1যীশু তাঁর বারোজন শিষ্যকে এই সমস্ত নির্দেশ দেবার পর সেইস্থান ছেড়ে শিক্ষা দিতে ও প্রচার করতে বিভিন্ন নগরে চলে গেলেন।
বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের বার্তা ও যীশুর উত্তর
(লুক 7:18-35)
2বাপ্তিষ্মদাতা যোহন কারাগারে বসে খ্রীষ্টের কাজের বিবরণ শুনতে পেলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের মারফৎ খ্রীষ্টকে জিজ্ঞাসা করে পাঠালেন, 3‘যাঁর আগমনের কথা আছে আপনিই কি তিনি? না, আমার অন্য কারও অপেক্ষায় থাকব।’
4যীশু তাঁদের উত্তর দিলেন, তোমরা যা দেখছ ও শুনছ ফিরে গিয়ে তা-ই যোহনকে জানাও 5অন্ধেরা দেখতে পাচ্ছে, খঞ্জেরা হেঁটে বেড়াচ্ছে, কুষ্ঠরোগীরা সুস্থ ও শুচি হচ্ছে, বধিরেরা শুনতে পাচ্ছে, মৃতেরা পুনর্জীবিত হচ্ছে এবং দীনদরিদ্রের কাছে সুসমাচার প্রচারিত হচ্ছে। 6ধন্য সেই ব্যক্তি আমার সম্বন্ধে যার মনে কোন সংশয় নেই।
7তাঁরা চলে গেলে যীশু যোহনের বিষয়ে জনতাকে বললেন, তোমরা কী দেখতে মরুপ্রান্তরে গিয়েছিলে? বাতাসের বেগে দুলছে এমন এক নলখাগড়া? 8তবে কী দেখতে গিয়েছিলে? সৌখীন পোষাক পরা কোন লোককে? দেখ, যারা সৌখীন পোষাক পরে তারা তো রাজপ্রাসাদে থাকে। 9তবে তোমরা কি জন্য গিয়েছিলে? কোন নবীকে দেখতে কি? আমি সত্যি তোমাদের বলছি, তিনি নবীর চেয়ে অনেক বড়। 10ইনিই সেই ব্যক্তি যাঁর সম্বন্ধে শাস্ত্রে লেখা হয়েছে: দেখ, আমার দূতকে পাঠালাম তোমরা অগ্রবর্তী করে, তিনিই তোমার জন্য পত প্রস্তুত করবেন।11আমি তোমাদের সত্যই বলছি, নারীগর্ভজাতদের মধ্যে বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের চেয়ে মহত্তর কেউ নেই। তা সত্ত্বেও ঐশরাজ্য যে সবচেয়ে নগণ্য সেও যোহনের চেয়ে মহান। 12বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের প্রচারের সময় থেকে আজ পর্যন্ত স্বর্গরাজ্য প্রবল আক্রমণের সম্মুখীন হচ্ছে এবং পরাক্রমীরা সবলে তা অধিকার করছে। 13সকল নবী, এমন কি বিধান শাস্ত্রও যোহনের কাল পর্যন্তই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। 14তাঁদের কথা যদি বিশ্বাস কর, তাহলে জেনো, যোহনই সেই এলিয়, যাঁর আবির্ভাব ঘটবে।15শোনার মত কান যদি তোমাদের থাকে, তবে শোন।
16কিন্তু তার সঙ্গে এ যুগের মানুষের তুলনা করব? তারা এমন একদল বালকের মত, যারা বাজারে বসে সঙ্গীদের ডেকে বলছে, 17‘আমরা তোমাদের জন্য বাঁশী বাজালাম, কিন্তু তোমরা নাচলে না, আমরা বিলাপ করলাম, তবুও তোমরা কাঁদলে না।’ 18যোহন এলেন, তিনি পান ভোজনে আসক্ত ছিলেন না, তাই লোকে বলে, ‘তিনি অপদেবতাগ্রস্ত’।19মানবপুত্র এলেন, তিনি আহার করছেন, পানও করছেন, আর তারা বলে, দেখ, লোকটা পেটুক ও মদ্যপ, এবং কর আদায়কারী ও পাপিষ্ঠদের সঙ্গেই তার বন্ধুত্ব কর্মেই প্রজ্ঞার যর্থাথ পরিচয়।
