★★ বিদআতের ব্যাপারে কত রকম হাদিস আছে?
উত্তর : ৩ রকম হাদিস :
১) এক প্রকার হাদিস যা বিদআত শব্দের উল্লেখ আছে কিন্তু তা ভাল বিদআত না
মন্দ বলা নেই। শুধু রাসুলের পরে সেগুলোর আবিষ্কার হবে বলা আছে। তা ভালও
হতে পারে খারাপও হতে হতে পারে।
২) স্পষ্ট ভাবে সেই সব বিদআতে নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে, ঘৃনা, লানত, শাস্তি,
অভিশাপ ইত্যাদি বর্নিত আছে, তা কুরআন ও সুন্নাহর পরিবর্তন করবে
বলা আছে। বিদআতে সাইয়া
৩) স্পষ্টভাবে এক প্রকার নতুন কিছুর প্রবর্তনকে সওয়াব ও কল্যানময় বলা
হয়েছে যা কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা - কিয়াস কোনটার বিপরীতে নয়। বিদআতে হাসানা।
বিদআত এর অর্থ ও সংগা কি ? :
NOTE : এগুলো মুলত প্রকৃত পক্ষে মন্দ বিদআতের অর্থ ও সংগা দেয়া হয়েছে অধিকাংশ কারন বিদাত কি বুঝানোর জন্য।
কারন বিদাতে হাসানাকে প্রকৃতপক্ষে আমরা বিদাত বলে সম্বোধন করি না। যেমন :
আল-কোরআন বাইন্ডিং বা কোরআন খতম,
খতমে ইউনুস এগুলো বিদআত কিন্তু আমরা একে বিদাত বলিও না চিন্তায়ও আনি না,
সংগারও প্রয়োজন মনে করি না কিন্তু আসলে নির্দিষ্ট করে
বললে তা বিদাতে হাসানা বলা উচিত। যেমন :
★ ইমাম শারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই
যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই।” (আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্)
অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী
বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা পেশ করে থাকে।
★ আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
“নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত
সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাবেয়ীনগণের নিকট হতে
প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা
মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে।” (কবীরী শরহে
মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১)
বিদআতের অর্থ :
(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।”
(লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩, বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫)
(২) “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭)
(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা
হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯, মিরকাত শরীফ)
(৪) “জেনে রাখ, হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পারে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।” (আশয়াতুল লোমআত)
(৫) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা।” (আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩)
(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়।” (লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬)
(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬) সুতরাং বিদয়াত শব্দের
লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি।
পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা।
বিদয়াতের সংগা :
(১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা
বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত
হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)
(২) আল্লামা ইসমাইল নাবিহানী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম)
ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, “বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০)
(৩) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে-
এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-এর সময় ছিলনা।” (শরহে মুসলিম লিন নববী)
(৪) হাফেজ ইবনে রজব রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, “বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা
হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে,
শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়।”
(জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)
(৫) ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন, ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিলনা।” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল
লোগাত) শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব
বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত
প্রত্যেক নতুন বিষয়। এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে
পারে।
সংগা ১ : বিদআত হল এমন নতুন বিষয়াদির আবিষ্কার যা রাসুলুল্লাহ
(সা) এর যুগে ছিল না, পরে আবির্ভুত বা আবিষ্কৃত হয়েছে। তা ভাল
ও হতে পারে খারাপও হতে পারে।
এ সম্পর্কে :
★‘মিরকাত’ الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে।
وَفِى الشَّرْعِ اِحْدَاثُ مَالَمْ يَكُنْ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ
বিদআত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের যুগে ছিল না।
★ আশআতুল লুমআতে বর্ণিত আছে-
“যে কাজ হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে সূচিত হয়েছে, তা বিদআত”
NOTE: এই বিদআত ভালও হতে পারে খারাপও হতে পারে। কেন ভাল
হতে পারে? কারন নিচের কাজগুলোও স্পষ্ট বিদআত যা রাসুলের যুগের পরে এসেছে
কিন্তু ভাল বিদআত।
যেমন :
ভাল কিছু বিদআতের প্রচলন হল :
★ ইটের তইরি মসজিদ → সুন্নতী মসজিদ হল মাটির তইরি
★ মাদ্রাসা → রাসুলের যুগে ছিল না
★ জুমুয়ার ২ আজান → হযরত উসমান (রা) এর খেলাফত কালে চাল হয় (বুখারী)
★ কুরআন শরীফ একত্রিত করন → হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে। (বুখারী)
★ তারাবিহ নামাজ জামায়াতে আদায়→ হযরত উমর (রা) এর খিলাফত কালে চালু হয় (বুখারী)
★ রমজানে ৩ দিনে তারাবিহ নামাজের মধ্যে কুরআন খতম → ইমাম বুখারী তার সংগীদের নিয়ে জামায়াতে ৩ দিতে এক খতম দিতেন তারাবির নামাজে।
Note: নিচে এগুলো রেফারেন্স সহ বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
সংগা ২ : বিদআত হল এমন কিছু যা কুরআন এবং সুন্নাহর পরিবর্তন কারী।
★ অনুরুপ হযরত আয়েশা (রা) থেকেও সহীহ বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
রাসুল (সা) বলেন, "কেউ যদি নতুন কিছু (বিদাত) সংযোজন করে এবং তা ধর্মীয়
রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা প্রত্যাখ্যাত।" [বুখারী ৩য় খণ্ড, বুক ৪৯,
হাদিস নং ৮৬১]
★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।
مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد
যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।
এটা সব সময়ই খারাপ। এমন বিদআত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে অভিশাপ
ও লানতের ব্যাপারে বা শাস্তির ব্যাপারে সেগুলো মন্দ বিদআতকে বুঝানো হয়েছে।
খারাপ বিদআত হল এক কথায় আকিদাগত বিদআত।
★★★ হাদিস থেকে ২ প্রকার বিদআতের সংগার উদ্ভাবন :
★ মিশকাত শরীফের العلم অধ্যায়ে বর্ণিত আছে।
যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য ছাওয়াব পাবেন;
যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও ছাওয়াব পাবেন, তবে তাঁদের ছাওয়াবের
মধ্যে কোন কমতি হবে না; এবং যারা ইসলামে মন্দরীতি প্রচলন করে, এর জন্য
তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে
ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না।
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যা বিদআতের সংগা :
★ ফাতওয়ায়ে শামীর ভুমিকায় ইমাম আবু হানীফা (রহ:) এর ফযীলত বর্ণনা প্রসংগে উল্লেখিত আছে।
উলামায়ে কিরাম বলেন- এসব হাদীস সমূহ ইসলামের কানুন হিসেবে প্রযোজ্য- যে
কেউ ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করলে সে এর উপর সমস্ত আমলকারীদের গুনাহের
ভাগী হবে; আর যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত
সমস্ত আমলকারীদের ছওয়াবের ভাগী হবেন। এর থেকেও প্রমাণিত হলো ভাল বিদআতে
ছওয়াব আছে ও মন্দ বিদআতে গুনাহ হয়।
★ আশআতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খন্ডে الاعتصام হাদীছটি وكل بدعة ضلالة প্রসংগে উল্লেখিত আছে।
যে বিদআত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং
এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদআতে হাসানা বলা হয়। আর যা বিপরীত,
সেটাকে বিদআতে গুমরাহী বলা হয়।
বিদআতের বিস্তারিত শ্রেনী বিভাগ :-
কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিদাতের প্রকার ভেদ আলোচনা করা হল। সুতরাং ইহা ১ প্রকার বলা মানে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।
★ ইমাম, মুজতাহিদগণ শরীয়তের বিধান অনুযায়ী বিদয়াতকে প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত করেছেন-
১। বিদয়াতে ই’তেক্বাদী, অর্থাৎ আক্বীদা বা বিশ্বাসগত বিদয়াত।
২। বিদয়াতে আ’মালী, অর্থাৎ কর্মগত বিদয়াত।
(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত হলো – যে সমস্ত আক্বীদা
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত
বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল
ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই
হারাম ও কুফরী।
(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াতঃ
বিদয়াতে আ’মালী প্রথমতঃ দু’ভাগে বিভক্ত-
(ক) বিদয়াতে হাসানা,
(খ) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্।
(ক) বিদয়াতে হাসানা আবার তিন প্রকার-
(১) বিদয়াতে ওয়াজিব,
(২) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
(৩) বিদয়াতে মোবাহ্।
★ আর এ বিদয়াতে হাসানাহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে কেউ
দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য
সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে
পাবে।” (মুসলিম শরীফ)
(খ) আর বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ দু’প্রকার-
(১) বিদয়াতে হারাম,
(২) বিদয়াতে মাকরূহ্।
এই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্ সম্পর্কেই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
★ “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মিশকাত শরীফ)
★ আরো ইরশাদ হয়েছে,
كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار.
অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে
যাবে।” উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত
ফিদদ্বীন বলা হয়।
★ আবার কেউ কেউ বলেন : বিদ‘আত দু প্রকার :
১) বিদ‘আতে ফিদ্দীন (البدعةفيالدين) (মন্দ)
২) অন্যটা হল বিদ‘আত লিদ্দীন (البدعةللدين) (ভাল)
★ মহান আল্লাহ বলেন,
مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن
يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ
اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا
অর্থঃ যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং
যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে৷ আর
আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন৷"
[সূরা নিসা ৮৫]
★ রাসুল (সা) বলেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম ধর্মে কোনো সুন্নাতুন্ হাসানা তথা
উত্তম প্রথা/রীতি প্রবর্তন করেন, তিনি এর সওয়াব পান এবং যারা তার পরে ওতে
আমল করবে, তাদের সওয়াবও তিনি পেতে থাকেন; আর তাদের (পরবর্তী আমলকারীদের)
সওয়াবেরও এতে ন্যূনতম কমতি হয় না। অনুরূপ ভাবে কেউ যদি ধর্মে খারাপ কিছু
সংযোজন করে আর কেউ তা অনুসরণ করে, সে ওই মন্দের জন্য দায়ী থাকবে।” [সাহীহ
মুসলিম : ৬৪৬৬]
Note: এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বিদাত ২ প্রকার।
★ ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন,
ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺤﺚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺳﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﺤﺬﻳﺮ ﻣﻦ ﺍﺧﺘﺮﺍﻉ ﺍﻻ ﺑﺎﻃﻴﻞ ﺍﻟﻤﺴﺘﻘﺒﺤﺎﺕ -
অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস শরীফে ভাল কাজের সূচনা এবং উত্তম রীতি-রেওয়াজ
চালু করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ভ্রান্ত ও অনিষ্ট রীতি-রেওয়াজ
চালু করার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।
★ ইমাম নববী উল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বলেন,
ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺨﺼﻴﺺ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ( ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ) ﻭﺍﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﺎﺕ ﺍﻟﺒﺎﻃﻠﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺬﻣﻮﻣﺔ –
অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস -এ হুজুর সরকারে দো’আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর ফরমানে মুবারক
ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ
(প্রত্যেক নতুন বস্তুই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত গোমরাহী) এর ব্যাখ্যা হল
যে, অত্র হাদীসের মধ্যে বিদ’আত থেকে উদ্দেশ্য নব্য ভ্রান্ত বিষয়াদি এবং
মন্দ বিদ’আত।
Reference : শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭।
★ হযরত আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত-৯৭৩ হিজরী) বর্ণনা করেন,
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺰﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ - ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻓﻌﻞ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻌﻬﺪ ﻓﻰ ﻋﻬﺪ
ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭﺗﻨﻘﺴﻢ ﺍﻟﻰ ﺧﻤﺴﺔ ﺍﺣﻜﺎﻡ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻮﺟﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨﺪﺏ ﺍﻟﺦ
ﻭﻃﺮﻳﻖ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺫﻟﻚ – ﺍﻥ ﺗﻌﺮﺽ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﺍﻟﺸﺮﻉ- ﻓﺎﻯ ﺣﻜﻢ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﻴﻪ، ﻓﻬﻰ
ﻣﻨﻪ – ﻓﻤﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻮﺍﺟﺒﺔ ﺗﻌﻠﻢ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﻔﻬﻢ ﺑﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ
ﺍﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻣﺬﻫﺐ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺪﺭﻳﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻤﺪﺍﺭﺱ ﻭﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ
ﻟﺼﻠﻮﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺒﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻫﺔ
ﺯﺧﺮﻓﺔ ﺍﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻟﻤﺼﺎﺣﻒ ﺍﻯ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭﺍﻻ ﻓﻬﻰ ﻣﺤﺮﻣﺔ- ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ – ﻛﻞ
ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﻭﻛﻞ ﺿﻼﻟﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ- ﻭﻫﻮ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻻ ﻏﻴﺮ -
অর্থাৎ, হযরত আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি ইরশাদ
করেন, বিদ’আত এমন একটি কাজ যার প্রচলন হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামা এর যুগে ছিল না।এবং এটা (বিদ’আত) কে পাঁচটি বিধানে বিভক্ত করা
হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াজিব-মুস্তাহাব এবং অন্যান্য। এটা জানার উপায় এই যে,
বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) কে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতিতে পেশ করা হবে। ফলে ঐ
বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) যেই বিধানে পড়বে তবে তা উহার অন্তর্ভুক্ত হবে।
১। ওয়াজিব বিদ’আতঃ এর মধ্যে (অন্যতম) রয়েছে ইলমে নাহু শিক্ষা করা। যার
মাধ্যমে কুরআন মাজীদ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর হাদীস
শরীফকে বুঝা যায়।
২। হারাম বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে ক্বদরিয়্যাহ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় (বাতিল ফির্কা) সমূহ।
৩। মুস্তাহাব বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এবং তারাবীহ নামাজের জন্য একত্রিত হওয়া।
৪। মুবাহ (বৈধ) বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে নামাজের পর মুসাফাহা (করমর্দন) করা।
৫। মাকরুহ বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ এবং পবিত্র কুরআন মাজিদের
সৌন্দর্যকরণ। অর্থাৎ স্বর্ণ ব্যতিরেকে অন্যান্য বস্তু দ্বারা (মসজিদ এবং
কুরআন মাজিদের) সৌন্দর্যকরণ। (অন্যদিকে) স্বর্ণ দ্বারা এহেন সৌন্দর্যকরণ
করাও হারাম (এগুলো হল বিদ’আতের পাঁচটি প্রকার।) আর হাদীস শরীফের মধ্যে
রয়েছে যে,প্রত্যেক বিদ’আত হল গোমরাহী (ভ্রষ্টতা) এবং প্রত্যেক গোমরাহী-ই
জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম। তাহলে এই হাদীস শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের
ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (অর্থাৎ এই হাদীস শরীফে শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের কথা
উল্লেখ হয়েছে, নতুবা অসংখ্য নব্য সৃষ্টি দ্বীনের জন্য আবশ্যকীয়।)
Reference : ফতোয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ,পৃষ্ঠা-১০৯,দারুল ফিকার, বৈরুত,লেবানন।
★ হাদিসে বর্নিত আছে,
````যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেই
পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে
কোন কমতি হবে না।
```` আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন
করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতি অনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে
তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)
NOTE : প্রবর্তন বা প্রচলন মানে নতুন কিছুর আবিষ্কার।
★ ‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে’’।
[সুনান আততিরমীযি : ২৬৭০]
★ হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী (রহ) সহিহ ইসনদসহ "মানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ
(রহ) " কিতাবে বর্ননা করেন, মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) আমাদের
নিকট বর্ননা করেছেন যে,
** মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (রহ) তিনি ** আবু আল-আব্বাস আল আসসাম
(রহ) থেকে তিনি ** রাবী ইবনে সুলায়মান (রহ) থেকে তিনি ** ইমাম শাফেঈ (রহ)
থেকে বর্ননা করেছেন যে ইমাম শাফেঈ (রহ) তাকে (সুলায়মানকে) জানিয়েছেন :
নব আবিষ্কৃত বিষয়সমুহের মধ্যে থেকে ২ ধরনের বিষয় প্রমানিত হয় :
১) নতুন আবিষ্কৃত বিষয় গুলোর মধ্যে ১টা হল যা কুরআন অথবা সুন্নাহ অথবা কোন
(শরীয়তের) বর্ননা অথবা (উম্মতের বা ইমামগনের সর্বজনীন) ঐক্যমতের বিরোদ্ধে
আবির্ভাব হবে সেগুলো হবে পথভ্রষ্টতা (আল-বিদাতু আল- দ্বালালাতু)
২) দ্বিতীয়ত এমন কিছু ভাল জিনিস নতুন আবিষ্কৃত বা আবির্ভুত হবে যেগুলোর কোনটাই কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা-কিয়াসের বহির্ভুত হবে না।
তখন সেটা হবে এমন বিদআত যা নিন্দনীয় হবে না (বরং তা উত্তম হবে) (ঘায়রু মাযমুমাতিন)।
Reference :
** ইমাম বায়হাকী (রহ) : মানাকিবমানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (রহ)
** মোল্লা আলী কারী (রহ) : মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯
English Translation :
Al-Hafidh al-Imam al-Bayhaqi (Alayhir Rahmah) narrates through a sahih
isnad (authentic chain of transmission) in Manaqib al-Imam al-Shafi'i,
that Muhammad ibn Musa ibn al-Fadl narrated to us that Abu al-'Abbas
al-Assam narrated to him that Rabi' ibn Sulayman narrated to him that
al-Imam ash-Shafi'i informed him:
"The newly-invented matters from the affairs are of two kinds: One of
them is whatever is innovated contravening the Book, or the Sunnah, or a
narration, or a consensus, then this is an innovation of misguidance
(al-bid'atu al-dalalatu). The second is whatever is innovated of the
good which does not contravene any of these, then this is an innovation
which is not blameworthy (Ghayru Mazmumatin)."
★ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী কিতাবে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে :-
ﺛﻢ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﻧﻮﻋﻴﻦ _ ﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﺤﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ
ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﺴﺘﻘﺒﺤﺔ
অতঃপর বিদআত ২ প্রকার। বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত
হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত । আর যদি তা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে
খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত। (উমদাতুল
ক্বারী শরহে বুখারী)
১) বিদআতে সাইয়া সম্পর্কে :
এই মন্দ বিদাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস জেনে নিন :
★ সাহাল বিন সাদ (রা.) বলেনে,”আমি নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে,(যখন আমি হাউজে কাউসারের পানি পান করাব
তখন) “অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদের আমি চিনি, এবং তারাও আমাকে
চিনতে পারবে। অত:পর তাদের ও আমার মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি
(ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত!” তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে,
তারা আপনার পর `````কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অত:পর আমি
বলল-”যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে````, তারা দূর হোক,
তারা দূর হোক।”-[বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৬৬৪৩]
NOTE: আগেই আলোচনা করেছি আয়েশা (রা) এর হাদিসহাদিস : বিদাত
হল এমন জিনিস যা কুরআন ও সুন্নাহ এর
পরিবর্তনকারী। সুতরাং এই হাদিসে নিষ:ন্দেহে বিদাতে সাইয়ার দিকে ইংগিত করা
হয়েছে।
★ * রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোন
বিদআতিকে সাহায্য করে, আল্লাহ্ তাকে লানত করেন।”-[মুসলিম]
★ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”-[মুসলিম]
★ “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ
মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব
উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত
হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।
Note : এখানে বিদাতে সাইয়ার কথা মুলত বুঝানো হয়েছে।
★ যেমন হাদীস শরীফে ইরশাদ করা হয়েছে,
“তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ‘ত এবং প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা”।
হাদিসের ব্যাখ্যা :
অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ।
★ এ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা মেশকাত শরীফের শরাহ্ মেরকাত শরীফে উল্লেখ করা হয়,
“ হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে
كل بدعة ضلالة হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,
“সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী।”
★ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।
مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد
যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।
★★★ এ প্রসংগে ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
وَالْمَعْنى اَنَّ مَنْ اَحْدَثَ فِى الْاِسْلَامِ رَايًا فَهُوَ مَرْدُوْد
عَلَيْهِ اَقُوْلُ فِىْ وَصْفِ هَذَا الْاَمْرِ اِشَارَة اِلى اَنَّ
اَمْرَ الْاِسْلَامِ كَمَلَ
যে কেউ ইসলামে এ ধরণের আকীদা প্রচলন করে, যা ধর্মের পরিপন্থী সে মরদুদ। আমি
বলতে চাই যে هذالامر দ্বারা ওদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে ইসলামের ব্যাপারটা
পরিপূর্ণ হয়েছে।
★ মিশকাত الايمان بالقدرঅধ্যায়ে উল্লেখিত আছে হযরত ইবনে উমর (রা:) কে কেউ
বললেন অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন-
بَلَغَنِىْ اَنَّهُ قَدْ اَحْدَثَ فَاِنْ كَانَ اَحْدَثَ فَلَا تُقْرِئَه مِنِّى السَّلَامَ
আমি জানতে পারলাম যে, সে বিদআতী হয়ে গেছে। তা যদি হয়, তাকে আমার সালাম বলবেন না।
জিজ্ঞাসা করা হলো বিদআতী কিভাবে হতে পারে? ফরমালেন :-
يَقُوْلُ يَكُوْنُ فِىْ اُمَّتِىْ خَسْفٌ وَمَسْخٌ اَوْقَذْفٌ فِىْ اَهْلِ الْقَدْرِ
হুযুর আলাইহিসসালাম ইরশাদ ফরমাতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কদরীয়া
সম্প্রদায়ের বেলায় ভূমি ধ্বসে যাবে, চেহারা বিকৃত হবে, অথবা পাথর বর্ষিত
হবে।
Note:
প্রতিভাত হলো যে, কদরীয়া ফিরকাকে অর্থাৎ যারা তকদীরকে অস্বীকার করতো তাদেরকে বিদআতী বলা হয়েছে। এই হল আকিদাগত বিদআতের Example.
★ দুররুল মুখতারের কিতাবুল সালাত الامت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছে।
وَمَبْتَدَعٍ اَىْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ وَهِىْ اِعْتِقَادُ خِلَافِ الْمَعْرُوْفِ عَنِ الرَّسُوْلِ
বিদআতী ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। বিদআত হচ্ছে সেই আকীদার বিপরীত
আকীদা পোষন করা যা হুজুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে প্রসিদ্ধ লাভ
করেছেন।
★ ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া প্রথম খন্ড কিতাবুল বিদআতের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত
আছে- যে বিদআতের ব্যপারে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আকীদাগত বিদআত
যেমন : রাফেজী ও খারেজীদের আকিদাগত বিদআত।
২) বিদআতে হাসানা সম্পর্কে উদাহরন সহ :
★★★ NOTE: এই বিদাতে হাসানার অধিকাংশ দলিল ইতিপুর্বে (বিদাতের শ্রেনীবিভাগ
পর্বে CLASSIFICATION OF BIDAH) এর মধ্যে আলোচিত হয়ে গেছে তাই ওই গুলো
পুনরাবৃত্তি করলাম না।
★ এখন বিদআতে হাসানার প্রমান নিন আল-কুরআন থেকে আল্লাহ তায়ালা ফরমান :
وَجَعَلْنَا فِىْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْاهُ رَافَةً وَّرَحْمَةً
وَّرَهْبَانِيَّةٍ اِبْتَدَعُوْاهَا مَا كَتَبْنَا هَاعَلَيْهِمُ
اِلّابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ
“আমি তাদের আত্মায়, যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন, আরাম ও রহমত দান করেছি
সন্ন্যাসবাদ তারাই প্রবর্তন করেছিল; আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি। আল্লাহর
রেজামন্দির উদ্দেশ্যে এর সূচনা করেছিল”
★ পুনরায় ইরশাদ করেন-
فَاَتْيَنَا الَّذِيْنَ امَنُوْا مِنْهُمْ اَجْرَهُمْ
“তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আমি ওদেরকে পুরস্কার দিয়েছি”।
★ তবে হ্যাঁ, যারা একে চালু রাখতে পারেনি, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
فَمَارَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا
“এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি”।
Note: লক্ষ্য করুন এখানে বিদআতের জন্য নিন্দা করা হয়নি বরং এটা চালু রাখতে না পারায় আল্লাহ অসুন্তুষ্ট।
★ হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে – عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل
بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء .
অথ: হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা
করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য
প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য
ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’
(মুসলিম, মিশকাত)
★ অপর হাদিসে বর্নিত আছে :
ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ
ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ
ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ
ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ
ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ ٌ
যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথা আবিষ্কার করল তার জন্য উত্তম
প্রতিদান রয়েছে, এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান
রয়েছে। এতে লোকেরা যে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব
দেওয়া হবে।আবার তাদেরকে ও কম দেওয়া হবে না। আর যে ইসলামে একটি খারাপ
প্রথা চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান
পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না। ( ইবনু মাজাহ,১ম
খণ্ড,হাদিস-১৭৩,সহিহ)
★ আবু যার (রা) বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় যে আল্লাহ্র রাসূলকে (সাঃ)
জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ "ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলবেন যে কোনো ভালো কাজ করল
এবং মানুষ এরজন্য তাকে প্রশংসা করল?" আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বললেনঃ "এটি
হোলো মু'মিনের জন্য আগাম সুসংবাদ।" [মুসলিম]
যদি বিদআত শুধু ১প্রকারই হয় আর মন্দ কাজকেই বুঝায় তবে নিচের কাজগুলো যারা
চালু করেছেন তাদেরকে কি ওহাবী-সালাফীগন জাহান্নামী বলার সাহস আছে?কিন্তু
তাদের আকিদার কারনে তাদের না বুঝে মুর্খের মত ফতোয়ার কারনে ঠিকই ওনাদের
উপর পরোক্ষভাবে সেই জাহান্নামীর অপবাদ পরে থাকে (নাউযুবিল্লাহ) :
★ মিশকাত শরীফের
الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
اتبعوا السواد الاعظم فانه من شذشذ فى النار-
বড় জামাতের অনুসরণ করুন। যে এর থেকে পৃথক রইল, সে দোযখে পৃথক অবস্থায় থাকবে।
★ আরও উল্লেখ আছে-
ماراه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن ومن فارق الجماعة شبرا فقد خلع ريقة الاسلام عن عنقه-
মুসলমান যাকে ভাল মনে করে, আল্লাহর কাছেও সে ভাল। মুসলমানগণের জামাত থেকে
কনিষ্ঠাঙ্গুলী পরিমাণও পৃথক রইল, সে যেন ইসরামের রশি নিজ গলা থেকে ফেলে
দিল।
★ কুরআনে কারীমে আছে-
ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى ونصله جهنم –
যে মুসলমানের পথ থেকে ভিন্ন পথ চলে, আমি তাকে সে অবস্থায় ছেড়ে দেব এবং তাকে দোযখে প্রবেশ করাবো।
★ ‘আশআতুল লুমআত’ এ فعليكم بسنتى এর প্রোপটে উল্লেখিত আছে-
يس برجه خلفائـ راشدين بدان كرده باشند- اكرجه باجتهاد وقياس ايشان بود موافق سنت نبوى است اطلاق بدعت بران نتوان كرد-
যে বিষয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন রায় দিয়েছেন, তা যদি নিজস্ব কিয়াস ও
ইজতিহাদ দ্বারা হয় এবং সুন্নাতের নববী অনুযায়ী হয়, তবে তাকে বিদআত বলা
সমচীন নয়।
আবু বকর (রা) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :
★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (রা:) কে যখন কুরআনে পাক একত্রিত করার হুকুম দিলেন, তখন তিনি আরয করলেন।
كيف تفعلون شيئالم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هو خير-
আপনি এ কাজ কেন করতে যাচ্ছেন, যা হুযুর আলাইহিস সালাম করেননি। হযরত সিদ্দিক
(রা:) ফরমালেন, এতো ভাল কাজ। অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত হযরত সিদ্দীক
(রা:) এর সমীপে আরয করলেন, কুরআন একত্রিতকরণ হচ্ছে বিদআত। তাই আপনি কেন
বিদআতে হাত দিচ্ছেন। তখন হযরত সিদ্দীক (রা:) ইরশাদ ফরমালেন- বিদআত বটে তবে
উত্তম বিদআত। এর থেকে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কিরামের কাজ হচ্ছে বিদআতে
হাসানা।
Reference : বুখারী শরীফ : দ্বিতীয় খন্ড : كتاب فضائل القران এর جمع القران অধ্যায়।
★ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) যখন কুর্আন সংকলন করার কথা বললেন তখন সাহাবা
গণ আরজ করলেন হে খলিফাতুল মুসলেমিন” আপনি কি এমন কাজ (বিদাত) করবেন যা
রাসূল (সাঃ) করেননি? তখন সিদ্দিকে আকবর বললেন আল্লাহর কসম এটা ভাল কাজ.।
Reference : মেশকাত শরিফ পৃষ্ঠা ১৯৩
প্রমাণিত হল হযরত আবু বকর (রাঃ) ভাল বিদাত গ্রহণ করেছেন ।
উমর (রা) এর বিদআতে হাসানার প্রচলন :
হযরত উমর (রা:) স্বীয় খিলাফাতের যুগে নিয়মিতভাবে জামাত সহকারে তারাবীর
নামায আদায় করার হুকুম দিয়েছিলেন এবং জামাত অনুষ্ঠিত হতে দেখে বলেছেন
نعمت البدعة هذه- এতো বড়ই ভাল বেদআত। দেখুন হযরত উমর (রা:) নিজেই নিজের
প্রচলিত কাজকে বিদআত হাসানা বলেছেন।
হযরত উমর (রাঃ) ৩০ দিন জামাত সহকারে তারাবিহ নামাজ চালু করেন, যা রাসূল (সাঃ) ও আবু বকর (রাঃ) এর সময় ছিলনা।
★ হযরত উমর (রাঃ) একদা হযরত আব্দুর রহমান (রাঃ) কে সাথে নিয়ে রাতে বের
হলেন. যখন তিনি সবাইকে জামাত সহকারে তারাবীহ নামাজ পরতে দেখলেন তখন তিনি
খুশি হয়ে বললে ” এটা কতইনা উত্তম বিদাত !”
Reference :
** মিশকাত শরীফের قيام شهر رمضان অধ্যায়
** ইমাম বুখারী : সহীহুল বুখারী ১ম খন্ড : পৃষ্টা ২৬৯
হযরত উসমান (রা) বিদাতে হাসানার প্রচলন :
★ হযরত ওসমান (রাঃ) জুমার নামাজে খুতবার আযান (দ্বিতীয় আজান) চালু করেছেন,
যা রাসূল (সাঃ) ও দুই খলিফার আমলে ছিলনা। (সহীহ বুখারী পার্ট ১. পৃষ্ঠা
১২০)
★ যদিও গায়র মুকাল্লিদীনের অর্থাৎ আহলে হাদিস ভাইদের নিকট এই আযান বেদআত (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন :
★ মুহাম্মদ ইদরীস সালাফী এক প্রশ্নের জবাবে লিখে-"প্রথম আযান বেদআত" (জমীমা জাদীদা ফতোয়ায়ে সাত্তারিয়া-২য় খন্ড, ১৩পৃ:)
★ আব্দুস সাত্তার রহমানী গায়র মুকাল্লিদ "আজীব ও গরীব বেদআত" নামক এক কিতাব লিখেছেন,
উক্ত কিতাবে বেদআতের নামে হযরত উসমান রা: এর চালুকৃত আযানের আলোচনা করতে
গিয়ে এটাকে বেদআতের মধ্যে শামীল করেছেন। (আজীব ও গরীব বেদআত-২৯)
ইমাম বুখারী (রহ) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন :
★ ইমাম বুখারী (রাহ) এর আমলের বিবরণঃ
_____________
মুসাব্বিহ বিন সায়ীদ (রাহ) বলেন,
ইমাম বুখারী (রাহ) এর অভ্যাস ছিল, রামাদান মাসের প্রথম রাত থেকেই তাঁর
সাথীগণ তাঁর নিকট জমায়েত হতেন। অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন।
অতঃপর প্রতি রাকাতে তিনি ২০ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরী
পর্যন্ত তিনি কোর’’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবে
প্রতি তিনদিনে সেহরীর সময় তাঁর এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত হয়ে
যেত।
আর প্রতি এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত শেষে ইমাম বুখারী বলতেন,
এখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে।
রেফারেন্সঃ
১/সিফাতুস সাফওয়াহঃ২/৩৫৪
২/সিয়ারু আ’লামিন নুবালা
ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল থেকে যা পাওয়া গেলঃ
____________________________
১/ প্রতি রাকাতে ২০ টি আয়াত তেলাওয়াত করা। অর্থাৎ আয়াতের নাম্বার নির্ধারণ করা।
২/ প্রতিরাত সালাতের জন্য কোর’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করা।
৩/ প্রতি তৃতীয় রাতে জামাতের সাথে সালাত আদায়ে কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত খতম করা।
৪/ প্রতি তৃতীয় রাতে সাথীদেরকে বলাঃ দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে। তার মানে তিনি কোর’আন খতম করে দোয়া করতেন।
আমাদের দৃষ্টিতে এ আমলঃ
______________
আমরা মনে করি, এ আমল একটি উত্তম আমল, যা আল্লাহর সুন্তুস্টি অর্জনে এবং অশেষ ছওয়াব হাসিলে সহায়ক।
হে লা-মাযহাবীঃ
______________
আপনারা কোন আমলকে বা ইবাদতকে বেদ’আত নির্ধারণ করতে গিয়ে যে বিষয়গুলোর অবতারণা করে ধোঁকাবাজি করে থাকেন, তা হচ্ছে-
১/এমন আমল কি রাসুল (সা) করেছেন?
২/ এমন আমল কি সাহাবায়ে কেরাম করেছেন?
যদি না করে থাকেন, তবে তা বেদ’আত ও বাতিল আমল বলে গণ্য হবে।
এটা হচ্ছে কোন বিষয়কে বেদ’আত বানাতে আপনাদের পলিসি ও চালাকি।
সরাসরি প্রশ্নঃ
_______
এবার ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল নিয়ে আপনাদের নিকট সরাসরি প্রশ্নঃ
আপনাদের এ পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী হয়ে যাচ্ছেন।
কারণ, প্রতি রামাদান মাসে তিনি একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সম্পূর্ণ নতুন সিস্টেমে সালাত আদায় করতেন যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
বলুন তো,
১/রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদান মাসে এভাবে প্রতিরাত এক
তৃতীয়াংশ কোর’আনে কারীম তেলাওয়াত করে প্রতি তিন দিনে সাহাবীদের নিয়ে
নামাজে কোর’আন খতম করেছেন?
২/ রামাদানে প্রতি তৃতীয় রাতে খতম শেষে দোয়া কবুলের কথা বলেছেন? বা দোয়া করেছেন?
৩/ একজন সাহাবী ও কি রামাদান মাসে এভাবে সালাত আদায় করেছেন?
আমি বলছি, করেন নি। এমন কোন প্রমাণ নেই।
আর সে জন্য আপনাদের বেদ’আতের পলিসির মানদন্ডে ইমাম বুখারী (রাহ) এর এ আমল ইবাদতে এক নতুন আবিস্কার।
আর আপনাদের মতে প্রতিটি বেদ’আত ই ভ্রস্ট। যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
আর একই কারণে আপনাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম বুখারী (রাহ) একজন বেদ’আতী।
তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও
সালেহীনগনের বিদাতে হাসানা :
★ ইমামগন ও মুহাদ্দিসগন হাদিস সংকলন বিদাতে হাসানা এগুলো রাসুলের যুগে ছিল
না তাই কেউ সংকলনও করেন নি, এসব হাদিস সংগ্রহ শুরু হয়েছিল তাবেঈগনের যুগ
থেকে।
★ বর্তমানে যে সহিহ সিত্তাহ ছাড়াও শত শত হাদিসের কিতাব পেয়েছি আমরা তা সব
বিদাতে হাসানার ফসল। নয়তো এক বার ভাবুন তো
যদি আমাদের কাছে হাদিস না পোছাত কি অবস্থা হত আমাদের?
★ তাছাড়াতাছাড়া পুর্ববর্তী ইমামগন থেকে আজ পর্যন্ত ইমামগন কুরআন-সুন্নাহ
থেকে গবেষনাভিত্তিক যুগ উপযোগী বিভিন্ন ফতোয়ার উদ্ভাবন করে থাকেন যেগুলো
ছাড়া আমাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে যেত। এসব উত্তম বিদআত।
★ তাছাড়া বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাব, অথবা ৪ মাজহাব সেগুলো সব উত্তম বিদআত।
এই হাদিস থেকে তার প্রমান দেখুন :
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন-
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ- « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ
ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন
বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে
তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য
রয়েছে একটি সওয়াব।
Reference :
** সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯,
** সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬,
** সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪
অন্যান্য উদাহরন :
জায়েয ও উত্তম বিদআতসমুহ একনজরে :
★ নিচের সমস্ত কাজগুলো বিদআত কারন কুরআন হাদিসে এগুলোর নিয়ম উল্লেখ নেই যে
এভাবে এই খতম পড়তে হবে, অমুক তসবিহ এত হাজার বার বা এত লক্ষ বার পড়তে
হবে কিন্তু এগুলো উত্তম বিদআত তথা বিদআতে হাসানা যা অনুমতি স্পষ্ট সহিহ
হাদিসে এসেছে । এর নিয়ম কুরআন হাদিসে নেই তবুও এসব কাজকে নাজায়েয
ফতোয়াদানকারী জাহান্নামের পাপ অর্জনকারী।
'
★ কুরআন শরীফ একত্রিকরন : আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর নির্দেশে (বুখারী)
★ হাদিস সংকলন : কোন সাহাবীগনও লিখে রাখেন নি।
★ জামায়াতে তারাবিহ আদায় : উমর (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)
★ জুমার দ্বিতীয় আজান : উসমান (রা) চালু করেছিলেন। (বুখারী)
★ ইদে মিলাদুন্নবী (সা) ইসলামিক স্বর্নযুগের পুর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের ইজমা।
★ খতমে তারাবিহ : রমজানে ৩০ দিনের মধ্যে বা তার আগেই ২০ রাকাত তারাবিহ
নামাজের মধ্যে সমস্ত আল-কুরআন খতম। -(ইমাম বুখারী (রহ) নিজে এই আমল করতেন)
★ খতমে বুখারী : বুখারী শরীফ খতম (যা রাসুলের যুগের ২০০-৩০০ বছর পর ইমাম বুখারী সংকলন করেছিলেন উক্ত কিতাব)
★ খতমে ইউনুস : "লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ জুয়ালিমিন" উক্ত আয়াতের নির্দিষ্ট সংখ্যক খতম।
★ খতমে তাসমিয়া : বিসমিল্লাহ শরীফ এর খতম।
★ খতমে খাজেগান : অনেক কিছু নিয়ে এই খতম।
★ খতমে গাউসিয়া : অনেক তসবিহ ও সুরা নিয়ে এ খতম।
★ গেয়ারবী শরীফ পাঠ করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও উত্তম কাজ ।
★ তাছাড়া অলীগনের লিখা বিভিন্ন দুরুদ ও অলীগনে কাশফ (অন্তরচক্ষু) বা
স্বপ্নে প্রাপ্ত দুরুদ যা ফজিলতের জন্য পাঠ করা হয় সব সওয়াবের কাজ। যেমন :
আমি যদি কোন দুরুদ লিখি যে :
'' হে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা) ওনার বংশধরগনের উপর আপনার স্বীয় সন্তুষ্টি
অনুপাতে ও স্বীয় গুনাবলী, স্বীয় সৃষ্টি , স্বীয় ক্ষমতা, স্বীয় জিকির
এবং সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য সৃষ্টির জিকিরের সংখ্যানুপাতে শান্তি ও রহমত বর্ষিত
করুন, প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে উপরে উল্লেখিত সমস্ত কিছুর কোটি কোটি গুনে
বর্ধিত করে কিয়ামত পর্যন্ত, হে পরম করুনাময়, হে মহামহিম আল্লাহ।
:
তা কি নাজায়েজ হবে নাকি জায়েয হবে আপনারাই বুঝবেন।
★ রেডিও টেলিভিশন এ ইসলামিক প্রোগ্রাম শুনা ও দেখা।
★ ওহাবী সালাফীরা যখন ডাক্তার জাকির নায়েকের ভাষন শুনে টিভিতে সেটাও কিন্তু
বিদআত যদি বিদাত বলে শুধু খারাপই বুঝায় তবে এসব বন্ধ করে দিন।
★ মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোষাক ব্যাবহার করে ইবাদতের জন্য এসবের মধ্যেও বিদাতে হাসানার উদাহরন রয়েছে।
★ মাটির পাত্রে খাওয়া সুন্নত। এখন কয়জন খান মাটির পাত্রে যে পাত্রই আবিষ্কার হয়েছে তা বিদাতে হাসানা।
NOTE: অনেকে যুক্তি দিয়ে বলে এসব নাকি ইসলামের সাথে সম্পর্কিত নয়। সত্যি কি তাই?
ইসলাম কি কাপড় -চোপর, হাট -বাজার, চলা-ফেরা, হাটা-খাওয়া, উঠা -বসা, কথা বলা এসব কিছুর সুন্নত শিখায় নি?
এসব কিছুর সাথে সম্পর্কিত সকল নব আবিষ্কৃত জিনিস গুলো সবই বিদাত। ভাল বা
কল্যানের জন্য হলে বিদাতে হাসানা। আর মানুষের ক্ষতির জন্য
হলে তা বিদাতে সাইয়া।
সূত্র
This Blog Contains Al Quran Indexing. Al Quran Searching. The Bible Verse which similar to Alquran are also described in this Blog. Tags: Al Quran, Arabic, Tafhimul Quran, Tafheemul Quran, Arabic search, Tafhimul Quran App, Al Quran Search, আল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন, তাফহিমুল কুরআন।
প্রশ্ন: ৪১ : সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, ও সাক্ষীদাতা সকলেই কি অপরাধী ?
সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক, ও সাক্ষীদাতা সকলেই অভিশপ্ত:::::
যারা সুদ দেয়,আর যারা খায় এবং এই বিষয়ে যারা চুক্তিপত্র তৈরি করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে তারা সবাই জাহান্নামী।
এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে,,
--(لعن رسول الله (ص
اكل الربا و مو كله و كاتبه و شا هديه و قال هم سواء
অর্থাত------ আল্লাহুর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা,সুদের চুক্তি লেখক,এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।তিনি বলেছেন পাপের দিক দিয়ে তারা সকলেই সমান অপরাধী।[সহিহ মুছলিম]
২) সুদের সর্বনিম্ন গুনাহ:---
সুদি লেনদেনের জন্য যে সমস্ত গুনাহ হয়ে থাকে তার সর্বনিম্ন টি হলো "আপন মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য"
হাদীসে এরশাদ হয়েছে---"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত " রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সুদের মধ্যে তিয়াত্তর টি গুনাহ রয়েছে।আর সর্ব নিম্ন গুনাহ টি হলো - নিজের মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য।{ মুসতাদরাকি হাকিম}
৩) সুদ যিনা অপেক্ষা অধিক মারাত্বক অপরাধ: ছত্রিশ বার যিনা করা অপেক্ষা এক দিরহাম সুদ গ্রহন করা অধিক অপরাধ।
হাদিসে আছে--- " যে ব্যাক্তি জেনেশুনে সুদের এক দিরহাম গ্রহণ করে,তার এই অপরাধ ছত্রিশবার যেনা করা অপেক্ষা ও মারাত্বক।( মুসনাদে আহমাদ ও তিবরানী)..
মোহাম্মদ শামসুল হুদা :
সুদ : ইসলামে ‘সুদ’কে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সুদ হচ্ছে শোষণের হাতিয়ার। সুদ গরীবকে আরো গরীব বানায় এবং ধনীকে আরো ধনী হবার সুযোগ করে দেয়। তাই সুদের মধ্যে ছড়িয়ে আছে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের অসংখ্য কুফল। সুদ হারাম হওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধি বিধান অষ্টম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ৭টি আয়াত, ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদের নিষিদ্ধতা প্রমাণিত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন (কবর থেকে) ঐ ব্যক্তির ন্যায় ওঠবে যাকে শয়তান আছর করে মাতাল করে দিয়েছে। এ ধরনের শাস্তির কারণ এই যে, সুদখোর লোকেরা বলত, বেচা-কেনাতো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ তা’আলা বেচা কেনাকে হালাল করেছেন আর সুদরকে করেছেন হারাম। সূরা আল বাক্বারাহ ২: ১৭৫।
আল্লাহ্ তা’আলা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। শৃঙ্খলাবদ্ধতা, ঐক্য সংহতির মনোভাব, স্বতন্ত্রবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, প্রতিশ্রুতিশীলতা, আত্মত্যাগ, সততা, সংযমশীলতা, মিতব্যয়ীতা, কঠোর পরিশ্রম, স্বজাতির সেবায় নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদন জাতীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণ ইত্যাদি মহৎ ও উন্নত গুণাবলী ইসলামের বৈশিষ্ট্য। মুসলমানগণ আজ এ সমস্ত গুণাবলী থেকে দূরে সরে গেছে। শৃঙ্খলাহীনতার কারণই মুসলমানগণের অধঃপতনের কারণ তাই শৃঙ্খলাহীনতার উৎপত্তি ঘটে চিন্তা চেতনার গীনতা থেকে। তাই চিন্তা-চেতনায় দীনতা যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নিঃস্ব, কপর্দকশূন্য ও পতের বিখারীতে পরিণত হয়েছে। এমন কি রাজা বাদশাহ পর্যন্ত রাজ্যহারা হয়ে গেছে।
আমি বলতে চাই মুসলমানরা যদি উন্নতি চায় এবং অন্যান্য জাতিসমূহের সাথে নিজেদের সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে প্রথমেই সুদী লেনদেন বর্জন করা ও নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থাপনাকে আঁকড়ে দরা এবং অবাধ ও স্বচ্ছ লেনদেনের সুব্যবস্থা করা।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে- “আল্লাহ্ পাক সুদের মাল নিশ্চিহ্ন করে দেন।”
বাহ্যত: কারো মনে হতে পারে যে, সুদের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আসলে পার্থিব জীবনেই সুদের সম্পদকে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চিহ্ন করে দেন। যেমন- সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া, অযথা খরচ বেশি হওয়া ইত্যাদি। সম্পদ নিশ্চিহ্ন হওয়ার আরেরকটি দিক হলো, সুদখোর তার উপার্জিত সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে না। অভাব অনটনের মাঝেই সে একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মোট কথা সুদী মালে কোন বরকত থাকে না। পক্ষান্তরে দান খয়রাতের মাধ্যমে বাহ্যত: সম্পদ হ্রাস হচ্ছে বলে মনে হলেও আল্লাহ পাক সে সম্পদের মাঝে বরকত দান করেন। ফলে সে সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির এই নি’আমত কখনো দুনিয়াতেই লাভ হয়, আর পরকালে তার প্রতিদানতো নিশ্চিতরূপেই পাওয়া যাবে।
সুদের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়তে গিয়ে মানসিক দিক থেকে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সুদর গ্রহণের ফলে অন্তর এমনই পাষাণ হয়ে যায় যে, কারো প্রতি কোন মায়া মমতা থাকে না। কারো বিপদে সুদখোরের মনে সহানুভূতি জাগে না। এমনকি আপন আত্মীয়ের কাছ থেকেও সুদ গ্রহণ করতে তার বিবেক বাধা দেয় না। এজন্য বলতে চাই সুদ বর্জনেই হলো উন্নতির বিকল্প পথ। সুদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অস্থায়ী সুখ লাভ করা যেতে পারে কিন্তু সাদকার মাধ্যমে শুধুমাত্র অস্থায়ী সুখই লাভ হবে না বরং সাদাক্বাহ্ পরকালের দীর্ঘ ও চিরস্থায়ী সুখ শান্তি বয়ে আনবে।
সুদখোর কঠোর নিষ্ঠুর, নির্মম ও নির্দয়। দরিদ্র জনগণের প্রতি তাদের মায়া মমতা ও সহানুভূতির লেশমাত্র নেই। তাই সমাজের অসহায় ও রগীব লোকেরা সুদখোরদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে বাহ্যিক ভয় করে বটে, কিন্তু সম্মান করে না। ভয় ও সম্মান ককনো এক জিনিস নয়। দুই লোকদের ভয় করাটা স্বাভাবিক। কারণ তারা কারো কোন ক্ষতি করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সমাজের কোন স্তরেই তাদের সম্মান নেই। সবাই তাদেরকে ঘৃণা করে। সুতরাং সুদখোররা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পৃথিবীর কোথাও সুদখোরদের সুখে সম্মানে নেই। পক্ষান্তরে যারা হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করেন এবং দান খয়রাত করেন, তারা সুখ শান্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছেন। তাদেরকে কখনো ধন-সম্পদের পিছনে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। তাদের সুখ শান্তি হয়তো কম। তাদের বাহ্যিক চাকচিক্য হয়তো নেই কিন্তু স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে তারা সুখ শান্তিতে আছে। এটাই তো প্রকৃত সুখ।
ঘুম : বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের নিকট ঘুষ একটি বহুল পরিচিত শব্দ। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে এ সর্বনাশা অসুখ। ক্রমেই সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। আজকাল যে দিকে তাকান, সেদিকেই ঘুষ চোখে পড়ে, নজরে আসে। ঘুমের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়, দেব-দেবীর কাহিনী পড়লে দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, মনুষ্য কর্তৃক নানা রকম উপটৌকন বা ঘুষ প্রদানের ঘটনা দেখা যায়। ফল-মূল, অস্ত্র, শস্য, নারী থেকে আরম্ভ করে কি না ছিল সেই উপটৌকনের তালিকায়। এই উপমহাদেশে ঘুষের ব্যাপক প্রসার ঘটে বিদেশী শস্তিসমূহ এই অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর। ঘুষ শুধু উপরথেকে নিচেই বিস্তৃত হয়নি। নিচ থেকে বিস্তৃত হয়েছে পরেও। ব্রিটিশ আমলে ঘুষ প্রতিষ্টানিকতা পায়। এই আমলে জনগণের কল্যাণের নামে প্রণীত হয় নানাবিধ আইন। ভূমি রাজস্ব আদায় উন্নয়, আইন-শৃঙ্খলা, রক্ষা, বিচার কার্য ইত্যাদির সাথে সাথে ইংরেজ রাজ পুরুষদের ব্যক্তিগত উচ্চভিলাসের পথ পরিক্রমায় ঘুষের পরিধি বিস্তৃত থাকে।
ঘুষ হচ্ছে অনেকটা প্রেমের মতো। প্রেম নামক অমিত শক্তি যেমন প্রেমিক-প্রেমিকাকে দুর্বার গতিতে টানে-ঘুষ নামক যাদুকরী শক্তি একভাবে কাছে টানে- ঘুষদাতা এবং ঘুষখোরকে। প্রেমিক প্রেমিকাকেন একজন আরেক জনের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার সঠিক কারণ যেমন বলা যায় না, তেমনি ঘুষ দাতা ও ঘুষরখোরের পরস্পরের আকর্ষণের সুনির্দিষ্ট কারণ বর্ণনা করা অসম্ভব। ঘুষের সংজ্ঞায় বলতে হয়- কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রগণের জন্যে য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় তাই হচ্ছে উৎকোচ বা ঘুষ। ঘুষ কখনো দিতে বাধ্য করা হয়, আবার কখনো নিজস্ব প্রয়োজনেই দেয়া হয়।
পবিত্র কুরআন মজীদ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন : “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্দ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যানয়ভাবে আত্সসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৮৮।
