প্রশ্ন: ৪৪২: রাসুল সা: এর দৈনন্দিন পোষাক ও যুদ্ধের পোষাক ।

 

রাসূল সা: এর জামা, লুঙ্গী ও চাদরের বর্ণনা

রাসূল সা: সাধারণত লুঙ্গী পরিধান করতেন। উসওয়ায়ে কিতাবে এসেছে, অধিকাংশ সময় রাসূল সা. এর পরনে লুঙ্গী ও চাদর থাকত। যা খুব শক্ত ও মোটা হত। মাদারিজুন নবুওয়ত গ্রন্থে আছে যে, রাসূল সা. ময়লা ও দুর্গন্ধ যুক্ত বস্ত্র অপছন্দ করতেন।

রঙের ক্ষেত্রে রাসূল সা: সাদা রঙের পোশাক পছন্দ করতেন। হযরত সামুরা ইবনে জুনদুন রা. বর্ণনা করেন, নবী আকরাম সা. বলেছেন, সাদা বস্ত্র পরিধান কর, কেননা এটা অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। আর এর দ্বারাই (সাদা কাপড়) তোমরা মৃত ব্যক্তিদের দাফন কর।

অপরদিকে, যাদুল মা’আদে আছে, তিনি ইয়ামানী চাদর, জোব্বা, আলখাল্লা, জামা, লুঙ্গী ইত্যাদি সব বস্ত্র ব্যবহার করতেন। তিনি রেখা পাইর-যুক্ত কালো বস্ত্র এবং সাদা বস্ত্র পরিধান করেছেন।

পোশাকের সাইজ

পোশাকের বর্ণনা করতে গিয়ে, কবি মুযতার উল্লেখ করেন,

অধিক সময় পরতেন তিনি সাদা, মোটা আরাম হীন কাপড়, লম্বা খাটো খুব বেশী নয়, গোড়ালি হতে একটু উপর। কালো কম্বল জড়াতেন কভু পবিত্র দেহের উপর| রাসুল (সা.)-এর জামা মোবারক মোল্লা আলী বারী রহঃ দিময়াতী রহঃ হতে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীর সা. জামা সুতি কাপড়ের বানানো ছিল, যা খুব লম্বা ছিল না এবং এর আস্তিনও ছিল না। এমনিভাবে মুনাবী রহঃ ইবনে আববাস রাযি. হতে বর্ণনা করেন, তার জামা টাখনুর একটু উপরে থাকত।

খোসায়েলে নববী ৪৯ পৃষ্ঠা

শামায়েলে তিরমিযীতে জামার হাতার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আসমা রা. বলেন, রাসূলের সা. জামার হাতা কব্জি পর্যন্ত হত। এছাড়াও আলখাল্লার হাতা কব্জির আগ পর্যন্ত বানিয়েছিলেন| এটা এ কথা বুঝানোর জন্য কব্জির আগ পর্যন্ত হাতা বানিয়েছেন। অন্যথায় উত্তম ও সুন্নত হল হাতা কি পর্যন্ত হওয়া। তবে, এর একটু আগ পর্যন্ত হওয়াটাও জায়েজ। কিন্তু হাতা লম্বার পরিমাণ আঙ্গুল অতিক্রম করা চাই।

জামার লম্বার ব্যাপারে আল্লামা শামী রহ. লিখেন, জামা পায়ের নলীর অর্ধেক পর্যন্ত হওয়া চাই; এর, বেশী নয়| এটাই উত্তম। তাছাড়া টাখনু পর্যন্তও জায়েজ; কিন্তু অনুচিত| নবী কারীম সা. জামার হাতা খুব চিপাও রাখতেন না আবার খুব টিলাও রাখতেন না, বরং মাঝামাঝি ধরনের রাখতেন এবং জামার হাতা কব্জি পর্যন্ত লম্বা হত| আলখাল্লার হাতার চেয়েও বর্ধিত হত| তবে আঙ্গুল অতিক্রম করত না।

উসওয়ায়ে রাসূ্‌ল সা. ১২২ পৃষ্ঠা

রাসূল (সা.)-এর চাদর মোবারকের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ

রাসূল (সা.)-এর চাদর মোবারক চার হাত লম্বা ও আড়াই হাত প্রশস্ত ছিল। অন্য এক বর্ণনা মতে ছয় হাত লম্বা ও সাড়ে তিন হাত প্রশস্ত ছিল।

খাসায়েলে নববী ৯৫ পৃষ্ঠা

নবীজি সা. কালো কম্বলও গায়ে জড়াতেন| হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণনা করেন, একদা তিনি সকাল সকাল বাইরে গমন করলেন, তখন তার গায়ে কালো পশমের একটি চাদর ছিল।

মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ১৯৪ পৃষ্ঠা

রাসূল (সা.)-এর টুপি মোবারক

তিনি সাদা রঙ্গের টুপি ব্যবহার করতেন। কিন্তু সফর ও নিজ বাড়ীতে অবস্থানকালে টুপির ধরন ভিন্ন হত। তিনি যখন বাড়ীতে অবস্থান করতেন, তখন মাথায় চেষ্টা ধরনের টুপি ব্যবহার করতেন|

