প্রশ্ন: ২৯৯ : দেনমোহর কী, কেন ও কত হওয়া উচিৎ?

একজন মুসলমানের বিয়েতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্দেশিত অপরিহার্য প্রদেয় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী যে অর্থ-সম্পদ পেয়ে থাকে তাকেই দেনমোহর বলে। বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ।  
আল্লাহ তা’আলা বলেন –
“আর তোমাদের স্ত্রীদের তাদের দেনমোহর দিয়ে দাও খুশি মনে। অবশ্য স্ত্রী চাইলে দেনমোহর কিছু অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশ ছেড়ে দিতে পারে। [সূরা আন-নিসাঃ৪]

তবে এ ব্যাপারে স্ত্রীর উপর কোন প্রকারের চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সাধারণভাবে দেনমোহর কম ধার্য করাই মুস্তাহাব।

রাসূল (সাঃ) বলেন –“সে নারী বরকতের মাঝে আছে যাকে প্রস্তাব দেয়া সহজ ও যার দেনমোহর অল্প” [মুসনাদু আহমাদ; হাসান সানাদে]

এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের দেনমোহর তুমি প্রদান করেছো।’ (সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)
দেনমোহরের বিষয়টি হালকাভাবে নিয়ে লোক দেখানো ‘অধিক দেনমোহর’ ধার্য করাতে কোনো বরকত নেই। বরং তা অহংকারের পরিচায়ক।

বরকতপূর্ণ বিবাহের বর্ণনা দিতে গিয়ে উম্মাহাতুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, “সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না।”-মিশকাত শরিফ

দেনমোহরের পরিমাণ কী হওয়া উচিত ইসলামী শারীআতে এ সম্পর্কে বিশেষভাবে কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি, কোন সুস্পষ্ট পরিমাণ ঠিক করে দেয়া হয়নি। তবে এ কথা স্পষ্ট যে, প্রত্যেক স্বামীরই কর্তব্য হচ্ছে তার আর্থিক সামর্থ্য ও স্ত্রীর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে উভয় পক্ষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বেঁধে দেয়া। আর মেয়ে পক্ষেরও তাতে সহজেই রাজী হয়ে যাওয়া উচিত।

দেনমোহর যে কতটা গুরুতপূর্ণ বিষয়, তা বুখারীর হাদীসই প্রমাণ বহন করে।

সাহল ইবনে সাদ (রাঃ) বলেন, ‘’আমি অন্যান্য লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে উপবিষ্ট ছিলাম’’। তখন এক মহিলা দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমি নিজেকে আপনার জন্য হেবা করলাম, আপনি আমাকে গ্রহণ করুন। কিন্তু রাসূল (সাঃ) কিছুই বললেন না।
মহিলাটি এরূপ তিনবার বলল, কিন্তু তিনবারই রাসূল (সাঃ) চুপ থাকলেন। তখন এক সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন আপনি যদি গ্রহন না করেন তাহলে এই মহিলার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নিকট কি মহিলাকে দেনমোহর দেওয়ার মত কিছু আছে? তিনি বললেন, না। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার বাড়ি থেকে খোঁজ করে একটি লোহার আংটি হলেও নিয়ে আসো। কিন্তু তিনি তাও আনতে পারেনি। তখন রাসূল (সা.) বললেন তোমার কি কোরআনের কিছু মুখস্ত আছে? তখন তিনি বললেন আমার ঐ ঐ সূরা মুখস্থ আছে। রাসূল (সা.) বললেন, মহিলাকে ঐ সূরাগুলো শিখিয়ে দিও, সেটাই তোমার দেনমোহর।
উপরোক্ত হাদীসটি দ্বারা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে মহিলাকে দেনমোহর প্রদান করা অত্যাবশ্যক।
দেনমোহর একজন নারীর হক, যদি কোনো ব্যক্তি দেনমোহর অনাদায়ের ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করে তাহলে সে ব্যাভিচারী হবে। সে বিষয়েই রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যা মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মেয়েকে দেনমোহর দেওয়ার ওয়াদায় বিয়ে করেছে, কিন্তু দেনমোহর দেওয়ার ইচ্ছে নেই, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট ব্যাভিচারী হিসেবে দাঁড়াতে বাধ্য হবে।”- মুসনাদে আহমাদ
সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত, “এবং নারীদের মধ্যে সধবা নারী ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হওয়ার জন্য নয়। সুতরাং তাদের মধ্যে তোমরা যাদেরকে ভোগ করেছ তাদেরকে তাদের নির্ধারিত মোহর দিয়ে দাও। আর নির্ধারণের পর যে ব্যাপারে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোন অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, দেনমোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ।

দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ন্যূনতম পরিমান হানাফি মাজহাবের মতে ১০ দিরহাম। অর্থাৎ ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য নির্ধারণ করা। এর চেয়ে কম পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা স্ত্রী রাজি হলেও তা শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।

এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ১০ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই (বায়হাকি শরীফ, ৭/২৪০)। কিন্তু এর উপরে যে কোনো পরিমাণকেই দেনমোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে তা পরিশোধ না করতে পেরে গুনাহগার হয়।
দেনমোহরের জন্য আমাদের সমাজে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত পরিমান হল মোহরে ফাতেমি।
মোহরে ফাতেমি বলা হয় ঐ পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা, যা রাসূলুল্লাহ সাঃ-এর মেয়ে হযরত ফাতেমা রাঃ-এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। হযরত ফাতেমা রাঃ-এর মোহর ৫০০ দিরহাম নির্ধারণ করা হয়েছিল, ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা (জাওয়াহিরুল ফাতাওয়া, ৪/৩৫০)।  

হযরত উমর (রা.) এর খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা (রাঃ) তাদের সন্তানদের বিয়েতে দেনমোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি দেনমোহর নির্ধারণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমান দেনমহরের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াত এর কারনে তা পারেননি।

সুরা নিসার ৪ নাম্বার আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে” (সূরা নিসা-৪)”।

এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় দেনমোহর অনেক বেশিও হতে পারে।
তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য দেনমোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না।
আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ দেনমোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে দেনমোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের অবমাননা করা হয়। তাই দেনমোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ।
অন্যসব অধিকারের মতো স্বামীর কাছে দেনমোহর দাবি করা স্ত্রীর জন্য দোষের কিছু নয়। অনেকেই মনে করেন, দেনমোহরের টাকা স্ত্রীকে দিতে হয় শুধুমাত্র বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটলে। এটা অজ্ঞতা ও চরম ভুল ধারণা। বিয়ে বিচ্ছেদ না হলেও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করা ফরজ।
অতএব এর যাবতীয় দিক শরীয়ত অনুযায়ী ও পরিষ্কারভাবে হওয়া উচিত এবং সে হিসেবেই তা পরিশোধের চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।




প্রশ্ন: ২৯৮ : পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে ক্বিরাত উচ্চস্বরে ও চুপেচুপে পড়ার দলিল-প্রমাণ।

আসলে নামাজের বিস্তারিত বিধি বিধান আমরা রাসুল সা: এর কাছ থেকেই পেয়েছি। কুরআনে বর্ণিত সালাত ক্বায়েম বিষয়টি কিভাবে পালন করতে হবে তা রাসুল সা: হাতে কলমে আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। আর ফজর, মাগরিব, ইশা সশব্দে তিলাওয়াত এবং জুহর ও আছরে নি:শব্দে তিলাওয়াত এটা রাসুল সা: থেকেই প্রমাণিত:


প্রশ্ন

যোহরের নামায ও আসরের নামাযে ক্বিরাত চুপে চুপে পড়া, আর ফজর, মাগরিব ও এশার নামাযে উচ্চস্বরে পড়ার সপক্ষে কুরআন-সুন্নাহর কী দলিল রয়েছে?

