, কানদ্বয় মাসেহ করা। ইমাম আহমাদের মতে, কানদ্বয় মাসেহ করা ওয়াজিব। ইতিপূর্বে 115246 নং প্রশ্নোত্তরে তা বর্ণিত হয়েছে।

প্রশ্ন: ৩৫৬: মহানবী (সা:)-এর অর্থনৈতিক জীবন

 মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বমানবতার জন্য একটি পরিপূর্ণ আদর্শ জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পূর্ণ নবুওয়ত জীবনে অর্থনৈতিক সেক্টরে যে অনুপম শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো।


ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবদেশে পোশাক শিল্প, চর্মকার ও রাখালের পেশা ইত্যাদি যৎসামান্য কিছু কর্ম ছাড়া তেমন কোনো শিল্পের প্রসার ছিল না। ব্যবসাই ছিল আরবদের আয়-উপার্জনের সর্বপ্রধান অবলম্বন। কিন্তু তাদের চিরায়ত আত্মকলহ ও ডাকাত দলের হানা তাদের ব্যবসার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াত। তাই তাদের ব্যবসা শুধু পবিত্র মাসগুলোতেই জমে উঠত। চড়া সুদ নিছক ব্যবসা হিসেবে তাদের জীবন প্রবাহের একটি অংশে পরিণত হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ্ (সা.) শিশুকাল কাটিয়েছিলেন পবিত্র নগরী মক্কায়। কোরাইশের শীতকালে ইয়েমেন ও গ্রীষ্মে সিরিয়া ভ্রমণ ছিল দুটি অপরিহার্য বাণিজ্যিক ভ্রমণ। সর্দার হাশিম ইবনে আবদে মানাফ কোরাইশের ধনী-দরিদ্র সকলের মাঝে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। ঠিক এই সময় এসে পড়ে ইসলামের বাণী। এছাড়াও কোরাইশের আকাশে ছিল তখন ধনাঢ্যতা ও শৌর্য-বীর্যের ফকফকা রোদ। এমন খাঁটি বাণিজ্যিক পরিবেশেই বেড়ে উঠেন মহানবী (সা.)।  

বার বছর বয়সে রাসুলুল্লাহ (সা.) চাচা আবু তালিবের সাথে সিরিয়ার পথে একটি বাণিজ্যিক কাফেলায় অংশগ্রহণ করেন। পথিমধ্যে ‘বুহাইরা’ নামক এক খৃস্টান পাদ্রীর সাথে দেখা হলে তিনি শিশু মুহাম্মদকে ইহুদিদের থেকে সাবধানে রাখার পরামর্শ দেন। তাই আবু তালিব দ্রুত তাকে নিয়ে মক্কায় ফিরে আসেন।

যৌবনে উপনীত হবার পর মেষ চরানো এবং পরে ব্যবসার মাধ্যমে শুরু হয় মহানবীর (সা.) অর্থনৈতিক জীবন। তাঁর ব্যবসায়িক সুনাম ও ‘আল-আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হওয়ার কারণে খাদিজা (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহা) তাকে প্রথমত ব্যবসা ও দ্বিতীয়ত স্বামী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। সততা ছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মধ্যে বুদ্ধিমত্তা, দৈহিক শক্তি ও বিচক্ষণতা ইত্যাদি গুণের সমাবেশ ঘটেছিল।

পবিত্র কোরআনের ভাষায় : ‘নিশ্চয় সর্বোত্তম শ্রমিক তো সেই যে বলিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত’।

হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন একজন ধনবতী, ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী মহিলা। তিনি তার পুঁজি দিয়ে লাভ-ক্ষতির অংশীদারিত্বভিত্তিক যৌথ ব্যাবসা করতেন। খাদিজা (রা.) মহানবীর (সা.) সততা ও উত্তম চরিত্রের কথা জানতে পেরে তাঁকে পুঁজি নিয়ে সিরিয়ায় ব্যবসায়িক সফরে যাওয়ার জন্য আবেদন জানালেন। মহানবী (সা.) তার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং দ্বিগুণ পুঁজি ও বিনিময় নিয়ে খাদিজার ক্রীতদাস ‘মায়সারাহ’র সঙ্গে সিরিয়ার পথে বাণিজ্যিক সফরে বের হলেন। বিগত সফরসমূহের তুলনায় এবার সফরে দ্বিগুণ লাভ হলো। ‘মায়সারাহ’ খাদিজার নিকট রাসুল (সা.)-এর বিশ্বস্ততা ও মহান চরিত্রের বর্ণনা দিল। খাদিজা (রা.) বিশেষত রাসুল (সা.)-এর সংস্পর্শে আসার পর তার সম্পদে যে সমৃদ্ধির চিহ্ন ফুটে উঠেছে তা দেখে বিস্মিত হলেন। তিনি তার বান্ধবী ‘নাফিসাহ’র মাধ্যমে রাসুল (সা.)-এর নিকট বিবাহের প্রস্তাব পেশ করেন। রাসুল (সা) এ ব্যাপারে তাঁর চাচাদের সঙ্গে মতবিনিময় করলে তারা বিবাহ সম্পন্ন করেন।  

স্বামী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) খাদিজার ব্যবসার তত্ত্বাবধান করতেন। সাথে সাথে নিজেও খাদিজার পুঁজি নিয়ে পুরোদমে ব্যবসা করছিলেন। তিনি ছিলেন বাণিজ্য নগরী মক্কার সর্বাধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী। নিঃসন্দেহে এই দীর্ঘ ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাই তাঁর জন্য মদিনায় অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটাতে সহায়ক প্রমাণিত হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনাড়ম্বর জীবনচরিত দেখে একথা ভুলে গেলে চলবে না, তিনি ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বলিষ্ঠ, বুদ্ধিমান ও অধিক পুঁজিবান ব্যবসায়ী। নবি হওয়ার পূর্বে তিনি মানবসেবায় নিজের পুঁজি কী পরিমাণ খরচ করতেন তা খাদিজার (রা.) ভাষায় ফুটে উঠছে : ‘নিশ্চয় আপনি আত্মীয়তার বন্ধন রচনা করেন, মেহমানদারি করেন ও অনাথকে বহন করেন এবং নিঃস্বের জন্য উপার্জন করেন..। ’  

মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি কনিষ্ঠ চাচা হযরত জুবায়ের (রাজিআল্লাহু তায়ালা আনহু) এবং কয়েকজন যুবককে নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে একটি সমাজসেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।    

মূর্খতার  যুগ পেরিয়ে আসা এক পথবিচ্যূত সমাজের মাঝে নবুওয়তের এমন নতুন দাওয়াত নিয়ে দাঁড়ানোর জন্য বহু অর্থেরও প্রয়োজন ছিল। নবুওয়তের গুরুদায়িত্ব বহনের পর রাসুলুল্লাহ্ (সা.) ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। তথাপি তাঁর নিজস্ব ও খাদিজা (রা.) হতে প্রাপ্ত পুঁজি দ্বারা নতুন ধর্মের প্রচার করতে লাগলেন। নও-মুসলিম সাহাবিগণের মাঝে যারা সামর্থ্যহীন তাদের খরচাদি রাসুল (সা.) নিজেই বহন করেছিলেন।  

সহজে রাসুল (সা.)কে বধ করতে না পেরে কোরাইশ বনু হাশিম ও বনু আবদুুল মুত্তালিবকে হুমকি দিল যে, তাদের হাতে মুহাম্মদকে (সা.) সমর্পণ না করলে তাদেরকে বয়কট করা হবে। কোরাইশ তিন বছর (মতান্তরে দুই বছর) এ নির্বাসনে অটল থাকল। রাসুল (সা.) ও মুসলমানগণ মর্মান্তিক কষ্টের সম্মুখীন হলেন।

ঝর্ণাধারা ও কূপসমূহের আধিক্যের কল্যাণে মদিনার অর্থনৈতিক জীবন ছিল কৃষিনির্ভর। এছাড়াও গহনাদি ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি, খনিজ ও বয়ন শিল্প বহুল সমাদৃত ছিল। ব্যাপক হারে সুদের আদান-প্রদান চলতো। কিন্তু গোত্র-বিভেদ ও সঙ্ঘাতের কারণে মদিনার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল  চরম অবনতির শিকার।    