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন, “হে মানব জাতি। যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৬৮।
আলোচ্য আয়াতে হারাম পন্থার সম্পদ অর্জন এবং ভোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা এবং ঘুষের দালাল সকলের উপর অভিসম্পদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামে যাবে।” পবিত্র কুরআনে ও গুনাহের কাজ। ঘুষ মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই নষ্ট করে দেয়।
আমাদের বর্তমান সমাজে ঘুষ একটি মারাত্মক সংক্রামক বাধির ন্যায় বিস্তার লাভ করেছে। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। কেউ ঘুষ দিচ্ছে স্বেচ্ছায়, আবার কেউ ঘুষ দিচ্ছে বাধ্য হয়ে এবং ঘৃণা ভরে। ঘুষের অর্থ আজ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মিশে আছে আমাদের রক্ত মাংসের সাথে। যারা সুদ ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের জীবনের সামান্য নিরাপত্তাও নেই। কোথাও বসে দুদ- বিশ্রাম করার ফুরসতও তাদের হয় না।
মোটকথা, হারাম উপার্জনের পরিণতি অশুভই হয়ে থাকে। আর যারা অন্যের দু’পয়সা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে না। যতদূর সম্ভব হালাল উপার্জন দিয়ে খেয়ে পরে কোন রকমে জীবন কাটিয়ে দেয়। এ ধরনের লোকেরা কতই না সুখে আছে।
আর বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলতে চাই। বিচারক ও তার সহযোগীদের মধ্যে ঘুষের আদান প্রদান করা ইসলাম চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে মানুষের ধন-সম্পত্তির কিংদংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।” সূরা আর বাক্বারাহ ২: ১৮৮”।
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, বিচারকের ফয়সালা বা রায়ের দ্বারা কোন হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় না। আবার কোন হালাল জিনিসও হারাম হয়ে যায় না। কারণ বিচারকদের রায় সাধারণত: প্রকাশ্য যুক্তি প্রমাণ ও দলিলাদির উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়ে থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি ধোঁকা দিয়ে কিংবা ভুয়া দলিল ও প্রমাণপত্র পেশ করে অথবা ভুল তথ্য সরবরাহ করে বা ভুল যুক্তি দিয়ে বিচারকের ফায়সালাকে নিজের স্বপক্ষে আনার এবং সত্যকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করবে সেই দায়ী এবং গুনাহগার হবে। আর যদি কেউ বিচারককে ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং বিচারক ঘুষ খেয়ে রায় দেন, তাহলে ঘুষদাতা ও বিচারক উভয়েই দায়ী ও গুনাহগার হবে।
ঘুষখোর প্রথম জীবনে ঘুষের বাড়তি আয়ে খুবই ভাল থাকে কিন্তু শেষ জীবনে যখন মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে পরপারের পথে যাত্রা করেন তখনই দেখা দেয় বিড়ম্বনা। রোগে শোকে মুহ্যমান হয়ে যান। শত ধন-সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর দেয়া নি’আমত ভক্ষণ করাও তার পক্ষে দূরহ হয়ে পড়ে। নিজের পাশাপাশি সন্তান-সন্তুতি স্ত্রীসহ অন্যান্য সকলে রোগাক্রান্ত হন কিংবা বিভিন্ন জটিলতায় আটকে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। আর পরকালে ঘুষখোরদের জন্য তো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নির্দিষ্ট রয়েছে। তাদের অপরাধ অমার্জনীয়। ঘুষকোরদের নেক ‘আমল, নেক কাজ কোন কাজে আসবে না। তাদের জাহান্নাম গমন রোধ করতে পারবে না।
হাদীসে এসেছে- “আর রাশি ওয়াল মুরতাশি ফিননারে।” অর্থাৎ ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহিতা উভয়ে সমান অপরাধে অপরাধী।
হাদীসে- “সত্তর প্রকার অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। ঘুষ গ্রহণের অপরাধনিজের মায়ের সাথে ৩০ (ত্রিশ) বার যিনা করার গর্হিত কাজ।”
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে “ঘুষ” খাওয়াটা এখন অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে এবং বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ দেয়া হচ্ছে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি আমাদের সমাজে লজ্জার কোন বিষয় নয়। যে কাজটিতে সফল হয়, তার প্রশংসা হয়। উপরি যেখানে বড়, সেখানে অন্য বিবেচনা থোড়াই আমল পায়। ঘুষের ব্যাপারে পারিবারিক প্রতিরোধ নেই। কোন পিতাই প্রায় বলেন না তোর ঘুষের টাকায় ভাত খাব না, তোর টাকা গন্ধযুক্ত টাকা। কোন স্ত্রীই বলেন না স্বামীকে বেতন তো অত নয়, পেলে কোথায় অত টাকা। কোন সন্তানই বলে না তোমার পাপের ভাগ বা গুনাহর ভার তোমার একার; আমরা তোমার হালাল রুজির নুন-ভাতেই তুষ্ট ছিলাম। আনুবীক্ষণিক ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তানের সব পিতা-মাতাই সন্তানের বাড়তি আয়ে তুষ্ট থাকেন। সন্তান একাধিক থাকলে উৎস নির্বিশেষে যার আয় বেশি তাকে নিয়ে বেশি গৌরব করেন।
তাই আমাদেরকে ঘুষ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেজন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠি, পরিবার, অঞ্চল, সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানব বন্ধন, শোভা যাত্রা, সভা ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মাসজিদ, মন্দিরে সকল স্তর থেকে ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে ও সমালোচনা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষাই ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ নৈতিকতা অর্জন ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি নির্মূল করা কখনো সম্ভব নয়। মানুষকে মহত হতে হবে। কেননা মহত মানুষের জীবন ও আদর্শই সাফল্যের বাতিঘর।
পরিশেষে বলতে চাই, গুষ মানুষের সীমাহীন লোভ সৃষ্টি করে এবং দানশীলতার মতো মহৎ গুণকে দূর করে দেয়। ঘুষ মানুষের উদারতা, সহনশীলতা, দানশীলতা মনোভাবের পরিবর্তে স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, কৃপণতা, নির্মমতা ও প্রতিশোধমূলক মনোভাবের জন্ম দেয়। মোটকথা, ঘুষ হচ্ছে মানুষের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক।
ঋণ : পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ঋণদাতার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, “কে এমন আছে, যে আল্লাহকে কর্জে হাসনা বা উত্তম ঋণ দিবে এরপর তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।” সূরা আল হাদীস ৫৭ : ১১।
আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা মহান আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ তা’আলা গুণাগ্রাহী সহনশীল। উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থ হচ্ছে তার বান্দাদের ঋণ দিয়ে তাদের অভাব মোচন করা। কেউ যদি মহান আল্লাহর বান্দার প্রতি করুণা করে তাহলে আল্লাহ তা’আলাও তার প্রতি করুণা করবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে একবার ঋণ (কর্জে হাসানা) দিলে তা মহান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ দু’বার সাদাক্বাহ, করার সমতুল্য।”
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “আর ঋণ গ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও তবে তা তোমাদের জন্য খুবই উত্তম যদি তোমার উপলব্ধি করতে পারতে।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ২৮০।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে এভাবে উপদেশ দিয়েছেন ‘গুনাহ কম করো’ তোমার মৃত্যু সহজ হবে: ঋণ কম করো, স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা এবং পাওনা পরিমোধ টাল-বাহানা করা মারাত্মক অপরাধ এবং ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামান্তর।
অন্যত্র এক হাদীসে ঋণ গ্রহণের নিন্দা করা হয়েছে এবং ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই দুই রকম হাদীসের মর্মার্থ হলো বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা নিন্দনীয়। সুতরাং এর থেকে বিরত থাকা উচিত।
একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত ঋণ গ্রহণ করা মোটেই ঠিক হবে না। একান্ত প্রয়োজন যেমন- জিহাদ করা, কাফনের কাপড় ক্রয় করা, লজ্জা নিবারণের কাপড় কেনা ইত্যাদি। অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঋণ নেয়া যেতে পারে। আর এসব ব্যাপারে ঋণ নিলে আল্লাহ তা’আলা সেই ঋণ আদায়ে সাহায্য করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : আমি জান্নাতের দরজায় লেখা দেখেছি যে সাদাক্বাহ দিলে দশ গুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর ঋণ লাভমুক্ত ঋণ) প্রদান করলে আঠার গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়।
অন্য এক হাদীসে এর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, সাদাক্বাহ্ প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চাওয়া হয়, আর ঋণ চাওয়া হয় শুধু প্রয়োজনের কারণেই। এটাই স্বাভাবিক অবস্থা তাছাড়া কারো প্রযোজনে পূর্ণ করেদিলে সে ব্যক্তি যে পরিমাণ খুশি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্য ঋণ দেয়া অনেক বেশি সাওয়াবের কাজ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : মহান আল্লাহর রাস্তাসমূহের একটি রাস্তা। আল্লাহ তা’আলা যখন কাউকে অপমাণিত করতে চান, তখন তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন। ঋণগ্রন্থ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার জান্নাতে প্রবেশ হওয়ার বিষয়টি স্থগিত হয়। অর্থা- তার আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না তার ঋণ আদায় করা হয়।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, শহীদদের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয় কিন্তু ঋণ মাফ করা হয় না। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলাসিতা বর্জন করা উচিত এবং মেহমান অতিথি আসলেও তাদের জন্য ঋণ করে মেহমানদারী করা ঠিক না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাউকে ঋণ দেয়, ঋণী ব্যক্তি যেন তাকে উপহার না দেয়। স্ত্রীর মোহরানা বাকী থঅকলেও এই মোহরানাও ঋণের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই যে, ব্যক্তি ঋণগ্রন্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে বড়ই দুর্ভাগা।
সহীহুল বুখারী’র এক রিওয়ায়েতে আছে নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তির কাছে কারো কোন পাওনা থাকে তার উচিত দুনিয়াতেই তা পরিশোধ করা অথবা মাফ করিয়ে নেয়া। নতুবা কিয়ামতের দিন দিরহাম দিনার, টাকা পয়সার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। কারো যদি কোন দাবি থাকলে তা নিজের সৎকর্ম দিয়ে পরিশোধ করা হবে। সৎকর্ম মেষ হয়ে গেলে পাওনাদারদের গুনাহ প্রাপ্য অর্থ পরিমাণে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সহীহুল বুখারী।
বাংলাদেশে অনেক বে-সরকারি সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থাগুলি দারিদ্র বিমোচন করার জন্য ঋণ দিয়ে থাকেন। সংস্থাগুলি ১ বছর বা দু বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ তুলে নেন। তাতে দখা যায় ঋণের সুদের পরিমাণ ২২ থেকে ৩৫ ভাগ দাড়িয়ে যায়। আবার এই ঋুণ সময় মত না দিলে ঋণ গ্রহিতাকে অপমাণ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র, ঘরের টিন প্রভৃতি খুলে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে পত্রিকান্তে দেখা যায় বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরুষ বা মহিলা ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন-যাপন করছে। আমার মনে হয় ঋণনিয়ে ১০ থেকে ২০ ভাগ লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও বাকী ৮০ ভাগ লোক স্বাবলম্বীর আওতায় পড়ে না। বরঞ্চ ঋণ গ্রহিতাদের ঋণ দাতা সংস্থার সুদ দিতে দিতে তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে ফেলে ও হয়রানি ছাড়াও মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত হয়। তবে এনজিওগুলো যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ঠেঙ্গামারা শতশত সংস্থাগুলো সব ধরনের লোক বা ব্যবসা খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। এনজিওগুলো হতে ভিক্ষুকরা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ। ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ এদেরকে ঋণের সুদ দিতে হয়নি। এ ধরণের সুদ মুক্ত ঋণ দিলে বেশির ভাগ ঋণ গ্রহীতাদের স্বালম্বী হওয়ার রাস্তা সুগম হয়।
কোন সংস্থা ব্যাংক, বীমা, কাহারো কাছে ঋণগ্রস্ত হওয়া মোটেই ঠিক না। ঋণ ছাড়াই কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুদী অর্থাবস্থায় ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন ও অন্যান্য সুদী প্রতিষ্ঠানগুলো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে না। কারণ সুদসহ মূলধন ফেরত পাবে এটাই তাদের প্রধান হিসাব।
সুদ মানুষের মধ্যে নির্মমতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, কৃপণতা, নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার জন্ম দেয় সুদ হচ্ছে মানুষের উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক। সুদ মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধিও মেধা বিকাশের বাধা সৃষ্টি করে। মোট কথা সুদ সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি করে। অতএব এ থেকে বেঁচে থাকা সকলের দায়িত্ব।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক দিনাজপুরের কাগজ। রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক ও দি নিউন্যাশন, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
যারা সুদ দেয়,আর যারা খায় এবং এই বিষয়ে যারা চুক্তিপত্র তৈরি করে ও সাক্ষ্য প্রদান করে তারা সবাই জাহান্নামী।
এ মর্মে হাদীসে বর্ণিত আছে,,
--(لعن رسول الله (ص
اكل الربا و مو كله و كاتبه و شا هديه و قال هم سواء
অর্থাত------ আল্লাহুর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা,সুদের চুক্তি লেখক,এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।তিনি বলেছেন পাপের দিক দিয়ে তারা সকলেই সমান অপরাধী।[সহিহ মুছলিম]
২) সুদের সর্বনিম্ন গুনাহ:---
সুদি লেনদেনের জন্য যে সমস্ত গুনাহ হয়ে থাকে তার সর্বনিম্ন টি হলো "আপন মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য"
হাদীসে এরশাদ হয়েছে---"হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত " রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- সুদের মধ্যে তিয়াত্তর টি গুনাহ রয়েছে।আর সর্ব নিম্ন গুনাহ টি হলো - নিজের মাতা কে বিবাহ করার সমতুল্য।{ মুসতাদরাকি হাকিম}
৩) সুদ যিনা অপেক্ষা অধিক মারাত্বক অপরাধ: ছত্রিশ বার যিনা করা অপেক্ষা এক দিরহাম সুদ গ্রহন করা অধিক অপরাধ।
হাদিসে আছে--- " যে ব্যাক্তি জেনেশুনে সুদের এক দিরহাম গ্রহণ করে,তার এই অপরাধ ছত্রিশবার যেনা করা অপেক্ষা ও মারাত্বক।( মুসনাদে আহমাদ ও তিবরানী)..
মোহাম্মদ শামসুল হুদা :
সুদ : ইসলামে ‘সুদ’কে সম্পূর্ণভাবে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ সুদ হচ্ছে শোষণের হাতিয়ার। সুদ গরীবকে আরো গরীব বানায় এবং ধনীকে আরো ধনী হবার সুযোগ করে দেয়। তাই সুদের মধ্যে ছড়িয়ে আছে মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের অসংখ্য কুফল। সুদ হারাম হওয়া সংক্রান্ত বিস্তারিত বিধি বিধান অষ্টম হিজরীতে অবতীর্ণ হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ৭টি আয়াত, ৪০টিরও অধিক হাদীস এবং ইজমা দ্বারা সুদের নিষিদ্ধতা প্রমাণিত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেছেন : “যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন (কবর থেকে) ঐ ব্যক্তির ন্যায় ওঠবে যাকে শয়তান আছর করে মাতাল করে দিয়েছে। এ ধরনের শাস্তির কারণ এই যে, সুদখোর লোকেরা বলত, বেচা-কেনাতো সুদেরই মতো। অথচ আল্লাহ তা’আলা বেচা কেনাকে হালাল করেছেন আর সুদরকে করেছেন হারাম। সূরা আল বাক্বারাহ ২: ১৭৫।
আল্লাহ্ তা’আলা ক্রয় বিক্রয়কে হালাল করেছেন আর সুদকে করেছেন হারাম। শৃঙ্খলাবদ্ধতা, ঐক্য সংহতির মনোভাব, স্বতন্ত্রবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, প্রতিশ্রুতিশীলতা, আত্মত্যাগ, সততা, সংযমশীলতা, মিতব্যয়ীতা, কঠোর পরিশ্রম, স্বজাতির সেবায় নিঃস্বার্থ আত্মনিবেদন জাতীয় মূল্যবোধের সংরক্ষণ ইত্যাদি মহৎ ও উন্নত গুণাবলী ইসলামের বৈশিষ্ট্য। মুসলমানগণ আজ এ সমস্ত গুণাবলী থেকে দূরে সরে গেছে। শৃঙ্খলাহীনতার কারণই মুসলমানগণের অধঃপতনের কারণ তাই শৃঙ্খলাহীনতার উৎপত্তি ঘটে চিন্তা চেতনার গীনতা থেকে। তাই চিন্তা-চেতনায় দীনতা যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ নিঃস্ব, কপর্দকশূন্য ও পতের বিখারীতে পরিণত হয়েছে। এমন কি রাজা বাদশাহ পর্যন্ত রাজ্যহারা হয়ে গেছে।
আমি বলতে চাই মুসলমানরা যদি উন্নতি চায় এবং অন্যান্য জাতিসমূহের সাথে নিজেদের সমৃদ্ধশালী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তাহলে তাদের উচিত হবে প্রথমেই সুদী লেনদেন বর্জন করা ও নিজস্ব অর্থ ব্যবস্থাপনাকে আঁকড়ে দরা এবং অবাধ ও স্বচ্ছ লেনদেনের সুব্যবস্থা করা।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে- “আল্লাহ্ পাক সুদের মাল নিশ্চিহ্ন করে দেন।”
বাহ্যত: কারো মনে হতে পারে যে, সুদের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়, আসলে পার্থিব জীবনেই সুদের সম্পদকে আল্লাহ তা’আলা নিশ্চিহ্ন করে দেন। যেমন- সম্পদ চুরি হয়ে যাওয়া, অযথা খরচ বেশি হওয়া ইত্যাদি। সম্পদ নিশ্চিহ্ন হওয়ার আরেরকটি দিক হলো, সুদখোর তার উপার্জিত সম্পদ থেকে উপকৃত হতে পারে না। অভাব অনটনের মাঝেই সে একদিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মোট কথা সুদী মালে কোন বরকত থাকে না। পক্ষান্তরে দান খয়রাতের মাধ্যমে বাহ্যত: সম্পদ হ্রাস হচ্ছে বলে মনে হলেও আল্লাহ পাক সে সম্পদের মাঝে বরকত দান করেন। ফলে সে সম্পদ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির এই নি’আমত কখনো দুনিয়াতেই লাভ হয়, আর পরকালে তার প্রতিদানতো নিশ্চিতরূপেই পাওয়া যাবে।
সুদের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়তে গিয়ে মানসিক দিক থেকে অপরিসীম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। সুদর গ্রহণের ফলে অন্তর এমনই পাষাণ হয়ে যায় যে, কারো প্রতি কোন মায়া মমতা থাকে না। কারো বিপদে সুদখোরের মনে সহানুভূতি জাগে না। এমনকি আপন আত্মীয়ের কাছ থেকেও সুদ গ্রহণ করতে তার বিবেক বাধা দেয় না। এজন্য বলতে চাই সুদ বর্জনেই হলো উন্নতির বিকল্প পথ। সুদের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ দিয়ে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে অস্থায়ী সুখ লাভ করা যেতে পারে কিন্তু সাদকার মাধ্যমে শুধুমাত্র অস্থায়ী সুখই লাভ হবে না বরং সাদাক্বাহ্ পরকালের দীর্ঘ ও চিরস্থায়ী সুখ শান্তি বয়ে আনবে।
সুদখোর কঠোর নিষ্ঠুর, নির্মম ও নির্দয়। দরিদ্র জনগণের প্রতি তাদের মায়া মমতা ও সহানুভূতির লেশমাত্র নেই। তাই সমাজের অসহায় ও রগীব লোকেরা সুদখোরদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে বাহ্যিক ভয় করে বটে, কিন্তু সম্মান করে না। ভয় ও সম্মান ককনো এক জিনিস নয়। দুই লোকদের ভয় করাটা স্বাভাবিক। কারণ তারা কারো কোন ক্ষতি করতে বিন্দুমাত্রও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সমাজের কোন স্তরেই তাদের সম্মান নেই। সবাই তাদেরকে ঘৃণা করে। সুতরাং সুদখোররা বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পৃথিবীর কোথাও সুদখোরদের সুখে সম্মানে নেই। পক্ষান্তরে যারা হালাল পন্থায় জীবিকা উপার্জন করেন এবং দান খয়রাত করেন, তারা সুখ শান্তি ও সম্মান নিয়ে বসবাস করছেন। তাদেরকে কখনো ধন-সম্পদের পিছনে দিশেহারা হয়ে ঘুরতে দেখা যায় না। তাদের সুখ শান্তি হয়তো কম। তাদের বাহ্যিক চাকচিক্য হয়তো নেই কিন্তু স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে নিয়ে তারা সুখ শান্তিতে আছে। এটাই তো প্রকৃত সুখ।
ঘুম : বর্তমানে বাংলাদেশের জনগণের নিকট ঘুষ একটি বহুল পরিচিত শব্দ। ঘুষ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে এ সর্বনাশা অসুখ। ক্রমেই সমাজ ব্যবস্থা থেকে বিলুপ্ত হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা। আজকাল যে দিকে তাকান, সেদিকেই ঘুষ চোখে পড়ে, নজরে আসে। ঘুমের উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায়, দেব-দেবীর কাহিনী পড়লে দেবতাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, মনুষ্য কর্তৃক নানা রকম উপটৌকন বা ঘুষ প্রদানের ঘটনা দেখা যায়। ফল-মূল, অস্ত্র, শস্য, নারী থেকে আরম্ভ করে কি না ছিল সেই উপটৌকনের তালিকায়। এই উপমহাদেশে ঘুষের ব্যাপক প্রসার ঘটে বিদেশী শস্তিসমূহ এই অঞ্চলের শাসন ক্ষমতা গ্রহণের পর। ঘুষ শুধু উপরথেকে নিচেই বিস্তৃত হয়নি। নিচ থেকে বিস্তৃত হয়েছে পরেও। ব্রিটিশ আমলে ঘুষ প্রতিষ্টানিকতা পায়। এই আমলে জনগণের কল্যাণের নামে প্রণীত হয় নানাবিধ আইন। ভূমি রাজস্ব আদায় উন্নয়, আইন-শৃঙ্খলা, রক্ষা, বিচার কার্য ইত্যাদির সাথে সাথে ইংরেজ রাজ পুরুষদের ব্যক্তিগত উচ্চভিলাসের পথ পরিক্রমায় ঘুষের পরিধি বিস্তৃত থাকে।
ঘুষ হচ্ছে অনেকটা প্রেমের মতো। প্রেম নামক অমিত শক্তি যেমন প্রেমিক-প্রেমিকাকে দুর্বার গতিতে টানে-ঘুষ নামক যাদুকরী শক্তি একভাবে কাছে টানে- ঘুষদাতা এবং ঘুষখোরকে। প্রেমিক প্রেমিকাকেন একজন আরেক জনের প্রতি আকৃষ্ট হয় তার সঠিক কারণ যেমন বলা যায় না, তেমনি ঘুষ দাতা ও ঘুষরখোরের পরস্পরের আকর্ষণের সুনির্দিষ্ট কারণ বর্ণনা করা অসম্ভব। ঘুষের সংজ্ঞায় বলতে হয়- কোন ক্ষমতাধর ব্যক্তির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা গ্রগণের জন্যে য বিশেষ সুবিধা দেয়া হয় তাই হচ্ছে উৎকোচ বা ঘুষ। ঘুষ কখনো দিতে বাধ্য করা হয়, আবার কখনো নিজস্ব প্রয়োজনেই দেয়া হয়।
পবিত্র কুরআন মজীদ আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেন : “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্দ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে শুনে অন্যানয়ভাবে আত্সসাৎ করার উদ্দেশ্যে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৮৮।
অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেন, “হে মানব জাতি। যমীনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা থেকে তোমরা হালাল ও পবিত্র বস্তুসমূহ খাও। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা, সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ১৬৮।
আলোচ্য আয়াতে হারাম পন্থার সম্পদ অর্জন এবং ভোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আল্লাহ পাক হালাল পন্থায় সম্পদ অর্জন এবং ভোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতা এবং ঘুষের দালাল সকলের উপর অভিসম্পদ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামে যাবে।” পবিত্র কুরআনে ও গুনাহের কাজ। ঘুষ মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই নষ্ট করে দেয়।
আমাদের বর্তমান সমাজে ঘুষ একটি মারাত্মক সংক্রামক বাধির ন্যায় বিস্তার লাভ করেছে। ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না। কেউ ঘুষ দিচ্ছে স্বেচ্ছায়, আবার কেউ ঘুষ দিচ্ছে বাধ্য হয়ে এবং ঘৃণা ভরে। ঘুষের অর্থ আজ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মিশে আছে আমাদের রক্ত মাংসের সাথে। যারা সুদ ঘুষ খেয়ে টাকার পাহাড় গড়েছে তাদের জীবনের সামান্য নিরাপত্তাও নেই। কোথাও বসে দুদ- বিশ্রাম করার ফুরসতও তাদের হয় না।
মোটকথা, হারাম উপার্জনের পরিণতি অশুভই হয়ে থাকে। আর যারা অন্যের দু’পয়সা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে না। যতদূর সম্ভব হালাল উপার্জন দিয়ে খেয়ে পরে কোন রকমে জীবন কাটিয়ে দেয়। এ ধরনের লোকেরা কতই না সুখে আছে।