উত্তর

আলহামদু লিল্লাহ।
তোমার এই উচ্চাকাঙ্খার জন্য আমরা তোমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং এই বয়সে কুরআন-সুন্নাহ্‌র দলিল জানার আগ্রহ দেখে আমরা প্রীত হচ্ছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন, তোমাকে কাজে লাগান।
আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন: "তোমাদের জন্য তথা যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌কে ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌কে বেশি বেশি স্মরণ করে তার জন্য রাসূলের মাঝে রয়েছে উত্তম আদর্শ।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ২১]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তোমরা আমাকে যেভাবে নামায পড়তে দেখ সেভাবে নামায পড়"। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামাযে, মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে শব্দ করে তেলাওয়াত করতেন। আর বাকী নামাযে চুপে চুপে তেলাওয়াত করতেন।
উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার দলিলসমূহের মধ্যে রয়েছে:
জুবাইর বিন মুতয়িম (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাগরিবের নামাযে (সূরা) "তূর" তেলাওয়াত করতে শুনেছি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৩)]
আল-বারা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এশার নামাযে "ওয়াত ত্বীনি ওয়ায যাইতূন" পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কণ্ঠের তেলাওয়াত শুনিনি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৩) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৪)]
জ্বিনদের উপস্থিত হওয়া ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কুরআন শুনা প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। সে হাদিসে রয়েছে: "তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করছিলেন। যখন তাদের কানে কুরআন পৌঁছল তখন তারা মনোযোগ দিয়ে কুরআন শুনল।"[সহিহ বুখারী (৭৩৯) ও সহিহ মুসলিম (৪৪৯)]
এ হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করতেন যাতে করে উপস্থিত লোকেরা শুনতে পায়।
আর যোহর ও আসরের নামাযে চুপে চুপে তেলাওয়াত করার সপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে:
খাব্বাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করল: “রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যোহর ও আসরের নামাযে ক্বিরাত পড়তেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ। আমরা বললাম: আপনারা সেটা কিভাবে জানতেন? তিনি বললেন: তাঁর দাঁড়ির নড়াচড়া দেখে।"[সহিহ বুখারী (৭১৩)]
সুতরাং এর মাধ্যমে পরিস্কার হয়ে গেল যে, উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা এবং চুপেচুপে তেলাওয়াত করার নামাযগুলোতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ্‌ (আদর্শ) এবং গোটা মুসলিম উম্মাহ্‌ এ ব্যাপারে একমত।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: "তিনি প্রত্যেক নামাযে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাযগুলোতে আমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যে সব নামাযে আমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন সে সব নামাযে আমরাও তোমাদেরকে না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।"[সহিহ বুখারী (৭৩৮) ও সহিহ মুসলিম (৩৯৬)]
ইমাম নববী বলেন: “সুন্নাহ্‌ হচ্ছে—ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাযে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা। আর যোহর ও আসরের নামাযে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সাথে মুসলিম উম্মাহর ইজমার ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।”[আল-মাজমু (৩/৩৮৯) থেকে সমাপ্ত]
ইবনে কুদামা (রহঃ) বলেন:  
“যোহর ও আসরের নামাযে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাযের সব রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে...। এর দলিল হচ্ছে—নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাযে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাযে চুপেচুপে পড়ে তাহলে সে সুন্নাহ্‌র খিলাফ করল। কিন্তু তার নামায শুদ্ধ হবে।”[আল-মুগনি (২/২৭০) থেকে সমাপ্ত]

প্রশ্ন: ২৯৭ : আমি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করি যে আল্লাহ একমাত্র আমাদের রক্ষা করার এবং বাঁচানোর মালিক। কিন্তু চলার পথে কেউ যদি আমাকে কোন দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে আর আমি যদি বলি আপনি আমাকে বাঁচালেন। তাহলে কি শিরক করা হবে?



‘আল্লাহর প্রতি শিরক করার পাপ আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। তবে অন্য যে কোনো পাপ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মাফ করতে পারেন। (সূরা নিসা আয়াত ৪৮)

“আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক, তাহলে আল্লাহর উপরই ভরসা কর।”(সূরা মায়িদা আয়াত ২৩)

“আর মুমিনদের উচিত আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।” (সুরা ইব্রাহীম আয়াত ১১)

“আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন করো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।” (ইউনুস আয়াত ১০৬, ১০৭)

.আবু বাশীর আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে - তিনি একবার রাসূল (সাঃ) এর সফর সঙ্গী ছিলেন । এ সফরে রাসূল (সাঃ) একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একজন দূত পাঠালেন ।এর উদ্দেশ্য ছিল কোন উটের গলায় যেন ধনুকের কোন রজ্জু লটকানো না থাকে অথবা এ জাতীয় রজ্জু যেন কেটে ফেলা হয়। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২১১৫)

সাঈদ বিন জুবাইর থেকে বর্ণিত আছে , তিনি বলেন -

যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাবিজ-কবজ ছিঁড়ে ফেলবে বা কেটে ফেলবে সে ব্যক্তি একটি গোলাম আযাদ করার মতো কাজ করল

(ওয়াকী) ইবরাহীম থেকে বর্ণিত হাদী তিনি বলেন , তাঁর সব ধরনের তাবিজ-কবজ অপছন্দ করতেন , চাই তার উত্‍স কুরআন হোক বা অন্য কিছু হোক ।(মুসান্নাফ ইবনু আবী শায়বা , হাদীস নং ৩৫১৮) ১ম অধ্যায় , হাদীস নং ৩৫১৮)

সাহাবী রুআইফি থেকে ইমাম আহমদ বর্ণনা করে , তিনি [রুআইফি] বলেছেন , "রাসূল (সাঃ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন , হে রুআইফি , তোমার হায়াত সম্ভবত দীঘ হবে ।লোকজনকে জানিয়ে দিও , "যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে ,অথবা গলায় তাবিজ-কবজ ঝুলাবে অথবা পশুর মল কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে , মুহাম্মদ (সাঃ) তার জিম্মাদারী থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ।(মুসনাদ আহমদ , ৪/১০৭ , ১০৯; সুনান ইবনু মাজাহ , হাদীস নং ৩৬)

“তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে পারনা” ( সূরা তাক'ওয়ীর ২৯)

“তাদের অধিকাংশই মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু সাথে সাথে শিরক করে” (সূরা ইউসুফ আয়াত ১০৬)


তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম, তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।(সূরা মূলক আয়াত ১০)


সুরা ইউনুস: আয়াত নং ২২-২৩: ব্যাখ্যা সহ : 

﴿هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا كُنتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ﴾
২২) তিনিই তোমাদের জলে স্থলে চলাচলের ব্যবস্থা করেন৷ কাজেই যখন তোমরা নৌকায় চড়ে অনূকূল বাতাসে আনন্দে সফর করতে থাকো, তারপর অকস্মাত বিরুদ্ধ বাতাস প্রবল হয়ে ওঠে, চারদিক থেকে ঢেউয়ের আঘাত লাগতে থাকে এবং আরোহীরা মনে করতে থাকে তারা তরংগ বেষ্টিতে হয়ে গেছে তখন সবাই নিজের আনুগত্যকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তার কাছে দোয়া করতে থাকে এবং বলতে থাকে, “যদি তুমি আমাদের এ বিপদ থেকে উদ্ধার করো তাহলে আমরা শোকরগুজার বান্দা হয়ে যাবো”৷ ৩১  
৩১ . প্রত্যেক মানুষের অন্তরে রয়েছে তাওহিদের সত্যতার নিশানী৷ যতদিন উপায়-উপকরণ অনুকূল থাকে ততদিন মানুষ আল্লাহকে ভুলে পার্থিব জীবন নিয়ে অহংকারে মত্ত হয়ে থাকে৷ আর উপায় উপকরণ প্রতিকূল হয়ে গেলে এবং এ সংগে যেসব সহায়ের ভিত্তিতে সে পৃথিবীতে বেঁচেছিল সেগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেলে তারপর কট্টর মুশরিক ও নাস্তিকের মনেও এ সাক্ষ ধ্বনিত হতে থাকে যে, কার্যকারণের এ সমগ্র জগতের ওপর কোন আল্লাহর কর্তৃত্ব পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে, তিনি একক আল্লাহ এবং তিনি শক্তিশালী ও বিজয়ী (আনআম ২৯ টীকা দেখুন৷)

﴿فَلَمَّا أَنجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰ أَنفُسِكُم ۖ مَّتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
২৩) কিন্তু যখন তিনি তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারাই সত্য থেকে বিচ্যূত হয়ে পৃথিবীতে বিদ্রোহ করতে থাকে৷ হে মানষ! তোমাদের এ বিদ্রোহ উল্টা তোমাদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে৷ দুনিয়ার কয়েকদিনের আরাম আয়েশ (ভোগ করে নাও), তারপর্ আমার দিকেই তোমাদের ফিরে আসতে হবে৷ তোমরা কি কাজে লিপ্ত ছিলে তা তখন তোমাদের আমি জানিয়ে দেবো৷  



==============================

আল্লাহ ব্যতীত আল্লাহ্‌র সৃষ্টির প্রতি ভরসা বা নির্ভর করা শিরক

**আপনি ছিলেন বলেই আজকে রক্ষা পেলাম** **মাঝি ভাল বলে নৌকা ডুবল না** **ড্রাইভার ভাল বলে দুর্ঘটনা ঘটলো না** **আমি আপনার উপরই ভরসা করছি** **আপনি ছাড়া আর কে সাহায্য করবে** **দয়াল বাবা, পীর বাবা, দয়ার নাবী আমাই রক্ষা কর** **তুমই শুধু আমার একমাত্র ভরসা** **তুমই শুধু আমার একমাত্র আমাকে বাচাতে পারো (নাঊজুবিল্লাহ)** **

=============================

প্রশ্ন:  আমি অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করি যে আল্লাহ একমাত্র আমাদের রক্ষা করার এবং বাঁচানোর মালিক। কিন্তু চলার পথে কেউ যদি আমাকে কোন দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা করে আর আমি যদি বলি আপনি আমাকে বাঁচালেন। তাহলে কি শিরক করা হবে?

