প্রশ্ন-২-বিস্তারিত: ইসলামী আন্দোলন ফরয হয়ে থাকলে তার দলিল কী? যারা ইসলামী আন্দোলনে যোগ দান করবেনা অথবা এর বিরোধিতা করবে তাদের ব্যপারে শরীয়তের হুকুম কী?

ইসলামী আন্দোলন করা ফরজ কেনো?


আল্লাহ বলছেন, ওয়াকিমুস সালাত মানে "নামাজ কায়েম করো" সেই আল্লাহই বলছেন ওয়াকিমুত দ্বিন মানে "দ্বীন-ইসলাম কায়েম করো" এখন আপনি নামাজ কায়েম মানবেন কিন্তু ইসলাম কায়েম মানবেন না কেনো ?? দুইটাইতো সরাসরি আল্লাহর কথা, কোরআনের আয়াত।
ইসলাম কায়েম আল্লাহ ফরজ করে দিয়েছেন। এখন ইসলাম কীভাবে কায়েম করবেন??
আওয়ামীলীগ বিএনপি কি ইসলাম কায়েম করছে বা করবে??? নিশ্চয়ই না । তাহলে কেনো তাদের সাপোর্ট করেন? ইসলামী দল ক্ষমতায় আসা ব্যতীত ইসলাম কায়েম অসম্ভব। তাই ইসলাম কায়েমে ইসলামী দল করা ফরজ।

রাজনীতি অর্থ রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি। আল্লাহর কোরআনে কি রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি নাই ?? বরং কোরআনে ব্যক্তিগত দিক থেকে শুরু করে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সকল নীতি আছে। এই নীতি কার জন্য। যারা আল্লাহ এবং আল্লাহর কোরআনকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য। আপনি কি কোরআন বিশ্বাস করেন ??? যদি করেন তাহলে কেন কোরআনের রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ বিএনপির কুফরী রাজনীতি করেন ??

আপনি কি বিশ্বাস করেন কোরআন সব সমস্যার সমাধান ? তাহলে রাজনীতির সমাধান কোরআন দিতে পারবে না কেনো ? নাকি কোরআন এক্ষেত্রে ব্যর্থ ?? আমাদের রাসূল সাঃ কি রাজনীতি করেন নাই ?? দেশ চালান নাই । আবু বকর রাঃ, উমর রাঃ, ওসমান রাঃ, আলী রাঃ উনারা কি দেশ চালান নাই ?? ইসলাম দিয়ে কেনো দেশ চলতে পারবে না ?? এখন সময় আছে আখিরাতে কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে চাইলে কোরআনের রাজনীতি করুন ।।

=> ইসলামী আন্দোলন প্রত্যেক মুসলমান কেন করবে? পবিত্র কুরান- হাদিসে আলোকে যা জানতে পারলাম তার আলোকে প্রতিটি মুসলমান কেন ইসলামী আন্দোলন করবে তার সার সংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হলো। যা অন্তরে বিশ্বাস রেখে, মুখে স্বীকার করে এবং কার্যে পরিণত করতে হবে।

০১) ইসলামী সংগঠন বা আন্দোলন করা প্রত্যেক মুসলমানকে আল্লাহ তাআলা ফরয করে দিয়েছেন বলে।
০২) মুসলমানের ঈমান বাঁচাতে বা ঈমানের অপরিহার্য দাবী আদায়ে ।
০৩) ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রমাণ করতে।
০৪) সংগঠন না থাকলে ইসলাম সগৌরবে টিকে থাকতে পারে না বলে।
০৫) তাগুত জাহেলিয়াতকে অস্বীকার করে জাহান্নাম থেকে বাচার জন্য।
০৬) ইসলামী সংগঠনবিহীন মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু বলে ।
০৭) সংঘবদ্ধ জীবনযাপন জান্নাতপ্রাপ্তির পূর্বশর্ত বলে।
০৮) আমার বিল মারুফ নাহি আনিল মুনকারের হক আদায় করতে।
০৯) অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বণির্ভর ও দারিদ্রমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।
০৯) অর্থনৈতিক মুক্তি এবং স্বণির্ভর ও দারিদ্রমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে।
১০) সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্টার জন্য।
১১) ইনসাফভিত্তিক ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে।
১২) দেশের স্থায়ী শান্তি ও মানবতার সার্বিক মুক্তি ফিরিয়ে দিতে।
১৩) সংখ্যালঘুদের অধিকার,নারীর অধ্র্কার ও মর্যদা প্রতিষ্টা করতে।
১৪) রাষ্ট্রের স্বাধিনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে।
১৫) সর্বোপরি দ্বীনে শরিয়াতের হক আদায় করতে।
----Jast Hasan


ইসলামী আন্দোলন করা কি জরুরী ? না করলে কি গুনাহ হবে ?


ইসলাম এবং আন্দোলন না বুঝলে ইসলামী আন্দোলনও বুঝা যাবে না ।

ইসলামঃ আল্লাহ প্রদত্ত রাসুল(সা) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী চলার পথ ইসলাম , আর যে ব্যাক্তি ইসলাম মেনে চলে তাকে বলা হয় মুসলিম । মুসলিম শব্দের অর্থ হচ্ছে আত্মসমর্পণ কারী । অর্থাৎ যে ব্যাক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আত্মসমর্পণ করে, মনে প্রানে মেনে নেয় যে, এই জমিন আল্লাহর , এই দুনিয়া আল্লাহর , আমিও আল্লাহর একটি সৃষ্টি এবং একদিন আমাকে ফিরে যেতে হবে তার কাছে, তাকেই মুসলিম বলা হয় ।
আল্লাহ বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
অর্থাৎঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।
মানে ইমানদার হলেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না , আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইমানদারদেরকে বলছেন মুসলিম হতে ।

আন্দোলনঃ
যেকোন দাবী / মতবাদ/ আদর্শ প্রতিষ্ঠা / অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সগ্রাম করাকে আন্দোলন বলা হয় ।

ইসলামী আন্দোলন মানে হচ্ছে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম । আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেনঃ
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ [النحل : 125]
ডাক , তোমার রবের পথের দিকে হিকমত ও উত্তম নসীহতের সাথে। (আন নাহল:১২৫)

কোরআনে বলা হয়েছে:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا (45) وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا [الأحزاب : 45 ، 46]

হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শকরূপে এবং খোদার নির্দেশে তাঁর প্রতি আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَى مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنْفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ وَالْقُرْآنِ وَمَنْ أَوْفَى بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُمْ بِهِ وَذَلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [التوبة : 111]

সন্দেহ নেই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের জান ও মাল বেহেশতের বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছেন, এখন তাদের একমাত্র কাজ হলো আল্লাহর পথে লড়াই করা, সংগ্রাম করা। পরিণামে জীবন দেয়া বা জীবন নেয়া।(সূরা আত তাওবা ১১১)

এর থেকে প্রমাণিত যে ইসলামী আন্দোলন করা শুধু জরুরীই নয় বরং তা ফরজ ।আল্লাহ সরাসরি পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, অবশ্যই করতে হবে ।

আর ফরজ তরক করলে / না মানলে / ইসলামী আন্দোলন ন করলে গুনাহ হওয়া স্বাভাবিক ।

ইসলামী আন্দোলন করতে গেলে যেই বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিতে হয়ঃ
১. মানুষ একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করবে; জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধান মেনে চলবে। আল্লাহর আইনের ভিত্তিতেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক পরিচালিত হবে।
২. মানুষ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদর্শ নেতা রূপে মেনে চলার সুযোগ পাবে।
৩. সৎ ও চরিত্রবান লোকেরা শাসন কর্তৃত্বের পরিচালক হবে এবং দুর্নীতি ও অনিয়মের কোন স্থান থাকবে না।
৪. আদল ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা : কেউ কারো প্রতি কোন ধরনের অন্যায় আচরণ করবে না।
৫. রাষ্ট্র পরিচালিত হবে পরামর্শভিত্তিক এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতে শাসক নির্বাচিত হবে। ক্ষমতাসীনরা স্বৈরাচারী বা স্বেচ্ছাচারী হবেন না। তারা মানুষের কল্যাণে সদাসচেষ্ট থাকবেন।
৬. সমাজ থেকে অপরাধ ও দরিদ্রতা দূর করা হবে উক্ত সমাজের অন্যতম লক্ষ্য।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে, ইসলামের লক্ষ্য হচ্ছে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে শান্তি ও কল্যাণকর সুন্দর একটি সমাজ উপহার দেয়া। তবে কোন দেশের অধিকাংশ মানুষ উক্ত আদর্শের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন না করলে জোরপূর্বক ইসলামী আদর্শ চাপিয়ে দেয়া আল্লাহর বিধান নয়। অনেক নবী ও রাসূল আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন সত্য কিন্তু অধিকাংশ মানুষ সেই দাওয়াত কবুল না করায় আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে পারেননি। এক্ষেত্রে হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর আল্লাহর পথে মানুষদেরকে আহবান জানানোর পর মাত্র চল্লিশ কিংবা মতান্তরে ৮০ জন মানুষ তাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন।

আমার মনে হয় বর্তমানে পৃথিবীর যেসকল দেশে ইসলামী আন্দোলনের কার্যক্রম চলছে তাদের আসল বক্তব্য সাধারণ মানুষের কাছে পুরোপুরি সুস্পষ্ট নয়। তাই তারা সহজেই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এর একটি উদাহরণ হচ্ছে ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলে মনে করা হয় উক্ত সমাজের মূল কাজ হচ্ছে চোরের হাত কাটা। অথচ ইসলামী সমাজব্যবস্থার মূল টার্গেট চোরের হাত কাটা নয়। মূল টার্গেট হচ্ছে দরিদ্রতা বিমোচন করা এবং অপরাধমুক্ত সমাজ উপহার দেয়া। দরিদ্রতা বিমোচন করার পর কেউ অভাবের পরিবর্তে স্বভাবের কারণে চুরি করলেই ইসলামী দণ্ডবিধি প্রযোজ্য হবে। এই কারণেই হজরত উমর ফারুক (রা) এর সময়ে একজন ব্যক্তি অভাবের কারণে চুরি করলে হজরত উমর তার হাত কাটার নির্দেশের পরিবর্তে নিজেকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিজেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুর না খেয়ে মারা গেলে আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।’

আসুন আমরা যারা নামায পড়ি , আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলার চেষ্টা করি , আজ থেকে / এখন থেকেই ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হই । আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুন। আমিন।

প্রশ্ন-১ : অজুর মধ্যে মাথা মাসেহ করা কি জরুরী ? মাথা মাসেহ করলে বা না করলে সুবিধা অসুবিধা সমূহ কি? কি?


ওজু করার সঠিক নিয়ম

অযুর মধ্যে মাথা মাসেহ করা জরুরী। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :

অযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা।আর শরীয়াতের পরিভাষায় পরিষ্কার পানি দ্বারা এক বিশেষ পদ্ধতিতে মুখমন্ডল, হাত ও পা ধৌত করা এবং মাথা মাসেহ্ করাকে অযু বলে।
আমরা যারা নামায পড়ি তারা সবাই ওজু করি । কিন্তু আমাদের ওজু কি মুহাম্মদ ( সাঃ ) এর ওজুর মত ????? বিশেষ করে আমাদের অনেকেরই নাকে পানি দেয়া , কুলি করা ও মাথা মাসাহ করা সুন্নাত সম্মত হয় না । আসুন ওজুর ফরয ও সুন্নতগুলু জেনে নেই।
পবিত্র কুরআনে সুরা মায়েদাতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ
অর্থ : “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখ মন্ডল ও দুই হাত কনুই সহ ধৌত করবে, এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করবে, আর দুই পা গোড়ালীসহ ধৌত করবে।” [সূরা মায়িদাহঃ আয়াত-৬]
ওজুর ফরয চারটি।
(১) মুখ মন্ডল ধৌত করা।
(২) দুই হাত কনুই সহ ধৌত করা।
(৩) মাথার চার ভাগের এক ভাগ মাসেহ করা এবং
(৪) দুই পা টাখনু সহ ধৌত করা।
এছাড়াও আমরা যে মিসওয়াক করি, কব্জি পর্যন্ত হাত ধুই,গড়গড়া করি বা নাকে পানি দেই ইত্যাদি করি, এগুলো সুন্নত। তাই পরিপূর্ণ ওজু করতে গেলে সময়ের এবং পানির অভাব না থাকলে, অবশ্যই এগুলোও পালন করতে হবে এবং তিনবার করে।
ওজুর পদ্ধতি-
বিসমিল্লাহ সহকারে অযুর নিয়ত করুন।
(১) নিয়তঃ আমি পবিত্রতা অর্জন করা বা ইবাদত করা অথবা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য অজু করছি।
(২) প্রথমে উভয় হাতের কবজি পর্যন্ত ধোয়াঃ ডান হাতে পানি নিয়ে ডান হাতের কবজি তিনবার ধৌত করবে। এরপর ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতের কবজির উপর পানি ফেলে তিন বার ধৌত করবে।
লক্ষণীয়ঃ হাতে নাপাকী থাকলে যে কোন উপায়ে প্রথমে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
(৩) মিসওয়াক করাঃ কুলি করার পূর্বে মিসওয়াক করা সুন্নত। মিসওয়াক অজু শুরু করার পূর্বেও করা যায়। মিসওয়াক না থাকলে কিংবা মুখে ওজর থাকলে বা দাঁত না থাকলে আঙ্গুল দিয়ে হলেও ঘষে নিবে।
(৪) কুলি করাঃ ডান হাতে পানি নিয়ে কুলি করবে। রোজাদার না হলে গড়গড়া করা সুন্নত। তিনবার কুলিকরা সুন্নত। তিনবারের জন্য আলাদা আলাদা তিনবার পানি নিতে হবে।
(৫) নাকে পানি দেওয়াঃ ডান হাতে নাকে পানি দিবে এবং বাম হাত দ্বারা নাক ঝাড়বে। বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে নাক পরিস্কার করবে। তাছাড়া কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়েও নাক পরিস্কার করা যায়। তিনবার নাকে পানি দেওয়া সুন্নত। রোজাদার না হলে নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানি পৌঁছানো উত্তম। নাকে অলংকার এবং হাতে আংটি থাকলে তা নারা—চাড়া করে নিচে পানি পৌঁছে দেওয়া ওয়াজিব।
(৬) মুখমন্ডল ধোয়াঃ উভয় হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে। অর্থাৎ, কপালের চুলের গোড়া থেকে থুতনীর নিচ এবং উভয় কানের লতি পর্যন্ত এমনভাবে পানি পৌঁছানো, যাতে উক্ত অঙ্গ থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা নিচে গড়িয়ে পড়ে। একবার ধোয়া, তিনবার ফরয, তিন বার ধোয়া সুন্নাত।
(৭) দাড়ি ও গোঁফ : দাড়ি ও গোঁফ খুব ঘন হলে শুধু ধোয়া ফরয। চামড়ায় পানি পৌঁছানো ফরয নয়। দাড়ির ভেতরে আঙ্গুল চালিয়ে খিলাল করে নিবে।
(৮) উভয় হাত কনুই উভয় হাত কনুই সহ ধৌত করবে। একবার ধোয়া ফরয, তিনবার ধোয়া সুন্নাত। হাত ধোয়ার সময় আঙ্গুল খিলাল করবে, যাতে আঙ্গুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে যায়। অর্থাৎ এক হাতের আঙ্গুল অপর হাতের আঙ্গুল সমূহের মধ্যে প্রবেশ করাবে। বিঃদ্রঃ কারো আঙ্গুলের মধ্যে যদি ফাঁক না থাকে এবং আঙ্গুলের সাথে অপর আঙ্গুল এমনভাবে লেগে থাকে যার কারণে আঙ্গুলের সাথে পানি না পৌঁছার আশঙ্কা থেকে যায়, এ অবস্থায় খিলাল করা ওয়াজিব।
(৯) মাথা মাসেহ করাঃ মাথার চার ভাগের একভাগ মাসেহ করা ফরয, সমস্ত মাথা মাসেহ করা সুন্নাত।
(১০) মাথা মাসেহের নিয়মঃ বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুলদ্বয় ব্যতীত অবশিষ্ট উভয় হাতের আঙ্গুলের পেট মাথার মধ্যে ভাগে সামনে হতে পিছন দিকে টেনে নিয়ে যাবে। অতঃপর দুই হাতের তালু মাথার দুই পাশে রেখে পেছন দিক থেকে সামনে টেনে নিয়ে আসবে।
(১১) কান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের বৃদ্ধ আঙ্গুলের পেট দ্বারা দুই কানের পেছনের অংশ মাসেহ করা। এরপর কনিষ্ট আঙ্গুলের অগ্রভাগ দ্বারা কানের ছিদ্র এবং তর্জনী আঙ্গুলের সাহায্য কানের পাতার ভেতরে অংশ মাসেহ করা সুন্নাত।
(১২) গর্দান মাসেহ করাঃ উভয় হাতের তিন আঙ্গুলের পিঠ দ্বারা গর্দান মাসেহ করবে। গলা মাসেহ করবে না।
(১৩) গোড়ালী ও টাখনুসহ পা ধোয়াঃ ডান হাত দিয়ে পায়ের অগ্রভাগে পানি ঢালা সুন্নাত। বাম হাত দিয়ে পায়ের সামনে পেছনে এবং তলদেশ মর্দন করবে। পা দিয়ে ঘষে এবং বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল দিয়ে পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করে নিবে।
(১৪) অজুর শেষে কালিমায়ে শাহাদাত পড়া মুস্তাহাব।
ওজু শেষ হবার পর নিচের দু’আ পড়তে হবে-
”আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহু-লা-শারীকা লাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আ’বদুহু-ওয়া রাসূলুহু।”
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন মা’বুদ নাই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর বান্দাহ ও রাসূল।
অজুর ফরজ সমুহ:-
(১) সমস্ত মুখমন্ডল একবার ধোয়া।
(২) কনুই সহ উভয় হাত একবার ধোয়া।
(৩) মাথা মসেহ করা।
(৪) টাখনু সহ উভয় পা একবার ধোয়া।
বি:দ্র:-কোন ফরজ বাদ পড়লে অজু হবেনা।কিন্তু সুন্নত বাদ পড়লে অজু হয়ে যাবে তবে সুন্নতের সওয়াব থেকে মাহরুম হবে।
অজুর সুন্নত সমুহ:-
(১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে অজু শুরু করা।
(২) কবজি সহ উভয় হাত তিন বার ধোয়া।
(৩) কুলি করা।
(৪) নাকে পানি দেওয়া।
(৫) মেসওয়াক করা।
(৬) সমস- মাথা একবার মসেহ করা।
(৭) প্রত্যেক অঙ্গ তিন বার করে ধোয়া।
(৮) কান মসেহ করা।
(৯) হাতের আঙ্গুল সমুহ খেলাল করা।
(১০) পায়ের আঙ্গূল সমুহ খেলাল করা।
(১১) ডান দিক থেকে অজু শুরু করা।
(১২) ক্বোরানে বর্নিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
(১৩) গর্দান মসেহ করা।
(১৪) অজু শুরুতে মেসওয়াক করা।
(১৫) দুই কান মসেহ করা।
(১৬) এক অঙ্গের পানি শুকানোর পুর্বেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
বি:দ্র: পুরুষের ঘন দাড়ি থাকলে মুখমন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতে তিন বার দাড়ি খিলাল করতে হবে।
অজুর মাকরূহ সমুহ।
(১) অযুর সুন্নত সমুহের যে কোন সুন্নত ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিলে অযু মাকরূহ হবে।
(২) প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা।
(৩) মুখমন্ডল ধৌত করার সময় সজোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা।
(৪) বিনা ওজরে বাম হাত দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়ার এবং ডান হাতে নাক পরিস্কার করা।
(৫) অপবিত্র স্থানে অযু করা।
(৬) মসজিদের মধ্যে অযু করা,তবে কোন পাত্রের মধ্যে অযু করা জায়েয।
(৭) কফ্‌কাশী বা নাকের ময়লা অযুর পানির মধ্যে নিক্ষেপ করা।
(৮) বিনা কারনে অন্যের সাহায্য নেওয়া।
অযুর প্রকারবেদঃ- অযু পাঁচ প্রকার ফরজ,ওয়াজিব,সুন্নত,মাকরূহ ও হারাম ওজু।
(১) সকল প্রকার নামায পড়া ও কোরআন শরীফ তেলয়াতের জন্য এবং সেজদার তেলয়াতের জন্য অজু করা ফরজ।
(২) কাবা শরীফ তওয়াফ করার জন্য ওয়াজিব।
(৩) মোস্তাহাব বা সুন্নত ওজু হলো যা শরীর পাক রাখার জন্য করা হয় অর্থাৎ সব সময় ওজু রাখা সুন্নত।
(৪) অযু করে কোন ইবাদত না করে সেই অযু থাকা অবস্থায় নতুন অযু করা মাকরূহ।
(৫) হারাম অযু হলো কারো মালিকাধীন পানি জোরপুর্বক নিয়ে কিংবা ইয়াতীমের সংরক্ষিত পানি দিয়ে অযু করা হারাম।
অযু ভাঙ্গার কারন সমুহঃ-
(১) প্রসাব-পায়খানা করলে।
(২) পায়খানার রাস্তা দিয়ে বায়ু নির্গত হলে।
(৩) শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে।
(৪) নিদ্রামগ্ন হলে।
(৫) মুখ ভরে বুমি করলে।
(৬) নামাযের মধ্যে সশব্দে হাসলে।
(৭) পাগল বা মাতাল হলে।
(৮) কারো নাক দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হলে।
(৯) যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত বের হয় এবং থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমান বেশী বা সমান হয় তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
(১০) স্ত্রীকে কাম ভাব সহকারে স্পর্শ করলে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(১১) লজ্জা স্থানে বিনা আবরনে হাত পড়লে ওজু ভঙ্গ হয়ে যাবে।
মাসয়ালা
(১) কোন কিছুর আঘাতে বা মেসওয়াকের কারনে থুথুর সাথে রক্ত দেখা গেলে ওজূ যাবেনা।যতক্ষন না রক্ত প্রবাহিত হয়ে মুখ থেকে বের হয়ে আসে।
(২) স্ত্রী-স্বামীকে কিংবা স্বামী-স্ত্রীকে স্বাভাবিক ভাবে স্পর্শ করলে(কাম ভাব ব্যতিত)ওজু নষ্ট হয় না।
(৩) লজ্জা স্থানে কোন কাপড়ের উপর দিয়ে হাত পড়লে বা নজর পড়লে ওজু নষ্ট হয় না।
(৪) কারো ওজু ছিল হঠাৎ সন্দেহ হলো যে,ওজু আছে কি নাই।এই অবস্থায় ওজু আছে বলে ধরে নিতে হবে।তবে নতুন ওজু করে নেওয়াই উত্তম।
(৫) কারো ওজু ছিলনা পরে ওজু করেছে কিনা তা সন্দেহ হলে এই অবস্থায় ওজু করে নিতে হবে।
তায়াম্মুমঃ- “অতঃপর পানি না পাও তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস-দ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল”।--মায়িদা-৬।
সংখিপ্ত ভাবে অজু করার বর্ননা:-
বিসমিল্লাহ বলে অজু আরম্ভ করিতে হবে।প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন- তিনবার ধুতে হবে।তারপর মুখে পানি দিয়ে কুলি করতে হবে এবং মেছওয়াক করতে হবে।রোজা না থাকলে গরগরার সহিত কুলি করতে হবে।তারপর তিন বার নাকে পানি দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে অর্থাৎ বাম হাতের আঙ্গুলি দিয়ে নাক পরিস্কার করে নিতে হবে। তারপর সম্পুর্ন মুখ মন্ডল তিনবার ধুতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুইসহ তিনবার করে ধুতে হবে। তারপর সমস- মাথা একবার মসেহ করতে হবে। তারপর তারপর দুই হাতের পিঠ দিয়ে ঘার মসেহ করতে হবে।সবশেষে প্রথমে ডান পা পরে বাম পা টাকনু সহ তিনবার করে ধুতে হবে।
মাসয়ালা:-
(১) মুখমন্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন- ধোয়া হয়।দুই হাতের সাহায্যে ভালোভাবে মুখমন্ডল ধুতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে যেন দুই ভ্রুর পশমের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌছে।যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয় যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোটের কিছু অংশ শুকনা থাকে তবে অজু হবেনা।
(২) পুরুষগন মুখ মন্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের আঙ্গুলি দিয়ে দাড়ি খেলাল করবে তবে তিনবারের বেশী খেলাল করবেনা।
(৩) অজুর মধ্যে থুতুনি ধোয়া ফরজ।থুতুনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।অর্থাৎ ইহা মুখমন্ডল ধোয়ার আওতায় পরে।
(৪) মুখ বন্ধ করলে ঠোটের যে অংশ স্বাভাবিক ভাবে দেখা যায় সে অংশ ধোয়া ফরজ।
(৫) হাতে আংটি থাকলে,মেয়েদের চুড়ি থাকলে এর নীচে পারি পৌছাতে হবে।নাকের নথের নীচের চামড়াতেও পানি পৌছাতে হবে।
(৬) নখের ভিতর আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারনে যদি নখের ভিতরে পানি না যায় তবে আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি পৌছাতে হবে।
(৭) এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরী করা ঠিক হবেনা যাতে ইতিমধ্যে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়।
(৮) প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় ভাল করে ঘষে মেজে ধোয়া জরুরী।
(৯) হাতের পায়ের নখে পালিশ থাকলে তা প্রথমে তুলে ফেলে ওজু করতে হবে।
(১০) ওজু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে তাহলে সেখানে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে।শুধু ভিজা হাতে মুছলে হবে না।
(১১) ওজু করার সময় দুনিয়ার কথাবার্তা বলা,নাপাক স'ানে বসে ওজু করা মাকরুহ।