উসওয়ায়ে রাসূল (সা.) ১২৪ পৃষ্ঠা, সীরাজুম মুনির নববী লায়ল ও নাহার ১১১ পৃষ্ঠা

রাসূল (সা.)-এর পাগড়ী মোবারক

রাসূল (সা.) অধিকাংশ সময় পাগড়ী ব্যবহার করতেন আর বলতেন, “পাগড়ী ব্যবহার কর, এর দ্বারা ভদ্রতা বাড়ে”। কখনো যদি পাগড়ী না হত, তখন শির ও ললাটের মাঝে একটি পট্টি হলেও বেঁধে নিতেন।

নবীজির পাগড়ী মোবারকের রঙ

হযরত আমর ইবনে হারিস রাযি. বলেন, এ দৃশ্যটা যেন এখনো আমার চোখের সামনে ভাসমান, যখন নবীজি (সা.) মিম্বরে খুতবা প্রদান করছিলেন এবং কালো রঙ্গের একটি পাগড়ী রাসূল (সা.)-এর (শির) মাথায় বাধা ছিল।

মুসলিম, নাসায়ী

হযরত জাবের রাযি. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন যখন তিনি মক্কা শরীফে প্রবেশ করলেন, তখন তার মাথায় কালো রংয়ের পাগড়ী ছিল।

রাসূল সা. এর শামলা প্রায় অর্ধ হাত লম্বা রাখতেন| অধিকাংশ সময় শামলা ছেড়ে পাগড়ী বাধতেন এবং শামলাকে উভয় স্কন্ধের মাঝামাঝি পেছনের দিকে ছেড়ে রাখতেন|

খাসায়েলে নববী, নববী লায়ল ও নাহার, ৪১১ পৃষ্ঠা

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাযি. বলেন, রাসূল সা. যখন পাগড়ী বাঁধতেন, তখন শামলাকে উভয় স্কন্ধের মাঝারি পেছনে ঢেলে দিতেন । পাগড়ী মোবারক প্রায় সাত গজ লম্বা ছিল।

খাসায়েলে নববী, নববী লায়ল ও নাহার

রাসূল সা.-এর মাথা মোবারকে কাপড় রাখার আলোচনা

হযরত আনাস (রাযি.) বলেন, তিনি প্রায়ই মাথায় কাপড় রাখতেন| তার এই কাপড়খানা অধিক তৈল লাগার কারণে তৈলযুক্ত কাপড় বলেই মনে হত|

এই কাপড়টা পাগড়ীর নিচে রাখতেন, যাতে তৈলের দরুন পাগড়ী নষ্ট না হয়ে যায়। কিন্তু তথাপি এই কাপড়টি ময়লা হত না ।

মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) লিখেন, তার কাপড়ে উকুন পড়ত না কখনো । কখনো উরুশ তার রক্ত চুষতে পারত না । আল্লামা রাযী (রহঃ) বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি (সা.)-এর দেহ মোবারকে কখনো মাছি বসে নাই।

খাসায়েলে নববী ১০০ পৃষ্ঠা

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর চামড়ার মোজা মোবারক

প্রিয় নবীজি (সা.) চামড়ার মোজা পরিধান করতেন এবং এগুলির উপর মাসাহ করতেন| হযরত বুরাইদা (রাযি.) বলেন, হাবশার বাদশাহ নাজ্জাশী প্রিয় নবীজি (সা.)কে কালো রঙ্গের দু’টি পরিস্কার মোজা উপঢৌকন হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। রাসূল (সা.) এগুলি ব্যবহার করেছেন এবং ওযুর পর এগুলির উপর মাসাহ করেছেন।

হযরত মুগীরা ইবনে শোবা রাযি. বলেন, দাহিয়া কীলবী (রাযি.) রাসূল (সা.)কে দু’টি মোজা উপহার দিয়েছিলেন। নবীজি (সা.) এগুলি ব্যবহার করতে করতে শেষ পর্যস্ত ফেটে গিয়েছিল।

পরিশেষে

এই ছিল আজকে রাসূল সা: এর রাসূল সা: এর পোশাক পরিচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে রাসূল সা:কে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুক। আমীন। আরও জানতে জেনে নিন, কেমন ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশভূষা ও সাজ-সজ্জা।

দ্বীনি কথা শেয়ার করে আপনিও ইসলাম প্রচারে অংশগ্রহণ করুন।




পরিচ্ছেদঃ

পোশাক পরিধান করা কোন ক্ষেত্রে ফরয, কোন ক্ষেত্রে হারাম, কোন ক্ষেত্রে মুস্তাহাব, আবার কোন ক্ষেত্রে মুবাহ। ফরয পোশাক হলো এতটুকু পরিধান করা, যা দ্বারা সতর আবৃত করা যায়। মুস্তাহাব হলো যার ব্যাপারে শরীয়ত উৎসাহ দান করেছে। যেমন- দু’ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করা। মাকরূহ ঐ পোশাক, যা পরিধান করতে উৎসাহিত করা হয়নি। যেমন- ধনীদের সর্বদা ছিন্ন ও পুরাতন কাপড় পরিধান করা। হারাম ঐ পোশাক, যা শরীয়তে নিষিদ্ধ। যেমন- পুরুষের জন্য ওজর ব্যতীত রেশমী কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় পোষাক ছিল কামীস:

৪৪. উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পোষাক হিসেবে ‘কামীস’ বা জামা সর্বাধিক পছন্দ করতেন।[1]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ حُمَيْدٍ الرَّازِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى ، وَأَبُو تُمَيْلَةَ ، وَزَيْدُ بْنُ حُبَابٍ ، عَنْ عَبْدِ الْمُؤْمِنِ بْنِ خَالِدٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، قَالَتْ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقَمِيصُ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

৪৫. মু’আবিয়া ইবনে কুররা (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মুযায়না গোত্রের একদল লোকের সাথে বায়’আত গ্রহণ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি তখন (বরকত লাভ করার জন্য) জামার ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মোহরে নবুওয়াত স্পর্শ করলাম।[1]

حَدَّثَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبُو نُعَيْمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا زُهَيْرٌ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ قُشَيْرٍ ، عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُرَّةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي رَهْطٍ مِنْ مُزَيْنَةَ لِنُبَايِعَهُ ، " وَإِنَّ قَمِيصَهُ لَمُطْلَقٌ ، أَوْ قَالَ : زِرُّ قَمِيصِهِ مُطْلَقٌ قَالَ : فَأَدْخَلْتُ يَدِي فِي جَيْبِ قَمِيصِهِ , فَمَسَسْتُ الْخَاتَمَ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি ইয়ামেনী নকশী কাপড়ও পরিধান করতেন:

৪৬. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর কাঁধে ভর করে বাইরে বের হলেন। এ সময় তাঁর দেহে পরা ছিল একটি ইয়ামেনী নকশী কাপড়। তারপর তিনি লোকদের নামাযের ইমামতি করেন।[1]

حَدَّثَنَا عَبْدُ بْنُ حُمَيْدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ الشَّهِيدِ ، عَنِ الْحَسَنِ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، " أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ وَهُوَ يَتَّكِئُ عَلَى أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عَلَيْهِ ثَوْبٌ قِطْرِيٌّ " , قَدْ تَوَشَّحَ بِهِ ، فَصَلَّى بِهِمْ .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি নতুন কাপড় পরিধানকালে কাপড়ের নাম উচ্চারণ পূর্বক দু’আ পাঠ করতেন :

৪৭. আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন তখন কাপড়ের নাম পাগড়ি অথবা কামীস অথবা চাদর ইত্যাদি উচ্চারণ করতেন। তারপর তিনি এ দুআ পরতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। যেহেতু তুমিই আমাকে তা পরিধান করিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর কল্যাণ প্রার্থনা করছি, আরো কল্যাণ চাচ্ছি যে উদ্দেশে এটা তৈরি করা হয়েছে তাঁর। আর আমি তোমার স্মরণাপন্ন হচ্ছি এর যাবতীয় অনিষ্ট হতে এবং যে উদ্দেশে তৈরি করা হয়েছে তাঁর অনিষ্ট হতে।[1]

حَدَّثَنَا سُوَيْدُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ إِيَاسٍ الْجُرَيْرِيِّ ، عَنْ أَبِي نَضْرَةَ ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوْبًا سَمَّاهُ بِاسْمِهِ عِمَامَةً أَوْ قَمِيصًا أَوْ رِدَاءً ، ثُمَّ يَقُولُ : " اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَمَا كَسَوْتَنِيهِ ، أَسْأَلُكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি প্রিয় পোষাক ছিল হিবারা :

৪৮. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামানে তৈরি চাদর) হিবারা।[1]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ ، قَالَ : حَدَّثَنِي أَبِي ، عَنْ قَتَادَةَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ، قَالَ : " كَانَ أَحَبَّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , يَلْبَسُهُ الْحِبَرَةُ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি লাল রঙ্গের নকশী করা চাদরও পরিধান করতেন:

৪৯. আবু জুহাইফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তাঁর উভয় গোড়ালীর ঔজ্জ্বল্য প্রত্যক্ষ করছি।[1]

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ غَيْلانَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ عَوْنِ بْنِ أَبِي جُحَيْفَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ , كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى بَرِيقِ سَاقَيْهِ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

৫০. বারা ইবনে আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘লাল হুল্লা’ পরিহিত কাউকে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেয়ে অধিক সুদর্শন দেখিনি। আর তাঁর কেশ (জুম্মা) উভয় কাঁধ স্পর্শ করছিল।[1]

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ خَشْرَمٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ ، عَنْ إِسْرَائِيلَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ ، قَالَ : " مَا رَأَيْتُ أَحَدًا مِنَ النَّاسِ أَحْسَنَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ , مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِنْ كَانَتْ جُمَّتُهُ لَتَضْرِبُ قَرِيبًا مِنْ مَنْكِبَيْهِ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি সবুজ চাদরও পরিধান করতেন:

৫১. আবু রিমছা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে দুটি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি।[1]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ إِيَادٍ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ أَبِي رِمْثَةَ ، قَالَ : " رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَعَلَيْهِ بُرْدَانِ أَخْضَرَانِ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি সাহাবীদেরকে সাদা রঙের কাপড় পরিধান করতে উপদেশ দিয়েছেন:

৫২. ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান করবে। তোমাদের জীবিতরা যেন সাদা কাপড় পরিধান করে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে দাফন দেয়। কেননা, সাদা কাপড় তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক।[1]

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ الْمُفَضَّلِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ خُثَيْمٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " عَلَيْكُمْ بِالْبَيَاضِ مِنَ الثِّيَابِ , لِيَلْبَسْهَا أَحْيَاؤُكُمْ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ، فَإِنَّهَا مِنْ خِيَارِ ثِيَابِكُمْ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

৫৩. সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও।[1]

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ ، عَنْ مَيْمُونِ بْنِ أَبِي شَبِيبٍ ، عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " الْبَسُوا الْبَيَاضَ , فَإِنَّهَا أَطْهَرُ وَأَطْيَبُ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি কালো রঙের পশমী চাদরও পরিধান করতেন:

৫৪. আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুষে বাইরে বের হন। তখন তাঁর দেহে কালো পশমের একটি চাদর শোভা পাচ্ছিল।[1]

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ زَكَرِيَّا بْنِ أَبِي زَائِدَةَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَبِي ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ ، عَنْ عَائِشَةَ , قَالَتْ : " خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ غَدَاةٍ , وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مِنْ شَعَرٍ أَسْودَ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)

পরিচ্ছেদঃ

তিনি আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট রুমী জুব্বা পরিধান করেছিলেন:

৫৫. মুগীরা ইবনে শু’বা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঁটসাঁট আস্তিন বিশিষ্ট একটি রুমী জুব্বা পরিধান করেন।[1]

حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ عِيسَى ، قَالَ : حَدَّثَنَا وَكِيعٌ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنِ الشَّعْبِيِّ ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , " لَبِسَ جُبَّةً رُومِيَّةً , ضَيِّقَةَ الْكُمَّيْنِ " .


 হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
 
 পুনঃনিরীক্ষণঃ 
 
 সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
 
 ৮. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পোশাক-পরিচ্ছদ (باب ما جاء في لباس رسول الله ﷺ)




প্রশ্ন: ৪৪১ : কাদের সাথে বিবাহ বৈধ, কাদের সাথে বিবাহ অবৈধ ।

 মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, মেয়েদের, বোনদের, ফুফুদের, খালাদের, ভাতিজিদের, ভাগ্নিদের, তোমাদের সেই সব মাতাকে যাঁরা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত (দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন) হয়েছ সেই সব স্ত্রীর অন্য স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সঙ্গে মিলিত না হয়ে থাকো, তবে তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের ওপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে অন্যের বিবাহিতদের। তবে তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে (দাসী) তারা ছাড়া। এটি তোমাদের ওপর আল্লাহর বিধান এবং এরা ছাড়া সব নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদের চাইবে বিয়ে করে, অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়ে নয়।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)

 

যেসব নারীকে বিয়ে করা হারাম

নিম্নে বর্ণিত ১৩ প্রকার নারীকে বিয়ে করা হারাম :

১.  আপন মা, বাবা ও দাদা-নানার স্ত্রীরা এবং তাদের কামভাব নিয়ে স্পর্শকৃত নারী। এরূপ ঊর্ধ্বতন সব দাদা-নানার স্ত্রীরা।

২.  মেয়ে এবং ছেলে ও মেয়ের ঘরের সব নাতনি।

৩.  সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ফুফু।

৪.  সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় খালা।

৫.  সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় বোন ও তাদের সন্তানাদি।

৬.  সহোদরা, বৈপিত্রেয়-বৈমাত্রেয় ভ্রাতৃকন্যা ও তাদের সন্তানাদি।

৭.  দুধমাতা, তার মাতা, দাদি, নানি—এমনিভাবে ওপরের সব নারী।

৮.  স্ত্রীর মেয়ে, যদি স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস হয়ে থাকে।

৯.  পুত্রবধূ, আপন ছেলের হোক বা দুধছেলের হোক।

১০. আপন শাশুড়ি, দাদিশাশুড়ি, নানিশাশুড়ি এবং ওপরে যারা রয়েছে।

১১. দুই বোন একত্রীকরণ, এমনিভাবে ফুফু ও তার ভাতৃকন্যা, খালা ও তার ভাগ্নিকন্যাকে একসঙ্গে বিয়ের মধ্যে রাখা।

১২. উল্লিখিত রক্ত সম্পর্কের কারণে যারা হারাম হয়েছে, দুধ সম্পর্কের কারণেও তারা সবাই হারাম হয়।

১৩. যে মেয়ে অপরের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ রয়েছে। এ ছাড়া অন্য সব নারীকে বিয়ে করা হালাল। (দেখুন : সুরা : নিসা, আয়াত ২৩-২৪)

 

