প্রশ্ন: ৩৪৯ : নামাজে দৃষ্টি কোথায় রাখবো ?

জিজ্ঞাসা–২৪১: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আমার প্রশ্নটা হলো, নামাজের সময় চক্ষু কোথায় রাখবো? এতে আহলে হাদীসরা বলে নাকি নামাযে পুরোটাই সেজদার দিকে চোখ (নজর) রাখতে হয়।  শুধু তাশাহুদ এর সময় ডান হাতের আঙুল এর দিকে তাকাতে হয়। কিন্তু হানাফী মাযহাব এবং আরো অনেকেই মানেন যে, নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় চক্ষু সেজদার দিকে, রুকু অবস্থায় দুই পায়ের মাঝে, সিজদা অবস্থায় নাকের দিকে, বৈঠকে যেখানে বসে থাকা হয় তার একটু সামনের জমিনের দিকে। কোনটা সহীহ?–ইমরান আলী সাঁপুই: sanpui67@gmail.com

জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, মূল বিষয় হল, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । হাদীস শরীফে এসেছে, আয়েশা রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, هو اختلاس يختلسه الشيطان من صلاة العبد এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদেরকে নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে। (সহিহ বোখারি ৭১৮)
প্রশ্ন হল, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানোর পদ্ধতি কী হবে–এ বিষয়ে  মুজতাহিদ ইমামগণ একাধিক রায় পেশ করেছেন।
ইমাম আবু হানিফা রহ. বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দু’পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসূত ১/২৮) কেননা, لِأَنَّ امْتِدَادَ الْبَصَرِ يُلْهِي فَإِذَا قَصَرَهُ كَانَ أَوْلَى দৃষ্টি প্রসারিত করলে মন এদিক-সেদিক চলে যাবে। সংকুচিত করলে নামাজে মনোযোগটা আরও ভাল থাকবে। এজন্য প্রসারিত করার চেয়ে সংকুচিত করা উত্তম।
পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরা নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। তবে এমর্মে তাঁরা দলিল হিসাবে যে হাদীসগুলো পেশ করে থাকেন, সেগুলোকে মুহাদ্দিসগণ ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছেন। যেমন, ইমাম নববী রহ. বলেন,
قال العلامة النووي في مجموعه 3/314 شارحا قول الشيرازي: ( ( الشَّرْحُ ) حَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ هَذَا غَرِيبٌ لَا أَعْرِفُهُ , وَرَوَى الْبَيْهَقِيُّ أَحَادِيثَ مِنْ رِوَايَةِ أَنَسٍ وَغَيْرِهِ بِمَعْنَاهُ وَكُلُّهَا ضَعِيفَةٌ 
এবিষয়ে (নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে) ইবন আব্বাস রাযি. কর্তৃক বর্ণিত হাদীস গারীব (বিরল), যা আমার কাছে অপরিচিত। ইমাম বাইহাকী রহ. আনাস রাযি. ও অন্যদের সূত্রে এ বিষয়ে আরো কছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। এর সবগুলোই দুর্বল। (আলমাজমূ ৩/৩১৪)
প্রিয় প্রশ্নকারী দীনি ভাই, লক্ষণীয় বিষয় হল, হানাফী-মাযহাবে এটাকে মুসতাহাব বলা হয়েছে। ফরজ-ওয়াজিব বলা হয় নি। সুতরাং এ নিয়ে মাতমাতির কছু নেই।
অথচ কিছু অপরিণামদর্শী এবিষয়ে বিবাদ-বিসংবাদের সূত্রপাত করে থাকে, যা নিশ্চিতভাবে হারাম। আসলে এরা ফেতনাবাজ। এরা নামাজীদের পেছনে এরকম ছোট-খাটো বিষয় নিয়ে লাগা থাকে এবং তাদের নামাজ হয় না বলে উম্মাহর মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে। এদের কথায় কর্ণপাত না করাই ঈমান-আমলের জন্য নিরাপদ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
umyrkobbadi@gmail.com

==================================

নামাজের আদব হলো, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখা, যাতে পূর্ণ একাগ্রতা সৃষ্টি হয়। ডানে-বাঁয়ে দৃষ্টি না যায়। এটি সুন্নত।

তবে কোনোভাবে দৃষ্টি চলে গেলে নামাজ ভঙ্গ হবে না।


(আদদুররুল মুখতার : ১/৪৪৭)

নামাজরত মুক্তাদির জন্য ইমাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে থাকা সুন্নতবহির্ভূত কাজ।

সিজদায় পা রাখার সুন্নত পদ্ধতি হলো, পা খাড়া রেখে আঙুলগুলো কিবলামুখী রাখা। এর বিপরীত হলে নামাজ ভাঙবে না। (ফাতাওয়া ফকিহুল মিল্লাত : ৩/২৮৫, ফাতাওয়া শামি : ১/৪৯৩)