(মূল ব্লগ লিংক

১-রাজাবলী, ৬: ১, ১ রাজাবলী, ৮:২৯-৩০

শলোমনের মন্দির নির্মাণ
 
1মিসর দেশ হইতে ইস্রায়েল-সন্তানদের বাহির হইয়া আসিবার পর চারি শত আশি বৎসরে, ইস্রায়েলের উপরে শলোমনের রাজত্বের চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে অর্থাৎ দ্বিতীয় মাসে শলোমন সদাপ্রভুর উদ্দেশে গৃহ নির্মাণ করিতে আরম্ভ করিলেন। 2শলোমন রাজা সদাপ্রভুর উদ্দেশে যে গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা দৈর্ঘ্যে ষাট হস্ত, প্রস্থে কুড়ি, ও উচ্চতায় ত্রিশ হস্ত। 3আর সেই গৃহের মন্দিরের সম্মুখে একবারান্দা ছিল, তাহা গৃহের প্রস্থানুসারে কুড়ি হস্ত দীর্ঘ, ও গৃহের সম্মুখে দশ হস্ত প্রস্থ। 4আর গৃহের নিমিত্ত তিনি জালবদ্ধ বাতায়ন প্রস্তুত করিলেন। 5আর তিনি গৃহের দেওয়ালের গাত্রে চারিদিকে, মন্দিরের ও অন্তর্গৃহের দেওয়ালের গাত্রে চারিদিকে, থাক করিলেন; এবং চারিদিকে কুঠরি নির্মাণ করিলেন। 6তাহার নিচের থাক পাঁচ হস্ত প্রস্থ, ও মধ্যের থাক ছয় হস্ত প্রস্থ, এবং তৃতীয় থাক সাত হস্ত প্রস্থ; কেননা কড়িকাষ্ঠ যেন দেওয়ালের মধ্যে বদ্ধ না হয়, এই জন্য তিনি গৃহের চারিদিকে দেওয়ালের বহির্ভাগ সোপানাকার করিলেন। 7আর গৃহের নির্মাণকালে প্রস্তরাকরে প্রস্তুত প্রস্তর সকল দ্বারা তাহা নির্মিত হইল; নির্মাণকালে গৃহের মধ্যে হাতুড়ি, বাটালি বা আর কোন লৌহাস্ত্রের শব্দ শুনা গেল না। 8মধ্যের থাকের দ্বার গৃহের দক্ষিণদিকে ছিল, এবং লোকে পেঁচাল সিঁড়ি দিয়া মধ্যতলাতে, ও মধ্যতলা হইতে তৃতীয় তলাতে উঠিত। 9এইরূপে তিনি গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন, এবং এরসকাষ্ঠের কড়ি ও সারি সারি [ফলক] দ্বারা গৃহ আচ্ছাদন করিলেন। 10আর গৃহের সর্বগাত্রে পাঁচ পাঁচ হস্ত উচ্চ কুঠরির থাক করিলেন, তাহা এরসকাষ্ঠ দ্বারা গৃহের সহিত সংযুক্ত ছিল।
11পরে শলোমনের নিকটে সদাপ্রভুর এই বাক্য উপস্থিত হইল, 12তুমি এই গৃহ নির্মাণ করিতেছ; ভাল, যদি আমার সমস্ত বিধি-পথে চল, আমার শাসন সকল পালন কর, ও আমার সমস্ত আজ্ঞা গ্রহণ করিয়া তদনুসারে চল, তবে আমি তোমার পিতা দায়ূদকে যাহা বলিয়াছি, আমার সেই বাক্য তোমার পক্ষে সফল করিব। 13আর আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে বাস করিব, আপন প্রজা ইস্রায়েলকে ত্যাগ করিব না।
14এইরূপে শলোমন গৃহ নির্মাণ করিলেন, তাহা সমাপ্ত করিলেন। 15আর তিনি ভিতরে গৃহের দেওয়াল সকলের গাত্রে এরসকাষ্ঠের তক্তা দিলেন; তিনি ভিতরে গৃহের মেঝে অবধি দেওয়ালের ছাদ পর্যন্ত ঐ কাষ্ঠ দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং গৃহের মেঝে দেবদারুকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন। 16আর বিংশতি হস্ত পরিমিত গৃহের যে পশ্চাদ্ভাগ, তাহা মেঝে অবধি দেওয়ালের ছাদ পর্যন্ত এরসকাষ্ঠের তক্তা দ্বারা আচ্ছাদন করিলেন, এবং ভিতরে অন্তর্গৃহের অর্থাৎ মহাপবিত্র স্থানের জন্য তাহা প্রস্তুত করিলেন। 17তাহাতে গৃহ, অর্থাৎ অগ্রস্থিত মন্দির চল্লিশ হস্ত দীর্ঘ হইল। 18আর গৃহমধ্যে এরসকাষ্ঠে বার্তাকী ও বিকসিত পুষ্প ক্ষোদা হইল; সকলই এরসকাষ্ঠময় হইল, কিছুমাত্র প্রস্তর দৃষ্ট হইল না। 19আর ঈশ্বরের নিয়ম-সিন্দুক স্থাপনার্থে গৃহের ভিতরে তিনি এক অন্তর্গৃহ প্রস্তুত করিলেন। 20তিনি অন্তর্গৃহ ভিতরে বিংশতি হস্ত দীর্ঘ ও বিংশতি হস্ত প্রস্থ ও বিংশতি হস্ত উচ্চ করিয়া নির্মল স্বর্ণে মুড়াইলেন, এবং বেদি এরসকাষ্ঠে মুড়াইলেন। 21শলোমন নির্মল স্বর্ণ দ্বারা গৃহের ভিতরের ভাগ মুড়াইলেন, এবং অন্তর্গৃহের সম্মুখে স্বর্ণশৃঙ্খল রাখিলেন, আর অন্তর্গৃহ স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। 22তিনি সমস্ত গৃহ স্বর্ণে মুড়াইলেন, যে পর্যন্ত সমুদয় গৃহ সাঙ্গ না হইল, এবং অন্তর্গৃহের নিকটস্থ সমস্ত বেদিটি স্বর্ণে মুড়াইলেন।
23আর তিনি অন্তর্গৃহের মধ্যে দশ দশ হস্ত উচ্চ জলপাইকাষ্ঠের দুই করূব নির্মাণ করিলেন। 24এক করূবের এক পক্ষ পাঁচ হস্ত, ও অন্য পক্ষ পাঁচ হস্ত ছিল; এক পক্ষের প্রান্তভাগ হইতে অন্য পক্ষের প্রান্তভাগ পর্যন্ত দশ হস্ত হইল। 25আর দ্বিতীয় করূবও দশ হস্ত ছিল; দুই করূবের সম পরিমাণ ও সম আকার ছিল। 26প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই করূবই দশ দশ হস্ত উচ্চ ছিল। 27পরে তিনি সেই দুই করূবকে ভিতরের গৃহে স্থাপন করিলেন, এবং করূবদের পক্ষ এমন প্রসারিত হইল যে, একটির পক্ষ এক দেওয়াল, অন্যটির পক্ষ অন্য দেওয়াল স্পর্শ করিল, এবং তাহাদের পক্ষ গৃহমধ্যে পরস্পর স্পর্শ করিল। 28পরে তিনি করূব দুইটিকে স্বর্ণে মুড়াইলেন। 29আর করূবের, খর্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের মূর্তিতে গৃহের সমস্ত দেওয়ালের গাত্র ভিতরে বাহিরে চারিদিকে ক্ষোদিত করিলেন; 30এবং গৃহের মেঝে ভিতরে বাহিরে স্বর্ণে মুড়াইলেন। 31আর তিনি অন্তর্গৃহের প্রবেশ-দ্বারে জলপাইকাষ্ঠের কবাট নির্মাণ করিলেন, এবং কপালি ও বাজু [দেওয়ালের] পঞ্চমাংশ হইল। 32ঐ জলপাইকাষ্ঠময় দুই কবাটে করূবের, খর্জুর বৃক্ষের ও বিকসিত পুষ্পের আকৃতি ক্ষোদিত করিয়া স্বর্ণ দ্বারা তাহা মুড়াইলেন; আর করূব ও খর্জুর বৃক্ষের উপরে স্বর্ণের পাত করিয়া দিলেন। 33তদ্রূপ তিনি মন্দিরের দ্বারের নিমিত্ত [দেওয়ালের] চতুর্থাংশে জলপাইকাষ্ঠের চৌকাঠ করিলেন। 34আর দেবদারুকাষ্ঠের দুই কবাট নির্মাণ করিলেন, এক কবাটের দুই বাইল যেমন কব্‌জাতে খেলিত, অন্য কবাটের দুই বাইলও তদ্রূপ কব্‌জাতে খেলিত। 35আর তিনি তাহার উপরে করূব, খর্জুর বৃক্ষ ও বিকসিত পুষ্প ক্ষুদিয়া সেই ক্ষোদিত কর্মসুদ্ধ তাহা স্বর্ণ দ্বারা মুড়াইলেন। 36আর তিনি তিন পংক্তি তক্ষিত প্রস্তর ও এক পংক্তি এরসকাষ্ঠের কড়ি দ্বারা ভিতর প্রাঙ্গণ নির্মাণ করিলেন। 37চতুর্থ বৎসরের সিব মাসে সদাপ্রভুর গৃহের ভিত্তিমূল স্থাপিত হয়। 38আর একাদশ বৎসরের বূল মাসে, অর্থাৎ অষ্টম মাসে নিরূপিত সমস্ত আকারানুসারে সর্বাংশে গৃহের নির্মাণ সমাপ্ত হয়; তিনি ঐ গৃহের নির্মাণে সাত বৎসর ব্যাপৃত ছিলেন।
 
 ১ রাজাবলী, ৮:২৯-৩০ 
 
 29যে স্থানের বিষয়ে তুমি বলিয়াছ, ‘আমার নাম সেই স্থানে থাকিবে’, সেই স্থানের অর্থাৎ এই গৃহের প্রতি তোমার চক্ষু দিবারাত্র উন্মীলিত থাকুক, এবং এই স্থানের অভিমুখে তোমার দাস যে প্রার্থনা করে, তাহা শুনিও। 30আর তোমার দাস ও তোমার লোক ইস্রায়েল যখন এই স্থানের অভিমুখে প্রার্থনা করিবে, তখন তাহাদের বিনতিতে কর্ণপাত করিও; তোমার নিবাস-স্থান স্বর্গে তাহা শুনিও, এবং শুনিয়া ক্ষমা করিও।

১ম সামুয়েল ১৭ ও ১৮ অধ্যায়

১৭ অধ্যায় : 