উত্তর: এক্ষেত্রে সরাসরি বলা যাবেনা যে, আপনি আমাকে বাচালেন। বরং, বলতে হবে, আল্লাহর আপনার মঙ্গল করুন। আল্লাহ একমাত্র আমাদের রক্ষা করার এবং বাঁচানোর মালিক। আল্লাহই আমাকে বাচিয়েছেন, তবে আপনার উসিলায় আজকে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করলেন। 




প্রশ্ন: ২৯৬: আত্মহত্যা নিয়ে কুরআনে কি কোন আয়াত আছে? অথবা কোন হাদীস? থাকলে রেফারেন্স সহ উল্লেখ করবেন প্লীজ।

আত্মহত্যা কি? 

আত্মহত্যা মানে নিজকে নিজেই ধ্বংস করা। নিজ আত্মাকে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট দেয়া। নিজ হাতে নিজের জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানোর নামই আত্মহত্যা।
 ইসলামে আত্মহত্যার ভয়াবহ পরিনাম 

ইসলামি দৃষ্টিকোণে আত্মহত্যা একটি জঘন্যতম মহাপাপ। আল্লাহ মানুষকে মরণশীল করে সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে একমাত্র আল্লাহই জন্ম দেন এবং একমাত্র তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু আত্মহত্যার ক্ষেত্রে বান্দা স্বাভাবিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে মৃত্যুকে নিজের হাতে নিয়ে নিজেই নিজকে হত্যা করে ফেলে। এ কারণে এটি একটি গর্হিত কাজ। কবিরা গুনাহ। আল্লাহ মহান এমন কাজকে মোটেই পছন্দ করেন না। এ কারণে যদিও শরিয়তে নির্দেশনায় আত্মহত্যাকারীর জানাযা হয় তবু রাসূল [সা.] নিজে কখনো আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়াননি। সাহাবিদের দ্বারা তা পড়ানো হয়। আত্মহত্যা ইসলামি শরিয়তে জঘন্যতম একটি পাপ, যার একমাত্র শাস্তি জাহান্নাম। নবিজি [সা.] আত্মহত্যাকারীর জানাজা আদায় না করা থেকেই অনুমান করা যায় যে আত্মহত্যা কত বড় পাপ। আত্মহত্যা ইহকাল, পরকাল উভয়টি ধ্বংস করে দেয়।যে কোনো কারণেই হোক না কেন, আত্মহত্যা মহাপাপ। জঘন্যতম পাপ। আত্মহত্যা প্রসঙ্গে রাসুল [সা.] কঠোর হুঁশিয়ারি বাণী উচ্চারণ করে গেছেন।
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? 

আগেকার দিনের ইতিহাস থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সাংসারিক কলহ-দ্বন্দ্বে পড়ে, অতিরিক্ত রাগের কারণে, কাঙ্ক্ষিত কোনো কিছু লাভ করতে না পারলে, নিরাশ বা বঞ্চিত হওয়ার কারণে, লজ্জা ও মানহানিকর কোনো কিছু ঘটে যাওয়া, বা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রকাশ হওয়া, অভাব, দারিদ্র্যতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হওয়ার কারণেও আত্মহত্যা হতে পারে।এছাড়াও আরো যে সব কারণে আমাদের সমাজে জঘন্য এই কাজটি ঘটে, তা হলো- স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য,যৌতুকের কারনে ঝগড়া বিবাদ, পিতা-মাতা ও ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য, পরীক্ষায় ব্যর্থতা, প্রেম-বিরহ, মিথ্যা অভিনয়ের ফাঁদে পড়ে,ব্যবসায়ে বারে বারে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি। যখন জ্ঞান-বুদ্ধি-উপলব্ধি-অনুধাবন শক্তি লোপ পায়, নিজকে অসহায়-ভরসাহীন মনে হয়, তখনই মানুষ আত্মহত্যা করে বসে।
আল-কোরানে আত্মহত্যা প্রসঙ্গ 

এক. 

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আত্মহত্যা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। [সুরা নিসা : ২৯]
দুই. 

আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন- ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না।’ (সূরা বাকারা; ১৯৫ আয়াত)।
তিন.

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ যাবতীয় অপরাধ মার্জনা করেন।’ (সূরা জুমার; ৫৩ আয়াত)।

 চার. 

আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে জগতে বিপর্যয় সৃষ্টি বা হত্যার শাস্তি ব্যতিরেকে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে জীবন্ত রাখে সে যেন সব মানুষকেই জীবন্ত রাখে। (সূরা মায়িদা : ৩২ আয়াত)।
আল-হাদিসে আত্মহত্যা প্রসঙ্গ 

এক. 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিল। সে আহত হয়ে ছটফট করতে লাগল। এ অবস্থায় সে ছুরি নিয়ে নিজেই নিজের হাত কাটল ও ব্যাপক রক্তপাত ঘটল এবং তার মৃত্যু হলো।’ আল্লাহ এ ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এ বান্দা নিজের ব্যাপারে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলছে। এ কারণে আমি তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’ [ বোখারি :৩২৭৬]

 দুই.

আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত নবিজি [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ [বোখারি ও মুসলিম]
তিন. 

হজরত জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ [রা.] রাসুল [সা.] থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘একজন ব্যক্তি জখম হলে, সে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এর প্রেক্ষিতে আল্লাহ বললেন, ‘আমার বান্দাহ আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ [বোখারি]
চার. 

অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনের মধ্যে অবস্থান করে ওই বিষ পান করতে থাকবে এবং সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে নিক্ষেপ করে আত্দহত্যা করবে, সে ব্যক্তি সর্বদা পাহাড় থেকে জাহান্নামের আগুনে পতিত হতে থাকবে, এভাবে সে ব্যক্তি সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। [মুসলিম]
এছাড়া আরো কিছু হাদিস এই প্রসঙ্গে আলোচনা এসেছে, 

ক. 

সাহাবা আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে।
খ. 

যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে।
গ. 

যে কোন ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে।
 ঘ. 

রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে- দোজখেও সে সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।
ঙ. 

হযরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের পূর্বেকার এক লোক আহত হয়ে সে ব্যথা সহ্য করতে পারেনি। তাই সে একখানা চাকু দিয়ে নিজের হাত নিজেই কেটে ফেলে। এর পর রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা নিজেকে হত্যা করার ব্যাপারে বড় তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। তাই আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।
 আত্মহত্যা একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি 

আত্মহত্যা একটি ভয়ংকর সামাজিক ব্যাধি। মাঝেমধ্যেই পত্রিকার পাতায় আত্মহত্যার সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে হতাশ নারী-পুরুষ বেছে নেয় আত্মহননের দুর্ভাগ্যজনক পথ। ইসলামে আত্মহত্যা মহাপাপ জেনেশুনেও যাদের পরিস্থিতি সামলানোর ক্ষমতা দুর্বল, তারাই ধ্বংসাত্মক ও মর্মান্তিক ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস নয়, সৃষ্টির পথে এগিয়ে যেতে হবে। অথচ বাস্তবে দেখা যায়, অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিজীবী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ীও এমন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত নন। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত ছাড়াও আত্মহত্যা যেমন যুবক ও প্রৌঢ়দের মধ্যে দেখা যায়, তেমনি তা নারী-পুরুষের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। মূলত ধৈর্যের অভাবেই মানুষের মাঝে এমন একটি মহাপাপের বিস্তার ঘটছে। এছাড়া শয়তানের কু-প্ররোচনা তো আছেই। সব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে ইসলামের আইন ও অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই কেবল এই মহাব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সবাইকে আত্মহত্যার মতো মহাপাপ থেকে বাঁচার এবং বিপদে-আপদে ধৈর্য ধারণ করার তওফিক দান করুন। আমিন।

 মাওলানা মিরাজ রহমান

প্রশ্ন: ২৯৫ : কোন বিধর্মী মারা গেলে তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা যাবে কি? কোরআন হাদিসের আলোকে রেফারেন্স দিয়ে বলবেন দয়াকরে।


প্রথমত: হযরত মুহাম্মদ সা:, হযরত ইবরাহীম আ: এবং হযরত নূহ আ: এর জীবনী থেকে বিষয়টি তুলে ধরা হলো :


সুরা তওবা:  আয়াত নং : ৮৪, ব্যাখ্যা সহ :

