প্রশ্ন: ৮৫ : শিয়া সম্পর্কে ।

প্রাথমিক যুগের শিয়াঃ রাসূল সাঃ এর মৃত্যুর পর মদীনার কিছু লোক "সাকিফাহ"নামক ঘরে সমাবেত হয় রাজনিতিক শূন্যতা পূরনের লক্ষ্যে। এই খবর আবু বকর সিদ্দীকী রাঃ কাছে পৌছালে তিনি, হযরত উমর রাঃ, এবং হযরত আবু উবায়দাহ রাঃ সেখানে পৌছান যেন মানুষ কোন ভুল সিদ্ধান্তে উপনিত না হয়। তখন হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর দাফন কার্যের দায়িত্বে ছিলেন। "সাকিফাহ"-য় সমেবেত জনতা হযরত আবু বকর সিদ্দিকী রাঃ কে খলিফা হিসাবে বায়াত করে। কিন্তু কিছু লোক হযরত আলী রাঃ কে খলিফা হিসাবে দেখতে চাইতো। কারণ গুলি ক্রমান্নয়েঃ
  1. কেউ কেউ আব্দুল মোত্তালিব কে মক্কার শাষক তথা আরবের শাষক মনে করত। কারণ মক্কা ছিল আরবের কেন্দ্রভূমি। সেই কারণে রাসূল সাঃ আব্দুল মোত্তালিবের বংশ হিসাবে নিজেই শাষকে পরিনত হন এবং এই ধারায় হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর স্থলাভিষিক্ত হওয়া উচিত।
  2. কেউ কেউ হযরত আলী রাঃ কে রাসূল সাঃ এর ছেলের মত মনে করতেন। কারণ, তিনি রাসূল সাঃ এর পালিত ছিলেন, রাসূল সাঃ এর মেয়ের জামাতা ছিলেন এবং রাসূল সাঃ এর সরাসরি বংশ হাসান এবং হোসেনে রাঃ এর পিতা ছিলেন। আবার কোন কোন সময় বড় ভাই এবং ছোট ভাইয়ের (যদিও হযরত আলী রাঃ রাসূল সাঃ এর চাচাতো ভাই) বয়স বেশী পার্থক্য হল, ঐ সম্পর্ককেও পিতা-ছেলের সম্পর্কের মত ধরা হয়। 
  3. কেউ কেউ হয়ত ছিলেন এ রকম, তারা জাস্ট মনে করতেন আলী রাঃ শাষক হিসাবে ভাল হবেন।
হযরত আলী রাঃ কে খলিফা দেখতে চান এমন লোকদের বর্নিত প্রথম দুই ধারার ব্যাক্তিদের চিন্তা ধারা এক প্রকার রাজতন্ত্রীক। এবং হযরত আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ কে রাজতন্ত্রীয় চিন্তা ধারার মোকাবেলা করতে হয়েছিল। যাইহোক, তারা সকলেই হযরত আবু বকর রাঃ এবং পরবর্তিতে হযরত উমর রাঃ কে মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ থেকে ছিলেন। তারা কখনই আলাদা ধর্মিয় দল নন, এটা শুধু সমর্থন ও মতামতের ব্যাপার।
প্রথম যুগের শিয়াদের সম্পর্কে হযরত ইবনে তাইমিয়া রঃ বর্ননা করেন, "প্রাথমিক যুগের শিয়ারা যারা আলী রাঃ কে সমর্থন করেছিল বা ঐযুগে ছিল তারা হযরত আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ এর উচ্চ মর্যাদা নিয়ে কোন মতবিরোধে ছিলেন না, তবে তাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল আলী রাঃ নাকি উসমান রাঃ বেশী মর্যাদা সম্পন্ন"(মিনহাজ আস-সুন্নাহ,১/১৩; Cited by Dr SallabiAli bin abu talib, v=2)
পরবর্তীতে হযরত আলী রাঃ এর খেলাফত কালে, মুসলিমদের বিশাল অংশ আলী রাঃ এর সমর্থনে ছিল। এর মধ্যে অনেক বদরী সাহাবা, আনসার ছিলেন। এই লিস্ট বিশাল। কিন্তু তারা কখনই আলাদা আকিদাহ বিশিষ্ট দল নন। তারা শধু মাত্র হযরত আলী রাঃ এর জীবিত কালেই ছিলেন। তারা আর বর্তমান সুন্নি একই দল, কারণ বর্তমান সুন্নিরা খেলাফতে রাশিদিন বলতে বুঝায়, হযরত আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ, উসমান রাঃ, আলী রাঃ এবং হাসান রাঃ এর শাষনকাল।

বর্তমান যুগের শিয়াঃ বর্তমান যুগের শিয়াদের শিয়া নাম করনের মধ্যেই ভুল আছে। কারণ বর্তমান যুগের শিয়াদের শিয়া ডাকলে প্রথমিক যুগের শিয়ারাও এই নামে পরে যান। মূলত বর্তমান যুগের শিয়া দাবীকৃত দলগুলির সাহিত আদি কালের শিয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমান যুগের শিয়াদের তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
  1. উগ্র-পন্থী শিয়াঃ শিয়াদের মধ্যে মাইনরিটি। ভয়ংকর সব আকিদাহ সম্পন্ন। তাদের অনেকেই আলী রাঃ কে নবী বা ডিভাইন কেউ বলার চেষ্টা করে।
  2. যায়েদিয়া শিয়াঃ তারা অন্যান্য শিয়াদের থেকে অনেকটা আলাদা। তারা জায়েদ বিন আলী বিন হুসাইন আল জয়নাল আবেদীনের অনুসারী। তারা মনে করেন, অত্যাচারী বাদশার বিপক্ষে যুদ্ধ করা ইমামদের দায়িত্ব। তারা আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃকেও ভালবাসে। শুধু মাত্র হযরত আলী রাঃ কে অন্যান্য সাহাবীদের থেকে উপরে স্থান দেয়।
  3. ইমামী শিয়াঃ এরা সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত। (তাদের কেউ কাউকে অনেকে রাফিদি নামে ডাকেন। বলা হয়ে থাকে রাফিদিরাই হযরত আবু বকর রাঃ এবং উমর রাঃ এর প্রতি বিদ্দেষ ছড়ায়। রাফিদিদের নাম রাফিদি (রাফাদা-বাতিল) হয়েছে, যখন ১২১ হিজরীতে হিসামের বিপক্ষে যুদ্ধে, তারা যায়েদ বিন আলীর সৈন্যবাহিনীর অংশ হয়েও তাকে ফেলে চলে যায় (Dr Sallabi, Ali bin abu talib, v=2, p 316)। সকল ইমামী শিয়ারাই রাফিদি না, অর্থ্যাত সকল ইমমীরা আবু বকর সিদ্দিকী রাঃ এবং উমর রাঃ এর প্রতি বিদ্দেষ ছড়ায় না।)
  • ১২ ইমামি শিয়াঃ এরা শিয়াদের সর্ব-বৃহত দল। এরা ইরান, ইরাক এবং আজারবাইজানে সংখ্যা গরিষ্ট। ভারত ও পাকিস্থানে এদের সংখ্যা অনেক। 
  • ইসমাঈলি শিয়াঃ এরাও শিয়াদের মধ্যে একটী পড়িচিত দল। এই দলের দুটি নেতৃত্ব আছে। একটি দাওদিয়া বাহরা এবং অন্যটি আগা খান।
সতর্কতাঃ অনেক সুন্নি আলেমের মতে রাফিদিরা আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ এর দ্বারা প্রাতারিত হওয়া দল এবং তারা ফেতনায় আরষ্ট এবং মুসলিমদের ঐক্য বিনষ্টকারী। তবে শিয়াদের একটি গ্রুপ আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ এর অস্থিত্ব অস্বীকার করে এবং শিয়াদের বাকিরা আবদুল্লাহ ইবনে সাবাহ এর সাথে যেকোন প্রকার সম্পর্কহীন বলে দাবী করে।

