প্রশ্ন: ৩৪৯ : নামাজে দৃষ্টি কোথায় রাখবো ?

জিজ্ঞাসা–২৪১: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্নটা হলো, নামাজের সময় চক্ষু কোথায় রাখবো? এতে আহলে হাদীসরা বলে নাকি নামাযে পুরোটাই সেজদার দিকে চোখ (নজর) রাখতে হয়।  শুধু তাশাহুদ এর সময় ডান হাতের আঙুল এর দিকে তাকাতে হয়। কিন্তু হানাফী মাযহাব এবং আরো অনেকেই মানেন যে, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় চক্ষু সেজদার দিকে, রুকু অবস্থায় দুই পায়ের মাঝে, সিজদা অবস্থায় নাকের দিকে, বৈঠকে যেখানে বসে থাকা হয় তার একটু সামনের জমিনের দিকে। কোনটা সহীহ?–ইমরান আলী সাঁপুই: sanpui67@gmail.com

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, মূল বিষয় হল, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে। (সহিহ বোখারি ৭১৮)
প্রশ্ন হল, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানোর পদ্ধতি কী হবে–এ বিষয়ে  মুজতাহিদ ইমামগণ একাধিক রায় পেশ করেছেন।
ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দু’পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসূত ১/২৮) কেননা, لِأَنَّ امْتِدَادَ الْبَصَرِ يُلْهِي فَإِذَا قَصَرَهُ كَانَ أَوْلَى দৃষ্টি প্রসারিত করলে মন এদিক-সেদিক চলে যাবে। সংকুচিত করলে নামাজে মনোযোগটা আরও ভাল থাকবে। এজন্য প্রসারিত করার চেয়ে সংকুচিত করা উত্তম।
পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরা নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। তবে এমর্মে তাঁরা দলিল হিসাবে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সেগুলোকে মুহাদ্দিসগণ ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছেন। যেমন, ইমাম নববী রহ. বলেন,
قال العلامة النووي في مجموعه 3/314 شارحا قول الشيرازي: ( ( الشَّرْحُ ) حَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ هَذَا غَرِيبٌ لَا أَعْرِفُهُ , وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ أَحَادِيثَ مِنْ رِوَايَةِ أَنَسٍ وَغَيْرِهِ بِمَعْنَاهُ وَكُلُّهَا ضَعِيفَةٌ 
এবিষয়ে (নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে) ইবন আব্বাস রাযি. কর্তৃক বর্ণিত হাদীস গারীব (বিরল), যা আমার কাছে অপরিচিত। ইমাম বাইহাকী রহ. আনাস রাযি. ও অন্যদের সূত্রে এ বিষয়ে আরো কছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর সবগুলোই দুর্বল। (আলমাজমূ ৩/৩১৪)
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, লক্ষণীয় বিষয় হল, হানাফী-মাযহাবে এটাকে মুসতাহাব বলা হয়েছে। ফরজ-ওয়াজিব বলা হয় নি। সুতরাং এ নিয়ে মাতমাতির কছু নেই।
অথচ কিছু অপরিণামদর্শী এবিষয়ে বিবাদ-বিসংবাদের সূত্রপাত করে থাকে, যা নিশ্চিতভাবে হারাম। আসলে এরা ফেতনাবাজ। এরা নামাজীদের পেছনে এরকম ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে লাগা থাকে এবং তাদের নামাজ হয় না বলে উম্মাহর মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। এদের কথায় কর্ণপাত না করাই ঈমান-আমলের জন্য নিরাপদ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
umyrkobbadi@gmail.com

==================================

নামাজের আদব হলো, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা, যাতে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টি না যায়। এটি সুন্নত।

তবে কোনোভাবে দৃষ্টি চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।


(আদদুররুল মুখতার : ১/৪৪৭)

নামাজরত মুক্তাদির জন্য ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকা সুন্নতবহির্ভূত কাজ।

সিজদায় পা রাখার সুন্নত পদ্ধতি হলো, পা খাড়া রেখে আঙুলগুলো কিবলামুখী রাখা। এর বিপরীত হলে নামাজ ভাঙবে না। (ফাতাওয়া ফকিহুল মিল্লাত : ৩/২৮৫, ফাতাওয়া শামি : ১/৪৯৩)

মূল বিষয় হলো, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, নামাজে এদিক-সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটি হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদের নামাজ থেকে গাফিল ও উদাসীন করে ফেলে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৮)

প্রশ্ন হলো, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানোর পদ্ধতি কী হবে—এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামরা একাধিক অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)

কেননা দৃষ্টি প্রসারিত করলে মন এদিক-সেদিক চলে যাবে। সংকুচিত করলে নামাজে মনোযোগ আরো ভালো থাকবে। এ জন্য প্রসারিত করার চেয়ে সংকুচিত করা উত্তম।

পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। তবে এ মর্মে তাঁরা দলিল হিসেবে যে হাদিসগুলো পেশ করে থাকেন, সেগুলোকে মুহাদ্দিসরা ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছেন। যেমন—ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ বিষয়ে (নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে) ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস গরিব (বিরল), যা আমার কাছে অপরিচিত।

ইমাম বাইহাকি (রহ.) আনাস (রা.) ও অন্যদের সূত্রে এ বিষয়ে আরো কিছু হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর সব কটিই দুর্বল। (আল-মাজমু : ৩/৩১৪)


========================

সালাতের সময় দৃষ্টি কোথায় থাকবে?— আমি কিছু কিছু জায়গায় পড়েছি যে, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকুর সময় দুই পায়ের মাঝখানে, সিজদাহর সময় নাকের দিকে ও বসা অবস্থায় কোলের দিকে রাখতে হয়। কিন্তু এর পক্ষে কোনো দলিল পাইনি। এ বিষয়ে আমাকে সঠিক সুন্নাহ-পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- হাদিস শরিফে আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা— যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদের নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৮)

বোঝা গেল যে, এখানে মূল বিষয় হলো- নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । 

হানাফি মাজহাব মতে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা মুস্তাহাব। (হাশিয়াতুত তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ : ২৭৭)

এ বিষয়ে ফিকাহবিদ ইমামরা একাধিক অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)


পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে। হানাফি মাজহাবে এটাকে মুসতাহাব বলা হয়েছে। ফরজ-ওয়াজিব বলা হয় নি। সুতরাং এটি আবশ্যকীয় কোনো বিধান নয়।

ফতওয়ার কিতাবে এসেছে যে, নামাজের কিছু আদব-মুস্তাহাব রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা। (আদ-দুররুল মুখতার : ০২/১৭৫)

কেউ কেউ বলেছেন, সালাতে কেবল তাশাহুদের বৈঠক ছাড়া অন্য সকল অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা সুন্নত। কেবল তাশাহুদের বৈঠকে দৃষ্টি থাকবে ডান হাতের শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলীর দিকে।

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে। (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ১/৪৭৯)

অপর এক হাদিসে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) যখন কাবা ঘরে প্রবেশ করেন, তখন বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সিজদার স্থান থেকে অন্য দিকে ফেরাননি।’ (ইরওয়াল গালিল: ২/৭৩)

তাশাহুদে বসে তাশাহুদ আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং সে দিকে নিদৃষ্টি নিবন্ধ রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন তিনি তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে যে আঙ্গুলটি আছে (অর্থাৎ শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল) দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকে দিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন।’ (ইবনু খুজুাইমা: ১/৩৫৫; হাদিস : ৭১৯)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতেন, তবে ইশারার দিকে তিনি দৃষ্টিপাত করতেন না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৪/৩; আবু দাউদ, হাদিস : ৯৯০)

সুতরাং এই মতের উপরও আমল করা যাবে, কোনো সমস্যা নেই।

প্রশ্ন: ৩৪৮ : নারীদের জুমআর নামাজ।

প্রশ্ন : জুমার নামাজের খুতবার সময় কি নামাজ পড়া যাবে? নারীরা তো আর জুমার দিনে মসজিদে যান না। নারীরা কখন নামাজ পড়বেন? পুরুষের জুমা পড়া শেষ হলে?
উত্তর : জুমার সালাতের খুতবার সময় সালাত আদায় করা জায়েজ। নারীদের জন্য জুমার সালাতের শেষ হওয়ার অপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই, যেহেতু জুমার সালাত তাঁদের ওপর ওয়াজিব নয়। সুতরাং তাঁরা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন না, বরং যখনই আজান হবে, অর্থাৎ ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করে নেবেন, যদি তাঁরা জুমায় অংশগ্রহণ না করেন।
তবে নারীরা জুমাতে অংশগ্রহণ করলে তাঁরা জুমার সালাতের জন্য অপেক্ষা করবেন এবং ইমামের সঙ্গে জুমার সালাত আদায় করবেন। দুটাই নারীদের জন্য জায়েজ।
নারীদের জুমাতে অংশগ্রহণ করার বিষয়েও আল্লাহর নবীর (সা.) নির্দেশনা রয়েছে এবং অংশগ্রহণ করতেও তিনি বাধা দেননি বা নিষেধ করেননি। যদি জুমাতে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাঁদের পক্ষ থেকে জোহরের সালাত আদায় করা হয়ে যাবে, তাঁদের আর ভিন্নভাবে জোহর আদায় করতে হবে না।
কিন্তু যদি তাঁরা জুমার সালাতে অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে জোহরের সালাত আদায় করতে পারেন। এর জন্য শর্ত নয় যে ইমাম সাহেব মসজিদে সালাত আদায় শেষ করবে অথবা খুতবা অথবা সালাত দুটোই শেষ করবে, তার পরে নারীরা ঘরে সালাত আদায় করবেন। বিষয়টি হলো যখনই ওয়াক্ত হয়ে যাবে, তখনই জোহরের সালাত আদায় করতে পারবেন নারীরা। এটি তাঁদের জন্য জায়েজ রয়েছে।