আর বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলতে চাই। বিচারক ও তার সহযোগীদের মধ্যে ঘুষের আদান প্রদান করা ইসলাম চিরতরে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে মানুষের ধন-সম্পত্তির কিংদংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের নিকট পেশ করো না।” সূরা আর বাক্বারাহ ২: ১৮৮”।
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি বিচারকদের ঘুষ দেয়া প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। মনে রাখতে হবে যে, বিচারকের ফয়সালা বা রায়ের দ্বারা কোন হারাম জিনিস হালাল হয়ে যায় না। আবার কোন হালাল জিনিসও হারাম হয়ে যায় না। কারণ বিচারকদের রায় সাধারণত: প্রকাশ্য যুক্তি প্রমাণ ও দলিলাদির উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়ে থাকে। সুতরাং যে ব্যক্তি ধোঁকা দিয়ে কিংবা ভুয়া দলিল ও প্রমাণপত্র পেশ করে অথবা ভুল তথ্য সরবরাহ করে বা ভুল যুক্তি দিয়ে বিচারকের ফায়সালাকে নিজের স্বপক্ষে আনার এবং সত্যকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করবে সেই দায়ী এবং গুনাহগার হবে। আর যদি কেউ বিচারককে ঘুষ দিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং বিচারক ঘুষ খেয়ে রায় দেন, তাহলে ঘুষদাতা ও বিচারক উভয়েই দায়ী ও গুনাহগার হবে।
ঘুষখোর প্রথম জীবনে ঘুষের বাড়তি আয়ে খুবই ভাল থাকে কিন্তু শেষ জীবনে যখন মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে পরপারের পথে যাত্রা করেন তখনই দেখা দেয় বিড়ম্বনা। রোগে শোকে মুহ্যমান হয়ে যান। শত ধন-সম্পত্তি এবং টাকা-পয়সা থাকা সত্ত্বেও মহান আল্লাহর দেয়া নি’আমত ভক্ষণ করাও তার পক্ষে দূরহ হয়ে পড়ে। নিজের পাশাপাশি সন্তান-সন্তুতি স্ত্রীসহ অন্যান্য সকলে রোগাক্রান্ত হন কিংবা বিভিন্ন জটিলতায় আটকে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন। আর পরকালে ঘুষখোরদের জন্য তো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নির্দিষ্ট রয়েছে। তাদের অপরাধ অমার্জনীয়। ঘুষকোরদের নেক ‘আমল, নেক কাজ কোন কাজে আসবে না। তাদের জাহান্নাম গমন রোধ করতে পারবে না।
হাদীসে এসেছে- “আর রাশি ওয়াল মুরতাশি ফিননারে।” অর্থাৎ ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহিতা উভয়ে সমান অপরাধে অপরাধী।
হাদীসে- “সত্তর প্রকার অপরাধের উল্লেখ রয়েছে। ঘুষ গ্রহণের অপরাধনিজের মায়ের সাথে ৩০ (ত্রিশ) বার যিনা করার গর্হিত কাজ।”
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় তা হচ্ছে “ঘুষ” খাওয়াটা এখন অনেকটা নেশায় পরিণত হয়েছে এবং বিভিন্ন কৌশলে ঘুষ দেয়া হচ্ছে। ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি আমাদের সমাজে লজ্জার কোন বিষয় নয়। যে কাজটিতে সফল হয়, তার প্রশংসা হয়। উপরি যেখানে বড়, সেখানে অন্য বিবেচনা থোড়াই আমল পায়। ঘুষের ব্যাপারে পারিবারিক প্রতিরোধ নেই। কোন পিতাই প্রায় বলেন না তোর ঘুষের টাকায় ভাত খাব না, তোর টাকা গন্ধযুক্ত টাকা। কোন স্ত্রীই বলেন না স্বামীকে বেতন তো অত নয়, পেলে কোথায় অত টাকা। কোন সন্তানই বলে না তোমার পাপের ভাগ বা গুনাহর ভার তোমার একার; আমরা তোমার হালাল রুজির নুন-ভাতেই তুষ্ট ছিলাম। আনুবীক্ষণিক ব্যতিক্রম ছাড়া সন্তানের সব পিতা-মাতাই সন্তানের বাড়তি আয়ে তুষ্ট থাকেন। সন্তান একাধিক থাকলে উৎস নির্বিশেষে যার আয় বেশি তাকে নিয়ে বেশি গৌরব করেন।
তাই আমাদেরকে ঘুষ থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা। সেজন্য ব্যক্তি, গোষ্ঠি, পরিবার, অঞ্চল, সমাজ, রাষ্ট্র পর্যন্ত সর্বত্র এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানব বন্ধন, শোভা যাত্রা, সভা ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদরাসা, মাসজিদ, মন্দিরে সকল স্তর থেকে ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে ও সমালোচনা করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষাই ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ নৈতিকতা অর্জন ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি নির্মূল করা কখনো সম্ভব নয়। মানুষকে মহত হতে হবে। কেননা মহত মানুষের জীবন ও আদর্শই সাফল্যের বাতিঘর।
পরিশেষে বলতে চাই, গুষ মানুষের সীমাহীন লোভ সৃষ্টি করে এবং দানশীলতার মতো মহৎ গুণকে দূর করে দেয়। ঘুষ মানুষের উদারতা, সহনশীলতা, দানশীলতা মনোভাবের পরিবর্তে স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা, কৃপণতা, নির্মমতা ও প্রতিশোধমূলক মনোভাবের জন্ম দেয়। মোটকথা, ঘুষ হচ্ছে মানুষের উন্নত ও আদর্শ চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক।
ঋণ : পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ঋণদাতার ফযীলত বর্ণনা করে বলেন, “কে এমন আছে, যে আল্লাহকে কর্জে হাসনা বা উত্তম ঋণ দিবে এরপর তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দিবেন এবং তার জন্য রয়েছে সম্মানিত পুরস্কার।” সূরা আল হাদীস ৫৭ : ১১।
আল্লাহ পাক বলেন, যদি তোমরা মহান আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আল্লাহ তা’আলা গুণাগ্রাহী সহনশীল। উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহকে ঋণ দেয়ার অর্থ হচ্ছে তার বান্দাদের ঋণ দিয়ে তাদের অভাব মোচন করা। কেউ যদি মহান আল্লাহর বান্দার প্রতি করুণা করে তাহলে আল্লাহ তা’আলাও তার প্রতি করুণা করবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : “কোন মুসলমান অন্য মুসলমানকে একবার ঋণ (কর্জে হাসানা) দিলে তা মহান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ দু’বার সাদাক্বাহ, করার সমতুল্য।”
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- “আর ঋণ গ্রহীতা যদি অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও তবে তা তোমাদের জন্য খুবই উত্তম যদি তোমার উপলব্ধি করতে পারতে।” সূরা আল বাক্বারাহ ২ : ২৮০।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক ব্যক্তিকে এভাবে উপদেশ দিয়েছেন ‘গুনাহ কম করো’ তোমার মৃত্যু সহজ হবে: ঋণ কম করো, স্বাধীনভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে। বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা এবং পাওনা পরিমোধ টাল-বাহানা করা মারাত্মক অপরাধ এবং ঋণদাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামান্তর।
অন্যত্র এক হাদীসে ঋণ গ্রহণের নিন্দা করা হয়েছে এবং ঋণ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই দুই রকম হাদীসের মর্মার্থ হলো বিনা প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণ করা নিন্দনীয়। সুতরাং এর থেকে বিরত থাকা উচিত।
একান্ত প্রয়োজন ব্যতিত ঋণ গ্রহণ করা মোটেই ঠিক হবে না। একান্ত প্রয়োজন যেমন- জিহাদ করা, কাফনের কাপড় ক্রয় করা, লজ্জা নিবারণের কাপড় কেনা ইত্যাদি। অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে ঋণ নেয়া যেতে পারে। আর এসব ব্যাপারে ঋণ নিলে আল্লাহ তা’আলা সেই ঋণ আদায়ে সাহায্য করেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : আমি জান্নাতের দরজায় লেখা দেখেছি যে সাদাক্বাহ দিলে দশ গুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর ঋণ লাভমুক্ত ঋণ) প্রদান করলে আঠার গুণ সাওয়াব পাওয়া যায়।
অন্য এক হাদীসে এর কারণ বর্ণনা করা হয়েছে যে, সাদাক্বাহ্ প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চাওয়া হয়, আর ঋণ চাওয়া হয় শুধু প্রয়োজনের কারণেই। এটাই স্বাভাবিক অবস্থা তাছাড়া কারো প্রযোজনে পূর্ণ করেদিলে সে ব্যক্তি যে পরিমাণ খুশি হয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এজন্য ঋণ দেয়া অনেক বেশি সাওয়াবের কাজ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : মহান আল্লাহর রাস্তাসমূহের একটি রাস্তা। আল্লাহ তা’আলা যখন কাউকে অপমাণিত করতে চান, তখন তার ঘাড়ে ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেন। ঋণগ্রন্থ ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার জান্নাতে প্রবেশ হওয়ার বিষয়টি স্থগিত হয়। অর্থা- তার আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না তার ঋণ আদায় করা হয়।
তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, শহীদদের সমস্ত গুনাহ মাফ করা হয় কিন্তু ঋণ মাফ করা হয় না। ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলাসিতা বর্জন করা উচিত এবং মেহমান অতিথি আসলেও তাদের জন্য ঋণ করে মেহমানদারী করা ঠিক না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যদি কোন ব্যক্তি তোমাদের কাউকে ঋণ দেয়, ঋণী ব্যক্তি যেন তাকে উপহার না দেয়। স্ত্রীর মোহরানা বাকী থঅকলেও এই মোহরানাও ঋণের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই যে, ব্যক্তি ঋণগ্রন্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে সে বড়ই দুর্ভাগা।
সহীহুল বুখারী’র এক রিওয়ায়েতে আছে নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : যে ব্যক্তির কাছে কারো কোন পাওনা থাকে তার উচিত দুনিয়াতেই তা পরিশোধ করা অথবা মাফ করিয়ে নেয়া। নতুবা কিয়ামতের দিন দিরহাম দিনার, টাকা পয়সার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। কারো যদি কোন দাবি থাকলে তা নিজের সৎকর্ম দিয়ে পরিশোধ করা হবে। সৎকর্ম মেষ হয়ে গেলে পাওনাদারদের গুনাহ প্রাপ্য অর্থ পরিমাণে তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সহীহুল বুখারী।
বাংলাদেশে অনেক বে-সরকারি সংস্থা রয়েছে। সেই সংস্থাগুলি দারিদ্র বিমোচন করার জন্য ঋণ দিয়ে থাকেন। সংস্থাগুলি ১ বছর বা দু বছর মেয়াদী ঋণ দিয়ে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে ঋণ তুলে নেন। তাতে দখা যায় ঋণের সুদের পরিমাণ ২২ থেকে ৩৫ ভাগ দাড়িয়ে যায়। আবার এই ঋুণ সময় মত না দিলে ঋণ গ্রহিতাকে অপমাণ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র, ঘরের টিন প্রভৃতি খুলে নিয়ে যেতে দ্বিধাবোধ করে না। তবে পত্রিকান্তে দেখা যায় বেসরকারি সংস্থা থেকে পুরুষ বা মহিলা ঋণ নিয়ে অনেকে স্বাবলম্বী হয়ে জীবন-যাপন করছে। আমার মনে হয় ঋণনিয়ে ১০ থেকে ২০ ভাগ লোকের ভাগ্যের পরিবর্তন হলেও বাকী ৮০ ভাগ লোক স্বাবলম্বীর আওতায় পড়ে না। বরঞ্চ ঋণ গ্রহিতাদের ঋণ দাতা সংস্থার সুদ দিতে দিতে তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে ফেলে ও হয়রানি ছাড়াও মানসিক দিক দিয়ে পর্যুদস্ত হয়। তবে এনজিওগুলো যেমন গ্রামীণ ব্যাংক, ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, ঠেঙ্গামারা শতশত সংস্থাগুলো সব ধরনের লোক বা ব্যবসা খাতে ঋণ দিয়ে থাকে। এনজিওগুলো হতে ভিক্ষুকরা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে বেশিরভাগ। ভিক্ষুক স্বাবলম্বী হয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া যায়। কারণ এদেরকে ঋণের সুদ দিতে হয়নি। এ ধরণের সুদ মুক্ত ঋণ দিলে বেশির ভাগ ঋণ গ্রহীতাদের স্বালম্বী হওয়ার রাস্তা সুগম হয়।
কোন সংস্থা ব্যাংক, বীমা, কাহারো কাছে ঋণগ্রস্ত হওয়া মোটেই ঠিক না। ঋণ ছাড়াই কিভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সুদী অর্থাবস্থায় ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন ও অন্যান্য সুদী প্রতিষ্ঠানগুলো জনকল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করতে বাধ্য থাকে না। কারণ সুদসহ মূলধন ফেরত পাবে এটাই তাদের প্রধান হিসাব।
সুদ মানুষের মধ্যে নির্মমতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, কৃপণতা, নৃশংসতা ও নিষ্ঠুরতার জন্ম দেয় সুদ হচ্ছে মানুষের উন্নত চরিত্র গঠনের প্রতিবন্ধক। সুদ মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধিও মেধা বিকাশের বাধা সৃষ্টি করে। মোট কথা সুদ সমাজে বেকারত্ব বৃদ্ধি করে। অতএব এ থেকে বেঁচে থাকা সকলের দায়িত্ব।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক দিনাজপুরের কাগজ। রিপোর্টার, দৈনিক ইত্তেফাক ও দি নিউন্যাশন, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
প্রশ্ন ৪০ : পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কথা কুরআনের কোথায় আছে ?
﴿فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ﴾
২২
. এখানে "কাজেই " শব্দটি এ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে যে, যখন তোমরা জানতে
পারলে ঈমান ও সৎকাজের এহেন পরিণাম হবে এবং কুফরী ও মিথ্যা আরোপের এহেন
পরিণাম হবে তখন তোমাদের এ ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত৷ তাছাড়া
"কাজেই" শব্দটির এ অর্থও হয় যে, মুশরিক ও কাফেররা পরকালীন জীবনকে অসম্ভব
গণ্য করে আল্লাহকে মূলত অক্ষম ও অপারগ ঘোষণা করছে৷ কাজেই এর মোকাবিলায়
তুমি আল্লাহর প্রশংসা করো, তাঁর মহিমা প্রচার করো এবং এ দুর্বলতা থেকে তিনি
মুক্ত একথা ঘোষণা করে দাও৷ এখানে নবী (সা) কে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাঁর
মাধ্যমে সম্বোধন করা হয়েছে সমগ্র মুমিন সমাজকে৷
২৩
. আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরিকরা
নিজেদের শিরক ও আখেরাত অস্বীকারের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি যেসব দোষ- ত্রুটি ও
দুর্বলতা আরোপ করে থাকে সেই অনন্য মহামহিম সত্ত্বাকে তা থেকে পাক- পবিত্র
ঘোষণা করা এবং একথা প্রকাশ করা৷ এ ঘোষণা ও প্রকাশের সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে
নামায৷ এরি ভিত্তিতে ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ, ইবনে যায়েদ ও
অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন, এখানে "তাসবীহ পাঠ" তথা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা
করার অর্থ নামায পড়া৷ এ তাফসীরের স্বপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের এ
আয়াতের মধ্যেই রয়ে গেছে অর্থাৎ এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করার জন্য
কয়েকটি বিশেষ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে৷ একথা সুস্পষ্ট, আল্লাহ সমস্ত দোষ-
ত্রুটিমুক্ত - এ আকীদা পোষণ করাই যদি উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য আবার
সকাল- সাঁঝে এবং দুপুরে(জোহর) ও রাতের (ঈশা) নামাযের সময় নির্ধারণের
প্রশ্নই উঠতো না৷ কারণ এ আকীদা তো মুসলমানদের সবসময়ই পোষণ করতে হবে৷ এভাবে
যদি শুধুমাত্র মুখেই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলেও
এ সময়গুলো নির্ধারণ করার কোন অর্থ হয় না৷ কারণ মুসলমানকে তো সবসময় এ আকীদা
প্রকাশ করতে হবে৷ এভাবে যদি নিছক কণ্ঠের মাধ্যমে আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ
করার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলেও এসময়গুলো নির্ধারণ করা অর্থহীন হয়ে পড়ে৷
কারণ মুসলমানকে তো সর্বক্ষণ একথা প্রকাশ করতে হবে৷ তাই সময় নির্দিষ্ট করার
মাধ্যমে আল্লাহর গুণ ও মহিমা প্রচার করার হুকুম নিসন্দেহে তাঁর একটি বিশেষ
কার্যকর কাঠামোর প্রতিই ইঙ্গিত করে৷ আর এ কার্যকর কাঠামোটি নামায ছাড়া আর
কিছুই নয়৷
﴿وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَحِينَ تُظْهِرُونَ﴾
২৪ . এ আয়াতে চারটি সময়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছেঃ ফজর , মাগরিব, আসর ও যোহর৷ এ ছাড়াও নামাযের ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরো যেসব ইশারা করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছেঃ
﴿أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا﴾
''নাম কায়েম করো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত এবং ফজরের সময় কুরআন পাঠ করো৷" (বনী ইসরাঈল ৭৮)
﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ
طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ
يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ﴾
"আর নামায কায়েম করো দিনের দুই মাথায় এবং রাতের কিছু অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর৷" (হুদ , ১১৪ আয়াত )
صْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ
الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا ۖ وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ
وَأَطْرَافَ النَّهَارِ
"আর তোমার রবের প্রশংসা সহকারে তাঁর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো সূর্য উদিত হবার আগে এবং তাঁর অস্ত যাবার আগে৷ আর রাতের কিছু সময়ও আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করো এবং দিনের প্রান্তভাগেও৷" (ত্বাহা , ১৩০ আয়াত)
এর মধ্যে থেকে প্রথম আয়াতটি বলছেঃ নামাযের সময়সীমা হচ্ছে সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে ঈশা পর্যন্ত এবং এরপর হচ্ছে ফজরের সময়৷ দ্বিতীয় আয়াতে দিনের দুই প্রান্ত অর্থ ফজর ও মাগরিবের সময় এবং কিছু রাত অতিক্রান্ত হওয়ার পরের সময়টি হচ্ছে ঈশার ওয়াক্ত৷ তৃতীয় আয়াতে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে অর্থ ফজরের সময় এবং অস্তমিত হওয়ার পূর্বে অর্থ আসরের সময়৷ রাতের সময়ের মধ্যে মাগরিব ও ঈশা উভয়ই অন্তরভুক্ত৷ আর দিনের প্রান্ত হচ্ছে তিনটিঃ এক, সকাল৷ দুই, সূর্য ঢলে পড়া এবং তিন, মাগরিব৷ এভাবে সারা দুনিয়ার মুসলমানরা আজ যে পাঁচটি সময়ে নামায পড়ে থাকে কুরআন মাজীদ বিভিন্ন স্থানে সে সময়গুলোর প্রতি ইঙ্গিত করেছে৷কিন্তু একথা স্পষ্ট শুধুমাত্র এ আয়াতগুলো পাঠ করে কোন ব্যক্তিও নামাযের সময় নির্ধারণ করতে পারতো না৷ মহান আল্লাহর নিযুক্ত কুরআনের শিক্ষক মুহাম্মাদ (সা) নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে এ ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনা না দিলে তাদের পক্ষে সঠিক পথের সন্ধান পাওয়া সম্ভবপর ছিল না৷
এখানে একটু থেমে হাদীস অস্বীকারকারীদের ধৃষ্ঠতাঁর কথা ভাবুন৷ তারা "নামায পড়া" কে বিদ্রুপ করে এবং বলে, মুসলমানরা বর্তমানে যে নামায পড়ছে এটা আদতে সে জিনিসই নয় কুরআনে যার হুকুম দেয়া হয়েছে৷ তাদের বক্তব্য হচ্ছে, কুরআন তো নামায কায়েম করার হুকুম দেয় এবং তাঁর অর্থ নামায পড়া নয় বরং "রবুবিয়াতের ব্যবস্থা" কায়েম করা৷ এখন তাদেরকে একটু জিজ্ঞেস করুন, রবুবিয়াতের এ অভিনব ব্যবস্থাটি কোন ধরনের যাকে সূর্য উদিত হবার পূর্বেই কায়েম করা যেতে পারে অথবা আবার সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে কিছু রাত অতিবাহিত হওয়া পর্যন্তও কায়েম করা যায় ? আর কোন ধরনের রবুবিয়াত ব্যবস্থা বিশেষ করে জুমার দিন কায়েম করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে ?
----------------------------------------
আর বিশেষ ধরনের এমন কি রবুবিয়াত ব্যবস্থা আছে যা কায়েম করার জন্য মানুষ যখন অগ্রসর হয় তখন প্রথমে মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধুয়ে ফেলে গাঁট পর্যন্ত আর এই সাথে মাথাও মসেহ করে নেয়, অন্যথায় তাকে কায়েম করা যেতে পারে না?
--------------------------------------
আর রবুবিয়াত ব্যবস্থার মধ্যে এমন কি বিশেষত্ব আছে, যার ফলে যদি মানুষ নাপাকির অবস্থায় থাকে, তাহলে যতক্ষণ গোসল না করে নেয় ততক্ষণ তাকে কায়েম করতে পারে না?
--------------------
আর এটাই বা কেমন ব্যাপার, যদি কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে মিলন করে এবং সেখানে পানি না পাওয়া যায় তাহলে এ অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থাকে কায়েম করার জন্য পাক- পবিত্র মাটিতে হাত ঘসে নিয়ে সেই হাত মুখমণ্ডলের ওপর ঘসতে হবে ?
--------------------------------------
আর এ কেমন ধরনের অদ্ভুত রবুবিয়াত ব্যবস্থা যে, যদি কখনো সফর করতে হয় তাহলে মানুষ তাকে পুরোপুরি কায়েম করার পরিবর্তে অর্ধেকটাই কায়েম করে?
---------------------------------
আর এটা কোন ধরনের কৌতুকপ্রদ ব্যাপার যে, যদি মুসলিম সেনাদল শত্রুর সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, তাহলে সেনাদলের অর্ধেক সিপাহী অস্ত্র সজ্জিত হয়ে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে " রবুবিয়াত ব্যবস্থা" কায়েম করতে থাকবে এবং বাকি অর্ধেক ময়দানে শত্রুর মোকাবিলা করতে থাকবে ? তাঁরপর যখন প্রথম দলটি ইমামের পেছনে রবুবিয়াত ব্যবস্থা কায়েম করতে গিয়ে একটি সিজদা করে নেবে তখন উঠে দাঁড়িয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি তাদের জায়গায় এসে ইমামের পেছনে "রবুবিয়াত ব্যবস্থা" কায়েম করতে থাকবে ?
------------------------------------
কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো একথা পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছে যে নামায কায়েম করার অর্থ হচ্ছে এমন ধরনের নামায কায়েম করা যা সারা দুনিয়ার মুসলমানরা পড়ে থাকে৷কিন্তু হাদীস অস্বীকারকারীদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, তারা নিজেরা পরিবর্তিত না হয়ে ইসলামকে পরিবর্তিত করার জন্য চাপ দিয়ে চলছে৷ আসলে যতক্ষণ কোন ব্যক্তি মহান আল্লাহর মোকাবিলায় একেবারেই শংকাহীন ও নির্লজ্জ না হয়ে যায় ততক্ষণ সে তাঁর বাণীর সাথে এ বিদ্রুপাত্মক আচরণ করতে পারে না, যা এরা করছে ৷ অথবা এমন এক ব্যক্তি কুরআনের সাথে এ তামাশা করতে পারে যে নিজের মনে কুরআনকে আল্লাহর কালাম বলে স্বীকৃতি দেয় না এবং নিছক ধোঁকা দেবার জন্য কুরআন কুরআন বলে চিৎকার করে মুসলমানদেরকে গোমরাহ করতে চায়৷
﴿أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ ۖ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا﴾
৯১.
পর্বত প্রমাণ সমস্যা ও সংকটের আলোচনা করার পর পরই নামায কায়েম করার হুকুম
দেয়া হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে মহান সর্বশক্তিমান আল্লাহ এ মর্মে একটি সূক্ষ্ম
ইংগিত করেছেন যে, এ অবস্থায় একজন মু'মিনের জন্য যে অবিচলতার প্রয়োজন হয় তা
নামায কায়েমের মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে ৷
৯২.
(আরবী -----------------) এর অনুবাদ করেছি "সূর্য ঢলে পড়া" অবশ্যি কোন
কোন সাহাবা ও তাবেঈ "দুলূক" অর্থ নিয়েছেন সূর্যাস্ত ৷ কিন্তু অধিকাংশের মতে
এর অর্থ হচ্ছে দুপুরে সূর্যের পশ্চিমে ঢলে পড়া ৷ হযরত উমর, ইবনে উমর, আনাস
ইবনে মালিক, আবু বায়যাতাল আসলামী, হাসান বাসরী, শা'বী, আতা, মুজাহিদ এবং
একটি বর্ণনামতে ইবনে আব্বাস ও এ মতের সমর্থক ৷ ইমাম মুহাম্মাদ বাকের ও ইমাম
জাফর সাদেক থেকেও এই মত বর্ণিত হয়েছে ৷ বরং কোন কোন হাদীসে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও (আরবী -------------) এর এ
ব্যাখ্যাও উদ্ধৃত হয়েছে, যদিও এর সনদ তেমন বেশী শক্তিশালী নয় ৷
৯৩.
(আরবী ------------) এর অর্থ কেউ কেউ নিয়েছেন "রাতের পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে
যাওয়া ৷ " আবার কেউ কেউ এর অর্থ নিয়েছেন মধ্যরাত ৷ যদি প্রথম অর্থটি মেনে
নেয়া হয় তাহলে এর মানে হবে এশার প্রথম ওয়াক্ত ৷ আর দ্বিতীয় অর্থটি মেনে
নিলে এখানে এশার শেষ ওয়াক্তের দিকে ইংগিত করা হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে ৷
৯৪.
ফজর শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ভোর হওয়া বা প্রভাতের উদয় হওয়া অর্থাৎ
একেবারে সেই প্রথম লগ্নটি যখন প্রভাতের শুভ্রতা রাতের আঁধার চিরে উঁকি দিতে
থাকে ৷ ফজরের কুরআন পাঠ মানে হচ্ছে, ফজরের নামায, কুরআন মজীদে নামায
প্রতিশব্দ হিসেবে কোথাও ' সালাত ' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে আবার কোথাও
বিভিন্ন অংশের মধ্য থেকে কোন একটির নাম নিয়ে সমগ্র নামাযটি ধরা হয়েছে ৷
যেমন তাসবীহ, যিকির, হামদ (প্রশংসা) কিয়াম (দাঁড়ানো) রুকূ ' সিজদাহ ইত্যাদি
৷ অনুরূপভাবে এখানে ফজরের সময় কুরআন পড়ার মানে শুধু কুরআন পাঠ করা নয় বরং
নামাযে কুরআন পাঠ করা ৷ এভাবে নামাযের উপাদান ও অংশ কি ধরনের হতে হবে কুরআন
মজীদ সেদিকে পরোক্ষ ইংগিত দিয়েছে ৷ আর এ ইংগিতের আলোকে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের কাঠামো নির্মাণ করেন ৷ বর্তমানে মুসলমানদের
মধ্যে নামাযের এ কাঠামোই প্রচলিত ৷
৯৫.
