নাজিলের সময়ানুক্রমে কুরআনের সূরাসমূহের সিরিয়াল - প্রশ্ন : ২০১


নাজিলের সময়ানুক্রমে কুরআনের সূরাসমূহের সিরিয়াল


বর্তমান কুরআনের সূরাসমূহের সিরিয়াল সূরাসমূহের নাজিলের সময়ানুক্রমে সাজানো নেই, বরং এলোমেলো অবস্থায় আছে। কুরআন বুঝার জন্য কুরআনের সূরাসমূহের নাজিলের সময়ানুক্রম জানা জরুরি।
নিচে কুরআনের সূরাসমূহের নাজিলের সময়ানুক্রম অনুসারে সূরার নাম উল্লেখ করা হল :
সময়ানুক্রম / ক্রনোলজিকেল অর্ডার
সূরার
নাম
আয়াতের সংখ্যা
নাজিলের
অবস্থান
বর্তমান কোরআনের ক্রম
সূরা আলাক(রক্তপিন্ড)
১৯
মক্কা
৯৬
সূরা কালাম (কলম)
৫২
মক্কা
৬৮
সূরা মোজাম্মিল
(বস্ত্র আচ্ছাদনকারী)
২০
মক্কা
৭৩
সূরা আল
মুখতাদির ( পোশাক পরিহিত)
৫৬
মক্কা
৭৪
সূরা ফাতিহা
(সূচনা)
মক্কা
সূরা লাহাব
(জলন্ত অঙ্গার)
মক্কা
১১১
সূরা আত
তাকবির (অন্ধকারাচ্ছন্ন)
২৯
মক্কা
৮১
সূরা আল আলা
(সর্ব উন্নত)
১৯
মক্কা
৮৭
সূরা আল লাইল
(রাত্রি)
২১
মক্কা
৯২
১০
সূরা আল ফজর
(ভোরবেলা)
৩০
মক্কা
৮৯
১১
সূরা আদ-দুহা
(পূর্বাহ্ণের সূর্য কিরণ)
১১
মক্কা
৯৩
১২
সূরা আল ইনশিরাহ(বক্ষ প্রশস্তকরন)
মক্কা
৯৪
১৩
সূরা আল আছর
(সময়)
মক্কা
১০৩
১৪
সূরা আল আদিয়াত (অভিযান কারী)
১১
মক্কা
১০০
১৫
সূরা কাওসার
(প্রাচুর্য)
মক্কা
১০৮
১৬
সূরা আল তাকাসুর( প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা)
মক্কা
১০২
১৭
সূরা আল মামুন
(সাহায্য-সহায়তা)
মক্কা
১০৭
১৮
সূরা আল কাফিরুন (অবিশ্বাসী গোষ্ঠী)
মক্কা
১০৯
১৯
সূরা ফিল (হাতি)
মক্কা
১০৫
২০
সূরা ফালাক
(নিশি ভোর)
মক্কা
১১৩
২১
সূরা আন নাস
(মানবজাতি)
মক্কা
১১৪
২২
সূরা ইখলাস
(একত্ব)
মক্কা
১১২
২৩
সূরা আন নাজম
(তারা)
৬২
মক্কা
৫৩
২৪
সূরা আবাসা
(তিনি ভ্রকুটি করলেন)
৪২
মক্কা
৮০
২৫
সূরা আল কদর
(মহিমান্বিত)
মক্কা
৯৭
২৬
সূরা আশ সামস
(সূর্য)
১৫
মক্কা
৯১
২৭
সূরা আল বুরুজ
(নক্ষত্র-পুঞ্জ)
২২
মক্কা
৮৫
28
সূরা আততিন
(ডুমুর)
মক্কা
৯৫
২৯
সূরা কুরাইশ
(কুরাইশ গোত্র)
মক্কা
১০৬
৩০
সূরা আল কারিয়া
(মহাসংকট)
১১
মক্কা
১০১
৩১
সূরা আল কিয়ামা
(পুনরুত্থান)
৪০
মক্কা
৭৫
৩২
সূরা আল হুমাজাহ
(পরনিন্দাকারী)
মক্কা
১০৪
৩৩
সূরা আল মুরসালাত
(প্রেরিত পুরুষগন)