﴿وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰ أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ قَبْرِهِ ۖ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ﴾
৮৪) আর আগামীতে তাদের মধ্য থেকে কেউ মারা গেলে তার জানাযার নামাযও তুমি কখ্খনো পড়বে না৷ এবং কখনো তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না৷ কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তাদের মৃত্যু হয়েছে ফাসেক অবস্থায়৷ ৮৮  
৮৮ . তাবুক থেকে ফিরে আসার পর বেশী দিন যেতে না যেতেই মুনাফীক নেতা আবুদুল্লাহ ইবনে উবাই মারা গেলো৷ তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ছিলেন নিষ্ঠাবান মুসলমান৷ তিনি নবী(সা) এর খেদমতে হাযির হয়ে কাফনে ব্যবহারের জন্য তাঁর কোর্তা চাইলেন ৷ তিনি অত্যন্ত উদার হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে কোর্তা দিয়ে দিলেন৷ তারপর আবদুল্লাহ তাঁকেই জানাযার নামায পড়াবার জন্য অনুরোধ করলেন৷ তিনি এ জন্যও তৈরী হয়ে গেলেন৷ হযরত উমর (রা) বারবার এ মর্মে আবেদন জানাতে লাগলেন -হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি এমন ব্যক্তির জানাযার নামায পড়াবেন যে অমুক অমুক কাজ করেছে? কিন্তু তিনি তার এ সমস্ত কথা শুনে মুচকি হাসতে লাগলেন৷ তার অন্তরে শত্রু মিত্র সবার প্রতি যে করূনার ধারা প্রবাহিত ছিল তারি কারণে তিনি ইসলামের এ নিকৃষ্টতম শত্রুর মাগফেরাতের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করতেও ইতস্তত করলেন না৷ শেষে যখন, তিনি জানাযার নামায পড়াবার হুকুমে তাকে নামায পড়াবার জন্য দাঁড়িয়েই গেলেন, তখন এ আয়াতটি নাযিল হলো৷ এবং সরাসরি আল্লাহর হুকুমে তাঁকে জানাযা পড়ানো থেকে বিরত রাখা হলো৷ কারণ এ সময় মুনাফিকদের ব্যাপারে স্থায়ী নীতি নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল, যে, মুসলমানদের সমাজে আর মুনাফিকদেরকে কোন প্রকারে শিকড় গেড়ে বসার সুযোগ দেয়া যাবে না এবং এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে এ দলটির সাহস বেড়ে যায়৷
এ থেকে শরীয়াতের এ বিষয়টি স্থিরকৃত হয়েছে যে,ফাসেক , অশ্লীল ও নৈতিকতা বিরোধী কাজকর্মের লিপ্ত ব্যক্তি এবং ফাসেক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তির জানাযার নামায মুসলমানদের ইমাম ও নেতৃস্থানীয় লোকদের পড়ানো উচিত নয়৷ তাতে শরীক হওয়াও উচিত নয়৷ এ আয়াতগুলো নাযিল হবার পর নবী (সা) নিয়ম করে নিয়েছিলেন যে কোন জানাযার শরীক হবার জন্য তাকে ডাকা হলে তিনি প্রথমে মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন৷ জিজ্ঞেস করতেন, সে কেমন ছিল৷ যদি জানতে পারতেন সে অসৎ চরিত্রের অধিকারী ছিল, তাহলে তার পরিবারের লোকদের বলে দিতেন, তোমরা যেভাবে চাও একে দাফন করে দিতে পারো৷


====================================

সুরা হুদ: আয়াত নং :  ৪৫-৪৮ : ব্যাখ্যা সহ :

﴿وَنَادَىٰ نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ﴾
৪৫) নূহ তার রবকে ডাকলো৷ বললো, “ হে আমার রব! আমার ছেলে আমার পরিবারভুক্ত এবং তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য ৪৭ আর তুমি সমস্ত শাসকদের মধ্যে সবেচেয়ে বড় ও উত্তম শাসক৷” ৪৮ 
৪৮. অর্থাৎ তোমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এরপর আর কোন আবেদন নিবেদন খাটবে না৷ আর তুমি নির্ভেজাল জ্ঞান ও পূর্ণ ইনসাফের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকো৷
﴿قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۖ إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ﴾
৪৬) জবাবে বলা হলো, “হে নূহ! সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়৷ সে তো অসৎ কর্মপরায়ণ৷ ৪৯ কাজেই তুমি আমার কাছে এমন বিষয়ের আবেদন করো না যার প্রকৃত তত্ত্ব তোমার জানা নেই৷ আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, নিজেকে অজ্ঞদের মতো বানিয়ে ফেলো না”৷৫০ 
৪৯. ব্যাপারটা ঠিক এ রকম, যেমন এক ব্যক্তির শরীরের কোন একটা অংশ পচে গেছে৷ ডাক্তার অংগটি কেটে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ এখন রোগী ডাক্তারকে বলছে, এটা তো আমার শরীরের একটা অংশ, আপনি কেটে ফেলে দেবেন? ডাক্তার জবাবে বলেন, এটা তোমার শরীরের অংশ নয়৷ কারণ এটা পচে গেছে৷ এ জবাবের অর্থ কখনো এ নয় যে, প্রকৃতপক্ষে এ অংগটির শরীরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই৷ বরং এর অর্থ হবে, তোমার শরীরের জন্য সুস্থ ও কার্যকর অংগের প্রয়োজন, পচা অংগের নয়৷ কারণ পচা অংগ একদিকে যেমন শরীরের কোন কাজে আসে না তেমনি অন্যদিকে বাদবাকি সমস্ত শরীরটাকেও নষ্ট করে দেয়৷ কাজেই যে অংগটি পচে গেছে সেটি আর এ অর্থে তোমার শরীরের কোন অংশ নয় যে অর্থে শরীরের সাথে অংগের সম্পর্কের প্রয়োজন হয়৷ ঠিক এমনিভাবেই একজন সৎ ও সত্যনিষ্ঠ পিতাকে যখন একথা বলা হয় যে, এ ছেলেটি তোমার পরিজনদের অন্তরভুক্ত নয়, কারণ চরিত্র ও কর্মের দিক দিয়ে সে ধ্বংস হয়ে গেছে তখন এর অর্থ এ হয় না যে, এর মাধ্যমে তার ছেলে হবার বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে বরং এর অর্থ এ হয় না যে, এর মাধ্যমে তার ছেলে হবার বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে বরং এর অর্থ শুধু এতটুকুই হয় যে, বিকৃত ও ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোক তোমার সৎ পরিবারের সদস্য হতে পারে না৷ সে তোমার রক্ত সম্পর্কীয় পরিবারের একজন সদস্য হতে পারে কিন্তু তোমার নৈতিক পরিবারের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই৷ আর আজ যে বিষয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে সেটি বংশগত বা জাতি-গোষ্ঠীগত কোন বিরোধের ব্যাপার নয়৷ এক বংশের লোকদের রক্ষা করা হবে এবং অন্য বংশের লোকদের ধ্বংস করে দেয়া হবে, ব্যাপারটি এমন নয়৷ বরং এটি হচ্ছে কুফরী ও ঈমানের বিরোধের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার৷ এখানে শুধুমাত্র যারা সৎ তাদেরকে রক্ষা করা হবে এবং যারা অসৎ ও নষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে খতম করে দেয়া হবে৷
ছেলেকে অসৎকর্ম পরায়ণ বলে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে৷ স্থুল দৃষ্টিসম্পন্ন লোকেরা সন্তানকে ভালোবাসে ও লালন করে শুধু এজন্যে যে, তারা তাদের পেটে বা ঔরসে জন্ম নিয়েছে এবং তাদের সাথে তাদের রক্ত সম্পর্ক রয়েছে৷ তাদের সৎ বা অসৎ হওয়ার ব্যাপারটি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ কিন্তু মুমিনের দৃষ্টি হতে হবে সত্যের প্রতি নিবদ্ধ৷ তাকে তো ছেলেমেয়েদেরকে এ দৃষ্টিতে দেখতে হবে যে, এরা আল্লাহর সৃষ্টি কতিপয় মানুষ৷ প্রাকৃতিক নিয়মে আল্লাহ এদেরকে তার হাতে সোপর্দ করেছেন৷ এদেরকে লালন-পালান করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ দুনিয়ায় মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তৈরী করতে হবে৷ এখন তার যাবতীয় পরিশ্রম ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার পরও তার ঘরে জন্ম নেয়া কোন ব্যক্তি যদি সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য তৈরী হতে না পারে এবং যিনি তাকে মুমিন বাপের হাতে সোপর্দ করেছিলেন নিজের সেই রবেরই বিশ্বস্ত খাদেম হতে না পারে, তাহলে সেই বাপকে অবশ্যি বুঝতে হবে যে, তার সমস্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে৷ এরপর এ ধরনের ছেলে-মেয়েদের সাথে তার মানসিক যোগ থাকার কোন কারণই থাকতে পারে না৷
তারপর সংসারের সবচেয়ে প্রিয় ছেলেমেয়েদের ব্যাপারটি যখন এই তখন অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে মুমিনের দৃষ্টিভংগী যাকিছু হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়৷ ঈমান একটি চিন্তাগত ও নৈতিক গুণ৷ এ গুণের প্রেক্ষিতেই মুমিনকে মুমিন বলা হয়৷ মুমিন হওয়ার দিক দিয়ে অন্য মানুষের সাথে তার নৈতিক ও ঈমানী সম্পর্ক ছাড়া আর কোন সম্পর্কই নেই৷ রক্ত-মাংসের সম্পর্কযুক্ত কেউ যদি তার সাথে এ গুণের ক্ষেত্রে সম্পর্কিত হয় তাহলে নিসন্দেহে সে তার আত্মীয়৷ কিন্তু যদি সে এ গুণ শূন্য হয় তাহলে মুমিন শুধুমাত্র রক্তমাংসের দিক দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক রাখবে৷ তার হৃদয় ও আত্মার সম্পর্ক তার সাথে হতে পারে না৷ আর ঈমান ও কুফরীর বিরোধের ক্ষেত্রে যদি সে তার মুখোমুখি দাঁড়ায় তাহলে এ অবস্থায় সে এবং একজন অপরিচিত কাফের তার চোখে সমান হয়ে দেখা দেবে৷
৫০. এ উক্তি দেখে কারো এ ধারণা করা ঠিক হবে না যে, হযরত নূহের (আ) মধ্যে ঈমানী চেতনার অভাব ছিল অথবা তাঁর ঈমানে জাহেলিয়াতের কোন গন্ধ ছিল৷ আসল কথা হচ্ছে, নবীগণও মানুষ৷ আর মুমিনের পূর্ণতার জন্য যে সর্বোচ্চ মানদণ্ড কায়েম করা হয়েছে সর্বক্ষণ তার উচ্চতম শিখরে আরোহণ করে থাকা কোন মানুষের সাধ্যায়াত্ত নয়৷ কোন কোন সময় কোন নাজুক মনস্থাত্বিক অবস্থায় নবীর মতো উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন লোকও মুহূর্তকালের জন্য হলেও নিজের মানবিক দুর্বলতার কাছে পরাস্ত হন৷ কিন্তু যখনই তিনি অনুভব করেন অথবা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর মধ্যে এ অনুভূতি জাগানো হয় যে, তিনি কাংখিত মানের নিচে নেমে যাচ্ছেন তখনই তিনি তাওবা করেন এবং নিজের ভুলের সংশোধন করে নেবার ব্যাপারে এক মুহূর্তও ইতস্তত করেন না৷ হযরত নূহের নৈতিক উচ্চমানের এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে যে, জওয়ান ছেলেকে চোখের সমানে ডুবে যেতে দেখছেন! এ দৃশ্য দেখে তাঁর কলিজা ফেটে যাবার উপক্রম হচ্ছে৷ কিন্তু যখনই আল্লাহ সবাধান করে জানিয়ে দেন, যে ছেলে হককে ত্যাগ করে বাতিলের সহযোগী হয়েছে তাকে নিছক তোমার ঔরসজাত বলেই নিজের ছেলে মনে করা একটি জাহেলী ভাবাবেগ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তখনই তিনি নিজের মানসিক আঘাতের ব্যাপারে বেপরোয়া হয়ে ইসলামের কাংখিত চিন্তা ও ভাবধারার দিকে ফিরে আসেন৷
﴿قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ ۖ وَإِلَّا تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ﴾
৪৭) নূহ তখনই বললো, “হে আমার রব! যে জিনিসের ব্যাপারে আমার জ্ঞান নেই তা তোমার কাছে চাইবো- এ থেকে আমি তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি৷ যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার প্রতি রহমত না করো তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো৷”৫১ 
৫১. নূহের ছেলের এ ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী প্রদ্ধতিতে তাঁর ইনসাফ যে কি পরিমাণ পক্ষপাতহীন এবং তাঁর ফায়সালা যে কত চূড়ান্ত হয়ে থাকে তা বলেছেন৷ মক্কার মুশরিকরা মনে করতো, আমরা যাই করি না কেন আমাদের ওপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে পারে না৷ কারণ আমরা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের আওলাদ এবং বড় বড় দেবদেবীর ভক্ত৷ ইহুদী ও খৃষ্টানরাও এমনি ধরনের কিছু ধারণা পোষণ করতো এবং এখনো পোষণ করে থাকে৷অনেক ভ্রষ্টাচারী মুসলমানও এ ধরনের কিছু মিথ্যা ধারণার ওপর নির্ভর করে বসে আছে৷ তারা মনে করে, আমরা অকুক বোজর্গের আওলাদ এবং অমুক বোজর্গের ভক্ত৷ কাজেই তাদের সুপারিশই আমাদের আল্লাহর শাস্তির হাত থেকে বাঁচাবে৷ কিন্তু এখানে এর বিপরীতে যে দৃশ্য দেখানো হচ্ছে তা হচ্ছে এই যে, একজন মহান মর্যাদাশালী নবী নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে ডুবে যেতে দেখছেন এবং অস্থির হয়ে সন্তানের গোনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন৷ কিন্তু আল্লাহর দরবার থেকে জবাবে তাকে ধমক দেয়া হচ্ছে৷ বাপের পয়গম্বরীর মর্যাদাও ছেলেকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচাতে পারছে না৷


