ইসলাম-পূর্ব যুগে আরবরা পরস্পর
সাক্ষাৎ হলে ‘হাইয়াকাল্লাহ’ বা
‘বারাকাল্লাহ’প্রভৃতি সম্ভাষণে সালাম করত।
ইসলাম এসে সালামের পদ্ধতি পরিবর্তন করে
‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন
করে; যার অর্থ তুমি সর্বপ্রকার কষ্ট ও
বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো।
ইবনে আরাবি (রহ:) আহকামুল কুরআন নামে
গ্রন্থে লিখেন, ‘সালাম’ শব্দটি আল্লাহর নাম
গুলোর
মধ্যে অন্যতম।’পৃথিবীতে অন্যান্য সভ্যসমাজ
পরস্পর সাক্ষাৎকালে ভালোবাসা ও
সম্প্রীতি প্রকাশ করে যেসব বাক্য ব্যবহার
করে থাকেন
তাদের সেই বাক্যের তুলনায় ইসলামের
সালাম
হাজারো গুণে উত্তম। কেননা তাদের সেসব
বাক্যে কেবল প্রীতি লেনদেন হয়,আর
ইসলামের সালাম ও তার জওয়াবে
প্রীতিবিনিময়ের
সাথে সাথে দুয়াও করা হয়।
এ জন্য মহান আল্লাহ সালামের গুরুত্ব বর্ণনা
করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
"সালামকারী সালামের মাধ্যমে যেরূপ শব্দ
ব্যবহার করবে তার চেয়ে উত্তমরূপক্ষে তুমি
জওয়াব দেবে অথবা অনুরূপ শব্দই বলে
দেবে।’ (সূরা নিসা : ৮৬ আয়াত)।
সুতরাং এর দ্বারা বোঝা গেল যে,কোনো
ব্যক্তি সালাম দিলে তার জওয়াব দেয়া
ওয়াজিব, আর তার সাথে রহমত বরকত ইত্যাদি
শব্দ বলে উত্তর দেয়া মুস্তাহাব।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
এর দরবারে এক লোক এসে ‘আসসালামু
আলাইকুম’ বলে বসে পড়ল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে দশটি নেকি
পেয়েছে।
তারপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে বসে গেল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে বিশটি নেকি
পেয়েছে।
অতঃপর আরেকজন লোক এসে ‘আসালামু
আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’
পর্যন্ত বলে বসে গেল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে ৩০ নেকি
পেয়েছে ; আবু
দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৫,তিরমিজি ২৬৯০।
হজরত মায়াজ ইবনে আনাস রা: থেকে বর্ণিত
চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে ওয়া বারাকাতুহুর
শেষে ‘ওয়া মাগফিরাতুহ’ বলে বসে গেলেন,
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বলেন,সে ৪০টি নেকি
পেয়েছে।
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত,নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেন,‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর
পরস্পর
মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে
না আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব
যা দিয়ে তোমাদের পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি
পাবে?
তা হচ্ছে পরস্পর সাক্ষাৎ হলে সালামবিনিময়
করা এবং সালামের ব্যাপক প্রসার করা।
(মুসলিম-৫৪) (আবু দাউদ-৫১৯৩)
তিরমিজি-২৬৮৯)।
যে সালামের এত গুরুত্ব ও ফজিলত, তা আজ
আমাদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
আমরা অনেকেই আসসালামু আলাইকুম বলার
পরিবর্তে সামু আলাইকুম বলি। আর অনেকে
তো সালাম দিতেই চায় না। মনে করে আমি
তার
চেয়ে বড় ও সম্মানিত। আমি তাকে সালাম
দেব কেন? বরং সে-ই আমাকে সালাম দেবে।
হায় আফসোস!
যেখানে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- নিজেই ছোট বড় সবাইকে
সালাম দিতেন,সেখানে আমাদের একি
দৃষ্টিভঙ্গি?