দায়ূদ গলিয়াৎ বীরকে বধ করেন
 
1পরে পলেষ্টীয়েরা যুদ্ধ করিবার জন্য সৈন্যসামন্ত সংগ্রহ করিয়া যিহূদার অধিকারস্থ সোখোতে একত্র হইল, এবং সোখোর ও অসেকার মধ্যে এফস্‌দম্মীমে শিবির স্থাপন করিল। 2আর শৌল ও ইস্রায়েল লোকেরা একত্র হইয়া এলা তলভূমিতে শিবির স্থাপন করিয়া পলেষ্টীয়দের প্রতিকূলে সৈন্য রচনা করিলেন। 3এইরূপে পলেষ্টীয়েরা এক দিকে এক পর্বতে, ও ইস্রায়েল অন্য দিকে অন্য পর্বতে দাঁড়াইল; উভয়ের মধ্যে একটি উপত্যকা ছিল।
4পরে গাৎ-নিবাসী এক বীর পলেষ্টীয়দের শিবির হইতে বাহির হইল, তাহার নাম গলিয়াৎ, সে সাড়ে ছয় হস্ত দীর্ঘ। 5তাহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ছিল, এবং সে আঁইসের মত বর্মে সজ্জিত ছিল; সেই বর্ম পিত্তলময়, তাহার পরিমাণ পাঁচ সহস্র শেকল। 6আর তাহার পা পিত্তলের পত্রে আবৃত, ও তাহার স্কন্ধে পিত্তলের শল্য ছিল। 7তাহার বর্শার দণ্ড তন্তুবায়ের নরাজের সমান, ও বর্শার ফলা ছয়শত শেকল লৌহময় ছিল, এবং তাহার ঢালী তাহার অগ্রে অগ্রে চলিত। 8সে দাঁড়াইয়া ইস্রায়েলের সৈন্যশ্রেণীকে লক্ষ্য করিয়া চেঁচাইয়া বলিল, তোমরা কেন যুদ্ধার্থে সৈন্য রচনা করিতে বাহির হইয়া আসিয়াছ? আমি কি পলেষ্টীয় নহি, আর তোমরা কি শৌলের দাস নহ? তোমরা আপনাদের জন্য একজনকে মনোনীত কর; সে আমার নিকটে নামিয়া আইসুক। 9সে যদি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া জয়ী হয়, আমাকে বধ করে, তবে আমরা তোমাদের দাস হইব; কিন্তু আমি যদি তাহাকে পরাজিত করিয়া বধ করিতে পারি, তবে তোমরা আমাদের দাস হইবে, আমাদের দাস্যকর্ম করিবে। 10সেই পলেষ্টীয় আরও কহিল, অদ্য আমি ইস্রায়েলের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছি; তোমরা একজনকে দেও, আমরা পরস্পর যুদ্ধ করি। 11তখন শৌল ও সমস্ত ইস্রায়েল সেই পলেষ্টীয়ের এই সকল কথা শুনিয়া হতাশ ও অতিশয় ভীত হইলেন।
12দায়ূদ বৈৎলেহম-যিহূদা-নিবাসী সেই ইফ্রাথীয় পুরুষের পুত্র, যাঁহার নাম যিশয়; সেই ব্যক্তির আটটি পুত্র, আর শৌলের সময়ে তিনি বৃদ্ধ, মনুষ্যদের মধ্যে গতবয়স্ক হইয়াছিলেন। 13সেই যিশয়ের বড় তিন পুত্র শৌলের পশ্চাতে যুদ্ধে গমন করিয়াছিলেন। যুদ্ধে গত তাঁহার তিন পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম ইলীয়াব; দ্বিতীয়ের নাম অবীনাদব; আর তৃতীয়ের নাম শম্ম। 14দায়ূদ কনিষ্ঠ ছিলেন; আর সেই বড় তিন জন শৌলের অনুগামী হইয়াছিলেন। 15কিন্তু দায়ূদ শৌলের নিকট হইতে বৈৎলেহমে আপন পিতার মেষ চরাইবার জন্য যাতায়াত করিতেন। 16আর সেই পলেষ্টীয় চল্লিশ দিন পর্যন্ত প্রাতঃকালে ও সন্ধ্যাকালে নিকটে আসিয়া আপনাকে দেখাইত।
17আর যিশয় আপন পুত্র দায়ূদকে কহিলেন, তুমি আপন ভ্রাতাদের জন্য এই এক ঐফা ভাজা শস্য ও দশখানি রুটি লইয়া শিবিরে ভ্রাতাদের কাছে দৌড়াইয়া যাও। 18আর এই দশ তাল পনীর তাহাদের সহস্র্রপতির নিকটে লইয়া যাও; এবং তোমার ভ্রাতারা কেমন আছে, দেখিয়া আইস, তাহাদের হইতে কোন চিহ্ন আনিও। 19শৌল ও তাহারা এবং সমস্ত ইস্রায়েল এলা তলভূমিতে আছে, পলেষ্টীয়দের সহিত যুদ্ধ করিতেছে।
20পরে দায়ূদ প্রত্যুষে উঠিয়া মেষগুলিকে একজন রক্ষকের হস্তে সমর্পণ করিলেন, এবং যিশয়ের আজ্ঞানুসারে ঐ সকল দ্রব্য লইয়া গমন করিলেন। তিনি যে সময়ে শকটমণ্ডলের নিকটে উপস্থিত হইলেন, সেই সময়ে সৈন্যগণ যুদ্ধে যাইবার জন্য বাহির হইতেছিল, এবং সংগ্রামের জন্য সিংহনাদ করিতেছিল। 21পরে ইস্রায়েল এবং পলেষ্টীয়েরা পরস্পর সম্মুখাসম্মুুখি হইয়া সৈন্য রচনা করিল। 22তখন দায়ূদ দ্রব্যরক্ষকের হস্তে আপনার দ্রব্য সকল রাখিয়া সৈন্যশ্রেণীর মধ্যে দৌড়াইয়া গিয়া আপন ভ্রাতৃগণের মঙ্গল জিজ্ঞাসা করিলেন। 23তিনি তাঁহাদের সহিত কথা কহিতেছেন, ইতিমধ্যে দেখ, গাৎ-নিবাসী পলেষ্টীয় গলিয়াৎ নামক সেই বীর পলেষ্টীয়দের সৈন্যশ্রেণী হইতে উঠিয়া আসিয়া পূর্বের মত কথা কহিল; আর দায়ূদ তাহা শুনিলেন। 24কিন্তু ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেই ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহার সম্মুখ হইতে পলায়ন করিল, তাহারা অতিশয় ভীত হইয়াছিল। 25আর ইস্রায়েল লোকেরা পরস্পর কহিল, এই যে ব্যক্তি উঠিয়া আসিল, ইহাকে তোমরা দেখিতেছ ত? এ ত ইস্রায়েলকে টিট্‌কারি দিতে আসিয়াছে। ইহাকে যে বধ করিবে, রাজা তাহাকে প্রচুর ধনে ধনবান করিবেন, ও তাহাকে আপন কন্যা দিবেন, এবং ইস্রায়েলের মধ্যে তাহার পিতৃকুলকে নিষ্কর করিবেন। 26তখন দায়ূদ, নিকটে যে লোকেরা দাঁড়াইয়াছিল, তাঁহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, এই পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া যে ব্যক্তি ইস্রায়েলের কলঙ্ক খণ্ডন করিবে, তাহার প্রতি কি করা যাইবে? এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয়টা কে যে, জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিতেছে? 27তাহাতে লোকেরা এই প্রকারে তাঁহাকে উত্তর করিল, উহাকে যে বধ করিবে, সে অমুক পুরস্কার পাইবে।
28সেই লোকদের সহিত তাঁহার কথোপকথন কালে তাঁহার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা ইলীয়াব সকলই শুনিলেন; তাই ইলীয়াব দায়ূদের উপরে ক্রোধে প্রজ্বলিত হইয়া কহিলেন, তুই কেন নামিয়া আসিলি? প্রান্তরের মধ্যে সেই মেষকয়টি কার কাছে রাখিয়া আসিলি? তোর অহংকার ও তোর মনের দুষ্টতা আমি জানি; তুই যুদ্ধ দেখিতে আসিয়াছিস। 29দায়ূদ কহিলেন, আমি কি করিলাম? এ কি বাক্যমাত্র নহে? 30পরে তিনি তাঁহার নিকট হইতে আর একজনের দিকে ফিরিয়া সেইরূপ কথা কহিলেন; তাহাতে লোকেরা তাঁহাকে পূর্বের মত উত্তর দিল। 31তখন দায়ূদ যাহা যাহা বলিয়াছিলেন, তাহা রাষ্ট্র হইয়া পড়িল, ও শৌলের কাছে তাহার সংবাদ উপস্থিত হইল; তাহাতে তিনি আপনার নিকটে তাঁহাকে ডাকিয়া আনাইলেন। 32তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, উহার জন্য কাহারও অন্তঃকরণ হতাশ না হউক; আপনার এই দাস গিয়া এই পলেষ্টীয়ের সহিত যুদ্ধ করিবে। 33তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে গিয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবে না, কেননা তুমি বালক, এবং সে বাল্যকাল অবধি যোদ্ধা। 34দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আপনার এই দাস পিতার মেষ রক্ষা করিতেছিল, ইতিমধ্যে এক সিংহ ও এক ভল্লুক আসিয়া পালের মধ্য হইতে মেষ ধরিয়া লইল; 35আমি তাহার পশ্চাতে পশ্চাতে গিয়া তাহাকে প্রহার করিয়া তাহার মুখ হইতে তাহা উদ্ধার করিলাম; পরে সে আমার বিরুদ্ধে উঠিয়া দাঁড়াইলে আমি তাহার দাড়ি ধরিয়া প্রহার করিয়া তাহাকে বধ করিলাম। 36আপনার দাস সেই সিংহ ও সেই ভল্লুক উভয়কেই বধ করিয়াছে; আর এই অচ্ছিন্নত্বক্‌ পলেষ্টীয় সেই দুইয়ের মধ্যে একের মত হইবে, কারণ এ জীবন্ত ঈশ্বরের সৈন্যগণকে টিট্‌কারি দিয়াছে। 37দায়ূদ আরও কহিলেন, যে সদাপ্রভু সিংহের থাবা ও ভল্লুকের থাবা হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তিনি এই পলেষ্টীয়ের হস্ত হইতে আমাকে উদ্ধার করিবেন। তখন শৌল দায়ূদকে কহিলেন, যাও, সদাপ্রভু তোমার সহবর্তী হইবেন।
38পরে শৌল আপনার সজ্জায় দায়ূদকে সাজাইয়া তাঁহার মস্তকে পিত্তলের শিরস্ত্রাণ ও গাত্রে বর্ম দিলেন। 39তখন দায়ূদ সজ্জার উপরে তাহার খড়্‌গ বাঁধিয়া চলিতে চেষ্টা করিলেন; কেননা পূর্বে তাহা অভ্যাস করেন নাই। তখন দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, এই বেশে আমি যাইতে পারিব না, কেননা ইহা অভ্যাস করি নাই। পরে দায়ূদ তাহা খুলিয়া রাখিলেন। 40আর তিনি আপন যষ্টি হস্তে লইলেন, এবং স্রোতোমার্গ হইতে পাঁচখানি চিক্কণ পাথর বাছিয়া লইয়া, আপনার যে মেষপালকের পাত্র অর্থাৎ ঝুলি ছিল, তাহাতে রাখিলেন, এবং নিজের ফিঙ্গাটি হস্তে করিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের নিকটে গমন করিলেন। 41আর সেই পলেষ্টীয় আসিতে লাগিল, এবং দায়ূদের নিকটবর্তী হইল, আর সেই ঢালবাহী লোকটি তাহার অগ্রে অগ্রে চলিল। 42পরে পলেষ্টীয় চারিদিকে চাহিয়া দেখিল, আর দায়ূদকে দেখিতে পাইয়া তুচ্ছজ্ঞান করিল; কেননা তিনি বালক, ঈষৎ রক্তবর্ণ ও দেখিতে সুন্দর ছিলেন। 43পরে ঐ পলেষ্টীয় দায়ূদকে কহিল, আমি কি কুকুর যে, তুই দণ্ড লইয়া আমার কাছে আসিতেছিস? আর সেই পলেষ্টীয় আপন দেবগণের নাম লইয়া দায়ূদকে শাপ দিল। 44পলেষ্টীয় দায়ূদকে আরও কহিল, তুই আমার কাছে আয়, আমি তোর মাংস আকাশের পক্ষিগণকে ও মাঠের পশুদিগকে দিই। 45তখন দায়ূদ ঐ পলেষ্টীয়কে কহিলেন, তুমি খড়্‌গ, বর্শা ও শল্য লইয়া আমার কাছে আসিতেছ, কিন্তু আমি বাহিনীগণের সদাপ্রভুর, ইস্রায়েলের সৈন্যগণের ঈশ্বরের নামে, তুমি যাঁহাকে টিট্‌কারি দিয়াছ, তাঁহারই নামে, তোমার নিকটে আসিতেছি। 46অদ্য সদাপ্রভু তোমাকে আমার হস্তে সমর্পণ করিবেন; আর আমি তোমাকে আঘাত করিব, তোমার দেহ হইতে মুণ্ডুু তুলিয়া লইব, এবং পলেষ্টীয়দের সৈন্যের শব অদ্য শূন্যের পক্ষিগণকে ও ভূমির পশুদিগকে দিব; তাহাতে ইস্রায়েলে এক ঈশ্বর আছেন, ইহা সমস্ত পৃথিবী জানিতে পারিবে। 47আর সদাপ্রভু খড়্‌গ ও বর্শা দ্বারা নিস্তার করেন না, ইহাও এই সমস্ত সমাজ জানিবে; কেননা এই যুদ্ধ সদাপ্রভুর, আর তিনি তোমাদিগকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করিবেন।
48পরে ঐ পলেষ্টীয় উঠিয়া দায়ূদের সম্মুখীন হইবার জন্য আসিয়া নিকটবর্তী হইলে দায়ূদ সত্বর ঐ পলেষ্টীয়ের সম্মুখীন হইবার জন্য সৈন্যশ্রেণীর দিকে দৌড়াইলেন। 49পরে দায়ূদ আপন ঝুলিতে হস্ত দিয়া একখানি পাথর বাহির করিলেন, এবং ফিঙ্গাতে পাক দিয়া ঐ পলেষ্টীয়ের কপালে আঘাত করিলেন; সেই পাথরখানি তাহার কপালে বসিয়া গেল; তাহাতে সে ভূমিতে অধোমুখ হইয়া পড়িল। 50এই প্রকারে দায়ূদ ফিঙ্গা ও পাথর দিয়া ঐ পলেষ্টীয়কে পরাজিত করিলেন, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া বধ করিলেন; কিন্তু দায়ূদের হস্তে খড়্‌গ ছিল না। 51তাই দায়ূদ দৌড়াইয়া ঐ পলেষ্টীয়ের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া তাহারই খড়্‌গ লইয়া খাপ খুলিয়া তাহাকে বধ করিলেন, এবং তদ্দ্বারা তাহার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন। পলেষ্টীয়েরা যখন দেখিতে পাইল, তাহাদের বীর মরিয়া গিয়াছে, তখন তাহারা পলায়ন করিল। 52আর ইস্রায়েলের ও যিহূদার লোকেরা উঠিয়া জয়ধ্বনি করিল, এবং গয় পর্যন্ত ও ইক্রোণের দ্বার পর্যন্ত পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া গেল; তাহাতে পলেষ্টীয়দের আহতগণ শারয়িমের পথে গাৎ ও ইক্রোণ পর্যন্ত পড়িল। 53পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের পশ্চাৎ ধাবন হইতে ফিরিয়া আসিয়া তাহাদের শিবির লুট করিল। 54পরে দায়ূদ সেই পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু তুলিয়া যিরূশালেমে লইয়া গেলেন, কিন্তু তাহার সজ্জা আপনার তাম্বুতে রাখিলেন।
55আর শৌল যখন ঐ পলেষ্টীয়ের বিরুদ্ধে দায়ূদকে যাইতে দেখিয়াছিলেন, তখন সেনাপতি অব্‌নেরকে বলিয়াছিলেন, অব্‌নের, এই যুবক কাহার পুত্র? অব্‌নের বলিয়াছিলেন, হে রাজন্‌! আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, আমি তাহা বলিতে পারি না। 56পরে রাজা বলিয়াছিলেন, তুমি জিজ্ঞাসা কর, ঐ বালকটি কাহার পুত্র? 57পরে দায়ূদ যখন পলেষ্টীয়কে বধ করিয়া ফিরিয়া আসিতেছেন, তখন অব্‌নের তাঁহাকে ধরিয়া শৌলের কাছে লইয়া গেলেন; তাঁহার হস্তে ঐ পলেষ্টীয়ের মুণ্ডু ছিল। 58শৌল তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে যুবক, তুমি কাহার পুত্র? দায়ূদ উত্তর করিলেন, আমি আপনার দাস বৈৎলেহমীয় যিশয়ের পুত্র।
 
 
 