স্ত্রীর বর্তমানে শালিকে বিয়ে করা অবৈধ

কোনো নারী কারো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ থাকাকালীন তার বোনের সঙ্গে বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। প্রথম বোনের সঙ্গে তালাক হয়ে গেলে মহিলার ইদ্দত শেষ হওয়ার পর অথবা বোন মারা গেলে তখন তার বোনের সঙ্গে বিয়ে বৈধ। (হিন্দিয়া : ১/২৭৭)

 

পরস্পর লেগে থাকা যমজ দুই বোনের বিয়ের বিধান

জন্মগতভাবে পরস্পর জড়ানো যমজ দুই বোনের জন্ম হলে দুই বোনকে এক ব্যক্তি একত্রে বিয়ে করতে যেমন পারবে না, তেমনি দুই বোনকে দুই ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেওয়াও সম্ভব নয়। শুধু এক বোনকে একজন লোকের কাছে বিয়ে দিলেও পর্দার বিধান রক্ষা করে তাকে নিয়ে সংসার করা সম্ভব হবে না। তাই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হবে, অপারেশনের মাধ্যমে দুই বোনকে আলাদা করার চেষ্টা করা, যা বর্তমান যুগে ব্যয়বহুল হলেও সম্ভব। অতঃপর দুই বোনকে পৃথক দুই ব্যক্তির কাছে বিয়ে দেওয়া। আর পৃথক করা কোনোভাবে সম্ভব না হলে তাদের চিরকুমারী থাকা ছাড়া কোনো উপায় নেই। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৬২; ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/২৩৯)। তবে মাওলানা মওদূদী রাহ: এ মাসআলাটি রাসায়েল মাসায়েল গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন দলিল প্রমাণ উল্লেখ করে তিনি উল্লেখ করেছেন যে,   এক্ষেত্রে একই ব্যাক্তির কাছে বিয়ে দেওয়া যাবে। 

 

চাচাতো ভাই-বোনের মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ

আপন ভাই বা বোনের মেয়েকে বিয়ে করা হারাম। তবে চাচাতো, মামাতো, খালাতো, ফুফাতো ভাই ও বোনের মেয়ে মুহাররমাতের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাদের বিয়ে করা জায়েজ হবে। (বিনায়া : ৪/৫০৮)

 

দুধবোন ও তার মেয়েকে বিয়ে করা হারাম

শরিয়তের আলোকে দুধবোনকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ হারাম ও নিষেধ। বংশীয় সম্পর্কে সহোদর বোনের মেয়েকে বিয়ে করা যেমন হারাম, দুধবোনের মেয়ে বিয়ে করাও তেমনি হারাম। (বুখারি, হাদিস : ২৬৪৫; বাদায়েউস     সানায়ে : ৪/২)

 

প্রাপ্তবয়স্ক স্বামী স্ত্রীর দুধ পান করলে স্ত্রী হারাম হবে না

সাবালক স্বামীর নিজ স্ত্রীর দুধ পান করা শরিয়তে নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজ। তবে এর দ্বারা বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হবে না। সহবাসের সময় উত্তেজনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্ত্রীর স্তন মুখে নিতে পারবে, তবে দুধ যেন ভেতরে না যায় তা খেয়াল রাখতে হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ৩/২২৫)

 

একাধিক নারী থেকে সংগৃহীত দুধ ফ্রিজে রেখে পান করানো

কোনো সন্তান দুই বছর বয়সের মধ্যে কোনো একজন নারীর বা একাধিক নারীর দুধ পান করলে ওই সন্তান ওই নারী বা নারীদের দুধসন্তান হিসেবে গণ্য হয়ে যায়—চাই সন্তান সরাসরি মহিলার স্তন থেকে দুধ পান করুক বা মহিলার স্তন থেকে বের করা দুধ সন্তানকে পান করানো হোক। কিন্তু এর জন্য দুধ অপরিবর্তিত থাকা শর্ত। (বাদায়েউস সানায়ে : ৪/৯)

 

দুধব্যাংকের শরয়ি বিধান

পশ্চিমা দেশগুলোতে মহিলাদের দুধ সংরক্ষণ করে প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে বংশের হেফাজত অত্যন্ত জরুরি। আর এ ধরনের দুধব্যাংকের কারণে আত্মীয়তার সম্পর্কে সংমিশ্রণ ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তাই এ পদ্ধতি গ্রহণ করে দুধ খাওয়ানো বৈধ নয়।

এর কোনো প্রয়োজনীয়তাও নেই। কারো মা না থাকলে দুধের প্রয়োজনে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী কারো থেকে গ্রহণ করতে পারে। তবে দুধব্যাংক থেকে দুধ পান করলে যার দুধ জানা সম্ভব হলে তার সঙ্গে হুরমত সাব্যস্ত হয়ে যাবে। (কারারাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, পৃষ্ঠা ২, ৩)

 

পালিত মেয়েকে বিয়ে করা বৈধ

যদি কারো পালিত মেয়ে ওই ব্যক্তির স্ত্রীর অথবা কোনো মাহরামের দুধ দুই বছর বয়সের মধ্যে পান করে না থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে জায়েজ। এ ক্ষেত্রে পর্দা করাও ফরজ। (সুরা : আহজাব, আয়াত ৩৩; ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ : ৭/২৪৪)

