প্রশ্ন: ৪৫১ : টিকটিকি / গিরগিটি মারা প্রসঙ্গে।

 নাস্তিক প্রশ্নঃ  

হাদিসে বলা হয়েছে ইব্রাহিমের (আ.) অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দেবার অপরাধে গিরগিটি মেরে ফেলতে হবে, কেউ যদি ১ম আঘাতে মেরে  ফেলতে পারে, তাহলে তার জন্য অনেক পূণ্য। বহু যুগ আগের কোন এক গিরগিটির কাজের জন্য কেন এখনও গিরগিটি মেরে ফেলতে হবে? এটা কি একের দোষে অন্যকে শাস্তি দেয়া নয়? একজন স্রষ্টা কিভাবে নিরীহ গিরগিটি মেরে ফেলবার আদেশ দিতে পারেন?

 

উত্তরঃ

এ পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি - অতিকায় প্রাণী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রকায় ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত। গিরগিটিও আল্লাহ্‌ তা’আলার সৃষ্টি। কাজেই এর ব্যাপারে আল্লাহর কিছু সুনির্দিষ্ট হুকুম-আহকাম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শুরুতেই আমরা এই প্রাণীটির ব্যাপারে আল্লাহর বিধান দেখে নিই।

 
وَعَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَهَا بِقَتْلِ الأَوْزَاغِ وَقَالَ: «كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ». متفق عَلَيْهِ

অর্থঃ উম্মে শারীক রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ() ‘ওয়াযাগ’ (গিরগিটি/Gecko)  মারতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ‘‘এ ইব্রাহিম(আ.) এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দিয়েছিল।”  [1]

 

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ، كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، أَدْنَى مِنَ الْأُولَى، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ، فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الثَّانِيَةِ صحيح

অর্থঃ আবু হুরাইরা(রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ() বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি ‘ওয়াযাগ’ হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সাওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম। [2]

 

عَنْ سَائِبَةَ، - مَوْلاَةِ الْفَاكِهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ - أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى عَائِشَةَ فَرَأَتْ فِي بَيْتِهَا رُمْحًا مَوْضُوعًا فَقَالَتْ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ مَا تَصْنَعِينَ بِهَذَا قَالَتْ نَقْتُلُ بِهِ هَذِهِ الأَوْزَاغَ فَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَخْبَرَنَا أَنَّ إِبْرَاهِيمَ لَمَّا أُلْقِيَ فِي النَّارِ لَمْ تَكُنْ فِي الأَرْضِ دَابَّةٌ إِلاَّ أَطْفَأَتِ النَّارَ غَيْرَ الْوَزَغِ فَإِنَّهَا كَانَتْ تَنْفُخُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِقَتْلِهِ ‏.

অর্থঃ ফাকিহা ইবনুল মুহীরার মুক্তদাসী সাইবা থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রা.)-র নিকট প্রবেশ করে তাঁর ঘরে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব ‘ওয়াযাগ’ হত্যা করি। নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী() আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইব্রাহিম(আ.)-কে যখন অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোন প্রাণী ছিলো না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, ‘ওয়াযাগ’ ব্যতিত। সে বরং আগুনে ফুঁ দিয়েছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ() এটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। [3]

 

হাদিসে প্রাণীটির নাম হিসাবে ‘الْوَزَغِ’ (ওয়াযাগ) শব্দটি এসেছে। যা হচ্ছে টিকটিকি বা গিরগিটিজাতীয় এক ধরনের সরিসৃপ। কোনো কোনো অনুবাদক ‘টিকটিকি’ আবার কোনো কোনো অনুবাদক ‘গিরগিটি’ শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেছেন। আমি এখানে ‘গিরগিটি’ অনুবাদটি ব্যবহার করছি। এই প্রাণীটির (Gecko) বহু প্রজাতি বিদ্যমান। [4]

 

এ হাদিসগুলো পড়ে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারেঃ ইব্রাহিম(আ.) এর যুগে গিরগিটি যদি আগুনে ফুঁ দিয়েও থাকে, এই যুগে সে কারণে কেন গিরগিটি মারার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করা হচ্ছে?

 

হাদিসের ব্যাখ্যায় মুফতি তাকি উসমানী(হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, “আল্লাহই সব থেকে ভালো জানেন, আমার কাছে এটা মনে হয়েছে যে – ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে ফুঁ দেয়ার ঘটনা গিরগিটির অনিষ্টকারী স্বভাব বোঝাতে বর্ণনা করা হয়েছে। সাথে এর নিচু প্রকৃতিও বোঝানো হয়েছে। একে মারতে আদেশ করার মূল কারণ হল, এটি ক্ষতিকর ও কষ্টদায়ক প্রাণী। নতুবা ইব্রাহিম(আ.) এর জমানায় ঐসকল গিরগিটির অন্যায়ের কারণে এ সকল গিরগিটিকে হত্যা করা, শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতো না। এ জন্য মূল কারণ তাদের কষ্টদান ও অবাধ্যাচারণ যার বহিঃপ্রকাশ ইব্রাহিম(আ.) এর ঘটনার সময়ে স্পষ্ট হয়ে যায়” [5]

 

শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ(র.) এর মতে, গিরগিটিকে হত্যা করা হবে কারণ সেটা কষ্টদানকারী প্রানী [6]

 

শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাঈমিন(র.) এর মতে, মানুষকে যে সকল প্রাণী মারার আদেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো ইহরাম অবস্থায় ও ইহরাম ছাড়াও মারা হবে। যেমনগিরগিটিবিচ্ছু ইত্যাদি। হাদিসের মধ্যেই এসেছে যে এইগুলো কষ্টদানকারী প্রাণী সীমালঙ্ঘনের (মানুষকে কষ্ট দানে) ক্ষেত্রে এদের কোন তুলনা নেই” [7]

 

অন্যান্য উলামাদের থেকেও এমন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। [8] অতএব আমরা দেখলাম হাদিসের ব্যাখ্যাকারকদের মতে, গিরগিটি মারতে আদেশ দেবার মূল কারণ এর ক্ষতিকর প্রকৃতি। একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেবার বিধান ইসলামে নেই, একের কর্মের ভার অন্য কেউ বহন করে না। আল্লাহ্‌ বলেন,

 

 قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ

অর্থঃ  বল, “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রভু অনুসন্ধান করব, অথচ তিনি সব কিছুর প্রভু?” আর প্রত্যেক সত্তা স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে, কোনো ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না। ...” [9]

 

 مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا

অর্থঃ “যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য তা অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেউ অন্য কারও ভার বহন করবে না; আমি [আল্লাহ্‌] রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দিইনা। [10]

 

গিরগিটির (Gecko) অনিষ্টকর হবার ব্যাপারটি আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত। আমেরিকান গবেষক Sonia Hernandez এ সংক্রান্ত ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, গিরগিটিতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে ( enteric bacteria) যেটি এন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে। [11] কোনো ব্যাকটেরিয়া যদি এন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে সেটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে। Sonia Hernandez- এর এই গবেষণা ‘Science of the Total Environment’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। [12] গিরগিটি কামড় দেয় এবং এর দ্বারা ক্ষতিকর রোগ ছড়াতে পারে। [13] আমেরিকায় ঘর-বাড়ীতে গিরগিটি প্রতিপালনের চল রয়েছে। ২০১৫ সালে গৃহপালিত গিরগিটির দ্বারা সেখানকার ১৬টি অঙ্গরাজ্যে ভয়ানক salmonella ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয়। [14] কাজেই গিরগিটিকে একেবারে ‘নিরীহ’ প্রাণী বলবার কোনো সুযোগ নেই।

এ ছাড়া ঘরোয়া টিকটিকির ক্ষতিকর দিক ও প্রতিকারের ব্যাপারে এই আর্টিকেলটি দেখা যেতে পারে।

 