1শৌলের সহিত তাঁহার কথা সাঙ্গ হইলে যোনাথনের প্রাণ দায়ূদের প্রাণে সংসক্ত হইল, এবং যোনাথন আপন প্রাণের মত তাঁহাকে ভালবাসিতে লাগিলেন। 2আর শৌল ঐ দিবসে তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন, তাঁহার পিতার বাটীতে ফিরিয়া যাইতে দিলেন না। 3আর যোনাথন ও দায়ূদ এক নিয়ম করিলেন, কেননা যোনাথন তাঁহাকে প্রাণতুল্য ভালবাসিলেন। 4আর যোনাথন আপন গাত্রের পরিচ্ছদ খুলিয়া দায়ূদকে দিলেন, নিজের সজ্জা, এমন কি, নিজের খড়্‌গ, ধনুক ও কটিবন্ধনও দিলেন। 5পরে শৌল দায়ূদকে যে কোন স্থানে প্রেরণ করেন, দায়ূদ সেই স্থানে যান ও বুদ্ধিপূর্বক চলেন, এই জন্য শৌল যোদ্ধাদের উপরে কর্তৃত্বপদে তাঁহাকে নিযুক্ত করিলেন, আর তাহা সমস্ত লোকের দৃষ্টিতে, এবং শৌলের দাসগণের দৃষ্টিতেও ভাল বোধ হইল।
6পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য সহকারে গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল। 7সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল,
শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র,
আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত।
8তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে? 9সেই দিন অবধি শৌল দায়ূদের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।
দায়ূদের প্রতি শৌলের ঈর্ষা
10পরদিবসে ঈশ্বর হইতে এক দুষ্ট আত্মা সবলে শৌলের উপরে আসিল, এবং তিনি গৃহমধ্যে প্রলাপ বকিতে লাগিলেন, আর দায়ূদ প্রত্যহ যেমন করিতেন, সেইরূপ হস্ত দ্বারা বাদ্য বাজাইতেছিলেন; তখন শৌলের হস্তে তাঁহার বর্শা ছিল। 11শৌল সেই বর্শা নিক্ষেপ করিলেন, বলিলেন, আমি দায়ূদকে দেওয়ালের সঙ্গে গাঁথিব; কিন্তু দায়ূদ দুই বার তাঁহার সম্মুখ হইতে সরিয়া গেলেন।
12আর শৌল দায়ূদের বিষয়ে ভীত হইতে লাগিলেন, কারণ সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী ছিলেন, কিন্তু শৌলকে ত্যাগ করিয়াছিলেন। 13সেই জন্য শৌল আপনার নিকট হইতে তাঁহাকে দূর করিয়া দিলেন, ও সহস্র্রপতি পদে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তিনি লোকদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতে লাগিলেন। 14আর দায়ূদ আপন সমস্ত পথে বুদ্ধিপূর্বক চলিতেন, এবং সদাপ্রভু তাঁহার সহবর্তী ছিলেন। 15তিনি বেশ বুদ্ধিপূর্বক চলিতেছেন দেখিয়া শৌল তাঁহার বিষয়ে ত্রাসযুক্ত হইলেন। 16কিন্তু সমস্ত ইস্রায়েল ও যিহূদা দায়ূদকে ভালবাসিত, কেননা তিনি তাহাদের সাক্ষাতে ভিতরে ও বাহিরে গমনাগমন করিতেন।
17পরে শৌল দায়ূদকে কহিলেন, দেখ, আমার জ্যেষ্ঠা কন্যা মেরব, আমি তোমার সহিত তাহার বিবাহ দিব; তুমি কেবল আমার পক্ষে বিক্রমী হইয়া সদাপ্রভুর জন্য সংগ্রাম কর। কারণ শৌল কহিলেন, আমার হস্ত তাহার উপরে না উঠুক, কিন্তু পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। 18আর দায়ূদ শৌলকে কহিলেন, আমি কে, এবং আমার প্রাণ কি, ইস্রায়েলের মধ্যে আমার পিতার গোষ্ঠীই বা কি যে, আমি রাজার জামাতা হই? 19কিন্তু শৌলের কন্যা মেরবকে দায়ূদের সহিত বিবাহ দিবার সময় উপস্থিত হইলে সে মহোলাতীয় অদ্রীয়েলকে দত্তা হইল।
20পরে শৌলের কন্যা মীখল দায়ূদকে প্রেম করিতে লাগিলেন; তখন লোকেরা শৌলকে তাহা জানাইলে তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট হইলেন। 21শৌল কহিলেন, আমি তাহাকে সেই কন্যা দিব; সে তাঁহার ফাঁদস্বরূপ হউক, ও পলেষ্টীয়দের হস্ত তাহার উপরে উঠুক। অতএব শৌল দায়ূদকে কহিলেন, তুমি অদ্য দ্বিতীয়বার আমার জামাতা হও। 22পরে শৌল আপন দাসগণকে আজ্ঞা দিলেন, তোমরা গোপনে দায়ূদের সহিত আলাপ করিয়া এই কথা বল, দেখ, তোমার প্রতি রাজা সন্তুষ্ট, এবং তাঁহার সমস্ত দাস তোমাকে ভালবাসে; অতএব এখন তুমি রাজার জামাতা হও। 23শৌলের দাসগণ দায়ূদের কর্ণগোচরে এই কথা কহিল। দায়ূদ কহিলেন, রাজার জামাতা হওয়া কি তোমাদের কাছে লঘু বিষয় বোধ হয়? আমি ত দরিদ্র লোক, তুচ্ছের পাত্র। 24পরে শৌলের দাসগণ তাঁহাকে সমাচার দিয়া কহিল, দায়ূদ এই প্রকার কথা বলেন। 25শৌল কহিলেন, তোমরা দায়ূদকে এই কথা বল, রাজা কিছু পণ চাহেন না, কেবল রাজার শত্রুদের প্রতিশোধের জন্য পলেষ্টীয়দের একশত লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ চাহেন। শৌল মনে করিলেন, পলেষ্টীয়দের হস্ত দ্বারা দায়ূদকে নিপাত করা যাইবে। 26পরে তাঁহার দাসগণ দায়ূদকে সেই কথা জানাইলে দায়ূদ রাজ-জামাতা হইতে তুষ্ট হইলেন। 27তখন কাল সম্পূর্ণ হয় নাই; দায়ূদ আপন লোকদের সহিত উঠিয়া গিয়া পলেষ্টীয়দের দুই শত জনকে বধ করিলেন, এবং রাজার জামাতা হইবার জন্য দায়ূদ পূর্ণ সংখ্যানুসারে তাহাদের লিঙ্গাগ্রত্বক্‌ আনিয়া রাজাকে দিলেন; পরে শৌল তাঁহার সহিত আপন কন্যা মীখলের বিবাহ দিলেন।
28আর শৌল দেখিয়া জানিতে পারিলেন যে, সদাপ্রভু দায়ূদের সহবর্তী, এবং শৌলের কন্যা মীখল তাঁহাকে প্রেম করেন। 29তাহাতে শৌল দায়ূদের বিষয়ে আরও ভীত হইলেন, আর শৌল সর্বদাই দায়ূদের শত্রু থাকিলেন। 30পরে পলেষ্টীয়দের অধ্যক্ষগণ বাহির হইতে লাগিলেন; কিন্তু যত বার বাহির হইলেন, তত বার শৌলের দাসগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা দায়ূদ অধিক বুদ্ধিপূর্বক চলিলেন, তাহাতে তাঁহার নাম অতিশয় সম্মানিত হইল।

১ শামুয়েল ৯ ও ১০ অধ্যায়

৯ অধ্যায় :

শৌল রাজপদে নিযুক্ত হন
1আর বিন্যামীন বংশীয় এক লোক ছিলেন, তাঁহার নাম কীশ। তিনি অবীয়েলের পুত্র, ইনি সরোরের পুত্র, ইনি বখোরতের পুত্র, ইনি অফিহের পুত্র। কীশ একজন বিন্যামীনীয় বলবান বীর ছিলেন। 2আর শৌল নামে তাঁহার এক পুত্র ছিলেন; তিনি সুন্দর যুবা পুরুষ; ইস্রায়েল-সন্তানদের মধ্যে তদপেক্ষা সুন্দর কোন পুরুষ ছিল না, এবং তিনি অন্য সমস্ত লোক হইতে এক মস্তক দীর্ঘ ছিলেন। 3একদা শৌলের পিতা কীশের গর্দভীগুলি হারাইয়া গিয়াছিল, তাহাতে কীশ আপন পুত্র শৌলকে কহিলেন, তুমি একজন চাকর সঙ্গে লও, উঠ, গর্দভীদের অন্বেষণ করিতে যাও। 4তাহাতে তিনি পর্বতময় ইফ্রয়িম প্রদেশ দিয়া ভ্রমণ করিয়া শালিশা প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; কিন্তু তাঁহারা তাহাদের উদ্দেশ পাইলেন না। পরে তাঁহারা শালীম প্রদেশ দিয়া গমন করিলেন; সেখানেও নাই। পরে তিনি বিন্যামীনীয়দের দেশ দিয়া গমন করিলেন, কিন্তু তাঁহারা সেখানেও পাইলেন না। 5পরে সূফ প্রদেশে উপস্থিত হইলে শৌল আপনার সঙ্গী চাকরটিকে কহিলেন, আইস, আমরা ফিরিয়া যাই; কি জানি, আমার পিতা গর্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া আমাদের জন্য ভাবিত হইবেন। 6সে তাঁহাকে কহিল, দেখুন, এই নগরে ঈশ্বরের একজন লোক আছেন; তিনি অতি সম্মানিত; তিনি যাহা যাহা বলেন, সকলই সিদ্ধ হয়; চলুন, আমরা এখন সেই স্থানে যাই; হয়ত তিনি আমাদের গন্তব্য পথ বলিয়া দিতে পারিবেন। 7তখন শৌল আপন চাকরকে কহিলেন, কিন্তু দেখ, যদি আমরা যাই, তবে সেই ব্যক্তির কাছে কি লইয়া যাইব? আমাদের পাত্রের খাদ্য ত শেষ হইয়াছে; ঈশ্বরের লোকের কাছে লইয়া যাইবার জন্য আমাদের উপহার নাই; আমাদের কাছে কি আছে? 8তখন চাকরটি শৌলকে উত্তর করিল, দেখুন, আমার হস্তে শেকলের চতুর্থাংশ রৌপ্য আছে; আমি ঈশ্বরের লোককে ইহাই দিব, আর তিনি আমাদিগকে পথ বলিয়া দিবেন। 9পূর্বকালে ইস্রায়েলের মধ্যে ঈশ্বরের নিকটে জিজ্ঞাসা করণার্থে যাইতে হইলে লোকে এইরূপ বলিত, চল, আমরা দর্শকের নিকটে যাই; কেননা সম্প্রতি যাঁহাকে ভাববাদী বলা যায়, পূর্বকালে তাহাকে দর্শক বলা যাইত। 10তখন শৌল আপন চাকরটিকে কহিলেন, ভালই বলিলে; চল, আমরা যাই। আর ঈশ্বরের লোক যেখানে ছিলেন, সেই নগরে তাঁহারা গমন করিলেন।
11যখন তাঁহারা নগরের দিকে ঊর্ধ্বগামী পথে উঠিতেছিলেন, তখন জল তুলিবার জন্য কয়েক জন যুবতী মেয়ে বাহিরে আসিয়াছিল, তাঁহারা তাহাদিগকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, দর্শক কি এই স্থানে আছেন? 12তাহারা তাঁহাদিগকে উত্তর করিয়া কহিল, হাঁ, আছেন; দেখ তিনি তোমাদের সম্মুখে আছেন; শীঘ্র এখনই যাও, তিনি অদ্য নগরে আসিয়াছেন, কারণ ঐ উচ্চস্থলীতে অদ্য লোকদের এক যজ্ঞ হইবে। 13তোমরা নগরের মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র, তিনি উচ্চস্থলীতে আহার করিতে যাইবার পূর্বে, তাঁহার দেখা পাইবে; কেননা তিনি যাবৎ উপস্থিত না হইবেন, তাবৎ লোকেরা ভোজন করিবে না, কারণ তিনি যজ্ঞীয় দ্রব্যে আশীর্বাদ করেন, পরে নিমন্ত্রিত লোকেরা ভোজন করে; অতএব তোমরা এক্ষণে গিয়া উঠ; এই সময়ে তাঁহার দেখা পাইবে। 14তখন তাঁহারা নগরে উঠিলেন; তাঁহারা নগরের মধ্যে উপস্থিত হইলে দেখ, শমূয়েল উচ্চস্থলীতে যাইবার জন্য বাহির হইয়া তাঁহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন।
15আর শৌলের উপস্থিত হইবার পূর্ব দিবসে সদাপ্রভু শমূয়েলের কর্ণগোচরে প্রকাশ করিয়াছিলেন, 16কল্য এমন সময়ে আমি বিন্যামীন প্রদেশ হইতে একজন লোককে তোমার নিকটে প্রেরণ করিব; তুমি তাহাকে আমার প্রজা ইস্রায়েলের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিবে; আর সে পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে আমার প্রজাদিগকে নিস্তার করিবে; কেননা আমার প্রজাদের ক্রন্দন আমার কর্ণগোচর হওয়াতে আমি তাহাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলাম। 17পরে শমূয়েল শৌলকে দেখিলে সদাপ্রভু তাঁহাকে কহিলেন, দেখ, এই সেই ব্যক্তি, যাহার বিষয়ে আমি তোমার কাছে বলিয়াছিলাম, সেই আমার প্রজাদের উপরে কর্তৃত্ব করিবে। 18তখন শৌল দ্বারদেশে শমূয়েলের নিকটে উপস্থিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, বিনয় করি, দর্শকের গৃহ কোথায়, আমাকে বলিয়া দিউন। 19তখন শমূয়েল শৌলকে উত্তর করিলেন, আমিই দর্শক, আমার অগ্রে অগ্রে উচ্চস্থলীতে চল; কেননা অদ্য তোমরা আমার সহিত ভোজন করিবে; প্রাতে আমি তোমাকে বিদায় করিব, এবং তোমার মনের সমস্ত কথা তোমাকে জ্ঞাত করিব। 20আর অদ্য তিন দিন হইল, তোমার যে সকল গর্দভী হারাইয়াছে, তাহাদের জন্য মনে ভাবিত হইও না; সেই সকল পাওয়া গিয়াছে। আর ইস্র্র্রায়েলের সমস্ত বাঞ্ছনীয় দ্রব্য কাহার? সেই সকল কি তোমার এবং তোমার সমস্ত পিতৃকুলের নয়? 21শৌল উত্তর করিলেন, আমি কি ইস্র্রায়েল-বংশ সকলের মধ্যে ক্ষুদ্রতম বিন্যামীন বংশীয় নহি? আবার বিন্যামীন বংশের মধ্যে আমার গোষ্ঠী কি সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র নয়? তবে আপনি আমাকে কেন এই প্রকার কথা কহেন? 22পরে শমূয়েল শৌলকে ও তাঁহার চাকরটিকে লইয়া ভোজনশালায় গেলেন, অনুমান ত্রিশ জন নিমন্ত্রিত লোকদের মধ্যে তাঁহাদিগকে উত্তম স্থানে বসাইলেন। 23পরে শমূয়েল পাচককে কহিলেন, আমি যে অংশ তোমাকে দিয়া তোমার কাছে রাখিতে বলিয়াছিলাম, তাহা আন। 24তাহাতে পাচক ঊরু ও তাহার উপরে যাহা ছিল, তাহা আনিয়া শৌলের সম্মুখে স্থাপন করিল। আর [শমূয়েল] কহিলেন, দেখ, ইহা রাখা গিয়াছিল; তুমি ইহা আপনার সম্মুখে রাখ, ভোজন কর; কেননা নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষাতে ইহা তোমার জন্য রাখা গিয়াছে, আমি বলিয়াছিলাম যে, আমি লোকদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়াছি। তাহাতে সেই দিন শৌল শমূয়েলের সহিত আহার করিলেন।
25পরে তাঁহারা উচ্চস্থলী হইতে নগরে নামিয়া গেলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলের সহিত কথোপকথন করিলেন। 26পরে তাঁহারা প্রভাতে উঠিলেন, আর আলো হইয়া আসিলে শমূয়েল গৃহের ছাদের উপরে শৌলকে ডাকিয়া কহিলেন, উঠ, আমি তোমাকে বিদায় করি। তখন শৌল উঠিলেন, আর তিনি ও শমূয়েল দুই জন বাহিরে গেলেন। 27পরে তাঁহারা নামিয়া নগরের প্রান্তভাগ দিয়া গমন করিতেছিলেন, এমন সময়ে শমূয়েল শৌলকে কহিলেন, তোমার চাকরটিকে অগ্রে যাইতে বল, কিন্তু তুমি কিছুকাল দাঁড়াও, আমি তোমাকে ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করাই। তাহাতে চাকর অগ্রে চলিল।
 
 