 

কামভাব নিয়ে পুত্রবধূকে স্পর্শ করা ও তাকানো

শ্বশুরের জন্য পুত্রবধূর দিকে কুদৃষ্টিতে তাকানো মারাত্মক গুনাহ ও হারাম। যদি শ্বশুর কামভাব নিয়ে পুত্রবধূর খালি শরীরে বা পাতলা কাপড়ের ওপর দিয়ে স্পর্শ করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ছেলের জন্য ওই পুত্রবধূ হারাম হয়ে যাবে।

তবে শর্ত হলো, স্পর্শের বিষয়টি স্বীকারোক্তি বা সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণিত হতে হবে অথবা ছেলে ওই কথার দাবিকারীকে প্রবল ধারণামতে সত্য মনে করতে হবে। এ অবস্থায় উভয়ে পৃথক হয়ে যেতে হবে। (বাদায়েউস  সানায়ে : ২/২৬০, রদ্দুল মুহতার ৩/৩৩)

 

জামাতা-শাশুড়ি পরস্পর কামভাব নিয়ে দেখা বা স্পর্শ করা

বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে কামভাব নিয়ে তাকালে গুনাহ হলেও ‘হুরমাতে মুসাহারাত’ সাব্যস্ত হয় না। বরং খোলামেলা কোনো অঙ্গ কামভাবে স্পর্শ করার দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয় তথা স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যায়। (মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস : ১০৮৩২)

 

অবৈধ শয্যাসঙ্গিনীর মেয়েকেও বিয়ে করা হারাম

যার সঙ্গে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে তার মেয়েকে বিয়ে করাও অবৈধ। কেননা ওই মেয়ের সঙ্গে এখন তার কন্যার সম্পর্ক হয়ে গেছে। (বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৬০)

 

তালাক গ্রহণ ছাড়া অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে

আগের স্বামীর তালাক প্রদান ছাড়া অন্য কোনো বিয়ে শরিয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। ওই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। তেমনি আগের স্বামীর ইদ্দত চলাকালেও বিয়ে বাতিল হবে। (তাফসিরুল জালালাইন, পৃষ্ঠা ১০৪; রদ্দুল মুহতার : ৩/৫১৯)

 

ইহুদি-খ্রিস্টান মেয়ে বিয়ে করা

বর্তমান যুগের ইহুদি-খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী বলে যারা পরিচিত, নির্ভরযোগ্য মতানুসারে তারা ইহুদি-খ্রিস্টানদের মূলনীতির অবিশ্বাসী। বর্তমানে বাস্তব আহলে কিতাব নেই বললেই চলে। এ ছাড়া বর্তমানে তাদের নারীদের বিয়ে করা অনেক ফিতনার কারণ হয়ে থাকে বিধায় তাদের বিয়ে করা বৈধ নয়।

তবে এ ধরনের নারীদের সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেলে তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে যে সে প্রকৃত অর্থে মুসা (আ.) ও ঈসা (আ.)-এর আনীত ধর্মে বিশ্বাসী কি না। তাওরাত বা ইঞ্জিলে বিশ্বাসী কি না। এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করে কি না। যদি সত্যিই তা হয় তাহলে তাকে দাওয়াতের মাধ্যমে মুসলমান বানানোর চেষ্টা করার শর্তে ওই বিয়েকে বাতিল বলা যাবে না। আর যদি প্রমাণিত হয় যে সে নাস্তিকতায় বিশ্বাসী, তাহলে এই বিয়ে বাতিল বলে গণ্য হবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৪৫; ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৭/২৬১)

 

হিন্দু-মুসলিম বিয়ের বিধান

শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলিম পুরুষ কোনো হিন্দু মহিলাকে, তেমনি মুসলিম নারী হিন্দু পুরুষকে বিয়ে করতে পারে না, যতক্ষণ তারা ইসলাম গ্রহণ না করে। ইসলাম গ্রহণ ছাড়া বিয়ে অবৈধ। এ ধরনের বিয়ে শরিয়তে বিয়ে বলে গণ্য হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা মুশরিককে বিয়ে কোরো না, যতক্ষণ তারা ঈমান না আনে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২১)

লেখক : ফতোয়া গবেষক


--------------------


ঈষৎ সম্পাদিত। 


প্রশ্ন: ৪৪০ : আযান ও ইকামতের হুকুম কি ?