৫০
মক্কা
৭৭
৩৪
সূরা ক্বাফ ( আরবি বর্ণ ক্বাফ)
৪৫
মক্কা
৫০
৩৫
সূরা আল বালাদ
(নগর)
২০
মক্কা
৯০
৩৬
সূরা আত তারিক
( রাতের আগুন্তুক)
১৭
মক্কা
৮৬
৩৭
সূরা আল কামার
(চন্দ্র)
৫৫
মক্কা
৫৪
৩৮
সূরা ছোয়াদ
( আরবি বর্ণ ছোয়াদ )
৮৮
মক্কা
৩৮
৩৯
সূরা আল আরাফ
( উচু স্থান সমূহ)
২০৬
মক্কা
৪০
সূরা আল জ্বীন
(জ্বীন সম্প্রদায়)
২৮
মক্কা
৭২
৪১
সূরা ইয়াসিন
(ইয়াসিন)
৮৩
মক্কা
৩৬
৪২
সূরা আল ফোরকান
(সত্যমিথ্যা পার্থক্য
নির্ণয়কারি গ্রন্থ)
৭৭
মক্কা
২৫
৪৩
সূরা আলফাতির
(আদি স্রষ্টা)
৪৫
মক্কা
৩৫
৪৪
সূরা মরিয়ম
(ধোঁয়া)
৯৮
মক্কা
১৯
৪৫
সূরা ত্বোয়া হা
(ত্বোয়া হা)
১৩৫
মক্কা
২০
৪৬
সূরা আল ওয়াকিয়া
(নিশ্চিত ঘটনা)
৯৬
মক্কা
৫৬
৪৭
সূরা আশ শুয়ারা
(কবিগন)
২২৭
মক্কা
২৬
৪৮
সূরা আন নামল
(পিপীলিকা)
৯৩
মক্কা
২৭
৪৯
সূরা আল কাসাস
(কাহিনী)
৮৮
মক্কা
২৮
৫০
সূরা আল ইশরা/
বনী ইসরাইল
(বেহেশত/ ইসরাইলের বংশধর)
১১১
মক্কা
১৭
৫১
সূরা ইউনুস
(নবী ইউনুস)
১০৯
মক্কা
১০
৫২
সূরা হুদ
(নবী হুদ)
১২৩
মক্কা
১১
৫৩
সূরা ইউসুফ
(নবী ইউসুফ)
১১১
মক্কা
১২
৫৪
সূরা আল হিজর
(পাথুরে পাহাড়)
৯৯
মক্কা
১৫
৫৫
সূরা আল আনাম
(গৃহপালিত পশু)
১৬৫
মক্কা
৫৬
সূরা আস সাফফাত
(সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো)
১৮২
মক্কা
৩৭
৫৭
সূরা লোকমান
(একজন জ্ঞানী ব্যক্তি)
৩৪
মক্কা
৩১
৫৮
সূরা সাবা
(রানী সাবা)
৫৪
মক্কা
৩৪
৫৯
সূরা আয জুমার
(দলবদ্ধ জনতা)
৭৫
মক্কা
৩৯
৬০
সূরা আল গাফির/
আল মু’মিন
(বিশ্বাসী)
৮৫
মক্কা
৪০
৬১
সূরা আল ফুসিলাত/ হা মিম সেজদা
(সুস্পষ্ট বিবরণ)
৫৪
মক্কা
৪১
৬২
সূরা আস শুরা
(পরামর্শ)
৫৩
মক্কা
৪২
৬৩
সূরা আজ জুখরুপ (সোনাদানা)
৮৯
মক্কা
৪৩
৬৪
সূরা আদ দোখান (ধোঁয়া)
৫৯
মক্কা
৪৪
৬৫
সূরা আল জাসিয়াহ (নতজানু)
৩৭
মক্কা
৪৫
৬৬
সূরা আল আহকাফ (বালুর পাহাড়)
৩৫
মক্কা
৪৬
৬৭
সূরা আদ ধারিয়াত/ আয-যারিয়াত (বিক্ষেপকারী বাতাস)
৬০
মক্কা
৫১
৬৮
সূরা আল গাশিয়াহ (বিহবলকর ঘটনা)
২৬
মক্কা
৮৮
৬৯
সূরা আল কাফ (আরবি বর্ণ কাফ)
১১০
মক্কা
১৮
৭০
সূরা আন নাহল (মৌমাছি)
১২৮
মক্কা
১৬
৭১
সূরা নুহ (নবী নূহ)
২৮
মক্কা
৭১
৭২
সূরা ইব্রাহিম (নবী ইব্রাহিম)
৫২
মক্কা
১৪
৭৩