হাদিসে ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে গিরগিটির ফুঁ দেবার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ এ দৃষ্টান্তটি দেখিয়ে দাবি করতে পারে যে, হাদিসে তো ‘কারণ’ হিসাবে ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে ফুঁ দেবার ঘটনা উল্লেখ আছে; ক্ষতিকর হওয়ার কথা তো বলা হয়নি! এর জবাবে আমরা বলবঃ গিরগিটির ক্ষতিকর প্রাণী হবার বিষয়টি অন্যত্র বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

 

 عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلْوَزَغِ ‏ "‏ الْفُوَيْسِقَةُ ‏"‏ 

অর্থঃ আয়িশা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ() ‘ওয়াযাগ’ (গিরগিটি/Gecko) সম্পর্কে বলেনঃ তা ক্ষতিকর প্রাণী [15]

 

عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا صحيح

অর্থঃ আমির ইবনু সা‘দ (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ() গিরগিটি মারার হুকুম করেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন অনিষ্টকারী [16]

 

কাজেই এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই যে বিনা কারণে গিরগিটি হত্যা করতে বলা হয়েছে। আর ইব্রাহিম(আ.) এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দেবার দৃষ্টান্ত উল্লেখের দ্বারাও এটা প্রমাণ হয় না যে ঐ সময়ের গিরগিটিদের কর্মের জন্য এখনকার গিরগিটিদের মারতে বলা হয়েছে।

 

 একটা উদাহরণের দ্বারা বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। ধরা যাক, কোনো একটি ডাকাত দল বহু বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। ডাকাত দলের কয়েক জন সদস্য ১০ বছর আগে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফেললো। এটি তাদের একটি ভয়াবহ জঘন্য কর্ম হিসাবে দৃষ্টান্ত হয়ে গেল। ঘটনার ১০ বছর পরে তাদের অনিষ্টকর স্বভাবের বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করা হলঃ “এই ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরা এমন লোক যারা পুলিশ মারে!” -- কেউ কি বলবে যে এই কথাটি ভুল?

কখনোই না। ডাকাত দলের সকল সদস্য হয়তো কাজটি করেনি, কাজটি হয়তো সাম্প্রতিক সময়েও হয়নি। কিন্তু বহু আগের ঐ কর্মটি তাদের ক্ষতিকর স্বভাবের একটি উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত হিসাবে স্বীকৃত হয়ে গেছে। এ কারণে তাদের ঐ বিশেষ কাজটিকে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করে এভাবে তাদেরকে গ্রেপ্তারের কথা বলা যেতেই পারে।

একইভাবে, ইব্রাহিম(আ.) এর সময়ে করা গিরগিটির একটি অনিষ্টকর কাজকে বর্তমান সময়ের গিরটিগিটিদের বেলাতেও অনিষ্টকর স্বভাবে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা যেতেই পারে।

 

হাদিসে কেন এক আঘাতে মারলে বেশি সওয়াবের কথা বলা হল? এটি কি আসলেই গিরগিটির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন?

 সংশ্লিষ্ট হাদিসের ব্যাখ্যায় ইজজুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম(র.) [৫৭৭-৬৬০ হি.] বলেছেন“প্রথম আঘাতে (গিরগিটি) মারার আদেশ দেবার কারণ হল, তাকে এক আঘাতে হত্যা করা হলে উত্তম (সদয়)ভাবে হত্যা করা হবে এবং এই হাদিসের আওতায় আমল করা হবেঃ রাসুল() বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর অনুগ্রহ লিপিবদ্ধ (জরুরী) করেছেন। সুতরাং যখন হত্যা করো তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে  হত্যা কর এবং যখন (পশু) যবেহ কর তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে  যবেহ কর।’’ [সহীহ মুসলিম হা/১৯৫৫] ... ” [17]

 

অর্থাৎ এ আদেশের সাথে নিষ্ঠুরতার কোনো সম্পর্ক নেই বরং দয়ার সম্পর্ক আছে। ক্ষতিকর প্রাণী বিধায় গিরগিটিকে মারতে বলা হয়েছে। এর প্রতি জুলুম করার জন্য মারতে বলা হয়নি। একে মারলেও এমনভাবে মারতে হবে যাতে এর কষ্ট কম হয়।

 

ইসলাম দয়ার ধর্ম, শান্তির ধর্ম। মানুষ, পশু-পাখি সকল কিছুর প্রতি দয়া প্রদর্শন হচ্ছে ইসলামের বিধান। মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজন না হলে ইসলাম কোনো প্রাণী হত্যা করার বিধান দেয় না। পশু-পাখির প্রতি দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে।

 

আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি এক কুয়ার নিকটবর্তী হয়ে তাতে অবতরণ করে পানি পান করল। অতঃপর উঠে দেখল, কুয়ার পাশে একটি কুকুর (পিপাসায়) জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। তার প্রতি লোকটির দয়া হল। সে তার পায়ের একটি (চর্মনির্মিত) মোজা খুলে (কুয়াতে নেমে তাতে পানি ভরে এনে) কুকুরটিকে পান করাল। ফলে আল্লাহ তার এই কাজের প্রতিদান স্বরূপ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।’’

লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল()! জীব-জন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব আছে? তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়াপ্রদর্শনে) সওয়াব বিদ্যমান।’’ [18]

তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগা ছাড়া অন্য কারো (হৃদয়) থেকে দয়া, ছিনিয়ে নেওয়া হয় না।’’ [19]

তিনি এক সাহাবীকে বলেন, ‘‘তুমি যদি তোমার বকরীর প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।’’ [20]

 

 বিনা কারণে কোন জীবকে কষ্ট দেবার ব্যাপারে ইসলামে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।

 

রাসুলুল্লাহ(ﷺ)  বলেছেন, ‘‘একটি বিড়ালের কারণে একজন মহিলাকে আযাব দেওয়া হয়েছে; যাকে সে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে মারাও গিয়েছিল। সে যখন তাকে (বিড়ালটিকে) বেঁধে রেখেছিল তখন খেতেও দেয়নি ও পান করতেও দেয়নি। আর তাকে ছেড়েও দেয়নি; যাতে সে নিজে স্থলচর কীটপতঙ্গ ধরে খেত।’’ [21]

এক ব্যক্তি তার উটকে ঠিকমত খেতে দিত না, উপরন্তু কষ্ট দিত। তার পাশ দিয়ে রহমতের রাসুল() কে পার হতে দেখে উটটি আওয়াজ দিল এবং তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি উটের মালিককে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি এই জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না কেন, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? ও তো আমার কাছে অভিযোগ করছে যে, তুমি ওকে ভুখা রাখ এবং কষ্ট দাও!’’ [22]

 

ইসলামে অযথা কোন পশু-পক্ষীকে কষ্ট দেওয়া, সাধ্যের অতীত কোন পশুকে বোঝা বহনে বাধ্য করতে মারধর করা বৈধ নয়। পশু-পক্ষী কিছু অনিষ্ট করে ফেললে, গরু-মহিষ গাড়ি বা হাল টানতে অক্ষম হয়ে পড়লে অতিরিক্ত প্রহার করে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেওয়া বৈধ নয় ।

 

একবার ইবন উমার(রা.) কুরাইশের একদল তরুণের নিকট পার হয়ে (কোথাও) যাচ্ছিলেন; সে সময় তারা একটি পাখি অথবা মুরগীকে বেঁধে রেখে তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তীর ছুঁড়ে হাতের নিশা্না ঠিক করা শিক্ষা করছিল। ... ওরা ইবন উমার(রা.)-কে দেখতে পেয়ে এদিক-ওদিক সরে পড়ল। ইবন উমার(রা.) বললেন, ‘কে এ কাজ করেছে? যে এ কাজ করেছে আল্লাহ তাকে অভিশাপ করুন। অবশ্যই আল্লাহর রাসুল() সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন জীবকে (অকারণে) নিশানা বানায় [23]