1আর শমূয়েল তৈলের শিশি লইয়া তাঁহার মস্তকে ঢালিলেন, এবং তাঁহাকে চুম্বন করিয়া কহিলেন, সদাপ্রভু কি তোমাকে আপন অধিকারের নায়ক করিবার জন্য অভিষেক করিলেন না? 2অদ্য তুমি যখন আমার নিকট হইতে প্রস্থান করিবে, তখন বিন্যামীনের সীমাস্থিত সেল্‌সহে রাহেলের কবরের নিকটে দুই জন পুরুষের দেখা পাইবে; তাহারা তোমাকে বলিবে, তুমি যে সকল গর্দভীর অন্বেষণে গিয়াছিলে, সেই সকল পাওয়া গিয়াছে; আর দেখ, তোমার পিতা গর্দভীদের ভাবনা ছাড়িয়া দিয়া তোমার জন্য চিন্তা করিতেছেন, বলিতেছেন, আমার পুত্রের জন্য কি করিব? 3পরে তুমি তথা হইতে অগ্রসর হইয়া তাবোরের এলোন বৃক্ষের নিকটে আসিবে, সেই স্থানে বৈথেলে ঈশ্বরের নিকট যাইতেছে, এমন তিন জন পুরুষের দেখা পাইবে, দেখিবে, তাহাদের মধ্যে একজন তিনটি ছাগবৎস, আর একজন তিনখানি রুটি, আর একজন এক কূপা দ্রাক্ষারস বহন করিতেছে। 4তাহারা তোমাকে মঙ্গলবাদ করিবে ও দুইখানি রুটি তোমাকে দিবে, এবং তুমি তাহাদের হস্ত হইতে তাহা গ্রহণ করিবে। 5পরে পলেষ্টীয়দের প্রহরী সৈন্যদল যেখানে আছে, তুমি ঈশ্বরের সেই পর্বতে উপস্থিত হইবে, তথায় নগরে পৌঁছিলে, এমন এক দল ভাববাদীর সহিত সাক্ষাৎ হইবে, যাহারা নেবল, তবল, বাঁশী ও বীণা লইয়া উচ্চস্থলী হইতে নামিয়া আসিতেছে, আর ভাবোক্তি প্রচার করিতেছে। 6তখন সদাপ্রভুর আত্মা সবলে তোমার উপরে আসিবেন, তাহাতে তুমিও তাহাদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিবে, এবং অন্য প্রকার মনুষ্য হইয়া উঠিবে। 7এই সকল চিহ্ন তোমার প্রতি ঘটিলে পর তোমার হস্ত যাহা করিতে পায়, তাহা করিও, কেননা ঈশ্বর তোমার সহবর্তী। 8আর তুমি আমার অগ্রে অগ্রে গিল্‌গলে নামিয়া যাইবে, আর দেখ, হোমবলি ও মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করিবার জন্য আমি তোমার নিকটে যাইব; আমি যাবৎ তোমার নিকটে উপস্থিত হইয়া তোমার কর্তব্য তোমাকে জ্ঞাত না করি তাবৎ সাত দিন বিলম্ব করিবে।
9পরে তিনি শমূয়েলের নিকট হইতে যাইবার জন্য ফিরিয়া দাঁড়াইলে ঈশ্বর তাহাকে অন্য মন দিলেন, এবং সেই দিন ঐ সমস্ত চিহ্ন সফল হইল। 10তাঁহারা সেখানে, সেই পর্বতে, উপস্থিত হইলে, দেখ, এক দল ভাববাদী তাঁহার সম্মুখে পড়িলেন; এবং ঈশ্বরের আত্মা সবলে তাঁহার উপরে আসিলেন, ও তাঁহাদের মধ্যে তিনি ভাবোক্তি প্রচার করিতে লাগিলেন। 11আর যাহারা পূর্বে তাঁহাকে জানিত, তাহারা সকলে যখন দেখিল, দেখ, তিনি ভাববাদীদের সহিত ভাবোক্তি প্রচার করিতেছেন, তখন লোকেরা পরস্পর কহিল, কীশের পুত্রের কি হইল? শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে একজন? 12তাহাতে তথাকার একজন উত্তর করিল, ভাল, উহাদের পিতা কে? এইরূপে, “শৌলও কি ভাববাদিগণের মধ্যে একজন?” এই কথা প্রবাদ হইয়া উঠিল। 13পরে তিনি ভাবোক্তি প্রচার সাঙ্গ করিয়া উচ্চস্থলীতে গেলেন।
14পরে শৌলের পিতৃব্য তাঁহাকে ও তাঁহার চাকরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা কোথায় গিয়াছিলে? তিনি কহিলেন, গর্দভীদের অন্বেষণে; কিন্তু গর্দভীরা কোন স্থানে নাই, ইহা দেখিয়া আমরা শমূয়েলের নিকটে গিয়াছিলাম। 15শৌলের পিতৃব্য কহিলেন, বল দেখি, শমূয়েল তোমাদিগকে কি কহিলেন? 16তখন শৌল আপন পিতৃব্যকে বলিলেন, তিনি আমাদিগকে স্পষ্টরূপে কহিলেন, গর্দভী সকল পাওয়া গিয়াছে। কিন্তু রাজত্বের বিষয় যে কথা শমূয়েল বলিয়াছিলেন, তাহা তিনি তাঁহাকে বলিলেন না।
17পরে শমূয়েল লোকদিগকে মিস্‌পাতে সদাপ্রভুর নিকটে ডাকাইলেন; 18আর ইস্রায়েল-সন্তানগণকে কহিলেন, সদাপ্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর, এইরূপ কহেন, আমিই ইস্রায়েলকে মিসর হইতে আনিয়াছি, এবং মিসরীয়দের হস্ত হইতে, ও তোমাদের প্রতি যে সমস্ত রাজ্য উপদ্রব করিত, তাহাদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিয়াছি। 19কিন্তু তোমরা অদ্য তোমাদের ঈশ্বরকে, যিনি সমস্ত দুর্দশা ও সঙ্কট হইতে তোমাদের নিস্তার করিয়া আসিতেছেন, তাঁহাকেই অগ্রাহ্য করিলে, এবং তাঁহাকে বলিলে যে, আমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত কর; অতএব তোমরা এখন আপন আপন বংশ অনুসারে ও সহস্র সহস্র অনুসারে সদাপ্রভুর সাক্ষাতে উপস্থিত হও। 20পরে শমূয়েল ইস্রায়েলের সমস্ত বংশকে নিকটে আনাইলে বিন্যামীন বংশ নিশ্চিত হইল। 21আর এক এক গোষ্ঠী অনুসারে বিন্যামীন বংশকে নিকটে আনাইলে মট্রীয়দের গোষ্ঠী নিশ্চিত হইল, এবং তাহার মধ্যে কীশের পুত্র শৌল নিশ্চিত হইলেন; কিন্তু অন্বেষণ করিলে তাঁহার উদ্দেশ পাওয়া গেল না। 22অতএব তাহারা পুনরায় সদাপ্রভুর নিকটে জিজ্ঞাসা করিল, আর কেহ কি এই স্থানে আসিয়াছে? সদাপ্রভু কহিলেন, দেখ, সেই ব্যক্তি জিনিসপত্রের মধ্যে লুকাইয়া আছে। 23পরে তাহারা দৌড়াইয়া তথা হইতে তাঁহাকে আনিল। আর তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়াইলে অন্য সকল লোক অপেক্ষা এক মস্তক দীর্ঘ হইলেন। 24পরে শমূয়েল সমস্ত লোককে কহিলেন, তোমরা কি ইঁহাকে দেখিতেছ? ইনি সদাপ্রভুর মনোনীত; সমস্ত লোকের মধ্যে ইঁহার তুল্য কেহ নাই। তখন সমস্ত লোক জয়ধ্বনি করিয়া কহিল, রাজা চিরজীবী হউন। 25পরে শমূয়েল লোকদিগকে রাজতন্ত্রের নিয়ম-কানুন কহিলেন, এবং তাহা পুস্তকে লিখিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে রাখিলেন। আর শমূয়েল সমস্ত লোককে আপন আপন বাটীতে বিদায় করিলেন। 26আর শৌলও গিবিয়ায় আপন বাটীতে গেলেন; এবং ঈশ্বর যাহাদের হৃদয় স্পর্শ করিলেন, এমন এক দল সৈন্য তাঁহার সহিত গমন করিল। 27কিন্তু পাষণ্ডেরা কেহ কেহ বলিল, এই ব্যক্তি আমাদিগকে কিরূপে নিস্তার করিবে? তাহারা তাঁহাকে তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া দর্শনীয় দিল না; তথাপি তিনি বধিরের ন্যায় থাকিলেন।

১ শামুয়েল ১২ অধ্যায় ১২ থেকে ১৩ শ্লোক

ইস্রায়েলীয়দের প্রতি শমূয়েলের প্রবোধ বাক্য
 
1পরে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েলকে কহিলেন, দেখ, তোমরা আমাকে যাহা যাহা কহিলে, আমি তোমাদের সেই সমস্ত বাক্যে কর্ণপাত করিয়া তোমাদের উপরে একজনকে রাজা করিলাম। 2এখন দেখ, রাজা তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিতেছেন; কিন্তু আমি বৃদ্ধ ও পক্বকেশ হইয়াছি; আর দেখ, আমার পুত্রগণ তোমাদের সহিত আছে, এবং আমি বাল্যকাল অবধি অদ্য পর্যন্ত তোমাদের সম্মুখে গমনাগমন করিয়া আসিতেছি। 3আমি এই স্থানে আছি; তোমরা সদাপ্রভুর সাক্ষাতে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির সাক্ষাতে আমার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিয়া বল দেখি, আমি কাহার গরু লইয়াছি? কাহার গর্দভ লইয়াছি? কাহার প্রতি দৌরাত্ম্য করিয়াছি? কাহার উপরেই বা উৎপীড়ন করিয়াছি? কিম্বা আপন চক্ষু অন্ধ করিবার জন্য কাহার হস্ত হইতে উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছি? আমি তোমাদিগকে তাহা ফিরাইয়া দিব। 4তাহারা কহিল, আপনি আমাদের প্রতি দৌরাত্ম্য করেন নাই, আমাদের উপরে উৎপীড়ন করেন নাই, কাহারও হস্ত হইতে কিছু গ্রহণ করেন নাই। 5তিনি তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা আমার হস্তে কোন দ্রব্য পাও নাই, এই বিষয়ে অদ্য তোমাদের বিপক্ষে সদাপ্রভু সাক্ষী, এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তি সাক্ষী। তাহারা উত্তর করিল, তিনি সাক্ষী।
6পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, সদাপ্রভুই মোশি ও হারোণকে উৎপন্ন করিয়াছিলেন, এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে মিসর দেশ হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন। 7তোমরা এখন দাঁড়াও; তোমাদের প্রতি ও তোমাদের পিতৃপুরুষদের প্রতি সদাপ্রভু যে সমস্ত সাধু কার্য করিয়াছেন, তদ্বিষয়ে আমি সদাপ্রভুর সাক্ষাতে তোমাদের সহিত আলোচনা করিব। 8যাকোব মিসরে গেলে পর যখন তোমাদের পিতৃপুরুষেরা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়াছিল, তখন সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে প্রেরণ করেন; আর তাঁহারা মিসর হইতে তোমাদের পিতৃপুরুষদিগকে বাহির করিয়া আনিলেন, এবং এই স্থানে তাহাদিগকে বাস করাইলেন। 9কিন্তু লোকেরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভুলিয়া গেল, আর তিনি হাৎসোরের সেনাপতি সীষরার হস্তে, পলেষ্টীয়দের হস্তে ও মোয়াবরাজের হস্তে তাহাদিগকে বিক্রয় করিলেন, এবং ইহারা তাহাদের সহিত যুদ্ধ করিল। 10তখন তাহারা সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিয়া কহিল, আমরা পাপ করিয়াছি, আমরা সদাপ্রভুকে ত্যাগ করিয়া বালদেবগণের ও অষ্টারোৎ দেবীগণের সেবা করিয়াছি; কিন্তু এখন তুমি শত্রুগণের হস্ত হইতে আমাদিগকে উদ্ধার কর, আমরা তোমার সেবা করিব। 11পরে সদাপ্রভু যিরুব্বাল, বদান, যিপ্তহ, ও শমূয়েলকে প্রেরণ করিয়া তোমাদের চতুর্দিকস্থ শত্রুদের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিলেন; তাহাতে তোমরা নির্ভয়ে বাস করিলে। 12পরে যখন তোমরা দেখিলে অম্মোন-সন্তানদের রাজা নাহশ তোমাদের বিরুদ্ধে বাহির হইয়া আসিতেছে, তখন, তোমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাদের রাজা থাকিতেও তোমরা আমাকে কহিলে, না, আমাদের উপরে একজন রাজা রাজত্ব করুন। 13অতএব এই দেখ, সেই রাজা, যাঁহাকে তোমরা মনোনীত করিয়াছ ও যাচ্ঞা করিয়াছ; দেখ, সদাপ্রভু তোমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করিয়াছেন। 14যদি তোমরা সদাপ্রভুকে ভয় কর, তাঁহার সেবা কর, ও তাঁহার রবে কর্ণপাত কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ না কর, আর তোমরা ও তোমাদের উপরে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত রাজা, উভয়ে যদি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর অনুবর্তী হও, [তবে ভাল]। 15কিন্তু তোমরা যদি সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, এবং সদাপ্রভুর আজ্ঞার বিরুদ্ধাচরণ কর, তবে সদাপ্রভুর হস্ত যেমন তোমাদের পিতৃপুরুষদের বিরুদ্ধ ছিল, তদ্রূপ তোমাদেরও বিরুদ্ধ হইবে। 16অতএব তোমরা দাঁড়াও; সদাপ্রভু তোমাদের সাক্ষাতে যে মহৎ কর্ম করিবেন, তাহা দেখ। 17অদ্য কি গম কাটার সময় নয়? আমি সদাপ্রভুকে ডাকিব, যেন তিনি মেঘগর্জন ও বৃষ্টি দেন; তাহাতে তোমরা জানিবে ও বুঝিবে যে, তোমরা আপনাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়া সদাপ্রভুর সাক্ষাতে ভারী দুষ্কার্য করিয়াছ। 18তখন শমূয়েল সদাপ্রভুকে ডাকিলে সদাপ্রভু ঐ দিবসে মেঘগর্জন ও বৃষ্টি দিলেন; তাহাতে সমস্ত লোক সদাপ্রভু হইতে ও শমূয়েল হইতে অতিশয় ভীত হইল। 19আর সমস্ত লোক শমূয়েলকে কহিল, আমরা যেন না মরি, এই জন্য আপনি আপন দাসদের নিমিত্ত আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করুন; কেননা আমরা আমাদের সকল পাপের উপরে এই দুষ্কার্য করিয়াছি যে, আমাদের জন্য রাজা যাচ্ঞা করিয়াছি।
20পরে শমূয়েল লোকদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না; তোমরা এই সমস্ত দুষ্কার্য করিয়াছ বটে, কিন্তু কোন মতে সদাপ্রভুর পশ্চাৎ হইতে সরিয়া যাইও না, সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সদাপ্রভুর সেবা কর। 21সরিয়া যাইও না, গেলে সেই সকল অবস্তুর অনুগামী হইবে, যাহারা অবস্তু বলিয়া উপকার ও উদ্ধার করিতে পারে না। 22কারণ সদাপ্রভু আপন মহানামের গুণে আপন প্রজাদিগকে ত্যাগ করিবেন না; কেননা তোমাদিগকে আপন প্রজা করিতে সদাপ্রভুর অভিমত হইয়াছে। 23আর আমিই যে তোমাদের জন্য প্রার্থনা করিতে বিরত হইয়া সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিব, তাহা দূরে থাকুক; আমি তোমাদিগকে উত্তম ও সরল পথ শিক্ষা দিব; 24তোমরা কেবল সদাপ্রভুকে ভয় কর, ও সমস্ত অন্তঃকরণের সহিত সত্যে তাঁহার সেবা কর; কেননা দেখ, তিনি তোমাদের জন্য কেমন মহৎ মহৎ কর্ম করিলেন। 25কিন্তু তোমরা যদি মন্দ আচরণ কর, তবে তোমরা ও তোমাদের রাজা উভয়ে বিনষ্ট হইবে।