=======================

সুরা তওবা: আয়াত নং: ১১৪ : ব্যাখ্যা সহ : 


﴿وَمَا كَانَ اسْتِغْفَارُ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ إِلَّا عَن مَّوْعِدَةٍ وَعَدَهَا إِيَّاهُ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ أَنَّهُ عَدُوٌّ لِّلَّهِ تَبَرَّأَ مِنْهُ ۚ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَأَوَّاهٌ حَلِيمٌ﴾
১১৪) ইবরাহীম তার বাপের জন্য যে মাগফিরাতের দোয়া করেছিল তা তো সেই ওয়াদার কারণে ছিল যা সে তার বাপের সাথে করেছিল্ ১১২   কিন্তু যখন তার কাছে একথা পরিস্কার হয়ে গেছে যে, তার বাপ আল্লাহর দুশমন তখন সে তার প্রতি বিমুখ হয়ে গেছে৷ যথার্থই ইবরাহীম কোমল হৃদয়, আল্লাহভীরু ও ধৈর্যশীল ছিল৷ ১১৩  
১১২ . হযরত ইবরাহীম তার মুশরিক পিতার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার সময় যে কথা বলেছিলেন সেদিকে ইংগিত করা হয়েছে ৷ তিনি বলেছিলেনঃ
আপনার প্রতি সালাম, আপনার জন্য আমি আমার রবের কাছে দোয়া করবো যেন তিনি আপনাকে মাফ করে দেন৷ তিনি আমার প্রতি বড়ই মেহেরবান৷ (মারয়ামঃ ৪৭ )
তিনি আরো বলেছিলেনঃ
আমি আপনার জন্য অবশি ক্ষমা চাইবো৷ তবে আপনাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নেই৷ (আল মুমতাহিনাঃ ৪)
উপরক্ত ওয়াদার ভিত্তিতে তিনি নিজের পিতার জন্য এ দোয়া করেছিলেনঃ
আর আমার পিতাকে মাফ করে দাও, তিনি পথভ্রষ্টদের অন্তরভুক্ত ছিলেন৷ আর যেদিন সকল মানুষকে উঠানো হবে সেদিন আমাকে লাঞ্ছিত করো না৷ যেদিন ধনসম্পদ এবং সন্তান সন্তুতি কারোর কোন কাজে লাগবে না৷ একমাত্র সেই নাজাত পাবে , যে আল্লাহর সামনে হাযির হবে বিদ্রোহমুক্ত হৃদয় নিয়ে৷ (আশ শুআরাঃ ৮৬-৮৯)
এ দোয়া তো প্রথমত অত্যন্ত সতর্ক ও সংযত ভাষায় করা হয়েছিল৷ কিন্তু পরক্ষনেরই হযরত ইবরাহীম চিন্তা করলেন যে, তিনি যে ব্যক্তির জন্য দোয়া করেছেন সে তো ছিল প্রকাশ্য আল্লাহদ্রোহী এবং আল্লাহর দীনের ঘোরতর শত্রু তখন তিনি এ থেকে বিরত হলেন এবং একজন যথার্থ বিশ্বস্ত মুমিনের মত বিদ্রোহীর প্রতি সহানুভূতি দেখানো থেকে পরিষ্কারভাবে সরে দাঁড়লেন৷ অথচ এ বিদ্রোহী ছিল তার পিতা ,যে এক সময় স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে তাকে লালন পালন করেছিল৷
১১৩ . মূলে -----(আওওয়াহুন) ও --------(হালীমুন) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷ আওওয়াহুন মানে হচ্ছে, যে অনেক বেশী হা -হুতাশ করে, কান্নাকাটি করে, ভয় পায় ও আক্ষেপ করে ৷ আর হালীম এমন ব্যক্তিকে বলা হয় , যে নিজের মেজায সংযত রাখে, রাগে, শত্রুতায় ও বিরোধিতায় বেসামাল আচরণ করে না এবং অন্যদিকে ভালবাসায়, বন্ধুত্বের ও হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করে যায় না৷এখানে এ শব্দ দুটি দ্বিবিধ অর্থ প্রকাশ করছে৷ হযরত ইবরাহীম (আ) তার পিতার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করেছেন ৷ কারণ তিনি ছিলেন অত্যন্ত সংবেদনশীল হৃদয় বৃত্তির অধিকারী৷ তার পিতা জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত হবে, একথা ভেবে তিনি কেঁপে উঠেছিলেন৷ আবার তিনি ছিলেন "হালিম" -সংযমী ও ধৈর্যশীল৷ তার পিতা ইসলামের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বাধা দেবার জন্য তার ওপর যে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল তা সত্ত্বেও তার মুখ থেকে পিতার জন্য দোয়া বের হয়ে গিয়েছিল৷ তারপর তিনি দেখলেন , তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন ,তাই তিনি তার থেকে নিজেকে দায়মুক্ত করে নিলেন ৷ কারণ তিনি আল্লাহকে ভয় করতেন এবং কারোর প্রতি ভালোবাসায় সীমা অতিক্রম করতেন না৷