 আযান

বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজের সময় হয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।

ইকামত

বিশেষ যিকরের মাধ্যমে নামাজ দাঁড়িয়েছে বলে ঘোষণা দেয়া।

আযান ও ইকামতের হুকুম

১- জামাতের সাথে নামাজজ আদায়ের ক্ষেত্রে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আযান ইকামত সুন্নতে মুআক্কাদা, নামাজ আদায়কারী মুসাফির হোক বা মুকিম; কেননা আযান ও ইকামত ইসলামের শাআয়ের বা নিদর্শনমালার মধ্যে দুটি নিদর্শন, তাই এ-দুটোকে বন্ধ করা বৈধ হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «যখন নামাজের সময় হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন যেন তোমাদের জন্য আযান দেয়। আর তোমাদের মধ্যে বয়সে যে বড় সে যেন ইমামতি করে।»
(বর্ণনায় বুখারী ও মুসলিম)

২- জামাত ব্যতীত একা নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে আযান-ইকামত সুন্নত। উকবা ইবনে আমের রাযি. বলেন, «আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,«আল্লাহ তাআলা ওই মেষের রাখালকে দেখে আশ্চর্য হন যে পাহাড়ের চূড়ার একটি টিলায় নামাজের জন্য আযান দেয় ও নামাজ পড়ে। (এ-দৃশ্য দেখে আল্লাহ তাআলা বলেন, «তোমরা আমার এই বান্দার দিকে চেয়ে দেখ, সে আযান দেয়, নামাজ কায়েম করে এবং আমাকে ভয় পায়। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালাম।»।
(বর্ণনায় নাসায়ী)

আযানের হিকমত

১- নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বলে ঘোষণা এবং নামাজ অনুষ্ঠানের স্থান বিষয়ে জানান দেয়া।

২- জামাতের সাথে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেয়া।

৩- যারা গাফেল তাদেরকে সজাগ করা এবং যারা ভুলে যায় তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।

আযান কখন শরীয়তভুক্ত হয়েছে ও তার কারণ কি?

«আযান প্রথম হিজরীতে শরীয়তভুক্ত হয়েছে। আর এর কারণ হলো : নামাজের ওয়াক্ত প্রবেশ করেছে এ ব্যাপারে কোনো আলামত নির্ধারণের প্রয়োজন দেখা দিলে মুসলমানগণ পরস্পরে পরামর্শ করলেন। যখন রাত হলো, আবদুল্লাহ ইবনে যায়েদ স্বপ্নে দেখলেন যে, একব্যক্তি ঘন্টা বহন করে আছে। তিনি লোকটিকে বললেন, «তুমি কি এ ঘন্টাটি বিক্রি করবে?» লোকটি বলল, «তুমি এটা দিয়ে কি করবে?» আবদুল্লাহ বললেন, «নামাজের প্রতি আহবান জানাব।» লোকটি বলল,«আমি কি তোমাকে এর থেকেও উত্তম বিষয়ের কথা বলব না?» আবদুল্লাহ বললেন,«জ্বি বলবেন।» অতঃপর লোকটি তাকে আযান শেখালেন এরপর ইকামত শেখালেন। আবদুল্লাহ বলেন,«যখন সকাল হলো, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম, স্বপ্ন বিষয়ে তাঁকে খবর দিলাম। শুনে তিনি বললেন,«এটা সত্য স্বপ্ন। তুমি বেলালের সাথে দাঁড়াও, তাঁকে এ-দায়িত্ব অর্পন করো, কেননা সে তোমার চাইতে অধিক সুন্দর আওয়াজের অধিকারী।»
(বর্ণনায় আবু দাউদ)

আযানের ফজিলত

১- আযানের আওয়াজ যাদের কাছে পৌঁছবে তাদের প্রত্যেকেই কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, «মুয়াজ্জিনের আওয়াজ যার কাছেই পৌঁছবে, হোক সে মানুষ, জিন অথবা অন্যকোনো জিনিস, সে কিয়ামতের ময়দানে মুয়াজ্জিনের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।» (বর্ণনায় বুখারী)

২- মানুষ যদি জানত এর মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে, তবে তারা অবশ্যই এর জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, «মানুষ যদি জানত আযান ও প্রথম কাতারের মধ্যে কি ফজিলত রয়েছে আর তারা লটারির আশ্রয় নেয়া ছাড়া তা পেত না, তবে তারা এর জন্য অবশ্যই লটারির আশ্রয় নিত।»(বর্ণনায় বুখারী)

আযান বিশুদ্ধ হওয়ার শর্ত

১-আযানদাতাকে মুসলমান, পুরুষ ও সজ্ঞানব্যক্তি হতে হবে।

২-আযানের শব্দমালায় তরতীব তথা ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।

৩- আযানের শব্দমালার উচ্চারণে নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখতে হবে, অর্থাৎ একবাক্য উচ্চারণের পর অন্যবাক্য উচ্চারণে অতিরিক্ত দেরি করা যাবে না।

৪- নামাযের ওয়াক্ত প্রবেশের পর আযান দিতে হবে।

আযানের সুন্নত

১- কেবলামুখী হয়ে আযান দেয়া।

২- ছোট-বড় উভয় নাপাকি থেকে আযানদাতাকে পবিত্র থাকা।

৩- হাইয়া আলাস্সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় ডানে ও বামে ফেরা।

৫- মুয়ায্যিনের দুই কানে দুই তর্জনী আঙ্গুল রাখা।

৬- মুয়ায্যিনকে সুন্দর আওয়াজসম্পন্ন হওয়া।

৭- সুর দিয়ে ধীরস্থিরতাসহ আযান দেয়া।

আযান ও ইকামত প্রদানের পদ্ধতি

আযান প্রদানের পদ্ধতি :

الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله

(বর্ণনায় মুসলিম)

ইকামত প্রদানের পদ্ধতি :