ঐতিহাসিক হিজরত মুহাজির-আনসার সকলের জীবন প্রবাহকে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছিল। হিজরতের পরপরই মহানবী (সা.) সাহাবিদেরকে শ্রমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করলেন। মদিনায় প্রবেশের পর স্বয়ং নবী করিম (সা.) স¦শরীরে মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

অর্থনৈতিকভাবে নিগৃহীত মুহাজিরগণ ছিলেন ভীষণ দুর্বল। কারণ, তারা আপন ধন-সম্পদ মাতৃভূমি মক্কায় রেখে এসেছিলেন। এই মুহূর্তে রাসুল (সা.) তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে তাঁর অসীম প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। উল্লেখ্য, মুহাজিরগণ কৃষিকাজ জানতেন না। ব্যবসাই ছিল তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অবলম্বন। তাই রাসুল (সা.) মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সাথেসাথেই বাজার প্রতিষ্ঠা করা শুরু করেছিলেন।  

হিজরত ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন এবং তথায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্থনৈতিক কাঠামো রচনার পটভূমি। মক্কায় মুসলমানদের অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ ছিল না। সেখানে আবু বকর (রা.) এবং ধনী সাহাবিগণ কোনো কোনো মুসলমানকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করেছিলেন মাত্র। খাদিজা (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর মত ধনী ব্যবসায়ীগণও অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন। হিজরতপূর্ব সময়ে তারা একপ্রকার নির্বাসনের পরিবেশেই জীবন-যাপন করছিলেন।

মুহাজিরগণ স্বনির্ভর জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়-সম্বলের অধিকারী ছিলেন না। এমতাবস্থায় তাদের ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন প্রতিষ্ঠা করার কোনো জুড়ি ছিল না। ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন ছিল নতুন ইসলামি অর্থনৈতিক বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্তর স্বরূপ। এই বন্ধন সকল সংকটের উপর্যুপরি সমাধান প্রমাণিত হয়। এই ভ্রাতৃত্ব রক্তের বন্ধনের চেয়েও বেশি অটুট ও মজবুত ছিল।

বদর যুদ্ধ পর্যন্ত উত্তরাধিকারের বিধানও বলবৎ ছিল। পরে উত্তরাধিকার রহিত হলেও কিন্তু ভ্রাতৃত্ব চিরকালের জন্য রয়ে গেল। যার সাথে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।  

গোত্রে গোত্রে বিভেদই ছিল হিজরতের পূর্বে মদিনার সার্বিক উন্নতির প্রধান অন্তরায়। এই ভ্রাতৃত্ব সকল বিভেদের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও মদিনার অর্থনৈতিক জীবনের ছড়ি ঘুরাচ্ছিল ইহুদিরাই। এ ভ্রাতৃত্বের বন্ধন না হলে  নিঃস্ব মুহাজিরগণের পক্ষে অর্থনৈতিকভাবে ইহুদিদের মোকাবেলা করা ছিল দুষ্কর।  

রাসুলুল্লাহ্ (সা.) কার্যত শ্রমের যে আদর্শ পেশ করেছিলেন তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুহাজিরগণও আনসারদের ওপর বোঝা সৃষ্টি না করে কাজে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। এভাবেই গড়ে উঠছিল একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক বন্ধন।  

রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় প্রবেশের পর আনসারগণ তাদের জমি-জমা ও ধন-সম্পদ থেকে উদ্বৃত্ত সবকিছু তাঁর কাছে সমর্পণ করতে শুরু করলেন। যাতে ইসলামি রাষ্ট্রে নবাগত মুহাজিরগণ শক্তপায়ে দাঁড়াতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে রাসুলকেও (সা.) মুহাজিরদের ব্যয়ভার নির্বাহে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল।