আমরা কি তার চেয়ে বেশি সম্মানিত হয়ে
গিয়েছি?এ আমাদের কেমন চারিত্রিক
অবক্ষয়। আমরা যদি তাঁর প্রকৃত অনুসারী হয়ে
থাকি তাহলে আমাদের উচিত তাঁর আদর্শকে
আঁকড়ে ধরা,ছোট বড়, ধনী-দরিদ্র, পরিচিত-
অপরিচিত সবাইকেই সালাম দেয়া।
((প্রিয় পাঠক, এখানে সালামের ব্যাপারে
আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।
আমার
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যেকোনো কারণবশত
তার সাথে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়।
যার
কারণে সে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়।
আমি নিজে এবং অন্যদের নিয়ে তার রাগ
ভাঙার
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তখন আমি ভাবতে
লাগলাম কী করে তার রাগ ভাঙানো যায়।
তখন আমার স্মরণ হলো রাসূল সা:-এর সেই
বাণী সালাম মহব্বত সৃষ্টি করে। অতঃপর
কোনো একদিন মাগরিবের পূর্বক্ষণে তার
সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম
দিলাম।
সালাম শুনে মুচকি হেসে সে তার উত্তর
দিলো। এভাবে সালাম দেয়া-নেয়ায় আস্তে
আস্তে তার
সাথে আমার আগের চেয়েও সম্পুর্ন গড়ে
ওঠে। তখন মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর বাণী
ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-আদর্শেই রয়েছে আমাদের সব
সমস্যারসমাধান। আসলে সালাম এমন একটি
আমল যার প্রভাব মৃত্যুর পরেও বাকি থাকে।
colected))
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-বলেন, হে বৎস, তুমি যখন নিজের
ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে।কেননা
এটি তোমার জন্য ও ঘরে অবস্থানকারীদের
জন্য বরকতের কারণ হবে।
সুতরাং আমাদের অধিক পরিমাণ
সালাম বিনিময় করা উচিত।
সাক্ষাৎ হলে ‘হাইয়াকাল্লাহ’ বা
‘বারাকাল্লাহ’প্রভৃতি সম্ভাষণে সালাম করত।
ইসলাম এসে সালামের পদ্ধতি পরিবর্তন করে
‘আসসালামু আলাইকুম’ বলার রীতি প্রচলন
করে; যার অর্থ তুমি সর্বপ্রকার কষ্ট ও
বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকো।
ইবনে আরাবি (রহ:) আহকামুল কুরআন নামে
গ্রন্থে লিখেন, ‘সালাম’ শব্দটি আল্লাহর নাম
গুলোর
মধ্যে অন্যতম।’পৃথিবীতে অন্যান্য সভ্যসমাজ
পরস্পর সাক্ষাৎকালে ভালোবাসা ও
সম্প্রীতি প্রকাশ করে যেসব বাক্য ব্যবহার
করে থাকেন
তাদের সেই বাক্যের তুলনায় ইসলামের
সালাম
হাজারো গুণে উত্তম। কেননা তাদের সেসব
বাক্যে কেবল প্রীতি লেনদেন হয়,আর
ইসলামের সালাম ও তার জওয়াবে
প্রীতিবিনিময়ের
সাথে সাথে দুয়াও করা হয়।
এ জন্য মহান আল্লাহ সালামের গুরুত্ব বর্ণনা
করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন,
"সালামকারী সালামের মাধ্যমে যেরূপ শব্দ
ব্যবহার করবে তার চেয়ে উত্তমরূপক্ষে তুমি
জওয়াব দেবে অথবা অনুরূপ শব্দই বলে
দেবে।’ (সূরা নিসা : ৮৬ আয়াত)।
সুতরাং এর দ্বারা বোঝা গেল যে,কোনো
ব্যক্তি সালাম দিলে তার জওয়াব দেয়া
ওয়াজিব, আর তার সাথে রহমত বরকত ইত্যাদি
শব্দ বলে উত্তর দেয়া মুস্তাহাব।
ইমরান ইবনে হুসাইন (রা:) থেকে বর্ণিত
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
এর দরবারে এক লোক এসে ‘আসসালামু
আলাইকুম’ বলে বসে পড়ল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে দশটি নেকি
পেয়েছে।
তারপর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম
ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বলে বসে গেল।
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে বিশটি নেকি
পেয়েছে।
অতঃপর আরেকজন লোক এসে ‘আসালামু
আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’
পর্যন্ত বলে বসে গেল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বললেন,সে ৩০ নেকি
পেয়েছে ; আবু
দাউদ হাদিস নম্বর ৫১৯৫,তিরমিজি ২৬৯০।
হজরত মায়াজ ইবনে আনাস রা: থেকে বর্ণিত
চতুর্থ এক ব্যক্তি এসে ওয়া বারাকাতুহুর
শেষে ‘ওয়া মাগফিরাতুহ’ বলে বসে গেলেন,
হুজুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
তার উত্তর দিয়ে বলেন,সে ৪০টি নেকি
পেয়েছে।
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত,নবী করিম
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-
সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করতে
গিয়ে বলেন,‘তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর
পরস্পর
মহব্বত না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে
না আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব
যা দিয়ে তোমাদের পরস্পরে মহব্বত বৃদ্ধি
পাবে?