অবিশ্বাসীদের প্রতি ধিক্কার
(লুক 10:13-15)
20যে সমস্ত নগরে তিনি তাঁর অধিকাংশ অলৌকিক কার্য সাধন করেছিলেন, তিনি সেইগুলিকেই ধিক্কার দিতেঐ লাগলেন, কারণ সেখানকার অধিবাসীদের হৃদয়ের কোন পরিবর্তন হয় নি। 21হায় কোরাসিন! হায় বেৎসৈদা! ধিক তোমাদের! তোমাদের মধ্যে যে সমস্ত অলৌকিক কার্য সাধিত হয়েছে, সে সব যদি টায়ার ও সীদোন অঞ্চলে সাধিত হত তাহলে সেখানকার লোকজন অনেক আগেই হৃদয়ের পরিবর্তন করে চট পরিধান করত ও দেহে ভস্ম মাখত। 22কিন্তু আমিই বলছি, বিচারের দিনে ঈশ্বর তোমাদের চেয়ে টায়ার ও সীদোনের লোকদের প্রতি অধিকতর করুণা প্রদর্শন করবেন। 23আর হে কফরনাহুম নগর, নিজেকে স্বর্গ পর্যন্ত উন্নত করতে চেয়েছিলে? নরকেই হবে তোমার অধোগতি কারণ তোমার মধ্যে যে সমস্ত অলৌকিক কর্ম সাধিত হয়েছে তা যদি সদোম শহরে সাধিত হত তাহলে সদোমের অস্তিত্ব আজও বজায় থাকত। 24আমি তোমাদের বলছি, বিচারের দিনে তোমাদের দুদর্শা হবে সদোমের চেয়েও ঘোরতর।
যীশুর উদাত্ত আহ্বান
(লুক 10:21-22)
25যীশু তখন এই কথাগুলি বললেন, হে পিতা। হে স্বর্গমর্ত্যের প্রভু। আমি তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকদের কাছে তুমি এ সমস্ত বিষয় গোপন রেখেছ, প্রকাশ করেছ অবোধদের কাছে। 26হ্যাঁ, পিতা, এতেই তোমার আনন্দ।
27আমার পিতা সব কিছু আমার হাতেই সমর্পণ করেছেন। পুত্রকে কেউ জানে না, কেবল পিতাই জানেন এবং পিতাকে কেউ জানে না, কেবল পুত্রই জানেন, আর পুত্র যাদের কাছে তাঁকে প্রকাশ করতে চান, তারাও জানে।
28হে পরিশ্রান্ত, ভারাক্রান্ত জন আমার কাছে এস, আমি দেব তোমাদের বিশ্রাম। 29আমার জোয়াল তোমার কাঁধে তুলে নাও, আমার কাছেই গ্রহণ কর শিক্ষা, কারণ আমি শান্ত ও নম্র। তাহলে তোমরা জীবনের স্বস্তি পাবে। 30আমার জোয়াল সুবহ, আমার দেওয়া ভারও লঘু।
যীশুর রূপান্তর
(মার্ক 9:2-13; লুক 9:28-36)
1ছয়দিন পরে যীশু পিতর, যাকোব ও তাঁর ভাই যোহনকে সঙ্গে নিয়ে এক উঁচু পাহাড়ে নিভৃত স্থানে গেলেন। 2তাঁদের সামনেই তাঁর রূপান্তর ঘটল। সূর্যের এত দীপ্তিমান হয়ে উঠল তাঁর মুখমণ্ডল, তাঁর বসন হল আলোকশুভ্র। 3ঐ সময়ে মোশি ও এলিয় তাঁদের সামনে আবির্ভূত হয়ে যীশুর সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। 4তখন পিতর যীশুকে বললেন, প্রভু, আমরা এখানে থাকলেই ভাল হয়। যদি আপনার ইচ্ছা হয় তাহলে আমি এখানে তাঁবু খাটিয়ে ফেলি-আপনার জন্য একটি, মোশির জন্য একটি ও এলিয়ের জন্য একটি। 5তিনি যখন কথা বলছিলেন সেই সময়ে উজ্জ্বল একখণ্ড মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল এবং সেই মেঘের মধ্য থেকে এই বাণী ঘোষিত হলঃ ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, আমার পরম প্রীতিভাজন-এঁর কথা শোন। 6এই কথা শুনে শিষ্যেরা ভয়ে অভিভূত হয়ে মাটির উপর উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। 7যীশু কাছে এসে তাঁদের স্পর্শ করে বললেন, ওঠ, ভয় করো না। 8তাঁরা তখন তাকিয়ে দেখলেন, যীশু ছাড়া আর কেউ সেখানে নেই।