ইমামী শিয়াদের আকিদাহ গত সমস্যাঃ এখানে যায়েদিইয়াহ শিয়া এর অন্তরভুক্ত নয়। এই সমস্যা ইমামী শিয়াদের। দুইটি সমস্যা রয়েছেঃ
  • তারা বিশ্বাস করেন, ইমামরা ভুলত্রুটির উর্ধ্বে। এটাকে ইসমাহ শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন এটা শুধু মাত্র আল্লাহ পাকের বৈশিষ্ট। অতএব, শিয়ারা শিরক কারী। কিন্তু সুন্নিদের কেউ কেউ নবীদের এই যোগ্যতা দান করেন এইভাবে যে, মহান আল্লাহ পাক বিশেষ অনুগ্রহহের দ্বারা নবীদের ভুল থেকে মুক্ত রাখেন। শিয়ারাও একইভাবে যদি এই বিশ্বাস রাখে যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক বিশেষ অনুগ্রহ করে ইমামদের ভুল থেকে মুক্ত রাখেন। তাহলে তারা (ইমামী শিয়ারা) শিরককারী হয়ে যান না।
  • তারা আরো বিশ্বাস করেন, ইমামত নবুয়তের চেয়ে উপরে, কিন্তু রাসুল সাঃ একই সাথে নবী এবং ইমাম, এবং তিনি সকলের থেকে সম্মানিত। । "ইমামতের স্ট্যাটাস নবুয়তের উপরে" একটা বিপদজনক বিশ্বাস। কিন্তু এই বিশ্বাস রাসূল সাঃ এর কাছে আশা মেসেইজ কে অস্বীকার করেনা কারণ ইমামদের দায়িত্ব হল নবুয়তের মাধ্যমে পাওয়া অহীর ব্যাক্ষা করা। তাই এতোদসত্তেও তাদেরকে অমুসলিম বলা যায় না। কিন্তু সংদ্দেহজনক। মহান আল্লাহ পাক সর্ব বিষয়ে সব থেকে ভাল জানেন। (লিংকে ক্লিক করলে জানতে পারবেন তারা কোন যুক্তিতে এটা বিশ্বাস করেন)

ইসলামে পার্সিয়ানদের অবস্থানঃ ইবনে খালেদুন বর্ননা করেন,
"Most of the hadith scholars who preserved traditions for the Muslims also were ajams (Persians), or Persian in language and upbringing, because the discipline was widely cultivated in the ‘Iraq and the regions beyond. (Furthermore,) all the scholars who worked in the science of the principles of jurisprudence were ajams (Persians), as is well known. The same applies to speculative theologians and to most Qur’an commentators. Only the ajams (Persians) engaged in the task of preserving knowledge and writing systematic scholarly works. Thus, the truth of the following statement by the Prophet [in Sahih Muslim] becomes apparent: “If scholarship hung suspended at the highest parts of heaven, the Persians would (reach it and) take it.”
সাফাবীদ তুর্কি মিক্স রাজ বংশ যারা উসমানীয়ান তুর্কিদের প্রতিপক্ষ ছিল, তারা রাজনিতিক কারণে অনেকটা জোরপূর্বক ইরান(পার্সিয়ানদের মধ্যমনী) কে ১২ ইমামী শিয়াতে রূপান্তর করে। উল্লেখ্য, পার্সিয়ানরা ছিল ইসলামের চ্যাম্পিয়ন। তারা অন্যান্য মুসলিমদের লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট, এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের কারুকাজে সহযোগিতা করত। কিন্তু ইরানীরা শিয়া হয়ে যাওয়ার ফলে, বৃহত্তর পার্সিয়ান জাতি (তাজিক, কিছুটা আফগান, কুর্দি) একে উপর থেকে আলাদা হয়ে যায়। অন্যদিকে তুরান (তুর্কমেনিস্থান, কাজাকিস্থান, উজবেকিস্থান, কিরগিজস্থান ইত্যাদি) দুর্বল ও বন্ধুহীন হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে রাশিয়ার কাছে স্বাধীনতা হারায়। এবং ভারতের মুসলিমরাও আরব এবং তুর্কি মুসলিমদের সাথে সংযোগ হারায় এবং আস্তে আস্তে স্বাধীনতা হারায়। ইরানের শিয়া হয়ে উঠা ছিল, মুসলিম ইউনিটির জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর। 

সাধারণ শিয়াঃ সাধারন শিয়াদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মুসলিমদের ৭২-৭৩ দলের কোন দল সঠিক এ নিয়ে প্রবন্ধে লিখেছিলাম, "শিয়া আয়াতুল্লাহদের বাহিরে রেখে, সাধারণ জনসাধারণের কথা বলছি, যারা মুসলিমদের দুঃখে দুঃখ পায়, মুসলিমদের কষ্টে কষ্ট পায়। এবং তাত্ত্বিক বিষয় এত গভীর ভাবে জানে না, কিন্তু যা জানে তা কোরানের সহিত সাংঘর্ষিক না হয়ে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যেও সঠিক দলীয় ব্যক্তি থাকা অসম্ভব নয়। সকল সাহাবীই সর্ব প্রকার হাদিস জানতেন না, তাই কিছু মানুষ যদি স্বল্প জানা হয়, কিন্তু যা জানে তা সহি ইসলামের বিপক্ষে নয়, ঐ সব নির্দোষ সহজ সরল ব্যক্তিগণ অবশ্যই ইব্রাহীম রাঃ এর ধর্মের উপর থাকা অসম্ভব নয়, আমি ব্যক্তিগত ভাবে সুন্নি ইমামের পিছনে শিয়া ব্যক্তিকে নামাজ আদায় করতে দেখেছি। কিন্তু যারা শিয়া পরিচয়টাকে মুখ্য ঘোষণা করে এর উপর অন্য মুসলিমদের দুঃখের কারণ হয়, তাহলে তারা সুস্পষ্ট রূপে দলাদলিতে লিপ্ত।"-[মুসলিমদের মধ্যে কোন দল সঠিক ?]

‘If loving the Wasi of the Prophet, Ali Murtadha a Rafidi,
then verily amongst all the people I am the greatest Rafidi
From the plain of Mina I will shout to all those standing or sitting,
if loving the family of the Prophet makes you a Rafidi,
then I testify before the mankind and Djinns I am a Rafidi”-Imam Shafi
(Sawaiq al Muhriqah, page 449 & 450 শাফেয়ী মাহযাবের ইমাম শাফি'য় রঃ এর কবিতাটি আগে থেকেই জানা কিন্তু মুখস্থ নেই বলে দুর্বল রেফারেন্স থেকে কপি করা হয়েছে)
সতর্কতাঃ ইমাম শাফেয়ী রাঃ এখানে নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি অন্য বর্ননায়, রাফিদিদের থেকে রেওয়াত গ্রহন করতে না বলেছেন। অর্থ্যাত রাফিদিরা গ্রহনযোগ্য নয়। তিনি নিজেও রাফিদি নন, কিন্তু নবী পরিবার ও আলী রাঃ কে ভালবাসেন সেটাই তিনি বুঝিয়েছেন।


শিয়া ইসলাম (আরবিشيعة‎‎, শীআ'হ্‌) ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়। শিয়া ইসলাম অনুসরণকারীদের শিইতি বা শিয়া বলা হয়। “শিয়া” হল ঐতিহাসিক বাক্য “শিয়াতু আলি” (شيعة علي) এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ “আলি অনুগামীরা” বা “আলির দল”।[১][২][৩][৪][৫] শিয়া মতবাদের মূল ভিত্তি হলো, আলি এবং ফাতিমার বংশের মাধ্যমে নবি পরিবারের (আহলে বাইত) লোকেরাই হলেন ইমামত বা নেতৃত্বের প্রধান দাবীদার; তাই আলি খিলাফতের প্রশ্নে আবু বকর, উমর ও উসমানের মুকাবেলায় অগ্রাধিকারী। শিয়ারা বিশ্বাস করে ইসলামের সর্বশেষ নবী গাদির খুমের ঘটনার (The event of Ghadir Khumm) মাধ্যমে তাকেই খিলাফতের জন্য মনোনীত করে গিয়েছিলেন।[৬] আবু বকর ছিলেন বনু তাইম গোত্রের, উমর বনু আদি গোত্রের, উসমান বনু উমাইয়া গোত্রের কিন্তু আলি মুহাম্মদের হাশেমি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া আলি একাধারে প্রথম পুরুষ মুসলিম, ইসলামের রাসুলের চাচাতো ভাই, রাসুলের জামাতা, রাসুলের দৌহিত্র হাসান ও হোসেনের পিতা ও রাসুলের সেনাপতি ছিলেন। রাসুলের কোনো পুত্রসন্তান ছিলনা এবং দৌহিত্রা (হাসান, হোসেন) শিশু ছিলেন। এসবদিক বিবেচনায় রাসুলের ইন্তেকালের পর আলিই নেতৃত্বের সর্বাধিক যোগ্য বলে শিয়া মুসলিমগণ মনে করেন। তারা আলি ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধেও আলিকে সমর্থন করেন। পরবর্তীতে মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের সেনাবাহিনী আলির পুত্র হোসেনকে হত্যা করলে শিয়া মুসলিমরা খিলাফতের প্রতি পুরোপুরি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং হোসেনপুত্র জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমে আলি ও ইসলামের রাসুলের বংশধরদের মধ্যে থেকে ইমামতের নীতি অনুসরণ করতে থাকে।
ইসলামের অন্য স্কুলের মতো, শিয়া ইসলাম ইসলামিক ধর্মগ্রন্থপবিত্র কুরআন এবং ইসলামের সর্বশেষ নবী[৭] এর জীবনাদর্শের উপর প্রধান গুরুত্ব দেয়।[৮] তবে তারা আব্বাসিয় শাসনামলে (হিজরি ৩য় শতকে) সংকলিত সিহাহ সিত্তাহ হাদিসের তুলনায় আহলে বাইতের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদিস সমূহকে অধিকতর গ্রহণযোগ্য মনে করে। শিয়া মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, শুধুমাত্র আল্লাহই ইসলাম, কুরআন এবং শরিয়াত রক্ষা করার জন্য একজন প্রতিনিধি (নবী এবং ইমাম) নির্বাচন করতে পারেন[৯], সাধারণ মুসলমানরা পারে না। যার কারণে শিয়ারা ইসলাম এবং কুরআনের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য জনগণ যে আবু বকরউমর এবং উসমানকে নির্বাচন করেছেন তা অনুসরণ করে না। এই জন্য শিয়ারা আলিকে চতুর্থ খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে না, বরং প্রথম ইমাম হিসেবে বিবেচনা করেন। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে, অনেক বর্ণনা রয়েছে যেখানে ইসলামের নবী তার উত্তরাধিকারী হিসাবে আলিকে নির্বাচিত করেছিলেন।[১০][১১]
ইরানইরাক, বাহরাইন, আজারবাইজান, লেবানন, ইয়েমেন ইত্যাদি দেশে শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাছাড়া সিরিয়া, কুয়েত, জর্ডান, ফিলিস্তিন, সউদি আরব, ভারত, পাকিস্তানেও প্রচুর শিয়া মুস্লিমদের বসবাস।