সূরা আল আম্বিয়া (নবীগণ)
১১২
মক্কা
২১
৭৪
সূরা আল মুমিনুন (মুমিনগণ)
১১৮
মক্কা
২৩
৭৫
সূরা আস সেজদা (সিজদাহ)
৩০
মক্কা
৩২
৭৬
সূরা আত তুর (পাহাড়)
৪৯
মক্কা
৫২
৭৭
সূরা আল মুলক (সার্বভৌম কর্তৃত্ত)
৩০
মক্কা
৬৭
৭৮
সূরা আল হাক্কা (নিশ্চিত সত্য)
৫২
মক্কা
৬৯
৭৯
সূরা আল মাআরিজ ( উন্নয়নের সোপান)
৪৪
মক্কা
৭০
৮০
সূরা আন নাবা
(মহাসংবাদ)
৪০
মক্কা
৭৮
৮১
সূরা আন নাজিয়াত
(প্রচেষ্টাকারী)
৪৬
মক্কা
৭৯
৮২
সূরা আল ইনফিতর
(বিদীর্ণ করা)
১৯
মক্কা
৮২
৮৩
সূরা আল ইনশিকাক
(খন্ড-বিখন্ডকরন)
২৫
মক্কা
৮৪
৮৪
সূরা আর রুম
(রোমানজাতি)
৬০
মক্কা
৩০
৮৫
সূরা আনকাবুত
(মাকড়সা)
৬৯
মক্কা
২৯
৮৬
সূরা আল মুতাফফিফিন
(প্রতারণা করা)
৩৬
মক্কা
৮৩
৮৭
সূরা আল বাকারা
(বকনা-বাছুর)
২৮৬
মদিনা
৮৮
সূরা আল আনফাল
(গনিমতের মাল)
৭৫
মদিনা
৮৯
সূরা আল ইমরান
(ইমরানের পরিবার)
২০০
মদিনা
৯০
সূরা আল আজহাব
(জোট)
৭৩
মদিনা
৩৩
৯১
সূরা আল মুমতাহিনা
(নারী যাকে পরীক্ষা করা হবে)
১৩
মদিনা
৬০
৯২
সূরা আন নিসা
(নারী)
১৭৬
মদিনা
৯৩
সূরা যিলযাল
(ভুমিকম্প)
মদিনা
৯৯
৯৪
সূরা আল হাদিদ
(লোহা)
২৯
মদিনা
৫৭
৯৫
সূরা মোহাম্মদ
( নবী মোহাম্মদ)
৩৮
মদিনা
৪৭
৯৬
সূরা আর রাদ
(বজ্রনাদ)
৪৩
মদিনা
১৩
৯৭
সূরা আল রাহমান
(পরম করুনাময়)
৭৮
মদিনা
৫৫
৯৮
সূরা আল ইনসান/আদ দাহর
(সময়)
৩১
মদিনা
৭৬
৯৯
সূরা তালাক
(তালাক)
১২
মদিনা
৬৫
১০০
সূরা বাইনাহ
(সুস্পষ্ট প্রমাণ)
মদিনা
৯৮
১০১
সূরা আল হাশর
(সমাবেশ)
২৪
মদিনা
৫৯
১০২
সূরা আন নুর
(আলো)
৬৪
মদিনা
২৪
১০৩
সূরা আল হাজ্জ
(হজ্ব)
৭৮
মদিনা
২২
১০৪
সূরা আলমুনাফিকুন
(কপট বিশ্বাসীগন)
১১
মদিনা
৬৩
১০৫
সূরা আল মুযাদিলা
(অনুযোগকারিনী)
২২
মদিনা
৫৮
১০৬
সূরা আল হুজুরাত
(বাসগৃহ সমূহ)
১৮
মদিনা
৪৯
১০৭
সূরা আত তাহরিম
(নিষিদ্ধ করন)
১২
মদিনা
৬৬
১০৮
সূরা আত তাঘাবুন
(মোহ অপসারন)
১৮
মদিনা
৬৪
১০৯
সূরা আস সাফ
(সারিবন্দী সৈন্যদল)
১৪
মদিনা
৬১
১১০
সূরা আল যুমুয়া
(সম্মেলন/শুক্রবার)
১১
মদিনা
৬২
১১১
সূরা আল ফাথ
(মক্কা বিজয়)
২৯
মদিনা
৪৮
১১২
সূরা আল মায়েদা
(খাদ্য পরিবাশিত টেবিল)
১২০
মদিনা
১১৩
সূরা আত তওবা
(অনুশোচনা)
১২৯
মদিনা
১১৪
সূরা আল নাছর
(স্বর্গীয় সাহায্য)
মদিনা
১১০