তা হচ্ছে পরস্পর সাক্ষাৎ হলে সালামবিনিময়
করা এবং সালামের ব্যাপক প্রসার করা।
(মুসলিম-৫৪) (আবু দাউদ-৫১৯৩)
তিরমিজি-২৬৮৯)।
যে সালামের এত গুরুত্ব ও ফজিলত, তা আজ
আমাদের কাছে ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে।
আমরা অনেকেই আসসালামু আলাইকুম বলার
পরিবর্তে সামু আলাইকুম বলি। আর অনেকে
তো সালাম দিতেই চায় না। মনে করে আমি
তার
চেয়ে বড় ও সম্মানিত। আমি তাকে সালাম
দেব কেন? বরং সে-ই আমাকে সালাম দেবে।
হায় আফসোস!
যেখানে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম)- নিজেই ছোট বড় সবাইকে
সালাম দিতেন,সেখানে আমাদের একি
দৃষ্টিভঙ্গি?
আমরা কি তার চেয়ে বেশি সম্মানিত হয়ে
গিয়েছি?এ আমাদের কেমন চারিত্রিক
অবক্ষয়। আমরা যদি তাঁর প্রকৃত অনুসারী হয়ে
থাকি তাহলে আমাদের উচিত তাঁর আদর্শকে
আঁকড়ে ধরা,ছোট বড়, ধনী-দরিদ্র, পরিচিত-
অপরিচিত সবাইকেই সালাম দেয়া।
((প্রিয় পাঠক, এখানে সালামের ব্যাপারে
আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি।
আমার
একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। যেকোনো কারণবশত
তার সাথে আমার একটু কথা কাটাকাটি হয়।
যার
কারণে সে আমার সাথে কথা বন্ধ করে দেয়।
আমি নিজে এবং অন্যদের নিয়ে তার রাগ
ভাঙার
চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই। তখন আমি ভাবতে
লাগলাম কী করে তার রাগ ভাঙানো যায়।
তখন আমার স্মরণ হলো রাসূল সা:-এর সেই
বাণী সালাম মহব্বত সৃষ্টি করে। অতঃপর
কোনো একদিন মাগরিবের পূর্বক্ষণে তার
সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তাকে সালাম
দিলাম।
সালাম শুনে মুচকি হেসে সে তার উত্তর
দিলো। এভাবে সালাম দেয়া-নেয়ায় আস্তে
আস্তে তার
সাথে আমার আগের চেয়েও সম্পুর্ন গড়ে
ওঠে। তখন মনে মনে ভাবলাম, আল্লাহর বাণী
ও তার রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-আদর্শেই রয়েছে আমাদের সব
সমস্যারসমাধান। আসলে সালাম এমন একটি
আমল যার প্রভাব মৃত্যুর পরেও বাকি থাকে।
colected))
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-বলেন, হে বৎস, তুমি যখন নিজের
ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে।কেননা
এটি তোমার জন্য ও ঘরে অবস্থানকারীদের
জন্য বরকতের কারণ হবে।
সুতরাং আমাদের অধিক পরিমাণ
সালাম বিনিময় করা উচিত।
===================================
সালাম আরবী শব্দ। এর অর্থ শান্তি, প্রশান্তি, কল্যাণ, দোআ, আরাম, আনন্দ ইত্যাদি।
সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আদমকে (আ.) সালামের শিক্ষা দেন। হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।
আসসালামু আলাইকুম মানে আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেওয়া অবশ্যকরণীয়। হাদিসে রয়েছে, একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালামের ফজিলত অনেক। প্রথমত সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর (ওয়ালাইকুমুস সালাম) দেওয়া সুন্নত। মেশকাতে বর্নিত আছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে।
এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে। সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৩
সালাম একটি সম্মানজনক অভ্যর্থনামূলক ইসলামী অভিবাদন। আল্লাহ তা’য়ালা সর্বপ্রথম আদমকে (আ.) সালামের শিক্ষা দেন। হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করার পর আল্লাহ তা’য়ালা তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।
আসসালামু আলাইকুম মানে আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