শিয়া ইসলামের ইমাম সমুহ[সম্পাদনা]

  1. ইমামুল মুত্তাকীন আলি
  2. ইমাম হাসান মুজতাবা
  3. ইমাম আবু আব্দিল্লাহ হোসাইন
  4. ইমাম সাজ্জাদ আলি জয়নুল আবেদিন
  5. ইমাম মোহাম্মদ বাকির ইবনে আলি
  6. ইমাম আবা আব্দিল্লাহ জাফর সাদিক
  7. ইমাম আবুল হাসান মুসা কাজিম
  8. ইমাম আবুল হাসান আলি রেজা
  9. ইমাম মোহাম্মদ জাওয়াদ ত্বকি
  10. ইমাম আলি নাকি ইবনে মোহাম্মদ
  11. ইমাম আবু মোহাম্মদ হাসান আস্কারি
  12. আয়ুহাল কায়েম মুন্তাযারাল মাহাদী

বারো ইমামের তালিকা[সম্পাদনা]

১মআলি ইবন আবি তালিব৬০০ - ৬৬১'Alī ibn Abī Ṭālib Amīru al-Mu'minīn নামেও পরিচিত
২য়হাসান ইবনে আলি৬২৫ – ৬৬৯Ḥasan ibn 'Alī Al-Hasan al-Mujtaba নামেও পরিচিত
৩য়হুসাইন ইবনে আলি৬২৬ – ৬৮০Ḥusayn ibn 'Alī Al-Husayn ash-Shaheed নামেও পরিচিত
৪র্থজয়নাল আবেদিন৬৫৮ – ৭১৩'Alī ibn Ḥusayn Ali Zayn al-'Abideen নামেও পরিচিত
৫মমুহাম্মদ আল বাকির৬৭৬ – ৭৪৩Muḥammad ibn 'Alī Muhammad al-Bāqir নামেও পরিচিত
৬ষ্ঠজাফর আল সাদিক৭০৩ – ৭৬৫Ja'far ibn Muḥammad Ja'far aṣ-Ṣādiq নামেও পরিচিত
৭মমুসা আল কাদিম৭৪৫ – ৭৯৯Mūsá ibn Ja'far Mūsá al-Kāżim নামেও পরিচিত
৮মআলি আর-রিজা৭৬৫ – ৮১৮'Alī ibn Mūsá Ali ar-Riża নামেও পরিচিত
৯মমুহাম্মদ আল তকি৮১০ – ৮৩৫Muḥammad ibn 'Alī Muḥammad al-Jawad এবং Muḥammad at-Taqi নামেও পরিচিত
১০মআলি আল হাদি৮২৭ – ৮৬৮'Alī ibn Muḥammad Alī al-Ḥādī এবং ""Alī an-Naqī নামেও পরিচিত
১১তমহাসান আল আসকারি৮৪৬ – ৮৭৪Ḥasan ibn 'Alī Hasan al Askari নামেও পরিচিত
১২তমমুহাম্মাদ আল মাহদি৮৬৯ – In occultationMuhammad ibn Ḥasan al-Hujjat ibn al-ḤasanImam al-MahdīImam al-Aṣr, ইত্যাদি নামেও পরিচিত

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

প্রশ্ন: ৮৪ : মাযহাব মানা কি ফরজ ?

প্রশ্ন : অনেকেই বলেন মাজহাব মানতেই হবে। মাজহাব মানতেই হবে এটি কি ঠিক? এ ব্যাপারে শরিয়ত কি বলে?
উত্তর : দর্শক আপনি অত্যন্ত সুন্দর প্রশ্ন করেছেন। সারা বিশ্বে চারটি মাজহাব খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই মাজহাবগুলোর ইমাম যারা ছিলেন তারা কোরআন হাদিসের নির্যাস বের করে সাধারণ মানুষের জন্য অনেক সহজ করে দিয়েছেন। যারা একান্তই কোরআন হাদিসের বিধি বিধানগুলো জানেন না অথবা অন্য কোনোভাবে যাঁর জানার সুযোগ নেই, তিনি যদি কোনো মাজহাবের অনুসরন করেন, তাহলে তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে মূল উদ্দেশ্য একটিই হতে হবে। সেটি হল কোরআন ও সুন্নাহর অনুসরন করা।
মাজহাব কোনো দ্বীন নয়। আমাদের সম্মানীত চারজন মাজহাবী ইমামেরা কোরআন এবং সুন্নাহর অনুসরন করেছেন। তাঁদের সময়ে যেসব বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং যেখানে পবিত্র কোরআন এবং সহিহ হাদিসের নির্দেশনা পান নি, সেক্ষেত্রে তাঁরা গবেষণা করেছেন। তাঁরা একথাও বলেছেন, ‘যদি আমার গবেষণার সাথে কোনো সাংঘর্ষিক হাদিস পাওয়া যায়, তাহলে সেটিই আমার মাজহাব, যদি আমার বক্তব্যের সাথে কোনো হাদিসের সাংঘর্ষিক অবস্থা হয়, তাহলে আমার বক্তব্যকে তোমরা দেয়ালের ওপারে ছুঁড়ে মারো।’
যেমন, আমাদের দেশে অতি প্রচলিত হচ্ছে হানাফি মাজহাব। সাধারণ লোক কেউ যদি মাজহাবের মাধ্যমে কোরআন সুন্নাহর অনুসরন করে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আবু হানিফা, যিনি এই মাজহাবের ইমাম, তিনিও কিন্তু সুন্দর একটি মূলনীতি দিয়ে গিয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘যদি সহিহ হাদিস পাও, তুমি যদি সেটি আমল করো, কিন্তু বাস্তবে যদি দেখা যায় আমার মাজহাবের একটি সিন্ধান্ত রয়েছে আল্লাহর রাসুলের হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক অথবা একটু উল্টো, রাসুলের (সা.) হাদিসের ওপর যদি আমল করো, তাহলে মনে রাখবে আমি ইমাম আবু হানিফার মাজহাব ঐটিই।’
মাজহাবের ক্ষেত্রে মূল কথাই হচ্ছে, আমাদের মাজহাবের সম্মানিত ইমামরা তাঁরা কোরআন হাদিসসম্মত জীবনযাপন করেছেন, কিছু বিষয়ে গবেষণা করেছেন এবং তাঁরা বলে গেছেন, ‘যদি কোরআন হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হয়, তোমরা এই মাজহাবটি মানবে না।’ কারণ তাঁরাতো এই একই দ্বীনের অনুসারী। সাধারণ মানুষ চাইলে যেকোনো একটি মাজহাব মানতে পারেন, কিন্তু মাজহাব মানা বাধ্যতামূলক এমন কথা মাজহাবের সম্মানিত ইমারাও বলে যান নি এবং সেটি সঠিকও নয়।
কোনো জিনিসকে ফরজ বলতে হলে শরিয়তের বিধান লাগবে, যে বিষয়টি আল্লাহর রাসুলের (সা.) সময়ে ফরজ হয় নি, সাহাবাদের সময়ে ফরজ হয় নি, তাবিয়ানদের যুগে ফরজ হয় নি, পরবর্তিতে সেটি ফরজ করার মত সাধ্য আমাদের হাতে নেই। বিদায় হজের সময়তো রাসুল (সা.) একদিকে ভাষন দিচ্ছেন, অন্যদিকে আয়াত নাজিল হল যে, দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়েছে, দ্বীনের সাথে নতুন কিছু সংযোজন করার প্রয়োজন নেই এবং সেই সুযোগও নেই। আমরা রাসূলের (সা.) মানহাজ কে মানবো, সেভাবেই চলবো। কেউ যদি কোনো মাজহাব মানতে চান, মানতে পারেন কিন্তু এটি বাধ্যতামূলক নয়।
তবে যারা কুরআন হাদীস থেকে মাসয়ালাহ মাসায়েল  এবং জীবন সমস্যার সমাধান বের করতে অপারগ তাদের জন্য কোন প্রসিদ্ধ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিমকে তাক্বলীদ (অনুসরণ) করতেই হবে, এটা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে আপনি কোন মাযহাবের ইমামকে অনুসরণ করুণ অথবা অন্য কোন বুজুরর্গ আলেমকে অনুসরণ করুন, তা একই কথা। 

প্রশ্ন: ৮৩ : কোন সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল?

১. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল?
উত্তরঃ সাদ বিন মুআয (রাঃ)
২. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে জান্নাতের আটটি দরজা থেকেই আহবান করা হবে?
উত্তরঃ আবু বকর (রাঃ)।
৩. প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে সাইয়্যেদুশ্‌ শোহাদা বলা হয়?
উত্তরঃ হামযা বিন আবদুল মুত্তালেব (রাঃ)
৪. প্রশ্নঃ হামযা (রাঃ) কোন যুদ্ধে শহীদ হন?
উত্তরঃ উহুদ যুদ্ধে।
৫.প্রশ্নঃ কোন সাহাবীকে নবী (সাঃ) ইসলামের প্রথম দূত (শিক্ষক) হিসেবে মদীনায় প্রেরণ করেন?
উত্তরঃ মুসআব বিন উমাইর (রাঃ)।
৬. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী নবী (সাঃ)এর চাচা এবং দুধ ভাই ছিলেন?
উত্তরঃ হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)।
৭.প্রশ্নঃ নবী (সাঃ) মেরাজে গিয়ে কোন সাহাবীর পায়ের আওয়ায শুনতে পান?
উত্তরঃ বেলাল বিন রাবাহ (রাঃ)।
৮. প্রশ্নঃ কোন সাহাবী ইসলামের প্রথম মুআয্‌যিন ছিলেন?
উত্তরঃ বেলাল বিন রাবাহ (রাঃ)।
৯. প্রশ্নঃ নবী (সাঃ) এর কতজন মুআয্‌যিন ছিলেন?
উত্তরঃ তিনজন। বেলাল বিন রাবাহ, আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতূম ও আবু মাহযূরা (রাঃ)

প্রশ্ন : ৮২ : ইসলামী বিধানে দাড়ি রাখার গুরুত্ব কী ?

প্রশ্ন : ইসলামী বিধানে দাড়ি রাখার গুরুত্ব কী এবং একজন মুসলিম ইচ্ছে করলে কি দাড়ি নাও রাখতে পারেন? না রাখলে তার ফলাফল কী হবে বা কী রকম গুনাহ হতে পারে?
উত্তর : সমস্ত ওলামায়ে কেরামের মতে, দাড়ি রাখাকে শায়ার (ইসলামের নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটা) বলা হয়েছে। যদিও ইসলাম এ ব্যাপারে শুধু একক নয়। কিন্তু তার পরও ইসলামের অন্যতম শায়ার হচ্ছে দাড়ি রাখা।
দ্বিতীয়ত এ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম তাইয়ুমা (রহ.), এর আগে আবু মোহাম্মদ এরা সবাই এবং সমস্ত ওলামায়ে কেরামগণ এ বিষয়ে মতৈক্য প্রকাশ করেছেন যে, দাড়ি রাখার বিধান হচ্ছে ইসলামে ওয়াজিব এবং বাধ্যতামূলক।
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসের মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। সুন্নাহ তিরমিজি, সুন্নাহ আবু দাউদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‍‘ওয়ারখুল্লাহা’  অর্থাৎ তোমরা দাড়িকে ছেড়ে দাও। কোনো কোনো রেওয়াতের মধ্যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওয়ারখুল্লাহা’ অর্থাৎ ‘দাড়িকে তোমরা ছেড়ে দাও’। এভাবে বিভিন্ন শব্দে রাসুল (সা.) এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) নিজে দাড়ি রেখেছেন, সাহাবিরা দাড়ি রেখেছেন এবং অপছন্দ করেছেন তাদের, যারা দাড়ি রাখেননি। এ জন্য দাড়ি রাখার বিষয়টি ইসলামের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে আমরা আসলে বিভিন্ন কারণে সাধারণ বা হালকা মনে করে নিয়েছি। মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের যে ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য, সেগুলো আমরা আস্তে আস্তে ভুলে যাচ্ছি এবং অমুসলিমদের সঙ্গে সেগুলোকে আমরা মিলিয়ে ফেলছি। বিশেষ করে দাড়ি কামানোর দৃষ্টিভঙ্গিটি।
কেউ দাড়ি না রাখলে তিনি গুনাহগার হবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রশ্ন: ৮১ : দেন মোহর পরিশোধ না করে সহবাস করা যাবে কি?

প্রশ্ন-১ঃ বিয়ের পরে দেন মোহর দেয়া যাবে কি?
প্রস্ন-২ঃ দেন মোহর পরিশোধ না করে সহবাস করা যাবে কি?
ত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। তবে যদি সহবাস করার অনুমতি দেয় তবে  স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।
স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]
فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥]
তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ  [٦٠:١٠]
তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