প্রশ্ন: ৩৪৭ : হযরত ইবরাহীম আ: এর কুরবানী।

•৷• কুরবানীর ইতিহাস •৷•
.
কুরবানীর ইতিহাস খুবই প্রাচীন। আল্লাহ তায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টি লগ্ন থেকেই কার্যকর হয়ে আসছে। মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোন না কোন ভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ করে। এটাই মানুষের চিরন্তন স্বভাব বা ফিতরাত। এ ফিতরাতের স্বীকৃতি প্রদান করে মহান আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছেন-
.
وَلِـكُلِّ اُمَّةٍ جَعَـلْـنَا مَنْسَكًا لِّـيَـذْكُرُوْا اسْمَ اللهِ عَلى مَـا رَزَقَـهُمْ مِنْ بَـهِيـْمَةِ الْاَنْـعَـامِ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন”। [সূরা আল হজ্জ-৩৪]
.
● পৃথিবীর প্রথম কুরবানী
.
যখন আদম ও হাওয়া (আ.) পৃথিবীতে আগমন করেন এবং তাদের সন্তান প্রজনন ও বংশ বিস্তার আরম্ভ হয়, তখন হাওয়া (আ.) এর গর্ভ থেকে প্রতিবার (জমজ) অর্থাৎ একসাথে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ জময সন্তান জন্মগ্রহণ করত। কেবল শীস (আ.) ব্যতিরেকে। তিনি একা ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন। তখন ভাই-বোন ছাড়া আদম (আ.) এর আর কোন সন্তান ছিল না। অথচ ভাই-বোন পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা উপস্থিত প্রয়োজনের খাতিরে আদম (আ.) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজ পুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন হিসেবে গণ্য হবে। তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারীনি কন্যা সহোদরা বোন হিসেবে গণ্য হবে না। তাদের মধ্যে পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। সুতরাং সে সময় আদম (আ.) একটি জোড়ার মেয়ের সাথে অন্য জোড়ার ছেলের বিয়ে দিতেন। ঘটনাক্রমে কাবীলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে ছিল পরমা সুন্দরী। তার নাম ছিল আকলিমা। কিন্তু হাবিলের সাথে যে সহোদরা জন্ম নিয়েছিল সে দেখতে অতটা সুন্দরী ছিল না। তার নাম ছিল লিওযা।
.
বিবাহের সময় হলে শরয়ী ‘নিয়মানুযায়ী হাবীলের সহোদরা বোন কাবীলের জন্য নির্ধারিত হল। কিন্তু কাবীল লিওযাকে প্রত্যাখ্যান করে নিজের সহোদরা বোন আকলিমাকে বিয়ে করতে চাইল। আদম (আ.) তৎকালীন শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবীলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন এবং তাকে তার নির্দেশ মানতে বললেন। কিন্তু সে মানল না। এবার তিনি তাকে বকাঝকা করলেন। তবুও সে ঐ বকাঝকায় কান দিল না।
.
অবশেষে আদম (আ.) তার এ দুই সন্তান হাবীল ও কাবীলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা উভয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী পেশ কর, যার কুরবানী গৃহীত হবে, তার সাথেই আকলিমার বিয়ে দেয়া হবে।’ সে সময় কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে সে কুরবানীকে ভষ্মীভূত করে ফেলত। আর যার কুরবানী কবুল হতো না তারটা পড়ে থকত।
যাহোক, তাদের কুরবানীর পদ্ধতি সম্পর্কে যা জানা যায় তা হলো- কাবীল ছিল চাষী। তিনি গমের শীষ থেকে ভাল ভাল গুলো বের করে নিয়ে খারাপ গুলোর একটি আটি কুরবানীর জন্য পেশ করল। আর হাবীল ছিল পশুপালনকারী। সে তার জন্তুর মধ্যে থেকে সবচেয়ে ভাল একটি দুম্বা কুরবানীর জন্য পেশ করল। এরপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা এসে হাবীলের কুরবানীটি ভষ্মীভুত করে দিল। আর কাবীলের কুরবানী যথাস্থানেই পড়ে থাকল। অর্থাৎ হাবীলেরটি গৃহীত হলো আর কাবীলেরটি হলো না। কিন্তু কাবীল এ আসমানী সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারল না। এ অকৃতকার্যতায় কাবীলের দুঃখ ও ক্ষোভ আরো বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না এবং প্রকাশ্যে তার ভাইকে বলল, ‘আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। হাবিল তখন ক্রোধের জবাবে ক্রোধ প্রদর্শন না করে মার্জিত ও নীতিগত বাক্য উচ্চারণ করল, এতে কাবীলের প্রতি তার সহানুভূতি ও শুভেচ্ছা ফুটে উঠেছিল। হাবীল বলেছিল, ‘ তিনি মুত্তাক্বীর কর্মই গ্রহণ করেন। সুতরাং তুমি তাক্বওয়ার কর্মই গ্রহণ করো। তুমি তাক্বওয়া অবলম্বন করলে তোমার কুরবানীও গৃহীত হতো। তুমি তা করোনি, তাই তোমার কুরবানী প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এতে আমার দোষ কোথায়?.....তবুও এক পর্যায়ে কাবীল হাবীল কে হত্যা করে ফেলল। (তাফসীর ইবনু কাসীর, দুররে মনসূর, ফতহুল বায়ান, ৩/৪৫ ও ফতহুল ক্বাদীর, ২/২৮-২৯)
.
হাবিল ও কাবিলের অর্থাত সর্ব প্রথম কুরবানীর ঘটনা পবিত্র কুরআনে এ ভাবে বর্ণিত হয়েছে -
وَاتْلُ عَلَيْـهِمْ نَبَاَ ابْـنَـىْ ادَمَ بِـالْـحَـقِّ- اِذْ قَـرَّبَـا قُـرْبَانًا فَـتُـقُـبِّـلَ مِنْ اَحَدِهِمَا وَلَمْ يُـتَـقَبَّلْ مِنَ الْاخَرِ- قَالَ لَاَقْتُلَـنَّكَ- قَالَ اِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ- لَئِنْ بَسَطْتَّ اِلَىَّ يَدَكَ لِتَقْتُلَنِىْ مَا اَنَا بِبَاسِطٍ يَّدِىَ اِلَيْكَ لِاَ قْتُلَكَ- اِنِّىْ اَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعلَمِيْنَ- اِنِّىْ اُرِيْدُ اَنْ تَبُـوْاَ بِـاِثْمِىْ وَاِثْمِكَ فَتَكُـوْنَ مِن اَصْحبِ النَـارِ- وَذلِكَ جَزؤُ الظّلِمِيْنَ- فَطَوَّعَتْ لَـهُ نَـفْسُه قَـتْلَ اَخِـيْـهِ فَقَـتَـلَهُ فَاَصْبَحَ مِنَ الْـخسِرِيْنَ- فَبَـعَـثَ اللهُ غُـرَابًا يَبْحَثُ فِى الْاَرْضِ لِيُرِيَهُ كَـيْـفَ يُـوَارِىْ سَـوْءَةَ اَخِيْهِ- قَالَ يـوَ يْلَتـى اَعَجَزْتُ اَنْ اَكُوْنَ مِـثْلَ هـذَا الْغُرَابِ فَاُوَارِىَ سَـوْءَةً– فَاَصْبَحَ مِنَ النّدِمِيْنَ “আপনি তাদেরকে আদমের দু’ পুত্রের ঘটনাটি ঠিকভাবে শুনিয়ে দিন। (তা হচ্ছে এই যে,) যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করলো, তখন তাদের একজনের কুরবানী গৃহীত হল আর অপর জনের কুরবানী গৃহীত হলোনা। তখন সে ভাইকে বলল- অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। সে উত্তরে বলল আল্লাহ তো মুত্তাকীদের কুরবানীই কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। নিশ্চয়ই আমি বিশ্ব জগতের পালন কর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অত:পর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতি গ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সে কিভাবে সমাহিত করবে। সে বললো, আফসোস! আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সমাহিত করি! অত:পর সে অনুতাপ করতে লাগল”। [ সূরা আল মায়িদাহ, ২৭-৩১ আয়াত ]
.
কুরআনে বর্ণিত হাবীল ও কাবীল কর্তৃক কুরবানীর এ ঘটনা থেকেই মূলত কুরবানীর ইতিহাসে আমরা দেখতে পেলাম যে, কুরবানী দাতা ‘হাবীল’, যিনি মনের ঐকান্তিক আগ্রহ সহকারে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্যে একটি সুন্দর দুম্বা কুরবানী হিসেবে পেশ করেন। ফলে তার কুরবানী কবুল হয়। পক্ষান্তরে কাবীল, সে অমনোযোগী অবস্থায় কিছু খাদ্যশস্য কুরবানী হিসেবে পেশ করে। ফলে তার কুরবানী কবুল হয়নি। সুতরাং প্রমাণিত হলো কুরবানী মনের ঐকান্তিক আগ্রহ ছাড়া কবুল হয় না। তারপর থেকে বিগত সকল উম্মতের উপরে এটা জারি ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন -
﴿ وَلِكُلِّ أُمَّةٖ جَعَلۡنَا مَنسَكٗا لِّيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۗ فَإِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞ فَلَهُۥٓ أَسۡلِمُواْۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُخۡبِتِينَ ٣٤ ﴾ [الحج: ٣٤]
প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম, যাতে তারা উক্ত পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে এ জন্য যে, তিনি চতুষ্পদ জন্তু থেকে তাদের জন্য রিযিক নির্ধারণ করেছেন। [সূরা হাজ্জ (২২):৩৪]।
.
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা নাসাফী ও যামাখশারী বলেন, ‘আদম (আ.) থেকে মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত প্রত্যেক জাতিকে আল্লাহ তা‘আলা তার নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানীর বিধান দিয়েছেন। (তাফসীরে নাসাফী ৩/৭৯; কাশশাফ, ২/৩৩)।
.