========================

১। কোন অমুসলিম মারা গেলে সে জাহান্নামে যাবে না জান্নাতে যাবে এ জাতীয় আলাপ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। কোনো মানুষ জাহান্নামে যাবে যা জান্নাতে যাবে এই ব্যাপারটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার একচ্ছত্র সিদ্ধান্ত, এই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানিনা। আমরা যাকে কুফরী করে মারা যাতে দেখছি সে হয়ত মরার আগে তাওবা করেছিলো, আবার আমরা যাকে ফেরেশতার মতো মনে করি সে হয়তো ভেতরে ভেতরে মুনাফিক ছিলো! কাজেই, এই কথা আমরা বলতে পারবো যে আমাদের জানা মতে অমুক লোক অমুসলিম (কাফের) হিসাবে মারা গেছে, কিন্তু কোনো ব্যক্তি সম্বন্ধে আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারবো না সে জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে।

২। যে মারা গেছে সে ভালো কাজ করে থাকলে আমরা তার সেই কাজগুলোর প্রশংসা করবো। যেমন, রাসূলুল্লাহ(সা) এর গোত্র বনু হাশিমকে যখন কুরাইশের অন্যান্য গোত্র বয়কট করেছিলো তখন মুতিম ইবনে ‘আদি কাফের হওয়া সত্ত্বেও খাবার সরবরাহ করে মুসলিমদের সাহায্য করেছিলেন। আর তাই, বদর-যুদ্ধে বিজয়ের পর কুরাইশী যুদ্ধবন্দীদের সামনে রেখে রাসূলুল্লাহ(সা) বলেছিলেন, ‘আজ যদি মুতিম বেঁচে থাকতো আর এই নোংরা লোকগুলোর জন্য সুপারিশ করতো, আমি অবশ্যই তার কারণে এদেরকে মাফ করে দিতাম’। (বুখারী ৫/৫৯/৩৫৮)

৩। অমুসলিমের ভালো কাজগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে, তার ভালো উপদেশগুলো গ্রহণ করা যাবে। রাসূলুল্লাহ(সা) আবু হুরাইরাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে সত্য কথা এমনকি শয়তান বললেও গ্রহণ করা যাবে।

৪। মৃত মানুষের কোন রকম বদনাম করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ(সা) বলেন: মৃতদের গালাগাল কোরো না, তারা তাদের কর্মের কাছে পৌঁছে গেছে।

৫। সফলতা মানে কোটি টাকা কামাই করা নয়, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার নয়। ইসলামী বিশ্বাস মতে একজন মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে যদি সে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ না করে থাকে (অর্থাৎ মুসলিম না হয়ে থাকে)। আর, সেই ব্যক্তি সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন যার মধ্যে তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) সবচেয়ে বেশী (সূরা হুজুরাত:১৩)।

৬। অমুসলিমের মৃত্যুতে তার জন্য দু’আ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ(সা) তাঁর চাচা (আবু তালিব) এবং এমনকি তার মা এর জন্যও দু’আ করার অনুমতি পান নাই।

ওদের মধ্যে কারো মৃত্যু হলে তুমি কখনো ওর ওপর (জানাজার) নামাজ পড়বে না এবং ওর কবরের পাশে দাঁড়াবে না। ওরা তো আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছিল, আর অবাধ্য অবস্থাতেই ওদের মৃত্যু হয়েছে। (সূরা তাওবা:৮৪)

তুমি ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো বা না করো একই কথা, তুমি সত্তরবার (অর্থাৎ অসংখ্যবার) ওদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ্ ওদেরকে কখনোই ক্ষমা করবেন না। এ এজন্য যে, ওরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে। আল্লাহ্ অবাধ্য সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। - (সূরা তাওবা:৮০)

৭। অমুসলিমের মৃত্যুতে RIP বলা যাবে না। RIP অর্থ হলো Rest In Peace, যার মানে দাড়ায় মৃত ব্যক্তির জন্য শান্তি কামনা করা। কিন্তু, ইসলামে অমুসলিমের মৃত্যুর পর তার জন্য শান্তি কামনা করা ও দু’আ করা নিষেধ। তবে, সে বেঁচে থাকতে তার হেদায়েতের জন্য দু’আ করা যাবে।

=====================

অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য দোয়া করা যায় কিনা?

জিজ্ঞাসা–১০০আমার পরিচিত একব্যক্তি আমেরিকায় থাকে। সেখানে এক অমুসলিম মেয়ে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন আগে ঐ দেশের হাসপাতালে মেয়েটি মারা যায়। লোকটি দেশে আসার পর মহল্লার মসজিদে স্ত্রীর জন্য দোয়ার আয়োজন করে। প্রশ্ন হল,অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য এরকম দোয়ার আয়োজন করা জায়েয আছে কিনা?–tareqbdz@gmail.com
জবাব: কোনো ব্যক্তি অমুসলিম অবস্থায় মারা গেলে তার জন্য এরকম দোয়ার আয়োজন করা নাজায়েয। আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اَنْ یَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِیْنَ وَ لَوْ كَانُوْۤا اُولِیْ قُرْبٰی مِنْۢ بَعْدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمْ اَنَّهُمْ اَصْحٰبُ الْجَحِیْمِ
“নবী ও যারা ঈমান এনেছে তাদের পক্ষে মুশরিকদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা সংগত নয়, তারা তাদের আত্মীয়-স্বজন হলেই বা কি এসে যায়, যখন একথা সুষ্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামেরই উপযুক্ত।”(সূরা আত তওবা : ১১৩)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

===========================

প্রশ্ন : অমুসলিমদের জন্য দুনিয়ার বিষয়ে কল্যাণের দোয়া করা কি জায়েজ?
উত্তর : অমুসলিমদের জন্য ইমানদার ব্যক্তি দোয়া করবে তাদের হেদায়েতের জন্য; দুনিয়ার বিষয়ে কল্যাণের জন্য নয়। দুনিয়ার কল্যাণের বিষয়ে তারা ভালো জানে। আল্লাহ অমুসলিমদের উদ্দেশে কোরআনুল কারিমের মধ্যে বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়ার জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দাও।’ ফলে অমুসলিম-কাফের যারা রয়েছে, তাদের কাছে দুনিয়ার বিষয়ই হলো মূল লক্ষ্য। তাদের জন্য যে দোয়া করা উত্তম সেটা হলো, তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে পারেন। কিন্তু তাদের জন্য মৃত্যুর পর মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা জায়েজ নেই।
ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ।)