ফজরের কুরআন পরিলক্ষিত হওয়ার মানে হচ্ছে, আল্লাহর ফেরেশতারা এর সাক্ষী হয় ৷
হাদীসে সুস্পষ্ট একথা বর্ণনা করা হয়েছে যদিও ফেরেশতারা প্রত্যেক নামায ও
প্রত্যেক সৎকাজের সাক্ষী তবুও যখন ফজরের নামাযের কুরআন পাঠে তাদের সাক্ষের
কথা বলা হয়েছে তখন এ থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এ কাজটি একটি বিশেষ
গুরুত্বের অধিকারী ৷ এ কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের
নামাযে দীর্ঘ আয়াত ও সূরা পড়ার পদ্ধতি অবলম্বন করেন ৷ সাহাবায়ে কেরামও তাঁর
এ পদ্ধতি অনুসরণ করেন এবং পরবর্তী ইমামগণ একে মুসতাহাব গণ্য করেন ৷ এ
আয়াতে সংক্ষেপে মি'রাজের সময় যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল তার
সময়গুলো কিভাবে সংগঠিত ও বিন্যস্ত করা হবে তা বলা হয়েছে ৷ নির্দেশ দেয়া
হয়েছে একটি নামায পড়ে নিতে হবে সূর্যোদয়ের আগে ৷ আর বাকি চারটি নামায সূর্য
ঢলে পড়ার পর থেকে নিয়ে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত পড়ে নিতে হবে ৷ তারপর এ
হুকুমটি ব্যাখ্যা করার জন্য জিব্রীল আলাইহিস সালামকে পাঠানো হয়েছে ৷ তিনি
এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযগুলোর সঠিক সময়ের শিক্ষা
দান করেছেন ৷ আবু দাউদ ও তিরমিযীতে বলেন আব্বাস (রা) বর্ণিত হাদীসে বলা
হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "জিব্রীল দু'বার আমাকে বায়তুল্লাহর কাছাকাছি জায়গায় নামায পড়ান ৷ প্রথম দিন যোহরের নামায ঠিক এমন সময় পড়ান যখন সূর্য সবেমাত্র হেলে পড়েছিল এবং ছায়া জুতার একটি ফিতার চাইতে বেশী লম্বা হয়নি ৷ তারপর আসরের নামায পড়ান এমন এক সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমপরিমাণ ছিল ৷ এরপর মাগরিবের নামায এমন সময় পড়ান যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে ৷ অতপর পশ্চিমাকাশের লালিমা খতম হবার পরপরই এশার নামায পড়ান আর ফজরের নামায পড়ান ঠিক যখন রোযাদারের ওপর খাওয়া দাওয়া হারাম হয়ে যায় তেমনি সময় ৷ দ্বিতীয় দিন তিনি আমাকে যোহরের নামায এমন সময় পড়ান যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের সমান ছিল ৷ আসরের নামায পড়ান এমন সময় যখন প্রত্যেক জিনিসের ছায়া তার দৈর্ঘের দ্বিগুণ ছিল ৷ মাগরিবের নামায পড়ান এমন সময় যখন রোযাদার রোযা ইফতার করে ৷ এশার নামায পড়ান এমন সময় যখন রাতের তিনভাগের একভাগ অতিক্রান্ত হয়ে গেছে এবং ফজরের নামায পড়ান আলো চারদিকে ভালভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ৷ তারপর জিব্রীল আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, হে মুহাম্মাদ! এই হচ্ছে নবীদের নামায পড়ার সময় এবং এ দু'টি সময়ের মাঝখানেই হচ্ছে নামাযের সঠিক সময় ৷ "(অর্থাৎ প্রথম দিন প্রত্যেক নামাযের পথম সময় এবং দ্বিতীয় দিন শেষ সময় বর্ণনা করা হয় ৷ প্রত্যেক ওয়াক্তের নামায এ দু'টি সময়ের মাঝখানে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত ৷)
কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায়ও পাঁচটি নামাযের এ ওয়াক্তসমূহের প্রতি ইংগিত করা হয়েছে ৷ যেমন সূরা হূদে বলা হয়েছে:
আরবী ---------------------------------------------------------------------------
"নামায কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে (অর্থাৎ ফজর ও মাগরিব) এবং কিছু রাত পার হয়ে গেলে (অর্থাৎ এশা) ৷ "(১১৪ আয়াত)
আরবী --------------------------------------------------------------------------
"আর নিজের রবের হামদ (প্রশংসা) সহকারে তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা) করতে থাকো সূর্যোদয়ের পূর্বে (ফজর) ও সূর্যাস্তের পূর্বে (আসর) এবং রাতের সময় আবার তাসবীহ করো (এশা) আর দিনের প্রান্তসমূহে (অর্থাৎ সকাল, যোহর ও মাগরিব)"(১৩০ আয়াত)
তারপর সূরা রূমে বলা হয়েছে:
আরবী -------------------------------------------------------------------------
"কাজেই আল্লাহর তাসবীহ করো যখন তোমাদের সন্ধ্যা হয় (মাগরিব) এবং যখন সকাল হয় (ফজর) ৷ তাঁরই জন্য প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং তাঁর তাসবীহ করো দিনের শেষ অংশে (আসর) এবং যখন তোমাদের দুপুর (যোহর) হয় ৷ "[ ১৭-১৮ আয়াত ]
নামাযের সময় নির্ধারণ করার সময় যেসব প্রয়োজনীয় দিকে নজর রাখা হয়েছে তার মধ্যে সূর্য পূজারীদের ইবাদাতের সময় থেকে দূরে থাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ৷ সকল যুগেই সূর্য মুশরিকদের সবচেয়ে বড় বা অনেক বড় মাবুদের স্থান দখল করেছে ৷ সূর্য উদয় ও অস্তের সময়টায়ই তারা বিশেষ করে তার পূজা করে থাকে ৷ তাই এসব সময় নামায পড়াকে হারাম করা হয়েছে ৷ তাছাড়া সাধারণত সূর্য উদয়ের পর থেকে নিয়ে মধ্য গগণে পৌঁছার সময়ে তার পূজা করা হয়ে থাকে ৷ কাজেই ইসলামে হুকুম দেয়া হয়েছে, দিনের বেলার নামাযগুলো সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে পড়া শুরু করতে হবে এবং সকালের নামায সূর্য হবার আগেই পড়ে ফেলতে হবে ৷ এ প্রয়োজনীয় বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন হাদীসে বর্ণনা করেছেন ৷ একটি হাদীসে হযরত আমর ইবনে আবাসাহ (রা) বর্ণনা করছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামাযের সময় জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন:
আরবী --------------------------------------------------------------------------
"ফজরের নামায পড়ো এবং সূর্য উদিত হতে থাকলে বিরত হও, সূর্য ওপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত ৷ কারণ সূর্য যখন উদিত হয় তখন শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে দিয়ে বের হতে থাকে এবং এ সময় কাফেররা তাকে সিজদা কর ৷
তারপর তিনি আসরের নামাযের উল্লেখ করার পর বললেন:
আরবী ----------------------------------------------------------------------------
"তারপর নামায থেকে বিরত হও সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত ৷ কেননা, সূর্য শয়তানের শিং দু'টির মাঝখানে অস্ত যায় এবং এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"৷ (মুসলিম)
এ হাদীসে সূর্যের শয়তানের শিংয়ের মাঝখানে দিয়ে উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়াকে একটা রূপক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে ৷ এর মাধ্যমে এ ধারণা দেয়া হয়েছে যে সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় শয়তান লোকদের জন্য একটি বিরাট বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে দেয় ৷ লোকেরা যখন সূর্যের উদয় ও অস্ত যাবার সময় তার সামনে সিজদা করে তখন যেন মনে হয় শয়তান তাকে নিজের মাথায় করে এনেছে এবং মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে ৷ রসূল (সা) তাঁর নিজের নিম্নোক্ত বাক্য দিয়ে এ রূপকের রহস্য ভেদ করেছেন "এ সময় কাফেররা তার পূজা করে"৷
=====================
﴿وَأَقِمِ الصَّلَاةَ
طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ
يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ﴾
আর দেখো, নামায কায়েম করো দিনের দু’ প্রান্তে এবং রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হবার পর৷ ১১৩ আসলে সৎকাজ অসৎকাজকে দূর করে দেয়৷ এটি একটি স্মারক তাদের জন্য যারা আল্লাহকে স্মরণ রাখে৷১১৪ (সুরা হুদ : ১১৪)
১১৩.
দিনের দু'প্রান্ত বলতে ফজর ও মাগরিব এবং কিছু রাত অতিবাহিত হবার পর বলতে
এশার সময় বুঝানো হয়েছে৷ এ থেকে বুঝা যায়, এ বক্তব্য এমন এক সময়ের যখন পাঁচ
ওয়াক্তের নামায নির্ধারিত হয়নি৷ মি'রাজের ঘটনা এরপর সংঘটিত হয় এবং তাতে
পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বিধান দেয়া হয়৷ (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন
বনী ইসরাঈল ৯৫, ত্বা-হা ১১১, রুম ১২৪ টীকা)
প্রশ্ন ৩৯ : রাসুল সা: কি নূরের তৈরী ?
ফেরেশতাদের মাধ্যমে রাসুল সা: এর বুক ফেড়ে
আভ্যন্তরিন অন্ত্র সমূহ বের করে ধৌত করা হয়েছে, এরপর আবার পুন:স্থাপন করা
হয়েছে, একে সিনাচাক বলে, বর্ণনা মতে নবুওয়াত লাভের পূর্বে একবার এবং মিরাজ
রজনীতে একবার, মোট দুইবার রাসুল সা: এর সিনা চাক করা হয়েছে। এ সিনাচাক করা হয়েছে এজন্যই যে, রাসুল সা: ছিলেন মাটির তৈরী রক্ত মাংসের আদম সন্তান। আর আদম ও তার সন্তানেরা
সবাই মাাটির তৈরী। কিন্তু যেহেতু রাসুল সা: কে নবুওয়াত দান করা হয়েছে, তাই তার আভ্যন্তরীণ বিষয়সমূহকে পরিস্কার ও পবিত্র করার জন্যই সিনাচাক করা হয়েছে। তিনি যদি সরাসরি আল্লাহর নূরের তৈরী হতেন, তবে এই সিনাচাক করার কোন প্রয়োজন ছিলনা।
প্রশ্ন : যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নবী (সা:) মানুষ নন; বরং তিনি আল্লাহর নূর। অতঃপর সে নবী (দ:) এর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে এই বিশ্বাসে যে, তিনি কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক, তার হুকুম কি?
উত্তর: যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করবে যে, নবী (দ:) আল্লাহর নূর, মানুষ নন, তিনি গায়েবের খবর জানেন, সে আল্লাহ্ এবং রাসূলের (দ:) সাথে কুফরী করল। সে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দুশমন, বন্ধু নয়। কেননা তার কথা আল্লাহ্ ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, সে কাফের।
কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করুন-
ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲ ﺧَﺎﻟِﻖٌ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِﻦ ﻃِﻴﻦٍ
অনুবাদ-যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন-আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব। {সূরা সোয়াদ-৭১}
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮﻥٍ
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা।{সূরা হিজর-২৮}
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻛَﺎﻟْﻔَﺨَّﺎﺭِ
ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺠَﺎﻥَّ ﻣِﻦ ﻣَّﺎﺭِﺝٍ ﻣِّﻦ ﻧَّﺎﺭٍ
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে।
এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।{সূরা আর রাহমান-১৪,১৫}
আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺗُﺮَﺍﺏٍ
দ-তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা।{সূরা মুমিন-৬}
আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺳُﻼﻟَﺔٍ ﻣِّﻦ ﻃِﻴﻦٍ
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।{সূরা মুমিনুন-১২}
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী।
মানব সৃষ্টির প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সহ সকল মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি এ মর্মে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেনঃ-
পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব (ছোয়াদ-৭১)
আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব (হিজর-২৮)
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন (নূহ্-১৭)
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে (আর রাহমান-১৪)
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি (হিজর-২৬)
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি । অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে (মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর । তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না (হজ্ব-৫)
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে (দাহ্র-২)
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে (আলাক-১)
স্বয়ং নবী বলেছেনঃ মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়, হা/৫৩৪)
“তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ করেছিলাম মানুষকে, যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম”-সূরা ইউসুফঃ ১০৯
“তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই ছিলো মানুষ যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো ।
বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন”-সূরা ফুরকানঃ ২০ ২)
“তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৭ ২,৪ “তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও প্রজ্ঞা । যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে”-সূরা জুমুয়াহঃ ২ ২,৫ হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন- যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন (বাক্বারা-১২৯) ২,৬ তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসুলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর (মু’মিনুন-৩২) ২,৭ “তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, তোমাদের পরিশুদ্ধ করে, এবং তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং নূতন জ্ঞান শিক্ষা দেয়”-সূরা বাকারাঃ ১৫১ ২,৮ “এখন তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে”-সূরা তাওবাঃ ১২৮ ২,৯ তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন (ইবরাহীম-১১) ২,১০ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪) ৩) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও (মাটির তৈরী) মানুষঃ-৩,১ “তুমি বল, “আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই , ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ । সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”-সূরা হামীম সিজদাহঃ ০৬ ৩,২ “বল, “আমি তোমাদের মত একজন মানুষ; [কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় । সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে কাউকে শরীক না করে” -সূরা কাহফঃ ১১০ ৩,৩ “বল:” আমার প্রভু মহিমান্বিত! আমি তো হচ্ছি কেবল একজন মানুষ, একজন রাসুল মাত্র”-বনী ইসরাইলঃ ৯৩ ৩,৪ “এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই একজনের নিকট আমার ওহী প্রেরণ করেছি ?”-সূরা ইউনুসঃ ০২ ৪) ইবলীস ও জানে মানুষ মাটির তৈরীঃ-৪,১ (ইবলীস) বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (হিজর-৩৩)৪,২ আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল ? সে বললঃ আমি আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা । বললেনঃ তুই এখান থেকে নেমে যা । এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই । অতএব তুই বের হয়ে যা । নিশ্চয় তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (সূরাহ আল্ আরাফঃ ১১-১৩) ৫) কাফেররাও ঈমান আনে নাই নবী রাসুলগণ (মাটির তৈরী) মানুষ বলেঃ-৫,১ “তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, “এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার !”-সূরা কাফঃ ০২ ৫,২ “এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে,” এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে”-সূরা ছোয়াদঃ ০৪ ৫,৩ আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন ? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে (বনী ইস্রাঈল-৯৪) ৫,৪ “তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে । পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ লুকিয়ে রেখে [বলে]” সে কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয় ? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৩ ৫,৫ “এবং তারা বলে, “এ কি রকম রসুল, যে [মানুষের মত] আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে ? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ?” দুষ্ট লোকেরা বলে, “তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো”-সূরা ফুরকানঃ ০৭-০৮ ৫,৬ “কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ বলেছিলো, “আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত আর কিছু দেখছি না । আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না । আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি”- সূরা হুদঃ ২৭ ৫,৭ কাফেররা বললঃ এতো আমাদের মতই মানুষ বৈ নয় , তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে । যদি তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে (মু’মিনুন-৩৩, ৩৪) ৫,৮ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ । তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত (ইবরাহীম-১০) ৬) ‘নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী মানুষ’ মর্মে হাদীছ থেকে প্রমাণঃ ৬,১ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে (বুখারী, ছালাত অধ্যায়, হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯) ৬,২ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে, সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক (বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, হা/২২৭৮) ৬,৩ ‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন । তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১) ৭) পর্যালোচনানবী (সাঃ) কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আঃ) থেকে স্বাভাবিক মানুষের যে নিয়ম আল্লাহ করেছেন সে পদ্ধতিতেই আবদুল্লাহর ওরসে মা আমিনার গর্ভে এ পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন । মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে ﺑﺸﺮ তথা আমাদের মতই একজন মানুষ । ৭,১
প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে?
যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা বলা অনর্থক । কারন মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতই আদম সন্তান ছিলেন (উপরের ১,১-১,১২ দ্রঃ) । আর যদি বলে যে, তিনিও আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলব আদম (আঃ) কিসের তৈরী, নুরের না মাটির ? যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান কিভাবে নূরের তৈরী হল ? ৭,২ মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পানাহার করতেন (উপরের ৫,৫ ও ৫,৭ দ্রঃ) । ৭,৩ অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসুলদেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল । ভূল রাসুলেরও হত (উপরের ৬,১ দ্রঃ) । ৭,৪ রাসুল (সাঃ) অতি মানব ছিলেন না যে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না । এরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে” (সূরা যুমার ৩৯:৩০) ৭,৫ আর একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য, অনুসরণীয় একমাত্র আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে । “নিঃসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো” {সূরা আল ক্বালামঃ আয়াত ৪} ৭,৬ তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর ৭৯২ নং পৃষ্টায় আছে- মানবের রাসুল মানবই হতে পারেনঃ ভিন্ন শ্রেণীর সাথে পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না । ফেরেশতা ক্ষুধা পিপাসা জানে না, কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না এবং শীত গ্রীষ্মের অনুভুতি ও পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি থেকে মুক্ত । এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন ফেরেশতাকে রসুল করে প্রেরণ করা হলে সে মানবের কাছেও উপরোক্ত্ কর্ম আশা করতো এবং মানবের দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতো না । বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতা (নুরের তৈরী) কেই তাদের নিকট পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম (বনী ইস্রাঈল-৯৫) ৭,৭ নবী রাসুল নুরের তৈরী বা ফেরেশতা নন তাও আল্লাক তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ- আর আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও জানি; একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা (নুরের তৈরী); আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্ছিত আল্লাহতাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না । তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন । সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হূদ-৩১) ৮) বিদআতীরা নবীকে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে । যেমন, ৮,১ মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬) অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন । ৮,২ এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । (সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬) নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট ।৯,১ এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর । তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮) ৯,২ অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭) উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি !অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল সুন্নী মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ? কারণ মহান আল্লাহ নবীকে যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।১০) প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বলেছেন নবী সা. মাটির তৈরী । অথচ, রাসূল সা. তার এক হাদিছে বলেন যে,১০,১ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন । এর জবাব কী ? এ উত্তরটা একটি হাদিছ দিয়ে-ই দেই । আল্লাহর রাসূল সা. অন্য হাদিছে বলেন যে, ১০,২ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেন । ঐ হাদিছ এবং এই হাদিছের মর্ম একই । অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের রুহ মোবারক নূরের তৈরী, সমস্ত শরীর নয় । কেননা মহানবী সা. এর রূহ বা পবিত্র আত্না মাটির তৈরী হবে তো দূরের কথা, কোন মানুষের আত্নাই মাটির তৈরী নয় । বরং সমস্ত মানুষের আত্নাই নূরের তৈরী । ১১) সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা ।১১,১ কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ. ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার (সূরা হুজুরাত: ১৩) ১১,২ নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মানব মন্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই । অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই । প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে । ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ । দ্রঃ শাইখ আলবানীর গায়াতুল মারাম, পৃঃ১৯০, হা/৩১৩) কাজেই নবী (সাঃ) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে । বরং নবী (সাঃ) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার । সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু । আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী । মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই । ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস । যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম । ১২) ‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র ।১২,১ এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে (ইবলীস) আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল (উপরের ৪,১ ও ৪,২ দ্রঃ) । ‘নবী (সাঃ) কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল । ১২,২ কাফেররাও নবী রাসুলকে মাটির তৈরী মানুষ বলে তাঁর প্রতি ঈমাম আনে নাই, অনুসরণ করে নাই, তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে নাই (উপরের ৫,১ থেকে ৫,৮ দ্রঃ) । আপনারা যারা নূরের তৈরী আক্বীদা পোষণ করেন, মাটির তৈরী বলে কি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চান না ?!! এ রকম ভাবলে কাফেরদের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় নয় কি ? আল্লাহ খালেক (সব কিছুর স্রষ্টা) আর সবকিছু তার মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা ও তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক । আকাশ ও পৃথিবীর চাবিও তাঁরই কাছে’ {যুমার ৬২-৬৩} আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ (মাটির তৈরী) [যে কারনে আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম (আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন] মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর শ্রেষ্ঠতের বহু কারন রয়েছে । তন্মধ্যে তাঁর প্রতি আল্লাহর বানী আল কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তিনিই আল্লাহর বানীর সর্বাপেক্ষা বুঝদ্বার ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষক। আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশীগ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুনা অসীম (নিসা-১১৩) “বলুনঃ আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।” সুরা কাহ্ফ :১১০ আল্লাহ্ বলেন:আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ…[সূরা কাহফ, আয়াত:১১০]আল্লাহ্ বলেন:আসমান যমিনে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না…[সূরা নামল, আয়াত: ৬৫]আল্লাহ্ আরো বলেন:”আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ে অবগতও নই। আমি এমনও বলি না যে আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে..”.[সূরা আন্আ’ম, আয়াত: ৫০]আল্লাহ্ আরো বলেন:আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ্ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনো হতে পারত না।আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদদাতা…[সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮] রাসূল (সা:) বলেন:আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমার যেমন ভুলে যাও আমিও তেমনি ভুলে যাই। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও…[বুখারী],যে ব্যক্তি রাসূল (সা:) এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল এই বিশ্বাস রাখলো যে, নবী (সা:) ভালমন্দের মালিক, সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে।কথা হচ্ছে নবীজী সাঃ নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ?রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কি কারণ?
পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এরকম শব্দে-
ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 93 ) ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 94 ) ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 95 )
বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত টরাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।{সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻮْﻻ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﻠَﻚٌ ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﻘُﻀِﻲَ ﺍﻷﻣْﺮُ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳُﻨﻈَﺮُﻭﻥَ ( 8 ﻭَﻟَﻮْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﺭَﺟُﻼً ﻭَﻟَﻠَﺒَﺴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣَّﺎ ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮﻥَ )
তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে।{সূরা আনআম-৮,৯}
ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 93 ) ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 94 ) ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 95 )
অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।{সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮ ﻟِﻘَﺎﺀ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ ﻋَﻤَﻼً ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻻ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ ( 110 )
অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।{সূরা কাহাফ-১১০}অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﺎﺳْﺘَﻘِﻴﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻩُ ﻭَﻭَﻳْﻞٌ ﻟِّﻠْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ( 6 )
অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ।{সূরা হা-মীম সাজদা-৬}অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে- ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﺍﻟْﺨُﻠْﺪَ ﺃَﻓَﺈِﻥ ﻣِّﺖَّ ﻓَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ( 34 )অনুবাদ-আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?{সূরা আম্বিয়া-৩৪}রাসূল সাঃ মানব ছিলেন এর বহু প্রমাণ হাদীসেও পাওয়া যায়। নিম্ন ৩ টি হাদীস উদ্ধৃত করা হল-
ﻋﻦ ﺃﻣﻬﺎ ﺃﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺟﻠﺒﺔ ﺧﺼﺎﻡ ﻋﻨﺪ ﺑﺎﺑﻪ ﻓﺨﺮﺝ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻓﻘﺎﻝ ( ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻭﺇﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻨﻲ ﺍﻟﺨﺼﻢ ﻓﻠﻌﻞ ﺑﻌﻀﺎ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺃﺑﻠﻎ ﻣﻦ ﺑﻌﺾ ﺃﻗﻀﻲ ﻟﻪ ﺑﺬﻟﻚ ﻭﺃﺣﺴﺐ ﺃﻧﻪ ﺻﺎﺩﻕ ﻓﻤﻦ ﻗﻀﻴﺖ ﻟﻪ ﺑﺤﻖ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻗﻄﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻠﻴﺄﺧﺬﻫﺎ ﺃﻭ ﻟﻴﺪﻋﻬﺎ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ – ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻀﺎﺀ ﻓﻲ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﻭﻗﻠﻴﻠﻪ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 6762 – )
অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০৩২১}
ﻭﻟﻜﻦ ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻣﺜﻠﻜﻢ ﺃﻧﺴﻰ ﻛﻤﺎ ﺗﻨﺴﻮﻥ ﻓﺈﺫﺍ ﻧﺴﻴﺖ ﻓﺬﻛﺮﻭﻧﻲ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺘﻮﺟﻪ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺣﻴﺚ ﻛﺎﻥ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 392 – )
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}
ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻮﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻳﻘﻮﻝ « ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻭﺇﻧﻰ ﺍﺷﺘﺮﻃﺖ ﻋﻠﻰ ﺭﺑﻰ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺃﻯ ﻋﺒﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺳﺒﺒﺘﻪ ﺃﻭ ﺷﺘﻤﺘﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻟﻪ ﺯﻛﺎﺓ ﻭﺃﺟﺮﺍ ( ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒﺮ ﻭﺍﻟﺼﻠﺔ ﻭﺍﻵﺩﺏ، ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻨﺒﻰ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃﻭ ﺳﺒﻪ ﺃﻭ ﺩﻋﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻟﻴﺲ ﻫﻮ ﺃﻫﻼ ﻟﺬﻟﻚ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺯﻛﺎﺓ ﻭﺃﺟﺮﺍ ﻭﺭﺣﻤﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 6790 – )
অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়।{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।রাসূল সাঃ নূরের তৈরী হলে রাসূল সাঃ এর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীরা কিসের তৈরী?
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺑﻠﻐﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻌﺾ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻓﺼﻌﺪ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﻧﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺃﻧﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﺧﻠﻘﻪ ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ ﻓﺮﻗﺘﻴﻦ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺧﻠﻖ ﺍﻟﻘﺒﺎﺋﻞ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﻗﺒﻴﻠﺔ ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ ﺑﻴﻮﺗﺎ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮﻫﻢ ﺑﻴﺘﺎ ﻓﺄﻧﺎ ﺧﻴﺮﻛﻢ ﺑﻴﺘﺎ ﻭﺧﻴﺮﻛﻢ ﻧﻔﺴﺎ – 1/169 ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 3532 – )
অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন।
সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬} রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সা:) ও রক্তে গুস্তে তৈরি শরীরে মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্ছোস্তরে অধিষ্টিত।এ প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, রাসূল সাঃ যদি মাটির তৈরী না হয়ে নূরের তৈরী হয়ে থাকেন। তাহলে রাসূল সাঃ এর সম্মানিত আম্মাজান আমিনা ও সম্মানিত আব্বাজান আব্দুল্লাহ যাদের ঔরসে তিনি জন্ম নিলেন তারা কিসের তৈরী? সেই সাথে নবীজী সাঃ এর সন্তানরা কিসের তৈরী? মাটির না নূরের? মাটির তৈরী থেকেতো মাটিই হবে। আর নূর থেকেতো নূরই হবে, তাই নয়কি? সুতরাং চিন্তা ভাবনা করে এসব উদ্ভট দাবি তোলা উচিত যে, রাসূল সাঃ নূরের তৈরী। যেখানে এ ব্যাপারে কোন সুষ্পষ্ট দলিলই নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের আবেগ আর অন্ধতাকে পূজি করে রাসূল সাঃ কে মাটির থেকে নূরের তৈরী বানিয়ে ফেলাটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।নূরের তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী?একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া। মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ। দলিল- ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺁﺩَﻡَ অনুবাদ-নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।{সূরা বনী ইসরাঈল-৭০}আগুনের তৈরী জিন বা নূরের তৈরী ফেরেস্তাকে মর্যাদা দান করার কথা বলা হয়নি কুরআনের কোথাও। কিন্তু মাটির তৈরী মানুষকে মর্যাদা দান করার কথা আল্লাহ তায়ালা সুষ্পষ্টই ঘোষণা করেছেন। যা স্পষ্টই প্রমাণ করে নূরের তৈরী হওয়াই কেবল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়?তাছাড়া আগুনের তৈরী জিন আর নূরের তৈরী ফেরেস্তাদের দিয়ে মাটির তৈরী মানুষ হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তায়ালা সেজদা করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আগুনের তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়া কোন শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী হল- ভিতরগত গুন যার শ্রেষ্ঠ সেই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ। চাই সে মাটির তৈরী হোক, চাই নূরের তৈরী হোক চাই আগুনের তৈরী হোক। ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲ ﻓَﻘَﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳﻦَ ( 29 ) ﻓَﺴَﺠَﺪَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﻥَ ( 30 অনুবাদ-যখন আমি তাকে পূর্ণতা দিলাম এবং তাতে আত্মা ফুকে দিলাম, তখন সবাই তাকে সেজদা করল। সকল ফেরেস্তারাই একসাথে তাকে সেজদা করল।{সূরা হিজর-২৯,৩০} সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ (হে রাসূল!) ‘আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা আল্ কাহাফঃ ১১০)অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আপনি বলুন আমি আমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। একজন মানব, একজন রাসূল বৈ আমি কে? (সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩(তিনি আরো বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪(তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)তিনি আরো বলেনঃ এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২( তিনি আরো বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)
আল্লাহ আরো বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১ (এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে।
সূত্র
রাসূল (স:)] মাটির তৈরী, কোরআন-হাদীস থেকে দলীল :
প্রশ্ন : যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, নবী (সা:) মানুষ নন; বরং তিনি আল্লাহর নূর। অতঃপর সে নবী (দ:) এর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে এই বিশ্বাসে যে, তিনি কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক, তার হুকুম কি?