আদম (আ.) এর যুগে তারই পুত্র কাবীল ও হাবীলের কুরবানীর পর থেকে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত কুরবানী চলতে থাকে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানীর ইতিহাস ততটা প্রাচীন যতটা প্রাচীন দ্বীন-ধর্ম অথবা মানবজাতির ইতিহাস। মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে যত শরীয়ত নাযিল হয়েছে, প্রত্যেক শরীয়তের মধ্যে কুরবানী করার বিধান জারি ছিল। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। তবে ঐসব কুরবানীর কোন বর্ণনা কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না। মূলত সেসব কুরবানীর নিয়ম-কানুন আমাদেরকে জানানো হয়নি।
.
.
● বর্তমান কুরবানীর ইতিহাস
.
পবিত্র কুরআনে এসেছে - ﴿ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠٠ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡيَ قَالَ يَٰبُنَيَّ إِنِّيٓ أَرَىٰ فِي ٱلۡمَنَامِ أَنِّيٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ يَٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٠٢ فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣ وَنَٰدَيۡنَٰهُ أَن يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ١٠٤ قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٠٥ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ ١٠٦ وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧ وَتَرَكۡنَا عَلَيۡهِ فِي ٱلۡأٓخِرِينَ ١٠٨ سَلَٰمٌ عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ ١٠٩ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١١٠ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١١١ ﴾ [الصافات: ١٠٠، ١١١] [
ইব্রাহীম (আ.) যখন আমার কাছে দু‘আ করল] হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে এক সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান কর। অতঃপর আমি তাকে এক অতি ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর সে যখন তার পিতার সাথে চলাফিরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন ইবরাহীম বলল, ‘বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবহ করছি, এখন বল, তোমার অভিমত কী? সে বলল, ‘হে পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু‘জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিল আর ইবরাহীম তাকে কাত ক‘রে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিলাম, ‘হে ইবরাহীম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ তুমি সত্যে পরিণত করেই ছাড়লে। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবাণীর বিনিময়ে পুত্রটিকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর আমি তাঁকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহীমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। সে ছিল আমার মু‘মিন বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আস- সাফফাত:১০০-১১১]।
.
কুরবানী ইবাদত হিসেবে যদিও আদম আ. এর যুগ হতে হয়ে আসছে কিন্তু পরবর্তীতে হযরত ইবরাহীম আ. এর এক ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে শুরু হয়েছে। আমরা হযরত ইবরাহীম আ. এর মিল্লাতের উপর প্রতিষ্ঠিত আছি। এ মিল্লাতের প্রতিষ্ঠাতা ও মুসলিম জাতির পিতা হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম আ.। তিনি যেমন আল্লাহর নির্দেশে জীবনের সবচাইতে প্রিয় বস্তু- পুত্র ইসমাঈলকে তাঁর উদ্দেশ্যে কুরবানী করতে প্রস্তুত ছিলেন, ঈদুল আয্হার দিন মুসলমানরাও তেমনি পশু কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের প্রিয় জান-মাল আল্লাহর পথে কুরবানী করার সাক্ষ্য প্রদান করেন।
.
মুসলিম মিল্লাতের পিতা হযরত ইবরাহীম আ. এর সেই মহত্ব ও মাকবুল কুরবানীকে শাশ্বত রূপদানের জন্যেই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল সা. এই দিনে মুসলমানদেরকে ঈদুল আয্হা উপহার দিয়েছেন এবং এ কুরবানী করার নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত ইবরাহীম আ. কর্তৃক স্বীয় পুত্র ইসমাঈলের কুরবানীর জীবন্ত ইতিহাস।
.
আল্লাহ তায়ালার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হযরত ইব্রাহীম আঃ এর স্ত্রী সারা আঃ নিজেকে বন্ধা মনে করতেন৷ উল্লেখ্য যে, ইব্রাহীম আঃ এবং সারা আঃ এর সুদীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে কোন সন্তান ছিল না৷ এমনাবস্থায় সারা আঃ ইব্রাহীম আঃ কে সারা আঃ এর দাসী হাজেরাকে বিয়ে করার পরামর্শ দেন৷ হযরত ইব্রাহীম আঃ হাজেরাকে আজাদ করে দিয়ে তাকে বিয়ে করলেন। হযরত লূত আ. যিনি ইতিপূর্বে তাঁর উপর ঈমান এনেছিলেন তাকে সাথে নিয়ে নিজ জন্মভূমি ইরাক থেকে হিজরত করে ফিলিস্তিনের কেনানে অবস্থান নিলেন। ৮৬ বৎসর বয়সে সেখানে বসে সন্তানের জন্য দোয়া করলেন।
.
رَبِّ هَـبْ لِىْ مِـنَ الـصَّالِـحِيْـنَ
“হে আল্লাহ আমাকে সৎকর্মপরায়ন পুত্র দান করুন”। [সূরা আসসাফ্ফাত-১০০]
.
এর কিছুকাল পরেই হযরত হাজেরা আঃ এর গর্ভ থেকে হযরত ইসমাঈল আঃ জন্মগ্রহণ করেন৷
.
ইব্রাহিম আঃ আল্লাহর নির্দেশে ইসমাঈল আঃ এবং হাজেরা আঃ কে মক্কায় রেখে আসার জন্য রওনা হন৷ পথ চলতে চলতে তারা বাইতুল্লাহ শরীফের নিকট পৌছালে ইব্রাহিম আঃ স্ত্রী, সন্তানকে একটি গাছের নিচে বসিয়ে দেন৷ এরপর হযরত হাজেরা আঃ কে একটি ঝুলি দিলেন, যাতে কিছু খেজুর ও এক মশক পানি ছিল৷ হযরত ইসমাঈল আঃ তখনও দুগ্ধপৌষ্য শিশু ছিলেন৷ জনমানবহীন মরুভুমিতে প্রিয়তমা স্ত্রী এবং প্রাণপ্রিয় একমাত্র সন্তানকে রেখে যখন ইব্রাহিম আঃ ফিরে যাবার জন্য জন্য রওনা হলেন তখন হযরত হাজেরা আঃ প্রশ্ন করলেন, আমাদের এখানে রেখে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? . হযরত ইব্রাহীম আঃ কোন জবাব দিলেন না বিধায় হযরত হাজেরা আঃ আবার একই প্রশ্ন করলেন৷ ইব্রাহীম আঃ তবু জবাব দিলেন না৷ হযরত হাজেরা আঃ ইব্রাহীম আঃ এর পিছন পিছন আসছিলেন এবং একই প্রশ্ন বারবার করলেন৷ কিন্তু কোন জবাব না পেয়ে জিগ্যেস করলেন, আমাদের কি আল্লাহর নির্দেশে রেখে যাচ্ছেন?
হযরত ইব্রাহীম আঃ এবার জবাবে হ্যাঁ বললেন৷ তখন হাজেরা আঃ বললেন, তাহলে আমাদের কোন চিন্তা নেই৷ আল্লাহ আমাদের ধ্বংস করবেন না।
.
এরপর হযরত হাজেরা আঃ সন্তানের নিকট ফিরে গেলেন এবং স্বামীর পথ পানে অপলক তাকিয়ে রইলেন৷ হযরত ইব্রাহীম আঃ চলতেই থাকলেন৷ একবারও পিছনে তাকালেন না৷ যেন এমন না হয় যে, পিতৃমন উথলিয়ে উঠে এবং আল্লাহর আদেশ পালনে কোন প্রকার বিচ্যুতি ঘটে যায়। হাজেরা আঃ এর দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবার পর ইব্রাহীম আঃ কিবলামুখী হয়ে দোয়া করলেন:
رَبَّناَ اِنِّىْ اَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِىْ بِوَادٍ غَيْرِ ذِىْ زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ- رَبَّنَا لِيُقِيْمُوْا الصَّلوةَ فَا جْعَلْ اَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِىْ اِلَيْهِمْ وَاَرْزُقْهُمْ مِّنَ الثَمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُوْنَ
“হে আমাদের পালনকর্তা! আমি নিজের এক বংশধরকে আপনার পবিত্র ঘরের নিকট অনাবাদ জায়গায় বসবাস করালাম। হে আমাদের পালনকর্তা! যেন তারা নামায কায়েম করে। অত:পর আপনি কিছু লোকের অন্তর তাদের প্রতি আকৃষ্ট করুন এবং তাদের ফল ফলাদি দ্বারা রুজি দান করুন। সম্ভবত তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে”। [সূরা আল ইবরাহীম -৩৭]
.
এদিকে হযরত হাজেরা আঃ মশকের পানি পান করা ও শিশু ইসমাঈল আঃ কে স্তন্য দান করেই দিন অতিবাহিত করতে লাগলেন। এক সময় পানি ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজেও পিপাসা অনুভব করছিলেন এবং শিশু ইসমাঈলের পানির পিপাসা দেখে তিনি খুবই পেরেশান হয়ে গেলেন। পানির জন্য ব্যাকুল হয়ে হযরত হাজেরা আঃ শিশু ইব্রাহীম আঃ কে রেখে দৌড়ে সাফা পাহাড়ে ওঠে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর দেখলেন। কিন্তু ধু ধু মরুদ্যানে কোথাও পানি বা কোন কাফেলা দেখতে পারলেন না। এরপর তিনি দৌড়ে সাফা পাহাড় থেকে মারওয়া পাহাড়ের চূড়ায় ওঠেও কোথাও পানি বা কাফেলা দেখতে পেলেন না। এভাবে তিনি সাফা ও মারওয়ায় সাতবার দৌড়া দৌড়ি করলেন।
.
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ নবী করিম সাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত হাজেরা আঃ একজন ভবিষত নবীকে বাঁচানোর জন্য সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে ব্যাকুল হয়ে দৌড়া দৌড়ির করেছন - এ দৃশ্য আল্লাহর নিকট খুব ভাল লেগেছে। তাই এ দৃশ্যটি কিয়ামত পর্যন্ত ধরে রাখার জন্যই আল্লাহ তায়ালা হাজীদের জন্য সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে (হযরত হাজেরা আঃ এর মত সাতবার) দৌড়া দৌড়ির বিধান (ওয়াজিব) করেছেন। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে সা'য়ী বলা হয়।
