প্রশ্ন: ১৭৩ : সাফা ও মারওয়া পাহাড় ।



আল্লাহ তায়ালার অনন্য নিদর্শনসমূহের মধ্যে সাফা-মারওয়া অন্যতম। হজ ও ওমরা পালনকারীদের জন্য এখানে দৌড়ানো আবশ্যক। সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের সাঈ-তে রয়েছে সুনির্দিষ্ট স্থান, নিয়ম ও পদ্ধতি।


‘সাঈ’ শব্দের অর্থ হলো দৌড়ানো। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে বিশেষ পদ্ধতিতে সাতবার দৌড়ানোকে সাঈ বলে। ‘সাঈ’ হলো হজের রোকন। হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করা ওয়াজিব। সাফা ও মারাওয়া পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে নির্ধারিত নিয়মে সাঈ করতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া (পাহাড় দুটি) আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কাবাগৃহে হজ এবং ওমরা সম্পন্ন করে; তার জন্য এ (পাহাড়) দুটি প্রদক্ষিণ (সাঈ) করলে কোনো পাপ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৮)




‘সাঈ’ পায়ে হেঁটে সম্পন্ন করতে হয়। হেঁটে সাঈ করতে অপারগ হলে বাহনের সাহায্যেও আদায় করা যায়। তবে বিনা ওজরে বাহন ব্যবহার করলে দম বা কুরবানি ওয়াজিব হয়। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোই হলো সাঈ-এর রোকন। সাফা ও মারওয়া পাহাড় ব্যতীত এদিক-ওদিক অথবা অন্য কোথাও দৌড়ালে ‘সাঈ’ আদায় হবে না।


সাঈ’র ইতিহাস : ইসলামের ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহর আদেশে তাঁর স্ত্রী হজরত হাজেরা ও শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ পবিত্র কাবা ঘর সংলগ্ন সাফা ও মারওয়ার কাছে মরুভূমিতে রেখে আসেন।


তাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে রেখে হজরত হাজেরা পানির জন্য কিংবা কোনো কাফেলার সন্ধানে সাফা থেকে মারওয়া এবং মারওয়া থেকে সাফায় ৭বার আসা-যাওয়া (দৌড়াদৌড়ি) করেন।


প্রথমে তিনি আশ-পাশের এলাকা দেখার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠেন। সেখান থেকে কোনো দিকে কোনো কিছু না দেখার পর তিনি পার্শ্ববর্তী মারওয়া পাহাড়ে উঠেন।


পাহাড়ের চূড়া থেকে তিনি হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেতেন। কিন্তু যখনই দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে আসতেন, সেখান থেকে তাকে দেখা সম্ভব ছিল না; ফলে তিনি পাহাড়দ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তিনি একটু দ্রুতগতিতে ছুটতেন।


এ দৌড়াদৌড়ি আল্লাহ তাআলার পছন্দ হয়ে যায়। যা তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরআনে আয়াতে তাঁর নির্দশন হিসেবে উল্লেখ করেন। ফলে সাফা মারওয়ায় সাঈ বা দৌড়ানো হজ ও ওমরার রোকন হিসেবে সাব্যস্ত হয়।


‘সাঈ’ করার সময় পুরুষ হাজীদের জন্য এই স্থানটুকু দ্রুত (কিছুটা হাল্কা দৌড়ের মতো) পার হতে হবে। যার দুই প্রান্তে সবুজ বাতি দিয়ে চিহ্নিত করে দেয়া আছে। তবে মহিলাদের দৌড়াতে হয় না; কারণ হজরত হাজেরার দৌড়ানোর বদৌলতে এবং তাঁর সম্মানে আল্লাহ তাআলা কেয়ামত পর্যন্ত সব মহিলার জন্য দ্রুত চলাকে মওকুফ ও মুলতবি করে দিয়েছেন।






উইকিপিডিয়া থেকে :






সাফা ও মারওয়া (আরবি: الصفا‎‎ Aṣ-Ṣafā, المروة al-Marwah) সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত দুটি ছোট পাহাড়। এই পাহাড়দ্বয় হজ্জউমরার সাথে সম্পর্কিত। হজ্জ ও উমরার অংশ হিসেবে এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাত বার আসা যাওয়া করতে হয়।




পরিচ্ছেদসমূহ


১ইতিহাস
২স্থান
৩সায়ি
৪তথ্যসূত্র

ইতিহাস:


ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, ইবরাহিম (আ) আল্লাহর আদেশে তার স্ত্রী হাজেরা (আ) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ) কে অল্প কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ সাফা ও মারওয়ার কাছে মরুভূমিতে রেখে আসেন। তাদের খাবার ও পানি শেষ হয়ে যাওয়ার পর হাজেরা পানির জন্য এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাওয়া আসা করেন। এসময় তিনি ইসমাইল (আ) কে রেখে যান।


প্রথমে তিনি আশেপাশের এলাকা দেখার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠেন। তিনি কোনো কাফেলার সন্ধান পাওয়ার আশায় ছিলেন যাতে তাদের কাছ থেকে সামান্য পানি চেয়ে পিপাসা মেটানো যায়। কিছু না দেখার পর তিনি পার্শ্ববর্তী মারওয়া পাহাড়ে উঠেন। মূলত, মরুভুমিতে মরিচিকা দেখে পানির আশায় তিনি দৌড়ে যান। বারবার তার দৃষ্টিভ্রম হয় এবং সামান্য পানি পাওয়ার আশায় এভাবে সাতবার চলাচলের পর ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে ক্রন্দনরত শিশু ইসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বের হচ্ছে। মূলত, ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ) এর আঘাতে এই পানির ধারাটি সৃষ্টি হয়। বিবি হাজেরা এই ঝর্ণা পাথর দিয়ে বেধে দেন। এরপর থেকে এটি জমজম কুয়া নামে পরিচিত হয়।

স্থান:


কাবা মসজিদুল হারামে অবস্থিত। সাফা পাহাড় এর থেকে প্রায় ১০০ মি (৩৩০ ফুট) দূরে অবস্থিত। মারওয়া কাবা থেকে ৩৫০ মি (১১৫০ ফুট) দূরে অবস্থিত। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী দূরত্ব ৩০০ মি (৯৮০ ফুট)। সাতবার আসা যাওয়া করার পর মোটামুটি ২.১ কিমি (১.৩ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। পাহাড়দ্বয় ও মধ্যবর্তী পথ বর্তমানে দীর্ঘ গ্যালারির মধ্যে অবস্থিত এবং মসজিদের অংশ।
সায়ি:


হজ্জউমরার সময় এই দুই পাহাড়ের মধ্যে সাতবার আশা যাওয়া করতে হয়। একে সায়ি বলে। এটি হজ্জ ও উমরার অবশ্য পালনীয় বিধান।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...