প্রশ্ন: ৮০ : বনু নাযীরের ঘটনা।

ইসলাম ও মুসলমানের প্রতি চরম বিদ্বেষী মদীনার ইহুদী গোত্রগুলির অন্যতম হ’ল বনু নাযীর গোত্র (بنو نضير)। এরা হযরত হারূণের বংশধর বলে কথিত। শেষনবীর সাহচর্য লাভের আশায় তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হবার পর মদীনায় হিজরত করেছিল। তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ছিল। তারা তওরাতে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী শেষনবীকে ঠিকই চিনেছিল। কিন্তু তিনি বনু ইস্রাঈল বংশের না হয়ে বনু ইসমাঈল বংশের হওয়ায় তারা তাঁকে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং সর্বপ্রকার শত্রুতায় লিপ্ত হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় এসে অন্যদের ন্যায় তাদের সাথেও শান্তি চুক্তি করেন। তাতে বলা ছিল যে, কেউ কারু বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। শত্রুকে সাহায্য করবে না। রক্তমূল্য আদায়ের সময় পরস্পরকে সাহায্য করবে। সকলে রাসূলকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে মদীনাকে রক্ষা করবে। হুওয়াই বিন আখত্বাব, সালাম বিন আবুল হুক্বাইক্ব, সালাম ইবনু মুশকিম প্রমুখ ছিল এদের নেতা। অর্থ-বিত্তে ও অস্ত্র-শস্ত্রে সমৃদ্ধ হ’লেও তারা কখনো সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’ত না। ভীরু ও কাপুরুষ হওয়ার কারণে সর্বদা শঠতা-প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের কুট-কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকতো। ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধের এক মাস পরে অন্যতম ইহুদী গোত্র বনু ক্বায়নুক্বার বিতাড়ন ও ৩য় হিজরীর মধ্য রবীউল আউয়ালে ইহুদী নেতা কা‘ব বিন আশরাফের হত্যাকান্ডের ফলে তাদের মধ্যে সাময়িকভাবে যে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল, ৩য় হিজরীর শাওয়ালে ওহোদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের ফলে তা দূরীভূত হয়। তারা পুনরায় অঙ্গীকার ভঙ্গ করা এবং মদীনার মুনাফিক ও মক্কার মুশরিক নেতাদের সাহায্য করার মাধ্যমে চক্রান্তমূলক তৎপরতা শুরু করে দেয়। সবকিছু জানা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পূর্বের সন্ধিচুক্তির কারণে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সবকিছু হযম করতেন। কিন্তু রাজী‘-তে ১০ জন ও মাঊনাতে ৬৯ জন নিরীহ মুবাল্লিগকে প্রতারণা ও চরম বিশ্বাসঘাতকতার মাধ্যমে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করার ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের ঔদ্ধত্য চরমে উঠে যায়। এরপরেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ধৈর্য ধারণ করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তারা খোদ রাসূলকেই হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে।
ঘটনা ছিল এই যে, মাঊনার মর্মন্তুদ ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র ব্যক্তি আমর বিন উমাইয়া যামরী (রাঃ) মদীনায় ফেরার পথে ‘কারকারা’ নামক স্থানে দু’জন কাফিরকে ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন। এর মাধ্যমে তিনি সঙ্গীদের নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঐ দু’জন ব্যক্তি ছিল বনু কেলাব গোত্রের, যাদের সাথে রাসূলের সন্ধিচুক্তি ছিল, যা আমরের জানা ছিল না। মদীনায় এসে ঘটনা বিবৃত করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, তুমি এমন কাজ করেছ যে, এখন আমাদেরকে রক্তমূল্য দিতে হবে।
অতঃপর রক্তমূল্য সংগ্রহের জন্য তিনি আবুবকর, ওমর, আলী ও আরও কয়েকজনকে সাথে নিয়ে মদীনা হ’তে দু’মাইল দূরে বনু নাযীর গোত্রে গমন করেন। কারণ তাদের সঙ্গে পূর্বে কৃত সন্ধি চুক্তি এভাবেই ছিল যে, রক্তমূল্য আদায়ে তারা পরস্পরকে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবে। তাদের সঙ্গে আলাপের পর তারা রাযী হয়ে যায় এবং তারা তাদের একটি বাড়ীতে রাসূলকে বসিয়ে রক্তমূল্য আনতে যায়। রাসূল ও তাঁর সাথীগণ সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু ইহুদী নেতারা গোপনে একত্রিত হ’লেই শয়তান তাদের পেয়ে বসে এবং রাসূলকে সেখানেই হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অন্যতম নেতা ও গোত্রের কোষাধ্যক্ষ সালাম বিন মুশকিম একাজে বাধা দিয়ে বলেন, তোমরা একাজ করো না। আল্লাহর কসম! এটা তাকে অবগত করানো হবে। অধিকন্তু আমাদের ও তাদের মধ্যে যে সন্ধিচুক্তি রয়েছে একাজটি তার বিপরীত হবে’। কিন্তু তারা কোন কথা শুনলো না। আমর বিন জাহহাশকে (عمرو بن جحاش) নিয়োগ করা হ’ল এজন্য যে, দেয়ালের উপর থেকে পাথরের ভারি চাকি নিক্ষেপ করে সেখানে নীচে উপবিষ্ট রাসূলকে সে অতর্কিতে হত্যা করবে।
তাদের এই চক্রান্তের কথা জিব্রীল আল্লাহর হুকুমে রাসূলকে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন এবং তিনি দ্রুত সেখান থেকে উঠে চলে আসেন। তিনি ছাহাবায়ে কেরামকে ইহুদীদেরকে এই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের কথা অবহিত করেন। অতঃপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহকে তখনই বনু নাযীরের কাছে এই নির্দেশসহ প্রেরণ করেন যে, তারা যেন অনতিবিলম্বে মদীনা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এজন্য তাদেরকে দশদিনের সময় দেওয়া হ’ল। এরপর সেখানে কাউকে পাওয়া গেলে তাদের সবাইকে হত্যা করা হবে।
এই দশদিন সময়ের মধ্যেই শয়তান তাদেরকে আবার ধোঁকায় ফেলল। মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তাদের যেতে নিষেধ করল। সে তার দু’হাযার সেনা দিয়ে তাদের সাহায্য করার অঙ্গীকার করল। এতদ্ব্যতীত আরেকটি ইহুদী গোত্র বনু কুরায়যা ও বেদুঈন গোত্র বনু গাৎফান তাদের সাহায্য করবে বলে আশ্বস্ত করল। বনু নাযীর নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের কথার উপরে বিশ্বাস রেখে মদীনা পরিত্যাগ না করে মুসলমানদের সাথে মুকাবিলার সিদ্ধান্ত নিল। এ সিদ্ধান্ত তারা যথারীতি রাসূলকে জানিয়ে দিল। তখন রাসূল (ছাঃ) যুদ্ধ প্রস্ত্ততি গ্রহণের নির্দেশ দেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমের উপরে মদীনার দায়িত্বভার অর্পণ করে তিনি বনু নাযীর দুর্গ অবরোধ করেন। ইহুদীরা দুর্গ প্রাচীর থেকে মুসলিম বাহিনীকে লক্ষ্য করে তীর ও প্রস্তর সমূহ ছুঁড়তে থাকে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। অবরোধ ৬দিন মতান্তরে ১৫দিন অব্যাহত থাকে। তারা যখন দেখল যে, কেউ তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে না, তখন তারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া বাকী সব মালামাল নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ চলে যাবার অনুমতি দিলেন। তারা নিজেদের হাতে গড়া ঘরবাড়ি নিজেরা ভেঙ্গে দরজা-জানালা সহ ৬০০ উট বোঝাই করে নিয়ে চলে যায়। গোত্রনেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, সালাম বিন আবুল হুক্বাইক্ব সহ অধিকাংশ ইহুদী ৬০ মাইল দূরে খায়বরে চলে যায়। বাকী কিছু অংশ সিরিয়া চলে যায়। তবে তাদের মধ্যে ইয়ামীন বিন আমর ও আবু সা‘দ বিন ওয়াহাব (يامين بن عمرو وأبو سعد بن وهب) নামক দু’জন ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেন। ফলে তাদের মালামাল সবই অক্ষত থাকে।
বনু নাযীরের পরিত্যক্ত সম্পত্তি গনীমত নয় বরং ‘ফাই’ হিসাবে গণ্য হয়। কেননা এখানে কোন যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। ফলে তা বণ্টিত হয়নি। সবটাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে সংরক্ষিত হয়। যা তিনি পরবর্তী যুদ্ধ প্রস্ত্ততি ও অন্যান্য দান-ছাদাক্বাহর কাজে ব্যয় করেন। অবশ্য সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি ব্যয় করেন নিজস্ব অধিকার বলে প্রথম দিকে হিজরতকারী ছাহাবীগণের মধ্যে। কিছু দেন অভাবগ্রস্ত আনছার ছাহাবী আবু দুজানা ও সাহল বিন হুনায়েফকে এবং কিছু রাখেন নিজ স্ত্রীগণের সংবৎসরের খোরাকির জন্য। এ বিষয়ে সূরা হাশর ৬-৭ আয়াত দ্বয় নাযিল হয়। তাদের এই নির্বাসনকে কুরআনে أول الحشر বা ‘প্রথম একত্রিত বহিষ্কার’ (হাশর ৫৯/২) বলে অভিহিত করা হয়।
বনু নাযীরকে রাসূলের বিরুদ্ধে উসকে দেবার কাজে মুনাফিকদের প্ররোচনা দান অতঃপর পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আল্লাহ পাক সরাসরি শয়তানের কাজের সঙ্গে তুলনা করে বলেন,
كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّيْ بَرِيْءٌ مِّنْكَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ- فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيْهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِيْنَ-
‘তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হ’তে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্ব পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি’। ‘অতঃপর উভয়ের পরিণতি হবে এই যে, তারা উভয়ে জাহান্নামে যাবে এবং সেখানে চিরকাল বাস করবে। এটাই হ’ল যালেমদের প্রতিফল’ (হাশর ৫৯/১৬-১৭)
মূলতঃ এর দ্বারা আল্লাহ পাক আরব উপদ্বীপকে কাফিরমুক্ত করতে চেয়েছেন এবং সেটাই পরে বাস্তবায়িত হয়েছে বনু কুরায়যার বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত শাস্তি ও বিতাড়নের মাধ্যমে এবং সবশেষে হযরত ওমর (রাঃ) কর্তৃক খায়বর থেকে দ্বিতীয়বার ইহুদীদের বিতাড়নের মাধ্যমে।
বনু নাযীর যুদ্ধের শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ
১. ইহুদী-নাছারা নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের প্রতি সর্বদা বিদ্বেষ পরায়ণ এবং মুসলমানদের সাথে কৃত সন্ধিচুক্তির প্রতি তারা কখনো শ্রদ্ধাশীল থাকে না (বাক্বারাহ ২/১২০; মায়েদাহ ৫/৫১)
২. ইহুদীরা অর্থ-বিত্ত ও অস্ত্র-শস্ত্রে সমৃদ্ধ হ’লেও তারা সব সময় ভীরু ও কাপুরুষ। সেকারণ তারা সর্বদা শঠতা ও প্রতারণার মাধ্যমে মুসলিম শক্তির ধ্বংস কামনা করে (হাশর ৫৯/২, ১৪)
৩. তারা সর্বদা শয়তানের তাবেদারী করে এবং কোনরূপ ধর্মীয় অনুভূতি বা এলাহী বাণী তাদেরকে শয়তানের আনুগত্য করা হ’তে ফিরাতে সক্ষম হয় না (হাশর ৫৯/১১-১২, ১৬)
৪. যুদ্ধের স্বার্থে ফলদার গাছ ইত্যাদি কাটা যাবে (হাশর ৫৯/৫)
৫. যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত নয়, বরং শত্রু পক্ষীয় কাফেরদের পরিত্যক্ত সকল সম্পদ ফাই (فئ) -এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যা পুরোপুরি রাষ্ট্র প্রধানের এখতিয়ারে থাকবে। তিনি সেখান থেকে যেভাবে খুশী ব্যয় করবেন। অনুরূপভাবে খারাজ, জিযিয়া, বাণিজ্যিক ট্যাক্স প্রভৃতি আকারে রাষ্ট্রীয়  কোষাগারে যা কিছু জমা হয়, সবই ফাই-য়ের অন্তর্ভুক্ত। জাহেলী যুগে নিয়ম ছিল, এ ধরনের সকল সম্পদ কেবল বিত্তশালীরাই কুক্ষিগত করে নিত। তাতে নিঃস্ব ও দরিদ্রদের কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে উক্ত সম্পদ নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানকে এখতিয়ার দেওয়ায় হয়েছে এবং পুঁজি যাতে কেবল ধণিক শ্রেণীর মধ্যে আবর্তিত না হয়, তার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (হাশর ৫৯/৬-৭)। এখানে শিক্ষণীয় বিষয় এই যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত ফাই কেবলমাত্র বিত্তহীন মুহাজির ও দু’জন বিত্তহীন আনছারের মধ্যে বণ্টন করেন। কিন্তু কোন বিত্তবানকে দেননি। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। উল্লেখ্য যে, গনীমত হ’ল ঐ সম্পদ যা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। বাকী চার পঞ্চমাংশ ইসলামী সেনাবাহিনীর মধ্যে বণ্টিত হয় (আনফাল ৮/১, ৪১)
৬. ইসলামী এলাকায় ইহুদী-নাছারাদের বসবাস নিরাপদ নয়। সেকারণ রাষ্ট্র প্রয়োজন বোধ করলে তাদেরকে বহিষ্কারাদেশ ও নির্বাসন দন্ড দিতে পারে (হাশর ৫৯/২)। হযরত ওমরের খেলাফত কালে (১৩-২৩ পৃঃ) এদের শঠতা ও দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলে তিনি খায়বর থেকে এদেরকে নাজদ ও আযরূ‘আত, মতান্তরে তায়মা ও আরীহা-তে নির্বাসিত করেন। ইতিহাসে যাকে ‘২য় হাশর’ বলা হয়ে থাকে (তাফসীর কুরতুবী, হাশর ২)
বস্ত্ততঃ আল্লাহর গযবপ্রাপ্ত এই জাতি (বাক্বারাহ ২/৬১) পৃথিবীর কোথাও কোনকালে শান্তি ও স্বস্তির সাথে বসবাস করতে পারেনি এবং পারবেও না। ফিলিস্তিনী আরব মুসলমানদের তাদের আবাসভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে যে ইহুদী বসতি কায়েম করা হয়েছে এবং ১৯৪৮ সাল থেকে যাকে ‘ইসরাঈল’ রাষ্ট্র নামকরণ করা হয়েছে, ওটা আসলে কোন রাষ্ট্র নয়। বরং মধ্যপ্রাচ্যের বুকে পাশ্চাত্য খৃষ্টানদের তৈরী করা একটি সামরিক কলোনী এবং অস্ত্রগুদাম মাত্র। পাশ্চাত্যের দয়া ও সমর্থন ব্যতীত যার একদিনের জন্যও টিকে থাকা সম্ভব নয়। যতদিন দুনিয়ায় ইহুদীরা থাকবে, ততদিন তাদেরকে এভাবেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়েই বেঁচে থাকতে হবে। কেননা এটাই আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত বিধান (আলে ইমরান ৩/১১২)। এক্ষণে তাদের বাঁচার একটাই পথ রয়েছে- পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ইসলাম কবুল করা এবং বাকী আরব ও মুসলিম বিশ্বের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