.
হযরত হাজেরা আঃ সপ্তমবার যখন মারওয়া পাহাড়ে পৌছান তখন এক আওয়াজ শুনে চুপ হয়ে গেলেন এবং বললেন, আমি তো আওয়াজ শুনছি কিন্তু তুমি কে? তোমার কাছে পিপাসা নিবারনের কোন উপায় থাকলে বলে দাও। আমার ছেলে পিপাসায় কাতর হয়ে গেছে। এমন সময় হযরত হাজেরা আঃ "যমযম" নামক স্থানে মানুষরুপী এক ফেরেস্তাকে দেখতে পেলেন। সেই ফেরেস্তা পায়ের গোড়ালী দ্বারা যমীনে আঘাত করতেই যমীন ফুড়ে ঝড়নার মতো পানি বের হতে শুরু করল। তখন হযরত হাজেরা আঃ প্রথমে শিশু ইসমাঈল আঃ কে সেই পানি পান করালেন অতঃপর নিজে পান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। ফেরেস্তাটি হযরত হাজেরা আঃ কে সান্তনার সুরে বললেন, তোমরা মরে যাবার আশংকা করো না। এখানে আল্লাহর ঘর আছে, যে ঘর এই শিশু এবং তার পিতা একসময় নির্মাণ করবে। আল্লাহ তায়ালা তার ঘরের নির্মাতাদের কখনও ধ্বংস করবেন না। . হযরত ইব্রাহীম আঃ মাঝে মাঝেই শাম (ইরাক) থেকে মক্কায় আসতেন। হযরত ইব্রাহীম আঃ হযরত ইসমাঈল আঃ কে অনেক ভালবাসতেন। ইসমাঈল আঃ কে কাছাকাছি রাখতেন। এভাবেই ইসমাঈল আঃ বড় হতে লাগলেন।
.
فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡي َ
‘এবং যখন সে তার সাথে হাটার মত বড় হলো’ - এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়েছিল এবং তার বাবার মতই নিজেই নিজের দেখাশোনা করতে পারত। মুজাহিদ (রাহ.) বলেন, ‘এবং যখন সে তার সাথে হাঁটার মত বড় হলো’ এর অর্থ হচ্ছে, যখন সে বড় হয়ে উঠেছিল এবং বাহনে চড়তে পারত, হাঁটতে পারত এবং তার বাবার সাথে কাজ করতে পারত। যবহের সময় ইসমাঈলের বয়স ০৭ বছর ছিল। ফার্রা বলেন, যবহের সময় ইসমাঈলের বয়স ছিল ১৩ বছর। ইবনু আববাস (রা.) বলেন, ঐ সময় তিনি কেবল সাবলকত্বে উপনীত হয়েছিলেন। (তাফসীর কুরতুবী, ১৫/৯৯) এ রকম একটা অবস্থা যখন আসল, তখন একদিন হযরত ইব্রাহীম আঃ স্বপ্নে দেখলেন, তিনি কুরবানী করার জন্য হযরত ইসমাঈল আঃ এর গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ সেদিন ছিল যিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখের রাত৷ হযরত ইব্রাহীম আঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদিন চিন্তা করলেন, স্বপ্নটা আল্লাহর পক্ষ থেকে না কি শয়তানের পক্ষ থেকে? এ কারনে যিলহজ্বের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়া বা চিন্তা/সংশয়ের দিন বলা হয়৷ পরের রাতেও একই স্বপ্ন দেখায় ইব্রাহীম আঃ নিশ্চিত হলেন এ স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকেই দেখানো হয়েছে৷ এ কারনে যিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখকে ইয়াওমে আরাফা বা সংশয়মুক্ত হওয়ার দিন বলা হয়৷
.
ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন ইসহাক বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত ইব্রাহীম আঃ প্রতি স্বীয় পূত্র হযরত ইসমাঈল আঃ কে কুরবানি করার নির্দেশ দেয়া হল তখন তিনি পূত্রকে বললেন, রশি ও ছুরি নাও, চলো আমরা ঐ পাহাড় থেকে খড়ি কেটে আনি৷ হযরত ইসমাঈল আঃ রশি ও ছুরি নিয়ে পিতার সাথে রওয়ানা হয়ে গেলেন৷
.
কা'বে আহবাব রহঃ হযরত আবু হুরাইরা রাঃ এবং মুহাম্মদ বিন ইসহাক রহঃ বিভিন্ন রাবী থেকে বর্ণনা করেন যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ যখন পুত্রকে কুরবানী করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন, তখন ইবলিস মনে মনে ভাবল এই মূহুর্তে যদি আমি হাজেরা আঃ কে বিপথে পরিচালিত করতে না পারি, তাহলে আর কখনও তার সন্তানদের প্রতারিত করতে পারবো না৷ . তাই শয়তান এক সাধু পুরুষের ছদ্মবেশে হযরত হাজেরা আঃ এর কাছে এসে বললো, তুমি কি জানো, তোমার স্বামী ইসমাঈলকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
হযরত হাজেরা আঃ বললেন, কেন? তারা তো পাহাড়ে খড়ি কাটতে যাচ্ছে৷
শয়তান বলল, খোদার কসম ঘটনা এমন নয়৷ তোমার স্বামী ইসমাঈলকে কুরবানী করার উদ্দেশে নিয়ে যাচ্ছে৷
হযরত হাজেরা আঃ বললেন, তা হতে পারে না৷ তিনি তো ছেলেকে খুব ভালবাসেন৷ ছেলের মুহাব্বত তার অন্তরে খুব বেশী৷ এত মুহাব্বতের জিনিসকে কেউ জবাই করতে পারে না৷ সুতরাং আমার স্বামী তা কখনই করবে না৷
নিরুপায় শয়তান বলল, হযরত ইব্রাহীম আঃ বলছেন তাকে না কি তার প্রভু তোমার পুত্রকে জবাই করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
এ কথা শুনে হযরত হাজেরা আঃ বললেন, যদি তার প্রভুই তাকে এ নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে তো প্রভুর এ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করা উচিত৷ এমন হলো আমিও তাকে সহযোগিতা করব৷
.
হযরত হাজেরা আঃ এর নিকট হতে নিরাশ হয়ে শয়তান ইব্রাহীম আঃ এর পিছন পিছন চলা ইসমাঈল আঃ কে বলল, হে বৎস! তুমি কি জান তোমার পিতা তোমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
হযরত ইসমাঈল আঃ জবাবে বললেন, আমরা খড়ি কাটার জন্য পাহাড়ে যাচ্ছি৷
শয়তান বলল, খোদার কসম তোমার পিতার উদ্দেশ্য কখনও তা নয়৷ বরং তিনি তোমাকে ঐ পাহাড়ের জবাই করে ফেলবে৷
ইসমাঈল আঃ কারন জানতে চেয়ে বললেন, কেন?
শয়তান বলল, তার ধারনা তার প্রভুই নাকি তাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন৷
হযরত ইসমাঈল আঃ বললেন, যদি তাই হয় তাহলে তো তার জন্য তার প্রভুর নির্দেশ মান্য করা অতীব জরুরী৷ আর এ ব্যাপারে আমিও রাজি আছি৷
বালক ইসমাঈল আঃ এর এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেল৷
অনেকক্ষন চিন্তা করে শয়তান ইব্রাহীম আঃ এর নিকট গিয়ে বললো, জনাব! কোথায় যাচ্ছেন?
ইব্রাহীম আঃ জবাবে বললেন, বিশেষ এক উদ্দেশ্যে পাহাড়ে যাচ্ছি।
শয়তান বললো, খোদার কসম! আমি জানি শয়তানই আপনাকে এ স্বপ্ন দেখিয়েছে। এটা কখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে না। উক্ত স্বপ্ন অনুযায়ী আপনি কাজ করলে চরম ভুল করবেন। আর ছেলের শোকে আজীবন কাঁদবেন। আমি আল্লাহর এক বান্দা আপনাকে ভুল থেকে ফিরাতে এসেছি।
হযরত ইব্রাহীম আঃ ইলমে নববী দ্বারা বুঝতে পারলেন যে, এ ব্যক্তি শয়তান ছাড়া আর কেউ না। তাই তিনি শয়তানকে বললেন, হে অভিশপ্ত! তুই দূর হয়ে যা। আমি অবশ্যই আমার মাওলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করব।
এতে শয়তান রাগান্বিত হয়ে পিছু হটল।
.
আবু তোফাইল রহঃ হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণনা করেন, হযরত ইব্রাহীম আঃ যখন পুত্রকে জবাই করার জন্য সামনে অগ্রসর হতে থাকলো। তখন শয়তান মনে মনে ভাবল, মাশ'আরে হারাম নামক স্থানে বাধা দেবে। কিন্তু শয়তান পৌছার আগেই হযরত ইব্রাহীম আঃ মাশ'আরে হারাম অতিক্রম করার কারনে সেখানে বাধা দিতে পারল না। তাই শয়তান আগেই জমরায়ে উকবাহ নামক স্থানে আগেই গিয়ে অবস্থান নিল। হযরত ইব্রাহীম আঃ সেখানে পৌছার পর শয়তান বাধা দেবার চেষ্টা করলে হযরত ইব্রাহীম আঃ শয়তানকে লক্ষ্য করে সাতটি কংকর ছুড়ে মারলেন। এতে শয়তান পালিয়ে গিয়ে গা বাচাঁল। শয়তান এরপর জমরায়ে উস্তা ও জমরায়ে কুবরা নামক আরও দুইটি স্থানে ইব্রাহীম আঃ কে বাধা দেবার চেষ্টা করলে ইব্রাহীম আঃ আবারও শয়তানকে লক্ষ্য করে সাতটি করে কংকর ছুড়লে শয়তান পরাজয় মেনে নিয়ে পালিয়ে গেল।
.
কুরবানীর পরীক্ষাটি যেহেতু ইবরাহীম আ. এর ব্যক্তিত্বের সাথে সাথে তার পুত্রও সংশ্লিষ্ট ছিলেন তাই তিনি মীনা পর্বতের পাদদেশে তার পুত্র ইসমাঈলকে লক্ষ্য করে বললেন -
قَالَ يبُنَىَّ اِنِّىْ اَرى فِى الْمَنَـامِ اَنِّى اَذْ بَـحُـكَ فَـانْـظُـرْ مَـاذَا تَـرى-
“হে প্রাণ প্রিয় পুত্র আমার! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে যবেহ করছি। সুতরাং তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখ এবং এ স্বপ্নের ব্যাপারে তোমার অভিমত কি? তা বল”। [ সূরা আস-সাফফাত-১০২]
.
যেমন বাপ, তেমন বেটা। পুত্রও ছিলেন যেন হযরত ইবরাহীম আ. এর ছাঁচে গড়া, কেননা তিনি ও ভাবী নবী। তাই তৎক্ষণাৎ আত্মসর্ম্পনে মস্তক অবনত করে পুত্র জবাবে বললেন :
قَالَ يـاَبَتِ افْـعَـلْ مَا تُـؤْمَرُ- سَـتَـجِـدُ نِىْ اِنْ شَـاءَ اللهُ مِنَ الـصّـبِـرِيْـنَ-
“হে আমার পিতাজী! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন। ইনশা আল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন”। [সূরা আস সাফ্ফাত-১০২]
.
পুত্রের সাথে পরামর্শের হিকমত ছিল এই যে -
.
প্রথমত : পুত্রের দৃঢ়তা, হিম্মত এবং আল্লাহর আনুগত্যের জয্বা সৃষ্টি হওয়ার পরীক্ষা স্বরূপ।