প্রশ্ন: ২৯৪ : নামাজের পরে দোয়া ও জিকির সমূহ।

নামাজের পর দোয়া ও জিকির

🍀সালাত পরবর্তী দুয়া ও জিকির সমূহ🌳
🌷বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম🌷
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। আমরা তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট তওবা করি। আমাদের নাফসের সকল প্রকার বিপর্যয় ও কুকীর্তি হতে রক্ষা করার জন্য তাঁরই সাহায্য প্রার্থনা করি। অতঃপর আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ্ এক এবং তাঁর কোনো শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্‌র বান্দাহ্ ও রাসুল। আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে কিয়ামত পর্যন্ত সালাম বর্ষিত হউক তাঁর রাসূল, আহলে বাইত এবং সমস্ত সাহাবারদের উপর আর ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের উপর যারা অনুসরণ করেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এবং আঁকড়ে ধরেছেন তাঁর সুন্নাতকে।
🌱আমাদের সমাজে দেখা যায়, ফরজ নামায হয়ে গেলে ইমাম-মুক্তাদীগণ সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করে থাকেন। যা অনেকের মতেই বেদাআতী পদ্ধতি । অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সকল দুয়া ও জিকির নিয়মিত পাঠ করতেন সেগুলোর কোন গুরুত্ব নাই।  তাইতো বলা হয়, সুন্নত যেখান থেকে উঠে যায় বেদআত সেখানে জায়গা দখল করে। আর আমাদের সমাজে এটাই হয়েছে। আল্লাহ যেন আমাদেরকে বিদআত বর্জন করে সুন্নত অনুসরণ করার তাওফীক দান করেন। আমীন।
সহীহ সুন্নাহ থেকে ফরজ সালাত সমাপান্তে ইমাম-মুক্তাদী সবার জন্য পঠিতব্য দুয়া ও জিকির সমূহ উপস্থাপন করা হল:
(1) اَللهُ أَكْبَرُ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ-
উচ্চারণ : ১. আল্লা-হু আকবার (একবার পড়বে)। আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ (তিনবার)।
অর্থ : আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[ 📚মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, 📚মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।]
(2) اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَ الْإِكْرَامِ.
২. আল্লা-হুম্মা আন্তাস্ সালা-মু ওয়া মিন্কাস্ সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’। ‘এটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন’। [মুসলিম, 📚মিশকাত হা/৯৬০। উল্লেখ্য যে, শায়খ জাযারী বলেন, এই সাথে ‘ইলায়কা ইয়ারজি‘উস সালাম, হাইয়েনা রববানা বিস সালা-ম, ওয়া আদখিলনা দা-রাকা দা-রাস সালাম…’-বৃদ্ধি করার কোন ভিত্তি নেই। এটি কোন গল্পকারের সৃষ্টি। -মিশকাত আলবানী হা/৯৬১-এর টীকা দ্র:।]
এই সময় তিনি তাঁর স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে সুন্নাত পড়বেন, যাতে দুই স্থানের মাটি ক্বিয়ামতের দিন তার ইবাদতের সাক্ষ্য দেয়। 
যেমন আল্লাহ বলেন,
يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا
‘ক্বিয়ামতের দিন মাটি তার সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে’।[📚যিলযাল ৯৯/৪; নায়ল ৪/১০৯-১০ পৃঃ]
وَعَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ: كَانَ يَقُولُ فِىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ: لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ اَللّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ. (مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
মুগীরাহ্ ইবনু শু‘বাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ফরয সলাতের পরে এ দু‘আ পড়তেনঃ ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, আল্ল-হুম্মা লা- মা-নি‘আ লিমা- আ‘ত্বয়তা, ওয়ালা- মু‘ত্বিয়া লিমা- মানা‘তা, ওয়ালা- ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ভিন্ন কোন উপাস্য নেই। তিনি অদ্বিতীয়। তাঁর কোন অংশীদার নেই! রাজত্ব একমাত্র তারই এবং সব প্রশংসা একমাত্র তাঁর জন্যে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান করো, কেউ নেই তা ফিরাবার। আর যা তুমি দান করতে বারণ করো, কেউ নেই তা দান করার। ধনবানকে ধন-সম্পদে পারবে না কোন উপকার করতে আপনার আক্রোশ-এর সামনে)। (📚মিশকাতুল মিসাবীহ,৯৬২ সহিহ : বুখারী ৮৪৪, মুসলিম ৫৯৩।)
وَعَن عَبْدِ اللهِ بْنِ الزُّبَيْرِ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللّهِ ﷺ إِذَا سَلَّمَ مِنْ صَلَاتِه يَقُولُ بِصَوْتِهِ الْأَعْلى: لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّهِ، لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَو كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৬৩
‘আবদুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সলাতের সালাম ফিরানোর পর উচ্চকণ্ঠে বলতেন,
‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর, লা- হাওলা ওয়ালা- ক্যুওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়ালা- না‘বুদু ইল্লা- ঈয়্যাহু, লাহুন্ নি‘মাতু, ওয়ালাহুল ফাযলু, ওয়ালাহুস্ সানা-উল হাসানু, লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়ালাও কারিহাল কা-ফিরূন’’
(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা মাত্রই তাঁর এবং তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাশীল। কোন অন্যায় ও অনিষ্ট হতে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই এবং কোন সৎ কাজ করারও ক্ষমতা নেই একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ‘ইবাদাত করি, যাবতীয় নি‘আমাত ও অনুগ্রহ একমাত্র তাঁরই পক্ষ থেকে এবং উত্তম প্রশংসাও তাঁর। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। আমরা তাঁর দেয়া জীবন বিধান একমাত্র তাঁর জন্য একনিষ্ঠভাবে মান্য করি, যদিও কাফিরদের নিকট তা অপ্রীতিকর।)। 📚মুসলিম ৫৯৪, يَقوْلُ بِصَوْيَه لْأَ عْلى শব্দটি মুসনাদে শাফি‘ঈর। কিন্তু সহীহ মুসলিমের শব্দ হলো يهلل بهن। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَال أَخَذَ بِيَدِه رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ إِنِّيْ لَاحِبُّكَ يَا مُعَاذُ فَقُلْتُ وَاَنَا اُحِبُّكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ فَلَا تَدَعْ اَنْ تَقُوْلَ فِـىْ دُبُرِ كُلِّ صَلَوةٍ رَبِّ أَعِنِّيْ عَلـى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ . رَوَاهُ أَحْمَدُ وأَبُوْ دَاوٗدَ وَالنَّسَائِـيُِّ اِلَّا اَنَّ اَبَا دَاؤُدَ لَمْ يَذْكُرْ قَالَ مُعَاذُ وَّاَنَا اُحِبُّكَ
গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৪৯
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমিও সবিনয়ে নিবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমিও আপনাকে ভালোবাসি। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি প্রত্যেক সলাতের পর এ দু‘আ পাঠ করতে ভুল করো নাঃ ‘‘রব্বি আ‘ইন্নী ‘আলা- যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ‘ইবা-দাতিকা।’’ (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকর, শুকর ও উত্তমরূপে ‘ইবাদাত করতে সাহায্য কর)। (আহমাদ, আবূ দাঊদ ও নাসায়ী)কিন্তু আবূ দাঊদ, ‘‘ক্ব-লা মু‘আ-যুন ওয়া আনা- উহিব্বুকা’’ বাক্য বর্ণনা করেননি।
📚হাদিসের মানঃ সহিহ
(4) رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا-
৪. রাযীতু বিললা-হে রববাঁও ওয়া বিল ইসলা-মে দীনাঁও ওয়া বিমুহাম্মাদিন্ নাবিইয়া।
অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে’। 
রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, 
যে ব্যক্তি এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[📚আবুদাঊদ হা/১৫২৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৩৬১ ]
(5) اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ-
৫. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুব্নে ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখ্লে ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরে; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিদ দুন্ইয়া ওয়া ‘আযা-বিল ক্বাবরে।
অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! (১) আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা হ’তে (২) আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হ’তে (৩) আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিকৃষ্টতম বয়স হ’তে এবং (৪) আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা হ’তে ও (৫) কবরের আযাব হ’তে’।[📚বুখারী, 📚মিশকাত হা/৯৬৪। সহিহ ]
(6) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ -
৬. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মে ওয়াল হাযানে ওয়াল ‘আজঝে ওয়াল কাসালে ওয়াল জুবনে ওয়াল বুখলে ওয়া যালা‘ইদ দায়নে ওয়া গালাবাতির রিজা-লে।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ-বেদনা হ’তে, অক্ষমতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে’।[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, 📚মিশকাত হা/২৪৫৮(সহিহ) ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮।]
(7) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَ رِضَا نَفْسِهِ وَ زِنَةَ عَرْشِهِ وَ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ-
৭. সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহাম্দিহী ‘আদাদা খাল্ক্বিহী ওয়া রিযা নাফ্সিহী ওয়া ঝিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালেমা-তিহ (৩ বার)।
অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওযন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ।[ মুসলিম, 📚মিশকাত হা/২৩০১ (সহিহ) ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘তাসবীহ ও হামদ পাঠের ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-৩; 📚আবুদাঊদ হা/১৫০৩।]
(8) يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ، اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ-
৮. ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা ‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা।
অর্থ : হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।[তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, 📚মিশকাত হা/১০২ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ-৩;📚 মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯। ]
(9) اَللَّهُمَّ أَدْخِلْنِىْ الْجَنَّةَ وَ أَجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ-
৯. আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।
অর্থ : হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [ 📚তিরমিযী, নাসাঈ, 📚মিশকাত হা/২৪৭৮ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮।]
(10) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-
১০. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিণা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।[📚মুসলিম, 📚মিশকাত হা/২৪৮৪ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯। ]
(11) سُبْحَانَ اللهِ، اَلْحَمْدُ ِللهِ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ-
১১. সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)। অথবা আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)।
অর্থ : পবিত্রতাময় আল্লাহ। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন উপাস্য একক আল্লাহ ব্যতীত; তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।[ মুসলিম,📚 মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
]
গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৬৬
৯৬৬-[৮] কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রতি ফরয সলাতের পর পাঠ করার মতো কিছু কালিমাহ্ আছে যেগুলো পাঠকারী বা ‘আমালকারী বঞ্চিত হয় না। সে কালিমাগুলো হলোঃ ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ তেত্রিশবার ও ‘আল্ল-হু আকবার’ চৌত্রিশবার করে পড়া। 
সহীহ : মুসলিম ৫৯৬।
হাদিসের মানঃ সহিহ
🌱গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৪ঃ সলাত (كتاب الصلاة)
হাদিস নম্বরঃ ৯৬৭
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে লোক প্রত্যেক সলাতের শেষে ‘সুবহা-নাল্ল-হ’ তেত্রিশবার, ‘আলহামদু লিল্লা-হ’ তেত্রিশবার এবং ‘আল্ল-হু আকবার’ তেত্রিশবার পড়বে, যার মোট সংখ্যা হবে নিরানব্বই বার, একশত পূর্ণ করার জন্যে একবার ‘‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহূ লা- শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া ‘আলা- কুল্লি শাইয়্যিন ক্বদীর’’ (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। সমগ্র রাজত্ব একমাত্র তাঁরই ও সকল প্রকারের প্রশংসা তাঁরই জন্য এবং তিনি সকল বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।) পাঠ করবে, তাহলে তার সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনারাশির সমানও হয়। 
📚মুসলিম ৫৯৭ সহিহ । 
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
🌱গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-১০. আল্লাহ তা‘আলার নামসমূহ (كتاب اسماء الله تعالٰى)
হাদিস নম্বরঃ ২৩৮৭

৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সকাল সন্ধ্যা ও শয্যা গ্রহণকালে যা বলবে
‘আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন ফাতিমা (রাঃ) (আটার) চাক্কি পিষতে পিষতে তার হাতের কষ্ট অনুভূত হওয়ার অভিযোগ স্বরূপ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। তিনি [ফাতিমা (রাঃ)] জানতে পেরেছিলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যুদ্ধবন্দী গোলাম এসেছে। কিন্তু তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রসূলের দেখা না পেয়ে মা ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর কাছে এ কথা বললেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ফিরে আসলেন ‘আয়িশাহ্ ফাত্বিমার কথা তাঁকে জানালেন। ‘আলী (রাঃ) বলেন, অতঃপর খবর পেয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসলেন, তখন আমরা বিছানায় শুয়ে পড়ছিলাম। তাঁকে দেখে আমরা উঠতে চাইলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় থাকো। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে এসে আমার ও ফাত্বিমার মাঝে বসে গেলেন। এমনকি আমি আমার পেটে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পায়ের শীতলতা অনুভব করলাম। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা যা আমার কাছে চেয়েছ এর (গোলামের) চেয়ে অনেক উত্তম এমন কথা আমি কি তোমাদেরকে বলে দেবো না? আর তা হলো যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তেত্রিশবার ‘সুবহা-নাল্ল-হ’, তেত্রিশবার ‘আলহামদুলিল্লা-হ’ এবং চৌত্রিশবার ‘আল্ল-হু আকবার’ পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদিম (গোলাম) হতে অনেক উত্তম হবে। (,📚 মুসলিম
সহীহ : বুখারী ৫৩৬১, 📚মুসলিম ২৭২৭, আবূ দাঊদ ৫০৬২, 📚আহমাদ ১১৪১, ইবনু হিববান ৬৯২১, সহীহ আত্ তারগীব ৬০৪। হাদিসের মানঃ সহিহ
(12) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ-
১২. সুব্হা-নাল্লা-হি ওয়া বিহাম্দিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম। অথবা সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহামদিহী’ পড়বে।
অর্থ : ‘মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান’। এই দো‘আ পাঠের ফলে তার সকল গোনাহ ঝরে যাবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’। 
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ সম্পর্কে বলেন যে, 
দু’টি কালেমা রয়েছে, যা রহমানের নিকটে খুবই প্রিয়, যবানে বলতে খুবই হালকা এবং মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী। তা হ’ল সুব্হা-নাল্লা-হি….।[ মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, 📚মিশকাত হা/২২৯৬-৯৮, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠের ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-৩; বুখারী হা/৭৫৬৩ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৮।
ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ছহীহুল বুখারী উপরোক্ত হাদীছ ও দো‘আর মাধ্যমে শেষ করেছেন।
(13) اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
১৩. আয়াতুল কুরসী: আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা তা’খুযুহু সেনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতে ওয়ামা ফিল আরয। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা বিইয্নিহি। ইয়া‘লামু মা বায়না আয়দীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম্ মিন ‘ইল্মিহী ইল্লা বিমা শা-আ; ওয়াসে‘আ কুরসিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তে ওয়াল আরয; ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।
অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হ’তে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী[ ইবনু কাছীর বলেন, সঠিক কথা এই যে, কুরসী ও আরশ পৃথক বস্ত্ত এবং আরশ কুরসী হ’তে বড়, বিভিন্ন হাদীছ ও আছার থেকে যা প্রমাণিত হয়’ (ঐ, তাফসীর)। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কুরসীর তুলনায় সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী ময়দানে পড়ে থাকা একটি ছোট লোহার বেড়ীর ন্যায়। আরশের তুলনায় কুরসী একই রূপ ছোট হিসাবে গণ্য। – ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ২/২৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৯।] সমগ্র আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।
হাদীসে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পরে এটি পড়বে, তাকে মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশে আর অন্য কিছু বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।” নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ, নং ১০০; ইবনুস সুন্নী, নং ১২১। আর শাইখ আলবানী হাদীসটিকে সহীহুল জামে‘ ৫/৩৩৯ তে এবং সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা ২/৬৯৭, নং ৯৭২ তে সহীহ বলেছেন।
🌱গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)
হাদিস নম্বরঃ ২১২৫
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা আল বাকারার শেষ দু’টি আয়াত, অর্থাৎ- ‘আ-মানার রসূলু’ হতে শেষ পর্যন্ত পড়ে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। ( সহীহবুখারী ৫০৪০, মুসলিম ৮০৭, মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৫৪৩। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
🌱গ্রন্থঃ মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
অধ্যায়ঃ পর্ব-৮ঃ কুরআনের মর্যাদা (كتاب فضائل القراٰن)
হাদিস নম্বরঃ ২১২৩
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ফিতরার মাল পাহারায় নিযুক্ত করলেন। এমন সময় আমার নিকট এক ব্যক্তি এসেই অঞ্জলি ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল। আমি তাকে ধরে ফেললাম ও বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। সে বলল, আমি একজন অভাবী লোক। আমার অনেক পোষ্য। আমি নিদারুণ কষ্টে আছি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তখন তাকে ছেড়ে দিলাম। ভোরে আমি (রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে) গেলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে আবূ হুরায়রাহ্! তোমার হাতে গত রাতে বন্দী লোকটির কী অবস্থা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! বন্দীটি তার নিদারুণ অভাব ও বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার ওপর দয়া করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো! সে তোমার কাছে মিথ্যা বলেছে। সে আবার আসবে।
[আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন] আমি রসূলের বলার কারণে বুঝলাম, অবশ্যই সে আবার আসবে। আমি তার অপেক্ষায় রইলাম। (ঠিকই) সে আবার এলো। দু’ হাতের কোষ ভরে খাদ্যশস্য উঠাতে লাগল এবং আমি তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, আমি তোমাকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে যাবো। সে বলল, তুমি আমাকে এবারও ছেড়ে দাও। আমি বড্ড অভাবী মানুষ। আমার পোষ্যও অনেক। আমি আর আসব না। এবারও আমি তার ওপর দয়া করলাম। ছেড়ে দিলাম। ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আবূ হুরায়রাহ্! তোমরা বন্দীর খবর কী? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! সে খুবই অভাবী। বহু পোষ্যের অভিযোগ করল। তাই আমি তার প্রতি দয়াপ্রদর্শন করলাম। তাকে ছেড়ে দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, শুনো তোমার কাছে সে মিথ্যা বলেছে। আবারও যে আসবে।
(বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন,) আমি বুঝলাম, সে আবারও আসবে। তাই আমি তার অপেক্ষায় থেকে তাকে ধরে ফেললাম। বললাম, তোমাকে আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে যাব। এটা তিনবারের শেষবার। তুমি ওয়া‘দা করেছিলে আর আসবে না। এরপরও তুমি এসেছ। সে বলল, এবারও যদি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাব, যে বাক্যের দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন। তুমি শোবার জন্য বিছানায় গেলে আয়াতুল কুরসী পড়বে, ‘‘আল্ল-হু লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম’’ আয়াতের শেষ পর্যন্ত। তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে সব সময় তোমার জন্য একজন রক্ষী থাকবে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান ঘেঁষতে পারবে না। এবারও তাকে আমি ছেড়ে দিলাম।
ভোরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, তোমার বন্দীর কী হলো? আমি বললাম (ইয়া রসূলাল্লাহ!), সে বলল, সে আমাকে এমন কয়টি বাক্য শিখাবে, যার দ্বারা আল্লাহ আমার উপকার করবেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ শুনো! এবার সে তোমার কাছে সত্য কথা বলেছে অথচ সে খুবই মিথ্যুক। তুমি কি জানো, তুমি এ তিন রাত কার সাথে কথা বলেছ? আমি বললাম, জি-না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এ ছিল একটা শয়তান। (📚বুখারী সহীহ : বুখারী ২৩১১,📚 তিরমিযী ২৮৮০, 📚সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্ ২৪২৪, আদ্ দা‘ওয়াতুল কাবীর ৪০৬, সহীহ আত্ তারগীব ৬১০।
(14) اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَ أَغْنِنِىْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ-
১৪. আল্লা-হুম্মাক্ফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী বেফায্লেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা।
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন! 
রাসূল (সা:) বলেন, 
এই দো‘আর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন’।[ তিরমিযী, বায়হাক্বী (দা‘ওয়াতুল কাবীর), 📚মিশকাত হা/২৪৪৯, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৭ ; ছহীহাহ হা/২৬৬।
]
(15) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ-
১৫. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’।
অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’। এই দো‘আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়’।[📚তিরমিযী, আবুদাঊদ, 📚মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; 📚সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন’।[ মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।
]
১৬. রাসূলুল্লাহ (সা:) প্রত্যেক ছালাতের শেষে সূরা ‘ফালাক্ব’ ও ‘নাস’ পড়ার নির্দেশ দিতেন।[ 📚আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, 📚মিশকাত হা/৯৬৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
] 
🌱 রাসুল (সা:) প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। [📚মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...