প্রশ্ন: ৭৯ : নামাজে এক সিজদা দিলে এবং দ্বিতীয় সিজদা ভুলে গেলে করনীয়।

===================================================
====================================================
======================================================
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
যে ব্যক্তি নামাযের সিজদা সংখ্যা নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন; অর্থাৎ তিনি কি এক সিজদা দিয়েছেন; না দুই সিজদা দিয়েছেন এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান তাহলে তিনি একীনের (নিশ্চিত জ্ঞানের) উপর নির্ভর করবেন। একীন হচ্ছে- ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। তাই তিনি শুধু একটি সিজদা দিয়েছেন ধরে নিয়ে দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবেন। এরপর সালাম ফেরানোর আগে সহু সিজদা দিয়ে নেয়া উত্তম। এটি শাইখ বিন বায (রহঃ) এর অভিমত।
শাইখ বিন বায (রহঃ) বলেন: “আর যদি সন্দেহটি নামাযের মধ্যে হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে এবং সিজদাটি আদায় করবে। যদি সন্দেহ হয় এক সিজদা দিয়েছে, নাকি দুই সিজদা দিয়েছে তাহলে সে ব্যক্তি দ্বিতীয় সিজদাটি আদায় করবে। এটি প্রথম, কিংবা দ্বিতীয়, কিংবা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ যে রাকাতের ক্ষেত্রে হোক না কেন। এরপর সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে; যদি সালাম ফিরানোর পরেও দেয় তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে আগে দেয়াই উত্তম”।[শাইখ বিন বাযের ফতোয়াসমগ্র (১১/৩০) থেকে সমাপ্ত]
আর কোন কোন আলেমের মতে, নামাযের কোন রুকন আদায়ে সন্দেহ হওয়া নামাযের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ হওয়ার মত। যদি সন্দেহকারীর কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে না হয় তাহলে সে ব্যক্তি একীনের উপর নির্ভর করবে; একীন হচ্ছে ছোট সংখ্যাটি হিসাব করা। এ অবস্থায় সে ব্যক্তি সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা আদায় করবে।
আর যদি তার কাছে কোন একটি সম্ভাবনাকে অগ্রগণ্য মনে হয় তাহলে সে ব্যক্তি তার কাছে যে সম্ভাবনাটি অগ্রগণ্য মনে হয় সেটার উপর নির্ভর করে নামায চালিয়ে যাবে এবং সালাম ফিরানোর পূর্বে সহু সিজদা দিবে।
মুরদাওয়ি (রহঃ) বলেন:
“গ্রন্থকারের বক্তব্য: কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হওয়া সে রুকন আদৌ পালন না করার মত এটাই মাযহাবের অভিমত। মাযহাবের অধিকাংশ আলেম এ মতটি গ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকে এ মতটিকে অকাট্য বলেছেন। কারো কারো মতে, এ মাসয়ালাটি কোন একটি রাকাত ছেড়ে দেয়ার মাসায়ালার সাথে কিয়াসযোগ্য। তাই সে ব্যক্তি নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করবে এবং প্রবল ধারণার ভিত্তিতে আমল করবে।”[আল-ইনসাফ (২/১৫০) থেকে সমাপ্ত]
শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:
“যদি কারো কোন একটি রুকন ছুটে গেছে সন্দেহ হয় সেটা কোন রুকন ছেড়ে দেয়ার মতই”। অর্থাৎ সে ব্যক্তি যদি সন্দেহ করে যে, সে কি রুকনটি আদায় করেছে নাকি আদায় করেনি তার হুকুম হবে যে ব্যক্তি আদৌ রুকনটি আদায় করেনি সে ব্যক্তির হুকুমের মত। এর উদাহরণ হচ্ছে- কোন মুসল্লি দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানোর পর তার সন্দেহ হল সে কি সিজদা দুইটা দিয়েছে নাকি একটা দিয়েছে...? কোন কিছু আদায় না-করার সন্দেহ ঐ কাজটি আদৌ না-করার মত। কারণ কোন কিছু না-করা নিয়ে যখন সন্দেহ হয় তখন সে জিনিসের মূল অবস্থা হচ্ছে— না-করা। কিন্তু তার যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সে রুকনটি আদায় করেছে তাহলে অগ্রগণ্য মতানুযায়ী সে প্রবল ধারণার ভিত্তিতে নীতিগতভাবে সে রুকনটি আদায় করেছে ধরা হবে এবং তাকে এ রুকনটি পুনরায় আদায় করতে হবে না। কারণ আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যদি কেউ নামাযের সংখ্যা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে তাহলে সে ব্যক্তি তার প্রবল ধারণার উপর নির্ভর করবে। তবে সালাম ফিরানোর পর তাকে সহু সিজদা দিতে হবে।[আল-শারহুল মুমতি (৩/৩৮৪) থেকে সমাপ্ত]
দুই:
আলেমগণ উল্লেখ করেছেন, ভুলক্রমে যে ব্যক্তির সহু সিজদা ছুটে গেছে যদি খুব বেশি বিলম্ব না হয় তাহলে সে তখনি সেটা কাযা করে নিবে। আর যদি দীর্ঘ সময় বিলম্ব হয় তাহলে মুসল্লির উপর থেকে সহু সিজদা আদায় করার দায়িত্ব বাদ যাবে এবং তার নামায সহিহ হবে।
আল-বুহুতি (রহঃ) বলেন:
“কেউ যদি সালামের আগে আদায় করা মুস্তাহাব এমন কোন সহু সিজদা দিতে ভুলে যায়; সে সহু সিজদাটি যদি ওয়াজিব হয় তাহলে সে ব্যক্তি ওয়াজিব হিসেবে এটাকে কাযা করে নিবে। আর যদি অন্য কোন নামায শুরু করে দেয় তাহলে ঐ নামাযের সালাম ফিরানোর পর সহু সিজদা কাযা করবে; যদি এর মধ্যে বেশি বিলম্ব না হয়; ওজু না ভাঙ্গে এবং মসজিদ থেকে বের না হয়। যেহেতু সিজদাটি আদায় করার সময় এখনো আছে। আর যদি প্রথা অনুযায়ী খুব দেরী হয়ে যায়, কিংবা ওজু ছুটে যায় কিংবা মসজিদ থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সহু সিজদা আর কাযা করা যাবে না। যেহেতু এটি আদায় করার সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে। তবে তার নামায শুদ্ধ হবে। যেমন অন্য যে কোন ওয়াজিব ভুলক্রমে পরিত্যাগ করলেও নামায শুদ্ধ হয়।”[মুনতাহাল ইরাদাত (১/২৩৫) থেকে সমাপ্ত]
যে ব্যক্তি এ মাসয়ালার বিধান জানে না এমন ব্যক্তি ও জেনে ভুলকারী উভয়ের জন্য হুকুম অভিন্ন।
ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতোয়া সমগ্র খণ্ড-২ (৬/১০) তে এসেছে-
যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা ছেড়ে দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে এবং তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে। আর যদি ভুলক্রমে কিংবা অজ্ঞতাবশত ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে পুনরায় নামায পড়তে হবে না। তার নামায সহিহ।[সমাপ্ত]
শাইখ বিন বায (রহঃ) প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,
যদি কেউ নামাযের রাকাতে বেশি করে কিংবা কম করে এবং সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায কি বাতিল হয়ে যাবে?
তিনি জবাবে বলেন:
এক্ষেত্রে বিস্তারিত বিশ্লেষণ প্রয়োজন। যদি সে ব্যক্তি সহু সিজদা দেয়ার হুকুম জানার পরও নামাযের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যদি অজ্ঞতাবশত কিংবা ভুলক্রমে সহু সিজদা না দেয় তাহলে তার নামায শুদ্ধ হবে...।[নুরুন আলাদ-দারব ফতোয়াসমগ্র থেকে সংক্ষেপিত ও সমাপ্ত]
===================================================
====================================================
======================================================