.
দ্বিতীয়ত : সে আনুগত্য স্বীকার করলে সওয়াব ও প্রতিদানের অধিকারী হবে। কেননা সওয়াবের জন্য নিয়ত ও আগ্রহ জরুরী।
.
তৃতীয়ত : যবেহের সময় মানুষ হিসেবে এবং স্বভাবজাত পিতৃস্নেহের কারণে কোন ভূল ভ্রান্তি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকে অনেকটা মুক্ত থাকার প্রবল আশা সৃষ্টি হবে।[তাফসীরে রুহুল বয়ান]
.
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, ইব্রাহীম আঃ স্বপ্নের কথাটি বাড়িতে না বলে নির্জন এলাকায় এসে কেন বললেন?
.
জন মানবহীন এলাকায় স্বপ্নের কথা জানানোর কারন হলো, হযরত ইব্রাহীম আঃ পূর্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তিনি নিজের সন্তানকে অবশ্যই কুরবানীর জন্য জবেহ করবেন৷ পূত্র জবেহ হবার কথা জেনে যদি সম্মতি দেয় তো ভাল৷ অন্যথায় বল প্রয়োগে জোর করেই জবাই করা হবে৷
.
এখানে আরও একটি প্রশ্ন আসতে পারে, হযরত ইব্রাহীম আঃ যেহেতু পুত্রকে জবাই করবেন তবে পুত্রকে কেন বললেন, চলো আমরা ঐ পাহাড় থেকে খড়ি কেটে আনি?
এর জবাব হলো, ইব্রাহীম আঃ প্রায়ই খড়ি কাটতে পাহাড়ে যেতেন৷ সেদিনও ইসমাঈল আঃ কে জবাই করার সাথে সাথে খড়ি কেটে নিয়ে আসারও নিয়াত ছিল৷ পুত্রকে শুধু একটি কাজের কথা বলেছেন, আরেকটি বলেন নাই৷ এটা তো আর মিথ্যাচার হতে পারে না৷ উল্লেখ্য যে, আমাদের মুসলিমদের বিশ্বাস রাখতে হবে যে, সকল নবী পাপ থেকে পবিত্র৷ কোন নবীর কোন কাজ বা কথাকে যদি ভুল মনে হয় তবে ভাবতে হবে কোন তথ্য না জানার কারনে আমাদের বোঝার ভুল হচ্ছে৷ তাই কোন নবীর সমালোচনা না করে কারন জানার চেষ্টা করা উচিত৷ মনে রাখতে হবে নবীদের সমালোচনা করলে, নবীদের কোন কিছুর ব্যাপারে সন্দেহ পোষন করলে ঈমান থাকবে না৷ মুসলিমদের মৌলিক বিশ্বাস বা মৌলিক আকিদার একটি হল, সকল নবী পাপ থেকে পবিত্র বলে বিশ্বাস করা৷
.
পরামর্শ শেষে পিতা ও পুত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কুরবানীর নির্দেশ পালনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং এ কাজ সমাধার জন্য তারা মিনা প্রান্তরে গমন করেন। অবশেষে পিতা-পুত্র উভয়ে যখন এই মহান কুরবানীর ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানগাহে পৌঁছলেন এবং ইবরাহীম আ. কুরবানী করার জন্য ইসমাঈল আ. কে শোয়ালেন, তখন পুত্র ইসমাঈল আ. পিতা ইবরাহীম আ. কে বললেন আব্বাজান! আমার হাত পা খুব শক্ত করে বেঁধে নিন যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। আর আপনার পরিধেয় বস্ত্রাদি সামলে নিন, যাতে আমার রক্তের ছিটা না পড়ে। অন্যথায় এতে আমার ছওয়াব হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া রক্ত দেখলে আমার মা অধিক ব্যাকুল হবেন। আপনার ছুরিটি ধার দিয়ে নিন এবং আমার গলায় দ্রুত চালাবেন, যাতে আমার প্রাণ সহজে বের হয়ে যায়। কারণ, মৃত্যু বড় কঠিন ব্যাপার। আপনি আমার আম্মাজানের নিকট আমার শেষ বিদায়ের সালাম টুকু অনুগ্রহ পূর্বক পৌছে দিবেন। যদি আমার জামা তার নিকট নিয়ে যেতে চান, তবে নিয়ে যাবেন।
.
একমাত্র আদরের সন্তানের মুখে এমন কথা শুনে পিতার মানসিক অবস্থা কি যে হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু হযরত ইবরাহীম আ. দৃঢ়তায় অটল পাহাড় হয়ে জবাব দিলেন, হে আমার প্রাণ প্রিয় বৎস! আল্লাহর নির্দেশ পালন করার জন্য তুমি আমার চমৎকার সহায়ক হয়েছ।
.
অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আঃ হযরত ইসমাঈল আঃ কে আদর করলেন এবং বেধে শুইয়ে দিলেন৷ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, ইসমাঈল আঃ কে কাত করে এমনভাবে শুইয়ে দিলেন, যাতে কপালের এক দিক মাটি স্পর্শ করেছিল৷ আভিধানিক দিক দিয়ে এই অর্থই অগ্রগণ্য৷ কারন আরবী ভাষায় "জাবীন" কপালের দুই পার্শ্বকে বলা হয়৷ কপালের মধ্যভাগকে বলা হয় "জাবহা"৷ এ কারনে হযরত থানবী রহঃ অনুবাদ করেছেন, বালুর উপর শুইয়ে দিলেন৷ তবে কিছু কিছু তাফসীরবিদ অর্থ করেছেন, উপুর করে মাটিতে শুইয়ে দিলেন৷
.
তবে ঐতিহাসিক রেওয়ায়েতে এভাবে শোয়ানোর কারন বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ প্রথমে তাকে সোজা করেই শুইয়ে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু বার বার ছুরি চালানো সত্ত্বেও হযরত ইসমাঈল আঃ এর গলা কাটছিল না৷ কেননা আল্লাহ স্বীয় কুদরতে পিতলের একটি টুকরা মাঝখানে অন্তরায় করে দিয়েছিলেন৷ তখন পুত্র নিজেই আবদার করে বললেন, আব্বাজী! আমাকে উপুড় করে শুইয়ে নিন। কারণ, আমার মুখমন্ডল দেখে আপনার মধ্যে পিতৃস্নেহ উথলে উঠে। ফলে গলা কাটা যাচ্ছে না। এ ছাড়া ছুরি দেখে আমি ঘাবড়ে যাই। সে মতে হযরত ইবরাহীম আ. তাকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন এবং পুনরায় সজোরে প্রাণপণে ছুরি চালালেন। কিন্তু তখন ও গলা কাটছিলনা। হযরত ইবরাহীম আ. চেষ্টা করেই যাচ্ছেন। হযরত ইবরাহীম আ. এর এ প্রাণন্তর প্রচেষ্টা প্রত্যক্ষ করে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হলেন এবং হযরত ইসমাঈলের বিনা যবেহেই তার কুরবানী কবুল করে নিলেন। এ ব্যাপারে হযরত ইবরাহীম আ. এর উপর ওহী নাযিল হলো। [তাফসীরে রুহুল মাআ’নী। সূত্র হযরত কাতাদাহ রা. হতে বর্নিত, তাফসিরে ইবনে কাসীর মসনদে আহমদ থেকে নকল করা হয়েছে। সূত্র হযরত ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত।]
.
فَلَمَّا اَسْلَمَا وَتَلَّه لِلْجَبِيْنِ- وَنَادَيْنهُ اَنْ يَّا اِبْرَاهِيْمَ- قَدْ صَدَّقْتَ الرُّءْيَا- اِنَّا كَذلِكَ نَـجْـزِى الْـمُحْسِنِيْـنَ- اِنَّ هـذَا لَهُـوَ الْـبَلـؤُ الْمُبِيْـنُ- وَقَـدَيْنهُ بِـذِبْحٍ عَـظِـيْمٍ-
“অবশেষে যখন পিতা-পুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের কে সোপর্দ করলো এরং ইবরাহীম আ. পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (যবেহ করার জন্যে), তখন আমি (আল্লাহ) তাকে সম্বোধন করে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি সপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমি সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত এ এক সুস্পষ্ট কঠিন পরীক্ষা। আর আমি (ইসমাঈল আ: এর পরিবর্তে) জবেহ করার জন্য এক মহান জীব এর বিনিময়ে দিলাম”। [সূরা আস-সাফ্ফাত ১২০-১০৭]
.
এখানে আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত উদ্দেশ্য হযরত ইসমাঈল আঃ কে জবেহ করা ছিল না কিংবা হযরত ইব্রাহীম আঃ-কেও এ আদেশ দেয়া উদ্দেশ্য ছিল না যে , প্রাণ প্রতিম পুত্রকেই জবেহ করে ফেল। বরং উদ্দেশ্য ছিল হযরত ইব্রাহীম আঃ কে পরীক্ষা করা। এ কারনেই আল্লাহ তায়ালা এ হুকুমটি সরাসরি কোন ফেরেস্তার মাধ্যমে নাযিল করেননি। যাতে আল্লাহ তায়ালা লক্ষ্য করেন যে, স্বপ্নের মাধ্যমে প্রদত্ত আদেশে ইব্রাহীম আঃ এর আনুগত্য পূর্ণমাত্রায় প্রকাশ, না কি স্বপ্নকে মানব মনের আবেগে ভিন্ন অর্থে ব্যবহার করে আনুগত্যের পথ থেকে সরে দাড়ান? সুবহানাল্লাহ! এটা যে বড়ই কঠিন পরীক্ষা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
.
বস্তুতঃ এ আদেশটি মৌখিক আদেশের মাধ্যমে হলে পরীক্ষাই হত না। কেননা কোন নবীই তো আল্লাহর সরাসরি আদেশ অমান্য করতে পারেন না। তদুপরি আদেশটি পরে রহিত করতে হত। কেননা আল্লাহর উদ্দেশ্য তো পুত্রকে জবাই করানো ছিল না।
.
বর্ণিত আছে যে, হযরত ইব্রাহীম আঃ উপরোক্ত গায়েবী আওয়াজ শুনে উপরের দিকে তাকালে হযরত জিব্রাইল আঃ কে একটি দুম্বা নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখেন এবং হযরত জিব্রাইল আঃ এর নির্দেশনা মোতাবেক দুম্বাটিকে জবেহ করেন। দুম্বাটি স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছিল এবং এই কুরবানী কবুল না হবার কোন সন্দেহ নাই - এ জন্য দুম্বাটি মহান বলা হয়েছে।
.
ফতহুল ক্বাদীরের বর্ননায় পাওয়া যায়, হাবীলের দেয়া কুরবানীর দুম্বাটি আল্লাহ আসমানে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। ইসমাঈল আঃ এর পরিবর্তে জিব্রাইল আঃ এর মাধ্যমে সেই দুম্বাটিই ইব্রাহীম আঃ কে কুরবানী করার জন্য পাঠিয়ে দেন।
.
ইব্রাহীম আঃ এর এই কুরবানী আল্লাহর নিকট পছন্দ হওয়ায় আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও কুরবানী করার বিধান দিয়েছেন৷ মহান আল্লাহ বলেছেন -
وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِى الْا خِرِيْنَ
“আর আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের মধ্যে ইব্রাহীমের এ সুন্নাত স্মরণীয় করে রাখলাম”। [সূরা আস আস সাফ্ফাত ১০৮]
.
✔ মাহাদী হাসান
.
● তথ্য সূত্র
• কুরবানীর পাথেয় - মুফতি আব্দুল ওয়াহ্হাব
• অন্তর্জাল
.