মূল বিষয় হলো, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, নামাজে এদিক-সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, এটি হলো শয়তানের ছোঁ মারা, যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদের নামাজ থেকে গাফিল ও উদাসীন করে ফেলে। (বুখারি, হাদিস : ৭১৮)

প্রশ্ন হলো, নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানোর পদ্ধতি কী হবে—এ বিষয়ে মুজতাহিদ ইমামরা একাধিক অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)

কেননা দৃষ্টি প্রসারিত করলে মন এদিক-সেদিক চলে যাবে। সংকুচিত করলে নামাজে মনোযোগ আরো ভালো থাকবে। এ জন্য প্রসারিত করার চেয়ে সংকুচিত করা উত্তম।

পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে। তবে এ মর্মে তাঁরা দলিল হিসেবে যে হাদিসগুলো পেশ করে থাকেন, সেগুলোকে মুহাদ্দিসরা ‘দুর্বল’ বলে অভিহিত করেছেন। যেমন—ইমাম নববি (রহ.) বলেন, এ বিষয়ে (নামাজের সময় দৃষ্টি থাকবে সিজদার দিকে) ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস গরিব (বিরল), যা আমার কাছে অপরিচিত।

ইমাম বাইহাকি (রহ.) আনাস (রা.) ও অন্যদের সূত্রে এ বিষয়ে আরো কিছু হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর সব কটিই দুর্বল। (আল-মাজমু : ৩/৩১৪)


========================

সালাতের সময় দৃষ্টি কোথায় থাকবে?— আমি কিছু কিছু জায়গায় পড়েছি যে, দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার জায়গায়, রুকুর সময় দুই পায়ের মাঝখানে, সিজদাহর সময় নাকের দিকে ও বসা অবস্থায় কোলের দিকে রাখতে হয়। কিন্তু এর পক্ষে কোনো দলিল পাইনি। এ বিষয়ে আমাকে সঠিক সুন্নাহ-পদ্ধতি জানিয়ে বাধিত করবেন।

এই প্রশ্নের উত্তর হলো- হাদিস শরিফে আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেছি যে, নামাজে এদিক সেদিক তাকানোর ব্যাপারে আপনি কী বলেন? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এটা হলো শয়তানের ছোঁ মারা— যা দ্বারা শয়তান আল্লাহর বান্দাদের নামাজ থেকে গাফেল ও উদাসীন করে ফেলে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭১৮)

বোঝা গেল যে, এখানে মূল বিষয় হলো- নামাজে এদিক-সেদিক না তাকানো। কেননা এটি নামাজে মনোযোগ ও একাগ্রতা রক্ষা করার জন্য অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার । 

হানাফি মাজহাব মতে নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা মুস্তাহাব। (হাশিয়াতুত তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ : ২৭৭)

এ বিষয়ে ফিকাহবিদ ইমামরা একাধিক অভিমত দিয়েছেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, নামাজের সময় দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে, রুকু অবস্থায় থাকবে দুই পায়ের মাঝখানে, বসা অবস্থায় থাকবে কোলের দিকে, সিজদা অবস্থায় থাকবে নাকের দিকে। (কিতাবুল মাবসুত : ১/২৮)


পক্ষান্তরে কোনো কোনো ইমাম বলেছেন, পুরো নামাজের সময় দৃষ্টি সিজদার দিকে থাকবে। হানাফি মাজহাবে এটাকে মুসতাহাব বলা হয়েছে। ফরজ-ওয়াজিব বলা হয় নি। সুতরাং এটি আবশ্যকীয় কোনো বিধান নয়।

ফতওয়ার কিতাবে এসেছে যে, নামাজের কিছু আদব-মুস্তাহাব রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় সিজদার দিকে আর বসা অবস্থায় কোলের দিকে দৃষ্টি রাখা। (আদ-দুররুল মুখতার : ০২/১৭৫)

কেউ কেউ বলেছেন, সালাতে কেবল তাশাহুদের বৈঠক ছাড়া অন্য সকল অবস্থায় সিজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা সুন্নত। কেবল তাশাহুদের বৈঠকে দৃষ্টি থাকবে ডান হাতের শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলীর দিকে।

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে। (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ১/৪৭৯)

অপর এক হাদিসে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) যখন কাবা ঘরে প্রবেশ করেন, তখন বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সিজদার স্থান থেকে অন্য দিকে ফেরাননি।’ (ইরওয়াল গালিল: ২/৭৩)

তাশাহুদে বসে তাশাহুদ আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং সে দিকে নিদৃষ্টি নিবন্ধ রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত, ‘যখন তিনি তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে যে আঙ্গুলটি আছে (অর্থাৎ শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল) দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকে দিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন।’ (ইবনু খুজুাইমা: ১/৩৫৫; হাদিস : ৭১৯)

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতেন, তবে ইশারার দিকে তিনি দৃষ্টিপাত করতেন না।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৪/৩; আবু দাউদ, হাদিস : ৯৯০)

সুতরাং এই মতের উপরও আমল করা যাবে, কোনো সমস্যা নেই।

No comments:

Post a Comment

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...