প্রশ্ন: ৭৮ : শিরক কি ? বিস্তারিত বলুন।

★ শিরক কি ?
রব ও ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সহিত আর কাউকে শরীক সাব্যস্ত করার নামই শিরক ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে উলুহিয়াত তথা ইলাহ হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করা হয়৷ যেমন আল্লাহর সাথে অন্য কারো নিকট দোয়া করা কিংবা বিভিন্ন প্রকার ইবাদাত যেমন যবেহ, মান্নাত, ভয়, আশা, মহব্বত ইত্যাদির কোন কিছু গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা৷ এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
★ শিরকের প্রকারভেদ ?
#শিরক দুই প্রকার:
১. শিরকে আকবার (বড় শিরক)
যা বান্দাকে মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়৷ এ ধরণের শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি যদি শিরকের উপরই মৃতু্যবরণ করে, এবং তা থেকে তওবা না করে থাকে, তাহলে সে চিরস্থায়ী ভাবে দোজখে অবস্থান করবে৷
শিরকে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোন ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উদ্দেশ্যে কোন ইবাদত আদায় করা, গায়রুল্লাহর উদ্দেশে কুরবানী করা, মান্নাত করা, কোন মৃত ব্যক্তি কিংবা জি্বন অথবা শয়তান কারো ক্ষতি করতে পারে কিংবা কাউকে অসুস্থ করতে পারে, এ ধরনের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন ও চাহিদা পূর্ণ করা এবং বিপদ দূর করার ন্যায় যে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ক্ষমতা রাখেনা সে সব ব্যাপারে আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা৷ আজকাল আওলিয়া ও বুযুর্গানে দ্বীনের কবরসমূহকে কেন্দ্র করে এ ধরনের শিরকের প্রচুর চর্চা হচ্ছে৷ এদিকে ইশারা করে আল্লাহ বলেন:
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهَِ ﴿18﴾ سورة يونس
‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর ইবাদত করে, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না করতে পারে, কোন উপকার৷ আর তারা বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী৷’
২.শিরকে আসগার (ছোট শিরক)
শিরক আসগার বান্দাকে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডী থেকে বের করে দেয়না, তবে তার একত্ববাদের আক্বীদায় ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে৷ এটি শিরকে আকবারে লিপ্ত হওয়ার অসীলা ও কারণ৷ এ ধরনের শিরক দু’প্রকার:
~ প্রথম প্রকার: স্পষ্ট শিরক
এ প্রকারের শিরক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে৷
কথার ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللهِ فَقَدْ كَفَرَ أوْ أشْرَكَ.
‘যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শিরক করল’
অনুরূপভাবে এমন কথা বলা যে, ”আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছ” ماشاء الله وشئت কোন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ”আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন” কথাটি বললে তিনি বললেন, ”তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন৷”
আর একথাও বলা যে, ”যদি আল্লাহ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত” ৷ لولا الله و فلان উপরোক্ত ক্ষেত্রদ্বয়ে বিশুদ্ধ হল নিম্নরূপে বলা – ”আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে” ماشاء الله ثم فلان ”যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত” لولا الله ثم فلان । কেননা আরবীতে ثم (যার অর্থ: তারপর বা অতঃপর) অব্যয়টি বিলম্বে পর্যায়ক্রমিক অর্থের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ তাই”এবং ” শব্দের বদলে “তারপর” কিংবা “অতঃপর শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়৷ যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا تَشَاءُونَ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ ﴿29﴾ سورة التكوير
‘তোমরা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কোন কিছুরই ইচ্ছা করতে পারনা৷’
পক্ষান্তরে আরবী واو যার অর্থ : এবং অব্যয়টি দুটো সত্ত্ব বা বস্তুকে একত্রীকরণ ও উভয়ের অংশীদারিত্ব অর্থ প্রদানের জন্য ব্যবহৃত হয়৷ এদ্বারা পর্যায়ক্রমিক অর্থ কিংবা পরবর্তী পর্যায়ে সংঘটিত অর্থ বুঝা যায়না৷ যেমন একথা বলা যে, ” আমার জন্য তো কেবল তুমি এবং আল্লাহ আছ” ও ” এতো আল্লাহ এবং তোমার বরকতে হয়েছে”৷
#আর কাজের ক্ষেত্রে শিরকের উদাহরণ:
যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ ইত্যাদি লটকানো৷ এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বলাথ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে শিরকে আসগার৷ কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি৷ পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং বালা- মুসীবত দূর করে, তবে তা হবে শিরক আকবর৷ কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট৷
#দ্বিতীয় প্রকার: গোপন শিরক
এ প্রকার শিরকের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়্যাতের মধ্যে৷ যেমন লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ও প্রসিদ্ধি অর্জনের জন্য কোন আমল করা৷ অথর্াত্ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোন কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা৷ যেমন সুন্দর ভাবে নামায আদায় করা, কিংবা সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির- আযকার পড়া ও সুকন্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে৷ যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন৷ আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا ﴿110﴾ سورة الكهف
‘অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أخوف ما أخاف عليكم الشرك الأصغر، قالوا يارسول الله وما الشرك الأصغر قال: الرياء
‘তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বিশী করছি তা হল শিরকে আসগরধ৷ সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)
পার্থিব লোভে পড়ে কোন আমল করাও এ প্রকার শিরকের অন্তর্গত৷ যেমন কোন ব্যক্তি শুধু মাল- সম্পদ অর্জনের জন্যেই হজ্জ করে, আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে, কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে৷
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
تعس عبد الدينار و تعس عبد الدرهم، تعس عبد الخميصة، تعس عبدالخميلة إن أعطي رضي إن لم يعط سخط.
‘ দীনার , দিরহাম এবং খামিসা- খামিলা (তথা উত্তম পোশক-পরিচ্ছদ- এর যারা দাস, তাদের ধ্বংস৷ তাকে দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট হয়, আর না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়৷ ‘
#উপরের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট বাবে বুঝা যাচ্ছে যে,শিরকে আকবার ও শিরকে আসগারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে৷ সেগুলো হল:
১. কোন ব্যক্তি শিরকে আকবারে লিপ্ত হলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যায়৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারের ফলে সে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয় না৷
২. শিরকে আকবরে লিপ্ত ব্যক্তি চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা৷
৩. শিরকে আকবার বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়, কিন্তু শিরকে আসগার সব আমল নষ্ট করেনা৷ বরং রিয়া ও দুনিয়া অর্জনের উদ্দেশ্যে কৃত আমল শুধু তত্সংশ্লিষ্ট আমলকেই নষ্ট করে৷
৪. শিরকে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল মুসলমানদের জন্য হালাল৷ পক্ষান্তরে শিরকে আসগারে লিপ্ত ব্যক্তির জান-মাল কারো জন্য হালাল নয়
★ #শিরক কেন সবচেয়ে বড় গোনাহ হিসাবে বিবেচিত ?
১. এতে ‘ইলাহ’- এর গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যে খালেক তথা সৃষ্টিকর্তার সাথে মাখলুক তথা সৃষ্ট বস্তুর তুলনা করা হয়৷ কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করলো, সে প্রকারান্তরে তাকে আল্লাহর অনুরূপ ও সমকক্ষ বলে স্থির করলো৷ আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়৷’
জুলুম বলা হয় কোন বস্তুকে তার আসল জায়গা থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখা৷ সুতরাং যে গায়রুল্লাহর ইবাদত করে, সে মূলত: ইবাদাতকে তার আসল স্থানে না রেখে ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত নয় এমন কারো উদ্দেশ্যে তা নিবেদন করে৷ আর এটা হল সবচেয়ে বড় জুলুম এবং অন্যায়৷
২. আল্লাহ তাআলা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দিয়েছেন, শিরক করার পর যে ব্যক্তি তা থেকে তওবা করবেনা, তিনি তাকে ক্ষমা করবেন না৷ আল্ল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا ﴿48﴾ سورة النساء
‘নিশ্চয়ই আল্লাহর তাঁর সাথে শরীক করার পাপ ক্ষমা করেন না৷ এতদ্ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ তিনি ক্ষমা করেন, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন৷ ‘
৩. আল্লাহ এও বলেনওয, তিনি মুশরিকদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছেন এবং তারা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে৷ তিনি বলেন
إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿72﴾ سورة المائدة
‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম৷ অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই৷’
৪. শিরক সকল আমরকে নষ্ট ও নিষ্ফল করে দেয়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿88﴾ سورة الأنعام
‘যদি তারা শিরক করত, তবে তাদের কাজকর্ম নিষ্ফল হয়ে যেত৷’
আল্লাহ আরো বলেন:
وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿65﴾ سورة الزمر
‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হয়েছে যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন৷’
৫. মুশরিক ব্যক্তির রক্ত (তথা প্রাণ সংহার) ও ধন-সম্পদ কেড়ে নেয়া উভয়ই হালাল৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ ﴿5﴾ سورة التوبة
‘অতঃপর মুশরিকদেরকে হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী কর এবং অবরোধ কর৷ আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত্ পেতে বসে থাক৷’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
أمِرْتُ أنْ أقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُوْلُوْا لَاإلَهَ إلَّا الله، فإذَا قَالُوْاهَا عَصَمُوْا مِنِّي دِمَاءهُم وَأمْوَالَهُم إلَّا بِحَقِّهَا
‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন হক মা’বুদ নাই, একথা বলা পর্যন্ত লোকজনের সাথে লড়ে যাওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করা হয়েছে৷ অতঃপর যখনই তারা এই বাণী উচ্চরণ করল, আমার হাত থেকে তাদের জান-মাল তারা রক্ষা করে নিল৷ অবশ্য এ বাণীর দাবী অনুযায়ীকৃত দন্ডনীয় অপরাধের সাজা পেতেই হবে৷’
৬. কবীরা গোনাহসমূহের মধ্যে শিরক সবচেয়ে বড় গোনাহ৷
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
ألَا أنَبِئكُمْ بِأكْبَرِ الكَبَائرِ؟ قُلْنَا بَلَى يَارَسُوْلَ الله . قاَلَ الْإشْرَاكُ بِالله وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ.
‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় কবীরা গোনাহের সংবাদ দিব না? আমরা বললাম- জ্বী, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল ! তিনি বললেন: আল্লাহর সাথে শিরক করা এবং পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া৷’
শিরক হলো স্পষ্ট জুলুম ও অন্যায়৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ ﴿13﴾ سورة لقمان
‘নিশ্চয়ই শিরক একটি বড় জুলুম’