Privacy Policy For "ফী যিলালিল কুরআন" android app Published in Play Store


"ফী যিলালিল কুরআন" app package  "al_quran.fi_zilalil_quran.fe_zilalil_quran" Privacy Policy

This Privacy Policy describes how your personal information is collected, used, and shared when you use this app - package name:"al_quran.fi_zilalil_quran.fe_zilalil_quran" (the app).

Here we also describe other DISCLOSERS for using this app.

WE DO NOT COLLECT ANY OF YOUR PERSONAL INFORMATION,
we can collect only certain information by following ways :

- Google Play Console - When you download an app from play store google collects the app behavior, app's crash report, and uninstall report. We get this report by google play console so that we update our app with the most relevant helpful manner. Unless this, we do not use your any information for another manner.
    -  Cookies - We do not collect any information about your device or your information by using cookies. For more information about cookies, and how to disable cookies, visit http://www.allaboutcookies.org.
    - Log files  - We only collect by google play console about crashes of the app with log files.
    - Device Service - we use your device service part, only for the built-in  Arabic Keyboard.
    - Device Messaging Service - we do not use your device messaging Service.
    - Additionally, when you submit a blood donation form, we will collect your inputted name, addresses and phone number only.  We refer to this information as - request Information by Google SpreadSheet Database. Here you save your Data.
- You Have to use your Google Drive When you want to Save Ayah Online. This Process Make a spreadsheet in your google Drive, and Save the data in that SpreadSheet. If you will remove the app and install again, you will find your data Again. Inshallah.

HOW DO WE USE YOUR PERSONAL INFORMATION?

We do not collect your any personal information.

We use the Device Information that we collect by Google play console to help us screen for potential risk and fraud, and more generally to improve and optimize our App (for example, by generating analytics about how our customers request and interact with the App, and to assess the success of our app's update).


DO NOT TRACK
Please note that we do not alter our App data collection and use practices when we see a Do Not Track signal from your browser.

YOUR RIGHTS
If you are a European resident, you have the right to access personal information we hold about you and to ask that your personal information be corrected, updated, or deleted. If you would like to exercise this right, please contact us through the contact information below.

Additionally, if you are a European resident we note that we are processing your information in order to fulfill contracts we might have with you (for example if you make an order through the app), or otherwise to pursue our legitimate business interests listed above.  Additionally, please note that your information will be transferred outside of Europe, including to Canada and the United States.

DATA RETENTION
When you place a request through the app, we will maintain your Order Information for our records unless and until you ask us to delete this information.

APP PERMISSIONS :

In this app no special permission required accept :
 
   <uses-permission android:name="android.permission.WRITE_EXTERNAL_STORAGE" />
    <uses-permission android:name="android.permission.READ_EXTERNAL_STORAGE" />
   

Before you continue, you are asked to give the app those above permissions. IF YOU ARE NOT READY TO GIVE THIS APP THOSE ABOVE PERMISSIONS, WELL, SO, YOU MAY UNINSTALL THE APP FROM YOUR DEVICE.

MINORS
The App is not intended for individuals under the age of 10.

CHANGES
We may update this privacy policy from time to time in order to reflect, for example, changes to our practices or for other operational, legal or regulatory reasons.

CONTACT US
For more information about our privacy practices, if you have questions, or if you would like to make a complaint, please contact us by e-mail at noorhossain888@gmail.com or by mail using the details provided below:

Phone: +88-01879115953.
E-mail: noorhossainappupload@gmail.com
E-mail : noorhossain888@gmail.com

প্রশ্ন: ৩৪৬ : তাফহীমুল কুরআন বাংলা ও আরবী সার্চ এ্যাপের 24-07-2020 তারিখের আপডেটে কি কি বিষয় রয়েছে ?

উত্তর:

আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামী সাহিত্য এখন তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মধ্যে ডাউনলোড করে এ্যাপের মধ্যেই পড়া যাবে। সাহিত্যের পিডিএফ পড়তে সবার ভালো লাগেনা, তাই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবার পিডিএফ হলেও এ্যাপের মধ্যে ডাউনলোড না হলে অনেকে খুজে পাননা, সেই সমস্যাও দুর করা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ। এতে এ্যাপের আকার বৃদ্ধি পাবেনা। এ্যাপ আপডেট করার পর নতুন নতুন ইসলামী সাহিত্য পাওয়ার জন্য পুনরায় এ্যাপ আপডেটের প্রয়োজন নেই। এ্যাপের মধ্যেই আমি সাহিত্য গুলোর টেক্সট ফরমেট তৈরী করে ডাউনলোড লিংক পুশ করে দেবো। যার যেটা প্রয়োজন হবে এ্যাপের মধ্যে ডাউনলোড করে এ্যাপের মধ্যেই পড়তে পারবেন, ইনশা আল্লাহ। নাইটমোডে পড়া, ফন্ট ছোট বড় করা, রঙিন করা, কপি পেস্ট, ফুলস্ক্রীন মোড ইত্যাদি সুবিধা থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি সাহিত্য বাংলায় অডিও শুনবার  ব্যবস্থাও থাকবে। আপনি যদি ২০ টা সাহিত্যও পড়েন, যেই সাহিত্যটা যে পর্যন্ত পড়ে রেখেছেন, আবার ওপেন করলে  সেই সাহিত্যটা সেইখান থেকেই আরম্ভ হবে।

আলহামদুলিল্লাহ, তাফহীমুল কুরআন  এ্যাপে প্রায় ১৩০ টি ইসলামী সাহিত্য ও অডিও বুক সংযোজন করা হলো,  যা এ্যাপের মধ্যে ডাউনলোড করে এ্যাপের মধ্যেই পড়া যাবে।  এ্যাপ আপডেট প্লে স্টোরে লাইভ হয়েছে। এখনই আপডেট করে নিন। ইনশাআল্লাহ।

এ্যাপের মধ্যে ২৯ টি এমপিথ্রি বুক ও সংযোজন করা হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। অত্যন্ত সুন্দর কন্ঠে অরিজিনাল ভয়েসে বইগুলো শুনতে পারবেন। এছাড়া Text Book গুলো রোবোটিক্ব ভয়েসে শুনতে পারবেন। Text Book  এর  লেখাগুলো সার্চও করা যাবে ।

১. সিলেবাসের সকল ও উচ্চতর অধ্যয়ন সহ মোট ১৩০ টি ইসলামী সাহিত্য ও mp3 বুক এ্যাপের মধ্যে ডাউনলোড করে এ্যাপের মধ্যেই পড়া যাবে ও শুনা যাবে। কিন্তু এতে এ্যাপের আকার বাড়বেনা।
২. কপি পেস্ট এর নতুন ও কার্যকরী সিস্টেম।
৩. সুরা ও নির্দিষ্ট আয়াতে যাওয়ার নতুন ও কার্যকরী সিস্টেম।
৪. এখন থেকে সেভকৃত নোট, আরবী তিলাওয়াত এবং ডাউনলোডকৃত ইসলামী সাহিত্য  এ্যাপ আনইনষ্টল করলেও মুছে যাবেনা। পুনরায় ইনষ্টল করলে সেভকৃত সবগুলো বিষয়  আগের মতোই পাওয়া যাবে।
৫.  আল কুরআন সার্চ ।  24  জন ক্বারী। মানচিত্র,  শব্দার্থ।
৮. টিকার রেফারেন্সে ক্লিক করলে সংশ্লিষ্ট অন্য টিকা পাওয়া যাবে
৯.পুর্ণাঙ্গ বিষয় অভিধান - ৪১২ পৃষ্ঠা। 
১০. আরবী ও বাংলা ভয়েস স্পীড ও পিচ সিস্টেম।
১১. প্রশ্নোত্তর সার্চ করা যাবে, ফলে সহজেই আপনার প্রশ্নের উত্তর সার্চ করতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ।

মহান আল্লাহর কাছে আকুল আবেদন, তিনি যেন এই এ্যাপটিকে প্রতিটি বাঙ্গালীর নিকট পৌছিয়ে দেন এবং একটি পরিপূর্ণ ইসলামী সমাজ গঠনে যেন এই এ্যাপটি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। আল্লাহুম্মা আমীন।

এ্যাপ লিংক (ক্লিক করুন )  : https://play.google.com/store/apps/details?id=com.alquran.tafhimul_quran

প্রশ্ন: ৩৪৫ : আয়াাত মানসুখ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে চাই।

উত্তর:
যেমন ইসলামের প্রথম দিনেই মদ হারাম করা হয়নি। একটি জাতিকে সঠিক পথে আনার জন্য পর্যায়ক্রমে চেষ্টা করা জরুরী। তাই জেনার শাস্তি , মদ হারাম এগুলো কিছুদিন পরে দেওয়া হয়েছে। একজন ডাক্তার প্রথমে একটি ঔষধ দেন, ঐ ঔষধটি এক সপ্তাহ খাওয়ার পরে, রোগীর যখন কিছুটা উন্নতি হয়, তখন ডাক্তার তার অবস্থা বুঝে প্রথম ঔষধটি পাল্টিয়ে, অন্য একটি ঔষধ দেন। ঠিক কুরআনের আয়াত মানসুখ হওয়ার হিকমত এটাই।