একবার রাসুল() একটি গাধার পাশ বেয়ে পার হলেন। গাধাটির মুখে দাগার দাগ দেখে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ তাকে অভিশাপ করুন, যে একে দেগেছে।’’ [24]

রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অধিকার ছাড়া (অযথা) একটি বা তার বেশি চড়ুই হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সে চড়ুই সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন।’’ [25]

রাসুল(ﷺ) বলেছেন, একবার একটি গাছের নিচে একজন নবীকে পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ের দল পুড়িয়ে ফেললেন। আল্লাহ তাঁকে ওহী করে বললেন, ‘‘তোমাকে একটি পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তুমি একটি এমন জাতিকে পুড়িয়ে মারলে, যে (আমার) তাসবিহ পাঠ করত? ...’’  [26]

রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সব চাইতে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার নিকট থেকে মজা লুটে নিয়ে তাকে তালাক দেয় এবং তার মোহরও আত্মসাৎ করে। (দ্বিতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে কোন লোককে মজুর খাটায়, অতঃপর তার মজুরী আত্মসাৎ করে এবং (তৃতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে অযথা পশু হত্যা করে।’’ [27]

 

আরো একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, গিরগিটি যদি ক্ষতিকর প্রাণীই হয়ে থাকে, একে যদি মেরেই ফেলতে হবে - তাহলে আল্লাহ্‌ একে কেন সৃষ্টি করলেন?

 

১। বিভিন্ন অনিষ্টকর বস্তু এবং জীব-জন্তু থাকবার কারণে মানুষ আল্লাহর নিকট বিভিন্ন যিকির (স্মরণ) ও দোয়ায় অভ্যস্ত হতে পারে যারা দ্বারা সে সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়।

 

২। এর মাঝে আল্লাহর অসামান্য সৃষ্ট নৈপুণ্যের প্রমাণ ও নিদর্শন রয়েছে। ক্ষুদ্র প্রাণী গিরগিটি মানুষকে অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। আবার এর চেয়ে বৃহৎ প্রাণী উট মানুষকে কোনো ক্ষতি করে না। এর মাঝে মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে।

 

৩। মানুষ পৃথিবীর এই সব কষ্টদায়ক প্রাণীর দ্বারা শিক্ষাগ্রহন করতে পারে যে, দুনিয়াতে যদি এদের থেকে কষ্টকর রোগ-ব্যধি হতে পারে, তাহলে আখিরাতের শাস্তি কত কঠোর! আল কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামে সাপ-বিচ্ছুর আযাবের কথা বলা হয়েছে।

 

৪। মানুষ জানবে যে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোনগুলো কল্যাণকর। সেগুলোর জন্য আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করবে। আর যেগুলো কষ্টদায়ক – সেগুলো থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইবে।

 

উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম যে ইসলামে কোনোভাবেই বিনা কারণে জীব-জন্তু হত্যা করা জায়েজ নয়। যারা গিরগিটি হত্যার হাদিস দেখিয়ে ইসলামকে নিষ্ঠুর ও বর্বর ধর্ম হিসাবে দেখাতে চায় – তারা ভুলের মধ্যে আছে। গিরগিটি ও অন্য সকল প্রাণীর সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ্‌ তা’আলার অসাধারণ হিকমতের পরিচয় রয়েছে। সুতরাং যাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে, তারা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক।

 

এ প্রসঙ্গে শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ https://youtu.be/YIuLkM6m-YY

 

 

তথ্যসূত্রঃ

[1]. সহীহ বুখারী ৩৩০৭, ৩৩৫৯, সহীহ মুসলিম ২২৩৭, নাসায়ী ২৮৮৫, ইবনু মাজাহ ৩২২৮, মুসনাদ আহমাদ ২৬৮১৯, ২৭০৭২, দারিমী ২০০০, রিয়াদুস সলিহীন ১৮৭২

[2]. সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৫২৬৩  

[3]. সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নং ৩২৩১

[4]. ■ “Gecko _ reptile _ Britannica.com”

https://www.britannica.com/animal/gecko

■ “The Many Types Of Geckos - Tail and Fur”

https://tailandfur.com/the-many-types-of-geckos/

■ “Dangerous of Wild Animals_ Gecko”

http://dangerous-wild-animals.blogspot.com/2010/10/gecko.html

[5]. তাকমিলা ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৫০

[6]. ইবরিযিয়্যা ২/৮৭ [শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ(র.)]

[7]. শারহু সহীহ বুখারী ৫/৫৭৩ [শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাঈমিন(র.)]

[8]. দেখুন – ‘বাজলুল মাজহুদ’ ২০/২০২, [খলিল আহমেদ শাহরানপুরী]; ‘তুহফাতুল কারী’ ৪/৫২৮ [মুফতি পালনপুরী], ‘যাখিরাতুল উক্ববাহ শারহ নাসাঈ’ ২৫/৮ [মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আদাম ইবন মুসা], ‘ফাতহুল বারী’ ৪/৪১ [ইবন হাজার আসকালানী]

[9]. আল কুরআন, আন’আম ৬ : ১৬৪

[10]. আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ১৫

[11]. “Geckos resistant to antibiotics, may pose risk to pet owners, study finds -- ScienceDaily”

https://www.sciencedaily.com/releases/2015/05/150514141039.htm

[12]. Christine L. Casey, Sonia M. Hernandez, Michael J. Yabsley, Katherine F. Smith, Susan Sanchez. The carriage of antibiotic resistance by enteric bacteria from imported tokay geckos (Gekko gecko) destined for the pet tradeScience of The Total Environment, 2015; 505: 299 DOI: 10.1016/j.scitotenv.2014.09.102

[https://linkinghub.elsevier.com/retrieve/pii/S0048969714014247]

[13]. ■ “Why You Don’t Want to Get Bitten by A Tokay Gecko _ Tokay Gecko Guide”

http://tokaygeckoguide.com/why-you-dont-want-to-get-bitten-by-a-tokay-gecko/1603/

■ “Gecko Bite” (Reptile Magazine)

http://www.reptilesmagazine.com/Lizard-Care/Lizard-Bite/

[14]. “Geckos Linked to Dangerous Salmonella Outbreak in 16 States - ABC News”

https://abcnews.go.com/Health/geckos-linked-dangerous-salmonella-outbreak-16-states/story?id=31069405

[15]. সহীহ বুখারী ১৮৩১, সহীহ মুসলিম ২২৩৯, সুনান নাসাঈ ২৮৮৬, মুসনাদ আহমাদ ২৪০৪৭, ২৪৬৮৯, ২৫৮০০, ২৫৮৫০

[16]. সহীহ মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ হাদিস নং : ৫২৬২

[17]. আওনুল মা’বুদ, পৃষ্ঠা ২৩৮২

[18]. সহীহ বুখারী, হা/ ২৪৬৬ , সহীহ মুসলিম, হা/২২৪৪

[19]. মুসনাদ আহমাদ, ২/৩০১, সুনান আবু দাউদ ৪৯৪২, তিরমিযী, ইবন হিববান, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৬৭

[20]. হাকিম, সহীহ তারগীব ২২৬৪

[21]. সহীহ বুখারী, হা/ ২৩৬৫, ৩৪৮২

[22] মুসনাদ আহমাদ, আবু দাঊদ, হাকিম, সিলসিলাহ সহীহাহ  হা/২০

[23] সহীহ বুখারী, হা/ ৫৫১৫, সহীহ মুসলিম,  হা/১৯৫৮

[24] সহীহ মুসলিম, হা/২১১৬

[25] সুনান নাসাঈ, সহীহ তারগীব ২২৬৬

[26] সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, হা/২২৪১ 

[27] হাকিম, বাইহাকী, সহীহুল জা’মে হা/১৫৬৭ 

ইসলামে জীবে দয়া ও এ সকল বিষয়ে দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই বইটি দেখুনঃ ‘ইসলামী জীবন-ধারা’ [আবদুল হামীদ ফাইযী]