শামুয়েল ৭ অধ্যায়, ১৫ শ্লোক থেকে ৮ অধ্যায় ২২ শ্লোক পর্যন্ত

অধ্যায় - ৭ : 
 
1তাহাতে কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের লোকেরা আসিয়া সদাপ্রভুর সিন্দুক তুলিয়া লইয়া গিয়া পর্বতস্থিত অবীনাদবের বাটীতে রাখিল, এবং সদাপ্রভুর সিন্দুক রক্ষার্থে তাহার পুত্র ইলিয়াসরকে পবিত্র করিল।

পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে ইস্রায়েলীয়দের উদ্ধার
 
2সদাপ্রভুর সিন্দুক কিরিয়ৎ-যিয়ারীমে স্থাপন দিনাবধি দীর্ঘকাল গেল, বিংশতি বৎসর গেল, আর সমস্ত ইস্রায়েল-কুল সদাপ্রভুর পশ্চাতে বিলাপ করিতে লাগিল। 3তাহাতে শমূয়েল সমস্ত ইস্রায়েল-কুলকে কহিলেন, তোমরা যদি সর্বান্তঃকরণে সদাপ্রভুর কাছে ফিরিয়া আইস, তবে আপনাদের মধ্য হইতে বিজাতীয় দেবগণকে ও অষ্টারোৎ দেবীগণকে দূর কর, ও সদাপ্রভুর দিকে আপন আপন অন্তঃকরণ সুস্থির কর, কেবল তাঁহারই সেবা কর; তাহা হইলে তিনি পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে তোমাদিগকে উদ্ধার করিবেন। 4তখন ইস্রায়েল-সন্তানগণ বাল দেবগণকে ও অষ্টারোৎ দেবীগণকে দূর করিয়া কেবল সদাপ্রভুর সেবা করিতে লাগিল।
5পরে শমূয়েল কহিলেন, তোমরা সমস্ত ইস্রায়েলকে মিস্‌পাতে একত্র কর; আমি তোমাদের জন্য সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিব। 6তাহাতে তাহারা মিস্‌পাতে একত্র হইয়া জল তুলিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে ঢালিল, এবং সেই দিবস উপবাস করিয়া সেই স্থানে কহিল, আমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করিয়াছি। আর শমূয়েল মিস্‌পাতে ইস্রায়েল-সন্তানগণের বিচার করিতে লাগিলেন।
7পরে পলেষ্টীয়েরা যখন শুনিতে পাইল যে, ইস্রায়েল-সন্তানগণ মিস্‌পাতে একত্র হইয়াছে, তখন পলেষ্টীয়দের ভূপালগণ ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে উঠিয়া আসিলেন; তাহা শুনিয়া ইস্রায়েল-সন্তানগণ পলেষ্টীয়দের হইতে ভীত হইল। 8আর ইস্রায়েল-সন্তানগণ শমূয়েলকে কহিল, আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে যেন আমাদিগকে নিস্তার করেন, এই জন্য আপনি তাঁহার কাছে আমাদের নিমিত্ত ক্রন্দন করিতে বিরত হইবেন না।
9তখন শমূয়েল দুগ্ধপোষ্য এক মেষবৎস লইয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে সর্বাঙ্গ হোমবলি উৎসর্গ করিলেন, এবং শমূয়েল ইস্রায়েলের জন্য সদাপ্রভুর কাছে ক্রন্দন করিলেন; আর সদাপ্রভু তাঁহাকে উত্তর দিলেন। 10যে সময়ে শমূয়েল ঐ হোমবলি উৎসর্গ করিতেছিলেন, তখন পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য নিকটবর্তী হইল। কিন্তু ঐ দিবসে সদাপ্রভু পলেষ্টীয়দের উপরে মহাবজ্রনাদে গর্জন করিয়া তাহাদিগকে ব্যাকুল করিলেন; তাহাতে তাহারা ইস্রায়েলের সম্মুখে আহত হইল। 11আর ইস্রায়েল লোকেরা মিস্‌পা হইতে বাহির হইয়া পলেষ্টীয়দের পশ্চাতে পশ্চাতে তাড়া করিয়া বৈৎ-করের নিচে পর্যন্ত তাহাদিগকে আঘাত করিল। 12তখন শমূয়েল একখানি প্রস্তর লইয়া মিস্‌পার ও শেনের মধ্যস্থানে স্থাপন করিলেন, এবং এই পর্যন্ত সদাপ্রভু আমাদের সাহায্য করিয়াছেন, এই বলিয়া তাহার নাম এবন্‌-এষর [সাহায্যের প্রস্তর] রাখিলেন।
 
13এই প্রকারে পলেষ্টীয়েরা নত হইল, এবং ইস্রায়েলের অঞ্চলে আর আসিল না। আর শমূয়েলের সমস্ত কালে সদাপ্রভুর হস্ত পলেষ্টীয়দের বিরুদ্ধে ছিল। 14আর পলেষ্টীয়েরা ইস্রায়েল হইতে যে সমস্ত নগর হরণ করিয়াছিল, ইক্রোণ অবধি গাৎ পর্যন্ত সেই সকল পুনর্বার ইস্রায়েলের হাতে ফিরিয়া আসিল; এবং ইস্র্রায়েল সেই সমস্তের অঞ্চল পলেষ্টীয়দের হস্ত হইতে উদ্ধার করিল। আর ইমোরীয়দের সহিত ইস্রায়েলের সন্ধি হইল। 15শমূয়েল যাবজ্জীবন ইস্রায়েলের বিচার করিলেন। 16তিনি প্রতি বৎসর বৈথেলে, গিল্‌গলে ও মিস্‌পাতে পরিভ্রমণ করিয়া সেই সকল স্থানে ইস্রায়েলের বিচার করিতেন। 17পরে তিনি রামাতে ফিরিয়া আসিতেন, কেননা সেই স্থানে তাঁহার বাটী ছিল, এবং সেই স্থানে তিনি ইস্রায়েলের বিচার করিতেন; আর তিনি সেই স্থানে সদাপ্রভুর উদ্দেশে এক যজ্ঞবেদি নির্মাণ করেন।
 
৮ অধ্যায় : 
 
 
ইস্রায়েলীয়েরা রাজা চাহে
1পরে শমূয়েল যখন বৃদ্ধ হইলেন, তখন আপন পুত্রদিগকে বিচারকর্তা করিয়া ইস্রায়েলের উপরে নিযুক্ত করিলেন। 2তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম যোয়েল, দ্বিতীয় পুত্রের নাম অবিয়; তাহারা বের্‌-শেবাতে বিচার করিত। 3কিন্তু তাঁহার পুত্রেরা তাঁহার পথে চলিত না; তাহারা ধনলোভে বিপথে গেল, উৎকোচ লইত, ও বিচার বিপরীত করিত। 4অতএব ইস্রায়েলের সমস্ত প্রাচীনবর্গ একত্র হইয়া রামাতে শমূয়েলের নিকটে আসিলেন; 5আর তাঁহাকে কহিলেন, দেখুন, আপনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, এবং আপনার পুত্রেরা আপনার পথে চলে না; এখন অন্য সকল জাতির ন্যায় আমাদের বিচার করিতে আপনি আমাদের উপরে একজন রাজা নিযুক্ত করুন। 6কিন্তু, ‘আমাদের বিচার করিতে আমাদিগকে একজন রাজা দিউন;’ তাঁহাদের এই কথা শমূয়েলের মন্দ বোধ হইল; তাহাতে শমূয়েল সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিলেন। 7তখন সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, এই লোকেরা তোমার কাছে যাহা যাহা বলিতেছে, সেই সমস্ত বিষয়ে তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর; কেননা তাহারা তোমাকে অগ্রাহ্য করিল, এমন নয়, আমাকেই অগ্রাহ্য করিল, যেন আমি তাহাদের উপরে রাজত্ব না করি। 8যে দিন মিসর হইতে আমি তাহাদিগকে বাহির করিয়া আনিয়াছিলাম, সেই দিন অবধি অদ্য পর্যন্ত তাহারা যেরূপ ব্যবহার করিয়া আসিতেছে, অন্য দেবগণের সেবা করণার্থে আমাকে ত্যাগ করিয়া আসিতেছে, তদ্রূপ ব্যবহার তোমার প্রতিও করিতেছে। 9এখন তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর; কিন্তু তাহাদের বিপক্ষে দৃঢ়রূপে সাক্ষ্য দেও, এবং তাহাদের উপরে যে রাজত্ব করিবে, সেই রাজার নিয়ম তাহাদিগকে জ্ঞাত কর।
10পরে যে লোকেরা শমূয়েলের কাছে রাজা যাচ্ঞা করিয়াছিল, তাহাদিগকে তিনি সদাপ্রভুর ঐ সমস্ত কথা কহিলেন। 11আরও কহিলেন, তোমাদের উপরে রাজত্বকারী রাজার এইরূপ নিয়ম হইবে; তিনি তোমাদের পুত্রগণকে লইয়া আপনার রথের ও অশ্বের উপরে নিযুক্ত করিবেন, এবং তাহারা তাঁহার রথের অগ্রে অগ্রে দৌড়াইবে। 12আর তিনি তাহাদিগকে আপনার সহস্রপতি ও পঞ্চাশৎপতি নিযুক্ত করিবেন, এবং কাহাকেও কাহাকেও তাঁহার ভূমি চাষ ও শস্য ছেদন করিতে এবং যুদ্ধের অস্ত্র ও রথের সজ্জা নির্মাণ করিতে নিযুক্ত করিবেন। 13আর তিনি তোমাদের কন্যাগণকে লইয়া সুগন্ধিদ্রব্য-প্রস্তুতকারিণী, পাচিকা ও রুটি প্রস্তুতকারিণী করিবেন। 14আর তিনি তোমাদের উৎকৃষ্ট শস্যক্ষেত্র, দ্রাক্ষাক্ষেত্র ও জলপাইবৃক্ষ সকল লইয়া আপন দাসদিগকে দিবেন। 15আর তোমাদের শস্যের ও দ্রাক্ষার দশমাংশ লইয়া আপন কর্মচারীদিগকে ও দাসদিগকে দিবেন। 16আর তিনি তোমাদের দাস-দাসী ও সর্বোত্তম যুবা পুরুষদিগকে ও তোমাদের গর্দভ সকল লইয়া আপন কার্যে নিযুক্ত করিবেন। 17তিনি তোমাদের মেষগণের দশমাংশ লইবেন ও তোমরা তাঁহার দাস হইবে। 18সেই দিন তোমরা আপনাদের মনোনীত রাজা হেতু ক্রন্দন করিবে; কিন্তু সদাপ্রভু সেই দিন তোমাদিগকে উত্তর দিবেন না। 19তথাপি লোকেরা শমূয়েলের বাক্যে কর্ণপাত করিতে অসম্মত হইয়া কহিল, না, আমাদের উপরে একজন রাজা চাই; 20তাহাতে আমরাও আর সকল জাতির সমান হইব, এবং আমাদের রাজা আমাদের বিচার করিবেন ও আমাদের অগ্রগামী হইয়া যুদ্ধ করিবেন। 21তখন শমূয়েল লোকদের সমস্ত কথা শুনিয়া সদাপ্রভুর কর্ণগোচরে নিবেদন করিলেন। 22তাহাতে সদাপ্রভু শমূয়েলকে কহিলেন, তুমি তাহাদের বাক্যে কর্ণপাত কর, তাহাদের নিমিত্ত একজনকে রাজা কর। পরে শমূয়েল ইস্রায়েল লোকদিগকে কহিলেন, তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন নগরে যাও।