এছাড়াও তাফহীমুল কুরআনের সুরা বাক্বারার নিম্নোক্ত আয়াতগুলো তাফসীর সহকারে দেখুন। পুরো বিষয়টি পরিস্কার ভাবে বুঝে যাবেন ইনশআল্লাহ।

﴿مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ﴾
১০৬) আমি যে আয়াতকে ‘মানসুখ’ করি বা ভুলিয়ে দেই , তার জায়গায় আনি তার চাইতে ভলো অথবা কমপক্ষে ঠিক তেমনটিই ৷১০৯ 
১০৯. ইহুদিরা মুসলমানদের মনে যেসব সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাতো তার মধ্য থেকে একটি বিশেষ সন্দেহের জবাব এখানে দেয়া হয়েছে ৷ তাদের অভিযোগ ছিল , পূর্ববর্তী কিতাবগুলো যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসে থাকে এবং এ কুরআনও আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে , তাহলে ঐ কিতাবগুলোর কতিপয় বিধানের জায়গায় এখানে ভিন্নতর বিধান দেয়া হয়েছে কেন ?একই আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিধান কেমন করে হতে পারে ? আবার তোমাদের কুরআন এ দাবী উত্থাপন করেছে যে, ইহুদিরা ও খৃস্টানরা তাদেরকে প্রদত্ত এ শিক্ষার একটি অংশ ভুলে গেছে ৷ আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষা হাফেজদের মন থেকে কেমন করে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ? সঠিক অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে তারা এসব কথা বলতো না ৷ বরং কুরআনের আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হবার ব্যাপারে মুসলমানদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে তারা এগুলো বলতো ৷ এর জবাবে আল্লাহ বলেছেনঃ আমি মালিক ৷ আমার ক্ষমতা সীমাহীন ৷ আমি নিজের ইচ্ছা মতো যে কোন বিধান 'মান্‌সুখ' বা রহিত করে দেই এবং যে কোন বিধানকে হাফেজদের মন থেকে মুছে ফেলি ৷ কিন্তু যে জিনিসটি আমি 'মান্‌সুখ' করি তার জায়গায় তার চেয়ে ভালো জিনিস আনি অথবা কমপক্ষে সেই জিনিসটি নিজের জায়গায় আগেরটির মতই উপযোগী ও উপকারী হয় ৷
﴿أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ﴾
১০৭) তুমি কি জানো না, আল্লাহ সব জিনিসের ওপর ক্ষমতাশালী ?তুমি কি জানো না, পৃথিবী ও আকাশের শাসন কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর? আর তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী নেই ৷  

﴿أَمْ تُرِيدُونَ أَن تَسْأَلُوا رَسُولَكُمْ كَمَا سُئِلَ مُوسَىٰ مِن قَبْلُ ۗ وَمَن يَتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ﴾
১০৮) তাহলে তোমরা কি তোমাদের রসূলের কাছে সেই ধরনের প্রশ্ন ও দাবী করতে চাও যেমন এর আগে মূসার কাছে করা হয়েছিল ?১১০ অথচ যে ব্যক্তি ঈমানী নীতিকে কুফরী নীতিতে পরিবর্তিত করেছে, সে-ই সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে ৷  
১১০. ইহুদিরা তিলকে তাল করে এবং সূক্ষ্ম বিষয়ের অবতারণা করে মুসলমানদের সামনে নানা ধরনের প্রশ্ন উত্থাপন করতো ৷ তোমাদের নবীর কাছে এটা জিজ্ঞেস করো ওটা জিজ্ঞেস করো বলে তারা মুসলমানদের উস্কানী দিতো ৷ তাই এ ব্যাপারে আল্লাহ মুসলমানদেরকে ইহুদিদের নীতি অবলম্বন করা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে দিচ্ছেন ৷নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এ ব্যাপারে মুসলমানদেরকে বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন ৷ তিনি বলতেন , অনর্থক প্রশ্ন করা এবং তিলকে তাল করার কারণে পূর্ববর্তী উম্মাতরা ধ্বংস হয়েছে , কাজেই তোমরা এ পথে পা দিয়ো না ৷ আল্লাহ ও তাঁর রসূল যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেননি সেগুলোর পেছনে জোঁকের মতো লেগে থেকো না ৷ তোমাকে যে নির্দেশ দেয়া হয় তা মেনে চলো এবং যে বিষয়গুলো থেকে নিষেধ করা হয় সেগুলো করো না ৷ অপ্রয়োজনীয় কথা বাদ দিয়ে কাজের কথার প্রতি মনোযোগ দাও ৷