হযরত নূহ আ: এর আসল নাম কি ছিল ? - প্রশ্ন : 200

হযরত নূহ (আঃ)

হযরত নূহ (আঃ) এর প্রকৃত নামের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আবদুল গাফফার। কেউ কেউ বলেছেন, ‘ইয়াশকুর’। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৫, জালালাইন শরীফের হাশিয়াঃ পৃষ্ঠাঃ ২৮৮)
আবার কেউ বলেছেন, তাঁর প্রকৃত নাম ছিল আবদুল জব্বার। (হায়াতুল হায়ওয়ানঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১২)
কেউ কেউ বলেছেন, ইদ্রীস ছিল তাঁর নাম। (হায়াতে আদম (আঃ)‍ঃ পৃষ্ঠাঃ ৭৪)
‘নূহ’ শব্দের অর্থ হলো ক্রন্দন। তিনি যেহেতু তাঁর উম্মতের গুনাহের জন্য অধিকতর ক্রন্দন করতেন, তাই তাঁর উপাধি হয়ে যায় ‘নুহ’। (হায়াতুল হায়ওয়ানঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ১২)
আর এজন্যও তাঁর উপাধি নূহ হয় যে, তিনি তাঁর নফসের উপর ক্রন্দন করতেন। (রূহুল মাআনী)
এর কারণ ছিল, একদা তিনি চর্মরোগে আক্রান্ত একটি কুকুরের নিকট দিয়ে পথ চলছিলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, কুকুরটি কত কুৎসিত! তখন আল্লাহ তা’আলা হযরত নূহ (আঃ) এর নিকট ওহী প্রেরণ করলেন যে, তুমি কি আমাকে দোষারোপ করছো, না আমার সৃষ্ট কুকুরকে দোষারোপ করছো? তুমি কি এর চেয়ে উত্তম কিছু সৃষ্টি করতে সক্ষম? হযরত নূহ (আঃ) তাঁর এই ভুলের জন্য সর্বদা ক্রন্দন করতেন। (সাবীঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
হযরত নূহ (আঃ) এর সর্বমোট বয়স হয়েছিল এক হাজার পঞ্চাশ বছর। তাঁর নবুওয়ত প্রাপ্তির বয়স সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তিনি পঞ্চাশ বছর বয়সে নবুওয়ত লাভ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, বায়ান্ন বছর, আবার কেউ বলেছেন একশত বছর। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়ত প্রাপ্তির একটি উক্তিও রয়েছে। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৫)
আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাইল (আঃ) কে হযরত নূহ (আঃ) এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। তিনি হযরত নূহ (আঃ) কে জাহাজ বানানোর নিয়ম-পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন। এই জাহাজ দুই বছরে তৈরী করা হয়েছিল। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৬)
হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজের দৈর্ঘ্য ছিল তিনশ’ হাত, প্রস্থ ছিল পঞ্চাশ হাত এবং উচ্চতা ছিল ত্রিশ হাত। জাহাজটি ছিল তিনতলা বিশিষ্ট। নীচের তলায় ছিল হিংস জন্তু ও পোকা মাকড়। ‍দ্বিতীয় তলায় ‍ছিল চতুষ্পদ জন্তু, গরু মহিষ ইত্যাদি এবং তৃতীয় ও উপরের তলায় ছিল মানুষ। (জালালাইনের হাশিয়া, জামাল)
কেউ কেউ জাহাজটির দৈর্ঘ্য ত্রিশ হাত বলেও বর্ণনা করেছেন। হাতের দ্বারা তারা কাঁধ পর্যন্ত পুরা হাতকে গণ্য করেছেন। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ১১৬)
কেউ কেউ বলেছেন এই জাহাজে লোকের সংখ্যা ছিল আশি জন। যার অর্ধেক পুরুষ আর অর্ধেক নারী ছিল। কেউ কেউ বলেছেন নারী পুরুষ মিলে সত্তর জন ছিল। (সাবীঃ খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)
কেউ কেউ বলেছেন নয়জন। তিনজন হযরত নূহ (আঃ) এর সন্তানদের মধ্য হতে অর্থাৎ হাম, সাম ও ইয়াফেস। এতদ্ব্যতীত ‍আরো ছয়জন। (সাবীঃ খন্ডঃ ৩, পৃষ্ঠাঃ ২৩৩)

হজ্জ্বের জন্য ছবি তোলার মাসআলাহ - প্রশ্ন : ১৯৯ :