যাত্রা পুস্তক, ৩১ অধ্যায়, ১২-১৭ শ্লোক

দুই জন প্রধান শিল্পকার
 
1আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, 2দেখ, আমি যিহূদা-বংশীয় হূরের পৌত্র ঊরির পুত্র বৎসলেলের নাম ধরিয়া ডাকিলাম। 3আর আমি তাহাকে ঈশ্বরের আত্মায়- জ্ঞানে, বুদ্ধিতে, বিদ্যায় ও সর্বপ্রকার শিল্প-কৌশলে- পরিপূর্ণ করিলাম; 4যাহাতে সে কৌশলের কার্য কল্পনা করিতে পারে, স্বর্ণ, রৌপ্য ও পিত্তলের কার্য করিতে পারে, 5খচনার্থক মণি কাটিতে, কাষ্ঠ খুদিতে ও সর্বপ্রকার শিল্পকার্য করিতে পারে। 6আর দেখ, আমি দান-বংশজাত অহীষামকের পুত্র অহলীয়াবকে তাহার সহকারী করিয়া দিলাম, এবং সকল বিজ্ঞমনা লোকের হৃদয়ে বিজ্ঞতা দিলাম; অতএব আমি তোমাকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সেই সমস্ত তাহারা নির্মাণ করিবে; 7সমাগম-তাম্বু, সাক্ষ্য-সিন্দুক, তাহার উপরিস্থ পাপাবরণ, এবং তাম্বুর সমস্ত পাত্র; 8আর মেজ ও তাহার পাত্র সকল, নির্মল দীপবৃক্ষ ও তাহার পাত্র সকল, এবং ধূপবেদি; 9আর হোমবেদি ও তাহার পাত্র সকল, এবং প্রক্ষালন-পাত্র ও তাহার খুরা; 10এবং সূক্ষ্ম শিল্পিত বস্ত্র, যাজন কর্ম করণার্থে হারোণ যাজকের পবিত্র বস্ত্র, ও তাহার পুত্রদের বস্ত্র; 11এবং অভিষেকার্থ তৈল ও পবিত্র স্থানের জন্য সুগন্ধি ধূপ; আমি তোমাকে যেমন আজ্ঞা করিয়াছি, তদনুসারে তাহারা সমস্তই করিবে।
 
বিশ্রামদিন
 
12আর সদাপ্রভু মোশিকে কহিলেন, তুমি ইস্র্রায়েল-সন্তানগণকে আরও এই কথা বল, 13তোমরা অবশ্য আমার বিশ্রামদিন পালন করিবে; কেননা তোমাদের পুরুষানুক্রমে আমার ও তোমাদের মধ্যে ইহা এক চিহ্ন রহিল, যেন তোমরা জানিতে পার যে, আমিই তোমাদের পবিত্রকারী সদাপ্রভু, 14অতএব তোমরা বিশ্রামদিন পালন করিবে, কেননা তোমাদের নিমিত্তে সেই দিন পবিত্র; যে কেহ সেই দিন অপবিত্র করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে; কারণ যে কেহ ঐ দিনে কার্য করিবে, সে আপন লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবে। 15ছয় দিন কার্য করা হইবে, কিন্তু সপ্তম দিন সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামার্থক পবিত্র বিশ্রামদিন, সেই বিশ্রামদিনে যে কেহ কার্য করিবে, তাহার প্রাণদণ্ড অবশ্য হইবে। 16ইস্র্রায়েল-সন্তানগণ চিরস্থায়ী নিয়ম বলিয়া পুরুষানুক্রমে বিশ্রামদিন মান্য করিবার জন্য বিশ্রামদিন পালন করিবে। 17আমার ও ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে ইহা চিরস্থায়ী চিহ্ন; কেননা সদাপ্রভু ছয় দিনে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী নির্মাণ করিয়াছিলেন, আর সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিয়া আপ্যায়িত হইয়াছিলেন।
18পরে তিনি সীনয় পর্বতে মোশির সহিত কথা সাঙ্গ করিয়া সাক্ষ্যের দুইটি ফলক, ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা লিখিত দুইটি প্রস্তরফলক, তাঁহাকে দিলেন।

নির্গমন পুস্তক ৩৩ অনুচ্ছেদ, ১৮-২৩ শ্লোক

1তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তোমার যে লোকদের তুমি মিসর দেশ থেকে বের করে এনেছ তাদের নিয়ে তুমি এই জায়গা ছেড়ে আমার ওয়াদা করা দেশে যাও। সেই দেশ সম্বন্ধে আমি ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের কাছে এই ওয়াদা করেছিলাম যে, আমি তাদের বংশধরদের তা দেব। 2আমি তোমাদের আগে আগে একজন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে সেই দেশ থেকে কেনানীয়, আমোরীয়, হিট্টীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের তাড়িয়ে দেব। 3সেখানে দুধ, মধু আর কোন কিছুর অভাব নেই। কিন্তু তোমরা একটা একগুঁয়ে জাতি বলে আমি তোমাদের সংগে যাব না, গেলে পথেই আমি তোমাদের শেষ করে দেব।”
4এই বিপদের কথা শুনে লোকেরা কান্নাকাটি করতে লাগল। তারা কেউ আর কোন গহনাগাঁটি পরল না, 5কারণ মাবুদ মূসাকে বলেছিলেন, “বনি-ইসরাইলদের বল যে, তারা একটা একগুঁয়ে জাতি। সেইজন্য যদি আমি এক মুহূর্তের জন্যও তাদের সংগে থাকি, তবে আমি তাদের শেষ করে দেব। তাদের গায়ে গহনাগাঁটি যা আছে তা এখন তারা খুলে ফেলুক। তারপর আমি ঠিক করব তাদের নিয়ে আমি কি করব।” 6কাজেই বনি-ইসরাইলরা তুর পাহাড়েই তাদের গহনাগাঁটি খুলে ফেলল; তারা আর কখনও তা পরে নি।
পবিত্র মিলন-তাম্বু
7মূসা বনি-ইসরাইলদের ছাউনির বাইরে দূরে একটা বিশেষ তাম্বু খাটাতেন আর সেটাকে তিনি বলতেন “মিলন-তাম্বু।” মাবুদের কাছ থেকে কেউ কিছু জানতে চাইলে সে ঐ মিলন-তাম্বুর কাছে যেত। 8মূসা যখন সেই মিলন-তাম্বুতে যেতেন তখন লোকেরা নিজের নিজের তাম্বুর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকত এবং তিনি সেই তাম্বুতে না ঢোকা পর্যন্ত তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। 9মূসা সেই তাম্বুতে ঢুকবার পর মেঘের থামটি নেমে আসত এবং মাবুদ যতক্ষণ মূসার সংগে কথা বলতেন ততক্ষণ পর্যন্ত তা তাম্বুর দরজার কাছে থাকত। 10লোকেরা যখনই এই থামটিকে তাম্বুর দরজার কাছে দেখত তখন প্রত্যেকে উঠে নিজের নিজের তাম্বুর দরজার কাছে থেকে মাবুদকে সেজদা করত। 11মানুষ যেমন মুখোমুখি হয়ে বন্ধুর সংগে কথা বলে মাবুদ ঠিক তেমনি করেই মূসার সংগে কথা বলতেন। পরে মূসা বনি-ইসরাইলদের ছাউনিতে ফিরে যেতেন কিন্তু নূনের ছেলে ইউসা মিলন-তাম্বু ছেড়ে যেতেন না। ইউসা নামে এই যুবকটি ছিলেন মূসার সাহায্যকারী।
হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে মাবুদের ওয়াদা
12পরে মূসা মাবুদকে বললেন, “তুমি আমাকে এই লোকদের নিয়ে যেতে বলেছ, কিন্তু আমার সংগে কাকে পাঠাবে তা তো বলছ না। তুমি বলেছ তুমি আমাকে তোমার নিজের বলেই জান আর আমার উপর তোমার রহমত রয়েছে। 13যদি আমি তোমার রহমত পেয়েই থাকি তবে তুমি কি উদ্দেশ্যে কি কর তা আমাকে জানতে দাও যাতে আমি তোমাকে বুঝতে পারি আর তোমার রহমতের মধ্যে থাকতে পারি। মনে রেখ, এই জাতি তোমারই।”
14জবাবে মাবুদ বললেন, “আমি নিজেই তোমার সংগে যাব এবং তোমাকে বিশ্রাম দেব।”
15মূসা তাঁকে বললেন, “তুমি যদি আমাদের সংগে না যাও তবে এখান থেকে আমাদের পাঠিয়ো না। 16তুমি আমাদের সংগে না গেলে লোকে কি করে বুঝবে যে, আমার উপর ও তোমার বান্দাদের উপর তোমার রহমত রয়েছে? আমি ও তোমার বান্দারা যে দুনিয়ার অন্যান্য লোকদের চেয়ে আলাদা তা আর কি দিয়ে বুঝা যাবে?”
17তখন মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি যা বললে আমি তা করব, কারণ আমার রহমত তোমার উপর রয়েছে আর আমি তোমাকে আমার নিজের বলেই জানি।”
18মূসা বললেন, “তা হলে তোমার মহিমা আমাকে দেখাও।”
19মাবুদ বললেন, “আমি আমার সব মহত্ত্ব তোমার সামনে তুলে ধরব। তোমার সামনে আমি আমার ‘মাবুদ’ নাম ঘোষণা করব। আমার যাকে ইচ্ছা তাকে রহমত দান করব, যাকে ইচ্ছা তাকে মমতা করব। 20কিন্তু তুমি আমার মুখ দেখতে পাবে না, কারণ আমাকে দেখবার পর কেউ বেঁচে থাকতে পারে না।” 21তারপর মাবুদ বললেন, “তুমি আমার কাছে এই জায়গাটার দিকে তাকিয়ে দেখ। এই পাথরের পাহাড়ের থাকটার উপরে গিয়ে তুমি দাঁড়াবে। 22আমার মহিমা যখন তোমার সামনে দিয়ে চলে যাবে তখন আমি তোমাকে পাহাড়ের ফাটলের মধ্যে সরিয়ে দেব এবং আমি চলে না যাওয়া পর্যন্ত তোমাকে আমার হাত দিয়ে ঢেকে রাখব। 23তারপর আমি আমার হাত সরিয়ে নিলে তুমি আমার পিছনের দিকটা দেখতে পাবে, কিন্তু আমার মুখ দেখতে পাওয়া সম্ভব নয়।

নির্গমন পুস্তক ২৪:১০-১১

 
1পরে মাবুদ মূসাকে বললেন, “হারুন, নাদব, অবীহূ আর বনি-ইসরাইলদের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা এবং তুমি আমার কাছে উঠে এস। আসবার সময়ে তোমরা দূরে থেকে আমাকে সেজদা করবে। 2কিন্তু তুমি একাই আমার কাছে এগিয়ে আসবে, অন্যেরা আসবে না। এরা ছাড়া অন্য বনি-ইসরাইলরা যেন তোমার সংগে উঠে না আসে।”
3মূসা যখন ফিরে গিয়ে লোকদের কাছে মাবুদের সমস্ত কথা বললেন এবং তাঁর সব আইন ঘোষণা করলেন তখন লোকেরা একসংগে বলল, “মাবুদ যা যা বলেছেন আমরা তা সবই করব।” 4মাবুদ যে সব কথা বলেছিলেন মূসা তা লিখে রাখলেন।
পরের দিন মূসা খুব সকালে উঠে পাহাড়ের নীচে একটা কোরবানগাহ্‌ তৈরী করলেন এবং ইসরাইলীয় বারো গোষ্ঠীর কথা মনে করে বারোটা পাথরের থাম তৈরী করলেন। 5তারপর তিনি কয়েকজন ইসরাইলীয় যুবককে পাঠিয়ে দিলেন আর তারা গিয়ে মাবুদের উদ্দেশে অনেকগুলো পোড়ানো-কোরবানী দিল এবং যোগাযোগ-কোরবানী হিসাবে অনেক ষাঁড়ও কোরবানী দিল। 6মূসা কোরবানীর রক্তের অর্ধেকটা নিয়ে কয়েকটা পাত্রে রাখলেন এবং বাকী অর্ধেক তিনি কোরবানগাহের উপরে ছিটিয়ে দিলেন। 7তারপর তিনি ব্যবস্থা-লেখা কিতাবটা নিয়ে লোকদের তেলাওয়াত করে শোনালেন।
এর জবাবে লোকেরা বলল, “আমরা বাধ্য থাকব এবং মাবুদ যা যা বলেছেন তা সবই পালন করব।”
8এই কথা শুনে মূসা রক্ত নিয়ে লোকদের উপর ছিটিয়ে দিয়ে বললেন, “এই সেই ব্যবস্থার রক্ত, যে ব্যবস্থা মাবুদ তোমাদের জন্য এই সব কথা অনুসারে স্থির করেছেন।”
9-10এর পর মূসা, হারুন, নাদব, অবীহূ এবং বনি-ইসরাইলদের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা পাহাড়ের উপর উঠে গিয়ে বনি-ইসরাইলদের আল্লাহ্‌কে দেখলেন। তাঁর পায়ের তলায় ছিল পরিষ্কার আকাশের মত নীলকান্তমণি দিয়ে তৈরী মেঝের মত একটা কিছু। 11বনি-ইসরাইলদের এই সব নেতারা যদিও আল্লাহ্‌কে দেখলেন তবু তিনি তাঁদের মেরে ফেললেন না। তাঁরা তাঁকে দেখলেন এবং খাওয়া-দাওয়া করলেন।
তুর পাহাড়ের উপর হযরত মূসা (আঃ)
12তারপর মাবুদ মূসাকে বললেন, “তুমি পাহাড়ের উপরে আমার কাছে উঠে এসে কিছুকাল এখানেই থাক। লোকদের শিক্ষা দেবার জন্য পাথরের যে ফলকের উপর আমি শরীয়ত ও হুকুম লিখে রেখেছি তা আমি তোমাকে দেব।”
13এই কথা শুনে মূসা তাঁর সাহায্যকারী ইউসাকে নিয়ে রওনা হলেন। তারপর তিনি আল্লাহ্‌র পাহাড়ে গিয়ে উঠলেন। 14তিনি বৃদ্ধ নেতাদের বলে গেলেন, “আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনারা এখানেই অপেক্ষা করুন। হারুন আর হূর আপনাদের সংগে রইলেন। ঝগড়া-বিবাদ হলে লোকেরা যেন তাঁদের কাছে যায়।”
15মূসা পাহাড়ে উঠবার সময় পাহাড়টা মেঘে ঢেকে গেল, 16আর তুর পাহাড়ের উপর মাবুদের মহিমা স্থির হয়ে রইল। ছয় দিন পর্যন্ত পাহাড়টা মেঘে ঢাকা রইল। তারপর সপ্তম দিনে সেই মেঘের মধ্য থেকে মাবুদ মূসাকে ডাকলেন। 17বনি-ইসরাইলদের চোখে মাবুদের মহিমা জ্বলন্ত আগুনের মত হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দেখা দিল। 18পাহাড় বেয়ে উঠতে উঠতে মূসা সেই মেঘের ভিতরে ঢুকে গেলেন। তিনি চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাত সেই পাহাড়ে রইলেন।

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...