সালামের মাধ্যমে পরস্পরের জন্য শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে কথা বলার আগে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। আর এর উত্তর দেওয়া অবশ্যকরণীয়। হাদিসে রয়েছে, একজন মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের দেখা হলে কথা বার্তার আগে সালাম দিতে হবে। সালামের ফজিলত অনেক। প্রথমত সালাম দেওয়া ও সালামের উত্তর (ওয়ালাইকুমুস সালাম) দেওয়া সুন্নত। মেশকাতে বর্নিত আছে, একবার এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। তখন তিনি বললেন, লোকটির জন্য ১০টি নেকি লেখা হয়েছে।
এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জওয়াব দিয়ে বললেন, তার জন্য ২০টি নেকি লেখা হয়েছে। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন ওয়া বারাকাতুহু। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারও জওয়াব দিয়ে বললেন, লোকটির জন্য ৩০টি নেকি লেখা হয়েছে। সালামের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন দু’জন মুসলমানের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়, সালাম-মুসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করে তখন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার আগেই তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এছাড়া সালামের দ্বারা পরস্পরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়। অহঙ্কার থেকেও বেঁচে থাকা যায়। সর্বত্র সালামের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে একে অপরের মধ্যে ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের আমলের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৩
=========================================
ইসলাম ডেস্ক: সালাম আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকেই বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল করে থাকেন। একটু সতর্ক হলেই এসব ভুল এড়িয়ে সুন্দরভাবে সালাম আদান-প্রদান করা সম্ভব। কিন্তু আমরা অনেকেই এসব ভুলকে গুরুত্ব দিই না। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ভুলের জন্য সালাম দিয়ে সওয়াব অর্জনের বিপরীতে আমাদের গুনাহ হয়।
ফলে সঠিকভাবে সালাম দেওয়ার জন্য ভুলগুলো জেনে তা থেকে আমাদের মুক্ত থাকা উচিত।
১. অশুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দেওয়া: এটি মারাত্মক ভুল কাজ। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ হচ্ছে পূর্ণ সালাম। শুধু আসসালামু আলাইকুম বললেও চলবে। তবে উচ্চারণে ভুল করা যাবে না।
২. ছোটদের প্রতি বড়দের সালাম না দেওয়া: এটিও ভুল প্রচলন। বড় বা বয়স্ক মানুষ ছোটদের সালাম দিতে কোনো বাধা নেই। যেমন- শিক্ষক ছাত্রদের এবং বাবা-মা সন্তানদের সালাম দেবেন। আগে সালামকারী বেশি সওয়াব ও মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকেন।
৩. অপরিচিত কাউকে সালাম না দেওয়া: পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ এসেছে। তাই পরিচিত ও মুখ চিনে সালাম দেওয়া গর্হিত ও নিন্দিত কাজ।
৪. সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু করা: সালাম দেওয়ার সময় মাথা ও বুক ঝুঁকে নিচু হয়ে সালাম দেওয়া নিষেধ। অনেকে পদস্থ বা বড় কোনো ব্যক্তিকে সালাম দেওয়ার সময় এমন করে থাকে। হাদিসে এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
