প্রশ্ন: ৬৮ : ঈমান ও ইয়াকীন কি ?

ঈমান" ও ঈয়াকিন কি ? ---------------------------- ঈমান অর্থঃ ইমান অর্থ বিশ্বাস স্থাপন করা । অন্য অর্থে আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি প্রদান, নির্ভর করা বা মেনে নেওয়াকে বুঝায় । ইসলামের পরিভাষায় ইসলামি শরিয়তের যাবতীয় বিধি বিধান অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করা, মুখে বা প্রত্যক্ষ স্বীকার করা এবং বাস্তব জীবনে তার আমল করাকে ঈমান বলে। আর ঈয়াকিন বলতে ঈমানের পরিপূর্ণতাকে বুঝায়। ঈমানের সংজ্ঞাঃ প্রিয় রাসুল (সঃ) বলেছেনঃ "ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্‌ এবং তাঁর ফেরেশতা সমূহ, কিতাব সমূহ, রাসুলগন, পরকাল, তাগদির (ভাগ্য / ভাল মন্দ, যা আল্লাহ্‌র তরফ থেকেই প্রাপ্তি হয়) ইত্যাদি বিষয়ের উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ।" ......(মুসলিম শরিফ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৮) বিষদ বর্ণনায় বুঝা যায় যে, ইসলামের কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস এবং তদনুযায়ী আমল করাকেই ঈমান বলে । ইসলামের এই মৌলিক বিষয় হচ্ছে সাত (৭) টি । যেমন ১/আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস । ২/ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস । ৩/আসমানি কিতাব সমূহের প্রতি বিশ্বাস । ৪/নবি ও রাসলগণের প্রতি বিশ্বাস । ৫/আখিরাতে বিশ্বাস । ৬/তাকদিরে বিশ্বাস । ৭/মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে (কেয়ামত ময়দানে পুনরুত্থান) বিশ্বাস । ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, ‘ইয়াকীন হল পূর্ণ ঈমান।’ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘বান্দা প্রকৃত তাকওয়ায় পৌঁছতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে, মনে যে বিষয় সন্দেহের সৃষ্টি করে, তা পরিত্যাগ না করে।’ মুজাহিদ (রাঃ) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘‘অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমি আপনাকে এবং নূহকে একই ধর্মের আদেশ করেছি’’- (সূরাহ্ শূরা ৪২/১৩)। ইবনু ‘আববাস (রাঃ) বলেন, ‘‘অর্থাৎ পথ ও পন্থা’’- (সূরাহ্ আল-মায়িদাহ ৫/৪৮)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ঈমানের ষাটেরও অধিক শাখা আছে। আর লজ্জা হচ্ছে ঈমানের একটি শাখা। (মুসলিম ১/১২ হাঃ ৩৫, আহমাদ ৯৩৭২) 

ইয়াকীনের তিনটি স্তর। যথাঃ
* এলমুল ইয়াকীন (জানিয়া বিশ্বাস)
* আইনুল ইয়াকীন (প্রত্যক্ষ বিশ্বাস)
* হক্কুল ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)
কিতাব হইতে অধ্যায়ন পূর্বক অথবা গুরুজন বা শিক্ষক হইতে শুনিয়া ইয়াকীন বা ঈমানের বিভিন্ন শাখার উপরে যে বিশ্বাস জন্মে-তাহাকে ‘এলমুল ইয়াকীন' বলে। আর শরীয়তে যে সকল বিষয়ের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে-সে সমস্ত বিষয়াদি স্বচক্ষে দেখিয়া অন্তরে যে বিশ্বাস জন্মে-তাহাই ‘‘আইনুল ইয়াকীন'' এবং নিজ সত্ত্বার মধ্যে কোন বিষয় সম্পর্কে যে উপলব্ধি জন্মে-তাহাই হক্কুল ইয়াকীন। এলমুল ইয়াকীন বা আইনুল ইয়াকীনের পর্যায়ে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু হক্কুল ইয়াকীনের পর্যায়ে ঈমান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা হইতে সুরক্ষিত। যেমন পেটে ব্যথা একটি রোগ বিশেষ। পেটে ব্যথায় ভীষণ কষ্ট হয়। আক্রান্ত রোগী যন্ত্রণায় ছটফট করে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি পেটে ব্যথার উক্তরূপ অভিজ্ঞতা অর্জন করে। এমতাবস্থায় কেহ যদি রোগীকে বলে যে, পেটে ব্যথায় আরাম বোধ হয়, ভাল ঘুম হয় তবে যেমন উক্ত রোগী তাহা কখনও বিশ্বাস করিবে না, তেমনি হক্কুল ইয়াকীনধারী ব্যক্তির ঈমান বা বিশ্বাসকে নষ্ট করার জন্য শয়তান ও নাফ্‌স যতই প্ররোচনা বা কৌশল তাঁহার নিকট উপস্থাপন করুক না কেন-তাহা সে বিশ্বাস করিবে না। শয়তানী কোন শক্তিই তাঁহার ঈমানকে নষ্ট করিতে পারিবে না।


No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...