মহানবী (সা.) জাকাত, উশর, ফাই (সন্ধিসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ), জিযয়াহ্ (কর), খারাজ (টে∙) ও খুমুস (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক-পঞ্চমাংশ) ইত্যাদি প্রচলন করে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভিতকে মজবুত করেছিলেন।

ফসলি জমির মালিক আনসারগণ রাসুল (সা.) এর নিকট তাদের জমি-জমাও ভাগ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে রাসুল (সা.) বলেন, ফসলের একটি অংশ তাদেরকে প্রদান করাটাই যথেষ্ট। ‘যে ব্যক্তি কোন পরিত্যক্ত জমিকে আবাদ করবে সে তার মালিক’- এ ভিত্তিতে সম্মিলিতভাবে মুসলমানরা পরিত্যক্ত ফসলি জমিসমূহকে আবাদ করা শুরু করেন। স্বয়ং রাসুল (সা.) হযরত বেলালকে (রা.) এক টুকরো  খনিজ সম্পদসহ জমি ও হযরত আলিকে (রা) চাষ করার জন্য চার খন্ড জমি দিয়েছিলেন।    

‘মাহযুর’ ও ‘লিহ্’ ইত্যাদি উপত্যকার ব্যাপারে তিনি আদেশ দেন, যেন উঁচু জমিতে দুই হাঁটু পরিমাণ পানি হওয়ার পর নিচু জমির দিকে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বিশেষভাবে এ সেচ-পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।

সামাজিক বন্ধন রক্ষার্থে তিনি শক্তিশালীকে দুর্বলের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। যেহেতু ব্যবসায়ীগণ কৃষক ও অন্যান্য শ্রমিক শ্রেণির তুলনায় গুনাহর অধিক নিকটবর্তী তাই তিনি তাদের প্রতি বহু হাদিসে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এছাড়াও রাসুল (সা.) তাদেরকে সহিঞ্চুতার আদেশ দেন।

পবিত্র ব্যবসায়িক পেশা মনোপ্রবৃত্তির শিকার না হওয়ার জন্য তিনি ঋণ ও ক্রয়-বিক্রয় লিখে রাখার আদেশ দিতেন।

সততার প্রতি জোর দিয়ে মহানবী (সা.) বলেন : ‘ক্রেতা-বিক্রেতা যদি সত্য বলে তাহলে তাদের কর্ম বরকত প্রাপ্ত হয়। যদি তারা মিথ্যাচারিতার আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ের বরকত নিশ্চি‎‎হ্ন হয়ে যায়। ’ তিনি মজুতদারি, মিথ্যা হলফ, অনিশ্চয়তামূলক ও ফটকামূলক সকল আদান-প্রদান নিষিদ্ধ করেন।

রাসুল (সা)-এর বিনিময়-বৈষম্য দূরীকরণ, ধনী-গরিবের মধ্যকার দূরত্ব সংকোচন, বাগান চাষ ও পরিবার পরিপালন ইত্যাদি কর্মকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা সিরাতগ্রন্থসমূহে বিশদভাবে উল্লেখিত আছে।

অধুনা অর্থনীতিবিদদের মতে, রাসুল (সা.) যে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলেছিলেন তা নিম্নোক্ত মূলনীতি সমূহের অন্তর্ভুক্ত । যথাÑ (ক) সেবামূলক কার্যক্রম (খ) মধ্যস্বত্বভোগ সীমাবদ্ধ করা এবং সুদকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা। (গ) ব্যক্তি মালিকানার সাথে সামাজিক দায়িত্ববোধের সমন্বয়। (ঘ) সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠা ।  

রাসুলুল্লাহ্ (সা) পানাহার ও পোশাক-পরিচ্ছদের বেলায় অতিমাত্রায় বিলাসিতা ও শৌখিনতা পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন মিতব্যয়ী ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী। মহানবী (সা.) বলেন: ‘মিতব্যয় জীবন-যাপনে সফলতার অর্র্ধেক’।

‘জীবন-যাপনে মধ্যপন্থী হওয়া ব্যক্তির গভীর জ্ঞানের পরিচায়ক। ’