প্রশ্ন: ৩৪৪: জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ফজীলত ও আমল ।

মাওলানা এএইচএম আবুল কালাম আযাদ : আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এ উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন- যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জিলহজ্জ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ স. যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন।
জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের ফজিলত : আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ যে, তিনি নেক বান্দাদেরকে এমন কিছু মৌসুম দিয়েছেন যেগুলোতে তারা বেশি বেশি নেকীর কাজ করতে পারে। এই মৌসুমগুলোর অন্যতম হল, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন। এ দিনগুলোর ফজিলতের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নায় অনেক দলীল রয়েছে:
১. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “শপথ ফজরের। শপথ দশ রাতের। (সূরা ফজর: ১ ও ২) ইবনে কাসীর রাহ. বলেছেন: “এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন।” এই মত ব্যক্ত করেন ইবনে আব্বাস, ইবনুয যুবাইর, মুজাহিদ প্রমুখ। (সহীহ বুখারী)
২. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল স. বলেছেন: “জিলহজ্জের প্রথম দশকের চেয়ে উত্তম এমন কোন দিন নেই, যে দিনগুলোর সৎ আমল আল্লাহ্‌র নিকট অধিক পছন্দনীয়।” সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন: আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয় হে রাসূলুল্লাহ্‌  স. তিনি বললেন, “আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয়। অবশ্য সেই মুজাহিদের কথা ভিন্ন, যে জান-মাল নিয়ে জিহাদে বেরিয়ে পড়ে, কিন্তু আর কোন কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না (অর্থাৎ আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যায়)।” (বুখারী)
৩. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তারা যেন নির্দিষ্ট দিন সমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (সূরা হজ্জ: ২৮) ইবনে আব্বাস রা. বলেছেন: “(নির্দিষ্ট দিন সমূহ হল) জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন।” (তাফসীর ইবনে কাসীর)
৪. ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন, “এ দশ দিনের তুলনায় অন্য কোন সময় আল্লাহর নিকট এতটা মর্যাদা পূর্ণ নয় বা তাতে আমল করা এতটা পছন্দনীয় নয়। সুতরাং এ দিনগুলোতে তোমরা অধিক পরিমাণ তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল হামদুলিল্লাহ) পাঠ কর।” (মুসনাদ আহমদ)
৫. সাঈদ ইবনে জুবাইর (যিনি পূর্বোক্ত ইবনে আব্বাস রা. এর হাদীস বর্ণনাকারী) জিলহজ্জের দশ দিন শুরু হলে ইবাদত-বন্দেগীতে এত বেশী পরিশ্রম করতেন যে, অন্য কারো জন্য এত ইবাদত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত। (দারেমী)
৬) ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে বলেন: “এই দশ দিন বিশেষ বৈশিষ্ট্য মন্ডিত হওয়ার কারণ হিসেবে আমার নিকট এটাই প্রতিভাত হচ্ছে যে, এ দিনগুলোতে সালাত, সিয়াম, দান-সদকা, হজ্জ ইত্যাদি মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটেছে। এ ছাড়া অন্য কখনো এগুলো একসাথে পাওয়া যায় না।
এ হাদীসগুলোর মর্ম হল, বছরে যতগুলো মর্যাদাপূর্ণ দিন আছে তার মধ্যে এ দশ দিনের প্রতিটি দিনই সর্বোত্তম। রাসূলুল্লাহ স. এ দিনসমূহে নেক আমল করার জন্য তাঁর উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন। তাঁর এ উৎসাহ প্রদান এ সময়টার ফযীলত প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ স. এ দিনগুলোতে বেশি বেশি করে তাহলীল ও তাকবীর পাঠ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ওপরে ইবন উমর রা. বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে।
ইবন রজব রহিমাহুল্লাহ বলেন, উপরোক্ত হাদীসগুলো থেকে বুঝা যায়, নেক আমলের মৌসুম হিসেবে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশক হল সর্বোত্তম, এ দিবসগুলোয় সম্পাদিত নেক আমল আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। হাদীসের কোনো কোনো বর্ণনায় (‘আহাব্বু’ তথা সর্বাধিক প্রিয়) শব্দ এসেছে আবার কোনো কোনো বর্ণনায় (‘আফযালু’ তথা সর্বোত্তম) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অতএব এ সময়ে নেক আমল করা বছরের অন্য যে কোনো সময়ে নেক আমল করার থেকে বেশি মর্যাদা ও ফযীলতপূর্ণ। এজন্য উম্মতের অগ্রবর্তী পুণ্যবান মুসলিমগণ এ সময়গুলোতে অধিকহারে ইবাদতে মনোনিবেশ করতেন। যেমন আবূ ছিমান নাহদী বলেন,‘তাঁরা তথা পূর্বসূরীগণ তিনটি দশককে অনেক বেশি মর্যাদাবান জ্ঞান করতেন : রমযানের শেষ দশক, জিলহজ্জের প্রথম দশক এবং মুহাররমের প্রথম দশক।’
জিলহজ্জের প্রথম দশ দিন বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন হওয়ার কারণ:
১. আল্লাহ তা‌‘আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ, মহা সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন, ‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ (সূরা আল-ফাজর: ১-২) আয়াতে ‘কসম দশ রাতের’ বলে জিলহজ্জের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ মতটিই সঠিক।
২ এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ তা‌‘য়ালা বলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ (সূরা আল-হজ্জ: ২৮) জমহুর উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ও ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত।
৩. রাসূলুল্লাহ স. দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন : জিলহজ্জের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ স. দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রা. থেকে বর্ণিত, ‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ জিলহজ্জের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সেই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’ (মুসনাদ বাযযার : ১১২৮;  মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২০৯০)
৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন : আরাফার দিন হলো বড় হজ্জের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও নাজাতের দিন। জিলহজ্জের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘আরাফা দিবসই হজ’। (তিরমিযী : ৮৯৩; নাসায়ী : ৩০১৬)
৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনো কোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহ স. ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতঃপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) (নাসায়ী: ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬)
৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে : হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন, ‘জিলহজ্জের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ্জ ইত্যাদি। অন্য কোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ (ফাতহুল বারী : ২/৪৬০)
জিলহজ্জের প্রথম দশ দিনের মুস্তাহাব আমল : প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ ইবাদতের মৌসুমগুলোকে সুন্দর প্রস্তুতির মাধ্যমে স্বাগত জানানো। জিলহজ্জ মাসকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি নিচের কাজগুলোর মধ্য দিয়ে: এ দশ দিন যে আমলগুলো বেশি বেশি করা উচিৎ :
১. এই দশটি দিন কাজে লাগাতে দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা : শুরুতেই যা করা সবার উচিৎ তা হল, এই দিনগুলোকে পুণ্যময় কাজ ও কথায় সুশোভিত করার  দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করা। যে ব্যক্তি কোনো কাজের সংকল্প করে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। তার জন্য সাহায্যকারী উপায় ও উপকরণ প্রস্তুত করে দেন। যে আল্লাহর সঙ্গে সত্যবাদিতা দেখায় আল্লাহ তাকে সততা ও সফলতায় ভূষিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন।’ (সূরা আল-আ‘নকাবূত: ৬৯)
২. সালাত : ফরয সালাতগুলো যথাসময়ে সম্পাদন করার পাশাপাশি প্রচুর নফল সালাত আদায় করা। কারণ, সালাতই হল আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায়। সাওবান রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি: “তুমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ সেজদা কর (নফল সালাত আদায় কর), কারণ যখনই তুমি সেজদা কর বিনিময় আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং গুনাহ মোচন করেন।” (মুসলিম) এটি কেবল জিলহজ্জ মাস নয় বরং অন্য সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
৩. সিয়াম : রোজা রাখা অন্যতম একটি নেক কাজ। তাই এ দিনগুলোতে নফল রোজা রাখা খুবই ফযীলতের। হুনাইদা বিন খালেদ তার স্ত্রী থেকে, তিনি রাসূলুল্লাহ স. এর জনৈক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ স. জিলহজ্জ মাসের নয় তারিখ, আশুরার দিন ও প্রত্যেক মাসের তিন দিন রোজা পালন করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ ও নাসায়ী) ইমাম নববী জিলহজ্জ মাসের শেষ দশ দিনে রোযা রাখার ব্যাপারে বলেছেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব ।
৪. আরাফার দিন রোজা : আরাফার দিন রোজা রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু রাসূলুল্লাহ স. থেকে প্রমাণিত, তিনি আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে বলেছেন: “আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, এটি পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।” (মুসলিম) তবে আরাফায় অবস্থানকারী হাজীদের জন্য রোযা রাখা মুস্তাহাব নয়। কারণ, নবী স. আরাফায় অবস্থান করেছিলেন রোজাবিহীন অবস্থায়।
৫. হজ্জ ও উমরা সম্পাদন করা : হজ ও উমরা এ দুটি হলো এ দশকের সর্বশ্রেষ্ঠ আমল। যারা এ দিনগুলোতে হজ্জ আদায়ের সুযোগ পেয়েছেন তারা যে অনেক ভাগ্যবান তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ যাকে তাঁর নির্দেশিত এবং রাসূলুল্লাহ স. প্রদর্শিত পন্থায় হজ বা উমরা করার তাওফীক দান করেন তার পুরস্কার শুধুই জান্নাত। কারণ, আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘এক উমরা থেকে আরেক উমরা এতদভয়ের মাঝের গুনাহগুলোর কাফফারা এবং মাবরূর হজ্জের প্রতিদান কেবলই জান্নাত।’ (বুখারী: ১৭৭৩; মুসলিম: ৩৩৫৫) আর মাবরূর হজ্জ সেটি যা পরিপূর্ণভাবে সম্পাদিত হয় রাসূলুল্লাহ স. প্রদর্শিত পন্থায়। যাতে কোনো রিয়া বা লোক দেখানো কিংবা সুনাম বা মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর মানসিকতা নেই। নেই কোনো অশ্লীলতা বা পাপাচারের স্পর্শ। যাকে বেষ্টন করে থাকে নেক কাজ ও পুণ্যময় আমল।
৬. দান-সাদাকা করা : এ দিনগুলোতে যে আমলগুলো বেশি বেশি দরকার তার মধ্যে অন্যতম হলো সাদাকা। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সাদাকা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে: ‘হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোনো বেচাকেনা, না কোনো বন্ধুত্ব এবং না কোনো সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম।’ (সূরা আল-বাকারা: ২৫৪)
আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘সাদাকা সম্পদকে কমায় না, ক্ষমার মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হলে আল্লাহ তাকে উঁচু করেন।’ (মুসলিম: ৬৭৫৭)
৭. তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পড়া : এসব দিনে তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া সুন্নত। এ দিনগুলোয় যিকর-আযকারের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, হাদীসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ স. বলেন, ‘এ দশ দিনে নেক আমল করার চেয়ে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় ও মহান কোনো আমল নেই। তাই তোমরা এ সময়ে তাহলীল (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আল-হামদুলিল্লাহ) বেশি বেশি করে পড়।’ (বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৩৪৭৪; মুসনাদ আবী আওয়ানা: ৩০২৪)
তাকবীরের শব্দগুলো নিম্নরূপ : (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।) উল্লেখ্য, বর্তমানে তাকবীর হয়ে পড়েছে একটি পরিত্যক্ত ও বিলুপ্তপ্রায় সুন্নত। আমাদের সকলের কর্তব্য এ সুন্নতের পুনর্জীবনের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারণা চালানো। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আমার সুন্নতসমূহ থেকে একটি সুন্নত পুনর্জীবিত করল, যা আমার পর বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তাকে সে পরিমাণ সওয়াব দেওয়া হবে, যে পরিমাণ তার ওপর (সে সুন্নতের ওপর) আমল করা হয়েছে। এতে (আমলকারীদের) সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র কমানো হবে না।’ (তিরমিযী: ৬৭৭)
জিলহজ্জ মাসের সূচনা থেকে আইয়ামে তাশরীক শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ তাকবীর পাঠ করা সকলের জন্য ব্যাপকভাবে মুস্তাহাব। তবে বিশেষভাবে আরাফা দিবসের ফজরের পর থেকে মিনার দিনগুলোর শেষ পর্যন্ত অর্থাৎ যেদিন মিনায় পাথর নিক্ষেপ শেষ করবে সেদিন আসর পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পর এ তাকবীর পাঠ করার জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ ও আলী রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে এ মতটি বর্ণিত। ইবন তাইমিয়া রহ. একে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত বলেছেন। উল্লেখ্য, যদি কোনো ব্যক্তি ইহরাম বাঁধে, তবে সে তালবিয়ার সাথে মাঝে মাঝে তকবীরও পাঠ করবে। হাদীস দ্বারা এ বিষয়টি প্রমাণিত। (ইবন তাইমিয়াহ, মজমু‘ ফাতাওয়া : ২৪/২২০)
৮. পশু কুরবানী করা : এ দিনগুলোর দশম দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য কুরবানী করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর নবীকে কুরবানী করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন ও কুরবানী করুন।’ (সূরা আল-কাউসার: ০২)
এই দশদিনের অন্যতম সেরা প্রিয় আমল হলো কুরবানী। কুরবানীর পশু জবাই ও গরিবদের মধ্যে এর গোশত বিতরণের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভ হয়। এর দ্বারা গরিবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ পায় এবং তাদের কল্যাণ সাধন হয়।
৯. গুনাহ থেকে দূরত্ব অবলম্বন করা : সৎ কর্মের মাধ্যমে যেমন আল্লাহর নৈকট্য অর্জিত হয়, গুনাহের কাজের মাধ্যমে তেমন আল্লাহ থেকে আল্লাহর রহমত ও করুণা থেকে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। মানুষ তার নিজের করা অপরাধের কারণে কখনো আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। তাই আমরা যদি অপরাধ মার্জনা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রত্যাশী হই, তাহলে এ দিনগুলোতে এবং এর শিক্ষা কাজে লাগিয়ে বছরের অন্য দিনগুলোতে গুনাহ পরিত্যাগ করতে হবে। কেউ যখন জানতে পারেন কী বড় অর্জনই না তার জন্য অপেক্ষা করছে, তার জন্য কিন্তু যে কোনো কষ্ট সহ্য করা সহজ হয়ে যায়।
১০. একনিষ্ঠ মনে তওবা করা : তওবার অর্থ প্রত্যাবর্তন করা বা ফিরে আসা। যে সব কথা ও কাজ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অপছন্দ করেন তা বর্জন করে যেসব কথা ও কাজ তিনি পছন্দ করেন তার দিকে ফিরে আসা। সাথে সাথে অতীতে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কারণে অন্তর থেকে অনুতাপ ও অনুশোচনা ব্যক্ত করা। জিলহজ্জের শুভাগমনের আগে সবচে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এ তওবা তথা সকল গুনাহ থেকে ফিরে আসার প্রতি। স্বার্থক তওবা সেটি যার মধ্যে তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যথা- প্রথম. গুনাহটি সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা। দ্বিতীয়. গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এবং তৃতীয়. এই গুনাহটি ভবিষ্যতে না করার সংকল্প করা।
“বাস্তবেই এটি তওবার সুবর্ণ সময়। দয়াময় খোদা এ সময় বেশি বেশি তওবার তাওফীক দেন এবং অধিক পরিমাণে বান্দার তওবা কবুল করেন। তিনি ইরশাদ করেন, ‘তবে যে তাওবা করেছিল, ঈমান এনেছিল এবং সৎকর্ম করেছিল, আশা করা যায় সে সাফল্য অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (কাসাস: ৬৭)
“তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘বল, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (যুমার : ৫)
উপসংহার : প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোন, এই সকল অমূল্য সুযোগগুলো ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তা গ্রহণ করুন। কারণ, সময় পার হয়ে গেলে তখন আফসোস করে লাভ হবে না। মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করি, তিনি যেন আমাকে ও আপনাকে এই কল্যাণের মৌসুমগুলোকে অমূল্য সম্পদ হিসেবে গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন এবং তাতে ভালোভাবে তাঁর ইবাদত-বন্দেগী সম্পাদনে সাহায্য করেন। আমীন।।
লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব
Email: azad91bd@gmail.com

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...