হজ্ব করতে ছবি তুলতে হয় যা হারাম। তাই বলে কি হজ্ব করব না?;
═════════ ❖ ═════════
 সুওয়াল :
হজ্ব করা ফরজ।কিন্তু ছবি তোলা হারাম । এখন হজ্ব করতে গেলে ছবি লাগবে। ছবি তোলা হারাম । আবার ভন্ড পীর রাজারবাগী বলে হজ করতে গিয়া হারাম ছবি তুলে গুনাহ করব নাকি। সমাধান চাই এবং এই ক্ষেত্রে যে ছবি তোলা যায়েজ হাদীছের আলোকে জানতে চাই।
 জাওয়াব;
অহেতুক প্রাণীর ছবি আকা ও তোলা উভয়ই হারাম। এতে কোন সন্দেহ নেই। কুরআন ও হাদীসে আলোকে তা দিবালোকের ন্যায় পরিস্কার।
কিন্তু কুরআন নির্ধারিত একটি মূলনীতি হল, তীব্র প্রয়োজন হারামকে সাময়িক হালাল করে দেয়।
🔹কুরআনে ইরশাদ হচ্ছেঃ
وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ ۗ [٦:١١٩
যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন;কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল,যখন তোমরা নিরূপায় হয়ে যাও। [সূরা আনআমঃ ১১৯]
মৃত জীব, রক্ত, শুকরের গোস্ত এবং গাইরুল্লাহ নামে জবাইকৃত পশু হারাম হওয়া সত্বেও তীব্র প্রয়োজনের সময় তা ভক্ষণ করার অনুমতি প্রদান করে ইরশাদ হচ্ছেঃ
إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٢:١٧٣]
তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন,মৃত জীব,রক্ত,শুকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যাতীত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘনকারী না হয়,তার জন্য কোন পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। [সূরা বাকারা-১৭৩]
🔹আরেক আয়াতে কারীমায় এসেছেঃ
قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٦:١٤٥]
আপনি বলে দিনঃ যা কিছু বিধান ওহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে,তন্মধ্যে আমি কোন হারাম খাদ্য পাই না কোন ভক্ষণকারীর জন্যে,যা সে ভক্ষণ করে;কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ; যবেহ করা জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়। অতপর যে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে এমতাবস্থায় যে অবাধ্যতা করে না এবং সীমালঙ্গন করে না, নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়ালু। [সূরা আনআম-১৪৫]
🔹উপরোক্ত আয়াতে কারীমা পরিস্কার হারাম বস্তুও তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে সাময়িক হালাল হবার কথা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় প্রকাশ করছে।
যা আমাদের একটি মূলনীতি শিক্ষা দিচ্ছে যে, তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে হারাম বস্তুও সাময়িকভাবে জায়েজ হয়ে যায়।
🔹ছবি আঁকা ও তোলা উভয় হারাম। হাদীসের মাঝে এ সংক্রান্ত অনেক ভয়ানক শাস্তিমূলক নির্দেশনা এসেছে। যেমনঃ
عبد الله بن عمر رضي الله عنهما أخبره : أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال ( إن الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيامة يقال لهم أحيوا ما خلقتم
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে লোকেরা ছবি আঁকে,কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। আর তাদের বলা হবে যে, যা তোমরা বানিয়েছো তাতে প্রাণ দাও। {তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৬৯৪১, সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৬০৭,৭১১৯, ৫৬১২,৫৬১৬,৭১১৮,সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৫৬৫৭,সহীহ ইবনে হিব্বান,হাদীস নং-৫৮৪৫, }
عبد الله قال : سمعت النبي صلى الله عليه و سلم يقول ( إن أشد الناس عذابا عند الله يوم القيامة المصورون
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে,কিয়ামতের দিন বেশি কঠিন শাস্তি হবে ছবি অংকনকারীদের। {তাহাবী শরীফ,হাদীস নং-৬৪৩২,সহীহ বুখারী,হাদীস নং-৫৬০৬,সহীহ মুসলিম,হাদীস নং-৫৬৫৯}
🔹অপরদিকে প্রতিটি সামর্থবান ব্যক্তির জন্য হজ্ব করা ফরজ। সামর্থ সত্বেও হজ্ব না করলে উক্ত ব্যক্তির বিষয়ে কঠোর ধমকি এসেছে হাদীসের মাঝে। যেমন-
আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
يقول الله عز وجل : إن عبدا صححت له جسمه، ووسعت عليه في المعيشة تمضي عليه خمسة أعوام لا يفد إلى لمحروم.
আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিযিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহের হজ্বের উদ্দেশ্যেআগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।-সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৯৫; মুসনাদে আবুইয়ালা, হাদীস : ১০৩১; তবারানী, হাদীস : ৪৯০; সুনানে কুবরা বায়হাকী ৫/২৬২; মাজমাউযযাওয়াইদ, হাদীস : ৫২৫৯।
🔹শুধু তাই নয়, একসময় বায়তুল্লাহ উঠিয়ে নেয়া হলে মানুষ হজ্ব করতে পারবে না এই আশঙ্কার কারণেও আল্লাহর রাসূল উম্মতকে তাড়াতাড়ি হজ্ব করার হুকুম করেছেন। ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
استمتعوا بهذا البيت فقد هدم مرتين ويرفع في الثالثة.
তোমরা হজ্ব ও উমরার মাধ্যমে এই (বায়তুল্লাহ) গৃহের উপকার গ্রহণ কর। কেননা তা ইতিপূর্বে দু’বার ধ্বংস হয়েছে। তৃতীয়বারের পর উঠিয়ে নেওয়া হবে।-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৬; সহীহইবনে হিববান, হাদীস : ৬৭১৮; মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৭২; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ১৬৫২
🔹হজ্ব করার শক্তি-সামর্থ্য ও অর্থ বিত্ত থাকার পরও যে ব্যক্তি হজ্ব করে না তার সম্পর্কে হাদীস শরীফে কঠোর হুমকি প্রদান করা হয়েছে। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-
من أطاق الحج فلم يحج فسواء عليه مات يهوديا أو نصرانيا.
যে ব্যক্তি হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৭৮৬]
🔹এখন এক দিকে হজ্বের সামর্থ থাকা অবস্থায় হজ্ব না করলে ভয়ানক শাস্তির হুমকি। অপরদিকে ছবি তোলার অপরাধের শাস্তি। যখন দু’টি বিষয় একসাথে হয়ে গেল। তখন কুরআনে বর্ণিত মূলনীতি “তীব্র প্রয়োজন হারাম বস্তুকে সাময়িক হালাল করে দেয়” হিসেবে উলামাগণ বলেন, হজ্বের ফরজ আদায় করতে হারাম ফটো তোলা সাময়িক বৈধতা পাবে।
কাজেই "ছবি তোলা গোনাহ, তাই হজ্ব করব না" এ কথা বলা একটি অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়। শরীয়ত বুঝতে হবে সকল বিধানগুলোকে সামনে রেখে।
একটি বিধান নয়, সকল বিধানকে সামনে রেখেই শরীয়তের বিধানাবলীর উপর আমল করতে হবে। তাই ছবি তোলার অজুহাতে হজ্ব বর্জন করা কিছুতেই বৈধ হবে না।
👉👉(আমাদের পোস্টগুলো নিয়মিত পেতে Following অপশনে গিয়ে এখনি See First করে রাখুন)
═════════════════════
✓দ্বীনী এ পোস্টকে শেয়ার করে ইসলামের আলো পৌঁছে দিন প্রিয়জনদের কাছে।
✓দ্বীনী হিদায়াতের সমুজ্জ্বল আলোকরশ্মিতে আলোকিত হোক মুমিনদের হৃদয়।
✓মাসিক আদর্শ নারীর সাথেই থাকুন
═════════════════════
#আদর্শ_মাসআলা
#মাসিকআদর্শনারী