মহানবী (সা.) চাটাইতে বসতেন এবং শুতেন। এ থেকে বোঝা যায়, তিনি বিলাসপরায়ণ ছিলেন না। আর এটি সুস্থ অর্থনীতি ও সুন্দর জীবনের বুনিয়াদ স্বরূপ।

রাসুল (সা.) ব্যাপকভাবে খাদ্য ও পোশাকসহ যাবতীয় কর্মে অপব্যয় থেকে বারণ করেছেন। এ ব্যপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন : ‘আল্লাহ্র কসম! রাসুলুল্লাহ্ (সা.) একই দিনে দুবার রুটি ও গোশত দ্বারা পরিতৃপ্ত হননি।

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) অযু করা অবস্থায় মহানবী (সা.) তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘অপচয় করো না!’। সাদ (রা.) বললেন: পানির মাত্রাতিরিক্ত খরচও কি অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যদিও তুমি প্রবাহমান নদীতে অবস্থান কর।

খাদ্য সঞ্চয়ের ব্যপারে রাসুলের (সা.) নীতি ছিল আলোকোজ্জ্বল। একদা নবী করিম (সা.) বেলালের (রা.) নিকট প্রবেশ করলেন। তার নিকট এক থলে খেজুর ছিল। রাসুল (সা.) বললেন: এটা কি হে বেলাল? বেলাল (রা.) বললেন: এগুলো আমি আপনাকে আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত রাখি। হুজুর (সা.) বললেন, তুমি কি জাহান্নামের ধোঁয়ার ভয় কর না?..। আরেকবার হুজুর (সা.) আনাসকে (রা.) বলেছিলেন, আমি কি তোমাকে দ্বিতীয় দিনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখতে নিষেধ করিনি? ডনশ্চয়ই আল্লাহ আগামীর খাবারের ব্যবস্থা করেন...।

উল্লেখ্য, যেসব দ্রব্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মওসুমে সঞ্চয় করে পরবর্তীতে  ভোগ করার রীতি রয়েছে তা রাসুলের (সা.) অর্থনীতির আলোকে বৈধ। রাসুলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর পরিবারের জন্য এক বছরের খেজুর ও অন্যান্য দ্রব্য মজুত রাখতেন। দ্রব্যমূল্য বাড়ার আশঙ্কা না থাকলে মনীষীগণ সঞ্চয় করাকে বৈধ বলেছেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন স্ব-নির্ভর। হিজরতের সময়ও তিনি নিজেই দুটি উটের ব্যবস্থা করেন। হিজরতের পরেও রয়েছে তাঁর দুই শ’ উট ক্রয় করার ঘটনা। এমনিভাবে রয়েছে তাঁর স্ব-নির্ভরতার বহু প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সহজ-সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। তিনি সাহাবিগণকে অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের  উপদেশ দিতেন। তিনি পেট ভরে সে পরিমাণ সিরকা পর্যন্ত পেতেন না।

সংকটাবস্থার জন্য সঞ্চয় করার আদেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহ অনুগ্রহ করুক ঐ ব্যক্তিকে যে হালাল উপার্জন করে, পরিমিত ব্যয় করে এবং প্রয়োজনের জন্য কিছু অবশিষ্ট রাখে। ’

এ ছাড়াও রাসুল (সা.) অর্থ সংকটের সময় তার সাহাবি ও পরিবারবর্গকে দোয়া করার আহ্বান জানাতেন। একদা ফাতেমার (রা.) মুখমণ্ডল ক্ষুধার কারণে রক্তশূন্য হয়ে হলদে বর্ণ ধারণ করেছিল। হুজুর (সা.) তার নিকটবর্তী হয়ে তার জন্য দোয়া করেছিলেন।
স্বেচ্ছায় বরণকৃত এই আর্থিক সংকটকে সামনে রেখেই মহানবীর (সা.) ইন্তেকাল হয়েছিল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) পুঁজিবাদী সর্বস্ব ও মানবতাবিরোধী অর্থনীতির পরিবর্তে অত্যন্ত কল্যাণমূখী এবং মধ্যপন্থী অর্থনৈতিক জীবনের মহান আদর্শ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালা আলিহি ওয়াসাল্লাম।


