ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ও ইমামের সম্মুখে দেয়া যে, হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা তথা ইজমায়ে আযীমত দ্বারা প্রমাণিত এবং “ছানী আযান” মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে খতীবের সম্মুখে দেয়াই যে খাছ সুন্নত, নিম্নে বিশ্ব বিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য তাফসীর, হাদীছ শরীফের শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে তাঁর অকাট্ট দলীল সমূহ পেশ করা হলোঃ
১. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময়ে একটি মাত্র আযান দেয়া হতো। আর তা দেয়া হতো- যখন তিনি মিম্বরে বসতেন। অতঃপর মিম্বর থেকে অবতরণ করার পর ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময়েও একটি মাত্র আযান জারী ছিল। যখন হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম খলীফা হলেন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলো ও বিস্তার লাভ করলো, তখন তিনি তৃতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন।”(তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিল জাছছাছ, ৫ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৩৩৬)
২. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় জুমুয়ার দিন পাঁচ ওয়াক্ত আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিম্বরে বসার পর দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের সময় পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালামমদীনায় দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং দ্বিতীয় আযানটি অর্থাৎ মিনারের আযানের পর ইমামের সম্মুখে, মিম্বরের নিকট প্রথম আযান দেয়া শুরু করেন।” (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিলকুরতুবী, ১৮জিলদ, পৃষ্ঠা-১০০)
৩. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামল মরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় একটিমাত্র আযান প্রচলিত ছিল, যা তিনি মিম্বরে বসার পর দরজায় দেয়া হতো। অতঃপর যখন তিনি মিম্বর হতে নামাযের জন্য দাঁড়াতেন, তখন নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতে আসীন হবার পর জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন, অতঃপর প্রথম আযানটি “যাওরা” নামক স্থানে দেয়ার হুকুম দেন ও দ্বিতীয় আযানটি মিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার আদেশ দেন।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৪জিলদ, পৃষ্ঠা-৯৮)
৪.“নুদিয়া” দ্বারা মিম্বরের নিকটে, খতীবের সম্মুখে, যে আযান দেয়া হয় তাকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা এ আযানটিই রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় ছিল। অপর আযানটি হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময়ে উদ্ভাবিত হয়েছে।” (হাশিয়াতুশ্ শারক্বাবী, ১ম জিলদ, পৃষ্ঠা- ২৬০)
৫. যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সম্মুখে বা সন্নিকটে আযান দিবে, তখন তোমরা বেচা-কেনা বন্ধ করে দাও এবং ইমামের খুৎবা শুনার জন্য ধাবমান হও। (তাফসীরে মোরাগী, ১০ম জিলদ,পৃষ্ঠা-১০৩)
৬. ছানী আযান খুৎবার পূর্বে মিম্বরের সম্মুখে হবে এবং তৃতীয় আযান যা মিনারার উপর দেয়া হতো। (তৃতীয় এজন্য বলা হয়, কারণ ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) মূলতঃ ওটাই প্রথম আযান।।(তাফসীরে মাযহারী, ১৩তম জিলদ, পৃষ্ঠা-২৮১)
৭. কুরআন শরীফ-এ “নুদিয়া” দ্বারা ঐ আযানকেই বুঝানো হয়েছে, যে আযান আয়াত শরীফ নাযিল হবার সময় ছিল অর্থাৎ বর্তমানে যে আযান ইমামের সামনে দেয়া হয়। কেননা এর পূর্বে যে আযান দেয়া হয়, তা হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সময় হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমার দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়।” (তাফসীরে ওসমানী, ২৮ পারা, ৭১৮ পৃষ্ঠ)
৮. হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বাজারে আযান দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন যাতে করে মুছল্লীগণ বাজার হতে এসে নামায আদায় করতে পারে। অতঃপর মুছল্লীগণ একত্রিত হলে মসজিদের ভিতর আযান (ইক্বামত) দেয়া হতো। অতঃপর হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদের ভিতরে দু’টি আযানের প্রচলন করেন।” (এটার দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, খতীবের সামনের আযান অর্থাৎ ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার নিয়ম হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালামই জারী করেন।) (তাফসীরে সিরাজুম্ মুনীর, ৪র্থ খন্ড, ২৮৫ পৃষ্ঠা)
৯. সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় থেকে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল পর্যন্ত জুমুয়ার নামাযে অন্যান্য নামাযের আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মদীনায় অবস্থিত ‘যাওরা’ নামক স্থানে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন। ………. এবং মিনারার আযানের পর, প্রথম আযানটি (বর্তমানের দ্বিতীয় আযান) মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়া শুরু করেন।” (তাফসীরে আহকামুল কুরআন লিশ শফী ৫ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৬০-৬১)
১০. (ইযা নুদিয়া) এটা দ্বারা জুমুয়ার দিন খতীব ও মিম্বরের সামনে যে আযান দেয়া হয়, তাই উদ্দেশ্য। কেননা বর্তমানের প্রথম আযান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সময় প্রচলিত ছিল না। ওটা হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে লোকসংখ্যার আধিক্য ও কাজ-কর্মের ব্যস্ততার কারণে হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরামর্শক্রমে বৃদ্ধি করা হয় এবং ওটা ‘যাওরা’ নামক স্থানে দেয়া হতো। যেহেতু এটার উপর হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা সুন্নতে খুলফায়ে রাশেদ অর্থাৎ হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত।” (তাফসীরে কামালাঈন, ৪র্থ জিলদ,পৃষ্ঠা-৭৭, তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন, ৮ম জিলদ, পৃষ্ঠা-৪৪২)
উল্লিখিত নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত তাফসীর সমূহের বর্ণনা দ্বারা সুসস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার ছানী আযানে মসজিদের ভিতরে দেয়ার প্রচলন হযরত উছমান যিন নুরাইন আলাইহিস সালামস্বয়ং নিজেই করেছেন এবং এর উপর হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ইজমা তথা ইজমায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতএব ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে দেয়াই ইজমা সম্মত।
No comments:
Post a Comment