 

[ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান (হাফিযাহুল্লাহ) ]

মূল লিংক


=============================


*টিকটিকি বা গিরগিটি মারা সম্পর্কে সহীহ হাদীস*

কুতুবুত সিত্তাহ থেকে সংগৃহীত

মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন- (আন্-নিসা ১২৫)।

بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالَى وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى أَوْ ابْنُ سَلَامٍ عَنْهُ أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ عَبْدِ الْحَمِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَقَالَ كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَام
৩৩৫৯. উম্মু শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ওটা ইবরাহীম (আঃ) যে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তাতে এ গিরগিটি ফুঁ দিয়েছিল। (৩৩০৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১১৮)

*ব্যাখ্যাঃ* অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রথম প্রহারেই গিরগিটি হত্যা করবে তার জন্য ১০০ নেকী তার ‘আমলনামায় লিখা হবে। দ্বিতীয় প্রহারে মারলে তার থেকে কম নেকী পাবে আর তৃতীয় প্রহারে মারলে দ্বিতীয় প্রহারে মারার থেকে কম নেকী পাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে প্রথম প্রহারে মারলে ৭০ নেকী পাবে। ‘উলামাগণ এ মর্মে একমত যে, গিরগিটি ক্ষতিকারক প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। وَزَغِ শব্দটির বহুবচন হলো أَوْزَاغٌ وَوِزْغَانٌ ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রাণীর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হত্যার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। কারণ তা মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রাণী। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২৩৭/১৪২)

হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ ৩৩৫৯

সহীহ মুসলিম (৫৯৮১)-৩৮, মুসনাদে আহমাদ ২৪৫৩৪, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৮৩৯০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৮১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৯৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৩৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮৪৮।
===========================
بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
৪১২০-[১৭] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁকলাস মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষুদ্র ফাসিক বলে অভিহিত করেছেন। (মুসলিম)[1]

[1] সহীহ : মুসলিম (৫৯৮১)-৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৩৫, আবূ দাঊদ ৫২৬২, মুসনাদে আহমাদ ১৫২৩, মুসান্নাফে ‘আবদুর রায্যাক ৮৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৮১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৩৪২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ : " مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ كُتِبَ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ ، وَفِي الثَّانِيَةِ دُونَ ذَلِكَ ، وَفِي الثَّالِثَةِ دُونَ ذَلِكَ " . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
৪১২১-[১৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরগিটিকে প্রথম আঘাতে বধ করবে, তার জন্য (‘আমলনামায়) একশত নেকি লিখা হবে। আর দ্বিতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তার চাইতে কম এবং তৃতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তা অপেক্ষা কম লিখা হবে। (মুসলিম)[1]

*ব্যাখ্যাঃ* ‘আল্লামা ‘ইয্যুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রথম প্রহারে গিরগিটি হত্যার সাওয়াবের আধিক্যের কারণ হলো, হতে পারে প্রথম প্রহারে মারলে প্রাণীর প্রতি ইহসান করা হয়, বিধায় সাওয়াব বেশি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি ইহসান ফরয করেছেন, কাজেই যখন তোমরা হত্যা করবে তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে। অথবা ভালো কাজ দ্রুত সমাধার জন্যও সাওয়াব বেশি হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَسَارِعُوا إِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ ‘‘তোমরা কল্যাণে অগ্রগামী হও’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৩)। আর এ উভয় কারণই সাপ কিংবা বিচ্ছুর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ উভয় প্রাণীর মধ্যে বিপর্যয়ের আধিক্য রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২৫৪)

[1] সহীহ : সহীহ মুসলিম (৫৯৮৪)-৩৮, ইবনু মাজাহ ৩২২৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৯৭৮, সহীহুল জামি‘ ৬৪৬০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَمَرَهَا بِقَتْلِ الأَوْزَاغِ ‏.‏
১/৩২২৮। উম্মু শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গিরগিটি হত্যা করার নির্দেশ দেন।

সহীহুল বুখারী ৩৩০৭, ৩৩৫৯, মুসলিম ২২৩৭, নাসায়ী ২৮৮৫, আহমাদ ২৬৮১৯, ২৭০৭২, দারেমী ২০০০, সহীহাহ ১৫৮১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
==========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي الشَّوَارِبِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ الْمُخْتَارِ، حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا - أَدْنَى مِنَ الأُولَى - وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً - أَدْنَى مِنَ الَّذِي ذَكَرَهُ فِي الْمَرَّةِ الثَّانِيَةِ ‏"‏ ‏.‏
২/৩২২৯। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে গিরগিটি হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এত এত পরিমাণ পুণ্য। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে তার জন্য এই এই পরিমাণ পুণ্য (কি প্রথম আঘাতের তুলনায় কম)। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এই এই পরিমাণ কুণ্য (কিন্তু দ্বিতীয় আঘাতের তুলনায় কম)।

মুসলিম ২২৪০, তিরমিযী ১৮৮২, আবূ দাউদ ৫২৬৩, আহমাদ ৮৪৪৫। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার বর্ণিত হাদিস সহিহ নয়। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনু আদী বলেন, তার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২২৩ নং পৃষ্ঠা) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلْوَزَغِ ‏ "‏ الْفُوَيْسِقَةُ ‏"‏ ‏.‏
৩/৩২৩০। আয়েশা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি সম্পর্কে বলেনঃ তা ক্ষতিকর প্রাণী।

সহীহুল বুখারী ১৮৩১, মুসলিম ২২৩৯, নাসায়ী ২৮৮৬, আহমাদ ২৪০৪৭, ২৪৬৮৯, ২৫৮০০, ২৫৮৫০। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَائِبَةَ، - مَوْلاَةِ الْفَاكِهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ - أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى عَائِشَةَ فَرَأَتْ فِي بَيْتِهَا رُمْحًا مَوْضُوعًا فَقَالَتْ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ مَا تَصْنَعِينَ بِهَذَا قَالَتْ نَقْتُلُ بِهِ هَذِهِ الأَوْزَاغَ فَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَخْبَرَنَا أَنَّ إِبْرَاهِيمَ لَمَّا أُلْقِيَ فِي النَّارِ لَمْ تَكُنْ فِي الأَرْضِ دَابَّةٌ إِلاَّ أَطْفَأَتِ النَّارَ غَيْرَ الْوَزَغِ فَإِنَّهَا كَانَتْ تَنْفُخُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِقَتْلِهِ ‏.‏

৪/৩২৩১। ফাকিহা ইবনুল মুহীরার মুক্তদাসী সাইবা থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা (রাঃ)-র নিকট প্রবেশ করে তার ঘরে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব গিরগিটি হত্যা করি। কারণ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইবরাহীম (আ)-কে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোন প্রাণী ছিলো না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, গিরগিটি ব্যতীত। সে বরং আগুনে ফুঁ দিয়েছিল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন।

আহমাদ ২৪০১৩, ২৪২৫৯, ২৫২৯৯, সহীহাহ ১৫৮১, আত-তালীকুর রাগীব ৪/৩৭। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা

قَتْلُ الْوَزَغِ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ قَالَتْ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْأَوْزَاغِ
২৮৮৮. মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন ইয়ায়ীদ মুকরী (রহঃ) ... উম্মে শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে টিকটিকি হত্যা করতে আদেশ করেছেন।

তাহক্বীকঃ সহীহ। ইবন মাজাহ ৩২২৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা

قَتْلُ الْوَزَغِ أَخْبَرَنَا وَهْبُ بْنُ بَيَانٍ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي مَالِكٌ وَيُونُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْوَزَغُ الْفُوَيْسِقُ
২৮৮৯. ওহাব ইবন বিয়ান (রহঃ) ... আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ টিকটিকি অনিষ্টকারী প্ৰাণী।

তাহক্বীকঃ সহীহ। সহীহ জামে' আস-সগীর ৭১৪৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে

بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا صحيح
৫২৬২। ‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি (টিকটিকি) মারার হুকুম করেছেন। তিনি তার নাম দিয়েছেন অনিষ্টকারী।[1]

সহীহ।

[1]. মুসলিম, আহমাদ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬২
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে

بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ، كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، أَدْنَى مِنَ الْأُولَى، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ، فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الثَّانِيَةِ صحيح
৫২৬৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি গিরগিটি (টিকটিকি) হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সাওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম।[1]

সহীহ।

[1]. মুসলিম, তিরমিযী। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬৩
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে

بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ سُهَيْلٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَخِي أَوْ أُخْتِي عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ سَبْعِينَ حَسَنَةً صحيح
৫২৬৪। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথম আঘাতে মারতে পারলে তার জন্য সত্তর নেকী রয়েছে।[1] সহীহ।

[1]. মুসলিম। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬৪





====================================================


প্রশ্ন : টিকটিকি মারার বিষয়ে হাদিসে কোনো নির্দেশনা আছে কি?