উত্তর: যে ব্যক্তি এই বিশ্বাস করবে যে, নবী (দ:) আল্লাহর নূর, মানুষ নন, তিনি গায়েবের খবর জানেন, সে আল্লাহ্ এবং রাসূলের (দ:) সাথে কুফরী করল। সে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের দুশমন, বন্ধু নয়। কেননা তার কথা আল্লাহ্ ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল, সে কাফের।
মানুষ কিসের তৈরী :
সুতরাং-প্রথমেই বুঝতে হবে মানুষ কিসের তৈরী? কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ মাটির তৈরী। নূর বা অগ্নির তৈরী নয়।কয়েকটি আয়াতের দিকে লক্ষ্য করুন-
ﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲ ﺧَﺎﻟِﻖٌ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِﻦ ﻃِﻴﻦٍ
অনুবাদ-যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেস্তাদের বললেন-আমি মাটির তৈরী মানুষ সৃষ্টি করব। {সূরা সোয়াদ-৭১}
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮﻥٍ
নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি পঁচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা।{সূরা হিজর-২৮}
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺈِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻛَﺎﻟْﻔَﺨَّﺎﺭِ
ﻭَﺧَﻠَﻖَ ﺍﻟْﺠَﺎﻥَّ ﻣِﻦ ﻣَّﺎﺭِﺝٍ ﻣِّﻦ ﻧَّﺎﺭٍ
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে।
এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।{সূরা আর রাহমান-১৪,১৫}
আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻘَﻜُﻢ ﻣِّﻦ ﺗُﺮَﺍﺏٍ
দ-তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা।{সূরা মুমিন-৬}
আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎ ﺍﻹِﻧﺴَﺎﻥَ ﻣِﻦ ﺳُﻼﻟَﺔٍ ﻣِّﻦ ﻃِﻴﻦٍ
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।{সূরা মুমিনুন-১২}
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে মানব সৃষ্টির পদ্ধতি ও মূল উপাদান সম্পর্কে আশা করি সুষ্পষ্ট ধারণা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালার বাণী দ্বারা একথা সুষ্পষ্ট প্রমাণিত যে, মানুষ নূর বা আগুনের তৈরী নয়। বরং মাটির তৈরী।
নবীজী (সাঃ) কি ছিলেন? মানুষ? না জিন? না ফেরেস্তা?
রাসূল (সাঃ) জিন নন, এ ব্যাপারে সকলে একমত। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার কোন প্রয়োজন নেই।মানব সৃষ্টির প্রথম মানুষ আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) সহ সকল মানুষ মাটি দ্বারা সৃষ্টি এ মর্মে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেনঃ-
পালনকর্তা ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব (ছোয়াদ-৭১)
আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেনঃ আমি পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি একটি মানব জাতির পত্তন করব (হিজর-২৮)
আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে উদগত করেছেন (নূহ্-১৭)
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে (আর রাহমান-১৪)
আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি (হিজর-২৬)
এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃজন করেছি, এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং পুনরায় এ থেকেই আমি তোমাদেরকে উত্থিত করব (সূরা ত্বো-হা: ৫৫)
আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি । অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি । এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিওকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে এক নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি । নিপুণতম সৃষ্টকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়। এরপর তোমরা মৃত্যুবরণ করবে । অতঃপর কেয়ামতের দিন তোমরা পুনরুত্থিত হবে (মু’মিনুন-১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬)
আমি তোমাদেরকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিন্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট কালের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই, এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি; তারপর যাতে তোমরা যৌবনে পদার্পণ কর । তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুমুখে পতিত হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, যাতে সে জানার পর জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সজ্ঞান থাকে না (হজ্ব-৫)
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিশ্র শুক্রবিন্দু থেকে (দাহ্র-২)
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে (আলাক-১)
হাদীছঃ
নবী (সাঃ) বলেনঃ তোমরা সকলেই আদমের সন্তান, আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি (বায্ যার প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল জামে’ হা/৪৫৬৮)স্বয়ং নবী বলেছেনঃ মানুষ মাটির তৈরী, ফেরেস্তা নূরের এবং জ্বিনজাত আগুনের তৈরী (মুসলিম, যুহদ ও রাক্বায়িক্ব অধ্যায়, হা/৫৩৪)
“তোমার পূর্বেও জনপদ বাসীদের মধ্যে [নবী হিসেবে] প্রেরণ করেছিলাম মানুষকে, যাদের আমি ওহী প্রেরণ করেছিলাম”-সূরা ইউসুফঃ ১০৯
“তোমাদের পূর্বে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি তারা সকলেই ছিলো মানুষ যারা খাদ্য গ্রহণ করতো, এবং রাস্তায় চলাফেরা করতো ।
বস্তুতঃ আমি তোমাদের একজনকে অন্যজনের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি । [হে মোমেনগণ] তোমরা কি ধৈর্য্য ধারণ করবে ? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ [সব কিছু] দেখেন”-সূরা ফুরকানঃ ২০ ২)
“তোমার পূর্বে যে সব পয়গম্বর আমি প্রেরণ করেছিলাম তারাও ছিলো মানুষ, যাদের জন্য আমি ওহী মঞ্জুর করেছিলাম । যদি তোমরা তা না বুঝে থাক, তবে তাদের জিজ্ঞাসা কর যারা [আল্লাহ্র] বাণীকে ধারণ করে থাকে”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৭ ২,৪ “তিনিই জেন্টাইল মানুষের জন্য তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসুল পাঠিয়েছেন, যে তাদের নিকট আয়াত সমূহ আবৃত্তি করে, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও প্রজ্ঞা । যদিও ইতিপূর্বে তারা ছিলো সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে”-সূরা জুমুয়াহঃ ২ ২,৫ হে পরওয়ারদেগার! তাদের মধ্য থেকেই তাদের নিকট একজন পয়গম্বর প্রেরণ করুন- যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের পবিত্র করবেন (বাক্বারা-১২৯) ২,৬ তাদেরই একজনকে তাদের মধ্যে রসুলরূপে প্রেরণ করেছিলাম এই বলে যে, তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর (মু’মিনুন-৩২) ২,৭ “তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের প্রতি রাসূল প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করে, তোমাদের পরিশুদ্ধ করে, এবং তোমাদের কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং নূতন জ্ঞান শিক্ষা দেয়”-সূরা বাকারাঃ ১৫১ ২,৮ “এখন তোমাদের মধ্যে থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছে”-সূরা তাওবাঃ ১২৮ ২,৯ তাদের পয়গম্বর তাদেরকে বলেনঃ আমরাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ্ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা, অনুগ্রহ করেন (ইবরাহীম-১১) ২,১০ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪) ৩) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও (মাটির তৈরী) মানুষঃ-৩,১ “তুমি বল, “আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই , ওহীর মাধ্যমে আমাকে প্রত্যাদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য এক আল্লাহ্ । সুতারাং তাঁর দিকে সত্য পথে চল; এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর”-সূরা হামীম সিজদাহঃ ০৬ ৩,২ “বল, “আমি তোমাদের মত একজন মানুষ; [কিন্তু] আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় । সুতারাং যে তাহার প্রভুর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে, এবং প্রভুর এবাদতে কাউকে শরীক না করে” -সূরা কাহফঃ ১১০ ৩,৩ “বল:” আমার প্রভু মহিমান্বিত! আমি তো হচ্ছি কেবল একজন মানুষ, একজন রাসুল মাত্র”-বনী ইসরাইলঃ ৯৩ ৩,৪ “এটা কি মানুষের জন্য আশ্চর্য্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই একজনের নিকট আমার ওহী প্রেরণ করেছি ?”-সূরা ইউনুসঃ ০২ ৪) ইবলীস ও জানে মানুষ মাটির তৈরীঃ-৪,১ (ইবলীস) বললঃ আমি এমন নই যে, একজন মানবকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরী ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন (হিজর-৩৩)৪,২ আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল ? সে বললঃ আমি আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ । আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা । বললেনঃ তুই এখান থেকে নেমে যা । এখানে অহঙ্কার করার অধিকার তোর নাই । অতএব তুই বের হয়ে যা । নিশ্চয় তুই হীনতমদের অন্তর্ভূক্ত (সূরাহ আল্ আরাফঃ ১১-১৩) ৫) কাফেররাও ঈমান আনে নাই নবী রাসুলগণ (মাটির তৈরী) মানুষ বলেঃ-৫,১ “তারা আশ্চর্য হয় যে, তাদের মধ্যে থেকেই তাদের নিকট একজন সতর্ককারী এসেছে । সুতরাং অবিশ্বাসীরা বলে, “এটা তো বড় আশ্চর্য ব্যাপার !”-সূরা কাফঃ ০২ ৫,২ “এরা আশ্চর্য হচ্ছে এই ভেবে যে, তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন সর্তককারী এসেছে এবং অবিশ্বাসীরা বলে যে,” এ তো একজন যাদুকর , মিথ্যা বলছে”-সূরা ছোয়াদঃ ০৪ ৫,৩ আল্লাহ কি মানুষকে পয়গম্বর করে পাঠিয়েছেন ? তাদের এই উক্তিই মানুষকে ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে (বনী ইস্রাঈল-৯৪) ৫,৪ “তাদের অন্তর [তা নিয়ে] তুচ্ছ বিষয়ের মত খেলা করে । পাপীরা তাদের গোপন পরামর্শ লুকিয়ে রেখে [বলে]” সে কি তোমাদের মত একজন মানুষ নয় ? তোমরা কি দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে ?”-সূরা আম্বিয়াঃ ০৩ ৫,৫ “এবং তারা বলে, “এ কি রকম রসুল, যে [মানুষের মত] আহার করে এবং রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে ? তার নিকট কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হলো না, যে তাঁর সাথে থাকতো সতর্ককারীরূপে ? অথবা তাকে ধন ভান্ডার দেয়া হয় নাই কেন অথবা উপভোগের জন্য তার কোন বাগান নাই কেন ?” দুষ্ট লোকেরা বলে, “তোমরা তো এক যাদুগ্রস্থ লোকেরই অনুসরণ করছো”-সূরা ফুরকানঃ ০৭-০৮ ৫,৬ “কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের অবিশ্বাসীদের প্রধাণগণ বলেছিলো, “আমরা তো তোমাকে আমাদের মত মানুষ ব্যতীত আর কিছু দেখছি না । আমাদের মধ্যে যারা নিম্নস্তরের, অপরিপক্ক বিচারবুদ্ধি সম্পন্ন, তারা ব্যতীত আর কাউকে তোমাকে অনুসরণ করতে দেখছি না । আমরা আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না, বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি”- সূরা হুদঃ ২৭ ৫,৭ কাফেররা বললঃ এতো আমাদের মতই মানুষ বৈ নয় , তোমরা যা খাও, সেও তাই খায় এবং তোমরা যা পান কর, সেও তাই পান করে । যদি তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা নিশ্চিতরূপেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে (মু’মিনুন-৩৩, ৩৪) ৫,৮ তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ । তোমরা আমাদেরকে ঐ উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চাও, যার ইবাদত আমাদের পিতৃপুরুষগণ করত (ইবরাহীম-১০) ৬) ‘নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে মাটির তৈরী মানুষ’ মর্মে হাদীছ থেকে প্রমাণঃ ৬,১ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমিও তোমাদের মত ভুলে যাই, কাজেই আমি ভুলে গেলে আমাকে তোমরা স্মরণ করিয়ে দিবে (বুখারী, ছালাত অধ্যায়, হা/৩৮৬, মুসলিম মসজিদ ও ছালাতের স্থান অধ্যায়, হা/৮৮৯) ৬,২ ‘তিনি আরো বলেনঃ আমি তো একজন মানুষ, আমার নিকট বাদী আসে, সম্ভবত তোমাদের একজন অপর জন অপেক্ষা বেশি বাকপটু হবে, তাই আমি ধারণা করে নিতে পারি যে সে সত্য বলেছে কাজেই সে মতে আমি তার পক্ষে ফায়ছালা দিয়ে দিতে পারি । তাই আমি যদি তার জন্য কোন মুসলিমের হক ফায়ছালা হিসাবে দিয়ে থাকি, তাহলে সেটা একটা জাহান্নামের টুকরা মাত্র । অতএব সে তা গ্রহণ করুক বা বর্জন করুক (বুখারী, মাযালিম অধ্যায়, হা/২২৭৮) ৬,৩ ‘মা আয়েশাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে থাকাকালীন কী কাজ করতেন ? তদুত্তরে তিনি বলেছিলেনঃ তিনি তো অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ ছিলেন । তিনি তার কাপড় সেলাই করতেন, নিজ বকরীর দুধ দোহন করতেন, নিজের সেবা নিজেই করতেন (আহমাদ,হা/২৪৯৯৮, আল আদাবুল মুফরাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ, দ্রঃ ছহীহুল আদাব আল্ মুফরাদ, হা/৪২০, মুখতাতাছার শামায়েলে তিরমিযী, হা/২৯৩, ছহীহাহ, হা/৬৭১) ৭) পর্যালোচনানবী (সাঃ) কে আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আঃ) থেকে স্বাভাবিক মানুষের যে নিয়ম আল্লাহ করেছেন সে পদ্ধতিতেই আবদুল্লাহর ওরসে মা আমিনার গর্ভে এ পৃথিবীতে আগমন ঘটিয়েছেন । মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে বলেছেন যে নবী (সাঃ) সৃষ্টিগত দিক থেকে ﺑﺸﺮ তথা আমাদের মতই একজন মানুষ । ৭,১
প্রশ্নঃ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আদম সন্তানের বাইরে না ভিতরে?
যদি বলে বাইরে তবে তো তার সাথে কথা বলা অনর্থক । কারন মুহাম্মাদ (সাঃ) অন্যান্য মানুষের মতই আদম সন্তান ছিলেন (উপরের ১,১-১,১২ দ্রঃ) । আর যদি বলে যে, তিনিও আদম সন্তানের মধ্যে গণ্য, তখন আমরা বলব আদম (আঃ) কিসের তৈরী, নুরের না মাটির ? যদি বলে ‘মাটির তৈরী’ আর এটা বলতে তারা বাধ্য- তাহলে তাদের নিকট প্রশ্নঃ মাটির তৈরী পিতার সন্তান কিভাবে নূরের তৈরী হল ? ৭,২ মানুষ যেমন পানাহার করে, তেমনি মুহাম্মাদ (সাঃ) ও পানাহার করতেন (উপরের ৫,৫ ও ৫,৭ দ্রঃ) । ৭,৩ অন্যান্য মানুষের যেমন সন্তানাদি ছিল, তেমনি রাসুলদেরও সন্তানাদি ছিল, স্ত্রীও ছিল । ভূল রাসুলেরও হত (উপরের ৬,১ দ্রঃ) । ৭,৪ রাসুল (সাঃ) অতি মানব ছিলেন না যে তিনি মৃত্যু বরণ করবেন না । এরশাদ হচ্ছে- “নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে এবং তারা সকলে মৃত্যু বরণ করবে” (সূরা যুমার ৩৯:৩০) ৭,৫ আর একথা কিভাবে গ্রহণ করা যায় যে, তিনি নূরের তৈরী, অথচ যাকে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য, অনুসরণীয় একমাত্র আদর্শ হিসেবে আল্লাহ পাঠালেন মাটির মানুষদের কাছে । “নিঃসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো” {সূরা আল ক্বালামঃ আয়াত ৪} ৭,৬ তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন এর ৭৯২ নং পৃষ্টায় আছে- মানবের রাসুল মানবই হতে পারেনঃ ভিন্ন শ্রেণীর সাথে পারস্পরিক মিল ব্যতীত হেদায়েত ও পথ প্রদর্শনের উপকার অর্জিত হয় না । ফেরেশতা ক্ষুধা পিপাসা জানে না, কাম-প্রবৃত্তিরও জ্ঞান রাখে না এবং শীত গ্রীষ্মের অনুভুতি ও পরিশ্রমজনিত ক্লান্তি থেকে মুক্ত । এমতাবস্থায় মানুষের প্রতি কোন ফেরেশতাকে রসুল করে প্রেরণ করা হলে সে মানবের কাছেও উপরোক্ত্ কর্ম আশা করতো এবং মানবের দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতো না । বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতা (নুরের তৈরী) কেই তাদের নিকট পয়গম্বর করে প্রেরণ করতাম (বনী ইস্রাঈল-৯৫) ৭,৭ নবী রাসুল নুরের তৈরী বা ফেরেশতা নন তাও আল্লাক তায়ালা কুরআনে উল্লেখ করেছেনঃ- আর আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে এবং একথাও বলি না যে, আমি গায়বী খবরও জানি; একথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা (নুরের তৈরী); আর তোমাদের দৃষ্টিতে যারা লাঞ্ছিত আল্লাহতাদের কোন কল্যাণ দান করবেন না । তাদের মনের কথা আল্লাহ ভাল করেই জানেন । সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায় কারী হব (হূদ-৩১) ৮) বিদআতীরা নবীকে নূর প্রমাণ করতে যেয়ে দলীল স্বরূপ কুরআন থেকে কতিপয় আয়াত পেশ করে থাকে । যেমন, ৮,১ মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ ‘তোমাদের নিকট নূর-তথা একটি উজ্জ্বল জ্যোতি এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে । এর দ্বারা আল্লাহ যারা তার সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন, এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন’(সূরাহ আল্ মায়িদাহঃ ১৫-১৬) অত্র আয়াতে নবীর গুণ স্বরূপ (অথবা আত্মা) তাকে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে, সৃষ্টিগতভাবে তাকে নূরের তৈরী বলা হয়নি । আর কিভাবে তিনি গুণগতভাবে নূর বা জ্যোতি হলেন, তা সাথে সাথে আল্লাহ পরের আয়াতেই ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন । ৮,২ এরশাদ হচ্ছেঃ ‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি । এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে । (সূরা আল্ আহযাব: ৪৫-৪৬) নবী (সাঃ) কে উক্ত আয়াতে (রূপে) যে মহান আল্লাহ গুণগত দিক থেকে নূর বা জ্যোতি বলেছেন তা অত্র আয়াতেই স্পষ্ট ।৯,১ এরশাদ হচ্ছে: ‘অতএব তোমরা আল্লাহ তাঁর রাসূল এবং অবতীর্ণ নূরের প্রতি ঈমান আনয়ন কর । তোমরা যা কর, সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরাহ আত্ তাগাবুন: ৮) ৯,২ অন্য সূরায় মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সুতরাং যারা তাঁর (মুহাম্মাদ এর) উপর ঈমান এনেছে, তাঁকে সম্মান করেছে, সাহায্য করেছে এবং তার উপর যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করেছে তারাই হল প্রকৃত সফলকাম (সূরা আল্ আরাফ: ১৫৭) উক্ত আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।নূর পার্টিরা কী বলবে কুরাআনও নূরের সৃষ্টি !অথচ কুরআন মহান আল্লাহর বাণী ইহাই সকল সুন্নী মুসলিমদের বিশ্বাস । কুরআনকে সৃষ্টবস্তু জ্ঞান করা স্পষ্ট কুফরী, অতএব, কুরআনকে নূর বলার পরও যদি নূরের সৃষ্টি না বলা হয়, তবে রাসূলকে নূরের সৃষ্টি কোন্ যুক্তিতে বলা হবে ? কারণ মহান আল্লাহ নবীকে যেমন ‘নূর’ বলেছেন, ঠিক তেমনিভাবে পবিত্র আল কুরআনকেও ‘নূর’ বলেছেন ।১০) প্রশ্ন করতে পারেন যে, আপনি বলেছেন নবী সা. মাটির তৈরী । অথচ, রাসূল সা. তার এক হাদিছে বলেন যে,১০,১ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন । এর জবাব কী ? এ উত্তরটা একটি হাদিছ দিয়ে-ই দেই । আল্লাহর রাসূল সা. অন্য হাদিছে বলেন যে, ১০,২ আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেন । ঐ হাদিছ এবং এই হাদিছের মর্ম একই । অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের রুহ মোবারক নূরের তৈরী, সমস্ত শরীর নয় । কেননা মহানবী সা. এর রূহ বা পবিত্র আত্না মাটির তৈরী হবে তো দূরের কথা, কোন মানুষের আত্নাই মাটির তৈরী নয় । বরং সমস্ত মানুষের আত্নাই নূরের তৈরী । ১১) সৃষ্টির উপাদানের উপর ভিত্তি করে কোন ব্যক্তির মর্যাদা নির্ণয় করা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা ।১১,১ কারণ মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেনঃ. ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’ পরহেযগার (সূরা হুজুরাত: ১৩) ১১,২ নবী (সাঃ) বলেনঃ হে মানব মন্ডলি! নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক এক, সাবধান! কোন আরবীর আজমীর (অনারব) উপর, কোন আজমীর আরবীর উপর প্রাধান্য নেই । অনুরূপভাবে কোন লাল বর্ণের ব্যক্তির কালো ব্যক্তির উপর, কোন কালো ব্যক্তির লাল বর্ণের ব্যক্তির উপর প্রাধান্য নেই । প্রাধান্য একমাত্র তাকওয়া পরহেযগারিতার ভিত্তিতে হবে । ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি বেশি সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বধিক তাক্বওয়াশীল’-পরহেযগার (আহমাদ প্রভৃতি, হাদীছ ছহীহ । দ্রঃ শাইখ আলবানীর গায়াতুল মারাম, পৃঃ১৯০, হা/৩১৩) কাজেই নবী (সাঃ) নূর থেকে সৃষ্টি না হয়ে মাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া তাঁর জন্য মোটেও মানহানিকর বিষয় নয় যেমনটি অসংখ্য বিদআতী তাই ধারণা করে বসেছে । বরং নবী (সাঃ) মাটির তৈরী হয়েও সৃষ্টির সেরা ব্যক্তিত্ব, সর্বাধিক মুত্তাক্বী-পরহেযগার । সমস্ত সৃষ্টি কুলের সর্দার, নবীকুল শিরোমণী, আল্লাহর খালীল-অন্তরঙ্গ বন্ধু । আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে হাশরের মাঠে মহান শাফাআতের অধিকারী, হাওযে কাউছারের অধিকারী, সর্ব প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী । মাক্বামে মাহমূদের অধিকারী, রহমাতুল লিল আলামীন, শাফিঊল লিল মুযনিবীন এসব বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাঝে কোনই দ্বিমত নেই । ইহাই ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযাম, আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের বিশ্বাস । যুগ পরম্পরায় এই বিশ্বাসই করে আসছেন সকল সুন্নী মুসলিম । ১২) ‘সৃষ্টির উপাদানের ভিত্তিতে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব অজর্ন করে’ এটা ইবলীস শয়তানের ধারণা ও দাবী মাত্র ।১২,১ এই অলিক ধারণার ভিত্তিতেই সে (ইবলীস) আগুনের তৈরী বলে মাটির তৈরী আদমকে সিজদাহ করতে অস্বীকার করে ছিল (উপরের ৪,১ ও ৪,২ দ্রঃ) । ‘নবী (সাঃ) কে নূরের তৈরী গণ্য করা হলে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ হবে, আর মাটির তৈরী গণ্য করলে সেই শ্রেষ্ঠত্ব বিলুপ্ত হবে, তাতে তার মানহানী হবে’ মর্মের যুক্তিটি শয়তানের যুক্তির সাথে মিলে কিনা চিন্তা-ভাবনা করার উদাত্ত আহ্বান রইল । ১২,২ কাফেররাও নবী রাসুলকে মাটির তৈরী মানুষ বলে তাঁর প্রতি ঈমাম আনে নাই, অনুসরণ করে নাই, তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে নাই (উপরের ৫,১ থেকে ৫,৮ দ্রঃ) । আপনারা যারা নূরের তৈরী আক্বীদা পোষণ করেন, মাটির তৈরী বলে কি আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করতে চান না ?!! এ রকম ভাবলে কাফেরদের সাথে মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় নয় কি ? আল্লাহ খালেক (সব কিছুর স্রষ্টা) আর সবকিছু তার মাখলুক (সৃষ্টি) আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আল্লাহ সমস্ত কিছুর স্রষ্টা ও তিনি সমস্ত কিছুর কর্মবিধায়ক । আকাশ ও পৃথিবীর চাবিও তাঁরই কাছে’ {যুমার ৬২-৬৩} আর শ্রেষ্ঠ মাখলুক হল মানুষ (মাটির তৈরী) [যে কারনে আল্লাহ নুরের তৈরী ফেরেশতাকে মাটির তৈরী মানুষ আদম (আঃ) কে সেজদা করার আদেশ দিলেন] মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। তাঁর শ্রেষ্ঠতের বহু কারন রয়েছে । তন্মধ্যে তাঁর প্রতি আল্লাহর বানী আল কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তিনিই আল্লাহর বানীর সর্বাপেক্ষা বুঝদ্বার ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষক। আল্লাহ আপনার প্রতি ঐশীগ্রন্থ ও প্রজ্ঞা অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনাকে এমন বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না। আপনার প্রতি আল্লাহর করুনা অসীম (নিসা-১১৩) “বলুনঃ আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে।” সুরা কাহ্ফ :১১০ আল্লাহ্ বলেন:আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ…[সূরা কাহফ, আয়াত:১১০]আল্লাহ্ বলেন:আসমান যমিনে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের খবর জানে না…[সূরা নামল, আয়াত: ৬৫]আল্লাহ্ আরো বলেন:”আপনি বলুন, আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহ্র ভাণ্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয়ে অবগতও নই। আমি এমনও বলি না যে আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ অহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে..”.[সূরা আন্আ’ম, আয়াত: ৫০]আল্লাহ্ আরো বলেন:আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ্ চান। আর আমি যদি গায়েবের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু কল্যাণ অর্জন করে নিতে পারতাম। ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনো হতে পারত না।আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদদাতা…[সূরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮] রাসূল (সা:) বলেন:আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমার যেমন ভুলে যাও আমিও তেমনি ভুলে যাই। আমি ভুল করলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিও…[বুখারী],যে ব্যক্তি রাসূল (সা:) এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল এই বিশ্বাস রাখলো যে, নবী (সা:) ভালমন্দের মালিক, সে কাফের হিসাবে গণ্য হবে।কথা হচ্ছে নবীজী সাঃ নূরের তৈরী ফেরেস্তা কি না? নাকি মাটির তৈরী মানুষ?রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন? নাকি ফেরেস্তা?যদি বলেন ফেরেস্তা তাহলে আরবের মুশরিকদের অভিযোগ করার কি কারণ?