প্রশ্ন: ৭৭ : হজ্বের সময় মাথা মুন্ডন করা।

প্রশ্ন: আমাকে এক হিন্দু ভদ্রলোক বললেন হাজীরা হজ করতে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে কেনো? আমি বললাম ওটা নবীর নির্দেশ। লোকটি  বললো না, তখন আমি বললাম আপনি কি বলতে চাইছেন? লোকটি বললো শিব জন্য নাকি মাথা ন্যাড়া করতে হয়। এই কথাটা কতটা যুক্তিপূর্ণ এ বিষয়ে হাদিস ও  যুক্তি সাপেক্ষ উত্তর দিলে খুব উপকৃত হতাম। দয়া করে আমায় সাহায্য করেবেন।


উত্তর: 

হজ্জ ও ওমরাহ পালনের ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডন করা অথবা সমস্ত চুল খাটো করা ওয়াজিব (বুখারী হা/১৭২৯; মুসলিম হা/১৩০১; মিশকাত হা/২৬৩৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিদায় হজ্জের দিন হালাল হওয়ার সময় মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য দু’বার, অন্য বর্ণনায় তিনবার এবং চুল খাটোকারীদের জন্য একবার দো‘আ করেছিলেন (বুখারী হা/১৭২৭, মুসলিম হা/১৩০৩, মিশকাত হা/২৬৪৮-৪৯)। বিদায় হজ্জের সময় জনৈক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মাথা মুন্ডনের আগেই ত্বাওয়াফে এফাযাহ করেছি। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি মাথা মুন্ডাও অথবা চুল খাটো কর, কোন দোষ নেই’ (তিরমিযী হা/৮৮৫, মিশকাত হা/৮৮৫)। ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের সময় রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর কিছু সাথী মাথা মুন্ডন করেছিলেন এবং কিছু সাথী চুল খাটো করেছিলেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৪৬)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, মু‘আবিয়া (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমি মারওয়াতে কাঁচি দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর চুল ছেটেছি’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/২৬৪৭)। এ ঘটনা ছিল ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পরে হোনায়েন যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে ওমরাহ কালে (ফাৎহুলবারী হা/১৭৩০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।

আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূল-এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে আল্লাহর ইচ্ছায় নিরাপদে। তোমাদের কেউ মস্তক মুন্ডনকারী হিসাবে ও কেউ চুল খাটোকারী হিসাবে…’ (ফাৎহ ২৭)। অতএব যে কোন একটি করা ওয়াজিব।

হিন্দু ভদ্র মহাশয় একটি হাস্যকর কথা বলেছেন আপনার কর্তব্য ছিলতার নিকট তথ্যসূত্র তলব করাতিনি কোথায় পেলেন  কথা ? লোক হাসানো কথা বলে নিজের জ্ঞানিক দৈন্য প্রকাশের কি প্রয়োজন ? মাথা মুণ্ডণ হজ্বব্রতের অন্যতম একটি অনুসঙ্গ। পবিত্র কুরআনে মাথা মুণ্ডনের কথা এসেছে। হাদীসে এসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বব্রত পালন কালে মাথা মুণ্ডন করেছেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করে দেখিয়েছেন, আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে- তোমাদের কেউ কেউ মস্তক মুণ্ডিত করবে আর কেউ কেউ কেশ কর্তন করবে। সূরা ফাতহ ২৭। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ তুমি হজ্বের ক্ষেত্রে মাথা মুণ্ডনকারীদের ক্ষমা করে দাও। ইতহাফুল খিয়ারাতিল মাহারাহ, হাদীস ২৬০৪
হজ্বের ক্ষেত্রে কেন মাথা মুণ্ডন করা হয় ? এ প্রশ্নের সুনিশ্চিত উত্তর একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে উলামায়ে মাথা মুণ্ডনের তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, হাজী সাহেবগণ হলেন আল্লাহর ঘরের ভিখারী। তারা সবধরনের আমিত্ব ও কর্তৃত্বকে বিসর্জন দিয়ে একমাত্র আল্লাহর জন্য হয়ে যান। নিজের পোষাক পরিচ্ছেদ এমন কি মাথার চুল পর্যন্ত বিসর্জন দিয়ে নিরেট আল্লাহর জন্য হয়ে যান। শিবের সাথে ইসলামী বিধানের কি সম্পর্ক। হজ্ব বিধান যখন ফরজ হয় তখন কি শিব ছিল সেখানে ? শিব কত সনে কোথায় জন্ম গ্রহণ করে ? হজ্বের মত একটি পবিত্র বিধানের সাথে কি করে শিব নামক কল্পনাপ্রসূত একটি বিষয়কে সংশ্লিষ্ট করা হলো ? বস্তুত এসব কথার উত্তর দিতে নেই। এসব কথার উত্তর দিতে যাওয়ার অর্থ হলো, সে কথাকে গণ্য করা। সুতরাং এ জাতীয় হাস্যকর কথাকে হেসে হেসেই উড়িয়ে দেওয়া চাই।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...