উত্তর : টিকটিকি মারার বিষয়ে রাসুল (সা.) হাদিস থেকে বোঝা যায়, টিকটিকি মারার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সেটি টিকটিকির ক্ষতির কারণে। আমরা যে টিকটিকি দেখতে পাচ্ছি সেটাকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে ওয়াজাক। কুমিরের মতো দেখতে যে প্রাণীগুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে প্রায় ২৫ প্রকারের প্রাণী আছে। সুতরাং, ওয়াজাক বা টিকটিকি বা গিরগিটি এক প্রকার প্রাণী, যা থেকে এক ধরনের বিষ নিঃসরণ হয়ে থাকে, সেগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এই জন্য নবী করিম (সা.) এগুলো হত্যার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে নবী করিম (সা.)-এর এই নির্দেশনাটুকু নির্দেশ নয় বা অপরিহার্য বিষয় নয়। সুতরাং, এটা পালন করা বাধ্যতামূলক বা ওয়াজিব নয়। বিষাক্ত হওয়ার কারণে প্রয়োজনবোধে মারতে পারবেন।   (ডা: মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ) । 



প্রশ্ন: ৪৫০ : ঝড় বৃষ্টি কালীন সময়ের দোয়া ।

 মেঘের গর্জনে পঠিতব্য দোয়া

ক. হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং কুর`আন মাজীদের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন-

سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ، والـمَلائِكَةُ مِنْ خِيْفَتِهِ

উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি ইউসাব্বিহুর রা`দু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি
অর্থ : পাক-পবিত্র সেই মহান সত্তা- তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। (মুয়াত্তা)
খ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গেই এই দোয়া করতেন-

اللَّهُمَّ لا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ ، وَلا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ

উচ্চারণ- আল্লা-হুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুলহিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা জা-লিকা।
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! তোমার ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আমাদের মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নিও। (তিরমিজি)

ঝড় তুফানের সময়ের দোয়া

اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلاَ عَلَيْنَا

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়ালা আলাইনা
অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের থেকে ফিরিয়ে নাও, আমাদের ওপর দিয়ো না। (বুখারি) ঝড়-তুফানের সময় এ দোয়া বেশি বেশি পড়তে হবে।  

اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ

উচ্চারণ : `আল্লাহুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খায়রাহা ওয়া খায়রা মা ফিহা- ওয়া খায়রা মা উরসিলাতবিহি; ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাতবিহি।`

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর মঙ্গল, এর মধ্যকার মঙ্গল ও যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার মঙ্গলসমূহ প্রার্থনা করছি এবং আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর অমঙ্গল হতে, এর মধ্যকার অমঙ্গল হতে এবং যা নিয়ে তা প্রেরিত হয়েছে, তার অমঙ্গলসমূহ হতে।

প্রশ্ন: ৪৪৯ : নিফাস বা সন্তান প্রসব পরবর্তীকালীন পবিত্র হওয়ার সময় সীমা ।

 

সন্তান প্রসবের পর নারীদের যে রক্তশ্রাব হয় শরিয়তের ভাষায় তাকে ‘নেফাস’ বলে। 

নেফাস চলাকালীন সময়ে নারীদের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ সময়ে তাদের জন্য অনেক ইবাদত করাও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। যেমন: নামাজ ও পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত। সেইসঙ্গে স্বামী সহবাসও। 

তবে তা কতো দিন? এ সময়ে তাদের জন্য কী কী নিষিদ্ধ বা হারাম? বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

নেফাস কাকে বলে?

নেফাসের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘জন্ম’। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নারীদের যোনি থেকে যে রক্তস্রাব হয় শরিয়তের ভাষায় তাকেই নেফাস বলে।

নেফাসের সময়সীমা: 

নেফাসের সর্বোচ্চ সময় ৪০ দিন। সর্বনিম্ন সময়ের সীমা নেই। এক দুই ঘণ্টা বা এক দুই দিনেও বন্ধ হতে পারে। তবে আমাদের দেশের নারীদের সাধারণত ১৫, ২০, ২৫ দিন হয়ে থাকে। ৪০ দিনের বেশি রক্ত বের হলে একে এস্তেহাজা বা রোগ মনে করতে হবে। নেফাসের রক্ত ১৫, ২০, ২৫, ২৭, ৩০, ৩৫ দিনের মধ্যে কিংবা উক্ত সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন বন্ধ হতে দেখবে তখন গোসল করে নামাজ দোয়া পড়া ইত্যাদি কাজ শুরু করবে।

প্রসবের পর যদি কারো একেবারেই রক্ত না যায়, তবুও তাকে গোসল করতে হবে। এ গোসল ফরজ। নেফাসের সময়সীমার মধ্যে সর্বক্ষণ রক্ত আসা জরুরি নয় বরং মাঝে মধ্যে দুই চার ঘণ্টা বা দুই একদিন রক্ত বন্ধ হয়ে থেকে আবার এলেও সেই মাঝখানের সময়কেও নেফাসের সময় ধরা হবে।

কোনো নারীর হয়তো ৩০ দিন রক্ত যাওয়ার অভ্যাস ছিল, কিন্তু একবার ৩০ দিন অতিক্রম হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ হল না; এমতাবস্থায় সে গোসল না করে অপেক্ষা করবে। অত:পর যদি পূর্ণ ৪০ দিন শেষে বা ৪০ দিনের ভেতর রক্ত বন্ধ হয়, তাহলে এইসব কয় দিনও নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি ৪০ দিনের বেশি রক্ত জারি থাকে, তাহলে পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক ৩০ দিন নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। ৪০ দিন পরে গোসল করে নামাজ পড়তে থাকবে এবং ৩০ দিনের পরের ১০ দিনের নামাজের কাযা করবে।

নেফাসের বিধান:

চল্লিশ দিনের আগে যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যেদিন বন্ধ হবে, সেদিন গোসল করে নামাজ পড়া শুরু করে দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে স্বামী সহবাসও তার জন্য বৈধ হয়ে যাবে এবং সকল ধরণের বিধি নিষেধ রোহিত হয়ে যাবে। আর যদি চল্লিশ দিনেও বন্ধ না হয়, তাহলে একে ইস্তেহাজার রক্ত মনে করে নামাজ রোজা শুরু করে দিতে হবে। তখন নামাজ রোজা ফরজ। নামাজ কাযা করা যাবে না। এ অবস্থায় স্বামী সহবাসও বৈধ।

একটি ভুল ধারণা:

একটি ভুল ধারণা আছে যে, সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিন পর্যন্ত নামাজ পড়া যায় না। কথাটি সঠিক নয়। যার রক্ত বন্ধ না হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ মেয়াদ হলো চল্লিশ দিন। অর্থাৎ যদি আগে বন্ধ না হয়, লাগাতার ঝরতে থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ মেয়াদকাল চল্লিশ দিন পর্যন্ত। কিন্তু যদি এর আগেই বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এর আগ থেকে নামাজ পড়া শুরু করতে হবে।