মুহাম্মদ তকী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

প্রশ্ন: ৩৫৫ : বাকীতে বেশীমূল্যে পন্য বিক্রি করা সম্পর্কে

 ---------------------------------

বরাবর
মাননীয় মুফতি সাহেব!
আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী৷ আমি বাকীতে পন্য লেনদেন করি এবং নগদ মূল্যের চেয়ে বেশী মূল্যে বিক্রি করি৷ অর্থাৎ একটা বস্তু নগদে কিনলে নির্দিষ্ট দাম এবং বাকীতে কিনলে বেশী দাম। সেক্ষেত্রে মূল্য পরিশোধের মেয়াদও নির্দিষ্ট করে থাকি ৷
জানার বিষয় হলো,আমার এ লেনদেন জায়েয হবে কি না? আর যদি আমি এ লেনদেনটি ধানের মধ্যে করি৷ নগদে কম মূল্যে ধান কিনে বাকীতে নির্দিষ্ট মেয়াদে বেশী মূল্যে বিক্রি করি, তাহলে সেটি জায়েয হবে কি না? তেমনিভাবে এ লেনদেনটি যদি স্বর্ণের মধ্যে করি৷ অর্থাৎ নগদে কমমূল্যে স্বর্ণ কিনে বাকীতে নির্দিষ্ট মেয়াদে বেশী মূল্যে স্বর্ণ বিক্রি করি,তাহলে এটি জায়েয হবে কি না? অনেকে বলছেন, এভাবে লেনদেন সুদ হবে ৷ তাদের কথা সঠিক কি না? অনুগ্রহপূর্বক দলীলসহ সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন ৷

☞ উত্তরঃ
بسم الله الرحمن الر حيم
ফিকহের কিতাব সমূহে বর্নিত রয়েছে যে,ফুকাহায়ে কিরামের ঐক্যমতে বাকী ক্রয়-বিক্রয়ে নগদের তুলনায় কিছু মূল্য বৃদ্ধি করে বিক্রি করা জায়েয হবে। তবে অতি চড়া মূল্য বৃদ্ধি করা উচিত নয়। আল্লামা আব্দুল হক (রহঃ) তার ফাতোয়ার কিতাবে লেখেনঃ চার ইমাম এবং সমস্ত উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতের রায় হলো,বাকিতে বিক্রয় করলে নগদের তুলনায় কিছূ মূল্য বৃদ্ধি করা জায়েয হবে। (ফাতওয়ায়ে হক্কানী ৬/১৪১)
'
সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত পদ্ধতিতে নগদের তুলানায় বাকিতে কিছু বেশি মূল্য নিয়ে বিক্রি করা জায়েয হবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো,পরিশোধের সময় এবং পন্যের নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারন করে নিতে হবে। অর্থাৎ নগদ হলে এই পন্যটা ১০০,টাকা৷ আর বাকিতে হলে ১১০,টাকা। এভাবে পন্যের মূল্য ও পরিশোধের সময় নির্ধারন করা ব্যতীত বেচা-কেনা জায়েয হবে না। (আলমগীরী ৩/১৪২)

আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلاَّ أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ
অর্থাাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। কেবলমাত্র তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা করা হয় তা বৈধ। (সুরা নিসা ২৯)
والله اعلم بالصواب

☞ হাওয়ালাঃ
ফতোয়ায়ে আলমগীরী ৩/১৪২ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে শামী ৪/২৬ পৃষ্ঠা৷
ফতোয়ায়ে হক্কানী ৬/১৪১ পৃষ্ঠা৷
খুলাসাতুল ফতোয়া ৩/২৫ পৃষ্ঠা
ফতোয়ায়ে মাদানিয়া ১/৪৭৮ পৃষ্ঠা৷
আল মুহিতুল বুরহানী ১৪/৩৩ পৃষ্ঠা৷
বেহেশতী জেওর ৫/৪৯৬ পৃষ্ঠা৷
মিরআতুল মাজাল্লাহ ১/২৫ পৃষ্ঠা৷
আল-হিদায়া ৩/৬০ পৃষ্ঠা৷

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...