৫. সালামের উত্তর দিয়ে আবার সালাম: আপনাকে কেউ সালাম দিল, আপনি উত্তর দেওয়ার পর ওই সালামকারীকে আবার সালাম দিলেন। অনেকে এ কাজটি অজ্ঞতাবশত করে থাকেন। উত্তম হলো, কারো সালামের অপেক্ষা না করে নিজেই আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু কেউ আগে সালাম দিয়ে ফেললে তার সালামের উত্তর দেওয়াই নিয়ম। তাকে আবার সালাম দিতে হবে না।
৬. সালামের উত্তর না দিয়ে আবার সালাম: সালাম পাওয়ার পর উত্তর দেওয়াই বিধান। কিন্তু অনেকে সালাম দেওয়ার পর উত্তর না দিয়ে সালামদাতাকে আবার সালাম দেয়। এমনটি ঠিক নয়। দুজনের একজন সালাম দেবেন, অপরজন সালামের উত্তর দেবেন এটাই বিধান।
৭. সালাম দেওয়ার পর সালাম দিয়েছি বলা: কাউকে সালাম দেওয়ার পর সালাম না শুনলে বা উত্তর না-দিলে আমরা বলি, ‘আপনাকে সালাম দিয়েছি’। এভাবে বলা ঠিক নয়। তাকে আবার পূর্ণ সালাম দেওয়াই নিয়ম।
৮. কতক্ষণ বসার পর সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দেওয়া সুন্নত। কতক্ষণ বসার পর সালাম করা অনুচিত।
৯. সালাম পাঠানোর পদ্ধতি: কারো কাছে সালাম পাঠানোর দরকার হলে আমরা বলি, অমুককে গিয়ে আমার সালাম দেবেন/বলবেন। এভাবে বলা ঠিক নয়। নিয়ম হল এভাবে বলা, অমুককে আমার পক্ষ থেকে আসসালামু আলাইকুম... বলবেন। তেমনি, সালাম পৌঁছানোর পরও ‘অমুকে আপনাকে সালাম দিয়েছেন’ এ রকম না বলে বলা উচিত, অমুক আপনাকে আসসালামু আলাইকুম... বলেছেন। এক্ষেত্রে সালামের উত্তরদাতাও কেবল প্রেরককে উত্তর দেবেন না। বরং প্রেরক ও বাহক উভয়কে দোয়ায় শরিক করবেন। তিনি এভাবে উত্তর দেবেন, ওয়া আলাইকা ওয়া আলাইহিস সালাম।
১০. ফোনে বা সাক্ষাতে সালামের আগে হ্যালো বা অন্যকিছু বলা: ফোন বা মোবাইল ফোনে সালাম দেওয়ার আগে হ্যালো বা অন্য কোনো কথা বলা ঠিক নয়। আগে সালাম দিয়ে তারপর অন্য কথা বলবেন। হ্যালো বলার দরকার হলে সালাম দেওয়ার পর বলবেন। ফোন ছাড়া সাক্ষাতের বেলায়ও কথাবার্তার আগেই সালাম দেওয়াই সুন্নত। কেননা রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কথাবার্তা বলার আগে সালাম দিতে হয়। (তিরমিযি, হাদিস নং- ২৬৯৯)
১১. অনুষ্ঠান শেষে বা বিয়ের আকদ হওয়ার পর সালাম: অনেক জায়গায় দেখা গেছে, কোনো অনুষ্ঠান- বিশেষত দোয়া বা এ ধরনের কোনো মজলিস শেষ হওয়ার পর সালাম দেন অনেকে। এছাড়া বিয়ের আকদ হওয়ার পর বর উপস্থিত সবাইকে সালাম দেন। বর সালাম না দিতে চাইলে বা ভুলে গেলে অন্যরা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সালাম দাও। না দিলে খারাপ এবং বেয়াদবি মনে করা হয়। এসব কুসংস্কার ও ভুল প্রচলন। সালাম হবে সাক্ষাতের সময়। সুতরাং কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার পর কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবেন। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষে সালামের প্রথা বর্জন করা উচিত।
১২. বক্তব্যে প্রথমেই সালাম দেওয়া: সাক্ষাতের শুরুতেই সালাম দিয়ে কথাবার্তা শুরু হবে- এটিই ইসলামের নিয়ম। কিন্তু আজকাল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়, বক্তা বিভিন্ন কথা বলার পর সালাম দেন। যেমন তিনি বলেন, মঞ্চে উপবিষ্ট মান্যবর সভাপতি, অতিথিরা... সবাইকে আমার সালাম আসসালামু আলাইকুম। এভাবে সালাম বলা ইসলামী রীতির পরিপন্থি। শ্রোতা ও দর্শকদের মুখোমুখি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সালাম দেওয়া নিয়ম।-প্রিয়.কম
লিখেছেন: মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেমী
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান
২২ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান
২২ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস
===================================================
সালাম কখন দেয়া যাবে এবং কখন দেয়া যাবে না?
জিজ্ঞাসা–২০৪: হুজুর, আসসালামু আলাইকুম। আপনাকে খুব মহব্বত করি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সালাম দেওয়া সঠিক নিয়ম অর্থাৎ কোন সময় সালাম দেয়া যাবে এবং কোন সময় সালাম দেয়া যাবে না? জানালে উপকৃত হব।–রেজাউল: kaiser.razaul@gmail.com
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله আমাকে যতজন মহব্বত করেন, সকলের জন্য আল্লাহ্র কাছে এই দোয়া করি, তিনি যেন এই মহব্বতকে তাঁর মহব্বত লাভের উসিলা বানান। আমীন।
হাদিসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وجبت محبتي للمحتابين فيّ ، والمتجالسين فيّ، والمتزاورين فيّ، والمتباذلين فيّ
আমার জন্য পরস্পর ভালোবাসা স্থাপনকারী, পরস্পর উঠা-বসাকারী, পরস্পর সাক্ষাৎকারী, পরস্পর ব্যয়কারীদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত। (আহমদ:২১৭১৭)
সম্মানিত দীনি ভাই, খোশ মেজাজে সালাম দেওয়া উত্তম। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لا تدخلوا الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا أو لا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم؟ أفشوا السلام بينكم.
“তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না। আর ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পরিপূর্ণ ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে না, আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বাতলে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে? তারপর তিনি বললেন, তোমারা বেশি বেশি করে সালামকে প্রসার কর”। (মুসলিম)
তবে সকল ইবাদতের মত সালামেরও কিছু আদব-কায়দা আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্র এমন আছে যে সব ক্ষেত্রে সালাম দেয়া মাকরূহ। সে ক্ষেত্রগুলোকে আল্লামা গায্যি রহ. নিম্নোক্ত কাব্যকারে উল্লেখ করেছেন।
سلامك مكروه على من ستسمع
ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع
مصل وتال ذاكر ومحدث
خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع
مكرر فقه جالس لقضائه
ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا
مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس
كذا الأجنبيات الفتيات أمنع
ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم
ومن هو مع أهل له يتمتع
ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة
ومن هو في حال التغوط أشنع
ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا
وتعلم منه أنه ليس يمنع
كذلك أستاذ مغن مطير
فهذا ختام والزيادة تنفع
ومن بعد ما أبدي يسن ويشرع
مصل وتال ذاكر ومحدث
خطيب ومن يصغي إليهم ويسمع
مكرر فقه جالس لقضائه
ومن بحثوا في الفقه دعهم لينفعوا
مؤذن أيضًا مع مقيم مدرس
كذا الأجنبيات الفتيات أمنع
ولعاب شطرنج وشبه بخلقهم
ومن هو مع أهل له يتمتع
ودع كافرًا أيضًا وكاشف عورة
ومن هو في حال التغوط أشنع
ودع آكلا إلا إذا كنت جائعًا
وتعلم منه أنه ليس يمنع
كذلك أستاذ مغن مطير
فهذا ختام والزيادة تنفع
অর্থাৎ নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে সালাম দেয়া মাকরূহ। এ ছাড়া বাকী যাদের সাথে তোমার দেখা হবে, তাদের সালাম দেয়া সুন্নত ও বৈধ।
১) নামাজ পড়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