নেফাস অবস্থায় যা বর্জনীয় যা করণীয়:

নেফাস অবস্থায় নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে না। পবিত্র কোরআন শরীফ বা কোনো আয়াত স্পর্শ করতে বা মুখস্ত পড়তে পারবে না। তবে পবিত্র কোরআন শরীফ গিলাফে জড়ানো থাকলে গিলাফের ওপর দিয়ে স্পর্শ করা জায়েজ আছে। অনেকে নাপাক অবস্থায় পরনের শাড়ি, দোপাট্রা বা কামিজের আচল দ্বারা পবিত্র কোরআন শরীফ স্পর্শ করে। এটাও জায়েজ নয়। পরিধানের কাপড় ছাড়া আলাদা কোনো পবিত্র কাপড়ের সাহায্যে স্পর্শ করলে জায়েজ হবে।

যে টাকা-পয়সা বা বরতনে বা তাবীজে পবিত্র কোরআনের কোনো আয়াত লেখা আছে সেই টাকা পয়সা, তাবীজ এবং বরতনও স্পর্শ করতে পারবে না। হ্যাঁ, কোনো থলি বা পাত্রে রাখলে সে থলি বা পাত্র স্পর্শ করতে পারবে এবং থলি বা পাত্রের গায়ে ধরেও উঠাতে পারবে।
 
নিজের নেফাস অবস্থায় যে নারী ছাত্র-ছাত্রীদের পবিত্র কোরআন শরীফ পড়ান, তারা শুধু বানান পড়াতে পারবেন। তেলাওয়াত পড়ানো যাবে না। অর্থাৎ শব্দ শব্দ ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ানোর অনুমতি রয়েছে। আর যদি তেলাওয়াতও পড়াতে হয় তবে প্রত্যেক আয়াতকে আলাদা আলাদা অংশ করে দুই এক শব্দের পরপর নি:শ্বাস ছেড়ে পড়াবেন যেন প্রতিটি অংশ পবিত্র কোরআন শরীফের ক্ষুদ্রতম আয়াত অপেক্ষা ছোট থাকে। ছোট আয়াতের সমান হয়ে গেলে গুনাহগার হবেন।

তবে সূরা ফাতেহা কিংবা পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখিত কোনো দোয়ার আয়াত যেমন রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও অথবা রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ইত্যাদি দোয়ার নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হবে না। তেলাওয়াতের নিয়তে পড়িলে গুনাহগার হবে।

নেফাসের সময়ে নামাজ, রোজা, কাবা শরীফের তাওয়াফ নিষিদ্ধ। হায়েজের সময়ে যে নামাজগুলো পড়া যায়নি তা পাক হওয়ার পর কাজা করতে হবে না। কিন্তু রোজা মাফ নেই। রোজা কাজা করতে হবে।
 
নেফাস চলাকালে নামাজের সময় হলে ওজু করে কোনো পাক জায়গায় কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আল্লাহ আল্লাহ করবে। নামাজ পড়বে না। এমন করা মুস্তাহাব।

নেফাস কালে স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গম হারাম এবং এই সময়ে স্ত্রীর হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত স্থানের প্রতি দৃষ্টি দেওয়াও মাকরূহে তাহরিমী। নেফাসের সময়ে সহবাস করলে কবীরা গুনাহ হবে। তবে স্ত্রীর হাটু থেকে নাভী ছাড়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করা, একত্রে আহার করা ও একত্রে শয়ন করা জায়েয রয়েছে। তবে হায়েজের দোহাই দিয়ে স্ত্রী থেকে একেবারেই দূরে সরে যাওয়া যাবে না।
 
স্ত্রীর নাপাক অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গমের সুযোগ না পাওয়ায় স্বামী যদি যৌবনের উম্মদনায় ও কামরিপুর তাড়নায় এমন অস্থির হয়ে পড়ে যে অন্যত্র পাপ করে ফেলতে পারে তবে স্ত্রীর রাণে ঘষে অথবা তার দ্বারা হস্তমৈথুন করিয়ে কামোত্তজনা দমন করা যেতে পারে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেফাসওয়ালী মহিলাদের মেয়াদ সাব্যস্ত করেছেন চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগে পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৬৪৯, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৩১১, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৮৫২, সুনানে কুবরালিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৬১৯)

সিজারে সন্তান হলে পরবর্তী স্রাব হায়েজ হিসেবে গন্য হবে নাকি নেফাস হিসেবে?

সন্তান স্বাভাবিক নিয়মে ভূমিষ্ট হোক বা সিজারের মাধ্যমে হোক, ভূমিষ্ট হওয়ার পর মহিলার যে রক্তস্রাব আসে তা নেফাস বলেই গণ্য হবে। হায়েজ হিসেবে নয়। তাই চল্লিশ দিনের ভেতরে স্রাব বন্ধ না হলে স্ত্রী সহবাস হরাম এবং তার নামাজ পড়তে বন্ধ থাকবে। তবে চল্লিশ দিনের ভেতরে যেদিন-ই স্রাব বন্ধ হবে সেদিন থেকে গোসল করার পর সবকিছু বৈধ হবে। সূত্র: আলবাহরুর রায়েক ১/২১৮; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৯; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৭)

ডেইলি বাংলাদেশ/আরএজে


=================

নিফাসের সর্বাধিক সময় চল্লিশ দিন, যার সূচনা হয় প্রসব থেকে অথবা তার দুই বা তিনদিন পূর্ব থেকে । উম্মে সালামা [রা]-এর হাদীসে এসেছে- নবী [সা]-এর যুগে নিফাসের নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত। নিফাসের সর্বোচ্চ মেয়াদ চল্লিশ দিন। এ বিষয়ে সকল আহলে ইলম একমত। ইমাম তিরমিযী [রহ] প্রমুখগণ আলেমদের এরূপ ঐকমত্য নকল করেছেন। তবে যে নারী চল্লিশ দিনের পূর্বে পবিত্র হয়ে যাবে, যেমন তার রক্ত বন্ধ হলো, সে গোসল করবে ও নামাজ আদায় করবে। নিফাসের সর্বনিম্ন কোনো মেয়াদ নেই। কারণ তার নির্দিষ্ট মেয়াদ নবী [সা] থেকে বর্ণিত হয় নি। যদি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, তাহলে সেটা যদি হায়েযের সময় হয় হায়েয গণ্য হবে, যদি হায়েযের সময় না হয় ইস্তেহাযাহ গণ্য হবে, তাই চল্লিশ দিন পার হলে ইবাদত ত্যাগ করবে না। মূল : ড. সালেহ ইবনে ফাওজান ভাষান্তর : মাওলানা মনযূরুল হক


======================


প্রশ্ন: জনাব, সমত্মান প্রসবের পর মহিলাদের যে ওযর দেখা দেয়, (যাকে নেফাস বলা হয়) আমি যতটুকু জানি আলেমদের মতে তার সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন। আমার জানা মতে অধিকাংশ আলেমের মাযহাব এটাই যে, চল্লিশ দিনের আগে রক্ত বন্ধ হয়ে গেলে পবিত্র হয়ে যাবে, এরপর স্বাভাবিকভাবে নামায-রোযা আদায় করতে পারবে। আর চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ না হলে অতিরিক্ত দিনগুলোর রক্ত ইস্তেহাযার রক্ত বলে গণ্য হবে।  এ ক্ষেত্রে সে নামায আদায় করা শুরু করে দিবে।