পবিত্র কুরআনে যা বিধৃত হয়েছে এরকম শব্দে-
ﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 93 ) ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 94 ) ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 95 )
বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত টরাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।{সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-
ﻭَﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﻟَﻮْﻻ ﺃُﻧﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻣَﻠَﻚٌ ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧﺰَﻟْﻨَﺎ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﻘُﻀِﻲَ ﺍﻷﻣْﺮُ ﺛُﻢَّ ﻻَ ﻳُﻨﻈَﺮُﻭﻥَ ( 8 ﻭَﻟَﻮْ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﻟَّﺠَﻌَﻠْﻨَﺎﻩُ ﺭَﺟُﻼً ﻭَﻟَﻠَﺒَﺴْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣَّﺎ ﻳَﻠْﺒِﺴُﻮﻥَ )
তারা আরো বলে যে, তাঁর কাছে কোন ফেরেস্তা কেন প্রেরণ করা হল না? যদি আমি কোন ফেরেস্তা প্রেরণ করতাম, তবে গোটা ব্যাপারটি খতম হয়ে যেত। এরপর তাদেররকে সামান্য অবকাশও দেয়া হত না। যদি আমি কোন ফেরেস্তাকে রাসূল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের রূপেই হত। এতেও সে সন্দেহই করত, যা এখন করছে।{সূরা আনআম-৮,৯}
রাসূল (সা:) মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কাফেরদেরও কোন সন্দেহ ছিল না তার প্রমান :
রাসূল (সাঃ) মানুষ ছিলেন এ ব্যাপারে কোন কাফেরেরও সন্দেহ ছিল না। মক্কার কাফেরদের আশ্চর্যের এটাইতো কারণ ছিল যে, আল্লাহ তাআলা কেন ফেরেস্তা ছাড়া মানুষকে রাসূল বানিয়ে পাঠালেন?এর জবাব আল্লাহ তাআলা কি সুন্দর শব্দে বলে দিলেন। যদি দুনিয়াতে মানুষের বদলে ফেরেস্তারা থাকতো তাহলে আল্লাহ তাআলা ফেরেস্তাই পাঠাতেন রাসূলরূপে। কিন্তু যেহেতু দুনিয়াতে মানুষ বাস করে তাই মানুষকেই পাঠানো হয়েছে রাসূল হিসেবে। এ সহজ কথাটি মক্কার কাফেররা বুঝতো না বলেই আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বুঝালেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল মুসলমান নামধারী কিছু বেদআতীরাও মক্কার কাফেরদের মতই অভিযোগ করে নবীজী সাঃ মানুষ নন। ফেরেস্তাদের মত নূরের তৈরী। যদি নবীজী (সাঃ) কে মানুষ বিশ্বাস করতে হয়, তাহলে পূর্বোক্ত আয়াতের কালীমা অনুযায়ী বিশ্বাস করতে হবে মানুষ মাটির তৈরী, তাই নবীজী সাঃ ও মানুষ তাই তিনিও মাটির তৈরী।আর যদি বলা হয় রাসূল সাঃ মানুষ নন, ফেরেস্তা, তাহলে মক্কার কাফেররা ফেরেস্তা কেন নবীরূপে পাঠানো হলো না এ অভিযোগ কেন করল?নবীজী (সাঃ) মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল :
নবীজী (সাঃ) মানুষ না হয়ে ফেরেস্তা হলে কাফেরদের প্রশ্ন করার কি প্রয়োজন ছিল যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে কেন পাঠালেন নবী করে ফেরেস্তার বদলে?সুতরাং বুঝা গেল নবীজী সাঃ মানুষ ফেরেস্তা নয়। আর মানুষ কিসের তৈরী? তা সুষ্পষ্টই আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের উল্লেখ করেছেন।রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেনﻗُﻞْ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺭَﺑِّﻲ ﻫَﻞْ ﻛُﻨﺖُ ﺇَﻻَّ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 93 ) ﻭَﻣَﺎ ﻣَﻨَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺃَﻥ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﺍْ ﺇِﺫْ ﺟَﺎﺀﻫُﻢُ ﺍﻟْﻬُﺪَﻯ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺃَﺑَﻌَﺚَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 94 ) ﻗُﻞ ﻟَّﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻲ ﺍﻷَﺭْﺽِ ﻣَﻶﺋِﻜَﺔٌ ﻳَﻤْﺸُﻮﻥَ ﻣُﻄْﻤَﺌِﻨِّﻴﻦَ ﻟَﻨَﺰَّﻟْﻨَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﻣَﻠَﻜًﺎ ﺭَّﺳُﻮﻻً ( 95 )
অনুবাদ-বলুন, পবিত্র মহান আমার পালনকর্তা, আমি একজন মানব রাসূল ছাড়া কে? লোকদের নিকট হেদায়াত আসার পর তাদেরকে এ উক্তি ঈমান আনয়ন থেকে বিরত রাখে যে, “আল্লাহ কি মানুষকে রাসূলস্বরূপ প্রেরণ করেছেন?” বলুন যদি পৃথিবীতে ফেরেস্তারা বিচরণ করত, তবে আমি তাদের নিকট আকাশ থেকে ‘ফেরেস্তা রাসূল’ প্রেরণ করতাম।{সূরা বনী ইসরাঈল-৯৩, ৯৪, ৯৫}আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﻤَﻦ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺮْﺟُﻮ ﻟِﻘَﺎﺀ ﺭَﺑِّﻪِ ﻓَﻠْﻴَﻌْﻤَﻞْ ﻋَﻤَﻼً ﺻَﺎﻟِﺤًﺎ ﻭَﻻ ﻳُﺸْﺮِﻙْ ﺑِﻌِﺒَﺎﺩَﺓِ ﺭَﺑِّﻪِ ﺃَﺣَﺪًﺍ ( 110 )
অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।{সূরা কাহাফ-১১০}অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻗُﻞْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺸَﺮٌ ﻣِّﺜْﻠُﻜُﻢْ ﻳُﻮﺣَﻰ ﺇِﻟَﻲَّ ﺃَﻧَّﻤَﺎ ﺇِﻟَﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻪٌ ﻭَﺍﺣِﺪٌ ﻓَﺎﺳْﺘَﻘِﻴﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻴْﻪِ ﻭَﺍﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭﻩُ ﻭَﻭَﻳْﻞٌ ﻟِّﻠْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ( 6 )
অনুবাদ-বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ। আমার প্রতি অহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ হল একজন। অতএব তারই প্রতি একাগ্র হও, এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরেকদের জন্য রয়েছে। দুর্ভোগ।{সূরা হা-মীম সাজদা-৬}অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে- ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﺒَﺸَﺮٍ ﻣِّﻦ ﻗَﺒْﻠِﻚَ ﺍﻟْﺨُﻠْﺪَ ﺃَﻓَﺈِﻥ ﻣِّﺖَّ ﻓَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ ( 34 )অনুবাদ-আপনার পূর্বেও আমি কোন মানুষকে অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?{সূরা আম্বিয়া-৩৪}রাসূল সাঃ মানব ছিলেন এর বহু প্রমাণ হাদীসেও পাওয়া যায়। নিম্ন ৩ টি হাদীস উদ্ধৃত করা হল-
ﻋﻦ ﺃﻣﻬﺎ ﺃﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﻗﺎﻟﺖ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺟﻠﺒﺔ ﺧﺼﺎﻡ ﻋﻨﺪ ﺑﺎﺑﻪ ﻓﺨﺮﺝ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻓﻘﺎﻝ ( ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻭﺇﻧﻪ ﻳﺄﺗﻴﻨﻲ ﺍﻟﺨﺼﻢ ﻓﻠﻌﻞ ﺑﻌﻀﺎ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺃﺑﻠﻎ ﻣﻦ ﺑﻌﺾ ﺃﻗﻀﻲ ﻟﻪ ﺑﺬﻟﻚ ﻭﺃﺣﺴﺐ ﺃﻧﻪ ﺻﺎﺩﻕ ﻓﻤﻦ ﻗﻀﻴﺖ ﻟﻪ ﺑﺤﻖ ﻣﺴﻠﻢ ﻓﺈﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻗﻄﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻠﻴﺄﺧﺬﻫﺎ ﺃﻭ ﻟﻴﺪﻋﻬﺎ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ – ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺣﻜﺎﻡ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻘﻀﺎﺀ ﻓﻲ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﻤﺎﻝ ﻭﻗﻠﻴﻠﻪ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 6762 – )
অনুবাদ-হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমি তো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৫৬৮০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-৩১১৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২০৩২১}
ﻭﻟﻜﻦ ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻣﺜﻠﻜﻢ ﺃﻧﺴﻰ ﻛﻤﺎ ﺗﻨﺴﻮﻥ ﻓﺈﺫﺍ ﻧﺴﻴﺖ ﻓﺬﻛﺮﻭﻧﻲ ( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺘﻮﺟﻪ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺣﻴﺚ ﻛﺎﻥ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 392 – )
অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও।{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-২৬৬২, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৫২৪২, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২৭১}
ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻘﻮﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻳﻘﻮﻝ « ﺇﻧﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﺑﺸﺮ ﻭﺇﻧﻰ ﺍﺷﺘﺮﻃﺖ ﻋﻠﻰ ﺭﺑﻰ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﺃﻯ ﻋﺒﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺳﺒﺒﺘﻪ ﺃﻭ ﺷﺘﻤﺘﻪ ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺫﻟﻚ ﻟﻪ ﺯﻛﺎﺓ ﻭﺃﺟﺮﺍ ( ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ، ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺒﺮ ﻭﺍﻟﺼﻠﺔ ﻭﺍﻵﺩﺏ، ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﻟﻌﻨﻪ ﺍﻟﻨﺒﻰ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃﻭ ﺳﺒﻪ ﺃﻭ ﺩﻋﺎ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻟﻴﺲ ﻫﻮ ﺃﻫﻼ ﻟﺬﻟﻚ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺯﻛﺎﺓ ﻭﺃﺟﺮﺍ ﻭﺭﺣﻤﺔ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 6790 – )
অনুবাদ-হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়।{সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২১২৬, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৩১৬০}উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছে যে, রাসূল সাঃ মানুষ ছিলেন। ফেরেস্তা বা জিন নয়। আর মানুষ মাটির তৈরী হয় একথা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে একাধিক স্থানে স্পষ্টই বলেছেন। যা ইতোপূর্বে উদ্ধৃত হয়েছে।রাসূল সাঃ নূরের তৈরী হলে রাসূল সাঃ এর পূর্বসূরী ও উত্তরসূরীরা কিসের তৈরী?
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺑﻠﻐﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻌﺾ ﻣﺎ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻓﺼﻌﺪ ﺍﻟﻤﻨﺒﺮ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻦ ﺃﻧﺎ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺃﻧﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﺧﻠﻘﻪ ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ ﻓﺮﻗﺘﻴﻦ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﻓﺮﻗﺔ ﻭﺧﻠﻖ ﺍﻟﻘﺒﺎﺋﻞ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮ ﻗﺒﻴﻠﺔ ﻭﺟﻌﻠﻬﻢ ﺑﻴﻮﺗﺎ ﻓﺠﻌﻠﻨﻲ ﻓﻲ ﺧﻴﺮﻫﻢ ﺑﻴﺘﺎ ﻓﺄﻧﺎ ﺧﻴﺮﻛﻢ ﺑﻴﺘﺎ ﻭﺧﻴﺮﻛﻢ ﻧﻔﺴﺎ – 1/169 ، ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ 3532 – )
অনুবাদ-হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাঃ বলেন-রাসূল সাঃ [একবার কোন কারণে] মিম্বরে দাঁড়িয়ে [সমবেত লোকদেরকে] জিজ্ঞেস করলেন-আমি কে? সাহাবীগণ বললেন-আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তখন তিনি বললেন-আমি আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে মুহাম্মদ। আল্লাহ তাআলা তামাম মাখলূক সৃষ্টি করে আমাকে সর্বোত্তম সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত করেছেন [অর্থাৎ মানুষ বানিয়েছেন]। এরপর তাদেরকে দু’ভাগে [আরব ও অনারব] বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ভাগে [আরবে] রেখেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যে সর্বোত্তম গোত্রে পাঠিয়েছেন। এরপর সে গোত্রকে বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সর্বোত্তম পরিবারে প্রেরণ করেছেন।
সুতরাং আমি ব্যক্তি ও বংশ সর্বদিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম।{সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৩৫৩২, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬} রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সা:) ও রক্তে গুস্তে তৈরি শরীরে মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্ছোস্তরে অধিষ্টিত।এ প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক যে, রাসূল সাঃ যদি মাটির তৈরী না হয়ে নূরের তৈরী হয়ে থাকেন। তাহলে রাসূল সাঃ এর সম্মানিত আম্মাজান আমিনা ও সম্মানিত আব্বাজান আব্দুল্লাহ যাদের ঔরসে তিনি জন্ম নিলেন তারা কিসের তৈরী? সেই সাথে নবীজী সাঃ এর সন্তানরা কিসের তৈরী? মাটির না নূরের? মাটির তৈরী থেকেতো মাটিই হবে। আর নূর থেকেতো নূরই হবে, তাই নয়কি? সুতরাং চিন্তা ভাবনা করে এসব উদ্ভট দাবি তোলা উচিত যে, রাসূল সাঃ নূরের তৈরী। যেখানে এ ব্যাপারে কোন সুষ্পষ্ট দলিলই নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের আবেগ আর অন্ধতাকে পূজি করে রাসূল সাঃ কে মাটির থেকে নূরের তৈরী বানিয়ে ফেলাটা বোকামী ছাড়া কিছু নয়।নূরের তৈরী হওয়াই কি শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী?একথা সম্পূর্ণ ভুল যে, কোন কিছু নূরের তৈরী হলেই তা শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে। বরং শ্রেষ্ঠত্বের মূল বিষয় হল তার অভ্যান্তরীণ গুণ শ্রেষ্ঠ হওয়া। মাটির তৈরী মানুষ নূরের তৈরী ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ। দলিল- ﻭَﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺮَّﻣْﻨَﺎ ﺑَﻨِﻲ ﺁﺩَﻡَ অনুবাদ-নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।{সূরা বনী ইসরাঈল-৭০}আগুনের তৈরী জিন বা নূরের তৈরী ফেরেস্তাকে মর্যাদা দান করার কথা বলা হয়নি কুরআনের কোথাও। কিন্তু মাটির তৈরী মানুষকে মর্যাদা দান করার কথা আল্লাহ তায়ালা সুষ্পষ্টই ঘোষণা করেছেন। যা স্পষ্টই প্রমাণ করে নূরের তৈরী হওয়াই কেবল শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়?তাছাড়া আগুনের তৈরী জিন আর নূরের তৈরী ফেরেস্তাদের দিয়ে মাটির তৈরী মানুষ হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ তায়ালা সেজদা করিয়ে বুঝিয়ে দিলেন আগুনের তৈরী বা নূরের তৈরী হওয়া কোন শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ নয়। শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণবাহী হল- ভিতরগত গুন যার শ্রেষ্ঠ সেই প্রকৃত শ্রেষ্ঠ। চাই সে মাটির তৈরী হোক, চাই নূরের তৈরী হোক চাই আগুনের তৈরী হোক। ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲ ﻓَﻘَﻌُﻮﺍْ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳﻦَ ( 29 ) ﻓَﺴَﺠَﺪَ ﺍﻟْﻤَﻶﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﺃَﺟْﻤَﻌُﻮﻥَ ( 30 অনুবাদ-যখন আমি তাকে পূর্ণতা দিলাম এবং তাতে আত্মা ফুকে দিলাম, তখন সবাই তাকে সেজদা করল। সকল ফেরেস্তারাই একসাথে তাকে সেজদা করল।{সূরা হিজর-২৯,৩০} সূরা কাহাফে মহান আল্লাহ এরশাদ করেনঃ (হে রাসূল!) ‘আপনি বলে দিন, আমি তো তোমাদেরই মত এক জন মানুষ, আমার নিকট এই মর্মে ওহী করা হয় যে, তোমাদের উপাস্য এক ও একক, অতএব যে নিজ প্রতিপালকের দিদার লাভের আশাবাদী সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে’। (সূরা আল্ কাহাফঃ ১১০)অন্যত্রে মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আপনি বলুন আমি আমার প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। একজন মানব, একজন রাসূল বৈ আমি কে? (সূরা বনী ইসরাইল: ৯৩(তিনি আরো বলেনঃ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের বড় উপকার করেছেন, যেহেতু তাদেরই মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন, এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দান করেন, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গুমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল। (সূরাহ আলে ইমরানঃ ১৬৪(তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের নিকট আগমন করেছে, তোমাদেরই মধ্যকার এমন একজন রাসূল, যার কাছে তোমাদের ক্ষতিকর বিষয় অতি কষ্টদায়ক মনে হয়, যিনি হচ্ছেন তোমাদের খুবই হিতাকাঙ্খী, মুমিনদের প্রতি বড়ই স্নেহশীল, করুনাপরায়ণ। (সূরা তাওবা: ১২৮)তিনি আরো বলেনঃ এ লোকদের জন্যে এটা কী বিস্ময়কর হয়েছে যে, আমি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট অহী প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তুমি লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর এবং যারা ঈমান এনেছে তাদরকে এই সুসংবাদ দাও যে, তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট (পূর্ণ মর্যাদা) লাভ করবে, কাফেররা বলতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি তো নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য যাদুকর। (সূরা ইউনুস: ২( তিনি আরো বলেনঃ তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের নিকট, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত, যদিও তারা ইতোপূর্বে স্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত ছিল। (সূরা-আল্ জুমুআহ: ২)
আল্লাহ আরো বলেনঃ আমি তোমাদের মধ্য হতে এরূপ রাসূল প্রেরণ করেছি যে, তোমাদের নিকট আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে ও তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে গ্রন্থ ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়, আর তোমরা যা অবগত ছিলে না তা শিক্ষা দান করেন। (সূরা বাকারা ১৫১ (এখানে মহান আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ঐসব লোকদেরই একজন, তিনি তাদের বাইরের কোন লোক নন। কাজেই ঐসব লোক যদি নূরের তৈরী হন, তাহলে নবী (ছাল্লাল্লাহু আআইহি ওয়া সাল্লাম) ও নূরের তৈরী হবেন, আর যদি তারা নূরের তৈরী না হন তবে তিনিও নূরের তৈরী হবেন না এটাইতো স্বাভাবিক। আসলে বিদআতীরা কুরআন ও ছহীহ হাদীছ আয়ত্ব করতে এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করা থেকে চির ব্যর্থ, তাই তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছ বিরোধী কথা বলে যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটির তৈরী নন, বরং তিনি নূরের তৈরী। অথচ এভাবে তারা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অধিক সম্মান দিতে গিয়ে আরো তাঁকে খাটো করে দিয়েছে। কারণ নূরের তৈরী ফেরেশতার উপর আল্লাহ মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম)কে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তাদেরকে দিয়ে আদমের সিজদা করিয়ে নিয়েছেন। (দ্রঃসূরা আল বাকারাহ: ৩৪, সূরা আল্ আ’রাফ: ১১) তাহলে কার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল? নূরের তৈরী ফেরেশতাদের নাকি মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সাল্লাম)এর? অবশ্যই মাটির তৈরী আদম (আলাইহিস্ সালাম) এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হল। তবে আমরা তর্কের খাতিরে এটা বললেও আমাদের বিশ্বাস, আদম (আলাইহিস্ সালাম) ফেরেশতাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে ছিলেন তাঁর ইলমের মাধ্যমে। আর এটা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহেই হয়ে ছিল। তিনিই আদমের প্রতি অনুগ্রহ করে ফেরেশতাদের চেয়ে তাকে বেশি ইলম দান করে ছিলেন।আমি বিশ্বের সকল বিদআতীকে বলতে চাই, এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী ও রাসূল (অনেকে বলেনঃ নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা হলঃ এক লক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার। এভাবে বলে থাকেন, এটা প্রমাণ করে তারা ঐমর্মে নবী এর কোন হাদীছ অবগত হন নি। মুসনাদ আহমাদ, ছহীহ ইবনু ইব্বান প্রভৃতিতে নবী ও রাসূলদের সর্ব মোট সংখ্যা একলক্ষ চব্বিশ হাজার বলা হয়েছে, আরো বলা হয়েছে তাদের মধ্যে রাসূলদের সংখ্যা সর্ব মোট ৩১৫ জন দ্রঃ মুসনাদ আহমাদ ৫/১৭৯,হা/২১৫৯২, ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/ প্রভৃতি হাদীছ ছহীহ, সিলসিলাতুল আহাদীছ আছ ছহীহাহ) এর মধ্যে শুধু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে নূরের তৈরী হলেন? যদি তাঁকে নূরের তৈরী না বলায় তার মান খাটো করা হয়,তবে বাকী এক লক্ষ তেইশ হাজার নয়শো নিরানব্বই জন নবী রাসূলকে মাটির তৈরী বলে কি তাদের মান খাটো করা হয় না? নাকি তারাও নূরের তৈরী? কৈ কোন বিদআতীকে তো বলতে শুনি না যে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মত বাকী সমস্ত নবী, রাসূলগণও নূরের তৈরী! বরং তারা এমনটি শুধু নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ক্ষেত্রেই বলে থাকে।
রাসূল (সা:) শ্রেষ্ঠ মহামানব :
আল্লাহ তাআলার পর তিনিই শ্রেষ্ঠ। তার মত আর কেউ নেই। তিনি সকল সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। মাটির তৈরী সকল মানুষ, আগুনের তৈরী সকল জিন, নূরের তৈরী সকল ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ। যেমন সকল নূরের তৈরী ফেরেস্তার মাঝে হযরত জিবরাঈল আঃ শ্রেষ্ঠ। তেমনি মাটির তৈরী এ মহামানব রাসূল সাঃ সকল মাটির তৈরী পয়গম্বর আঃ ও সকল মানুষ ও সকল জিনও ফেরেস্তা থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। তার মত উত্তম ও শ্রেষ্ঠ কোন সৃষ্টি আল্লাহ তাআলা কখনো সৃজন করেন নি, কখনো করবেন ও না। রাসুল (সাঃ) মানুষ মাটির তৈরি, যেমন কোরআন তৈরি কাগজ-কালি দিয়ে কিন্তু কোরআনের একনাম নূর বা হেদায়াত, তেমনি রাসূল (সা:) ও রক্তে গুস্তে তৈরি শরীরে মানুষ, কিন্তু তিনি হেদায়াতের নূর বা আলো মহামানব, এবং তিনিই মহৎ চরিত্র মর্যাদা সর্বোচ্ছোস্তরে অধিষ্টিত।এর পরও রাসূল সাঃ কে মাটির তৈরী থেকে নূরের তৈরী বানানোর অযথা চেষ্টা করাটা একটি হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া কিছু নয়।উপসংহার :
আল্লাহ তা’আলা আমাদের এসব অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক থেকে বিরত থেকে আখেরাতের পূজি সংগ্রহ করার তৌফিক দান করুন এবং কোরআন-হাদীসকে সঠিক ভাবে উপলব্দি করার ও মেনে চলার তৌফিক দান করুন।(আমিন)সূত্র
প্রশ্ন ৩৮: সর্বপ্রথম আল্লাহ কী সৃষ্টি করেছেন ?
মহান আল্লাহর সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি?