২) কোরআন তিলাওয়াত করা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৩) জিকির ও মোরাকাবায়রত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৪) খাবার খাওয়া অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৫) হাদিস-ফিকাহ বা অন্যান্য তালীমি মজলিসে মশগুল এমন অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৬) ওয়াজ ও নসীহত শুনা অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৭) বিচারক বিচার কার্যে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৮) আযানরত, ইকামতরত কিংবা পাঠদানরত অবস্থায় কোন ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
৯) অপরিচিত যুবতী নারী [যাদের সালাম দেয়াতে ফিতনার আশংকা থাকে] তাদের সালাম দেওয়া কোনক্রমেই উচিত নয়।
১০) যারা দাবা খেলায় মগ্ন তাদের ও তাদের মত (অন্য খেলায়) মত্ত লোকদের সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১১) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে খেল-তামাশায় মগ্ন তাকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১২) অমুসলিমকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
১৩) ইস্তিঞ্জারত অবস্থায় অথবা সতরবিহীন অবস্থায় থাকলে ওই ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া উচিত নয়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
===============================================
ইসলামে সালামের গুরুত্ব অপরিসীম। সালাম শান্তির প্রতীক। সালামে রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। সালাম এভাবে দিতে হয়, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।' সালাম মুসলমানদের পরস্পরে ভালোবাসা, হৃদ্যতা সৃষ্টি করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'তোমরা ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর ইমানদার হতে পারবে না পরস্পরে ভালোবাসা না হলে। তোমাদের কি এমন একটি বিষয়ের কথা বলব, যা করলে তোমাদের পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাও।' (মুসলিম : ৫৪)
এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে ভালো? রাসুল (সা.) বললেন, 'খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া।' (বোখারি : ১২)
সালামের প্রতিটি বাক্যে দশ নেকি। সালামে মোট তিনটি বাক্য আছে। সুতরাং যে পূর্ণ সালাম দেবে তার ত্রিশটি নেকি অর্জন হবে। একবার এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম', রাসুল তার উত্তর দিলেন, তারপর সে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'দশ নেকি।' অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। পরে ওই ব্যক্তি বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'বিশ নেকি।' অতঃপর অন্য একজন এলো। সে বলল, 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।' রাসুল (সা.) উত্তর দিলেন। সেও বসে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, 'ত্রিশ নেকি।' (তিরমিজি : ২৬৮৯)
সালামের বিধান ও তার পদ্ধতি : প্রথমে সালাম দেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত, উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। যদি সালামের দ্বারা কোনো দলকে উদ্দেশ্য করা হয়, তাহলে তার উত্তর দেওয়া ওয়াজিবে কেফায়া। অর্থাৎ একজন উত্তর দিলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, তবে সবারই উত্তর দেওয়া উত্তম।
উত্তর দেওয়ার সময় সালামের চেয়ে বাড়িয়ে উত্তর দেওয়া সুন্নাত। যেমন কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বলবে। কেউ 'আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ' বললে উত্তরে 'ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু' বলবে।