আমার প্রশ্ন হল, এই মাসআলার দলীল কী? হাদীসে তো চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকার’ কথা এসেছে। চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হলে পবিত্র হয়ে যাবে- এমন কথা আমি কোনো সহীহ হাদীসে পাইনি। হাঁ, কিছু যয়ীফ রেওয়ায়েতে إلا إلا أن ترى الطهر قبل ذلك   (তবে যদি চল্লিশ দিনের পূর্বেই পবিত্রতা দেখতে পায়) বাক্যটি এসেছে। কিন্তু সহীহ হাদীসে আমি এ কথা পাইনি।

এ কথা বলা কঠিন যে, ইমামগণের সবাই এ হাদীসের এই উদ্দেশ্যই বুঝেছেন যে, চল্লিশ দিন হল সর্বোচ্চ সময়সীমা, (নির্দিষ্ট সময়সীমা নয়) কেননা ইবনুল জারুদের ‘আল মুন্তাকায়’ সাহাবী হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর আমল বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি চল্লিশ দিন পূর্ণ হওয়ার আগে স্ত্রী সহবাস করতেন না। বোঝা গেল, হাদীসের এই অর্থ অর্থাৎ চল্লিশ দিন নির্দিষ্ট সময়সীমা না হয়ে সর্বোচ্চ সময়সীমা হওয়া- এটি সর্বসম্মত মত নয়। তাহলে এই হুকুমের সূত্র কী? জানিয়ে বাধিত করবেন। আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

-আব্দুল্লাহ, মিরপুর, ঢাকা

 

উত্তর: আপনাকে মোবারকবাদ, মাশাআল্লাহ একটি মাসআলা বোঝার জন্য আপনি অনেক মেহনত করেছেন।   إلا أن ترى الطهر قبل ذلك স্পষ্টভাবে না পেয়ে আপনি চিন্তিত হয়েছেন। বস্তুত إلا أن ترى الطهر قبل ذلك অংশটি যে রেওয়ায়েতগুলোতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ হয়নি ঐ রেওয়ায়েতগুলোতেও এ অংশটি ধর্তব্য। হাদীসের শব্দ- كانت النفساء تجلس على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم أربعين يوما (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ দিন পর্যন্ত ‘বসে থাকতেন’।) এখানে ‘বসে থাকা’র অর্থ হল, ‘অপেক্ষা করা’। অর্থাৎ তারা এই অপেক্ষায় থাকবে যে, কখন রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, যেন নামায শুরু করা যায়। রক্ত বন্ধ হলে (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে। তবে এই অপেক্ষার সময়সীমা বলে দেওয়া হয়েছে চল্লিশ দিন। অর্থাৎ চল্লিশ দিনের অধিক অপেক্ষা করবে না। যদি তারপরও রক্ত বন্ধ না হয় তবুও (গোসল করে) নামায শুরু করে দিবে।

উল্লেখিত হুকুম বর্ণনা করার সময় অনেক সাহাবা ও তাবেঈগণ تجلس শব্দের স্থানে تنتظر বা تربص শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ‘অপেক্ষা করবে’। এটা (‘অপেক্ষা করবে’) মূলত ঐ হাদীসেরই ব্যাখ্যা যাতে ‘বসে থাকবে’ শব্দ এসেছে। উদাহরণত, হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিআল্লাহু আনহু, আনাস রাযিআল্লাহু আনহু প্রমুখ সাহাবায়ে কেরাম এবং হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ, আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহ, ও যাহহাক ইবনে মুযাহিম রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ তাবেঈনদের আছার ও উক্তিসমূহ হাদীসের কিতাবগুলোতে تنتظر বা تربص শব্দে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ১/৩১২-৩১৩ (১১৯৭-১২০০); মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৯/৪১৭ (১৭৭৪১); আল আওসাত, ইবনুল মুনযির, ২/৩৭৬-৩৭৭ (৮২৪-৮২৮);  মুসনাদে দারেমী ৫/১৯১ (১০৪৪, ১০৪৫) (ফতহুল মান্নানসহ)

দ্বিতীয়ত আল মুন্তাকা ইবনুল জারুদের উদ্ধৃতিতে হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.-এর যে রেওয়ায়েতের কথা আপনি বলেছেন তাতে যদিও চল্লিশ দিনের পূর্বে রক্ত বন্ধ হওয়ার হুকুম উলেস্নখ নেই কিন্তু মুসনাদে দারেমী ৫/১৮৫ (১০৩৭) ও ইবনুল মুনযির রচিত আল আওসাতে ২/৩৭৬ (৮২৫) হযরত উসমান ইবনে আবিল আস রা.- এরই একটি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, যাতে এ  বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মুসনাদে দারেমীর রেওয়ায়েতটির আরবী পাঠ এই-

 أخبرنا جعفر بن عون أنا إسماعيل بن مسلم، عن الحسن عن عثمان بن أبي العاص، قال: وقت النفساء أربعين يوما، فإن طهرت وإلا فلا تجاوزه حتى تصلي.

 ‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাদের সময়সীমা চল্লিশ দিন। তবে যদি এর আগেই পবিত্র হয়ে যায়, (তাহলে  পবিত্রতার বিধান শুরু হয়ে যাবে।) অন্যথায় চল্লিশ দিন পর নামায শুরু করতে বিলম্ব করবে না।’’

এই রেওয়ায়েতের বর্ণনাকারীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য।

ইবনুল মুনযিরের রেওয়ায়েতের আরবী পাঠ এই-

حدثنا يحيى (ابن محمد) ، ثنا أحمد بن يونس، ثنا زائدة، عن هشام عن الحسن عثمان ابن أبي العاص قال: تمكث النفساء أربعين ليلة إلا أن ترى الطهر قبل ذلك.

‘‘উসমান ইবনে আবুল আস রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, নেফাসগ্রস্ত মহিলাগণ চল্লিশ রাত অবস্থান করবে। তবে যদি এর আগে পবিত্রতা দেখে।’’

এর বর্ণনাকারীগণও সবাই  নির্ভরযোগ্য।

অতএব জুমহুর ফুকাহায়ে কেরামের যে মাযহাব আপনি প্রশ্নে উল্লেখ করেছেন তা দলীলের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী।


(মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক)

মূল লিংক

প্রশ্ন: ৪৪৮ : রোগ / অসুস্থতা সম্পর্কে ইসলামের ধারণা ।

    আল্লাহ তায়ালা মাঝে মধ্যে রোগ-বালাই দিয়ে বান্দার ঈমানের দৃঢ়তা বা ওজন পরীক্ষা করে থাকেন। তিনি দেখতে চান, বিপদ-আপদকালীন সময়ে তাঁর বান্দাদের মধ্যে কে বা কারা, তাঁর উপর অবিচল আস্থা বা বিশ্বাস রেখে, ধৈর্য্যের সাথে সামনের দিকে এগিয়েছে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে।’ (সূরা বাকারা:১৫৫)। ‘আর ভালো এবং মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি।’ (সূরা আম্বিয়া:৩৫)।