9পাহাড় থেকে নেমে আসার সময়ে যীশু তাঁদের এই আদেশ দিলেন, মানবপুত্র যতদিন না মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হন ততদিন এই দর্শনের কথা তোমরা কাউকে বলো না। 10শিষ্যেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তবে শাস্ত্রীরা কেন বলেন যে প্রথমে এলিয়ের আবির্ভাব হবে?11তিনি বললেন, এলিয় অব্যশই আসবেন এবং সমস্তই পুনস্থাপন করবেন। 12কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, এলিয় তো এসেছেন, কিন্তু কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি, বরং তাঁর প্রতি যথেচ্ছ দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। ঠিক তেমনি মানবপুত্রকেও লোকের হাতে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হবে। 13শিষ্যরা তখন বুঝতে পারলেন যে তিনি বাপ্তিষ্মদাতা যোহন সম্পর্কেই এ কথা বলছেন।
অপদেবতাগ্রস্থ বালকের আরোগ্যলাভ
(মার্ক 9:14-29; লুক 9:37-43)
14তাঁরা যখন জনতার কাছে এলেন তখন এ লোক যীশুর কাছে এগিয়ে এসে নতজানু হয়ে তাঁকে বলল, 15প্রভু আমার ছেলেটির প্রতি দয়া করুন। মৃগীরোগে আক্রান্ত হয়ে সে দারুণ কষ্ট পাচ্ছে। অনেকবার সে আগুনে ও জলে পড়ে গেছে। 16আমি তাকে আপনার শিষ্যদের কাছে নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু তাঁরা তাকে সুস্থ করতে পারলেন না। 17যীশু বললেন, অবিশ্বাসী ও স্বেচ্ছাচারী বংশ। আর কত কাল আমি তোমাদের মধ্যে থাকব? কতকাল আমি তোমাদের সহ্য করব? 18যীশু তাকে ধমক দিলেন তখনই সেই অশুচি আত্মা ছেলেটিকে ছেড়ে বেরিয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থ হল। 19তখন শিষ্যেরা একান্তে যীশুর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কেন ওটাকে তাড়াতে পারলাম না?20তিনি তাঁদের বললেন, এর কারণ হল তোমাদের বিশ্বাস দুর্বল। আমি সত্যিই বলছি, তোমাদের যদি একটি সরষে-পরিমাণ বিশ্বাস থাকে, আর তোমরা যদি পর্বতকে বল, ‘এখান থেকে সরে ওখানে যাও-তবে তা সরে যাবে। তোমাদের অসাধ্য কিছুই থাকবে না।’
মৃত্যু সম্বন্ধে পুনরায় যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী
(মার্ক 9:30-32; লুক 9:43-45)
22তাঁরা সকলে যখন গালীল পরিভ্রমণ করছিলেন তখন যীশু তাঁদের বললেন, মানবপুত্রকে মানুষের অধীনে সমর্পণ করা হবে, 23তারা তাঁকে হত্যা করবে কিন্তু তৃতীয় দিনে তিনি পুনরুত্থিত হবেন। এ কথা শুনে শিষ্যরা অত্যন্ত বিষণ্ণ হলেন।