চিঠি বা মেসেজ ইত্যাদির শুরুতে সালাম দেওয়া সুন্নাত। এর মৌখিক বা লিখিত উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। (তিরমিজি ২/১০১)
সালামের আদবসমূহ : মানুষের মধ্যে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানো প্রয়োজন, যাতে তা মুসলমানদের প্রতীকে পরিণত হয়। বিশেষ কোনো দলকে সালাম দেওয়া বা শুধু বড়দের দেওয়া কিংবা ছোটদের না দেওয়া উচিত নয়। অনুরূপভাবে অপরিচিতকে বাদ দিয়ে শুধু পরিচিতকে সালাম দেওয়াও কাম্য নয়। (বুখারি : ১২)
উত্তম হলো- ছোট বড়কে প্রথমে সালাম দেবে। পথচারী উপবিষ্টকে সালাম দেবে। আরোহণকারী পথচারীকে সালাম দেবে। কম লোক বেশি লোককে সালাম দেবে। (বুখারি : ৬২৩১)
উচ্চ স্বরে সালাম দেওয়া ও উত্তর দেওয়া সুন্নাত। কেননা সালাম উচ্চারণ করতে হয়। হাত বা মাথার ইশারা ইত্যাদি সালাম বলে বিবেচিত হবে না। হ্যাঁ, দূরে হলে বা উত্তর শুনতে কোনো কিছু বাধা হলে মুখে উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে হাত বা মাথার ইশারায় উত্তর দেওয়ার কথা জানিয়ে দেবে। কাছে হলে সালামে হাত ওঠানো অপ্রয়োজনীয় ও সুন্নাতের খেলাফ। (তিরমিজি ২/৯৯)
সুন্নাত হলো দুজন আলাদা হওয়ার পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে আবার সালাম দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম যখন হাঁটতেন, তখন তাঁদের সামনে কোনো গাছ অথবা স্তূপ পড়ত, তাঁরা ডানে-বাঁয়ে আলাদা হয়ে যেতেন। অতঃপর আবার সাক্ষাৎ হলে একে অন্যকে সালাম দিতেন।
সালাম শুধু মুমিনদের অভিবাদন, কাফেরদের সালাম দেওয়া বৈধ নয়। হ্যাঁ, যদি এমন জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে কাফের-মুসলমান একত্রে থাকে, সেখানে সালাম দেওয়ার সময় মুসলমানের নিয়ত করবে। (সুনানে আবি দাউদ : ৫২০৫) যদি কোনো অমুসলিম সালাম দেয় তাহলে তার জবাবে 'আস্সালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা' বলবে। (মুসনাদে আহমাদ : ২৪৩০৪) কিংবা 'ওয়ালাইকা' বা ওয়ালাইকুম' বলবে। অমুসলিমদের বিশেষ প্রয়োজনে সালাম ছাড়া অন্য কোনোভাবে অভিবাদন জানানো বৈধ। যেমন শুভ সকাল বা শুভ রাত্রি ইত্যাদি।
তবে এমন বাক্য ব্যবহার করা যাবে না, যা অন্য ধর্মের জন্য নির্ধারিত। অন্যের মাধ্যমে কারো কাছে সালাম পৌঁছানোও সুন্নাত। যার কাছে সালাম পৌঁছানো হবে উত্তর দেওয়া তার দায়িত্ব। (তিরমিজি ২/৯৯)
মাহরাম (যাদের দেখা বৈধ) নারীদের বা স্ত্রীদেরও সালাম দেওয়া সুন্নাত। আর ফেতনা থেকে নিরাপদ হলে পরনারীদেরও সালাম দেওয়া জায়েজ। অনুরূপ নারীরাও পরপুরুষদের ফেতনার আশঙ্কা না হলে সালাম দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬৯)
কাউকে ঝুঁকে সালাম দেওয়া জায়েজ নেই। (তিরমিজি : ২৭২৮)
যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ : যে ব্যক্তি সালামের উত্তর দিতে অক্ষম তাকে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যথা : নামাজ, আজান-ইকামত, জিকির, তিলাওয়াত, ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা, খানাপিনা ও ইস্তিঞ্জারত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, গুনাহের কাজে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া, স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ। (রদ্দুল মুহতার ১/৪১৪)
লেখক : ফতোয়া গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার
No comments:
Post a Comment