মানুষের ভালো-মন্দ উভয়ের বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সমভাবে ক্ষমতাবান। আমরা অসুস্থ হলে, তিনিই আমাদের সুস্থতা দান করেন। রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে চিকিৎসক শুধুমাত্র চেষ্টা করতে পারেন। মানুষ একে অপরের জন্য কেবল মাত্র দোয়া করতে পারে। আরোগ্য দানের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তায়ালার দয়ার উপর নির্ভর করে। আল্লাহর সাহায্য বা দয়া ব্যাতিত কঠিন রোগ-ব্যাধি থেকে কারোরই আরোগ্য লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কারো উপর আযাব গজব দান করেন, কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। সৃষ্টি জগতের সব কিছুই তাঁর ইচ্ছার অধীন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোনো দুর্দশা স্পর্শ করান, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোনো কল্যাণ দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান।’ (সূরা আনআ’ম:১৭-১৮)। ‘কে আছে অসহায় ও বিপন্নের ডাকে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে এবং কষ্ট ও বিপদ দূরীভ‚ত করে দেয়?’ (সূরা নামল:৬২)।
আল্লাহ ছাড়া যেমন, মানুষের কোনো সাহায্যকারী নেই। তেমনি দুনিয়া এমন কোনো রোগ নেই, যে রোগের ঔষধ বা প্রতিষেধক সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান দান করেন নাই। হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এমন কোনো রোগ অবতীর্ণ করেননি। যার নিরাময়ের উপকরণ তিনি সৃষ্টি করেননি।’ (বোখারি: ৫২৭৬)।
যা কিছু মানুষের জন্য কল্যাণকর, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের তা দান করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা রোগ-বালাইর মধ্যেও মানুষের জন্য কল্যাণ রেখেছেন। দুনিয়াতে আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবকিছুই মানুষের উপকারার্থে। এজন্যে পানি, বৃক্ষ- লতা, রোদ-বৃষ্টি ও ফলফলাদি থেকে শুরু করে সবকিছুর মাঝেই ঔষধি গুণ ক্ষমতা রয়েছে। যখন মানুষের মধ্যে বালা-মুসিবতের আগমণ ঘটে। তখন আল্লাহ তায়ালা বালা-মুসিবতের পাশাপাশি বান্দার জন্য কল্যাণও পাঠিয়ে দেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন.‘মুসলমানের উপর যেসব বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত পতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার গোনাহ মাফ করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও তার গোনাহ মাফ হয়।’ (বোখারি:৫২৩৮)।
যখনই আমাদেরকে কোনো রোগ-ব্যাধি আক্রমণ করবে। তখন কঠিন ইস্পাতের ন্যায় অন্তরে আল্লাহর রহমতের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রেখে, ধৈর্য্যের সাথে আল্লাহর নিকট আরোগ্য লাভের জন্য সাহায্য চাইতে হবে। অতীত জীবনের ভ‚ল-ক্রুটির জন্য বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার পড়তে হবে। তাহলে আল্লাহ অবশ্যই কঠিন রোগ-বিমার থেকে শেফা দান করবেন। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন দান করুক। আমীন।

===============================

আধুনিক যুগে আরাম-আয়েশ ও রোগমুক্তির উপায়-উপকরণের প্রাচুর্য সত্ত্বেও আমরা রোগব্যাধিকে হার মানাতে পারছি না। নতুন রোগ আসছে আর বেড়ে চলেছে অস্থিরতা।

একজন মুসলমান হিসেবে আমরা যদি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল-কুরআন এর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “আমি কোরআনে এমন বস্তু নাজিল করেছি, যা মুমিনদের জন্য নিরাময় ও রহমত। ” (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত ৮২)

তাহলে প্রশ্ন হলো আমরা কি রহমত-বরকত অন্বেষণ করছি! হয়ত প্রশ্ন জাগতে পারে যারা আল-কুরআন এর পথে চলছে, তারা কি অসুস্থ হবে না? আমরা সুস্থ থাকার জন্য কত কিছুই না করি! যারা কখনো অসুস্থ হননা তারা হয়ত অবাক হবেন কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সা.) বলেছেন, ‘দোজখি লোক দেখার যাদের ইচ্ছা থাকে, তাদের বলো, যার কোনো দিন রোগ হয়নি তাকে যেন দেখে। ’ অর্থাৎ অসুস্থতাও আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত। এখন যদি বলি অসুস্থতা-সুস্থতা দু’টিই আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে তাহলে আমরা অযথা ওষুধ খাচ্ছি কেন? ওষুধের কি কোনো ক্ষমতা নেই! হযরত মুসা (আ.) এক বার পীড়িত হয়েছিলেন। ইসরাইল বংশীয় অভিজ্ঞ লোকেরা বলেছিল, ‘অমুক দ্রব্য এ রোগের ওষুধ, আপনি তাহা ব্যবহার করেন’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি ওষুধ সেবন করবো না, স্বয়ং আল্লাহ আমাকে আরোগ্য করবেন। ’ তার রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। তিনি কিছুতেই ওষুধ সেবনে সম্মত হলেন না, পীড়াও দূর হলোনা। ইতিমধ্যে ‘ওহী’ নাজেল হলো, ‘হে মুসা! আমি নিজের গৌরবের শপথ করে বলছি, ‘‘তুমি যতোদিন ওষুধ সেবন না করবে, আমি ততোদিন কিছুতেই তোমাকে আরোগ্য করবো না। অতঃপর তিনি ওষুধ সেবন করে স্বাস্থ্য পুনঃপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হাদিস শরিফে আছে, হযরত মুসা (আ.) আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! রোগ কি কারণে আর আরোগ্যই বা কি কারণে ঘটে?’ উত্তর এসেছিল, ‘উভয়ই আমার আদেশে ঘটে’ । তিনি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘চিকিৎসক তবে কোনো কাজের জন্য হয়েছে? উত্তর এলো, ‘কতগুলো লোক চিকিৎসা কার্যে, ওষুধের উপলক্ষে জীবিকা পাবে এবং আমার বান্দাদের প্রফুল্ল রাখবে এ উদ্দেশে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। ’ অর্থাৎ মানুষের উচিত, যিনি ওষুধ সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি যেন ভরসা করে, ওষুধের ওপর যেন কিছুমাত্র ভরসা না করে, কেননা বহুলোক ওষুধ সেবন করেও মারা যাচ্ছে। (সৌভাগ্যের পরশমনি, ইমাম গাযযালী (র.) )

আল্লাহ তা’আলা যে বান্দার মঙ্গলের জন্য রোগ দেন এই কথাটাই আমরা মানতে নারজ বরং একটু অসুস্থ হলেই আমরা দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেই। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  এরশাদ করেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে একটি রাত অতিবাহিত করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ করে দেবেন। ”

সুতরাং রোগমুক্তির জন্য ব্যস্ত হয়ে যাওয়া ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে কোনো এক সাহাবি তার ভাইয়ের অসুখের বিবরণ দিয়ে তিনি তাকে মধু পান করানোর পরামর্শ দেন। দ্বিতীয় দিনও এসে আবার সাহাবি বললেন, অসুখ আগের মতো বহাল রয়েছে। তিনি আবারো একই পরামর্শ দিলেন। তৃতীয় দিনও যখন সংবাদ এলো যে, অসুখের কোনো পার্থক্য হয়নি, তখন তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর উক্তি নিঃসন্দেহে সত্য, ওষুধের কোনো দোষ নেই। রোগীর বিশেষ মেজাজের কারণে ওষুধ দ্রুত কাজ করেনি। ’’ এরপর রোগীকে আবার মধু পান করানো হয় এবং সে সুস্থ হয়ে ওঠে। (তফসীর মা’ আরেফুল কুরআন, পৃষ্ঠা-৭৪৭)

বান্দার মেজাজ বা ধারণার ওপর আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা নির্ভর করে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বলেছেন, “মৌমাছির পেট থেকে রং বেরংয়ের পানীয় নির্গত হয়, তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। (সুরা আন-নাহল, আয়াত ৬৯) আল্লাহ তা’আলা যে জীবন বিধান দিয়েছেন তাই মানুষের সমগ্র জীবনের সর্বদিকের ওষুধ। রোগ নিরাময়ের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত চিকিৎসক, রোগ নির্ণয়, সঠিক ওষুধ এবং সঠিক সেবনবিধি। এ চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে রোগের চিকিৎসা। আল্লাহ তা’আলা রোগ সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য ওষুধও সৃষ্টি করেছেন। (বুখারি) সবশেষে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি উক্তির মাধ্যমে লেখা শেষ করবো তা হলো, “তোমরা দু’টি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে নাও, একটি মধু (আহার্যের মধ্যে) এবং অপরটি আল কুরআন (কিতাবসমূহের মধ্যে) (মিশকাত শরীফ)। খাদ্যের মধ্যে  আরেকটি হচ্ছে কালোজিরা ।  এটিও শেফাদানকারী হিসেবে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। 

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...