الله أكبر الله أكبر، الله أكبر الله أكبر، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن لا إله إلا الله، أشهد أن محمداً رسول الله، أشهد أن محمداً رسول الله، حيَّ على الصلاة، حيَّ على الصلاة، حَيَّ على الفلاح، حَيَّ على الفلاح، قد قامت الصلاة، قد قامت الصلاة، الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله

আযান শ্রবণকারীর ক্ষেত্রে যা মুস্তাহাব

১- মুয়াজ্জিন যা বলে তা বলা, তবে হাইয়া আলাস্সালাহ এবং হাইয়া আলাল ফালাহ বলার সময় لا حَوْل ولا قُوَّة إِلا بالله বলা।
(বর্ণনায় বুখারী)

২- আযানের পর বলা :

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إلا الله وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبًّا، وَبِمُحَمَّد صلى الله عليه وسلمٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا.

«আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। আর মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। রব হিসেবে আল্লাহর প্রতি, রাসূল হিসেবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এবং দীন হিসেবে ইসলামের প্রতি আমি সন্তুষ্টচিত্ত।» (বর্ণনায় মুসলিম)

৩- আযানের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। এরপর বলা :

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ.

«হে আল্লাহ, যিনি এই পরিপূর্ণ আহবান এবং কায়েমতব্য নামাজের রব! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ওয়াসিলা তথা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান ও মর্যাদা দান করুন এবং আপনি তাঁকে প্রেরণ করুন প্রশংসিত স্থানে যার ওয়াদা আপনি তাঁকে দিয়েছেন।» (বর্ণনায় আবু দাউদ)

৪- আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নিজের জন্য দুআ করা; কেননা এসময় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না।» (বর্ণনায় আহমদ)

আযান ও ইকমতের কিছু আহকাম

১. দুই নামাজ একসাথে জমা করে পড়লে আযান হবে একটা আর ইকামত হবে প্রতি নামাজের জন্য আলাদা আলাদা।

২. ইকামতের পর যদি নামাজ শুরু হতে দেরি হয় তবে পুনরায় ইকামত দেয়ার প্রয়োজন নেই।

৩. মুয়ায্যিনের উচিত আযানের শব্দমালা উচ্চারণে ভুল না করা। যেমন :

- «আল্লাহু আকবার»এর জায়গায় (آلله آكبر؟) «আ-আল্লাহু আকবার» বলা। যার অর্থ হবে, «আল্লাহ কি সবচেয়ে বড়?»

الله أكبار তথা কে লম্বা করে উচ্চারণ করা।

الله وأكبر (আল্লাহু ওয়াকবার) বলা।

৪. নামাজের ইকামত হয়ে গেলে কোনো নফল নামাজ শুরু করা বৈধ নয়। আর যদি ইতঃমধ্যেই নফল নামাজ শুরু করে দিয়ে থাকে তাহলে যদি সামান্য অংশ বাকি থাকে তবে পরিপূর্ণ করে নেবে। এর অন্যথা হলে সালাম ব্যতীতই নামাজ ছেড়ে দিয়ে ইমামের সাথে ফরয নামাজে ইকতেদা করবে।

৫. ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারে এমন শিশুর আযান শুদ্ধ হবে।

৬- ঘুম অথবা ভুলে যাওয়ার কারণে কাযা হয়ে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য আযান-ইকামত শুদ্ধ। একবার সাহাবায়ে কেরাম নিদ্রারত অবস্থায় সূর্য ওঠে গেলে «রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাল রাযি. কে আযান দিতে বলেন। এরপর সবাই অজু করেন ও দু»রাকাত ফজরের সুন্নত আদায় করেন। এরপর তিনি বিলাল রাযি. কে ইকামত দেয়ার নির্দেশ দেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে নিয়ে ফজরের ফরয নামাজ আদায় করেন।»(বর্ণনায় আবু দাউদ)

যা উচিত নয়

১- এমনভাবে অতিরিক্ত সুর সংযোজন অথবা গানের সুরে আযান দেয়া উচিত নয় যার ফলে অক্ষর ও জের-যবর-পেশ ইত্যাদিতে কমবেশ হয়ে যায়।

২- আযানের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর উঁচু স্বরে দরুদ পড়া।

৩- «কাদ কামিতিস্সালাত» শোনার সময় «আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামা» (আল্লাহ তা কায়েম দায়েম রাখুন) বলা উচিত নয়। বরং এ-ক্ষেত্রে সরাসরি «কাদকাতিস্সালাত»-ই বলতে হবে।

৭- যে ব্যক্তি আযানের সময় মসজিদে থাকবে সে আযানের পর ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. বর্ণনা করেন, «রাসূূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এই বলে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখন তোমরা মসজিদে থাকবে আর নামাজের আযান দেয়া হবে, তখন তোমাদের কেউ যেন নামাজ আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়।»(বর্ণনায় আহমদ)ফজরের আযান

১- ফজরের আযানের সাথে,لصلاة خيرمن النوم) দুইবার বলতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,«...যদি ফজরের নামাজ হয়, তবে (আযানের সময়) বলবে

২- الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ، الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ


-------------

মূল লিংক 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...