মহান আল্লাহ্র প্রথম সৃষ্টি কলম। মহানবী (সঃ) বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ প্রথম যে জিনিস সৃষ্টি করেন, তা হল কলম। তিনি তাঁকে বললেন,
‘লিখো’। সে বলল, ‘প্রভু! কি লিখব?’ তিনি বললেন, ‘কিয়ামত পর্যন্ত প্র্যত্যেক
জিনিসের ভাগ্য লিখো।’
৩৮ (আবূ দাউদ ৪৭০২, তিরমিযী ২১৫৫ নং) (ক্লিক করুন)
ভূমিকাঃ
المقدمة
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সকল সাহাবীর উপর। ইসলাম
যে কোন আমলের পূর্বে সঠিক আকীদাহ গ্রহণ করার উপর বিশেষ গুরত্ব প্রদান
করেছে। তাই আকীদার বিষয়টি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আকীদাহ সঠিক না হলে
কারও কোন আমল আল্লাহর দরবারে গৃহিত হবে না। এই জন্যই ইসলাম আকীদাহ সংশোধনের
উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব প্রদান করেছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অনেক মুসলিমদের আকীদায় যথেষ্ট ভুল রয়েছে। মুসলিমদের বিরাট একটি অংশ বিশ্বাস করে যে, তিনি আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, তিনি নূরের তৈরী, তিনি গায়েব জানতেন ইত্যাদি কুরআন ও সহীহ হাদীছ বিরোধী আরও অনেক আকীদাহ্ ও বিশ্বাস। আমরা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে একটি ভুল আকীদাহ সংশোধনের চেষ্টা করব।
নবী (সাঃ) প্রথম সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটির প্রকৃত অবস্থাঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অনেক মুসলিমদের আকীদায় যথেষ্ট ভুল রয়েছে। মুসলিমদের বিরাট একটি অংশ বিশ্বাস করে যে, তিনি আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি, তিনি নূরের তৈরী, তিনি গায়েব জানতেন ইত্যাদি কুরআন ও সহীহ হাদীছ বিরোধী আরও অনেক আকীদাহ্ ও বিশ্বাস। আমরা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে একটি ভুল আকীদাহ সংশোধনের চেষ্টা করব।
নবী (সাঃ) প্রথম সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটির প্রকৃত অবস্থাঃ
حالة الحديث المشهور بأن النبي صلى الله عليه وسلم أول
المخلوقات
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মাঝে এই কথাটি প্রচলিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ (সাঃ)এর নূর সৃষ্টি করেছেনে। এ ধরণের বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ হল আমাদের দেশের বেশ কিছু বক্তা ও আলেম এ ব্যাপারে একটি মাওযু তথা বানোয়াট হাদীছ দিয়ে দলীল গ্রহণ করে থাকেন এবং সুমধুর কণ্ঠে ওয়াজ করে মানুষকে বুঝিয়ে থাকেন। অনেক বক্তার ওয়াজের একমাত্র পূঁজিই হচ্ছে এ জাতীয় কয়েকটি বানোয়াট বিষয়। যদিও কুরআন ও হাদীছের জ্ঞান তাদের কাছে খুবই নগণ্য। হাদীছটি মানুষের মুখে মুখে শুনা যায়, কিন্তু গ্রহণযোগ্য কোন হাদীছের কিতাবে তা পাওয়া যায় না। হাদীছটি হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أول ما خلق الله تعالى نوري
অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। অন্য শব্দে এসেছে,
أول ما خلق الله نور نبيك يا جابر
হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। একই অর্থে এবং বিভিন্ন শব্দে সুফীদের কিতাবসমূহে সনদ বিহীন এই বানোয়াট হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে। মুসান্নাফে আব্দু রাজ্জাকে হাদীছটি থাকলেও লেখক কোন নির্ভরযোগ্য সনদ উল্লেখ করেন নি। এই মর্মে যত হাদীছ বর্ণিত হাদীছ তার সবই বাতিল।
মুহাদ্দিছগণ এই হাদীছকে মাওযু বলেছেন। ইমাম সুয়ুতী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছের কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই। সুতরাং হাদীছটি মুনকার ও বানোয়াট। হাদীছের কোন কিতাবে এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুনঃ হাভী ১/৩২৫) ইমাম সাগানীও হাদীছটিকে মাওযু বলেছেন। (দেখুনঃ الموضوعات للصغاني )
ইমাম আলবানী (রঃ) বলেনঃ এটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ একটি বাতিল হাদীছ। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৪৫৮)। সুফীদের অন্যতম গুরু ওয়াহদাতুল উজুদের প্রবক্তা ইবনে আরাবী এই আকীদাই পোষেণ করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হল আমাদের দেশের বহু সুন্নী মুসলমানের আকীদাও তাই।
সর্বপ্রথম সৃষ্টি কোনটি? ما هو أول المخلوقات
সহীহ হাদীছের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি ছিলেন না এবং তিনি নূরের তৈরীও ছিলেন না। সর্বপ্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে আলেমগণ থেকে একাধিক কথা বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেনঃ কলমই প্রথম সৃষ্টি। প্রখ্যাত আলেম ইবনে জারীর, ইবনুল আরাবী এমতেরই সমর্থক ছিলেন। পরবর্তীদের মধ্যে ইমাম আলবানী (রঃ) এমতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা নিম্নের সহীহ হাদীছগুলো দিয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إن أول شيء خلقه الله تعالى القلم ، وأمره أن يكتب كل شيء يكون
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে জিনিষটি সৃষ্টি করেছেন, তা হচ্ছে কলম। তারপর কলমকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা লিখতে বললেন। {(আবু ইয়ালা (১/১২৬) আল-আসমা ওয়াস সিফাত লিল-বায়হাকী ২৭১), সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৩৩)} তিনি আরও বলেনঃ
إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
“আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্তুর তাকদীর লিখ”। (দেখুনঃ আবু দাউদ, তিরমিজী, বায়হাকী এবং অন্যান্য)
মালেকী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনুল আরাবী বলেনঃ
قبل القلم لم يكن شيء إلا هو سبحانه
কলমের পূর্বে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। (দেখুন আরেযাতুল আহওয়াযী)
অপর পক্ষে আরেক দল আলেমের মতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ। আল্লামা ইবনে তাইমীয়া এবং অন্যান্য আলেম থেকে এধরণের মত পাওয়া যায়। তাদের দলীল হচ্ছে, ইমরান বিন হুসাইন থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَىْءٌ غَيْرُهُ ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ، وَكَتَبَ فِى الذِّكْرِ كُلَّ شَىْءٍ ، وَخَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ
আদিতে একমাত্র আল্লাহ-ই ছিলেন। তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তারপর তিনি প্রত্যেক জিনিষ লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করলেন। (বুখারী, হাদীছ নং- ৩১৯১)
উপরের হাদীছ থেকেই দলীল গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ পানি সর্বপ্রথম সৃষ্টি বলে মত প্রকাশ করেছেন।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের মাঝে এই কথাটি প্রচলিত আছে যে, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম মুহাম্মাদ (সাঃ)এর নূর সৃষ্টি করেছেনে। এ ধরণের বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ হল আমাদের দেশের বেশ কিছু বক্তা ও আলেম এ ব্যাপারে একটি মাওযু তথা বানোয়াট হাদীছ দিয়ে দলীল গ্রহণ করে থাকেন এবং সুমধুর কণ্ঠে ওয়াজ করে মানুষকে বুঝিয়ে থাকেন। অনেক বক্তার ওয়াজের একমাত্র পূঁজিই হচ্ছে এ জাতীয় কয়েকটি বানোয়াট বিষয়। যদিও কুরআন ও হাদীছের জ্ঞান তাদের কাছে খুবই নগণ্য। হাদীছটি মানুষের মুখে মুখে শুনা যায়, কিন্তু গ্রহণযোগ্য কোন হাদীছের কিতাবে তা পাওয়া যায় না। হাদীছটি হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
أول ما خلق الله تعالى نوري
অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। অন্য শব্দে এসেছে,
أول ما خلق الله نور نبيك يا جابر
হে জাবের! সর্বপ্রথম আল্লাহ তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। একই অর্থে এবং বিভিন্ন শব্দে সুফীদের কিতাবসমূহে সনদ বিহীন এই বানোয়াট হাদীছটি উল্লেখিত হয়েছে। মুসান্নাফে আব্দু রাজ্জাকে হাদীছটি থাকলেও লেখক কোন নির্ভরযোগ্য সনদ উল্লেখ করেন নি। এই মর্মে যত হাদীছ বর্ণিত হাদীছ তার সবই বাতিল।
মুহাদ্দিছগণ এই হাদীছকে মাওযু বলেছেন। ইমাম সুয়ুতী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছের কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই। সুতরাং হাদীছটি মুনকার ও বানোয়াট। হাদীছের কোন কিতাবে এর ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায় না। (দেখুনঃ হাভী ১/৩২৫) ইমাম সাগানীও হাদীছটিকে মাওযু বলেছেন। (দেখুনঃ الموضوعات للصغاني )
ইমাম আলবানী (রঃ) বলেনঃ এটি মানুষের মুখে মুখে প্রসিদ্ধ একটি বাতিল হাদীছ। (দেখুনঃ সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ৪৫৮)। সুফীদের অন্যতম গুরু ওয়াহদাতুল উজুদের প্রবক্তা ইবনে আরাবী এই আকীদাই পোষেণ করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হল আমাদের দেশের বহু সুন্নী মুসলমানের আকীদাও তাই।
সর্বপ্রথম সৃষ্টি কোনটি? ما هو أول المخلوقات
সহীহ হাদীছের ভাষ্য থেকে জানা যায় যে, আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি ছিলেন না এবং তিনি নূরের তৈরীও ছিলেন না। সর্বপ্রথম সৃষ্টির ব্যাপারে আলেমগণ থেকে একাধিক কথা বর্ণিত হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেনঃ কলমই প্রথম সৃষ্টি। প্রখ্যাত আলেম ইবনে জারীর, ইবনুল আরাবী এমতেরই সমর্থক ছিলেন। পরবর্তীদের মধ্যে ইমাম আলবানী (রঃ) এমতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। তারা নিম্নের সহীহ হাদীছগুলো দিয়ে দলীল গ্রহণ করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إن أول شيء خلقه الله تعالى القلم ، وأمره أن يكتب كل شيء يكون
রাসূল (সাঃ) বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যে জিনিষটি সৃষ্টি করেছেন, তা হচ্ছে কলম। তারপর কলমকে কিয়ামত পর্যন্ত যা হবে তা লিখতে বললেন। {(আবু ইয়ালা (১/১২৬) আল-আসমা ওয়াস সিফাত লিল-বায়হাকী ২৭১), সিলসিলায়ে সাহীহা, হাদীছ নং- ১৩৩)} তিনি আরও বলেনঃ
إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ فَقَالَ: لَهُ اكْتُبْ قَالَ: رَبِّ وَمَاذَا أَكْتُبُ قَالَ: اكْتُبْ مَقَادِيرَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ
“আল্লাহ্ তাআলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করে তাকে বললেনঃ লিখ। কলম বললঃ হে আমার প্রতিপালক! কী লিখব? আল্লাহ্ বললেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত আগমণকারী প্রতিটি বস্তুর তাকদীর লিখ”। (দেখুনঃ আবু দাউদ, তিরমিজী, বায়হাকী এবং অন্যান্য)
মালেকী মাজহাবের বিখ্যাত আলেম ইবনুল আরাবী বলেনঃ
قبل القلم لم يكن شيء إلا هو سبحانه
কলমের পূর্বে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। (দেখুন আরেযাতুল আহওয়াযী)
অপর পক্ষে আরেক দল আলেমের মতে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হচ্ছে আরশ। আল্লামা ইবনে তাইমীয়া এবং অন্যান্য আলেম থেকে এধরণের মত পাওয়া যায়। তাদের দলীল হচ্ছে, ইমরান বিন হুসাইন থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَىْءٌ غَيْرُهُ ، وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ، وَكَتَبَ فِى الذِّكْرِ كُلَّ شَىْءٍ ، وَخَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ
আদিতে একমাত্র আল্লাহ-ই ছিলেন। তিনি ছাড়া আর কিছুই ছিলনা। তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। তারপর তিনি প্রত্যেক জিনিষ লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তিনি আসমান ও যমিন সৃষ্টি করলেন। (বুখারী, হাদীছ নং- ৩১৯১)
উপরের হাদীছ থেকেই দলীল গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ পানি সর্বপ্রথম সৃষ্টি বলে মত প্রকাশ করেছেন।
প্রথম পর্যায়ের কতিপয় মাখলুক বা সৃষ্টিঃ بعض الأمثلة من أوائل المخلوقات
এ কথা সত্য যে, আরশ, কুরসী, লাওহে মাহফুয, পানি, আসমান, ফেরেশতা, জিন ইত্যাদি প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত। মানুষ কোন ক্রমেই উপরোক্ত সৃষ্টিসমূহের পূর্বে সৃষ্টি হয় নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নন। কলমও প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টি। তবে আমরা যে কলম দিয়ে লেখি সেই কলম সর্বপ্রথম সৃষ্টি নয়; বরং যে কলম দিয়ে লাওহে মাহফুয লেখা হয়েছে সেটিই সর্বপ্রথম সৃষ্টি।
সুতরাং সর্বপ্রথম সৃষ্টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ দলীল না থাকায় তা মুসলিমের আকীদাহ হতে পারে না। তাই উপরোক্ত হাদীছগুলো এবং অন্যান্য সহীহ হাদীছের শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরী।
ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ
ما منا من أحد إلا يؤخذ من قوله أو يرد عليه إلا صاحب هذا القبر ويشير إلى قبر النبي صلى الله عليه وسلم
আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার সকল কথাই গ্রহণ করা হেব অর্থাৎ আমাদের কারও কথা গ্রহণ করা যেতে পারে আবার প্রত্যাখ্যানও করা যেতে পারে। তবে এই কবরের অধিবাসী ব্যতীত। এই কথা বলে তিনি নবী (সাঃ)এর কবরের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।
উপসংহারঃ الختام
উপরোক্ত আলোচনার আলোকে সহীহ হাদীছ দ্বারা সুস্পষ্ট রূপে প্রমাণিত হল যে, নবী (সাঃ) সর্বপ্রথম সৃষ্টি নন। সুতরাং সহীহ হাদীছ দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর কোন মুসলিমের আকীদাহ এটি হতে পারে না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি। আল্লাহ আমাদেরকে দ্বীনের সকল সঠিক আকীদাহ গ্রহণ করার তাওফীক দিন। আমীন।
প্রশ্ন ৩৭ঃঃ চাউল বা টাকা দিয়ে কি ফিতরা আদায় করা যাবে?
বাচ্চু মিয়া ----01.06.2019 তারিখে প্রশ্ন করেছেন
শিরোনাম: ফিতরা ---প্রশ্ন-বিস্তারিত:
চাউল দিয়ে কি ফিতরা আদায় করা যাবে?
উত্তর দিয়েছেন আসলাম সাঈদী ভাইঃ
Aslam Sayedee
#চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করা বেদআতঃ
সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম।
,
চাউল দিয়ে ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি। রাসুল (সা) চাল দিয়ে ফিতরা দেননি এবং দিতেও বলেননি, তাই হাদিসের বাহিরে গিয়ে চাউল দিয়ে ফিতরা দেওয়া বৈধ হবে না বরং এটি বেদআত।
#যদি চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করা বৈধ ফতোয়া দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা জনগণের উপকারের কথা ভেবে দিতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে চাল হচ্ছে প্রদান খাদ্যদ্রব্য ফসল। আর হাদীসে বর্ণিত খাদ্যগুলো আমাদের দেশের জন্য খুব একটা উপকারী নয়, তাই চাল দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এখন উপকারের কথা ভেবে যদি চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে একই উপকারের কথা ভেবে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা কেনো জায়েজ হবে না? বরঞ্চ মানুষের জন্য চাউলের চাইতে টাকার প্রয়োজন আরও বেশি।
,
যদি বলা হয় হাদিসে টাকার কথা বলা হয়নি এই জন্য টাকা দেওয়া যাবে না তাহলে একই কথা তো জুমার খুতবার বলায়ও বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ আরবীতে খুতবা দিয়েছেন , বাংলায় খুতবা দেন নি, তাই বাংলায় খুতবা দেওয়া জায়েজ হবে না। তখন আবার উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল করে জুমার খুতবা কেউ বাংলা বাংলায় বলা জায়েজ মনে করেন আবার কেউ ওয়াজিবও বলে থাকেন।
#আমি বলি, যে উদ্দেশ্যে আরবি ভাষার পরিবর্তে বাংলায় খুতবা দেওয়া জায়েজ, একই উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে টাকা দেওয়াও জায়েজ।
এটা দিলাম যুক্তি। যদি আপনি দলিলের দিকে যান এর স্বপক্ষে দলিলও দেখতে পাবেন। সাহাবীদের যুগ থেকে দিনার-দিরহাম দিয়ে ফিতরা দেওয়ার প্রচলন চলে আসছে। হযরত মুয়াবিয়া তাঁর শাসনামলে দিরহাম দিয়ে ফিতরা দিয়েছিলেন , হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাঁর শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনার ও দিরহাম দিয়ে ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
#অতএব যে উদ্দেশ্যে চাল দিয়ে ফিতরা দেওয়া জায়েজ, বাংলা ভাষায় খুতবা দেওয়া জায়েজ, একই উদ্দেশ্যে টাকা দিয়েও ফিতরা দেওয়া জায়েজ । আর যদি বলা হয় যে, হাদিসে খাদ্যদ্রব্যের কথা আছে তাই টাকা দেওয়া যাবে না তাহলে হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি খাদ্য দ্রব্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে, এর বাহিরে যাওয়া যাবে না এবং বাংলায় খুতবা দেওয়াও যাবে না। এখন আপনারা কোন দিকে যাবেন, সেটা দেখার বিষয়।
فهل إلى خروج من سبيل
শিরোনাম: ফিতরা ---প্রশ্ন-বিস্তারিত:
চাউল দিয়ে কি ফিতরা আদায় করা যাবে?
উত্তর দিয়েছেন আসলাম সাঈদী ভাইঃ
Aslam Sayedee
#চাউল দিয়ে ফিতরা আদায় করা বেদআতঃ
সদাকায়ে ফিতর সম্পর্কিত হাদীসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়: যব, খেজুর, পনির, কিসমিস ও গম।
,
চাউল দিয়ে ফিতরা দেওয়ার ব্যাপারে কোনো হাদিস বর্ণিত হয়নি। রাসুল (সা) চাল দিয়ে ফিতরা দেননি এবং দিতেও বলেননি, তাই হাদিসের বাহিরে গিয়ে চাউল দিয়ে ফিতরা দেওয়া বৈধ হবে না বরং এটি বেদআত।
#যদি চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করা বৈধ ফতোয়া দেওয়া হয়ে থাকে তাহলে তা জনগণের উপকারের কথা ভেবে দিতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশে চাল হচ্ছে প্রদান খাদ্যদ্রব্য ফসল। আর হাদীসে বর্ণিত খাদ্যগুলো আমাদের দেশের জন্য খুব একটা উপকারী নয়, তাই চাল দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
এখন উপকারের কথা ভেবে যদি চাল দিয়ে ফিতরা আদায় করা জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে একই উপকারের কথা ভেবে টাকা দিয়ে ফিতরা আদায় করা কেনো জায়েজ হবে না? বরঞ্চ মানুষের জন্য চাউলের চাইতে টাকার প্রয়োজন আরও বেশি।
,
যদি বলা হয় হাদিসে টাকার কথা বলা হয়নি এই জন্য টাকা দেওয়া যাবে না তাহলে একই কথা তো জুমার খুতবার বলায়ও বলা যেতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ আরবীতে খুতবা দিয়েছেন , বাংলায় খুতবা দেন নি, তাই বাংলায় খুতবা দেওয়া জায়েজ হবে না। তখন আবার উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল করে জুমার খুতবা কেউ বাংলা বাংলায় বলা জায়েজ মনে করেন আবার কেউ ওয়াজিবও বলে থাকেন।
#আমি বলি, যে উদ্দেশ্যে আরবি ভাষার পরিবর্তে বাংলায় খুতবা দেওয়া জায়েজ, একই উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে টাকা দেওয়াও জায়েজ।
এটা দিলাম যুক্তি। যদি আপনি দলিলের দিকে যান এর স্বপক্ষে দলিলও দেখতে পাবেন। সাহাবীদের যুগ থেকে দিনার-দিরহাম দিয়ে ফিতরা দেওয়ার প্রচলন চলে আসছে। হযরত মুয়াবিয়া তাঁর শাসনামলে দিরহাম দিয়ে ফিতরা দিয়েছিলেন , হযরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ তাঁর শাসনামলে রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনার ও দিরহাম দিয়ে ফিতরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
#অতএব যে উদ্দেশ্যে চাল দিয়ে ফিতরা দেওয়া জায়েজ, বাংলা ভাষায় খুতবা দেওয়া জায়েজ, একই উদ্দেশ্যে টাকা দিয়েও ফিতরা দেওয়া জায়েজ । আর যদি বলা হয় যে, হাদিসে খাদ্যদ্রব্যের কথা আছে তাই টাকা দেওয়া যাবে না তাহলে হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি খাদ্য দ্রব্য দিয়েই ফিতরা দিতে হবে, এর বাহিরে যাওয়া যাবে না এবং বাংলায় খুতবা দেওয়াও যাবে না। এখন আপনারা কোন দিকে যাবেন, সেটা দেখার বিষয়।
فهل إلى خروج من سبيل
প্রশ্ন ৩৪ : কোরআন তো ইতিহাসের কিতাব নয় তাহলে এতো ইতিহাস কেন বর্ননা করা হয়েছে???
কারণ হচ্ছে, কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের কিতাব আর, কুরআনের পূর্বেও আল্লাাহ আরো কিতাব অন্যান্য জাতির মধ্যে নাযিল করেছেন, অন্যান্য নবী প্রেরণ করেছেন, কিন্তু সেই নবীদের আহ্বান না শুনার কারণে সেইসব জাতিকে কত নির্মম ভাবে ধ্বংস করা হয়েছে সেই ইতিহাস গুলো তুলে ধরা হয়েছে, আপনিও যদি আল্লাহর এই হিদায়াতকে গ্রহণ না করেন তবে আপনাকেও সেরকম ভাবেই ধ্বংস করা হবে, এই সাবধান বানী বুঝানোর জন্যই পূর্ববর্তী ইতিহাস গুলো বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও যারা কুরআন অনুযায়ী চলতে চায় তাদেরকে কিভাবে হিদায়াত গ্রহণ করতে হবে, পূর্ববর্তী নবীদের এবং তাদের খাটি অনুসারীদের ইতিহাস দিয়ে শিখানো হয়েছে যে, যারা হিদায়াত গ্রহণ করে তারা কেমন হয়।
সুতরাং, শিক্ষা এবং হিদায়াতের জন্যই ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত জরুরী।
সুতরাং, শিক্ষা এবং হিদায়াতের জন্যই ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত জরুরী।
প্রশ্ন: ৩৩ : কুরআনে কেন আল্লাহ তায়ালা 'আমরা' বাক্যটি ব্যবহার করেছেন, যদিও আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়??
এ ব্যাপারে ডা: জাকির নায়েকের লেকচারটি দেখুন : ক্লিক করুন :
========================
উত্তরঃ মনগড়াভাবে কুরআনের কোন শব্দ বা আয়াতের অর্থ করা যাবে না । ইমাম রাযীন বলেছেন, যে ব্যক্তি তার নিজ মতামত দ্বারা কুরআনের ব্যাপারে কিছু বলে ভুল করল, সে কুফরী করল ।
একদা আবুবকর (রাঃ)-কে একটি অক্ষরের ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, 'যদি কিতাবুল্লাহর একটি অক্ষরের ব্যাপারে এরূপ কথা বলি যেরূপ আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল না, তাহলে কোন্ আসমান আমাকে ছায়া দিবে, কোন যমীন আমাকে বিশ্রামের স্থান দিবে? আমি কোথায় যাবো আর কী করবো ? (বিস্তারিত,তাফসীর কুরতুবী মুকাদ্দামা) ।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ স্বীয় সম্মান-মর্যাদা বুঝানোর জন্য এরূপ বহুবচন শব্দ (নাহনু-আমরা) ব্যবহার করেছেন । সেকারণে 'নবীদের কাহিনী' বইয়ে সংশ্লিষ্ট আয়াতে যেখানে বহুবচনের শব্দ এসেছে সেখানে বহু বচনেরই অর্থ করা হয়েছে । মূলতঃ আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ব বুঝানের জন্যই বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে । যেটা ভাষার অলংকারের মধ্যেও পড়ে । [from Monthly At-Tahreek, june-2010]
===========================================
এ ব্যাপারে ডা: জাকির নায়েকের লেকচার:
QUES: Does Islam believe in several gods because the Qur'an uses the word 'We' when God speaks in the Qur'an?
Answer:
Islam is a strictly monotheistic religion. It believes in and adheres to uncompromising monotheism. It believes that God is one, and unique in His attributes. In the Qur'an, God often refers to Himself using the word 'We'. But this does not mean that Islam believes in the existence of more than one God.
Two types of plural
In several languages, there are two types of plurals, one is a plural of numbers to refer to something that occurs in a quantity of more than one. The other plural is a plural of respect.
a. In the English language,the Queen of England refers to herself as 'We' instead of 'I'. This is known as the 'royal plural'.
b. Rajiv Gandhi, the ex-Prime Minister of India used to say in Hindi "Hum dekhna chahte hain". "We want to see." 'Hum' means 'We' which is again a royal plural in Hindi.
c. Similarly in Arabic, when Allah refers to Himself in the Qur'an, He often uses Arabic word 'Nahnu' meaning 'We'. It does not indicate plural of number but plural of respect.
Tawheed or monotheism is one of the pillars of Islam. The existence and uniqueness of one and only one God is mentioned several times in the Qur'an.For instance in Surah Ikhlas, it says :
"Say He is Allah the One and Only."
[Al-Qur'an 112: 1] —
===========================
এ ব্যাপারে ইউটিউবে আরো অনেক ভিডিও আছে দেখুন : ক্লিক করুন :
প্রশ্ন ৩২ : আমরা ধর্মীয় যে কোন বইতেই শুরুতে লেখক বা সম্পাদক বা প্রকাশক কর্তৃক হামদ সানা দেখতে পাই। অথচ তাফহীমুল কুরআনের কোনো খন্ডেই এটা পাই না।
উত্তর :
সংঘাতিক একখানা ভুল খুজে পেয়েছেন ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
ধর্মীয় যে কোন বই আর কুরআনের তাফসীর এক নয়। কুরআন স্বয়ং যেখানে উপস্থিত , যেখানে তাফসীর লেখা হচ্ছে কুরআন লেখার পরে সেখানে আবার হামদ ও সানার অভাব বোধ করছেন।
কুরআনের শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে। এটা কি যথেষ্ট নয় ?
যাদের কাজই হচ্ছে ভুল খোজা তারা যে কোন কিছু দাড় করিয়েই ভুল খুজতে পারে।
আপনি কয়টি তাফসীর বা কুরআনের অনুবাদ দেখেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ: এর বয়ানুল কুরআনের অনুসরণে মীনা বুক হাউস, আদর্শ পুস্তক বিপনী বিতান, ১৩, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা ১০০০, থেকে নূরানী বাংলা কোরআন শরীফ - প্রকাশিত হয়েছে - এতে উচ্চারণ, অনুবাদ ও প্রয়োাজনীয় টিকা রয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই কিতাবটিতেও প্রকাশক বা সম্পাদক কেউই শুরুতে হামদ বা সানা সংযোজন করেননি।
আপনার দৃষ্টিতে তাদের এ কিতাবটিও ভুল (!!!!)।
সংঘাতিক একখানা ভুল খুজে পেয়েছেন ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
ধর্মীয় যে কোন বই আর কুরআনের তাফসীর এক নয়। কুরআন স্বয়ং যেখানে উপস্থিত , যেখানে তাফসীর লেখা হচ্ছে কুরআন লেখার পরে সেখানে আবার হামদ ও সানার অভাব বোধ করছেন।
কুরআনের শুরু করা হয়েছে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে। এটা কি যথেষ্ট নয় ?
যাদের কাজই হচ্ছে ভুল খোজা তারা যে কোন কিছু দাড় করিয়েই ভুল খুজতে পারে।
আপনি কয়টি তাফসীর বা কুরআনের অনুবাদ দেখেছেন তা আমার জানা নেই। তবে আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ: এর বয়ানুল কুরআনের অনুসরণে মীনা বুক হাউস, আদর্শ পুস্তক বিপনী বিতান, ১৩, বায়তুল মোকাররম, ঢাকা ১০০০, থেকে নূরানী বাংলা কোরআন শরীফ - প্রকাশিত হয়েছে - এতে উচ্চারণ, অনুবাদ ও প্রয়োাজনীয় টিকা রয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় এই কিতাবটিতেও প্রকাশক বা সম্পাদক কেউই শুরুতে হামদ বা সানা সংযোজন করেননি।
আপনার দৃষ্টিতে তাদের এ কিতাবটিও ভুল (!!!!)।
প্রশ্ন ৩১: এশার সালাতের আগে সুন্নত কত রাকাত জানতে চাই
প্রশ্ন : এশার নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত কোনো নামাজ আছে কি?
উত্তর : না। এশার আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। এশার আগে শুধু দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বেন। যিনি এশার নামাজের জন্য মসজিদে যাবেন, তিনি শুধু দুই রাকাত তাহিয়াতুল নামাজ পড়বেন। চার রাকাত সুন্নত সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি।
যাঁরা বাসায় পড়বেন, তাঁরা শুধু এশার নামাজ আদায় করবেন এবং মসজিদে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বেন।
সূত্র
উত্তর : না। এশার আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি। এশার আগে শুধু দুই রাকাত তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বেন। যিনি এশার নামাজের জন্য মসজিদে যাবেন, তিনি শুধু দুই রাকাত তাহিয়াতুল নামাজ পড়বেন। চার রাকাত সুন্নত সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়নি।
যাঁরা বাসায় পড়বেন, তাঁরা শুধু এশার নামাজ আদায় করবেন এবং মসজিদে তাহিয়াতুল মসজিদ পড়বেন।
সূত্র
Subscribe to:
Posts (Atom)
Featured Post
প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ
আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনের ...
-
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ (২-সুরা-বাক্বারা:১২২.)...
-
(Version 1): Zekr Software With Tafhimul Quran : ডাউনলোড করার পর এক্সট্রাক্ট করে নিবেন ইনশাআল্লাহ: 1. Download Zekr Here 2. Instructions...
-
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (০২-বাক্বারা-১৯৯.) তারপর যেখান থে...
-
গলায় মাছের কাঁটা আঁতকে যাওয়া যেমন অস্বস্তিকর ঠিক তেমনই কষ্টকর। তবে কিছু উপায় জানা থাকলে আপনি অল্প সময়ে দূর করতে পারবেন এই কাঁটা। জেনে নিন ত...
-
وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِينَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (৩-আলে-ইমরান:১২১.) (হে নবী!৯৪ মুস...
-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ইসলামী জীবন বিধান, কুরআন, হাদীস, ইতিহাস, ফিকাহ, আধুনিক ইসলামী যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি সংক্রান্ত আপনার যে কোন প...
-
ইমামতির নিয়ম কানুন । ইমামতির জন্য আলাদা কোন নিয়ম কানুন আছে কি ? এই ভিডিওটি দেখুন (ক্লিক করুন) : ইমামতির জন্য আলাদা নিয়ম কান...
-
আসসালামু আলাইকুম । এই এ্যাপে প্রায় সাড়ে সাতাত্তর হাজার করে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী শব্দ রয়েছে। Next - Go to Dictionary বাটনে প্রেস কর...
-
এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের আলোচনা থেকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলি জানা যায়। এ থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, বিবাহে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করবেন ক...
-
ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী: ‘সিনা চাক’ বা বক্ষবিদারণ শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের চিন্তা চলে যায় দেড় হাজার বছর আগে ইতিহাসের একটি বাঁ...