ইসলামে সালাম দেওয়ার সঠিক নিয়ম - প্রশ্ন : ১৯৮

ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবরা পরস্পর
সাক্ষাৎ হলে ‘হাইয়াকাল্লাহ’ বা
‘বারাকাল্লাহ’প্রভৃতি সম্ভাষণে সালাম করত।
ইসলাম এসে সালামের পদ্ধতি পরিবর্তন করে
‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন
করে; যার অর্থ তুমি সর্বপ্রকার কষ্ট ও
বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো।
ইবনে আরাবি (রহ:) আহকামুল কুরআন নামে
গ্রন্থে লিখেন, ‘সালাম’ শব্দটি আল্লাহর নাম
গুলোর
মধ্যে অন্যতম।’পৃথিবীতে অন্যান্য সভ্যসমাজ
পরস্পর সাক্ষাৎকালে ভালোবাসা ও
সম্প্রীতি প্রকাশ করে যেসব বাক্য ব্যবহার
করে থাকেন
তাদের সেই বাক্যের তুলনায় ইসলামের
সালাম
হাজারো গুণে উত্তম। কেননা তাদের সেসব
বাক্যে কেবল প্রীতি লেনদেন হয়,আর
ইসলামের সালাম ও তার জওয়াবে
প্রীতিবিনিময়ের
সাথে সাথে দুয়াও করা হয়।
এ জন্য মহান আল্লাহ সালামের গুরুত্ব বর্ণনা




করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
"সালামকারী সালামের মাধ্যমে যেরূপ শব্দ
ব্যবহার করবে তার চেয়ে উত্তমরূপক্ষে তুমি
জওয়াব দেবে অথবা অনুরূপ শব্দই বলে
দেবে।’ (সূরা নিসা : ৮৬ আয়াত)।
সুতরাং এর দ্বারা বোঝা গেল যে,কোনো
ব্যক্তি সালাম দিলে তার জওয়াব দেয়া
ওয়াজিব, আর তার সাথে রহমত বরকত ইত্যাদি
শব্দ বলে উত্তর দেয়া মুস্তাহাব।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
এর দরবারে এক লোক এসে ‘আসসালামু
আলাইকুম’ বলে বসে পড়ল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে দশটি নেকি
পেয়েছে।
তারপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম




ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে বসে গেল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে বিশটি নেকি
পেয়েছে।
অতঃপর আরেকজন লোক এসে ‘আসালামু
আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’
পর্যন্ত বলে বসে গেল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে ৩০ নেকি
পেয়েছে ; আবু
দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৫,তিরমিজি ২৬৯০।
হজরত মায়াজ ইবনে আনাস রা: থেকে বর্ণিত
চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে ওয়া বারাকাতুহুর
শেষে ‘ওয়া মাগফিরাতুহ’ বলে বসে গেলেন,
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বলেন,সে ৪০টি নেকি
পেয়েছে।
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত,নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেন,‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর
পরস্পর
মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে
না আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব
যা দিয়ে তোমাদের পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি
পাবে?
তা হচ্ছে পরস্পর সাক্ষাৎ হলে সালামবিনিময়
করা এবং সালামের ব্যাপক প্রসার করা।
(মুসলিম-৫৪) (আবু দাউদ-৫১৯৩)
তিরমিজি-২৬৮৯)।
যে সালামের এত গুরুত্ব ও ফজিলত, তা আজ
আমাদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
আমরা অনেকেই আসসালামু আলাইকুম বলার

পরিবর্তে সামু আলাইকুম বলি। আর অনেকে
তো সালাম দিতেই চায় না। মনে করে আমি
তার
চেয়ে বড় ও সম্মানিত। আমি তাকে সালাম
দেব কেন? বরং সে-ই আমাকে সালাম দেবে।
হায় আফসোস!
যেখানে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- নিজেই ছোট বড় সবাইকে
সালাম দিতেন,সেখানে আমাদের একি
দৃষ্টিভঙ্গি?
আমরা কি তার চেয়ে বেশি সম্মানিত হয়ে
গিয়েছি?এ আমাদের কেমন চারিত্রিক
অবক্ষয়। আমরা যদি তাঁর প্রকৃত অনুসারী হয়ে


থাকি তাহলে আমাদের উচিত তাঁর আদর্শকে
আঁকড়ে ধরা,ছোট বড়, ধনী-দরিদ্র, পরিচিত-
অপরিচিত সবাইকেই সালাম দেয়া।
((প্রিয় পাঠক, এখানে সালামের ব্যাপারে
আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।
আমার
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যেকোনো কারণবশত
তার সাথে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়।
যার
কারণে সে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়।
আমি নিজে এবং অন্যদের নিয়ে তার রাগ
ভাঙার
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তখন আমি ভাবতে
লাগলাম কী করে তার রাগ ভাঙানো যায়।
তখন আমার স্মরণ হলো রাসূল সা:-এর সেই
বাণী সালাম মহব্বত সৃষ্টি করে। অতঃপর
কোনো একদিন মাগরিবের পূর্বক্ষণে তার
সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম
দিলাম।
সালাম শুনে মুচকি হেসে সে তার উত্তর
দিলো। এভাবে সালাম দেয়া-নেয়ায় আস্তে
আস্তে তার
সাথে আমার আগের চেয়েও সম্পুর্ন গড়ে
ওঠে। তখন মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর বাণী



ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-আদর্শেই রয়েছে আমাদের সব
সমস্যারসমাধান। আসলে সালাম এমন একটি
আমল যার প্রভাব মৃত্যুর পরেও বাকি থাকে।
colected))
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-বলেন, হে বৎস, তুমি যখন নিজের
ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে।কেননা
এটি তোমার জন্য ও ঘরে অবস্থানকারীদের
জন্য বরকতের কারণ হবে।
সুতরাং আমাদের অধিক পরিমাণ
সালাম বিনিময় করা উচিত।
===================================
সালাম আরবী শব্দ। এর অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোআ, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি।



সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আদমকে (আ.) সালামের শিক্ষা দেন। হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।

আসসালামু আলাইকুম মানে আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেওয়া অবশ্যকরণীয়। হাদিসে রয়েছে, একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালামের ফজিলত অনেক। প্রথমত সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর (ওয়ালাইকুমুস সালাম) দেওয়া সুন্নত। মেশকাতে বর্নিত আছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে।

এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে। সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেন, যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।


বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৩
=========================================

ইসলাম ডেস্ক: সালাম আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকেই বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে থাকেন। একটু সতর্ক হলেই এসব ভুল এড়িয়ে সুন্দরভাবে সালাম আদান-প্রদান করা সম্ভব। কিন্তু আমরা অনেকেই এসব ভুলকে গুরুত্ব দিই না। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ভুলের জন্য সালাম দিয়ে সওয়াব অর্জনের বিপরীতে আমাদের গুনাহ হয়।
ফলে সঠিকভাবে সালাম দেওয়ার জন্য ভুলগুলো জেনে তা থেকে আমাদের মুক্ত থাকা উচিত।
১. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া: এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না।
২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া: এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।
৩. অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া: পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।


৪. সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু করা: সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম: আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।

৬. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম: সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।
৭. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা: কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।
৮. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। কতক্ষণ বসার পর সালাম করা অনুচিত।


৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি: কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম... বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম... বলেছেন।  এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।
১০. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা: ফোন বা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিয়ে তারপর অন্য কথা বলবেন। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবেন। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)
১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম: অনেক জায়গায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেন অনেকে। এছাড়া বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন। বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দাও। না দিলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের প্রথা বর্জন করা উচিত।


১২. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বক্তা বিভিন্ন কথা বলার পর সালাম দেন। যেমন তিনি বলেন, মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথিরা... সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম বলা ইসলামী রীতির পরিপন্থি। শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই  সালাম দেওয়া নিয়ম।-প্রিয়.কম
লিখেছেন: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান
২২ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
===================================================

সালাম কখন দেয়া যাবে এবং কখন দেয়া যাবে না?




জিজ্ঞাসা–২০৪: হুজুর, আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে খুব মহব্বত করি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সালাম দেওয়া সঠিক নিয়ম অর্থাৎ কোন সময় সালাম দেয়া যাবে এবং কোন সময় সালাম দেয়া যাবে না? জানালে উপকৃত হব।–রেজাউলkaiser.razaul@gmail.com
জবাব:  وعليكم السلام ورحمة الله আমাকে যতজন মহব্বত করেন, সকলের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে এই দোয়া করি, তিনি যেন এই মহব্বতকে তাঁর মহব্বত লাভের উসিলা বানান। আমীন।
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وجبت محبتي للمحتابين فيّ ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين فيّ
আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। (আহমদ:২১৭১৭)
সম্মানিত দীনি ভাই, খোশ মেজাজে সালাম দেওয়া উত্তম। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أو لا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم.
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। (মুসলিম)
তবে সকল ইবাদতের মত সালামেরও কিছু আদব-কায়দা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র এমন আছে যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরূহ। সে ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গায্যি রহ. নিম্নোক্ত কাব্যকারে উল্লেখ করেছেন।

سلامك مكروه على من ستسمع
ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع
مصل وتال ذاكر ومحدث
خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع
مكرر فقه جالس لقضائه
ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا
مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس
كذا الأجنبيات الفتيات أمنع
ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم
ومن هو مع أهل له يتمتع
ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة
ومن هو في حال التغوط أشنع
ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا
وتعلم منه أنه ليس يمنع
كذلك أستاذ مغن مطير
فهذا ختام والزيادة تنفع

অর্থাৎ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সালাম দেয়া মাকরূহ। এ ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নত ও বৈধ।
১) নামাজ পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
২) কোরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৩) জিকির ও মোরাকাবায়রত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৪) খাবার খাওয়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৫) হাদিস-ফিকাহ বা অন্যান্য তালীমি মজলিসে মশগুল এমন অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৬) ওয়াজ ও নসীহত শুনা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।


৭) বিচারক বিচার কার্যে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৮) আযানরত, ইকামতরত কিংবা পাঠদানরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৯) অপরিচিত যুবতী নারী [যাদের সালাম দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে] তাদের সালাম দেওয়া কোনক্রমেই উচিত নয়।
১০) যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত (অন্য খেলায়) মত্ত লোকদের সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১১) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১২) অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১৩) ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় অথবা সতরবিহীন অবস্থায় থাকলে ওই ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী

===============================================

ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।' সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।' (মুসলিম : ৫৪)
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, 'খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।' (বোখারি : ১২)
সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম', রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'দশ নেকি।' অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'বিশ নেকি।' অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'ত্রিশ নেকি।' (তিরমিজি : ২৬৮৯)
সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম।
উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলবে। কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু' বলবে।
চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)
সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২)
উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে। (বুখারি : ৬২৩১)
উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না। হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)
সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫) যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে 'আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা' বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা 'ওয়ালাইকা' বা ওয়ালাইকুম' বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।
তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯)
মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত। আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯)
কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)

যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪)
লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার



ইসলামের যাকাত বিধান - ২য় খন্ড - আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী




ইসলামের যাকাত বিধান - ২য় খন্ড  - আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

বইটি এখাান থেকে ডাউনলোড করুন । 

ইসলামের যাকাত বিধান - ১ম খন্ড - আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

=====================================
=====================================




ইসলামের যাকাত বিধান - ১ম খন্ড - আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী

বইটি ডাউনলোড করুন। 


দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের দায়িত্ব - শামসুন্নাহার নিজামী



দ্বীন প্রতিষ্ঠায় মহিলাদের দায়িত্ব - শামসুন্নাহার নিজামী

বইটি ডাউনলোড করুন। 

সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকা - শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল-উছা্য়মীন - অনুবাদ: মো: নুরুল ইসলাম



সমাজ সংস্কারে নারীর ভূমিকা - শায়খ মুহাম্মদ বিন ছালেহ আল-উছা্য়মীন - অনুবাদ: মো: নুরুল ইসলাম

বইটি ডাউনলোড করুন । 


পর্দা ও ইসলাম - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহ:



পর্দা ও ইসলাম - সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী রাহ:

গ্রন্থকারের আরজ

­­আজ চার বৎসর আগে পর্দা সম্পর্কে এক ধারাবাহিক প্রবন্ধ লিখিয়াছিলাম। ‘তর্জুমানূল কুরআন’ – এর কয়েকটি সংখ্যায় তাহা প্রকাশিত হইয়াছিল। তখন আলোচনার কয়েকটি দিক ইচ্ছা করিয়া বাদ দেওয়া হইয়াছিল; কোন কোন বিষয়কে অসম্পূর্ণ রাখিতে হইয়াছিল— কারন, গ্রন্থ রচনা তখন উদ্দেশ্য ছিল না; উদ্দেশ্য ছিল একটি প্রবন্ধ রচনা— সেই সকল বিষয়কে সন্নিবেশিত করিয়া প্রয়োজনীয় সংযোজন এবং বিশ্লেষণসহ বর্তমান গ্রন্থের রূপ দেওয়া হইয়াছে। আলোচ্য বিষয়, ইহা চূড়ান্ত এবং শেষ কথা এমন দাবী এখনও করা যায় না। কিন্তু সত্য সত্যই যাঁহারা বিষয়টি অনুধাবন করিতে আগ্রহী তাঁহারা ইহাতে অনেকাংশে তৃষ্ণা নিবৃত্তকারী তত্ত্ব-তথ্য এবং যুক্তি-প্রমাণ পাইবেন—অন্তত এতটুকু আশা আমি অবশ্যই করিব।
–তাওফীক আল্লাহরই হাতে; তাঁহারই কাছে সাহায্য চাই। আমিন।
২২, মুহাররাম ১৩৫১ হিজরী             -আবুল আ’লা

বইটি ডাউনলোড করুন।


ইসলামী জাগরণের তিন পথিকৃত




ইসলামী জাগরণের তিন পথিকৃত

বইটি ডাউনলোড করুন। 

আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৬ষ্ঠ খন্ড



আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৬ষ্ঠ খন্ড

বইটি ডাউনলোড করুন। 

আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৫ম খন্ড



আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৫ম খন্ড

বইটি ডাউনলোড করুন। 

আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৪র্থ খন্ড



আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৪র্থ খন্ড

বইটি ডাউনলোড করুন। 


আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৩য় খন্ড







আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ৩য় খন্ড

বইটি ডাউনলোড করুন । 

আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ২য় খন্ড




আসহাবে রাসূলের জীবনকথা - ২য় খন্ড

বইটি ডাউনলোড করুন। 

আসহাবে রাসুলের জীবন কথা - ১ম খন্ড



আসহাবে রাসুলের জীবন কথা - ১ম খন্ড

বইটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন । 




সীরাতে ইবনে হিশাম - [সাইয়িদুল মুরসালীনের (সা) প্রচীনতম জীবনীগ্রন্থ] - মূল : ইবনে হিশাম - অনুবাদ : আকরাম ফারুক




সীরাতে ইবনে হিশাম -  [সাইয়িদুল মুরসালীনের (সা) প্রচীনতম জীবনীগ্রন্থ] - মূল : ইবনে হিশাম -  অনুবাদ : আকরাম ফারুক

বইটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। 

Featured Post

প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ

আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে।  বিগত দিনের ...